Tag: ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১২

  • ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১২

    ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১২

    #ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
    #পর্ব_১২
    #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

    “কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে। আর চৌধুরী বাড়িতেই আছে।”

    কথাটা এতটাই জোরে ছিল যে , সব ভেদ করে সবার কানে পৌঁছে গেছে কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে। সবাই এমন কথা শুনে চমকে উঠলো। মেঘ মারা গেল কবে। লোকটা সামনে তাকাতেই দেখলো ওর আর মেঘের মাঝখানে দুই হাত সমান জায়গা বাকি। মেঘ লোকটার নাক বরাবর ঘুষি মারলো লোকটা পরে গেল তখন মেঘ ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,,

    “দিলি তো আমার ফান্ডা ভেঙে। আরে শফিক তোর বসকে খবর দিচ্ছিলি বুঝি আমি মরি নি বেঁচে আছি।”

    এটুকু বলেই মেঘ ফোন কেটে দিল। এরপর মেঘ একটু নিচু হয়ে লোকটার কাছে ফিসফিস করে বলল,,

    “শুধু আমি না! ধূসর এহসান শুভ্রও বেঁচে আছে।”

    এই কথাটা শুনে লোকটা এক পা পিছিয়ে গেল। তখন পেছন থেকে বাকি সবাই মেঘকে আঘাত করতে নিলে ধূসর আর হিররা গিয়ে সবগুলো মারতে লাগলো। মেঘ পেছনে ঘুরে একবার ধূসরকে দেখলো কতোটা ডেস্পারেট হয়ে মারছে নিজের তিন বান্ধবী কেও দেখলো। মেঘ হাসলো ততক্ষনে মেঘের গার্ডরা এসে বাকি সবাইকে ঘিরে ফেলেছে। ধূসর আর হিররা গার্ডদের হাতে লোকগুলো কে ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইল। ধূসরকে দেখে নিচে পরে থাকা লোকটা অবাক হয়ে গেল। মেঘ নিচের লোকটাকে গান পয়েন্টে রেখেছে তা দেখে লোকটা বলল,

    “তোমরা দুজনেই বেঁচে আছো? মাফ করে দাও এবারের মতো ছেড়ে দাও আমায় মেরো না প্লিজ। আমি আর কোন খারাপ কাজ করবো না।”

    মেঘ হেঁসে বলল,,

    “আচ্ছা মারবো না যদি সত্যি কথা বলিস তো! আজ এখানে তান্ডব চালাতে কে বলেছিল। আমার আব্বাকে কে মারতে বলেছিল?”

    “আমি জানিনা!”

    লোকটার বলতে দেরি আয়মান চৌধুরীর গুলি করতে দেরি হয় নি। মেঘ সবেই ট্রিগারে চাপ দিচ্ছিল তার আগে আয়মান চৌধুরী লোকটার হাতে গুলি করে দিল। মেঘ হেঁসে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,

    ” আব্বা পারফেক্ট শট!”

    আয়মান চৌধুরী মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

    “কতোদিন হলো গান চালাই না। আজ ইচ্ছে করলো তাই করে দিলাম।”

    মেঘ হেঁসে বলল,,

    “আপনিও না আব্বা মাঝে মাঝে বাচ্চা হয়ে যান। তো মিস্টার শফিক বলুন কে এগুলো করতে বলেছে? ভালোই ভালোই বলুন নাহলে আমার আব্বা আগের গুলিটা হাতে করেছে এখন সোজা বুকে করবে।”

    লোকটা ভয় পেয়ে বলল,

    “বলছি বলছি A.R.K আমি তার ফুল নেম জানি না। কখনো দেখিওনি শুধুমাত্র ফোনে ঠিকানা জানিয়েছিল।”

    মেঘ নামটা জেনে খুশি হয়ে বলল,,

    “এটুকুতেই হয়েছে আর বলতে হবে না। গার্ড এদের নিয়ে যাও পুলিশে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।”

    গার্ডগুলো সবাইকে নিয়ে চলে গেল। এদিকে তিনজন খুব ভায় পাচ্ছে। কিন্তু তারা প্রকাশ করতে চাইছে না। তারা ঘাম মুচ্ছে এই বুঝি সব শেষ। মেঘ পেছনে ঘুরতেই দেখলো সবাই উৎসুক জনতার মতো দাঁড়িয়ে আছে। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

    “তো আজ এখানে যা হলো! সেটা নিতান্তই একটা দুর্ঘটনা কেউ এটা মনে না রাখলেই খুশি হবো।”

    তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

    “মেঘ কে? ও গান চালাতে পারে। এতগুলো মানুষকে গুলি করলো এর দায় কে নেবে।”

    তখন মেঘ বলল,,

    “কেউ নেবে না এটা আমার লাইসেন্স করা গান আমার সেফটির জন্য। এমনকি আব্বারটাও তাই।”

    “কি লাইসেন্স করা গান?”

