Sunday, July 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 39



ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৫

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৫

ইরা অবাক হয়ে বলল,
“এহ ফারাবী!”

শাওন মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তা নয় তো আমি। বেশি কথা বলে প্রস্তুতি নে। পার্লারের মেয়েরা আসলো বলে।”

শাওন বলতে বলতেই হেনা খানের ডাক পড়লো পার্লারের মেয়েরা নাকি চলে এসেছে। মিহিকা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে সোফা থেকে উঠে পড়লো। রওনা হলো নিজের রুমের দিকে।

নিজের জামাটা নিয়ে ওয়াশরুমে গেল। নিজে নিজেই সাজবে সে। ভারী সাজ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বাজে। মিহিকা গোলাপি রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে।

ইরা, হিয়া, আরিশা, মাহি সবাই সাজতে বসে গিয়েছে। মিহিকা ওদের বলেই এসেছে যে সে একাই সাজবে। লেহেঙ্গাটা পড়ে একটু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বারান্দা দিয়ে নিচে তাকাতেই কপাল কুচকে এলো মিহিকার। আরহাম রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ের সাথে। মেয়েটার আপাদমস্তক কালো কাপড়ে মোড়ানো। মিহিকা তীক্ষ্ণচোখে তাকালো সেদিকে। না মেয়েটাকে তো চেনা চেনা লাগছে না। মিহিকার কপালের ভাঁজ আরো গভীর হলো। মেয়েটা আরহামের কাছে একটা বক্স দিয়ে চলে গেল। আরহামও বাসার ভিতরে ঢুকতে লাগলো।

মিহিকা সবটাই দেখলো বারান্দা থেকে। কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো আরহামের বিষয়টা। নানা ভাবনা চিন্তা নিয়ে রুমের ভিতরে আয়নার সামনে আসলো সে। কানে বড় বড় ঝুমকা আর কপালে টিকলি পড়ে পিঠ অব্দি হালকা কোঁকড়ানো চুলগুলো ছেড়ে দিলো। হালকা মেকআপ দিয়ে চোখে গাঢ় করে কাজল দিলো, হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিলো ঠোঁটে। সবটা শেষ করে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো। না ভালোই লাগছে।

মিহিকা একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বের হতে নিবে তখনি পিছন থেকে একটা শক্ত হাত মিহিকার মুখ চেপে ধরলো। মিহিকা কিছু বুঝে উঠার আগেই চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে এলো।

মাহি রেডি হয়ে মিহিকার রুমে এলে। বরযাত্রী চলে এসেছে। মাহি মিহিকার রুমের সামনে এসে দেখলো রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা।মাহি কপালে ভাঁজ ফেলে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। তখনি মাহির হাতের ফোনটা বেজে উঠলো। মিহিকার নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে,
“তুই যা আমার মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। ঘুমের ঔষুধ খেয়েছি ডাকিস না।”

মাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল। মাহি মুখ ছোট করে এগিয়ে গেল। মিহির মাহির সামনে এসে বলল,
“কি হয়েছে মুখটা এমন করে রেখেছিস কেন?”

মাহি মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তোকে কেন বলবো রে!”
মিহির কপাল কুচকে বলল,
“তুই আমার সাথে ঠিক করে কথা বলতে পারিস না।”

মাহি নাকমুখ কুচকে বলল,
“নারে পারিনা।”

মিহির কিছু বলার আগেই মাহি মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। মিহির মাহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

মাহি এদিকসেদিক তাকিয়ে দেখলো হিয়া ফোনে কথা বলছে। মাহি হিয়ার কাছে যেতেই হিয়া মাহিকে একা দেখে ভ্রুকুচকে বলল,
“কিরে তুই একা কেন? মিহি কোথায়?”

মাহি গাল ফুলিয়ে বলল,
“মিহিপুর মাথা ব্যথা ঔষুধ খেয়েছে। আসবে না এখন।”

হিয়া কপাল কুচকে বলল,
“কি বলিস এগুলো! তাই বলে আসবেই না।”

মাহি হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“থাক আমি একটু পরে গিয়ে ডেকে আনবোনি।”

“তাই না হয় করিস।”

মাহি পাশে তাকিয়ে দেখলো আরহাম দাঁড়িয়ে আছে শাওনের সাথে। দুইজন একই শার্ট আর প্যান্ট পড়েছে। আরহাম সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু রঙের জিন্স পড়েছে। বেশ সুদর্শন লাগছে আরহামকে। মাহি একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।

ফারাবী আর ইরাকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। কাজী বিয়ের সব ব্যবস্থা করছে। কিছুক্ষন পরেই কবুল বলার মাধ্যমেই ইরা আর ফারাবীর বিয়েটা হয়ে গেল।

অন্যদিকে মাহি তখন থেকে দরজা ধাক্কিয়েই যাচ্ছে কিন্তু মিহিকার কোনো পাত্তাই নেই। অজানা ভয়ে মাহি গুটিয়ে গেল। বিয়ে বাড়ির জমজমাট পরিবেশে খুঁজতে লাগলো হেনা খানকে। কিছু দূরেই আরিফুল খান মিহিকার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। মাহি তার কাছে যেতে নিবে তার আগেই আরিফুল খান কোথায় যেন চলে গেলেন। মাহি বুঝতে পারছেনা কি করবে সে।

——————-

মিহিকার জ্ঞান ফিরতেই সে পিটপিট করে চোখ খুললো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো সিলিং। মাথাটা তার ঝিনঝিন করছে। চোখ ঘুরে তাকাতেই দেখলো একটা রুমের বিছানায় শুয়ে আছে। মিহিকা লাফিয়ে উঠতে নিবে কিন্তু পারলো না। তার হাত পা দড়ি দিয়ে বাঁধা। মিহিকা চিল্লাতে যাবে তখন অনুভব করলো মুখেও কাপড় বাঁধা। মিহিকা কিছুই বুঝতে পারছে না। নিজেকে অসহায় লাগছে। কি হচ্ছে এসব তার সাথে? মিহিকা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছে না সে। তখনি হুট করে রুমের লাইট অফ হয়ে গেল।

আচমকা লাইট অফ হয়ে যাওয়ায় ভয়ে মিহিকার গলা শুকিয়ে এলো। মনে মনে যা দোয়া দুরুদ পারে সব পড়তে লাগলো। চোখমুখ খিচে বন্ধ করলো। তখনি একটা পুরুষালি হাত এসে স্পর্শ করলো মিহিকার হাতে। মিহিকা চমকে উঠলো। কেঁপে উঠলো সে। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। হাতের বাঁধন খুলে দিচ্ছে সেই লোকটা। মিহিকা কিছুই বুঝতে পারছে না। কি হচ্ছে তার সাথে এসব?

হাতের বাঁধন খোলা শেষে পুরুষালি হাতটা স্পর্শ করলো মিহিকার নরম গাল। মিহিকার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। শীতল হাতটা মিহিকার চোখের জল মুছিয়ে দিলো। কানের কাছে এসে পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এলো,
“শীতকালে মেঘনন্দিনীর চোখের পানি যে বেমানান। পানি যে বর্ষাকালে মানায়।”

মিহিকা সরে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু পায়ের দড়ি আর মুখের বাঁধনের জন্য কিছুই করতে পারছেনা।

লোকটা আবারো বলে উঠলো,
“এতো সহজে তো ছাড়া পাবেনা মেঘনন্দিনী। তুমি যে তোমার মেঘরাজের নিজস্ব আস্তানায় বন্দি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে।”

মিহিকা ঘামতে শুরু করেছে। লোকটা মিহিকার মুখের বাঁধন খুলে দিতেই মিহিকা ভাঙা গলায় বলল,
“কে আপনি?”

লোকটা হাসলো। যা অন্ধকারে মিহিকা দেখতে পেল না। মিহিকা আবারো বলে উঠলো,
“আমি বাসায় যাবো।”

লোকটা এবার হো হো করে হাসতে লাগলো। মিহিকার ভয় আরো বেড়ে গেল লোকটার হাসিতে। মিহিকার আর বুঝতে বাকি নেই এই লোকটাই সেই হলুদের রাতের লোকটা। লোকটার মতিগতি বুঝতে পারছেনা মিহিকা। বাসায় না জানি কি অবস্থা? মিহিকার মাথা ব্যথা বেড়েছে। মিহিকা দুই হাত মাথায় চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“কি চান আপনি?”

লোকটা মিহিকার কোমর ধরে ওকে নিজের বুকে এনে ফেলল। মিহিকার নাকে নাক ঠেকিয়ে বলল,
“যদি বলি তোমাকে চাই মেঘনন্দিনী।”

মিহিকা হাত দিয়ে লোকটার বুকে ধাক্কাতে লাগলো। কিন্তু এক চুল পরিমান ও নড়াতে পারলো না। লোকটা হেসে বলল,
“আমাকে সরানোর মতো তোমার শক্তি এখনো হয়নি মেঘনন্দিনী। কি খাও বলো তো তুমি? এক চুল পরিমান ও তো সরাতে পারলে না।”

মিহিকা ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতেই বলল,
“ছাড়ুন আমাকে, আমি বাসায় যাবো।”

“না তো এখন তো আর বাসায় যাওয়া যাবেনা। এবার যে শশুরবাড়ি যেতে হবে।”

মিহিকা এবার কান্না করে দিলো। লোকটা ধমকে বলল,
“কান্না করছো কেন আমি কি তোমাকে চিমটি দিয়েছি নাকি কামড় দিয়েছি।”

মিহিকার কিছুই ভালো লাগছে না। না জানি তার মা বাবার কি অবস্থা! মিহিকা কাঁপতে কাঁপতে বলল,
“আমার মা-বাবার কী হবে? দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন।”

লোকটা একটু থেমে মিহিকার মুখের দিকে তাকালো। গম্ভীর গলায় বলল,
“তোমার মা-বাবা ভালোই আছে। তাদের নিয়ে বেশি চিন্তা করো না। বরং নিজের অবস্থাটা ভাবো, মেঘনন্দিনী।”

মিহিকার এবার রাগ হলো। তেতে উঠে বলল,
“কে আপনি? এমন অন্ধকার করে চোরের মতো করছেন কেন? সাহস থাকলে সামনে আসেন।”

লোকটা আবারো হেসে বলল,
“বর দেখার জন্য এতটা অস্থির কেন তুমি মেঘনন্দিনী। এটা কিন্তু মটেও ভালো না।”

লোকটার রসিকতা একদম সহ্য হচ্ছে না মিহিকার। আরো জোরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“এগুলোর মানে কি? আপনার রসিকতা এখন আমার সহ্য হচ্ছে না। বাসায় যাবো আমি।”

লোকটা হেসে বলল,
“এখন এগুলো সহ্য করতে শিখো। কারণ এখন থেকে সবসময় আমার সাথেই থাকতে হবে।”

মিহিকা দ্বিগুন কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল,
“থাকবো না আমি।”

