#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৯
মেহনুরের সারারাত ঘুম হয়নি৷ বেডে এপাশ ওপাশ করে রাতটা কাটিয়ে দিয়েছে। খুব ভোরে রুম থেকে বের হয়েছিলো বাগানে হাঁটতে যাওয়ার জন্য। তখন চোখে পড়লো জিয়ান নয়নাকে চাদরে পেঁচিয়ে কোলে করে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে। মেহনুর নিজের চোখের জল উল্টো পিঠে মুছে নিলো৷ সহ্য হচ্ছে না তার নয়নাকে! একটা সতেরো বছরের বাচ্চা মেয়ে! সে-সব পেয়ে গেলো যা সে চব্বিশ বছরেও পেলো না! একজন আদর্শ হ্যাসবেন্ড,পরিপূর্ণ সংসার সব পেয়েছে৷ মেহনুর নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে নিজের হার সে মানতে পারছে না। কেনে হলো এমন! নয়না কেন জিয়ানের সাথে থাকবে? জিয়ানের মত ছেলে ওর মত মেয়ে ডিজার্ভ করে না৷ ওতো আমার মতো এডুকেডেট কাউকে ডিজার্ভ করে। তাহলে কেনো নয়না এই বাড়িতে আমার স্থানে!
🌿
দুপুরের ঝকঝকে রোদ জানালার পর্দার ফাঁকফোকর ভেদ করে নয়নার চোখে মুখে খেলা করছে৷ নয়না বারবার চোখ পিটপিট করছে। রোদের তীব্রতা আরো বাড়তে লাগলো। নয়না কপাল কুঁচকে চোখ মেললো। পর্দা সরিয়ে জানালার সামনে নগ্ন দেহে দাঁড়িয়ে আছে জিয়ান।
“নয়না ঘড়ির দিকে তাকালো বেলা একটা পনেরো বাজে! নয়নার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো৷ তারমানে এতোক্ষণে রেজাল্ট প্রকাশ হয়ে গেছে! নয়নার মুখ ফেকাসে হয়ে গেলো।
“জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,গুডমর্নিং ডিয়ার বাটার মাশরুম। হ্যাভ এ নাইস ডে মিসেস চৌধুরী।”
“নয়না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কোন হেলদোল নেই।”
“জিয়ান নয়নার পাশে এসে বসলো, নয়নাকে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে বলে,পিচ্চি বৌ কি হয়েছে গো তোমার?এমন চাঁদের মত মুখশ্রীতে আমাবস্যা নেমে আসলো কেনো?”
“নয়না চুপ করে রইলো। জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো।
“কি হচ্ছে ছাড়ুন আমাকে। এসব একদম ভালো লাগছে না৷”
“আমার ভালো লাগছে আজ আমার খুশির দিন সবচেয়ে আনন্দের দিন। জান, জান, জান, তুমি ঢাকা বিভাগে টপ রেজাল্ট করেছো।ইশশ আজ পুরো এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করবো। লাভ ইউ জান৷ লাভ ইউ সো সো সো মাচ।”
“নয়না জিয়ানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷ তার চোখ ভিজে উঠলো।”
“জিয়ান নয়নাকে চুমু দিতে লাগলো পুরো মুখ আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে বলে,এখনো মন খারাপ করে থাকবে ডিয়ার পিচ্চি বৌ?”
“একদম বিচ্চি বৌ বলবেন আমার বয়স সতেরো বছর।”
” আহা টপার বৌ যা বলবে তাই তো শুনতে হবে৷ যাও রেডি হও৷ সবাই ভাবছে ছেলে আর বৌ পুরো রাত বাসর করেছে এখন অর্ধেক দিনও বাসর করছে!”
“নামান আমাকে৷”
“নয়না ওড়না খুঁজে জড়িয়ে নিলো গায়ে৷ চুপচাপ বেডের উপর বসে রইলো৷”
“জিয়ান ব্ল্যাক কালারের টিশার্ট পরলো। চুলগুলো ঠিক করে বলে,যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো বড্ড খিদে পেয়েছে খেতে হবে তো। বৌ খেয়ে মন ভরে পেট তো ভরে না৷”
” আমার লজ্জা লাগছে। কি করে নিচে যাবো!সবাই কি ভাববে?”
