প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬৯
#Writer_Afnan_Lara
?
মহল্লার সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো শেষ করে শান্ত ফিরে আসলো বাসায়,আজ তার সবচাইতে খুশির দিন!!
আহানা চুপচাপ জামা চেঞ্জ করতেসে অফিস যাবে তাই
শান্ত মিষ্টি একটা আহানার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে পুরো মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বিছানায় বসে খেয়ে যাচ্ছে
আহানা শান্তর হাসিখুশি চেহারা দেখে কিছুই বলার সাহস খুঁজে পাচ্ছে না
আজ অফিসে যাওয়ার পথে একজন ফেরিওয়ালার হাতে একটা পুতুল দেখে কিনে নিলো সে,তার মেয়ে হলে তাকে দিবে খেলার জন্য
পুতুলটা কম দামি হলেও দেখতে বেশ লাগলো তার কাছে
আহানা সারাদিন ধরে শুধু শান্তর মুখের দিকে চেয়ে ছিল
শান্তর মন ভাঙ্গতে হবে এই ভেবে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে
শান্তকে সত্যিটা জানানোর জন্য সে সব চেষ্টা করছে
.
আজ অফিস ছুটি হওয়ার পর শান্ত আহানাকে নিয়ে সোজা তার বাসায় ফিরেছে,সেখানে আহানাকে সারপ্রাইজ দিবে সে
আহানার চোখে ফিতা বেঁধে দিসে বাসায় ঢুকার আগমূহুর্তে
তারপর আহানার হাত ধরে রুমে ঢুকে ওর চোখের ফিতাটা খুলে দিলো
পুরো রুমটায় বেশ সুন্দর করেই ডেকোরেশন করানো,পর্দার উপর বড় বড় করে লিখা “HAPPY BIRTHDAY AHANA”
আহানার মুখে হাসি আসার মত কোনো অবস্থা নেই তাও সে বাধ্য হয়েই হাসলো,সামনে এগোনোর জন্য এক পা কদম ফেলতেই উপর থেকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ি এসে পড়তে লাগলো,আহানা এবার মন থেকেই হাসলো,শান্ত ভার্সিটির পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটার থেকে অর্ধেক ফুল নিয়ে এসেছিল
পিছন থেকে রুপা,নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্য আসতেসে
পুরো বার্থডে পার্টিতে শান্ত খেয়াল করেছে আহানার মুখে এক ফোটাও হাসি নেই
রাত ১০টা বাজে,সবাই মিলে ডিনার করায় ব্যস্ত
আর আহানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্ধকার আকাশ দেখে যাচ্ছে,আকাশে তারা ছাড়া কিছুই নেই,চাঁদ ও না,তাও আহানা এত মনোযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছে
আসলে তার মন আকাশের দিকে নয়,এমনিতেই মুখটা আকাশের দিকে ফিরিয়ে রেখেছে,মনে মনে তো ভাবতেসে কিভাবে সে তার বাচ্চাকে বাঁচাবে,কিভাবে শান্তকে সত্যিটা জানাবে
শান্ত সত্যিটা শুনলে নির্ঘাত এবোরশান করানোর জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে যাবে
পেটের মধ্যে শান্তর হাতের স্পর্শ পেতেই আহানা চমকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো
.
শান্ত আহানার ঘাড়ে মুখ রেখে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো “তোমার কি মন খারাপ আহানা?
আমি জানি কেন মন খারাপ”
.
আহানা চমকে পিছন ফিরে শান্তর দিকে চেয়ে বললো “আপনি জানেন?”
.
তোমার মা বাবা নেই তোমার জন্মদিনে তাই
.
আহানা মাথা নিচু করে রুমের দিকে চলে গেলো
শান্ত রান্নাঘর থেকে খাবার এক প্লেট নিয়ে এসে আহানার পাশে বসলো,আহানা শুরুতেই হাত দিয়ে মানা করে বললো সে খাবে না
.
কি হইসে তোমার??সারাদিনে কিছুই খাওনি তুমি,তুমি কি ভুলে গেসো যে তোমার পেটে এখন একটা জীবন আছে?
.
আহানা চোখ তুলে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো “জীবন??আমাদের মতো?”
.
হুম,আমাদের মতই তো,আমরা সবাই তো এমন ছিলাম
.
আহানা আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না,জড়িয়ে ধরলো শান্তকে
.
শান্ত হাত থেকে প্লেট বিছানায় রেখে আহানাকে ধরে বললো “কি হয়েছে তোমার?আমাকে বলো”
.
শান্ত আমি এবোরশান করাতে পারবো না,আমাকে ক্ষমা করেন
.
এবোরশান মানে??কি বলতেসো এসব?
.
আহানা কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছে না,শুধু বলেছে তার ডাঃ রোস্তমের সাথে কথা হয়েছে
আর কিছু মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না তার
শেষে শান্ত ফোন নিয়ে ডাঃ কে কল করে পুরো বিষয়টা শুনলো উনার থেকে
সবকিছু শুনার পর হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো তার
আহানা বিছানার নিচে এক কোণায় বসে আছে, তার চোখ শান্তর দিকে
.
শান্ত হাত দিয়ে চুল টেনে নিজেকে সামলালো,তারপর বড় একটা নিশ্বাস ফেলে নিচে ফ্লোরে বসে আহানার হাত দুটো ধরলো
.
শান্ত প্লিস!আমি এবোরশান করাবো না
.
দেখো আহানা,আমার কথা শুনো,আমরা চাইলে পরে আরও আরও বেবি নিতে পারবো
তাহলে এখন এই বেবির জন্য তুমি কেন লাইফ রিস্ক নিবা?
তোমার আর বেবির দুজনেরই লাইফ রিস্ক আছে এটাতে,আর সবচেয়ে বেশি হলো তোমার লাইফ রিস্ক
দেখো আহানা,ট্রাস্ট মি,এখনও বেবি হয়নি তোমার পেটে,জাস্ট একটা অংশ তৈরি হয়েছে,এটা নষ্ট করলে বেবি ব্যাথা পাবে না,সত্যি!
.
শান্ত প্লিস!আমাকে এসব বুঝাবেন না,আমি বাচ্চা না
.
আহানা শুনো!যদি এমন হয় ৯মাস পর আমরা বেবিকে না বাঁচাতে পারি?তখন তুমি শোক কি করে সামলাবে?
.
আপনি নেগেটিভ কেন ভাবতেসেন,বাঁচতেও তো পারে,সব আল্লাহর হাতে,আল্লাহ চাইলে কি না হয়?
.
জানি আমি,কিন্তু বিপদ সামনে জেনে শুনে আমরা কেন এমন করবো বলো??আমি তোমাকে হারাতে দিতে পারি না,এটা জেনে শুনে তো কখনই না,তুমি কাল সকালে আমার সাথে যাবা, এবোরশান করিয়ে আনবো,এতবড় রিস্ক আমি কিছুতেই নিব না
আই প্রমিস!তোমার কোর্স শেষ হলেই আমরা বেবি নিব
.
না,আমার মা বাবা আমাকে ফেলে গেসিলো,আমি জানি এটার কি কষ্ট!!সেই আমি কিনা আমার সন্তানকে মেরে ফেলবো??
.
জাস্ট শাট আপ আহানা!!!আমি যা বলেছি তাই হবে,তুমি এই বাচ্চা নিতে পারবে না,কাল আমি অসম্পূর্ন কাজ সম্পূর্ণ করবো,এখন খেয়ে ঘুমাবা তুমি
কথাটা বলে শান্ত বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো
.
আহানা শান্তর ধমকে চুপ করে চেয়ে রইলো তারপর চোখ মুছে বললো”সে কি আপনার সন্তান নয়??শুধু আমারই ভেতরটা পুড়তেসে,আপনার পুড়তেসে না??”
.
