Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 38



অপেক্ষা পর্ব-০৪

0

#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ4 [রেগিং]

শীতের মুখর্য পরিবেশ, গা ছমছমে ঠান্ডা। ব্যস্ত নগরী ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত প্রতিটি মানুষ নিজ কর্মক্ষেত্রে। দিনের পর দিন গায়ে খাটে শুধু অন্যে আহরণের জন্য। এই পৃথিবীতে যদি মানুষের অন্য গ্রহন করা না লাগতো তাহলে হয়ত মানুষ শুয়ে ভয়ে থাকত। কিন্তু অন্য গ্রহণ করা মানুষের এক ঐশ্বর্য পত্রিকা। তাই তো ব্যস্ত নাগরীতে যানজট পেরিয়ে যে যার কাজে বেরিয়ে পড়ছে। সময় স্রোত দুটাই বয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। কিভাবে যে মানুষের জীবন থেকে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে, বুঝে ওঠা দায়। এইতো দেখতে দেখতে চারটা দিন কেটে গেছে। আরুপিতার সাথে সামিরার এখন ভীষণ ভাব জমেছে। জমবে নাই বা কেন? সামিরার যে আময়িক মিশুক ব্যবহার তাতে ওর সাথে যে থাকবে তারই একটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরি হবে। সামিরার তো এখন অরুপিতা কে ছাড়া ভার্সিটি চলেই না।
এইতো সামিরা প্রত্যেকদিন ক্লাস করে আর ক্লাসে কি কি করলো তার প্রিয় বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে, সব বাসায় গিয়ে ওর , মাকে,ভাই শাহরিয়া কে প্রত্যেক দিন আরুপিতার কথা বলে। আর সে কি বায়না, মায়ের কাছে তো নিত্যদিনের আবদার একটাই থাকে। সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে তার ভাবি বানাতে চায়। এমন না এটা তার এখনকার ইচ্ছা, এটা যখন সামিরা আরুপিতাকে প্রথম দিন ভার্সিটিতে আসতে দেখেছিল তখনই মেয়েটাকে লক্ষ্য করেছিল। সুশীল ভদ্র ঘরের মেয়ে দেখে বোঝা যায়, প্রথম প্রথম শাহরিয়া আরুর কথা তেমন পাত্তা না দিলেও ইদানিং নিজে থেকেই সামিরার কাছে প্রশ্ন করে অরুর বিষয়।

“সামিরার এটা খুব পছন্দ তার ভাই তার বেস্টফ্রেন্ডের কথা জিজ্ঞেস করে। হয়তো এবার সামিনা স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এই শ্যামবর্ণ নরম মনের মানুষকেও কেউ মনের দিক থেকে আহত করতে পেরেছে। এতেই সামিরা ভীষণ খুশি।”

*********************
শীতের সকাল মানে ঘুম ঘুম মনোরম পরিবেশ, শীতের দিনে আরুর বিছানা থেকে উঠতেই মনে চায় না। কিন্তু কি আর করার ভার্সিটিতে যেতেই হবে। তার ওপর আজকে আবার নিউ ইয়ার উপলক্ষে ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম আছে। তাই বাধ্য হয়ে কম্বলটা সরিয়ে ওয়াশরুমের দিক ভৌ দৌড়। বেশ কিছু সময় হতেই আরুর ফোনে বুম বুম করে কল বেজে ওঠে। একবার কলের পর নেক্সট কল দিতে আরুপিতা, ছুটে এসে ফোনটা, তাড়াহুড়া করে কানে ধরেই, sorry sorry বেষ্টু রাগ করিস না। আমি এক্ষুনি চলে আসছি।

“সামিরার আর কি করার আছে এটা নিত্যদিনেরই কথা, প্রত্যেকদিন অরু লেট করবে সামিরা ফোন করলে sorry sorry বলে মনটা গলিয়ে নিবে, তাই কিছু না বলে, একটা লম্বা শাঁস ছেড়ে কঠিন গলায় বলল।”

সামিরা— তোকে আজকে আর আমি ক্ষমা করব না। প্রতিদিন তোর এক বাণী শুনতে হয় আমাকে। তুই থাক তোর মত, আমি আর তোকে ফোন দিব না। বাই রাখছি,

অরু— এই,এই না ফোনটা কাটিস না প্লিজ, এমন করছিস কেন। আমি তো চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি চলে আসার প্লিজ রাগ করে থাকিস না।

সামিরা— —-

অরু— প্লিজ কথা বল চুপ করে আছিস কেন?? আচ্ছা বাবা তুই যা বলবি আমি তাই শুনবো, এবার তোমার সাথে কথা বল,

সামিরা— যা বলব তাই শুনবি তো??

অরু— ১০০% শুনবো,

সামিরা— পাক্কা,

অরু— হ্যাঁ রে বাবা পাক্কা,

সামিরা— ঠিক আছে তাহলে তুই একটা কালো শাড়ি পড়ে কলেজে চলে আয়, আর এক্ষণ যদি বলিস আমি শাড়ি পরব না তাহলে বুঝবি আজকে থেকে তোর সাথে আমি আর কথা বলবো না। আমি যেন তোকে কলেজে শাড়ি অবস্থায় দেখি,এই আমি বলে দিলাম, আরু কে প্রতি উত্তরে কিছু বলতে না দিয়ে সাথে সাথে ফোনটা কেটে দেয়।

“অরুর কি আর করার বাধ্য হয়ে শাড়ি না পড়ে, সুতির একটা কাজ করা কাপড় সুন্দরভাবে পড়ে নেয়, সাথে তো নিত্য দিনের হিজাব আছেই, ব্যস এতেই যেন অরুকে ভীষণ সুন্দর লাগছে, আসলেই সত্যি নারী মানেই শাড়ি, শাড়ি জিনিসটা ছোট থেকে বড় সবাই কেই সুন্দর লাগে, তবে কালো কাপড়টা অরুর গায়ে যেন একটু বেশি মানিয়েছে”অরু মেউরের দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজেকে দেখে নেয়, না সব ঠিকই আছে, ব্যাস আর কি চাই প্রতিদিনকার মতো আজকেও নাস্তা না করে মাকে বাই বলে ভার্সিটিতে দৌড়ালো।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

“ভাইয়া আমি রেডি,এখন তাড়াতাড়ি চলো, নাইলে আবার তোমার জন্য আমার রাগ ও নিয়ে যাবে। তারপর তাকে আমার রাগ ভাঙ্গাতে হবে। না বাপু, আমি আবার এটা চাই না। তাই তাড়াতাড়ি চলো।”

শাহরিয়া— দাঁড়া পিচ্চি হয়ে গেছে আমার, চুলটা স্পাইক করে নিলেই হল,

সামিরা— তোমার আর কতক্ষন লাগবে চুল ঠিক করতে। বাবা, মেয়েদের এত টাইম লাগে না তোমার মত।

শাহরিয়া— হয়েছে আমার, এবার তোর বকবকানি থামা, আর চল এখন।

” নিউ ইয়ার উপলক্ষে প্রতি বছরই ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে বিশাল বড় করে অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। এবার যেন তার থেকে একটু বেশি বড় করে আয়োজন করা হয়েছে। পুরো ভার্সিটি সাজানো হয়েছে তাজা ফুল দিয়ে। চারপাশটা বেলুনে ছড়াছড়ি, খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা হয়েছে ভার্সিটির চারপাশ, চারপাশটা দেখতে দেখতে অরুপিতা ভার্সিটির গেট দিয়ে কিছুটা দূরে যেতে দুই তিনটা মেয়ে পিছন থেকে আরুপিতার শাড়ি আঁচলটা টেনে ধরে, চলতি পথে বাধা পেয়ে আরুপিতা পিছন ঘুরে দেখে ওর থেকে সিনিয়র তিনটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার কিছু দূর সেদিনকার সেই ছেলে দুইটা সাথে আরো অনেকগুলো ছেলে আছে। অরুপিতা বুঝতে পারছে না হঠাৎ সিনিয়র আপুরা তাকে বাধা দিল কেন, সে তো শুধু এই ভার্সিটির ভিতর সামিরা সাথেই কথা বলে, আর তো কারো সাথে কথা বলে না। আর না কোনদিন বলবে। তাহলে এরা কেন হঠাৎ বাধা দিল তাকে, তাই কিছুটা কৌতূহ নিয়ে অরুপিতা জিজ্ঞেস করলো।

অরু— আপু আপনারা কিছু বলবেন??

আয়রা— হ্যাঁ, তুমি এই কাগজটা নিয়ে, ওই যে আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা নীল কালার শার্ট পড়া ছেলেটাকে দেখছ, তাকে তুমি এটা নিয়ে দেবে। আর বলবে এটা তোমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে দিয়েছো, বুঝতে পেরেছ এবার যাও।

অরু— কিন্তু আপু আমি তো তাকে কিছু দিতে চাই না আমার পক্ষ থেকে, তাহলে আপনি কেন আপনার জিনিস আমাকে দিয়ে দেওয়াতে চাচ্ছেন?? আপনার জিনিস আপনি বরং দিয়ে আসুন। এতেই ভালো হবে,
আর দয়া করে আমার শাড়ি আঁচলটা ছাড়ুন।

আয়রা— ভালই তো ফটর ফটর কথা জানো, জানো আমরা ভার্সিটির লিডার গ্যাং আমরা যা বলি এখানে সেটাই হয়ে থাকে। তাই এই মুহূর্তে আমরা তোমাকে যা বলছি তুমি সেটাই করবে।

অরু— কিন্তু আপু,

আয়রা— ঠাস করে এখন একটা দিতে হয়, কথা প্যাচাচ্ছে। তুমি যাবে নাকি আমাদের হাতে চড় খাবে??

“আরু জানতো বড় বড় ভার্সিটি কলেজ গুলোতে এরকম উদ্ভট রেগিং দেওয়া ছেলেমেয়ে থেকে। যাদের প্রতিনিয়তই কাজ অসহায় ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়া। তবে ও আজ অব্দি কারো রেগিং এ পড়েনি। কিন্তু আজ এই অনুষ্ঠানের দিন ওকে রেগিং এ পড়তে হলো, কি আর করার এই মুহূর্তে তো আর কেউ সাহায্য করতে আসবে না ওকে, তাই এরা যা বলছে সেটাই করতে হবে, বাধ্য হয়ে অরু আয়রা নামের মেয়েটার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে যায় সামনের ছেলেটার দিকে।”

“ভাইয়া এইটা আমার পক্ষ থেকে আপনাকে দিচ্ছি” অরু

রিহান পা থেকে মাথা পর্যন্ত আরুপিতাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বাঁকা হেসে, আরুর হাত থেকে কাগজটা চট করে ছিনিয়ে নিয়ে মুখে বললো।

রিহান— তুমি সেদিন কার মেয়েটা না ?? তা এই কাগজে কি লেখা আছে শুনি,

রাফি— ভাই সুন্দরী দিয়েছে পড়ে দেখ কি লেখা আছে, আমরা ও একটু শুনি তারা আবেগ,প্রণয়নের কথা। বলে পাশে থাকা তিন চারটা ছেলে হো হো করে হেসে ওঠে।

“রাফিদের কথার ভিতর তখনকার মেয়ে তিনটা এসে যোগ হয় তাদের সাথে, রাফির সাথে তাল মিলিয়ে তখনকার আয়রা নামের মেয়েটা বললো।”

আয়রা— হ্যাঁ রে, রিহান। কি লেখা আছে পর আমরা একটু শুনি।

“সবার কথা মত রিহান চিঠিটা মেলে উচ্চসরে পড়া শুরু করল”

” পিও রিহান, ”

~~প্রথমে এক রাজ্য কার্ড গোলাপের শুভেচ্ছা নিন আমার পক্ষ থেকে, আর রাজ্য কি ফিরিয়ে দিন আমার ভালবাসার শুভেচ্ছা নিয়ে, ভালোবাসার জিনিসটার পতি আমার আবেগপূর্ণ টা একটু বেশি, তাই আপনাকে দেখার পর আমার আবেগকে আমি আটকে রাখতে পারিনি। তাই ছুটে টেবিলে বসে এই পত্র আপনার জন্য লিখতে শুরু করলাম। আপনাকে আমি একরাশ ভালোবাসা দিব, তার বদলে আপনি কি আমাকে একরাশ ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবেন?? নিবেন কি আপনার বৌ করে ঘরে তুলে? জীবনটা কি আপনার সাথে জড়াতে সাহায্য করবেন?? আমি জানিনা আবেগটা কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। তবে পত্রের থেকে আপনার প্রতি ভালোবাসাটা একরাশ বেশি আমার। তাই আপনার প্রতি আশা রাখছি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।

ইতি~~প্রিয়তমা।

“রেহান চিঠিটা পড়ে বাঁকা হেসে সবার উদ্দেশ্য করে বলল।”

~~কিরে এখন কি আমার একে একসেপ্ট করে নেওয়া উচিত?

“রিহানের কথা শুনে সবাই ভৌ,ভৌ,করে হেসে উঠলো।”

“আরু প্রথম থেকে চিঠির সবটা শুনে তো শকের উপর শক সে যদি একবার বুঝতো চিঠিতে এমন কিছু লেখা আছে তাহলে কোনদিনও দিত না, তাতে যদি একটা চড় খেতে হত সে তাও খেতো তারপরও দিত না। তার ওপর তাদের এমন বিচ্ছিরি হাসি দেখে চিৎকার করে বললো।”

অরু— চুপ করুন আপনারা, এই চিঠি আমার না,আর না আমি নিজে থেকে, দিয়েছি। তাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করুন।

রাফি— ও লে লে লে লে, আসছে আমাদের ন্যাকা রানী। রাফির কথা শুনে আবারো সবাই একসাথে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।

রিহান— তোরা থাম, একে আমার সেদিনি মনে ধরেছিল, যেদিন একে আমি প্রথম দেখেছিলাম। But. তোরা এখন থেকে আমার তেজি মরিচকে ভাবী বলে সম্বোধন করবি, ওকে। আর ভুলেও তার সাথে বেয়াদবি করার চেষ্টা করবি না।

অরু— আপনাদের সাহস তো কম না, নিজেরা চিঠি দিতে বলে আবার নিজেরাই সবকিছুর ডিসিশন নিয়ে নিয়েছেন, বুদ্ধিটা ভালই ছিল, তবে আমার ক্ষেত্রে কাজ হবে না।

“বলে যেই চলে যাবে তখনই রিহান পিছন থেকে আরুর হাতটা চেপে ধরে শাসিয়ে বলল।”

~~আমি রিহান যা বলি তাই করি। আর এটা আমাদের রক্তের ধারা, আর এখন যখন বলেছি তুই আমার,মানে আমার, সেটা থেকে না তুই রেহাই পাবি আর না আমি তোকে রেহাই পেতে দেব। তাই চুপচাপ সব বিষয়ে রাজি হয়ে যা তোর তোর জন্য বিষয়টা ভালো হবে।

“আরু রিহানে এমন অসভ্যর মত ব্যবহার দেখে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।”

হঠাৎ করে কি হলো কারোই বোধগম্য হলো না। তাদের সবাই বুঝতে বুঝতে প্রায় এক মিনিট সময় লাগলো। যখন পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হল, তখন রিহান তেরে এসে আরুর দুই বাহু চেপে ধরে যেই কিছু বলতে যাবে অমনি পিছন থেকে একটা শক্ত পোক্ত হাত রিহানের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল।

শাহরিয়া— সাহস কি করে হয় তোমাদের, মেয়েদের সাথে অসভ্যতা করার।

রিহান– কিন্তু ভা, ওহ, স্যার আমরা তো এর সাথে কোন অসভ্যতা করিনি। শুধু প্রপোজ করেছি। কিন্তু মেনে নিতে রাজি নয়। উল্টো আমাকে চড় মেরেছে। তাইতো আমি ওকে

শাহরিয়া— তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নিচ্ছি। আর রিহান বিষয়টা তোর জন্য মোটেও ভালো নয়। তোকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি।

“বলে সামিরার সাথে অরু কে নিয়ে যায়।”

শাহরিয়া— তোমার কোথাও লাগেনি তো?? ওরা তোমাকে নিশ্চয়ই বকাঝকা করেছে ভীষণ,

অরু— না স্যার তেমন টা না ,

শাহরিয়া— তো কেমনটা??

