প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫৯
#Writer_Afnan_Lara
?
রুপার পাশে চুপ করে বসে আছে আহানা,শরীর খারাপ করছে তাও মুখে ফুটে বলা বারণ,এসব জানলে শান্ত অনেক চিন্তা করবে তার উপর সে শান্তকে বলেছে এখানে আসলে শরীর খারাপ হবে না তার,গ্যারান্টি দিয়ে এসেছে তাই এখন কিছু মোটেও বলা সাজে না
সেই শরীর তো খারাপ হলোই,বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করার চেষ্টা করছে সে,পাশে তাকিয়ে শান্তর দেওয়া পানির বোতলটা দেখতে পেয়ে পানি নিয়ে খেলো
এখন কোনোরকম লাগতেসে,একেবারে ভালো ও না আবার খারাপ ও না
রুপার বাবা এসে বললেন বিয়ের সব প্রস্তুত,বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে
রুপা আহানার হাত ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে,প্রত্যেকটা মেয়ের কাছে এই অনুভূতিটা বিশেষ,,বুকের ভেতর কেমন কেমন করে এই সময়টায়
আহানার তার আর শান্তর বিয়ের কথা মনে পড়ে গেলো,সেদিন কি পরিস্থিতিতে তাদের বিয়েটা হয়েছিল,আগে থেকে আবাশ ও পায়নি সে,হুট করে এসে জানতে পারলো আজ তার বিয়ে,শান্তর নরমাল বিহেভ দেখে ভয়টা আরও বেশি লাগছিল সেদিন
ভাবতে ভাবতে আহানা চোখ বন্ধ করে হাসলো
আবার চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো দরজার সামনে থেকে শান্ত ও হেসে চলে যাচ্ছে,হয়ত তারও আমার মত একই অনুভূতি হচ্ছে
বিয়েটা সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হয়ে গেলো,,সবাই খেতে বসেছে
হইচই লেগে গেছে,রিয়াজ সূর্য আর শান্ত দৌড়ের উপর আছে
নওশাদ বিলাইয়ের মত স্টেজে বসে ওদের ব্যস্ততা দেখতেসে
বসে বসে নিজের বেস্টফ্রেন্ডদের কামলা খাটতে দেখাটায় এক পৈশাচিক আনন্দ পাওয়া যায় নওশাদ সেই মজাটাই নিতেসে
আহা এই হারামিগুলোকে দিয়ে জীবনে কোনো কাজ করাতে পারিনি আর আজ দৌড়ে দৌড়ে কামলা খাটতেসে,মন তো করতেসে ভিডিও করে ওদের টাইমলাইনে ছেড়ে দিই,ধুর!!এমন সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া করতে হচ্ছে
♣
শান্ত এক প্লেট খাবার নিয়ে আহানা যে রুমে বসে আছে রুপার সাথে ঠিক সেই রুমে ঢুকলো
সবাই তো ওকে দেখে নড়েচড়ে বসে পড়েছে,শান্ত সোজা এসে আহানার সামনে চেয়ার টেনে বসে পড়লো,রুপা হেসে বললো কি ভাইয়া?আমাদের গার্লস জোন এ বসে খাবার খেতে মন চাইলো নাকি?
শান্ত লোকমা বানাতে বানাতে বললো “জি না,আমার বউকে খাওয়াতে এসেছি কারণ সে নিজের হাতে ২লোকমার বেশি খেতে পারবে না তাই আমি খাইয়ে দিব পুরো এক প্লেট”
সব মেয়েগুলো জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে,এরকম হাসবেন্ড আর কার হয় যে বিয়েবাড়িতে নিজে স্ত্রীকে খাইয়ে দেয় সবার সামনে
আহানা চুপচাপ শান্তর হাতে খাবার খেয়ে যাচ্ছে,তার একটা হাত শান্তর হাঁটুতে কখন যে রেখেছে তার খেয়ালই ছিল না
শান্ত তার বাঁ হাত দিয়ে আহানার চুলগুলো কানের কাছে গুজে দিয়ে উঠে চলে গেলো
আহানা পানি খাওয়ার জন্য বোতলটা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো “আপনি??”
.
শান্ত চলে যাওয়ার সময় থেমে বললো “নওশাদের সাথে এখন খেতে বসবো”
.
কথাটা শুনে আহানা মাথা নাড়ালো
.
একটা মেয়ে চুল ঠিক করতে করতে এগিয়ে এসে বললো তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা মুচকি হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে
.
তা কিভাবে প্রেমে পড়লো তোমার?
.
রুপা দাঁত কেলিয়ে বললো””” চড় দেওয়ার পর থেকে দুজনে ঝগড়া করার জন্য এমন চুইংগামের মতো লাগছে যে একেবারে সেটা বিয়ে পর্যন্ত চলে এসেছে,হাহাহা”””
.
চড়??তুমি উনাকে চড় দিয়েছিলা?তোমাকে পাল্টা কিছু করেনি? তারপর??
.
আহানা পানি খেতে খেতে বললো “২বালতি পানি ঢেলে দিসিলো আমার গায়ে”
.
সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে,বাহহহ ইন্টারেস্টিং তো!!তারপর প্রোপোজ করলো কবে?
.
আহানার সেইদিনের কথা মনে পড়লো,লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে
একটা মেয়ে এগিয়ে এসে বসে বললো প্রোপোজের কথা জিজ্ঞেস করসি kiss এর কথা নয়,তোমার গাল এত ব্লাশ হচ্ছে কেন
.
আহানা উঠে চলে গেলো বাইরের দিকে,বাইরে শান্ত নওশাদ আর রিয়াজের সাথে খেতে বসেছে
আহানা শান্তকে দেখে আবার ফিরে আসলো,একটা মেয়ে চমকে বললো “তোমার হাতে ক্যানেলার কেন?”
.
আসলে আমাকে রক্ত দেওয়ার জন্য এটা লাগাইসে
.
ও মাই গড তুমি তো তাহলে সিক,বসো এখনে
.
সবাই মিলে ধরে ওকে বসিয়ে দিলো
.
বাবার ফোন আসতেই শান্ত বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে খালি রাস্তায় এসে দাঁড়ালো
♣
কিরে শান্ত??তুই কই?? আর এত শোরগোল শোনা যাচ্ছে কেন?
.
বাবা আমি নওশাদের বিয়েতে,,, নরসিংদী এসেছি,তোমাকে বলসিলাম না?
.
ওহ আচ্ছা,শুন
.
হুম বলো
.
আমি মাছ,মাংস,সবজি চাল ডাল সব কিনে বাসায় ঢুকাইসি,গরু ১টা আনছি,তোদের কাল গায়ে হলুদ,পরশু আল্লাহ দিলে তোদের বিয়ে,তোদের তো রেজিস্টার করে বিয়ে হয়নি,সেদিন রেজিস্টার করে বিয়েটা দিয়ে দিব তোদের,তুই আহানাকে নিয়ে আজ সন্ধ্যায় মোহনগঞ্জের জন্য ট্রেন ধর
.
বাবা এক মিনিট,এসব কি বলতেসো তুমি?আমাকে একবারও জিজ্ঞেস করসো??
.
এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে?আমি তো তোদের ধুমধাম করে বিয়ে দিব বলসি তাহলে এত চমকাস কেন?সবাইকে জানাতে হবে না যে আমার ছেলে বিয়ে করতেসে
.
বাবা কাল বৌভাত,নওশাদ আমাকে যেতে দিবে না
.
না দিক,ওদের সহ নিয়ে চলে আয় তাহলে,আলহামদুলিল্লাহ আমার বাসায় রুমের অভাব নেই,আর নওশাদ তো অনেকদিন থেকে মোহনগঞ্জ আসতে চেয়েছিল
.
বাবা এটা সম্ভব না
.
তুই চুপ কর,নওশাদকে ফোন দে,ওর সাথে কথা বলবো আমি
শান্ত বিরক্ত হয়ে নওশাদকে ফোন দিলো
নওশাদ হ্যালো বলতেই বাবা অফার করে বসলেন
.
নওশাদ তুমি তোমার ওয়াইফকে নিয়ে মোহনগঞ্জে হানিমুন করতে চলে আসো,কোনো কমতি হবে না,এখানে রিসোর্ট আছে তোমরা ইঞ্জয়ও করতে পারবা
সব খরচ আমার তুমি শুধু শান্তকে বুঝাও যেন কাল আসে
আমি আমার আত্নীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ফেলেছি
.
ঘোড়ার গাড়ীর ব্যবস্থা হবে?বরের দোস্তরা প্রবেশ করার জন্য?
.
হেহেহে,দুষ্টু ছেলে,ঠিক আছে যাও,ব্যবস্থা করে দিব তুমি শুধু আমার অবুঝ ছেলেকে বুঝাও
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো কি ওমন করে চেয়ে আছিস কেন?আমাকে এখন বলবি না যে মোহনগঞ্জ চল,আমি যাব না,আরে আজব আহানাকে এখনও ২ব্যাগ রক্ত দিতে হবে,আমার দ্বারা হবে না,আই কান্ট ডু দিস
.
ইয়েস ইউ ক্যান,তোর কি মন চায় না আহানাকে নিজের করে নিতে?তোদের এখনও আগলা আগলা ভাব দেখে তো বুঝায় যায় একজন আরেকজনকে ছুঁয়েও দেখোস নি
.
কিন্তু আহানা?
.
আরে ওর চিন্তা করিস না,এক ব্যাগ তো অলরেডি দিয়েই দিছিস তাহলে এখন টেনসন একটু হলেও তো কমেছে তাই না??
বিয়ের পরে নাহয় বাকি ২ব্যাগ দেওয়া যাবে
আর তোর যদি ভালো না লাগে তাহলে তোর হয়ে আমি আঙ্কেলকে বুঝিয়ে দিব,মতামত জানা আমাকে
.
আচ্ছা দেখি আহানা কি বলে
.
শান্ত বাসায় ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে আহানাকে কোথাও দেখতে পেলো না,মনে ভয় জাগলো এই ভেবে যে আহানার কিছু হয়নি তো
আহানা রুপার জন্য সাজানো বাসরে গুটিশুটি দিয়ে এক কোণায় ঘুমিয়ে পড়েছে
শান্ত মুচকি হেসে এগিয়ে এসে ওকে কোলে তুলে নিলো কারন এভাবে এই রুমে থাকাটা ভালো দেখায় না
নওশাদ রুপার কাজিনরা হাততালি দেওয়া ধরতেই শান্ত চুপ করতে বললো,আহানা গভীর ঘুমে
শান্ত ওকে নিয়ে আরেকরুমে আসলো,বিছানায় রাখতেই আহানা জেগে গিয়ে চমকে পিছিয়ে গেলো
শান্ত মুখটা গম্ভীর করে বললো বাবা আমাদের বিয়ের সব রেডি করে ফেলেছে
কাল নাকি গায়ে হলুদ,আমাদেরকে আজ রাতেই মোহনগঞ্জ যেতে বলেছে
আজ তো নওশাদের বিয়ের কথা বলে রাফিকে মানিয়ে অনেক রিকুয়েস্ট করে ছুটি নিয়েছি,কিন্তু এরপর? সেটা না হয় অ্যাপলিকেশন করে ছুটি নেওয়া যাবে কিন্তু তোমাকে রক্ত দেওয়ার কি হবে?
.
আহানা চমকে বললো “বিয়ে??””
.
তুমি বলো কি করবো?বাবা নাকি সবাইকে দাওয়াত ও দিয়ে ফেলেছে তার উপর নওশাদকে বলছে রুপাকে নিয়ে আমাদের সাথে যেতে,এত জলদি সব করে ফেললো আমাকে একবার বললো ও না,সব রেডি করে এখন বলতেসে
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো কি আর করার সব যেহেতু সব রেডি করে ফেলেছে
.
শান্ত মাথা তুলে তাকিয়ে বললো “আহানা ম্যাডাম!!আপনি আমাকে বিয়ে করতে তৈরি??আমি কিন্তু ঐ কাগজের শর্ত ভাঙ্গবো!!!
.
আহানা হেসে আরেকদিকে ফিরে বসলো
.
তাহলে তুমি রাজি যখন আমি বাবাকে বলে দিচ্ছি
.
শান্ত বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিলো,বাবা তো খুশিতে শেষ,নওশাদ রাজি করিয়েছে ভেবে ওর উপহার স্বরুপ রিসোর্ট ও বুক করে ফেললেন
বিকাল ৪টা বাজে,নওশাদ আর রুপা বাসর ঘরে বসে ছবি তুলার জন্য বিভিন্ন পোজ দিতেসে,রিয়াজ আর সূর্য পিক তুলতেসে
একবার জানালায় ঝুলে আবার বিছানায় গোল হয়ে বসে
কত প্রকার পোজ আছে সব গুগল করে বের করিয়েছে রুপা
আর রুমের এক কোণায় আহানা মুচকি হেসে ছবি তোলা দেখছে আর শান্ত???
সে তো আহানার শাড়ীর আঁচল নিয়ে গিট্টু দিতেসে আর ফোনে বাবার সাথে কথা বলতেসে
বাবা কি ফুল আনবে,কাউকে দাওয়াত দেওয়া বাকি আছে কিনা সেটা জানার জন্য সব জেনে নিচ্ছেন শান্ত থেকে
আহানা পিঠের উপর কিছুর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো,হাতের নয় তবে ফুলের
শান্ত ফুল দিয়ে ওর পিঠের উপর নাড়াচ্ছে,সুড়সুড়ি দিচ্ছে
আহানা ব্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাতেই ও বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে বললো “হ্যাঁ বাবা টুটুল মিয়াকে দাও
হ্যাঁ টুটুল মিয়া ভালা আছোনি??বাসর কিন্তু পুরো গোলাপের হতে হবে”
.
আইচ্ছা বাবা!!
.
আহানা কথাটা শুনে লজ্জা পেয়ে চলে গেলো
.
ফটোশুট শেষ হতেই নওশাদ সবার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে ফেলছে
এমন করার কারন আছে,কারণটা হলো কেউ ওকে রুপার সাথে কথা বলতেই দিচ্ছিলো না,একবার একজনে এসে এক ধরনের কথা বলে মাথা খাচ্ছিলো
আহানা আর শান্ত হাসতে হাসতে শেষ নওশাদের কান্ড দেখে
.
আহানা চলো বাসায় ফিরতে হবে,দাদা দাদিকে পার্সোনালি ইনবাইট করে অফিসের সবাইকে ইনবাইট করতে হবে তারপর আমার সেই ১৮/২০জনের শান্ত গ্যাংয়ের সবাইকে ইনবাইট দিতে হবে,তুমি এই ফাঁকে সব গুছিয়ে নিবে কি কি লাগবে সব
.
আহানা মাথা নাড়ালো,শান্ত নওশাদ আর রুপার রুমের বাইরে এসে গলা ঠিক করে বললো
ঐ হারামি নওশাদ!!!আমি যাচ্ছি,মোহনগঞ্জে কি আমার সাথে যাবি নাকি পুরো রাত শেষ করে যাবি?
.
হারামি স্কয়ার- শান্ত তুই যা
সন্ধ্যা ৭টার ট্রেনে করে যাবো আমরা,,কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা হবে,গেলে তো তোর সাথেই যাবো
.
আচ্ছা বাই,অল দ্যা বেস্ট!!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে বেরিয়ে আবারও বাস ধরলো
শান্ত এক এক করে বলে যাচ্ছে আহানাকে তাদের বাসায় ঢুকে কি কি বলতে হবে,কি কি করতে হবে
আহানা শুধু মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছে
.
আচ্ছা রুপার বৌভাত হবে না?
.
নওশাদ এমনিতেও অনুষ্ঠান চায়নি,বৌভাত এমনিতেও হতো না
.
ওহহ
.
হ্যাঁ বাবা ওকে রিসোর্টের লোভ দেখায়াইসে ব্যস হয়ে গেলো!!এবার ও ১৪গুষ্টিকে রাজি করাতেও প্রস্তুত
.
বাসায় ফিরতে ফিরতে ৬:৩০বেজে গেসে,শান্ত সোফায় বসে একটা ছোট নোটবুক নিয়ে সেখান থেকে সবার নাম্বার ফোনে উঠিয়ে ফোন করে বলতেসে বিয়েতে আসার জন্য
দাদা দাদিকে অনেক করে বলার পর ও তারা মাথায় হাত রেখে বললেন আসা সম্ভব নয়,তারা বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায় না কখওনও
আহানা তার বাসায় পরার জন্য কয়েকটা শাড়ী নিলো সব গুছিয়ে নিতে গিয়ে থমকে গেলো হঠাৎ
আচ্ছা!!এই বিয়েটা মানে হলো আমি শান্তকে আমার কাছে আসার সম্মতি দিয়ে দিচ্ছি??
কিন্তু আমি আসলেই বাঁচবো কদিন??আমার তো মনে হয় আমি বেশিদিন বাঁচবো না,রুগী জানে সে আসলেই সুস্থ হবে কি হবে না
আর আমার মন বলছে আমি আর বেশিদিন নেই
আহানা বারান্দার দিকে তাকালো,শান্ত হেসে হেসে ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলে যাচ্ছে
ওর এই হাসি কি আমি রক্ষা করতে পারবো??
.
শান্ত ফোন রেখে এসে আহানার হাত ধরে ওকে সোফায় বসিয়ে নিজে নিচে হাঁটু গেড়ে বসলো
.
কি হয়েছে?
.
ডাক্তারের সাথে কথা বললাম,উনি বললেন যেহেতু বিয়েতে দেরি হবে ক্যানেলার যেন খুলি ফেলে
.
আপনি খুলবেন?
.
হুম
.
আহানা ঢোক গিলে ঠিকঠাক হয়ে বসলো
শান্ত আহানার চোখে হাত দিয়ে ওর চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে ক্যানেলার খুলে ফেললো
আহানা হালকা ব্যাথা পেলো বেশি না
.
চলো ৭টা বেজে আসছে জলদি করে কমলাপুর রেলস্টেশন যেতে হবে
.
হুম
.
আহানা তার বাসার দিকে একবার তাকিয়ে বের হয়ে গেলো,এরপর যখন সে শান্তর সাথে এই বাসায় আসবে তখন অফিসিয়ালি মিসেস আহানা শাহরিয়ার রুপে আসবে
কমলাপুর রেলস্টেশন এসে শান্ত এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু নওশাদ আর রুপাকে কোথাও দেখতেসে না এর ভিতর ওরা ফোন ও তুলতেসে না
শান্ত আহানাকে নিয়ে ট্রেনে উঠে দেখলো নওশাদ আর রুপা বসে বসে সেলফি তুলতেসে
নওশাদ থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর টিশার্ট পরেছে যেন কক্সবাজার যাচ্ছে সে
শান্ত রেগে দুম করে ঘুষি মেরে দিলো নওশাদকে
.
আরে কুল ডাউন,কুল ডাউন,তোরা আসতে দেরি করেছিস কিন্তু আমরা করিনি,দেখ কেমন বসে পড়েছি
.
তুই ফোন ধরতেসিলি না কেন?
.
পিক তুলতেসিলাম ভাই,
.
তাই বলে ফোন ধরা যায় না?
.
যায় তো,তোকে জানালা দিয়ে দেখতে পেয়ে আর ফোন ধরিনি,তোকে ডাক দিলাম তুই তো আমাদের রেখে আহানার দিকে তাকাচ্ছিলি ২০০বার আর ঐ পাশের রোডের দিকে তাকাচ্ছিলি ১০০বার,কি আর করতাম??
.
তোর মত!!! আর বললাম না সর এখন
.
মানে কি আমি আমার নতুন বিয়ে করা বউয়ের পাশে বসবো তুই তোর বউয়ের পাশে বস
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে ওদের সামনে বরাবর সিটে বসলো
.
শান্ত সিগারেট একটা ধরিয়ে মুখে দিয়ে হেসে দিলো,তারপর শয়তানি হাসি দিয়ে নওশাদের দিকে তাকালো,নওশাদ ফোনে গেমস খেলতেসে
.
নওশাদ?তোর কপালে লিপস্টিকের দাগ
.
নওশাদ এদিকওদিক না তাকিয়ে পাগল হয়ে টিসু নিয়ে কপাল ঘষতে ঘষতে শেষ
আহানা মুখ টিপে হাসতেসে আর রুপা নওশাদকে ঝাঁকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো-বুদ্ধু কোনো দাগ নেই,শান্ত ভাইয়া মজা করতেসে
.
নওশাদ রেগে শান্তর সাথে মারামারি শুরু করে দিলো
মাইর শেষে দুজনে চুপ করে বসে সিগারেট খাওয়া শুরু করলো আবার
.
ট্রেন চলতেসে,রাতের পরিবেশ,আহানা গাল ফুলিয়ে বাইরে তাকাচ্ছে আবার নওশাদ রুপার দিকে তাকাচ্ছে,রুপা ফেসবুকে পিক আপলোড করায় বিজি আর নওশাদ ফোনে কথা বলায় বিজি
পাশে শান্ত গেমস খেলতেসে
আহানা বাইরে তাকাতে তাকাতে ঘুমিয়ে পড়েছে
শান্তর গলার আওয়াজে চোখ খুললো সে
মোহনগঞ্জ নাকি এসে পড়েছে
শান্তর হাত ধরেই মোহনগঞ্জে পা রাখলো সে
চলবে♥
(সবাইকে শান্ত আর আহানার বিয়ের দাওয়াত দিলাম,আসবেন কিন্তু,আসার সময় চিপস,চকলেট নিয়ে আসবেন, আপনাদের লেখিকা ম্যাম খাবে)
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫৯
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫৮
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫৮
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত ডোন্ট ওয়ারি,আমার রক্তের গ্রুপ “এ পজিটিভ” আমি রক্ত দিব আহানাকে,সমস্যা নেই
.
নওশাদের কথায় শান্তর কিছুটা স্বস্তি হলো,কপাল কুঁচকে ডাক্তারকে বললো “আহানার জ্ঞান ফিরবে কখন”
.
ডাক্তার বললেন ১/২ঘন্টা লাগতে পারে,তবে রক্ত দিতে যেন দেরি না হয়,এতে ওর ক্ষতি হয়ে যাবে
দরকার হলে আজকে সারারাতের মধ্যেই এক ব্যাগ দিয়ে দেওয়া উচিত
নওশাদ শান্তর কাঁধে হাত রেখে বললো চল,ওয়েট করিস না বেশি
জানিস তো আন্টির ও এমন!
.
শান্ত যেন বুকে খুব জোরে আঘাত পেলো,আহানার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে ওর পাশে এসে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে গেলো,দুহাত দিয়ে ওর গাল ধরে তাকিয়ে রইলো
নওশাদ শান্তর মাথায় হাত দিয়ে মুছে বললো “কনট্রোল ইউরসেল্ফ শান্ত!”
শান্ত কপালটা মুছে আহানাকে বেড থেকে তুলে নিলো,আর কারোর দিকে তাকালো না সে,আহানার দিকে তাকিয়েই হাঁটা ধরলো
নওশাদ শান্তকে থামিয়ে একটা Cab ঢেকে নিলো
♣
আহানা যখন চোখ খুললো তখন সে নিজেকে হসপিটালের বেডে পেলো,চমকে উঠে বসলো সে,এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না
পুরো রুম খালি,রুমে সে আর বিছানা ছাড়া আর কিছুই নেই,কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো সে,শান্তকে আশেপাশে না দেখলে ভয়টা জাগ্রত হয় ক্রমশ
মনে করার চেষ্টা করলো যে কি হয়েছিলো এর আগে
.
একজন নার্স উঁকি দিয়ে আহানাকে দেখে চলে গেলেন
শান্ত, নওশাদ আর রুপার কাছে এটা বলতে যে আহানার জ্ঞান ফিরেছে
নওশাদ ততক্ষণে রক্ত দিয়েও দিয়েছে,রক্তের ব্যাগ হাতে নিয়ে শান্ত রুমে ঢুকলো,আহানা নামতে গিয়ে শান্তকে দেখে থেমে গেলো
শান্তর সাথে সাথে রুপা, নওশাদ আর একজন নার্স ঢুকেছেন রুমে
কিছুক্ষন পর একজন ডাক্তার ও এলেন
আহানা বারবার জিজ্ঞেস করতেসে কি হইসে কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না ওর সাথে
শান্ত তো তাকাচ্ছেও না
আহানা এরকম সবার নিরবতা দেখে কেঁদে দিলো
খুব খারাপ লাগতেসে তার, কেউ তার সাথে কথা বলতেসে না শুধু রোবটের মত তাকিয়ে আছে
ডাক্তার ক্যানেলার নিয়ে এগিয়ে এসে বসলেন,উনি আহানার হাত ধরতেই
আহানা বললো সে রক্ত নিবে না,সুই ফুটাবে না,কথাটা বলার সাথে সাথে খুব জোরে চড় খেলো
গালে হাত দিয়ে শান্তর দিকে তাকালো সে
শান্ত ওকে চড় মেরে ওর দিকেই তাকাচ্ছে না
যেন কিছুই হয়নি, ঠাণ্ডা মাথায় ডাক্তারের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত সে
ডাক্তারকে বলতেসে রক্ত এক ব্যাগ দিতে কত সময় লাগবে
আহানা গালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে আছে,ডাক্তার হাতে সুই ঢুকাতেই আহানা কেঁপে সরতে নিতেই শান্ত ওকে আগলে জড়িয়ে ধরে ফেললো
শান্তর ছোঁয়া পেয়ে মনে হলো সব ব্যাথা গায়েব হয়ে গেসে তার
ডাক্তার সুই খুলে নিতেই শান্ত আহানাকে ছেড়ে দিলো
রুপা আহানাকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে,আহানা ডান হাত দিয়ে মাথা ধরে আরেকদিকে মুখ করে শুয়ে আছে,ক্যানেলার বাম হাতে
শান্ত পাশের সোফায় গিয়ে বসলো,ডাক্তার সব ঠিকঠাক করে বললেন “৮/৯ঘন্টা লাগতে পারে এক ব্যাগ শেষ হতে
আমি স্পিড কমিয়ে দিয়েছি উনার বয়স কম বলে,মাঝে মাঝে ব্যাগটা নেড়ে চেড়ে দিবেন কারণ রক্ত জমে যায়”
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত ঠিক আছে বললো
ডাক্তার রক্তের ব্যাগ আবারও চেক করে চলে গেলেন,শান্ত নওশাদ আর রুপাকে বললো চলে যেতে এসব সে সামলাবে,গায়ে হলুদ যেন ঠিকঠাক ভাবে হয়
রুপা যেতে চায়নি,নওশাদ বললো ‘গায়ে হলুদ কোনো বড় বিষয় না,আমরা যাবো না,এখানেই থাকি”
শান্তর অনেক রিকুয়েস্টে অবশেষে তারা বাধ্য হয়ে চলে গেছে
আহানা এক দৃষ্টিতে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু শান্ত ওর দিকে তাকাচ্ছে না
আহানা ডান হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে কিছু বলতে যাবে শান্ত তখনই উঠে চলে যেতে নিলো রুম থেকে
আহানা বললো দাঁড়াতে
শান্ত দাঁড়িয়ে পড়লো,তাও পিছন ফিরে আহানার দিকে তাকালো না সে
আহানা বললো”সরি,আমি আসলে আপনাকে ব্যাপারটা বলতে চাইনি কারণ”……
শান্ত আর কিছু শুনলো না দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেলো
সোজা ডাক্তারের কেবিনে আসলো সে,রিপোর্ট নিয়ে চুপ করে থেকে একটা নিশ্বাস ফেললো তারপর কথা বলা শুরু করলো কঠিন চোখে
.
