ফ্লুজি পর্ব-২০

0
601

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২০]

এলিনা চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে আরিবের পাশে।আরিব কপালে হাত ঠেকিয়ে ফোনে মগ্ন এলিনা যে তার সামনে প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে তাতে কোন পাত্তা নেই ছেলেটার।

” ভাইয়া কী হয়েছে তোমার?”

” বললাম তো কিছু হয়নি।”

” তাহলে মন মরা কেন?”

” আমি ঠিক আছি।”

” না তুমি ঠিক নেই।”

আরিব বিরক্ত হয়ে তাকালো এলিনার পানে।এই মেয়েটা তাকে এত জেরা করছে কেন?কি সমস্যা তার?আরিবের মাথা ধরে আছে।চিন্তায় মাথা ফেটে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।খুশবু এমন মেয়ে নয়, আরশাদের ফ্লুজি এমন মেয়ে হতেই পারে না।বাহারুল হক’কে অন্তত এতদিনে সে বেশ ভালোভাবেই চিনেছে খুশবু কোথায় যাচ্ছে কি করছে কার সাথে চলাফেরা করছে সবটাই তিনি নজরে রাখেন।তাহলে খুশবুর মতো মেয়ে কি না কল গার্ল!হোয়াট দা…না না এ হতে পারে না কোথাও কোন গন্ডোগোল আছে।ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে,তাকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।জন এসব কেন করছে?রোহানের সাথে তার হাত নেই তো?এসব কি রোহান করছে?বিয়ে ভাঙার জেদ ধরে রোহান কি জনের সাথে হাত মেলালো?

সব বাদ আরশাদ কি তার ফ্লুজির প্রেমে এতটাই অন্ধ? সে একবারো বুঝতে পারলো না তার ফ্লুজির মাঝে সন্দেহের কিছু ছিল কি না।আরিব চিন্তায় ঢোক গিললো আরশাদকে যখন এসব জানানো হবে তখন তার প্রতিক্রিয়াটা কী হবে?

” ভাবি অসুস্থ জেনেও কেন তোমার কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না আরিব ভাইয়া?ভাবিকে তুমি কতটা কেয়ার করো তা তো আমি জানি।প্লিজ আরিব ভাইয়া আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার?”

” এলিনা আমার মাথা খেয়ে ফেলো না প্লিজ এখান থেকে যাও।”

“তুমি কি চিন্তিত?”

” না।”

“আমাকে ইগ্নোর করছো ভাইয়া?”

” প্লিজ এলিনা আমাকে ভুল না বুঝে আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”

এলিনা কথা বাড়ালো না।অভিমান জমিয়ে চলে গেল।আরিব ভাবলো, সারাটা রাত ভাবলো।এই ভাবনার হিসাব মিলিয়ে যা বুঝলো ফ্লুজি এমন মেয়ে নয়।যদি এমন মেয়ে হতো তবে কি আরশাদ বুঝতো না?বাহারুল হকের নজর এড়িয়ে এতটা বিশ্রী কাজে সে যুক্ত হতো না।কিন্তু এই বিশ্রী কাজে ফ্লুজি কেন জড়াবে?তার তো সঙ্গদোষ নেই নাকি আছে টাকার লোভ।মেয়েটা সব নিয়ে পরিপূর্ণ এসবের কোন প্রশ্নই আসে না।
আরিব সব মিলিয়ে সাহস পেল না।এমন এক জঘন্য কথা কি করে বলবে তার ভাইকে?
.
সময় গড়ালো আরো কিছুদিন।ততদিনে মাথা থেকে এসব কথা ঝেরে ফেলেছে আরিব।সে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে ভাবির উপর।এসব নিশ্চয়ই রোহানের ফাঁদ সেই ফাঁদে জড়িয়েছে জন।
ভাইকে জানানোর সাহস করেনি আরিব।একবার মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডাক্তার নিয়ে যারপরনাই ব্যতিব্যস্ত হতে হয়েছিল।আরশাদের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিলো এখন আবার এসব বিশ্রি ব্যপার রটালে আরশাদের কী হবে?

আরিব এই বিষয়টাকে একাই ধামাচাপা দেবে বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল।
.
আচমকা এলোনের বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারিত হলো।ছেলেটাকয়েক মাস লিভইনে ছিল ‘এডনা’র সহিত।তারা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় এবার তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত।তাই দিন তারিখ ঠিক করে বিয়ের আয়োজন সেরে ফেললো খুব দ্রুত।

বিয়েতে আরশাদের পরিবারের সকলে নিমন্ত্রিত হলেও বিয়েতে গেল আরশাদ- খুশবু,এলিনা এবং আরিব।

বিকালের সময়টাতে সাদা গাউনে চারপাশ মুখোরিত।আরশাদ হাস্যজ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরখ করছে সবটা।তার হাতের বন্ধনীতে আবদ্ধ ফ্লুজি।মেয়েটাকে সাদা গাউনে শুভ্র পরী লাগছে।তার শুভ্রতা ছুঁয়ে দিচ্ছে আরশাদকে।

গির্জার মাঠে ছুটোছুটি করছে এলিনা এবং আরিব।দুজনের মাঝে কিছু নিয়ে দ্বন্দ চলছে।তারা ছুটছে দিক বেদিক।এলিনা দিক হারিয়ে একটি ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে পড়লে মাঠে।আরিব ভ্রু কুচকে তাকালো ছেলেটির পানে।ইতালিয়ান ছেলেটির জিভ কামড়ে হাত বাড়ালো এলিনার দিকে।এলিনা সেই হাতে হাত রাখার আগে আরিব হেঁচকা টেনে দাঁড় করায়।ছেলেটা এলিনার পানে তাকিয়ে বলে,

