#স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_১৯
#মুসফিরাত_জান্নাত
বিবাহ আয়োজনের আলোকসজ্জায় আলোকিত পুরো ছাদ।হলুদ সন্ধ্যার আয়োজনে পূর্ণ সমাপ্তি টানলেও ঝিমিয়ে যায় নি কোলাহল।বরং নিজেদের হলুদের পোশাক চেঞ্জ করে ফ্রেশ হওয়ার লাইন জমেছে প্রত্যেকটা ওয়াশরুমের সামনে।ছোট বাচ্চারাও দৌড়াদৌড়ি করছে আপন গতিতে।মহিলারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সান্ধ্যভোজনের আয়োজনে।এতো এতো মানুষের ভীর,এতো কোলাহলেও যেনো একাকীত্ব পিছু ছাড়ছে না রাসেলের হৃদয়ে।তার চারিপাশে সমবয়সী কাজিন গ্রুপের কলোনী থেকেও হৃদয় শূন্য অনুভব করছে সে।তার হৃদয়ের এই শূন্যতা তাবাসসুমের একটু সময়ের।কিন্তু মেয়েটা সেদিকে পাত্তা দিলে তো।
সবাইকে এড়িয়ে বাসার নিচে সুইমিং পুলের ধারে পাতা বসার স্থানটাতে পিঠ সটান করে বসে আছে রাসেল।হাতে তার আপডেট ভার্সনের মুঠোফোন।ফোনটির স্ক্রিনে বৃদ্ধাঙুলির স্পর্শ দিয়ে কাওকে বার বার কল দিচ্ছে সে।কিন্তু ওপাশের ব্যক্তিটি কল পিক করছে না।মনে মনে একটু বিরক্ত হয় রাসেল।সেই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে মাত্র একবার তার সাথে সামনা সামনি সাক্ষাৎ করলো তাবাসসুম।একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করে তার হসপিটালের দিনগুলিতে ইগনোর করার কারণটা ব্যাখ্যা করলো সেদিন।মেয়েটা রাসেলের হাত ধরে তখন বললো,
“আব্বুর অবস্থা দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমি।আবারও আব্বুর অসুস্থতা চাই নি।তাই তোমাকে এড়িয়ে গিয়েছি।তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ।”
তাবাসসুমের কথার বিপরীতে তার হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে রাসেল উত্তর লো,
“কারণটা তখন বলে দিলেই পারতে।আমি আরও ভয়ে ভয়ে ছিলাম।এই বুঝি হাত ফসকে গেলে তুমি।দোষটা কি আমার তাও বুঝতে পারছিলাম না।যে কারণে তুমি ইগনোর করছিলে।”
হালকা হাসলো তাবাসসুম।রাসেলের হাতটা আরও একটু শক্ত করে জবাব দিলো,
“তবে যাই বলো,এতো কিছুর পরও যে আব্বু এভাবে সবটা মেনে নিবে কল্পনার বাহিরে ছিলো আমার।”
কথাটা বলে এক পশলা হেসেছিলো মেয়েটি।রাসেল স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলো তার প্রেমিকার প্রশান্তি মাখা মুখ।যা প্রশান্ত করে দিয়েছিলো তার খরতপ্ত হৃদয়।প্রতিউত্তরে সে নিজের ভঙিমা পরিবর্তন করে মাথায় একটু হাত নেড়ে বলেছিলো,
“মেনে নিবে না?সব কিছু সেটিংস করে দিয়েছি যে।তারপরও না মেনে উপায় আছে?”
বিষ্মিত হয় তাবাসসুম।
“কিভাবে?”