লোকটা হুট করেই মিহিকা গাল চেপে ধরলো। শক্ত করে ধরায় মিহিকা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। লোকটা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ভালোই ভালোই বলছি মেনে নে। আমার খারাপটা দেখাতে বাধ্য করিস না। সইতে পারবি না বলে দিলাম।”

ব্যথায় চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো মিহিকার। লোকটা মিহিকার গাল ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“যা বলছি তাই কর। তাছাড়া খবর করে দিবো বলে দিলাম।”

বলেই হনহনিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল লোকটা। সাথে সাথে রুমে লাইট জ্বলে উঠলো।

মিহিকা মুখে দুইহাত রেখে কান্না করতে লাগলো।

————————

ইরার বিদায় হতেই মাহি আরিফুল খানের কাছে গিয়ে বলল,
“চাচ্চু মিহিপু দরজা খুলছে না।”

আরিফুল সাহেব চিন্তিত মুখে মেয়ে রুমের সামনে গেলেন। মিহিকাকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু সারা না পেয়ে তার চিন্তা আরো বাড়তে লাগলো। মুহুর্তেই সবাই এসে দাঁড়ালো মিহিকার ঘরের সামনে। আরিফুল সাহেব পিছনে ঘুরে শাওনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তাড়াতাড়ি দরজা খোলার ব্যবস্থা করো শাওন।”

শাওন আর হামিম মিলে দরজা খোলার জন্য দরজায় ধাক্কাতে লাগলো। তিন চারবার বারি দিতেই দরজা খুলে গেল। দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো ওরা। রুমের কোথাও মিহিকাকে দেখতে না পেয়ে হেনা খান অস্থির হয়ে পরলো।

আরিফুল সাহেব ঠাস করে সোফায় বসে পরলো। শাওন চিন্তিত মুখে চারিপাশ তাকালো। কি করবে বুঝতে পারছেনা সে? মাহি যেন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। মিহিকা কোথায় হারিয়ে গেল। অজানা আতঙ্কে বুক কাঁপছে সবার। না জানি কোন অবস্থায় আছে মেয়েটা।

————————

মিহিকা কান্না করছিলো তখনি রুমের লাইট আবারো বন্ধ হয়ে গেল। মিহিকা হাঁটুতে মুখ গুজে আরো জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পরেই আবারো লাইট জ্বলে উঠলো।

#চলবে

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৪

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৪

মিহিকা নিজের মতো চলে গেল। এদিকে তালগোল পাঁকিয়ে গেল আরহামের মাথায়। আরহামকে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শাওন ভ্রুকুচকে এগিয়ে এসে বলল,
“কিছু কি হয়েছে আরহাম!”

আরহাম শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আরে ভাই বইলো না তোমার বোন দেখ আমার কি অবস্থা করেছে?”

পাঞ্জাবীর দিকে ইশারা করে বলল আরহাম। শাওন সেদিকে তাকিয়ে বলল,
“আল্লাহ কি অবস্থা? এখন কি করবে!”

আরহাম ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“চেন্স করতে হবে।”

“তাই না হয় করো। আর কি করার।”

আরহাম নিচে চলে গেল।

কিছুসময় পর খাওয়া দাওয়া শেষে বড়রা চলে গেল। আরহামও ড্রেস চেন্স করে এসেছে। একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়ে এসেছে সে। ইরাকে একপাশে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে। প্রথমে হিয়া নাচলো। এবার মাহি আর মিহিকা নাচবে। মাহি চোখ ঘুরিয়ে আরহামকে খুঁজতে লাগলো। আরহামকে খুঁজে পেতে বেশি একটা বেগ পেতে হলোনা মাহির। আরহাম একটু দূরে একটা চেয়ারে বসে ফোন টিপছিলো। মাহি মুচকি হাসি দিয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল।

মিহিকা আর মাহি গানের তালে তালে নাচতে লাগলো। ওদের নাচ শেষে সবাই হাততালি দিতে লাগলো। দুইজনই স্টেজ থেকে নেমে এলো। মাহি আরহামের দিকে তাকিয়ে হতাশ হলো। কারণ আরহাম তাদের দিকে তাকায়নি।

মিহিকা হাসি মুখেই হিয়ার পাশে এসে বসলো। মাহি মুখটা ঝুলিয়েই রাখলো। হামিম উঠে এসে বলল,
“এবার আরহাম গান গাইবে।”

আরহাম ভ্রুগুটিয়ে ফোন থেকে চোখ তুলে তাকালো হামিমের দিকে। হামিম বলে উঠলো,
“কোনো না শুনবোনা। তাড়াতাড়ি আয়।”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে নিজ মনেই বলল,
“বন মুরগি থুক্কু হালায় তো ব্যাটা মানুষ মোরগা কককক করতে যাবে স্টেজে।”

মিহিকা আস্তে বললেও কথাগুলো কানে গেল আরহামের। আরহাম বাঁকা হেসে মিহিকার কানের কাছে গিয়ে বলল,
“কককক করি নাকি তা না হয় নিজ কানেই শুনে নিয়ো, মিস কচুগাছের পেত্নি।”

মিহিকা ঝট করে ফিরে তাকালো। আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনার তো মুখেই ফটরফটর। কামের নামে দায় নাই।”

মিহিকার কথায় আবারো আরহাম বাঁকা হাসলো। মিহিরকে হাক ডাক দিয়ে বলল,
“মিহির আমার গিটারটা এনে দেও তো।”

মিহির গিয়ে গিটার নিয়ে এলো। আরহাম একটা চেয়ার টেনে স্টেজ নিয়ে গিটার হাতে নিয়ে বসলো তাতে। গলা পরিষ্কার করে গাইতে লাগলো,
♪♪বাগিচায় বুলবুলি তুই
ফুল শাখাতে, দিসনে আজই দোল।
আজো তার
ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি,
তন্দ্রাতে বিলোল।

আজো হায়
রিক্ত শাখায়
উত্তরী বায়
ঝুরছে নিশিদিন।♪♪

ছাদের নিরব পরিবেশে আরহামের মুগ্ধ করা গানের সুর যেন আরো মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। মিহিকা তাকিয়ে আছে আরহামের দিকে। সে কল্পনাও করেনি ছেলেটা এতো ভালো গাইতে পারবে। মুহূর্তেই চোখ সরিয়ে নিলো সে। মনে মনে বলল,
“ভালো গান গাইছে তো কি হয়েছে ড্রেনে গিয়ে মরুক গে তার কি?”

বলেই মুখ ভেংচি কাটলো।

অন্যদিকে মাহি একদৃষ্টিতে হা হয়ে তাকিয়ে আছে আরহামের দিকে। আরহাম চোখ বন্ধ করে গান গাইছিলো। গান শেষ হতেই চোখ খুলে তাকাতেই সবাই হাত তালি দিলেও মিহিকা বুকে হাত গুজে অন্যদিকে মুখ ঘুরে বসে আছে। আরহাম কপালকুচকে এক পলক ওরদিকে তাকিয়ে আবারো সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে এলো। মিহিকা আর মিহিরের মাঝের ফাঁকা চেয়ারটায় বসে বলল,
“কককক লাগলো নাকি মিস কচুগাছের পেত্নি।”

মিহিকা চোখ ছোট ছোট করে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তা নয় তো কি?”

আরহাম চোখ বড় বড় করে তাকালো মিহিকার দিকে। মিহিকা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে উঠে গেল মেহেদী দিতে। মিহিকা যেতেই মাহি খুশিতে গদোগদো হয়ে আরহামের সামনে এসে বলল,
“আপনার গানের গলা অনেক সুন্দর।”

আরহাম ছোট্ট করে বলল,
“ধন্যবাদ।”

মাহি কিছু বলার আগেই আরহাম ফোন হাতে নিয়ে নিচে চলে গেল। মাহি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলো আরহামের যাওয়ার দিকে।

মিহিকা নিজে নিজেই মেহেদী দিতে লাগলো। পাশেই ইরাকে একটা মেহেদী আর্টিস্ট মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। একহাতে মেহেদী দিয়ে উঠে পড়লো সে। রাত অনেক হয়েছে। সবাই এতক্ষণে নেমে গিয়েছে। মাহি, আরিশা, হিয়া, রোদেলা অনেক আগেই মেহেদী দিয়ে নিচে নেমেছে। মিহিকা মাহি আর আরিশাকে দিয়ে নিজে দিতে গিয়ে দেড়ি হয়ে গেছে। ইরার তো অনেক আগেই মেহেদী দেওয়া শেষ। মিহিকা উঠে দাঁড়ালো। নিচে যেতে নিবে তখনি একটা ঠান্ডা হাত মিহিকার কোমর পেঁচিয়ে অন্ধকারে নিয়ে এলো। মিহিকা চিল্লাতে যাবে তখনি একটা পুরুষালি হাত তার মুখ চেপে ধরলো। মিহিকা ভয়ে গুটিয়ে গেলেও হাল ছাড়লো না। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলো। নিজেকে যত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ততো যেন জড়িয়ে যাচ্ছে। গা বেয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো। অজানা আতঙ্কে হাত পা কাঁপতে লাগলো। আলোর বিপরীতে হওয়ায় ছেলেটা কে বুঝতেও পারছেনা মিহিকা।

হুট করেই ছেলেটা মিহিকার কপালে একটা গাঢ় চুমু খেল। মিহিকা ছোটার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পরলো তার। সমস্ত শক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে আসছে তার। হাত পা অবশ হয়ে আসছে।

হঠাৎ করেই মিহিকা নিজের ঘাড়ে কিছু একটা ফুটে যাওয়ার মতো অনুভব করলো। মিহিকা ছটফট করতে লাগলো। ধীরে ধীরে চোখ দুটো বুজে আসতে লাগলো। মিহিকা আর পেরে উঠতে পারলো না। গা ছেড়ে দিলো সামনের মানুষটার উপর।

সামনে থাকা মানুষটা হাসলো। নরম গলায় বলে উঠলো,
“মেঘনন্দিনী আর কিছুদিন তারপরেই তুমি আমার হবে।”

———————

মাহির ডাকে পিটপিট করে চোখ খুললো মিহিকা। কিছুক্ষণ পরেই লাফ দিয়ে উঠলো মিহিকা। নিজেকে বিছানায় দেখে বেশ অবাক হলো সে। মিহিকার সবকিছু এলোমেলো লাগছে। তার মনে পড়লো রাতের সেই ঘটনা। কে ছিল সেই অন্ধকারের মানুষটা? সে তো ছাদে ছিলো সেখান থেকে কীভাবে এখানে এলো? মাথার ভেতর যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

মাহি চিন্তিত মুখে বলল,
“তুমি ঠিক আছো তো মিহি আপু? কখন থেকে ডাকছি, কোনো সাড়া দিচ্ছো না!”

মিহিকা ঘাড় নাড়িয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,
“হ্যাঁ, ঠিক আছি। কিছু হয়নি।”

মাহি অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকালো মিহিকার দিকে। সন্দিহান কন্ঠে বলে উঠলো,
“তোমার মুখ দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না। কিছু হয়েছে কি?”

