#আজল
#পর্ব-ছয়
১৪.
জীবনে নেয়া সব ডিশিসান এর সুফল বা কুফল যাই বলি না কেন তা সব সময় তাতক্ষণিক বোঝা যায় না। দুই বছর, পাঁচ বছর কিংবা অনেক সময় জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে মনে হয় যে, জীবনটাকে আরেক টু ভালোভাবে সাজানো যেত বা অমুক ডিশিসন নেওয়াতে এতো কঠোর না হলেও পারতাম বা ডিসিশন টা এভাবে না নিয়ে ওভাবে নিলেও পারতাম। আসলে বিপদ নিজের দোরগোড়ায় না আসলে মানুষ কিছু টের পায় না। এটা আজমল সাহেব মানে ফুয়াদের বাবা আজকে হারে হারে টের পাচ্ছেন। অসুস্থ হয়ে ঢাকায় ছেলের বাসায় এসেছিলেন। বেশি কিছু না, ভাইরাস জ্বর হয়েছিল, তাতেই কাত হয়ে গেছেন। বয়সের দোষ বলেও একটা কথা আছে। এই বয়সের দোষেই ভাইরাস জ্বরেই তিনি কাতর হয়ে গেছেন। তার ছেলেমেয়ে দুটো মাশাল্লাহ বাবা অন্তপ্রান। যথেষ্ট ডাক্তার, হাসপাতালে দৌড়া দৌড়ি করেছে এই কয়দিন। দু তিনদিন হয় বাসায় এসেছেন। বৌমা সাঁচি আর জামাই তানভীর ও তার জন্য কম করেনি বা করছে না! কিন্তু তবুও আজকে তার নিজেকে প্রচন্ড রকম অসুখী একজন মানুষ মনেহচ্ছে। মনেহচ্ছে বাবা হিসেবে সন্তানদের জন্য সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।
বিকেলের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে নিজের রুমে যাওয়ার সময়ই শুনতে পেলেন প্রিয়তার গলা। খুব নিচু স্বরে মায়ের সাথে কথা বলছে আর কান্না করছে। যদিও আড়ালে থেকে অন্যের কথা শোনা গর্হিত কাজ। তবুও উনি নিজেকে এর থেকে দমন করতে পারলেন না। একটু এগিয়ে গেলেন প্রিয়তার রুমের সামনে। দরজা সামান্য আলগা করে দেখলেন মেয়ে তার মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদছে। মাও কাঁদছে, কিন্তু সে তার শাড়ির আঁচলে মুখ মুছে পরম আদরে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
” মা, আমার কস্ট হয় অনেক। নিজের ইচ্ছা মতো কিছুই করতে পারলাম না জীবনে। কেমন বন্দী হয়ে থাকতে হয় মা তানভীরের ওখানে। নিজের কোনো ইচ্ছা অনিচ্ছা নাই মা! এই ভাবে কি বাঁচা যায় মা? কত বয়স আমার? আমার ক্লাস মেটরা সব কি সুন্দর ঘুরে বেড়ায়, হাসে, খেলে, খায় দায়। আর আমার মা! মেয়ের চিন্তা করতে হয়, সংসারে কি রান্না হবে সেই চিন্তা করতে হয়! শাশুড়ীর চিন্তা করতে হয়। অথচ মা, তানভীর কে দেখ! ওর কিন্তু কোন চিন্তা নেই! নিজের মতো স্বাধীন আছে? এমনকি নিজের মাকে নিয়েও চিন্তা করে না? সব আমার উপর ছেড়ে দিয়ে রাখছে। আমার ভালো লাগছে না মা? বাবা কেন তখন তারাহুরা করে আমার বিয়েটা দিলো মা!!?? একদম ভালো লাগে না মা!”
