Tag: ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১০

  • ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১০

    ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১০

    #ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
    #পর্ব_১০
    #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

    মেঘ কিছুক্ষণ ধূসরের কথা ভেবে বাইরে বের হলো। ও নিচে গিয়ে দেখলো সোফায় ধূসর আর দিশান বসে আছে। তার পাশের সোফায় দিলরুবা খানম, আশা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী বসে গল্প করছে। দিলরুবা খানম মেঘকে দেখে ডাক দিলেন। মেঘ হেসে ওনার কাছে গিয়ে ওনার পাশে বসে পরলো। দিলরুবা খানম বললেন,,

    “তোমার মুখ এমন লাগছে কেন?’

    মেঘ বলল,,

    “তেমন কিছু না!”

    তখন ধূসর মেঘকে ডাকল ,,

    “মেঘ একটু এদিকে এসো?”

    মেঘ উঠে সেখানে গেল। তখন আশা চৌধুরী বললেন,,

    “আপনাদের সবার সাথে মেঘ বোধহয় খুব ফ্রি তাইনা।”

    দিলরুবা খানম হেঁসে বললেন,,

    “হুম। ওকে দেখতে কঠিন মনে হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেঘ ভিশন অদ্ভুত। তবে একটা জিনিস মেঘকে যদি আপনি একটু ভালোবাসেন তাহলে মেঘ আপনাকে দশগুণ ফিরিয়ে দেবে। তবে মুখে প্রকাশ করে নয়, তার কাজের মাধ্যমে। অবশ্য আপনারা ওর পরিবার আপনাদের থেকে কে ভালো জানবে?”

    মায়মুনা চৌধুরী অন্য কিছু ভাবলেন। মায়মুনা চৌধুরী মনে মনে জিজ্ঞেস করতে চাইলেন,,

    “আপনারা মেঘকে এত ভালোবাসেন কেন?”

    কিন্তু মুখে বলা হলো না উনারা অন্য কথায় মজে গেলেন। এদিকে ধূসরের কাছে মেঘ যেতেই ধূসর বলল,,

    “লিলি কোথায়?”

    “লিলি তো ছাদে রিমঝিম আর নীলের সাথে খেলছে।”

    ‘তুমি একটু ওকে এনে দেবে? আসলে সবাই অপরিচিত কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। ওর সাথে একটু সময় কাটালে ভালো লাগবে।”

    “আচ্ছা একটু বসুন। আমি ওকে নিয়ে আসছি?”

    মেঘ চলে গেল ওপরে গিয়ে দেখলো তার চার বান্ধবী শোকসভা করছে। তা দেখে মেঘ বলল,

    “এখানে কেউ মরছে নাকি?”

    হুট করে মেঘের আগমনে ওরা চমকে উঠলো। তা দেখে মেঘ হেসে বলল,,

    “সবার মেহেদী নেওয়া ডান। তোদের কি হয়েছে? জায়মা আপু শায়লা আপু আমার বান্ধবীদের হাত খালি কেন? ওদের মেহেদী দিয়ে দাও তোমরা।”

    জায়মা এগিয়ে এসে বলল,,

    “তখন কি হয়েছিল ওভাবে রাগ করলি কেন?”

    ‘তেমন কিছু না! তোমরা ওদের চারজন কে মেহেদী দিয়ে দাও।”

    তখন চার জন একসাথে বলল,,

    “আমরা মেহেদী পরবো না।”

    ‘তোরা পরবি না মানে তোদের হাত পরবে। দারা আমি লিলিকে দিয়ে এসে তোদের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছি।”

    মেঘ লিলিকে নিয়ে নিচে আসলো। ধূসরের হাতে লিলিকে দিল। তখন ধূসর বলল,,

    ‘তোমার সাথে সময় কাটাতে পারলে মন্দ লাগতো না।”

    “আপনি কি আমার সঙ্গ চাইছেন ডক্টর?”