” মি ঢিসপিয়াস (আমি দুঃখিত)।”

এলিনা হাস্যজ্বল মুখ ধরে রেখে প্রত্যুত্তর করার আগে আরিব তাকে টেনে নিয়ে গেল অন্য দিক।ছেলেটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল তাদের পানে।

আচমকা গির্জার ঘণ্টা বেজে উঠল।সবার আড্ডা আসর ভেঙে ছুটে গেল গির্জার কাছে।অচেনা এক অনুভূতিতে শিহরিত হলো ফ্লুজি।সাদা গাউন ঠেলে আরশাদের হাতে হাত রেখে হাটতে থাকে গির্জার দিকে।এর আগে খ্রিস্টানদের বিয়েতে তার অংশগ্রহণ করা হয়নি।গির্জা দেখতে কেমন সে তো সেটাও জানে না।মুভিতে যা একটু আধটু দেখেছে এই যা।

এলোনের ওয়াইফ এডনা আজ সেজেছে সাদা গাউনে।মেয়েটার কানে ও গলায় চকচকে হিরের নেকলেস,দুল, মাথায় টায়রা।
মেয়েটাকে সবসময় সবাই ওয়েস্টার্ন লুকে দেখেছে আজ বিয়ের সাজে মেয়েটাকে স্নিগ্ধ অপ্সরী লাগছে।এলোনের বাদ বাকি বন্ধুরা অর্থাৎ আরশাদ,ডিলান,অ্যাডান তাদের সাথে আছে জন সহ অনন্যরা “ও….ও” শব্দে ধ্বনি তুললো।

এডনা মাথায় পর্দা টেনে নেয়।সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে দেয় মুহূর্তে।এডনাকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হলো।দূর থেকে এডনা একবার দেখ নিল তার সুহৃদকে।

এলোন কালো স্যুট পরে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটার হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ।এলোনের কালো সিল্কি চুলগুলো পরিপাটি করে একপাশে আঁচড়ানো।এলোনের হাস্যজ্বল মুখ আর চোখ জুড়ে ব্যাকুলতায় প্রকাশ পাচ্ছে, ছেলেটা আজ কতটা খুশি!

এডনার কাজিন তার হাত ধরে নিয়ে গেলো এলোনের সামনে।এলোনের হাতে এডনার হাত গুজে দিতে এলোন প্রশস্ত হাসলো।

গির্জায় সকলে উপস্থিত বিয়ে পড়ানোর কার্যক্রম শুরু হতে লাগলো।কিছুটা সময় বাদে বিয়ে পড়ানো শুরু হলো।

এলোন গ্রেগরি এবং এডনা এথালিয়া
তোমরা কোন ভাবে কারো বাধ্যতায় নয় বরং সেচ্ছায় স্বাধীনভাবে ও পূর্ণভাবে এই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে এসেছো?
এলোন বলে,

” হ্যাঁ এসেছি।”

এডনা মতামত জানাতে বলে

” হ্যা এসেছি।”

বিবাহিত জীবনে তোমরা কি পরস্পরকে আজীবন ভালোবাসতে ও সম্মান করে চলতে সম্মত আছো?

” হ্যাঁ সম্মত আছি।”

” হ্যাঁ সম্মত আছি।”

ভবিষ্যতে তোমাদের সন্তান হলে তোমরা কি তাদেরকে ঈশ্বরের দান হতে গ্রহণ করতে ও মানুষের মতো মানুষ করতে সম্মত আছো?

“হ্যাঁ সম্মত আছি।”

” হ্যাঁ সম্মত আছি।”

সুতরাং তোমরা দুজনে পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দীর্ঘ সংকল্পে আছো বলে তোমরা পরস্পর পরস্পরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ডান হাতের উপর ডান হাত রেখে পরমেশ্বরকে সাক্ষী রেখে তোমাদের বিবাহ প্রতিজ্ঞা শপথ পাঠ করবে,

এলোন এই দিনটি নিয়ে ভীষণ এক্সাইটেড ছিল অবশেষে যখন দিনটি এসেই গেল তখন তার খুশি আর যেন ধরে না।এডনার চোখে চোখ রেখে শপথ পাঠে বলে,

” যেদিন তোমাকে অনুভূতিহীন চোখে দেখেছিলাম সেই দেখায় শেষ দেখা ছিল।এরপরের দেখাগুলো ছিল অনুভূতি নিয়ে।ভালোবাসার ব্যাকুলতা নিয়ে।আমি তোমার পাশে থাকতে চাই।আমার শেষ নিশ্বাস অবধি তোমাকে আমার পাশে রাখতে চাই।আমি আরো আরো ভালোবাসতে চাই তোমায়।আমাদের ভালোবাসায় মিশে থাকুক সম্মান শ্রদ্ধা।”

এলোনের হাতে থাকা হীরের আংটি পরিয়ে দিল এডনার অনামিকা আঙুলে।মেয়েটা দু’চোখ অশ্রুতে টইটুম্বুর।এবার সময় এসেছে এডনার শপথ পাঠের।মেয়েটাও আজ জানালো তার অনুভূতি,

” আমার জীবনে তোমার চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই।তোমাকে যতটা ভালোবাসেছি, ভালো রেখেছি তার থেকেও বহুগুন ভালোবাসতে চাই তোমায়।”