মিহিকা তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলল,
“না, তেমন কিছু নয়।”

মাহি কিছু বলতে যাবে, এমন সময় বাইরে থেকে শাওনের ডাক শোনা গেল।
“মাহি, এদিকে আয়। সবাই খুঁজছে তোকে।”

মাহি আর কিছু না বলে চলে গেল। মিহিকা দ্রুত ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুমের আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। না সব ঠিকঠাকই লাগছে। মনের মাঝে হাজারো প্রশ্ন জাগতে লাগলো। কে ছিলো রাতের লোকটা? হেনা খানের ডাকে ভাবনায় ছেদ ঘটলো মিহিকার।

মিহিকা চোখমুখে পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে রুমে এলো।গায়ের ওড়না ঠিক করে রুমের বাহিরে বের হলো। সবাই উঠে পড়েছে অনেক আগেই। নাস্তার টেবিলে বসেছে সবাই। মিহিকা চুপচাপ টেবিলের কাছে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো। সবাই যে যার মতো কথা বললেও মিহিকা কোনো কথা বলল না। কোনোমতে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লো মিহিকা। মাহিও উঠে পড়লো মিহিকার সাথে। মিহিকার পিছু পিছু মাহি আসতে আসতে বলল,
“মিহি আপু কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন লাগছে কেন?”

মিহিকা একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
“একবার বললাম না কিছু হয়নি আমার। তারপরেও কেন বিরক্ত করছিস মাহি।”

মিহিকার কথায় মাহি দমে গেল। এমন করে কখনোই মিহিকা কথা বলে না তার সাথে। কিছু যে হয়েছে তা বুঝতে বাকি নেই মাহির। তাও সে চুপ করে গেল।

সকালের খাবারের পর্ব শেষ করে মেয়েরা সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে পার্লারে যাওয়ার। ইরা মিহিকাকে জামা কাপড় গোছাতে না দেখে কপাল কুচকে বলল,
“কিরে মিহি বসে আছিস কেন, যাবি না!”

মিহিকা আলতো হেসে বলল,
“ইরাপু তোমরা যাও। আমি না হয় বাসায় সেজে নিবো।”

মিহিকার কথায় ইরাসহ সবাই বেশ অবাক হলো। ইরার বিয়েতে সবথেকে বেশি প্লানিং করেছে মিহিকা। তার কত শখ ইরার সাথে গিয়ে সাজবে। আর সে নাকি এখন যাবেনা।

ইরা সবকিছু বিছানার উপরে রেখে সোফায় মিহিকার পাশ ঘেষে বসে বলল,
“মিহি তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?”

মিহিকা নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই বলল,
“না ইরাপু আসলে মাথা ধরেছে একটু তাই যাবো না।”

ইরা মিহিকার কাধ আঁকড়ে ধরে বলল,
“ওও ঔষধ খা তাহলে।”

মিহিকা হাসিমুখেই বলল,
“না আমি ঠিক আছি।”

মাহি ওদের সামনে এসে বলে উঠলো,
“মিহিপু না গেলে আমিও যাবো না।”

ইরার মন খারাপ হলো খুব। কোথায় ভাবলো সবাই মিলে হৈচৈ করতে করতে যাবে তা না।

হুট করে তাদের কথার মাঝে রুমে শাওন আসলো। মিহিকা, মাহি, ইরা সবাই মন খারাপ করে বসে আছে। ওদের এভাবে দেখে বলল,
“কিরে তোদের আবার কি হলো সবগুলো মুখ এমন বাংলার পাঁচ করে রেখেছিস কেন?”

সবাই চোখ তুলে তাকালো শাওনের দিকে। শাওনকে ওদের দিকে কপালকুচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইরা বলে উঠলো,
“দেখনা মিহি নাকি যাবেনা ওর মাথা ব্যথা। মিহি যাবেনা বলে মাহিও যাবেনা।”

শাওন ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বলল,
“এই সামান্য কারণে সব এমন করে আছিস যেন আমার বউ মরছে।”

ইরা বিরক্তি নিয়ে বলল,
“ভাইয়া আমি সিরিয়াস কথা বলছি।”

শাওন কিছু একটা ভাবার ভঙ্গি ধরে বলল,
“পার্লারের কাজ যদি বাসায় হয় তাহলে কেমন হয়?”

আরিশা এগিয়ে এসে বলল,
“মানে!”

শাওন আরিশার দিকে তাকিয়ে বলল,
“পার্লারের মেয়েরা যদি এখানে আসে!”

হিয়া লাফিয়ে উঠে বলল,
“তাহলে তো সেই হবে শাওন ভাই।”

ইরা কপাল গুটিয়ে শাওনের সামনে এসে বলল,
“তা এগুলোর ব্যবস্থা কে করবে?”

শাওন দাঁত বের করে হেসে বলল,
“কেন তোর জামাই।”

#চলবে

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৩

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৩

মিহিকা মাহির রুমে গিয়ে দেখলো মাহি, হিয়া, আরিশা একদম রেডি হয়ে গেছে। মিহিকাকে দেখে আরিশা এগিয়ে এসে বলল,
“মিহি আপু তোমাকে তো সেই লাগছে।”

মিহিকা আলতো হেসে বলল,
“তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে শাড়ি পড়ে।”

আরিশা মুচকি হাসলো। মিহিকা, মাহির কাছে যেতেই মাহি নিজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মিহি আপু দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে?”

মিহিকা দাঁত বের করে হেসে বলল,
“একদম লেবু গাছের পেত্নীর মতো লাগছে।”

মাহি রাগে কটমট করতে লাগলো। মিহিকার সাথে সবাই হাসতে লাগলো। মাহি রাগে গজগজ করতে করতে রুম ছেড়ে চলে গেল।

মাহির কথায় আবারো সবাই হাসলো।

মাহি সোজা আরহামের কাছে গেল। আরহাম ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ফোন টিপছিলো। মাহি ওর সামনে গিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“দেখুন তো আমাকে কেমন লাগছে?”

আরহাম কপাল কুচকে তাকালো মাহির দিকে। চরম বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কেমন লাগবে আবার? যাও গিয়ে আরিশাকে বলো।”

আরহামের উত্তর পছন্দ হলোনা মাহির। নাকমুখ কুচকে বলল,
“আমি তো আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম।”

আরহাম ফোন কানে দিয়ে মাহির পাশ কাটিয়ে চলে গেল। মাহি ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে রইলো আরহামের যাওয়ার দিকে।

আস্তে আস্তে সবাই ছাদে আসতে লাগলো। ছাদের একপাশে স্টেজ করা হয়েছে। তাঁজা গাঁদা ফুলের মালা, গোলাপ ফুল, রজনীগন্ধা দিয়ে ছাদ সাজানো হয়েছে। চারদিকে ছোট ছোট রঙিন বাতি জ্বলছে, আর মৃদু হাওয়ায় ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। সবাই এসে বসতে শুরু করলো। মিহিকা, হিয়া, আরিশা একপাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। মাহি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো, মনটা খারাপ হয়ে গেছে তার। কত সুন্দর করে সাজলো সে আর এখন কেউ একটুখানি বললও না কেমন লাগছে?

মিহির এই ঠান্ডার মাঝেও আইসক্রিম খাচ্ছিলো। মাহি এবার ক্লাস টেনে। আর মিহির ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। মিহিরের দুইবছরের ছোট মাহি।মাহিকে গাল ফুলিয়ে থাকতে দেখে মিহির আইসক্রিম খেতে খেতে এগিয়ে গেল মাহির দিকে। মাহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“কিরে, কার উপর রাগ করে গাল ফুলিয়েছিস?”

মাহি মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“তোমার কোনো কাজ নেই? যাও, তোমার আইসক্রিম খাও!”

মিহির হেসে বলল,
“আরে, তাই তো! ঠান্ডার মধ্যে এই আইসক্রিমই সব রাগ ভুলিয়ে দেয়। তুইও খাস, সব ভুলে যাবি।”

মাহি দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“দে এখনি খামু।”

মিহির মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তুই কিনে খা। আমারটা দিমুনা।”

মাহি এবার আরও রেগে গিয়ে বলল,
“তুই কি ভাবছিস, আমি কিনে খাওয়ার টাকা পাই না?”

মিহির দাঁত বের করে হেসে বলল,
“তুই তো ফক্কিন্নি। তোর টাকা কুটি থেকে আসবি।”

মাহি রাগে দুপা দিয়ে মেঝেতে আঘাত করে হনহনিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। মিহির সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগলো।

ইরাকে এনে বসানো হলো স্টেজের সোফায়। হলুদ রঙের শাড়ি, কাঁচা ফুলের গহনায় বেশ ভালো লাগছে ইরাকে। শাওন ইরার কাছে নিজের ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তোর ফোন কোথায়? নে কথা বল ফারাবি অস্থির হয়ে গেল তোকে ফোনে না পেয়ে।”

ইরা খানিকটা লজ্জা পেল। ফারাবি ওর হবু বড়, শাওনের বন্ধু। তিনবছরের প্রেমের পরে অবশেষে কাল তাদের বিয়ে। দুইজন দুইজনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ইরা ফোন কানে ধরতেই ফারাবি খানিকটা রাগী কন্ঠেই বলল,
“ফোন কোথায় রাখো? কতবার কল করেছি তার খোঁজ খবর রাখো।”

ইরা নরম গলায় বলল,
“ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই বুঝতে পারিনি। সরি ”

ফারাবি জোরে জোরে শ্বাস টেনে বলল,
“ভিডিও কলে আসো।”

ইরা কিছু না বলে ভিডিও কল রিসিভ করলো। মুখের সামনে ধরতেই ফারাবির চেহারা ভেসে উঠলো। ইরা আলতো হেসে বলল,
“কি মহাশয় রাগ কমেছে? কেমন লাগছে আমাকে?”

ফারাবি হাসলো। মাথার পিছনের চুলগুলো চুলকে বলল,
“তোমাকে দেখে রেগে থাকা যে বড্ড কঠিন মায়াবতী।”

ইরা লজ্জামাখা হাসি দিলো। তখনি ইরার পাশ থেকে টুকু দিলো মিহিকা আর হিয়া। দুইজন সুর করে বলে উঠলো,
“মায়াবতীইইইই”

ইরা যেন আরো লজ্জা পেল। মিহিকা আর হিয়া হাসতে লাগলো। ফারাবি হেসে বলল,
“শালিকারা দেখি সেজেগুঁজে একদম তৈরি।”

মিহিকা হেসে হেসেই বলল,
“দুলাভাই দেখছি আপুর জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছেন না।”

ফারাবি হেসে বলল,
“তোমার জন্য তাহলে এমন কারো ব্যবস্থা করি। কি বলো তুমি?”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমার কাউকে লাগবে না গো দুলাভাই। আমারে সহ্য করার মতো এখনো কেউ জন্মায়নি।”

ফারাবি হাসলো। হেসেই বলল,
“কপালে যে আছে সে আছেই চিন্তা করো না গো শালিকা।”

মিহিকা হাসলো। হেসেই বলল,
“আচ্ছা দুলাভাই কথা বলেন আপুর সাথে আমি যাই।”

বলেই মিহিকা সরে এলো। চারপাশে মাহিকে খুঁজতে লাগলো। শাড়িটা উঁচু করে এপাশঅপাশ তাকিয়ে মাহিকে দেখতে না পেয়ে কপালে ভাঁজ পরলো। পাশেই মিহিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিহিকা এগিয়ে আসলো। এপাশে ওপাশে তাকিয়ে বলল,
“কিরে মাহি কোথায়?”

