Tag: হ্যাকারের লুকোচুরি সিজন ২ পর্ব-১৭ ও ১৮

  • হ্যাকারের লুকোচুরি সিজন ২ পর্ব-১৯ ২০ ও সমাপ্ত

    হ্যাকারের লুকোচুরি সিজন ২ পর্ব-১৯ ২০ ও সমাপ্ত

    হ্যাকারের_লুকোচুরি
    #সিজন_২
    #পর্ব_১৯_২০_ও_সমাপ্ত
    লেখক_sharix_dhrubo

    অন্যসব বাদ দিয়ে রাফি তার প্রয়োজন নিয়ে বসে পড়ে পিকাচুর সামনে,
    রাফি – পিকাচু, আমার টাকার দরকার, প্রচুর টাকার দরকার।
    পিকাচু – Feeding money ….. calculating…..
    I can control most of the digital money of the world.
    রাফি – না। সবার টাকা আমার প্রয়োজন নেই। আর অন্যের টাকায় বড়লোক হতেও চাইনা। এই বিপদ থেকে বাঁচতে আমার টাকার প্রয়োজন, এমন টাকা খুঁজে বের করো যে টাকা খোয়ালে কেউ খোঁজ করবে না।
    পিকাচু – Accessing public record ….. Gathering account info……. calculating……..
    You can still be a billionaire.
    রাফি – পিকাচু, কি করেছো তুমি?
    পিকাচু – মানুষ মারা যায়, কিন্তু তাদের ব্যাংক একাউন্ট ক্লোজ হয় না। যদি একাউন্ট হোল্ডারের নমিনি সহ কোন দাবিদার না থাকে তাহলে সেই টাকা ব্যাংকেই পড়ে থাকে। পিকাচু শুধু এই ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খুঁজে বের করেছে যারা পাবলিক রেকর্ডে মৃত ঘোষিত হয়েছে এমনকি কোন দাবিদারও বেঁচে নেই।
    রাফি ভেবে দেখলো এমন একাউন্টের টাকা নেয়া ঠিক হবে কি না! এতকাল ধরে মাফিয়া বয় একটা মাইটি ইমেজ ছিলো হোয়াইট হ্যাটসদের কাছে। শেষমেশ কিনা টাকা চুরি করা শুরু করলো রাফি!
    পিকাচু – You can have it or not is upto you. Take it or leave it.
    রাফি জানে যে তাকে সততার চরম মূল্য দিতে হবে, কারন যদি মাফিয়া গার্ল রাফির বাবা মা আর তোহাকে বন্দি করে ওই নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ও স্যাটেলাইট দখল নিয়ে দিতে বলে তাহলে রাফির হাতে কোন অপশনই থাকবে না। কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু একটা মাথায় এলো রাফির,
    রাফি – ওয়েট ওয়েট ওয়েট…….. নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস চুরি গেছে, সেটা নিশ্চই এক্টিভ ছিলো না! এক্টিভেশন ডিভাইস এক্টিভ করতে নিউক্লিয়ার লঞ্চ কোডের দরকার পড়বে। অথেনটিক লঞ্চকোড ছাড়া না এক্টিভেশন ডিভাইস কোন কাজে দেবে আর না ওই নিউক্লিয়ার বোমা। লঞ্চকোডের কোন কথা তো উল্লেখ করলো না মাফিয়া গার্ল!
    রাফির কাছে এখন পুরো ব্যপারটা একটা সাজানো নাটক মনে হতে লাগলো আর কোন বড়সড় প্লানের জালে নিজেকে ফাঁসতে দেখলো।
    নাহ যে কোন মূল্যেই হোক বাবা মা আর তোহা কে মাফিয়া গার্লের থাবা থেকে বাঁচাতেই হবে আর সাথে পিকাচুকেও দূরে রাখতে হবে মাফিয়া গার্ল থেকে।
    রাফি – পিকাচু, আমার দেশে এমন পড়ে থাকা একাউন্ট থেকে কত টাকা বের করা সম্ভব?
    পিকাচু – Calculating………
    রাফি স্ক্রীনে ১০ সংখ্যার একটা এমাউন্ট দেখতে পায়।
    রাফি – কিহ!!! এত টাকা! বেওয়ারিশভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে! আমি চাইলেই এই টাকা নিজের করে নিতে পারবো?
    পিকাচু – Affirmative.
    রাফি – এত টাকা দরকার নেইই আমার। বাবা মা আর তোহাকে সরিয়ে কোন নিরাপদ জায়গায় রাখতে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করবো।
    পিকাচু – Your wish is my command.
    রাফি – পিকাচু, বাবা মা এবং তোহাকে রাখার মত কোন সেফহাউজের ব্যবস্থা করতে পারবে কি, মাফিয়া গার্লের রাডারের বাইরে!
    পিকাচু – There is a lots of ways but none of them are recommended.
    রাফি – আমার একটা সেফহাউজ লাগবে যেখানে আমার ফ্যামিলি নিরাপদ থাকবে মাফিয়া গার্লের নজরের বাইরে, এতটুকুই। আর কোন অতিরিক্ততা চাই না।
    পিকাচু – তুমি কি তাদেরকে তোমার কাছে আনতে চাও?
    রাফি – পিকাচু, তোমার হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারন কি? আর তাদেরকে আমার কাছে এনে কোথায় রাখবো!
    পিকাচু – পিকাচু এক্টিভেট হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টোটাল এক্টিভিটিসের ৭০% ছিলো ফ্যামিলি রিলেটেড। পিকাচুর ক্যালকুলেশন বলে যদি তোমার ফ্যামিলি তোমার আশে পাশে থাকে তাহলে তোমার স্ট্রেস লেভেল ৪০% কমে যাবে এবং অন্যান্য কাজের ফোকাস ৫৬% বাড়তে পারে।
    রাফি পিকাচুর এ্যনালাইসিস দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। হিউম্যান ইমোশন এবং এ্যাটাচমেন্টকে গানিতিক রুপে প্রেজেন্টেশন এর আগে কখনো দেখে নি রাফি। পিকাচুর আনফিনিশড কোডিং হয়তো রাফি করেছিলো কিন্তু সাইবার ওয়ার্ল্ডের কোটি কোটি মানুষের বিহেভিয়ার এ্যানালাইসিস করে পিকাচু এক একটি নতুন উপসংহার তৈরী করছে প্রতিনিয়ত। এখনো অনেককিছুই জানা বাকি পিকাচু সম্পর্কে।
    রাফি – সেটা তো বুঝতে পারলাম কিন্তু বাবা মা আর তোহাকে কিভাবে আমার কাছে নিয়ে আসবো? তাদের পাসপোর্ট থাকলেও এই দেশের ভিসা তো নেই। তাহলে কিভাবে আসবে তারা?
    পিকাচু – তারা যদি প্লানমাফিক চলে তাহলে আমি তাদেরকে এই লোকেশন পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারবো।
    পিকাচু মনিটরে একটা জিপিএস লোকেশন শো করে যা আসলেই পৃথিবীর বৃহত্তম দেশের একটা শহরে পয়েন্ট করে আছে।
    রাফি – ওখানে কি আছে? ওখানে আমার পরিবার নিরাপদ থাকবে কিভাবে?
    পিকাচু – ওটা একটা পরিত্যাক্ত আর্মি বেস তবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর এখানে তৎকালীন সময়কার এক অত্যাধুনিক বাংকার রয়েছে যেখানে তুমি এবং তোমার পরিবার সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকবে।
    রাফি – কিন্তু তুমি তাদেরকে এখানে আনবে কিভাবে পিকাচু?
    পিকাচু – Accessing global safehouse data……
    তোমার বাবা মা যে বাড়িতে আছেন তার কাছাকাছি একটা বেসরকারী আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার জোনাল হেড অফিস রয়েছে, যেটা আসলে একটি দেশের গুপ্তচরদের সেফহাউজ। আমি তোমার বাবা মা এবং তোহা কে আন্তর্জাতিক মামলার স্বাক্ষী দেখিয়ে ওই সেফহাউজে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। পরবর্তীতে প্রোটোকল অনুযায়ী ওই সেফহাউজই তোমার বাবা মা এবং তোহার ডুপ্লিকেট পাসপোর্ট ভিসা বানিয়ে তাদের এই বৃহত্তম দেশে ডিপোর্ট করার ব্যবস্থা করে দেবে।
    রাফির কিছুটা সম্মানে লাগে, শেষ পর্যন্ত বাবা মা আর তোহাকে চোরের মত দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে হবে! যা করেছে তা তো সব রাফিই করেছে, রাফির পরিবার তো কোনকিছুতেই জড়িত নেই, আর তাছাড়া কিছুদিন পর টাস্কফোর্সের নতুন রিপোর্ট অনুসারে রাফিকে হয়তো নির্দোষ ঘোষনা করে দেবে কোর্ট। এমন অবস্থায় অন্যের টাকা চুরি করে নিজের পরিবারকে আরো বেশী ছোট করে লুকিয়ে তাদেরকে এই বন্দি জীবন উপহার দিতে পারবে না রাফি।
    রাফি – পিকাচু, প্লান ভালো তবে আমার এই দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার কোন ইচ্ছা নেই, এখন সমস্যার কারনে আছি। সমস্যা না থাকলে আমি আমার দেশে ফিরে যাবো। বাবা মা এবং তোহাকে দেশ থেকে ওই প্রোসেসে নিয়ে আসার মত ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হয় নি।
    আচ্ছা বাবা মা কে গ্রামের বাড়ি রেখে আসার ব্যবস্থা করলে কেমন হবে, এত প্রযুক্তির কালো থাবা ও নেই আর রাফিদের বাপ দাদার ভিটা চেয়ারম্যান বাড়ি হিসেবে সারা গ্রামে পরিচিত। সেখানে আইন আর সমাজের মাথা বলা হয় ওই চেয়ারম্যান বাড়ি। সেখানে কোন ঝামেলা করার ক্ষমতা মাফিয়া গার্লের হওয়ার কথা না। এছাড়াও আর কোন আইনী সমস্যা করতে যাবে না কেউ।
    রাফির কাছে নিজের মা বাবা আর তোহাকে দেশের বাইরে নিয়ে আসার থেকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া বেশী নিরাপদ মনে হতে লাগলো।
    রাফি – পিকাচু, মা বাবার কাছে থাকা ফোনের আপডেট জানাও,।
    পিকাচু – Scanning ………..
    পিকাচু মনিটরে মোবাইল ফোনের বর্তমান লোকেশন পিনপয়েন্ট করে দেখালো যা রান্নাঘরের কোন এক শেলফ এ শো করছে।
    রাফি – পিকাচু, মাইক্রোফোন স্ক্যান করে দেখো আশেপাশে কেউ আছে কি না?
    কারন রাফি জানে যে ঘরের ভেতর তার মা এর ফেবারিট প্লেস হলো রান্নাঘর। আর কিছু হোক আর না হোক, মা ঘুরেফিরে রান্নাঘরের দিকেই থাকে। আর বডিগার্ডদের যদি মা রান্না করেও খাওয়ায় তবুও তাদের কখনো রান্নাঘরের আশেপাশে ঘেষতেও দেবে না, এটা মায়ের মসজিদ বলা যায়।
    পিকাচু – পিকাচু কিছু আওয়াজ ডিটেক্ট করছে যা রান্নাঘরের ভেতর থেকেই আসছে।
    রাফি বুঝতে পারে মা হয়তো কিছু রান্না করছে।
    রাফি – পিকাচু, তুমি কি মোবাইলটাতে আমার ভয়েস বাইপাস করে দিতে পারবে? রান্নাঘরের ভেতরে যেন মিনিমাম সাউন্ডে আমার ভয়েস শোনা যায়। সম্ভব?
    পিকাচু – Difficult but not impossible…….
    checking minimum distance ……..
    Speaker adjusted.
    Now you can talk.
    রাফি – মা? ও মা?
    পিকাচু – ঘরের অন্যান্য আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে, we got her attention.
