#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
গল্প ঘন কুয়াশা
লিখাঃতামান্না ইসলাম শুচি
কুয়াশায় মোড়ানো সকাল।সকাল আটটা বেজে গেলেও কুয়াশা কমেনি।
কিছুই প্রায় দেখা যায়না।সেই কুয়াশা
মোড়ানো সকালের কুয়াশা ভেদ করে কেউ একজন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।
মাথাটা ঢাকা টুপি দিয়ে আর মুখে ওড়না চাপা দেয়া।সেই ওড়নার মাঝ দিয়ে হাসি দেখা যাচ্ছে।সে হাসি কিছু পাওয়ার।
প্রতিশোধ নেওয়ার।ওড়না সরিয়ে ঠোঁটে হাত বুলায় সে।শিউরে উঠে একাএকাই।তারপর চোখ বন্ধ করে মনে করতে থাকে গতরাতের ঘটনাটা।
সে এই রাস্তাটা দিয়েই যাচ্ছিলো
শুধু যাওয়ার রাস্তাটা উল্টো ছিল।
হাতে ছিল একটা কালো ব্যাগ।
হাটছিল সে হঠাৎ কেউ ডেকে উঠে
– শর্মিন!
মাথা ঘুরিয়ে দেখে শর্মিন।মুখে হাসি ফুটে।শর্মিনের নাম ধরে ডাকা মানুষটি এগিয়ে আসে।সে শর্মিনের হাত ধরে।
শর্মিন রেগে উঠলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে
মানুষটির সাথে সাথে যেতে থাকে।
মানুষটি একটি বাড়িতে নিয়ে ঢুকে।বাড়িটা বিশাল বড়।বাড়ির ভিতর ঢুকতেই মানুষটি শর্মিনকে কোলে তুলে নেয়।শর্মিন আঁতকে উঠে বলে
– কি করছ অভি?
অভি দুষ্ট হেসে বলে
– যে কাজের জন্য এসেছি তার শুরুটা করলাম।
শর্মিন আর কিছু বলেনা।অভি শর্মিনকে
কোলে নিয়ে বেড রুমে পৌঁছে যায়।
শর্মিনকে বিছানায় রাখা প্যাকেটটা দিয়ে বলে
-পরে ফেলো আমি অনেকদিন অপেক্ষায় আছি সেই পোশাকে তোমায় দেখবো।পরবে তো?
শর্মিন কোনো জবাব না দিয়ে হাতের ব্যাগ রেখে অভির দিকে পিঠ দিয়ে পরে আসা পোশাকটা খুলে ফেললো।
অনুভব করছিল অভির তীক্ষ্ণ কামনায় ঘেরা চোখের দৃষ্টি। স্বচ্ছ চকচকে সাদা রঙের নাইটি পরা শর্মিনকে দেখে
অভির মাথা ঘুরে গেল।শর্মিনের রুপে ঝাপ দিতে গেল।শর্মিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভি শর্মিনকে বলতে লাগল
– ইউ নো শর্মিন প্রথম যখন দেখেছি তোমায় তখুনি পাগল হয়ে গেছিলাম।
তোমার রুপ আমায় বশ করে ফেলেছিল।তোমায় ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।চারদিকে শুধু তোমায় দেখতে পাচ্ছিলাম।বিরক্ত হয়েছিলাম নিজের উপর। কি আছে তোমার মাঝে?
আমি চাই তোমার এ রুপে ডুব দিতে।
তোমায় চাই।এই পোশাকে কল্পনায় বহুবার দেখেছি।মন ভরেনি।তুমি আমার কল্পনার থেকে সুন্দর লাগছ।এত রুপ কেন তোমার?
শর্মিন হাসলো।অভি শর্মিনের বাধা চুল খুলে ফেললো।শর্মিনের উন্মুক্ত গলায় আর কাধে চুমু খাচ্ছে অভি।শর্মিন নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অভি পাগল হয়ে উঠে নিজের পোশাক খুলে ছুড়ে ফেলে শর্মিনের পোশাকটা টেনে ছিড়ে নিয়ে শর্মিনকে সহ বিছানায় পড়ল।শর্মিন দেয়ালে লাগানো ঘড়ির দিকে তাকায় এগোরোটা বেজে আটান্ন।
শর্মিন অভিকে দেখে নিজের শরীরে ঘুরে বেড়াতে।শর্মিন চোখটা বন্ধ করল।
ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ আসছে।
বারোটার ঘন্টা বাজতেই শর্মিন অভিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে পড়লো।
অভি প্রথমে অবাক হয়ে গেল।তারপর রেগে বললো
– আর ইউ ম্যাড?
শর্মিন মিষ্টি হেসে বলে
– আজ তো তোমার জন্যই এসেছি। সারারাত পড়ে আছে তার আগে একটা গল্প বলি শুনবে?
– ওফ! কোনো গল্প শুনবোনা আমি।
আমি এখন শুধু তোমাকে চাই।
বলেই অভি শর্মিনকে জড়িয়ে ধরতে গেল।শর্মিন অভির হাতজোড়া সরিয়ে দিলো।
অভি চোখে চোখ রেখে বললো
– তোমার জন্য সারপ্রাইজ রেখেছি সেটার জন্য ও তুমি কি গল্পটা শুনবেনা?