মিহির ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“আমি কি জানি!”

মিহিরের কথায় বেশ বিরক্ত হলো মিহিকা। মিহিকা নিজেই মাহিকে খুঁজতে গেল। মিহিকা সামনে এগোতেই দেখলো আঁধারের মাঝে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। মিহিকা কপাল কুচকে ফেলল। ওখানে আবার কে? সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কে, কে ওখানে?”

আরহাম ফিরে তাকালো। ক্ষীণ আলোতে মিহিকাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আরহাম গভীর কন্ঠে বলল,
“আমি, কেন কোনো সমস্যা?”

মিহিকা ফুস করে একটা শ্বাস টেনে বলল,
“ও বন মুরগি!”

আরহাম কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“এই মাইয়া কি মুরগি মুরগি বলো? আমারে তোমার কোন দিক দিয়ে মাইয়া মানুষ মনে হয়!”

মিহিকা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মানে?”

আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“মুরগি আবার কি?”

মিহিকা ফিক করে হেসে বলল,
“ওও তাই বলুন।”

আরহাম মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল। মিহিকা পিছনে ঘুরে হিয়ার কাছে গিয়ে বলল,
“হিয়াপু মাহি কোথায়?”

হিয়া মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বড় মামির কাছে গেছে নিচে।”

মিহিকা হিয়ার পাশে বসে বলল,
“ওও আমি তো এতক্ষন ওরে খুঁজে খুঁজে মরতেছিলাম। হিয়াপু নাচবে না?”

হিয়া মুচকি হেসে বলল,
“হুম পরে, আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বড়রা চলে যাক। তুই কি করবি জানি?”

মিহিকা সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,
“আমি আর মাহি মিলে নাচবো ভাবছি।”

“তাহলে তো ভালোই।”

একটু পরে সবাই একে একে ইরার গায়ে হলুদ দিতে লাগলো। মিহিকা ইরার গালে মাখিয়ে একটুখানি হলুদ নিয়ে গেল মাহিকে মাখাতে। মিহিকার শয়তানি হাসি দেখে মাহির আর বুঝতে বাকি নেই মিহিকা কিছু না কিছু করবেই করবে। মাহি শাড়ির অনেকটা অংশ উঁচুতে তুলে ভো দৌড় দিতে লাগলো। মিহিকাও ওর পিছু পিছু দৌঁড়াতে লাগলো। মাহি দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একজায়গায় গিয়ে হাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁপাতে লাগলো। মিহিকা তো পেয়েছে সুযোগ। এবার তো সে মাহিকে হলুদ ভুত বানিয়েই ছাড়বে। মিহিকা ছুটে মাহির মুখে মাখতে যাবে তখনি উষ্টা খেয়ে একটা দেয়ালের সাথে বারি খেল।

মিহিকা ঝটকা খেল। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করলো। তখনি মাহি চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“আপু তুমি এটা কি করলে?”

মিহিকা চোখ পিট পিট করে তাকাতেই দেখলো এ তো দেয়াল না। এটা তো কারো বলিষ্ঠ বুক। মিহিকা ঝট করে মাথা উঁচিয়ে তাকাতেই যেন বড় একটা ধাক্কা খেল। এতো বন মুরগি থুক্কু বন মোরগা। মিহিকা দ্রুত সরে এলো। আরহামের পাঞ্জাবীর বামপাশের বুকের দিকে একদম হলুদ লেগে গেছে। মিহিকা তাকালো সেদিকে। আরহাম চরম বিরক্তি নিয়ে পাঞ্জাবীর দিকে তাকিয়ে নাকমুখ কুচকালো। হিসহিসিয়ে বলল,
“এই মেয়ে চোখে দেখ না। আমার নতুন পাঞ্জাবীটার কি একটা অবস্থা করেছো?”

মিহিকা অবাক হওয়ার ভাব ধরে বলল,
“আমি আবার কি করলাম? আপনারই তো দোষ। আমি কি বলছিলাম এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে।”

আরহামের রাগ যেন তিরতির করে বেড়ে গেল। সব দোষ নিজে করে এখন বলছে সে কোনো দোষই করেনি। সব দোষ তার। আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ফালতু কথা বলবেনা একদম। তুমিই তো আমার গায়ে এসে পরলে।”

মিহিকা আঙুল তুলে বলল,
“কিহ আপনি আমাকে গায়ে পড়া মেয়ে বললেন?”

আরহাম অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। সে কখন মিহিকা গায়ে পড়া বলল। আরহাম চোখ বড় বড় করে বলল,
“আমি আবার কখন এই কথা বললাম!”

মিহিকা আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এহ ভাব করছে এমন যেন কচি খুকি। আপনি বলছেন। আপনি জানেন আমি কে? আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন করে কথা বলার?”

আরহামের এবার মাথা ঘুরছে। এই মাইয়া তো সব কথার দুই লাইন বেশি বুঝে। আরহামের মন চাচ্ছে পাশ থেকে একটা ইট তুলে মিহিকার মাথায় ফাটাতে। আরহাম কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিহিকা বলে উঠলো,
“আপনি আমার সাথে এত ঝগড়া করেন কেন বলুন তো?”

আরহামের চোখ আরো বড় বড় হয়ে গেল। সে কোথায় বেশি ঝগড়া করে। মিহিকাই তো ক্ষণে ক্ষণে ঝগড়া করে তার সাথে।

#চলবে

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০২

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০২

হালকা নাস্তা শেষে সবাই বসলো আড্ডা দিতে। মিহিকা ছাড়া প্রায় সবাই বসেছে। হেনা বেগম মিহিকাকে ডেকেছেন। মিহিকা সেখানেই গেছে। হেনা খান একটা হলুদ রঙের শাড়ি মিহিকার হাতে ধড়িয়ে দিয়ে বলল,
“কালকে এই শাড়িটা পড়িস। সবাই শাড়ি পড়বে তুই আবার বাদ যাবি কেন?”

মিহিকা শাড়িটা হাতে নিলো। চোখমুখ চকচক করে উঠলো মিহিকার নতুন শাড়ি দেখে। শাড়ি তার পছন্দের তালিকায় সবার উপরে। মন চাইলেই সে শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়ায়। মিহিকা হাসিমুখে শাড়িটা নিয়ে নিজের রুমে রাখতে গেল।

শাড়িটা রুমে রেখে বের হতে যাবে তখনি কপাল কুচকে এলো মিহিকার। বেডের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে আছে মিহিকার চাচাতো বোন মাহি। মেয়েটা মিটিমিটি করে হাসছে। মিহিকা চোখ ছোট ছোট করে মাহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিরে মাহি এমন করে হাসছিস কেন পাগলের মতো?”

মাহি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“আপু আমি ক্রাশ খাইছি।”

মিহিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। অবাক হয়ে বলল,
“মানে কি বলছিস তুই? কার উপর আবার ক্রাশ খাইলি।”

মাহি আবারো লজ্জা পাওয়ার ভাব করে বলল,
“হিয়া আপুর চাচাতো ভাই এসেছেনা। লম্বা করে, চাপ দাঁড়ি, শ্যামলা করে, গালে আবার একখানা টোলও পড়ে, চোখের মনি খয়েরি রঙের।”

মিহিকার চোখগুলো যেন আরো বড় বড় হয়ে গেল। চেচিয়ে বলল,
“আর মানুষ পাইলিনা তুই শেষমেষ ওই বন মুরগী।”

মিহিকার কথা বুঝতে না পেরে কপাল গুটিয়ে মাহি তাকালো মিহিকার দিকে। মিহিকা নিজ মনে কিযেন বিড়বিড় করে মাহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখ তুই যার উপর পারিস তার উপর ক্রাশ খা। তবুও ওই বন মুরগির উপর খাসনা। ব্যাটা বহুত খারাপ।”

মাহি ভ্রুকুচকে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“না উনি ভালো। তুমি বেশি বুঝো।”

মিহিকা মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,
“বুঝবি বুঝবি ব্যাটা যে কি বদ?”

তখনি হিয়া তাদের ডাকতে এলো। ওরা দুইজন ওর পিছু পিছু যেতে লাগলো। সবাই আড্ডার পার্ট শেষ করে রাতের খাবার খেতে বসেছে। হেনা খান আর তার বড় জা রেহানা খান সবাইকে খাবার পরিবেশন করছেন। আরহামের প্লেটে চিংড়ি মাছ দিতে নিবে তার আগেই আরহাম হাত উঠিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,
“আন্টি আমার এলার্জির সমস্যা আছে।”

হেনা খান হেসে বললেন,
“ওহ দুঃখিত আমি জানতাম না।”

আরহাম সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল,
“আন্টি সমস্যা নেই। আপনার জানার কথা না।”

মিহিকা খেতে খেতেই নিজ মনে ভাঙালো,
“আমার এলার্জির সমস্যা। ঢং দেখি বাঁচিনা। চিংড়ি খাছু কোনোদিন। খাবি কেমনে ঢং করতে করতেই সময় যায়। তখন যে বেগুনি খেলি তখন এলার্জি হয় না। যতসব।”

মিহিকার পাশেই হিয়া বসে ছিলো। বেচারি জোরে হাসতেও পারছেনা। কিছু বলতেও পারছেনা।খাওয়া দাওয়া শেষে মিহিকা, ইরা, হিয়া আর মাহি সবাই একরুমে শুয়ে পড়লো। কাল সকাল থেকেই হলুদের আয়োজন শুরু হবে। তাই সবাই সবার মতো রেস্ট নিতে লাগলো।

আরহাম একটু ছাদের দিকে গেল। মিহিকাদের বাসা শহরের দিকেই। ঠান্ডা তেমন না থাকলেও আছে কিছুটা। আরহাম ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকিং করছিলো আর সিগারেট খাচ্ছিলো। কুয়াশার সাথে সিগারেট ধোঁয়াগুলো ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। আরহাম তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে।

—————

সকালে হেনা খানের ডাকে মিহিকার ঘুম ভাঙলো। মিহিকা চোখ কচলে উঠে বসলো। পাশে কাউকে না দেখে বুঝলো সবাই উঠে পড়েছে। মিহিকা হেলেদুলে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো আরহামের সাথে। আরহামকে দেখেই কপাল চাপড়াতে ইচ্ছা করলো মিহিকার। নিজ মনেই বলল,
“সকাল সকাল বন মুরগি মুখ দেখতে হলো। না জানি দিন আমার কত খারাপ যায়।”

মিহিকাকে নিজ মনে বিড়বিড় করতে দেখে আরহাম কপাল কুচকে বলল,
“এই মেয়ে সাইড দেও এমন কাকতাড়ুয়ার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন সামনে?”