    কিছুক্ষণ চুপচাপ নীরবতা, কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে রাফি আবার বলতে থাকে,
    রাফি – মা? আমি ফাষ্টফুড প্যাকেটের ভেতর, তোমার রাফি।
    পিকাচু মাইক্রোফোনে শোনে কে যেন খচমচ করে কাগজের প্যাকেট ছিড়ছে।
    রাফি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো এই মুহূর্তের জন্য, বার বার উপওয়ালার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, যেন মা হয়, যেন মা হয়, যেন মা হয় বলতে বলতে।
    খচমচ আওয়াজ বন্ধ হয় আর ওপাশ থেকে কন্ঠ ভেসে আসে।
    মা – হ্যালো। কে?
    ততক্ষণে পিকাচু স্পিকারের সাউন্ড এডজাষ্ট করে দিয়েছে।
    রাফি – মা, আমি রাফি। সাবধানে, কেউ যেন না দেখে তোমাকে ফোনে কথা বলতে।
    মা – কেন কি হয়েছে।
    রাফি – মা এখন যা বলছি সেটা শোনো, কেমন আছি কিভাবে আছি কোথায় আছি তা পরে বলছি। এখন এমন এক জায়গায় গিয়ে কথা বলো যেখান থেকে কেউ তোমার কথা শুনতে বা তোমাকে কথা বলতে দেখবে না, আর হ্যাঁ কেউ যেন তোমার হাতে ফোন না দেখে।
    মা – আচ্ছা, লাইনে থাক।
    বলে চুপ হয়ে গেলেন মা। পিকাচু মনিটরে শো করে মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দার দিকে যাচ্ছেন।
    মা – হ্যাঁ বল, কি হয়েছে! এত লুকোচুরি করছিস কেন! আর আলুভাজার ভেতরে তুই কি করছিস?
    রাফি – তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো, এখন এত প্রশ্ন না করে আমার প্রশ্নের জবাব দাও, বডিগার্ডগুলো কোথায়?
    মা – বাইরের গার্ডহাউজে থাকতে পারে, একজন আছে হয়তো ঘরের বাইরে। কেন কি হয়েছে?
    রাফি – সবসময় ই কি এভাবে গার্ডহাউজে থাকে নাকি বাসার ভেতরেও আসে?
    মা – আসে তো, নাস্তা করতে আসে আর খাওয়ার সময় আসে। ভালো ছেলে সব, ভদ্র।
    রাফি – আর তোমার বৌমা কোথায়?
    মা – আজ তো আসার কথা ছিলো। পিৎজা দেখে ভেবেছিলাম হয়তো এখনই আসবে কিন্তু এলো না তো, আর পিৎজা কি তুই পাঠিয়েছিস?
    রাফি – তোমাদের সাথে কথা বলার জন্য এছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না তো। তাহলে তোহা আজ আসবে?
    মা – আজ না এলেও কাল ঠিকই চলে আসবে। ও যাওয়ার সময় বলেছিলো আজ কালকের ভেতর চলে আসবে।
    রাফি – তাহলে তো খুবই ভালো। তোমাদের আর শহরে লুকিয়ে থাকতে হবে না। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরী হও।
    মা – এই বুড়ো বয়সে আর কত ছুটাছুটি করাবি রে। এখন আবার গ্রামের বাড়ি! তোর বাবা তো মহা খুশি হবে যদি গ্রামের কথা শোনে।
    রাফি – আপাতত বাবার সাথে গ্রামে যেয়ে কয়েকদিন ঘুরে আসো, ততদিনে এইদিকটা সামলে নিবো আমি। মোবাইলটা কাছাকাছি রেখো, কথা বলতে ইচ্ছা হলে লাষ্ট নাম্বার ডায়াল করলেই হবে। আর কোনভাবেই বডিগার্ডরা যেন না জানে।
    মা – ঠিক আছে ঠিক আছে।
    রাফি – তোমার ভালো ছেলে বডিগার্ডগুলো কি করে সন্ধ্যার দিকে?
    মা – ওরেহ বাব্বা। সন্ধ্যায় তো পুরা মিলিটারি স্টাইলে টহল চলে, সারা বাড়ির আঙ্গিনা চোষে বেড়ায় তিনজন মিলে।
    রাফি – তখন কেউ ঘরের ভেতর আসে না! তিনজনই বাইরে থাকে?
    মা – তাই তো দেখি, বাইরেই ঘোরাঘুরি করতে থাকে ঘন্টাখানেক, তারপর খেতে আসে।
    রাফি – আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখছি। আবারো বলছি, ফোনটা সাবধানে রেখো, বডিগার্ড থেকে দূরে।
    মা – আমার তো কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিলি না, এটা তো বল যে তুই ভালো আছিস কি না?
    রাফি – আলহামদুলিল্লাহ, তোমরা কেমন আছো?
    মা – আছি ভালই, আলহামদুলিল্লাহ।
    রাফি -তোমরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো। সবকিছু রেডি করে রেখো। যত দ্রুত সম্ভব তোমাদের ওই বাসা থেকে বের করে গ্রামের বাড়ি নেয়ার ব্যবস্থা করবো। ভালো থেকো।
    মা – তুইও ভালো থাক বাবা। জলদি ফিরে আয় মায়ের কাছে। (ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ)
    রাফি – আরে মা, কাঁদে কেন! আমি ফিরে আসবো তো। সব ঠিক করার সময় তো দাও। রাখছি মা।
    ওপাস থেকে রাফির মা ফোন রেখে দিলো। পিকাচুর নিয়ন্ত্রণে মাইক্রোফোন থাকায় রাফি তখনো মায়ের ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। রাফির বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মায়ের কষ্ট দেখেতে পারে না সে মোটেই।
    রাফি – পিকাচু, দেশের লোকাল টাইমের সাথে ম্যাচ করো, আগামীকাল বাবা মা কে বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। টাইম কাউন্ট করা শুরু করো। আগামীকালকে মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইট ব্লাইন্ড টাইমেই বের করে গ্রামে পাঠিয়ে দেবো সরাসরি।
    পিকাচু – You forget to mention Toha.
    রাফি – তোহার জন্যই আগামীকাল সিলেক্ট করা, না হলে আজই বের করে নিয়ে আসতাম বাবা মা কে।
    পিকাচু – Countdown started T minus 30 hours and 23 minutes for next day satellite blindspot.
    রাফি হিসাব করে দেখে আগামী ৮ ঘন্টার ভেতর পিকাচু তার নিজের ট্যাক্টিকাল স্যাটেলাইটে আপলোড হওয়া শুরু করবে। তারপর আর রাফির এই সেফহাউজ থেকে বের হওয়া নিয়ে কোন পিছুটান থাকবে না।
    ব্লাইন্ডস্পট টাইমে গার্ডদের এক্টিভিটিস ম্যাক্সিমাম থাকে। তাই বাড়ির সামনে বা ভেতরে একটা গ্যাঞ্জাম বাঁধিয়ে দিতে পারলে গার্ডদের এটেনশন টেনে নিয়ে আসা যাবে আর ওই ফাঁকে বাবা মা কে বের করে নিয়ে আসা যাবে। তখন পিকাচু ক্যামেরায় গ্লীচ করে দিতে পারবে।
    রাফি ফোন দেয় রকিবকে।
    রাফি – রকিব, তোদের ক্লাবের গ্যাং টা কি এখনো আছে?
    রকিব – আছে মানে! পুরো তরতাজা। কি লাগবে বল।
    রাফি – আগামীকাল সন্ধ্যা ৭ টার পর তোদের সবাইকে আমি এই ঠিকানায় দেখতে চাই, বলে পিকাচুর মাধ্যমে রকিবকে একটা জিপিএস লোকেশন পাঠায় যা ওই সেফ হাউজ থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে।
    রকিব – এ সবাইকে নিয়ে ওখানে যাওয়া তো ঝামেলা হয়ে যাবে।
    রাফি – ৫ টা বড় মাইক্রো ভাড়া করবি আর দেখবি কোন গাড়িতে যেন জিপিএস সিস্টেম না থাকে। আমি সব খরচপাতি পাঠাচ্ছি। আর হ্যাঁ কাল লোকেশনে পৌছানো পর আমি না বলা পর্যন্ত কেউ গাড়ি থেকে বের হবি না।
    রকিব – তারপর কি করতে হবে।
    রাফি তখন রকিবের সাথে মিলে একটা প্লান বানায় বাবা মা কে ওই বাড়ি থেকে বের করার জন্য।
    রাফি – ঠিক আছে দোস্ত, তাহলে ওই কথাই রইলো। তোর একাউন্ট চেক কর।
    রাফি কীবোর্ডে হাত চালিয়ে কিছু একটা করলো।
    রকিব – কি রে তুই আমার একাউন্ট নাম্বার পেলি কোথায়? আর এত টাকা কার জন্য পাঠিয়েছিস।
    রাফি – তোদের সবার জন্য আর বাবা মা কে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে খরচপাতি তো আছেই। কাল ঠিকসময় পৌছে যাস।
    রকিব – চিন্তা করিস না। যেভাবে প্লান করছি ওভাবেই হবে।
    রাফি ফোন রেখে দেয়। রকিব আর ক্লাবের সবাই মিলে প্লানটা সফলভাবে খাটাতে পারলে বাবা মা কে বের করে নিয়ে আসা যাবে খুব সহজেই। এখন শুধু কালকের অপেক্ষা।
    রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে রাফি নিজের এক্সিট প্লান নিয়ে বসে। সার্ভারের পেছনে লুকিয়ে রাখা ম্যাপটা বের করে আনে। ম্যাপটা বেশ পুরাতন।
    রাফি – পিকাচু, আমি স্ক্যানার একটা ম্যাপ দিচ্ছি, ম্যাপটা স্ক্যান করো আর লোকেশনটা এই শহরের ব্লুপ্রিন্টে এড করে নাও। আর স্যাটেলাইট দিয়ে স্ক্যান করে বলো আসলেই এমন কোন আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল আছে কি না।
    পিকাচু – scanning….. map acquired ….. Accessing satellite images …… synchronizing…….. blueprint updated. Underground tannel found.