    “তো আমার আব্বা এতবড় বিজনেস ম্যান আর বিজনেস ম্যানের মেয়ে আমি। সেফটি রাখবো না। বলা তো যায়না কখন কে শেষ করে দিতে চাইলো।যেমনটা আজই আব্বার ওপর অ্যাটাক হলো।

    “মানে?”

    “মানে হলো এই আমার আব্বা এখনকার টপ বিজনেস ম্যানদের মধ্যে একজন! A.M.C ইন্ড্রাস্টিজ এর ওনার A.C ওরফে আয়মান চৌধুরী। তাদের সেফটি তো দরকার তাই না।”

    কথাটা যেন সকলের নিকট বাজ ফেলার ন্যয় কাজ করলো। সকলে অবাক হয়ে ওদের দুজনকে দেখলো। সমশের চৌধুরী বললেন,,

    “অনেক হয়েছে এখন সবাই ফ্রেশ হয়ে নাও!”

    তখন আশরাফ হক বললেন,,

    “বাবা আপনি জানতেন আয়মান এতবড় বিজনেস ম্যান।”

    “আমার ছেলে আমি জানবো না, তা কি করে হয়? তবে জানো তো সব কথা সবাইকে জানাতে হয় না। কারন সবাই আপন হয় না। এখন সবাই যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

    সমশের চৌধুরীর কথার মানে কিছু লোক বুঝতে পারল। তবে ওনার কথা শুনে সবাই চলে গেল। আর মেঘের বেঁচে থাকার ব্যাপারটা সবার মাথা থেকে বেরিয়ে গেল তবে কিছু মানুষ ঠিকই মনে রেখেছে সময় বুঝে প্রশ্ন করবে পরে। ধূসর গিয়ে মেঘের হাত ধরলো নিজের রুমাল বের করে ওর হাতে চেপে রাখলো। তা দেখে মেঘ হাসলো । আশা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী আর ধূসরের পরিবার ওখানে ছিল। নীলি রোহিনী রক্তারক্তি অবস্থা খারাপ দেখে নীল আর রিমঝিম কে নিয়ে ওপরে গেছে। ওরা এখনো ছোট এটা ওদের জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ধূসর মায়মুনা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,

    “আন্টি ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আসুন।”

    মায়মুনা চৌধুরী এক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওনার চোখটা ছলছল করছে হাজার হোক মেয়ে তো। ধূসরের কথায় মায়মুনা চৌধুরীর ধ্যান ভাঙে। তিনি তাড়াতাড়ি করে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসে। ধূসর মেঘকে সোফায় বসিয়ে দেয়। ধূসর মেঘের হাত পরিস্কার করছে ডান হাতটা বাজে ভাবে কেটে গেছে।ধূসরের কষ্ট হচ্ছে কালকেই কতো যত্ন করে মেহেদী পরিয়ে দিল আর আজ এরকম অবস্থা। মেঘ কিছু বলছে না চুপচাপ ও ওর আব্বার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর আব্বাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো খারাপ লাগছে আজ তার জন্যই মেঘের এই অবস্থা। মেঘ বলল,,

    “আব্বা এখানে আসেন?”