“অরু শাহরিয়ার কথা শুনে নিচ থেকে ওর দিকে তাকায়।”

শাহরিয়া— কি ম্যাম বলবেন??

“আরু আবারো অবাক চোখে তার প্রফেসরের দিক তাকায়। ”

শাহরিয়া— কখনো একলা চাঁদকে উপভোগ করেছ?? সন্ধ্যাবেলা শ্যাওলা গাছের কাছে কখনো একলা গিয়েছো?? কখনো কি ঝিল গাছে উঠেছ??

চলবে,

অপেক্ষা পর্ব-০৩

0

#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ3

[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

সামিরা— মেয়েকি, হেসে বলল।

~~~~ ও, ও তো আমার ভাবি।

রাফি— হোয়াট ।

সামিরা— হ্যাঁ ভাইয়ের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আর ভাইয়া ওকে এই ভার্সিটিতে এডমিশন করিয়েছে আমার সাথে।

“রাফি কিছুক্ষণ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে যায়”

“তুই ওনাকে মিথ্যা কেন বললি।” আরু

সামিরা— আরে তুই এদেরকে চিনিস না। এরা হলো ভার্সিটির সিনিয়র ভাই। আমি এদের কথাই বলছিলাম তখন। ওদের একটা গ্যাং আছে। তাদের একজন লিডার আছে। আর তাদের লিডারের নাম রিহান। ভাই কি বলবো তোকে। লিডার ভাইকে দেখতে কি জোস। কিন্তু ভাইয়া তো কাউকে পাত্তাই দেয় না। তবে একবার একটা মেয়ে ভাইয়াকে প্রপোজ করেছিল। তারপর যে সে কি কাহিনী। তাইতো তোকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমার ভাইয়ের বৌ বললাম। কেননা তাদের লিডার ভালো হলেও। এই রাফি ভাই একদম মেয়ে বাস। যাকে দেখে তার সাথেই লাইন মারে

অরু— হুম বুঝতে পেরেছি। তোর অনেক বুদ্ধি আছে।

“যাইহোক এখন তো ক্লাস শেষ বাসায় যেতে হবে। নয়তো আম্মু চিন্তা করবে। কালকে দেখা হবে আল্লাহ হাফেজ।”

সামিরা— ওকে আমার কিউট ভাবি। মুচকি হাসে

~~~বর্তমান~~~

“আজকে সারাদিনের ঘটনার বাসায় এসে অরু তার মায়ের কাছে সবটাই বলল। শুধু সামিরার ভাবি ডাকাটা বাদে।” কেননা সামিরা তো তখন বলেই দিয়েছিল। ওকে সেইফ রাখার জন্যই এমনটা বলেছিল। তাই এই বিষয়টা মায়ের কাছ থেকে চেপে গিয়েছে।

**************************************

“রক্তিম আকাশ ধীরে ধীরে লাল লাল মেঘের আবারোনের দেখা মিলে ঠিক সন্ধ্যা হওয়ার আগ মুহূর্তে। ঠিক তখন জানি একাকীত্ব জীবন উপভোগ করতে অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায়।”

“প্রতিদিন কের অভ্যাস এর মত অরুপিতা আজও নিজের একাকীত্ব প্রকাশ করতে আধো আধো সন্ধ্যাবেলায় ছাদের এক কোনাতে দাঁড়িয়ে দূর আকাশে লালচে হওয়া চারটার দিক তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে, কেন তার সাথে এমনটা হল। সে তো নিশিকে খুবই ভালোবাসতো। আর বাকি রইল নিজের সেই মানুষটা তাকে তো তুলনা বিহীন ভালোবাসতো আরু, তাহলে কেন সেদিন একটা বার তার কথা ভাবলো না সে। পুরনো কথাগুলো বার বার মনের ভিতর খুব করে আঘাত বয়েয়ানে ছোট্ট মনে। বিষিয়ে দেয় যখন মনে পড়ে এসব কথা। তবে অরু মন ভরে দোয়া করে হৃদয়ের জন্য। সে যেন ভালো থাকে।”

“কিছুক্ষণ চাঁদ উপভোগ করার পর চোখে পড়ে চাঁদের কিছুটা দূরে ছোট্ট একটা ঝকঝক করা তাঁরা। আশেপাশে আর কোন তারার আভাস নেই। আরুপিতার তাঁরা টার প্রতি কেমন আগ্রহ বাড়লো। নিখুঁত চাউনিতে কিছুক্ষণ দেখলো। তারপর আবারো একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে আসবে এমন সময় সামনে আরো একটা একই রকম তাঁরা দেখে দাঁড়িয়ে যায়। পিছন ঘুরে আবারও আগের তাঁরাটার দিকে তাকিয়ে সামনের টার দিকে তাকায়। কি অদ্ভুত দুটো তাঁরা দুই পেরান্তে । আরুপিতা তাঁরা দুটোকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিলো। বিড়বিড় করে আওরালো। পেছনের তাঁরা টা আমি আর সামনের তাঁরা টা, এটুকু বলতে আরুর মুখটা আঁধারে ঢেকে যায়। বিষিয়ে জাওয়া মনটা নিয়ে দফ দফ পা ফেলে ছাদ থেকে নেমে যায়।

” রক্তিম হওয়া চাঁদ টা শুধু আরু একা নয় অপোর প্রান্তের আরো এক এক ব্যক্তি উপভোগ করতে এসেছে। তার ও এই বিষয়টা চোখে পড়েছে। দুই প্রান্তে, থাকা দু’টো তাঁরা কে। সে ও আরুপিতার মত একি বক্তব্য পেশ করলো। একটা তাঁরা আমি আর একটা তাঁরা তুমি। জানিনা তুমি কোথায় আছো তবে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”

“আমি অপেক্ষা করবো তোমার প্রিয়তমা। জীবনে অপেক্ষা করতে রাজি তুবুউ ভুল মানুষের সঙ্গ আমি চাইনা ভুল মানুষ, আমর জীবনে না আসুক।”

এসব চিন্তা করার মধ্যে পিছন থেকে মেয়েই,লি আওয়াজ পেয়ে, শাহারিয়ার বুঝতে সময় লাগলো না। এটা আর কেউ না।তার একমাত্র দুষ্ট মিষ্টি আদরের ছোট্ট বোন সামিরা।

সমিরা— আমার ভাই এখানে কি করছে। তার কি মান খারাপ?? তাহলে বলে দিচ্ছি একদম মোন খারাপ করার দরকার নেই। কারণ তার জন্য সু,মিষ্টি একটা ভাবী পছন্দ করেছি আমি।

~~তাই ভাই এর আর মন খারাপ করার দরকার নেই।

শাহারিয়া— হয়েছে তোর পাগলামি করা।

সামিরা—তুমি সব সময় এরকম করো ভাইয়া। তুমি আমার একটুও মন বুঝনা। এখন যে আমার একটা ভাবি প্রয়োজন সেটা তুমি মোটেও বুঝতে চাইছো না। নিজে তো ভাবিয এনে দিবেনা। এখন আমি নিজে থেকে ভাবি পছন্দ করেছি তাও তুমি ভাই পাত্তা দিচ্ছে না।

শাহারিয়া— বুঝতে পেরেছি আমার পিচ্চির মন খারাপ। কি নিয়ে এমন খারাপ বল।

সামিরা— না ভাইয়া আজ তো আমি ভীষণ হ্যাপি। কারণ মিষ্টি ভাবি তো আমাকে তার বেস্ট ফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছে। তাইতো আমি তোমাকে আজ তার কথা বলতে এলাম। কিন্তু তুমি তো আমাকে পাত্তা দিচ্ছো না।

~~ বাই দ্যা ওয়ে, ভাইয়া কাল থেকে তো তুমি আমাদের ভার্সিটিতে জয়েন হচ্ছো। রেগুলার তাইনা।

শাহারিয়া— হ্যাঁ কাল থেকে রেগুলার হচ্ছি।

“সামিরার হঠাৎ কিছু একটা মনে উঠতেই লাফিয়ে বলল।”

সামিরা— ভাইয়া তুমি তো বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ নিচ্ছে তাই না। তুমি কি জানো আমার মিষ্টি ভাবিও আমার বিভাগের। মানে তোমার স্টুডেন্ট। আমি শিওর আমার মত তুমিও আমার বেস্টুকে দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে।

শাহরিয়া— তোর বকবক করা হয়ে গেছে তাহলে এবার থাম, এখান থেকে চল।

সামিরা— কিন্তু ভাইয়া,,

“শাহরিয়া সামিরার কোন কথা পাত্তা না দিয়ে নিচে নেমে যায়।”

সুবিশার একটা রাত্রি শেষ হয়ে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ফুরফুরে এক সকালে দেখা মিলল। শীতের সকাল মানেই অন্যরকমের প্রশান্তি। টিপ টিপ কুয়াশা। মুখ থেকে কথা বলার সময় ধোয়া বের হওয়া। শীতের গরম কাপড় পরা। আহা সে যেন এক মনো মুগ্ধকর পরিবেশ।
অরুপিতা প্রতিদিনকার মতো ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হয়ে যায় বাসা থেকে। আজ যেন একটি বেশি লেট হয়ে গেছে। তাই তাড়াহুড়ো করে একটু বের হলো।তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য, তাড়াহুড়া করতে করতে ভার্সিটিতে প্রবেশ করার সময় একদমই খেয়াল না করে দৌড়াতে দৌড়াতে গেল ক্লাস রুমের দিক।

“ও মাগো,” আপনি কি চোখে দেখতে পান না। নাকি চোখ দুটো থাকতেও অন্ধ। ভেঙে দিলেন তোমার কোমরটা। অরু

এই যে আমি ঠিকই চোখে দেখতে পাই। আপনি তো দৌড়াতে দৌড়াতে আমার উপরে এসে পড়লেন। আবার উল্টা আমাকে কথা শোনাচ্ছেন। জানেন এর শাস্তি কি হতে পারে আপনার। আপনি কার গায়ের উপর পরেছেন।

অরু— আপনি কোথাকার কোন ছাগল তা আমি কেন দেখতে যাব, আপনার দোষ যেমন। আমার একটু তেমন দোষ নেই। আমারতো লেট হচ্ছে বলে এভাবে আসছিলাম। আপনি একটু দেখে চললেই তো হত
তাহলে তো আর দুর্ঘটনা ঘটতো না।

সামনে থাকা যুবকটি আরুপিতার এমন কথা শুনে চিবিয়ে চিবিয়ে বলবো।-

~~ রিহান আমি, আর তুমি আমার সাথে পাঙ্গা নিচ্ছ। জানো এর পরিণত কি হতে পারে। অপেক্ষা কর এর ফল তোমাকে ঠিকই বোঝাবো।

অরু— আপনি রিহান হন কিংবা ফিহান। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন। তাতে আমার কি। এখন আপনি আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়ান। আমি ক্লাসে যাব আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আজকে তৃতীয় ক্লাসে নতুন প্রফেসর এর ক্লাসে যেতে হবে। ভাই আপনার সাথে এই মুহূর্তে তর্কে যেতে চাই না। বলে রিহান কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওখান থেকে দৌড়ে চলে যায়।

রিহান তো মেটার এমন কান্ড দেখে কিছুটা অবাক হয়। কারণ তার জানামতে ভার্সিটির সবাই তাকে চেনে। ভয় ও পায় তার সাথে কেউ কথা বলে না। আর এই মেয়েটা কিনা তাকে টক্কর দিয়ে কথা শুনিয়ে গেল?

“তবে রিহানের মেয়েটাকে বেশ মনে ধরেছে। মেয়েটার কথা বলার স্টাইল। কথায় কথায় ভ্রু কুঁচানো। চোখদুটো বড় বড় করে ফেলা। বেশ ঘায়েল করেছে রিহানের মনকে,

তবে এবার কি রিহানের মনে কেউ জায়গা করে নিতে পারবে? নাকি মনে ভালোবাসার আবেশ এসেও হারিয়ে যাবে??

তাড়াহুড়োর মাঝে দুই দুটো ক্লাস শেষ করে অরুপিতা ছুটলো নতুন প্রফেসরের ক্লাস রুমে বায়োলজি সাবজেক্ট নিয়ে। কোনমতেই নতুন প্রফেসরের ক্লাসে দেরি করতে চায় না সে, তাড়াতাড়ি আশায় প্রথম বেঞ্চেই জায়গা হল তারার সামিরার।

ক্লাসে মোটামুটি সবাই উপস্থিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর প্রফেসর ক্লাস এ ঢুকে সবাইকে স্বাগতম জানালো। সাথে সকল স্টুডেন্টরাও প্রফেসরকে সালাম জানিয়েছে। সাথে সবাই সবার নাম পরিচয়টাও করে নিয়েছে। ক্লাস চলার মাঝামাঝি সময় হঠাৎ শাহরিয়ার মনোযোগ হল প্রথম বেঞ্চের সামিরার পাশে বসা একটা মেয়েকে। এখন বললে ভুল হবে প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছে। একদম চুপচাপ নিষ্পাপের মতো মেয়েটা। চেহারাও বেশ মায়া জড়িয়ে আছে। ক্লাসে আসার পর প্রত্যেকটা মেয়েই তার দিকে আর চোখে তাকিয়েছে শুধু এই মেয়েটা বাদে। তাই সে কৌতুহল বসত বেশ কয়েকবার সামনে বসে থাকা অরুপিতার দিক লক্ষ করেছে মেয়েটা তার দিক তাকায় কিনা,

তবে কি শাহারিয়ার ও মনে ধরল অরুপিতা কে?? কি হচ্ছে চলেছে তাদের তিনজনার জীবন ভবিষ্যতে?? কে পাবে কে হারাবে এই ঠকে যাওয়া মেয়েটা কে?

চলবে,,।

অপেক্ষা পর্ব-০২

0

#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi
#পর্বঃ2 [ফ্রেন্ডশিপ]

[অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

বহমান নদীর স্রোত সে তো তার মাতই বয়ে চলে। ঠিক সেভাবেই কারো কারো জীবন উন্নত হচ্ছে। আবার কারো কারো জীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকছে।
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী।

আজ অরুপিতার ইউনিভার্সিটিতে নবম তম দিন। আজকে তার সাথে এই প্রথম আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো।

~~ফ্লাশ ব্যাক ~~

প্রতিদিনের মত আজকেও আরু ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস করছিল। দুটো ক্লাস শেষ হওয়ার পর পর ওর পাশে বসা একটা মেয়ে ওর হাত দুটো টেনে নিয়ে গিয়ে ছিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে যায় সাথে কিছু মেয়েরাও যায়।মেয়েটাকে দেখে মনে হয়েছিল মেয়েটা আরুর উপর ভীষণ রেগে আছে।
অরু মেয়েটার এমন রাগী চেহারা দেখে কিছুটা ভরকে যায়। সে তো ভার্সিটিতে আসে ক্লাস করে চলে যায়। সেতো কারো সাথে ঝামেলা করে না। না মোটেই করেনা।তাহলে এই মেয়েটা কেন তার উপর এত রেগে আছে বুঝতে না পেরে মিন মিন করে বলল।

অরু— আমি তো কিছু করিনি তাহলে আপু আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন?