    রাফি দেখতে পার পিকাচু আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপটা স্যাটেলাইট ব্লুপ্রিন্ট ম্যাপের সাথে আপডেট করে নিয়েছে। আর স্যাটেলাইট স্ক্যানিং এ ট্যানেলের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়।
    রাতটা কেটে যায় সব প্লান সাজাতে সাজাতে। অনেককিছু করতে হবে। অনেককিছু করা বাকী।

    #পর্ব_২০_ও_সমাপ্ত

    রাতটা কেটে যায় সব প্লান সাজাতে সাজাতে। অনেককিছু করতে হবে। অনেককিছু করা বাকী।
    পিকাচু তৈরী হচ্ছে নিজেকে আপলোড করার জন্য। মনিটরের টাইমার শো করছে আর মাত্র ৫ মিনিটের ভেতরে পিকাচুর জন্য সিলেক্টেড স্যাটেলাইটটি এন্টেনা রেন্জে প্রবেশ করবে। পিকাচু স্যাটেলাইট স্টেশনের সার্ভারের একসেস নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লং রেন্জে থাকা স্যাটেলাইটটা রেন্জে আসার।
    পিকাচু – ৫ মিনিটের ভেতর পিকাচু আপলোড শুরু করবে। আপলোডিং প্রোসেস শেষ না হওয়া অব্দি পিকাচু কোন কাজ করতে পারবে না। স্যাটেলাইটে আপলোড হবার পর পিকাচুকে একসেস করা যাবে।
    রাফি কীবোর্ডে আংগুল চালায়, শুধুমাত্র একসেস কোড পিকাচুর মত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে নিরাপদ রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। রাফি একসেস কোডের সাথে আরো কিছু সিকিউরিটি মেজার্স এড করে দেয় যেন একমাত্র রাফিই পিকাচুকে একসেস করতে পারে।
    অবশেষে পিকাচু একসেস করা শুরু করলো স্যাটেলাইটটিকে, স্যাটেলাইটটি এমনভাবে স্টেল্থ মোডে ছিলো যে অন্য কোন স্যাটেলাইইট দিয়েও স্যাটেলাইটটিকে একসেস করা সম্ভব ছিলো না। পিকাচু স্যাটেলাইটটিকে স্টেল্থ মোডড থেকে এক্টিভেট করে এবং কানেক্টিভিটি সেটিংস চেন্জ করে দেয়া শুরু করে এবং সাথে স্যাটেলাইটটির অর্বিটাল স্পিড ও ম্যাচ করে নেয়। কিছুক্ষণের ভেতর পিকাচু স্যাটেলাইটটিকে পুরোপুরি নিজের মস্তিস্ক বানানোর জন্য তৈরী করে ফেললো। রাফি স্ক্রীনে একটি ডায়লগ বক্স দেখতে পায় যেখানে পিকাচু নিজেকে আপলোড করার জন্য রাফির অনুমতি চাইছে। রাফি কীবোর্ডে ইন্টার বাটন টি চেপে পিকাচুকে আপলোড হবার পার্মিশন দিয়ে দেয়। রাফি দেখতে পায় পিকাচু তার ডাটা এনালাইসিস আর মাফিয়া গার্লের সার্ভারে জমানো সকল ইনফো স্যাটেলাইটে আপলোড করা শুরু করে। একসাথে প্রচুর ডাটা আপলোড করতে থাকে পিকাচু আর স্ক্রীনে প্রোগ্রেস শো করতে থাকে ১%……২%…….৩%………
    রাফি চাইলো তার মা বাবার সাথে কথা বলে কিন্তু পিকাচু আপলোডিং টাইমে সবকিছু আনএভেইলেবল করে রেখেছে।
    রাফি আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপটা দেখে নিজের এক্সিট প্লান তৈরী করতে লাগলো। বাবা মা বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই রাফিকে এই সেফহাউজ ত্যাগ করতে হবে। মাফিয়া গার্ল ক্ষোভে রাফিকে জিম্মি ও করতে পারে। আর এমন একটা দেশে জিম্মি থাকা মানে রাফিকে একটা জ্যান্ত পুতুল বনে যেতে হবে। সুযোগ থাকতে থাকতে বের হয়ে যাওয়া ভালো।
    রাফি বেসমেন্ট থেকে বের হয়ে আসে, রাতে ঘুম হয় নি ঠিক কিন্তু খিদে টা সহ্যের বাইরে চলে গেছে, রান্নাঘরে বসে নিজের ব্রেকফাস্ট তৈরী করে চিবোতে থাকে রাফি। মা বাবা আর তোহাকে তো না হয় গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে সেফ রাখতে পারলো কিন্তু নিজে কোথায় যাবে রাফি? এই দেশের কিছুই তো চেনে না রাফি, মাফিয়া গার্ল থেকে তো না হয় বাঁচলো রাফি কিন্তু এই শহর থেকে কিংবা এই দেশের ভেতরে এমন কেউ নেই যে রাফিকে সাহায্য করবে। খাবার চিবাতে চিবাতে এসব চিন্তা করতে থাকে রাফি, হঠাৎ ই মআে পড়লো যাবার আগে রুহী রাফিকে একটা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট দিয়ে গিয়েছিলো যাতে রাফির নাম পরিচয় জাতীয়তা সবকিছুই পরিবর্তন করা রয়েছে। মনে পড়তেই রাফি দোতলার দিকে নজর দেয়। পাসপোর্ট নিজের রুমে জ্যাকেটের পকেটে রাখা। রুহী পাসপোর্টটা দেয়ার পর রাফি সেটা ওর জ্যাকেটের পকেটে রেখে দিয়েছিলো যা এখন রাফির রুমে কোথাও পড়ে আছে। রাফি খাবার চিবোতে চিবোতে রুমে চলে যায়। জ্যাকেটটা খাটের উপরই পড়ে আছে। রাফি জ্যাকেটের পকেটে হাত দিয়ে পাসপোর্টটা পায়। রাফি দরজা দিয়ে উঁকি মারে যে দুই বডিগার্ডের কেউ রাফিকে ফলো করছে কি না। কাউকে না দেখতে পেয়ে দরজা লক করে দিয়ে রাফি রুমে ফিরে আসে। নিজের ব্যাকপ্যাকটা গুছানোই ছিলো, ল্যাগেজ থেকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাকপ্যাকে ভরে নিলো। সবকিছু গোছাতে গিয়ে রাফির নজরে আসে রুহীর দেয়া মিনি কম্পিউটার raspberry pi3। কম্পিউটারটা কাজে লাগবে ভেবে রাফি সেটাকেও ব্যাগে ভরে নেয়। সবকিছু গুছিয়ে রুমের কোনায় রেখে আবারো দরজার কাছে গেলো রাফি। দরজা খুলে দেখতে লাগলো আবারো। কি ব্যপার, মার্ক আর জ্যাকের কোন সাড়াশব্দ নেই যে। রাফি তাদের রুমে গিয়ে দরজায় নক করে। দরজা লক করা কিন্তু ভেতরে কোন সাড়াশব্দ নেই। রাফি ভাবতে লাগলো কোথায় যেতে পারে এরা দুইজন। হঠাৎ উপরে আওয়াজ পায় রাফি, তিন তলাতে কিছু একটা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারে রাফি। আরে! তিনতলাতে তো অস্থায়ীভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার কন্ট্রোলরুম বানিয়েছিলো দুইজনে, মাফিয়া গার্লের জন্য, রাফি ভুলেই গিয়েছিলো এই বাড়ির সবকিছুই সিসিটিভি সার্ভেইল্যান্সের আন্ডারে আর সিস্টেম বাইপাস করা ছিলো। মানে রাফি তার ব্যাকপ্যাক নিয়ে নীচে নামতে পারবে না আর। মাফিয়া গার্লের ক্যামেরায় তো ধরা পড়বেই সাথে মার্ক আর জ্যাক তো আছেই। রাফি ভাবতে পারে না কি করবে, অগত্যা ব্যাগ থেকে শুধু পাসপোর্টটা বের করে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। মিনি কম্পিউটার আর ইউজ করা গেলো না। রুম থেকে বের হয়ে উপরে তিনতলায় পৌছালো রাফি, গিয়ে দেখে মার্ক আর জ্যাক দুইজনে মিলে সিসিটিভি ক্যামেরা স্ক্রীন রেখে দরজার দিকে সরাসরি রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে মাথা ঢোকাতেইই রাফির সাথে দুজনেরই চখাচখি হয়ে গেলো।
    মার্ক – (ইংরেজিতে, সন্দেহভরা চোখে) কি করছিলে তুমি?
    রাফি – কি করবো? কিছুই না। অনেকক্ষণ ধরে তোমাদের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তোমাদের খুজতে বের হয়েছিলাম। এখন দেখি তোমরা দুজনেই এখানে।
    জ্যাক – ঘরের দরজায় উঁকি দিয়ে দরজা বন্ধ করলে কেন? কি প্লান করছো সত্যি করে বলো!
    রাফির হার্টবিট বেড়ে যায়, এখনই এই দুইজনের চোখে ধুলো দিতে না পারলে মাফিয়া গার্লের চোখকে ফাঁকি দেবে কিভাবে।
    রাফি – কি আর প্লান করবো, কাপড় বদলানোর জন্য দরজা লাগিয়েছিলাম। কাপড় বদলাতে কোন প্লানের প্রয়োজন পড়ে নাকি?
    মার্ক জ্যাক দুইজনই চেয়ার ছেড়ে রাফির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আর এমনভাবে তাঁকিয়ে রইলো যেন ধরে ফেলেছে রাফির সব চালাকি।
    রাফি মনে মনে জিকির করতে লাগলো, এই মুহূর্তে ধরা পড়লে সব প্লান ভন্ডুল হয়ে যাবে, আর মা বাবাকেও উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।
    রাফির সামনে এসে মার্ক এবং জ্যাক দুইজনে রাফির দুই কাঁধে হাত রাখে। তারপর দুইজন কপাল কুঁচকে রাফির দিকে তাকিয়ে থাকে, আর রাফি নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। দুইজনের সাথে হাতাহাতি তে তো পেরে উঠবে না রাফি তাই বিকল্প কিভাবে দুইজনকে আটকানো যায় সাই প্লান খুঁজতে থাকে রাফি।
    মার্ক – তুমি কিছুই করছিলে না!
    রাফি – কি করবো, বললাম ই তো, কাপড় বদল করলাম।
    জ্যাক তখন মার্কের দিকে তাকিয়ে অন্যভাষায় কথা বলা শুরু করলো, মার্ক ও একইভাবে জ্যাকের কথার জবাব দিতে থাকলো। রাফি কথার আগামাথা কিছু না বোঝায় একবার মার্কের দিকে আর একবার জ্যাকের দিকে ঘাড় ঘোরাতে লাগলো।
    রাফি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,
    রাফি – কি সমস্যা কি! দুইজনে মিলে কি শুরু করছো! আমাকে এভাবে জেরা করার মানে কি?
    রাফির আওয়াজ শুনে মার্ক এবং জ্যাক দুইজনেই চুপ হয়ে গেলো। নিজেদের মধ্যে চখাচখি করতে করতে দুইজনই হো হো করে হেঁসে উঠলো।
    মার্ক – (জ্যাকের উদ্দেশ্যে) বলেছিলাম না তোকে?
    জ্যাক – বলেছিলে তবে এতটা মজা পাবো তা বুঝি নি।
    আবারো অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে দুইজন। মাঝে রাফি কিছু না বুঝেই দাড়িয়ে থাকে ঠায়। মার্ক হাঁসতে থাকায় জ্যাক মুখ খোলে।
    জ্যাক – (রাফির উদ্দেশ্যে) দেখো সিরিয়াসলি নিয়ো না, আমরা মজা করছিলাম।
    মার্ক – (হাঁসতে হাঁসতে) আমি জ্যাককে বলেছিলাম যে তোমাকে ভড়কে দিতে পারবো কিন্তু জ্যাক মানতে নারাজ ছিলো। এখন তোমাকে ভড়কে যেতে দেখে……… ( আবারো অট্টহাসি)
    রাফি একদিক দিয়ে হাপ ছেড়ে বাঁচলো যে দুইজনের কেউ কিছু ধরতে পারে নি। রাফি ভাবলো এই সুযোগে একটু আধিপত্য খাটিয়ে নেয়া যাক, পরক্ষণেই মাথায় এলো যে যদি আধিপত্য খাটাতে গিয়ে দুইজনকেই চটিয়ে দেই তাহলে এরা দুইজনই রাফির সব প্লান গড়বড় করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই মজার তালে মজা নিতে থাকে রাফি।
    রাফি – (হাঁসতে হাঁসতে) ভড়কে যাবো না! তোমাদের দুইজনের মত বডিবিল্ডার যদি অকারনেও আমাকে প্যাদায় তাহলেও তো আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না, তাইনা?
    তিন জনই উচ্চস্বরে হাঁসতে থাকে। রাফি আরো কিছুক্ষণ জোক্স মেরে চলে আসে তিন তলা থেকে। আর ওই রুমেই থেকে যায় মার্ক আর জ্যাক। যেহেতু সার্ভেইল্যান্স এখনো এক্টিভ রয়েছে তাই ব্যাকপ্যাক রুম থেকে বের না করে শুধু জ্যাকেট টা হাতে নিয়ে বেজমেন্টে চলে আসে রাফি। টেনশনে রাফির প্রেশার বেড়ে তালগাছ ছুঁইছুঁই করছে। তারপরও দুইগ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করার চেষ্টা করে রাফি। কিচ্ছু হয় নি, সব ঠিক আছে।
    শান্ত হয়ে রাফি মনিটরের দিকে তাকায়, আপলোড প্রায় ৮০% হয়ে গেছে। আপলোড হলে রাফির একটা কাজ তো শেষ হবে। পিকাচু তার নলেজ হান্ট শেষ করলে মোটামুটি একটা ইন্টেলিজেন্ট পার্টনার পাওয়া যাবে ভেবে খুশি হয় রাফি।
    জ্যাকেটটা চেয়ারের উপর রেখে বসে পরে রাফি মনিটরের সামনে। আর ১৮ ঘন্টা বাকী।
    ১০ ঘন্টা পর,
    পিকচু স্যাটেলাইটে আপলোড হয়ে গেছে অনেক আগেই, knowledge hunt ও প্রায় শেষের দিকে, স্যাটেলাইটটিকে সম্পূর্ণভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে পিকাচু। এরই মধ্যে মহাকাশে থাকা সকল কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের একসেস বাইপাস করে নিয়েছে পিকাচু স্যাটেলাইট। এই মুহূর্তে রাফি যেখানে অবস্থান করছে সেই বরাবর এসে নিজে অর্বিটাল স্পিড কমিয়ে আর্থ রোটেশনের সাথে ম্যাচ করে সেখানেই অবস্থান করছে। রাফি অপেক্ষা করছে পিকাচুর knowledge hunt শেষ হওয়ার পর সার্ভারে রিকানেক্ট হওয়ার জন্য।
    অবশেষে,
    পিকাচু – knowledge hunt is over, pikachu is live.