“ওর আর কোনো সমস্যা নেই তো?এভাবে হুট করে রক্ত এত কম পয়েন্টে আসার কোনো কারণ আছে কি??আমার টেনসন হচ্ছে,আমার মায়ের ব্লাড ক্যানসার ছিল,ক্যানসার হওয়ার আগে থেকেই মাকে ২বছর পরপর ৩ব্যাগ করে রক্ত দিতে হতো,মায়ের রক্তশূন্যতা ছিল,এরকম করে কয়কবছর চলেছে,তারপর হঠাৎ আমরা জানতে পারি মায়ের ব্লাড ক্যানসার,এরকম সিনটোম দেখেছি আমি তাই জিজ্ঞেস করতেসি,আহানার এমন কিছু নয়তো?যদি হয় আমাকে বলুন, আমি কোনো দেশ বাকি রাখবো না যেখানে ওর চিকিৎসা করাবো না,আমি ওকে সুস্থ করে তুলবো
.
কুল ডাউন!আমি কিছু টেস্ট দিচ্ছি,সব গুলো টেস্ট করিয়ে নিবেন,রিপোর্ট না দেখে আমি বলতে পারতেসি না,আর রক্তশূন্যতা হলেই ক্যানসার হয় না,যার থেকে রক্তটা নেওয়া হয় সে রক্তে প্যাঁচ থাকলে আই মিন পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে রক্ত দেওয়া হলে পরে তা ক্যানসারের আকার ধারন করে
আজ আমরা সব টেস্ট পূরন করেই রক্তটা দিতেছি
আর আপনার মায়ের আগে রক্তশূন্যতা ছিল বলেই যে ক্যানসার হয়েছে এমনটা নয়,ভুল ধারনা এটা,রক্ত পরীক্ষায় গাফিলতি হয়েছে বলেই আর নয়ত ইনফেকশনের কারনে
.
কথাগুলো শুনে শান্ত সিট থেকে উঠে আহানার কাছে ফিরে আসলো
আহানা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে
শান্ত রক্তের ব্যাগটা নাড়িয়ে চাড়িয়ে সোফায় এসে বসতেই আহানা চোখ খুলে ওর দিকে তাকালো
.
আপনি আমার সাথে কথা বলতেসেন না কেন?
.
শান্ত তার ফোন বের করে গেমস খেলায় মন দিয়েছে
আহানা রেগে উঠে বসে পড়লো
শান্ত ফোনটা রেখে ওর কাছে এসে ওকে জোর করে আবার শুইয়ে দিলো
.
ছাড়ুন,এত ঢং দেখাতে হবে না,ছাড়ুন
.
শান্ত আহানার গায়ের থেকে টান দিয়ে শাড়ীর অাঁচল নিয়ে সেটা দিয়ে ওর ডান হাতটা সিটের সাথে বেঁধে আবার সোফায় ফিরে এসে বসলো
আহানা কাঁদতেসে অনবরত
শান্ত না দেখার ভান করে গেমস খেলে যাচ্ছে
কাঁদতে কাঁদতে আহানা বড় বড় করে শ্বাস নেওয়া ধরলো,এভাবে হাত বেঁধে রাখায় ওর সত্যি কষ্ট হচ্ছিলো
শান্ত বুঝতে পেরে উঠে এসে ওর হাতের বাঁধন আবারও খুলে ওকে শাড়ী ঠিক করে পরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো,রুমে থাকলেই আহানা কথা বলার চেষ্টা করবে বারবার
তাই একাই থাকুক সেখানে
.
ভোর হতেই শান্ত আবার কেবিনে ঢুকলো,আহানা ডান হাত মাথার উপর রেখে ঘুমাচ্ছে
পুরো রাত রক্ত দিতেই লেগে গেছে,শান্ত এক সেকেন্ডের জন্যও ঘুমায়নি,ঘুমালে আহানা একা হয়ে যাবে
ডাক্তার এসে ব্যাগ সরিয়ে ক্যানেলার থেকে সব খুলে ফেললেন,শুধু ক্যানেলার রেখে দিলেন কারণ একদিন বাদে আবার ও রক্ত দিতে হবে
আহানা জেগে গিয়েছে ততক্ষণে
শান্ত একপাশে চুপ করে দাঁড়িেয় আছে,ডাক্তার বললেন এখন নিয়ে যেতে পারেন উনাকে
শান্ত আহানার হাত ধরে ওকে নামাতে যেতেই আহানা হাত সরিয়ে ফেললো,নিজে নিজে নামার চেষ্টা করতেসে,নেমেই হাঁটা ধরলো সে
কিছুদূর যেতেই পড়ে গেলো নিচে
শান্ত এগিয়ে এসে গাল ফুলিয়ে নিচু হয়ে ওকে তুললো তারপর ওকে এক হাত দিয়ে ধরে হসপিটাল থেকে বের হয়ে একটা রিকসা নিলো,রিকসায় দুজনে গাল ফুলিয়ে বসে আছে,এতক্ষন শান্ত রেগে ছিল আর এখন আহানাও
শান্ত আহানাকে নিয়ে ওর বাসায় আসলো
আহানা চুপচাপ শান্তর বিছানায় বসে আছে,রুপা নওশাদ এসে দেখে গেছে ওকে
এর পরে সূর্যের মেজো ভাই লিমন রক্ত দিবে
.
আহানার খারাপ লাগছে এই ভেবে যে তার জন্য রুপা নওশাদের বিয়েতে তাদেরই মুখে হাসি নেই,আজ রুপার বিয়ে আর সে কোনো মজাই করতে পারছে না,সবাই নরসিংদী চলে গেসে,সেখানে নওশাদের বাড়ি,সেখানে বিয়ে হবে,রয়ে গেছে শান্ত আর আহানা
আহানা মুখ ফুটে বলতেও পারছে না শান্তর না যাওয়াতে নওশাদ কতটা কষ্ট পেয়েছে,সকাল ৮টা বাজে তখন,আহানা নিজে নিজে বিছানা থেকে নেমে ড্রয়িং রুমের দিকে গেলো,
শান্ত বুয়াকে কবুতরের মাংস রাঁধতে বলেছে,কবুতরের মাংসে রক্ত বাড়ে,বুয়া সেটাই রান্না করতেসে আর শান্ত সব তদারকি করতেসে
আহানা এগিয়ে এসে দাঁড়াতেই শান্ত চলে গেলো পাশ কেটে
.
দাঁড়ান প্লিস,আপনি কাল থেকে আমার সাথে এমন কেন করতেসেন?
.
শান্ত তার আলমারি থেকে টিশার্ট নিচ্ছে
আহানা এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে নিজের দিকে ফিরালো
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো”সমস্যা কি?”
.
সমস্যা কি?আবার জিজ্ঞেস করতেসো?তুমি আমাকে এত বড় একটা কথা জানালে না আর এখন বলতেসো সমস্যা কি?
.
কেন জানাবো আপনাকে??
.
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে ২সেকেন্ড চেয়ে থেকে আহানাকে খপ করে ধরে কাছে নিয়ে এসে আহানার ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষন বাদেই ছেড়ে দিয়ে বললো “এই কারণে জানাবে”
আহানা থ হয়ে থাকিয়ে আছে ওর দিকে
মূহুর্তেই কি থেকে কি হয়ে গেলো!!
শান্ত টিশার্ট নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে গায়ের পাঞ্জাবি খুলে টিশার্টটা পরতেসে
আহানা বিছানায় এসে পা তুলে বসলো,শান্ত টিশার্ট পরে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে
আহানা ঠোঁটে হাত লাগিয়ে বসে রইলো বারান্দার দিকে তাকিয়ে
“ওর এই প্রেম আমাকে শান্তিতে মরতেও দিবে না”
রেগে আহানা পাশের বালিশটা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো
শান্তকে কিছু বলার,বোঝানোর,জিজ্ঞেস করতে চাওয়ার সাহস আর মনমানসিকতা কিছু আর রইলো না
এরকম সিরিয়াস মোমেন্টে ধরে এটা কি করলো,কিস ও না,আবার কিসের মতোই,আজব!যত দূরে থাকতে চাই তত স্পর্শ করে চলে যায় বারবার
.
শান্ত প্লেটে ভাত আর কবুতরের মাংস নিয়ে এসে ওর পাশে বসলো
চুপচাপ লোকমা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে ওকে
আহানা রেগে বললো “তখন এমন করলেন কেন?”
.
কি করলাম?
.
ওরকম!
.
তুমি বললা তোমার অসুখের কথা আমাকে জানাবে কেন
তাই আমি জানানোর কারণটা দেখিয়ে দিলাম
.
মানে কি বুঝাতে চান আপনি?কিস করলেই আপনাকে আমি আমার অসুখের কথা জানাবো?
.
ওটা তো কিস ছিল না,কিস তো তারা করে যাদের মনে প্রেম প্রেম মুড থাকে,বাট তখন আমার মোটেও প্রেম প্রেম মুড ছিল না,রাগে ছিলাম বলে কামড় দিসি,তুমি কিস আর কামড়ের পার্থক্যও জানো না?
.
আহানা গাল ফুলিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো,এই লোকটার সাথে সিধা কথা বলতে গেলেও হাজার প্যাঁচে পড়তে হবে
.
শান্ত ভেসিনে গিয়ে হাত ধুচ্ছে
আহানা ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে,এখন যদি বলি রুপা নওশাদের বিয়েতে যাব সোজা মানা করে দিবে,কি করা যায়
.
কি?এমন চেয়ে আছো কেন?
.
আআআমমমি আসলে!রুপার শশুর বাড়ি দেখবো
.
সেটা পরেও একদিন গিয়ে দেখে আসা যাবে
.
চলুন না আজ যাই
.
না,নো ওয়ে,তোমার শরীরের অবস্থা দেখসো?
.
আপনি আছেন না?
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে চেয়ে চলো গেলো
আহানা এই সুযোগে খোঁপা করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো
.
আহানা দাঁড়াও কই যাচ্ছো তুমি?
.
আমার বাসায়
.
কেন?
.
ওমা,শাড়ী পরবো না?রেডি হবো না?নরসিংদী যেতে হবে তো
.
না যাবে না তুমি
.
আমি যাব মানে যাবো
.
আহানা হাঁটা ধরলো,শান্ত মাথার চুল টেনে রাগ কনট্রোল করে আহানার পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো
আহানা বাসায় ঢুকে একটা শাড়ী নিলো,বেগুনি রঙের,চট করে শাড়ীটা পরে বেরিয়ে আসলো সে
শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা চুড়ি পরতে পরতে বললো কি ব্যাপার রেডি হয়ে আসেন,সবে সাড়ে ৯টা বাজে,নরসিংদী যেতেও তো সময় লাগবে, তাড়াতাড়ি করেন
.
তোমার যদি শরীর খারাপ হয় তো তোমার খবর আছে
.
হবে না
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে আসলো,একটা বেগুনী রঙের পাঞ্জাবি নিয়ে পরে আহানাকে নিয়ে নরসিংদীর উদ্দেশ্যে বের হলো,বিআরটিসির একটা বাসে টিকেট কেটে উঠলো দুজনে
.
আহানা শান্তর কাঁধে মাথা রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে
বাইরের আকাশ দেখতেসে সে,মাঝে মাঝে উঁচু দালান চোখে পড়তেসে, ঝুঁকে বসায় সব ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না
শান্ত গাল ফুলিয়ে চুপ করে সামনে তাকিয়ে আছে,এখনও ঠিক করে আহানার সাথে কথা বলতেসে না সে
.
আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে,আহানার মুখে রোদ পড়তেসে দেখে শান্ত জানালার পর্দা টেনে দিলো
নরসিংদী আসতে ২ঘন্টার বেশি সময় লেগে গেছে
শান্ত আহানাকে নিয়ে একটা রিকসা নিলো নওশাদের বাসায় যাওয়ার জন্য
নওশাদ মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে স্টেজে বসে আছে
শান্ত গেট দিয়ে ঢুকতেই নওশাদ স্টেজে থেকে ওকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে শান্তকে জড়িয়ে দরলো,খুশিতে আটখানা হয়ে গেসে নওশাদ
থ্যাংকস বলতে বলতে শেষ সে,সে কত খুশি হয়েছে তার জড়িয়ে ধরা দেখেই বুঝা যাচ্ছে,মনে হয় যেন কতবছর পর সে শান্তকে দেখেছে
আহানা মুচকি হেসে বাসার ভিতরে চলে গেলো,বিয়ের অনুষ্ঠান এটা রুপাদের বাসায় হওয়ার কথা ছিল কিন্তু নওশাদের বাবা মায়ের অনুরোধমত নওশাদদের বাসায় বিয়েটা হবে,কাবিন হবে এখানেই
রুপাদের বাসায় না হওয়ার কারণটা হলো গিয়ে নওশাদের ইচ্ছা ছিল কোনো বড় অনুষ্ঠান যেন আপাতত না হয়,তাই কাবিন সহ বিয়েটাই নওশাদের বাসায় থেকে হবে
আহানা রুপার কাছে গিয়ে বসলো ভিতরের রুমে
পুরো রুম ভর্তি মেয়ে,কেউ জানালার কাছে গিয়ে ফোনে কথা বলতেসে,কেউ বা খাটের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গসিপ করতেসে,আর খাটে তো বিন্দুমাত্র জায়গাও নেই,রুপা কোনোরকম সবার মাঝে গুটিশুটি দিয়ে বসে আছে
আহানাকে দেখে রুপা ঠিক সেরকম খুশি হয়েছে যেরকম নওশাদ শান্তকে দেখে হয়েছিল
আহানা হেসে দিয়ে রুপার পাশে গিয়ে বসলো
একটা মেয়ে এসে বললো “জানো বরের বড় ভাই এত্ত জোস,আমি তো চুল দেখে ক্রাশ খেয়ে গেসি”
আরেকজন বললো বারবার পকেটে হাত ঢুকানো দেখে আমি তো ফিদা হয়ে গেসি
একটা মেয়ে হাতে নেইলপলিশ লাগাতে লাগাতে বললো ওসব রেখে আমি তো তার হাইট দেখে ক্রাশিত
আহানা মাথা বাঁকা করে বাইরের দিকে তাকালো,বাসার সামনে স্টেজ
সেখানে শান্তকে দেখা যাচ্ছে,নওশাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতেসে সে
আহানা মুচকি হেসে রুপার ঘোমটা ঠিক করায় মন দিলো
একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বললো সেই ছেলেটা আসতেসে এদিকে!!!
সব মেয়েরা ঠিকঠাক হয়ে বসলো,আহানা যে তার স্ত্রী তা কেউ জানে না,শুধু জানে সে বিবাহিত,তাও ক্রাশ তো ক্রাশই হয়
শান্ত পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে একটু কাশ দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো
সবার আগে আহানার দিকে তাকালো সে,তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সব মেয়েরা রোবটের মত দাঁড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত আহানার কাছে এসে এক বোতল পানি দিয়ে খেতে বলে চলে গেলো
একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে ফিসফিসিয়ে বললো এ মেয়েটা মনে হয় ছেলেটার স্ত্রী,হুমমম
.
রুপা আহানাকে এক ধাক্কা দিলো দুষ্টুমি করে কারণ আহানা লজ্জায় লাল হয়ে আছে
.
বাইরে থেকে গান শোনা যাচ্ছে,শান্তর গলা
আহানা উঠে বেরিয়ে গেলো দেখতে,তার পিছু পিছু বাকি মেয়েরাও ছুটলো
শান্ত মাইক নিয়ে গান গাইতেসে,তার সেই চিরচেনা সুর,চিরচেনা সেই গান “বাজে স্বভাব”
ওর সাথে সূর্য আর রিয়াজও গান ধরেছে
আহানা হেসে শান্তর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত গান গাইলে মনে হয় ওর চোখ ও তাল মিলাচ্ছে গানের সাথে সাথে
শান্ত তার ঠোঁটের উপর দিয়ে আঙ্গুল ঘুরিয়ে নিয়ে আহানার দিকে চেয়ে গানের শেষ লাইনটা গাইলো
“আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না”
আহানা দারুনভাবে লজ্জা পেয়ে চলে গেলো বাসার ভিতরের দিকে
শান্ত এত মানুষ ভর্তি জায়গায় ওকে লজ্জা দিয়ে দিলো যা একটা কাকপক্ষী ও জানতে পারলো না
“আমার বয়ে গেসে আর কোনোদিন কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো না
লজ্জা দিতে এক নাম্বার ছেলেটা,ইসসসস?”
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫৭
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫৭
#Writer_Afnan_Lara
?
“আফসোস এই দিনটা মাকে দেখাতে পারলাম না”
.
শান্ত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো,তখনই নওশাদ কল দিয়ে বললো ওদের বাসার ছাদে আসতে জলদি
.
“ঠিক আছে” বলে শান্ত দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো
.
ওর বাসায় গিয়ে ছাদে এসে দেখলো এলাহি কান্ড
নওশাদের আর রুপার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান একসাথে হবে তাও শান্তদের বাসার ছাদে
আর সেটার জন্য শান্তর অনুমতি লাগবে
এটা শুনে শান্ত নওশাদের পিঠে ধরে এক কিল বসিয়ে বললো “কিসের অনুমতি? তুই চাইলে বিয়ের পর রুপাকে নিয়ে আমার বাসায়ও থাকতে পারিস,এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে?”
.
জানোস তো আমার পুরো পরিবার গ্রামে থাকে,জাস্ট বিয়ের অনুষ্ঠান সেখানে হবে,আর বাকি সব এখানে,রুপাদের ছাদ ছোট বলে আমি এখানের কথা বললাম
.
তুই টেনসন ফ্রি থাক আমি বাসার মালিককে কল করে বলে দিচ্ছি ডেকোরেশন শুরু করবি কখন থেকে সেটা বল
.
আমরা আমরা মিলে সাজাবো,তুই আজ ভার্সিটিতে যাইস না,আমি এত কাজ একা পারবো না
.
তুই বর তুই কিনা এসব করবি?বিয়ের জন্য কি তোর মাথা গেসে?যা সর!আমি সূর্য আর রিয়াজ মিলে সব হ্যান্ডেল করে নিব
.
ওকে তাহলে,চল নাস্তা করবি
.
জি না,আমার এখন বউ আছে আমি তার সাথে নাস্তা করবো হুহহহহ
.
ইহহ,মনে রাখিস যখন তোর বউ ছিল না তখন আমাদের সাথে নাস্তা করতি
.
তো চল আমার সাথে নাস্তা করবি
.
না ভাই বুয়া অলরেডি নাস্তা বানিয়ে ফেলছে আজ জলদি আসতে বলেছিলাম,তুই তোর বউয়ের বানানো নাস্তা খেয়ে আয় আমি যাই বাসার দিকে
.
ওকে
.
শান্ত বাসায় ঢুকে তার জ্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে গেলো একেবারে আহানার বাসা থেকে অফিস যাবে সে
.
আহানা নাস্তা বানাচ্ছে,,এখন থেকে মিষ্টিকে পড়াতে হবে না,কাল মিষ্টির মা বেতন দিয়ে দিয়েছিলো,মিষ্টিকে হোস্টেলে পাঠাবে তার মা,তাই এখন আর টিউশনি করাতে হবে না
আহানা মনে মনে ভাবতে লাগলো প্রতি মাসের আয় ২হাজার কমে গেলো,ধুর!আরেকটা টিউশনি খুঁজতে হবে এখন,নাহয় খুঁজবো না থাক,এত প্যারা ভালো লাগে না
.
দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকালো সে,শান্ত জ্যাকেট এনে সোফায় রেখে দপ করে বসে টিভি নিয়ে বসলো
.
তখন সকাল ৭:৩০বাজে
আহানা নাস্তা নিয়ে টেবিলে রেখে শান্তর দিকে চেয়ে হেসে চেয়ে রইলো,কখনও পরিবার না পাওয়া মেয়ে যখন পরিবার পায় তখন তার ঠিক যেমন লাগে আহানার ঠিক তেমন লাগছে,তার জীবনে আপন বলে কেউ ছিল না,আর আজ শান্তকে তার নিজের পরিবার মনে হচ্ছে,একজনকে নিয়েও পরিবার হয়,আর এই শান্তই আমার পরিবার
হঠাৎ করে প্লেট টেবিলে রেখে দৌড়ে গিয়ে আহানা শান্তকে জড়িয়ে ধরলো,কেন ধরলো জানে না তবে ভিতরের যন্ত্রনা কমাতে, যে ভয় তার মনে তা কমাতে
শান্তর কাছে আহানার এমন হঠাৎ হঠাৎ জড়িয়ে ধরাটা ভালো টিকছে না
সে আহানাকে ধরে পাশে বসিয়ে ওর থুতনির নিচে হাতের তালু রেখে ওর মুখ উপরের দিকে তুললো
তারপর ওর মুখের ভাবগতি দেখে বুঝার চেষ্টা করলো কি হয়েছে,আহানা চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
শেষে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না সে
আবারও জড়িয়ে ধরলো তাকে,আহানার পিঠে হাত রেখে বললো “আমি আছি না?কি হইসে তোমার?শরীর খারাপ?চলো ডাক্তারের কাছে যাই”
.
না,আমি ঠিক আছি
.
তাহলে এভাবে হঠাৎ হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরতেসো কেন আজকাল?
.
না এমনি
.
“বসো আমি আসতেসি”
শান্ত উঠে গিয়ে নাস্তা সোফায় এনে আহানাকে খাইয়ে দিচ্ছে,আহানার চোখের অশ্রু বাধা মানতেসে না,মন চাচ্ছে কেঁদে দিতে,শান্ত কেন ওকে এত ভালোবাসে
.
শান্ত রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো “সোফাকে এমন খাঁমছে ধরতে হবে না,মনের ভিতর কি চলে শেয়ার করে ফেলো,বকবো না”
.
আহানা সোফা থেকে হাত সরিয়ে উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো,হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলতেসে সে,শান্ত কে কি বলবো যে আমার রক্তশূন্যতা? না থাক,নওশাদ রুপার বিয়ে শেষ হলে বলবো
.
শান্ত তার বাসায় ফিরে গেসে নাস্তা করেই,,ডেকোরেশনে হেল্প করতে
আহানা রান্নাঘর গুছাচ্ছে,কাজ করার সময় ওর চোখ পড়লো শান্তর বাসার ছাদের দিকে,দূর থেকে কতজনকে দেখা যায় তাদের মধ্যে শান্তকে আহানা ঠিকই চিনেছে,কথা বলতে বলতে পকেটে হাত ঢুকানো আর জ্যাকেট পিছন থেকে টানা বারবার,এটাই শান্ত আবার মাঝে মাঝে কাজের ফাঁকে আহানার দিকেও তাকাচ্ছে সে
দেখতে পেয়েছে কিনা কে জানে তবে বারবার তাকাচ্ছে এদিকে
আহানা মুচকি হেসে চলে গেলো,রান্নাঘর থেকে চলে যেতেই শান্ত ওকে ফোন দিলো যে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হতে,একেবারে অফিস থেকে অনুষ্ঠানে আসবে তারা
আহানা ঠিক আছে বলে গোসলটা করে আসলো,তারপর হলুদ শাড়ীটা পরলো,চুড়ি গুলো পরতে পরতে তার চোখ গেলো সাজগোজের জিনিসের সাথে নকল ফুলের দিকে
লম্বা গাজরা,এটা কোনোদিন আহানা পরেনি বলে বুঝতেসে না কি করে এটা পরবে
হাতে নিয়ে ঘুরালো কিছুক্ষন ওলটপালট করলো তাও পারলো না পরতে,না পেরে ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিয়ে চুল ঝেড়ে নিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত চোখ বন্ধ করে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে
পরনে হলুদ পাঞ্জাবি,চুলগুলো হালকা বাতাসে নড়তেসে তার,আহানা জিভে কামড় দিয়ে বললো সরি আপনাকে দেখতে পাইনি আমি
.
