#ভালোবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২৯
শুভ্রর কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে রোজ। দুজনে একটা চাদরের নিচে বসা। চাঁদের আলো দুজনের উপরই পড়ছে। আজ যেন চাঁদ, তারাও ওদের দেখে হিংসা করছে। হঠাৎ শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” এখন আর আমার কোনকিছু চাওয়ার নেই। কারণ আমি তোমাকে পেয়ে গিয়েছি। ভালবাসি রেড রোজ খুব ভালবাসি তোমাকে। আচ্ছা আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো? আমি ভাবছি আমি তোমাকে লন্ডন নিয়ে যাবো। আমি যেখানে ছিলাম তোমাকে সব ঘুরিয়ে দেখাবো। তুমি কিছু বলছো না যে?”
শুভ্র তাকিয়ে দেখলো রোজ ঘুমিয়ে পড়েছে। চাঁদের সবটুকু আলো রোজের ফর্সা মুখে উপচে পড়ছে। এই মুহূর্তে শুভ্রর কাছে রোজকে আরো বেশী মায়াবী লাগছে। ঘুমালে নাকি মেয়েদের বেশী মায়াবী লাগে। শুভ্র আজকে সেটার প্রমাণ আবার পেলো। এর আগেও রোজ ঘুমালে এভাবেই শুভ্র তাকিয়ে থাকতো। শুভ্র আস্তে চাদর সরিয়ে রোজকে কোলে তুলে নিলো। রোজকে ওর রুমে শুইয়ে কম্বল টেনে দিলো। এরপর রোজের কপালে ভালবাসার পরশ একে চলে এলো। রুমে এসে শুভ্রও শুয়ে পড়লো,
সকাল ১০টা সবাই সাদা ড্রেস পড়ে বসে আছে। চারদিকে আবির আর আবির। কারণ আজকে রং খেলা। ৭দিনই ধরেই চলতে থাকবে আয়োজন। আজ আবির খেলবে সবাই। যার কারণে মেয়েরা সাদা থ্রি পিচ আর ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবী পড়েছে। এরমাঝে রোজ আর শুভ্র হাজির হলো। ওদের দেখে সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কারণ রোজ থ্রি পিচ না পড়ে সাদা চুরিদার পড়েছে। আর শুভ্র সাদা শার্ট, প্যান্ট পড়েছে। ওরা সবাই ওদের দিকে এগিয়ে গেলো। সামির কপালে ভাজ ফেলে বললো।”
—-” শুভ্র তুই পাঞ্জাবী পড়িসনি কেন?”
শুভ্র ভাব নিয়ে বললো,
—-” আমি ইউনিক থাকবো তাই।”
রাইসা রোজের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” রোজ থ্রি পিচ পড়েনি কেন?”
—-” রোজও ইউনিক থাকবে।”
শারাফ আবির নিয়ে এসে বললো,
—-” শালা তোদের ইউনিক বের করছি।”
শুভ্র ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” নো আগে আমি রেড রোজকে আবির লাগাবো আর রেড রোজ আমাকে ওকে? তারপর তোরা আমাদের আবির লাগাস নো প্রবলেম।”
রিক দু হাত কানে দিয়ে বললো,
—-” হায় কি ভালবাসা। নাজার না লাগে।”
চৈতি এগিয়ে এসে বললো,
—-” হ্যা ওরা দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসে। তোমার মতো নাকি হু?”
রিক কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” এই তুমি কি বলতে চাও? আমি তোমাকে ভালবাসি না?”
চৈতি কিছু বলবে তারআগে জারা বললো,
—-” সবাই, সবাইকে ভালবাসে। শুধু শারাফ জারাকে ভালবাসে না।”
শারাফ জারার কান টেনে বললো,
—-” তোমাকে বলেছি না? বাচ্চা আছো বাচ্চা থাকো।”
জারা ওর উচু হিল দিয়ে শারাফের পায়ে পাড়া দিয়ে বললো,
—-” আপনাকে বলেছি না? আমাকে বাচ্চা বলবেন না,
শারাফ পা ধরে লাফাচ্ছে। সামির দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” বলেছিলাম না তোকে? আমার বোনকে বাচ্চা বলিস না। আমি ওকে বাচ্চা বলেছিলাম খাবার টেবিলে। ও আমাকে নুন খাইয়ে দিয়েছিলো,
জারা ভাব দেখিয়ে বললো।”
—-” জাস্ট রিমেম্বার আই এম জারা খাঁন,
রোদ চোখ বড়, বড় করে বললো।”
—-” জারা তুমি সত্যিই সামিরকে নুন খাইয়েছো?”
নিরব নিজের কান নিজে টেনে বললো,
—-” ইজ ইট ট্রু জারা?”
শারাফ আবির রেখে বললো।”
—-” ও যা মেয়ে ওর ধারা সব সম্ভব,
জারা মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” হ্যা নুন খাইয়েছি,
সবাই হু হা করে হেসে দিলো। সামির অসহায় মুখ করে দাড়িয়ে আছে। রাইসা সামিরের গালে হাত রেখে বললো।”
—-” আহারে বেবি থাক বেবি কাঁদে না। ও তো কেবল নুন খাইয়েছে সোনা। তোমার তো ভাগ্য ভাল ওটা জারা ছিলো। জারার জায়গায় আমি থাকলে তো তোমাকে নুনের সরবত খাওয়াতাম সোনা বাবু,
সামির কাঁশতে শুরু করলো। সবাই তো হাসতে, হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। রাইসা সামিরের পিঠে দামদুম কয়েক কিল মেরে বললো।”
—-” কাশি থামলো?”