মিহিকা নাকমুখ কুচকে বলল,
“আপনিই তো আমার সামনে এসে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন।”

আরহাম চোখ ছোট ছোট করে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এতো ত্যাড়ামি করো কেন আজব তো!”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আপনি ত্যাড়া আপনার চৌদ্দ গুষ্টি ত্যাড়া।”

আরহাম আঙুল তুলে বলল,
“মেয়ে তুমি এতো..!”

আরহামের কথার মাঝেই মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে আরহামের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আরহাম নাকমুখ কুচকে তাকিয়ে রইলো মিহিকার যাওয়ার দিকে।

মিহিকা সকালের নাস্তার জন্য টেবিলে বসলো। হেনা খান মিহিকার জন্য প্লেটে খিচুড়ি আর ডিম ভাঁজা রেখেছেন। মিহিকা খেতে লাগলো। তার খাওয়ার মাঝেই আরহাম এসে টেবিলের অপর প্রান্তে বসলো। মিহিকা আড়চোখে একপলক দেখে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। রেহানা বেগম এগিয়ে এলেন। আরহামকে খাবার তুলে দিলেন রেহানা বেগম। হিয়াও এসে বসলো মিহিকার পাশের চেয়ার টেনে।

আরহাম খাচ্ছে আর ফোনে কি যেন করছে। মিহিকা বেশ বিরক্ত হলো। এতক্ষন সে যদি নাস্তা করতে করতে ফোন টিপতো তাহলে তার পা উষ্টা দিয়ে সৌদি পাঠায় দিতো।

খাওয়া শেষ হতেই সবাই ছাদে গেল। ছাদে হলুদের স্টেজ সাজানো হচ্ছে। হামিম, মিহির, ইরার বড় ভাই শাওন সবটা দেখছে। মিহিকা এপাশঅপাশ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। তখনি মিহিকার সামনে এসে দাঁড়ালো মাহি। মিহিকা কপাল কুচকে বলল,
“কি সমস্যা তুই এমন অবতারের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

মাহি মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার ক্রাশের সাথে তুমি কি কথা বলছিলে তখন?”

মিহিকা কুচকে যাওয়া কপাল আরো কুচকে বলল,
“আমি কোথায় ওই ফালতু লোকের সাথে কথা বললাম?”

“ওই যে নাস্তা করার আগে।”

মিহিকা বিরক্ত হলো। চরম বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কইতেছিলাম আমি মরমু তো মরার জন্য কোন জায়গা ভালো হবে।”

বলেই হনহনিয়ে চলে গেল মিহিকা। মাহি বোকা হয়ে তাকিয়ে রইলো মিহিকার যাওয়ার দিকে।

আরহাম ফোনে কল আসতেই সে কিছুটা দূরে গিয়ে কল রিসিভ করলো। কানে ফোন নিয়ে বলল,
“কি হয়েছে কল করেছো হঠাৎ?”

অপরপাশ থেকে কি বলল তা বোঝা গেল না। আরহাম বিরক্তি নিয়ে বলল,
“পারবো না এখন দেখা করতে। ঢাকা গিয়ে দেখছি।”

বলেই কল কেটে ফোন পকেটে রেখে পিছনে ঘুরতেই আরিশাকে দেখতে পেল। আরিশা আরহাম ঘুরে তাকাতেই বলল,
“ভাইয়া আম্মু ডাকছে তোমাকে।”

আরহাম ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আসছি তুই যা।”

আরিশা ভ্রুকুচকে বলল,
“ভাইয়া তুমি কার সঙ্গে কথা বলছিলে।”

আরহাম কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“তুই জেনে কি করবি?”

আরিশা চোখ ছোট ছোট করে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“না তেমন কিছু না। তুমি যাও আম্মু ডাকছে।”

আরহাম আরিশার কথায় পাত্তা না দিয়ে ছাদ থেকে নেমে পড়লো। বসার ঘরে মায়ের সামনে গিয়ে বলল,
“কি বলবে আম্মু?”

আরহামের মা রাবেয়া বেগম বললেন,
“হামিম, শাওনের সাথে বাজারে দিকে যা তো। তোর বাবা একটা ঔষধ আনতে ভুলে গেছে। ওটা নিয়ে আয়। আর একটু ঘুরেও আয় না হয়।”

আরহাম সম্মতি দিলো মায়ের কথায়। শাওন, হামিম, মিহির, আর আরহাম মিলে একসাথে বাজার গেল।

মিহিকা, হিয়া, মাহি, আরিশা মিলে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে কি পড়বে না পড়বে তা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। একটু পরেই ইরাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হবে।

ছাদের একপাশে রান্নার কাজ চলছে। বাড়ির বড়রা সবাই রান্নার তদারকি করছে।

——————

মিহিকা হলুদ রঙের একটা শাড়ি পড়ে নিলো। হালকা মেকআপের সাথে হালকা গহনা পড়ে আয়নার সামনে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো নিজেকে। না ভালোই লাগছে। বিভিন্ন ভাবে ছবি তুলতে লাগলো সে। ইচ্ছেমতো কয়েকটা ছবি ডেও দিলো। সবাই রেডি হয়েছে নাকি সেটা দেখার জন্য হেলেদুলে রুম থেকে বের হয়ে মাহির রুমে দিকে যেতে নিবে তখনি শাড়ির সাথে উষ্টা খেয়ে পড়ে যেতে নিবে তখনি একটা শক্ত হাত তার ডানহাত আকড়ে ধরলো।

মিহিকা ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করলো। আর একটু হলেই পড়ে মুখ ফাটতো তার। পিটপিট করে তাকাতেই দেখলো আরহাম চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পড়নে তার হালকা হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবী, চুলগুলো সেট করা। মিহিকা দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে চলে যেতে নিবে তখনি আরহাম বলে উঠলো,
“আজব মানুষ তো তুমি। তোমাকে কত বড় একখান বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিলাম। একটা কিছু বললেও না।”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“একটা কিছু।”

আরহাম হা হয়ে তাকিয়ে রইলো মিহিকা দিকে। এই মাইয়া কি মাইয়া। মিহিকা হনহনিয়ে চলে গেল।

#চলবে

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০১

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০১

“চৌধুরী সাহেব এটা আপনি কি করে পারলেন!আমি খান বংশ বংশের মাইয়া। আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি সতীন নিয়ে সংসার করবো!আপনি হয় শুধু আমার নয় তো কোনো বেডি মানুষের না।”

মিহিকার ঘুমের মাঝে বলা এসব ফালতু কথা শুনে বরাবরের মতোই বিরক্ত মিসেস হেনা খান। তীব্র বিরক্তিতে মিহিকার গায়ের কম্বল টেনে বললেন,
“মিহি তুই ঘুম থেকে না উঠলে তোরে অন্য মাইয়ার সতীন করে পাঠাবো বলে দিলাম।”

মিহিকা মায়ের বিরক্তিভরা ঝাঁঝালো গলা শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠলো। মাথা চুলকে হেসে বলল,
“আম্মু কি হয়েছে এমন করে ডাকছো কেন?”

হেনা বেগম একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“হিয়ারা আসছে আজকে ভুলে গেছিস।”

মিহিকা মুখ চিকচিক করে উঠলো সে তো সত্যিই ভুলে গেছিলো আজ তো হিয়া আপুরা আসবে। দুইবছর যাবত দেখা হয়না। মিহিকা তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে চেয়ারের সঙ্গে উষ্টা খেলো। মিহিকা করুন দৃষ্টিতে পায়ের ছোট আঙুলটার দিকে তাকালো। নিজে নিজেই বলল,
“কিরে ভাই তোর জন্মই কি খালি উষ্টা খেয়ে লাল নীল হয়ে থাকার জন্য। যতসব ফালতু উষ্টা।”

মিহিকা পাটাকে টেনে নিয়ে গেল ওয়াশরুমের দিকে। ফ্রেশ হয়ে একটা নীল রঙের লম্বা জামা, জিন্স, সাদা জ্যাকেট আর হালকা নীল রঙের একটা হিজাব পড়ে নিলো। সাজগোজ করার সময় নেই হাতে। তাই হালকা করে কাজল দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে। মিহিকার ফুফাতো বোন হিয়া।

হিয়ারা ঢাকায় থাকে আর মিহিকারা বগুড়ায়। এখন সময় বিকেল চারটা। মিহিকা আর তার ছোট ভাই মিহির দাঁড়িয়ে আছে বাসস্ট্যান্ডে। অপেক্ষা করছে বাস আসার। মিহিকা এপাশ অপাশ তাকালো। সামনেই একটা গাড়ি থামলো। হিয়াকে সেই বাস থেকে নামতে দেখে মিহিকা ছুটে গেল। ছুটে গিয়ে হিয়াকে জড়িয়ে ধরতেই পাশ থেকে কে যেন আর্তনাদ করে উঠলো। মিহিকা কপাল কুচকে তাকাতেই দেখলো একটা লম্বা চওড়া খাম্বার মতো ছেলে পায়ে হাত দিয়ে লাফাচ্ছে। মিহিকা তার লাফানোর মানে খুঁজে পেল না। ছেলেটা দাঁতে দাঁত পিষে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওই মেয়ে তোমার চোখ নেই। কি জোরে আমার পাটাকে পিষে খান খান করে দিলে। চোখ কি জুতার তলায় চাপা দিয়ে রাখো?”

হিয়াকে ছেড়ে দিয়ে মিহিকা চোখ ছোট ছোট করে কোমরে দুইহাত রেখে বলল,
“আপনি চোখে দেখেন না,আপনি কেন আমার পায়ের নিচে পরতে গেলেন শুনি?”

ছেলেটা বেকুব হয়ে গেল। কোথায় তার পাটাকে জুতা দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিলো বলে ক্ষমা চাইবে। তা নয় তাকেই দোষ দিচ্ছে। ছেলেটা তেতে উঠে বলল,
“আমার কোন ঠেকা তোমার মতো কচু গাছের লটকানো সাতচুন্নির পায়ের নিচে পরবো। তুমিই তো ইচ্ছে করে পা দিয়ে পিষে দিয়ে আমার নিরিহ পা টাকে।”

মিহিকা মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে বলল,
“মোটেও এমনটা করিনি আমি। আপনিই তো মুছিনির মতো নিজের পাটাকে লাল নীল বানানোর জন্য আমার জুতা নিচে ইচ্ছা করে পা দিয়েছেন। আবার আমাকে কচু গাছের সাতচুন্নি বলছেন। আপনি তো বনে বনে ঘুরে বেড়ানো বন মুরগি।”

ছেলেটা কিছু বলতে নিবে তার আগেই হিয়া বাধা দিয়ে বলল,
“তোরা কি বাচ্চা? রাস্তায় এগুলো কি করছিস?”