শান্ত হেসে দিয়ে বললো ইটস ওকে,রেডি তো?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে গাজরাটা ধরে বললো পারি না পরতে,বাকিসব রেডি,শুধু এটা বাদে
.
তুমি মেয়ে হয়ে এটা পরতে পারো না?
.
আহানা মাথা নিচু করে বললো আগে কোনোদিন পরিনি আমার এগুলা ছিল না
.
শান্ত হেসে বললো তো কি হয়েছে,আমি আছি না
শান্ত এগিয়ে এসে গাজরা হাতে নিয়ে চোখ বড় করে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন,তারপর আহানাকে আয়নার দিকে ফিরিয়ে ওর চুলে হাত দিয়েই বললো চুল তো ভিজা,আর এগুলা তো খোঁপায় লাগায়
.
হুম,তাহলে?
.
এটা ব্যাগে নিয়ে নাও,সন্ধ্যা পর্যন্ত চুল যখন শুকিয়ে যাবে তখন আমি পরিয়ে দিব
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো
.
শান্ত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার চুলগুলো ঠিক করে চলে যেতে নিতেই দেখলো আহানার চুড়ি একটা নিচে পড়ে আছে,নিচু হয়ে সেটা নিতে গিয়ে দেখলো খাটের নিচে একটা ব্যাগ যার উপরে একটা কাগজ,মনে হয় এই বুঝি পড়ে যাবে কাগজটা
.
শান্ত কাগজটা নিয়ে দেখলো কিসের যেন রিপোর্ট,কিসের রিপোর্ট সেটা দেখতে যেতেই আহানা সোফার রুমে থেকে বললো জানালা সব লাগিয়ে দিয়েছি চলুন যাই
শান্ত কাগজটা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে বেরিয়ে গেলো
♣
অফিস যাওয়ার সময় একটা ফুলের দোকানের সামনে বাইক থামিয়ে শান্ত একটা হলুদ ক্যালেন্ডুলা ফুল কিনে নিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে ওর কানে গুজে দিলো
.
আহানা বললো”হঠাৎ”??
.
আমার বউ নকল ফুল পরবে কেন,আমার বউ আসল ফুল পরবে
.
আহানা হেসে শান্তর পিঠে মাথা রাখলো
.
একটা কথা বলবো?
.
কি?
.
আপনি তো বলছিলেন আপনি যাকে কিস করবেন তার ঠোঁটে এক গাদা লিপস্টিক থাকবে,তাহলে আমাকে করলেন কেন?আমি তো সেদিন লিপস্টিকই দিই নাই
.
শান্ত ডান পাশের মোড়ে বাইক ঢুকিয়ে যেতে যেতে বললো ওটা বলেছি তার কারনটা সিক্রেটই থাক,তোমার জানার দরকার নেই
.
আহানা গাল ফুলিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো
.
শান্ত মুচকি হাসতেসে,আহানাকে যদি বলতো যে তার লিপস্টিক পছন্দ না তাহলে আহানা অনেক কিছু ভেবে নিতো তখন,শান্ত সেটা চায়নি বলেই লিপস্টিকের কথা বলেছে
অফিসে আসতেই নিহাল কেমন করে যেন আহানার দিকে চেয়ে রইলো
চেয়ে থাকারই কথা,আহানাকে বেশ লাগতেসে আজ
শান্ত বিষয়টা খেয়াল করে আহানাকে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বসালো
.
কি?আপনার দিকে ফিরে থাকলে আমার কাজ করা হবে না
.
ফাইল কোলে রেখে চেক করো,ওদিকে ফিরতে হবে না
.
হুহ!
.
নওশাদ ফোন করতে করতে শেষ শান্ত কখন আসবে,আসতেসে না কেন এসব বলতে বলতে
শেষে ৬টার দিকে অফিসের সমস্ত কাজ সেরে দুজনে বেরিয়ে পড়লো
বাসার সামনে আসতেই আহানা বাইক থেকে নেমে হাঁটা ধরলো পরে শান্ত ওকে ডাক দিয়ে থামালো
.
“তোমার গাজরা লাগাবো তো,দাঁড়াও”
.
শান্ত এগিয়ে এসে গাজরা নিয়ে ক্যাবলার মত চেয়ে আছে,এটারে মাথায় লাগায় কেমনে,শেষে অনেক ভাবনা চিন্তা করে বড় শ্বাস নিয়ে আহানার খোঁপার উপর পেঁচিয়ে দিলো
ওমা একদম সেরকম হয়ে গেসে যেরকম এক্সচুয়ালি মেয়েরা গাজরা পরে
শেষে একটা ববি পিন দিয়ে আটকে দিলো ব্যস হয়ে গেসে,শান্তর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না
আহানা হেসে বললো যাক এসব জিনিস ভালোই তো পারেন এটা বলেই আহানা চলে গেলো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে যেতে যেতে ভাবলো অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে সাকসেস হইসি,ওএমজি!!?
.
আহানা সোজা ছাদে আসলো,মেয়ে আর ছেলেতে ঠেললে ঠেলা যায় না,ছাদে জায়গা নেই বললেই চলে,দুইপক্ষের লোক বলে কথা,স্টেজে রুপাকে দেখা যাচ্ছে,আহানা মুচকি হোসে সেদিকে গেলো,রুপার মা এসে আহানাকে ঝাপটে ধরেছে কারণ উনি জানেন নওশাদের বড় ভাইয়ের স্ত্রী হলো আহানা,আহানা দাঁত কেলিয়ে উনার প্রশ্নের জবাব দিতেছে
রুপাকে আজ অনেক সুন্দর লাগতেসে,তাকে কমলা রঙের শাড়ী পরিয়ে হালকা ফুলের গয়না দিয়ে সাজিয়েছে ওর কাজিনরা
শান্ত রুমে এসে নওশাদকে রেডি করতেসে
আর আহানা রুপার পাশে বসে ওর সাথে কথা বলতেসে,,একটা বাচ্চা মেয়ে এসে বললো শান্ত আঙ্কেল তোমাকে ডাকে
আহানা রুপাকে বলে ছাদ থেকে নেমে ৫তলায় আসলো
শান্তদের বাসায় আপাতত কেউ নেই,সবাই ছাদের দিকে গেসে,শুধু শান্তই আছে
আহানা ভিতরে ঢুকে শান্তর রুমের দিকে গেলো
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে
আহানা আসতে আসতে বললো কি হয়েছে আমাকে ডাকলেন??কোনো কাজ আছে?
.
শান্ত মুচকি হেসে পিছন ফিরে ওর দিকে তাকালো,শান্তর এমন চাহনি দেখে আহানার বুঝতে বাকি নেই শান্ত ওকে কেন ডেকেছে
আহানা পিছিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত আঁচল ধরে ফেললো ওর
আহানা থেমে গিয়ে বললো ওখানে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে,আমাদের এখন যাওয়া উচিত
.
হুম যাবো
.
আঁচল টেনে শান্ত আহানাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো
আহানা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে
শান্ত মুচকি হেসে একটা সোনার হার আহানাকে পরিয়ে দিলো
আহানা অবাক হয়ে গলায় হাত দিয়ে শান্তর দিকে তাকালো
শান্ত ভেংচি দিয়ে বললো তোমার কি মনে হয় রোমান্স করার জন্য আঁচল ধরেছি?
তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই!এটা আমার মায়ের হার,তোমার প্রাপ্য বলে তোমাকে পরিয়ে দিলাম,আরও আগেই পরানো উচিত ছিল তবে আমার আজ মনে পড়লো
আহানা ব্রু কুঁচকে চলে যেতে নিতেই শান্ত খিঁচিয়ে আবারও টান মারলো
আহানা রেগে বললো” কি?আপনার না ইন্টারেস্ট নেই?”
.
শান্ত হেসে বললো ঐদিন কি বলসিলাম?আমার ইন্টারেস্ট নেই মানে হলো ইন্টারেস্ট আছে
শান্ত আহানার আঁচল ছেড়ে ওর কোমড়ে হাত রেখে আরও কাছে টেনে নিলো ওকে
আহানা শান্তর পাঞ্জাবির বোতামের দিকে তাকিয়ে আছে,শান্তর দিকে তাকানোর সাহস তার নেই,বোতাম ৫টা,বারবার করে গুনতেসে সে
শান্ত মুচকি হেসে কপালে চুমু দিয়ে আহানার দিকে তাকালো,আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,ওর চোখের পাপড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে শান্ত,মুখটা বাঁকিয়ে আহানার কানে ঠোঁট রেখে হালকা করে একটা চুমু দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো “চলো যাই”
এটা বলে আহানার হাত ধরে হাঁটা ধরলো সে
আহানা হাসতেসে শান্তর কার্যকলাপে,পাগল ছেলেটা
আমি তো ভাবলাম কি না কি করে ফেলবে
ছাদে এসে দেখলো সবাই নাচার প্র্যাকটিস করতেসে,এখন নাচবে ছেলের দল,সবার গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি আর মেয়েরা হলুদ শাড়ী পরেছে
নওশাদ আর রুপা স্টেজে বসে হাসতেসে ওদের হাসি দেখে শান্ত ও হাসলো
আহানার মাথাটা ঘুরিয়ে উঠলো হঠাৎ করে,পানি খেলে ভালো হতো,পানির গ্লাস নিতে যেতেই শান্ত ওর হাত ধরে নিয়ে গেলো সবার সাথে নাচার জন্য
.
আহানা শান্তকে বললো থামতে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কি?নাচবা না?জাস্ট হাত নাড়াবে তাহলেই হবে,চলো
.
না,আমমমারররর আসলে
.
কি?শরীর খারাপ করছে?
.
আহানা চোখ বন্ধ করে ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে বললো পানি খাবো
.
শান্ত আহানার হাত ধরে পানির কর্ণারে এনে পানি নিয়ে ওকে দিলো
আহানা গ্লাস হাতে নিয়ে খাওয়ার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো
শান্ত কি করবে বুঝতেসে না
আহানা জ্ঞান হারালো কেন,এখন তার কি করা উচিত এসব ভাবতে ভাবতসে আহানাকে ধরে ফেলেছে সে
নওশাদ আর রুপা স্টেজ থেকে নেমে চলে আসলো শান্তর কাছে
শান্ত আহানাকে কোলে তুলে নিলো,সবাই বললো বাসায় নিয়ে যেতে
শান্ত ওকে নিয়ে নিজের রুমে এনে বিছানায় রাখলো
পানির ছিঁটা দিলো তাও জ্ঞান ফিরছে না ওর
নওশাদ একজন ডাক্তার নিয়ে আসলেন ততক্ষণে
সবাই মুচকি হাসতেসেন,সবার ধারনা আহানা প্রেগন্যান্ট
ডাক্তার আহানার হাতের নাড়ি চেক করে তারপর ওর চোখের নিচে চেক করে ব্রু কুঁচকে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললেন” ও মাই গড,উনার তো শরীরে রক্তই নেই,ইমিডিয়েটলি উনাকে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন,ডাক্তার দেখিয়েছিলেন আপনারা?পয়েন্ট কতো?”
.
শান্ত যেন আকাশ থেকে পড়লো,সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,এসব কি বলছেন উনি,এসবের কিছুই তো ওর জানা ছিল না,পকেটে হাত দিয়ে ফোন নিতে যেতেই রিপোর্টটা হাতে চলে আসলো,খুলে দেখে বললো দেখুন তো এটা কিনা?
.
ডাক্তার দেখে বললেন হ্যাঁ এটাই তো
রিপোর্ট দেখে উনি বিস্মিত হয়ে বললেন একি উনার তো রক্তের পয়েন্ট মাত্র ৪.১৭পয়েন্ট, আজই রক্ত না দিলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে,উনার তো ব্লাড গ্রুপ এ পজিটিভ,এ পজিটিভ রক্তের ব্যবস্থা করুন জলদি
.
শান্ত মাথার ঘাম মুছে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে,কি করবে কি বলবে বুঝতেসে না,আহানা তাকে এই ব্যাপারে জানালোনা কেন
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫৬
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫৬
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা চুপ করে থেকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো শান্তর দিকে
শান্ত টিভি দেখায় মন দিয়ে আছে তার মানে এখন মিথ্যা বললেও ধরতে পারবে না সে
জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে আহানা মিথ্যাটা শেষমেষ বলেই দিলো
“ঐ আসলে ময়লা ফেলতে গেসিলাম”
.
শান্ত টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আহানার দিকে চেয়ে বললো
“ময়লার বালতি কই তাহলে?”
.
“নিচে রেখে এসেছি”.
কথাটা বলে আহানা তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে গিয়ে খাটের নিচে রিপোর্ট লুকিয়ে ফেললো
শান্ত সোফার রুমে থেকে বললো রেডি হতে অফিস টাইম হয়ে গেসে
আহানা হুম বলে মাথার ঘাম ওড়না দিয়ে মুছে বের হলো
.
বাইকে বসেই শান্তকে শক্ত করে ধরলো
শান্ত হেলমেট পরতে পরতে বললো “কি ব্যাপার ভয় করছে নাকি?নাকি শরীর এখনও ঠিক হয়নি”
.
না ঠিক আছি
.
অফিসে এসে দুজনে কাজে লেগে পড়েছে,আহানা ভুলেই গেসে তার অসুখের কথা তবে মাঝে মাঝে দূর্বল লাগলে মনে পড়ে যায় তখনই শান্তর দিকে তাকায় সে
শান্ত ফোনে নওশাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতেসে
ব্রেক টাইম চলতেসে,আহানার নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে
খুব মন চাচ্ছে শান্তকে একবার জড়িয়ে ধরতে,তাহলে হয়ত অসহায়ত্ব কিছুটা হলেও কমবে
আহানার এই ভাবনায় ছেদ ঘটালো শান্ত,হুট করে এসে ফোনে কথা বলতে বলতেই আহানাকে জড়িয়ে ধরলো সে,এক হাত দিয়ে ওকে বুকে আগলে রেখে নওশাদের কথার উত্তর দিচ্ছে সে
আহানা শান্তর বুকে ঠাঁই পেয়ে যেন সব কষ্ট ভুলে গেলো,আরও শক্ত করে সে শান্তকে জড়িয়ে ধরলো
.
“ওকে নওশাদ বাসায় এসে দেখা হচ্ছে,এখন রাখতেসি!বাই
আহানা?কি হইসে তোমার?”
.
না কিছু না,এমনি
.
চলো কিছু খাবে
.
না
.
শান্ত চোখ ইয়া বড় করে তাকাতেই আহানা বললো “আচ্ছা আচ্ছা খাব চলুন”
শান্ত ওর হাত ধরে ক্যানটিনে নিয়ে গেলো
.
“একটু খাওয়া দাওয়া বাড়িয়ে দাও,শরীর দেখসো তোমার?না খাওয়ার কারণেই আজ অসুস্থ হয়ে গেসিলে,এখন থেকে আমি যা যা খাবো তুমিও সেটাই খাবা”
.
“সিগারেট ও?”
.
“না,সেটা তুমি খাবে না,সেটা তোমাকে স্যুট করে না”
.
আহানা খাবার খেতে খেতে মুগ্ধ চোখে শান্তর দিকে চেয়ে রইলো,জীবনে কখনও এত কেয়ার পাইনি বলে হয়ত আল্লাহ জীবনসাথী হিসেবে এমন একজনকে পাঠিয়েছেন যে কিনা কেয়ার করার একটা বিন্দু ও বাদ রাখে না
আল্লাহ তুমি শুধু আমাকে বলে দাও এই সুখ স্থায়ী হবে তো?স্থায়ী হলে কেন আমার মনে বারবার বিপদের আশংকা লাগে,মনে শান্তি পাই না কেন আমি
.
আহানা?কি এত ভাবো?আর এমন হাসতেসো কেন আমার দিকে তাকিয়ে?প্রেমে টেমে পড়সো নাকি?হুমমমম?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
না?
খাওয়া শেষে দুজনে আবার কেবিনে ফিরে আসলো,শান্ত এক হাতে অফিসের কাজ করতেসে আরেক হাত দিয়ে ফোন কানে ধরে নওশাদের বকবক শুনতেসে,নওশাদ তার বিয়ে নিয়ে অনেক এক্সাইটেড
সন্ধ্যা ৬টা ৩০এর দিকে অফিস ছুটি হয়ে গেলো,আহানা বাইকে উঠে শান্তর কাঁধে হাত রেখে বললো “আজ সেই লেকে যাবেন?”
.
কেন বলোতো?
.
এমনি,সময় না থাকলে থাক
.
না যাবো না সেই লেকে
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে বাইরের রোড দেখায় মন দিলো,সন্ধ্যার ঢাকা দেখতেসে সে
জ্যাম ধরছে চাদরের মতো
আহানা বহুতল দালান দেখতেসে আর তলা গুনতেসে,ডান পাশের দালানটা ১৩তলা,আর বাম পাশের দালানটা ১৭তলা
তবে এই রোড দিয়ে তো আমাদের বাসায় যাওয়া য়ায় না,তাহলে এটা দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
.
লেকে যাবো না ঠিক তবে তোমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবো,বেশ ভালো একটা নামকরা রেস্টুরেন্টে যাবো,ক্যান্ডেল লাইট ডিনার
.
না
.
কি না?
.
আমার ওসব ভালো লাগে না,আপনি বরং আমাকে এমন কোথাও নিন যেখানে বসে শান্তিতে ফুচকা আর ঝালমুড়ি খাওয়া যাবে
.
সিরিয়াসলি তুমি বড় রেস্টুরেন্টের খাবার ডিকলাইন করে কিনা স্ট্রিট ফুড খাবে বলতেসো?
.
হ্যাঁ,কেন কি হয়েছে,যেটা খেলে পেট মন দুটোই ভরবে সেটা খেতে ক্ষতি কোথায়?আর বড় বড় রেস্টুরেন্টে খেলে সেটা হয় লোক দেখানো আর কিছু নয়,ওসব খাবারের চেয়েও আমার কাছে ফুচকা, চটপটি আর ঝালমুড়ি,সাথে এক কাপ দুধ চা বেশ লাগে,এতেই আমি খুশি
.
শান্ত হেসে দিয়ে আহানাকে নিয়ে আবার সেই লেকে আসলো,তারপর ওকে বসিয়ে রেখে ফুচকা আনতে গেলো
আহানা নিজে নিজে পানিতে পা চুবিয়ে বসলো,একা একা ভয় করে দেখে আবার পা উঠিয়ে ফেললো
আগে লেকের ওপাশে সব ল্যাম্পপোস্ট এক কাতারে জ্বলে থাকতো এখন ও জ্বলে আছে তবে একটা দুইটা জ্বলতেসে না
.
শান্ত ফুচকা এনে ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে বেছে বেছে মরিচ সব ফেলে তারপর মুখে দিলো
আহানা টকে ফুচকা চুবিয়ে মুখে দিচ্ছে,সেটা দেখে শান্ত ও তেমন করলো,টক সমেত গোটা ফুচকা মুখে ঢুকিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে গিললো তারপর বললো আর জীবনে টক দিয়ে ফুচকা খাব না
আহানা শান্তর পাগলামো দেখে হাসতে হাসতে শেষ
ফুচকা খাওয়া শেষে শান্ত উঠলো চা আনার জন্য আহানাও উঠে পড়লো,সেও সাথে যেতে চায়
শান্ত আর মানা করলো না,ওর হাত ধরেই হাঁটা ধরলো
দুজনেই ফাঁকা রোড দিয়ে হাঁটতেসে,লেকের পাশটার রোড এটা তাই মানুষ খুব কম
শান্ত হেসে আহানার দিকে চেয়ে বললো সেদিন চড় মেরে ভালো করেছো
.
কেন?
.
চড়ের কারণে আমি আমার পাতানো বউকে পেলাম আর তুমি তোমার পাতানো বর পেয়ে গেলা
.
আহানা অপরাধীর মত চেয়ে হাঁটতেসে,যে ছেলেটা তাকে এত ভালোবাসে তাকে কিনা কোনো একদিন সে চড় মেরেছিল ভাবতেই নিজেকে এখন মারতে ইচ্ছে করতেসে তার!!
চায়ের স্টলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে চা নিয়ে আবারও উল্টো পথে হাঁটা ধরলো তারা
শান্ত বললো আহানা ছোট থাকতে শান্তর সাথে থাকলে হাসতো বেশি,এমনিতে হাসতো না
আহানা মিটমিট করে হাসতেসে শান্তর কথা শুনে
শান্ত চায়ে চুমুক দিয়ে আহানার দিকে চেয়ে রইলো,ওর মুখে এই হাসিটা বড্ড মানায়!
আহানা শান্তর মজার মজার কথায় হাসতে হাসতে শান্তর হাত ধরে ফেললো এক সময়
শান্ত এতক্ষণ চুপচাপ জোকস বলতেসিলো হুট করে আহানা তার হাত ধরায় এখন তার নিজেরই চোখেমুখে হাসি ফুটেছে
চা খাওয়া শেষে দুজনে বাড়ি ফিরে আসলো
শান্ত বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখনই পিছন থেকে আহানা ডাক দিলো
বাইক থামিয়ে সে আহানার দিকে তাকিয়ে ব্রুটা কুঁচকিয়ে বললো “কি হয়েছে?”
আহানা ওড়না গিট্টু দিতে দিতে বললো “আজ আমার বাসায় থাকবেন?”
.
শান্ত হাত দিয়ে চোখ ডলে নিজের কপাল নিজে চেক করে আকাশে চাঁদের অবস্থান দেখে বললো সব তো ঠিক আছে,তাহলে তুমি এমন অবাস্তব কথা বললা?কেমনে?কে দিলো তোমায় এমন সৎবুদ্ধি??কাগজ হারিয়ে ফেলসো নাকি?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো হারাইনি,বাসা থেকে বের করে দিই বলে কত কথা শুনান তাই বলসি আমার বাসায় থাকতে আর কোনো কারণ নেই,আর আপনি এক রুমে ঘুমাবেন আমি আরেক রুমে,এটা বলেই আহানা বাসার ভেতর চলো গেলো
.
শান্ত হেলমেট খুলে বাইক সাইড করে রেখে আসলো
আহানা রান্না করতেসে মনোযোগ দিয়ে
শান্ত আহানার তোয়ালে হাতে নিয়ে বললো আমি গোসল করতে যাই,এটা তোমার তেয়ালে তো?
.
আহানা চোখ বড় করে দৌড়ে এসে তোয়ালেটা নিয়ে বললো “খবরদার আমার পার্সোনাল কিছু টাচ করবেন না”
.
আহানা তোয়ালে নিয়ে নিজের আলমারিতে রেখে পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে
আহানা ভয়ে পিছিয়ে যেতেই দুম করে আলমারির ভিতরের তাকের সাথে বাড়ি খেলো একটা
শান্ত ওকে ধরে সেখান থেকে বের করে আনিয়ে খাটে বসালো
.
আহানা মাথা মুছতে মুছতে বললো এরকম করে ভয় দেখান কেন?
.
কই ভয় দেখালাম,তুমি তোমার হাসবেন্ডকে দেখলেই যদি ভয় পাও তো আমার কি করার আছে?
.
আপনি গোসল করার জন্য উঠে পড়ে লাগছেন কেন?গোসল করে কি পরবেন?
.
নওশাদকে বলসি আমার এক স্যুট জামা দিয়ে আসতে?
.
কাল উনার বিয়ে এত কাজের ভিতরে উনাকে দিয়ে আপনি এসব করান?
.
আরেহহ তোয়ালে তো আনতে বলিনি,আর তুমি তো তোমার তোয়ালে আমাকে ধরতেও দিবা না তাহলে আর কি করার!!!
এটা বলে শান্ত আহানার গায়ের থেকে ওড়না নিয়ে চলে গেলো
আহানা থ হয়ে চেয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
তারপর পিছন পিছন এসে বাথরুমের দরজা ধাক্কাতে লাগলো কিন্তু কে শোনে কার কথা,শান্ত ঝর্নাও ছেড়ে দিসে ততক্ষণে
উপায় না পেয়ে আহানা আলমারি থেকে আরেকটা ওড়না নিয়ে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে
তারপর কি মনে করে আবারও দৌড়ে আসলো বাথরুমের সামনে
“প্লিস আমার ওড়না ইউজ করবেন না আমি আপনাকে আমার তোয়ালে দিচ্ছি”
.
গুড গার্ল,দাও তাহলে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বাধ্য হয়ে তোয়ালে এনে দরজায় টোকা দিলো
শান্ত হাত বের করে তোয়ালে নিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললো আবার
.
আজব তো!আমার ওড়না দেননি কেন?
.
ওমা,ওড়না কেন দিব?
.
কেন দিবেন মানে,ওড়নার বদলে তো তোয়ালে দিলাম তাহলে ওড়না ফেরত দেওয়ার কথা না আপনার?
.
তুমি আমার বডি দেখলে পাগল হয়ে যাবে আর আমি তোমাকে পাগল করতে চাই না কারণ তুমি সিক,তাই তোয়ালে লুঙ্গির মত পরবো আর ওড়না গায়ে পরবো
.
আপনি একটা আস্ত বেয়াদব!!
.
আহানা গালি দিতে দিতে রান্নাঘরে ফিরে আসলো আবার
.
শান্ত বাথরুম থেকে বেরিয়ে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে তোয়ালে পরে ড্রয়িং রুমের দিকে গেলো
আহানা ডাইনিং এ প্লেট রেখে ব্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে আবার চলে গেলো
শান্ত একটা ভাব নিয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে,নওশাদ কিছুক্ষণ বাদে এসেই হাতে জামার প্যাকেট দিয়ে চলে গেলো তার হাতে সময় নেই,কত কাজ তার!!