~~”আসছে ন্যাকা। এই আমি তোমার ক্লাসমেট তাই আপু নয় আমার নাম ধরে বলবা ওকে।”

অরু— কিন্তু আমিতো আপনার নাম জানিনা।

“আমি সামিরা এই ভার্সিটির ইংলিশ প্রফেসরের মেয়ে”।
এখন থেকে আমার নাম ধরে ডাকবি। আর আমি তোকে তোর নাম ধরে ডাকবো, ওকে । আর এই যে কিউটি চেহারা সুরত গায়ের রং সুন্দর বলে। বেশি অ্যাটিটিউড তাই না তোমার। আমাকে ইগনোর করছো। বিগত ছয় সাতটা দিন ধরে ট্রাই করছি তোমার সাথে কথা বলার। আর তুমি কিনা আমাকে পাত্তা দিচ্ছো না। আর তোমাকে অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করছি। আসছো ক্লাস করছ চলে যাচ্ছ। কারো সাথে কথা বলছো না কেউ কথা বলতে চাইলে তার সাথে বলছো না। ভাব একটু বেশি তাই না তোমার। তুমি জানো আমি কে। আর তুমি আমাকে ইগনোর করো।এই আমিময় মানুষটার সাথে চলার জন্য কত মানুষ ফ্রেন্ড হতে আসে। আর আমি তোমাকে নিজে থেকে ফ্রেন্ড হওয়ার কথা বলছি আর তুমি আমাকে ইগনোর করছো । ভাবো কি নিজেকে।

“অরু মেয়েটার এমন কথা শুনে প্রথমে কিছুটা আশ্চর্য হলেও। পরে কিছু একটা ভেবে বলল।”

অরু— সরি আমি কাউকে ইগনোর করছি না আপু। আপনারা হয়তো তো ভুল হচ্ছে কোথাও।

সামিরা– আবারো আপু। তুই শুধু আমাকে সামিরা বলবি আর আমি তোকে তোর নাম ধরে বলবো বুঝলি।
আর তুই আমার ফ্রেন্ড। ও হ্যাঁ শুধু ফ্রেন্ড নয় বেস্ট ফ্রেন্ড।

অরু— কিন্তু,

সামিরা— কোন কিন্তু নেই আমি বলেছি মানে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। মানে বেস্ট টু ব্যাস।

~~ এই ভার্সিটিতে আমি অনেকবার এসেছি কিন্তু মনের মত কাউকে পাইনি। সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে হাজির হয় আমার সাথে চলার জন্য। কিন্তু আমি তেমন কারো সাথে ফ্রেন্ড হই না। কিন্তু তোকে দেখার পর অন্যরকম মনে হয়েছে। তাই তো নিজের বেস্ট টু বানাতে চাই। কি হবি তো আমার বেস্ট টু?? আর আমার পাশে যে ওদের দেখতে পাচ্ছিস ওরা হলো আমাদেরই ক্লাসমেট। আমি শুধু ওদের দুজনের সাথেই কথা বলি। সামিরা ডান পাশটা দেখিয়ে ও হল মায়া। আর ও হল ঋতু।চাইলে তুই ওদের সাথে কথা বলতে পারিস।

“অরু কিছুক্ষণ সামিরা দিক আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে থেকে বলল ”

অরু— আমি কারো ফ্রেন্ড হতে পারবো না। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।বলে যেই চলে যেতে নিবে। তখনই পিছন থেকে সামিরা আরুর হাতটা চেপে ধরে বললো।

সামিরা— তুমি আমাকে সরাসরি আনফ্রেন্ড করে দিচ্ছো। (মুখটা হা করে )

অরু— দেখো,

সামিরা— আমি কিছুই জানি না তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবে ব্যাস। আর যদি না হও আমি তোমাকে কোথাও ছাড়াছি না। তোকে এখন এই মুহূর্তে আমার সাথে ফ্রেন্ড হতে হবে ,তাহলে তুই ছাড়া পাবি। তার আগে নয়। আর যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিস তো আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেব বলে দিলাম। -মুখটা বাচ্চা বাচ্চা করে

“অরু তো পড়লো মহা বিপাকে। এ কেমন মেয়ে রে বাবা ফ্রেন্ড না হলে ডিভোর্স দিবি? অরু তো কাউকে নিজের জীবনে আর বেস্ট ফ্রেন্ড বানাতে চায় না। কারণ সে তো তার বেস্ট ফ্রেন্ডের থেকেই ধোঁকা পেয়েছিল। সে,জে আবারো ধোঁকা পাবে না এর তো কোন গ্যারান্টি নেই। কিন্তু এই মেয়েটা কেমন গায়ে লেপটে পরা মেয়ে। অনেকদিন যাবতই খেয়াল করছে।”

সামিরা— কি হল চুপ করে আছো কেন কথা বল। -মুচকি হেসে । হবে তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

এইবার আরুপিতা মেয়েটার সাথে সাথে মুচকি হেসি দিয়ে বলল।

অরু— বেস্ট ফ্রেন্ড হলে খুশি আপনি??

সামিরা— খুশি মানে আমি তো তোকে আমার ভাইয়ের ব,

অরু— মানে??

সামিরা— ইয়ে মানে কিছু না। আমি বলতে চাইছি আমি অনেক খুশি হব। তবে তুই এখন আপনি বলছিস কেন তুই করে বল।

অরু— এই যে আমার সামিরা রানী। জান আজ এই মুহূর্ত থেকে আপনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। এবার খুশি তো?

সামিরা আরুপিতার ফ্রেন্ডশিপ একসেপ্ট করেছে বলে এক লাফে সামিরা অরুপিতাকে জড়িয়ে ধরে এগালে-গালে টপটপ করে দুটো চুমু খেয়ে বলল।

সামিরা— সত্যি দোস্ত আমি অনেক অনেক অনেক হ্যাপি।

অরু— ঠিক আছে ঠিক আছে এখন তো আমাকে যেতে দাও। এখনো ক্লাস বাকি। সেটা কি মনে আছে তোমাদের।

সামিরা— আবার তোমাদের ,

অরু— ওকে সরি চল এবার তোরা, হয়েছে ।

সামিরা মুচকি হাসি দিয়ে অরুর হাতটা শক্ত করে মুঠোর মধ্যে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে,মায়া ঋতুকে উদ্দেশ্য করে বলল।

সামিরা— তোরাও চলে আয়।

“সময়টা ডিপ দুপুর, শীত হওয়াতে তেমন কারোই গরম লাগছে না। তার উপর ভার্সিটি প্রোগ্রাম আছে তাই স্যার ম্যামরা সব স্টুডেন্টদের ভার্সিটি মাঠে ডেকে পাঠিয়েছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাকি কথা বলবে। সবাই মাঠে অনেকক্ষণ আগে উপস্থিত হয়ে গেছে। কিন্তু এই যে সামিরা ফ্রেন্ড হওয়ার পর থেকে যেন আরুপিতার মাথাটা কথা বলে বলে শেষ করে ফেলছে। একটা মেয়ে কতটা ভালো হলে তার সমস্ত কিছু একদিনের ভিতর একটা মানুষকে খুলে বলতে পারে। সেটা হয়তো সামিরাকে না দেখলে কেউ বলবে না। এই যে মাঠে আসার পর থেকে আরুপিতার কান কথা বলে যাজরা করে দিচ্ছে। আর তখন থেকে একটাই কথা। আজকে নাকি ভার্সিটিতে নতুন প্রফেসর আসবেন। প্রফেসর নাকি দেখতে খুবই সুন্দর এর আগে আরো একবার এসেছিল। তাছাড়া সবার সাথে নাকি খুবই ডিপলি ব্যবহার করেছেন। প্রথম দিনি এসে নাকি সবার মনে জায়গা করে নিয়েছেন।”এর সাথে আরো বললো।
ভার্সিটিতে বড় ভাই নামে একটা ছেলে আছে। যেমন রাগী তেমন সুন্দর। এক দেখাতেই প্রেমে পড়ার মতন। অনেক মেয়েরাই নাকি লাইন মারে তবে কাউকে সুন্দর ভাইয়া পাত্তা দেয় না। তাদের একটা গ্যাং ও আছে।

অরুপিতা সামিরার এত বকবক শুনে কিছুটা ধমকের সুরে বলল।

অরু— সামু চুপ কর বোন। স্যার ম্যাম কি বলছেন সেটা আগে শোন।

“তোমাদের কিছুদিন আগে একজন প্রফেসরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল তাই না? উনি কাল থেকে তোমাদের এখানে রেগুলার জয়েন হবেন। উনি সাইন্সের বায়োলজি বিভাগে পড়াবেন। তোমরা যারা সাইন্স বিভাগে আছো তারা সবাই কালকে স্যারকে স্বাগতম জানাবে কেমন। আর আমাদের ভার্সিটিতে নিউ ইয়ার উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে। তাই তোমাদের এখানে ডেকে পাঠানো। আর যারা থার্ড ইয়ারে আছো এই বছর তাদের কিছু দায়িত্ব আছে। তোমরা লাইব্রেরীতে আমাদের সাথে দেখা করো।”

~~~~~~~~~~~

~~ হেই সুন্দরী। এদিকে এসো

“এই তোমাদের দাঁড়াতে বললাম না।”বলতে বলতে সামিরা দের সামনে দাঁড়ালো।

সামিরা— ও রাফি ভাই আপনি। কিছু বলবেন।

রাফি— সামিরা তোমার সাথে এই মেয়েটা কে?? ভ্রু কুঁচকে।

সামিরা— মেয়েকি, হেসে বলল।

~~~ও, ও তো আমার ভাবি,

চলবে,,।

অপেক্ষা পর্ব-০১

0

#সূচনা_পর্ব (1)
#অপেক্ষা
#Mariam_akter_juthi (writer)

“কেমন মেয়ে মানুষ তুমি হ্যাঁ যে তোমারই সামনে তোমার হবু স্বামী তোমার বান্ধবীকে বিয়ে করছে আর তুমি তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছো। কিছু করছ না কেন তুমি।”

“পাশের বাড়ির এক আন্টির মুখে এমন কথা শুনে অরুপিতার পূর্ণিমার আধারে ঢাকা মুখ যেন ত্যোচ্ছিল্য ন্যায় হাসি ফুটে ওঠে। সে এখানে এসে এমন একটা দৃশ্য দেখবে কখনো কল্পনা করেনি। যেই জায়গার তার বসার কথা ছিল যেই জায়গাটা তার থাকার কথা ছিল সেই জায়গায় আজ তার বান্ধবী দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল।”

অরু—সবার কপালে তো সব থাকে না। আমার কপালে হয়তো নেই তাই হয়তো আমিও পেয়েও পাইনি।

বলতে বলতে অঝোরে চোখের পানি টপটপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ার আগে মুছতে মুছতে ওখান থেকে চলে আসে।

সুখ জিনিস টা সবার কপালে থাকে না। অনেকেই বলে কালো মেয়েদের কাঁপালে নাকি সুখ থাকে না। তবে এই যে অরুপিতা দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। গায়ের রং চকচকে ফর্সা। শান্ত সৃষ্ট এক দেখাই পছন্দ হবার মত একটা মেয়ে। তবে কই তার কপালে তো সুখ জিনিসটা জুটলো না। হয়তো কেউ আরু কে না দেখলে বলবে না। সুন্দর আর কালো মেয়েদের ভিতরে তফাৎ নেই কারণ সুখ সবার কপালে থাকে না।

[আজকে আমাদের গল্পের নায়িকার নাম অরুপিতা ইসলাম। বাবা মায়ের দ্বিতীয় তম সন্তান। সবাই ছোট করে অরু বলে ডাকে। তার পারিবারিক অর্থ তেমন না হলেও মোটামুটি অবস্থানে। এবার H.S.C পরীক্ষা দিয়েছে সামনে রেজাল্ট আসবে। হাইট 5.2 ফিট।]

কেন নিশি কেন কেড়ে নিলে আমার থেকে ওকে। কই আমি তো তোকে কোনদিন বন্ধুর চোখে দেখিনি বরং নিজের বোনের মত ভালবেসেছি। আর তুই কিনা বন্ধু হয়ে বন্ধুর হবু স্বামী কে কেড়ে নিলি। কেন এমনটা করলি আমার সাথে। তুই জানতি না হৃদয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তাহলে কেন নিশি কেন।

নিশি কিছু বলবে তার আগে পাশ থেকে হৃদয় অরুর হাতটা চেপে ধরে শাসিয়ে বলল।

হৃদয়– দূরে থাকো আমার বউয়ের কাছ থেকে। আমার বউয়ের গায়ে বিন্দুমাত্র আঘাত আমি সহ্য করব না।

অরু– হৃদয় এই কথাটা তো আমার জন্য প্রাপ্য ছিল তাই না। হৃদয় আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুধু ভালবাসি না ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। প্লিজ হৃদয় তুমি আমার সাথে এমন টা করতে পারো না।

হৃদয়–আমি তো তোকে ভালবাসি না। তাই তুই আমাদের থেকে দূরে থাক এটাই ভালো হবে।

হৃদয় আরুর সাথে সব সম্পর্ক অস্বীকার করছে বলে। অরু নিশির কাছে গিয়ে হাতজোড় করে পায়ের কাছে বসে পড়ে বলে।

অরু– প্লিজ নিশি তুই তো জানিস হৃদয় আর আমার মধ্যকার সম্পর্কে কথা। তাহলে তুই কেন এই বিয়েটা করলি। কিভাবে পারলি আমার সাথে এমনটা করতে।

নিশি– অরু তুই কত বোকা, তা না হলে বল একটা মেয়ে যখন তার বয়ফ্রেন্ড সাথে দেখা করে তখন কি তার বান্ধবী কে নিয়ে যায়। কিন্তু না তুই তো আমাকে নিয়ে গেলি। তারপর বয়ফ্রেন্ডের রূপে কাজিনের সাথে নিজের বান্ধবীকে একলা ছেড়ে দিলি। আমরা কোথায় কি করছি তাও তুই দেখলি না।তারপর কি একটু খোঁজ নিলি না তোর বয়ফ্রেন্ড বান্ধবী তোর পিছনে পিছনে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে না তো। তুই তো বোকা তাই তো অন্ধের মত বিশ্বাস করে গিয়েছিস আমাদের। তাই আজ তোর মনে হচ্ছে এমনটা। তুই যদি শুরু থেকে আমাদের একসাথে থাকতে না দিতে তাহলে হয়তো আজ এমন হতো না। আর প্রথমে আমি নই তোর এই কাজিন ভাই আমাকে প্রথম প্রপোজ করেছিল। আর আমারও একটু তোর ভাইয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিল। তাই রাজি হয়ে গেলাম।আর এখন আমরা বিয়ে করেছি বলে দোষ হয়ে গেল। আর হৃদয় তোকে নয় আমাকে ভালোবাসে। তাইতো আমরা বিয়ে করলাম।

ভালোবাসার মানুষ দুটোর মুখে এমন বিশ্বাসঘাতকের মত কথা শুনে। স্তব্ধ বণে যায় অরু। কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না। একদিকে প্রিয় মানুষ আরেক দিকে প্রিয় বিশ্বস্ত বন্ধু। কাকে কি বলবে। কেউতো তাকে ভালোবাসে না। যদি ভালোবাসতো তাহলে তো তার সাথে এমন কাজ করতে পারত না।

তার এসব চিন্তা করার ভিতরে হৃদয় নিশির হাত ধরে গাড়িতে উঠে বরযাত্রী নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

বিধ্বস্ত অরুর চিৎকার করে আজ কান্না করতে ইচ্ছে করছে খোলা আকাশের নিচে। কেন করলো তার প্রিয় মানুষ গুলো তার সাথে এমনটা। সে কি কারো সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। না মোটেও এমনটা করেনি।তাহলে কেন তার সাথে এমনটা হল। কোনরকম উঠে হেলিয়ে পড়া শরীরখানা নিয়ে চোখের অশ্রু গড়াতে গড়াতে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে বললো।-

আরু– সময় হোক পূর্ণিমার চাঁদও একদিন আঁধারে ডুবে যাবে।ঠিক যেমন আজ আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।