এলোনের আঙুলে আংটি পরিয়ে দিল এডনা।

“আমি এলোন গ্রেগরি,গ্রহন করছি এডনা এথালিয়াকে আইনত আমার স্ত্রীরূপে। সে আছে এবং থাকবে সকল পরিস্থিতিতে।”

সম্পূর্ণ কথা এক নিমিষে বললো এলোন।তার চোখে চোখ রেখে এডনা বলে,

“আমি এডনা এথালিয়া, গ্রহন করছি এলোন গ্রেগরিকে আইনত আমার স্বামীরূপে। সে আছে এবং থাকবে সকল পরিস্থিতিতে।”

এলোন এডনা একে অপরের হাতটা ওরা শক্ত করে ধরে আছে।খুশবু চোখ জুড়িয়ে দেখলো তাদের।নব দম্পত্তির খুশি আজ যেন সে নিজেও অনুভব করতে পারছে।আরশাদকে কাছে পেয়ে সে নিজেও তো এতটা খুশি হয়েছিল।
এলোন এবং এডনাকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিতে অতিথিরা হাতে তালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়।

গির্জার পাশেই তাদের বিয়ের ভেন্যু ছিল।সকল অথিতিরা গিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়।আজ বন্ধুরা ভীষণ আনন্দ করছিলো।জন যদিও আজ কুটকাচিলে খুব একটা সময় পেল না।
সময় গড়িয়ে রাত হলো বয়সে ইয়াং কাপলরা থেকে বাকি সকলে বিদায় জানাল।বন্ধুরা মিলে আজ পার্টি করবে।বিয়ের সাদা গাউন পরে নাচানাচি করছিলো এডনা।এডনার এবং এলোনের কাজিনরা মিলে ভীষণ হইহুল্লোড় করছিল।চারদিকে মিউজিকের শব্দ।গানের তালে তালে নাচতে ব্যস্ত এডনা এবং এলোন।সবাই যে যার মতো কাপল বেছে নিল।এলিনা সাদা গাউন তুলে মুখ গোমড়া করে তার পাটনার খুঁজতে লাগলো।কার সাথে নাচবে সে?আরিব বুঝতে পারলো এলিনার চাওয়া।সে দ্রুত এলিনার হাত টেনে বলে,

” আমার সাথেও তো নাচতে পারো।”

” তুমি নাচবে?”

” কেন নয়?”

” ওকে।লেট’স গো।”

এলিনা খুশি হলো।আরিবের হাতে হাত রাখলো।এলিনার কোমড়ে হাত রাখতে আরিবের সমস্ত স্পর্ধা থমকে গেল।এই মেয়েটাকে ছুঁয়ে কি সে অন্যায় করে ফেলেছে?সমস্ত অনুভূতিরা আজ আন্দোলন করছে কেন?

I found a love for me
Oh, darling, just dive right in and follow my lead
Well, I found a girl, beautiful and sweet
Oh, I never knew you were the someone waiting for me

‘Cause we we were just kids when we fell in love
Not knowing what it was
I will not give you up this time
But darling, just kiss me slow, your heart is all I own..

নাচ থেমে গেল।এলোন এবং এডনা দীর্ঘ চুম্বনে মত্ত হলো তাদের সাথে পিছিয়ে রইলো না বাকি দম্পত্তিরা।তারাও একে অপরের ঠোঁটে নিজেদের অস্তিত্বে জানান দিল।কিন্তু এলিনা আরিব?তারা তো চাইলেও এই কাজটা করতে পারবে না।সকল ভাবনাকে দূরে সরালো আরিব।কিন্তু এলিনা!তাকে দমাবে কে?ঘোরের মাঝে আরিবের ঠোঁটে ঠোঁট মেশালো সে।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেল ভালো মন্দের তফার বোঝা তাদের আর হয়ে উঠলো না।দুজনে দুজনের সর্বোচ্চ দিয়ে ঠোঁটে হামলে পড়লো।

চুম্বনরত অবস্থায় খুশবু আবেগের দুনিয়া থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলো।আরশাদ কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, খুশবুর আশকারা পেলে সে আরো বেশি
করবে।খুশবু আরশাদের বুক ঠেলে সরে দাঁড়ালো।আরশাদ তখন ক্ষুদার্ত বাঘের মতো কাতর চোখে তাকিয়ে আছে খুশবুর পানে।খুশবু সেসব পাত্তা না দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো।আরশাদ এগিয়ে এলো এবং হাত চেপে ধরলো তার ফ্লুজির।

” ফ্লুজি কি হয়েছে?”

” আরশাদ এখানে এসব…”

খুশবুর কথার মাঝে জন এগিয়ে এলো।জনের পাশে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে।আরশাদের দিকে তাকিয়ে জন ইতালিয়ান ভাষায় বলতে শুরু করে যার দরুনে জনের কোন কথাই বুঝতে পারলো না খুশবু।
জন আরশাদকে টিপ্পনী কেটে বলে,

” তোমার বউয়ের বোধহয় রুচি পাল্টেছে।”

” মানে?”

” তোমাকে যেভাবে ছিটকে দূরে সরিয়ে দিল আমার তো তাই মনে হলো।”

” কোথায় কি বলছো ভেবে বলবে।পোশাক পাল্টানোর মতো পুরুষ পাল্টানোর স্বভাব বাঙালি মেয়েদের নেই অন্তত এসব তাদের কালচারে নেই।”

” ওহ রিয়েলি?”