শান্ত আকাশের দিকে চেয়ে বললো”হ্যাঁ আমার সন্তান,আমি অস্বীকার করতেসি না একদমই!!বাট বাচ্চার চেয়ে আমার কাছে এখন বাচ্চার মা সব চাইতে বেশি জরুরি!
আগে বাচ্চার মা,মা বেঁচে থাকলে বাচ্চা এমনিতেই আসবে”
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে শক্ত চোখে তাকিয়ে বললো”বাচ্চা না থাকলে বাচ্চার মা ও থাকবে না”
ব্যস কথাটা বলে আহানা রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো
.
আহানা দাঁড়াও বলতেসি,পাগলামি করবা না
.
কিরে শান্ত কি হয়েছে?আহানা বেরিয়ে গেলো কেন?
.
পরে বলতেসি,রিয়াজ!একজন ডাক্তার নিয়ে আহানার বাসায় আয়,বলবি ঘুমের ইনজেকশান নিয়ে আসতে
.
আহানা নিজের বাসায় ঢুকে দরজা লাগাতে যেতেই শান্ত ধরে ফেললো
আহানা বেশি বেশি করতেসো তুমি
.
আপনি চলে যান এখান থেকে
.
যাবো না
.
আহানা বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো
খাটের এক কোণায় বসে আছে সে আর শান্ত পাশেই দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
শান্ত ওর পাশে এসে বসতেই ও সরে বসলো
.
ঠিক আছে,এবোরশন করাতে হবে না,শান্তি?তুমি মরে যেও, তুমি মরার ২মিনিট আগে আমি বিষ খাবো,তাহলে তো তুমি হ্যাপি?
.
আহানা চোখ মুছতেসে বারবার
.
নওশাদ আর রিয়াজ মিলে ডাক্তার নিয়ে আসলো,আহানা ডাক্তার দেখেই পিছিয়ে গেলো, চিৎকার করে বললো”শান্ত প্লিস এমন করবেন না”
.
শান্ত আহানাকে আগলে ধরে বললো”কিছুই করবো না,উনি তোমাকে রেস্টে রাখার জন্য একটা ইনজেকশান দিবে জাস্ট
.
না লাগবে না
.
শান্ত ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো,তারপর আহানার হাত চেপে ধরলো
.
শান্ত প্লিস!!আমি মরে যাবো,আমার বেবিকে চাই শান্ত,এমন করবেন না
♣
ডাক্তার ইনজেকশানটা দিয়ে চলে গেলেন,রুপা আহানার মাথায় হাত বুলাচ্ছে,আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে ততক্ষণে
শান্ত জানালার গ্রিল ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে
.
আহানা ডিপ্রেশনে ভুগতেসে,ওকে ঘুমের ইনজেকশান দিতেই হতো নাহলে উল্টা পাল্টা কাজ করে বসতো আজ
.
তুই এখন কি করবি??আমার তো মতামত হলো এবোরশান করানো উচিত,নাহলে আহানার লাইফ নিয়ে টানাটানি লাগবে
.
ভাইয়া আমি বলতেসি কি আহানার কথাই ঠিক,সম্পূর্ন আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলে হয় না??
.
ভবিষ্যতে কি হবে আমি জানি না তবে ডাঃ রোস্তম যা বললেন তা সত্য,,১০০শতাংশে ০.৯৯ ও চান্স নাই যে বাচ্চা আর মা দুজনেই বেঁচে যাবে
একজন না একজন মারা যাবেই,আর কথা হলো বাচ্চাকে না বাঁচিয়ে আহানাকে সেদিন বাঁচাতে গেলেও অনেক বড় রিস্কি হবে ব্যাপারটা,এত কিছুর পরও তাকে বাঁচানো নাও যেতে পারে,তাহলে সব জেনেও আমি কেন এত বড় রিস্ক নিবো?
.
দেখ শান্ত miracle ও তো হতে পারে?
.
নাহ,এরকম অনেক অপারেশন ডাক্তার করেছেন,এরকম ঘটনায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে,আমি শুধু শুধু ব্যাপারটা সিরিয়াস নি নাই,যেটা সত্যি সেটাই
.
কি আর করার,তুই আহানাকে বুঝা,কারন ওর অনুমতি ছাড়া এবোরশন করাবে না ডাক্তার
♣
পরেরদিন ভোরবেলায় লাফ দিয়ে উঠে বসে গেলো আহানা
পেটে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,চিন্তায় রুম থেকে বের হতেই দেখলো শান্ত মাথার উপর হাত রেখে সোফায় ঘুমাচ্ছে
.
আপনি এবোরশন করিয়ে ফেলসেন??
.
শান্ত ঘুম থেকে জেগে চোখ ডলতে ডলতে বললো “না”
.
আহানা পেটে হাত দিয়ে আবার রুমে চলে গেলো
শান্ত রান্নাঘরে এসে নাস্তা বানাচ্ছে
আহানা পেটে হাত দিয়ে চুপ করে বসে ভাবতেসে সে কি করবে এখন
.
১ঘন্টা পর শান্ত রুটি ভাজির প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকলো
.
শান্তকে দেখে আহানা দূরে সরে বসলো
.
আহানা তুমি কাল সারাদিনে তেমন কিছুই খাওনি,এখন চুপচাপ খেয়ে নাও
.
না আমি খাবো না,কিছু খাবো না
আমি মোহনগঞ্জের আশ্রমে চলে যাবো
.
আহানা আজগুবি কথাবার্তা বাদ দাও,তুমি কাল থেকে এমন কেন করতেসো?একটা কথা বুঝার চেষ্টা করছো না কেন?
.
আমি এবোরশান করাবো না
.
শান্ত পকেট থেকে একটা ছোট্ট বোতল বের করে আহানার হাতে দিলো
.
ফাইন,এবোরশান করিও না,এখন এগুলো এই গ্লাসে ঢেলে আমাকে খাইয়ে দাও
আমি আমার আগে তোমার মৃত্যু সয্য করতে পারবো না,তার আগেই আমাকে মেরে দাও
.
দেখুন,বাচ্চার কিছু হবে না,সবসময় একই জিনিস হবে এমন তো না,আমি রোজা রাখবো,নফল নামাজ পড়বো,তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বো
আল্লাহ আমার আর আমার বাচ্চার ক্ষতি হতে দিবে না
.
শান্ত রেগে গিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো
.
আহানা নাস্তা আর খেলো না,একেবারে অফিস টাইমে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলো সে
শান্ত বাইক নিয়ে আসেনি,রাগ করেছে নিশ্চয়
তাই আহানা একটা রিকসা নিয়ে অফিসে গেলো,এসে দেখলো শান্ত অফিসে আগেই এসে গেছে
আহানা এসে ওর পাশে বসতেই শান্ত ফাইল এডিট করতে করতে বললো “নাস্তা খেয়েছিলা?”
.
না
.
শান্ত রেগে ওর দিকে তাকালো তারপর উঠে ক্যানটিনে চলে গেলো খাবার আনতে
খাবারের প্যাকেট হাতে নিতেই দেখলো রাফি দৌড়ে দৌড়ে আসতেসে,এসে বললো আহানা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে
শান্ত দৌড়ে কেবিনে চলে আসলো,লিজা ওর কোলে আহানার মাথা রেখেছে,শান্ত ওকে কাছে নিয়ে আনলো,রাফি বললো হসপিটালে নিয়ে যেতে
দেরি না করে শান্ত ওকে নিয়ে হসপিটালে চলো আসলো
ডাক্তার রোস্তম চেক আপ করেতেসেন
.
খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করে না নাকি?
.
আমি কি করবো একটু বলেন,সে চায় না এবোরশন করতে জেদ ধরে বসে আছে,আমি তার কথার বিরুদ্ধে বলায় এখন খাওয়া দাওয়াই অফ করে দিসে সে
.
এজ এ ডক্টর আমি আপনাকে একটাই পরামর্শ দিব আর সেটা হলো “এবোরশান”
একজন মা হিসেবে আহানার এমন রিয়েকশান স্বাভাবিক তবে একে উপেক্ষা করে এবোরশান করানো উচিত,কারন লাইফ রিস্ককে এভাবে সহজভাবে নেওয়াটা বোকামি
.