সময় গড়াচ্ছে সময়ের মতন। যেমন দিনের আলো ফুরিয়ে রাত আসে ঠিক আবার রাতের আঁধার ফুরিয়ে দিন আসে। মানুষের জীবনের গতি ও ঠিক তেমনি ভাবে চলে। আমরা চাইলেও তা বাধা দিয়ে রাখতে পারি না। আর ঠকে যাওয়া মানুষ গুলোর ক্ষেত্রে এই জিনিসটা আরো প্রভাবশালী হয়। মানুষের থেকে নিজেকে আড়াল করে একাকীত্ব বেছে নেয়। ঠিক তেমনি অরু নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছে। যে মেয়েটা সারাদিন হইহুল্লোরে মেতে থাকতো। সেই মানুষটার মুখে এখন আর সচরাচর হাসি দেখা যায় না।

মেয়ের এমন রুম বন্ধতা দেখে বেশ চিন্তায় পড়েন মা রুবিনা। সেও কোনদিন ভাবিনি নিজের ননদের ছেলে তার মেয়ের সাথে এমন করবে। তারা তো চেয়েছিল হৃদয়ের সাথে অরুর বিয়ে দিতে। তাহলে হঠাৎ কোথা থেকে কি হয়ে গেল তারও মাথায় আসছে না। রুবিনা দরজার সামনে এসে আস্তে করে দরজাটা টোকা দিয়ে বলল।

রুবিনা— অরু মা দরজাটা খোল। তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। তাছাড়া আজকে তো তোর রেজাল্ট দিবে সেটা তো মনে হয় দিব্যি ভুলে গিয়েছিস।

মায়ের বাধ্য সন্তান হওয়ায় মায়ের দরজায় টুকা পাওয়ার সাথে সাথে দরজাটা খুলে বলল।

অরু–আম্মু ভুলিনি আমি মনে আছে,

রুবিনা মেয়ের মুখের দিক তাকিয়ে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে বলল।

রুবিনা— আমি জানি আমার মেয়ে আমার আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে। শোনো মা যারা ঠকে যায় মূলত তারা ঠকে না মা। কিন্তু যারা ঠকায় দিনশেষে তারাই ঠকে যায়। তুই দেখে নিস মা একদিন তোর সুখের শেষ হবে না। তোর মুখে সুখের হাসি ফুরাতে চাইবে না। শুধু নিজেকে গড়ে তোল। তুই কোন বাজারের কুকুর নস যে শিস দিলে পিছনে তাকিয়ে থাকতে হবে। তুই আমার মেয়ে। তোকে বাস্তবতার সাথে নিজেকে মানিয়ে শক্ত হতে হবে। পথ চলতে হবে। নিজেকে গড়তে হবে সেইসব মানুষের জন্য যেসব মানুষেরা তোকে ঠকিয়েছে। তাদেরকে তুই দেখিয়ে দে তুই ঠকে যাসনি। বরং তোকে না পেয়ে সে ঠকে গিয়েছে।

আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটা চলে এসেছে। যেটার আশায় এতদিন অরু অপেক্ষা করছিল। হ্যাঁ অরু 4.89 পেয়েছে H.S.C রেজাল্টে।আর তার স্বপ্ন ও পূরণ হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়ে।আজ তার কলেজে প্রথম দিন। তাই সুন্দর করে হিজাব করে রেডি হয়ে কলেজ উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

তবে অরু কি পারবেন তার পুরনো স্মৃতিকে ভুলে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে। আদৌ কি এমন কেউ আসবে তার জীবনে যে এসে অরুর পুরনো স্মৃতি গুলোকে ভুলিয়ে জীবনটা সুখে ভরিয়ে দিতে নাকি ঠকে যাওয়া জীবনটা স্তব্ধই রয়ে যাবে?

চলবে।

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১১(অন্তিম পর্ব)

সোহা আরহামকে টেনে নিয়ে গিলো। তুরাব মিহিকাকে ছেড়ে ওর হাত ধরে এগিয়ে গেল। ছাদের কাণিশে দাঁড়াতেই হাজারো রঙের লাইট জ্বলতে থাকা বেলুন আকাশে উড়তে শুরু করলো। মিহিকা অবাক নয়নে দেখতে লাগলো। তুরাব হেসে মিহিকার দিকে ঝুকে ওর কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
“আই লাভ ইউ মাই লাভ”

মিহিকা চোখ বুজে নিলো। সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে তার খুব। মিহিকা মিষ্টি করে হেসে রেলিং এ রাখা তুরাবের হাতে হাত রেখে বলল,
“আমি আমার বিবাহিত একমাত্র স্বামীকে আজীবনের জন্য পাশে চাই। থাকবেন তো আমার পাশে!”

তুরাব মুচকি হেসে বলল,
“পাশে থাকার জন্যেই তো এতকিছু করা।”

দুইজনই হাসলো। তুরাব ধোঁয়াশায় ছিলো মিহিকা কেমন প্রতিক্রিয়া করবে তা নিয়ে। কিন্তু হুট করেই সব যে মিহিকা মেনে নিবে ভাবেনি তুরাব।

দুইজনকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাসতে দেখে দূরে দাঁড়িয়ে হাসলো আরহাম, সোহা আর রহিমা খালা। আরহাম রহিমা খালার দিকে তাকিয়ে বলল,
“খালা সকালে ওনারা আসবেন তো।”

রহিমা খালা হেসে বললেন,
“আরে আরহাম বাবা তুমি একদম চিন্তা করোনা। তুরাব বাবাকে নিজের ছেলের মতো আগলে রেখেছি সবসময়। আর ছেলের সমস্যা মানেই আমার সমস্যা। দেখবে সকালে নতুন বছর আরো বেশি সুন্দর হবে।”

আরহাম হেসে বলল,
“ধন্যবাদ খালা মিহিকাকে বোঝানোর জন্য।”

রহিমা খালা হাসিমুখেই বললেন,
“বোঝানোর কিছু নেই। মেয়েটা আসলে নিজেই বুঝতে পারছিলো না। আর জানো তো মতের বিরুদ্ধে কিছুই করা যায় না।”

—————

তুরাব মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তা বলছি কি মেঘনন্দিনী তোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

মিহিকা আতশবাজি দেখতে ব্যস্ত ছিলো। মিহিকা সে ধ্যানে থেকেই বলল,
“আপনাকেও।”

তুরাব চোখ বড় বড় করে বলল,
“কিহ বললে মেঘনন্দিনী?”

তুরাবের জোরে বলা কথায় হুশ হতো মিহিকার। মিহিকা দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো। তুরাব চোখ ছোট ছোট করে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার দিকে নজর দিচ্ছো?”

মিহিকা ভ্রুকুচকে বলল,
“নজর দেওয়ার কি আছে হ্যাঁ। আপনিই তো হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। তখন তো আমি কিছু বলিনা। ওইদিন সকালে যে আমার পাশে শুয়ে আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। আমি কি এই নিয়ে আপনাকে কিছু বলেছি।”

তুরাব কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“ওই ওই ওয়েট, তুমি তার মানে জেগে ছিলে তখন!”

মিহিকা আমতা আমতা করতে বলল,
“একটা মানুষ কতক্ষন ঘুমাতে পারে। এখানে আনার পর থেকে আমাকে খালি ঘুমাতে বলছেন।”

তুরাব অবাক হয়ে বলল,
“এই আমি কখন বললাম ঘুমাতে। আমি তো তোমার সাথে বাসর দিনই করতে চেয়েছিলাম।”

মিহিকা কান গরম হয়ে গেল। তুরাবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি এতো ঠোঁট কাটা কেন?”

তুরাব মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“খালি বলছি তাই এমন করছো, কিছু তো করিই নি।”

মিহিকা আমতা আমতা করে বলল,
“আমার ঠান্ডা লাগছে আমি নিচে যাবো।”

তুরাব হুট করেই মিহিকাকে কোলে তুলে নিলো। মিহিকা হতবাক হয়ে বলল,
“একি কি করছেন আপনি?”

তুরাব মিহিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমিই তো বললে রুমে যাবে!”

মিহিকা ছটফট করতে করতে বলল,
“তো এভাবে কোলে নিলেন কেন?”

তুরাব হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“তোমাকে রুমে নিয়ে যাবো তাই।”

মিহিকা তুরাবের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে বলল,
“আমাকে নামিয়ে দিন। আমি নিজে পায়ে হেঁটে যেতে পারবো।”

তুরাব ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
“না তো আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। আজ তুমি কিছুতেই আমার বাসর করা থেকে আটকাতে পারবেনা।”

মিহিকা চোখ গোল গোল করে বলল,
“মানে!”

তুরাব টুক করে মিহিকার গালে একখানা চুমু বসিয়ে বলল,
“মানেটাতো রুমে গিয়েই বুঝতে পারবে।”

তুরাব নিজের রুমে এসে পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দরজাটা আটকে দিলো। ডিম লাইটের আলোতে মিহিকার মুখটা বেশ মায়াবী লাগছে। তুরাব মিহিকাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মিহিকার চোখে চোখ রাখলো। মিহিকা কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুরাব ডানহাতের তর্জনী মিহিকার ঠোঁটে রেখে বলল,
“হুস আর কোনো কথা হবে না। নতুন বছরের প্রথম প্রহরে তুমি শুধু অনুভব করবে ধোঁয়াশার মেঘের মাঝে এক ঝলক ভালোবাসার সূক্ষ রোদের ঝিলিক।”

———————

সকালের তুরাবের ঘুম ভাঙতেই চোখ খুলল সে। সামনেই মিহিকার ঘুমন্ত মুখ ভেসে উঠতেই হাসলো সে। মিহিকার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো আলতো স্পর্শে সরিয়ে দিয়ে কম্বল ঠিক করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবারো চোখ বুজলো তুরাব। ঠোঁটে তার প্রশান্তির হাসি।

মিহিকা চোখ পিটপিট করে তাকাতেই তুরাব বলে উঠলো,
“গুডমর্নিং মেঘনন্দিনী।”

মিহিকা আলতো হাসলো। তুরাব দুষ্টামি হাসি দিয়ে বলল,
“ভাবছি শশুর মশাইয়ের সামনে কিছু আন্ডাবাচ্চা নিয়ে হাজির হবো। উনি ওদের মুখের দিকে তাকিয়েই আমাদের ঠিক মেনে নিবে। কি বলো বউ?”

মিহিকা কিছুক্ষন কপাল কুচকে তুরাবের দিকে তাকিয়ে থাকলেও পরমুহূর্তেই বিষয়টা বুঝতে পেরে তুরাবের বুকে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো। তুরাব হাসতে লাগলো হো হো করে। তখনি দরজায় টোকা পরলো। তুরাব ভ্রুকুচকে বলল,
“কে?”

রহিমা খালা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলেন,
“তুরাব বাবা উঠো তোমার শশুরবাড়ি থেকে লোকজন এসেছে।”

তুরাবের কুচকে যাওয়া কপাল আরো বেশি কুচকে গেল। মিহিকা শুনেও অবাক। তুরাব বলে উঠলো,
“সকাল সকাল মজা করেন না তো খালা।”

রহিমা খালা আলতো হেসে বললেন,
“আমি মজা করছিনা। খানসাহেব সোফার রুমে বসে আছে তার স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে।”

তুরাব ঝট করে উঠে পরলো। ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। ঘড়িতে সকাল নয়টা। যদিও ফজরের সময় দুইজন মিলে উঠে নামাজ আদায় করে প্রার্থনা করেছে নিজেদের নতুন জীবন যেন ভালোমতো কাটে। তুরাব ফ্রেশ হয়ে এসে বলল,
“আমি বললে তুমি বের হবে।”

মিহিকা মাথা নাড়ালো। তুরাব বের হয়ে সোফার রুমে এলো। সত্যিই আরিফুল সাহেব, হেনা খান আর মিহির এসেছে। তুরাব মিহিরের দিকে ইশারা করতেই সে হাসলো। তুরাব কিছুই বুঝতে পারলো না।

আরিফুল সাহেব মুচকি হেসে বললেন,
“আরে জামাইবাবা জীবন আসো বসো।”

তুরাব হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আরিফুল সাহেবের দিকে। হা হয়ে বলল,
“একি আপনি আমার সাথে এমন করে কথা বলছেন!”

আরিফুল সাহেব এগিয়ে এসে তুরাবের পিঠে হাত রেখে বললেন,
“আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা। আমি বুঝতে পারিনি যে আমার মেয়েও তোমাকে চায়।”

তুরাব কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“মানে!”

তখনি রুমে আরহাম প্রবেশ করতে করতে বলল,
“মানে আর কি বিয়ে যখন হয়েই গেছে। আর মিহিকাও তোকে চায়। সেখানে ওনাদের আর কি বলার থাকে। তাই ওনারা তোদের মেনে নিচ্ছেন।”

আরিফুল সাহেবও আরহামের কথায় সম্মতি দিয়ে বললেন,
“হুম বাবা আমি তখন বুঝতে পারিনি তুমিই আমার মেয়ের জন্য ঠিক। আর তুমি যদি আমার মেয়েকে ভালোই না বাসতা তাহলে এতো কষ্ট করে এতটা অপেক্ষা করে এতো ভালো চাকরি করতে না।”

তুরাব হাসলো। মনে মনে বলল,
“বেকার থাকলে জীবনেও এই বুইড়া খাটাশ আমারে মাইনা নিতো না।”

আরিফুল সাহেব কপাল কুচকে বললেন,
“কিছু কি বললে বাবা?”

তুরাব হেসে বলল,
“না না আসলে বলতে চাইছি কি এতো তাড়াতাড়ি সুমতি ফেরার আসল রহস্য কি?”

আরহাম হেসে বলল,
“আসল রহস্য রহিমা খালা। উনিই ওই বাসায় গিয়ে সবাইকে বুঝিয়েছেন।”

তুরাব আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“খালা কোথায়?”

রহিমা খালা মিহিকার সাথে রুমে এলো। তুরাব ছুটে গেল ওনার কাছে। ওনার দুইহাত নিজের হাতের মাঝে ধরে বলল,
“খালা আমি কি আপনাকে এখন থেকে মা ডাকতে পারি।”

রহিমা খালা থমকে গেলেন। তার নিজের কোনো সন্তান নেই বলে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এইতো ছয় বছর হলো ছেলেকে নিজের সন্তানের মতো ছেলেকে আদর যত্ন করছে। রহিমা খালা ভাঙা গলায় বললেন,
“তুমি ডাকলে আমি খুশিই হবো, কিন্তু।”

তুরাব মুচকি হেসে বলল,
“কোনো কিন্তু না মা।”

রহিমা খালার ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। মিহিকা এগিয়ে আসতেই ওর বাবা মা ওকে জড়িয়ে ধরলো। মিহিকা কান্না করে দিলো। মিহিকা কান্নামাখা কন্ঠেই বলল,
“বাবা আমি ওনাকে ভালোবাসি। ওনাকে তোমরা মেনে নেও প্লীজ। উনি আমার অনেক খেয়াল রাখেন। আমি ওনার কাছেই ভালো থাকবো বাবা।”

আরিফুল সাহেব মিহিকার মাথায় হাত বুলিয়ে ইশারায় তুরাবকে কাছে ডাকলেন। তুরাব এগিয়ে গেল। তুরাবের হাতে মিহিকার হাত রেখে আরিফুল সাহেব বললেন,
“সারাজীবন আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা। আর কোনোদিন যদি মনে হয় আমার মেয়েকে তোমার দরকার নেই বা ভালো লাগছে না। ওর সাথে খারাপ ব্যবহার না করে আমার বাড়িতে দিয়ে আসবে। আমার মেয়ের জন্য আমার বাড়ির দরজা সবসময় খোলা থাকবে।”

তুরাব মিহিকার হাত শক্ত করে ধরে ওর চোখে চোখ রেখে বলল,
“এই দেহে জান আছে যতক্ষণ আমি মিহিকার জন্য ততোক্ষণ। ওকে রেখে আসার মতো প্রয়োজন আমার কখনোই হবেনা ইনশাআল্লাহ।”

সবাই প্রশান্তির হাসি দিলো।

#সমাপ্ত

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-১০

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১০

তুরাব রুমের সামনে এসে দেখলো রহিমা খালা আর মিহিকা কথা বলছে। তুরাব বিড়বিড়িয়ে বলল,
“এহ খালার সাথে কত হেসে হেসে কথা বলছে। আর আমার সাথে কথা বলার সময় খালি খ্যাক খ্যাক করে।”

তুরাব পকেট হাতরে ফোন বের করে রহিমা খালার ফোনে কল দিলো। রহিমা খালা ফোন ধরতেই তুরাব গমগমে গলায় বলল,
“খালা একটু আমার রুমে আসেন তো।”

রহিমা খালা তুরাবের কথা মতো মিহিকার রুম ছেড়ে তুরাবের রুমে গেলেন। তুরাব দাঁড়িয়ে ছিলো নিজের রুমের জানালার পাশে। রহিমা খালা আসতেই একটা শপিং ব্যাগ রহিমা খালার হাতে ধরিয়ে দিয়ে তুরাব তাড়া নিয়ে বলল,
“এটা মিহিকাকে পড়িয়ে ছাদে নিয়ে আসবেন রাতের ডিনার শেষে।”

রহিমা খালা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলেন। তুরাব ব্যস্ত হয়ে পড়লো নিজের কাজে।

——————-

রাতের খাবারের সাথে রহিমা খালা একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করলেন মিহিকার রুমে। মিহিকা চুপ করে বসে ছিলো। রহিমা খালা আসতেই আলতো করে হাসি দিলো সে। রহিমা খালা টেবিলের উপর রাতের খাবার রেখে বললেন,
“তোমাকে এই জামা পড়ে তুরাব বাবা ছাদে যেতে বলল।”

মিহিকার কপালে ভাঁজ পড়লো। এই ঠান্ডার মাঝে রাতের বেলা সে ছাদে গিয়ে কি করবে এটাই বুঝতে পারলো না সে। রহিমা খালার এগিয়ে দেওয়া ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেন যেতে বলছেন?”