    আয়মান চৌধুরী মেঘের কাছে গেলে মেঘ হাত ধরে তাকে বসিয়ে দিল। মেঘ হেঁসে আয়মান চৌধুরীর কাঁধে মাথা রেখে বলল,

    “নিজেকে একদম দোষারোপ করবেন না আব্বা। যা হয়েছে সব এক্সিডেন্ট বুঝেছেন।”

    ধূসর মেঘের হাত ব্যান্ডেজ করে দিল। কিন্তু মেঘ একটা টু শব্দ ও করে নি। তার আব্বার কাঁধে মাথা রেখে দেখেছে ধূসর কিভাবে ওর যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

    ____________

    “মেঘ কি করে বাঁচতে পারে। ওর ঐ অবস্থার পরও কিভাবে বাঁচতে পারে ও। শফিক ঠিক দেখেছে নাকি ভুল। না না এটা কি করে হতে পারে। মেঘের কন্ঠ শুনলাম তো আমি। আমি তো ধূসর আর মেঘকে একসাথে মেরেছিলাম। তাহলে মেঘ কি করে বাঁচতে পারে। নয়নাকে জানাতে হবে মেঘ বেঁচে আছে। মেঘ কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা কেউ জানে না। ওকে মারতে হবে নাহলে ও আমাদের মেরে ফেলবে। আমাদের শেষ করে ফেলবে। শফিক আজ কোথায় গিয়েছিল কোন চৌধুরী বাড়ি হ্যা মনে পরেছে আমাকে জানিয়েছিল। সমশের চৌধুরীর বাড়িতে এটাই তো বলেছিল। মেঘকে শেষ করতে হবে মেঘ যদি একবার জানে আমি আর নয়না দেশে আছি তাহলে শেষ করে দেবে আমাদের।

    তখনি নয়না নামের মেয়েটি রুমে প্রবেশ করলো। আর বলল,,

    “কি হয়েছে আকাশ? তোমাকে অস্থির দেখাচ্ছে কেন?”

    “নয়না মেঘ বেঁচে আছে। শফিক বলেছে।”

    “কি বলছো কি?”

    “হুম ঠিক বলেছি। মেঘ যদি জানে আমরা দেশে আছি তাহলে আমাদের শেষ করে ফেলবে।”

    “ও শেষ করে ফেলার আগে আমরা ওকে আবার শেষ করে ফেলবো।”

    “মানে?”

    “মানে হলো কাল মেঘ সূর্যদয় তো দেখবে কিন্তু সূর্যাস্ত দেখবে না। ওর ঠিকানা দাও কালকেই ওকে শেষ করে ফেলবো।”

    “চৌধুরী বাড়ি সমশের চৌধুরীর বাড়িতে গিয়েছিল শফিক! আজ ওখানে গিয়ে কাদের মারার কথা ছিল ওদের।”

    “ওকে রিল্যাক্স থাকো আমি সব ব্যবস্থা করছি। কালকেই মেঘের শেষ দিন হবে। কাল শুধু ও বাড়ি থেকে বের হোক ওর খেল খতম। বের না হলে আমি নিজ দায়িত্বে বের করবো। মেঘের নাম্বার জোগাড় করতে পারলে ভালো হতো। সমস্যা নেই চৌধুরী বাড়ির ল্যান্ড লাইন নাম্বার হলেই চলবে।”

    “তুমি ঠিক কি করতে চাইছো!”

    “দেখোই না জান কি হয়। ওর জন্য আমার সব শেষ হয়েছে। এখন ওকেও শেষ করবো যেটা আমরা এক বছর আট মাস আগে করতে পারি নি।”

    বলেই মেয়েটা হাসতে লাগলো। সাথে আকাশ নামক লোকটাও হাসতে লাগলো।

    _____________

    অন্যদিকে

    “না না না এটা কি হলো? ঐ আয়মান বেঁচে গেল? কিভাবে? কোন আঘাত লাগলো না ওর। আজ তো ওর সমশের চৌধুরী ভয়ের দুয়ারে নিয়ে যেতাম নিজ চোখে ছেলের রক্ত দেখতো। কিন্তু ঐ মেঘ এর জন্য কিছু হলো না। তোমায় আমি সহজ সরল ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি তো অন্য লেভেলের খেলোয়াড়। যাক খেলাটা ভালোই জমবে মনে হচ্ছে। তবে আমার সময় নেই তোমায় মরতে হবে মেঘ খুব তাড়াতাড়ি মরতে হবে নাহলে আমার উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।

    তখনি কেউ একজন ফোন দিল ফোনটা এপাশ থেকে ধরতেই বলল,,

    “শুনেছো A.M.C ইন্ড্রাট্রিজ এর ওনার আর কেউ না আয়মান চৌধুরী ওরফে A.C !

    “তুমি জানলে কিভাবে?”

    “মেঘ নিজে বলেছে। আর তোমার ওই বোকা লোক তোমার নাম বলে দিয়েছে A.R.K….