    “সঙ্গ চাইলেই কি তুমি দেবে নাকি। তুমি তো নিষ্ঠুর মেয়ে আমার সব জিনিসে বাগড়া দেওয়া তোমার কাজ।”

    “আপনার কি মনে হয়? এতগুলো মানুষের মধ্যে বসে আপনাকে সঙ্গ দিই। এটা উচিৎ বলে আপনার মনে হয়।”

    “আমার তো অনেক কিছুই উচিত মনে হয়। কিন্তু তোমার কাছে সেগুলো অনুচিত মনে হয়।”

    ‘আপনার সাথে কথা বললে কথা বাড়বে বই কমবে না। আমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছে আমার বান্ধবীরা।”

    “তো যাও না আমি আটকে রেখেছি?”

    “আটকে রাখেন নি কিন্তু কথার জালে আটকে রাখছেন।”

    “ওকে আর একটা কথাও বলবো না যাও। লিলি যাদের ভাব বেশি তাদের সাথে কথা বলতে হয় না তাই না।”

    “লিলি শোন অন্যের কথায় কান দিবি না। তুই ভালো বাচ্চা ভালো বাচ্চার মতো থাকবি। অহেতুক আবদার একদম করবি না। সবসময় আবদার করলেই হয় না সুযোগ আর সময় দেখেও করতে হয়। সবথেকে বড় কথা মানুষ দেখেও করতে হয় কয়েকদিনের পরিচয়ে এত আবদার করতে হয় না।

    বলেই মেঘ চলে গেল। তখন ধূসর বলল,

    “এই লিলি কথাগুলো কি নিষ্ঠুর মেয়ে আমাকে বলল। দেখলি তোর মালকিন কত নিষ্ঠুর। আমি নাহয় একটু আবদার করলাম আর সে কি করলো জ্ঞান দিয়ে চলে গেল।

    ধূসর লিলিকে নিয়ে নিজের বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল। আর বিছানায় বসে লিলিকে কোলে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,,

    “আচ্ছা আমি ওর সাথে এত ফ্রিভাবে কথা বলি কিভাবে? যেখানে কোন মেয়ের দিকে তাকাই না। সেখানে ওর সাথে গল্প করতে চাই, যেটা কিনা সত্যিই একেবারে অনুচিত। একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে একসাথে এত ফ্রি হওয়া উচিৎ নয়। আচ্ছা আমি কি শয়তানের ধোকায় পড়ছি নিজের নফসকে কন্ট্রোল করতে পারছি না এটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কেন যেন মেঘের দিকে তাকালে মনে হয় সবকিছু বৈধ এক অদ্ভুত প্রশান্তি আসে। না বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাকে নিজের ওপর কন্ট্রোল রাখতে হবে।”

    _________________

    মেঘ ওপরে গিয়ে সবার সাথে মিলে ওর চার বান্ধবীকে মেহেদী পড়িয়ে দিল। নোলক আর রোহিনীও নিচ্ছে জায়মাদের থেকে। রিমঝিম বায়না করলো তারাও নেবে মেঘ সুন্দর করে তাদের হাতে দিয়ে দিল। তখন নীল মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,

    “আম্মু?”

    “হুম নীলবাবু বলো তুমি মেহেদী নিবে?”

    ‘না আমার মেহেদী ভালো লাগে না। খুদা লাগছে মা তো মেহেদী নিয়েছে তুমি খায়িয়ে দাও।”

    ‘হুম চলো! রিমঝিম মামনি তোমরাও চলো একসাথে তিনজনকে খায়িয়ে দেব। ভাবির হাতে তো মেহেদী খাওয়াতে পারবে না।”

    তখন রোহিনী বলল,,

    ‘শুকরিয়া মেঘ সত্যি বোধহয় ওদের খিদে পেয়েছে।”

    “ধূর ভাবি তুমি যে কি বলো না। ওরা তো আমার নীলের মতোই আমার কাছে।”

    মেঘ তিনজনকে নিয়ে নিচে এলো তিনজন কে সোফায় বসিয়ে খায়িয়ে দিতে লাগলো ওরাও ভদ্র বাচ্চার মতো খাচ্ছে। তখন দিলরুবা খানম ওদের কাছে এসে বলল,,