রহিমা খালা মিটমিটিয়ে হেসে বললেন,
“তা তোমার স্বামীই ভালো জানে। আমি কেমনে বলবো বলো।”

মিহিকা নিজ মনে বিড়বিড়ালো,
“ছাদে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে আবার ফেলে দিবে নাকি!”

পরমুহূর্তেই বলে উঠলো,
“না না যাবো না আমি।”

রহিমা খালা ভ্রুকুচকে বললেন,
“আরে যাবা না কেন! যাও দেখবা ভালো কিছুই হবে।”

মিহিকা সরু চোখে রহিমা খালার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সত্যিই তো ভালো কিছু হবে তো।”

রহিমা খালা শপিং ব্যাগটা মিহিকার হাত ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
“আরে বাবা সত্যিই ভালো কিছু হবে। এখন এতো কথা বাড়াইয়ো নাতো।”

বলেই রহিমা খালা চলে গেলেন। মিহিকা ভাবতে ভাবতেই খেতে লাগলো। খাওয়া শেষে শপিং ব্যাগটা খুলে দেখলো লাল রঙের একটা বড় গাউন। সাথে মানানসই হালকা গহনা। জামাটা বেশ সুন্দর। মিহিকা ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিলো সে ছাদে যাবে। দেখাই যাকনা কি হয়। মিহিকা লাল গাউনটা পড়ে নিলো। সাথে গহনা গুলোও পড়ে নিলো। কাজলও ছিলো ব্যাগে। কাজল দিলো চোখে। চুলগুলো ছাড়াই রাখলো। সাদা রঙের একটা জ্যাকেটও ছিলো। সেটাও পড়ে নিয়ে রওনা হলো ছাদের দিকে।

ছাদের দিকে যত আগাচ্ছে তত মিহিকার বুকটা অজানা কারণেই ধুকপুক ধুকপুক করছে। ছাদের দরজার সামনে পৌঁছে চোখ কুচকে এলো মিহিকার ছাদ অন্ধকার হয়ে আছে পুরোটা। মিহিকা কাঁপা গলায় বলল,
“শুনছেন আপনি কোথায়?”

ঠান্ডায় হাত,পাসহ পুরো শরীরটা কাঁপছে। হাত লাল হয়ে এসেছে। প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কথা। মিহিকা আবারো বলে উঠলো,
“আপনি কি এখানে আছেন?”

লাইট জ্বলে উঠলো। চারপাশে লাল, সাদা বেলুনের ছড়াছড়ি। ছাদের কাণিশে একটা ছেলে উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিহিকা কপাল কুচকে তাকালো। না এটা তো তুরাব না। মিহিকা সরু চোখে তাকালো সামনের দিকে। নীল স্যুট পরিহিত লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কে আপনি? উনি কোথায়?”

ছেলেটা হাসি মুখে ঘুরে দাঁড়ালো। মিহিকা হা হয়ে গেল। অবাক হয়ে বলল,
“আরহাম আপনি এখানে?”

আরহাম হাসি মুখেই বলল,
“কেন গো কচু গাছের সাতচুন্নি কাকে আশা করছিলে তুমি?”

মিহিকা আশেপাশে তাকিয়ে তুরাবকে খুঁজতে লাগলো। তুরাবকে কোথাও না দেখে বলল,
“আপনি এখানে কি করছেন?”

আরহাম মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যদি বলি নেই!”

মিহিকা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“হেয়ালি করছেন আমার সাথে!”

আরহাম আবারো হেসে বলল,
“কেন ভালো লাগছেনা?”

মিহিকা পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“দেখুন ঠান্ডা মধ্যে এখানে আমি আপনার ফালতু বকবক শুনতে আছিনি।”

বলেই মিহিকা উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিবে তার আগেই একটা শক্ত হাত এসে মিহিকার হাত চেপে ধরলো। মিহিকা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“অন্য মানুষের বউয়ের হাত ধরতে শরম করেনা আপনার। হাত ছাড়ুন বলছি।”

তুরাব হেসে বলে উঠলো,
“ওমা মেঘনন্দিনী তুমি নাকি এই বিয়ে মানোনা।”

মিহিকা ভ্রুকুচকে পিছনে ঘুরেই দেখলো তুরাব হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। পড়নে তার কালো স্যুট, সাদা শার্ট। মিহিকা আমতা আমতা করে বলল,
“বিয়ে মানুষের একবারই হয়।”

তুরাব হাসলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রশান্তির হাসি। মিহিকার হাত ছেড়ে তুরাব হাঁটু গেড়ে বসতেই আরহাম সেখান থেকে সরে ছাদের অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়ালো যেখানে সোহা দাঁড়িয়ে ছিলো নীল রঙের শাড়ি পড়ে। আরহাম ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই সোহা হেসে বলল,
“কাজ হয়েছে?”

আরহাম আস্তে করে বলল,
“হুম”

সোহা আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মিহিকা তুরাবকে ভালোবাসে কি?”

আরহাম হেসে বলল,
“হুম ভালো তো বাসেই। তাছাড়া কেউ কাউকে চোখে হারায়।”

সোহা কপাল কুচকে বলল,
“কিভাবে বুঝলে?”

আরহাম সোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আরে তোমাদের মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোঁটে না। ওর চোখেই আমি তুরাবের জন্য সফটনেস দেখেছি।”

সোহা আরহামের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
“তোমাদের মনে হয় খুব মুখ ফোঁটে। আঙ্কেলের কাছে এখনো তো বিয়ের কথাটাই বলতে পারলে না।”

আরহাম চোখ ছোট ছোট করে সোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“চ্যালেঞ্জ করছো?”

সোহা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“এখানে আবার চ্যালেঞ্জের কি আছে?”

আরহামও মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“নতুন বছরেই তোমাকে বিয়ে করবো ইনশাআল্লাহ।”

সোহা সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখো কি করতে পারো?”

————

তুরাব হাঁটু গেড়ে বসে আংটি উঁচু করে ধরে বলতে লাগলো,
“মেঘনন্দিনী আমি ছোট থেকেই ভালোবাসার মানুষ পাইনি। আমার জন্মের দুইবছরের মাথায় আমার বাবা মা এক্সিডেন্টে মারা যায়। এরপর দাদুর কাছে মানুষ হই আরো একবছর তারপর উনিও মারা যায়। মামা আমাকে দুইবছর লালন পালন করে আবাসিকে দিয়ে দেয়। সেখানেই থাকা। দুনিয়ায় আমার কারো প্রতি মায়া জন্মানোর ছিলোনা। কোনো মতে জীবন পার করছিলাম। পরে আমার পরিচয় হয় আরহামের সাথে। ওকে আমি নিজের ভাই মনে করে এসেছি সারাজীবন। ও ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। ভার্সিটি লেভেলে এসে ওর থেকেও আলাদা হয়ে যাই। যদিও যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু যেদিন ইরাদের বাসায় তোমাকে দেখি। আমি থমকে যাই। থমকে যায় আমার পৃথিবী। মনে হচ্ছিলো তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পার করে দেই যুগের পর যুগ। তোমার সেই কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি আজীবন। সেখানেই মনে হয়েছিলো এই মেঘনন্দিনীকে আমার লাগবে। জানোতো প্রথমে বেশ ধোঁয়াশার মাঝে ছিলাম যে তোমার পরিবার মেনে নিবে কি না এই নিয়ে। পরে তোমার বাবার কাছে গিয়ে আমি একদম সোজাসুজিই বলি যে, আমার তোমাকে লাগবে। কিন্তু উনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন। অবশ্য আমি তখন ছিলাম বেকার। নিজের দিনই চালাতাম কোনোমতে। বাবা যত টাকা ছিলো সব কিন্তু আমার পড়াশোনার পিছনেই গেছে। সে যাইহোক, আমার শেষ ভরসা তুমি। তোমাকে ছাড়া এই তুরাব কিছুই না। আমার বেঁচে থাকার আশা তুমি। তুমি কি হবে আমার ছেলের বউয়ের একমাত্র শাশুড়ি। দেখ মেঘনন্দিনী এখানে না বলার কোনো রাস্তা নেই কারণ তুমি যে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখতে তা কিন্তু আমি জানি। আর তুমি রাজি না থাকলে জীবনেও তুমি আমাকে বিয়ে করতে না। এখন কি তুমি হবে মেঘরাজের মেঘনন্দিনী।”

মিহিকা পলকহীন তাকিয়ে আছে তুরাবের দিকে। তুরাবও মিহিকার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন দুইজন মন দিয়ে একে অপরের। মিহিকা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা।

আরহাম আর সোহা অপেক্ষা করতে করতে ছাদের অপর পাশ থেকে তুরাবদের দিকে আসলো। দুইজনকে এভাবে দেখে সোহা চলে যেতে চাইলেও আরহাম ওর হাত ধরে আটকে রেখে বলে উঠলো,
“আরে ভাবি নিয়ে নেন। আমার ভাইটা বসে থাকতে থাকতে বুড়ো হয়ে গেল।”

আরহামের কথায় দুইজনের ভাবনার ছেদ ঘটলো। মিহিকা লজ্জা পেল খানিকটা। হাত বাড়িয়ে দিলো। তুরাব হাসি মুখে আংটিটা মিহিকার অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে মিহিকার ঠান্ডা হাতে ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিলো। মিহিকা লজ্জায় লাল নীল হতে লাগলো। এতোটা লজ্জা লাগছে কেন তার? নিজের কাছেই অজানা। শরীর কাঁপছে বেচারির।

আরহাম আর সোহা হাত তালি দিতে লাগলো। তুরাব উঠে দাঁড়িয়ে হুট করেই মিহিকাকে জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকের মাঝে। মিহিকা তুরাবে উষ্ণ বুকে মুখ গুজে দিলো। তুরাব আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখানে কি করছিস তোর উনিকে তো এনে দিলাম। তার সাথে থাক। আমার ইয়াতে কাঠি করছিস কেন?”

আরহাম মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ওহ কাজ শেষ এখন তুই কে আর আমি কে। তাই না।”

তুরাব নাক টেনে বলল,
“সোহা এই পাগলরে বোঝাও তো।”

সোহা আরহামের হাতে একটা চিমটি কেটে বলল,
“এই কি করছো?”

আরহাম সোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি আবার কি করলাম?”

#চলবে

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৯

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৯

মিহিরের কথায় পাত্তা না দিয়ে মাহি চলে গেল। কোথায় তার টেনশন হচ্ছে মিহিপুকে নিয়ে। ভালো করে কথা বলবে তা না। এই মিহিরের বাচ্চা ত্যাড়ামি করছে যতসব। মাহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিহির দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

————————-

মিহিকা চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তুরাবের চোখ আটকে গেল মিহিকার উপর। নীল রঙের শাড়ির সাথে গোসল নেওয়ার পরে স্নিগ্ধা মুখখানা দেখে তুরাবের হৃদস্পন্দন যেন থেমে গেছে। চোখের পলক ফালাতে ভুলে গেছে সে। বুকের বাপাশে হাত রেখে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“মেঘনন্দিনী তোমার এই রূপে যে আমার ধ্বংস। তোমার স্নিগ্ধা গোল মুখখানা যে আমাকে উন্মাদ করে তুলছে। তুমি এতো সুন্দর কেন মেঘনন্দিনী। আর একটু কম সুন্দর হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত।”

মিহিকা সামনের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকালো তুরাবকে এমন করে দাঁড়িয়ে থেকে বিড়বিড় করতে দেখে। তীক্ষ্ণচোখে তুরাবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এইযে শুনছেন আপনি কি পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি!এমন করছেন কেন?”

তুরাব মিহিকার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“তুমিই তো আমাকে পাগল করলে মেঘনন্দিনী। এখন আবার না জানার ভাব ধরছো। এটা কিন্তু মটেও ঠিক না। জনগন তা মেনে নিবে না।”

মিহিকা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“কি সব আজগুবি কথা বলেন আপনি। দেখি মেজাজ খারাপ না করে সামনে থেকে সরুন। আর আমাকে বাসায় কখন নিয়ে যাবেন?”

তুরাব হুট করেই মিহিকার হাত টেনে ওকে দেয়ালের সাথে ধরে বলল,
“বিয়ের পর মেয়েদের একমাত্র বাসা তার শশুরবাড়ি। যদিও এটা তোমার একমাত্র স্বামীর বাসা। তাতে কি? বউ আমাকে একটা চুমু দিবে।”

মিহিকা চোখ বড় বড় করে বলল,
“আপনি এমন নিলজ্জের মতো কথা বলছেন কেন? সরম করছে না একটা মেয়ের থেকে চুমু চাইতে ছিহ।”

তুরাব দুষ্টু হেসে বলল,
“আরে মেঘনন্দিনী আমি তো আর অন্য কোনো বাবার মেয়ের কাছে চুমু চাইনি। আমার একমাত্র শশুড় মশাইয়ের মেয়ের কাছেই চুমু চেয়েছি।”

মিহিকা মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“ছাড়ুন আমাকে। আমি এই বিয়ে মানিনা।”

হুট করেই তুরাবের হাত শক্ত হয়ে গেল। কপালের রগ ফুলে উঠলো। মিহিকা হাতে ব্যথা পেয়ে আর্তনাদ করে উঠলো। তুরাব রক্তলাল চোখে বলল,
“মানবি না মানে, তিন কবুল বলে তোকে আমার করে নিয়েছি। আর তুই বললেই হলো।”

মিহিকাও তেতে উঠে বলল,
“আপনি ভুলে যাবেন না জোর করে কখনোই ভালোবাসা যায়না। গাছের ডালকে বেশি জোরে টানাটানি করলে ভেঙে যায়।”

হুট করেই তুরাব মিহিকার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিলো। মিহিকার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো। তুরাব কামড়ের জায়গায় আস্তে করে চুমু খেয়ে মিহিকার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে মিহিকার ঠোঁটে হাত রেখে বলল,
“বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। আর আমার দাদিমা সব সময় বলেন জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সবটাই আল্লাহ ইচ্ছায় হয়। আল্লাহ যাদের এক করতে চায় হাজার ঝামেলার পরেও তাদের এক করে। আর মেঘনন্দিনী তার মেঘরাজেরই। তুই বিশ্বাস করলে কর না করলে না কর। তুই আমার।”

বলেই মিহিকাকে কোলে তুলে নিলো। মিহিকা বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আমার ভালো লাগছেনা। আমার সাথে কেন এমন করছেন?”