    রাফি সার্ভার থেকে পিকাচুকে রিকানেক্ট করে স্যাটেলাইটটি রিস্টার্ট করে। সবকিছু ঠিকঠাক রান করার জন্য পিকাচুর স্যাটেলাইট রিস্টার্ট হওয়া জরুরী। রাফির সার্ভার থেকে পিকাচু লগআউট হয়ে যায়।
    পিকাচু স্যাটেলাইট রিস্টার্ট হতে ৫ মিনিট সময় লাগবে। রাফি অপেক্ষা করতে থাকে। পিকাচুকে তৈরীর সময় রাফি বেশ কিছু ইউনিক সেটিংস ইনস্টল করেছিলো যার ভেতর অন্যতম ছিলো কোন কারনে রাফি পিকাচু থেকে ৫ মিনিটের বেশী ডিসকানেক্ট থাকে তাহলে পিকাচু নিজে থেকে রাস্তা বের করে নেবে রাফির সাথে কানেক্ট হওয়ার জন্য। রাফি সেটিংসটার ট্রায়াল এখনই দিতে চাইলো। মনিটরে একসেস কোড ইনপুট দিলেই হয়ে যেত কিন্তু রাফি চাইছে পিকাচু রাফিকে খুজে বের করুক। কিছুক্ষণ পর রাফির ফোনটা বেজে উঠলো। আননোন সোর্স থেকে ফোন এলো, মাফিয়া গার্ল! রাফি ফোনটা রিসিভ করে,
    রাফি – হ্যালো।
    – (কার্টুন ভয়েসে) Hi, I am pikachu, I found you.
    রাফি – পিকাচু, তুমি আমাকে খুঁজে নিয়েছো?
    পিকাচু – এটা আমার সিস্টেম সেটিংসের টপ প্রায়রিটি। You are the key of my existence, Rafiul Islam.
    রাফি – Well done pikachu.
    পিকাচু – পিকাচু তার ক্রিয়েটরের সাথে যে কোন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে কানেক্ট হতে পারবে যদি তা নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে থাকে।
    রাফি – খুবই ভালো। তাহলে পরবর্তী প্লানের দিকে এগোনো যাক?
    পিকাচু – পিকা পিকা।

    আর মাত্র কিছুক্ষণের ভেতরেই মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইট ব্লাইন্ডস্পটে প্রবেশ করবে। রাফি তার মা বাবাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে যে কিছুক্ষণ পর কি হতে চলেছে, মা বাবা ও সেইভাবে তৈরী হয়ে আছে। এদিকে রাফির বন্ধুবান্ধব সব জায়গামত পৌছে রাফির ফোনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরই মাঝে পিকাচু ট্রাফিক ক্যামেরায় কিছু একটা ডিটেক্ট করলো।
    পিকাচু – ফেসিয়াল রিকগনিশন বলছে, তোমার ওয়াইফ তোহা বাড়িটির দিকে ট্যাক্সিতে করে এগিয়ে যাচ্ছে।
    ভালই হবে ভেবে রাফি ফ্রেন্ডদের ওয়েট করতে বলে তোহা বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
    মাফিয়ে গার্লের স্যাটেলাইট ব্লাইন্ড হয়ে গেলে রাফি তার বন্ধুদের প্লান অনুয়ায়ী কাজ করতে বলে। রাফির বন্ধুরা প্লানমাফিক দুইভাগে ভাগ হয়ে বাড়িটার দিকে ছুটে যেতে থাকলো, এমনভাবে যেন দুই দলের ভেতর মারামারি বেঁধে গেছে। ২৫-৩০ জন একসাথে ছুটে যেতে থাকলো বাড়িটার দিকে। রাফি বাড়ির আসেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরায় গ্লিচ তৈরী করে দিলো যেন মাফিয়া গার্ল কিছু দেখতে না পারে। এদিকে বন্ধুদের একদল বাড়ির বাউন্ডারির ভেতর ঢুকে পড়ে আর এমন ভাব করতে থাকে যেন তাদেরকে কেউ ধাওয়া করেছে আর তারা আত্বরক্ষার জন্য বাড়ির বাউন্ডারির ভেতর আশ্রয় নিয়েছে। বডিগার্ডগুলো কিছু করতে যাবে তার আগেই অন্য পক্ষের বন্ধুগুলো সব হুড়মুড় করা বাউন্ডারীর ভিতরে চলে আসে আর দুই পক্ষের মধ্যে গ্যাঞ্জাম বেধে যায়। বিষয়টা এমন লাগলেও তাদের মুল উদ্দেশ্য ছিলো বডিগার্ডদেরকে গ্যাঞ্জামের মাঝে ফেলে দিয়ে নাস্তানাবুদ করে দেয়া।
    এই সুযোগে রাফির মা বাবা তোহাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং রকিব তাদেরকে একটা গাড়িতে তুলে দেয় গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে। রাফির কথা মত রাফির মা শুধুমাত্র রাফির দেয়া ফোনটা ছাড়া বাদবাকি সব ফোন বন্ধ করে ফেলতে বলেছিলো যেন চাইলেও মাফিয়া গার্ল তাদের ট্রাক করতে না পারে। নিরাপদে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পর রাফির বন্ধুরা প্লানমাফিক ওইখান থেকে সটকে পড়ে এবং বডিগার্ডরা নাস্তানাবুদ হয়ে বাউন্ডারির ভেতর গড়াগড়ি খায়। বডিগার্ডগুলো একটু স্বাভাবিক হলে পকেটে হাত দিয়ে দেখে তাদের মোবাইল মানিব্যাগ সব লুট করে দিয়েছে ছেলেপেলের দলটা।
    রাফির বাবা মা বের হয়ে যাওয়ার পর রাফিরও বের হওয়ার সময় হয়েছে। হয়তো কোন না কোন ভাবে মাফিয়া গার্লের কাছে খবর পৌঁছেই যাবে এই ঘটনা তাই দেরী না করে জ্যাকেটটা গায় দিয়ে বেসমেন্ট থেকে বের হয় রাফি, মোববাইলের মাধ্যমে পিকাচুর সাথে কানেক্ট থেকে পিকাচুকে এক্সিট প্লান বানাতে বলে।
    পিকাচু সাজেশন দেয় আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল থেকে বাইরের সিচুয়েশন কন্ট্রোল করা পিকাচুর কাছে সহজ হবে। পিকাচু ঘরের ভেতরের ক্যামেরাগুলোর ফিড হ্যাক করে রাফিকে ইনভিজিবল করে দেয় আর রাফিকে জানায় মার্ত এবং জ্যাক সিসিটিভি কন্ট্রোলরুমে বসে আছে। রাফি আর এক মুহূর্ত দেরী না করে সরাসরি বাসার মেইন দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।
    রাফি – পিকাচু, এই গোলকধাঁধা থেকে বের করো আমায়।
    পিকাচু – পিকা পিকা।
    পিকাচু রাফিকে গাইড করতে থাকে এবং শেষমেশ গোলকধাঁধা থেকে বের হয় রাফি। আশেপাশে থাকা সব সিসিটিভি ক্যামেরাতে পিকাচু রাফিকে ইনভিজিবল করে দেয়। রাফিও মেইন রাস্তায় চলে আসে। এখন তো সবচেয়ে বড় পরিক্ষা। অপরিচিত দেশে অপরিচিত ডিরেকশনে মানুষের কাছে লিফট চাওয়া। রাফি পিকাচু কে দিয়ে আগেই বেনামে বিমানের টিকিট কেটে নিয়েছিলো। গন্তব্য নিজের দেশ।
    রাফিকে পিকাচু এয়ারপোর্টের রাস্তা দেখিয়ে দিলে রাফি সেই বরাবর লিফট চাইতে থাকে। অবশেষে একটা গাড়ি দাঁড়ালেও ইংরেজি না বোঝায় চলে যেতে চাইলো। রাফি তখন পিকাচুকে ফোনলাইনে ড্রাইভারকে ধরিয়ে দিলে ড্রাইভারের সাথে পিকাচু লোকাল ভাষায় কথা বলে। কথা শেষ হলে ড্রাইভার রাফিকে ফোন ফিরিয়ে দিয়ে ইশারায় গাড়িতে উঠতে বলে। রাফিও স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
    গাড়ি চলতে থাকে এয়ারপোর্টের দিকে। রাফি পিকাচুর মাধ্যমে মা বাবার সাথে কানেক্ট করে।
    রাফি – হ্যালো।
    বাবা – হ্যালো, রাফি? কিরে কেমন আছিস?
    রাফি – এইতো বাবা ভালো, তোমরা কেমন আছো? কোথায় আছো?
    বাবা – এইতো ভালই আছি। আমাদের পাড়ার রকিব ছেলেটা একটা মাইক্রোতে তুলে দিলো। তোর মা বললো গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাবে নাকি।এদিকে তোহা মা ও চলে এসেছিলো বাসায়, তাই ওকেও সাথে নিয়ে নিলাম।
    রাফি – যাক সবাই তাহলে একসাথে বের হয়ে গেছো। আলহামদুলিল্লাহ।
    বাবা – তুই কোথায়? তোকে কখন দেখতে পাবো?
    রাফি – এইতো বাবা খুব জলদি। আর একটা জিনিস, এই ফোন ছাড়া আর কোন ডিভাইস অন রেখো না।
    বাবা – হ্যা হ্যা তোর মা এর আদেশ হয়েছে। সব বন্ধ। তুই জলদি ফিরে আয়।
    রাফি – এখন আর কথা বলবো না। সামনাসামনি এসে কথা হবে ইনশাআল্লাহ সবার সাথে। আল্লাহ হাফেজ।
    বাবা – আল্লাহ হাফেজ।
    রাফি ফোন কেটে দিলে পিকাচু এ্যালবার্টা দেয়,
    রাফি – কি হয়েছে?