    ‘বাহ তোমার হাতে তিনজন কতো ভদ্র বাচ্চার মতো খাচ্ছে। কিন্তু রোহিনীর তো রিমঝিম কে খাওয়াতে জান বের হওয়ার মতো অবস্থা হয়। নীল ও কম যায় না।

    তখন রিম বলল,,

    ‘আমরা ভালো বাচ্চা তাইনা ছোট আন্টি। আর ভালো বাচ্চারা দুষ্টুমি করে না।”

    মেঘ রিমের কথা শুনে হাসলো। ছোট মা বলতে যাচ্ছিল তা ও ভালো মতোই বুঝতে পারলো। তখন নীল বলল,,

    ‘একদম ঠিক বলেছে রিম। আসলে কি বলো নানুমনি তোমার মেয়ে ঠিক মতো খাওয়াতে পারে না। তাই ওতো অসুবিধা হয়। কিন্তু দেখো আম্মু কতো সুন্দর করে খায়িয়ে দিচ্ছে।”

    মেঘ আর দিলরুবা খানম হাসলো। দিলরুবা খানম বললেন,,

    “ওরে পাকা ছেলে। তো বাচ্চারা এখানে, কিন্তু বাচ্চাদের মায়েরা কোথায় মেঘ?”

    ‘এই যে আম্মাজান আমরা এখানে? হাতে মেহেদী তাই মেঘ খাওয়াচ্ছে।”

    নীলির কথায় দিলরুবা খানম হাসলেন। সব লেডিসরা দুই হাত ভরে মেহেদী লাগিয়েছে। সবাই এসে সোফায় বসলো আপাতত ছেলেরা ড্রয়িংরুমে নেই। বড়রা সবাই নিজেদের রুমে। আর ইয়াংস্টার সবাই বাইরে হাঁটতে গেছে আর ধূসর নিজের রুমে। ওদের খাওয়া শেষ হলে। তখন জাবিন বলল,,

    “মেঘ বান্ধবী?”

    “তোর আবার কি হলো?”

    ‘আমার ও খুদা লাগছে কিন্তু শরমে কইতে পারতেছিলাম না। নীলকে দেখে খুদাটা যেন বেড়ে গেল। তাই তুই যদি একটু খায়িয়ে দিতি আমার তো হাতে মেহেদী!”

    তখন বাকি তিনজন বলল,,

    “আমরাও কিন্তু আছি!”

    মেঘ হেসে বলল,,

    ‘ঠিক আছে চারজন কেই দিচ্ছি কিন্তু ভাবি আর নোলক তোমাদের কেও খায়িয়ে দেব নাকি?”

    তখন নোলক বলল,,

    “না আপু আমরা পরে খাবো। তুমি আপুদের খাওয়াও।”

    ‘তোরা চারজন আমার রুমে যা। এখানে চারজনকে একসাথে খাওয়ানো সম্ভব নয়। আর সেটা ঠিক ও হবে না। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

    ওরা চারজন ওপরে চলে গেল মেঘ কিচেনে গেল খাবার বাড়তে সেখানে মায়মুনা চৌধুরী,আশা চৌধুরী , জাহানারা চৌধুরী আর আয়না চৌধুরী ছিল । আয়না চৌধুরী বলল,,

    “এদের নিয়ে এত আদিখ্যেতা কিসের বুঝলাম না।”

    তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

    “তো এদের ছেড়ে আপনাদের নিয়ে আদিখ্যেতা করার দরকার ছিল নাকি। আমার প্রিয়জন এরা তাদের নিয়ে আদিখ্যেতা করি আর যাই করি আপনাদের তাতে কি? আমি ওদের জন্য আদিখ্যেতা করছি সেটা দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু ওরা যখন আপনাদের এই অবহেলার পাত্রী কে নিয়ে আদিখ্যেতা করে তখন চোখ কোথায় থাকে। এই যে নীলির মাকে দেখছেন সে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো চুমু খেল কই মায়মুনা চৌধুরী তো আমার নিজের মা কখনো ভালো করে কথা অব্দি বলে নি। এমন কি আপনি যে আজ পর্যন্ত অপমান ছাড়া কথা অব্দি বলেন নি আবার এসেছেন আমাদের বলতে। একটা কথা মাথায় রাখবেন ফুপি কিছু বলছি না মানে এই না কখনো কিছু বলবো না। আমি যদি বলতে শুরু করি না মুখ দেখানোর অবস্থায় থাকবেন না।”