তুরাব হাসলো। মিহিকাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বলল,
“যা আর কিছু করবো না। একটু পরে খাবার আসবে খেয়ে নিস। আমি আর বিরক্ত করবোনা তোকে।”

বলেই তুরাব মিহিকার কপালে গভীর একখানা চুমু দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। সে যতটা সহজ মনে করেছিলো ততটা হয় না সহজ হবেনা। ভালোবাসার দহনে পুড়তে হবে তাকে আরো। যার শেষ কবে জানা নেই তার। তুরাব চোখের কোণায় জমে থাকা পানিটা মুছে হেসে রুম ছেড়ে চলে গেল। মিহিকা শোয়া থেকে উঠে বসলো। বেডের একপাশে বসে হাঁটুতে মাথা রেখে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
“জীবনটা কেন এমন হলো? এমনটা না হলেও তো পারতো। এই ঝামেলা আর সহ্য হচ্ছে না।”

——————-

তুরাব মিহিকার রুম থেকে বেড়িয়ে পাশের রুমে চলে এলো। আজকেই বছরের শেষ দিন। রাতে অনেক প্লান করা ছিলো তুরাবের। প্লান মতো কাজ করবে কি না তা নিয়ে ভাবছে সে। রুমটা বেশ বড়। এটাই তুরাবের রুম। কিন্তু এই রুমে মিহিকাকে এখনোই আনবেনা সে। যেদিন মিহিকা ওকে মেনে নিবে সেইদিনই ওকে স্পেশাল ভাবে নিয়ে আসবে নিজে রুমে।

তুরাব দেখলো বিকাল হয়ে এসেছে। ফোন করলো আরহামকে। আরহাম একটু আগেই অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে কেবলি কফির মগ নিয়ে বারান্দায় এসেছিলো। তার তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। সামনের ছাদেই পিকনিকের বিভিন্ন আয়োজন চলছে। ছোট ছোট বাচ্চারা ছোটাছুটি করছিলো। সেগুলোই দেখছিলো আরহাম। ফোন বেজে উঠতেই টাউজারের পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলো তুরাব কল করেছে। আরহাম মুচকি হেসে কল রিসিভ করে কানে ধরলো। তুরাব বলল,
“কি করছিস?”

তুরাবের কন্ঠ শুনে আরহাম বলল,
“কি হয়েছে তোর মন খারাপ?”

তুরাব নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই বলল,
“না আমি ঠিক আছি।”

আরহাম হাসলো। কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল,
“মিহিকার সাথে ঝামেলা হয়েছে আবার।”

তুরাব হেসে বলল,
“ঝামেলা হওয়ার আর কি আছে রে?”

আরহাম কি বলবে বুঝতে পারলো না। কিছুটা দমে গিয়ে বলল,
“আজকে রাতে ওকে যে সারপ্রাইজ দিতে চাইলি?”

তুরাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ভাবছি ওকে আর বিরক্ত করবোনা।”

আরহাম কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“তুই কি ভেঙে পড়েছিস?”

তুরাব বাঁকা হেসে বলল,
“ভেঙে পড়ার জন্য তো আর বিয়ে করিনি রে পাগলা।”

আরহাম বিরক্তি নিয়ে বলল,
“তোর এই হেয়ালিই আমার ভালো লাগে না বা*ল!”

তুরাব হো হো করে হেসে বলল,
“আচ্ছা যা আমি ওকে সারপ্রাইজ দিবো। এবার খুশি তো । তুই কি করবি?”

আরহাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কিছুই করতাম না। আমার তো আর বিয়ে করা বউ নাই ঘরে।”

তুরাব বুঝতে পারলো আরহাম তাকে খোচাচ্ছে। তুরাব হেসে বলল,
“যাহ নতুন বছর পরবে কালকে তার আগেই তোকে দোয়া দিলাম। ওই বছরেই যেন তোর বিয়ে হয়।”

আরহাম হেসে বলল,
“ছুম্মা আমিন।”

দুইজনই হাসতে লাগলো।

কল কেটে তুরাব রুমে এলো। মাথাটা ব্যথা করছে তার প্রচন্ড। তুরাব নিজের বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো চোখ বুজে।

———————

রহিমা খালা তুরাবের কথা মতো খাবার নিয়ে মিহিকার রুমে গিয়ে দেখলো মিহিকা হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে। রহিমা খালা খাবারের প্লেট নিয়ে এগিয়ে গেলেন। মিহিকার পাশের টেবিলে খাবার রেখে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“খাবারটা খেয়ে নেও তো।”

রহিমা খালার কথা শুনে মিহিকা চোখ তুলে তাকালো। রহিমা খালা মুচকি হেসে বললেন,
“তুরাব বাবার উপর রাগ করে খাওয়া বাদ দিও না। ও নিজেও খায়নি তোমার জন্য। এখন যদি শোনে তুমি খাও নি তাহলে রাগারাগি করবে।”

মিহিকা গম্ভীর গলায় বলল,
“নিয়ে যান আমি খাবোনা।”

রহিমা খালা মিহিকার পাশে বসে মুচকি হেসে ওর মাথা হাত বুলিয়ে বলল,
“ওর উপর রাগ করোনা মা। ছেলেটা ভালো।”

মিহিকা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। রহিমা খালা আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন। মিহিকা ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাই তো আমি ওই ব্যাটার জন্য না খেয়ে কেন থাকবো!”

খাবার প্লেটটা হাতে তুলে নিজ মনেই বলল,
“আমার ক্ষুধা পেয়েছে, আমি খাবো। খাবারের উপর রাগ করে তো লাভ নেই। ওই ফালতু ব্যাটার জন্য আমি না খেয়ে থাকবোনা হুমও।”

মিহিকা দেখলো মুরগির মাংস দিয়ে ভাত। মিহিকা একপাশ থেকে মাখিয়ে খেতে লাগলো। ক্ষুধাও পেয়েছিলো তার অনেক। সেই কখন একটু খানি বিরিয়ানি খেয়েছিলো। মিহিকা ঝটপট খাওয়া শেষ করে প্লেটটা রাখতে গিয়েই হুট করে তার রহিমা খালার কথা মনে হলো। উনি তো বলে গেলেন তুরাবও খায় না। খানিকবাদেই নিজ মনে আবারো বলে উঠলো,
“খাইলে খাক না খাইলে না খাক। তার কি!”

মিহিকা হাত মুছে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ভালো লাগছে না তার। বাড়ির কথা বড্ড বেশি মনে পড়ছে তার। মাহির কথা বেশি করে মনে পড়ছে। বিকেল হতেই দুইজন মিলে একসাথে কফি খেত আর আড্ডা দিতো। এই অসভ্য, নিলজ্জ ব্যাটার জন্য তো সে তার ইরাপুর বিয়েটাও খেতে পারলো না।

এইসব ভেবেই একরাশ রাগ, অভিমান, ক্ষোভ এসে জমা হলো তুরাবের উপর। মিহিকা নিজ মনেই বলল,
“আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো। বদ ছেলে কোথাকার। আস্ত বেয়াদব ছেলে।”

কিছুক্ষন পরেই তার মনে হলো আজ তো বছরের শেষ দিন। কাল নতুন বছর পড়বে। মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল মিহিকার। সবাই একসাথে কত মজা করতো। সবটা মাটি হয়ে গেল।

এসব ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা হয়ে এলো। মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য ওযু করতে ওয়াশরুম গেল মিহিকা।

—————

তুরাব চোখ বুজ থাকতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলো টের টাও পায়নি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা সাতটা। তুরাব হুড়মুড়িয়ে উঠলো। দ্রুত পায়ে মিহিকার রুমের দিকে গেল সে। দরজার কাছে যেতেই মিহিকা হাসির শব্দ শুনতে পেল। রুমের দরজাও খোলা। তুরাবের কপাল কুচকে এলো।

#চলবে

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৮

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৮

মিহিকা কপাল কুচকে বলল,
“আপনি এতো অসভ্য কেন?”

তুরাব চোখ বুজেই বলে উঠলো,
“পুরুষ মানুষ একটু অসভ্য হওয়াই লাগে। এখন চুপচাপ ঘুমাও।”

মিহিকা অনেকক্ষন নড়াচড়া করে পরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমালো। মিহিকার নিশ্বাসের উষ্ণতা তীব্র হতেই তুরাব মুচকি হাসলো। আলতো করে মিহিকাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তুরাব উঠে দাঁড়ালো। ঘড়িতে সকাল দশটা। শীতের তীক্ষ্ণ রোদের ঝলকানি জানালার ফাঁক দিয়ে আসছে। তুরাব ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ালো জানালার পাশে। দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে তাকালো মিহিকার মায়াবী মুখের দিকে। আর ভাবতে লাগলো কিভাবে সে মিহিকাকে নিজের করে পেল।

নিজের কাজকর্ম ভেবে নিজেই হাসলো কিছুক্ষন। হুট করে মনের ভিতর অতীতের কিছু ছায়া এসে ডানা ঝাপটাতে লাগলো। ফোন করলো একটা নাম্বারে। অপরপাশে শুধু নিশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তুরাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তোকে বলেছিলাম না বিয়েটা হয়ে গেলে আমি আমার সাথে মিহিকার দেখা হওয়া থেকে শুরু করে সব বলবো।”

অপরপাশ থেকে গম্ভীর গলায় আওয়াজ ভেসে এলো,
“হুম”

তুরাব বলতে লাগলো,
“যেদিন আমরা জানতে পারলাম আমাদের আর একসাথে পড়া হবে না। আমি আর তুই মন খারাপ করে বাসায় ফিরেছিলাম। মনে আছে তো।”

অপরপাশ থেকে আবারো গম্ভীর কন্ঠে ভেসে এলো,
“হুম তারপরেই তো তোর চান্স হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।”

তুরাব দম নিয়ে বলল,
“হুম। তুই তো চলে গেছিলি তখন আমি একা একাই ভার্সিটি যেতাম। তুই তো জানিস আমি প্রাইভেট পড়াতাম। আমি একদিন প্রাইভেট পড়াতে হাজির হই খান বাড়ির সামনে। তোর শাওন ভাইয়ের ছোট বোন ইরাকে পড়াতে হবে।”

আরহাম বসা থেকে লাফিয়ে উঠে বলল,
“এই ব্যাটা এই কথা তো তুই আমাকে আগে বলিসনি, যে তুই ইরার টিচার ছিলি!”

তুরাব ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“কথার মাঝে কথা বলিস না তো। শুন আগে আমার কথা।”

আরহাম গাল ফুলিয়ে বলল,
“আচ্ছা বাবা বল।”

তুরাব একপলক মিহিকার দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে লাগলো,
“পড়ানোর তিনদিনের মাথায় আমি যখন মেইন গেট দিয়ে ঢুকছিলাম তখনি কেউ আমার মাথায় ময়লা পানি ফেলে। আমি উপরে তাকাতেই ছাদের উপরে হাসির শব্দ শুনতে পারি। মেয়েটার জামার এক অংশ দেখা যাচ্ছিলো। সেদিন আর পড়ানো হয়নি। এরপরে প্রতিদিন নানা দুর্ঘটনা আমার সাথে হতো। যেমন ধর, চেয়ারে বসার পরে প্যান্টে কাঁচা দিম লেগে যাওয়া, উষ্ঠা খাওয়ানোর জন্য দড়ি রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি। তো আমি একদিন ইচ্ছা করেই তাড়াতাড়ি যাই। সেদিন দেখি একটা মেয়ে আমার বসার চেয়ারে সেন্টার ফ্রুট লাগাচ্ছে। মেয়েটাকে দেখে বেশি বড় মনে হচ্ছিলো না। আমার প্রচন্ড রাগ হয়। হুট করেই আমি ওর হাত চেপে ধরি। মেয়েটা ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কেন যেন আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। আমি থমকে যাই সেখানে। মনে হচ্ছিলো মেয়েকে আকড়ে ধরে রেখে দেই নিজের কাছে।”

আরহাম চোখ বড় বড় করে বলল,
“তারপর!”

তুরাব নাকমুখ কুচকে বলল,
“দাঁড়া ব্যাটা পানি খেয়ে নেই। গলা শুকিয়ে গেছে আমার।”

আরহাম চরম বিরক্ত হয়ে বলল,
“হারাম*জাদা এতো ঢং বাদ দিয়ে সব কথা ক তাড়াতাড়ি।”

তুরাব মুখ বাঁকিয়ে পাশের বেডসাইট টেবিল থেকে পানি খেয়ে বলল,
“বলতেছি ব্যাটা। সেদিন কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমার হাত ছাড়িয়ে দৌড় দেয়। ইরাকে চাপ দিতে ও বলে দেয় মেয়েটা ওর চাচাতো বোন। নাম মিহিকা। এরপর থেকে আমি না চাইতেও মেয়েটাকে একপলক দেখার জন্য অস্থির থাকতাম।”

আরহাম দ্বিগুন মনোযোগ দিয়ে বলল,
“তারপর, তারপর!”

তুরাব বিছানার কাছে গিয়ে ধপ করে মিহির পাশে শুয়ে পড়ে বলল,
“তুই তো জানিসই আমি সোজাসুজি কথা বলি। মেয়েকে যখন পছন্দ হয়েছে তখন ওকে আমার লাগবেই। একবারে বিয়ে করেই ছাড়বো। তো আমি দেখা করি ওর বাবা সাথে।”

তুরাব আরেকটু দম নিয়ে বলল,
“কিন্তু ওর বাবা আমাকে এমন অপমান করেছিলেন। শুধুমাত্র আমার টাকা কম ছিলো বলে। উনি আমাকে যা না হয় তাই বলে। তারপরেই আমার জেদ চেপে যায় যে আমি টাকা ইনকাম করবো। আর মিহিকেই বিয়ে করবো।”

আরহাম আয়েশ করে বসে বলল,
“ট্রিট দে।”

তুরাব মুচকি হেসে বলল,
“ট্রিট তো দিবোই। তোর সাহায্য ছাড়া আমি তো মিহিকে পেতাম না।”

আরহাম কলার উচিয়ে বলল,
“হুমমম এখন কি করবি?”

তুরাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“এখন তো শুরু হবে আসল কাহিনী।”

আরহাম হাই তুলে বলল,
“তুই ও বিয়ে করে ফেললি। আমি এক পাঠা সিঙ্গেলই রয়ে গেলাম।”

তুরাব হেসে বলল,
“সোহা কে?”

আরহাম আমতা আমতা করতে করতে বলল,
“তুই বেশি কথা বলিস!”

তুরাব এবার হো হো করে হাসতে লাগলো। আরহাম খট করে মুখের উপর ফোন কেটে দিলো।

তুরাব উঠে বসলো। ঘড়িতে দুপুর একটা পনেরো। তুরাব তার এক বডিগার্ডকে কল করে দুপুরের খাবার আনতে বলল। ফ্রেশ হওয়ার জন্য গোসল করা প্রয়োজন। তুরাব হাই তুলে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।

মিহিকা পিটপিট করে চোখ খুলতেই সামনে তুরাবের মুখ দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল মিহিকার। চেঁচিয়ে উঠবে তার আগেই তুরাব বিরক্তি নিয়ে বলল,
“এই চুপ। একদম চুপ।”

মিহিকা তাকিয়ে দেখলো তুরাব খালি গায়ে শুধু একটা তোয়ালে পেঁচানো। শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি। মিহিকা তাড়াতাড়ি নিজের চোখে হাত রেখে বলল,
“ছেহ, কাপড় পড়ে আসুন তাড়াতাড়ি। এমন করে দাঁড়িয়ে থাকতে লজ্জা লাগছে না আপনার।”

তুরাব চোখ ছোট ছোট করে মিহিকার হাত ওর চোখ থেকে সরিয়ে বলল,
“এমন ভাব করছিস যেন আমার গায়ে কিছুই নাই। যতসব ঢং তোর। তাড়াতাড়ি শাওয়ার নে।”

চোখ মুখ খিচে বন্ধ রেখেই মিহিকা বলল,
“ওসব পরে হবে আগে আপনি কাপড় পড়ুন দয়া করে।”

তুরাব দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
“কেন মেঘনন্দিনী মনের মাঝে কিছু হয় নাকি!”

মিহিকার কান গরম হয়ে গেল। মনে মনে বলল,
“আল্লাহ বাঁচাও তুমি। হয় আকাশ ফুটো করে চিল পাঠাও। না হয় মাটি ফাঁক করে ইদুর পাঠাও।”

তুরাব মিহিকা কপালে পড়ে থাকা ছোট চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“এতো কি বিড়বিড় করো জান। যা বলবে জোরে বলো। আমি তো আর বাহিরের কেউ না। তোমার একমাত্র নান্না মুন্না টুংকু স্বামী।”

মিহিকা রাগী কন্ঠে বলল,
“যান কাপড় পড়ুন।”

তুরাব ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
“কি বললে? আহ বউয়ের মুখে জান শুনে কি যে শান্তি লাগছে।”

মিহিকা চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে বলল,
“এই মিয়া আমি তো আপনাকে যেতে বললাম।”

তুরাব মিহিকার চোখে চোখ রেখে বলল,
“আরে বউরানী ভুলে যেও না আমাদের বাসর দিন কিন্তু এখনো বাকি। শশুড়মশাইকে বললাম যে তাড়াতাড়ি বাসরদিন করবো। আর তুমি তো ঘুমিয়ে কতটা সময় নষ্ট করলে।”

মিহিকার এবার চিক্কুর দিয়ে কান্না করতে মন চাইছে। কি নিলজ্জ লোকের পাল্লায় পরেছে সে। কি কি বলছে? মিহিকা ধমকে বলল,
“সরুন আমি ওয়াশরুমে যাবো।”

তুরাব আবারো দুষ্টু হেসে বলল,
“আমি নিয়ে যাই।”

মিহিকা রক্ত লাল চোখে তুরাবের দিকে তাকাতেই তুরাব ঠোঁটে আঙুল রেখে বলল,
“আচ্ছা বাবা যাও। আমি আর কিছুই বলবো না।”

মিহিকা বিছানা থেকে উঠে গটগট পায়ে ওয়াশরুমে যেতে নিবে তখনি তুরাব বলল,
“জান শাওয়ার নিয়ে কি পড়বে?”

তুরাবের কথায় মিহিকার মনে পড়লো তাই তো সে কি পড়বে। তুরাব আবারো ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
“অবশ্য না পড়লেও সমস্যা নেই।”

মিহিকা চেঁচিয়ে বলল,
“এই চুপ, একদম চুপ। আর একটা কথাও বলবেন না আপনি।”

তুরাব মিটমিটিয়ে হেসে একটা সপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলো মিহিকার সামনে। মিহিকা কপাল কুচকে তাকাতেই তুরাব বলল,
“এখানে শাড়ির সাথে তোমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আছে।”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে তুরাবের কাছ থেকে ওগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

তুরাব মাথার পিছনে চুলকে হাসলো।

———————-

খান বাড়ির সবাই জেনে গিয়েছে যে মিহিকাকে তুরাব তুলে নিয়ে গিয়েছে। বিয়ের বিষয়টাও সবাই যেনে গিয়েছে। কারণ তুরাব তাদের কাবিননামার ছবি তুলে সবার ফোনেই দিয়ে দিয়েছে। আরিফুল সাহেব তখন থেকেই দম ধরে বসে আছেন। শাওন মনে মনে খুশি হয়েছে। কারণ তুরাবকে তার আগে থেকে বেশ পছন্দ। ছেলেটা বেশ দায়িত্ববান।

মাহি মিহির কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,
“মিহিপুর কাছে কখন নিয়ে যাবি?”

মিহিরও ফিসফিসিয়ে বলল,
“জিজুকে বলেছি তোর কথা।”

মাহি আগ্ৰহ নিয়ে বলল,
“তো জিজু কি বলছে?”

মিহির এপাশঅপাশ তাকিয়ে বলল,
“জিজু বলেছে ফোন করে জানাবে।”

মাহি গাল ফুলিয়ে বলল,
“ধুর ভালো লাগে না।”

মিহির নাকমুখ কুচকে বলল,
“এমন ভাব করছিস যেন মিহিপুকে কত যুগ দেখিস না।”

মিহিরের কথায় মাহি মুখ বাঁকালো। ঝাঝালো গলায় বলল,
“তুই চুপ থাক। তোরও তো বোন হয়। না জানি কেমন আছে?”

মিহির হিসহিসিয়ে বলল,
“তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। মিহিপু তার জামাইয়ের কাছে আছে। তার জামাই বুঝে নিবে সবটা।”

#চলবে

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৭

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৭

মিহিকার কথায় তুরাবের চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা। তুরাব ধমকে উঠে বলল,
“চুপ থাক, বেশি কথা বলতে না করেছিনা।”

তুরাব ফোনে দেখলো সকাল ছয়টা বাজে। মিহিকার সাথে কাহিনী করতে করতে অনেকটা সময়ই কেটে গেছে। তুরাব নিজ মনেই হাসলো। ফোনটা নিয়ে কল করলো আরিফুল খানের নাম্বারে। প্রথমবার কল রিসিভ না হলেও দ্বিতীয়বার রিসিভ হতেই তুরাব গলা পরিষ্কার করে বলল,
“আসসালামু আলাইকুম শশুড়মশাই।”

আরিফুল সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন,
“তুরাব আমার মেয়ে কোথায়?”

তুরাব হেসে বলল,
“আপনার মেয়ে তার বরের বাসায় আছে শশুরমশাই।”

আরিফুল সাহেব রেগে বললেন,
“ফাজলামো করছো তুমি আমার সাথে বেয়াদব ছেলে কোথাকার। আমি জানতাম তুমিই আমার মেয়েকে কিছু করেছো।”

তুরাব জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“আরে আরে রাগ করেন কেন, আমার একমাত্র শশুড়মশাই। কোথায় জামাই বাবাজীবন বলে কথা বলবেন তা না কিসব বলছেন।”

আরিফুল সাহেব সোফায় কয়েক ঘা বসিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমার মেয়ে কোথায়?”

তুরাব মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার বউকে আমি বিয়ে করার জন্য কাজী ডেকেছি। তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু কথা বলে নেই। হাজার হলেও আপনি আমার একটা মাত্র রাগী ভিলেন মার্কা শশুড়মশাই।”

আরিফুল সাহেব কিছু বলতে নিবেন তার আগেই তুরাব বলে উঠলো,
“খুব না বলেছিলেন আপনার মেয়েকে দিবেনা। এখন আমি বড় পজিশনে আছি। ওকে ভালো রাখার সামর্থ্য আমার আছে এখন।”

তুরাব দমে গিয়ে আবারো বলতে লাগলো,
“আমি যদি এখন আপনার সামনে যেতাম, আপনি খুশি মনে আমার হাতে আপনার মেয়েকে তুলে দিতেন। কিন্তু না আমি তা করবো না। টাটা শশুড়মশাই। তাছাড়া আমার বাসর দিন করতে দেড়ি হয়ে যাবে।”

মিহিকা এতোক্ষণ চোখ বড় বড় করে তুরাবের দিকে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু শেষের কথা শুনে মিহিকার বিষম উঠে গেল। তুরাব ফোন কেটে পকেটে ঢুকিয়ে পানি এগিয়ে দিলো মিহিকাকে। মিহিকা কোনো মতে পানি গিলে বলল,
“এই মিয়া আপনি কিসব বললেন আমার বাবার কাছে। এই ব্যাটা তারমানে কাজী। আমি বিয়ে করবোনা।”

তুরাব ডান হাতের বুড়া আঙুল দিয়ে নিচের ঠোঁটের কোণা মুছে মুচকি হেসে বলল,
“বিয়ে তো তোকে করতেই হবে।”

মিহিকা পিছিয়ে যেতে নিলে তুরাব মিহিকার হাত শক্ত করে ধরে সামনে বসে থাকা কাজীকে বলল,
“বিয়ে পড়ানো শুরু করুন কাজী সাহেব।”

মিহিকা ছটফট করতে লাগলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি বিয়ে করবোনা।”

তুরাব রক্তলাল চোখে মিহিকার দিকে তাকিয়ে গমগমে গলায় বলল,
“বেশি কথা বলিস না। যা বলছি চুপচাপ কর।”

মিহিকা এবার তেজ নিয়েই বলল,
“করবোনা আমি। আমি কি আপনার কিনে নেওয়া কোনো বস্তু নাকি যে আপনার সব কথা শুনে চলবো।”

তুরাব দাঁত কিটমিট করে বলল,
“তোকে কি আমি বলেছি নিজেকে বস্তুর সাথে তুলনা করতে। দেখ মাথা এমনিতেই যথেষ্ট গরম আছে। আর গরম করিস না। এবার মাথায় পানি গরমে বসালে ফুটতে থাকবে।”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমার মাথা তো হিমালয়ের বরফ। যে বরফ কোনোদিনও পানি হয়ে ফুটতে পারবেনা। ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।”

তুরাব নাকমুখ খিচিয়ে বলল,
“কেনরে আমি কি তোরে চিমটি দিছি যে আমারে বিয়ে করবিনা।”

কাজী সাহেব এবার অধৈর্য্য হয়েই বলে উঠলেন,
“আপনারা দয়া করে একটু চুপ করে বিয়েটা করবেন কি? এমনিতেই ভোর ভোর আমাকে তুলে এনেছেন। তারউপরে আমাকে সামনে বসিয়ে ঝগড়া করছেন।”

তুরাব নড়েচড়ে বসে গম্ভীর গলায় বলল,
“আপনি আপনার কাজ শুরু করছেন না কেন?”

কাজী সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তুরাবের দিকে। মনে মনে ভাবলেন,
“লে ঠেলা নিজেরাই ঝগড়া করছিলো এতোক্ষণ আর এখন নাকি সে নিজের কাজ করছেনা।”

কাজী সাহেব মনে মনে কয়েকখানা গালি দিলো তুরাবকে। তারপর নিজের কাজ শুরু করলো। গম্ভীর গলায় বললেন,
“দেনমোহর কত ধরবেন?”

তুরাব একটু হেসে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার কাছে তোকে পাওয়ার থেকে বড় দেনমোহর আর কিছু নেই, কিন্তু কাজী সাহেব, একটা ভালো অঙ্ক লিখে দিন, যাতে শশুড়মশাই খুশি হন।”

মিহিকা রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“কাজী সাহেব, কোনো দেনমোহর লাগবে না, কারণ এই বিয়ে আমি মানি না। আমি করবোনা এই বিয়ে।”

তুরাব চোখ কুঁচকে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই চুপ করবি? তোরে চুপ থাকতে বললাম না। বেশি কথা বললে কিন্তু..!”

বলেই পকেট থেকে একটা বন্দুক মিহিকার কপালে ধরে বলল,
“মেঘনন্দিনী হয় তুই মেঘরাজের হবি না হয় আর কারো না।”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে ফিরে বসে পড়লো। তুরাব অবাক হলো। এখানে যেকোনো মেয়ে থাকলে ভয় পেতো। আর এই মেয়ে তো তাকে ভয়ই পাচ্ছে না। তুরাব খানিকটা ভরকে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“দেখ আমি কিন্তু মজা করছিনা।”

মিহিকা আবারো মুখ বাঁকিয়ে বসে রইলো। কাজী এবার ধমকে বললেন,
“চুপ যান আপনারা। তাড়াতাড়ি করুন তো।”

তুরাব মিহিকার কাছে ঘেঁষে বসে বলল,
“৩০ লক্ষ টাকা ধরুন দেনমোহর।”

মিহিকা কপাল কুচকে তাকালো তুরাবের দিকে। তুরাব কাকে যেন ফোন দিলো। সাথে সাথেই দুইটা ছেলে এসে দাঁড়ালো রুমের সামনে। তুরাব গম্ভীর গলায় বলল,
“দুইজন সাক্ষী রেডি এখন তুই কবুল বললেই কাহিনীর টুইস্ট।”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুরাব ওই দুইটা ছেলের মাঝ বরাবর সুট করলো। মিহিকা সহ সবাই কানে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করলো।

তু্রাব হাসলো। কাজ মনে হয় হয়ে গিয়েছে। তুরাব ইশারা করে কাজী সাহেবকে। কাজী সাহেব কবুল বলতে বললে, তুরাব দ্রুত কবুল বলে দেয়। মিহিকা না করতে নিবে তার আগেই আবারো আগের জায়গায় সুট করলো। মিহিকা এবার কাঁপা গলায় কবুল বলেই দিলো। বলা তো যায় না যদি তাকে সত্যিই উড়িয়ে দেয়। মিহিকা কবুল বলায় তুরাব ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। কাবিননামায় সাইন করে দিলো তুরাব। মিহিকা কলম ধরতেই পারছেনা। হাত পা থরথর করে কাঁপছে তার। বুক ফেটে কান্না আসছে। এমন ভাবে যে তার বিয়ে হবে সে কল্পনাও করেনি। না জানি তার মা বাবার কি অবস্থা হবে বিয়ের কথা শুনে। অবশ্য এই ছেলে তো তার বাবাকে বলেই দিয়েছে।

মিহিকার হাতে কাবিননামার কলম ধরে রেখেও সাইন করতে পারছে না। তার ভেতরে এক প্রবল ঝড় বইছিল। কীভাবে একজন মানুষ এতটা জেদি হতে পারে? তার বাবার মুখ মনে পড়ছিল, সেই স্নেহমাখা চেহারা।

মিহিকা কাঁপা গলায় বলল,
“আপনি কি জানেন, আপনি যা করছেন, সেটা অপরাধ? এটা কোনো প্রেম বা বিয়ে নয়। আপনি আমাকে ভয় দেখিয়ে, বন্দুকের মুখে এই কাজ করাচ্ছেন। আমি কোনোদিনও আপনাকে মেনে নেব না।”

তুরাব হেসে বলল,
“তুই কি জানিস, আমি অপরাধী কিনা সেটা আইন প্রমাণ করবে। কিন্তু তুই যে আমার বউ, এটা আজকে আমি প্রমাণ করে দেব।”

মিহিকা এবার সাহস জোগাড় করে বলল,
“আপনি আমাকে ভয় দেখিয়ে জিততে পারবেন না। আমি কোনোদিনও এই বিয়ে মেনে নেব না। আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন।”

তুরাব আলতো হেসে বলল,
“তা না হয় পরেই বোঝা যাবে। এখন সাইনটা কর তো।”

মিহিকা বেচারি এবার কেঁদেই দিলো। তুরাব বিরক্ত হলো বেশ। নাকমুখ কুচকে বলল,
“ছিচকাদুনির মতো এতো কাঁন্না করো কেন বলো তো। ঝগড়া করার সময় তো গলাটাও নিচু করে কথা বলো না।”

মিহিকা নাক টেনে বলল,
“জোর করে তো কবুল বলিয়ে নিলেনই। এখন আবার পকপক করছেন কেন!”