    পিকাচু – মার্ক এবং জ্যাক বাসা থেকে বের হয়ে তোমাকে খুঁজছে। হয়তো কোনভাবে এ্যালার্ট পেয়ে গেছে।
    রাফি – ইসসস, ভুলেই গিয়েছিলাম যে ঘরের মেইন গেট খুললে একটা সাইলেন্ট এ্যালার্ম ট্রিগার হয় যার মাধ্যমে কিছু না দেখলেও টের পাওয়া যায় যে মেইন গেট ওপেন হয়েছে।
    পিকাচু – সমস্যা নেই। ওরা এখনো মেইন রোডে পৌছায় নি। তুমি অনেকখানি এগিয়ে আছো।
    রাফির ভেতর অস্থিরতা কাজ করতে থাকে।
    রাফি – পিকাচু, মাফিয়া গার্ল যেন আমাকে ফোন দিয়ে ট্রেস করতে না পারে। মাফিয়া গার্লকে ব্লক করে রাখো।
    পিকাচু – পিকা পিকা।
    এয়ারপোর্টে পৌছে ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জ হয়ে সোজা কাউন্টারে পৌছে যায় রাফি, পিকাচুর কেটে রাখা টিকিটটা ইশ্যু করে নিয়ে ওয়েটিংরুমে অপেক্ষা করতে থাকে রাফি। বিমানে উঠলেই পৌছে যাবে বাড়িতে। আবার আতংকিত ও হয়। যদি মাফিয়া গার্ল চায় তো মাঝপথেই বিমান নামিয়ে দেবে সে। মোটামুটি বিমানে উঠে যাত্রা শুরু করা পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চললো। বিমান আকাশে উড়লো কোন ঝামেলা ছাড়াই। রাফি পিকাচুর মাধ্যমে ফ্লাইট নেটওয়ার্ক সিকিউর করে রাখে যাতে করে মাফিয়া গার্ল কোন ঝামেলা না করতে পারে।
    দীর্ঘ বিমানযাত্রা শেষ করে রাফি অবশেষে নিজ দেশে ফিরে আসে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বের হয় আসে রাফি, বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এসে দেখে রকিব অপেক্ষা করছে রাফির জন্য। গাড়িতে উঠে সরাসরি রওনা দিলো গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
    রাফি গ্রামের বাড়ি পৌছালে সবাই যার পর নাই অবাক আর খুশি হয়। রাফি যে এভাবে হঠাৎ করে চলে আসবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারে নি।
    রাফির মা বাবা তো একপ্রকার ছুটে গিয়ে রাফিকে জড়িয়ে ধরে। রাফিও তার মা বাবাকে আকড়ে ধরে, দীর্ঘদিন পর আবার মা বাবার বুকে ফিরে আসতে পেরে। তোহা দূরে দাড়িয়ে রাফির ফিরে আসা দেখছে। অবশেষে নিজের মানুষদের মাঝে ফিরে আসতে পেরে রাফি যারপরনাই খুশি হলেও নিজের মাথা থেকে মাফিয়া গার্লকে বের করতে পারে না। হয়তো মাফিয়া গার্লের জাল থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে রাফি আর তার পরিবার কিন্তু রাফির মন এখনো শান্ত নয়, মনে হতে থাকে বিপদ যেন এখনো কাটেনি। বাবা মা কে ছেড়ে রাফি তোহার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে কথা বলার জন্য, তোহার কাছে পৌছানোর আগেই পিকাচু এ্যালবার্টা দেয় রাফিকে। রাফি ফোন হাতে নিয়ে দেখে কে বা কারা যেন নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড চুরি করে নিয়েছে।
    রাফির কপাল কুঁচকে যায়। কি! নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড ও চুরি হয়েছে! রাফির মাথা ঘুরে যায়। মাফিয়া গার্ল তাহলে ঠিকই সন্দেহ করেছিলো! তাহলে মাফিয়া গার্ল যা বলেছিলো সব সত্যি!!!
    .
    অসুস্থতার মাঝে লেখা তাই ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

  • হ্যাকারের_লুকোচুরি  সিজন_২ পর্ব_১৭_ও_১৮

    হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব_১৭_ও_১৮

    হ্যাকারের_লুকোচুরি
    #সিজন_২
    #পর্ব_১৭_ও_১৮
    লেখক_sharix_dhrubo

    রাফির মনে পড়ে রকিবের কথা। “ওহহো রকিবকে ফোন দেয়ার কথা” জিভ কামড়ে ধরে রাফি।
    রাফি – পিকাচু, রকিবকে কন্ট্যাক্ট করো।
    পিকাচু – communicating………
    রকিব – আননোন নাম্বার থেকে কল দেখেই বুঝছি যে তুই ফোন দিয়েছিস।
    রাফি – ফোন নিয়েছিস নতুন!?
    রকিব – হ্যাঁ নিলাম, নে নাম্বারটা নে।
    রকিব নাম্বারটা বলতে থাকে আর পিকাচু নোট করে নেয়। রাফি পিকাচুকে কমান্ড দেয় নাম্বারটির রেকর্ড মুছে ফেলতে আর নাম্বারটি সিকিউর করতে। পিকাচু ও কাজ শুরু করে দেয়।
    রাফি – আচ্ছা তুই বের হতে পারবি কখন?
    রকিব – তুই বললে এখনই।
    রাফি – আচ্ছা বের হ। ঠিকানামত পৌছালে আমার নাম্বারে ফোন দিস।
    রকিব – তোর নাম্বার তো বন্ধ বহুদিন ধরে। আচ্ছা ঠিক আছে ফোন দিবো, এখন ঠিকানাটা দে।
    রাফি পিকাচুকে নির্দেশনা দিলো রকিবকে ঠিকানাটি মেসেজ করতে। পিকাচু ও জিপিএস লোকেশন সই ঠিকানাটি পাঠিয়ে দিলো।
    রাফি – তোর ফোন চেক কর। ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছি।
    রকিব – (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) হ্যাঁ পেয়েছি। আচ্ছা বের হচ্ছি আমি।
    রাফি – ফি আমানিল্লাহ।
    রকিব ফোনটা কেটে দেয়। কল কাটার পরপরই একটা মেসেজ পায় রাফি। মাফিয়া গার্ল,
    “Congratulations, Mafia boy. Well done miles to go.”
    রাফি বুঝতে পারে মাফিয়া গার্ল হয়তো প্রেস রিলিজ ফলো করেছে, আর হয়তো ধরতে পারে নি রাফির প্লান।
    রাফি পিকাচু নিয়ে বসে পড়ে। রাফি জানে যে মাফিয়া গার্ল যদি ওর বাবা মা আর তোহার সিকিউরিটির দায়িত্ব নেয় তাহলে অবশ্যই কোন না কোনভাবে অনলাইন প্রযুক্তির সাহায্য নেবেই।
    রাফি – পিকাচু, ওই ঠিকানায় কোন সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলো না। তারপরও চেক করো কোন ক্যামেরা আছে কি না।
    পিকাচু – Accessing all available internet network around the pinpoint …….
    রাফি – পিকাচু, এভাবে কি খুঁজছো?
    পিকাচু – যদি কোন সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ অনলাইনে ট্রান্সমিট করতে হয় তাহলে মালিককে অবশ্যই কোন না কোন ইন্টারনেট প্রোভাইডার এর নেটওয়ার্কের সহায়তা নিতে হয়েছে। হতে পারে মোবাইল নেটওয়ার্ক অথবা ব্রডব্যান্ড। আমি যদি নেটওয়ার্কগুলোকে একসেস করতে পারি তাহলে খুব সহজেই ধরতে পারবো কোন কোন কানেকশনগুলো সিসিটিভি ফিড ট্রান্সমিট করছে।
    রাফি – তার মানে তুমি এখন ওই এলাকার গোটা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক হ্যাক করবে!
    পিকাচু – Affirmative.
    রাফি দেখতে পায় পিকাচু ওই ঠিকানাকে মিডপয়েন্ট ধরে আশেপাশে একটা সার্কেল করে সার্চ এরিয়া তৈরী করে আর তারপর ওই সার্কেলের ভেতর থাকা প্রতিটা মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানির নেটওয়াকিং সিস্টেম হ্যাক করছে পিকাচু। এত সহজে এতগুলো কোম্পানীর নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করা বাচ্চার হাতের মোয়া নয়। নেটওয়ার্কের কন্ট্রোল নিয়ে নেয়ার পর এলাকায় থাকা প্রতিটা অনলাইন ডিভাইসই পিকাচুর নাগালে চলে আসলো, শুধু যে সিসিটিভি নাগালে পেলো তা নয়।
    পিকাচু – I can control anything in this network.
    রাফি – আপাতত, বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে কোন সিসি ক্যামেরা আছে কি না তাই দেখো।
    পিকাচু বাড়ির সদর দরজার বিপরীত বাড়িতে সিসি ক্যামেরা পেলো। সেখানে ২ টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে ঠিক রাস্তা বরাবর যা দিয়ে রাস্তার বিপরীতের বাড়ি স্পষ্ট দেখা যায়। এছাড়াও বাড়ির আসেপাশের পার্সোনাল ক্যামেরাগুলোও একসেস নিয়ে নিলো।
    রাফি – পিকাচু, আমি যখন ওই বাসাতে ছিলাম তখন ওই বাসার বাউন্ডারির ভেতর কোন সিসিক্যামেরা ছিলো না, তাই আমরা সপরিবারে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার পর ওই বাসায় কোন টেকনিশিয়ান টিম বা সিসিক্যামেরা ইনস্টল করা টিম এসেছিলো কি না।
    পিকাচু – বাড়িতে বা বাড়ির বাউন্ডারিতে সিসি ক্যামেরা না থাকলেও সমস্যা হবার কথা না।
    পিকাচু মনিটরে শো করে বাড়ির আশেপাশে থাকা অনলাইন ক্যামেরাগুলো যাতে করে পুরো বাড়িটার সার্ভেইল্যান্স সম্ভব।
    রাফিও ভাবতে থাকে মাফিয়া গার্ল সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে এটেনশন টানবে না, কারন বাড়িটাকে সে ব্যবহার করছে শুধুমাত্র বাবা মা এবং তোহা যেন অবিশ্বাস না করে সেজন্য, সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী।
    পিকাচু – I found something.
    রাফি মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখে পিকাচু একটা স্যাটেলাইট ডিটেক্ট করেছে যা এই বাড়ির উপর নজর রাখছে।
    রাফি – এ তো ভয়ংকর ঘটনা হলো, এই স্যাটেলাইটকে বোকা বানাবো কিভাবে !!
    রাফি কিছু একটা ভেবে রকিবকে ফোন দেয়।
    রকিব – বল দোস্ত,
    রাফি – কতদূর পৌছেছিস!
    রকিব – এইতো পথে।
    রাফি – যাস না। আশেপাশে ভালো ফাষ্টফুডের দোকানে যা। সেখানে একটা বড়সড় পিৎজা অর্ডার কর সাথে ফ্রেন্চফ্রাই আর কোক।
    রকিব – কেন? এসব কেন?
    রাফি – ঝামেলা আছে। তুই ফ্রেন্স ফ্রাই এর প্যাকেটে ফোনটা ঢুকিয়ে দে আর তারপর সেটা ফুড ডেলিভার সার্ভিসে দিয়ে দে ওই ঠিকানা বরাবর, প্রাপকের নাম দিয়ে দিস তোহা।
    রকিব – এত ঝামেলা কেন?
    রাফি – যেটা বললাম সেটা কর দোস্ত, আমি চাই না আমার কারনে তুই কোন বিপদে পড়িস।
    রকিব – আচ্ছা ঠিক আছে। কাজ শেষে ফোন দিচ্ছি।
    রাফি জানে তোহা পিৎজা ছাড়া বাঁচতে পারবে না। ওই বাসায় থাকলেও কম বেশী পিৎজা অর্ডার করছে সে তা যে কোন ভাবেই হোক। আর বডিগার্ডরা হয়তো ডেলিভারি বয় নিয়ে খুব একটা মারপ্যাচ খাটাবে না। দেখা যাক।
    রাফি নিজেও বসে আছে মাফিয়া গার্লের ডেরায়। কেন যেন কোনভাবেই আর বিশ্বাস করতে পারছে না সে মাফিয়া গার্লকে। পুরা দেশ বদল করে ফেলা হ্যাকারকে কোনভাবেই আর নিজের বিশ্বস্ততায় রাখতে পারছে না।
    রাফি – পিকাচু, সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরাতে তোমার একসেস কেউ ধরতে পারবে না তো?
    পিকাচু – নেগেটিভ, আমি নেটওয়ার্ক থেকে একসেস নিচ্ছি যা সাধারণত end to end Encrypted থাকে, আমি সেই এনক্রিপশন ভেংগে নেটওয়ার্ক থেকেই এই ভিডিও আপলিংক নিচ্ছি।
    রাফি – আচ্ছা, এই কারনেই তুমি সবার প্রথমে পুরো এলাকার নেটওয়ার্ক সিসটেম দখলে নিয়েছিলে?