“আরে কার্ডিওলজিষ্ট এমনি এমনি হইছি নাকি!বুঝোনা?সার্জারির সময় তোমার রাগী বাবার হৃদপিণ্ডের শিরা উপশিরায় আমার নাম খোদাই করে দিয়েছি।এখন শশুর আব্বা রাসেল ছাড়া তার মেয়ের জামাই হিসেবে অন্য কারো নাম দিল থেকে নিতে পারবে না।”
রাসেলের রগড় মিশ্রিত বুলি শুনে হেসে ফেলে তাবাসসুম।প্রেমিকের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে,
“তুমিও না।দুষ্টু একটা।”
“হুম তোমার জন্য।”
এভাবেই হাসি মজায় মিষ্টি মধুর সময়টা কেটে গেলো।তারপর আর তাবাসসুমকে সেভাবে কাছে পায় নি সে।বাবার অসুস্থতা ও পরীক্ষার ব্যস্ততায় রাসেলকে সময়ই দিতে ভুলে গেলো মেয়েটি।অবশ্য পেশাগত কারণে রাসেলের ব্যস্ততাও কম ছিলো না।তাদের সম্পর্কটা মাঝে মধ্যে ফোনালাপে সীমাবদ্ধ থাকলেও খারাপ যাচ্ছিলো না কোনো কিছু।কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে আবারও রাসেলকে এড়িয়ে যাচ্ছে তাবাসসুম।এবারে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না সে।বিগত কয়েক দিন হলো বার বার কল দিয়েও তাবাসসুমের কোনো রেসপন্স পায় না রাসেল।অথচ আজ বাদে কাল তাদের বিয়ে।মেয়েটার হুট হাট কি যে হয় খোদা মালুম।শেষ বারের ন্যায় কলটা দিয়ে নিজের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায় রাসেলের।এবারেও কল পিক করে না তাবাসসুম।মনে মনে কিছুু একটা ভেবে নিলো সে।অতপর কাওকে না জানিয়েই রাত্রি বেলার কিঞ্চিৎ কোলাহলপূর্ণ এই প্রহরে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িটি নিয়ে ছোটে সে।উদ্দেশ্য প্রেমিকার একটু সাক্ষাৎ।ভরা পূর্ণিমার এই প্রহরে প্রেমিকার বিরহে থাকা যে বড্ড বেমানান কাজ।তারচেয়ে বরং সে প্রেয়সীর অভিমানের কারণ জেনে আসুক।কে জানে হয়তো অভিমানের কারণ জানতে গিয়ে অভিমানের পাল্লাটা শূন্যও করে দিতে পারে সে।
_______
অন্তরীক্ষ জুরে মস্ত চন্দ্রিমার আনাগোনা।শহর জুরে জোছনার আলো গলে গলে পড়ছে।এই কলোনীতে শুধুমাত্র খাঁন নিবাসে জোছনার আলো পতিত হতে ব্যর্থ হচ্ছে।কৃত্রিম আলোকসজ্জায় আলোকিত বিল্ডিংয়ে প্রাকৃতিক নরম আলো কোনো ফাঁক ফোঁকর দিয়েও প্রবেশ করতে পারছে না।কিন্তু গুটি কয়েক কাজিনদের সমারোহে পূর্ণ এই ছাদে প্রেমিক পুরুষ ঠিকই পৌঁছে গিয়েছে।বিয়ের আগের রজনীতে হুট করে রাসেলের আগমনে ভড়কে যায় ছাদে উপস্থিত সবাই।বিষ্মিত হয় তাবাসসুমও।সাথে বেশ খানিকটা বিব্রত বোধ করে।রাসেলের এমন খাম খেয়ালি পণা আচরণে লজ্জিত হয় সে।রাসেলের সাথে একযোগে কুশল বিনিময় করে তারা।তারপর রাসেলের এক পা এক পা করে তাবাসসুমের নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে একত্রে ছাদ শূন্য করে সবাই।ঐশীও তাদের দলেই যোগ দেয়।যাওয়ার পূর্বে তাবাসসুমকে একটু খোঁচা মা’রতে ভোলে না সে।বদমাইশি হাসি দিয়ে বলে,
“ভাইয়ার আর তর সইছে না আপু।রাত্রি কা’টার পূর্বেই তোর টানে চলে এসেছে।কি টান যে মা’রছিস আল্লাহ মালুম।”
রুষ্ট হয় তাবাসসুম।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ফালতু বকা বন্ধ করবি তুই?”
“বারে!ফ্রীতে তোরা রোম্যাঞ্চ করবি। আর আমি বললেই ফালতু কথা।”
“ঐশী!”