.
শান্ত টিশার্ট পরে গায়ের ওড়না নিয়ে আহানার গাছে গিয়ে ওর গায়ে পেঁচিয়ে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
.
আহানা ভয় পেয়ে এক চিৎকার করতে যেতেই শান্ত ওর মুখ চেপে বললো “চুপ করো নাহলে অলি তার ১৪গুষ্টি নিয়ে হাজির হয়ে যাবে তো”!!!
.
আপনি আমাকে এরকম ডিস্টার্ব করেন কেন রান্না করার সময়??
.
কেমন বউ তুমি?তোমার ওড়না দিতে আসছি আর কিছু না,ধরো
শান্ত ওড়নাটা আহানার হাতে দিয়ে ব্রু কুঁচকে চলে গেলো
.
নির্ঘাত কিস করতে এসেছিল,আমার রাগ দেখে চলে গেছে
.
আহানা ওড়নাটা রেখে দিলো চেয়ারে এটা ধুয়ে পরবে সে,না জানি কি করছে আমার ওড়না দিয়ে,খবিশ একটা!
.
শান্ত সোফায় এসে বসেছে টিভি অন করে
আহানা খাবার এনে ডাইনিংয়ে রেখে ওকে ডাক দিলো
শান্ত টিভি অন রেখেই ডাইনিংয়ে এসে পড়েছে
খাচ্ছে আর টিভিতে খেলা দেখতেসে
আহানা শান্তর জন্য আলাদা একটা রুম পরিপাটি করে নিলো,তারপর রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো শান্ত টিভিতে তার ফোনের কানেকশন দিচ্ছে
.
একি কি করছেন?
.
হরর ফিল্ম দেখবো এখন,লাইট বন্ধ করো
.
কিহ,হরর ফিল্ম?মানে ভূতের ছবি?আমি দেখবো না আপনি দেখেন
.
আহানা রুমে যেতে নুতেই শান্ত ওর হাত খপ করে ধরে বললো “আমার সাথে বসে দেখবা আমি কিছু শুনতে চাই না
আমার অনেক শখ ছিল বিয়ের পর বউকে নিয়ে রাত করে ভূতের ছবি দেখবো,আজ সেটা পূরন হবে”
.
আহানার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেসে,শান্ত ওকে সোফায় বসিয়ে রেখেছে তাও এমনি এমনি না,ওর ওড়না দিয়ে পা হাত বেঁধে রেখে বসিয়ে রেখেছে
আর সে গেছে রান্নাঘরে পপকর্ন বানাতে,দোকান থেকে গিয়ে এক দৌড়ে ভুট্টা আর কোকাকোলাও নিয়ে এসেছে
আহানা গাল ফুলিয়ে মুভিটার ট্রেইলার দেখতেসে
মুভিটার নাম “Black Magic”
ট্রেইলার দেখেই আহানা ১০বার চিৎকার দিসে
শান্ত পপকর্ন নিয়ে এসে হাসতে হাসতে ওর পাশে পা তুলে সোফায় বসলো
.
নাও হাতের বাঁধন খুলে দিলাম,পপকর্ন খাও আর দেখো
.
আমি দেখবো না,সরুন আমি ঘুমাবো
.
তুমি দেখবা,তোমার জামাইও দেখবে,মনোযোগ দাও দেখবা অনেক ভালো লাগবে
.
শান্ত সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দিলো
যতবার ভূত আসতেসে আহানা হাত থেকে পপকর্ন ফেলে ততবার চিৎকার করেছে
শান্ত আহানার ভয় দেখে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
♣
রাত ২টা ৩৩বাজে
আহানা শান্তর টিশার্ট খাঁমছে ধরে ওর বুকে লুকিয়ে আছে আর শান্ত মনোযোগ দিয়ে মুভিটা দেখতেসে
.
মুভি শেষ হয়েছে রাত ২:৪৭এ,,আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে ততক্ষণে
শান্ত টিভি অফ করে সরতে যেতে গিয়েও পারলো না,আহানা খুব সুন্দর করে ওকে ধরে ঘুমাচ্ছে,এরকম মিষ্টি ঘুম দেখলে জাগাতেই মন চাইবে না,তাই শান্ত ওকে জাগালো না
এভাবেই বসে থাকলো,সোফায় ঘুমানো তেমন কঠিন ব্যাপার না আর তা যদি হয় নিজের স্ত্রীকে বুকে নিয়ে তাহলে তো কথাই নেই
ভোর ৫টার দিকে একটা ছোট্ট পাখির কিচিরমিচিরে জেগে গেলো আহানা
পাখিটা বারান্দায় এসে ফেলে রাখা গম আর ধান খেতে খেতে মনের সুখে গান গাইছে
আহানা রোজ ওদের জন্য এখানে খাবার দিয়ে রাখে,আর এই পাখিটা ওকে ঘুম থেকে তুলে
আহানা চোখ খুলে দেখলো সে সোফায় শুয়ে আছে,শান্তর কথা মনে আসতেই সোফা থেকে রুমে এসে দেখলো শান্ত বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে
.
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কাল আমরা একসাথে ঘুমিয়েছি,আমি উনার বুকে ঘুমিয়েছিলাম
না তা কেন হবে,সেটা হলে তো এখন চোখ খুলে দেখতাম উনাকে
ভাবতে ভাবতে আহানা গিয়ে ওজু করে এসে নামাজটা সেরে নিয়ে কোরআন শরীফ নিয়ে বসলো বারান্দার সামনে,সেখানে ভোরের আলোটা বেশি আসে
.
আহানার কন্ঠে কি মধুর শোনা যাচ্ছে কোরআন পাঠ
শান্ত জেগে গেলো,বিছানা থেকে নেমে সোফার রুমে এসে দাঁড়ালো সে
ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সে সোফায় আহানাকে রেখে নিজে রুমে চলে এসেছিল,আহানা যদি চোখ খুলে নিজেকে ওর বুকে দেখতো তাহলে পুরো কলোনি উল্টায় ফেলতো তাই সে তার উঠার আগেই চলে এসেছে,আহানা বুঝি রোজ সকালে এমন করে
কেন জানি না আমার মায়ের সব গুন আহানা পেয়েছে,মা থাকলে খুব খুশি হতেন,বলতেন দেখলি রে শান্ত আমার মনের মত একটা বউ এনেছি তোর জন্য
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫৫
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫৫
#Writer_Afnan_Lara
?
কিছু কিছু মেয়ে জেলাস হতে হতে শেষ হয়ে যাচ্ছে,আহানাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে যাচ্ছে তারা
তবে এই আহানার আর কয়েক মাস আগের আহানার আকাশ পাতাল তফাৎ
এখনকার আহানার গায়ে নতুন জামা,ঠোঁটে হাসি,সাথে নতুন সাইড ব্যাগ,পায়ে নতুন জুতা,সব মিলিয়ে এখন মনে হচ্ছে আসলেই সে শান্তর ওয়াইফ
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো ক্লাসরুমের দিকে যেতে
আহানা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো,আজ ক্লাসে এসে বসতেই সবাই মিলে ঘিরে ধরলো ওকে যে কিভাবে শান্তকে ইম্প্রেস করেছে সে
আর এতদিনে কেউ ওর দিকে ফিরেও তাকাতো না
এখন মনে হচ্ছে আহানা কোন বিশিষ্ট ব্যাক্তি!
দুম করে মাথায় বাড়ি খেলো আহানা তাও রুপার হাতে
আহানা মাথা ঘষতে ঘষতে বললো “কিরে এত জোরে মারলি কেন তুই?”
.
তোর মাথা ফাটাই ফেলবো,জোরে মারছি না?বেয়াদব কোথাকার!!আমাকে জীবনে আপন ভাবিসনি তুই
তুই এত বড় একটা কথা কিনা আমার থেকে লুকালি,তোর মতো বেস্টফ্রেন্ড যেনো আর কারও না হয়,আমি এই দোয়া করবো এখন থেকে
.
আমার কথা তো শুনবি!
.
আর কি শুনাবি?এবার বলবি তুই গর্ভবতী?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুনp
আরে না,আসলে আমি
.
চুপ করো,অসভ্য মাইয়া!!আমার বিয়ের আগেই উনি বিয়ে করে বসে আছেন সেই বাসি খবর আজ জানাতে এসেছে তাও উনি জানাননি সয়ং উনার হাসবেন্ড জানিয়েছেন
তোর বিয়েতে কি আমি বেশি খেয়ে নিতাম?
নাহয় লেগ পিস ৪টা খেতাম এর বেশি তো খেতাম না?? তাই বলে তুই আমাকে দাওয়াত দিলি না
দাওয়াতের কথা বাদই দিলাম একবার জানালি ও না
আবার আমাকে বলিস তোরা প্রেমের পাঁচফোড়ন টেস্ট ও করিসনি,এখন তো মনে হচ্ছে টেস্টের সাথে সাথে সেই পাঁচফোড়ন দিয়ে আমের- জামের,বরইয়ের,চালতার আচার ও বানানো হয়ে গেসে,খাওয়াও হয়ে গেসে এখন আসছিস খালি আচারের বোয়াম দেখাতে!!
তোরে কাইট্টা ফালাইলেও আমার রাগ কমবে না,মোহনগঞ্জে গেলে যে বিয়ে হবে তোদের সেখানে যদি তুই আমাকে ৪+৪=৮টা লেগ পিস না দিছোস তো তোর খবর আছে!!
.
আচ্ছা আচ্ছা এবার একটু ঠাণ্ডা হ প্লিস
.
রুপা রেগে রেগে বললো “এখন আমার কিছু খেতে হবে তা না হলে মাথা ঠাণ্ডা হবে না আমি ক্যানটিন থেকে আসতেসি”
.
একটা মেয়ে পাশে এসে বললো “তো বলো না আহানা কিভাবে শান্তকে ইম্প্রেস করলা??”
.
এলিনা এসে দাঁড়ালো তখনই,চোখ মুখ তার ফুলে অজগর হয়ে আছে
গাল ফুলিয়ে বললো “আমি জানি কিভাবে সে শান্তকে ইম্প্রেস করেছে”
.
সবাই এলিনার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো বলো তাহলে কিভাবে করেছে
.
এলিনা দাঁত কেলিয়ে বললো “ওর মতো রাস্তার মেয়েরা দেহ বিক্রি করে কোটিপতি ছেলেদের বশে আনতে পারে জাস্ট ২মিনিটেই”
.
সবাই আহানার দিকে তাকালো,আহানা হতভম্ব হয়ে গেসে এলিনার কথা শুনে
এলিনা একটু এগিয়ে এসে একটা বেঞ্চে উঠে বসে বললো “তোমরা জানো ওর মা বাবা নাই?এতদিন একা একা থাকতো,তোমাদের কি মনে হয় শান্তই ওর জীবনের প্রথম পুরুষ??”
.
সবাই এবার বলাবলি শুরু করে দিয়েছে
আহানার কানে আসলো একজন বলতেসে “তাই তো,একা একটা মেয়ে এতদিন একা তো থাকতে পারে না নিশ্চয় কিছু একটা ৭/৫ আছে”
.
একটা মেয়ে এসে তো বলেই দিলো যে সত্যি কি তুমি একা একা থাকতা এই শহরে??
শান্ত ভাইয়া জানে তোমার চরিত্রের কথা??
আহানা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বললো “আমি ২টা আপুর সাথে বাসায় ভাড়া থাকতাম
আর সব রাস্তার মেয়েরা চরিত্রহীন হয় না,কেউ কেউ সতী ও হয়”
আর কিছু বললো না সে চুপচাপ ব্যাগ নিয়ে উঠে চলে গেলো ক্লাসরুম থেকে
.
ঐদিকে শান্তকে নওশাদ গলা টিপে মেরেই ফেলতেসে
কারণ হলো সে বিয়ে করেছে তাদের অগোচরে,আর আজ এতদিন পর জানালো
শান্ত ওদের বুঝানোর চেষ্টা করতেসে কিন্তু তারা বুঝার চেষ্টাই করছে না
মারামারি লেগে গেছে,নওশাদ তো রাগ করে চলেই যাচ্ছিলো ভার্সিটি থেকে যে তার কলিজার দোস্ত কিনা তাকে বিয়ের কথা জানাইনি?
শান্ত নওশাদকে জড়িয়ে ধরে আটকে রেখেছে
এদিকে রিয়াজ আর সূর্য পাশেই দাঁড়িয়ে গাল ফুলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত নওশাদকে থামিয়ে কানে হাত দিয়ে বললো”আই এম সরি,তোরা প্লিস আমাকে মাফ করে দে,আমি বিপদে পড়ে বিয়ের খবর এতদিন জানাইনি,প্লিস ভুল বুঝিস না
তোরা আমার ভাইয়ের চেয়েও বেশি এটা তোরা জানিস তাহলে এখন কেন ভুল বুঝতেছিস,আমি সত্যি পরিস্থিতির শিকার হয়ে কথাটা চাপা রেখেছি
.
নওশাদ ব্রু কুঁচকে বললো “হইসে যা!!মোহনগঞ্জ যে বিয়ে হবে সেটাতে আমরা যেন ঘোড়ার গাড়ীতে করে রেলস্টেশন থেকে তোদের বাসা পর্যন্ত যেতে পারি এমন ব্যবস্থা করে দে তাহলে তোকে মাফ করবো”
.
মানে?
.
মানেটা সহজ,ইন্ডিয়ায় বেশিরভাগ বিয়েতেই বরের বেস্টফ্রেন্ডরা বিয়ের দিন ঘোড়ার গাড়ী করে স্টেজ পর্যন্ত যায়,যা জাক্কাস লাগে না সবাই তাকাই থাকবে তখন
.
তোর কাল বিয়ে হয়ে যাবে এরপর তোর দিকে কেউ তাকালেও কি না তাকালেও কি
.
অবশ্যই কারণ আছে,যেসব মেয়েরা আমাকে দেখে জেলাস ফিল করবে তারা মনে মনে ভাববে ইস আগে কেন এই ছেলেটাকে দেখলাম না
ছেলেটার বিয়ে হয়ে গেলো ধুর ধুর!!
.
রিয়াজ দাঁত কেলিয়ে বললো আর আমরা তো এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছি না হুহ?আমাদের ও স্কোয়াদ হবে
দ্যা শান্ত গ্যাং??
.
রিয়াজ নওশাদ তোরা চুপ কর,রিয়াজের তো তাও জিএফ আছে মনিরা!!
আমার তো গফ ও নাই,আমি যত পারবো সেদিন তত মাইয়ার লগে flirt করেই যাবো
.
রুপা দৌড়ে দৌড়ে আসলো ক্লাসরুম থেকে
হাঁপাতে হাঁপাতে শান্তকে বললো আহানাকে আটকাতে,সে চলে যাচ্ছে
.
শান্ত চমকে বললো “কেন কি হইসে?আর ও কোথায়?”
.
আরে শান্ত ভাইয়া আমি গেসিলাম ক্যানটিনে,তাই আমি ব্যাপারটা জানতাম না পরে এসে শুনলাম এলিনা নাকি আহানাকে অনেক কথা শুনাইসে
বলছে যে আহানা রাস্তার মেয়ে,আর!!
.
আর কি?
.
আর ও আপনার কাছে দেহ বিক্রি করে আপনার মন জোগাইছে
.
শান্তর হাতে কাঁচের কোকাকোলার বোতল ছিলো,ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সোজা এলিনার কাছে গেলো,সেকেন্ড ফ্লোরে
এলিনা তার বান্ধুবীদের সাথে কথা বলতেসে
শান্ত হাত উঠালো ওকে চড় মার জন্য সাথেসাথে আহানা এসে আটকে ফেললো ওকে
.
আহানা হাত ছাড়ো আমার!!
.
না প্লিস
.
এলিনা চোখ বড়বড় করে বললো” শান্ত তুমি আমাকে মারবে?”
.
হাউ ডেয়ার ইউ!!!
তোমার এত বড় সাহস তুমি আহানার সাথে-
আমার স্ত্রীর সাথে এতটা চিপ বিহেভ করো
আহানা হাত ছাড়ো আমার আমি রাগ কনট্রোল করতে পারছি না
.
না,আমার কসম আপনি হাত তুলবেন না!
.
শান্ত থেমে গেলো,আহানার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে চলে গেলো সে
আহানা ও চুপচাপ তার পিছু পিছু আসলো
♣
দুজনেই বাইকে বসে আছে,শান্ত এক রাশ রাগ নিয়ে বাইক চালাচ্ছে আর আহানা শান্তর জ্যাকেটের একটু খানি ধরে রেখেছে,পুরোটা ধরে রাখার সাহস পায়নি,ভয় করছে শান্তকে
শান্ত কোনো কথা বলতেসে না ওর সাথে
সোজা আহানার বাসার সামনে এসে বাইক থামালো
কিন্তু নিজে বাইক থেকে নামলো না
আহানা ভয়ে ভয়ে বাইক থেকে নামলো,শান্ত বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যেতে নিতেই দাদা ডাক দিলো বাসার ভিতরে থেকে
বাধ্য হয়ে থামলো সে,দাদা বললেন আজ তাদের বাসায় মিলাদ,শান্ত যেন এসে সবার সাথে জয়েন করে
শান্ত গাল ফুলিয়ে উনার সাথে চলে গেলেন বাসার ভেতর
.
আহানা দোতলায় এসে ব্যাগটা রেখে ঘড়িতে চেয়ে দেখলো সবে সকাল ১০:৩০বাজে
সকাল থেকে শরীরটা দূর্বল লাগতেসে,কি জন্যে এমন হচ্ছে তা বুঝার বা জানার চেষ্টা করলো না সে,কারণ এরকম তার কয়েকবছর ধরে হচ্ছে
রান্নাঘরে এসে ভাত বসালো সে,তারপর ওড়না খুলে ডাইনিংয়ের চেয়ারে রাখতে এসে দেখলো শান্ত সোফায় বসে আছে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে
.
আহানা ভয়ার্ত গলায় বললো “চা খাবেন?”
.
না!
.
আহানা শান্তর সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো
কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে শান্তর হাতটা ধরলো সে তারপর বললো “শান্ত আমি চাই না আপনি আমার জন্য কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলেন,এটা ভালো দেখায় না”
.
শান্ত হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আহানার ২হাত শক্ত করে চেপে ঝাঁকিয়ে বললো”আমি কাউরে মেরে ফেললেও তুমি কে সেটা বলার??তোমার সাহস হয় কি করে নিজের কসম দেওয়ার??এত বড় সাহসিকতা তোমাকে দেখাতে বলছে কে?”
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো “এলিনার আপুর জায়গায় উনি ঠিক আছেন,কোনো মেয়েই এটা সয্য করতে পারবে না তার ভালোবাসার মানুষ অন্য কাউকে বিয়ে করলে,তাই আপনি যদি আজ উনাকে মারতেন তা উনার সাথে অন্যায় হতো”
.
সে যে বলছে তুমি রাস্তার মেয়ে সেটা?
.
আহানা হালকা হেসে বললো “ঠিকই তো বলছে”
.
শান্তর রাগ অনেক বেড়ে গেলো আহানাকে আরও জোরে চেপে কাছে টেনে বললো “তুমি রাস্তার মেয়ে না,তুমি আমার মায়ের হাতে জীবনের প্রথম খাবার গ্রহন করা সেই মেয়ে
আর সেই মেয়ে কখনও রাস্তার মেয়ে হতে পারে না,তোমার বাবা মা নাই তো কি হয়েছে,তোমার স্বামী আছে,এটা তোমার পরিচয়,তোমার তুমি আছো এটা তোমার পরিচয়
আর সে আবার কি বললো,তুমি নাকি নিজেকে আমার কাছে বিক্রি করেছো??আমি এলিনাকে ছাড়বো না,তুমি তোমার কসম উঠাও,ওরে শাস্তি না দিলে আমার রাগ কমবে না
.
শান্ত প্লিস মাথা ঠাণ্ডা করেন,আমি ভুলে গেসি না?আপনিও ভুলে যান
.
আমি ভুলবো না,duffer!আর কোনোদিন কসম দিবা না আমাকে
আমার মা ও কসম দিতো এরকম,কথায় কথায় কসম দিয়ে বসে থাকতেন
আর আজ উনি!!
আমার একটা কাটা কথা তুমি আর কসম দিতে পারবা না আমাকে!ব্যস!
শান্ত আহানাকে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে কথা বলতেসে
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলো শান্ত ধরে ফেললো ওকে
.
আহানা??!আহানা!
.
আহানা মাথা ধরে বললো “হুম”
.
কি হইসে তোমার?শরীর খারাপ?
.
শান্ত আহানাকে সোফায় এনে বসালো,আহানা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে
আহানাকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো সে,তারপর ওর পাশে বসে কপাল চেক করলো
নাহ জ্বর তো নেই তাহলে কি হইসে,চলো আমার সাথে হসপিটালে যাবা
.
না,আমি ঠিক আছি,সকাল থেকে দূর্বল লাগছিলো কম খেয়েছি হয়ত তাই,ঠিক হয়ে যাবে
.
আর কসম দিবা না কোনোদিন
কথাটা বলে শান্ত উঠে বারান্দায় চলে গেলো
আহানা চুপ করে থেকে রান্নাঘরে চলে আসলো
ভাত তো খেয়েছিলাম ঠিকমত তাহলে এভাবে দূর্বলতার কারণটা কি,যদি হয় মৃত্যু তাহলে বেশ হবে,শান্ত বেঁচে যাবে,আমার সাথে জড়ালে ওর জীবনটা নষ্ট হবে আর আমি সেটা চাই না
আমি যদি মরে যাই তাহলে কারোর কিছু যায় আসবে না
শান্ত হয়ত কদিন কাঁদবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে,কিন্তু আমার মায়ায় জড়ালে ও নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্ট পাবে আর আমি সেটা চাই না,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঝামেলা চুকে গেলেই ভালো হবে,আমি আজই হসপিটালে যাবো,কতদিন বাঁচব জেনে আসবো,সে অনুযায়ী শান্ত থেকে দূরে থাকবো,ওকে কাছে আসতে দিব না
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আহানা খেয়াল করলো দুটো হাত তার কোমড় ছুঁয়েছে পিছন থেকে এসে,হাতগুলো শান্তর,ছোঁয়াতেই টের পেলো সে
তারপর তার পিঠে মাথা ঠেকিয়েছে শান্ত
আহানা রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে,যার থেকে দূরে থাকার প্ল্যানিং করতেসিলাম এখন সে আমার খুব কাছে আসতে চাইছে
আহানা চোখ বন্ধ করে কোমড় থেকে শান্তর হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গেলো
কোমড় থেকে কাগজটা নিয়ে বললো “ছুঁবেন না আমাকে”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে চলে গেলো
.
আহানা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বেরিয়ে দেখলো শান্ত নেই,যাক বাবা তার মানে চলে গেছে,শান্তিতে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো শান্ত ওর বিছানায় শুয়ে আছে চুপ পরে ছাদের দিকে তাকিয়ে
বিরক্তি নিয়ে আহানা বললো “কি হলো বাসায় যাবেন না?”
.
ছাদটা দেখতে দেখতে ঠাণ্ডা গলায় সে বললো
“তুমি অসুস্থ,আমি তোমাকে একা রেখে কি করে যাই?”
.
আহানা বিরক্তি নিয়ে বললো “আমি ঠিক আছি যান এখন”
তাও শান্ত উঠতেসে না দেখে আহানা শান্তর হাত ধরে টেনে বাসা থেকে বের করে দিলো,দরজা লাগিয়ে ওড়না খুঁজে কিছুকক্ষন অপেক্ষা করে বাসা থেকে চুপিচুপি বের হলো সে,হসপিটালে যেতে হবে তাই
হসপিটালে এসে একজন মহিলা ডাক্তারের সাথে দেখা করলো সে
উনি ৭/৮টা টেস্ট দিসেন,সব মিলিয়ে ৪হাজার টাকা,এত টাকা তো নেই,আহানা তাই অনেক গুলো টেস্ট ডেনি করলো
টেস্ট করিয়ে এসে চুপ করে হসপিটালের সিটে বসে আছে সে,টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষাই
শান্ত কল করলো,ওর কল দেখে আহানা ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে তারপর রিসিভ করলো
শান্ত বললো ১২:৩০এ রেডি হয়ে থাকতে,একসাথে অফিস যাবে,আহানা ঠিক আছে বলে ফোনটা রাখলো,ভাগ্যিস বলেনি আমি কোথায়?তাহলে কি জবাব দিতাম
টেস্ট আসতে ১ঘন্টার বেশি সময় লাগলো,বেশিরভাগ টেস্টই আহানা কেটে দিসে বলে তেমন সময় লাগেনি
ডাক্তার রিপোর্ট দেখে মুখটা ফ্যাকাসে করে বললেন “আপনার তো শরীরে রক্তই নেই!আপনাকে তো এখনই হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে,আপনার জন্য বিপদজনক এই সিচুয়েশনটা
আপনার রক্তের পয়েন্ট অনেক কম,৪ আর ৫ এর মাঝামাঝি,আপনি এখনও দাঁড়িয়ে আছেন কি করে সেটাই ভাবতেসি আমি,জলদি করে ৩ব্যাগ রক্ত দিতেই হবে,একদিন পর একদিন করে দিবেন,আমাদের হসপিটালে “এ পজিটিভ” রক্ত আছে,কিনে দিয়ে ফেলেন
.