সামির কাঁদো, কাঁদো ফেস করে বললো,
—-” ভাই তোরা আমার জন্য মেয়ে দেখ। এই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না। আর শারাফ তুই আমার বোনকে বিয়ে করে নে প্লিজ। কারণ এরা দুজন একসাথে হলে আমি সামির শেষ। তোরা আর আমাকে খুজে পাবি না।”
রাইসা রাগী লুক নিয়ে বললো,
—-” কি বললে?”
সামির মিনমিন করে বললো।”
—-” বললাম তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না,
সামিরের কথায় কারো হাসি থামছে না। তনয়া হাসি থামিয়ে বললো।”
—-” ওকে চলো আবির খেলি,
রোজ দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” আহারে সামির ভাইয়া,
সামির মুখ কাঁচুমাচু করে চললো আবির খেলতে। এদিকে শুভ্র আগে রোজকে আবির লাগালো। তারপর রোজের গাল থেকে নিজের গালে লাগালো। রোজ গোল, গোল চোখ করে বললো।”
—-” কেউ দেখলে কি হবে?”
শুভ্র চোখ টিপ মেরে বললো,
—-” বলবে বউ তার স্বামীকে আবির লাগাচ্ছে।”
রোজ শুভ্রকে সরিয়ে চলে গেলো। সব কাপলই আগে আবির লাগিয়েছে তারপর বাকীরা। জারা শারাফকে আবির লাগাতে গেলে শারাফ বললো,
—-” আমি কি তোমার কাপল নাকি?”
জারা শারাফকে আবির লাগিয়ে বললো।”
—-” হতে কতক্ষণ?”
______________
বলে জারা চলে গেলো। আবির দিয়ে একেকটা ভুত হয়ে গিয়েছে। বক্সে গান চালিয়ে এলো তিথি। সবাই গানের তালে ডান্স করছে। রোজ আর শুভ্র সামনে,
🎶ইতনা মাজা কিউ আরাহা হে🎶
🎶তুনে হাওয়া ম্যা ভাং মিলায়া🎶
🎶দুগনা নেশা কিউ হোরাহা হে🎶
🎶আখো সে মিঠা তুনে খিলায়া🎶
ঈশান এসে সবাইকে গ্লাসে কিছু দিলো। সবাই গানের তালে নাচতে, নাচতে খেয়ে নিলো। ঈশান দাত কেলিয়ে নাচতে শুরু করলো।”
🎶ওহ তেরী মাল, মালকি কুর্তি গুলাবী হোগায়ী🎶
🎶মাচালী চাল ক্যাসে নাওয়াবী হোগায়ী🎶
🎶তো বালাম পিছে খারী জো তুনে মুঝে মারী🎶
🎶তো সিধি সাধি চোরী সারাবি হোগায়ী🎶
সবার মাথা ঘুরছে রীতিমত। সবাই একজন, আরেকজনের দিকে তাকিয়ে দাত বের করছে। বক্সের সাউন্ড আরো বারিয়ে দিতে বললো। এরপর আবার নাচতে শুরু করলো। তবে এটাকে নাচ বললে ভুল হবে। কারণ এখন নাচ কম লাফাচ্ছে বেশী। শুভ্র লাফাতে, লাফাতে থেমে গেলো। একবার রোজের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার চোখ ডলছে। চোখ ডলে আবারো তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে মাতাল কন্ঠে বললো,
—-” দু দুটো রেড রোজ।”
রোজ লাফানো বন্ধ করে বললো,
—-” আরে আমি একটাই রেড রোজ।”
এবার রোজও দুজন শুভ্র দেখছে। রোজও চোখ ডলে মাতাল কন্ঠে বললো,
—-” দু দুটো গন্ডার?”
রাইসা ডিজের কাছে গিয়ে টলতে, টলতে বললো।”
—-” এহ ডিজে তাহেরী কাক্কুর গান চালা ও মুর্শিদ,
ডিজে রাইসার কথামত ওই গান চালালো। সবাই তো উরাধুরা লাফালাফি করছে। ঈশান হাসতে, হাসতে ধপাস করে নিচে পড়লো। কারণ ঈশান ওদের ভাং খাইয়েছে। ঈশানের মা এসেছিলো সবাইকে ডাকতে। কিন্তুু এসে সবাইকে এভাবে লাফাতে দেখে ওনার চোখ কপালে উঠে গেলো। উনি ভেতরে গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে এলো। ঈশানের বউও এলো ঈশানের বউ প্রিয়া ৬মাসের প্রেগন্যান্ট। সবাই হা করে ওদের দেখছে। লিমিট ছাড়া লাফাচ্ছে সবাই। শুভ্র রোজকে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তুু রোজ শুভ্রর হাত ধরেই লাফাচ্ছে। প্রিয়া বুঝলো এটা ঈশানের কাজ। শুভ্রর বাবা গিয়ে গান বন্ধ করতে বললো। সবাই লাফানো বন্ধ করে বললো।”
—-” এহ ডিজের বাচ্চা গান চালা,
ওনারা সবাই ওদের ভেতরে আনার চেষ্টা করছে। এরমাঝে জারা ভ্যা, ভ্যা করে কেঁদে বললো।”
—-” শারাফ একটুও ভালবাসে না আমাকে। এ জীবন রেখে কি হবে আমার?”