আমি বুঝেছি বাট সে বুঝতেসে না,এভাবে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলে আমি কি করতে পারি?ও ওর কথায় অটল
.
এবোরশনে মায়ের অনুমতি সব চাইতে বেশি ইম্পরট্যান্ট! যেহেতু আহানা রাজি হচ্ছে না সেহেতু আমি আর কি বলতে পারি বলুন
আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই হবে
বাট আমি আপনাদের আবারও মানা করতেসি এই ভুল করবেন না,কথটাা সিরিয়াস নেন,এরকম কেস আমি আরও দেখেছি,জাস্ট ১/২বছর ওয়েট করতে পারবেন না আপনারা??
.
শান্ত আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে ওর বেডের সামনে চেয়ার টেনে বসলো
নওশাদকে ফোন দিয়ে বললো কোন দেশে চিকিৎসা করলে এই সিচুয়েশনেও বাচ্চা মা দুজনকেই বাঁচানো যাবে এরকম দেশের খোঁজ নিতে
একদিকে আহানা আরেকদিকে তার সন্তান
মনে হচ্ছে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতেসে সে,এক নৌকা ছেড়ে দিতেই হবে,যেটা ছাড়বে সেটা তার শরীরের একটা অংশ,আরেকটা তার প্রান
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬৯
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬৮
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬৮
#Writer_Afnan_Lara
?
কাল আহানার জন্মদিন,সে আজ পর্যন্ত তার জন্মদিন কখনও পালন করেনি,নিজেরই মনে থাকে না তার,তবে মাঝে মাঝে নিজের ডাইরিটা খুললেই মনে পড়ে যায়,কারণ প্রথম পৃষ্ঠায় সুন্দর করে লিখা আছে তার জন্মদিন আর জন্মসাল
আজ সকালে ভার্সিটিতে আসার সময় যখন বইখাতা গুছাচ্ছিলো সে তখন তার হাত থেকে সব পড়ে গিয়েছিল,সে যখন সব গুছিয়ে রাখতেসিলো তখন চোখে পড়লো খোলা ডাইরিটা,যেখানে স্পষ্ট তার জন্মদিন কবে তা লিখা ছিল
শান্তকে বললে সে নিশ্চয় আহানার জন্মদিনটা অনেক বড় করে সেলিব্রেট করবে??
হুম করবে,কিন্তু আমি চাই না সেটা,আমি জন্ম হয়ে কোনো হাইফাই কাজ করিনি যে ঢাক ঢোল পিটিয়ে জানাতে হবে সবাইকে আমার জন্মদিন! আমার জন্মদিন!
.
আহানা!!কি ভাবো এতো?অফিস এসে গেসে
.
হুম
.
আজ অফিসে হয়ে গেসে এক তুমুলকান্ড,আর সেটা হলো নিহাল বিয়ে করেছে তাও কাকে?ববিকে?
শান্ত হাসতে হাসতে একবার এক কোণায় যাচ্ছে
আহানা শান্তর হাসি দেখে সেও হাসতেসে,তবে তারা দুজনে কেন হাসতেসে কে জানে??
অফিস শেষ করে সন্ধাবেলায় শান্ত আহানাকে নিয়ে সেই লেকটায় আসলো,ফুচকা আর ঝালমুড়ি খাওয়ালো ওকে
ওমা এবার তার আরেক বাহানা,সে আইস্ক্রিম খাবে
শান্ত একজন আদর্শ স্বামীর মতন তার স্ত্রীর সব ইচ্ছা পূরন করে যাচ্ছে
এত এত খাওয়া দাওয়ার পর আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে শান্তর পিঠে মাথা রেখেই
ও ঘুমিয়ে গেসে বুঝতে পেরে শান্ত ওকে আগলে রেখে ছিল এক হাতে আর আরেক হাতে বাইক চালিয়েছে
আহানা গভীর ঘুমে,মেয়েটার কি হলো কে জানে!!হাবিজাবি খাচ্ছে আর শুধু ঘুমাচ্ছে
এসব ভাবতে ভাবতে আহানাকে কোলে নিয়েই সে তার বাসায় ঢুকলো,আহানা জেগে গেসে ততক্ষণে,ঘুম ঘুম চোখে বলতেসে”শান্ত আমি আচার খাবো”
.
এটা শুনে শান্ত এমন ধমক দিয়েছে যে এখন সে শান্তর বুকে মুখ লুকিয়ে চোখের পানি মুছতেসে
শান্ত ওকে বিছানায় নামিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো
আহানা গাল ফুলিয়ে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে,শান্তর বাসায় অনেকদিন পরে আসলো সে
শান্ত আপেল,কমলা আর আঙ্গুর নিয়ে আহানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চললো
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আপেল খাচ্ছে,তারপর অর্ধেক খাওয়া আপেলটা বিছানায় রেখেই রান্নাঘরের দিকে গেলো,সারা রান্নাঘর খুঁজেও আচার পেলো না,শেষে মন খারাপ করে আবার রুমে ফিরে আসলো,বিছানায় বসতেই ওর মনে হলো বমি আসতেসে
পাগলের মত ছুটে বাথরুমে ঢুকে বমি করে দিলো ভেসিনে
শান্ত গায়ে সাবান লাগিয়ে স্টেচুর মত দাঁড়িয়ে আছে,দরজা লাগায় নি কারন আহানা কখনও না বলে বাথরুমে আসে না আর আজ কিনা সে রেকর্ড ভাঙ্গলো
আহানা মুখ ধুয়ে পিছনে চেয়ে দেখলো শান্ত রোবট হয়ে মুখটা গম্ভীর করে চেয়ে আছে
.
কি?
.
কি?
.
হলো তো!!আরও খাও উল্টা পাল্টা খাবার,এসব খেয়ে এখন বমি করতেসো,আর খেতে চাইলে চড় মেরে দিব,যাও বিছানায় গিয়ে বসো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চলে গেলো
শান্ত গোসল করে বেরিয়ে দেখলো আহানা নেই,চিন্তায় রুম থেকে বের হতেই দেখলো আহানা ডাইনিংয়ে বসে ভাত খাচ্ছে রাক্ষসের মত
শান্ত ওর পাশে চেয়ার টেনে বসে ওর গাল টিপে ধরে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখলো
না সব তো ঠিক আছে তাহলে এমন অদ্ভুত আচরন করতেসে কেন??
খাওয়া শেষ এবার সে দুম করে উঠে শান্তর কোলে বসে পড়লো
শান্ত রীতিমত অবাক
.
আচ্ছা তোমার হলো কি বলোতো??
.
কিছুই না,বরকে আদর করা যায় না নাকি??
আহানা শান্তর খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত ঘষতেসে যেন পাতিল মাজতেসে
শান্ত কোনো রকম ভাত খেয়ে আহানাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো,বাসায় আপাতত সূর্য আর রিয়াজ আছে,ওরা টিভি দেখতেসে ওদের রুমে,আর নওশাদ রুপাদের বাসায় গেসো
আহানাকে এনে জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিলো সে
আহানাও ভালো মেয়ের মতন ঘুমিয়ে গেলো,চাইসিলো একটু রোমান্স করবে কিন্তু তার অনেক ক্লান্তি লাগতেসিলো বলে আর জেগে থাকলো না,ঘুমিয়েই গেলো
শান্ত সিগারেট খেতে খেতে ল্যাপটপে মুভি দেখতেসে,হরর মুভি
সেটা দেখা শেষে আহানাকে জড়িয়ে ধরে সেও ঘুমিয়ে পড়লো
♣
রাত ১২টা বাজে বরাবর
শান্ত আহানাকে হ্যাচকা টান দিয়ে উঠিয়ে ফেললো
আহানা চোখ ডলতে ডলতে বললো”একটু ঘুমাতেও দিবেন না”?
