.খেলাঘর পর্ব-৩

0
3601
.খেলাঘর পর্ব-৩
.খেলাঘর পর্ব-৩

.খেলাঘর পর্ব-৩
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা বই নিয়ে শুয়ে পড়লো
শুয়ে শুয়ে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে
নির্ঝরিণী এমন সময় মিথিলার রুমে এলো হাতে মোবাইল

নির্ঝরিণী – আপি তোমার ফোন

মিথিলা- কে কল করেছে?

নির্ঝরিণী – ইহান নামের কেউ একজন

মিথিলা- ওহ, দে হ্যালো ইহান বল,কেনো কল করেছিস,,(মিথিলা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো)

ইহান- মিথি তুই মোবাইলে কথা বলতে জানিস না?

মিথিলা- কেনো আমার কথা গুলো কি কথা নয়?

ইহান- মোবাইলে কথা বলার শুরুতে কিছু ফর্মালিটি আছে সেগুলা মনে হয় তুই জানিস না

মিথিলা- দেখ ইহান শুধু শুধু কথা প্যাচিয়ে লাভ নেই কেন ফোন করেছিস বল

ইহান- ওকে তোর তো আবার পড়ার ডিস্টার্ব হচ্ছে, বাই দ্যা য়ে, কাল আসছিস তো

মিথিলা শান্ত আর কঠোর কন্ঠে বল্লো
– আমি তো সেদিন বলে এসেছি যাবো তা হলে আজ আবার কল কেনো

ইহান- স্যরি দোস্ত রাগ করিস না এমনি মনে করিয়ে দিলাম তোকে আচ্ছা রাখছি বাই

ইহান কল কেটে দিয়ে অনেক্ষন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলো

নিজে নিজেই মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন ইহান
– মিস চশমিশ কেনো বুঝো না ভালোবাসি তোমায়, তাই তো শুধু বাহানা খুঁজি তোমার পাশে থাকার
ইসস যদি বই হতে পারতাম তা হলে সারাক্ষন তুমি আমার উপর চোখ রেখে বসে থাকতে
উফফ ভাবতেই মন টা আনন্দে নেচে উঠছে কিন্তু আফসোস তুমি……

ইহান কথা শেষ করতে পারলো না কেউ তার কান টেনে ধরলো

ইহান- উফফ মা লাগছে তো

রাইমা চৌধুরী- লাগুক, মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কি ভিড় ভিড় করছিলি বলতো

ইহান- নাহ মানে এই আর কি,তোমার ভবিষ্যৎ বৌমার সাথে কল্পনায় কথা বলছিলাম

রাইমা চৌধুরি- ওহ তাই!বল নারে আমার বৌমা দেখতে কেমন?

ইহান- নো মাই ডিয়ার মোম তোমাকে এখনি কিছু বলতে পারবো না,তার আগে তোমার ভবিষ্যৎ বৌমার মন জিততে দাও

রাইমা চৌধুরি- সে কিরে এখন ও সে জানে না তাই তো বলি হাদারাম ছেলেটা মোবাইলকে কেনো বলছে

ইহান – মা তুমি আমাকে হাদারাম বললে(অভিমান মেশানো কন্ঠ ইহানের)

রাইমা চৌধুরি- ঠিক আছে হাদারাম কে আর হাদারাম বলবো না,এক শর্তে

ইহান খুশি হয়ে বল্লো
-কি শর্ত

রাইমা চৌধুরি- এস,এস,সি,এন্ড এইচ, এস, সি, দুটোতেই ভালো রেজাল্ট এন্ড অস্ট্রিয়া থেকে এম বি এ কমপ্লিট করতে পারলেই আর হাদারাম বলবো না, আর হা তার সাথে আমার বৌ মাকে ও পটাতে হবে

ইহান মুখ টা কালো করে বল্লো,এতো কঠিন শর্ত তুমি দিতে পারলে মা, আমি না তোমার একটা মাত্র ছেলে

রাইমা চৌধুরি- হাহ হাহ তা ঠিক, কিন্তু আমার একটা মাত্র ছেলের বোন আজ অস্ট্রিয়া থেকে ফিরছে তাকে তো এয়ারপোর্টে আনতে যাওয়ার কথা তার ভাইয়ের তাই না

ইহান- ওহ তাই সত্যি ভুলেই গিয়ে ছিলাম,কিন্তু আব্বু তো আপুর সাথেই আসবে মা, আমার যেয়ে কাজ নেই

রাইমা চৌধুরি- তোর আব্বু আসছে না, জরুরী মিটিং এ এটেন্ড করতে হয়েছে তাকে,তাই নায়া চলে এসেছে

