Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 41



হযরত ইবরাহিম (আঃ) এবং অতিথিপরায়ণতা | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-১২

0

হযরত ইবরাহিম (আঃ) এবং অতিথিপরায়ণতা

একবার হযরত ইবরাহিম (আঃ) নিজের বাড়িতে বসে ছিলেন। তিনি সর্বদা অতিথিদের সেবা করতে পছন্দ করতেন। একদিন একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক তাঁর বাড়িতে এলেন। হযরত ইবরাহিম (আঃ) তাকে খাবার খেতে দিলেন।

খাবার খাওয়ার আগে তিনি দেখলেন, বৃদ্ধ লোকটি আল্লাহর নাম নেয় না। ইবরাহিম (আঃ) তাকে বললেন, “তুমি আল্লাহর নাম কেন নিচ্ছ না?”

লোকটি বলল, “আমি আগুন পূজারি, আমি আল্লাহকে মানি না।”

এ কথা শুনে হযরত ইবরাহিম (আঃ) রাগ করে তাকে চলে যেতে বললেন। তখন আল্লাহ ইবরাহিম (আঃ)-কে ওহি পাঠালেন:
“তুমি তাকে এক মুহূর্তের জন্য সহ্য করতে পারলে না, অথচ আমি তাকে সত্তর বছর রিজিক দিচ্ছি।”

এ কথা শুনে হযরত ইবরাহিম (আঃ) লজ্জিত হলেন এবং দ্রুত গিয়ে সেই বৃদ্ধকে ফিরিয়ে আনলেন।

শিক্ষা:
সহিষ্ণুতা এবং দয়া হলো মুমিনের প্রধান গুণ।

আল্লাহ সব মানুষকে ভালোবাসেন, তাদের বিশ্বাস যাই হোক না কেন।

হযরত উমরের (রাঃ) বিচারপ্রেম | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-১১

0

হযরত উমরের (রাঃ) বিচারপ্রেম

একদিন হযরত উমর (রাঃ) রাস্তায় হাঁটছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন, এক বেদুইন লোক একটি ছেলেকে মারছে। উমর (রাঃ) তার কাছে গিয়ে কারণ জানতে চাইলেন।

লোকটি বলল, “হে আমিরুল মুমিনীন! এই ছেলে আমার চাকর। সে আমার কথা শুনছে না, তাই আমি তাকে শাস্তি দিচ্ছি।”

উমর (রাঃ) বললেন, “তোমার চাকর হলেও, সে মানুষ। আল্লাহ তোমাকে তাকে দমন করার অধিকার দেননি। মনে রেখো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তোমার এই কাজের জন্য তোমার বিচার করবেন।”

লোকটি লজ্জিত হয়ে ছেলেটির কাছে ক্ষমা চাইল।

শিক্ষা: ইসলাম মানুষকে দাস-চাকরদের সঙ্গেও মানবিক আচরণ করার নির্দেশ দেয়। আল্লাহর কাছে প্রত্যেকের হিসাব দিতে হবে।

সাহাবির গরুর দুধ এবং সততা | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-১০

0

সাহাবির গরুর দুধ এবং সততা

একবার এক সাহাবি তাঁর খামারের গরুর দুধ বিক্রি করছিলেন। এক লোক এসে গরুর দুধ কিনতে চাইল। সাহাবি বললেন, “আমার গরু আজ বেশি দুধ দেয়নি। আপনি যা পাচ্ছেন, তা সত্যিই তার আসল পরিমাণ।”
লোকটি অবাক হয়ে বলল, “আপনি তো দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পানি মিশিয়ে দিতে পারতেন!”
সাহাবি উত্তর দিলেন, “আমার প্রভু আল্লাহ সব দেখছেন। আমি চাই না আমার ব্যবসায় কোনো ধরনের অসততা থাকুক।”

এ গল্প থেকে আমরা শিখতে পারি, সততা ও আল্লাহভীতি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ গুণ।

রাস্তার কাঁটা সরানোর সওয়াবের গল্প | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-০৯

0

রাস্তার কাঁটা সরানোর সওয়াবের গল্প

একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের একটি ছোট গল্প বললেন। তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি পথ চলছিল, সে দেখে রাস্তায় একটি কাঁটা পড়ে আছে। লোকটি ভাবল, ‘এটি অন্যদের কষ্ট দিতে পারে,’ তাই সে কাঁটাটি সরিয়ে রাখল।”

এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,
“এই ছোট কাজের জন্য আল্লাহ ওই ব্যক্তির গুনাহ মাফ করে দেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।”
(সহীহ মুসলিম: ১৯১৪)

শিক্ষণীয় বিষয়:
সামান্য ভালো কাজও আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে।

অন্যের উপকার করা ইসলামের মূল শিক্ষা।

রাস্তা পরিষ্কার রাখা ইবাদতের অংশ।

সৎ কাজ করার জন্য বড় সুযোগের অপেক্ষা করা উচিত নয়।

তৌফিকপ্রাপ্ত রাজা ও আল্লাহর রহমত | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-০৮

0

তৌফিকপ্রাপ্ত রাজা ও আল্লাহর রহমত

একবার একজন রাজা তার সৈন্যদের নিয়ে শিকারে বের হলেন। শিকার করতে গিয়ে তিনি গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েন এবং তার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। পানির তৃষ্ণায় ক্লান্ত হয়ে তিনি একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে পৌঁছান।

সেখানে তিনি এক বৃদ্ধ মহিলাকে পান, যিনি তাকে পানি ও রুটি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। রাজা মুগ্ধ হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“আপনি কী প্রার্থনা করেন?”

বৃদ্ধা উত্তর দিলেন,
“আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন আমার একমাত্র ছেলেকে সৎ কর্মে পরিচালিত করেন এবং সে একজন ভালো মানুষ হয়।”

রাজা বললেন,
“আপনি জানেন না আমি কে। আমি এই দেশের রাজা। আপনার জন্য আমি বিশেষ কিছু করতে পারি।”

বৃদ্ধা হেসে বললেন,
“আপনি কি জানেন, কে আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে? আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। তিনিই আপনাকে আমার দরজায় পাঠিয়েছেন। আপনি রাজা হলেও, আল্লাহর চেয়ে বড় কিছু নন।”

এই কথা শুনে রাজা অনুতপ্ত হলেন এবং বুঝতে পারলেন, আল্লাহর কৃপা ও দোয়া সবকিছুর ওপরে।

শিক্ষণীয় বিষয়:

আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখা ও তার কাছে দোয়া করা সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।

ক্ষমতাবান হলেও বিনম্র হওয়া জরুরি।

আল্লাহ মানুষকে বিভিন্নভাবে শিক্ষা দেন।

নবী ইবরাহিম (আ.) ও অতিথি আপ্যায়নের গল্প | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-০৭

0

নবী ইবরাহিম (আ.) ও অতিথি আপ্যায়নের গল্প

হযরত ইবরাহিম (আ.) ছিলেন খুবই উদার ও অতিথিপরায়ণ। একদিন একটি অপরিচিত লোক তার কাছে অতিথি হয়ে আসেন। ইবরাহিম (আ.) তাকে আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়ে খাবার খাওয়াতে বসান।

কিন্তু তিনি লক্ষ্য করলেন, অতিথি আল্লাহর নাম না নিয়ে খাবার খাচ্ছেন। তখন ইবরাহিম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনি কেন আল্লাহর নাম নেন না?”

অতিথি উত্তর দিলেন,
“আমি আগুন উপাসক। আমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস করি না।”

ইবরাহিম (আ.) এতে ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন।

তখন আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে ওহি পাঠিয়ে বললেন:
“আমি এই ব্যক্তিকে ৭০ বছর রিজিক দিয়েছি, যদিও সে আমাকে মানে না। অথচ তুমি এক মুহূর্তের জন্যও তাকে সহ্য করতে পারলে না?”

ইবরাহিম (আ.) তা শুনে অনুতপ্ত হলেন এবং দ্রুত ওই ব্যক্তিকে খুঁজে এনে আবার তাকে আপ্যায়ন করলেন।

শিক্ষণীয় বিষয়:
ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা আল্লাহর প্রিয় গুণ।

সবাইকে দয়া ও ভালোবাসার সঙ্গে আচরণ করতে হবে, তাদের বিশ্বাস যাই হোক।

আল্লাহর রহমত সীমাহীন এবং তিনি সবার প্রতি করুণাময়।

তিন ভাইয়ের ইবাদতের গল্প | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-০৬

0

তিন ভাইয়ের ইবাদতের গল্প

একদিন তিন ভাই তাদের ইবাদতের গুণ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তারা আল্লাহকে খুশি করার জন্য আলাদা পথ বেছে নিয়েছিলেন।

1. প্রথম ভাই:
তিনি বললেন, “আমি সারাজীবন রোজা রাখব। কোনো দিন রোজা ভাঙব না।”

2. দ্বিতীয় ভাই:
তিনি বললেন, “আমি সারারাত নামাজ পড়ব, কখনো ঘুমাব না।”

3. তৃতীয় ভাই:
তিনি বললেন, “আমি বিয়ে করব না। সারা জীবন আল্লাহর ইবাদতেই কাটাব।”

তাদের এই কথাগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) শুনলেন। তিনি বললেন:
“আমি আল্লাহর রাসূল এবং আমি সবার চেয়ে বেশি তাকওয়াবান। কিন্তু আমি রোজা রাখি এবং ভাঙি, রাতে ইবাদত করি এবং ঘুমাই, এবং আমি বিয়েও করেছি। যে আমার সুন্নত থেকে দূরে সরে যাবে, সে আমার অনুসারী নয়।”
(সহীহ বুখারি: ৫০৬৩)

শিক্ষণীয় বিষয়:
ইসলামে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত কষ্ট বা চরমপন্থা আল্লাহ পছন্দ করেন না।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করাই সঠিক পথ।