“শোনা মা, এমন করে বলিস না, মা! বাবা শুনলে কষ্ট পাবে।ধৈর্য্য ধর মা, আল্লাহ সব ঠিক করবে।”
আজমল সাহেবের আর ইচ্ছা হলো না শোনার।
কি শুনবেন! তার একমাত্র মেয়েটা এতো কষ্টে আছে আর সে বাপ হয়ে কিছুই টের পেলো না! কেমন বাপ সে! আর কিছু ভাবতে পারছেন না! টলতে টলতে তিনি নিজের রুমে ফিরলেন।আস্তে করে শুয়ে পরলেন খাটে এসে। বাবা মায়ের বড় সন্তান ছিলেন তিনি। বাবা অকালে মারা যাওয়ার পর ভাইবোনের বড় ভাই হওয়ার দায়িত্ব পালন করতে করতে তার আর আলাদা করে স্বামী আর বাবার দায়িত্ব পালন করা হয়ে ওঠেনি মনেহয়! আজ তার মনে হচ্ছে, ওদের সাথে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনাই করেননি কখনো! ওরা কি করতে চায়? ওদের কি ইচ্ছা? এগুলো কখনোই জানা হয়ে ওঠেনি তার! ওরা হয়তো বলতে চেয়েছে অনেকবার! উনিই হয়তো ভ্রুক্ষেপ করেননি কখনো! মেয়েটা যে সুখে নেই তা তো আজ বোঝা গেল। আচ্ছা ছেলেটা সুখে আছে কি? কি জানি? অনেকদিন ধরে ছেলেকে খেয়াল করে দেখেছেন। কেমন যেন মনমরা থাকে সবসময়! সবকিছুই করে ছেলেটা, হাসে, খায়, কথাও বলে কিন্তু মনে হয় যেন মন থেকে করছে না? তাতে যেন প্রানের ছোয়া নেই কোনো? পড়ালেখা শেষ করে এতো তারাতারি জীবনে উন্নতি করে ফেললো, গর্ব হতো তার! ইদানীং ছেলের কাছাকাছি থাকার কারনে টের পান কিছু যেন নেই ছেলের মধ্যে। আগে অতটা না ভাবলেও, আজ মনে হচ্ছে ছেলের ও বুঝি তার বিরুদ্ধে কোনো কমপ্লেন আছে?
আর সাহেরা?? সারাজীবন তার সাথে সংসার করলো! কই কখনো তো বলেনি সে অসুখী তার সাথে?? নাকি বলেছে? আর সে শুনতে পায়নি? একবার ভাবলেন জিজ্ঞেস করবেন সাহেরাকে। কিন্ত পরক্ষণেই মনে হলো, যদি সেও বলে আমি তোমার সাথে সুখী ছিলাম না কখনো?? না না করবো না জিজ্ঞাসা! সাহেরার কাছ থেকে এরকম কঠিন কথা শোনার মতো সাহস নেই তার! হজম হবে না! ভয় হতে লাগলো আজমল সাহেবের। নিজের সবচেয়ে কাছের যারা, তাদেরকে যখন দূরের মানুষ মনে হয় তখন সেটা মনের কোথায় যেন লাগে! আজকের আগে এরকমটা কখনো মনে হয়নি। কিংবা কে জানে! মনে এই ভাবনাটা আসার প্রয়োজন হয়নি হয়তো?
১৫.
আজ অফিস থেকে একটু তারাতারি বাসায় ফিরেছে ফুয়াদ। শরীর টা আজ সাথ দিচ্ছিলো না। বাবার অসুস্থতায় দৌড়াদৌড়ি তার উপর অফিসে কাজের প্রেশার সব মিলিয়ে শরীরের উপর দিয়ে যেন স্টীম রোলার চলেছে এই কদিন। ভীষন রকম ক্লান্তি আর অবসাদ আজ যেন জেকে বসেছে শরীরে। বাধ্য হয়ে ছুটি নিয়ে চলে আসতে হলো। মা কিছুটা উদ্দিগ্ন হলো ছেলেকে দেখে –
“কি রে বাবা, শরীর খারাপ নাকি? আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে? বউ মা তো এইমাত্র ক্লাসে গেল!”
“হুম মা! আজ খুব খারাপ লাগছিলো। তাই চলে এলাম। দুপুর আজ খাইনি মা, আমাকে কিছু খেতে দাও তো!”
“আচ্ছা তবে ভাতই খেয়ে নে না। পাঁচটা বাজে, এখন নাস্তা খেলে আবার তোর গ্যাস হয়ে যাবে। সেই সকালে খেয়েছিল কিনা!”