লজ্জিত হয় তাবাসসুম।তার বিপরীতে চোখ টিপে দেয় ঐশী।
“হ্যাভ এ গুড টাইম।”
রসিকতা করে শেষ বাক্যটা উচ্চারন করে দ্রুত ছাদ ফাঁকা করে ঐশী।যাওয়ার পূর্বে রাসেলের সাথে কুশল বিনিময় করতে ভোলে না।ছাদ থেকে নেমে যে যার মতো মুখ টিপে হাসতে থাকে।এতোক্ষণে তাবাসসুমের হাতে যত্ন করে মেহেদী পড়িয়ে দিয়ে নিজেদের হাতও রাঙাচ্ছিলো তারা।কিন্তু সেই কাজ আর সমাপ্ত করতে পারেনি সেখানে।তাই ঘরে এসে নিজেদের আলাপচারিতার মাঝে মেহেদী লাগাতে মন দেয়।
অপরদিকে ঐশীর প্রস্থানের পরই রুষ্ট হয় তাবাসসুম।কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“তোমার কি কাণ্ড জ্ঞান কখনো হবে না?বাড়ি ভর্তি মানুষ।এর মাঝে এভাবে দেখা করতে আসছো। মুরুব্বীরা কি বলবে?”
“আমি কি তোমাদের ফ্লাটে ঢুকেছি যে মুরুব্বিরা দেখবে?সিঁড়ি মারিয়ে সোজা ছাদে চলে আসছি আমি।”
রাসেলের উত্তরে কিছুটা ক্ষান্ত হয় তাবাসসুম।কিছুটা রাগ পড়ে তার।তবুও কণ্ঠে কাঠিন্যতা মিশিয়ে শুধায়,
“তা এই মাঝরাতে এখানে আসার কি কারণ?”
“তোমারই বা আমাকে এতো ইগনোর করার কি কারণ?যেদিন বিয়ে ঠিক হয়েছে সেদিন থেকেই আবার ইগনোর করা শুরু করছো।দোষটা কি আমার বলবে তো?”
তাবাসসুমের কথার সুরেই তাল মিলিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে রাসেল।তড়িৎ মস্তিষ্ক সজাগ হয় তাবাসসুমের।সে তো বিবাহের পূর্বে রাসেলের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলো যেনো বিয়ের পর একত্রিত হলে সময়টা বেশি ভালো উপভোগ করা যায়।কিন্তু রাসেল এসে তার পরিকল্পনায় গুড়ের বালি করে দিলো।কিঞ্চিৎ অভিমান জমে তার।মুখ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“তা আর জেনে কি করবে?দীর্ঘ বিরতির পর একত্রিত হওয়ার মজাটা লুফে নিতে চেয়েছিলাম আমি।তাই এতোদিন যোগাযোগ করিনি।কিন্তু দিলে তো সব ভন্ডুল করে।”
এতোক্ষণে তাবাসসুমের ইগনোর করার কারণটা ঠাহর করে রাসেল।ঠোঁটের কোণ প্রশস্ত হলো তার।তার আড়ালে নিজের প্রেয়সী এতো সুন্দর পরিকল্পনা করে বসেছিলো,আর সে কিনা ভেবেছে অভিমান জমেছে।নিজের বোকামি ধারণায় খানিকটা তটস্থ হয় সে।সাথে তাবাসসুমের পরিকল্পনা শুনে মনও ভরে যায়।হালকা হেসে সে বলে,
“প্রেম করেছি দু’জনে,অথচ প্রেমের সৌন্দর্য বুঝেছে সে।সত্যি প্রেমিক হিসেবে ব্যর্থ আমি।”
“হইছে,আর কবিগিরী করতে হবে না।কেও দেখে ফেলার আগেই চলে যাও এখন।”
কপট রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বলে তাবাসসুম।যদিও ঐশী,সিন্থিয়া সহ তার কাজিন গ্রুপের তিন জন ইতিমধ্যেই রাসেলকে দেখে ফেলেছে।তবুও সাবধানী বার্তা শোনায় সে।প্রেয়সীর বাক্যটা যেনো শুনেও কানে নিলো না রাসেল।ছাদে করা হলুদের মঞ্চের উপর থেকে মেহেদীর কোনটা নিয়ে আসে সে।তাবাসসুমের মেহেদী পড়ানো হাতটা টেনে নিয়ে বলে,
“হাতটা এদিকে দাও তো দেখি।”
বিষ্মিত হয় তাবাসসুম।ভ্রু কুটি করে বলে,
“কি করবে?”