“সবাই কি ভাববে মানে! সবাই ভাববে তাদের পিচ্চি বৌ স্বামী সোহাগি হয়ে গেছে।বোকা বোকা কথা না বলে উঠো তো৷”
” না আমি যাবো না আমার লজ্জা লাগছে।”
“হাঁটুর বয়সী নিব্বি বিয়ে করলে এই এক সমস্যা সব সময় বেশি বুঝে!”
“নয়না বেডের উপর দাঁড়িয়ে বলে, হাঁটুর বয়সী আবার কি! দেখুন তো কে লম্বা?”
“আপনি লম্বা ম্যাম দয়া করে, নিচে চলুন।”
“নয়না বলল,আপনি যান আমি আসছি।”
“জিয়ান নিচে এসে দেখে,মাহবুব তালুকদার, মিজান তালুকদার, জাহানারা বেগম, সূচনা সোফায় বসা৷
“সবাইকে সালাম দিয়ে বলে,আপনারা কখন আসলেন?”
“মেয়ের রেজাল্ট শুনে চলে আসলাম।”
“মিতা বেগম বললেন, খুব ভালো করেছেন৷ আজ দুপুর সবাই একসাথে খাবো। জিয়ানের বাবাও আসছে।”
“জিয়ান সুচনার পাশে বসে বলে,কিগো পাঁকা বুড়ি আজ এতো চুপচাপ কেনো!”
“সূচনা চুপ কোন কথার উত্তর দিচ্ছেনা।”
“জাহিন বাসায় ঢুকে এতো মানুষ দেখে সালাম দিলো৷”
“ওনারা সবাই অবাক! দুজন শুধু দেখতেই নয় কন্ঠও প্রায় সেম।”
“জিয়ান হেসে বলে,ও আমার ছোট ভাই জাহিন৷ জাহিন এনারা আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষ। ইনি আমার চাচা শ্বশুর, আর ইনি আমার বাবা, ইনি আমার শ্বাশুড়ি আম্মা৷ আর এই যে সুইট গার্ল সে হচ্ছে আর্ধেক ঘরওয়ালী৷”
“জাহিন সবার সাথে কুলশ বিনিময় করলো।জিয়ানের পাশেই বসে আছে জাহিন।”
” নয়না নিচে এসে সবাইকে দেখে খুশি হয়ে গেলো তার আনন্দ দ্বিগুন হয়ে গেলো৷”
“জাহিন আড়চোখে নয়নার দিকে তাকালো৷ মনে মনে বলে,বিয়ে করলে এমন একটা কিউটের ডিব্বাকেই করবো।”
“সবাই একসাথে সুন্দর একটা দিন কাটালো৷ তালুকদার বাড়ির সবাই বাসায় চলে গেলো৷ নয়না জানালার পাশের সোফায় বসে আছে। রুমের লাইট অফ। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। এতোকিছুর পরেও নয়নার মনটা কেমন উদাস৷ সে যেনো সব পেয়েও অপূর্ণ! যে কিনা তার হ্যাসবেন্ডের স্পর্শ অনুভব করতে ব্যর্থ। চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। মন কখন কি চায় মন হয়ত নিজেও তা জানেনা। নয়না মৃদু স্বরে আওড়াচ্ছে….
“নির্জনে বয়ে চলে বাতাস, চুপচাপ সুরে গান গায় বিরহের , আকাশের কোলে চাঁদ হাসে, নক্ষত্রেরা চুপচাপ ডাকে জোছনা বিলায়, তবুও লোকে চাঁদের প্রেমে পরে!
বনপথে পাতা ঝরে যায়, কিংবা নদী বহে দূর প্রবাহে, তারা কেউ জানেনা, হৃদয়ে কি এক অশান্তি, যা নেই কোথাও, তা অদৃশ্য, প্রগাঢ়।সে যেনো জেনেও জানেনা, বুঝেও বুঝে না মনের গহীন ক্ষত!