কথাটি বেশ মজার স্বরেই বললো জন।তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চিকন গড়নের মেয়েটিকে জড়িয়ে সে চলে গেল অন্যদিক।রাত বাড়তে থাকে এলোন এবং এডনা অনুষ্ঠান অতি দ্রুত সমাপ্ত করতে চায় সে সবাইকে ডিনারের উদ্দেশ্যে ডাকে।কিন্তু বিপত্তি বাঁধে এলিনার বেলায়।মেয়েটা অতিরিক্ত নেশাপানীয় গ্রহন করায় নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে।মূলত চুম্বন শেষে এলিনার হুশ ফিরে মেয়েটা আরিবের কাছে মাফ চায় লজ্জায় গুটিয়ে যায় বারংবার।সবটা সইতে না পেরে দ্রুত বার সেকশনে যায় এবং ঘটিয়ে ফেলে আরেক বিপত্তি।

আরশাদ আরিবকে নির্দেশ দিল এলিনাকে নিয়ে যেন বাড়ি ফিরে যায়।আরিব দাঁড়ালো না এলিনাকে সঙ্গে নিয়ে সে চলে যায় গাড়ির দিকে।
.
খুশবু ভয়ে ভয়ে কদম ফেলছে।সেই সময়টার পর আরশাদ কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেছে।প্রতিটা কাজে নিজের রাগ প্রকাশ পেলেও তার ফ্লুজির দেখভালে অনিহা করছে না।রাগের মাঝেও খুশবুর গাউন তুলে বসতে সাহায্য করছে, খাবার বেড়ে দিচ্ছে আরো কত কি।কিন্তু মন তো মানে না আরশাদের রাগকে খুশবু ভয় পায়।এরপর কি হবে?কি করে আরশাদকে মানাবে খুশবু?
.
খুশবু যখন বাড়ি ফিরে তখন গ্লোরিয়ার চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পায়।আরশাদ জানে গ্লোরিয়া কেন চেচামেচি করছে তাই সে পাত্তা দিল না।বড় বড় পা ফেলে চলে গেল নিজের ভিলায়।খুশবু কৌতুহল দমাতে না পেরে দ্রুত গেল গ্লোরিয়ার কাছে।মাতাল হয়ে বিছানার কোনায় বসে আছে এলিনা।মেয়েটাকে চেপে ধরে আছেন আফরোজ।আরিব নত মাথায় সবটা পরখ করছেন।ইমরান ইহসান গ্লোরিয়াকে শান্ত করতে চাইছেন কিন্তু কে শুনে কার কথা?গ্লোরিয়া বার বার তেড়ে যাচ্ছেন মেয়েকে মারার জন্য।

খুশবুকে উপস্থিত পেয়ে গ্লোরিয়া বলে,

” এলিনা যে নেশা করেছে তোমরা দেখনি?”

” অনুষ্ঠানে সবাই একটু আধটু খেয়েছে আমি ভাবিনি এলিনা এতটা খাবে।”

“তুমি নিজে খেয়েছিলে?”

গ্লোরিয়ার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল খুশবু।আমতা আমতা করে বলে,

” না।”

” এলিনার বয়স কম এসব থেকে প্রতিবার আমি তাকে দূরে রাখি।আমরা যে সোসাইটিতে আছি একটু আধটু খেতেই হয় আমি পারমিশন দিয়েছি কিন্তু তাই বলে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরবে?আরিব তুমি কি একবারো এলিনাকে দেখনি?”

আরিব মাথা নত করলো।সে তো এলিনার সামনে দাঁড়ানোর সাহস করেনি।সবাই যদি চুম্বনের ব্যপারটা জানতে পারে তবে কী হবে?এসব ভেবে আরিবের প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে।
.
আরশাদ নিজ ভিলায় ফিরে মন মরা হয়ে পড়লো।ফ্লুজি তাকে উপেক্ষা করেছে এসব সে মানতে পারবে না কখনোই না।ফ্লুজির জীবনে যত যা থাকবে সবকিছুর ঊর্ধে আরশাদের অবস্থান থাকবে।ফ্লুজির প্রায়োরিটি লিস্টে সর্বপ্রথম থাকবে আরশাদ ইহসান,দ্বিতীয়তে থাকবে আরশাদ ইহসান এবং তৃতীয় থাকবে আরশাদ ইহসান।আরশাদের চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হলো।নিয়ন্ত্রণ হারালো নিজের ক্ষোভের কাছে।স্নায়ু স্থির রাখতে দ্রুত বসলো পছন্দের একটি বই নিয়ে।কিন্তু চিন্তায় ভারী হয়ে থাকা মন মেজাজ কি আর অন্য দিকে ঘুরে?

গায়ের কালো ব্লেজার ছুড়ে ফেললো সোফায়।রান্না ঘর থেকে একটি ওয়াইনের বোতল নিয়ে বসলো টেবিলে।এটি আরশাদের স্টাডি রুম।হরেক রকমের গাছ এবং বিশাল বুক সেলফে সাজানো রুমটা আরশাদের মন ভালো করে দেয়।কিন্তু আজ মন যে বেপরোয়া হয়েছে মন আজ আর তার কথা শুনলোই না।

এক চুমুক ওয়াইন মুখে তুলে আরশাদ মুখ কুচকে ফেললো।সে যানে এটাতে তার নেশা হবে না তাহলে শুধু শুধু কেন ছাইপাঁশ গিলছে?

দরজার ক্যাচক্যাচ শব্দে ঘুরে তাকালো আরশাদ ফ্লুজি এসেছে।মেয়েটা সাদা গাউন ধরে হেটে আসলো আরশাদের সামনে।

” এলিনার উপর ফুফু ভীষণ ক্ষেপে আছেন।”

” জানতাম এমনি হবে।”

” আপনি কি খাচ্ছেন?”