    পিকাচু – পিকা পিকা।
    রাফি – অসাধারণ। অনেকটা দুমুখি পানির পাইপের মাঝখানে ফুটো করে পানি বের করে নেয়ার মত অবস্থা। আচ্ছা ঠিক আছে। কোন ডেলিভারি বয় বাড়ির দিকে এপ্রোচ করলে ইনফর্ম করো।
    পিকাচু – পিকা পিকা।
    রাফি চেয়ার ছেড়ে ওঠে। বেজমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসে পেটপূজা করতে। বাইরের আবহাওয়া পুরাই ভিন্ন। রান্নাঘরের জানালার অর্ধেক ডুবে গেছে বরফে। বাইরে ভয়াবহ তুষারপাত হচ্ছে।
    রাফি ভেবেছিলো বাড়ির লোকজনদের বের করে নিজেও এখান থেকে পালাবে রাফি কিন্তু বাইরের আবহাওয়া মোটেই সুবিধাজনক না। রাফি আর কিছু না ভেবে খাবার গরম করে খাওয়া শুরু করে। অন্য দুইজনের অবস্থা জানার ইচ্ছা আপাতত নেই রাফির। পরিবার নিয়েই বেশী চিন্তিত রাফি।
    বেশকিছুক্ষন পর রাফির মোবাইলে রকিবের নোটিফিকেশন আসে, রাফি ফোন দেয় রকিবকে,
    রাফি – কি হাল, কাজ শেষ?
    রকিব – হ্যাঁ, তোর কথামত ফ্রেন্সফ্রাইয়ের প্যাকেটে মোবাইলটা ঢুকিয়ে দিয়েছি। আর ডেলিভারি বয় ও বের হয়ে গেছে খাবার পৌছে দিতে।
    রাফি – যাক, তুই বাসায় চলে যা এখন দোস্ত। অনেক বেশী কষ্ট দিলাম তোরে।
    রকিব – বিপদের সময় যদি কাজে না আসতে পারি তো কিসের বন্ধুত্ব। প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই জানাবি।
    রাফি – ধন্যবাদ দিলাম না, বিরিয়ানি ট্রিট দিমুনি।
    রকিব – ওক্কে। পাওনা থাকলো।
    রাফি – দোয়া কর যেন প্লান কাজে দেয় দোস্ত।
    রাফি ফোন কেটে দেয়। প্রাথমিক কাজ হয়ে গেছে। দেখা যাক কি হয় এখন।
    রাফি দ্রুত খাওয়াদাওয়া শেষ করে চলে যায় বেজমেন্টে। সামনে কি হবে তা দেখার জন্য।
    রাফি বসে আছে মনিটরের দিকে তাকিয়ে, কখন ডেলিভারি বয়কে দেখা যাবে। ততক্ষণে মাফিয়া গার্লের ফোন,
    – পিকাচু কে পেয়ে আমাকে ভুলেই গেলে?
    রাফি – আপনাকে ভোলা যায়! বসেই তো আছি আপনার দেয়া ঘরের বেজমেন্টে।
    – পিকাচু কি পুরোপুরিভাবে তৈরী? Knowledge hunting শেষ?
    রাফি – না, এখনো শুরু করতে পারে নি, যথাযথ জায়গা খুঁজছে এখনো।
    – তুমি কি যে কোন এক জায়গায় পিকাচু কে রাখতে চাচ্ছো?
    রাফি – ধরে নিতে পারো তেমনটাই। এছাড়া খন্ড খন্ডভাবে রাখাটা যুক্তিসংগত নয়।
    – যে কারনে তোমার হাতে পিকাচুকে দেয়া, একটা বড় ধরনের বিপদ ঘটে গেছে।
    রাফি – বড় ধরনের বিপদ! কি বিপদ?
    – কিছুদিন আগে একটা মিলিটারি স্যাটেলাইটের কন্ট্রোল নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে একদল সন্ত্রাসী।
    রাফি – এমন তো অহরহই হয়ে থাকে, সন্ত্রাসীরা দখল করবে আর সেনাবাহিনী আর হোয়াইট হ্যাট পুনরায় সেটা উদ্ধার করবে এমনটাই তো হয়ে আসছে।
    – এবার আর এমন হচ্ছে না। স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে শুধুমাত্র একটা স্যাটেলাইট স্টেশন আর একটা নিউক্লিয়ার সাবমেরিন।
    রাফি – এছাড়া আর কোন কন্ট্রোল নেই!?সাবমেরিনকে কন্ট্রোল করে কিভাবে! আর কি হয়েছে এতে? আর যে স্যাটেলাইট শুধুমাত্র সাবমেরিন আর স্যাটেলাইট স্টেশন ছাড়া কন্ট্রোল সম্ভব না সেটা হ্যাক করলো কিভাবে! ?
    – এই পুরো সিস্টেমটাই একটা ব্যাকআপ প্লান হিসেবে ছিলো। যদি কোন কারনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তো সিকিউরভাবে সাবমেরিন থেকেই নিউক্লিয়ার হামলা চালানো যাবে।
    রাফি – এমন হয় নাকি! প্রেসিডেন্ট বা প্রাইম মিনিষ্টারের আদেশ ছাড়া নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক সম্ভব নাকি?
    – টুইষ্ট তো ওখানেই। যেন যুদ্ধের সময় কোন কারনে প্রেসিডেন্ট বা নিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ দেয়ার মত কেউ জীবিত না থাকে তাহলে যেন সাবমেরিনের অপারেশন কন্ট্রোল নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক চালাতে পারে। এছাড়া স্যাটেলাইট স্টেশন ও একই কাজ করতে সক্ষম। শুধুমাত্র নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস থেকে এক্টিভেট করা থাকলেই কাজ হয়ে যাবে।
    রাফি – তাহলে সাবমেরিন অথবা স্যাটেলাইট স্টেশন দিয়ে স্যাটেলাইটির কন্ট্রোল ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করলেই হয়।
    – স্যাটেলাইটের কন্ট্রোল হাতছাড়া হয়েছে একবারে নয়, ধাপে ধাপে,
    প্রথম ঘটনা, নেভী ড্রিল হিসেবে দুই সপ্তাহ আগে সাবমেরিনটি প্রশান্ত মহাসাগরে যাত্রা করলে যাত্রার কয়েক ঘন্টা পর সাবমেরিনটি থেকে সকল ধরনের ট্রান্সমিশন বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত সাবমেরিনটি নিখোঁজ।
    দ্বিতীয় ঘটনা, স্যাটেলাইট দিয়ে সাবমেরিন খুঁজে বের করার জন্য সরকারী প্রোগ্রামার দিন রাত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ট্রাষ্টেড হোয়াইট হ্যাটদের সাহায্য নেয়া হয়, যাদের মধ্যে কেউ একজন এক ভয়ানক প্রোগ্রামিং ভাইরাস সিস্টেমে আপলোড করে দেয় যার কারনে স্যাটেলাইট স্টেশন শুধু নয়, স্যাটেলাইট স্টেশনের সাথে কানেক্টেড সব ডিভাইস ওভারহীটেড হয়ে ফ্রাইড হয়ে গেছে। আর ওই ভাইরাসই পুরো স্যাটেলাইট কন্ট্রোল তুলে দিয়েছে কোন এক প্রোগ্রামার গোষ্টির হাতে।
    রাফি – সাবমেরিন গেলো, সেটা খুঁজতে স্যাটেলাইট স্টেশন কাজে লাগাতে গিয়ে সেটাও গেলো সাথে স্যাটেলাইটের কন্ট্রোলও। এখন এটা বলবেন না যে কোন না কোনভাবে একটা নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস ও খোয়া গেছে।
    – আনফর্চুনেটলী তাই ই হয়েছে। রিসেন্টলি নেভাল কমান্ড একটা ফুললি ফাংশনড নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস হারিয়ে ফেলেছে।
    রাফি – মাশাআল্লাহ, আর কি চাই? দুনিয়া আনস্ট্যবল হয়ে যাওয়ার জন্য আর কি লাগে। আপনার কথা যদি ঠিক হয় তাহলে দুনিয়া এখন বিশাল বড় নিউক্লিয়ার যুদ্ধের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে, তাই তো!
    – হ্যাঁ সেটাই।
    রাফি – এখানে পিকাচু বা আমি কি করতে পারি! আমাদের কি কাজ এখানে?
    – যদি খুব দ্রুত সাবমেরিন অথবা স্যাটেলাইট খুঁজে বের করা না যায় তাহলে কি হওয়া সম্ভব তা হয়তো আন্দাজ করতে পারছো। তুমি এবং আমি মিলে এই পৃথিবীকে বাঁচাতে পারি।
    রাফি – এটা ছোটখাটো বিষয় নয়, অনেক বড় বিষয়। এতোটা সহজভাবে বললেও অতটা সহজভাবে করা সম্ভব নয়। যারা একটা সাবমেরিন গায়েব করে দিতে পারে, যারা নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস চুরি করতে পারে তাদেরকে এতটা হালকাভাবে দেখা উচিৎ নয়।
    – হালকাভাবে দেখছি না বলেই আমার সাহায্যের প্রয়োজন আর তোমরা মানে তুমি আর পিকাচু ছাড়া এমন ইফেক্টিভভাবে কেউ আমাকে সাহায্য করতে পারবে না।
    রাফি – একটা প্রশ্ন, আপনি কেন এসব করছেন!?এসব করে আপনার কি লাভ!?
    – এই দুনিয়া সার্ভাইভ করলে আমার লাভ। আর একটা জিনিস এড করে দেই, সাবমেরিনে ১৫ টা নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড আছে, যা স্যাটেলাইট এবং নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস এর দ্বারা সারা পৃথিবীর যে কোন পিনপয়েন্টে আক্রমন করতে সক্ষম।
    রাফি – আসলেই চিন্তার ব্যপার। ১৫ টা নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড মানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তারা এখনো কোন হুমকি বা স্ট্রাইক চালায়নি কেন?
    – দুইটা কারনে, এক স্যাটেলাইট স্টেশন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্যাটেলাইটটিতে যে কোন সময় যোগাযোগ স্থাপন অসম্ভব হয়ে গেছে, এখন সাবমেরিন এবং স্যাটেলাইটকে কাছাকাছি এ্যালাইনমেন্টে আসতে হবে এবং তখনই যোগাযোগ সম্ভব।
    আর দ্বিতীয়ত স্যাটেলাইট স্টেশন ব্যতীত সাবমেরিনকে স্যাটেলাইটের সাথে কানেক্ট হতে হলে সাবমেরিনকে অবশ্যই জলের উপর ভেসে থাকতে হবে। কিন্তু এখন জলের উপর ভেসে উঠলেই ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
    রাফি – মানে ওই এক স্যাটেলাইট স্টেশনের জন্য অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে সবাইকে, মিলিটারিও আর সন্ত্রাসীরও।
    – স্যাটেলাইট স্টেশনই একমাত্র উপায় ছিলো সাবমেরিন খুজে বের করার। স্টেশন না থাকলে মিলিটারি অসহায়।
    রাফি – এই সাবমেরিন উদ্ধারে আমার সাহায্য নেয়ার প্লান আপনার মাথায় এলো কবে থেকে!?
    – তোমার কাছে মজা মনা হচ্ছে এসব! একটা নিউক্লিয়ার বোমা বিষ্ফোরন মানে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু আর কোটি কোটি মানুষের রেডিয়েশন এক্সপোজারে ধুকে ধুকে মরন। তোমার বাবা মা এর শহরকেই যদি সন্ত্রাসীরা টার্গেট করে তাহলে! ওই শহরে এমন কোন নিউক্লিয়ার বাংকার ও নেই যেখানে চাইলেই তুমি বা আমি তোমার ফ্যামিলিকে ওই বাংকারে ঢুকিয়ে দিতে পারবো। আমার ফ্যামিলির কথা না হয় বাদই দিলাম।
    যতই মজা করে উড়িয়ে দিক না কেন ব্যপারটা মোটেই হাসিঠাট্টার নয় সেটা রাফি ভালো করে জানে। হিরোশিমা নাগাসাকিতে এখনো বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নেয় এই রেডিয়েশনের জন্য । আর একবার যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ বাধে তো এই পৃথিবী বলে কিছু থাকবে না। নাহ ভালো চিন্তায় পড়ে গেলো রাফি। একদিকে বাবা মা আর তোহাকে উদ্ধার করা অন্যদিকে পৃথিবীকে উদ্ধার, কি করবে রাফি!