জারার কান্না দেখে রোজও ভ্যা, ভ্যা করে কেঁদে বললো,
—-” আমিও এ জীবন রাখবো না। আমার বিয়ে হয়েছে কবে তাই না? কিন্তুু আমার বর এখনো আমাকে কিস করলো না এ্যা, এ্যা।”
এবার তিথি, চৈতি, রাইসা, তনয়া একসাথে কেঁদে দিলো। শুভ্রর মা তো রোজের কথা শুনে এমনিতেই গোল, গোল চোখ করে আছে ইনফ্যাক্ট সবাই। ওদের কাঁদতে দেখে বললো,
—-” তোমাদের কি হলো?”
সবাই একসাথে বললো।”
—-” আমাদের বিয়ে দাও,
সবার মনে হচ্ছে চোখ বেরিয়ে আসবে। এবার সব ছেলেরা একসাথে বললো।”
—-” আমরা বিয়ে করতে চাই,
শুভ্র টলতে, টলতে বললো।”
—-” আমার বউ কিস চায়। এক কাজ করি এখানেই কিস করে দেই। তো্ তোমরা চোখ বন্ধ করো,
চোখ বন্ধ তো থাক দুরে। শুভ্রর কথায় সবার চোখ খুলে হাতে চলে আসবে টাইপ অবস্থা। লেবুর পানি এনে ওদের অনেক কষ্টে খাওয়ালো। এরপর ছেলেদের এক রুমে আর মেয়েদের আরেক রুমে পাঠালো। রুমে এসে সবাই বিছানায় হাত, পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। ওদের ঘুম ভাঙলো বিকেলবেলা। নিরব আর শুভ্র আগে উঠে সবাইকে ওঠালো। সবাই মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসলো। রোদ মাথা চেপে ধরে বললো।”
—-” আমরা এখানে কেন?”
শুভ্র চোখ ডলে বললো,
—-” সেটা তো আমিও ভাবছি। আমরা তো আবির খেলছিলাম না? তো এখানে কি করে এলাম?”
পাশের রুম থেকে মেয়েদের চেঁচানোর আওয়াজ পেয়ে ওরা ওই রুমে গেলো। আর গিয়ে সবাই হা হয়ে গেলো। মেয়েরা চুল টানাটানি করছে। রোজ চৈতির চুল টানছে আর বলছে।”
—-” তুই আমাদের কি খাইয়েছিস বল? সত্যি কথা বল নয়তো তোকে টাকলু করে দেবো,
চৈতিও রোজের চুল টানছে আর বলছে,
—-” আমি না তুই খাইয়েছিস।”
জারা রাইসার চুল টেনে বললো,
—-” এই রাইসা ভাবী অনেক ফাজিল এটা ওর কাজ।”
রাইসা জারার চুল আঙুলে পেঁচিয়ে টেনে বললো,
—-” তো তুমি কি মাওলানা নাকি? এটা তোমারই কাজ।”
তিথি তনয়ার আর তনয়া তিথির চুল টানছে আর বলছে,
—-” স্বীকার করো এটা তোমার কাজ। নাহলে চুল টেনে টাকলা বানিয়ে ফেলবো আজ।”
এরমাঝে প্রিয়া ঈশানকে এনে বললো,
—-” তোমরা থামো সবাই। এটা ঈশানের কাজ। ও তোমাদের ভাং খাইয়েছে।”
সবাই সবার চুল ছেড়ে ঈশানের দিকে তাকালো। আর শুভ্র, সামির ওরা হাতা ফোল্ড করছে। ভাব খারাপ দেখে ঈশান ভো দৌড় দিলো। ঈশানের পিছনে ওরা সবাই দৌড় দিলো। ঈশানকে ধরে ধামধুম কিল বসিয়ে শান্ত হলো সবাই,
_____________
আজকে বয়েস পার্টি মেয়েরা জ্বলছে। কারণ বড়রা বলে দিয়েছে যেহেতু এটা বয়েজ পার্টি তাই মেয়েরা এখানে এলাও না। ছেলেরা মেয়েদের দেখিয়ে কে কোন ড্রেস পড়বে ঠিক করছে। আবার পার্টিতে কি, কি করবে শুনিয়ে, শুনিয়ে বলছে। রোজ রাগী লুক নিয়ে বললো।”
—-” আজব আমাদের শোনানোর কি আছে?”
—-” ইশ রেড রোজ হিংসা হচ্ছে?”
দাত বের করে বললো শুভ্র। রোজ চোখ গরম করে বললো,
—-” আপনি চুপ করবেন?”