” ওয়াইন।খাবে?”

” নো থ্যাংক্স।নেশা ধরে যাবে তো।”

” তুমি ছাড়া আমার আর কোন নেশা নেই।আ’ম এডিক্টেড টু ইয়ু।”

খুশবু প্রত্যুত্তর করে না।আরশাদ তার গলার টাই ঢিলে করে।ছেলেটার চোখ মুখ অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে।

” আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে আরশাদ?”

” হুম খুব খারাপ লাগছে ভালো করে দেবে?”

” এভাবে বলছেন কেন?কী হয়েছে আমাকে বলুন।”

” আমাকে তোমার ভালোলাগে না?বলো আমার ফ্লুজি, আমাকে তোমার ভালোবাসতে আর ইচ্ছে হয় না?কী চাই তোমার?যা চাও পায়ের কাছে এনে রাখবো।”

” আরশাদ এভাবে বলছেন কেন?”

” তুমি আমাকে তখন উপেক্ষা করেছো কেন?কোন সাহসে?আমি একদিন বলেছি আমি যখন ভালোবাসা নিয়ে তোমাকে ছুঁয়ে দেব তখন তুমি আমাকে সরিয়ে দিতে পারবে না।আমি তোমার সম্মতিতে কিস করেছি তাহলে পরবর্তীতে তুমি কেন আমাকে সরালে?আমাকে কি ভালো লাগছে না?নাকি আমার ছোঁয়ায় সমস্যা হচ্ছে?”

খুশবু ঢোক গিললো।সে জানতো আরশাদ এই ব্যপারটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করবে।

” আরশাদ সকলের সামনে হঠাৎ আমার লজ্জা লাগছিল আমি এসবে অভ্যস্ত নই।”

” জোরাজোরি করেছিলাম আমি?তোমার সম্মতিতে কিস করেছি।”

” আমি আপনাকে আঘাত দিয়ে ভুল করেছি।সবটার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী।আরশাদ আপনি জেদ ধরে নিজের ক্ষতি করবেন না।”

আরশাদ ঢোক গিললো।গ্লাস ছেড়ে এবার চুমুক দিল ওয়াইনের বোতলে।খুশবু জানে আরশাদকে কি করে দমাতে হবে অন্তত এতদিনে খুশবু বুঝেই ফেলেছে আরশাদের দূর্বলতা হলো খুশবু।এই ছেলেটা খুশবুর কাছে নিয়ন্ত্রণহীন।
আরশাদের জেদ দেখে খুশবুর খারাপ লাগলো সাদা গাউন তুলে বসে পড়লো আরশাদের হাটুতে।মেয়েটার দু’পা ঝুলে গেল দু’দিক।আরশাদ অবাক হলো ওয়াইনের বোতল মুখ থেকে সরাতে খুশবু তা টেনে রেখে দিল টেবিলে।

” আমি ছাড়া নাকি অন্য নেশা ধরে না?তাহলে বেহুদা নেশা করছেন কেন?”

” তুমি তো দূরে সরিয়ে দাও।”

” এখন তো আমি আছি।সময়টা এখন আমাদের।কী চাই বলুন?”

“অল আই নিড ইন মাই লাইফ ইজ ইয়ু এন্ড ইয়ুর লাভ জান।”

খুশবু আরশাদের কপালে চুমু খায়।মেয়েটার ঠোঁটের স্পর্শ ছড়িয়ে যায় আরশাদের সারা মুখে।আরশাদের বাদামী চোখ জোড়া ঝাপসা হয়, বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উলটে কেঁদে ফেলে মুহূর্তে।

” আমাকে অগ্রাহ্য করো না উপেক্ষার দুয়ারে ঠেলে দিও না।আমি মরে যাব, পাগল হবো,দিকশূন্য হয়ে হারিয়ে যাব।আমার তোমাকে চাই।বিশ্বাস করো আমার জান, বাংলাদেশে আমি তোমাকে মারতে গেছিলাম আমি তোমাকে খুনের নেশায় সেদিন তুলে এনেছি কিন্তু কি হলো আমি জানি না আমি নিজেই খুন হয়ে গেছি।আমি তোমার কাছে এসে থমকে যাই।তোমাকে পাওয়ার নেশাটা জেদে রূপান্তরিত হলো সবশেষে তোমাকে পেয়েও আমি সন্তুষ্ট নই।আমার তোমাকে চাই এখনো বলছি আমার তোমাকে চাই তোমার প্রায়োরিটি,দরকার,ভালোলাগা, মন্দলাগা,জড়তা সবটায় আমি মিশে থাকতে চাই।ইয়ু আর মাই ইন্ড এন্ড ইয়ু আর মাই বিগেনিং জান।”

” যদি কোনদিন জানতে পারেন আমি আপনার সেই ফ্লুজি নই তখন কি ছুড়ে ফেলে দিবেন?”

আরশাদ খুশবুর ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরলো।

” ইসস খালি বাজে কথা।তোমাকে আমি ছাড়বো না কখনো না।”

” বাজে কথা নয় আরশাদ।যদি ছেড়ে যান?”