    অপমানে আয়না চৌধুরীর মুখ থমথমে হয়ে উঠে। আর মায়মুনা চৌধুরীর অদ্ভুত বুকে জ্বালা শুরু হয়। নিজের তিক্ত সত্য শুনে নাকি অন্য কিছু কিন্তু আজ আর মেঘকে কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না।তাই তিনি কিছু বললেন না। তখন আশা চৌধুরী বললেন,,

    “মেঘ তোর কিছু লাগবে?”

    ‘তেমন কিছু না আমি সব নিয়েই যাচ্ছি শুধু পানি লাগবে।”

    “আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি তোর সাথে।”

    মেঘ দুই প্লেটে পাঁচজনের খাবার নিল। আশা চৌধুরী পানি নিয়ে মেঘের সাথে ওপরে এলেন। উনি পানি দিয়ে চলে গেলেন । অতঃপর মেঘ বিছানায় বসে ওদের খাওয়াতে লাগলো। হুট করে দরজায় নক পড়লো মেঘ বলল,

    ” কে?”

    “আমি ডক্টর শুভ্র? ”

    “কোন দরকার ছিল?”

    “লিলির খিদে পেয়েছে?”

    “ওহ আচ্ছা আসলে আমি ভুলে গেছিলাম। ক্যাট ফুড আমার টেবিলের ওপর । আমি এখন ব্যস্ত আমার আমার হাত ও আটকানো।”

    “যদি কিছু না মনে করো তাহলে আমি ভেতরে এসে ওগুলো নিতে পারি। আসলে লিলির অনেক খুদা লাগছে। অনেকক্ষণ ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছিল।”

    মেঘ ওদের সকলের দিকে তাকালো সব ঠিক আছে। ওরাও সবাই সম্মতি দিল। তা মেঘ বলল,,

    “আচ্ছা ভেতরে এসে নিয়ে যান।”

    ধূসর কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই ভেতরে ঢুকলো ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল। ওর বোনসহ আরো তিনজন মেয়ে মেহেদী হাতে বসে আছে। আর মেঘ সবাইকে খায়িয়ে দিচ্ছিল বোধহয়। ধূসর একবার ওদের দিকে তাকিয়ে আর কোন দিকে না তাকিয়ে ক্যাটফুড নিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন হির বলল,,

    “দেখছিস মেঘ তোর জামাইটা কতো ভালো । দ্যাখ তোর বিলাই এর জন্য একটা মেয়ের রুমে ঢুকছে।”

    হিরের কথায় সবাই হাসলো। মেঘ কিছু বললো না। অতঃপর সবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরো কিছুক্ষণ মেহেদী রেখে হাত ধুয়ে ফেলল। ওদের সাথে মেঘ ও খেয়ে নিয়েছে। তাই ও নিচে ওর আব্বার আর ধূসরের পরিবারের খাওয়া হলো কি না দেখতে এলো। কেউ এখনো বসেনি মেঘই সবাইকে বলে খাবার খাওয়ালো। অতঃপর সবাই নিজেদের বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল।

    ___________________

    “কাল আয়মানের মেয়ের বিয়ে অথচ কোন ধামাকা হবে না এটা কি ঠিক হবে বন্ধু।”

    “কাল এত বড় একটা অনুষ্ঠান থাক না কালকের প্ল্যানটার সময় নির্ধারণ আরেকটু পর করো না হয়। তাছাড়া যার বিয়ে তার ও কিছু এক্সপেক্টেশন আছে তাই না।

    “তুমি কি ওদের খুশির কথা ভাবছো?”