ছেলেরা মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” চল এই অবলা নারীদের সাথে কথা বলিস না। এরা পারে শুধু ঝগড়া করতে। আমরা বরং গিয়ে মিউজিক সিলেক্ট করি,
বলে ছেলেরা হেলে, দুলে চলে গেলো। এদিকে মেয়েরা প্লান করছে কিভাবে ওদের পার্টি পন্ড করা যায়। অতঃপর প্লান একটা পেয়েই গেলো।”
রাত ৯টা ছেলেরা পার্টি করছে। মেয়েরা সেখানে প্রবেশ করলো ওয়েটার সেজে। টাকা দিয়ে সব ওয়েটার ভাগিয়ে দিয়েছে। নিজেরা ওয়েটারের পোশাক পড়েছে। মোচ, দাড়ি লাগিয়েছে নকল। মাথায় আবার ক্যাপ পড়েছে চেনার উপায় নেই। করল্লার জুস নিয়ে দাত কেলিয়ে ঢুকলো সবাই। ছেলেদের তো ড্রিংক করে সেন্স নেই ঠিকমত যে কি করছে। শুভ্র টলতে, টলতে মাতাল কন্ঠে বললো,
—-” এই ওয়েটার এখানে আরো ড্রিংক নিয়ে এসো।”
রোজ ভেংচি কেটে বললো,
—-” গেলাচ্ছি মদ গার্লস চলো।”
ওরা গিয়ে সবার হাতে করল্লার জুস দিয়ে দুরে এসে দাড়ালো। সবাই ওই করল্লার জুস মুখে দিয়েই ওয়াক, ওয়াক করতে শুরু করলো। মেয়েরা একটু এগিয়ে একসাথে বললো,
—-” কি গো ছেলেরা? পার্টি করতে, করতে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলেন নাকি?”
ছেলেরা চোখ ডলে ওদের দৌড়ানি দিলো। ওরা সবাই দৌড়ে চলে এলো। এদিকে ওদের মুখের অবস্থা খারাপ। সবাই ব্রাশ করছে, মিষ্টি খাচ্ছে কিন্তুু তেতো যাচ্ছে না। ওদের অবস্থা দেখে সবাই হাসতে, হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। ছেলেরা রাগী ভাবে বললো।”
—-” ওদের পার্টিও আমরা পন্ড করবো,
আজকে গার্লস পার্টি। মেয়েরা যথেষ্ট সাবধানে আছে। ওদের মনে ভয় আছে কাল ওরা যা করেছে ছেলেরা নির্ঘাত আসবে প্রতিশোধ নিতে। ছেলেরা প্লান করছে কি করা যায়। ঈশান আর নিরব বললো।”
—-” তোরা এত ভয় পাচ্ছিস কেন?”
রিক মিনমিন করে বললো,
—-” ওরা যে বিচ্ছু বাহিনী। আমাদের ধরতে পারলে আমরা শেষ।”
শারাফ নখ কামড়ে বললো,
—-” একদম ঠিক আমাদের যাওয়ার দরকার নেই। আমি বরং থানায় চলে যাই।”
রোদ শারাফের পিঠে এক কিল মেরে বললো,
—-” শালা তুই তো ছুটি নিয়েছিস। আমাদের ওখানে যেতে হবে না। আমরা এখানে বসে আড্ডা মারি।”
—-” হ্যা রোদ ঠিক বলছে,
সামিরের কথা শুনে নিরব বললো।”
—-” তোরা এত ভীতু?”
শুভ্র বিছানায় বসে বললো,
—-” আমারও মনে হচ্ছে যাওয়া উচিত না। যারা করল্লার জুস খাওয়াতে পারে তারা সব পারে।”
নিরব আর ঈশান আড়ি দিয়ে বললো,
—-” আমরা যাবো তোরাও যাবি।”
ওদের টানাটানিতে সবাই চুপিচুপি গেলো। মেয়েরা সেই ডান্স করছে। একেবারে কাপল ডান্স দিচ্ছে। রোজ আর চৈতি, জারা, রাইসা, তনয়া আর তিথি। ছেলেরা হা করে বললো,
—-” কাপল ডান্সই যখন দিবি আমাদের ডাকতি। আমরা কি দোষ করলাম?”
রোজের চোখ গেলো শুভ্রর দিকে। রোজ ফিসফিস করে বললো।”
—-” ওই দেখো ছেলেরা এসেছে,
রাইসা নাচতে, নাচতে বললো।”
—-” দেখো আজ ওদের কি করি,
রাইসা চুপিচুপি ভেতরে গিয়ে শাড়ি নিয়ে এলো। এরপর ধীর পায়ে গিয়ে ছেলেদের ঘিড়ে ধরলো। সামির কাঁচুমাচু করে বললো।”
—-” বলেছিলাম না আসতে হবে না,
রিক, শুভ্র, রোদ আর শারাফ বললো।”
—-” আমরাও বলেছিলাম,
জারা ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” তাহলে কে আসতে বলেছে?”
সবাই নিরব আর ঈশানকে দেখিয়ে দিলো। ওরা দুজন ঢোক গিলে বললো,
—-” এসেছি চলে যাবো। আর আসবো না হে হে।”
তিথি কোমড়ে হাত রেখে বললো,
—-” সে তো যাবেই। তারআগে এখানে আসার শাস্তি তো পেতে হবে নাকি?”
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” কি শাস্তি?”
—-” গার্লস পার্টিতে এসেছো তোমরা। গার্লস হওয়ার খুব শখ তাই না? এবার এই শাড়ী পড়ে তোমাদের নাচতে হবে বুঝেছো?”
রোজের কথায় সবার কাশি উঠে গেলো। সবাই মিলে নিরব আর ঈশানকে ফাঁসিয়ে দিলো। নিরব আর ঈশান অসহায় ফেস করে বললো,
—-” প্লিজ ছেড়ে দাও আর এমন হবে না।”
শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো,
—-” চলো মেয়েরা ওদের শাড়ী পড়াও।”
ছেলেরা আর মেয়েরা ধরে ওদের দুজনকে শাড়ী পড়িয়ে দিলো। রাইসা আর চৈতি গিয়ে শাহেনশাহ মুভির রসিক আমার গান চালালো। এরপর ওদের কাছে এসে বললো,
—-” নিরব ভাইয়া শাকিব খাঁন আর ঈশান ভাইয়া নুসরাত ফারিয়া।”
নিরব একটানে নিজের শাড়ী খুলে বললো,
—-” শাকিব খাঁন কি শাড়ী পড়া ছিলো নাকি? চলো আমার নুসরাত ফারিয়া নাচতে শুরু করো।”
ঈশান কাঁদো, কাঁদো ফেস করে নাচছে। আর সবাই তো রীতিমত হাসতে, হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে,
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৩০
ঈশান কাঁদো, কাঁদো ফেস করে নাচছে। আর সবাই তো হাসতে, হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সবাইকে হাসতে দেখে ঈশান শাড়ি খুলে বললো।”
—-” আমি আর নাচতে পারবো না,
নিরব মুখ চেপে হেসে বললো।”
—-” নুসরাত আমাকে ছেড়ে যেয়ো না,
ঈশান নিরবের পিঠে দুম করে এক কিল মেরে বললো।”
—-” চুপ কর শয়তান। এসব তোর জন্য হয়েছে,
রোজ হাসি থামিয়ে বললো।”
—-” ওকে, ওকে অনেক হয়েছে শাস্তি। এবার চাইলে তোমরা পার্টিতে থাকতে পারো,
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” রাত কটা বাজে দেখেছো? অনেক মজা করেছো আর না। এবার যাও সবাই ঘুমাতে যাও,
—-” না আমরা পরে ঘুমাবো।”
শুভ্র রোজের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো। আর কি সবাই চলে গেলো ভিতরে। ড্রেস চেঞ্জ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল ৯টায় সবাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এলো। আজকে মেহেন্দি অনুষ্ঠান। মেহেন্দি আর্টিস্টদের আসতে বলেছে সন্ধ্যায়। শীত প্রচুর সবাই শীতে কাঁপছে। রোদ কাঁপতে, কাঁপতে বললো,
—-” কফি পাবো?”
ঈশানের বউ প্রিয়া বললো।”
—-” ভাইয়া আমি নিয়ে আসছি,
রোদ হালকা হেসে বললো।”
—-” এই না তোমার যেতে হবে না,
তনয়া উঠে গিয়ে সবার জন্য কফি নিয়ে এলো। সবাই বসে কফি খাচ্ছে শারাফ জারাকে বললো।”
—-” ব্রাশ করেছো তুমি?”
জারা কপাল কুঁচকে বললো,
—-” কি বলতে চান আমি খবিশ?”
শারাফ দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” আমি কি সেটা বলেছি? বলে না চোরের মন পুলিশের দিকে থাকে,
—-” কি আমি চোর? আপনার এত বড় সাহস? আমাকে চোর বলেন আপনি? পুলিশ হয়েছেন বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন হ্যা? আপনি চোর আপনার চৌদ্দ গুষ্টি যে যেখানে আছে সবাই চোর হু।”
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। এরমাঝে একজন মহিলা এসে বললো,
—-” কি হয়েছে মা? ওকে চোর বলছো কেন?”
—-” আর বলবেন না আন্টি। এই ছেলেকে আমি প্রথম দেখেই ক্রাশ খেয়েছি। আর খাবো নাই বা কেন বলুন? এই ছেলেটা এত কিউট যে তাই। আসলে তো আমি আগে শুভ্র ভাইয়াকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলাম। কিন্তুু পরে জানলাম উনি রোজ ভাবীর জামাই। সে যাইহোক এই ব্যাটাকে আমি ভালবাসি। আর এই ব্যাটা আমাকে পাত্তাই দেয় না। বলুন তো আমি কি সুন্দরী না? আমাকে কি ভালবাসা যায় না? আমাকে আগে চোর বলেছে তাই আমিও বললাম। এর মা কে পেলে জানতে চাইতাম আমাকে পছন্দ হয়েছে কি না?”
জারার কথা শুনে মহিলাটি হেসে বললো।”
—-” খুব পছন্দ হয়েছে,
সবাই মুখ টিপে হাসছে। শারাফ হা করে তাকিয়ে আছে। জারা কপালে ভাজ ফেলে বললো।”
—-” আমাকে তো দেখেনি সে,
মহিলাটি জারার মাথায় হাত রেখে বললো।”
—-” দেখেছে আর কথাও বলেছে। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে মা,
জারা কপাল কুঁচকে বললো।”
—-” আপনার পছন্দ হলে কি হবে?”