” বিশ্বাসের প্রশ্ন তুলছো? আমার চামড়া কেটে দেখ প্রতিটি শিরা উপশিরা রক্তের সাথে মিশে আছে তোমার প্রতি বিশ্বাস আশ্বাস।”

খুশবু মূঢ় হাসলো।আরশাদের কপালে কপাল ঠেকিয়ে চুমু খেল আরশাদের ঠোঁটে।আরশাদ নিজেও পালটা প্রতিক্রিয়া জানালো।খুশবুর পিঠে হাত রেখে গাউনের চেইন এক টানে খুলে ফেললো।উন্মুক্ত হলো মেয়েটার ফর্সা পিঠ।টেবিলে থাকা সব বই কলম ফুলদানি ঠেলে ফেলে দিল আরশাদ। ফ্লুজিকে ঠেলে বসিয়ে দিল টেবিলে।আরশাদের সঙ্গ দিয়ে তার ফ্লুজি একে একে সব শার্টের বোতাম খুললো।উন্মুক্ত হলো দু’টি দেহ।দুজনের মাঝে কাজ করলো না কোন জড়তা।আরশাদ কক্ষের বাতি নিভিয়ে দিল শুধু চললো হলুদ রঙের কিছু নিয়নবাতি।সেই আবছা নিয়নের আলোয় খুশবুর আবেদনময়ী দেহখানী আরশাদকে আরো টানলো।দেরি করলো না সে,দেরি করতে চায় না খুশবু নিজেও আরশাদের পাগলামিতে সাড়া দিচ্ছে মেয়েটা।আরশাদ তার ফ্লুজির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো যার দরুনে পেছনে ঝুঁকে গেল ফ্লুজি।আরশাদের ঠোঁটের ছোঁয়া বিচরণ করে ফ্লুজির সারা দেহে।আরশাদ নিজেকে সামলে ফ্লুজিকে প্রশ্ন করে,

” হানি ঠিক আছো তুমি?”

” ঠিক থাকতে চাইছি না।”
চলবে…

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২১ বাকি অংশ]

ভীষণ ভয় নিয়ে আজ কফি বানালো খুশবু।আরশাদ যদি দেখতো খুশবু চুলা জ্বালিয়েছে তবে সুনামি মুহূর্তে তার উপর দিয়ে বয়ে যেত।গতরাতে আরশাদের কি হয়েছে কে জানে।ছেলেটা কেমন কাতর ছিল।সকাল দশটা বেজে গেল অথচ আরশাদের ঘুম ভাঙার নাম নেই।কফি মগ হাতে বিছানার কোনায় বসলো খুশবু।

” আরশাদ শুনছেন?”

পিটপিট চোখ মেলে তাকালো আরশাদ।খুশবুকে দেখেই হাসলো।

” গুড মর্নিং ফ্লুজি।”

” গুড মর্নিং।”

খুশবুর হাসিতে আরশাদ হাসলো।গতরাতের কথা মাথায় আসতে থমকে গেল সে।তবুও নিজেকে রাখলো স্থির।তার ফ্লুজিকে নিয়ে এত বড় কথা উঠেছে এর বিরুদ্ধে তাকে রুখে দাঁড়াতেই হবে।

” আরশাদ কফি।”

” কফি করেছে কে?”

” আমি।”

গলার স্বর নেমে এলো খুশবুর।কপট রাগ দেখিয়ে আরশাদ তার দিকে তাকিয়ে রইল।কফির মগে চুমুক বসিয়ে আরশাদ তৃপ্ত হলো।তখনি ইমরান ইহসানের ফোন আসে।আজ ছুটির দিন বিধায় সবাই বাড়িতেই আছে।বাবার সাথে কথা বলার এক পার্যায়ে আরশাদের মন মরে যায় ফোনটা রেখে খুশবুর কোলে মাথা রেখে বলে,

” ফুফুরা আজকে চলে যাবে।ড্যাড বললো ফ্রেশ হয়ে একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে।”

” ওও আজ তো অফ ডে।এইজন্যই বোধহয় দেরিতে ঘুম থেকে উঠেছে তাই না?”

” হুম।এছাড়া আর সময় কোথায়?”
.
এলিনা আরিবের সামনে দাঁড়িয়ে।তার চোখে মুখে ছেঁয়ে গেছে অস্বস্থি।এতদিন আরিবকে এড়িয়ে গেলেও আজ আরিবের মুখোমুখি সে।
সেদিনের ব্যপারটা দু’জনকেই অস্বস্থির দুয়ারে ঠেলে দিয়েছে।আরিব সহজ হওয়ার চেষ্টা করলো,

” এলিনা কিছু বলবে?”

” আসলে…”

” কি বলতে চাও বলে ফেল।তোমার এই চোরা চাহনির স্বভাবটা আমার ভালোলাগছে না।”

” আ’ম সরি।”

” কি জন্য?”

” সেদিন রাতে…”

” ওটা নিয়ে পড়ে থেকো না যা হয়েছে ভুলে যাও।”

” সত্যি!তুমি কিছু মনে করোনি তাই না?”

” হুম।”

” আমি আজ চলে যাব।কথা ছিল আরশাদ ভাইয়া সহ ভেনিস যাব কিন্তু ভাইয়া বললো সময় নেই আমার আর কি করার আমি তো এখানে থাকার জন্য আসিনি।”

” চাইলে পার্মানেন্ট থেকে যেতে পারো।থাকবে?”

আরিবের প্রশ্নে পুলকিত হয় এলিনা।পার্মানেন্ট থাকা মানে কি বোঝাতো চাইছে?

” পার্মানেন্ট কিভাবে থাকবো?”

” ভাবিমনি যেমনটা থেকেছে।”

পরোক্ষ ভাবে বিয়ের ইঙ্গিত দিল আরিব।এলিনা অবাক হলো এবং এমন প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করলো।

” ভেবে বলছো?মাথা খাটিয়ে বলছো?কি বলছো তুমি!”