আহানা ঠিক আছে বলে বের হলো
রক্ত কেনার টাকা নেই আমার কাছে,আর রক্ত দেওয়ার সময়টাও নেই,শান্ত তো আমাকে এক মিনিটের জন্য ও ছাড়তে চায় না আর ওকে জানানো একদমই ঠিক হবে না
সামান্য এ ব্যাপারে জানলে সব মাথায় তুলবে সে,তার উপর সে নিজের পকেট থেকে খরচ দিতে চাইবে
আর আমি তার দেওয়া টাকা নিতে পারবো না কিছুতেই
তারউপর কাল রুপার গায়ে হলুদ,,আমি এখন শান্তকে রিপোর্টের ব্যাপারে বললে সে নির্ঘাত রুপা আর নওশাদ ভাইয়ার বিয়েতে এটেন্ড করবে না
পরে নওশাদ ভাইয়া মন খারাপ করবেন সাথে রুপাও,আমি এটা হতে দিতে পারি না
সকাল থেকে ভার্সিটি তারপর দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস তারপর রাত ১০টা পর্যন্ত গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান
কাল তো সময় পাবোই না,পরশু ও না,তার পরেরদিন ও না
তাহলে কি করবো,অবশ্য ৩/৪দিনে তো আর মরে যাবো না আমি
হ্যাঁ রুপার বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলেই আমি সময় করে রক্ত দিব,কিন্তু বেতন পেয়েছি ১০হাজার টাকা,বাসা ভাড়া দেওয়ার পর আর তরিতরকারি কিনার পর ওগুলা থেকে ১টাকাও থাকবে না আর
অবশ্য মিষ্টির মা ৫/৬দিন পর ২হাজার দিবেন,আর শান্ত ৩হাজার দিবে নোটসের জন্য
৭হাজার বাসা ভাড়া,তরকারি মাসকাবারি সব কিনতে ৩হাজার গেসে আমার,বাকি ৫হাজার দিয়ে দেখি এই রক্তের ভেজাল মিটাবো
চেয়েছিলাম এই টাকাগুলো সঞ্চয় করবো তা আর হলো না
কোথা থেকে এই রোগ আসলো,আমাকেই সব বিপদ ধরতে আসে
ভাবলাম এবার হয়ত মরবো কিন্তু নাহহহ আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখবে আমাকে!!
ভাবতে ভাবতে বাসায় এসে ঢুকতেই আহানা দেখলো শান্ত সোফায় বসে টিভি দেখতেসে
আহানা হাতের রিপোর্টটা ওড়নার পিছনে লুকিয়ে ফেললো
.
কি হয়েছে?কোথায় গেসিলে?আমি বাসায় এসে তোমাকে পেলাম না
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫৪
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫৪
#Writer_Afnan_Lara
?
“ওহ!কতদিনের জন্য যাবেন??”
.
“৭দিন”
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে চেয়ার টেনে বসলো,চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে সে
শান্ত মুখে খাবার দিয়ে আহানার দিকে চেয়ে বললো আমার সাথে আমার একমাত্র ওয়াইফও যাবে
আহানা মুচকি হেসে দিলো কথাটা শুনে
শান্ত খাওয়া শেষ করে উঠে গিয়ে ফোন নিয়ে সোফায় বসলো
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে কাছে এসে বললো “তোহ সবাইকে কি পরিচয় দিবেন যে আমি কে?
তবে এক কাজ করা যায় আমি আশ্রমে থাকলেই হলো!!
.
নাহ তুমি আমার সাথে আমর বাসায় আমার রুমে থাকবা
.
কিন্তু সবাইকে কি বলবেন?
.
সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও তোমাকে এত ভাবতে হবে না যাও এখন বিছানা করে শুয়ে পড়ো
.
আর আপনি?
.
আমি এইতো যাচ্ছি,পৃথিবীতে তুমি এক স্ত্রী যে কিনা তার স্বামী কে বাসা থেকে প্রতি রাতে বের করে দেয়
.
হুহ!!
.
শান্ত গেমস খেলা শেষ করে চলে যাওয়ার সময় বললো সকালে রেডি হয়ে থেকো ভার্সিটিতে যেতে হবে কাল তো ভার্সিটি খোলা
.
হুম,ঠিক আছে
♣
আহানা আলমারি থেকে রুপার হলুদে পরার জন্য একটা শাড়ী চুজ করে নিলো,হলুদ শাড়ীর উপর কালো গোল গোল ছোট বলের ফ্রিন্ট করা,অনেক সুন্দর একটা শাড়ী সেগুলোর সাথে মিলিয়ে কালো আর হলুদ চুড়ি নিয়ে একসাথ করে আলমারিতে রেখে দিলো সে
তারপর ঘুমিয়ে পড়লো
পরেরদিন সকাল সকাল উঠে মিষ্টিকে পড়াতে গেলো সে
মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসা থেকে বের হতেই দেখলো শান্ত স্যান্ডেল হাতে নিয়ে হনহনিয়ে ছাদের থেকে যাচ্ছে
পরনে তোয়ালে আর সারা গা ভর্তি সাবানের ফেনা
আহানা ফিক করে হেসে দিলো শান্তর এমন হাল দেখে?
.
হাসির আওয়াজে শান্ত থেমে গিয়ে পিছনে তাকালো তারপর মুখ বাঁকিয়ে আবার হেঁটে চললো
কৌতুহল বসত আহানাও ওর পিছু পিছু গেলো
ছাদের মেইন পাইপের সুইচের এখানে ১৭/১৮বছরের কয়েকটা ছেলে শয়তানি করে আড্ডা দিচ্ছে,তাও কিরকম টাইপের আড্ডা তা না বলাই ভালো
শান্ত গিয়ে ধুমধাম পিটানো শুরু করে দিলো ওদেরকে
এরকম শব্দ পেয়ে আহানা তার হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে দেখতে আসলো
ততক্ষণে পিটিয়ে সবাইকে সোজা করে দিয়েছে শান্ত
কপাল থেকে ফেনা মুছে পাইপের সুইচ অন করে আবারও বাসার থেকে ফিরে গেলো সে
আহানা রোবট হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে শান্তর পিছু পিছু গেলো
শান্ত কিছুদূর গিয়ে থেমে ওর দিকে তাকিয়ে বললো কি ব্যাপার? বাসায় যাচ্ছো না কেন?
.
না আসলে দেখতে আসলাম স্যান্ডেল নিয়ে কোথায় যান
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
দেখা গেয়ে গেছে?
.
এরকম করেন কেন,আজব,আমি কি করসি?আমার উপর দিয়ে রাগ ঝাড়েন কেন?
.
তুমি কি করো নাই সেটা বলো,রোজ রোজ রাত করে বাসা থেকে বের করে দাও আমাকে
.
তো কি রেখে দিব?
.
হ্যাঁ অবশ্যই,আমি তোমার লিগালি হাসবেন্ড
.
রেজিস্টার করে বিয়ে হয় নাই
.
সেটাও হয়ে য়াবে
.
করবো না আপনাকে বিয়ে
.
তুমি করবে না তোমার!!
.
আমার কি?
.
কিছু না,যাও এখন
.
যাব না আমি,আজ আমি এখানে থাকবো
কথাটা বলে আহানা শান্তর বাসায় ঢুকে সোজা ওর রুমে চলে গেলো
তারপর বিছানায় উঠে গোল হয়ে বসে পড়লো
শান্ত ব্রু কুঁচকে তার রুমে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে ফেললো
ভয়ে আহানা একটু নড়েসরে বসলো
শান্ত এগিয়ে আসলো ওর দিকে,মুখে তার বিরক্তির ছাপ!!
রোমান্স করবে না এটা সিউর তবে মাইরধর করবে এটাও সিউর
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে নিজের বুকের থেকে ফেনা নিয়ে আহানার গালে লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো
আহানা এক চিৎকার দিয়ে ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে অজস্র গালি দিচ্ছে শান্তকে
শান্ত ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো আহানা নেই,দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ তার মানে সে রান্নাঘরে!
উঁকি মেরেই দেখলো আহানা গুনগুন করে গান গাইছে আর রান্না করছে
শান্ত সেখান থেকে একটা আপেল নিয়ে চলে গেলো
.
সোফায় বসে আপেল খেতে খেতে বললো হঠাৎ করে আমার বাসায় আসলা?কারণ কি?কিছু লাগবে নাকি?
.
নাহ এমনি এলাম,মন চাইলো
.
হঠাৎ এত উন্নতি,আমার কিছু ঠিক লাগছে না কেন?
.
আহানা হাতে খুন্তি নিয়ে বেরিয়ে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো কিছু বেঠিক হলে দেখতেই পাবেন হুহ!
কথাটা বলে আবার চলে গেলো সে
শান্ত আপেল মুখে রেখে সেদিকে চেয়ে আছে,আজ হলোটা কি,মদ গাঁজা সেবন করেছে নাকি,না সেটা করলে তো পাগলামি করতো তাহলে কি হইসে ওর?
ভাবতে ভাবতে শান্ত পকেটে হাত দিতেই দেখলো তার সিগারেটের প্যাকেট গায়েব,ওমা কই গেলো?
সারা রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলো না সে
শেষে ভাবলো হয়ত রিয়াজ নিয়ে গেছে,টাকা নিয়ে বের হতে গেলো দোকান থেকে কেনার জন্য
তখনই তার চোখ পড়লো আহানার ওড়নার দিকে
ওড়নায় সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে গিট্টু দিয়ে রেখেছে আহানা
“আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার!!”
শান্ত কাছে এসে টান মেরে আহানার ওড়নাটা নিয়ে চলে গেলো সোজা তার রুমের দিকে
আহানা চমকে বললো “কি ব্যাপার আমার ওড়না নিলেন কেন আপনি,দিন বলছি!”
আহানা পিছে পিছে যেতেই ওর মুখের উপর শান্ত তার রুমের দরজা লাগিয়ে ফেললো
.
আজব তো!আমার ওড়না দিন বলছি!
.
তুমি আমার সিগারেটের প্যাকেট চুরি করসো সো তোমার এই ওড়না আর পাবা না
.
আচ্ছা দিয়েন না,আমি যাই
কথাটা বলে আহানা লুকিয়ে পড়লো,৫সেকেন্ড বাদেই শান্ত ওর রুমের দরজা খুললো,বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,ততক্ষণে পিছন থেকে আহানা এসে ওর ওড়নাটা শান্তর হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে দৌড় দিলো
.
আহানা!!দাঁড়াও বলতেসি,এটা কিন্তু চিটিং!
.
হুহ!আপনিও চিটিং করসেন
.
শান্ত আহানার হাত ধরে টান দিলো,ওকে কাছে নিয়ে এসে চুপ করে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো সে
তারপর সেই আগের মতন আহানার গায়ের থেকে ওড়নাটা ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলো সে
যেতে যেতে বললো”তোমার ওড়নার উপর তোমার চেয়ে আমার অধিকার বেশি”
আহানা মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে চলে আসলো
নাস্তা নিয়ে এসে টেবিলের উপর ওড়নাটা দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি সেটা পরে শান্তর রুমের দিকে তাকালো সে
শান্ত যে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ওর দিকেই চেয়ে আছে সেদিকে তার খেয়াল নেই
.
কি ব্যাপার আহানা ম্যাডাম,ঐদিকে কাকে খোঁজেন?আপনার বর তো সোফায়
.
আহানা ভয় পেয়ে সোফায় তাকালো,তারপর ব্রু কুঁচকে বললো বারান্দায় রোদ এসেছে কিনা সেটাই দেখতেসিলাম,নাস্তা রেডি,খেয়ে নিন,আমি যাই
.
দাঁড়াও!
.
কি?
.
কি মানে?আমার সাথে নাস্তা করে তারপর যাবা
.
খিধা নেই!
.
শান্ত চুপচাপ খাবার নিয়ে আহানার মুখে তুলে ধরলো
আহানার চোখ দিয়ে অজান্তেই পানি পড়লো সাথে সাথে
শান্ত ওর মুখে খাবার দিয়ে নিজেও এক টুকরা রুটি খেলো তারপর বললো “আমাদেরকে দেখার মত কেউ নেই,আমাদেরই একজন আরেকজনকে দেখতে হবে”
.
আহানা পানি খেয়ে উঠে চলে গেলো আর থাকলো না,শান্ত এতটা কেয়ার করছে বারবার ভয় হয় তার,ভালো লাগেনা ঠিক
বাসায় এসে দরজা আটকানোর ২মিনিটেই শান্ত আবার এসে হাজির
আহানা চোখ মুখ মুছে গিয়ে দরজা খুললো
শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো
.
কি হয়েছে?
.
চা খাওয়ালে না আমাকে ?
.
মনে ছিল না সরি,দাঁড়ান বানিয়ে দিচ্ছি
.
লাগবে না,গিয়ে সোফায় পা তুলে বসো আমি চা বানাচ্ছি
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে সোফার এসে বসলো,শান্তর কথামত পা তুলে বসলো,একটা আলাদা ভালো লাগা কাজ করতেসে,রিমোট নিয়ে টিভি চালালো,খুঁজে খুঁজে সব চ্যানেল দেখতেসে সে
HBO চ্যানেলে যেতেই শান্ত ডাক দিলো,আহানা সেদিকে তাকিয়ে বললো কি হয়েছে?
.
শান্ত জ্যাকেট খুলে ওর হাতে দিয়ে চলে যেতে নিতেই টিভির দিকে চোখ পড়লো তার
টাইটানিক ফিল্মের কিস সিনটা চলতেসে
শান্ত চোখ বড় করে আহানার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে পাগলের মত রিমোট খুঁজে যাচ্ছে
শান্ত মুচকি হেসে কুশনের নিচ থেকে রিমোট নিয়ে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো কিস দেখার এত শখ?আর আমরা তো প্র্যাকটিকালি!!
.
স্টুপিড!
.
শান্ত হাসতে হাসতে চলে গেলো
আহানা জিহ্বায় কামড় দিয়ে চ্যানেল পাল্টালো,ছিঃ ছিঃ কি লজ্জাটাই না পেলাম ধুর ধুর!
.
শান্ত চা নিয়ে এসে ওর পাশে বসলো
আহানা ভদ্রভাবে বসে সময় চ্যানেল দেখতেসে
শান্ত চায়ে চুমুক দিয়ে বললো “কিছুক্ষন আগে যে মেয়েটা টাইটানিকের কিস সিন দেখতেসিলো সে কিনা এখন খবর দেখতেসে,ওয়াও ওয়াও,নারী তুমি অসাধারন!!”
.
হুহ আমি দেখিনি এসে পড়ে গেসিলো সেটা,খেয়াল করিনি
.
জানো আমার আম্মুর বান্ধুবীর একটা ছেলে ছিল,নাম হচ্ছে আয়ুশ,সে যেটাই ধরতো সেটাই ভেঙ্গে ফেলতো
কেউ আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে আসলে বলতো আমি ফেলিনি ওটা পড়ে গেসে
মানে যেটা পড়সে সেটার দোষ তার কোনো দোষ নাই?
তুমি ঠিক তেমন হইসো বুঝছো?
.
কোথায় কোথাকার কোন বলদা ছেলে আর কোথায় আমি,আন্দাজে!
.
সত্যি কথা টক হয়,সে বলদা আর তুমি বলদা গার্ডেন ,নাও এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হও আমি বাইক নিয়ে আসতেসি
.
ঠিক আছে
আহানা গিয়ে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলো,শান্ত ততক্ষণে বাইক নিয়ে বাসার সামনে এসে গেছে,আহানা বাইকে উঠে বসতেই অলি দৌড়ে আসলো
.
কি হইসে অলি?
.
দাদি বললো তোমাদের কানের পিছনে কাজল দিয়ে টিকা লাগাই দিতে,কারণ তোমাদের আজ খুব সুন্দর লাগছে
.
শান্ত হেসে দিয়ে বললো আচ্ছা লাগাও
.
আমি তো তোমাদের নাগাল পাচ্ছি না
.
আচ্ছা অলি আমাকে দাও, আমি আমার কানের পিছনে আর উনার কানের পিছনে লাগিয়ে দিব
.
আচ্ছা লাগাও
.
আহানা কাজল নিয়ে তার কানের নিচে লাগিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ফোনে সূর্যর সাথে কথা বলতেসে
আহানা ওর কানের পিছনে কাজল লাগিয়ে দুষ্টুমি করে ওর কপালেও বড় করে কাজলের টিকা লাগিয়ে দিলো ঠিক তেমন করে যেমন করে বাচ্চাদের লাগানো হয়
অলি মুখে হাত দিয়ে হাসতেসে
.
নাও কাজল নিয়ে দাদিকে বলিও আমরা লাগিয়ে নিছি
.
আচ্ছা,হিহিহিহি
.
অলি এমন করে হাসলো কেন?
.
জানি না তো?
.
ভার্সিটির সামনে শান্ত বাইক থামাতেই আহানা নেমে চলে গেলো আর থামলো না,থামলেই বিপদ কারণ কিছুক্ষন পরই ঘটনা ফাঁস হবে যে শান্তকে আহানা বাচ্চাদের মত টিকা লাগিয়ে দিয়েছে
শান্ত বাইক রেখে বটতলার দিকে গেলো
ওকে দেখে ওর বন্ধুরা হেসে যাচ্ছে,থামাথামি নাই,শান্তর ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস ও পাচ্ছে না এদিকে হাসিও থামানো যাচ্ছে না ,শেষে শান্ত একজনের গলা টিপে ধরে বললো এরকম হাসতেসিস কেন?
.
তমাল শান্তর হাতের ঘড়ি ওর সামনে উঁচু করে ধরে বললো গ্লাসে নিজের ফেস দেখতে
শান্ত নিজেকে গ্লাসে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো,পকেট থেকে টিসু নিয়ে কাজল মুছে হনহনিয়ে আহানার ক্লাসের দিকে গেলো
আহানা জানালা দিয়ে দেখলো শান্ত জ্যাকেট ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসতেসে
আহানা এক দৌড়ে ক্লাসরুমের শেষ কোণায় বেঞ্চের নিচে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো
শান্ত ক্লাসরুমে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে আহানাকে খুঁজতেসে
এখনও ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে,সবাই ড্যাবড্যাব করে শান্তকে দেখে যাচ্ছে
.
শান্ত জোরে বললো আহানা কোথায়??
.
একটা মেয়ে দুষ্টুমি করে বলেই দিলো আহানা লাস্ট বেঞ্চের তলায় লুকিয়ে আছে
শান্ত হেসে এগিয়ে আসলো সেদিকে
.
“উফ এই মেয়েটা কেন বলতে গেলো ধুর!”
.
শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে টেনে ওকে বের করলো
আহানা সরি সরি বলেই যাচ্ছে
.
তুমি আমাকে বাচ্চাপোলাপানের মত করে কাজল লাগিয়ে দিসো কেন?এই জন্যই তো বলি আসার সময় জ্যামে পড়সিলাম যখন তখন পাশের একটা কারে থাকা বাচ্চা আমাকে দেখে হাসতেসিলো কেন
.
সরি আর করবো না
.
করসো কেন, এটার শাস্তি পেতে হবে
.
আহানা শান্তর হাত ছাড়িয়ে এক দৌড় দিলো
শান্ত ও ওর পিছু নিলো ওকে ধরার জন্যে
এলিনা ভার্সিটিতে ঢুকে দেখলো শান্ত আহানাকে দৌড়ানি দিতেসে,দুজনে হাসতে হাসতে শয়তানি করতেসে ক্যামপাসে
এলিনা রাগে ফুসতে ফুসতে আহানা যেখানে আপাতত লুকিয়ে আছে ক্যানটিনের সামনের পিলারটার পিছনে সেখানে গেলে সে
গিয়ে আহানার হাত জোরে চেপে বললো তোমাকে বলসি না শান্ত থেকে দূরে থাকবা?এখন আবার এরকম ওর সাথে হাসিঠাট্টা করতেসো কেন??
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো আমি তো…
.
তুমি কি?একটা কথা বুঝার চেষ্টা করো না কেন তুমি?শান্ত তোমাকে ভালোবাসে না বাসে না বাসে না!!মাথায় ঢুকিয়ে নাও,এরকম ছেঁসড়া মেয়েদের মত ওর পিছন পিছন থাকবা না
আর একদিন যদি দেখেছি তো হাত চলবে আমার!
.
“আহানার আশেপাশে আর একদিন যদি তোমাকে দেখেছি তো হাত চলবে আমার!!!!!”
.
শান্তর কথাটা শুনে এলিনা পিছন ফিরে তাকালো
.
শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে আসতেসে,সামনে এসে আহানার পাশে দাঁড়িয়ে ব্রু কুঁচকে রাগী লুক নিয়ে এলিনার দিকে চেয়ে বললো
“এনাফ ইজ এনাফ এলিনা!! আমি তো জানতাম ও না তুমি আমার অগোচরে আহানার সাথে এমন বিহেভ করো”
.
শান্ত আর কিছু না বলে খপ করে আহানার হাত ধরে ফেললো
আহানা কিছু বুঝতে না পেরে বললো কি হয়েছে?আমি ক্লাসে যাবো
.
হুম কিন্তু তার আগে আমার কাজটা শেষ হোক
কথাটা বলে শান্ত তার সানগ্লাসটা পরে নিয়ে আহানাকে টেনে ভার্সিটির মাঠের মাঝখানে নিয়ে আসলো
তারপর বটতলার দিকে তাকিয়ে শিষ মারতেই ১০/২০টা ছেলে এসে হাজির হয়ে গেলো,সাথে অনেকেই এসে পড়েছে কৌতুহলবসত,দূর থেকে এলিনা দাঁড়িয়ে থেকে চেয়ে আছে
সবার মুখে এক কথা “যে কি হয়েছে?”
আহানা অবাক চোখে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত শক্ত গলায় বললো “””””সবাই শুনে রাখো যেহেতু আমি জব পেয়েছি তাই আমি ভাবলাম এখন বিয়েটা করে নেওয়া উচিত,আর তাই আমি নরমালি বিয়েটা সেরেও ফেলেছি,নাও আই এম ম্যারিড
আর মিসেস শাহরিয়ার শান্ত হলো আহানা ইয়াসমিন
আমি ওকে বিয়ে করেছি,ওকে গট ইট?
এখন থেকে তোমরা আমাকে যেমন সম্মান করতা আহানাকেও ঠিক তেমন সম্মান করবা
ভার্সিটির কোনো কোণায় যদি আহানাকে কেউ যদি একটা কটু কথাও বলেছো তো খুব খারাপ হয়ে যাবে,মাইন্ড ইট,বুঝেছো সবাই?
আর হ্যাঁ পারিবারিকভাবে কয়েকদিন পরই আমাদের বিয়েটা হবে মোহনগঞ্জে,সবাইকে দাওয়াতও দেওয়া হবে তখন””””
শান্তর কথা শুনে এক প্রকার শক খেয়ে সবাই উত্তরে কি বলবে না বলবে ভেবে না পেয়ে শুভেচ্ছা দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫৩
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫৩
#Writer_Afnan_Lara
?
“কি দেখেছেন আপনি??”
.
“দেখলাম তুমি শাহরিয়ার শান্তর কালো জ্যাকেটটা পরে আরামসে ঘুমাচ্ছো”
.
“আমার শীত করতেসিলো বলে পরেছি আর কিছু না”
.
“ভালো এখন ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি নাস্তা বানাচ্ছি,আজ শুক্রবার ভার্সিটি অফ বাট অফিস কিন্তু খোলা”
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো
.
শান্ত কড়াইয়ে তেল ঢালতে গিয়ে বেশির ভাগ তেল তার জামায় ঢেলে দিলো ভুলে
“ইসসসস এটা কি করলাম!”
শান্ত তার টিশার্টটা খুলে ফেললো সাথে সাথে
.
আহানা ব্রাশ করে এসে সোফার রুমে দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে চোখ কপালে তুলে ফেললো শান্তকে উদম দেখে
সে পিছিয়ে যেতেই সোফায় দুম করে পড়লো,ভাবলো শান্ত জামা খুলেছে কি কারণে কে জানে!
শান্ত গায়ের তেল মুছতে মুছতে আহানার দিকে তাকিয়ে দেখলো ও কোমড় হাতিয়ে কাগজ খুঁজতেসে,শান্তর আর বুঝতে বাকি নেই যে আহানা তার উদম গা দেখে কি বুঝেছে
শান্ত এগিয়ে আসতেই আহানা কাগজটা নিয়ে সামনে ধরে বললো “খবরদার আমাকে ছুঁবেন না বলে দিলাম”
.
শান্ত মুখ এগিয়ে নিয়ে বললো “গায়ে তেল পড়েছে বলে জামা খুলেছি আর কোনো কারণ নেই,অন্য কারণ তৈরি করতে বাধ্য করিও না আহানা ম্যাম
আর হ্যাঁ তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই,ওকে??
আহানা ব্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে বললো “তাহলে কাল কি হয়েছিলো”?
.
শান্ত থেমে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে বললো “আমার ইন্টারেস্ট না থাকা মানে থাকা,মগজ খাটালেই বুঝতা,আর তোমার তো মগজ গলে নেহারি হয়ে গেছে!”
.
আহানা রেগে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো কি বললেন?আমার মগজ গলে গেছে??তাহলে আপনার তো মগজই নেই,খালি মাথার ঠুল,ভিতরে ফাঁকা
.
“খালি কলসি বাজে বেশি,ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে!”
.
আহানা ভাবনায় পড়ে গেলো,শান্তর সাথে মাঝেমাঝে কথায় পারা যায় না
♣
আহানা সোফার কুশন গুলো ঠিক করে করে রাখতেসে
শান্ত হাতে প্লেট নিয়ে আসতে আসতে বললো পরশু কিন্তু রুপা নওশাদের কাবিন
.