.
শুভ জন্মদিন আমার পাতানো+রিয়েল বউ?
.
আহানা চমকে চেয়ে আছে শান্তর মুখের দিকে
“উনি জানলেন কি করে”
শান্ত উঠে গিয়ে একটা কেক নিয়ে আসলো,ছোট একটা কেক
কেক বিছানায় রেখে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো”তুমি বলা ছাড়া আর কোনো ওয়ে নাই নাকি যে আমি জানবো না এ ব্যাপারে??
.
কি করে জানলেন
.
তোমার ডাইরি পড়সি
.
আপনি সেটা পেলেন কই?
.
তুমি যত কিছু আমার থেকে লুকিয়ে রাখসো তার সব আমার দেখা হয়ে গেছে
.
?তার মানে
.
হ্যাঁ,ছোটখাটো জামাকাপড় ও??
.
আপনি একটা অসভ্য লোক!!
.
আচ্ছা ওসব বাদ দাও এখন,কেক কাটো
.
আহানা কেক কেটে শান্তকে খাইয়ে দিয়ে বাকি পুরো কেকটা গাপুসগুপুস করে সাবাড় করে দিলো
তারপর চোখ বড় করে বললো”” রিয়াজ,সূর্য ভাইয়ার জন্য তো রাখলাম না””
.
কাল কেক আরও একটা আনবো বড় দেখে,তখন খাবে ওরা
এখন হাত বাড়াও তো দেখি
.
কেন?
.
বাড়াও না
.
আহানা হাত বাড়িয়ে ধরলো
শান্ত তার প্যান্টের পকেট থেকে এক জোড়া চুড়ি বের করে আহানার হাতে পরিয়ে দিলো
.
বাহহ,এটা কি সোনার??
.
জি
.
আপনি এমন কেন বলেন তো,এমনিতেও মাসে কত খরচ যায় আমাদের এর ভিতরে এত দামী গিফটের কি দরকার ছিল??
.
এইটা বাবার টাকায় কিনেছি,বাবা কাল টাকা পাঠিয়েছিলো,আমি আমার বেতনের টাকা জমিয়ে সেই টাকা শোধ করে দিব আস্তে ধীরে
.
তাও এত দাম দিয়ে এটা কিনা ঠিক হয়নি
.
চুপ!তোমার হাতে চুড়ি ছিল না বলেই আনছি আমি
.
এমিটিশনের ও আনা যেতো না?
.
তুমি অফিস যাও যে আমি কিছু বলছি?তোমার ইচ্ছা অনিচ্ছায় আমি নাক গলাই না
তুমিও আমার ব্যাপারে নাক গলাবা না ব্যস!
.
আপনার সাথে কথা পাগলে বলে
.
হ্যাঁ আর তুমি মহাপাগল কারণ তুমি তো আমাকে সোজা বিয়েই করে নিসো
.
হুহ!
.
যাও ঘুমাও,সকাল সকাল উঠে কত কাজ আছে সেটা করতে হবে
.
আহানা সাথে সাথে চাদর মুড়িয়ে দুম করে শুয়ে পড়লো
.
শান্ত সকাল সকাল চোখ খুলে দেখলো আহানা এখনও ঘুমাচ্ছে,কাল রাতে এত তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেলো সে
তার উপর সকাল ৯টা বেজে গেসে সে কিনা এখনও ঘুমাচ্ছে
না ওকে ডাক্তার দেখাতেই হবে,কিছু তো হয়েছে ওর
.
শান্ত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আহানা বালিশ কোলে নিয়ে আরামসে ঘুমায়
.
আহানা উঠো,ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করো,বুয়া নাস্তা বানায় দিসে,উঠো!
.
উহু
.
ভার্সিটিতে যাবা না??অফিস যাবা না?,উঠো!
.
হুম,উঠতেসি
আহানা আর শান্ত নাস্তা করে সোজা ভার্সিটিতে আসলো
আহানার হাবভাব দেখে রুপা বললো ডাক্তার দেখাতে
আহানার ও মনে হচ্ছে সে মা হতে চলেছে,শান্তকে সারপ্রাইজ দিবে বলে চুপিচুপি ক্লাস মিস দিয়ে হসপিটালে গেলো সে,প্রেগনেন্সি কিট দিয়েও পরীক্ষা করা যেতো কিন্তু আহানার মনে হলো তার রক্তশূন্যতার কারণে হয়ত সে বমি করছে মাথা ঘুরাচ্ছে,তাই একেবারে হসপিটালে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে শিউর হয়ে বাসায় ফিরবে সে
শান্তর আজ পরীক্ষা চলে,সে পরীক্ষা দিচ্ছে আর আহানা তার রিপোর্টের জন্য বসে আছে,ডাক্তার দেখে বললেন আহানা প্রেগন্যান্ট আর রিপোর্টেও সেটাই আসছে
আহানা খুশিতে এক লাফ দিলো তারপর হেসে বাড়ি ফিরতে যেতেই পিছন থেজে কেউ একজন ওকে ডাক দিলো
আহানা থেমে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো ডাঃ রোস্তম
আহানা উনাকে সালাম করে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছে আর আমেরিকা থেকে কবে এসেছেন
উনি আহানার দিকে চেয়ে মুখটা ফ্যাকাসে করে বললেন তার কেবিনে আসতে
আহানার মনে পড়লো ডাক্তার এক মাস আগে তাকে আর শান্তকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন
তাই সে গেলো উনার সাথে
.
তো আপনার শরীর কেমন এখন?
.
এখন বেশ ভালো আছি
.
তাহলে ভালো,আসলে সেদিন আমি একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম নেটের সমস্যার কারণে বলা হয়ে ওঠেনি,তো কথা হলো আপনার প্রেগনেন্সি নিয়ে
.
মানে?
.
আপনার রিপোর্ট দেখে বুঝলাম আপনার শরীরে নিজ থেকে রক্ত উৎপন্ন হয় না,যার কারণে আপনাকে ঔষুধের একটা কোর্স করতে হবে,কারণ প্রতি বছরের একবার একজনের রক্ত দেওয়া মোটেই ভালো কথা নয়
আপনার শরীর কোর্সটার সাথে মানিয়ে নিতে পারলে সময় লাগবে ১/২বছর,আর না মানলে ৩/৪বছরের উর্ধে সময় লাগবে
.
তাহলে?
.
এসময়ে আপনি যদি বাই চান্স মা হয়ে যান তাহলে আপনার এবং আপনার সন্তানের লাইফ রিস্ক আছে,আমি জাস্ট বলতে চাচ্ছি কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি বাচ্চা নিবেন না
.
মানে কি!!
আহানা কপালের ঘাম মুছে টেবিলে থাকা পানি এক গ্লাস খেয়ে শান্ত হয়ে বললো”লাইফ রিস্ক কেন হতে যাবে?”
.
কারণ বাচ্চা প্রসবের সময় আপনার প্রচুর রক্ত ক্ষয় হবে,নরমাল করলেও,সিজার করলেও
আর সেখানে অনেক নরমাল পেশেন্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্ত ৩/৪ব্যাগ লাগে
আর আপনার তো তখন কি অবস্থা হতে পারে তা বলার বাইরে!!
রক্ত জোগাড় করলেও এক ব্যাগ দিতে সময় লাগবে ৮/৯ঘন্টা আর আপনাকে তখন অনেক রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হবে তাও জলদি
তাই আমি বলতেসি আপনারা রিস্ক নিবেন না
.
আহানা ঢোক গিলে আবারও কপালের ঘাম মুছলো,তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো “বাচ্চাকে বাঁচানো যাবে তো??”
.
আপনি এটা কি বলতেসেন??আপনি রিস্ক না নিলেই তো হয়
.
আসলে আমি তো এতসব জানতাম না,আমি অলরেডি কনসিভ করসি,আজকে পরীক্ষা করলাম
.
হোয়াট!!!!
আমার উচিত ছিল যে করেই হোক আপনাদের বিষয়টা জানানোর
.