এলিনা উত্তেজিত হলো।আরিব মেয়েটার চোখে চোখ রাখল ।না এই চোখে ভালোবাসা নেই কোন অনুভূতি নেই।নিজের আবেগকে মাটি চাপা দিল আরিব।

“জাস্ট কিডিং এত হাইপার হচ্ছো কেন এলিনা?আমার কাজ আছে তোমার কথা শেষ হলে যেতে পার।”

এলিনা থতমত খেল।আরিবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল সে।
.
এলোনের বাসায় জন আছে এই খবরটা আরশাদের কানে আসতে দেরি করলো না সে।এলোনের বাসায় এসে উপস্থিত আরশাদ।জন আরশাদকে দেখেই ঢোক গিললো। এডনা আরশাদকে বসতে বলে চলে গেল কিচেনে।ডিলান জনকে ইশারায় স্থির থাকতে বললো।

এলোন আরশাদকে বলে,

” কিছু বলবে কি?”

” বলতে চাই অনেক কিছু কিন্তু কি বলবো?”

” সেটাই তো জানতে চাই।গত রাতের ব্যপারটা নিয়ে তুমি কি আপসেট?”

” একদমি নয়।”

আরশাদ উঠে দাঁড়ালো।জনের মুখোমুখি বসে কড়া গলায় বলে,

” তোমাকে আমি সম্মান করি কিন্তু এই সম্মানটা আর স্থায়ী রইল না।আমার ওয়াইফের বিরুদ্ধে যেতে তোমাকে কে উস্কে দিয়েছে?”

” তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা আছে?নাকি তোমার ওয়াইফের সাথে আছে?আমার কারো সাথে কোন ঝামেলা নেই।আমি যা বলেছি সঠিক বলেছি।”

” কার সাথে মিলে এসব করছো জন ভাইয়া?ভালোয় ভালোয় সত্যটা বলো আমি কিন্তু মানুষ ভালো নই।মাডার করতেও ছাড়বো না।”

” আবারো বলছি এই অন্ধবিশ্বাস তোমাকে ধ্বংস করবে।আমার যদি অসৎ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে আমি আরো বাজে স্টেপ নিতাম।আমি বাংলাদেশ থাকা কালিন এলোনকে এই মেয়ের পিকচার পাঠিয়েছি অথচ তখন তোমার ফ্লুজিকে না এলোন চিনতো আর না আমি।সেদিন ভিডিও কলে তোমার বউকে দেখে আমি অবাক হই এবং এলোনকে জানাই।”

এলোন ভয় নিয়ে আরশাদের চোখে চোখ রাখে এবং বলে,

” জন ভাই ঠিকি বলছে আরশাদ।”

আরশার বিশ্বাস করতে চাইলো না।ফল কাটার ছুরি কৌশলে হাতে নিয়ে জনের উপর হামলে পড়লো সে।এলোন ডিলান আরশাদকে থামাতে চাইলেও লাভ হলো না।ছেলেটা তার শক্তিতে অনড়।
জনের গলায় ছুরি বসিয়ে দাঁত হিসহিসিয়ে আরশাদ বলে,

” সত্যটা বলো আমার ফ্লুজিকে নিয়ে বাজে কথা কেন তুললে?”

” আমার ঈশ্বরের দিব্যি আমি মিথ্যা বলিনি।আমি সেই মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছি।আমার কোন কিছুর প্রমান করার ইচ্ছে নেই যেহেতু তোমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাই তোমার উচিত এর সত্যতা বের করা।আমিও জানতে চাই তোমার ফ্লুজি যদি সেই মেয়ে না হয় তোমার ফ্লুজির সাথে সেই মেয়ের বৈশিষ্ট্য না মিলে তাহলে সেই মেয়ে কে? আমিও জানতে চাই।”

আরশাদ আর দ্বিতীয়বার কোন কথা বলে না।আর কী বলবে সে?সবটা ধোঁয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে।এলোনের বাসা থেকে ফিরে আরশাদ বাংলাদেশে থাকা রনির সাথে যোগাযোগ করলো।খুশবুকে খুঁজে দিতে এই ছেলেটাই সাহায্য করেছিল তাহলে নিশ্চয়ই সেই কলগার্লের খোঁজ সেই ছেলেটা জানবে।
আরশাদ রনিকে সবটা জানালো।রনি সবটা শুনে যতটা সিরিয়াস হওয়ার ভাব দেখালো প্রকৃত পক্ষে সে আরশাদের কোন কথাই গায়ে লাগালো না।

এক পৃথিবীতে একই চেহারার দুটি মানুষ থাকতেই পারে তারা যদি জমজ হয় তাহলে তারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে কেন?এসবের উত্তর বের করা কি রনির কাজ?এসবের উত্তর নিশ্চিয়ই খুশবুর বাবা মা জানে।তাদের না জানিয়ে এসব জটিল কেস মিমাংসা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।রনির মনে কোন তাগিদ জাগলো না কলগার্ল সেই মেয়েকে খুঁজে বের করার।
অথচ আরশাদ রনির উপর ভরসা করে আছে।সময় পেরিয়ে গেল এক মাস, দুই মাস।হ্যাঁ দুই মাস সময় পেরিয়ে গেল।

ইতালি আসার পর থেকে তুষারপাত কিংবা বৃষ্টি কোনটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি খুশবুর।অথচ আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ করে ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামলো।ভিজিয়ে দিল শুষ্ক পরিবেশ।ঠান্ডায় শিউরে উঠলো খুশবু।

বড় জানলার কাছে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিল বৃষ্টি।কত মাস পর সে বৃষ্টি ছুঁয়েছে!মনের ছলকে ওঠা আবেগকে আজ দমাতে পারলো না সে যার দরুনে প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছে মেয়েটা।আরশাদ তখন রাতের রান্না করছিল।ভেবেছিল খুশবু হয়তো টিভি দেখছে তাই আর বিরক্ত করলো না সে।নিজের রুমে ফিরে আধা ভেজা খুশবুকে দেখে রেগে গেল।দ্রুত এসে টেনে ধরলো খুশবুর হাত।

” এই তুমি জ্বর বাঁধাতে এসব করছো?”