হ্যাঁ জানি,রুপা বললো হালকা করে গায়ে হলুদ বিয়ে সব হবে
.
সামান্য প্রেগন্যান্ট শুনে রুপার বাবা এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলো,এখন এমন ভাবে সব মেনেও নিলো যেন কিছুই হয়নি
.
হুমম,একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে,ওরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে,তাদের ভালোবাসাটা অবশেষে পূর্নতা পাবে
.
হ্যাঁ!নাও খেতে বসো
.
আপনি বসুন,আমি চা বসিয়ে দিয়ে আসতেসি
.
শান্ত রিমোট নিয়ে টিভি অন করে একটা হিন্দি চ্যানেল বের করলো,Kabir Singh ফিল্মটা চলতেসে
“ওয়াও জোস!!”
.
আপনি এটা আগেও দেখছেন?
.
হুম অনেকবার!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
এই জন্যই মদ সিগারেটের নেশা ধরসে আপনাকে,ভালো মুভি দেখবেন,ভালো অভ্যাস তৈরি হবে
.
যেমন?
.
Taqdeer একটা মুভি ছিল,জাস্ট ওসাম,যতবার দেখাবে টিভিতে ততবার দেখতে পারবো আমি,মীম আপুর ফোনে দেখসিলাম ২বার
.
ছোটবেলায় প্রেম ছিল পরে হারায় গেসিলো সেই ফিল্মটা?একদম আমাদের মত তাই না?
.
তারা আমাদের মত লুকায় বিয়ে করেনি,ছোটবেলায় তাদের প্রেম ছিল বন্ধুত্ব ছিল যা আমাদের ছিল না,আর আমি আপনাকে খুঁজিনি আপনিও আমাকে খুঁজেননি,তাদের মা বাবা ১৪গুষ্টি সব আছে,কিন্তু আমাদের নাই,নায়িকার নিজস্ব কার আছে,আমার নিজস্ব রিকসাও নাই
কথাটাগুলো বলে আহানা তার চুল কানের পিছনে রেখে রুটি একটুকরায় ভাজি নিয়ে মুখে দিলো
শান্ত টিভিতে চেয়ে দেখলো নায়ক নায়িকার গালে চুমু দিয়ে বললো”কিসি নে নেহি দেখা”
এটা দেখে দাঁত কেলিয়ে শান্ত মুখ কাছে এনে আহানার গালে চুমু দিয়ে দিলো
আহানা চোখ বড় করে ওর দিকে তাকালো,একদমই প্রস্তত ছিল না সে এটার জন্য
শান্ত তার প্লেট থেকে রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো “বারান্দামে এক কাউয়া থা!! উসকো ছোড়কে কিসি নে নেহি দেখা!”
.
আহানা লজ্জায় উঠে রান্নাঘরে চলে আসলো,গালে হাত দিয়ে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকিয়ে রইলো সে
শান্ত চুপচাপ খাচ্ছে আর টিভি দেখতেসে,যেন কিছুই হয়নি
চা হাতে নিয়ে আহানা আবার ওর পাশে বসলো কখন কি করে বসে এই ছেলেটা বোঝা দায়
.
নাস্তা খাওয়া শেষে শান্ত চলে গেলো তার বাসার দিকে
আহানা লজ্জায় লাল হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে
জীবনে প্রথম কারোর ছোঁয়াতে এতটা ভালোলাগা কাজ করে বলে বুঝানো যাবে না
আহানা আলমারি খুলে লাগেজের সব শাড়ী জামা এক এক করে সেখানে রাখতেসে
এতদিন সময় পায়নি বলে রাখতে পারেনি
এখন সব রাখা শেষ করে হা করে চেয়ে রইলো,তারেক রহমানের বাসায় থাকতে তার আলমারিতে শুধু ২টো জামা থাকতো আর আজ এত এত জামা শাড়ীতে ভর্তি যে অবাক না হয়ে উপায় নেই
সেখান থেকে একটা হলুদ রঙের জামা নিয়ে পরে নিলো আহানা,ব্যস এবার অফিস যাবো
বাসা থেকে বের হয়ে রোডটা ভালো করে দেখলো সে,কিন্তু শান্তকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না,আজ আসলো না নাকি??ওকে তাহলে হেঁটে যেতে হবে,আহানা একটু হাঁটা ধরতেই শান্তকে দেখতে পেলো,সে বাইক নিয়ে আসতেসে
বাইক আহানার সামনে দাঁড় করিয়ে বললো সরি আসতে লেট হয়ে গেলো,আমি যখন গায়ে সাবান দিতেছিলাম তখনই পানি পড়া অফ হয়ে গেসিলো,পরে তোয়ালে পরে ছাদে গিয়ে মেইন সুইচ দেখতে গিয়ে দেখলাম ছোট বাচ্চাপোলাপান খেলার ছলে অফ করে দিয়েছিল,সেটা অন করে গোসল করে বেরিয়ে পড়লাম জামা পরে
.
ওকে ওকে,এত কৈফিয়ত চাইনি আমি,আপনি না আসলে আমি হেঁটে যেতাম
.
আচ্ছা বাইকে উঠো এখন
.
আহানা শান্তর কাঁধে হাত রেখে বসে কি যেন ভাবলো তারপর হাতটা নিচ নামিয়ে শান্তর পেটটা ধরলো
শান্ত চমকে ওর দিকে ফিরে তাকালো,তারপর হেসে দিয়ে বাইক স্টার্ট করলো সে
আহানা মুখ টিপে হাসতেসে,অফিসে আসতেই দুজনে আবার ঝগড়া শুরু করে দিলো
ঝগড়ার টপিক হলো আহানা শান্তর পায়ে পা দিয়ে চাপ দিয়ে দিসে এবং উল্টা শান্তর দোষ দিসে
একজন আরেকজনের চুল টানতে টানতে লিফটে করে অফিসে ঢুকেছে
কেবিনে বসতেই আহানা দেখলো নিহাল আর ববি হাসাহাসি করতেসে
শান্ত সেন্টার ফ্রেশ খেতে খেতে বললো “মেড ফর ইচ আদার”?
.
আহানাও হেসে দিলো,শান্ত একটা ফাইল চেক করতে করতে আহানার ওড়না হাতে নিয়ে গিট্টু দিতেসে
আহানা তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত
ব্রেক টাইমে আসতেই আহানা নিজের গায়ে চেয়ে দেখলো ওড়না আর একটু আছে ওর গায়ে বাকিটা পুরো শান্ত মুড়িয়ে মুড়িয়ে নিয়ে গেছে
আহানা ওকে এক ধাক্কা দিয়ে ওড়না নিয়ে নিলো ওর থেকে
ব্রেক টাইমে দুজনেই জানালার ধারে এসে দাঁড়িয়ে আছে,শান্ত মুখে সিগারেট ঢুকিয়ে গেমস খেলতেসে আহানা গেমটা দেখতেসে তাকিয়ে তারপর হঠাৎ করেই হাত বাড়িয়ে শান্তর সামনে ধরলো
শান্ত চমকে ফোন থেকে মুখে তুলে বললো কি?
.
দেখুন না!!
আহানা হাতের মুঠো খুললো,তার হাতে একটা ব্ল্যাক ব্রেসলেট
শান্ত ইয়া বড় হা করে “জোস” বললো তারপর সাথে সাথে সেটা হাতে পরে নিলো
“তুমি জানতে এটা আমার পছন্দ?”
.
আহানা চমকে বললো নাহ তো,এটা আমার মনে হলো আপনার পছন্দ হবে তাই নিয়েছি
.
একদম ভালো আন্দাজ করেছো এটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে,অনেক অনেক!!
থ্যাংক ইউ সো মাচ!
.
আহানা মুচকি হেসে জানালার দিকে চেয়ে রইলো
.
আমার গেমস খেলা শেষ চলো কিছু খেয়ে আসি
.
না খিধে নেই
.
আমার তো আছে?
.
শান্ত আর আহানার কথায় কান না দিয়ে ওর হাত ধরে চলে গেলো ক্যানটিনের দিকে,আহানা খাবে না মানে খাবেই না,তাও ওকে একটা আইসক্রিম কিনে দিয়ে বসিয়ে রেখেছে শান্ত
আর সে একটা স্যান্ডুইচ খেয়েছে,দুজন মিলে ঠিক করলো আজ যাওয়ার সময় টংয়ের চা খাওয়া হবে,হবে কিছু খুনসুটি
সত্যি সেটাই হলো,শান্ত আহানাকে নিয়ে আজ আবারও সেই লেকটায় আসলো
তখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে,পানিতে পা ডুবিয়ে দুজনে বসে আছে
শান্ত চা খেতে খেতে বললো বাবা ওর মাকে অনেক ভালোবাসে,রেণু আন্টি ছিলেন মায়ের ক্লাসমেট, উনি মা মারা যাওয়ার পরই একটা ভুলবুঝাবুঝি ক্রিয়েট করে ফেললেন যাতে বাবা উনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে আর সেটাই হলো,বাবা সম্পূর্ন ভেঙ্গে পড়েছিল সে সময়টাতে,সেই মূহুর্তে মাকে রেখে অন্য একজন মহিলাকে নিজের স্ত্রী করে নেওয়াটা তার জন্য কঠিন ছিল
আমি সেই বাসায় ভালো ছিলাম ততদিন যতদিনে তার আগের সংসারের ছেলে সায়ন এসে আমাদের সাথে থাকা শুরু করে নিই
সায়ন একটা বিগড়ে যাওয়া পুরুষের বিগড়ে যাওয়া সন্তান,ওর সাথে জাস্ট সিধা কথাও বলা যায় না,মা মারা যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই আমাকে মোহনগঞ্জ ছাড়তে হয়েছিল সায়নের আর সায়নের মা রেনুর অত্যাচারে
.
কি করতো তারা?
.
একবার ২দিন ধরে খাবার দেয়নি আমাকে কারণ হলো সায়ন আমার মায়ের একটা ছবি ভেঙ্গে ফেলেছিল বলে ওকে আমি থাপ্পড় মেরেছিলাম এই দোষে আমাকে গোয়াল ঘরে আটকে রেখেছিল,কিছু খেতে দেয়নি
.
আপনার বাবা আটকান নি?
.
হাহা,বাবা ঢাকায় এসেছিলো অফিসের কাজে,উনি এসব ব্যাপারে নজর দিতেন না,জানতেও চাইতেন না
.
তারপর বাসা থেকে একবার বেরই করে দিয়েছিল আমাকে
.
কেন?
.
মিতু হওয়ার পর তাকে রোদে দিতে হতো সকালের রোদে
রেনু আন্টি গোসল করতে গেসিলেন,আমি আর সায়ন ওর পাশে ছিলাম
সায়ন মরিচের গুড়ো দিয়ে কাঁচা আম খাচ্ছিলো,রোদের তাপে মিতু কাঁদতেসিলো,সায়ন তার কাঁদা দেখে বিরক্ত হয়ে এগিয়ে এসে মরিচের গুড়ো সহ এক টুকরো আম মিতুর মুখে পুরে দিয়েছিল বলে ওকে আমি ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়েছিলাম তারপর ও এসে আমাকে ধাক্কা দিলো
রেনু আন্টি এসে গেসিলেন ততক্ষনে,সায়ন বললো মিতুর মুখে মরিচ সহ আম আমি দিয়েছি
রেনু আন্টি সায়নের কথা বিশ্বাস করলো,আমার নয়
আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন সেদিন,বাবা বাসায় থাকতো না বেশি তাই এসব কিছুই বাবার কানে পৌঁছাতো না
অতিষ্ঠ হয়ে আমি বাবাকে বললাম আমাকে আলাদা জায়গা দিতে আমার পক্ষে ঐ বাড়িতে থাকা সম্ভব না
বাবা সাথে সাথে ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট কিনে নেয় আমার জন্য কারণ সেদিন আমি খুব সিরিয়াসলি বলেছিলাম বাবা যদি রাজি না হতো আমি একাই বেরিয়ে পড়তাম বাসা থেকে
সেদিন রাতেই আমি সেই ফ্ল্যাটে এসে উঠেছিলাম
আস্তে আস্তে ফ্ল্যাট সাজিয়ে নিলাম
তারপর ভার্সিটিতে পরিচয় হলো নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্যের সাথে,ওরা ম্যাচে থাকতো,আমি ওদের আমার এখানে নিয়ে আসি,একা একা কার ভালো লাগে,ওরা থাকলে কখন দিন হয় আর কখন রাত বোঝাই যায় না
এতকিছুর পরও আমি মাকে অনেক মিস করি আহানা!!
খানিকটা একা হলেই মায়ের কথা মনে পড়ে আমার,আমি কি দোষ করেছিলাম যে আমাকে মা হারা হতে হলো
কতটা সুখের ফ্যামিলি ছিল আমাদের
আমার মাঝে মাঝে মন চায় আল্লাহর কাছ থেকে গিয়ে মাকে চেয়ে আনি,মাকে ছাড়া আমি এই পৃথিবীতে বড্ড অসহায়
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো আর বাবা মা ছাড়া আমি কি তাহলে?
.
শান্ত চা শেষ করে ওয়ান টাইম গ্লাসটা ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে ফেলতে বললো তোমার তো তাও কেয়ারিং,কিউট,ড্যাসিং,হ্যান্ডসাম,জোস হাসবেন্ড আছে,আমার কি আছে?
.
আপনার তো বাবা আছে আর আমার মত এত ভালো একটা স্ত্রী আছে যে আপনার অনেক কেয়ার করে,আর কি লাগে?
.
শান্ত মাথার চুল ঠিক করতে করতে বললো আর একটা বেবি ফুটবল টিম লাগে এই আর কি!!
.
আহানা হেসে দিয়ে শান্তকে এক ধাক্কা মেরে দিলো
.
শান্ত আহানার হাত দুটো ধরে লেকের শেষপ্রান্তের দিকে চেয়ে বললো আহানা আমি আমাদের সম্পর্কটাকে নিয়ে অনেক satisfied, কারণ আমার মায়ের ইচ্ছা ছিল এটা আর তা perfectly পূর্ন হয়েছে
আমার মা খুশি তো আমি খুশি,আর আমি খুশি তো আমার একমাত্র বউও খুশি
.
একমাত্র মানে?আরও চান নাকি?
.
হুমম,এলিনা আর ববি হলেও সমস্যা নাই!
.
আহানা রেগে শান্তকে দৌড়ানি দিলো,খালি রাস্তায় দুজনে দৌড়াচ্ছে
শান্ত হাঁপিয়ে গেলো সাথে আহানাও
আহানা ঠাসঠুস করে শান্তকে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো
তারপর মুখ ছোট করে বললো যান করেন বিয়ে আমার কি!
.
শান্ত হেসে দিয়ে ওকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে
তারপর বললো “তোমার অনেক কিছু আহানা”!!
.
দুজনে আরও কিছুক্ষন হেঁটে বাসায় ফিরে আসলো
.
আহানা ভাত বসাতেই দরজায় কে যেন টোকা দিলো
হাত মুছে গিয়ে সে দরজা খুললো,শান্ত দাঁড়িয়ে আছে এক গাল হাসি দিয়ে
তার হাতে ইয়া বড় একটা ইলিশ মাছ,চিকচিক করতেসে
আহানা চোখ বড় করে বললো “হঠাৎ?”
.
আরে এত তাজা পেয়ে যাব ভাবতেও পারিনি,২টো কিনছি,একটা নওশাদের হাতে দিয়ে এসেছি বলছি বুয়াকে দিয়ে রাঁধিয়ে নিতে
আর এটা তুমি রাঁধবা,তাড়াতাড়ি করো খুব খিধে পেয়েছে
.
আহানা মাছটা কেটে নিয়ে ভাবলো ২পদ বানাবে,লেবু ইলিশ আর ইলিশ মাছ দিয়ে তরকারি
শান্ত টিভি দেখতেসে বসে বসে
আহানা রান্নাবান্না শেষ করে ডাইনিংয়ে খাবার এনে শান্তকে ডাক দিলো
শান্ত খেতে বসে চোখ বন্ধ করে একটা বড় শ্বাস নিলো তারপর আহানার দিকে চেয়ে বললো”এটা আমার প্রথম ইনকামের টাকায় কেনা মাছ ছিলো আহানা!”
.
আহানা মুচকি হেসে দিয়ে বললো আলহামদুলিল্লাহ
.
মা থাকতে বলেছিলাম তার ছেলে প্রথম চাকরি করে তাকেই গিফট দিবে সবার আগে,আমি আমার বেতন হাতে পেয়ে সবার আগে মায়ের জন্য গোলাপি শাড়ী আর চুড়ি কিনেছি,বাবার জন্য পাঞ্জাবি ও কিনেছি,ছুটি পেলেই মোহনগঞ্জ যাবো মাকে গিফট দিতে
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫২
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫২
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা মুখটা বাঁকা করে আরেকদিকে ফিরিয়ে নিলো,সে কি বলবে,কি করবে সেটাই ভাবতেসে,অনেক ভেবে একটা নিশ্বাস ফেলে বলার চেষ্টা করতে গিয়ে শান্তর চোখে চোখ পড়লো,তার এই চাহনি দেখে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না আহানার
শেষে মুখ খুলে বললো-
“আমার হাত ছাড়ুন!এসব ঠিক না শান্ত”
.
শান্ত আহানার হাতে একটু চাপ দিয়ে বললো “কেন ঠিক না আহানা?আমাদের তো বিয়ে হয়েছে তাই না”
.
“ওটা বিয়ে ছিল না”
.
শান্তর চোখ লাল হয়ে গেছে,চোখ বন্ধ করে আবারও খুললো নাহহহ এবারও ঠিক আগের মতই লাল তবে একটু বেশিই লাল
আয়নায় নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে
“আমি এই বিয়ে মানি আহানা,তুমি অস্বীকার করতেসো কেন?”
.
আহানা হাত নড়াচড়া করতে করতে বললো “বিয়ে জোর করে করলেই সেটা বিয়ে হয়ে যায় না শান্ত,মনের মিল থাকতে হয়,ভুলে গেছেন কোন পরিস্থিতিতে আমাদের বিয়েটা হয়েছিলো,কেন হয়েছিলো??
আমার প্রতি তো আপনার কোনোদিন ইন্টারেস্টই ছিল না তাহলে এসব কি?আজ বলবেন না?যে আহানা তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই বুঝেছো”!!
অনেক হইসে,হাত ছাড়ুন এখন,বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু
আর আপনি তো…….!
.
শান্ত ততক্ষণে আহানার ঠোঁটজোড়া তার আয়ত্তে নিয়ে ফেলেছে
আহানার চোখ দিয়ে ২ফোঁটা পানি গড়িয়ে শান্তর সেই হাতে পড়লো যেটা দিয়ে সে আহানার হাত চেপে ধরে আছে
মেঘের ডাকটা খুব জোরে শোনা গেলো সেসময়ে,আজ শান্তকে সবচাইতে বেশি আপন মনে হচ্ছে আহানার
চোখ বন্ধ করে সে অনুভূতি অনুভব করায় ব্যস্ত
কারেন্ট চলে গিয়েছে,আলো আছে তবে সেটা বজ্রপাতের
আহানা চোখ খুলে শান্তর চোখের দিকে তাকালো,শান্তর চোখ জোড়া তার চোখকেই দেখতেসে,মনে হয় এতক্ষণ ও দেখতেসিলো,চোখ বন্ধ থাকায় বুঝতে পারেনি আহানা যে শান্তর চোখ তার দিকেই ছিল
আহানা তার হাত ঢিলা পেয়ে শান্তকে জড়িয়ে ধরে ফেললো খুব শক্ত করে,কেমন একটা লজ্জা কাজ করতেসিলো শান্তর চাহনি দেখে,তাই উপায় না পেয়ে জড়িয়ে ধরলো সে
দুজনেই চুপ হয়ে আছে
আহানা কয়েক মিনিট বাদেই শান্তকে ছেড়ে দিলো,পাশ কেটে চলে গেলে রুম থেকে
শান্ত নিজেকে কনট্রোল করে আহানাকে গিয়ে আটকালো
.
“আহানা প্লিস,এই পরিস্থিতিতে যেও না,আমি তোমাকে আর টাচ করবো না”
আহানা চোখ মুছে সোফায় বসে পড়লো
কি হয়েছে কিছুক্ষন আগে সেটা ভেবে হাসবে নাকি কাঁদবে সেটায় ভেবে পাচ্ছে না,কিরকম রিয়েক্ট করা উচিত তার??তাকে এইমাত্র যে লোকটা ছুঁয়েছে সে তার স্বামী
“আর আমারও তো সম্মতি ছিল,আমি কেন সম্মতি দিলাম!কেন দিলাম!!
হয়ত শান্তর ও একই অনুভূতি হচ্ছে,তাই সে সামনে থেকে চলে গেছে”
এত রাত,এত মুশলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে ,বাসা কাছে হওয়ার সত্ত্বেও আহানা বের হতে পারছে না,আবার এখানেও থাকা সম্ভব না
আহানা পাগল হয়ে যাচ্ছে মূহুর্তগুলো মনে করতে গিয়ে
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বিছানার এক কোণে বসে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে
সে কি আহানাকে জোর করলো?না জোর করেনি
“জোর করে হলে আহানা জড়িয়ে ধরতো না আমাকে,হঠাৎ এমন কেন করলাম আমি,একবার আহানাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তবা ভালো হতো!!”
.
আহানা কিছু ভেবে না পেয়ে শেষে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো বাসার থেকে
শান্ত দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে উঠে আসলো বিছানা থেকে
আহানা চলে যাচ্ছে
“আহানা দাঁড়াও প্লিস!”
আহানা বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়,শান্ত ছাতা নিয়ে দ্রুত গতিতে ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে আটকালো
.
রোড সম্পূর্ন ফাঁকা,যে গুটিকয়েক দোকান ছিল সব বন্ধ হয়ে গেছে,এসময়ে দোকান খোলা থাকতো,বৃষ্টি বলে বন্ধ হয়ে গেছে,আর রাত ও কম হয়নি যে খোলা থাকবে
ল্যাম্পপোস্টের আলো চারিদিকে আর বৃষ্টির শব্দ সব মিলিয়ে নির্জন পরিবেশ তৈরি করেছে,অথচ এই ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্পষ্ট দুজনকে দেখা যাচ্ছে,স্পষ্ট হয়ে আছে তাদের মুখের গড়ন,তাদের মুখের ভাবগতি কেমন তাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,তবে শুধু তারাই একজন আরেকজনকে দেখতে পাচ্ছে,দূর থেকে কেউ তাকালেও চিনবে না, কিছু বুঝবেও না
আহানা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো “আমাকে যেতে দিন”
শান্ত ছাতা ওর মাথার উপর এনে ধরলো
শান্তর মুখের ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষন আগে যেটা হয়েছে সেটা সে ভুলে গিয়ে আহানাকে সামলাতে এসেছে এখন,কারণ তার দায়িত্ব এটা
আহানা শান্তর হাত ছাড়িয়ে একটু পিছিয়ে গেলো
ছাতার নিচ থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো সে
তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে অনবরত,বৃষ্টির ভিতরেও ঠিকই ওর চোখের পানি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কারণ ল্যাম্পপোস্টের নিচেই ওরা দুজন দাঁড়িয়ে আছে
এক পাশে ছোটখাটো দোকানপাট যেগুলো বন্ধ আর আরেকপাশে ১০তলা বহুতল ভবন,যেটা সম্পূর্ন অন্ধকার হয়ে আছে কারন পুরো দালানেই কারেন্ট চলে গেছিলো
গার্ড আইপিএস অন করতে গেছে
.
নিজেকে শক্ত করে আহানা কথা বলা শুরু করলো অবশেষে
.
“আমি আপনার যোগ্য না শান্ত!আমি একটা রাস্তার মেয়ে,এক নারীর অবৈধ সন্তান!
আমার কোনো পরিচয় নেই শান্ত!আপনার পাশে আমাকে মানায় না
যে বিয়েটা হয়েছে আমাদের সেটা আমি ভেঙ্গে দিব,আপনি চিন্তা করবেন না,তাও আমার জন্য আমি আপনার জীবন নষ্ট হতে দিব না
আমাকে এতদিন হেল্প করেছেন তার জন্য আমি ঋনি আপনার কাছে
আমার চাকরি আছে,আমি নিজেই নিজের খরচ বহন করতে পারবো
আপনার মা আমার দায়িত্ব নিয়েছিল আমি অনাথ বলে আর এতদিন আপনি নিয়েছেন,আপনাদের হাজার হাজার শুকরিয়া,ব্যস!এর বেশি সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না
আপনার সাথে আমাকে একটুও মানায় না,কোথায় আপনি আর কোথায় আমি,আপনার বাসার বুয়াও সেই খাবার খায় না যেটা আমি খাই তাহলে কেন?কেন আমাদের সম্পর্কটার কোনো নাম হবে,নাম দেওয়া অনুচিত হবে,আমি কখনওই আপনার যোগ্য ছিলাম না,হবো ও না
আপনি প্লিস এই সম্পর্কটার ইতি টানুন,এতে আপনারই ভালো হবে,এলিনা আপু আপনাকে পাগলের মত ভালোবাসে,আপনি উনাকে বিয়ে করলে আপনারা দুজনই সুখী হবেন
আর আমার মত মেয়ের জীবনসঙ্গী হতেই হবে এমন তো না,আমি এতদিন একা একা জীবন কাটিয়েছি বাকি কটা বছর ও চালিয়ে নিতে পারবো
আমি আপনাকে ভালোবাসি না শান্ত!আমার এই ভালোবাসা না বাসাতে কোনো মূল্য নেই এ সমাজে”!!!
কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনার স্ত্রীর কেন মা বাবা নেই তখন কি বলবেন আপনি?