তুরাব মুখ বাঁকালো। মিহিকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাইনটা করে দিলো। তুরাবের খুশি আর ধরে কে।তুরাব যেন জিতে গিয়ে এক ধরনের বিজয়মুখর হাসি দিলো। তার চোখে ফুটে উঠলো গভীর আত্মবিশ্বাস, আর মিহিকার চোখে অসহায়ত্বের ছাপ। তুরাব কাবিননামা নিয়ে কাজী সাহেবকে বিদায় দিলো। বাকি দুইজনকেও কি যেন বলে বের করে দিলো। মিহিকা তখনো বসে বসে চোখের কোণে জমা অশ্রু সামলানোর চেষ্টা করছে।

তুরাব মিহিকার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“দেখো, আমার কাজ শেষ। এখন তুই আমার বউ, আর এই বিয়েটা ভাঙার কোনো রাস্তা নেই। এবার মজা করে সংসার শুরু করি।”

মিহিকা দাঁত চেপে বলল,
“আপনার মতো জেদি, নির্লজ্জ আর স্বার্থপর মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। আপনি যা করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।”

তুরাব বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
“ক্ষমা আর ভালোবাসা একই মুদ্রার দুই পিঠ, মেঘনন্দিনী। সময়ের সাথে দেখবি, তোকে রাজরানির মতো রাখবো। তুই শুধু আমার কথা শোন, তাহলেই হবে।”

মিহিকা রাগী মুখে তাকালো তুরাবের দিকে। তুরাব এগিয়ে এলো মিহিকার দিকে। মিহিকা হুট করে সামনে তাকাতেই তুরাবকে তার এতো কাছে দেখে চমকে গেল। মিহিকা কিছু বোঝার আগেই তুরাব মিহিকার কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে এনে মিহিকার নাকে নাক ঠেকিয়ে বলল,
“বউ মোবারক মেঘনন্দিনী। এখন তোমার উপর শুধুমাত্র আমার অধিকার। একদিন তুমি আমাকে ভালোবাসবেই।”

মিহিকা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
“জোর করে কি ভালোবাসা হয়!”

তুরাব মিহিকার কোমর ছেড়ে দিয়ে দুইহাত মিহিকার দুই গালে আলতো করে ধরে বলল,
“জোর করে না জান। এমনিতেই তুমি আমার মায়ায় পড়বে। যে মায়া কেউ কখনো কাটতে পারবেনা।”

মিহিকা গম্ভীর গলায় বলল,
“ছাড়ুন আমাকে। এভাবে থাকতে আমার অসহ্য লাগছে।”

তুরাব মিহিকার কথায় পাত্তা না দিয়ে মিহিকাকে শক্ত করে বুকে টেনে বিছানায় শুয়ে পরলো। চোখ বুজে বলল,
“সারারাত ঘুমাইনি এখন একটু ঘুমাতে দেও তো। তুমিও ঘুমাও চুপচাপ।”

মিহিকা ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
“আপনি আপনার ঘুমকে ধরে ঘুমান আমাকে ছাড়ুন তো।”

তুরাব বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে বলল,
“এতো ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেন বলো তো। কোথায় বলবে ধরুন ধরুন তা না।”

#চলবে

ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৬

0

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৬

লাইট জ্বলে উঠতেই গভীর কন্ঠে ভেসে এলো,
“তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নে। আমি এসে যদি দেখি খাবার আছেই তাহলে দেখিস কি হয়।”

মিহিকা প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো বিরিয়ানি। ক্ষুধা লাগলেও মিহিকা প্লেটটা আবারো ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখলো। পায়ে বাঁধন খুলে ফেলেছে আগেই। রুমের চারপাশে চোখ বুলালো সে। রুমে একটা ছোট জানালা ছাড়া আর কিছুই নেই। মিহিকা এগিয়ে গেল সেই জাননালার কাছে। কিন্তু জানালা বন্ধ। কিছুতেই খোলা যাচ্ছে না। অনেক চেষ্টার পরেও জানালা খুলতে পারলো না। ব্যর্থ হয়ে এপাশ অপাশ খুঁজতে লাগলো। কিন্তু পালানোর জন্য কোনো পথ পেল না। দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে ডাকতে লাগলো,
“কেউ আছেন, দরজা খুলুন।”

ডাকতে ডাকতে গলা ব্যথা হয়ে গেলেও কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে অস্থির হয়ে গেল মিহিকা। দরজার সাথেই পিঠ লাগিয়ে বসে কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে তা বুঝতেই পারেনি মিহিকা।

————————–

এদিকে আরিফুল খান আর আজিজুল খান থানায় মিহিকা মিসিং ডায়েরী লিখাতে চাইলেও তারা লেখেনি। সময় নিতে বলেছে। সবাই মিহিকার টেনশনে শেষ। হেনা খানের তো অবস্থা একদম খারাপ। উনি একদম বিছানার সাথে লেগে গেছেন। মিহির, শাওন, মাহি, হিয়া, হামিম, আরহাম সবাই বসে আছে বসার ঘরে। আজকে হিয়াদের চলে যাওয়ার কথা থাকলেও বাড়ির এই অবস্থা দেখে হিয়ার বাবা আরো একদিন থেকে যেতে বললেন। কিন্তু আরহামের আর আরহামের বাবার অফিসে কিছু কাজ থাকায় সে আজকেই রওনা দিয়েছে।

মাহি গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো ছাদে কাণিশ ঘেঁষে। মিহির মাহির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“কিরে এখানে কি করছিস?”

মাহি একপলক মিহিরের দিকে তাকিয়ে আবারো সামনে দিকে তাকালো। মাহিকে কথা বলতে না দেখে মিহির বলল,
“তোর মিহিপু যেখানে আছে সেখানে ভালো আছে টেনশন করিস না।”

মাহি থমকালো মিহিরের কথায়। অবাক হয়ে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই জানিস মিহিপু কোথায় আছে?”

মিহির সর্তকতার সাথে চারপাশে তাকিয়ে ইশারায় মাহিকে কান কাছে আনতে বলল। মিহিরের কথা মতো মাহি কান কাছে আনলো। মিহির ফিসফিসিয়ে বলল,
“আমি তোকে নিয়ে যাবোনি। কিন্তু কাউকে বলিস না।”

মাহি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
“আমকে নিয়ে যাবি তো!”

মিহির আবারো চারপাশে সর্তকতার সাথে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“হুম নিয়ে যাবো।”

——————-

ঘড়িতে রাত তিনটা লোকটা লাইট অফ করে রুমে প্রবেশ করলো। মিহিকাকে কোলে তুলে বিছানায় এনে রাখলো। মিহিকার কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে নেশালো দৃষ্টিতে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মেঘনন্দিনী তোমার ঘুমন্ত মিষ্টি চেহারার মায়ায় তো আমি পড়েছি সেই প্রথম দিনেই। এতো সহজে যে এই মায়া ভুলে যাওয়ার মতো না। তোমাকে যে এই মেঘরাজের মনের কুঠিরে থাকতেই হবে। তুমি চাও বা না চাও।”

ছেলেটা মিহিকার কপাল আলতো চুমু দিয়ে মিহিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই মিহিকা রানী শুধু মাত্র তুরাবের। অন্য কেউ ছোঁয়া তো দূরে থাক তাকাতেও পারবেনা তোকে। তাহলে সেখানেই তাকে পুতে ফেলবো একদম।”

তুরাব উঠে বসলো। পাশের টেবিলের খাবার প্লেটের ঢাকনা তুলতেই চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো। কপালে রগ ফুলে উঠলো। কটমটিয়ে তাকালো মিহিকার দিকে। ঘুমন্ত মিহিকাকে হুট করেই শক্ত দুই হাতে তার বাহু ধরে বসালো। মিহিকার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমের মাঝে এমন হওয়ায় সে চমকিত হয়ে তাকালো সামনের মানুষটার দিকে। ক্ষীণ আলোতে ছেলেটাকে অস্পষ্ট ঠেকলো মিহিকার চোখে। মিহিকার চোখে এখনো ঘুম। তুরাব রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
“তুরাবের কথা না শুনলে কি হয় জানিস তুই? কি মনে করেছিস ভালো ভালো করে কথা বলছি বলে আমি এতোই ভালো। খাসনি কেন তুই।”

মিহিকা কপাল কুচকে বলল,
“তুরাব!”

তুরাবের রাগে শিরা উপশিরা কাঁপছে। তুরাব হাতে থাকা রিমোট চাপতেই রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। মিহিকা আলোতে চোখ ঢেকে নিলো। তুরাব রাগে পাশে থাকা ফুলদানি ছুড়ে মারলো। মিহিকা ভয়ে গুটিসুটি মেরে গেল। মিহিকা তাকালো তুরাবের রাগান্বিত মুখের দিকে। ভাঙা গলায় বলল,
“তুরাব ভাইয়া আপনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন প্লিজ। আম্মু টেনশন করছে।”

তুরাবের রাগ আরো বাড়লো। রক্তলাল চোখে তাকালো মিহিকার দিকে। মিহিকা আরো ভয় পায়। তুরাবকে সে অনেক আগে থেকেই ভয় পায়। তুরাব মিহিকার কাছে এগিয়ে এসে মিহিকার গাল চেপে ধরে বলল,
“সবার কষ্ট তুই দেখিস কিন্তু আমার কষ্টই তুই দেখিস না তাই না। তোর বাপ তো বলেছিলো আমার সাথে তোকে বিয়ে দিবেনা। বিয়ে তো আমি তোকে করেই ছাড়বো। কোথায় কে আটকায় আমিও দেখবো।”

বলেই তুরাব হাত ঝাটকা দিয়ে মিহিকা ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল। মিহিকা হাতে বারি খেল বেডের সাথে। মিহিকা কুকিয়ে উঠলো। হাতে বেশ জোরেই লেগেছে। মিহিকা হাত ধরে কান্না করতে লাগলো। তুরাব আবারো ফিরে এলো। গম্ভীর মুখে বেডসাইট টেবিল থেকে বিরিয়ানির প্লেটটা হাতে নিতে মাখাতে লাগলো। মিহিকা হাত ধরে কান্না করছে। তুরাব এক লোকমা বিরিয়ানি নিয়ে মিহিকার সামনে ধরলো। মিহিকা আর কিছু না বলে হা করলো। কারণ সে জানে তুরাবের রাগ সম্পর্কে। তুরাব চুপচাপ গভীর মুখে খাওয়াতে লাগলো মিহিকাকে। কয়েক লোকমা খাওয়ার পর মিহিকা বলল,
“আর খাবোনা।”

তুরাব মিহিকার কথা কানেই নিলো না। এমন মনে হলো যে তুরাব মিহিকার কথা শুনেই নি। খাওয়াতেই থাকলো সে। মিহিকা বুঝতে পারছেনা তুরাব সত্যিই শুনেনি নাকি ইচ্ছে করে না শোনার ভাব করছে। মিহিকা তাকালো তুরাবের দিকে। তুরাবে রক্তলাল চোখ, লাল নাক দেখে মিহিকা বেশ বুঝতে পারলো তুরাবের রাগ এখনো কমেই নি। মিহিকা এবার একটু সাহস করেই জোর গলায় বলল,
“আমার পেট ভরে গেছে। আমি আর খাবোনা। আপনি আমায় বাসায় রেখে আসুন।”

তবুও তুরাব ওর কোনো কথা শুনছে না। মিহিকা যেন চরম বিপদে পড়েছে। এই ব্যাটা তো কিছুই শুনছে না তার কথা। মিহিকা নিজের হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে মাথা নাড়াতে লাগলো। তুরাব এবার লোকমাটা নিজের মুখে দিলো। মিহিকা অবাক হয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“একি কি করছেন আমার খাওয়াটা আপনি খাচ্ছেন কেন?”

তুরাব চোখ রাঙালো মিহিকাকে। তুরাবের চোখ রাঙানিতে দমে গেল মিহিকা। চুপচাপ দেখতে লাগলো তুরাবকে। তুরাব দেখতে উঁচা লম্বা, সুঠাম দেহে ফর্সা গরনের, চাপ দাড়ি, ডান পাশের গালে একটা টোলের দাগ স্পষ্ট।

তুরাব বাকি অর্ধেক বিরিয়ানি শেষ করে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো। পানি খাওয়া শেষ করে হাতে পানি নিয়ে মিহিকার দিকে তাকালো। মিহিকা এতক্ষন সরু চোখে তাকিয়ে ছিলো তুরাবের দিকে। তুরাব তাকাতেই চোখ নামিয়ে নিলো সে। তুরাব ভেজা হাত দিয়ে মিহিকা মুখ মুছিয়ে দিলো। মিহিকা বেশ অবাক হলো। কোনো কিডন্যাপার বুঝি এমন যত্ন করে খাওয়ায়। অবশ্য সে তো আগে কখনো কিডন্যাপ হয়নি, হতেও তো পারে এমন। রাগী রাগী ভাব নিয়ে, হাতে ব্যথা দিয়ে এখন আবার খাইয়ে দিচ্ছে ঢং যতসব।

মিহিকা নিজ মনেই এসব আজেবাজে কথা ভাবছিলো তখনি তুরাব গমগমে গলায় বলল,
“তোর বাবা মাকে কি ভালো রাখতে চাস তুই?”

মিহিকা কপাল কুচকে বলল,
“মানে!”

তুরাব গম্ভীর কন্ঠেই বলল,
“আমি যা বলবো তাই কর না হয় তোর বাবা মাও ভালো থাকবেনা বলে দিলাম।”

তুরাবের কথায় হুট করেই হো হো করে হাসতে লাগলো মিহিকা। তুরাব ভ্রুকুচকে বলল,
“পাগল হয়ে গেলি নাকি!”

মিহিকা হাসি থামিয়ে বলল,
“একটু সিনেমাটিক হয়ে গেল না!”

তুরাব হাসলো। রহস্যময় সে হাসি। মিহিকা সরু চোখে তাকালো তুরাবের সেই হাসির দিকে। তুরাব মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সিনেমাই না হয় হয়ে যাক। খারাপ তো না মেঘনন্দিনী।”

মিহিকা স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
“জীবনটা কি সিনেমা?”

তুরাব আবারো রহস্যময় হেসে বলল,
“সিনেমার থেকেও বড় কিছুরে পাগলি।”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“বেশি পকপক না করে আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।”

তুরাব প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে বলল,
“তুই বেশি পকপক করিস।”

ফোনে কাউকে কল করে বলল,
“ভিতরে নিয়ে আয়।”

বলেই ফোনটা রেখে দিয়ে আশেপাশে কি জানি খুঁজতে লাগলো। পাশেই পেয়ে গিয়ে ওড়নাটা মিহিকার হাতে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
“ওড়নাটা ঠিক করেনে।”

মিহিকা এবার বেশ লজ্জায় পরলো। সে এতটা সময় ওড়না ছাড়া ছিলো। তাও আবার এই ব্যাটার সামনে। নিজ মনেই বলল,
“ছেহ, ছেহ মিহি তোর এতো হুশ হারা কবে হলো। এতটা সময় ছেহ..!”

মিহিকার ভাবনায় ছেদ ঘটলো একটা পুরুষালি কন্ঠের সালামের শব্দে। সালামের শব্দ শুনে সেদিকে তাকালো মিহিকা। একটা হুজুর দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। মিহিকার কপালে ভাঁজ পরলো। হুজুরকে ইশারায় সোফায় বসতে বলল তুরাব।

মিহিকা একবার হুজুরের দিকে তাকাচ্ছে। আর একবার তুরাবের দিকে তাকাচ্ছে। অজানা আতঙ্কে বুক কাঁপছে মিহিকার।

মিহিকা পরপর ঢোক গিলে তুরাবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“উনি কে?”

তুরাব ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“কেন ভয় করছে নাকি?”

মিহিকা কাঁপা গলায় বলল,
“আজব তো ভয় করবে কেন!”

তুরাব আবারো রহস্যময় হাসি হাসলো। মিহিকার যেন গলা শুকিয়ে এলো তুরাবের হাসি দেখে। চোখগুলো পিটপিট করতে লাগলো সে। মাথাটা ঘনঘন করছে তার। আল্লাহ ভালো জানে এই তুরাবের মাথায় কি চলছে। কালা জাদু করবে নাকি আবার!

ভাবতেই চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল মিহিকার। মিহিকা চেঁচিয়ে বলল,
“এই মিয়া আপনি যে এতো খারাপ তাতো জানতাম না, শেষমেশ কালোজাদু!”

#চলবে