” না।প্লিজ আরশাদ জানলা বন্ধ করবেন না।আমি বৃষ্টি দেখিনি বহুদিন।”

আরশাদের হাত থেমে গেল।ফ্লুজির কথা ফেলতে পারে না সে।বৃষ্টির ফোঁটারা ক্রমশ তীরের ন্যায় ছুটে এসেছে বিঁধছে খুশবুর শরীরে আরশাদ পেছনে দাঁড়িয়ে তাই তো সেও প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছে।আচমকা বৃষ্টির গতিক বেড়ে গেল সেই সাথে শীতের প্রকোপ বাড়লো বুঝি।আরশাদ খুশবুর ভেজা টি’শার্ট তুলে দিল উদর অবধি।মেয়েটার ভেজা চুল লেপ্টে গেছে ঘাড়ে আরশাদ যত্ন নিয়ে সরিয়ে দিল সেই চুল।দু’ঠোঁটের অবস্থান দৃঢ় করলো খুশবুর ঘাড়ে।
খুশবু বাঁধা দিতে পারে না।বাঁধা দেওয়া তার সাধ্যের বাইরে।যতবার আরশাদকে বাঁধা দিয়েছে ততবার আরশার তাকে উস্কে দিয়ে সরে গেছে।ব্যপারটা ভীষণ পীড়াদায়ক তার কাছে।তাই আরশাদ যতবার ভালোবাসার আলিঙ্গনে কাছে ডেকেছে ফিরিয়ে দেয়নি সে।

বৃষ্টির ফোঁটারা লাগামহীন ছুটছে মৃদু বাতাসে গায়ে কাটা দিল খুশবুর।শীতে কাঁপতে কাঁপতে জানলা বন্ধ করতে চাইলে আরশাদ নিজ থেকেই বন্ধ করে।ভেজা শরীর গুটিয়ে মেয়েটা দাঁড়িয়ে রয় এক পাশে।আরশাদ হাসে।ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় তার ফ্লুজির।

” আর ভিজবে?”

” ঠান্ডা লাগছে।”

” লাগুক আমি আছি তো।”

” আপনি থাকলে কি হবে?”

” সব কথা বুঝিয়ে বলতে হবে?

” ধ্যাঁত যান তো,আপনার যত বাজে কথা।”

” যাব কোথায়?সেই তো উষ্ণতার লোভে আমার কাছেই আসবে।”

খুশবু লজ্জা পায়।তার লজ্জায় গুটিয়ে যাওয়া শরীরটা ধীরে ধীরে নিজের আয়ত্তে আনে আরশাদ।
.
কাজের উদ্দেশ্যে ডিলানকে ইতালির মিলান শহরে যেতে হবে।যেহেতু ডিলান যাচ্ছে তার সাথে আরশাদ যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।বাকি বন্ধুরা পিছপা হয়নি তারাও মিলান ঘুরবে বলে জানায়।

মিলানের উদ্দেশ্যে তাদের যাত্রা শুরু হয় সকাল সকাল।হাসি আড্ডায় তাদের এবারের জার্নিটা ভীষণ মজার ছিল।এডনা ভীষণ মিশুক প্রকৃর মেয়ে সে নিজের বন্ধুর মতো খুশবুকে শিখিয়ে পড়িয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে।এডনা আর খুশবুর এতটা মিল দেখে আরশাদের স্বস্তি হয়।

আজকে তাদের গন্তব্য মিলান ক্যাথেড্রাল।
মিলান ক্যাথেড্রাল হলো একটি ব্যতিক্রমী ইউরোপীয় ক্যাথিড্রাল, যেটি শহরের প্রতিটি ভ্রমণকারীকে অবশ্যই দেখতে হবে তাই তো সবার এবারের উদ্দেশ্য ক্যাথেড্রাল দেখতে যাওয়া।মিলান ইতালির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।ইতালির জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে রোমের পরেই মিলানের স্থান। এটি অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিকের দিক থেকে ইতালির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর।চারদিকে নানান মুখ-মুখোশের মানুষের ছড়াছড়ি।এডনা খুশবুর সাথে কথা বলতে বলতে ক্যাথেড্রালের দিকে যাচ্ছিলো।হঠাৎ একটি মেয়েকে দেখে এডনা থমকে যায়।
চোখে লাগানো কালো চশমাটা খুলে তাকায় খুশবুর পানে।

“খুশবু আমি তোমার মতো একটা মেয়েকে এইমাত্র দেখেছি।”

খুশবু ফিক করে হেসে ফেলে।এডনার কথা মাথায় না নিয়ে বলে,

” দূর কি যে বলো।”

” সত্যি বলছি আমি তোমার মতো দেখতে হুবহু একটি মেয়েকে এই মাত্র দেখলাম।ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেল।”

” এডনা তোমার হয়তো শরীর খারাপ লাগছে।পানি দিচ্ছি গলাটা ভেজাও।”

লং জার্নিতে এডনার মাথাটা সত্যি ঘুরছে।তাই তো এডনা খুশবুর সাথে সহমত জানালো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে