ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৬
জ্বর ও মাথা ব্যাথা নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে পারছে না পাপড়ি। থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপছে আফিয়া বেগম।
– ১০৪° জ্বর। বার বার না করছি এমন অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজিস না। আমার কথা তো তোর কানেই যাবে না। এখন বিছানায় পড়ে থাক। আজ আর অফিসে যেতে হবে না। একটুপর পুষ্প তোকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসবে।
– না মা। তা কি করে হয়। কালকেই জয়েন করেছি চাকরিতে আর আজকে না গেলে আমার চাকরিটা যে চলে যাবে। আমার কষ্ট হলেও আমাকে যেতে হবে।
– বিছানা থেকে তো উঠতে পারছিস না, আবার অফিসে যাবি কি করে এতো জ্বর নিয়ে।
– উঠতে পারবো। তুমি আমায় জ্বরের ঔষধগুলো দাও,খেয়ে দেখি কমে কিনা জ্বর।
– শাকচুন্নি, পাপড়ি শাকচুন্নি রেডি হইছিস?
ঘরের দরজা থেকে ডাক দিচ্ছে নীল।
ঘর থেকে পুষ্প বলে ওঠে
– ও আর আজকে যাবে না অফিসে। কালকে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর ওঠিয়েছে। বিছানা থেকে এখন ওঠতে পারছে না। তুই চলে যা।
পাপড়ি কথা শুনে মনে একটু কষ্ট পেলো নীল, মুখটা একটু কালো করে পুষ্পর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে
– খুব জ্বর ওঠেছে, কোথায় ও?
পুষ্প তাদের রুমের দিকে ইশারা দিয়ে দেখায়
-ওকে, আমি একটু দেখে আসি।
কথাটা বলেই নীল পেছনে ঘুরতেই দেখে পাপড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসছে। ওকে দেখে নীল বলে ওঠলো
– সেকি, তোর নাকি খুব জ্বর ওঠেছে। তুই রেডি হয়ে কোথায় যাস?
– অফিসে।
পাপড়ি কথা শুনে নীল পাপড়ির মাথায় হাত দিয়ে জ্বরটা দেখে বলে
– জ্বর তো কমে নি, কিভাবে যাবি অফিসে?
– ঔষধ খেয়েছি, একটুপরই জ্বর কমে যাবে।
আফিয়া বেগম বললো
-দেখ না বাবা, কতো করে বলছি যে আজ অফিসে না যেতে ও আমার কোন কথায় শুনছে না।
– না মা, তা হয় না। পরে আমার চাকরিটা আর থাকবে না। আমাকে যেতেই হবে। আর টেনসন করো না আমি ঠিক আছি। নীল চল।
– সত্যিই যেতে পারবি তো, পরে আবার বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে কে দেখবে তোকে অফিসে?
– হবো না। আমি সাথে ঔষধ নিয়ে নিছি। খারাপ লাগলে ঔষধ খেয়ে নিবো। এখন তুই চল, লেট হয়ে যাচ্ছে যে।
-হুম চল।
সকাল থেকে অনেক কাজ করে এখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না পাপড়ি। মাথা ব্যাথায় মাথাটা এতোটা ভার হয়েছে যে সে মাথা উপরে তোলে কাজ করতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। জ্বরটাও মনে হয় বেড়েছে। ব্যাগ থেকে ঔষধ বের খেয়ে নিল। পাপড়িকে ঔষধ খেতে দেখে পাশের ডেস্কে বসে থাকা তার কলিগ বলে ওঠে
– কি হয়েছে পুষ্প? তুমি কি অসুস্থ?
– হ্যা কিছুটা। আসলে খুব মাথা ব্যাথা করছে, এখানে বসে থাকতে পারছি না।
– বেশি শরীর খারাপ হলে, বসকে বলে বাসায় চলে যাও।
– কিন্তু আজ আমার দ্বিতীয় দিন অফিসে, বস কি আমাকে এইভাবে ছুটি দিবে?