তাবাসসুমের কথার উত্তর দেয় না রাসেল।বরং নিজের কাজে মনোনিবেশ করে।মেয়েটির হাতের আঙুলের কিঞ্চিৎ ফাঁকা জায়গায় ছোট্ট করে ইংরেজি হরফে আর লিখে দেয় সে।তারপর অভিজ্ঞ নয়নে দেখে বলে,
“নাও পার্ফেক্ট।”
একটু পর আবার বলে,
“দেখো প্রেমের মধুর প্লানিং শুধু তোমার না আমার মাথায়ও খেলে।”
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে তাবাসসুম।রাগটা নিমিষেই পড়ে যায়।রাত বাড়ছে।বাড়ি ফেরার পথ ধরে রাসেল।তাবাসসুমও গুটি গুটি পা ফেলে নিজ ফ্লাটে চলে আসে।
_______
সময় গড়িয়ে প্রহরে নিমজ্জিত হতেই ঝিমিয়ে ওঠে পরিবেশ।একে একে ঘুমিয়ে যায় বেশিরভাগ সদস্য।অনেকে আবার রাতের কাজের বরাদ্দ দিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত।ঐশীও তাদের দলে।হাতের কাজটা সেড়ে ঘরে প্রবেশ করে সে।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় যাওয়ার পূর্বে সে খেয়াল করে সর্বদা স্থির চিত্তের পুরুষটি আজ বেশ ছটফট করছে।ভ্রু কুঞ্চিত করে ঐশী।বিচক্ষণের সহিত কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করে।অতপর ভাবুক হয়ে বলে,
“কোনো সমস্যা?মাথা ব্যাথা করছে নাকি?”
“ভীষণ।”
অস্ফুটস্বরে ছোট্ট করে জবাব দেয় সাদাত।বুকের মাঝে ধক করে ওঠে ঐশীর।লোকটা তো অল্পতে এতোটা কাতর হওয়ার ব্যক্তি নয়।নিশ্চয় অনেকটা বেশি পেইন হচ্ছে জন্য এমন করছে সে।বিচলিত হয় ঐশী।ফাস্ট এইড বক্স থেকে একটা পেইন কিলার এনে খাইয়ে দেয়।বাধ্য ছেলের মতো কোনো দ্বিরুক্তি ব্যতিরেকে ঔষধটা খেয়ে নেয় সাদাত।অতপর আবারও বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ দু’টো বন্ধ করে সে।দু’চোখের পাপড়ি হালকা ভিজে ওঠে।বুকটা হু হু করে ওঠে ঐশীর।লোকটার মাথার ব্যাথা হৃদয়ে ব্যাথা সৃষ্টি করে তার।আল্লাহর কাছে দোয়া করে সাদাতের মাথা ব্যাথাটা দ্রুত নিরাময়ের জন্য।সে জানে এই মেডিসিন কাজ করতেও খানিকটা সময় নেবে।এতোটা সময়ে লোকটার কষ্ট সহ্য হবে না তার।ব্যস্ত হয়ে সে বলে,
“আদা চা করে দেবো?খাবেন?স্বস্তি মিলবে খানিকটা।”
কথাটা বলে সাদাতের প্রতিউত্তরের অপেক্ষা না করেই উঠে পড়ে ঐশী।এক কদম ফেলতেই অনুভব করে তার হাতটা কারো শক্ত বাঁধনে বাঁধা পড়ে গিয়েছে।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সে।তার হাতের কব্জি সাদাতের হাতে আবদ্ধ দেখে ভ্রু কুটি করে সে।চোখ বুজে থেকেই সাদাত বলে,
“প্রেমিকার হাতের আঙুল যেখানে পারফেক্ট টোটকা।আদা চা করা সেখানে চরম বোকামি।কিসে আমার মাথার যন্ত্রণা সাড়বে সেটাও কি তুমি বোঝো না?”