প্লিজ বসো।
শর্মিনের স্বরে কি যেন ছিল অভি মন্ত্রমুগ্ধের বসে পড়ে বিছানায়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
– গল্পটা কয়েকবছর আগের গল্প।
একটা পরিবার ছিল।সুখীই বলা চলে।
চারজনের পরিবার।মা,বাবা, ভাইয়া আর একটা মেয়ে। গল্পটা একটা মেয়ের
বাবা সরকারী চাকরি করত।কখনো দুঃখ তাদের পারতপক্ষে ছুতে পারেনি।
হাসি,মজায় কেটেছিল দিন।যতদিন না মেয়েটি কলেজে ভর্তি হয়।মেয়েটার বাবা রিটায়ার্ড হন।আর মেয়েটার ভাই বাবার চাকরিটা পেয়ে যায়।ভাই বিয়ে করে।এদিকে মেয়েটিও দ্বিতীয় বর্ষে উঠে যায়।তখুনি মেয়েটি নজরে পড়ে এলাকার এমপির ছেলের।
ছেলেটা মেয়েটাকে অনেক জ্বালাতে আরম্ভ করে।একটা সময় মেয়েটা রেগে চড় মেরে বসে।এই এক চড়ই মেয়েটার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।মেয়েটি জানতেও পারেনা কি বিপদ সে ডেকে এনেছি। চড় খাওয়ার পর ছেলেটা বেশ কিছুদিন জ্বালায় না মেয়েটাকে।
এরপর একদিন মেয়েটা কোচিং করে আসছিলো তখন দুপুর ছিল হঠাৎ এক মাইক্রোবাস এসে মেয়েটাকে টেনে নেয়…একি তুমি ঘামছ কেন?অভি?
অভি তখন ঘামছে।
তোতলাতে তোতলাতে প্রশ্ন করে
– তু তু মি কি করে ঘটনা…
কথা বলতে বলতেই অভির চোখে পড়ল শর্মিনের লাল চোখ।চমকে গিয়ে পিছিয়ে যায় অভি।
শর্মিন চিৎকার করে বলে
– পিছনে যাচ্ছিস কেন? সেদিন তো যাস নি।ঝাপিয়ে পড়েছিলি হায়েনার মতো ছিড়ে খেয়েছিলি এখন পিছনে যাচ্ছিস কেন? আয় আজকেও ছিড়ে খেয়ে নে সেই ইচ্ছেতেই তো এনেছিস আমায়!
অভি ভয়ে সিটিয়ে বলে উঠে
– কে তুমি?
– মনে কর সেই দিনটাকে।
সেই দুপুরকে সেই রাতকে।অমানুষ মনে কর
রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছিলো তাকে তুই টেনে হিচড়ে গাড়িতে তুলে
হায়েনার মতো ছিড়ে খেয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলেছিলি।অপরাধটা কি ছিল?
তোকে রিজেক্ট করা! এজন্য তুই একটা মেয়েকেই খুন করে দিলি!
-শারমিনকে তুমি চিনো?
কে তুমি?
-হ্যাঁ চিনি মানে আমিই তো শারমিন। চিনতে পারিসনি নাকি?
– এ হতেই পারেনা তুমি… তুমি….তুমি মারা গেছ গত বছর!
– হাহা আমি মৃত জীবিত তাতে তোর কি
আমি আর আমার পরিবার কোনো সুবিচার পায়নি।তোর এমপি বাপ সেখানে হাত দিয়েছে বলেছে।
ফলে কি জুটেছে জানিস? আমার পরিবারের অসম্মান আর আমার মৃত্যু।
ভাইয়ার চাকরি গেছে ভাবির সাথে ডিভোর্সই হয়ে যেত।আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে মা তিক্ত কথার অপমানে জর্জরিত হয়েছে। তারা এর সুবিচার পায়নি শুধুমাত্র তোর জন্য।
তোর সেই ভুল একটা পরিবারকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।তাই তোর সেই ভুলের হিসাব চুকাবো আমি আজকে।তোর এমপি বাপের জন্য সেদিন বেঁচে গেছিলি আজ বাঁচবিনা।
শর্মিন এগিয়ে এলো তবে হেটে নয়
শূন্যে ভেসে।অভি চিৎকার করে রুম থেকে বেরতে গিয়ে থেমে যায় কারণ শর্মিন পিছন থেকে ওর স্বরযন্ত্রে নখ বসিয়েছে।বিস্ময়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের সামনে শর্মিনের হাসি দেখতে পেল।হাসির ফলে
শর্মিনের দাঁতগুলো বেরিয়ে গেছে।দাঁতগুলো স্বাভাবিক নয় বরং স্বাভাবিকের চেয়ে বড় ও তীক্ষ্ণ।
অভি আর ও বিস্মিত হয়ে দেখতে পেল
শর্মিন ওর গলাতেই দাঁত বসাচ্ছে।অভির চোখদুটো খোলাই রয়ে গেল।
শর্মিন নিজের মতো লাশের ব্যবচ্ছেদ করল।অভির রক্তে গোসল করে ফেলে রাখা পোশাক পরে মাথায় টুপি আর মুখে ওড়না পেঁচিয়ে বের হলো।
অবশেষে ওর কাজ শেষ হলো।
এবার নিশ্চিতে ঘুমুতে পারবে শর্মিন।
তবে ঘুমানোর জন্য প্রয়োজন অনেক কুয়াশা।ঘন কুয়াশা।যে কুয়াশায় অন্যকে তো দূর নিজেকেই দেখতে পাওয়া যাবেনা।অদ্ভুত সেই ঘন কুয়াশা চাই শর্মিনের।
কুয়াশা আর ও ঘন হচ্ছে ঘন থেকে ঘনতর।