    “না ওদের খুশির জন্য করছি না। ধামাকা টা মুনের বিদায়ের পর বাইরে থেকেই করলে ভালো হয়। বিয়ের গাড়ি ছাড়ার দুই মিনিট পর করবে কারন তখন সবার মন খারাপ থাকবে আয়মান ও দূর্বল থাকবে। তখন হুট করে অ্যাটাক হলে ওরা কেউ কিছু বুঝতে পারবে না।”

    “বাহ ভালো বুদ্ধি দিলে তো? তখন ওরা গেটের সামনে থাকবে। সবাইকে কষ্ট করে খুজতে হবে না।”

    “তুমি ঠিক করতে চাইছো?”

    ” তোমার এতো জানতে হবে না। শুধু জেনো রেখো কাল আমি চৌধুরী বাড়িতে এ তান্ডব চালাবো।”

    “সমশের চৌধুরীর সাথে তোমার কিসের শত্রুতা আমি আজও জানতে পারলাম না।”

    “তোমার জানতেও হবে না তুমি শুধু আমার কাজ ঠিকভাবে করে যাও। শুধু মনে রেখো আমি চৌধুরীদের শেষ দেখতে চাই। এখন রাখছি!

    বলেই লোকটা ফোন কেটে দিল। এপাশের জন কিছুই বুঝতে পারলো না।

    ________________

    “এত রাতে ছাদে কি করছেন ম্যাডাম?”

    মেঘ ছাদে দাঁড়িয়ে কিছু দেখছিল। রাত বারোটা সবাই ঘুমিয়ে পরেছে বোধহয়। ওর তিন বান্ধবীও ঘুমিয়ে পরেছে। কেন যেন ওর ঘুম আসছিল না। তাই মনটাকে ফ্রেশ করার জন্য ছাদে এসেছে। এত রাতে হুট করে কারো আওয়াজ পেয়েই ও সাথে সাথে ঘুরলো না। আগে আয়তুল কুরসি পাঠ করলো তারপর চোখ বুজে পুরোটা ঘুরল তারপর চোখ খুলে ছাদের লাইট লাগানো আলোতে ধূসরকে দেখতে পেল। ও ধূসরকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তা দেখে ধূসর বলল,,

    “ভয় পেয়েছিলে নাকি?”

    মেঘ হেঁসে বলল,,

    “এত রাতে হুট করে কারো শব্দ পেলাম। তাও পেছন থেকে ভয় তো একটু পাবোই।”

    “আমি না হয় মানুষ যদি জ্বিন থাকতো। এত রাতে ছাদে এসেছো কেন? এত রাতে মেয়েদের রুমের বাইরে থাকা উচিত নয়।”

    “সেটা আমি জানি তাই কুল আর আয়তুল কুরসি পরেই এসেছি আমি। আর আপনার দিকেও আমি আয়তুল কুরসি পাঠ করেই ঘুরেছি। তা আপনি এখানে কেন?”

    “ঘুম আসছিল না। কতো এপাশ ওপাশ করলাম এলোই না। তখন মনে হলো ছাদে থেকে ঘুরে আসি তাই মনটাও ফ্রেশ হবে ঘুম ও আসবে।”

    “আমার ও একই অবস্থা ডক্টর?”

    “সবাই মেহেদী নিয়েছে তুমি কেন নাও নি?”

    হুট করে এমন কথায় মেঘ একটুখানি অবাক হলো মেঘ বলল,

    “আপনি জানলেন কি করে?”

    “তুমি তোমার বান্ধবীদের খাওয়াচ্ছিলে তখন আমি তোমার হাত দেখেছি। তাছাড়া ততক্ষনে সবাই মেহেদী নিয়ে নিচেও নেমে এসেছিল।”

    “ওহ আচ্ছা!’

    “হুম তুমি মেহেদী পরবে?”

    “না!”

    “আরে আমি পরিয়ে দেব। তবে হাত ধরবো না প্রমিস। এমনিই পরিয়ে দেব।

    “আপনি পারেন?”

    “জানিনা তবে মনে হয় আমি কারো হাতে মেহেদী পরিয়ে দিতাম।”

    “জানিনা বলেও দিতে পারেন বলছেন? তাছাড়া আমি আপনার হাত থেকে মেহেদী নেবে কেন?”