“ঠিক আছে মা, তাই দাও। একটু আলু ভর্তা করে দিয়ো তো মা শুকনো মরিচ দিয়ে। খুব খেতে করছে।”
” আচ্ছা দিচ্ছি। তুই গোসল করে আয় ততক্ষণে আমি সব রেডি করে ফেলি। ”
ফুয়াদ গেল ফ্রেশ হতে। দেখলো বিছানার এক কোনে ওর পরার জন্য কাপড় আর টাওয়েলটা ভাজ করে রাখা। তা দেখে ফুয়াদ হাসলো একটু। মেয়েটা নিজের কর্তব্য করতে কখনো ভোলে না। আজকে ক্লাসে যাবে তাই আগেই ওর কাপড় রেডি করে রেখে গেছে। মনে মনে গুনগুন করতে করতে ওয়াশ রুমে ঢুকলো।
বিয়ের তিনমাস পার হয়ে গেছে। এখনো সাঁচির সাথে সম্পর্ক টা আগের মতই আছে। সেদিনের পর থেকে উল্টো আরো অকওয়ার্ড লাগে ফুয়াদের। কিভাবে নিজের থেকে এগিয়ে গেলো ওর দিকে। ভয় ও লাগে পাছে না আবার টাল সামলাতে না পেরে বেশি কিছু না করে ফেলে। যদিও করলে সেটা অন্যায় হবে না বরং সাঁচির সাথে ন্যায় করা হবে। কিন্তু মনকে কে বোঝাবে? মনের ব্যাপার সব তর্কের উর্ধে। নিজে ফুয়াদ জীবনে অনেকবারই মনের সাথে কম্প্রোমাইজ করেছে, তাতে ও যতটা না কষ্ট পেয়েছে তার থেকে অনেক অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলো একজনকে স্বপ্ন দেখিয়ে, কথা দিয়ে তারপর সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে আর কথা রাখতে না পেরে। তার সেই আকুতি এখনো ওর কানে বেজে যায় সর্বক্ষন। সেই অপরাধ বোধের বোঝা থেকে যেন মুক্তি নেই ওর! সে যে কি এক অসহ্য যন্ত্রণা, ফুয়াদ ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কি করবে। এ এক এমনই গোপন ব্যাথা যার খবর কেউ যানে না, কাউকে বলতে পারে না। বন্ধু দেরও না, ওরা অবশ্য আবছা ভাবে জানে, কিন্তু পুরোটা কেউ জানে না। পাছে কেউ তাকেই ভুল বোঝে এই ভয়ে কাউকে কিছু বলা হয়ে ওঠে না!
মাঝে মাঝে মনে হয় সাঁচির সাথে শেয়ার করে ঘটনাটা। খুব ইচ্ছে করে নিজের গোপন ব্যাথ্যার একটু ভার সাঁচির কাধেও চাপিয়ে দিতে। কিন্তু
পরক্ষনেই আবার ভয় লেগে যায়, সাঁচি যদি ওকে ভুল বুঝে দূরে সরে যায় নিজ থেকে! যদি বলে! ফুয়াদ ভরসা করার মতো ছেলে না! সাঁচিকে নিয়ে কি এক দ্বিধা ফুয়াদের মনে। ও মেয়েটাকে ভালোবাসতে চায় কিন্তু পারে না। কি এক বাঁধা যেটা কোন ভাবোই ডিঙাতে পারছে না ফুয়াদ। মেয়েটা ওর কারনে কষ্ট পাচ্ছে এই ভাবনাটাও ওকে কষ্ট দিচ্ছে। নিজের ভেতরকার গিল্টি ফিলিং কুরে কুরে খায় ফুয়াদকে। কেন মেয়েগুলোর কষ্টের কারন ফুয়াদ? এসব চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করে সবসময়। তাই চাইলেও জীবনটা স্বাভাবিকভাবে গুছিয়ে নিতে পারছে না ফুয়াদ। সবকিছু থেকে পালিয়ে বেড়াতে তাই আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে যায় কাজে।
মাঝে সাঁচি বেশ জ্বালাতন করতো। হঠাৎ হঠাৎ জড়িয়ে ধরতো, চুমুও দিতো মাঝে মাঝে। আরো বেশি কিছু চাইতো, কিন্তু মেয়ে হয়ে আর কতই বা আগাবে! শিক্ষিত মেয়ে, নিজেকে সামলে নিতো। ফুয়াদের সারা না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। ও এখন পড়ালেখা নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকে। ফুয়াদ কে জিজ্ঞেস করেছিলো একবার, কিছু বলার থাকলে যেন ফুয়াদ শেয়ার করে ওর সাথে। ফুয়াদ নিশ্চুপ থেকেই তার উওর দিয়ে দিয়েছে। তারপর থেকে সাঁচি আর কিছু বলে না ওকে। নিজের মতো থাকে।
কতক্ষণ ধরে ভিজছিলো কে জানে! মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরলো ফুয়াদের।
” বাবা, আর কতক্ষণ ভিজবি? তোকে ডাকছি সেই কখন থেকে?”
