নষ্ট গলি পর্ব-২৮
লেখা-মিম
বিয়ে সেড়ে মাত্রই বাসায় ফিরেছে ওরা। মায়াকে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা দিলো সোহান। চুপচাপ মাথা নিচু করে রুমে চলে গেলো মায়া। সালমানও চলে গেলো নিজের রুমে। খানিকক্ষণ বিশ্রাম করবে তাই। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোফায় গা ছেড়ে হেলান দিয়ে বসলো সোহান। প্রচন্ড পানির পিপাসা লেগেছে ওর। মনে হচ্ছে পুরো এক জগ বরফ ঠান্ডা পানি এখনই শেষ করে ফেলবে। রতনকে ডেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিতে বললো সোহান৷ চোখ বন্ধ করে সোফার উপর ঘাড় ফেলে বসে আছে সে৷ কিছুক্ষণ পর পানি নিয়ে এলো রতন। এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর আবার আরেক গ্লাস পানি চাইলো সোহান৷ রতন পের গ্লাস পানি এনে দিলো সোহানকে। একটু পরপর থেমে থেমে পানি খাচ্ছে সোহান।
– রাতের রান্না হয়েছে?
– না ভাই৷ তরকারী কাইটা রেডি করতাছি।
– রান্না করতে হবে না। টাকা দিচ্ছি বাহির থেকে খাবার কিনে আনো।
– আইচ্ছা।
– মায়ার চিঠিটা কোথায়?
– আমার ঘরে।
– নিয়ে আসো।
– আইচ্ছা।
পা থেকে মোজা গুলো খুলে সোফার পাশে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো সোহান। হালকা গরম পানিতে গোসল করাটা এই মূহূর্ত্বে অতি জরুরী বলে মনে হচ্ছে। তবে তার চেয়ে আরো বড় জরুরী কাজটা হলো মায়াকে শায়েস্তা করা।
– ভাই,,,, চিঠি।
চিঠিটা হাতে নিলো সোহান। খুব বেশি বড় না। মাত্র চার লাইনের চিঠি।
” আমি তোমায় না দেখি
তুমি আমার না হও
আমি যত দূরে যাই চলে
তুমি কাছে রও।”
পানি খাওয়ার পর রাগ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছিলো। চিঠি পড়ার পর মনে হলো সেই রাগের আগুনে কেরোসিন পড়েছে। হাতের মুষ্টিতে চিঠিটা নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে সোহান। পায়ের কাছে বাসায় পড়ার রাবারের স্যান্ডেলগুলো পড়ে ছিলো। একটা স্যান্ডেল হাতে নিয়ে মায়ার রুমে গেলো সোহান। মায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। রুমের গেট আটকে দিয়ে বারান্দা থেকে মায়ার চুলের মুঠি ধরে ঘরে নিয়ে আসলো সোহান। পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে এলোপাথাড়িভাবে পেটাচ্ছে মায়াকে।
– কবি হবি তুই? কবি হওয়ার শখ জাগছে? তুই আমারে চার লাইনের কবিতা লিখে ঐ পাড়ায় আবার গেছোস? ছোটলোকের বাচ্চা। বেঈমান। আমারে রাইখা যাওয়ার এত্ত শখ তোর? দূরে যাবি আমারে রাইখা?