—-” তোমাকে আমার ছেলের বউ করবো,
জারা ওনার হাত সরিয়ে বললো।”
—-” কি বলছেন আপনি? আমি এই শারাফের বউ হবো আর কারো না। আপনার ছেলের বউ হবো না আন্টি,
মহিলাটি এবার মুচকি হেসে বললো।”
—-” আমিই শারাফের মা,
জারার চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গিয়েছে। একবার ওনার দিকে তাকাচ্ছে। একবার শারাফের দিকে আরেকবার সবার দিকে। জারা মিনমিন করে বললো।”
—-” আগে বলবেন না? এতকিছু বলে ফেললাম। সরি আন্টি কিছু করবেন না। ই্ ইয়ে মানে আমি,
শারাফের মা আবার বললো।”
—-” তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে,
জারা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।”
—-” সত্যি?”
উনি মাথা নেড়ে হ্যা বললো। জারা ততক্ষণান ওনাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” শাশুড়ি মা আপনার ছেলেকে বলুন আমাকে ভালবাসতে। উনি আমাকে ভালবাসে না কেন?”
শারাফের মা জারার তালে, তাল মিলিয়ে বললো,
—-” তুই ওকে ভালবাসিস না কেন?”
শারাফ হা করে থেকে উঠে চলে গেলো। শারাফের পিছনে জারাও গেলো। সবাই ওদের কাহিনী দেখে হাসছে। রিক হাসতে, হাসতে বললো।”
—-” সামির তোর বোন কি রে ভাই?”
সামির হাসি থামিয়ে বললো,
—-” আরে আমিও অবাক হয়েছিলাম। প্রথমদিন বাড়ি গিয়ে আমার সাথে যা করেছিলো যেন আগে থেকে আমাদের পরিচয়। যাইহোক এমন বোন থাকা ভালো। মন খারাপ থাকলে ওই মন ভাল করে দেয়। অনেক জ্বালায়ও রে আমাকে।”
রোদ দাত কেলিয়ে বললো,
—-” লাইক আমার ব্ল্যাক রোজ।”
রোজ রাগ দেখিয়ে বললো,
—-” আমি তোকে জ্বালাই?”
রোদ ভাবুক ভাবে বললো।”
—-” জ্বালাস না আমাকে? তাহলে আমি মেইবি ভুল বলেছি তাই না শুভ্র?”
শুভ্র মুখ টিপে হেসে বললো,
—-” হ্যা তাই হবে হয়তো।”
নিরব এদিক, ওদিক তাকিয়ে বললো,
—-” আমারও মনে পড়ছে গোলাপ রোদকে জ্বালায়।”
রোজ কফির মগ শব্দ করে রেখে চলে গেলো। রোজের পিছনে সব মেয়েরা গেলো। রুমে এসে সবাই ড্রেস পছন্দ করছে কে কোনটা পড়বে? রোজের জন্য সবুজ লেহেঙ্গা রেখেছে শুভ্র। সবুজের উপর স্টোন বসানো। রোজ আয়নার সামনে গিয়ে গায়ে জড়িয়ে দেখে নিলো। ফর্সা শরীরে ভালই মানিয়েছে। ওরা ড্রেস পছন্দ করে রেখে গল্পে মেতে উঠলো। একটুপর জারাও এসে যোগ দিলো। অনেকক্ষণ গল্প করে সবাই শাওয়ারে গেলো,
______________
সন্ধ্যায় সবাই রেডি হয়ে স্টেজের কাছে এলো। রোজকে তনয়া আর তিথি নিয়ে এসেছে। সব মেয়েরা লাল লেহেঙ্গা পড়েছে। তারমাঝে রোজ একা সবুজ পড়েছে। তেমনি সব ছেলেরা লাল পাঞ্জাবী পড়েছে। শুভ্র একা সবুজ পাঞ্জাবী পড়েছে। সাথে কালো জিন্স প্যান্ট। হাতে কালো ব্রান্ডের ঘড়ি। চোখে কালো সাইন গ্লাস। চুলগুলো নরমাল রেখেছে সিল্কি হওয়ায় কপালে এসে পড়ে রয়েছে। শুভ্র এক নজরে রোজের দিকে তাকিয়ে আছে। রোজও শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই মিটিমিটি হাসছে ওদের দেখে। রোজকে নিয়ে মেহেন্দির স্টেজে নিয়ে বসালো। মেয়েরা মেহেন্দি দিতে শুরু করবে এমন সময় শুভ্র বলে উঠলো।”
—-” ওর এক হাতে আমি মেহেন্দি দেবো,
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” আপনি পারেন মেহেন্দি দিতে?”