মনের গভীরে রয়ে যায় অপূর্ণ স্বপ্ন, যা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছি, এ জীবনে তা যেনো পেয়েও হারিয়েছি৷ এ জীবন হোক কিংবা পরবর্তী, আমি তো শুধু খুঁজে বেড়াচ্ছি সে অসীম সুধা যা আমায় তৃষ্ণায় বিতৃষ্ণ করছে।”
“জিয়ান চুপিসারে নয়নার পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
“নয়না দ্রুত চোখ মুছলো,আপনি কখন এলেন?”
“যখন কেউ তার হরিণের মত মায়াবী চোখ থেকে টুপটাপ বৃষ্টি ঝড়াচ্ছিল তখন। তুমি কি জানো তুমি কাঁদলে আমার মনের আকাশেও মেঘ জমে? কোন অজুহাত শুনবো না আমি জানতে চাই কেনো কান্না করছিলে?”
“নয়নার চোখ যেনো বাঁধ মানছে না। সে বর্ষণমুখর হয়ে গেলো।”
“জিয়ান উঠে বসলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নয়নাকে৷ বিচলিত কন্ঠ শুধালো, কি হয়েছে তোমার! আমি কি তবে আবারও তোমার হৃদয় গভীর কোন ক্ষত তৈরি করেছি? আমি জানি তোমার বয়স কম। কিন্তু আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি৷ আমি ব্যর্থ হয়েছে আমার পুরুষত্বের কাছে! আমি এবার গেলে তোমার আঠারো বছর পূর্ন না হওয়া পর্যন্ত আসবো না৷ দূর থেকে তোমাকে ভালোবাসবো। তবুও তোমার কষ্টের কারন হতে চাই না। তোমাকে এতো কাছে পেয়েও দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব না।”
“নয়না শব্দ করে কান্না করছে। জিয়ানের টিশার্ট শক্ত করে খামচে ধরে বলে,আমি আপনাকে পরিপূর্ণ ভাবে পেতে চাই। আমার হৃদয় তৃষ্ণায় ছটফট করছে৷ সে তৃপ্ত হচ্ছে না৷ আমি আপনার স্পর্শ অনুভব করতে চাই।”
” জিয়ান থমকে গেলো! তবে কি কাল রাতে নয়না নিজের সাথে যুদ্ধ করে সবটা সহ্য করেছে! কিছুক্ষণ পর জিয়ান নয়নার থুতনিতে হাত রেখে বলে,কি হয়েছে আমাকে বলো,তোমার জন্য কষ্টকর হলে আমাকে বাঁধা দিলে না কেনো!”
“নয়না নিজের দৃষ্টি নত করে বলে,আমার নানুমনি বলেছে,নিজের পুরুষকে সব সময় নিজের আঁচলে বেঁধে রাখতে হলে নিজেকে পুরোপুরি শপে দিতে হয়৷ আমি আপনাকে সব সময় আমার করে রাখতে চাই৷ আমি এতোটাও অবুঝ না যে স্বামী স্ত্রীর এই মিলন সম্পর্কে অবগত না। কিন্তু আপনি আমার যত কাছে আসেন আমি না চাইতেও ওই রাত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। গতকাল রাত ছিলো আপনাকে পুরোপুরি আমার করার রাত৷ অথচ আমি আপনার স্পর্শের মাদকতা অনুভব করতে পারিনি!আমি সব ভাবে আপনাকে চাই।আপনাকে চাই আপনাকেই চাই৷”
“জিয়ান নয়নার চোখের কোনের জমে থাকা জলটুকু মুছে দিয়ে বলে,আমি শুধু তোমার, তোমার পাইলট মহাশয় শুধু তার বাটার মাশরুমের। এজন্মে আমি তোমাকে ছাড়বো না৷”
দু’জনে দু’জনের কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো দীর্ঘ সময়। জিয়ান নয়নার কপালে চুমু দিলো। জিয়ানের চুলগুলোতে আঙ্গুল ডুবিয়ে আলতে হাতে হাত বোলাতে লাগলো৷ নয়না জিয়ানের বুকে মাথা রেখে বসে আছে।
“জিয়ান বলল,আমার ছুটি তো শেষ আগামীকাল আমাকে চলে যেতে হবে। কি করে থাকবো আমার বাটার মাশরুমকে ছাড়া!”
“নয়না সামনে ঘুরে বলে,চলে যাবেন মানে?”
#চলবে