    “আমি জানি না তবে আমার মনে হয় তোমার নেওয়া উচিৎ মেহেদী। প্রথমত মেহেদী পড়া সুন্নত। আর দ্বিতীয়ত একটা হাদিস আছে।’ নারীদের ন’খ সর্বদাই মেহেদী দ্বারা রাঙিয়ে রাখাই উত্তম ”
    – মিশকাত : ৪৪৬৭

    এখন দেখো মেহেদী পরলে তোমার সুন্নত পালন করা হচ্ছে। আবার নিজের হাত ও রঙিন করা হচ্ছে। মেহেদী পরলে হাতটা কতো সুন্দর লাগবে।”

    “যদি আমি না লাগাই তো!”

    ধূসর কিছু বললো না। মেঘ ও কিছু বললো না। দু’জনে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর হুট করেই ধূসর বলল,,

    “আচ্ছা মেঘ আমায় একটা সত্যি কথা বলবে?আমাদের পরিচয় কি এই আটমাসের নাকি আরো আগে থেকে। আমার কেন জানি মনে হয় তোমার সাথে আমার অনেকদিনের পরিচয়। তোমার সাথে আমি অনেক সময় কাটিয়েছি। আরো অনেকগুলো বিষয় আছে যা আমি তোমার সাথে উপলব্ধি করি। তোমার সাথে এত ফ্রিভাবে কথা বলি যেটা আমি মেয়েদের সাথে পারি না। তোমার সাথে এতটা ফ্রিভাবে মেশা উচিৎ নয় কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এখানে অনুচিত কিছু নয়। এটা বৈধ।”

    মেঘ ধূসরের দিকে তাকালো আর মনে মনে বলল,

    “আমাদের পরিচয় অনেকদিনের এই আটমাসের নয়। আপনি ঠিক বলেছেন আমরা অনেক সময় একে অপরের সাথে কাটিয়েছি। আর সবথেকে বড় কথা আপনার আর আমার এই ফ্রিভাবে মেলামেশা এটা অনুচিত নয় এটা বৈধ। কারন আমরা স্বামী-স্ত্রী। ”

    কিন্তু মুখে বলল,

    “যদি বলি আমি আর আপনি স্বামী স্ত্রী তাহলে বিশ্বাস করবেন যার জন্য আপনার এগুলো বৈধ মনে হয়?”

    ধূসর চমকে মেঘের দিকে তাকালো। আর অবাক হয়ে বলল,,

    “কি বলছো সত্যি এমন কিছু?”

    তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

    ” আমি মজা করছিলাম!”

    ধূসরের বুকটা হুট করেই ভারী হয়ে গেল। ও বিশ্বাস করে নিয়েছিল প্রায় ওরা স্বামী স্ত্রী। ধূসর বলল,,

    “যদি বলতে এটা সত্যি তাহলে আমি বিনা বাক্যে বিশ্বাস করে নিতাম।”

    এ কথা শুনে মেঘ চোখ বুজে ফেললো। হুট করেই তার কান্না পাচ্ছে। সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

    “আমার ওপর আপনার এতো বিশ্বাস?”

    “জানি না!”

    “এই যে শুরু হয়ে গেল জানি না।

    “না জানলে বলবো কিভাবে আজব!”

    “আমাকে মেহেদী পরিয়ে দেবেন ডক্টর?

    ধূসর হেঁসে বলল,,

    “যাক ম্যাডামের সুবুদ্ধি হয়েছে?”

    “মেহেদী কোথায় পাবেন এখন?”

    “আমি কি অন্ধ ? ঐ যে ওখানে মেহেদী রাখা আছে। তোমার বোনেরা বোধহয় নিয়ে যেতে ভুলে গেছে। দেখেছো আমার ভাগ্য কতো ভালো। আমার জন্য তোমার বোনেরা মেহেদী রেখে গেছে।”

    ‘আপনি কিন্তু বলেছেন হাত না ধরে মেহেদী দেবেন!”