এখন কি করবো আমি??
.
আই থিংক আপনার এবোরশান করানো উচিত
.
আহানা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো,ডাক্তারের সাথে কোনো কথা না বলেই সে বাসায় ফিরে আসলো
রুমের এক কোণায় ফ্লোরে বসে আছে সে
শান্ত পরীক্ষা শেষ করে তার বাসায় এসে ডেকোরেশনের সব ঠিকঠাক করলো,আহানার জন্মদিন এখানে পালন করবে সে,আহানা তো মনে হয় তার বাসায়
“যাই একবার দেখে আসি ওকে”
শান্ত আহানার বাসায় এসে দরজায় নক করলো
দরজার ওপার থেকে শান্তর গলা শুনতে পেয়ে আহানা ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো,চোখ মুখ মুছতেসে সে
শান্ত আর দেরি না করে পকেট থেকে চাবি নিয়ে বাসায় ঢুকলো
.
আহানা কোথায় তুমি?
.
সোফার সামনে টেবিলের উপর রিপোর্ট, দেখে নতুন রিপোর্ট মনে হচ্ছে,আহানার সব রিপোর্ট চেনে শান্ত,তাই এটা ঠিক চিনতে পারলো না সে
তাই হাতে নিয়ে খুলে দেখতে লাগলো
আহানা মুখটা ধুয়ে মুছে নরমাল হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো শান্তর হাতে রিপোর্টটা
শান্ত রিপোর্ট থেকে চোখ উঠে দৌড়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরলো,খুশিতে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না
আহানাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো সে
আহানা শান্তর চোখেমুখে এত খুশি দেখে কি বলবে বুঝতেসে না সে
শান্ত হাসতে হাসতে আহানাকে সোফায় বসিয়ে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসলো
দুহাত দিয়ে ওর মুখ ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে থেকে আহানার কপালে চুমু খেলো সে
.
আহানা তুমি জানো না তুমি আমাকে কি খুশি দিয়েছো
.
আহানা থ হয়ে বসে আছে,মুখ দিয়ে তার এক ওয়ার্ড ও বের হচ্ছে না
.
কি হলো আহানা?তুমি এমন চুপ করে আছো কেন?
.
শান্ত নিশ্চয় এবোরশনের জন্য রাজি হয়ে যাবে,কিন্তু আমি আমার বাচ্চাকে কি করে….
না আমার মা বাবা আমার সাথে যা করেছে আমি আমার সন্তানের সাথে কখনও এমন করবো না,কারন তার তো কোনো দোষ নেই
কিন্তু শান্তর তো এটা জানা উচিত!
শান্ত আহানা উত্তর না পেয়ে উঠে নওশাদ রুপাকে, বাবাকে খুশির খবর জানিয়ে দোকানে গেলো মিষ্টি কিনতে
আহানা বারান্দা দিয়ে শান্তর খুশি দেখতেসে
সে দাদাকে জড়িয়ে ধরে বলতেসে খুশির খবর আর মিষ্টি খাওয়াচ্ছে
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬৭
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬৭
#Writer_Afnan_Lara
?
আচ্ছা এবার শান্তি হইসে আপনার??
.
হইসে তো,কি জোস লাগতেসে তোমাকে,এবার একটা ছবি তুলবো
.
খবরদার!! না বলতেসি
.
শাহরিয়ার শান্ত কখনও আহানার কথা শুনে না
.
শেষমেষ শান্ত আহানাকে ধরে ছবিটা তুলেই নিলো
.
সবাই ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে,বাবা বললেন যাওয়ার আগে একবার বাসা থেকো ঘুরে আসতে
তাই সবাই মিলে রিসোর্ট থেকে সোজা শান্তদের বাসায় ফিরে গেলো
রেনু মা তখন থেকে তার রুমে কি যেন করছেন, দরজা খুলছেনই না
মিতু তার একটা শখের আংটি যেটা সে জন্মদিনে বাবার থেকে পেয়েছিল সেটা আহানাকে দিলো গিফট হিসেবে
সিলভার কালারের, মাঝখানে গুনে গুনে ৩টা পাথর,মাজেরটা সাইজে একটু বড়
এবার যাওয়ার সময় হলো,আহানা রেনু মায়ের রুমের দিকে চেয়ে চলে যেতে নিতেই রেনু মা দরজা খুলে বেরিয়ে এক ডাক দিলেন
আহানা খুশি হয়ে উনার দিকে তাকালো
উনি এগিয়ে আসলেন,তার হাতে একটা বাঁধায় করা শাড়ীর প্যাকেট
তিনি প্যাকেটটা আহানার হাতে দিয়ে বললেন”” এটা শান্তির শাড়ী,ও আমাকে একবার বলেছিলো ওর একটা শাড়ী আছে, মেরুন কালারের,যেটা সে শান্তর বউয়ের জন্য রেখেছে,শান্তর বউ যখন গর্ভবতী হবে,৬মাসের সময় তখন সে যেন এটা পরে,কারণ শান্ত ওর পেটে থাকতে এটা সে ৬মাসের সময় পরেছিল,বংশীয় রীতি যাকে বলে
এটা আমি রেখে দিয়েছি,এটা শুধু তোমার প্রাপ্য,নিয়ে যাও”
আহানা শাড়ীটা হাতে নিয়ে সালাম করলো রেনু মাকে
উনি ওর মাথায় হাত রেখে বললেন “সুখী হও”
.
শান্তর এই প্রথম মনে হলো রেনু মা তাকে আর আহানাকে একটু হলেও ভালোবাসে
আহানার হাত ধরে চলে যাচ্ছে সে,রেনু আবারও ওদের থামতে বললো
শান্তর সামনে দাঁড়িয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে ওর হাতটা ধরলেন তিনি
আঁচলের পিছনে লুকানো একটা ছোট্ট বক্স বের করে সেটা থেকে একটা ঘড়ি নিলো তারপর শান্তর হাতে পরাতে পরাতে বললেন””সায়নের জন্য কিনতে গেসিলাম ভাবলাম শান্তর জন্য ও কিনি,কেমন লাগলো?”
.
শান্তর চোখে পানি এসে গেসে,মা মারা যাওয়ার ১০টা বছরে এই প্রথম সে রেনু মায়ের নতুন রুপ দেখলো যার মধ্যে তার জন্য অনেকখানি সহানুভূতি রয়েছে
শান্ত খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো রেনুকে
রেনু চোখের পানি মুছে বললো “বউকে নিয়ে আবার আসিস,সাথে যেন নাতিপুতি ও থাকে””
.
শান্ত হেসে দিয়ে সালাম করে আহানাকে নিয়ে চলে গেলো
ট্রেনে বসে হাতের ঘড়িটার দিকে চেয়ে আছে সে
কালো রঙের ঘড়ি,বেশ দেখতে তবে তার পছন্দের কাতারে পড়ে না তাও প্রিয়জন কিছু দিলে সেটা হয় সবচেয়ে দামি জিনিস
তাও তো দিসে,এটাই বা কম কিসে!!