– তা তো জানি না। তবে একবার বলে দেখতে পারো।
-হুম।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আর থাকতে পারছে না পাপড়ি। মাথা ব্যাথাটা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে তার।তাই ওঠে বসের ক্যাবিনে দিকে যায়।
– মে আই কামিন, স্যার?
ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে নজর সরিয়ে দরজায় পাপড়ি দেখতে পেয়ে রাইয়ান হাসি মুখে বলে ওঠে
– কামিন।
আজ সকাল থেকে কাজে ব্যস্ত থাকায় পাপড়িকে একবারো দেখতে পায় নি। পাপড়িকে দেখলেই রাইয়ানের মনটা ভালো হয়ে যায়।
-কিছু বলবে পুষ্প?
পাপড়ি তার অসুস্থের কথা কিভাবে বলবে তা বুজতে পারছে না। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
রাইয়ান খেয়াল করলো কালকে পুষ্পকে যতটা প্রাণবন্ত লেগেছিলো, আজ আর তেমনটা নেই। তার মুখটা আজ ফ্যাকাশে লাগছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অসুস্থ।
রাইয়ান আবার বলে ওঠে
– কি হয়েছে পুষ্প? তুমি কি অসুস্থ?
অসুস্থের কথাটা শুনে পাপড়ি মুখ তুলে বললো
– আসলে স্যার, সকাল থেকে অনেক মাথা ব্যাথা করছে। কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছি না। আজ আমার দ্বিতীয় দিন অফিসে। এভাবে অসুস্থ হয়ে পরায় কাজগুলো ঠিকমতো করতে না পারার জন্য আমি দুঃখিত। আপনি যদি আমাকে একটু সময়ের জন্য ছুটি দিতেন তাহলে আমি ডাক্তার দেখিয়ে আবার চলে আসবো অফিসে।
কথাগুলো একদমে বলে হাফ ছাড়ে পাপড়ি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রাইয়ান মুখটাকে বিষন্ন করে বলে
– তুমি অসুস্থ তা আগে বলেই পারতে, শুধু শুধু এতোক্ষণ কষ্ট করে কাজ করছিলে কেনো? যাও, তোমাকে ছুটি দিলাম। একবারে সুস্থ হয়ে অফিসে আসবে।
– না স্যার, মানে এতোদিন লাগবে না। শুধু একটু সময়ের জন্য ছুটি দিলেই হবে।
রাইয়ান কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে
-তোমাকে যা বলছি তা করো। বাসায় চলে যাও। তারপর ডাক্তার দেখাও।
– ওকে।
বলেই দু পা এগুতেই পাপড়ি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। পাপড়িকে পড়ে যেতে দেখে রাইয়ানও চমকে উঠে। সে কি করবে বুজতে পারছে না। শরীরে হাত দিতেই দেখে পাপড়ির শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। বাহিরে আশেপাশে কোনো স্টাফকেও দেখতে পারছে না। গ্লাস থেকে পানি নিয়ে পানির ছিটা দেয় পাপড়ি মুখে। কিন্তু পাপড়ির জ্ঞান ফিরছে না। কিছু না বুজতে পেরে তড়িঘড়ি করে রাইয়ান পাপড়িকে কোলে তুলে নিয়ে বাহিরের দিকে রওনা হয়। পাপড়িকে রাইয়ানের কোলে দেখে বাহিরে সবাই হা করে আছে। পাপড়িকে কোলে নেওয়াটা অনেক মেয়েরই সহ্য হচ্ছে না।রাইয়ান অফিসের অনেক মেয়ের ক্রাশ। অনেক মেয়েই তাকে পছন্দ করে। পাপড়িকে এভাবে দেখে মেয়েগুলো একদম জ্বলে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছে
– দুদিন হলো অফিসে এসেছে। আর এতেই বসের ওপর জাদু করে বসেছে মেয়েটা।
আবার কেউ কেউ বলছে
– এতোদিন ধরে কাজ করছি অফিসে, আমি কেনো অজ্ঞান হয়নি বসে সামনে।
অফিসের অন্যরাও এ নিয়ে আরো হাসি তামশা করছে।
এদিকে পাপড়িকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে হসপিটালে যায় রাইয়ান।
চলবে…