    #পর্ব_১৮
    .
    .আর একবার যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ বাধে তো এই পৃথিবী বলে কিছু থাকবে না। নাহ ভালো চিন্তায় পড়ে গেলো রাফি। একদিকে বাবা মা আর তোহাকে উদ্ধার করা অন্যদিকে পৃথিবীকে উদ্ধার, কি করবে রাফি!
    মাফিয়া গার্লের কথায় যেমন ভয় আছে তেমনি সন্দেহ ও আছে। ভেরিফাই করে নেয়া দরকার।
    রাফি – পিকাচু, গত একমাসের ভেতর নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নিখোঁজ সংক্রান্ত নিউজ বা রিপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করো।
    পিকাচু – পিকা পিকা, Accessing news feeds…….. searching for update information ……….
    No results found.
    রাফি – কোন ইনফো নেই! এতবড় একটা ঘটনা ঘটলো অথচো কোন সংবাদেই এলো না! এটা কিভাবে সম্ভব!!!!!?
    রাফি একটা জিনিস বুঝতে পারে যে এত বিপুল পরিমানে নিউক্লিয়ার বোমা সহ সাবমেরিন হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা যেমন ভয়ংকর তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে চাপ তো থাকবে অবশ্যই। যে কে দেশের অথরিটি ই চাইবে সারা দুনিয়াকে না জানিয়ে যতটা সম্ভব লুকিয়ে সাবমেরিন খুঁজতে। কিন্তু এমন শক্তিধর দেশের নেভাল ডিফেন্স সিস্টেম কি এতটা দূর্বল হতে পারে যে নিজেদের সমুদ্রসীমায় নিজেদেরই সাবমেরিন খুইয়ে ফেলবে!? তাছাড়া সাবমেরিন খুঁজতে হ্যাকারদের কি দরকার, সাবমেরিন হারিয়ে গিয়েছে, হ্যাকড তো হয় নি। হতে পারে নেভিগেশন আর কমিউনিকেশন সিস্টেম ড্যামেজ হয়ে সাবমেরিনটি স্টেল্থ মোডে চলে গেছে। হ্যাকার নিয়োগ দিয়ে সাবমেরিন খোঁজার কি দরকার ছিলো! সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খুজলেই তো পারতো! এত তাড়ার তো দরকার ছিল না। আর যেসব হ্যাকারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি চেক করে নেয়া হয় নি? তার উপর হ্যাকারদের কেউ যদি ভাইরাস সিস্টেমে আপলোড করে তাহলে ওইসব হ্যাকারদের জেরা করলেই তো বের হয়ে যেত কি এবং কার মাধ্যমে ঘটেছে ঘটনা। অনেক বেশী তালঘোল দেখতে পায় রাফি। এটাকে “ডাল মে কুছ কালা হ্যায়” না বলে “পুরা ডাল ই কালা হ্যায়” বলা উচিৎ।
    রাফি – পিকাচু, মিলিটারী নেটওয়ার্ক একসেস করো, দেখো ইন্টারনালভাবে এই বিষয়টা নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা।
    পিকাচু – Accessing Military network…….
    রাফিও আগ্রহভরে অপেক্ষা করতে লাগলো কিছু একটা পাওয়ার আশায়। কিন্তু পিকাচু কিছুই খুঁজে পেলো না। মনিটরে শো করলো “NO RESULTS FOUND”
    রাফি অবাক হয়ে গেলো। এত বড় একটা ঘটনা অথচো মিলিটারি নেটওয়ার্কেও কেউ এইব্যপারে মেনশন করে নি! মিডিয়াতে ফ্লাশ করলে হয়তো লোকজন আতংকিত হবে সেজন্য মিডিয়া এভয়েড করতে পারে কিন্তু তাই বলে নিজেদের সিকিউর নেটওয়ার্কেও বিষয়টা নিয়ে কোন আলোচনা হবে না এটা কেমন কথা!!
    পিকাচু – All messages are encoded. No direct message found.
    পিকাচুর কথায় আবারও ভাবনায় পড়ে রাফি, মিলিটারী নেটওয়ার্কে বেশীরভাগ মেসেজই সংকেতের মাধ্যমে আদানপ্রদান করা হয় যাতে করে সুনিদিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত আর কেউ মেসেজ শুনতে পেলেও বুঝতে না পারে।
    মাফিয়া গার্লের একের পর এক মিথ্যার জন্য রাফির মনে যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে তা এত সহজে দূর হবার নয়। আর এমনও হতে পারে রাফি এবং পিকাচু ব্যবহার করে নিউক্লিয়ার স্যাটেলাইট আর সাবমেরিন এর দখল নিতে চায় মাফিয়া গার্ল! অসম্ভব কিছু নয়, হতেই পারে। এত বড় ঘটনা ঘটে গেলো অথচো কেউ জানে না এটা তো অসম্ভব।
    নাহ এসব ভাবলে চলবে না, মাফিয়া গার্লের কথায় ভুললে চলবে না। নিজের কাজে ফোকাস দিতে হবে।
    পিকাচু – Package reached to its destination.
    রাফি আবার মনিটরের দিকে তাকালো, পিৎজা আর ফ্রেন্সফ্রাই নিয়ে ডেলিভারি বয় পৌছে গেছে ঠিকানায়। বাসায় গেটে ওয়েট করছে।
    পিকাচু বাসাটির বিপরীতে থাকা cctv ক্যামেরা দিয়ে শো করতেছে ডেলিভারি বয় বাসার দরজায় কার সাথে যেন কথা বলছে। রাফি এক চোখ চেপে আর এক চোখ দিয়ে মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো ডেলিভারি বয়কে, ক্যামেরার পজিশন আর দূরত্বের কারনে ডেলিভারি বয়ের পেছনটা দেখা যাচ্ছে শুধু আর দরজায় কে কথা বলছে এটাও দেখা যাচ্ছে না। রাফির টার্গেট প্যাকেটগুলো শুধু কোনভাবে ভেতরে যাক, বাকিটা পরে দেখা যাবে।
    কিছুক্ষণ পর ডেলিভারি বয়কে বের হয়ে আসতে দেখা গেলো, রাফি খুব মনযোগ সহকারে ডেলিভারি বয়ের হাত আর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে থাকলো, প্যাকেটগুলো কি আদৌ ভেতরে গেলো নাকি প্যাকেটগুলো ব্যাগের সাথেই ফেরৎ নিয়ে এলো ডেলিভারী বয়!?
    রাফি – পিকাচু, ফ্রেন্সফ্রাই এর ব্যাগে থাকা মোবাইলটির নেটওয়ার্ক ট্রাক করো, সেটা মুভ করছে নাকি একজায়গায় স্থির আছে।
    পিকাচু – সেটটি এনড্রয়েড বা স্মার্টফোন নয় যে কারনে মুহূর্তের ভেতর জিপিএস পিনপয়েন্ট লোকেশন ধরা সম্ভব নয় তবে ১০ সেকেন্ডের ভেতর ট্রেস করে ফেলা যাবে নেটওয়ার্ক টাওয়ারের মাধ্যমে।
    রাফি যেন ১০ সেকেন্ড ও ধৈর্য ধরতে পারছে না। অস্থিরতায় কপালে ঘাম জমিয়ে ফেলেছে, এছাড়া মাফিয়া গার্ল যদি টের পার রাফির সিক্রেট অপারেশন তাহলে সব শেষ।
    রাফি – পিকাচু, ডেলিভারি বয় এর ব্যাগ এর ভিজুয়্যাল মেজারমেন্ট নিয়ে বলো যে ব্যাগটা খালি না ভরা। মানে বাড়িতে আসার আগে এবং বাড়ি থেকে বের হবার পর ব্যাগের ওজনের কোন তারতম্য হয়েছে কি না!
    পিকাচু – scanning…… comparing…… ভিজ্যুয়াল মেজারমেন্ট বলছে ৮৬% সম্ভাবনা আছে বাসা থেকে বের হবার পর ব্যাগের ওজন ৯৫০গ্রাম কম হওয়ার।
    এদিকে পিকাচুর নেটওয়ার্ক স্ক্যানিং ও কম্প্লিট হলে ফোনের লোকেশন বাড়ির ভেতরেই শো করছে।
    দুইটা কনফার্মেশন পজেটিভ হওয়ায় রাফি ব্যপক স্বস্তি পেলো। তাহলে কি তোহা বাড়িতেই আছে? থাকলে তো ভালই হবে, একসাথে সবাইকে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বুঝিয়ে বলতে পারবে।
    রাফি এতটা বেশী সঙ্কায় আছে, যদি মাফিয়া গার্লের কাজ করতে রাফি রাজি না হয় তাহলে পরিবার জিম্মি করে কাজ আদায় করে নেয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। এতদিনের অভিজ্ঞতা বলে মাফিয়া গার্ল যা চেয়েছে তা কোন না কোনভাবে সফল করেই ছেড়েছে। পরিবার রাফির সবচেয়ে বড় দূর্বলতা, তাই পরিবারকে বিপদের মুখে রেখে রাফি একদন্ডও শান্তিতে থাকতে পারবে না। কিন্তু পরিবারকে উদ্ধার করে রাখবে কোথায় রাফি! আর মাফিয়া গার্ল যখন জানতে পারবে বাবা মা আর তোহা হাতের মুঠোয় নেই তখন তো রাফিকে এই ঘরের ভেতরই ধুয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিতে পারে ওই দুই বডিবিল্ডারকে। তাই ওইদিকে বাবা মা আর তোহাকে বের করে আনার পাশাপাশি রাফিকেও এই ডেরা থেকে পালাতে হবে। অন্যদিকে পিকাচু এখন পুরোপুরিভাবে তৈরী কিন্তু knowledge hunt কম্প্লিট না করে পিকাচুকে এভাবে এই সার্ভারে ফেলে রেখে এখান থেকে পালানো ও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কোনভাবে ইন্টারনেট কানেকশন ডিসকানেক্ট করে দিলেই পিকাচু বন্দি হয়ে যাবে এই সার্ভারে। তাই পিকাচুর জন্য সিলেক্ট করা স্যাটেলাইটটি এন্টেনার রেন্জে আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে রাফিকে। টাস্ক অনেকগুলো কিন্তু কাজগুলো করতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে যাতে করে কোন ভুল না হয়। এদিকে রাফির মনে পড়ে ভয়ংকর তুষারপাতের কথা, এভাবে তুষারপাত হতে থাকলে খুব দ্রুত এখান থেকে পালানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
    “ইয়া আল্লাহ, এ কোন পরিক্ষায় ফেললে তুমি আমায়।” রাফি মনে মনে উপরের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে।
    রাফি – পিকাচু, ফ্রেন্সফ্রাই এর প্যাকেটে থাকা মোবাইলটার লোকেশন এখন কোথায় শো করছে?
    পিকাচু মনিটরে একটা গ্রীন পয়েন্ট দিয়ে শো করছে ফোনের লোকেশনটা। রাফি চোখ বন্ধ করে ঘরের ভেতরের রুমগুলো কোথায় কেমন তা মনে করতে লাগলো।
    রাফি – পিকাচু, ঘরের ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করো।
    পিকাচু – পিকা পিকা।
    পিকাচু ঘরটার স্যাটেলাইট ইমেজ নিয়ে ঘরের পিলার আর বাইরের দেয়ালসহ সদর দরজার লোকেশন ইন্ডিকেট করে ঘরটার একটা প্রাইমারি ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করে দিলো। রাফি পরবর্তীতে নিজের স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করে ঘরের ভেতরের রুম আসবাব ও অন্যান্য স্থাপনা ব্লুপ্রিন্টে বসিয়ে দিলো।
    ব্লুপ্রিন্ট কম্প্লিট হলে রাফি দেখতে পায় মোবাইলটার লোকেশন ডায়নিং টেবিলের উপর শো করছে। এখনো ডায়নিং টেবিলে খাবারগুলো থাকা মানে হয় তোহা ঘরে নেই আর না হলে অন্য কাজে ব্যস্ত, পিৎজা ফেলে রাখা মেয়ে তোহা নয়।
    পিকাচু – I can access the microphone if you want ….