    “দেখোই না কি হয়? শুধু হাতটা এই টেবিলের ওপরে সোজা করে নামিয়ে রাখবে। আর নড়াচড়া করবে না। তাহলে কিন্তু মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে।”

    মেঘ হেসে চেয়ারে বসে পরলো তারপর টেবিলের ওপর হাত রাখলো। ধূসর ও পাশের চেয়ারে বসে মেঘের ডান হাতে যত্ন করে মেহেদী দিতে লাগলো। সুন্দর ডিজাইন করে নিজে চেয়ার থেকে উঠে উঠে মেহেদী লাগাচ্ছে যাতে মেঘের হাত ধরতে নাহয়। মেঘ মুগ্ধ চোখে ধূসরকে দেখছে। গায়ে জিন্স আর কালো রঙের টিশার্ট মুখে চাপ দাড়ি, চুল গুলো এলোমেলো ওর ইচ্ছে করছে ধূসরের চুলগুলো আরো এলোমেলো করে দিতে। এদিকে ধূসরের কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে ওর চোখে ঝাপসা কিছু দেখছে মনে হচ্ছে ও এভাবেই কাউকে যত্ন করে মেহেদী পড়িয়ে দিত। ও হুট করেই মেঘের দিকে তাকালো মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আজ আর মেঘ দৃষ্টি সরালো না। তা দেখে ধূসর বলল,,

    “কি দেখছো?”

    “আপনি কি সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আপনি একজন ভালো হাজবেন্ড হবেন।”

    ধূসর হেঁসে বলল,,

    “তা আর বলতে আমার মনের রানীকে আমি মাথায় করে রাখবো। আমার মেহেদী খুব পছন্দ তাকে প্রতি মাসে মেহেদী দিয়ে দেব নিজ হাতে। আর কথা নিয়ে রাখবো আমি ছাড়া সে যেন অন্য কারো হাত থেকে মেহেদী না নেয়।”

    মেঘ হাসলো আর মনে মনে বলল,

    “রাখবো কি আপনি তো রেখেই দিয়েছেন।”

    তখন ধূসর বলল,,

    “তোমার ডান হাত শেষ এখন বাম হাত দাও!”

    বাম হাতের কথা মনে পরতেই মেঘের মনে পরলো বাম হাত তো লাল হয়ে আছে। তখন বাম হাতেই মেহেদী পরিয়ে দিয়েছিল। সব ভেবে মেঘ বলল,

    “আর লাগবে না। আমি একহাতে তো দিলেনই। অনেক রাত হয়েছে।’

    “তা বললে কি করে হয় আমি দুই হাতেই দেব। হাত নামাও বলছি।

    মেঘের ইতস্তত করে বাম হাত সামনে আনলো। টেবিলের ওপর নামালো ওর হাত লাল দেখে ধূসর ব্যস্ত হয়ে বলল,,

    “তোমার হাত এত লাল কেন? কি হয়েছে?”

    মেঘ কি বলবে ভেবে পেল না। শুধু বলল,,

    “তেমন কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।”

    “কি হয়েছিল?”

    “বললাম না তেমন কিছুই না!”

    “আচ্ছা ঠিক আছে হাত কি ব্যথা করছে?”

    “না!”

    “হাত লাল হয়ে গেছে তাও বলছে ব্যথা হচ্ছে না। নিষ্ঠুর মেয়ে একটা নিজের খেয়াল একটুও রাখবে না। আচ্ছা নিচে গিয়ে শুয়ে পড় মেহেদী আর না দিলাম।”

    “এই হাতে দেবেন না?”

    “তোমার ব্যথা লাগবে তাই দেব না।”

    ধূসরের কথা শুনে মেঘ মনে মনে হাসে। লোকটা ওর হাত ধরবে না শুধু মেহেদী লাগিয়ে দেবে তবুও বলছে তোমার ব্যাথা লাগবে। এর ভালোবাসার ওপর আর কতোদিকে মুগ্ধ হবে ও। মেঘ বলল,,

    “একটুও ব্যথা নেই বিশ্বাস করুন। তাছাড়া আপনি তো আমার হাত স্পর্শ করবেন না আর ব্যাথাও লাগবে। মেহেদী যেহেতু নিলাম তাহলে দুই হাতেই নিই।”

    “তুমি সিওর?”

    “শতভাগ!”