আহানা শান্তর হাত জড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে
ট্রেন ছুটে যাচ্ছে তার গন্তব্যের দিকে,সবুজ ক্ষেত,খোলা মাঠ,ঘরবাড়ি একবার একটা পেরিয়ে যাচ্ছে,আবার সমীকরণের মত ফিরেও আসতেসে,সিকুয়েন্স যাকে বলে আর কি,আগে ঘরবাড়ি পরে ক্ষেত পরে মাঠ,আবার ঘরবারি আবার ক্ষেত তারপর মাঠ
নওশাদ আর রুপা অন্য কেবিনে,একসাথে টিকেট পায়নি বলে তারা এবার শান্ত আহানার পাশে বসেনি
রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা ঢাকায় পৌঁছে গেলো,ওমা সেকি বৃষ্টি,খোলা জায়গায় দাঁড়ানো ও সম্ভব হচ্ছে না,শান্ত আর নওশাদ তাড়াহুড়ো করে ২টো রিকসা নিলো
বাসায় যেতে যেতে লেগে গেলো আরও ১ঘন্টা
তখন বাজে সাড়ে ১০টা
শান্ত আহানাকে নিয়ে বাসায় ফিরে ব্যাগ রেখে এক কাপড়েই ওকে নিয়ে হসপিটাল চলে আসলো
রক্ত বাকি ২ব্যাগ দিয়ে দিতেই হবে,এত দেরি করা মোটেও ঠিক না
হসপিটালে এসে হলো আরেক বিপদ,বিপদটা হলো এই যে ডাক্তার যিনি রিপোর্ট নিয়ে কথা বলার কথা উনি আমেরিকায় এখন,উনার একটা পার্সোনাল কাজে ইমিডিয়েটলি চলে গেসেন
আর তাই হয়ত উনার ফোন বন্ধ পেয়েছে শান্ত
এখন কি করবে,নার্স রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়েছে,রিপোর্টে কি আছে তা সঠিক করে বুঝাতে পারবে একমাত্র ডাক্তারই
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নার্স বললো অন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করতে
শান্ত সেটাই করলো,ডাঃ সালাউদ্দিনের সাথে দেখা করলো শান্ত আর আহানা
উনি রিপোর্ট দেখে বললেন”রক্ত দিয়ে দেওয়া দরকার,রিপোর্টে যা বুঝলাম তাতে তো মনে হয় উনার শরীরে রক্ত উৎপন্নই হয় না
এটা তো ভালো কথা নয়,রক্ত উৎপন্ন না হলে পেশেন্টকে এভাবে কত রক্ত দেওয়া যাবে??এখন আপাতত আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি আর উনাকে বেশি বেশি আনার,কবুতরের মাংস,এসব খাওয়ান,বাকিটা ডাঃ রোস্তম জানেন,আমি আপাতত কিছুই বলতে পারতেসি না
.
কিন্তু ডাঃ রোস্তম আমাকে বলতে চেয়েছিলেন আহানার কি যেন হয়েছে,নেটের জন্য শুনতে পাইনি আমি
.
রিপোর্টে যা আছে তা তো বললামই
.
আচ্ছা উনার আমেরিকার নাম্বার আছে আপনার কাছে?
.
নাহ,উনি উনার পার্সোনাল নাম্বার কাউকে দেন না,চিন্তা করবেন না,১/২সপ্তাহের ভিতরেই চলে আসবেন উনি
.
ওকে
.
এখন আপনি আপনার ওয়াইফকে বাকি রক্তের ব্যাগ নিয়ে রক্ত দিয়ে দেন,দেরি না করে
.
আচ্ছা
.
আহানা হসপিটালের বেডে বসে আছে,শান্ত কেক আর পাউরুটি এনে আহানাকে জোর করে খাইয়ে দিলো,ডাক্তার এসে ক্যানেলার লাগিয়ে চলে গেলেন
.
আহানা বালিশে মাথা রেখে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত সোফায় হেলান দিয়ে বসে আহানার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বললো”দেখলা?? বললাম না তোমার বড় কোনো অসুখই নেই,তুমি শুধু শুধু এত সব ভাবসো
.
আহানা ও হেসে দিলো,মনে হলো ঘাড়ের উপর থেকে বোঝা উঠে গেসে
.
আহানা তোমাকে আর অফিস যেতে হবে না,আমি চাকরি করবো
তোমার শরীর খারাপ নিয়ে চাকরি করতে হবে না
.
না আমি চাকরি করবো?আমার ও তো নিজের ইনকাম করার অধিকার আছে!
.
?করিও,তোমার স্বাধীনতায় তো আর কিছু করতে পারি না আমি,তোমার লাইফ তোমার ইচ্ছা,শরীর খারাপ করলে একদম বলতে আসবা না আমাকে
শান্ত রেগে রুম থেকে চলে গেলো
.
আহানা আর কিছু বললো না,ঘুম আসতেসে তাই ঘুমিয়ে গেলো,যখন চোখ খুললো তখন দেখলো সকাল হয়ে গেসে
শান্ত ওর পাশে চেয়ারে বসে মাথা বেডে রেখে ঘুমাচ্ছে
আহানা শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো,রক্তের ব্যাগ শেষের পথে,তাই এবার আহানা শান্তকে ডাক দিলো উঠার জন্য
সে উঠে ডাক্তারকে নিয়ে আসলো,উনি এসে রক্তের ব্যাগ খুলে দিলেন
♣
বাসায় ফিরে আহানা চুপ করে বসে আছে আর শান্ত রান্না করতেসে
নাস্তা খেয়ে একসাথে অফিস যাবে
শান্ত গাল ফুলিয়ে ডাল আর আলুর ভর্তা বানাচ্ছে,আহানা তার কথার অবাধ্য হয়ে অফিস যেতে চায় এটা সে মানতেই পারছে না
রান্নাঘর মনে হয় ভেঙ্গেই ফেলবে,ঠাসঠুস!
আহানা সোফায় বসে তার স্বামীর রাগ আর কাজ দেখে যাচ্ছে,শান্ত পারতেসে না রাগে আহানাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে
খাবার এনে ঠাস করে টেবিলে রেখে আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
নিজে খেতে খেতে বললো “নেন খান,আপনি তো সুস্থ সবল মহিলা,অফিস যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন তো খান নিজে নিজে
আপনাকে আর আমি খাওয়াই দিব না
এমন ভাব করে যেন উনার স্বামী ফকির,টাকা দেয় না উনাকে
উনি একমাত্র উপার্জন কর্তা পরিবারের””
.
আহানা চুপ করে থেকে কিছুই খেলো না
কিছু না খেয়েই উঠে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো
শান্ত ও খেলো না
আহানাকে কি বেশি বকে দিয়েছি?তো বকবো না তো কি করবো আমি??
কথা শুনে না আমার!নির্ঘাত অফিসে গেলে শরীর খারাপ করবে ওর
.
আহানা এক হাত দিয়ে চোখ মুছতেসে আরেক হাতে ক্যানেলার,পরশু আরেক ব্যাগ রক্ত দিবে তাই আর সেটা খোলা হয়নি
শান্ত বিছানায় এসে পিছন থেকে আহানাকে জড়িয়ে ধরলো
ফিসফিস করে বললো “রাগ করেছো?”
.
না কিসের রাগ!ভাবতেসি চাকরিটা ছেড়ে দিব
.
না,ছাড়তে হবে না,যেও অফিস
আমি তোমার পাশে থাকবো তোমার শরীর খারাপ করলেই তোমাকে সামলে নিব,এখন উঠে বসো,তোমার কারণে আমারও খাওয়া হয়নি
.
আহানা বোকার মত চেয়ে আছে শান্তর মুখের দিকে
চেয়ে আছে তো আছেই,যেন এ চোখে সে পৃথিবীর সকল সুখ দেখতে পাচ্ছে,মাথাটা উঁচু করে শান্তর ঠোঁটটা স্পর্শ করলো সে
তারপর উঠে বসলো গোল হয়ে
শান্ত আহানার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে প্লেট নিয়ে আসলো,নিজেও খেলো সাথে আহানাকেও খাইয়ে দিলো
.
অফিস টাইমে শান্ত বাইক নিয়ে আহানার বাসার সামনে এসে পড়েছে,আহানা এক হাত দিয়ে চুলটা আঁচড়িয়ে বের হয়ে শান্তর বাইকে উঠে বসলো,শান্তকে মনে পড়লেই বাইকের আয়নার তাকিয়ে দেখে সে,শান্তর চোখ সামনের রোডটার দিকে
একটা সময় সে গলিতে ঢুকতে ঢুকতে বললো””ওমন করে কি দেখো এত””
.
আহানা চমকে মুখ লুকিয়ে বললো”না এমনি কিছু না তো”
.