” মা, এই বের হচ্ছি। তুমি যাও আমি আসছি।”
কিছুক্ষণ পর কাপড় পরে বের হলো ফুয়াদ। বেশ ঠান্ডা লাগছে এখন। খেতে বসেও কেমন যেন অরুচি লাগছিলো। মা গরম ভাতের মধ্যে ঘি ছড়িয়ে দিলো সাথে আলুভর্তা। তাই দিয়ে ভাত মাখালো ফুয়াদ-
“বাবা কোথায় মা? প্রিয় আর প্রিতি? খেয়েছে ওরা?”
” তোর বাবা ঘুমাচ্ছে। প্রিয় আর প্রিতিও ঘুমাচ্ছে। তোর চোখ এরকম লাল হয়ে আছে কেন, বাবা?”
“কি জানি,মা? গা ব্যাথা করছে খুব।”
“জ্বর বাধালি নাকি?”
মা গায়ে হাত দিলেন।
” গা টা গরম মনে হচ্ছে। একটু আদা চা করে দেই নাকি? বউমা কে আসতে বলবো?”
“আরে না মা। আমি ঠিক আছি, সাঁচি কে কিছু বলো না! এমনিতেই এক সপ্তাহ ক্লাস করতে পারেনি বাবার অসুস্থতার সময়।”
ফুয়াদ কোনো রকমে একটু খেয়ে উঠে গেলো- “আমি একটু শুলাম,মা। কোনো দরকার থাকলে ডেকে দিয়ো।”
আর দাড়ালো না ফুয়াদ। ঘরে এসে চাদর জড়িয়ে শুয়ে গেল। ঠান্ডায় এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল কিছু টের পেলো না।
১৬.
সাঁচি যখন ভার্সিটি থেকে ফিরলো রাত সারে আটটা বাজে। আজ একটা ক্লাস হয়নি বলে আগে চলে আসতে পারলো। ফুয়াদ অবশ্য চলে আসে এতো ক্ষনে। যেদিন ফুয়াদের আসতে আরো রাত হয়, সারে নয়টা দশটা বাজে সেদিন ও সাঁচিকে নিয়েই ফেরে। নিজেই ওর ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ওর ক্লাস শেষ হওয়া অবধি। সাঁচির ক্লাস রুটিন মুখস্থ আছে ফুয়াদের। তাই আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করে না। সাঁচি বেড় হয়েই ফুয়াদকে দেখতে পায় গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। ব্যাপারটা বেশ এনজয় করে সাঁচি। ফুয়াদের কর্তব্য পরায়নতা দেখে খুব অবাকও লাগে মাঝে মাঝে। কখনো কোনো কর্তব্য পালনে ভুল হয় না ওর। শুধু মনের ব্যাপারটা যেন বোঝে না!
আজ যখন ফোন দেয়নি তার মানে ফুয়াদ বাসায়। বাসায় ঢুকে বাবা মা প্রিয়তা আর প্রিতির সাথে কথা বলে নিজের রুমে ঢুকলো সাঁচি । বাতি জ্বালাতেই দেখলো ফুয়াদ গুটি শুটি মেরে চাদর গায়ে জরিয়ে শুয়ে আছে। এসি ও বন্ধ। কি ব্যাপার! এভাবে শুয়ে আছে কেন ও? ভ্রু কুচকে তাকালো সাঁচি। ডাকলো দু একবার কিন্তু সারা দিলো না ফুয়াদ। সাঁচি এগিয়ে গিয়ে ফুয়াদের গা থেকে চাদরটা সরালো। মুখটা লাল হয়ে আছে ফুয়াদের। ঠোঁট টা শুকিয়ে আছে। ফুয়াদের ঠোঁটে নজর যেতেই একটা ঢোক গিললো সাচি। পরক্ষনেই নিজেকে মনে মনে গালি দিলো একটা। কেন যে ফুয়াদের সামনে এলে এরকম বেসামাল হয়ে যায় সাঁচি? নিজের ভাবনাগুলো কিছুতেই নিজের থাকে না। মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে ফুয়াদের কপালে হাত রাখলো সাঁচি ।
” আল্লাহ! জ্বরে তো গা পুরে যাচ্ছে! এই লোক তাও এতো শান্ত হয়ে শুয়ে আছে কীভাবে? ”
সাঁচি তাড়াতাড়ি আলমিরা থেকে একটা ব্লাংকেট বের করে ফুয়াদের গায়ে জড়িয়ে দিলো। শাশুড়ি মাকে ডাকলো। বাবা আর প্রিয়তাও এলো। প্রিয়তাই বললো-
” ভাইয়ের তো অসুখ হয় না বললেই চলে। হঠাৎ করে এরকম জ্বর হলো কেন? ডাক্তার ডাকলে ভালো হবে। না হলে ভাই অনেক কস্ট পাবে। ওতো জ্বর সহ্য করতে পারে না।”
সাঁচির ও তাই মনে হলো। ডাক্তার কে খবর দিলো। ডাক্তার তিনদিনের ওষুধ আর কিছু টেস্ট দিয়ে বললেন, তিনদিনে জ্বর না কমলে যেন টেস্টগুলো করায়।
রাতে ফুয়াদের কপালে পট্টি দিতে দিতে ঘুমিয়ে গেছিলো সাঁচি। ফুয়াদের কথা শুনে জেগে গেল। জ্বরের ঘোরে বিরবির করছে-
“রেনু, আমি বুঝিনি তুমি এতো কষ্ট পাবে? না বুঝেই ভুল করে ফেলেছি। প্লিজ মাফ করে দাও আমায়। প্লিজ! কথা বলো রেনু?”
“এই, এই কি বলছেন?”
সাঁচি হালকা ধাক্কা দেয় ফুয়াদকে।
“ও আমাকে কখনো মাফ করবে না। কখনো না!”
ভ্রু কুচকে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে সাঁচি। “কি বলছে? কে মাফ করবে না ওকে?সাঁচি আবার ডাকলো-
“এই কি বলছেন? কে মাফ করবে না?”
” ও, খুব কষ্টে আছে। আমি ওকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারিনি। ও আমায় ক্ষমা করবে না। কখনে না…”
সাঁচি আবারও আস্তে ধাক্কা দিলো ফুয়াদকে। ফুয়াদ চোখ মেলে তাকালো একটু। পুরো ঘোলাটে চোখ নিয়ে তাকলো ফুয়াদ।
” কি বলছেন? কে মাফ করবে না?”
একটু চুপ করে থেকে আবার চোখ বন্দ করলো ফুয়াদ। সাঁচির দু হাত আগলে ধরলো, ঘোলাটে চোখে তাকালো আবার-
” সত্যি জানলে তুমিও আমাকে ভুল বুঝবে?ছেড়ে চলে যাবে, সাঁচি?”
সাঁচি বুজলো ফুয়াদ কোন মেয়ের বিষয় নিয়ে কষ্টে আছে। যে বিষয় টা হয়তো কেউ জানে না। হয়তো ভয় পায় ফুয়াদ! লোকটা জানে না এই এতদিনে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে সাঁচি ওকে!!?? জীবনের প্রথম ভালোবাসা ফুয়াদ ওর, তার উপর সাঁচির স্বামী ও। ফুয়াদ কি বুঝবে? সাঁচির ঠিক কতটা জুরে ফুয়াদ আছে? কত শত বার জিজ্ঞেস করেছে ফুয়াদকে, কোন অতীত থাকলে যেন ওর সাথে শেয়ার করে। কিন্তু ফুয়াদ তো ওকে বিশ্বাস ই করতে পারছে না!? কিভাবে ওর বিশ্বাস অর্জন করবে সাঁচি? ভেবে পায় না! মাঝে মাঝে ওর খুব ইচ্ছে করে ফুয়াদকে বলতে, ” লাজুক বানর, একটা বার আমাকে বিশ্বাস করেই দেখো? বিয়ে করা বউ তোমার, আমাকে বিশ্বাস করে ঠকবে না কখনো!!!! ”
চলবে—-
©Farhana_Yesmin