    “তো নামে কি আসে যায় আমাকে না পেলে নাম দিয়ে কি করবে? আজ পর্যন্ত A .R.K কে কেউ দেখেনি তাহলে আমাকে পাবে কোথায়?”

    “তবুও সাবধানে থেকো তোমার সাথে কিন্তু আমিও যুক্ত আছি।”

    তখন লোকটা মনে মনে হেসে বলল,,

    ‘তুমি একা নও আরো দুজন আছে কিন্তু তোমরা নিজেদের খুব চালাক মনে করো। তিনজনেই এমনভাবে কাজ করো কেউ কারোটা জানে না। কিন্তু আমি তিনজনকেই পরিচালনা করি এবং জানিও। বোকার দল!”

    কিন্তু মুখে বলল,,

    “সব ঠিক আছে। তবে বুঝতে পারলাম না এতদিন সব আড়ালে রেখে আজ কেন সবাইকে জানালো। নিশ্চয়ই এতে ওদের কোন মোটিভ আছে। যতটুকু মেঘকে জানলাম ও বেশ ধুরন্ধর।”

    “হুম তা তো একটু আছে গান চালাতে পারে। মারপিট পারে। তবে একটা কথা তোমার একটা লোক আরো কাউকে ফোন দিয়ে বলেছিল মেঘ বেঁচে আছে। ও মরলো কবে যে এরকম একটা সিন হলো।”

    “বলেছে যখন নিশ্চয়ই কারণ আছে। মেঘের অতীতে এমন কিছু হয়েছে যে মেঘ বাঁচার কথা না। তবুও বেঁচে ফিরেছে কিন্তু ওরা ভেবেছে মেঘ মরে গেছে।”

    ‘হুম আমারও তাই মনে হয়। তুমি সাবধানে থেকো ওকে যতটা সিধেসাধা দেখা যায় ও তার থেকেও ভয়ঙ্কর আজ বুঝেছি। তবে কিছু একটা আছে যা আমরা ধরতে পারছি না। আমার মনে হয় আজ কিছু একটা হবে এ ব্যাপারে মেঘ বা আয়মান অবগত ছিল। নাহলে বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ নিজের কাছে গান রাখে। তাও দুটোই লাইসেন্স করা।”

    ‘হুম হয়তো। রাখছি!”

    এপাশের লোকটা ফোনটা রেখে দিল। তখন ওপাশের লোকটার কাছে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো,,

    “আজকের চৌধুরী পরিবারের ওপর অ্যাটাক হতে তোমার হাত ও আছে। আজ ছেড়ে দিয়েছি মানে এই না সবসময় ছেড়ে দেব। আমি তো তোমার সাথে থাকা মেন মাথা কে একসাথে ধরবো তাই আজ ছেড়ে দিয়েছি। তোমাকে ধরতে আমার দু মিনিট সময় ও লাগবে না। এখনো বলছি সরে আসো নাহলে তোমার সাথে কি হবে নিজেও জানো না। চৌধুরী পরিবার থেকে দূরে থাকো। আর হ্যা A.R.K কেউ বলে দিও তাকে কেউ আমার থেকে বাঁচাতে পারবে না। অনেক করেছে সে এবার তার শাস্তি পাওয়ার পালা।”

    ইতি অজানা কেউ!”

    লোকটা মেসেজ পরে ঘামতে লাগলো। কিন্তু A R.K কে ফোন করে কিছু বললো না।

    ______________

    মেঘ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। বাড়িটা কেমন চুপচাপ সবাই বোধহয় নিজেদের রুমে নিচে কেউ নেই। প্রথমত মুনের বিদায় হয়েছে সবারই বড় মেয়ের জন্য মন খারাপ। তারওপর এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল সবার মনে একটা ভয় সৃষ্টি করেছে। আয়মান চৌধুরীও নিচে আসলো মেঘ ওর বাবার কাছে গিয়ে বলল,,

    “আব্বা খুদা লাগছে? দুপুরে ধূসরের ঘটনার পর তেমনভাবে খেতে পারি নি।”

    আয়মান চৌধুরী বিনা বাক্যে মেয়ের জন্য খাবার বেড়ে মেয়েকে খায়িয়ে দিতে লাগলেন চেয়ারে বসে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

    “আজ অনেক বড় একটা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি!”