    রাফি কেমন যেন ধাক্কা খায়। পিকাচু মাইক্রোফোন একসেস করতে পারবে মানে!
    রাফি – ফোনে কোন কল না দিয়ে বা রিসিভ না করিয়ে তুমি ফোনের মাইক্রোফোন দিয়ে আড়ি পাততে পারবে!
    পিকাচু – Affirmative…..
    রাফি পুরাই শকড হয়ে যায় তবে অন্য কিছু ভাবার আগে মাইক্রোফোন একসেস নিয়ে ঘরের ভেতর কি হচ্ছে সেটা শোনা বেশী জরুরী মনে করলো রাফি।
    রাফি – শোনাও তাহলে ভেতরে কি শোনা যাচ্ছে।
    পিকাচু – Software control override…… Accessing microphone….. use headphone for better listening…
    রাফি হেডফোন তুলে নেয় কানে। পিকাচু সাউন্ড এডজাষ্ট করে শোনাতে থাকে রাফিকে।
    দুইজন ব্যক্তির কথপোকথন শোনা যাচ্ছে যাদের কারো ভয়েসই চেনে না রাফি।
    – ম্যাডাম পিৎজা অর্ডার করছে অথচো ম্যাডাম তো বাড়িতে নেই।
    – হয়তো রাস্তায় আছে, আসতেছে। বাসায় এসে পিৎজা খাবেন হয়তো তাই অর্ডার দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
    হঠাৎ রাফি একটা পরিচিত গলা শুনতে পায়, রাফির মা কথা বললেন,
    মা – হয়েছে হয়েছে, এতো গবেষণা করতে হবে না, বৌমা ছাড়া আর কে পিৎজা পাঠাবে এখানে? রাফি ও তো দেশে নেই যে বলবো রাফি পাঠিয়েছে।
    রাফি বুঝতে পারে হয়তো বডিগার্ড সহ বাবা মা ঘরের ভেতরেই আছে আর তোহা এখনো বাপের বাড়ি থেকে ফেরে নি। সবার গলার আওয়াজ হিসাব করে পিকাচু একটা এস্টিমেশান করে যে পিৎজা ফ্রেন্সফ্রাই কোক সবার সামনে খুব কাছাকাছি রেন্জেই রাখা। সবার সামনে থাকলে তো আর রাফির পক্ষে ফোন দিয়ে কারো সাথে কথা বলা সম্ভব না। আর হঠাৎ করেই যদি একটা খাবারের প্যাকেট থেকে ফোনের রিং শোনা যায় তাহলে অবাক হওয়ার থেকে আতংকিত হবার সম্ভাবনাই বেশী।
    আচ্ছা শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে একটু কথা বলা উচিৎ। মাফিয়া গার্ল হয়তো তাদের নাম্বারে কোন সমস্যা করবে না। এমনটা ভাবতে ভাবতে শ্বশুরের নাম্বারে কল ঢোকায় রাফি, নাম্বার আনরীচেবল শো করছে। রাফি আর একবার কল দেবে এমন সময় মাফিয়া গার্লের ফোন,
    – কি হচ্ছে এসব?
    রাফি – কি হবে!
    – কাকে ফোন দিচ্ছো তুমি?
    রাফি – আমার শ্বশুর অসুস্থ, তার খোঁজ নিতে ফোন দিচ্ছি, আর তাছাড়া আমার ওয়াইফ ও ওখানে আছে। কথা বলা উচিৎ।
    – কথা বলা উচিৎ! রাফি, তোমার ফ্যামিলি সেফ আছে, কিন্তু তুমি যদি ওই সাবমেরিন আর স্যাটেলাইট উদ্ধার না করো তাহলে এই পৃথিবী আর সেফ থাকবে না।
    রাফি – পৃথিবীকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য অনেকেই আছে তবে আমার পরিবার নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ নাই। পৃথিবী অপেক্ষা করবে তবে আমার পরিবার নয়। ফোনটা যদি আপনার কারনে আনরীচেবল হয়ে থাকে তাহলে দয়া করে ওপেন করে দিন। আমি তাদের সাথে কথা বলবো।
    – তাদের ফোন এমনিতেই বন্ধ হয়ে আছে। তুমি চাইলে চেক করে নিতে পারো।
    রাফি মাফিয়া গার্লের সাথে লাইইনে থাকা অবস্থায় পিকাচুকে কমান্ড দিলো যেন শ্বশুরবাড়ির সব নাম্বার ক্রসচেক করে যে আসলেই নাম্বারগুলো বন্ধ কিনা। পিকাচু ও স্ক্রীনে শো করে Scanning…..
    রাফি – আপনার আসল উদ্দেশ্যটা কি! এসব করে কি হাসিল করতে চাচ্ছেন?
    – হাসিল হলেই দেখতে পাবে।
    রাফি আর কথা না পেচিয়ে ফোন রেখে দিলো। মাফিয়া গার্লের ঘুরানো প্যাঁচানো কথাগুলো আর ভালো লাগে না রাফির। অন্যদিকে পিকাচু শো করে আসলেই রাফির শ্বশুরবাড়ির সব নাম্বারগুলো বন্ধ হয়ে আছে।
    হলো না শ্বশুরের উসিলায় তোহার সাথে কথা বলা। এতকিছু সামলাবে কিভাবে রাফি! মাথা গরম করলে কোন ফল বের হবে না জেনে মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে বসে রাফি। সবার প্রথমে রাফিকে তার মা বাবা অথবা তোহার সাথে যোগাযোগ করতে হবে, যেহেতু ফোন ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে তাই কথা বলা এখন সময়ের ব্যপার। তাই রাফি পিকাচুকে মাইক্রোফোনের কথপোকথনের ভয়েস আইডেন্টিফিকেশনের নির্দেশ দেয় আর বডিগার্ড দুইজনের ভয়েসকে ডেন্জার মার্ক এবং মহিলার আওয়াজকে সেফ মার্ক করতে বলে। পিকাচু আরো দুইটা আলাদা আলাদা ভয়েস আইডেন্টিফাই করে ফেলে ততক্ষণে, রাফি হেডফোন ভয়েসগুলো শোনে, খুব হালকা শোনালেও রাফি তার বাবার গলা ঠিকই চিনতে পারে, অন্যটা তিনজনের একজন বডিগার্ডেরই ভয়েস হবে তাই পিকাচুও রাফির কমান্ড হিসেবে ডেন্জার আর সেফ ভয়েস মার্ক করে নিলো।
    পিকাচু যেহেতু ভোক্যাল টোন শুনে পসিবল ডিস্টেন্সের এস্টিমেশন করতে পারে সেহেতু সেফ ভয়েস কাছাকাছি ও ডেন্জার ভয়েস দূরে থাকলে রাফিকে এলার্ট করতে।
    বাবা মায়ের সাথে কথা যা ই হোক, মূল উদ্দেশ্য তো তাদেরকে ওখান থেকে বের করে নিয়ে আসা, সেটা করতে হলে প্রথমে বডিগার্ড আর তারপর মাফিয়া গার্লকে স্যাটেলাইট আর সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ব্লাইন্ড করতে হবে।
    রাফি – পিকাচু, মাফিয়া গার্ল যে স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে তার ব্লাইন্ড স্পট টাইমিং কতক্ষণ সেটা ক্যালকুলেশন করে জানাও।
    পিকাচু – পিকা পিকা। calculating the time of satellite orbiting blindspot …………. 45 minutes blindspot timing found.
    অর্থাৎ দিনের একটি নিদিষ্ট সময়ে মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইট সার্ভেইল্যান্স 45 মিনিটের জন্য অন্ধ বা অকার্যকর হয়ে থাকে, আর রাফিকে এই ৪৫ মিনিটের ভেতরেই বাবা মা কে বের করে আনতে হবে ওই বাসা থেকে। বাবা মা কে বের করার পর যখন মাফিয়া গার্ল জানবে যে বাবা মা আর সেফ হাউজে নেই তখনই হয়তো সে ওই দুই বডিবিল্ডারকে পাঠিয়ে দেবে রাফিকে জব্দ করতে, তাই মাফিয়া গার্লের ব্লাইন্ড টাইমের ভেতর বাবা মা এর পাশাপাশি রাফিকেও পালাতে হবে।
    পিকাচুর কারনেই যেহেতু রাফি আটকে আছে সেহেতু আগে পিকাচুর একটা ব্যবস্থা করা বেশী জরুরী, তাই পিকাচুর জন্য বাছাই করা স্যাটেলাইটের বর্তমান অবস্থান জানতে চায় রাফি,
    রাফি – পিকাচু, what is the present condition of your memory Option number 32, the satellite?
    পিকাচু – Calculating ………. 10 hours to contact…
    রাফি ভাবে যে ১০ ঘন্টা পর পিকাচু স্যাটেলাইটে আপলোড হয়ে গেলে রাফিকে আর এই সার্ভারের মায়া না করলেও চলবে, তখন বিনা চিন্তায় পালাতে পারবে রাফি। কিন্তু রাফি পালিয়ে যাবেই বা কোথায়? এই দেশের কিছুই তো চেনে না রাফি, তার উপর যে পরিমাণ তুষারপাত শুরু হয়েছে তাতে পালিয়ে বাঁচা তো একপ্রকার অসম্ভব।
    রাফি – পিকাচু, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের আপডেট নাও। এই ঘন তুষারপাত কখন বন্ধ হতে পারে?
    পিকাচু – Accessing weather satellite imaging…… update weather report …….
    রাফি দেখতে পায় এই তুষারপাত শেষ হতে কমপক্ষে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা লাগবে। অর্থাৎ আগামী ৪৮ ঘন্টার ভেতর আর পালানো হচ্ছে না রাফির। একদিক দিয়ে ভালই হলো, পিকাচু আপলোড হবার পর বেশ সময় পাওয়া যাবে পিকাচুর knowledge hunting এর জন্য। তাছাড়া পালানোর প্লানটিকেও আরো পাকাপোক্ত করা যাবে।
    নিজের কথা বাদ নাহয় বাদ ই দিলো রাফি, বাবা মা কে ওখান থেকে বের করে নিয়ে কোথা রাখবে রাফি, রাফির পরিচিত যে কোন জায়গায় বিপদ ঘটতে পারে তাই অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতে হবে। রকিবকে ফোন দিয়ে সাজেশন নেয়া উচিৎ হবে কি? মনে মনে আকাশ পাতাল ভাবনায় বসে পড়ে রাফি। তাছাড়া এসবে প্রচুর টাকা খরচ হবে যা এইমুহূর্তে রাফির হাতে নেই, আর রাফির বাবা যদি তার একাউন্ট থেকে টাকা তোলে তো মাফিয়া গার্ল বুঝে যাবে। কারো কাছে টাকা চাইলেও বা পাওয়া যাবে কি না তাই ভাবতে থাকে রাফি। এই পুরোটা সময় পিকাচুর কথা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলো রাফি, গতানুগতিক চিন্তা করতে করতে যখন রাফির মাথা ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা তখন পিকাচু নোটিফিকেশন দেয়
    পিকাচু – সন্ধ্যা ৬ টা ৫৪ মিনিট থেকে মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইটের ব্লাইন্ড স্পট শুরু হয় আর শেষ হয় সন্ধ্যা ৭ টা ৩৯ মিনিটে।
    অন্যসব বাদ দিয়ে রাফি তার প্রয়োজন নিয়ে বসে পড়ে পিকাচুর সামনে,
    রাফি – পিকাচু, আমার টাকার দরকার, প্রচুর টাকার দরকার।
    পিকাচু – Feeding money ….. calculating…..
    ..
    .