রাইমা চৌধুরি, আর রায়হান চৌধুরির দুই সন্তান, ইহান চৌধুরি এন্ড নায়া চৌধুরি, নায়া অস্ট্রিয়া থেকে পড়াশুনা কমপ্লিট করে পাঁচ বছর পর আজ দেশে ফিরছে, আর তাই নায়াকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে যাচ্ছে ইহান

ইহান- ওকে মা দু মিনিট সময় দাও আমি রেডি হয়ে আসছি
ইহান তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লো

রাইমা চৌধুরী ছেলের যাওয়ার পথে চেয়ে আছে, ছেলেটা হয়েছে ঠিক বাবার মতো,

হারিয়ে গেলো রাইমা চৌধুরি অতিতের মাঝে যেখানে তাদের প্রথম দেখা হয়, তখন রায়হান চৌধুরি ইন্টার এক্সাম দিচ্ছে আর সেই সময় রাইমা চৌধুরি সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে ,, প্রথম দেখা, প্রথম ভালো লাগা,তার পর প্রকাশ করা অনুভূতি গুলো কোন কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না,অনেক প্রতিকুলতা ফেরিয়ে তাদের এক হওয়া,আর তাদের ভালোবাসার সম্পদ,নায়া আর ইহান,

রাইমা চৌধুরি বাস্তবে ফিরে এলো সত্যি সময় গুলো কেমন স্বপ্নের মতো ফেরিয়ে গেলো,
রাইমা চৌধুরি মোবাইল হাতে নিলেন, একটু খানি কথা বলে নিই রায়হানের সাথে,তাকে জিজ্ঞাস করবে আজ ও কি সেই প্রথম দিনের কথা মনে রেখেছে

মিথিলা অনেক রাত অবদি পড়েছে কাল আবার পড়তে পারবে না পুরো দিন অনুষ্ঠানে থাকতে হবে,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ও আবার পড়তে বসলো স্কুলে যাওয়ার আগে এই সময় টা কিছুতেই নষ্ট করতে চায় না মিথিলা,

আয়ান আর নির্ঝরিণী দুজনেই মিথিলার রুমে ডুকেছে

আয়ান- আপি জানিস নির্ঝরিণী অনেক সুন্দর একটা গান শিখেছে,

নির্ঝরিণী – আপু গান শুনবি তুই, আমি গাইবো?

মিথিলা বিরক্তি নিয়ে দুজনের দিকে তাকায়
– তোরা দুজন কি কখনো আমার পিছু ছাড়বি না, দেখছিস তো পড়ছি

নির্ঝরিণী হাসি মুখটা মলিন করেন বল্লো
– আপু তুমি খুব খারাপ কখনো আমাদের সাথে ভালো করে কথা বলো না

সত্যি আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করতে আসিনি একটা গান শুনিয়ে চলে যেতাম

আয়ান- নির্ঝর ঠিক বলেছো আপু কি হয় আমাদের সাথে একটু ভালো করে কথা বললে,বলতে বলতে কেঁদে ফেল্লো আয়ান

মিথিলা -ওকে,ওকে কি গান শুনাবি তাড়া তাড়ি শুনা

নির্ঝরিণী খুশি হয়ে বল্লো ওকে শুন তা হলে

‘এই মন যা বলে বলুক
আমি তোমারি হবো,
চোখ যা দেখে দেখুক
আমি তোমাকেই দেখবো ‘

নির্ঝরিণী গান গেয়ে শেষ করে বল্লো কেমন হয়েছে আপু

মিথিলা- ভালো

নির্ঝরিণী – আরেকটা বলি

মিথিলা- হুম বল

নির্ঝরিণীর গান শেষ হওয়ার আগেই মিথিলা বল্লো এবার থাম স্কুলের সময় হয়ে গেছে, আজ স্কুলে অনুষ্ঠান আছে একটু তাড়া তাড়ি যেতে হবে

নির্ঝরিণী – ওহ আপু তা হলে তো তোর আজ ক্লাস হবে না তাই তো

মিথিলা চুল আছড়াতে আছড়াতে বল্লো
-হুম, কেনো

নির্ঝরিণী – আপু আমাকে নে না সাথে

মিথিলা- মানে তোর ক্লাস আছে না,

নির্ঝরিণী – আপি মাত্র ক্লাস সিক্সে উঠেছি এখনি তোমরা সারা দিন পড়া পড়া বলে আটকে ধরে রাখো কেমন লাগে বলো তো

মিথিলা- ঠিক আছে আয়,তবে খবর দার করে দিলাম,একদম চুপ করে আমার সাথে বসে থাকবি চালাকি করে কারো সাথে বক বক করবি না ওকে