    “আজ তেমন কিছু করতে আসেনি । একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিল সমশের চৌধুরী কে। শুধু দেখাতে এসেছিল আপনাকে একটু আঘাত করতো কিন্তু মেরে ফেলা তাদের মোটিভ ছিল না। এই সবকিছুর প্রশ্ন দাদুভাই দিতে পারবে। এখন খেয়ে দেয়ে ওনার রুমে যেতে হবে।”

    “তারমানে আমরা যে তিনজন কে চিনি তার মধ্যে কেউ অ্যাটাক করায় নি তাই তো!”

    “পত্যক্ষভাবে করায় নি কিন্তু পরোক্ষভাবে তিনজনেই এ বিষয়ে অবগত। কারন তিনজনে আলাদাভাবে মেন কালপ্রিট এর সাথে কথা বলে। আজ তিনজনকেই আলাদা আলাদা ভাবে মেসেজ দিয়েছি।”

    “এরা তো সবাই আমার আপন তাঁরপরেও এরকমটা করতে পারে কিভাবে?”

    “দুনিয়ায়াটাই স্বার্থের খেল আব্বা স্বার্থে একটু আঘাত পরলে কেউ দেখে না কে আপন কে পর!তবে চিন্তা নেই মেন মাথাকে আমি পেয়ে গেছি আব্বা।খুব তাড়াতাড়ি এর শেষ করবো। আজ কিছু করলাম না কারন চারজনকেই একসাথে ধরবো তাই। ঐ তিনজনের ফোন হ্যাক করেছি যা হবে সব আমার কাছে আগে আসবে।”

    “এটা খুব ভালো খবর!এখন খেয়ে নিন।

    “সবাইকে রেখেই খেতে বসলাম।”

    ‘আমার মনে হয়না কারো গলা দিয়ে খাবার নামবে সবাই আতংকিত হয়ে আছে। সবাই তো আর আপনি না।”

    মেঘ হাসলো আর বলল,,

    ‘আয়মান চৌধুরী ও তো খাচ্ছেন না। ভয় পেলেন বুঝি!”

    “উহু আমার আম্মা থাকতে ভয় কিসের?”

    বলেই আয়মান চৌধুরী হাসলেন মেঘ আর আয়মান চৌধুরী হাসছে। তখন আওয়াজ আসলো,,

    “তোমরা এই সময়েও হাসতে পারছো আবার খাবারও খাওয়া হচ্ছে দেখি। তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে পার্টি হচ্ছে এখানে।”

    কথাটা শুনে মেঘ আর আয়মান চৌধুরী হাঁসি থামিয়ে পেছনে চাইলো। পুরো পরিবার ওখানে ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে আছে। এমন কি ধূসরের পরিবার মেঘের বান্ধবীরাও। উক্ত কথাটি শাফিয়ান চৌধুরী করেছেন।সবাইকে দেখে মেঘ বলল,

    “যা হওয়ার তো আমার সাথে আর আব্বার সাথে হয়েছে কাকাই আপনার এত টেনশন কিসের? তাছাড়া এর থেকেও কঠিন অবস্থা আমরা দুজনে পার করে এসেছি। এটা তেমন বড় বিষয় নয় আমাদের কাছে। তাছাড়া যেখানে তেমন কারো কিছু হয়নি সেখানে শোক সভা করে কি লাভ। আমরা বাবা মেয়ে একটু নরমাল কথাবার্তা বলছিলাম এমনিই। আসলে কি বলুন তো আমি দুপুরে তেমন কিছু খেতে পারি নি। তাই খিদে পেয়েছিল আব্বাকে বলতেই খায়িয়ে দিলেন এই যা।”

    মেঘ যতটা সহজভাবে বলল মনে হলো কিছুই হয় নি। আয়মান চৌধুরী কিছু বললেন না। মেঘকে খায়িয়ে দিতে লাগলেন নিজেও খাচ্ছেন সাথে। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সবাই নিচে থাকলেও সমশের চৌধুরী নেই। মেঘ খেয়ে দেয়ে ধূসরদের কাছে গিয়ে বলল,,