শুভ্র টুপ করে রোজের পাশে বসে বললো,
—-” দেখোই না।”
একহাতে শুভ্র মেহেন্দি দিচ্ছে একহাতে আর্টিস্টরা। সবাই খুব উৎসুক হয়ে দেখছে। ৪৫মিনিট পর শুভ্র বললো,
—-” জাস্ট সি রেড রোজ।”
রোজ নিজের হাত দেখে অবাক হয়ে গেলো। শুভ্র একটা ডিজাইন করে হাতের তালুতে বর, বউ আর্ট করেছে। সেটার মাঝে আবার রোজ-শুভ্র লেখা। রোজ অবাক চোখে বললো,
—-” ওহহহ মাই গড এটা কোথাথেকে শিখেছেন?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” রাতে ইউটিউব থেকে দেখেছি,
সবাই ডিজাইন দেখে চমকে গেলো। আর্টিস্টরা অবাক হয়ে বললো।”
—-” রিয়েলি ইটস আমেজিং। রোজ ম্যাম আপনি কিন্তুু অনেক লাকি। এমন একটা ডিজাইন ইউটিউব দেখে শেখা কিন্তুু সহজ না। কিন্তুু আপনার হাসবেন্ড আপনার জন্য শিখেছে। সত্যি আপনি খুব, খুব লাকি,
শুভ্র হেসে দিয়ে বললো।”
—-” ওকে এবার আপনারা ডিজাইন করুন,
বলে শুভ্র উঠে গেলো। রোজ এখনো নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেন্দি শেষ হওয়ার পর সবাই গান চালিয়ে নাচতে শুরু করলো। রোজ বারবার শুভ্রর দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি হাসছে। নাচ, গানের মধ্য দিয়ে মেহেন্দি শেষ হলো। রোজ রুমে এসে মেহেন্দি তুলে ফেললো। তনয়া রোজের হাত দেখে বললো।”
—-” বাহ টকটকে লাল হয়েছে,
রাইসা হেসে বললো।”
—-” আমাদের রকস্টার বাবু তার রেড রোজকে খুব ভালবাসে বলো?”
চৈতি রোজের পাশে বসে বললো,
—-” সে আর বলতে? জিজু তো রোজ বলতে বেহুশ।”
জারা আর তিথি রোজের গাল টেনে বললো,
—-” হায়, হায় কি প্রেম গো।”
রোজ লজ্জা পেয়ে বললো,
—-” চুপ করবে তোমরা?”
জারা দাত বের করে বললো।”
—-” বাসর ঘরে কি হয় জানিয়ো কিন্তুু,
রোজ এবার ভীষণ লজ্জা পেয়ে বললো।”
—-” জারা চুপ করো না,
রাইসা জারাকে পাশে বসিয়ে বললো।”
—-” শারাফের সাথে কি, কি করবে গো ননদিনী?”
জারা চোখ বড়, বড় করে বললো,
—-” ভাবী?”
সবাই একসাথে বললো।”
—-” এবার ভাবী কেন গো?”
জারা গাল ফুলিয়ে বললো,
—-” আমিও বলবো দেখো।”
তনয়া মুচকি হেসে বললো,
—-” ওকে এবার সবাই ঘুমিয়ে পড়ো।”
যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। জারা রাইসার বলা কথা মনে করে ব্লাশিং হচ্ছে। রোজও শুভ্রকে নিয়ে ভাবতে, ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো,
স্টেজে রোজ আর শুভ্র পাশাপাশি বসা আজ গায়ে হলুদ ওদের। সবাই ওদের হলুদ লাগাচ্ছে শুধু জারা আর শারাফ নেই এখানে। রোজকে আজ হলুূদ লেহেঙ্গা পড়িয়েছে। সাথে সব কাচা ফুলের গহনা। আর শুভ্র হলুদ পাঞ্জাবী সাদা প্যান্ট পড়া। হলুদ মেখে ভুত হয়ে বসে আছে দুজন। রিক এদিক, ওদিক দেখে বললো।”
—-” শারাফ আর জারা কোথায়?”
চৈতি হলুদ হাতে নিয়ে বললো,
—-” দেখো হয়তো প্রেম করতে গিয়েছে।”
ছাদে দাড়িয়ে আছে শারাফ আর জারা। জারার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। জারা কাঁদতে, কাঁদতে বললো,
—-” কেন ভালবাসেন না আমাকে? কেন অলওয়েজ ইগনোর করনে? শারাফ আমি কখনো কোন ছেলের প্রতি এতটা ভাবিনি। জানিনা কখন, কিভাবে আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। তবে আপনি যদি সত্যিই আমাকে ভাল না বাসেন। আমাকে যদি বিরক্তিকর লাগে তাহলে ঠিক আছে। আজকের পর ভালবাসার দাবী নিয়ে আর কখনো আপনার সামনে আসবো না।”
_____________
বলে জারা চলে যেতে গেলো। যেতে গিয়েও আবার থেমে গেলো। পিছনে তাকিয়ে মন ভরে শারাফকে দেখে নিলো। কারণ জারা ভেবে নিয়েছে ও আবার লন্ডন চলে যাবে। জারা হাটছে খুব ধীর পায়ে হাটছে এই আশায় যে যদি শারাফ ওকে ডাকে। কিন্তুু না জারা দরজার কাছে চলে এসেছে শারাফ ওকে ডাকেনি। জারার বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। জারা ছাদ থেকে নামবে তখনি শুনলো,
—-” আই লাভ ইউ টু জারা।”
জারা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। চট করে ও পিছনে তাকালো। শারাফ দু হাত প্রসারিত করে দাড়িয়ে আছে। জারা দৌড়ে গিয়ে শারাফকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললো,
—-” এত দেরী করলেন কেন বলতে?”