আমি আপনাকে এরকম পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই না
আমি এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি বলেই আমি জানি কেমন লাগে,তাই বলতেসি আপনি প্লিস আমাদের সম্পর্কটাকে শেষ করে দিন,এভাবে আমাদের জীবন চলতে পারে না,যত দিন বাড়বে ততই আমি দূর্বল হয়ে যাবো, নিজেকে সামলাতে পারবো না
এখনও দূর্বল হইনি আমি আর তাই এখন সম্পর্কটাকে শেষ করে দিন
কেউ জানবে না যে কোনো একদিন আমাদেরও কখনও নাম না জানা সম্পর্ক ছিল!আপনি চাইলে আমি এই বাসাও ছেড়ে দিব তাও আমার সাথে আপনি নিজেকে জড়াবেন না,আমি আপনার জীবনে সুখ আনতে পারবো না,আমাকে যা দিয়েছেন তা অনেক
একজন অনাথ মেয়ের এর চেয়ে বেশি পাওনা হতে পারে না
আমি আপনাকে ভালোবাসি না,বাসি না আমি!!
.
শান্ত ছাতা নিয়ে এগিয়ে এসে আহানার পিঠে হাত নিয়ে ওকে কাছে টেনে নিলো
আহানার কথাগুলো আদৌ শুনেছে কিনা কে জানে,তবে মনে হয় না সে আহানার কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করেছে
মুখটা নিচু করে নামিয়ে আহানার ঠোঁট কামড়ে টেনে ধরলো
ঠিক ১০সেকেন্ড বাদেই ছেড়ে দিলো ওকে,আহানার বলা কথাগুলোর উত্তরে “””না””” বুঝাতে চেয়েই সে এখন এমনটা করলো
তারপর ধাক্কা দিয়ে ওকে দূরে সরিয়ে দিলো সে
আহানা স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে আছে শান্তর মুখের দিকে
শান্ত ছাতা বন্ধ করে এগিয়ে এসে আহানার হাতে ছাতাটা দিয়ে চলে গেলো
একটু দূরে গিয়ে থেমে গেলো সে,মাথা বাঁকিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো
♥”কিন্তু আমি বাসি,ভালো খারাপ দুটোই বাসি”♥
কথা শেষ করে চলে গেলো সে
আহানা রোবটের মত দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়া দেখতেসে
লোকটাকে এতক্ষন ধরে কি বুঝাইলাম আর সে কি বুঝলো!
আমাকে ছুঁয়ে কি প্রমান করতে চাইলেন উনি!
.
খুব জোরে মেঘে ডাক দিলো,আর এখানে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ানো ঠিক হবে না
আহানা হাত দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাসায় ফিরে আসলো,দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে এসে ফ্লোরে বসে গেলো
সবসময় সুখ জিনিসটাকে আমি ভয় পাই,অনেক অনেক ভয় পাই
কখনও হাতে টাকা পেলে খুব খুশি হতাম তারপরেই টাকা গুলো বাসা ভাড়া দিয়ে,চাল আর নুন কিনলেই যখন শেষ হয়ে যেতো তখন মনটা ভেঙ্গে যেতো,কত শখ থাকতো আমার
কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা শখ ও আমি পূরন করতে পারিনি,সাধ্য হয়নি আমার
শান্ত আমার জীবনে আসার পর থেকে এক এক করে যা পারে সব করে যাচ্ছে,কিন্তু সুখ আসেই দুঃখের আবাশ নিয়ে!
এরপরে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে জানি না আমি
তবে আর কোনো কষ্ট সয্য করার ক্ষমতা নেই আমার,আমি আর পারবো না কিছু সয্য করতে
শান্ত আমাকে সীমাহীন সুখের কাছে নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখাচ্ছে
ঠিক তখনই আমার ভয় হয় সুখকে হারানোর
আমি জীবনের ২০টা বছরে সুখ দেখিনি
সে আমি কিনা এখন সুখ পাবো?আমার তো কপালই পোড়া,আর তাই এখন সুখ দেখেও মন খারাপ হয়,এই সুখ স্থায়ী হয় না হবেও না জানি
শান্ত কেন বুঝতে চায় না আমার কথা,কেন বুঝতে চায় না সে!
ফোনে টুংটাং করে আওয়াজ হলো,শান্ত মেসেজ দিয়েছে
রান্নাঘরে আসতে বলেছে
ততক্ষণে কারেন্ট ও চলে এসেছে
আহানা বাতি জ্বালিয়ে রান্নাঘরে আসলো,ঠিক তখনই শান্ত ফোন করলো ওকে
আহানা কানে ফোন ধরে এক দৃষ্টিতে শান্তর বারান্দার দিকে চেয়ে রইলো
শান্ত গ্রিলে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
.
“জামা চেঞ্জ করে ফেলো আহানা,নাহলে জ্বর হবে আর থ্যাংকস ফর দ্যা গিফট!”
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
গিফট?কিসের গিফট?
.
“কিসটা”আমার জন্মদিনের বেস্ট গিফট ছিল আহানা
আমি জানি তুমি আমাকে কিছু দিতে পারবে না আর আমার চাইও না কিন্তু পরেই মনে পড়লো তোমার কাছে আমার জন্য এমন উপহার আছে যেটাতে টাকা খরচ হবে না তোমার
আর তাই আমি আমার গিফট নিয়ে নিলাম,এই জন্মদিনটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে
.
আহানা জানালা থেকে সরে দাঁড়ালো
শান্ত চুপ করে থেকে একটা নিশ্বাস ফেলে বললো যাও জামা চেঞ্জ করে ফেলো,এন্ড আই এম সরি যদি তোমাকে আজ কষ্ট দিয়ে থাকি তার জন্য
কল কেটে গেলো
আহানা ফোন তাকের উপর রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে
সোফার রুমের সামনে দিয়ে বেডরুমে যাওয়ার সময় চোখ পড়লো সোফার উপরে কুশনের নিচে শান্তর জ্যাকেটের উপর
শান্তর কালো জ্যাকেট! এটা তো কয়েকদিন আগে পরেছিল মনে হয়
তাহলে এখানে আসলো কিভাবে,আমি তো খেয়ালই করিনি,শান্তর হয়ত মনে নেই
আহানা জামা চেঞ্জ করে এসে জ্যাকেটটা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জ্যাকেটটা পরে নিলো সে
মুখে হাসি ফুটলো,জ্যাকেটা পরা অবস্থায়ই ঘুমিয়ে পড়লো সে
শান্ত ঘুমায়নি,সারারাত জেগে ছিল,চোখে ঘুম নেই তার
শুধু আহানাকে নিয়ে ভেবেছে
“ব্যস আর না এবার সবাইকে জানানো উচিত আহানা আমার লিগালি ওয়াইফ
ওকে আর আমি এভাবে জীবন কাটাতে দিব না,অনেক কষ্ট করেছে জীবনে আর না,আর কোনোদিন চোখের পানি ঝরতে দিব না ওর”
ভোরের আলো এসে দেয়ালে পড়েছে,শান্ত বেড থেকে উঠে বেরিয়ে পড়লো আহানার বাসার দিকে
যেই ভাবা সেই কাজ,মই এনে বারান্দা দিয়ে বাসায় ঢুকতে হয়েছে তাকে
আহানার রুমে এসে থেমে গেলো সে
আহানা ওর জ্যাকেটটা জামার উপর দিয়ে পরে ঘুমাচ্ছে
শান্ত মুচকি হেসে কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো
“এই জ্যাকেটা কদিন আগে খুলে কই রেখেছি সেটাই ভুলে গেসিলাম তাহলে এখানে রেখে গেসিলাম,আর উনি সেটাকে আঁকড়ে কাল ঘুমিয়েছেনও
আসলে কাল আমার তোমার সাথে থাকাটা জরুরি ছিল
হুম ছিল!!
তবে যা হয়েছে তাতে তোমাকে একা থাকতে দেওয়াটা বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিল বলেই একা যেতে দিয়েছি তোমাকে”
.
শান্ত রান্নাঘরের দিকে গেলো নাস্তা বানাতে
আহানা আওয়াজ পেয়ে উঠে বসলো,তাড়াতাড়ি গায়ের থেকে শান্তর জ্যাকেটটা খুলে বিছানায় রেখে নেমে গেলো রান্নাঘরের দিকে
.
শান্ত কাজ করতে করতে বললো খুলে লাভ নেই,আমি কিন্তু দেখে ফেলেছি
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫১
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫১
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত সবার গিফট নিয়ে তমালের হাতে দিলো,তমাল পরিচিত একটা রিকসায় সব তুলে বললো শান্তর বাসায় পৌঁছে দিতে,সেখানে যে গার্ড আছে তার হাতে দিলেই হবে
আহানা দূরে দাঁড়িয়ে এখনও সব দেখে যাচ্ছে
.
কি ভাই এবার প্রেমনিবেদন পাইসো কয়টা?
.
এবার ১৫টা?
.
ওয়াও,তা কার প্রোপোজ একসেপ্ট করবেন?
.
শান্ত জ্যাকেট টেনে আহানার দিকে চেয়ে বললো “কারোর না!”
.
এক এক করে সবাই চলে গেছে,শান্ত একটা গোলাপও পেয়েছে
আহানাকে দেখে সেটা কামড়ে ধরে বটতলায় গিয়ে বসলো সে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে ক্লাসরুমের দিকে চলে গেলো
.
“কিরে?? আহানা তোরে উইস করে নাই?”
.
“না রে সূর্য,আমি ওকে জানাইনি,জানাইনি বলে উল্টা রাগ করেছে”
.
“জানালেও কি না জানালেও কি,জানাসনি ভালো করেছিস,ওর কাছে তোকে দেওয়ার মত কোনো expensive gift নেই”
.
“নাহ সূর্য!! গিফট সবসময় কিনতে হয় না,চাইলেই যেকোনো কিছুকে গিফট হিসেবে দেওয়া যায়,বুঝলি!”
♣
আহানা ২টো ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে গেলো,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গাল ফুলিয়ে বললো “হুহ পরবো না শাড়ী,দেখি কি করে,জন্মদিনের কথা কিনা আমাকেই জানালো না?? কতটা বেয়াদবি করসে!”
আহানা খাটের মাঝখানে গিয়ে বসে রইলো
দরজায় কে যেন টোকা দিচ্ছে,নিশ্চয় অলি এসেছে
খাট থেকে নেমে গিয়ে দরজা খুললো আহানা,ওপারে শান্ত দাঁড়িয়ে আছে
সে ব্রু কুঁচকে রেগে রেগে বললো “এখনও শাড়ী পরোনি??”
.
পরবো না,কি করবেন?আমি তো কেউ না,আমাকে একটিবার জানালেন ও না আজ আপনার জন্মদিন!
.
কেন? কি গিফট দিবা তুমি?
.
কথাটা শুনে আহানা মুখটা গম্ভীর করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো,চোখ মুছে বললো ভালো করেছেন জানান নি,আসলেই আমার কাছে কিছু নেই যে আপনাকে দিব,সেই সামর্থ্য আমার নেই তবে আজ বেতন পেলে একটা কিছু গিফট কিনে দিব আপনাকে
.
আমি যদি টাকা দিয়ে কেনা গিফটের চেয়েও দামি কিছু চাই?
.
আহানা চোখ মুছে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো সেটা কি?
.
শান্ত কাছে এসে ওর চোখ মুছে দিয়ে বললো “সময় হলে ঠিক আদায় করে নিব,শাড়ী পরে নাও এখন,একসাথে অফিসে যাবো”
শান্ত সোফায় গিয়ে বসে ফোনে গেমস খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো
আহানা নিজের রুমে এসে শাড়ীটা নিয়ে কিছুক্ষন ভাবলো যে শান্ত গিফট হিসেবে কি নিবে ওর থেকে
তারপর শাড়ীটা পরে চুল ছেড়ে দিয়ে বের হতে যেতেই মনে পড়লো কাল তো সাজগোজের অনেক জিনিস পাঠিয়েছে শান্তর বাবা
সেসব নিয়ে আহানা ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুল টেনে বসে মুখে পাউডার লাগালো তারপর কপালে টিপ,কানের দুল গলার হার পরে নিয়ে লিপস্টিক লাগাতে যেতেই ওপার থেকে শান্ত বললো “লিপস্টিক লাগাইও না”
.
কেন?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আমি বলসি তাই,ঐ ঠোঁট এমনিতেই সুন্দর,রঙ করার কোনো প্রয়োজন নেই
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে লিপস্টিক রেখে দিয়ে বের হলো রুম থেকে
শান্ত পিছন ফিরে ওকে দেখে জাস্ট মুচকি হেসে দিলো
জ্যাকেট টেনে ঠিক করে বললো “চলো!!সিউর আজ আমাদের দেখে সবাই বলবে আমরা বিবাহিত”
আহানা লজ্জা পেলো,অবশ্য এই লজ্জাটা সেদিন থাকা জরুরি ছিল যেদিন তাদের বিয়ে হয়েছিল
শান্তর কাঁধে হাত রেখে বাইকে উঠে বসলো সে
.
অফিসে আসতেই সবাই শান্তকে বার্থডে উইস করলো,গিফটস ও দিলো
আহানা এক কোণায় দাঁড়িয়ে ভাবতেসে উইস করবে তো কিভাবে করবে??
শান্ত তার কেবিনে বসে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো “উইস করতে যদি এত ভাবতে হয় তাহলে উইস করতে হবে না,উইস না করলেও বার্থডে সেলিব্রেট করা যায়”
আহানা মুখ বাঁকিয়ে এসে তার কেবিনে বসলো,কাজ করতে করতে বললো “শুভ জন্মদিন!!!”
.
শান্তকে যেন ধমক দিয়ে উইসটা করলো
শান্ত চোখ বড় করে বললো “এমন করে উইস করে মানুষ?তাও বউ হয়ে??”
.
তো কি চুমু খেয়ে বলতাম?
.
কথাটা শুনে শান্ত দাঁত কেলিয়ে তাকালো ওর দিকে
.
আহানা মাত্র কি বললো সে তা বুঝতে পেরে লজ্জায় আরেকদিকে ফিরে বসলো
“ইস কি থেকে কি বলে ফেললাম ধুর!”
.
অফিস ছুটি শেষে রাফি স্যার এসে যাদের পার্সোনাল ব্যাংক একাউন্ট নেই তাদের হাতে তাদের বেতন বুঝিয়ে দিলেন
আহানা তার বেতন পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে গেছে,মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার
টাকা ব্যাগে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে শান্তর বাইকে উঠে বসলো সে ,শান্ত ফোনে কথা বলতে বলতে আসতেসে
.
উফ আজ দেরি হয়ে গেছে অনেক
.
কেন?কোথাও যাবেন নাকি?
.
হুম
.
কোথায়?
.
গেলেই দেখতে পাবা
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে “রক এন্ড রোল”ক্লাবে আসলো
আহানা চারদিক দেখে বিস্মিত হয়ে বললো এখানে কেন?
.
আমার বার্থডে পার্টি এখানে হবে
.
আমি যাব না,পরিবেশ এরকম কেন
.
আমি আছি না?
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে শান্তর পিছু পিছু ক্লাবে ঢুকলো,সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একসাথে
লাল নীল সবুজ বাতি জ্বলতেসে,একবার অফ হচ্ছে আবার অন হচ্ছে
শান্ত তমাল আর নওশাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সাথে করে আহানার হাত মুঠো করে ধরে ওকেও নিয়ে গেলো সেদিকে
.
আহানা আশেপাশের সবাইকে দেখতেসে এক এক করে
আজ এখানে যারা এসেছে তাদের সবাইকেই কম বেশি চিনে আহানা,কারণ সবাই ভার্সিটির,শান্তর সাথে বটতলায় এদের প্রায়ই সময়ে দেখতো আহানা
ভিড়ের মাঝে রুপাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলো সে
রুপা আহানাকে পেয়ে তো মহা খুশি,রুপা আর আহানা কথা বলা শুরু করে দিলো পার্টি নিয়ে
একজন ওয়েটার গ্লাসে করে জুস ৪গ্লাস নিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আহানা আর রুপাকে সাধলো
আহানা নিতে যেতেই শান্ত দূরে থেকে ওকে ওয়েট করতে বললো
এগিয়ে এসে গ্লাস নিয়ে টেস্ট করে বললো আহানা এটা তুমি খাবা না
.
কেন?
.
“এটা নরমাল ম্যাংগো জুস না,এটাতে ওয়াইন মিক্স করা আছে
ব্রো তুমি বরং এক কাজ করো! নরমাল ড্রিংক ২টো আনো,এদের দুজনের জন্য”
.
ওয়েটার ঠিক আছে বলে চলে গেলো
.
রুপা আহানাকে এক ঠেলা দিয়ে বললো “এত কেয়ার!”
.
আহানা শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত তার হাতের জুস খেতে খেতে মুচকি হেসে চলে গেলো
.
কিরে?তোদের মাঝে কি ফোড়ন চলতেসে?আমি কি ধরে নিতাম যে তোদের অবশেষে প্রেমের পাঁচফোড়ন টেস্ট করা হয়ে গেছে?
.
আরে ধুর,এসব কি বলিস?
.
ঐদিকে একটা জায়গায় লাইট হাইলাইট করা হলো,সবাই সবার কাজ রেখে সেদিকে ফিরে তাকালো
এলিনা দাঁড়িয়ে আছে মাঝখানে,পরনে গ্রিন ওয়েস্টার্ন ড্রেস,পার্টি সাজ দিয়ে এসেছে আজ সে
হেসে বললো “এটেনশন প্লিস!”
“আজ আমার ভালোবাসার মানুষ শাহরিয়ার শান্তর বার্থডে,এই দিন তার জন্য অনেক অনেক স্পেশাল,আর আমার কাছেও,আমি শান্তকে এখানে ডাকতে চাই,শান্ত প্লিস কাম!
.
শান্ত জ্যাকেট ঠিক করে এগিয়ে গেলো
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে চেয়ে আছে সেদিকে
শান্ত এলিনার থেকে মাইক নিয়ে হেসে দিয়ে মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে উপরের দিকে তুলে দিলো তারপর বললো “এবার কেক কাটা যাক?”
.
এলিনা এই কথাটা আশা করেনি,সে ভেবেছিল হয়ত তার উক্তির জন্য শান্ত তাকে ধন্যবাদ দিবে কিন্তু তা না করে উল্টে কথা এড়িয়ে গেলো শান্ত!!
.
শান্তর এপাশে নওশাদ আর ওপাশে এলিনা দাঁড়িয়েছে,আহানা দূরে রুপার সাথে দাঁড়িয়ে আছে
লিগালি ওয়াইফ হওয়ার সত্ত্বেও আজ সে শান্তর থেকে কতটা দূরে,তার অধিকার থেকেও নেই
শান্ত তো এলিনাকে সবার আগে কেক খাওয়াবে
আর না খাওয়ালে এলিনা সব উলটপালট করে ফেলবে
.
শান্ত ছুরি হাতে নিয়ে যে ছেলেটা সকল লাইট অফ অন করার দায়িত্বে আছে তার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিলো
ছেলেটা হাত উঠিয়ে “ওকে” জানালো
শান্ত কেক কেটে হাতে নিতেই লাইট সব অফ হয়ে গেলো সাথে সাথে
সবাই বলে যাচ্ছে লাইট কেন চলে গেছে,কখন আসবে, এইসব বলাবলি করতেসে সবাই
এদিকে শান্ত আহানার কাছে এসে ওর হাত ধরে দূরে নিয়ে গেলো ওকে
হাতের স্পর্শতেই আহানা চিনতে পেরেছে এটা শান্ত আর তাই সে টু শব্দটাও করেনি
শান্ত দূরের আলোতে আহানাকে নিয়ে ওকে কেক খাইয়ে দিলো
আহানার চোখমুখে হাসি ফুটে উঠেছে,সে জানতো না শান্ত কিভাবে ওকে সবার আগে কেক খাইয়ে দিবে
শান্ত পকেট থেকে টিসু নিয়ে আহানার মুখ মুছিয়ে দিয়ে বললো “স্ত্রী হিসেবে এটা তোমার অধিকার আহানা,অন্য কারোর নয়”
কথাটা বলে শান্ত চলে গেলো,আহানা মুগ্ধ চোখে চেয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
শান্ত আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে জোরে “ডান” বললো
সেই ছেলেটা ডান শুনতে পেয়ে লাইট আবার অন করে দিলো
.
শান্ত তুই ডান বললি কেন?
.
ইয়ে আসলে নওশাদ! কেকের প্রথম পিসটা আমি খেয়ে ফেলেছি লোভ সামলাতে পারিনি তাই ডান বললাম
.
নওশাদ দুষ্টামি করে এক ঘুষি দিলো ওর পেটে,সবাই হেসে দিলো,শান্ত কেক আরেক পিস নিয়ে নওশাদকে রিয়াজকে আর সূর্যকে খাওয়ালো তারপর এলিনাকে
নওশাদ আর সূর্য মিলে লাস্টে যে কেক ছিল সেটা শান্তর সারা মুখে মাখিয়ে দিলো তারপর পার্টি স্প্রে দিয়ে আবারও ভূত বানিয়ে দিলো ওকে
.
হেহে!!কেক এক পিস দিয়ে তোরা আমাকে ভূত বানিয়েছিস,কিন্তু তোদের বার্থডে তে আমি আলাদা একটা কেক আনবো যেটা শুধু তোদের গালে মাখানোর জন্য
.
শান্ত তুই ভুলে যাস কেন আমরা তোরই বেস্টফ্রেন্ড??আমরাও আলাদা একটা কেক অর্ডার দিয়ে বানিয়েছি শুধুমাত্র তোর সারা গায়ে মাখানোর জন্য,হাহা
.
এই না খবরদার!!
.
শান্ত দৌড় দিলো সবাই মিলে কেক নিয়ে ওর পিছু পিছু গেলো
এলিনা এক পিস কেক নিয়ে মুঠো করে ধরে আহানার দিকে তাকিয়ে ওর কাছে আসলো
.
“সো স্যাড আহানা!শান্ত তোমাকে এক পিস কেক ও খাওয়ালো না
ইটস ওকে,ও বুঝতে পেরেছে ওর সাথে আসলেই কাকে মানায়!
এন্ড আই এম সরি কারণ এখন আমি শান্তর জন্মদিন উপলক্ষে তোমাকে কেক মাখাবো
আহানা সরতে যাওয়ার আগেই এলিনা আহানার চুলে গালে কেক লাগিয়ে দিলো
আহানা বিরক্ত হয়ে বললো “কি সমস্যা?আমি কি ক্ষতি করসিলাম আপনার?সবসময় এমন করেন কেন?”
.
“তুমি আমার শান্তকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাও,আর সেটা আমি হতে দিব না কিছুতেই”
♣
শান্ত টিসু দিয়ে মাথা মুছে এসে দেখলো আহানারও একি অবস্থা
“এই হাল কে করলো তোমার?”
.
আহানা রেগে বেরিয়ে চলে গেলো ক্লাব থেকে
.
“ওক গাইজ তোমরা ফান করো আজ আমি আসি,আমার এখন বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হতে হবে”
♣
“আহানা দাঁড়াও”
.
কি?
.
যে করেছে তার হয়ে আমি সরি বলতেসি,আর এসব এলিনা করেছে আমি জানি তাকে আমি পরে বুঝিয়ে দিব যে তুমি আমার…
.
আমি বাসায় যাব,প্লিস আর কোনো কথা নয়
.
ওকে,বাইকে উঠো
.
আহানা বাইকে উঠে বসতেই শান্ত বাইকের আয়নায় তাকিয়ে বললো একটা কথা রাখবে?
.
কি?
.
আজ আমার বাসায় থাকবে?নওশাদেরা আসতে আসতে শেষরাত হয়ে যাবে
.
না,আমার বাসায় গিয়ে গোসল করতে হবে,আর আমার জামাকাপড় তো আমার বাসায়
.
আমার কাছে একটা থ্রি পিস আছে,আমি মিতুর জন্য কিনেছিলাম,তুমি নাহয় সেটা পরিও,আমি ওকে আরেকটা কিনে দিব,ও তো চিকন তাও আমার মনে হয় ওর সেই জামাটা তোমার গায়ে ফিট হবে,ঢিলা জামাটা
.
না,আমি আমার বাসায় যাব
.
শান্ত চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে,হঠাৎ করে খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো,গেলো তো গেলোই,থামাথামি নেই,দুজনে ভিজে টইটুম্বর হয়ে গেসে
শান্তর বাসার সামনে দিয়েই আহানাদের বাসায় যেতে হয়,বৃষ্টির জন্য বাইকও চালানো পসিবল হচ্ছে না,এত গতি বৃষ্টির শেষে তার বাসার সামনে এসেই বাইক থামালো শান্ত
আহানার হাত ধরে বিল্ডিং এর ভিতরে চলে আসলো
.
“তোমার বাসায় যাওয়া একদম ইম্পসিবল হয়ে গেসে বাধ্য হয়ে বাইক আমার বাসার সামনেই থামালাম,এখন কি করবা তুমি বলো?”
.
“আচ্ছা ঠিক আছে চলুন,বৃষ্টি তো থামতেছেই না,এমনিতেও ভিজে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে,তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করতে হবে তা না হলে জ্বর এসে যাবে”
.
হুম,চলো
♣
বাইরে বৃষ্টি,মেঘ থেমে থেমে নয় প্রতি সেকেন্ডে ডাক দিচ্ছে মানে অবস্থা কঠিন,বাতাস তো আছেই
বারান্দার পর্দা উড়ে উড়ে আকাশ দেখাচ্ছে বারবার,অন্ধকার ভয়ঙ্কর আকাশ,ভয়ঙ্কর আকাশ বলার কারণ হলো বজ্রপাত,যেভাবে পুরো আকাশে তারকাটা এঁকে দিচ্ছে,ভয়ঙ্করই বটে!