    “সরি আপনাদের রেখেই খেয়ে ফেললাম। আপনারা খেয়ে নিয়েন। হির তোরাও খেয়ে আজ ভিশন ধকল গেছে তোদের ওপর দিয়ে। আর বড় ফুপি কাকিমনি সবার খাবারের ব্যবস্থা করুন। আমি আর আব্বা একটু ওপরে গেলাম দাদুভাইকে নিয়ে আসছি।

    মেঘ আয়মান চৌধুরীকে নিয়ে চলে গেল। সোজা সমশের চৌধুরীর ঘরে গিয়ে দরজা আটকে সমশের চৌধুরী কে দেখে মেঘ বলল,,

    ‘এরপরেও কি দাদুভাই আপনি কিছু বলবেন না।আজ কি হচ্ছিল আপনি তো নিজের চোখেই দেখলেন তবুও চুপ থাকবেন। আমি জানি আপনি সবটা জানেন। প্লিজ দাদুভাই এখন আর চুপ করে থাকবেন না।”

    সমশের চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,

    “হুম আমারও মনে হয় তোমাদের জানানো উচিৎ। এভাবে আর কতো একজন কে তো হারিয়েছি । আজকে আরেকজন কেও বোধহয় হাড়িয়ে ফেলতাম।

    মেঘ গিয়ে সমশের চৌধুরীর হাত ধরে বলল,,

    “দাদুভাই আমিও সব শুনতে চাই।”

    আয়মান চৌধুরী তার বাবার আরেক হাত ধরলেন। সমশের চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,,

    “আমি আর হামিদ ছিলাম স্কুল জীবন থেকে বন্ধু। যাকে বলে জানে জিগার দোস্ত। একসাথে কলেজের গন্ডি পেরুলাম ভার্সিটিও পেরুলাম। পড়াশোনা শেষ হতেই আমাদের আব্বারা আমাদের বিয়ে দিয়ে দিলেন কারন পরে নাকি চাকরি খুঁজতে খুঁজতে বুড়ো হয়ে যাবো। আমরাও বিয়ে করে নিলাম দু’জনে। পড়াশোনা শেষ করেছি চাকরি বাকরি কিছু একটা করবোই তাই তাড়াতাড়ি বিয়েও হয়ে গেল। নতুন সংসার ভালোই চলছিল। গ্ৰামেই আমাদের দুজনের বাড়ি দু’জনে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় চাকরির ইন্টারভিউ দিলাম কয়েক জায়গায় কিন্তু হলো না। চাকরি করতে হলে টাকা লাগবে যাকে বলে ঘুষ। তাই আমি বুদ্ধি দিলাম হামিদকে কিছু টাকা দিয়ে ব্যবসা করবো । ও বলল ও ব্যবসা করবে না ও চাকরি করবে। আমি ঢাকায় এসে ব্যবসা শুরু করলাম। হামিদ বেশ কয়েক জায়গায় ইন্টারভিউ দিল কিন্তু হলো না। এদিকে বিয়েও করে ফেলেছে তখন ওর বাচ্চাও হবে তাই আমি বললাম চাকরির চিন্তা ঝেড়ে ফেল চল আমার বিজনেস এ আমার পার্টনার হবি। কিছুদিন পর আমার আব্বা আর হামিদ এর আব্বা বেশ কিছু জমি বিক্রি করে টাকা দিল। দুজনে ঢাকায় গিয়ে ব্যবসা শুরু করলাম ভালোভাবে। আব্বা অসুস্থ তাই গ্ৰামেই আমি বেশি থাকতাম হামিদ বউ নিয়ে ঢাকায় থাকতো। আব্বা মারা যাবার পর আমরা সবাই ঢাকায় এলাম। ব্যবসা ভালোই চলছিল আমি আর হামিদ মিলে জোর কদমে ব্যবসা শুরু করলাম পাঁচ বছরের মধ্যে আমরাও পৌঁছে গেলাম উন্নতির শিখরে । ততদিনে আয়মানের বয়স আঠারো পেরিয়েছে। আর হামিদের ছেলের বয়স বিশ পেরিয়েছে। হুট করেই আমার আর হামিদের মাঝে বিজনেস নিয়ে ঝগড়া লাগলো। দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ প্রায়। একদিন আমরা দু’জনে দেখা করে সব মিটমাট করতে চাইলাম। সেদিন হামিদের ছেলে অফিসে এসেছিল কি যেন নিতে। মিটমাট করার থেকে ঝগড়া আরো বেড়ে গেল আমি শেষ মেষ বলেছিলাম আমি তোর সাথে বিজনেস করবো না। আমার জন্যই তুই এখানে আসতে পেরেছিস নাহলে করতি তো দুই টাকার চাকরি। সেটা হামিদের ছেলে দেখে ফেলে। আমি দু’দিন পর সব আলাদা করে নেওয়ার জন্য ওর বাড়িতে যাই। কারন ওর সাইন লাগবে আমরা ড্রয়িংরুমে কথা বলে আমি সাইন নিয়ে চলে আসি। আমি আসার পরেই হামিদ হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। হামিদের ছেলে মনে করে আমার জন্য সব হয়েছে আমার জন্য ওর বাবা মরে গেছে। হামিদ একটা ডিল করেছিল অন্য কম্পানির সাথে আমাকে না জানিয়েই যার জন্য আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। কারন ডিলটার জন্য অনেক টাকা দরকার হতো তখন লোন ছাড়া কোন উপায় নেই।আমাদের ওপর একটা লোন এমনিতেই ছিল আরেকটা নেওয়া সম্ভব না। ও বলে কম্পানির পেপার রেখে লোন নিতে। আমি রাজি হই নি তাই সব আলাদা করে নিই। হামিদ মারা যাওয়ার পর ওরা জানতে পারে ডিলটার জন্য সময় ছিল না বলে হামিদ ওদের বাড়ির পেপার রেখে লোন নিয়েছিল কিন্তু ওর মৃত্যুর পর ডিলটা কম্পিলিট হয় নি দেখে লোন শোধ করতে পারে নি। তার জন্য ওদের বাড়ি ব্যাংক নিয়ে নেয়। সব শুনে আমি গিয়েছিলাম কিন্তু ভাবী আর হামিদের ছেলে আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। এই সব কিছুর জন্য হামিদের ছেলে ভাবে আমি দায়ী। ও বলেছিল এই সবকিছুর মূল্য চুকাতে হবে আমাকে তখন আমি এগুলো আমলে নিই নি ভেবেছিলাম কষ্টে এগুলো বলছে কিন্তু,,,