ছেলেটা রাগী গলায় হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখ হিয়া তুই চুপ থাক। যেটা বুঝিস না ওটা নিয়ে কথা বলবিনা।”

চারপাশের মানুষজন সবাই তাকিয়ে আছে তখনি বাস থেকে হিয়া বাবা মা, বড় চাচা চাচি,হিয়ার বড় ভাই হামিম, হামিদের স্ত্রী রোদেলা,হিয়ার চাচাতো বোন আরিশা নামলো। হিয়ার বড় চাচা গমগমে গলায় বলে উঠলো,
“আরহাম কি করছো এসব?”

মিহিকা কপাল কুচকে তাকালো ছেলেটার দিকে। নিজ মনেই বলল,
“ও তার মানে এটাই হিয়া আপুর বড় চাচার ছেলে আরহাম মির্জা।”

মিহিকা সবাইকে সালাম দিলো। হিয়ার বড় চাচা আরিফুল সাহেব আরহামকে ধমকানোতে সে চুপ হয়ে গেলেও মিহিকার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো। মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে সবার সাথে যেতে লাগলো।

আরহামকে সিএনজিতে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে হামিম বলল,
“কিরে এমন গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?”

আরহাম কিছু বলল না। হামিম কুনিই দিয়ে একটা গুতো দিয়ে বলল,
“কিরে কি হলো?”

আরহাম থমথমে গলায় বলল,
“মানুষের কাজিন কতো ভালো হয় আর হামিম ভাই তোমার কাজিন একেবারে জঘন্য, ফালতু।”

আরহামের কথা শুনে হেসে দিলো হামিম। আরহামের গা জ্বলে গেল হামিমের হাসিতে। নিজে নিজেই বকবক করতে লাগলো সে।

খানিকবাদেই তারা পৌঁছে গেল বাসায়। মিহিকার চাচাতো বোন ইরার বিয়ে তাই সবাই এসেছে। কাল ইরার গায়ে হলুদ। সবাই একে একে ভিতরে ঢুকলো। মিহিকা ভিতরে যেতে নিবে তার আগেই আরহাম ওর পাশে দাঁড়িয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“আব্বু চুপ করতে বলেছিলো বলে ভেবোনা তোমাকে ছেড়ে দিবো। তোমার মতো বেয়াদব মাইয়াকে সাইজ করা আরহাম মির্জার বাম হাতের কাজ।”

মিহিকা দাঁত বের করে হেসে বলল,
“বাম হাত দিয়ে কোনো কাজই ভালোমতো হয় না। ডান হাতের সাহায্য লাগেই। তাই ফাউ না বকে নিজের চরকায় তেল দেন। আমার পিছনে লাগতে আইসেন না।”

বলেই মিহিকা গটগট পায়ে চলে গেল। আরহাম নিজ মনেই বিড়বিড়ালো,
“এতো শুধু বেয়াদব না প্রো ম্যাক্স। আমি ওর চেয়ে কত বড় তার সে দিকে হুশ নাই আমার সঙ্গে লাগতে আসে। চিনে না তো আমি কে!”

আরিশা পাশে এসে ফুস করে বলল,
“ভাইয়া তুই তো বনে বনে ঘুরে বেড়ানো বন মুরগি।”

আরহাম রক্ত চোখ নিয়ে তাকালো আরিশার দিকে। আরিশা ভো দৌড় দিলো। একবার আরহাম হাতে কাছে পেলে তার আর রক্ষা নেই।

আরহাম ভিতরে এসে সোফায় বসলো। একটা মেয়ে তাকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিলো। আরহাম চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো বারো তেরো বছরের এক কিশোরী তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। আরহাম তার হাসির কারণ খুঁজে পেল না। নিজের দিকে একবার তাকালো। সাদা টিশার্টের উপর কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স পড়েছে সে। সব তো ঠিকিই আছে। তাহলে মেয়েটা হাসছে কেন। কপাল কুচকে শরবতের গ্লাসটা নিলো আরহাম। পাশেই হামিম বসে ছিলো। ওকে কুনই দিয়ে গুতিয়ে আরহাম বলল,
“এটা আবার কোন মঙ্গল গ্ৰামের মাইয়া!”

হামিম হেসে বলল,
“এটা আমার বড় মামার ছোটমেয়ে। ও এমনি চাপ নিস না।”

আরহাম নাকমুখ কুচকালো। মাইয়া যে সুবিধার না বুঝতে বাকি নেই আরহামের।

#চলবে কি?

শেষ নিঃশ্বাস পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0

#শেষ_নিঃশ্বাস
#Sonia_Tabassum (Oni)
#পর্ব_২ (শেষ)

প্রহর আর পিয়াস ডক্টরের চেম্বারে বসে আছে। একটু আগেই হাতে রিপোর্ট পেয়েছে তারা। ডক্টর গভীর মনোযোগ দিয়ে রিপোর্ট দেখছেন। প্রহর আর পিয়াসের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। মিনিট কয়েক অতিবাহিত হওয়ার পর ডক্টর লাবনী দু’জনের দিকে তাকান। ডক্টর লাবনী কে গম্ভীর হয়ে থাকতে দেখে আর ভয় হচ্ছে দু’জনের। ডাক্তার লাবনী মুচকি হেসে বলেন,

” মিস্টার পিয়াস ভয়ের কিছু নেই। আপতত আপনার স্ত্রী ঠিক আছে। ডাক্তারের কথায় পিয়াসের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু পরমুহূর্তেই ডাক্তারের কথা শুনে মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে যায়।

“মিস্টার পিয়াস তবে একটা প্রবলেম আছে। পিয়াস চমকে ওঠে বলে,

” কি সমস্যা ডক্টর। আপনিই তো বললেন সব ঠিক আছে।

” হ্যাঁ, আমি বলছি সব ঠিক আছে। আগে আমার কথাটা শুনুন।

” জ্বি বলেন।

” বাচ্চা হওয়ার সময় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। অ্যাই মিন আমি বলতে চাইছি সিজারের সময়। টেনশনের দরকার নাই আল্লাহ কে ডাকেন ইন শা আল্লাহ তিনি সহায় থাকলে ভালো কিছু হবে। আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি সেগুলো নিয়ম করে খাওয়াবেন।

পিয়াস মাথা নেড়ে সায় দেয়। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিলে প্রেসক্রিপশন আর রিপোর্ট গুলো নিয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে। সেখান থেকে সোজা বাসায় ফেরে।

*****

দেখতে দেখতে প্রহরের ডেলিভারির সময় হয়ে আসছে। সময় খুব দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। প্রহরের এখন নয় মাস চলছে। ডক্টর বলছে আর দু’দিন পরেই প্রহরের সিজার করা হবে। ইদানীং প্রহর কে সময় সময় চুপ করে থাকতে দেখা যায়। বাড়ির সকলেই প্রহর কে দুশ্চিন্তায় থাকে।

পিয়াসের বোন বৃষ্টি প্রহর কে দেখতে আসে। কয়েকটা দিন থেকেও যাবে। বৃষ্টি প্রহরের সাথে উঠানে বসে গল্প করছে। প্রহরও হাসি মুখে এটা ওটা বলছে। প্রহরের শাশুড়ী দুপুরের রান্না শেষ করে সবাইকে খাওয়ার জন্য রান্না ঘরে যেতে বলেন। বাড়ির সকলে খাওয়ার জন্য রান্না ঘরে চলে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার মতো বিশ্রাম নিতে চলে যায়। প্রহর আস্তে আস্তে নিজের রুমে চলে যায়। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খাটে শুয়ে পরে।

****

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। পাখিরা উড়ে নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। পশুপাখি নিজের জায়গায় ফিরছে।। প্রহরের শাশুড়ী নিজের রুমে নামাজ পরছে। বৃষ্টি ও মায়ের রুমে আছে। প্রাণ বাবা’র সাথে দোকানে গেছে।

প্রহর মাগরিবের নামাজ পরে বিছানায় এসে বসে। রুমে প্রহর ছাড়া কেউ নেই। হঠাৎ করে প্রহরের পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হয়। প্রহর ব্যথায় ছটফট করছে। কাউকে ডাকার শক্তিও পাচ্ছে না।

বৃষ্টি সবেমাত্র রুম থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় আসছিল। প্রহরের রুমে থেকে কান্নার শব্দ পেয়ে ছুটে আসে। এসে প্রহর কে কাতরাতে দেখে বুঝতে পারে। বৃষ্টি চিল্লিয়ে মা’ কে ডেকে আনে। প্রহরের শাশুড়ী রুমে এসে প্রহর কে দেখে বুঝতে পারে প্রহরের প্রসব ব্যথা উঠেছে। বৃষ্টি দ্রত পিয়াস কে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে। পিয়াস ছেলেকে নিয়ে বাড়ি আসে। আসার আগে মাইক্রোকার কে ফোন দিয়ে আসতে বলে।

পনেরো মিনিটের মধ্যে গাড়ি চলে আসে। যাবতীয় যা যা লাগে সব গুছিয়ে নেয়। তারপর প্রহর কে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালে পৌঁছানোর পর ডাক্তার রোগী দেখে বলে দ্রুত তাকে এডমিট করতে হবে।

রাত নয়টায় প্রহর কে সিজার করা হয়। প্রহর কে জানানো হয় প্রহরের মেয়ে বাবু হয়েছে। প্রহর আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করে। প্রহর কে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। সুস্থ ভাবেই প্রহরের অপারেশন সম্পূর্ণ হয়। প্রহর কে কেবিনে শিফট করা হয়।

প্রহরের জ্ঞান ফেরার পর প্রহরের কোলে তার বাচ্চা কে দেওয়া হয়। প্রহরের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরে। প্রহর খুশিতে কাঁদছে। প্রহরের শশুর বাড়ির সবাই খুব খুশি।

সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো কেউ বুঝতে পারলো না।

গভীর রাত। সবার চোখে ঘুম। কেউ ঘুমাচ্ছে তো কেউ জেগে আছে। প্রহরের মা প্রহরের সিজারের পরেই আসছে। হঠাৎ করে প্রহরের অনেক কাপতে থাকে। ডাক্তারের ভাষায় একে একলেমশিয়া বলে। প্রহর কে কাঁথা কম্বল দিয়ে চেপে রাখা হয়। কয়েক মিনিট হওয়ার পর প্রহর স্থির হয়।

******

ভোর ছয়টা। প্রহর ছটপট করছে। পিয়াস দ্রুত ডক্টর কে ডেকে আনে। পিয়াস প্রহরের হাত ধরে বলে,

” কিচ্ছু হবে না তোমার। তুমি ঠিক হয়ে যাবে। প্রহর মুচকি হেসে কাপাকাপা কন্ঠে বলে,

” তুমি চেয়েছিলে তোমার একটা রাজকন্যা লাগবে। আমি তোমাকে রাজকন্যা উপহার দিলাম।

ডক্টর প্রহরকে চুপ করতে বলে। প্রহর মৃদু হেসে বলে, আমাকে বলতে দেন ডক্টর। ডক্টর আর কিছু বলে না। প্রহর পিয়াসের হাত ধরে বলে,

” আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো পিয়াস। ও আমার নারী ছেড়া ধন। আর আমার প্রাণ টাকে বলবা ওর বোনের যেন কোনো কষ্ট না হয়। আমার হাতে সময় নেই। আল্লাহ হয়তো এ পর্যন্ত আমার হয়াত রাখছিলেন। ভালো থেকো আর আমার বাচ্চাদের দেখে রেখো বলে থেমে যায় প্রহর। হসপিটালের বেডেই #শেষ_নিঃশ্বাস ত্যাগ করে প্রহর।

” প্রহর বলে চিৎকার করে ওঠে পিয়াস। পিয়াস পাগলের মতো করতে থাকে। ডক্টর বলে,

” অ্যাই এম সরি মিস্টার পিয়াস। সি ইজ নো মোর বলে ডক্টর বেড়িয়ে যান।

ডক্টরকে মুখ কালো করে বেড়িয়ে যেতে দেখে ভয় হয় সকলের। ছুটে সবাই রুমের মধ্যে চলে আসে। এসে প্রহর কে চুপ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে চমকে ওঠে। পিয়াস ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে।

প্রহরের শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকে। প্রহরের মা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। প্রহর রা চার ভাই বোন। প্রহরের একটা ভাই আর দুইটা বোন। প্রহর সেজো। প্রহরের ভাই আর মেজো বোন টা আগেই মারা গেছে। আর আজ প্রহর মারা গেলো। প্রহরের মারা যাওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

হসপিটাল থেকে প্রহরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এম্বুলেন্সে করে প্রহর কে বাড়ি আনা হয়। সবার মুখে এক কথা বাচ্চা জম্ম দিতে গিয়ে মা মারা গেছে। প্রহরের বাবার বাড়ি থেকে সবাই আসে।

প্রহর কে যখন এম্বুলেন্স থেকে নামানো হয় তখন প্রহরের ছেলে প্রাণ মা কে ধরে পাগলের মতো কাঁদছিল। প্রাণের কান্না দেখে প্রতিটা মানুষের চোখে পানি পরছিল। প্রাণ বলছিল,

” ও মা মা গো তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব মা। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে মা। আমাকে কে ঘুম পাড়িয়ে দেবে মা। আমাকে কে আদর করে ভাত খাইয়ে দেবে মা। মা গো মায়ের মতো তো এই দুনিয়ায় কেউ করে না। মা না থাকলে কেউ ভালো বাসে না। আমাদের দুই ভাই বোনকে এতিম বানিয়ে চলে গেলে। কি দোষ করেছি আমরা। আমার ছোট্ট কলিজার বোন টা যখন বড় হবে তখন ওকে আমি কি বলব মা। ও মা মা গো তুমি ফিরে আসো না। আমি আর দুষ্টুমি করব না। প্রাণের ফুপি বৃষ্টি এসে প্রাণ সরিয়ে নেয়।

প্রহর কে গোসল করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। গোসল শেষ হলে দাফনের কাজ করে। দুপুর দুইটায় প্রহরের জানাজা সম্পূর্ণ হয়।

****

প্রহর কে হারিয়ে প্রহরের মা বাবা পাগলপ্রায়। মেয়ের শোক কিছুতেই সামলাতে পারছেন না।

পিয়াস নিশ্চুপ হয়ে গেছে। দুধের শিশুকে কিভাবে সামলাবে সে।

প্রহরের মৃত্যুর আজ পাচ দিন। পিয়াস ছোট বাচ্চার জন্য নিজেকে সামলে নিয়েছে। প্রহরের রাখা নাম রাখা হয়েছে আদরী। অতি আদরের মেয়ে যে আদরী।

*****

পিয়াস কঠিন ডিসিশন নিয়েছে। মেয়ে কে মানুষ করতে হলে তাকে অবশ্যই আরেকটা বিয়ে করতে হবে। তার মা মুরব্বি হয়ে গেছে। তিনি এতটুকু বাচ্চা সামলাতে পারবেন না।

প্রহরের মৃত্যুর দুই মাসের মাথায় পিয়াস নতুন বিয়ে করে আনে। দুই মাসের ছোট্ট আদরীর দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। তিনি হাসি মুখে সবটা মেনে নেয়।

( কিন্তু তিনি কি আদৌও আদরী কে নিজের মেয়ে ভেবে মানুষ করতে পারবেন। পিয়াস কি প্রহরের কথা রাখতে পারবে। তার ছেলে মেয়ে কে সঠিক ভাবে মানুষ করতে )

[ সমাপ্ত ]

বি:দ্র:—

মূলত এটা ছিল অনুগল্প। প্রথম পর্বে শেষ করতে না পারায় দ্বিতীয় পর্বে শেষ করতে হলো। যাই হোক, আমি যতটুকু লিখছি তার সবটুকু সত্য ঘটনা। আমি জানি না কতটুকু ফুটিয়ে তুলছে পেরেছি। আল্লাহ যেন এমন কারোর সাথে না করেন। এমন মর্মান্তিক ঘটনা দেখা যায় না। ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু এতিম হয়ে গেলো।
সম্পূর্ণ গল্প টা কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন।

শেষ নিঃশ্বাস পর্ব-০১

0

#শেষ_নিঃশ্বাস
#Sonia_Tabassum (Oni)
#সূচনা_পর্ব

১২ বছর পর দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হয় প্রহর। চৌদ্দ বছর সংসার জীবনে দ্বিতীয় বার মাতৃত্তের স্বাদ পেতে চলেছে সে। খুশি তে তার চোখ টলমল করে ওঠে। শশুর বাড়ির সকলেই খুব খুশি। অনেক চেষ্টা প্রচেষ্টার পর অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে প্রহর। প্রহরের স্বামী পিয়াস খুশিতে মহল্লার সকলকে মিষ্টি মুখ করিয়েছে।। প্রহরের বিয়ে হয়েছে চৌদ্দ বছর। বিয়ের দুই বছর পরই অন্তঃসত্ত্বা হয় প্রহর। প্রহরের গর্ভে ছোট্ট প্রাণের অস্তিত্ব বেড়ে ওঠে। প্রহর আর পিয়াসের প্রথম ছেলে সন্তান হয়। সেদিন প্রহর খুব করে কেঁদেছিল। সেটা ছিল প্রহরের খুশির কান্না। ছেলে সন্তান হওয়ায় সেদিন শশুর বাড়ির প্রতিটা মানুষ খুশি হয়েছিল। প্রহর কে মাথায় করে রাখছিল। আদর করে প্রহরের ছেলের নাম রাখা হয় প্রাণ। প্রাণ সবার চোখের মণি। প্রাণ কে ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না।

****

প্রাণের বয়স চার বছর হওয়ার পরপরই আবার সন্তান নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে তারা। কিন্তু কিছুতেই প্রহর কনসিভ করতে পারে না। পিয়াস ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে দেখিয়ে হাঁপিয়ে ওঠেছে। তবুও হাল ছাড়ে না। দীর্ঘ ১২ বছর পর প্রহর অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে।
এই বারো বছরে কম চেষ্টা করেনি একটা সন্তান নেওয়ার জন্য।

প্রাণ ও একটা বোনের জন্য খুব কান্না করতো। ছেলের মুখের দিকে তাকালে প্রহরের বুক দুমড়ে মুচড়ে যেতো। কিছু করার উপায় ছিল না। সেই বা কি করতে পারে। সব দেওয়ার মালিক আল্লাহ। তিনি না চাইলে গাছ থেকে একটা পাতাও পরে না।

প্রাণ বড়ো হতে থাকে। তার যথেষ্ট বুদ্ধি হয়েছে। সেজন্য আর কান্নাকাটি করে না। আল্লাহ চাইলে নিশ্চয়ই তার একটা বোন হবে।

প্রাণ যখন দাদি’র মুখে শোনে তার একটা খেলা’র সাথি হবে। তার ছোট্ট একটা বোন হবে। যে তার কাছে সকল আবদার করবে। প্রাণ তখন ছুটে মা’য়ের কাছে দৌড়ে আসে। প্রহর তখন বিছানায় বসে ছিল। প্রাণ দৌড়ে এসে মা’কে জড়িয়ে ধরে বলে,

” আম্মু আমি খুব খুশি। আমারও একটা খেলা’র সাথী হবে। সারা বাড়ি গুটিগুটি পা’য়ে হেটে বেড়াবে। আমার কাছে সকল আবদার করবে। আমি তার সব আবদার পূরণ করব। আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে। আমার কাছে চকলেট খেতে চাইবে। আই এম সো হ্যাপি আম্মু! অ্যাই এম সো হ্যাপি!

ছেলের কথা শুনে হৃদয় জুড়ে প্রশান্তি’র বয়ে যায়। প্রহরের এত ভালো লাগছে যা বলার বাইরে। প্রহর প্রাণের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

” আমি জানি তো আমার প্রাণ সোনা খুব খুশি। সে তার বোনের জন্য সব করতে পারবে।

প্রাণ সোজা হয়ে বসে মা’য়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

” আম্মু তুমি জানলে কেমনে আমার বোন হবে। দাদিও বলল তোর একটা বোন হবে। প্রহর মুচকি হেসে বলে,

” ও তুই বুঝবি না। মা’য়ের মনে যা ডেকে বলে ঠিক তাই ই হয়। তুই দেখিস তোর বোন’ই হবে।

” বোন হলে আমি সবচেয়ে খুশি হবো আম্মু। আমার ফ্রেন্ডদের সবার বোন আছে। আমারও বোন হবে।

পিয়াস দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মা ছেলের কথোপকথন শুনছিল। পিয়াস ও চাই তার একটা রাজকন্যা হোক। যে ছোটো ছোটো পা’য়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখবে। তার দুষ্টুমিতে সবাই মেতে থাকবে। পিয়াস হালকা কেশে বলে,

” কি ব্যাপার মা ছেলে কি এতো কথা হচ্ছে শুনি? আমাকেও বলো?