এটা না দেখলেও চলবে,তাও কেন যে পর্দা সরে সরে বারবার আকাশ দেখাচ্ছে
আহানা নিশ্চুপ হয়ে সেই আকাশ দেখায় ব্যস্ত,কিছুক্ষন আগেই গোসল করেছে সে,চুল ভিজে আছে,বৃষ্টি হলে এই এক ঝামেলা,সহজে চুল শুকাতে চায় না,আর আমার চুল হলে তো আজ সারারাতেও শুকাবে না,মিতুর জন্য কেনা জামাটা ফিট হয়েছে তবে একটু টাইট
পিঠের উপর চুল ভিজা থাকার কারণে পিঠও ভিজে কেমন একটা অস্বস্তিবোধ হচ্ছে
একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো আহানা,বারান্দার যে জায়গাটাই বাতাসের উৎপাত বেশি সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো সে,চুলগুলো পিঠ থেকে সরিয়ে শুকানোর চেষ্টা করছে সে
.
চা হাজির!!
.
শান্তর গলা শুনে পিঠের উপরে চুল ছেড়ে দিলো আহানা যেগুলো এতক্ষন তার হাতে ছিল
পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো সে,শান্ত এগিয়ে এসে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে ধরেছে,আহানা চায়ের কাপটার দিকে চেয়ে সেটা হাতে নিলো তারপর আবার বারান্দার দিকে ফিরে বাতাসের দিকে মন দিলো
.
শান্ত চা খাওয়া শেষ করে সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে আছে,সিগারেটের ধোঁয়া আকাশের দিকে ছাড়ছে,আকাশ যে রঙ সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লেও তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে
তাই ধোঁয়া ছাড়ার পর সেটা কোনদিকে যায় ঠিক বোঝা যায় না তার উপর এত অন্ধকার!
.
আহানা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ড্রেসিং টেবিলের দিকে গেলো
এই যে চুল ঝাড়লো পানি পুরোটা না গেলেও কিছুটা শান্তর মুখের উপর গিয়ে পড়লো নিমিষেই মুখের ভাবগতি এলোমেলো হয়ে গেলো তার,চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
আহানা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তার গোলাপি চুড়িগুলো নিয়ে পরতেসে,গোসল করার আগে এখানে খুলে রেখেছিলো
কেমন একটা অনুভূতি হতেই সে চোখ তুলে আয়নায় তাকালো,শান্ত পিছনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে,হাত কাঁপতেসে তার
.
আহানা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে শান্তর দিকে ফিরে বললো কি হয়েছে আপনার?শরীর ঠিক আছে তো?আর আপনার হাত!
.
তার আগেই শান্ত আহানার খুব কাছে এসে গেলো,এতটা কাছে যে আহানার নিজেরই এখন সারা শরীর কাঁপতেসে,হাত একটা নাড়াতে পারছে না শান্তর কাঁধের তলায় পড়ে সেটা অবশ হয়ে আছে,আর আরেকটা হাত স্বাধীন,সেটা দিয়ে শান্তকে সরাতে যাবে তার আগেই সেই হাতটাও শান্ত ধরে ফেললো
.
শান্ত!আপনি এমন করছেন কেন?
.
“চুপ!”
শান্ত মুখটা এগিয়ে নিয়ে আসলো,আহানা বুঝতে পেরেছে সে চাইলেও আজ আটকাতে পারবে না শান্তকে,শান্তর চোখমুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে সে আজ আহানাকে ছাড়বে না
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৫০
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৫০
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা গালে হাত দিয়ে মাথা দেয়ালে লাগিয়ে চেয়ারে বসা অবস্থায় ঘুমাচ্ছে
শান্ত আহানার কাছে এসে হাতের ওড়নাটা নিয়ে ওর গায়ে পরিয়ে দিলো
আহানা সাথে সাথে চোখ খুলে শান্তকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
“আপনি উঠতে গেছেন কেন?”
.
নাহ ঠিক আছে,এখন পায়ের ব্যাথা কমে গেছে,হাঁটা চলা করতে পারি
.
তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো,আহানা বললো সে গিয়ে দেখবে
আহানা গিয়ে দরজা খুলতেই এক এক করে রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্য মিলে বড় বড় বক্স হাতে নিয়ে ঢুকতেসে বাসার ভেতর
আহানা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো এগুলা কি??
নওশাদ থেমে মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললো চুপ থাকতে
আহানা ওদের চলে যাওয়া দেখছে
কি করবে ওরা,আর আমাকেই বা কেন চুপ হতে বললো?
শান্ত তার রুম থেকে এসে বললো আহানা তুমি এখন চাইলে যেতে পারো
নওশাদেরা সবাই এসেছে যখন
তুমি বরং বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও,আর যদি মন চায় তাহলে আমার রুমেও থাকতে পারো,আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই
আহানা “না ঠিক আছে” বলে চলে গেলো
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে,সকাল থেকে অনেক খেটেছে মেয়েটা এখন একটু রেস্ট নিক আর তাই ওকে যেতে বললো সে
.
নওশাদ রিয়াজের রুম থেকে ঠুসঠাস সাউন্ড আসতেসে,সকাল থেকে ওরা কি পাকাচ্ছে সেটাই বুঝতেসে না শান্ত
কিরে তোরা কি করিস?দরজা খোল বলতেসি
.
শান্ত,যা এখন,আমরা একটা কাজ করতেসি
.
কি কাজ করিস তোরা আমাকে না জানিয়ে?খোল দরজা নাহলে ভেঙ্গে ফেলবো
.
যা! পরে জানতে পারবি
.
শান্ত গাল ফুলিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,বিকালের শেষ দৃশ্য চারপাশটায়
এই বিকালবেলাটা শান্তর খুব খুব প্রিয়,মনের ভেতরটা কফি কফি করতেসে,কফির ঘ্রান ও আসতেসে,বুয়া মনে হয় কফি বানাচ্ছে
চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলো সে,মায়ের কথা মনে পড়লো সাথে সাথে
বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে ল্যাম্পশ্যাডের টেবিলটার উপরে মায়ের একটা ছবি রাখা আছে,সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো সে
মা যেনো হেসে তাকিয়ে বললো অগ্রিম শুভ জন্মদিন আমার শান্ত
শান্ত চমকে আবারও তাকালো ছবিটার দিকে
নাহ এটা কল্পনা তবে হয়ত সত্যি,কাল আমার জন্মদিন এই কথা শুধু মায়ের মনে আছে,আর সবার আগে মা উইস করে,আমি তো ভুলেই গেসিলাম
শান্ত হেসে দিয়ে আহানাদের বাসার দিকে তাকালো,মনে হয় আহানাকে দেখা যাচ্ছে,রুম থেকে দূরবীনটা এনে সেদিকে দেখতে থাকলো সে
আহানা ওড়না কোমড়ে পেঁচিয়ে রান্না করতেসে
কফি নিয়ে তাড়াতাড়ি শেষ করে সে বেরিয়ে পড়লো আহানার বাসার দিকে
♣
কে??
.
তোমার বর
.
আহানা মুচকি হেসে গিয়ে দরজা খুললো,ওপারে শান্ত হেসে দাঁড়িয়ে আছে
.
কিছু খাবেন?
.
নাহ,কফি খেয়ে এসেছি,ভাল্লাগতেসিলো না বলে এখানে চলে এসেছি
.
বিছানায় গিয়ে রেস্ট নেন,এভাবে হাঁটাহাঁটি করলে পায়ে ব্যাথা বেড়ে যাবে
কাজ করতে করতে আহানা কথাটা বলে চেয়ে দেখলো তার বলার আগেই শান্ত বিছানায় শুয়ে মরার মত ঘুমাচ্ছে
তখনই দরজায় কে যেন নক করলো
আহানা শান্ত থেকে চোখ সরিয়ে গিয়ে দরজা খুললো,ওপারে ২জন লোক দাঁড়িয়ে আছে,পরনে তাদের নরমাল শার্ট আর প্যান্ট,মুখের গড়নে বয়সের ছাপ,এক গাল হাসি দিয়ে আহানার দিকে চেয়ে আছেন তারা
আহানা চমকে সালাম দিলো,উনারা সালাম নিয়ে বললেন শান্তর বাবার অফিসের কর্মচারী তারা
আহানা ব্যস্ত হয়ে তাদের ভিতরে আসতে বললো
তারা সাথে সাথে না করে বললো তারা অন্য কাজে এসেছে
আহানা শান্তকে ডাক দিলো
শান্ত হেলিয়ে দুলিয়ে বেড থেকে নেমে এগিয়ে আসলো,তাদের দেখে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো
আহানা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে
.
আচ্ছা শান্ত! উনারা কারা?
.
উনি আমার শফিক কাকা আর উনি হচ্ছেন রফিক কাকা
বাবার অফিসে জব করে,তা হঠাৎ আপনারা এখানে আসলেন,কোনো সমস্যা হয়নি তো?বাবা ঠিক আছে?
.
হুম ঠিক আছে,আসলে স্যার আহানা মায়ের জন্য কিছু গিফট পাঠিয়েছেন
.
গিফট?
.
হ্যাঁ ওগুলা দিতেই আমরা এসেছি এখন,দিয়ে চলে যাব হাতে সময় নেই,মোহনগঞ্জ যেতে আবার ট্রেন ধরতে হবে
.
শফিক আঙ্কেল আহানাকে একটু সরে দাঁড়াতে বললেন,আহানা সরে দাঁড়াতেই নিচ থেকে ৩জন লোক মিলে ধরে একটা আলমারি ঢুকালো বাসার ভেতর
আহানা হা করে তাকিয়ে আছে,শান্ত হাসতেসে,কারণ তার বাবা যখন জেনেছে ছেলে বিয়ে করেছে তার উপর বউরে কিছু দেওয়া হয়নি তাহলে তো মাস্ট কিছু না কিছু দিতেই হবে
আলমারি রাখা শেষ এবার ৩জন লোক চলে গিয়ে নিচ থেকে লাগেজ আনতেসে এক এক করে,প্রায়ই ৫টার মতন লাগেজ এনেছেন,আবারও গেলেন এবার কি আনতে গেলো!
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকালো,একটা বিরাট ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে,সেটা থেকে জিনিসপাতি নামিয়ে উনারা আনতেসেন দোতলায়
শান্ত বিস্মিত হয়ে বাবাকে কল করলো
বাবা রিসিভ করেই বললেন সব পেয়েছিস?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
বাবা এসব কি,এত কিছু কেন?তোমাকে বললাম না আমার বিয়ের কথাটা আপাতত চাপা রাখো
.
আমি গিফট দিলে বুঝি সবাই জেনে যাবে তুই ম্যারিড?বলদ কোথাকার,তোকে তো দিচ্ছি না
দিচ্ছি আমার স্ত্রী শান্তির পুত্রবধূকে,তোর কি রে?চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাক,আর আহানাকে ফোন দে,ওর সাথে কথা বলবো আমি
শান্ত আহানাকে ফোন দিয়ে বললো বাবা কল করেছে
.
আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন?
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,ভালো আছি মা,সব এক এক করে দেখে বলিও তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা,কেমন?
.
এসবের কি দরকার ছিল,আমার ইচ্ছে আমি আমার বেতনের টাকা দিয়ে কিনবো সব ধীরে ধীরে
.
সেটা কিনলে কিনিও,এখন আমার যে দায়িত্ব সেটা আমি পালন করতেসি,নাহলে স্বপ্নে তোমার শাশুড়ি এসে আমাকে বকা দিবে,কাল রাতে আমার স্বপ্নে এসে আমাকে মনে করিয়ে দিসে তোমাকে উপহার দেওয়ার কথা,তাই তো দিচ্ছি,সয়ং শান্তির এই ইচ্ছা তাই তুমি না করিও না,শান্তিকে তো চিনো,ও তোমাকে খুব ভালোবাসতো
.
আচ্ছা
আহানা ফোনটা শান্তর হাতে দিয়ে দরজার দিকে তাকালো,ঐ লোকেরা এবার সোফা আনতেসে আরও কজন মিলে ধরে টেনেটুনে
২ঘন্টার ভেতর পুরো বাসা তারা সাজিয়ে দিয়ে চলে গেলো
আহানা মাথায় হাত দিয়ে ডাইনিং টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে
আর শান্ত সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে গেমস খেলে যাচ্ছে
বাবার চয়েস এত ভালো,এসব কবে কিনলো কে জানে,এখন আমার মন চাচ্ছে এখানে থাকি,টিভি দেখবো আসো আহানা,বসো এখানে
.
চুপ করেন তো,এসব নিয়ে আপনার বাসায় নিয়ে যান আমার লাগবে না
.
আমার বাসায় এসব আছে,আর তুমি এমন করো কেন,মায়ের ইচ্ছা পূরন হচ্ছে,মা তোমার কষ্ট দেখেই বাবাকে দিয়ে সব আনিয়ে দিয়েছে,আহা,বেডরুম,ড্রয়িং রুম,গেস্ট রুম,কিচেন,সব সাজিয়ে দিয়েছে,আই এম ইম্প্রেসড!!
বাট আলু পেঁয়াজ,রুসন আদা,ওগুলো দিলো না কেন?
.
আহানা সোফার থেকে কুশন নিয়ে শান্তর গায়ে ছুঁড়ে মারলো
.
সরি সরি,দেখিও আজকে মা বাবার স্বপ্নে এসে ঝাড়ি দিবে ভালো করে,তোমাকে শুধু ফার্নিচার দিয়েছে সে কারণে,কারণ মাসকাবারি জিনিসও অনেক ইম্পরট্যান্ট!
.
আপনি একটু চুপ থাকবেন?এমনিতেও কত টাকা খরচ হয়ে গেছে
.
বেশি না,মাত্র সাড়ে ৩লাখ টাকার ফার্নিচার
.
দাম শুনে আহানা চোখ কপালে তুলে পানি নিয়ে খেতে লাগলো বারবার
এত টাকার ফার্নিচার কিনা তার হয়ে গেলো?
♣
রাত ৮টার দিকে আহানা রান্না শেষ করে এসে দেখলো শান্ত সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে,তাই কাগজ কলম নিয়ে আরেকরুমে চলে গেলো সে
কাল সে তার চাকরির বেতন পাবে,মাসের ১তারিখ কাল
যা যা কিনবে সব লিস্ট করতেসে সে,এরপর ঐ লাগেজ গুলোর দিকে তাকালো
পা টিপে টিপে সেখানে গিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে লাগেজ খুললো
একটাতে জর্জেট শাড়ী,একটাতে সেলোয়ার কামিজ,একটাতে সুতির শাড়ী,একটাতে সাজগোজের জিনিসপাতি একটাতে শেম্পু,ক্রিম,সাবান,হেয়ার ওয়েল,ব্রাশ,টুথপেস্ট,জুতা,চুড়ি,কানের গলার সেট
আহানা হা করে বসে চেয়ে আছে,এসব তার??
একটা কালো রঙের শাড়ী নিয়ে পরে ফেললো সে
কিন্তু আয়না তো নেই,পরে মনে পড়লো তাকে তো ড্রেসিং টেবিল ও দিসে আজকে,দৌড়ে নিজের রুমে নিজেকে দেখতে যেতেই শাড়ীতে পা পেঁচিয়ে দুম করে পড়ে গেলো
হঠাৎ এমন শব্দ শুনে শান্ত ঘুম থেকে উঠে গিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আহানা ফ্লোরে পা ধরে বসে আছে
একি!কি হইসে তোমার!!
.
না কিছু না,জলদিতে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেসি
.
শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে ওকে উঠাতে যেতেই দেখলো কালো রঙের শাড়ী পরে আছে আহানা
ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে শান্ত মুচকি হেসে ওকে তুললো নিচ থেকে
“পছন্দ হয়েছে সব?”
.
হুম,অনেক কিছু দিয়েছে আজ
কথাটা বলে আহানা নিজের রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো,ড্রেসিং টেবিলটার আয়না ফ্লোর থেকে উপর পর্যন্ত
এতদিন আয়নায় পাইনি নিজেকে দেখার জন্য আর আজ কিনা পায়ের নখ থেকে মাথার উপর পর্যন্ত সব দেখতে পারতেসি
খুশিতে আহানার চোখে পানি এসে গেলো
শান্ত দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সেন্টার ফ্রেশ খেতে খেতে বললো কাল একটা শাড়ী পরে অফিসের জন্য বের হইও
.
কেন?
.
আমি বলছি তাই
.
আহানা ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত সেদিকে খেয়াল না করে লাগেজ থেকে একটা শাড়ী খুঁজে আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো,লাল গোলাপি একটা শাড়ী,ঘাড়ো রঙ
আহানা শাড়ীটার দিকে চেয়ে বললো কাল পরবো কেন?
.
আমি বলছি তাই পরবা এত কথা বলো কেন তুমি?
যাও চা বানাও
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে
শান্ত সোফায় বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
পরনে সুতার কালো শাড়ী,খোঁপা করা,কি সুন্দর লাগতেসে ওকে,কেমন যেন এই অল্পতেই শান্তর কাছে অনেক মনে হয়
আহানা চা এনে সোফার সামনে টি- টেবিলে রাখলো অথচ কাল এসময়ে সে ফ্লোরে বসে চা খেয়েছে
পুরো বাসার ভাবই পাল্টে দিয়েছে শান্তর বাবা,এর মাঝে দাদা এসে সব দেখে গেছেন,আর বলছেন বেশ ভালো সব ফার্নিচার
শান্ত চা খেয়ে বসে আছে বলে আহানা ওকে ঠেলে বের করেছে বাসা থেকে,বেশি রাত হয়ে গেলে আবার দাদা বাসা থেকে বের হতে দিবে না
শান্ত বাসায় গিয়ে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো
.
জাস্ট ১২টা বাজার ২মিনিট আগে নওশাদ আর রিয়াজ,সূর্য পা টিপে টিপে রুমে ঢুকলো,শান্ত গভীর ঘুমে
টর্চ জ্বালিয়ে নওশাদ ওর পাশে এসে দাঁড়ালো
সূর্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো আর ১০সেকেন্ড
রিয়াজ স্প্রে নিয়ে আরও কাছে এসে দাঁড়ালো শান্তর
!
রেডি!!ওয়ান—-টু—-থ্রি!!!
হ্যাপি বার্থ ডে শান্ত!!!
নওশাদ রুমের বাতি জ্বালিয়ে দিলো সাথে সাথে আর রিয়াজ পার্টি স্প্রে দিয়ে শান্তকে সাদা ভূত বানিয়ে দিলো
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,ওরা সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো তোরা তাহলে এই জন্য আজ সারাদিন বাসায় ছিলি না?
আরে না আমরা তো তোর জন্য সারপ্রাইজ রেখেছি সেটা কাল সন্ধ্যায় “রক এন্ড রোল” ক্লাবে,ওখানে তোর বার্থডে সেলিব্রেট হবে,সেগুলোর ডেকোরেশনের জিনিস কিনতে গেসি বলেই আমরা আজ বাসায় ছিলাম না
.
এত টাকা খরচ করার কি দরকার?
.
আমাদের বার্থডে তেও তুই টাকা খরচ করিস তাহলে আমরা কেন নয়??এখন চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে সোফার রুমে আয় বিয়ার খাবো
.
না আমার ঘুম আসতেসে তোরা যা ইঞ্জয় কর
.
না তোকে ছাড়া চলবে না,তুই সহ চল,বার্থডে বয় হলি তুই!
৩জনে মিলে টেনে হিঁচড়ে শান্তকে সোফার রুমে নিয়ে আসলো
♣
পরেরদিন সকালে আহানা মিষ্টিকে পড়ানো শেষ করে শান্তর বাসার কলিংবেলে চাপ দিলো কয়েকবার,শান্ত কেমন আছে দেখার জন্য
শান্ত অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠলো,কাল অনেক বেশি ড্রিংক করা হয়ে গেসিলো বলে দেরি করে ঘুমিয়েছে সবাই
দরজা খুলতেই হুমড়ি খেয়ে আহানার গায়ে গিয়ে পড়লো সে
এখনও মাথা ঘুরতেসে তার
আহানা চমকে ওকে ধরে বললো “পায়ে এখনও ব্যাথা হয় আপনার?”
.
না পায়ে ব্যাথা না আমার,কাল আসলে…. কিছু না,আসো ভিতরে আসো
আহানা ভেতরে ঢুকতেই দেখলো টেবিলে ৫/৬টা খালি মদের বোতল
আহানা চোখ বড় করে বললো আপনি কাল মদ খেয়েছিলেন?
.
হুম,বেশি না, একটা বোতল অনলি
.
কি দরকার ছিল শরীর খারাপের ভিতর এত খাওয়ার
আহানা শান্তকে বকতে বকতে ওড়না কোমড়ে পেঁচিয়ে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে চা পাতা ২চামচ বেশি দিয়ে কড়া করে চা বানালো শান্তর জন্য
শান্ত বিছানায় পা রেখে মাথা ফ্লোরে রেখে ঘুমাচ্ছে
আহানা চা নিয়ে ওর রুমে ঢুকে দেখলো ছোট ছোট ঝকমকে কুচি করা কাগজ সারা রুমে,টেবিলের উপর পার্টি স্প্রে তবে এটা আহানা চিনতে পারলো না
শান্তর পাশে বসে ওর হাত ধরে নাড়িয়ে ওকে ডাকলো,কিন্তু সে তো মরার মত ঘুমাচ্ছে
শেষে চুল ধরে টান দিতেই উঠে পড়লো,ব্রু কুঁচকে চা নিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো” বরকে কেউ এমন করে ঘুম থেকে উঠায়??”
আহানা সেদিকে মন না দিয়ে টেবিল থেকে স্প্রে বোতলটা নিয়ে বললো “এটা এমন কেন,বাচ্চাদের কার্টুনের ফ্রিন্ট করা পারফিউমের বোতলটার উপর”
শান্ত চায়ে চুমুক দিয়ে বলতে যাবে এটা সেই পারফিউম স্প্রে না এটা পার্টি স্প্রে তার আগেই আহানা ফুসস ফুস করে তার সারা গায়ে মুখে স্প্রে করে দিয়েছে
ফেনা দেখে সে ভয়ে,চমকে ছুঁড়ে মারলো স্প্রে বোতলটা
শান্ত হাসতে হাসতে উঠে এসে ওকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরালো
আহানা সাদা ভূত হয়ে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত হাত দিয়ে ওর মুখ আর গলা থেকে ফেনা গুলো মুছে দিয়ে বিছানায় এসে বসে হাসতে হাসতে বললো তুমি সত্যি এই স্প্রে চিনো না?হাহাহা!!
.
চুপ করুন,ফাইজলামির জায়গা পায় না হুহ!
আহানা মুখ মুছতে মুছতে চলে গেলো বাসা থেকে
♣
চা খেয়ে ভালো লাগতেসে,মনে হচ্ছে মাথা ধরা কমেছে,আজ ভার্সিটিতে যাব নাকি যাব না?গেলে রক্ষা থাকবে না,গতবছর এই দিনে ১১টা প্রোপোজ পেয়েছিলাম এবার কয়টা পাবো কে জানে,আমি বুঝি না আমার বার্থডে তে সবাই প্রোপোজ কেন করে!
ভাবতে ভাবতে শান্ত জ্যাকেট চুজ করতে গিয়ে আলমারি খুললো,ওমা সব দেখি গোছানো,আহানার কাজ এটা,যাক ভালো হয়েছে
একটা খয়েরী রঙের জ্যাকেট নিয়ে সেটা পরে রেডি হয়ে নাস্তা করে নিলো সে
আহানা বাসায় এসে ভাত খেয়ে রেডি হয়ে বের হতেই দেখলো শান্ত বাইক নিয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে
.
আহানা রেগে নিচে নেমে বললো আপনাকে কি ভূতে কিলায়?এক্সিডেন্ট হয়েছে ২দিনও হয়নি আর উনি আজ আবার বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলেন!
.
আই এম ফাইন,এখন উঠো বাইকে,ভার্সিটিতে লেট হচ্ছে
.
আহানা উঠে বসতেই শান্ত গাল ফুলিয়ে পিছন ফিরে ওর দিকে তাকালো
আহানা ঢোক গিলে বললো কি হয়েছে?
.
কি হয়েছে মানে?তোমাকে বলসি না সেই শাড়ীটা আজ পরতে?
.
আরে আজ আমার জাস্ট ২টো ক্লাস,আমি বাসায় ফিরে সেটা পরবো তারপর অফিস যাবো
.
ওহ,ঠিক আছে তাহলে!
ভার্সিটিতে ঢুকতেই আহানাকে সবাই পিছনে ফেলে শান্তকে ঘিরে ফেলেছে
আহানা রোবটের মত এক কোণায় দাঁড়িয়ে সবার কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছে,ভিড়ের মধ্যে যারা আছে তাদের কারোর হাতে ফুল,কারোর হাতে ফুলের তোড়া,কারোর হাতে গিফট বক্স
আহানা ভাবতেসে শান্ত কি কোনো ম্যাচ জিতেসে নাকি সবাই এমন ঘিরে ধরেছে কেন!
কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো সে
অবশেষে সে জানতে পারলো আজ শান্তর জন্মদিন
আহানা অবাক হয়ে গেলো এটা শুনে,সে তো জানতো ও না এটার কথা,শান্ত একবারও বলেনি,বেয়াদব একটা!হুহ!
আমি গিফট দিতে পারবো না বলে আমাকে জানায় নি!?
চলবে♥