কিছু তো একটা আছে তা না হলে হুট করে বাইকের আয়নায় শান্তকে দেখার এত স্বাদ জাগলো কেন??
.
কেন দেখতে পারি না আমি?এখন কি বিনিময়ে কিছু দিতে হবে নাকি আপনাকে?
.
৩টা চুমু আর ৫বার কিস,ব্যস এইটুকুই
.
কিহহ,আপনি খুব খারাপ,নির্লজ্জ কোথাকার
.
তোমাকে বললাম না আমাকে কোথাকার বলবা না!
.
কোথাকার কোথাকার
.
বাসায় গিয়ে তোমাকে ধুয়ে শুকাতে দিব আমি
.
আমি আপনাকে ইস্ত্রি করবো
.
দেখা যাবে
.
দেখা যাবে
.
দুজনেই অফিসে এসে কাজে লেগে পড়লো,আহানার অসুস্থতা দেখে শান্ত আহানার কিছু কাজ করে দিলো সময় বাঁচিয়ে
♥
এভাবে তাদের দিন চলতেসে,শান্ত এক হাতে অফিস+ভার্সিটরর কাজ করছে আরেক হাতে আহানাকে সামলাচ্ছে,আহানা এখন মোটামুটি সুস্থ তবে দূর্বলতা একটু হলেও অনুভূত হয় তার
রক্ত বাকি ব্যাগ ও দেওয়া হয়ে গেসে
দেখতে দেখতে ১টা মাস কেটে গেলো,,আহানা বলতে গেলে এখন সম্পূর্ন সুস্থ
আজ সে কতদিন পর ভার্সিটিতে যাবে,শান্ত এতদিন ওকে অফিস যেতে দিলেও ভার্সিটিতে যেতে দেয়নি
তো আজ শান্ত রাজি হলো কারণ আজ আহানার পরীক্ষা আছে ভার্সিটিতে
শান্ত ওকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো ব্যাংকে,বাবা না বলে টাকা পাঠিয়েছেন সেটা তুলতে যাচ্ছে সে
আহানা নিরিবিলি পরীক্ষাটা দিলো,এখন সে রুপার সাথে ক্যামপাসে বসে শান্তর অপেক্ষা করছে,রুপা আর নওশাদ আড্ডা দিতেসে,আহানা উঠে গিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালো
কতটা দিন পর সে এই জায়গায় এসেছে,চোখ বন্ধ করে হাত বাড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া কুড়াচ্ছে সে
পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক,রোগের কথা সে ভুলেই গেছে
ভাবতেও পারেনি সে আবারও সুস্থ হয়ে যাবে,মনে তো হয়েছিল এই পৃথিবীতে আর টিকে থাকা সম্ভব না কিন্তু সেটা ভুল ছিল
আমি আবারও সেই আগের মত কাজ+ভার্সিটির ক্লাস সব সামলাতে পারবো সাথে সংসারটাও
আজ অফিস শেষে বাসার জন্য কিছু আসবাবপত্র কিনবো আমি আর শান্ত মিলে
আমি ৫০% টাকা দিব আর শান্ত ৫০%
কার্পেট আর ফুলের টব,আরও কত কি!
আমি আমার বাসায় থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি,শান্ত ও মানা করে না,বরং সে তার ফ্ল্যাট রেখে আমার সাথেই থাকে বেশিরভাগ
.
আহানা!
.
ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আহানা শান্তর দিকে তাকালো,শান্ত বাইক নিয়ে এসে গেসে,ফোনে কথা বলতে বলতে আহানাকে বললো আসতে
আহানা গিয়ে ওর পাশে বসলো,শান্ত ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বললো “পরীক্ষা কেমন হলো তোমার?”
.
ভালো
.
আচ্ছা
.
দুজনে এবার একটা রেস্টুরেন্টে আসলো,এখান থেকে খেয়ে নিয়ে অফিস যাবে
আহানা কয়েকদিন ঠিকমত খাবার দাবার খাচ্ছিলো তবে ইদানিং ২/৩ধরে শান্ত খেয়াল করতেসে আহানার খাবারের প্রতি প্রচুর অনীহা
সারাদিন আচার খাবে,দাদির আচারের ভর্তি ভর্তি বোয়াম ছিল ৩টা,একটা জলপাই, একটা আমের আর একটা চালতার,সবগুলোতে এখন খুঁজেও এক চামচ আচার পাওয়া মুশকিল হবে,কারণ সব আহানা একাই খেয়েছে,শেষে শান্ত বাজার থেকে আচার কিনে এনে দাদির আচারের বোয়াম আবার ভর্তি করেছে
এখনও রেস্টুরেন্টো এসে আচারি চিকেন খাবে বলতেসে,আজব সব ব্যাপার,এসব খেলে কি রক্ত হবে?
বুঝতেসো না কেন তুমি?
.
ক্ষতিও তো হবে না
.
এটাই লাস্ট,এরপর থেকে ২প্লেট ভাত খাবা দুপুরে,আমি কিছু শুনতে চাই না
.
আচ্ছা খাবো,এখন ফুচকা খাবো
.
মাত্রই তো ভাত খেলাম,এখন আবার ফুচকা?
.
তো কি হইসে,আমার না ফুচকা খেতে মন চাচ্ছে,ইসসস টক টক,খুব মজা
.
খাওয়াবো তবে এখন না,অফিস শেষ করে,এখন চলো অফিসে
.
আহানা গাল ফুলিয়ে গিয়ে বাইকে বসলো
.
কি??ফুচকা খাওয়াইনি বলে ওড়না বাইকে বিছিয়ে বসতে হবে??
.
হুহ,আমি কিপটাদের সাথে কথা বলি না
.
আমি কিপটা?তুমি যে দুদিনে ৩বোতল আাচার শেষ দিসো সেই আমিই কিনে আনি ডিব্বা ভর্তি করেছি,এর পরেও আমাকে কিপটা বলবা?
.
হ্যাঁ আপনি কিপটা
.
শান্ত আহানার ওড়না ঠিক করে ওর মাথায় পরিয়ে দিয়ে বাইকে উঠতে উঠতে বললো “যাও ফুচকার সাথে ঝালমুড়িও খাওয়াবো
.
সত্যি?
.
হ্যাঁ
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬৬
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬৬
#Writer_Afnan_Lara
?
এই মুখ আমি বহুবার দেখেছি,নতুন করে কি দেখবো শুনি?
.
দেখো এই মুখে কত কত ভালোবাসা!!
কথাটা বলে শান্ত আহানার দিকে কেমন করে যেন চেয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষন ধরে
আহানার বিনা লিপস্টিক আলা ঠোঁট জোড়া থম হয়ে আছে,থুতনির তিলটাও স্পষ্ট!!
হাত দিয়ে সেটা ধরে টেনে দিলো সে
রুমটায় এতক্ষন বাতি জ্বলছিল কারেন্ট ছিল বলে তবে এখন মোমবাতি জ্বলতেসে কারেন্ট চলে গেসে বলে
আহানা আর শান্ত দুজনে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে সামনের আয়নার দিকে চেয়ে আছে
আহানা শান্তর বাম হাতটা জড়িয়ে ওর কাঁধে মাথা রেখে চুপটি করে আছে,চারিদিক নিস্তব্ধ, কোথাও কোনো আওয়াজ নেই,মেঘের ডাক শুনা গেলো হালকা করে,হয়ত বৃষ্টি আসবে,আর বৃষ্টি আসার আগেই কারেন্ট আলা ভয় পেয়ে কারেন্ট নিয়ে পালিয়েছে
রুম সার্ভিসের লোক এসে খাবার দিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে
শান্ত তো লোভ সামলাতে পারছে না আর
টাটকা রুই মাছের ঝোল তাও তার হাতে ধরা মাছ,আহা আহা,তার সাথে সরষে তেল দিয়ে শশা টমেটোর সালাদ,লা জাওয়াব!!