শারাফ জারাকে জড়িয়ে ধরে বললো।”
—-” আই এম সরি হ্যা কাঁদে না। তোমার সাথে কিন্তুু কাঁদাটা যায় না জারা। সো ডোন্ট ক্রাই,
হলুদ দেয়া সবার শেষ তখন শারাফ আর জারা এলো। ওরা হলুূদ লাগানোর পর হলুদ শেষ হলো। হলুদের অনুষ্ঠানও ভালমতোই কেটে গেলো।”
লালের মাঝে গোল্ডেন স্টোন বসানো লেহেঙ্গা। গা ভর্তি ভারী গয়না পড়ে বউ সেজে বসে আছে রোজ। চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে ঠোটে লাল লিপস্টিক। ঠোটের কোনে কালো তিল। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। সবাইকে থাকিয়ে থাকতে দেখে রোজ বললো,
—-” কি হলো? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
সবাই একসাথে বললো।”
—-” দারুন লাগছে,
রোজ মুখ বাঁকিয়ে বললো।”
—-” হয়েছে পাম দিতে হবে না,
রোজকে নিচে নিয়ে যেতে বললো। ওরা রোজকে নিচে নিয়ে গেলো। চারদিকে সব জার্নালিস্ট, সব ফিল্ম স্টার, শিল্পী সবাই এসেছে। রোজকে নিয়ে স্টেজে শুভ্রর পাশে বসালো। রোজ এক নজর শুভ্রকে দেখলো। শুভ্র খয়েরী শেরওয়ানি পড়েছে। পুরো রাজকুমার লাগছে আজকে। মাথায় পাগড়ী, পায়ে নাগড়া। ওদের বিয়ে তো আইনত আগেই হয়েছে। কাজী এলো ওদের কাছে আগে শুভ্রকে কবুল বলতে বললো। শুভ্র একদমে কবুল বলে দিলো। এরপর রোজকে বলতে বললো। একটা বড় শ্বাস নিয়ে রোজও কবুল বলে দিলো। ওদের বিয়ে ভালমতোই কম্পিলিট হলো। জার্নালিস্টরা এটা, ওটা জানার মাঝে জিগ্যেস করলো।”
—-” স্যার আজ কি জানতে পারবো লাল কাপড়ের রহস্য?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
—-” ওকে সো আমি বলেছিলাম টাইম এলে বলবো। আজ সেই টাইম চলে এসেছে। এই হচ্ছে আমার ভালবাসা আমার লাইফলাইন রেড রোজ। আর ওটা হচ্ছে ওর ওড়নার ছেড়া অংশ। যেটা ভার্সিটিতে আমার কপালে আঘাত লাগায় ও বেধে দিয়েছিলো। তারপর আমরা ২বছর আলাদা ছিলাম। বাট না তো ওটা আমি আলাদা করেছি আর না তো আমার রোজকে। ইনফ্যাক্ট আমরা কেউ কাউকে মন থেকে আলাদা করিনি।”
সব টিভি চ্যানেলেই এটা লাইভ দেখাচ্ছে। ইন্টারভিউ শেষে এবার বিদায়ের পালা। রোজের আজকে ওর বাবা, মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। রোজ হাউ, মাউ করে বাবাই, আম্মু বলে কেঁদে দিলো। রোদও কাঁদছে সবাই কাঁদছে আজ,
—-” বাবাই, আম্মু কেন চলে গেলে তোমরা? তোমাদের খুব মনে পড়ছে আজ। আমি চলে গেলে ভাইয়া যে একা হয়ে যাবে। আল্লাহ ওদের কেন বাঁচিয়ে দিলে না?”
রোজের কান্নায় শুভ্র অস্থির হয়ে যাচ্ছে। শুভ্রর বুকে যেন কেউ ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। রোজকে নিয়ে গাড়িতে বসালো। রোজ কেঁদেই যাচ্ছে রোদও যাবে রোজের সাথে। শুভ্র আর রোজ এক গাড়িতে ওরা আলাদা গাড়িতে। রোজ গাড়ির ভেতর কাঁদতে, কাঁদতে শুভ্রর কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।”
রোজের ঘুম ভাঙার পর নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো। ঘুম, ঘুম চোখে চারপাশে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সারা রুমে নানান রকম লাইটিং করা। আর লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো। ওয়াসরুম থেকে শুভ্র বের হয়ে বললো,
—-” তুমি উঠে গিয়েছো? তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। তোমাকে কিছু দেখানোর আছে।”
রোজ বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে এলো। একটা নীল শাড়ি পড়েছে শুভ্রর ফেবারিটট কালার দুটো নীল এবং কালো। শুভ্র রোজকে বিছানায় বসিয়ে হাতে একটা প্যাকেট দিলো। রোজ প্যাকেটটা খুলে চমকে গিয়ে বললো,
—-” আমরা আগামীকাল লন্ডন যাচ্ছি?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” ইয়েস আমরা লন্ডন যাচ্ছি,
রোজ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রও রোজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো।”
—-” আর লন্ডনেই আমাদের ফার্স্ট নাইট হবে,
রোজ লজ্জা পেয়ে গেলো। শুভ্রর গরম নিঃশ্বাস রোজের ঘাড়ে পড়ছে। রোজ কেঁপে উঠে শুভ্রর শার্ট খামচে ধরে আছে। শুভ্র মুচকি হাসি দিলো।”
#চলবে…