হযরত ওমর (রা.) ও এক দরিদ্র মায়ের গল্প

0

হযরত ওমর (রা.) ও এক দরিদ্র মায়ের গল্প

একবার খলিফা হযরত ওমর (রা.) রাতে মদিনার পথে পাহারা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি একটি ঘর থেকে শিশুদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। তিনি কাছে গিয়ে দেখলেন, একটি মা একটি হাঁড়িতে কিছু জিনিস ফোটাচ্ছেন আর শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় কাঁদছে।

ওমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন,
“আপনি হাঁড়িতে কী রান্না করছেন?”
মহিলা উত্তর দিলেন,
“হাঁড়িতে পানি ও কিছু পাথর ফুটাচ্ছি, যেন বাচ্চারা মনে করে খাবার তৈরি হচ্ছে এবং তারা ঘুমিয়ে পড়ে। আমরা দিনভর কিছু খাইনি।”

এই কথা শুনে হযরত ওমর (রা.) কেঁদে ফেললেন। তিনি দ্রুত নিজে গুদামঘরে গিয়ে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসলেন। নিজের কাঁধে বোঝা বহন করে সেই মহিলার কাছে পৌঁছে দিলেন।

মহিলা তাকে চিনতে পারেননি। তিনি দোয়া করলেন,
“আল্লাহ যেন ওমরকে ভাল রাখেন। তিনি আমাদের দেখভাল করেন না।”

হযরত ওমর (রা.) কোনো কিছু না বলে চলে আসলেন।

শিক্ষণীয় বিষয়:

নেতৃত্ব মানে হলো জনগণের দুঃখ-কষ্ট বোঝা ও তাদের সাহায্য করা।

আল্লাহর কাছে সর্বদা বিনম্র ও দয়াশীল হতে হবে।

অভাবীদের প্রতি সদয় আচরণ করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন।

একজন পাপী নারীর তাওবার গল্প | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-০৪

0

একজন পাপী নারীর তাওবার গল্প

একবার একজন পাপী নারী একটি কূপের পাশে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দেখেন একটি পিপাসার্ত কুকুর জিহ্বা বের করে পানি খুঁজছে। তার কোনো পানি খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না।

নারীটি কুপের পানি তুলতে একটি জুতো ব্যবহার করেন এবং কুকুরটিকে পানি পান করান।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“এই কাজের জন্য আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জান্নাত দান করেছেন।”
(সহীহ বুখারি: ৩৩২১)

শিক্ষণীয় বিষয়:
দয়া ও মমতা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।

ছোট একটি সৎ কাজও জান্নাতের কারণ হতে পারে।

মানুষ ও পশু-পাখির প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে।

তিন যুবকের গুহায় আটকা পড়ার গল্প | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-০৩

0
ছোট হাদিস, বড় হাদিস, ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামের আলো, ইসলাম ধর্ম, বাংলা হাদিস, ভালো হাদিস, মোটিভেশান হাদিস, Golpo poka, golpopoka, Hadis, hadis, Bangla Hadis,new hadis, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.), হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস, শিখনিয় হাদিস, জীবন পরিবর্তন করার হাদিস, আলোকিত হাদিস, ধর্ম,ইসলাম ধর্ম, কোরআন শরিফ, সহীহ বুখারি,তিরমিজি

নিচে একটি জনপ্রিয় ইসলামিক গল্প দেওয়া হলো:

তিন যুবকের গুহায় আটকা পড়ার গল্প:

একবার তিন যুবক সফরে বের হলেন। পথে একটি পাহাড়ি গুহায় রাত কাটানোর জন্য প্রবেশ করলেন। হঠাৎ পাহাড় থেকে একটি বিশাল পাথর পড়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারলেন, শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করেই তারা মুক্তি পেতে পারেন।

তারা প্রত্যেকে তাদের জীবনের এক বিশেষ নেক আমলের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন:

1. প্রথম যুবক:
তিনি তার বাবা-মাকে খুব সম্মান করতেন। একবার দুধ নিয়ে বাবা-মার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে সারা রাত দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে সেই নেক আমলের কথা উল্লেখ করে মুক্তি চাইলে পাথর কিছুটা সরে যায়।

2. দ্বিতীয় যুবক:
তিনি একবার গুনাহ করার সুযোগ পেয়েও আল্লাহর ভয়ে তা থেকে বিরত ছিলেন। তিনি সেই আমলের কথা উল্লেখ করলে পাথর আরও সরে যায়।

3. তৃতীয় যুবক:
তিনি একবার একজন মজদুরের পাওনা রেখে দেন এবং পরে তা মুনাফাসহ ফিরিয়ে দেন। তিনি সেই সততার কথা উল্লেখ করলে পুরো পাথর সরে যায়, এবং তারা মুক্তি পান।

(সহীহ বুখারি: ২২৭۲)

এই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয়, সত্যিকারের নেক আমল কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করলে তা বিপদে আমাদের মুক্তি এনে দিতে পারে।