সাদাতের জড়ানো কণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ায় ঐশী।লোকটা যে পরোক্ষভাবে তার মাথা টিপে দিতে বলছে স্পষ্ট বোঝে সে।ব্যাথায় কাতর প্রেমিকের এই আবদার উপেক্ষা করার শক্তি নেই ঐশীর।আবারও বসে পড়ে সে।পরম যত্নে হাত গলিয়ে দেয় সাদাতের ঘন চুলে।নরম হাতের যাদুমিশ্রিত স্পর্শ ও তখনের খাওয়া মেডিসিনের দরুন দ্রুতই ব্যাথা সেড়ে যায় সাদাতের।দু চোখে নামে ঘুমের বর্ষন।কিন্তু চোখের কপাট খুলে ফেলে সে।হলুদের জন্য গায়ে জড়ানো পাঞ্জাবি তখনও গায়ে মোড়ানো।মাথা ব্যাথার তীব্রতায় খোলা হয় নি। ওভাবেই শুয়ে পড়েছিলো সে।মাথায় তখনও ঐশী হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।পুরোপুরি প্রশান্তি অনুভূত হতেই জাগ্রত হয় তার দুষ্ট মন।যেই হাতের যাদুতে ব্যাথা মুক্তি পেলো সেই হাতে একটু অধর না ছোঁয়ালে যে অন্যায় হয়ে যাবে।অন্যায়টা শুধরে নিতে আকষ্মিক ঐশীর হাত নিজের হাতের দখলে পুরে নেয় সাদাত।অধর ছোঁয়ানোর উদ্দেশ্যে মুখের নিকট আনার পূর্বেই লক্ষ করে হাতটা ফ্যাকাসে।বিষ্মিত হয় সে।
“তুমি মেহেদী লাগাও নি?”
মাথা দুলিয়ে নাকচ করে ঐশী।
“ব্যস্ততায় সময় হয়ে ওঠেনি।”
তড়িৎ উঠে বসে সাদাত।টেবিলের উপর থেকে একটা মেহেদীর কোন নিয়ে এসে আদেশ করে বলে,
“এই নাও।এখনই মেহেদী লাগাবে তুমি।”
“কি দরকার এতো রাতে মেহেদী লাগানোর?আর এখন বড় হয়ে গিয়েছি আমি।ওসবে অতো আগ্রহ নেই।”
ভাবলেশহীন ভাবে কথাগুলো বলে ঐশী।তড়িৎ কথাটা কেড়ে নেয় সাদাত।গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“তোমার আগ্রহ না থাকলেও আমার আছে।আমার আগ্রহ রক্ষার্থেও আমার বউয়ের ফ্যাকাসে হাত দুটো রাঙা করা উচিৎ তোমার।”
বাক্যদুটির মাঝে এক অদৃশ্য শক্তির রাজত্ব খেলা করলো যেনো।যা উপেক্ষা করার সাধ্য ঐশীর নেই।এই মাঝ রাতে অন্যরকম এই পুরুষটির সাধ মেটাতে মেহেদী লাগাতে ব্যস্ত হলো সে।সেখানে ঠায় বসে রইলো সাদাত।সে উঠলেই যদি ঐশী তার ডিজাইনে ফাঁকি দেয়।এই ভয় নড়তে দিলো না তাকে।গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখে গেলো প্রেয়সীর নিজেকে রাঙানোর প্রচেষ্টা।ব্যাপারটা সুক্ষ্ম হাসির সন্ধান দিলো ঐশীর ঠোঁটে।সাদাতের কাণ্ড দেখে সে হালকা হেসে বললো,
“আপনি কি পা’গল?মাথা ব্যাথাটা একটু কমতেই পাগলামো জুরে দিয়েছেন।যান ফ্রেশ হয়ে নেন।”
সরু চোখে তাকায় সাদাত।ডিজাইনের সমাপ্তি মুহুর্তে এসে উঠে দাঁড়ায়।ওয়াশরুমে যেতে নিয়ে ধাতস্থ কণ্ঠে বলে,
“সব প্রেমিক পুরুষই পা’গল।শুধু জীবনে একটা শখের নারীর প্রয়োজন।”
মুহুর্তেই ঐশীর হৃদয়জুরে শীতেরা হানা দিলো।অজানা অনুভুতির সাক্ষাৎ পেলো আবারও।শখের নারী শব্দটা তোলপাড় তুলে দিলো হৃদয়ে।সে সাদাতের শখের নারী।এর চেয়ে মধুর সম্বোধন দ্বিতীয়টি আর হয় নাকি!স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সে সাদাতের দিকে।ঠোঁটের হাসি যেনো আরও আশকারা পেলো।প্রশস্ত হলো মুহুর্তেই।
চলবে