নির্ঝরিণী – ওকে সুইট আপি

আয়ান এতোক্ষন চুপ করে কথা শুনছিলো, এবার সে প্রতিবাদ করলো
– শুধু নিজের বোনকে সাথে নিলে হবে না আমি কি নদিতে ভেসে আসছি নাকি হা, আমি ও যাবো

মিথিলা- আয়ায়ায়ানন

আয়ান- চোখ রাংগিয়ে তাকালে ও লাব নেই আমি যাবো ই

মিথিলা- বললাম না তুই যাবি না, যা স্কুলে যা, পড়া শুনা কিছুই করে না, সারাক্ষন পাকনামি

আয়ান- আপু তুমি আমায় একটু ও আদর করো না (গাল ফুলিয়ে বল্লো কথা টা)

মিথিলা- তোরা দুজন কিরে? সারাক্ষন আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করবি আর আমি তা মেনে নিবো,মা,মা

ফাতেমা বেগম ছুটে এলো
– কিরে মিথি এতো ডাকছিস কেনো

মিথিলা- মা তুমি আয়ান কে স্কুলে যেতে বলো,কোন এক্সকিউজ যেন না দেখায়

ফাতেমা বেগম- আয়ান দেরি হয়ে যাচ্ছে না,যা স্কুলের জন্য রেডি হও

আয়ান মুখ ভার করে চলে গেলো
মিথিলা আর নির্ঝরিণী বেরিয়ে পড়লো,

ইহান অনেক আগেই চলে এসছে স্কুলে,আজকের অনুষ্ঠান হোস্ট করবে ইহান
তাই ওর দায়িত্ব অনেক

অরনি ইহান কে হ্যাল্প করছে

ইহান- অরু এই মিথি টা কখন আসবে রে

অরনি- জানি নারে ইহু,একটা কল দিয়ে দেখ বেরিয়েছে কি না

ইহান- নারে কল দিলে রেগে যাবে, অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই বুঝলি

অরনি- আচ্ছা ইহু তুই মিথি কে বলছিস না কেনো যে তুই ওকে পছন্দ করিস,শুধু কি পছন্দ একে বারে লাভ এট ফাস্ট সাইট,যাকে বলে

ইহান- অরু মিথিলাকে বলে কোন লাভ হবে না উলটো ভুল বুঝবে, ওর জগতে ওর বই আর চশমা ছাড়া আর কিছু নেই

এমন সময় রাহি এসে বল্লো কিরে ইহু, অরু তোরা এখানে ওদিকে কি হয়েছে জানিস
ইহান- কি হয়েছে

রাহি- মিথিলা এসেছে,ওর বোন কে নিয়ে

অরনি অবাক হলো বল্লো কি বলছিস মিথিলা নিয়ে এসেছে তার বোন কে বিশ্বাস হচ্ছে না,চলতো ইহু দেখে আসি

ইহান আর অরনি চল্লো মিথিলার কাছে

অরনি দৌড়ে গিয়ে মিথিলা কে বল্লো আরে মিথি তুই এসেছিস তোর জন্য ই অপেক্ষা করেছিলাম

মিথিলা- আমি তো বলেছি আসবো,আবার অপেক্ষা করার কি আছে অরু

সাম্মি- এই মিথি তুই কি আমাদের নতুন প্লানের কথা জানিস

মিথিলা- আবার কি প্লান

অরনি- আমরা সবাই আজ শাড়ি পরবো

মিথিলা কথা টা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো,
– প্লিজ অরু আমাকে তোরা শাড়ি পরতে বলিস না আমি পারবো না

রাহি- কি বলছিস আমরা পরবো আর তুই পরবি না

নির্ঝরিণী – আপু তোমাকে কোন দিন শাড়ি পরতে দেখিনি,শাড়ি পরলে কেমন লাগে জানি ও না প্লিজ আপু

মিথিলা- নির্ঝর, আর একবার পাকনামি করলে থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো,মিথিলার রাগে চোখ দিয়ে আগুন জ্বরছে

নির্ঝরিণী লজ্জায় অপমানে উঠে চলে গেলো
আপু তার বন্ধুদের সামনে আমাকে এই ভাবে বল্লো,ছোট বলে কি আমার মান সম্মান নেই নাকি,নির্ঝরিণী ছুপি ছুপি স্কুলের পিছনে এসে কাঁদছে, মিথিলার সামনে কিছুতেই কাঁদতে চায়নি সে

মিথিলার রাগ দেখে সবাই স্তম্ভিত কারো মুখে কোন কথা নেই
ইহান ভাবছে সামান্য শাড়ি পরতে বলাতে মিথিলা এই ভাবে রিয়েক্ট করলো কেনো

অরণি আর কিছু বল্লো না

to be continue

ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন