#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ2 [ফ্রেন্ডশিপ]
[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]
বহমান নদীর স্রোত সে তো তার মাতই বয়ে চলে। ঠিক সেভাবেই কারো কারো জীবন উন্নত হচ্ছে। আবার কারো কারো জীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকছে।
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী।
আজ অরুপিতার ইউনিভার্সিটিতে নবম তম দিন। আজকে তার সাথে এই প্রথম আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো।
~~ফ্লাশ ব্যাক ~~
প্রতিদিনের মত আজকেও আরু ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস করছিল। দুটো ক্লাস শেষ হওয়ার পর পর ওর পাশে বসা একটা মেয়ে ওর হাত দুটো টেনে নিয়ে গিয়ে ছিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে যায় সাথে কিছু মেয়েরাও যায়।মেয়েটাকে দেখে মনে হয়েছিল মেয়েটা আরুর উপর ভীষণ রেগে আছে।
অরু মেয়েটার এমন রাগী চেহারা দেখে কিছুটা ভরকে যায়। সে তো ভার্সিটিতে আসে ক্লাস করে চলে যায়। সেতো কারো সাথে ঝামেলা করে না। না মোটেই করেনা।তাহলে এই মেয়েটা কেন তার উপর এত রেগে আছে বুঝতে না পেরে মিন মিন করে বলল।
অরু— আমি তো কিছু করিনি তাহলে আপু আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন?
~~”আসছে ন্যাকা। এই আমি তোমার ক্লাসমেট তাই আপু নয় আমার নাম ধরে বলবা ওকে।”
অরু— কিন্তু আমিতো আপনার নাম জানিনা।
“আমি সামিরা এই ভার্সিটির ইংলিশ প্রফেসরের মেয়ে”।
এখন থেকে আমার নাম ধরে ডাকবি। আর আমি তোকে তোর নাম ধরে ডাকবো, ওকে । আর এই যে কিউটি চেহারা সুরত গায়ের রং সুন্দর বলে। বেশি অ্যাটিটিউড তাই না তোমার। আমাকে ইগনোর করছো। বিগত ছয় সাতটা দিন ধরে ট্রাই করছি তোমার সাথে কথা বলার। আর তুমি কিনা আমাকে পাত্তা দিচ্ছো না। আর তোমাকে অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করছি। আসছো ক্লাস করছ চলে যাচ্ছ। কারো সাথে কথা বলছো না কেউ কথা বলতে চাইলে তার সাথে বলছো না। ভাব একটু বেশি তাই না তোমার। তুমি জানো আমি কে। আর তুমি আমাকে ইগনোর করো।এই আমিময় মানুষটার সাথে চলার জন্য কত মানুষ ফ্রেন্ড হতে আসে। আর আমি তোমাকে নিজে থেকে ফ্রেন্ড হওয়ার কথা বলছি আর তুমি আমাকে ইগনোর করছো । ভাবো কি নিজেকে।
“অরু মেয়েটার এমন কথা শুনে প্রথমে কিছুটা আশ্চর্য হলেও। পরে কিছু একটা ভেবে বলল।”
অরু— সরি আমি কাউকে ইগনোর করছি না আপু। আপনারা হয়তো তো ভুল হচ্ছে কোথাও।
সামিরা– আবারো আপু। তুই শুধু আমাকে সামিরা বলবি আর আমি তোকে তোর নাম ধরে বলবো বুঝলি।
আর তুই আমার ফ্রেন্ড। ও হ্যাঁ শুধু ফ্রেন্ড নয় বেস্ট ফ্রেন্ড।
অরু— কিন্তু,
সামিরা— কোন কিন্তু নেই আমি বলেছি মানে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। মানে বেস্ট টু ব্যাস।
~~ এই ভার্সিটিতে আমি অনেকবার এসেছি কিন্তু মনের মত কাউকে পাইনি। সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে হাজির হয় আমার সাথে চলার জন্য। কিন্তু আমি তেমন কারো সাথে ফ্রেন্ড হই না। কিন্তু তোকে দেখার পর অন্যরকম মনে হয়েছে। তাই তো নিজের বেস্ট টু বানাতে চাই। কি হবি তো আমার বেস্ট টু?? আর আমার পাশে যে ওদের দেখতে পাচ্ছিস ওরা হলো আমাদেরই ক্লাসমেট। আমি শুধু ওদের দুজনের সাথেই কথা বলি। সামিরা ডান পাশটা দেখিয়ে ও হল মায়া। আর ও হল ঋতু।চাইলে তুই ওদের সাথে কথা বলতে পারিস।
“অরু কিছুক্ষণ সামিরা দিক আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে থেকে বলল ”
অরু— আমি কারো ফ্রেন্ড হতে পারবো না। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।বলে যেই চলে যেতে নিবে। তখনই পিছন থেকে সামিরা আরুর হাতটা চেপে ধরে বললো।
সামিরা— তুমি আমাকে সরাসরি আনফ্রেন্ড করে দিচ্ছো। (মুখটা হা করে )
অরু— দেখো,
সামিরা— আমি কিছুই জানি না তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবে ব্যাস। আর যদি না হও আমি তোমাকে কোথাও ছাড়াছি না। তোকে এখন এই মুহূর্তে আমার সাথে ফ্রেন্ড হতে হবে ,তাহলে তুই ছাড়া পাবি। তার আগে নয়। আর যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিস তো আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেব বলে দিলাম। -মুখটা বাচ্চা বাচ্চা করে
“অরু তো পড়লো মহা বিপাকে। এ কেমন মেয়ে রে বাবা ফ্রেন্ড না হলে ডিভোর্স দিবি? অরু তো কাউকে নিজের জীবনে আর বেস্ট ফ্রেন্ড বানাতে চায় না। কারণ সে তো তার বেস্ট ফ্রেন্ডের থেকেই ধোঁকা পেয়েছিল। সে,জে আবারো ধোঁকা পাবে না এর তো কোন গ্যারান্টি নেই। কিন্তু এই মেয়েটা কেমন গায়ে লেপটে পরা মেয়ে। অনেকদিন যাবতই খেয়াল করছে।”
সামিরা— কি হল চুপ করে আছো কেন কথা বল। -মুচকি হেসে । হবে তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
এইবার আরুপিতা মেয়েটার সাথে সাথে মুচকি হেসি দিয়ে বলল।
অরু— বেস্ট ফ্রেন্ড হলে খুশি আপনি??
সামিরা— খুশি মানে আমি তো তোকে আমার ভাইয়ের ব,
অরু— মানে??
সামিরা— ইয়ে মানে কিছু না। আমি বলতে চাইছি আমি অনেক খুশি হব। তবে তুই এখন আপনি বলছিস কেন তুই করে বল।
অরু— এই যে আমার সামিরা রানী। জান আজ এই মুহূর্ত থেকে আপনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। এবার খুশি তো?
সামিরা আরুপিতার ফ্রেন্ডশিপ একসেপ্ট করেছে বলে এক লাফে সামিরা অরুপিতাকে জড়িয়ে ধরে এগালে-গালে টপটপ করে দুটো চুমু খেয়ে বলল।
সামিরা— সত্যি দোস্ত আমি অনেক অনেক অনেক হ্যাপি।
অরু— ঠিক আছে ঠিক আছে এখন তো আমাকে যেতে দাও। এখনো ক্লাস বাকি। সেটা কি মনে আছে তোমাদের।
সামিরা— আবার তোমাদের ,
অরু— ওকে সরি চল এবার তোরা, হয়েছে ।
সামিরা মুচকি হাসি দিয়ে অরুর হাতটা শক্ত করে মুঠোর মধ্যে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে,মায়া ঋতুকে উদ্দেশ্য করে বলল।
সামিরা— তোরাও চলে আয়।
“সময়টা ডিপ দুপুর, শীত হওয়াতে তেমন কারোই গরম লাগছে না। তার উপর ভার্সিটি প্রোগ্রাম আছে তাই স্যার ম্যামরা সব স্টুডেন্টদের ভার্সিটি মাঠে ডেকে পাঠিয়েছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাকি কথা বলবে। সবাই মাঠে অনেকক্ষণ আগে উপস্থিত হয়ে গেছে। কিন্তু এই যে সামিরা ফ্রেন্ড হওয়ার পর থেকে যেন আরুপিতার মাথাটা কথা বলে বলে শেষ করে ফেলছে। একটা মেয়ে কতটা ভালো হলে তার সমস্ত কিছু একদিনের ভিতর একটা মানুষকে খুলে বলতে পারে। সেটা হয়তো সামিরাকে না দেখলে কেউ বলবে না। এই যে মাঠে আসার পর থেকে আরুপিতার কান কথা বলে যাজরা করে দিচ্ছে। আর তখন থেকে একটাই কথা। আজকে নাকি ভার্সিটিতে নতুন প্রফেসর আসবেন। প্রফেসর নাকি দেখতে খুবই সুন্দর এর আগে আরো একবার এসেছিল। তাছাড়া সবার সাথে নাকি খুবই ডিপলি ব্যবহার করেছেন। প্রথম দিনি এসে নাকি সবার মনে জায়গা করে নিয়েছেন।”এর সাথে আরো বললো।
ভার্সিটিতে বড় ভাই নামে একটা ছেলে আছে। যেমন রাগী তেমন সুন্দর। এক দেখাতেই প্রেমে পড়ার মতন। অনেক মেয়েরাই নাকি লাইন মারে তবে কাউকে সুন্দর ভাইয়া পাত্তা দেয় না। তাদের একটা গ্যাং ও আছে।
অরুপিতা সামিরার এত বকবক শুনে কিছুটা ধমকের সুরে বলল।
অরু— সামু চুপ কর বোন। স্যার ম্যাম কি বলছেন সেটা আগে শোন।
“তোমাদের কিছুদিন আগে একজন প্রফেসরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল তাই না? উনি কাল থেকে তোমাদের এখানে রেগুলার জয়েন হবেন। উনি সাইন্সের বায়োলজি বিভাগে পড়াবেন। তোমরা যারা সাইন্স বিভাগে আছো তারা সবাই কালকে স্যারকে স্বাগতম জানাবে কেমন। আর আমাদের ভার্সিটিতে নিউ ইয়ার উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে। তাই তোমাদের এখানে ডেকে পাঠানো। আর যারা থার্ড ইয়ারে আছো এই বছর তাদের কিছু দায়িত্ব আছে। তোমরা লাইব্রেরীতে আমাদের সাথে দেখা করো।”
~~~~~~~~~~~
~~ হেই সুন্দরী। এদিকে এসো
“এই তোমাদের দাঁড়াতে বললাম না।”বলতে বলতে সামিরা দের সামনে দাঁড়ালো।
সামিরা— ও রাফি ভাই আপনি। কিছু বলবেন।
রাফি— সামিরা তোমার সাথে এই মেয়েটা কে?? ভ্রু কুঁচকে।
সামিরা— মেয়েকি, হেসে বলল।
~~~ও, ও তো আমার ভাবি,
চলবে,,।