প্রাণ কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। প্রহর লাজুক হেঁসে পিয়াসের দিকে তাকায়। পিয়াস রুমের দরজা দিয়ে এসে প্রহরের কোমড় জড়িয়ে ধরে। প্রহর কিছুটা কেঁপে ওঠে। প্রহর আমতা আমতা করে বলে,

” দুই বাচ্চা’র বাপ হতে চললে এখনো স্বভাব ভালো হলো না। কয়দিন পর তো ছেলে’র বিয়ের বয়স হয়ে যাবে।

পিয়াস দুষ্টু হেসে বলে,

” পুরুষের স্বভাব কোনো দিন ভালো হয় না জানো না তুমি। পুরুষ তার বউয়ের সামনে সবসময় খোলা বইয়ের মতো থাকে।

” ধ্যাত তোমার ডং বাদ দাও তো। আমার অনেক কাজ আছে। আমাকে ছাড়ো।

” পিয়াস আরো শক্ত করে প্রহরের কোমড় জড়িয়ে ধরে। পিয়াস ধীর কন্ঠে বলে,

” খবরদার তুমি কোনো কাজ করবে না। ডক্টর পইপই করে বলে দিছে ভাড়ি কোনো জিনিস তুলতে পারবে না। তোমার শরীর খুব দুর্বল। তোমাকে সবসময় সচেতন থাকতে বলছে।।

প্রহর মুচকি হেসে বলে, আমার কিচ্ছু হবে না। আমার খেয়াল রাখার জন্য তো তুমি আছোই।

” তবুও আমি চাই না। আমাদের একটা ভুলের জন্য কোনো ক্ষতি হয়ে যাক।

_________________________

পিয়াস বাবা মা’য়ের একমাত্র ছেলে। পিয়াসের থেকে বছর তিনেকের ছোট পিয়াসের বোন বৃষ্টি। বৃষ্টি’র বিয়ে হয়ে গেছে বছর পাঁচেক আগে। বাবা মা স্ত্রী পুত্র নিয়েই তাদের পরিবার। আর পাঁচ টা মানুষের মতো তাদের নেই বড়ো বাড়ি। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে পিয়াস। তাদের বাড়িটা ইট দিয়ে গাথা উপরে টিনের চাল দেওয়া । তাদের নেই বিলাসবহুল জীবনযাপন। খুব সাটা মাটা ভাবেই তারা চলে। তাদের জীবনে সুখের অভাব নেই। পিয়াস প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার। তার বাবা’ও এখানকার স্কুলের মাস্টার ছিলেন। তিনি এখন রিটার্ড হয়ে গেছেন। মাস শেষ বেতন পেলে সেই টাকা দিয়েই তাদের সংসার চলে।

***

প্রহর কে তার শাশুড়ী মর্জিনা বেগম কিছু করতে দেন না। তিনি খুব সতর্ক মানুষ। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি বাড়ির সকল কাজকর্ম এক হাতে করছেন । প্রহর করতে চাইলে তাকে নিষেধ করে দিছে। মর্জিনা বেগম কোনো রকম গাফিলতি করতে চান না। তিনি চান বংশের প্রদীপ সহি সালামত পৃথিবীতে আসুক।

**

দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেছে। প্রহর খুব সাবধানে হাঁটাচলা করে। প্রহরের গোসলের সময় হলে পিয়াস কিংবা শাশুড়ী মা কল থেকে পানি তুলে দেন। ডাক্তারের কথা মতো প্রহর কোনো ভাড়ি কাজ করে না। প্রহরের প্রেগন্যান্সিতে অনেক সমস্যা আছে। এজন্য সব মেনে চলতে হচ্ছে। এমন একটা পরিবার পেয়ে প্রহর খুব ভাগ্যবতী। এমন পরিবার ক’জনের ভাগ্যে বা জোটে।

**

প্রহর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগের তুলনায় প্রহরের পেট খানিকটা উঁচু হয়েছে। প্রহর গভীর ঘুমে আছে। তার পাশে পিয়াস বসে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। প্রহরের শরীরটা আজ ভালো না। সকাল থেকেই খারাপ। জানের ভিতরে অশান্তি লাগছে। এক জায়গায় বসে থাকতেও পারছে না। শুয়ে থাকলেও ভালো লাগছে না। প্রহরের শরীরে অস্থিরতা কাজ করছে। হঠাৎ এমন হওয়ায় ঘাবড়ে যায় পিয়াস। বাড়ির সকলেই টেনশনে পরে যান।

পিয়াস জোর করে প্রহর কে বিছানায় শুইয়ে তার পাশে বসে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে যাতে একটু আরাম পায়। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রহর ঘুমিয়ে পড়ে।

পিয়াস এক দৃষ্টিতে অর্ধাঙ্গিনী’র দিকে তাকিয়ে আছে। পিয়াসের মনে অজানা ভয় এসে হানা দিচ্ছে। পিয়াস ভয় পাচ্ছে খারাপ কিছু হবে না তো।

অনেক সময় আমাদের মনে ডেকে যেটা কয় ঠিক সেটাই বাস্তবে ঘটে যায়। কারোর কিছু করার থাকে না। আর না আমাদের করার হাত থাকে।

মা’য়ের অসুস্থতা দেখে প্রাণ ভয় পেয়ে যায়। ঘরের কোনে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিয়াস ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,

” প্রাণ এদিকে আয়। প্রাণ বাবা’র কাছে এগিয়ে আসে। পিয়াস ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলে,

” কোনো ভয় নেই বাবা। মা সুস্থ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। প্রাণ মাথা ঝাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
পিয়াস প্রহরের পাশে শুয়ে পরে। এক ধ্যানে বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।* পিয়াসও সেই ভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রহরের অসুস্থতার কথা শুনে পরের দিনই ছুটে আসেন প্রহরের বাবা মা। প্রহরের মা আসার পর থেকে কান্না করেই যাচ্ছেন। প্রহর এখন আগে থেকে সুস্থ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পিয়াস প্রহরকে ঘুম পাড়িয়ে দিছিল কাল। প্রহর কে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো যায়নি কারণ প্রহর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মর্জিনা বেগম বেয়াইন কে শান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রহরের কিছু হবে না। প্রহর ঠিক হয়ে যাবে। প্রহরের মা কয়েকদিন থেকে যাবেন এখানে। অসুস্থ মেয়েকে একা রেখে যেতে মন সায় দিচ্ছে না তার। স্বামী কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।

প্রহর কে নিয়ে ডক্টরের কাছে চেকাপ করাতে যায় পিয়াস। বাচ্চা সুস্থ আছে নাই দেখার জন্য। ডক্টের কাছে আসলে ডক্টর অনেক গুলো রিপোর্ট করতে বলে। পিয়াস প্রহর কে নিয়ে অন্য ডক্টরের কাছে যায় যে ডক্টর প্রহরের আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহ আরও কিছু পরীক্ষা করবেন। সব পরীক্ষা শেষ হলে প্রহর কে নিয়ে চেয়ারে বসে। রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। পিয়াস বারবার আল্লাহ কে সরণ করছে যেন রিপোর্ট ভালো আসে।

#চলবে ইন শা আল্লাহ ~

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও এক বৃদ্ধ ইহুদি ব্যক্তি | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-২৫

0

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও এক বৃদ্ধ ইহুদি ব্যক্তি

একদিন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি এক বৃদ্ধ ইহুদি ব্যক্তিকে দেখলেন, যিনি খুবই অসুস্থ এবং শীর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। রাসুল (সাঃ) তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার স্বাস্থ্য এবং পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন। বৃদ্ধ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কে?”

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেন, “আমি মুহাম্মদ, আল্লাহর রাসুল।”

বৃদ্ধ ব্যক্তি বললেন, “আমি তো মুসলিম নই, আমি ইহুদি।”

রাসুল (সাঃ) তখন বললেন, “তুমি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তুমি একজন মানুষ। তোমার চিকিৎসা প্রয়োজন, আমি তোমার জন্য ব্যবস্থা করব।”

এরপর, রাসুল (সাঃ) সেই বৃদ্ধকে সাহায্য করতে একটি ব্যবস্থা করলেন এবং তাকে তার দরিদ্র অবস্থার মধ্যে সহায়তা প্রদান করলেন।

এই ঘটনা থেকে আমরা শিখি যে, রাসুল (সাঃ) মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য একজন আদর্শ ছিলেন, এবং তিনি ধর্ম বা জাতিগত পরিচিতি ছাড়াই সকলের প্রতি সৎ দৃষ্টি রেখেছিলেন।

শিক্ষা:
মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং দয়ার সাথে সাহায্য করা ইসলামের অন্যতম মূল শিক্ষা।

মানবাধিকার এবং সহানুভূতি ধর্মীয় বাধা ছাড়াই সকলের জন্য অপরিহার্য।

রাসুল (সাঃ)-এর জীবনে সকল ধর্মের মানুষদের প্রতি সম্মান এবং দায়িত্বশীলতার দৃষ্টান্ত।

হযরত উমর (রাঃ) এবং এক বৃদ্ধের দুঃখ | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-২৪

0

হযরত উমর (রাঃ) এবং এক বৃদ্ধের দুঃখ

একদিন হযরত উমর (রাঃ) রাতের বেলা শহরের রাস্তায় হাঁটছিলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, এক বৃদ্ধ ব্যক্তি পথের ধারে বসে আছেন এবং কাঁদছেন। হযরত উমর (রাঃ) কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন, “হে বৃদ্ধ, তুমি কেন কাঁদছো?”

বৃদ্ধ ব্যক্তি বললেন, “আমি একবার একটি ঋণ নিয়েছিলাম, কিন্তু বয়সের কারণে এখন কাজ করতে পারি না, তাই আমি ঋণ শোধ করতে পারছি না।”

হযরত উমর (রাঃ) এই কথা শুনে খুব দুঃখিত হলেন। তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, “তুমি চিন্তা করোনা, আমি তোমার ঋণ শোধ করতে সাহায্য করব।”

তারপর হযরত উমর (রাঃ) বায়তুল মাল থেকে সেই বৃদ্ধের ঋণ শোধ করলেন এবং তাকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে সাহায্য করলেন।

এটি প্রমাণ করে যে, একজন নেতা বা শাসকের দায়িত্ব শুধু যুদ্ধ বা রাজনীতি নয়, বরং তাঁর জনগণের কল্যাণও নিশ্চিত করা।

শিক্ষা:
মুসলিম শাসকদের কর্তব্য হলো তাদের জনগণের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।

মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে সহানুভূতির সাথে সাড়া দেওয়া ইসলামের শিক্ষা।

ঋণ শোধ করতে সাহায্য করা এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো একটি মহান কাজ।

হযরত আলী (রাঃ) ও এক যুবক | ইসলামিক গল্প সংখ্যা-২৩

0

হযরত আলী (রাঃ) ও এক যুবক

একদিন হযরত আলী (রাঃ) মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ শেষে তিনি দেখলেন, একটি যুবক তার দিকে আসছে এবং তাকে কিছু প্রশ্ন করতে চায়। যুবকটি এসে বলল, “হে আমীরুল মুমিনীন! আমি অনেক গুনাহ করেছি, আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?”

হযরত আলী (রাঃ) যুবকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি যদি আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তওবা কর, তবে তিনি অবশ্যই তোমাকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ তো সবচেয়ে দয়ালু, সবচেয়ে ক্ষমাশীল।”

যুবকটি বলল, “কিন্তু আমি খুব বড় গুনাহ করেছি, আমার জন্য ক্ষমা কি সম্ভব?”

হযরত আলী (রাঃ) আবার বললেন, “তোমার গুনাহ যদি আকাশের চাঁদের মতো বিশালও হয়, তবুও আল্লাহর রহমত তার চেয়েও অনেক বড়। আল্লাহ যখন তোমাকে দয়ালু মনে করেন, তখন তোমার কোনো গুনাহ বড় নয়।”

এই কথা শুনে যুবকটি খুব আশাবাদী হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করতে চলে গেল।

শিক্ষা:
আল্লাহর ক্ষমা এবং দয়ার পরিসীমা অসীম।

আন্তরিক তওবা করলে আল্লাহ বান্দাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন।

কোনো গুনাহই এত বড় নয় যে আল্লাহ তা ক্ষমা করতে পারেন না।