    সব বলে সমশের চৌধুরী থামে। তখন মেঘ বলে,,

    ‘ কিন্তু সেই সবকিছুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এতদিন আমাদের সাথে যা হয়েছে সেগুলো করেছে।”

    ‘হ্যা! আমিও জানতাম না কিন্তু তোমরা বাড়ি থেকে যাওয়ার এক বছর পর ও আমার সাথে দেখা করে আর জানায় আমাকে শেষ করে ফেলবে। এমনকি যার জন্য আমি প্রথমে তোমাকে দায়ী করতাম সেটা সেই ঘটিয়েছিল আরো দুজনের সাথে মিলে। আমাকে মারার জন্য কিন্তু আমি না মরলেও দুঃখজনকভাবে তোমার দাদী মারা যায়। এমনকি আয়মানকে মিথ্যার মধ্যে সেই ফাসিয়েছিল যার জন্য আয়মানকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলাম কিন্তু তার সাথে তুমিও চলে গেছিলে। তার জন্যই তো আমি বুঝতে পারলাম ভুল হয়েছে আমার দ্বারা। আমাকে মাফ করে দিও আয়মান।

    তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

    “একদম মাফ চাইবেন না আব্বা। আপনার কোন দোষ নেই। যা হয়েছে হয়েছে তার মানে মেন কালপ্রিট সেই আব্বা ওর নাম ছিল কি যেন? আমার সাথে বেশি মিশতো না এই জন্য ভুলে গেছি নামটা।”

    “আবদুল রহমান কাদের?”

    তখন মেঘ বলল,,

    “হুম দাদুভাই তার নাম আব্দুল রহমান কাদের। কিন্তু সে এখন নতুন পরিচয়ে আছে সবার সামনে। আব্দুল রহমান কাদের ওরফে A.R.K. যিনি আজ আমার বোনের বিয়েতে এসেছিলেন কিন্তু সে কে কেউ ধরতে পারে নি। এমনকি আপনার সাথে দেখাও করে নি যদি চিনে ফেলেন। তিনি একজন বিজনেস ম্যান সাথে অন্ধকার জগতের বস। সে ভালো বিজনেস ম্যান এর জায়গায় তার ছদ্মনাম ইউজ করে কিন্তু অন্ধকার জগতে তার আসল পুরো নামের শর্ট ফ্রম ইউজ করে A.R.K। এর ব্যাপারে আমার কাছে কিছু ইনফরমেশন আছে। কিন্তু প্রমান নেই তাই কিছু করতে পারছি না। ওনার বিরুদ্ধে প্রমান পেলেই ওনার দি ইন্ড।”

    “মানে আম্মা আপনি কি তাকে চিনে ফেলেছেন। তার ছদ্মনাম কি আম্মা!”