জুতা ফেলে এবার দুগালে লাগাতার চড় দিতে থাকলো সোহান।
– এত্ত শখ কেন আমারে রাইখা যাওয়ার? হ্যাঁ? কোনো কিছুর অভাব রাখছি? ভালোবাসা সম্মানে কোনো অভাব রাখছি? মাথায় তুলে রাখছি তোরে আমি। ঐ লোক আমার বাপ হইছে তো কি হইছে? তুই জানোস না তার সাথে আমার সম্পর্ক কেমন? ঐ লোক এটা সেটা এসে বলবে আর তুই ঘর ছেড়ে চলে যাবি? আমি তোর কিচ্ছু না?একটাবার মনে করলি না আমি চলে গেলে সোহানের কেমন কষ্ট লাগবে? সোহান তো আবার একা হয়ে যাবে? আমাকে দুই পয়সার দাম দিতে মন চায় না? আমার কষ্ট হয় না? আমি মানুষ না? আমার কি কোনো ফিলিংস নাই? ঐ লোক তোরে কি বললো না বললো ঐটা তোর কাছে মূখ্য আর আমার ফিলিংস? ঐটা মূখ্য না? কেমনে বের হয়ে গেলি তুই? ঐ এই সংসার কি তোর না? আমি কি তোর হাতে সংসার বুঝায়া দেই নাই? তুই তোর সংসার ফালায়া কেন বের হইলি?
ফুঁপিয়ে কাঁদছে মায়া। সোহানের অভিযোগ মাখা কথাগুলো ছুরির মতো কলিজায় গিয়ে বিঁধছে। মানুষটার ভালো চাইতে গিয়ে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। সোহানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়া।
– সরি।
এক ধাক্কায় মায়াকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে খাটের উপর ফেলে দিলো সোহান। প্রচন্ড রাগে ফুঁসছে ও। চোখে পানি নেই। অথচ কষ্টের গভীরতা সোহানের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মায়া।
– একদম ভালোবাসা দেখাতে আসবি না। তুই আমাকে কখনো আপন ভাবিসনি। আমি একাই তোকে ভালোবেসে গেছি।
– আমি আপনাকে ভালোবাসি। সত্যিই ভালোবাসি।
– তার নমুনা আজকে আমি দেখেছি। আমি তোকে এত ভালোবাসি। তবু তুই কিভাবে ভাবতে পারলি তুই চলে গেলে আমি ভালো থাকবো? আমার শরীরের একটা অঙ্গ হয়ে গিয়েছিস তুই। তোকে ছাড়া আমি শান্তি পাই না। বুঝিস না? আমাকে বুঝতে ইচ্ছা হয় না তোর তাই না? ভালোই তো বাসিস না। বুঝবি কিভাবে? দূরে যাওয়ার খুব শখ তাই না? যা। দূরেই থাক তুই। আমার কাছে তোকে আসতে হবে না৷ কথাও বলতে হবে না। তোকে ভালোবেসে বিপদে পড়ে গেছি। তোকে চোখের সামনে না দেখলে তো আমিই দম আটকে মরে যাবো। তাই তোকে আবার ফেরত এনেছি। যাতে তোকে চোখের সামনে দেখে এটলিস্ট নিঃশ্বাসটুকু নিতে পারি। তোর কাছেও আমি আসবো না। তোর সাথে আজকের পরে আর কোনো কথাও বলবো না। তুই থাক তোর মতো।
মায়ার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে বেরিয়ে গেলো সোহান। পিছু পিছু যাচ্ছে মায়া।
– প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। বড়সড় একটা ভুল করে ফেলেছি।
মায়ার মুখের উপর ঠাস করে দরজাটা আটকে দিলো সোহান। আলমারী থেকে গেঞ্জি ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো গোসল সাড়তে। বাহির থেকে ডাকছে মায়া,
– শুনছেন, দরজাটা একটু খুলুন প্লিজ। আমাকে মাফ চাওয়ার একটা সুযোগ তো দিন।
বিগত আধাঘন্টা যাবৎ দরজা ধাক্কাচ্ছে
মায়া। বারবার এক কথা বলেই যাচ্ছে দরজাটা একটু খুলুন। আমার কথাগুলো একটু শুনুন। সালমান এসে কয়েকবার ডেকে গেছে। ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছে না। সোহান গোসল সেড়ে চুপচাপ ফ্যানের নিচে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। যত খুশি দরজা ধাক্কাতে থাকুক। মায়ার সাথে কোনো কথা বলবে না সে৷ মেয়েটা জঘন্য খারাপ। তাই তো ওকে ফেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
(চলবে)