    ধূসর মেঘের বাম হাতেও মেহেদী দিয়ে দিল । দেওয়া শেষ করে ধূসর ভাবতে লাগল,,

    “কয়েক ঘন্টা আগেও নিজেকে কন্ট্রোল করবো বলে বুঝালাম। না পারলেও করতে হবে। কিন্তু এই সময়টায় মেঘকে দেখেই সব হাওয়া শেষ। উল্টো আমিই বললাম মেহেদী লাগিয়ে দেব। এটা ঠিক হচ্ছে না। আমি বিয়ের আগে একটা মেয়েকে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছি। যদিও হাত ধরি নি তবুও এটা ঠিক হচ্ছে না। আমার এখন নিচে যাওয়া উচিৎ। ইয়া আল্লাহ মাফ করে দিয়েন।কি করছি নিজেও বুঝতে পারছি না। কন্ট্রোল ও করতে পারছি না।

    ধূসর মনে মনে কয়েকটা দোয়া পরলো। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে মেঘকে বলল,,

    “তাহলে এখন নিচে যাই ঘুম পাচ্ছে। তুমিও চলো নিচে এতরাতে এখানে থাকতে হবে না!”

    “আপনি যান আমি আরেকটুপর নামছি। হুট করে দুজনকে একসাথে রাতে কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।”

    “তা ঠিক বলেছো।” আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ। তুসবিহুন আলা খইর!

    “শুকরিয়া তুসবিহুন আলা খইর।”

    মেঘ নিচে চলে গেল। মেঘ তার মেহেদী রাঙা হাত দেখে বলল ,,

    “ধূসর আপনি না জেনেও অনেক কিছু করে ফেলেন। আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটার খেয়াল রাখেন। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটার সব শখ পূরণ করেন। আজ আমার খুব ইচ্ছে ছিল আপনার হাতে মেহেদী নেওয়া। এই মাঝরাতে এসে পুরন হবে ভাবতে পারি নি। এই যে আপনি নিজের কাজে নিজেই মনে করেন অনুচিত হচ্ছে। আবার মনে করেন এটা বৈধ। আসলেও তো আমার আর আপনার এই সবকিছু বৈধ। আলহামদুলিল্লাহ এটাই তো হালাল সম্পর্কের জোর। আপনি সবকিছু ভুলে গেলেও তো আমাদের এই হালাল সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে নি। আপনি আমার সাথে যাই করুন না কেন সব বৈধ। এই যে আমরা দুজন এখানে সময় কাটালাম এগুলোও বৈধ। কারন যদি বৈধ না হতো তবে এই মেঘ এখানে কখনোই থাকতো না। তবে জানেন কি ধূসর এই মেয়েটা মাঝে মাঝে আপনাকে ভিশন মিস করে।

    আমি খুবই সঙ্গোপনে,
    আপনার অপেক্ষায় রত!
    ভাবি এইতো বোধহয়,
    অপেক্ষার শেষ কিন্তু
    অপেক্ষাটা দীর্ঘ কত?

    আমি হেঁটে যাই আপনার শহরের কাছে,
    যদি অপেক্ষার স্বল্পতা ঘনিয়ে আসে!
    হয়তো ভাবছেন আমি ভালো আছি,
    কিন্তু আমি তো শুধু আপনার অপেক্ষায় আছি।
    যত সময় যায় নিঃসঙ্গতা হাহাকার করে বুকে,
    আপনি কি ভাবছেন আমি আপনাকে ছাড়া আছি সুখে!

    নিষ্ঠুর মেয়ে বলেন,
    অথচ নিষ্ঠুরতার প্রমান
    আপনিই দিলেন!
    এখন যদি আমি বলি
    নিষ্ঠুর পুরুষ তো আপনি!
    তবে কি আমার মতো,
    মুচকি হাসতে পারবেন আপনি!
    কি জানি হয়তো হ্যা,
    নয়তো না তবুও
    আমার সবকিছুতেই আপনি।
    সন্ধিতেও আপনি,
    আবার বিচ্ছেদেও আপনি,
    আমার ভালোবাসাও আপনি!
    এই আমি ধূসর রাঙা মেঘ
    আপনাতেই সমাপ্তি!

    ~ চলবে?