    ‘সময় হোক আব্বা বলবো এখন না। তবে খুব তাড়াতাড়ি তাকে সবার সামনে আনবো। আর তাদের যোগ্য শাস্তি দেব।”

    সমশের চৌধুরী বললেন,,,

    ‘আমি চাই তুমি তাকে তাড়াতাড়ি বের করে শাস্তি দাও। নাহলে আমার পরিবারকে শেষ করে ফেলবে। সেই ভুলের শাস্তি আমি পাচ্ছি যে ভুল আমি করিই নি ।”

    “হুম দাদুভাই আর কিছুটা সময় তারপরেই তার ইতি টানা হবে। এখন নিচে চলুন খাবেন তারপর ওষুধ খেতে হবে।”

    “আমি কিছু খাবো না!”

    তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

    ‘আজ আপনার ছেলে আপনাকে খায়িয়ে দেবে আব্বা।”

    কথাটা শুনে সমশের চৌধুরীর চোখটা ছলছল করে উঠলো। তিনি বললেন,,

    “অনেকদিন হলো কারো হাতে খাওয়া হয় না। আজ তোমার মায়ের কথা মনে পরছে আয়মান। শেষ তিনিই আমাকে যত্ন করে খায়িয়ে দিয়েছেন।”

    তখন মেঘ বলল,,

    “আমি খায়িয়ে দিতাম দাদুভাই। কিন্তু আমার হাত তো কেটে গেছে। সমস্যা নেই আমি আপনার পাশে বসে থাকবো আপনার হাত ধরে। আব্বা আপনাকে খায়িয়ে দেবে। আমরা তিন জেনারেশন একসাথে বসে গল্প করবো আজ।”

    মেঘের কথায় সমশের চৌধুরী আর আয়মান চৌধুরী হাসলেন। মেঘ সোজা হয় সমশের চৌধুরীর হাত ধরে বলল,,

    “এখন নিচে চলুন!”

    মেঘ সমশের চৌধুরী কে নিয়ে সিড়ির কাছে আসলো। পেছনে আয়মান চৌধুরী । মেঘ ফিসফিস করে সমশের চৌধুরী কে বলল,,

    “আব্বা বলে আমি আব্বার মায়ের মতো। মানে আপনার অর্ধাঙ্গিনীর মতো। তাহলে দাদুভাই ফিল নিন এখন আপনি আপনার তিনির হাত ধরে হাঁটছেন।”

    মেঘের কথা শুনে সমশের চৌধুরী হেঁসে বলল,,

    “ঠিক বলেছে আয়মান আপনি আমার তিনির মতো। তো আমার উনি এবার যাওয়া যাক নিচে।”

    সমশের চৌধুরীর আজ নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছে। এতদিন পর মনে হচ্ছে সে একা নয়। নিচে সবাই রয়েছে কেউ খাচ্ছে কেউ বিরস মুখে সোফায় বসে আছে। মেঘ কারো তোয়াক্কা না করে সোজা সমশের চৌধুরী কে তার চেয়ারে বসিয়ে দিল। আয়মান চৌধুরী ওনার চেয়ারের পাশে একটা চেয়ার উঠিয়ে রাখলেন মেঘ আর সমশের চৌধুরী বসে পরলো। আয়মান চৌধুরী এক প্লেটে খাবার বেড়ে আয়মান চৌধুরীর সামনে ধরলো। সমশের চৌধুরী হেঁসে মুখে নিলেন। মেঘ ওনার হাত ধরে বসে আছে আয়মান চৌধুরী খায়িয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্যটা সবাইকেই মুগ্ধ করলো। সকলে মুগ্ধ চোখে তাদের তিনজন কে দেখতে লাগলো। কে জানে এই দৃশ্য আবার কখনো আসবে কিনা।

    ~চলবে,,,