আর সাদা ভাত,আর এক বাটি দেশি মুরগীর মাংস
দেরি না করে হাত ধুয়ে খাওয়ায় লেগে গেলো সে
আহানা বালিশে মাথা রেখে বারান্দার পর্দাটার দিকে চেয়ে আছে
পর্দাটা হালকা সরে যাওয়ায় বাইরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে,,অন্ধকার আর অন্ধকার,তবে বজ্রপাতের কারণে মাঝে মাঝে বটগাছটা স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়
কাঁধে কারও হাতের স্পর্শ পেশে লাফ দিয়ে উঠে বসলো আহানা,শান্তকে দেখে দম ফেললো সে
হুট করে অন্যমনস্ক হয়ে থাকলে কাছের মানুষ ও যদি এসে স্পর্শ করে তাও কলিজা কেঁপে উঠে
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”কি ভাবো এতো?তুমি তো খেতেও এলে না,দেখো আমি খেয়ে নিয়ে তোমার জন্য ও নিয়ে এসেছি,চলো তোমাকে খাইয়ে দিব,হা করো”
.
আহানা শান্তর কথামত খেতে রাজি হলো,নিয়ম অনুযায়ী হা ও করলো
খাচ্ছে তবে তেমন ভালো লাগতেসে আর ফিল হচ্ছে না,নিমিষেই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেলো তার
জ্ঞান হারিয়ে দুম করে বিছানা থেকে পড়ে যেতে নিতেই শান্ত এক হাত দিয়ে ওকে টেনে ধরে ফেললো,আরেক হাতে তার খাবারের প্লেট
আহানার নাম ধরে ডেকে প্লেটটা বিছানায় রেখে আহানাকে কোলে নিয়ে আসলো,আহানা চোখ খুলতেসে না দেখে ভীষণ ভয় লাগলো ওর
পানি নিয়ে ওর মুখে দুই তিনবার ছিঁটা দিয়ে দরজা খুলে নওশাদ রুপাকে ডাকতে যাবে তখনই আহানার আওয়াজ পেলো
আহানা হালকা কন্ঠে বলতেসে “আমি ঠিক আছি”
শান্ত আর সেদিকে গেলো না,, আহানার কাছে ফিরে এসে ওর হাত দুটো ধরে পাশে বসলো,চোখেমুখে ভয় আর চিন্তার ছাপ
এত এত সুখের মূহুর্তে এভাবে আহানার অসুস্থতার কথা সে একদমই ভুলে গেসিলো
আহানাকে শক্ত করে ধরে বসে আছে সে,ফোন নিয়ে ২০বার ডাক্তারকে কল করলো,তার ফোন অফ আর তার উপর নেট যায় আবার আসে
বিরক্ত হয়ে ফোন ছুঁড়ে মারলো সে
.
আপনি এত চিন্তিত হবেন না,আমি ঠিক আছি
.
না তুমি ঠিক নেই,আমি কালই ঢাকায় ফিরে যাবো তোমাকে নিয়ে
.
হুম,আমার ও এখানে একদম ভালো লাগতেসে না,চলে যাবো আমি
.
শান্ত ফোনটা ফ্লোর থেকে নিয়ে আবারও ট্রাই করতেসে ডাক্তারকে কল করার
পিছন থেকে আহানার উপস্থিতি টের পেলো সে
আহানা ওকে পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরেছে,ওর পিঠে মাথা ঠেকিয়ে চুপ করে আছে
.
ভয় করতেসে তোমার?আমি আছি না,আমি তোমার কিছু হতে দিব না আহানা
.
মৃত্যুর ভয় আমার হচ্ছে না,আমার ভয় হচ্ছে আপনাকে ছেড়ে কি করে থাকবো সেটা নিয়ে,ওপারে গেলে তো….
.
শান্ত আহানার মুখে হাত দিয়ে ওর কথা থামিয়ে দিলো
.
তোমার শুধু রক্তশূন্যতা রোগ,আর কিছু না,বড় কিছুই না,বুঝছো তুমি??
.
আহানা পা উঁচু করে শান্তর গলা জড়িয়ে ওকে ধরলো,কান্না থামানোর একমাত্র কৌশল এটা
.
শান্ত হাত থেকে ফোনটা ছেড়ে দিলো,তারপর আহানাকে কোলে তুলে বিছানার কাছে চলে আসলো
এ কেমন জীবন কাটাচ্ছে সে,যে জীবনের নাম নেওয়ার পরই মনে পড়ে এর বিষাদ ভবিষ্যতের কথা,একজন আপনজনকে হারানোটা আজ পর্যন্ত সে মেনে নিতে পারেনি আর সেখানে এখন যদি আহানাকেও
নাহ!!! এটা সে কিছুতেই মানতে পারবে না
মায়ের হারিয়ে যাওয়াটা তাকে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছে আর আহানার হারিয়ে যাওয়া তাকে একেবারেই মেরে ফেলবে
.
আহানাকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে সে ভাবলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনকে শক্ত করবে
কিন্তু না!! তার এই ভাবনায় ছেদ ঘটালো আহানা
এক হাত দিয়ে শান্তর জামাটা ধরে রাখলো সে,শান্তকে নিজের কাছে টেনে নিলো
শান্ত এখন এই অবস্থাতে চায় না আহানার কাছে যেতে,এমনিতেও ওর শরীর খারাপ কিন্তু আহানা সব ভুলে শান্তকে খুব কাছে নিয়ে আসলো
হয়ত আহানাও জানে সে বাঁচবে না,শেষবারের মত প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে নিতে তো কোনো বাধা নেই
.
আহানা শান্তর মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে বারবার শ্বাস টান দিচ্ছে,বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে তার,মনে হয় কিছু একটা আঘাত করছে তাকে ক্রমশ!!
.
আহানা তুমি আমাকে এখন এই মূহুর্তে কাছে টেনে কি বুঝাতে চাও??তুমি আর আমার কাছে থাকবা না?আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিব না
তুমি আমার পাশে থাকবে, যেতে দিব না আমি
.
আচ্ছা গেলাম না,তাহলেও কি কাছে আসবেন না?
.
আহানাকে ভালোবাসার পুরো মন মানসিকতা তার আছে কিন্তু আহানার শরীর ভালো না বলেই সে আহানাকে কাছে টেনে নিচ্ছে না,, আহানা সেটা বুঝার চেষ্টাও করতেসে না,ওর ধারনা হলো অন্য কিছু,অন্য পথ,অন্য চিন্তাধারা!
.
রাত ১২টা বাজে ১মিনিট
.
আহানা শান্তর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে,শান্ত এক হাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছে থেমে থেমে
আহানার শরীরের সব অসুস্থতা মনে হয় যেনো শান্তকে নিজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সে
আহানার গায়ে চাদরটা ভালো করে মুড়িয়ে দিয়ে চেয়ারের উপর থেকে জ্যাকেট নিয়ে পরতে পরতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো শান্ত
এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা তার নেই
আজই ঢাকায় ফিরে গেলে হতো না?
.
দালানের নিচে এসে দেখলো ম্যানেজার ঘুমাচ্ছে,শান্ত গিয়ে উনাকে জাগালো
জিজ্ঞেস করলো মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার ট্রেন কি এখন আছে?
.
উনি বললেন”এখন তো নেই,বরং কাল সারাদিন গিয়ে বিকালে ঢাকার ট্রেন পাবেন ““এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
.
শান্ত চিন্তিত হয়ে ফিরে আসতেসে রুমে,বাসে করে গেলে সেই সারাদিন লেগে যাবে,আমি কি করবো এখন!
.
আহানা জেগে উঠে বসে পড়লো,আশেপাশে শান্ত কোথাও নেই
তার গায়ে শান্তর টিশার্টটা ছিল,,তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ফ্লোর থেকে জামা নিয়ে চেঞ্জ করে নিলো সে
শান্ত কোথায় গেলো আমাকে ছেড়ে!!এসব ভাবতে ভাবতে
ওড়না নিয়ে দরজার পাশে যেতেই দেখলো শান্ত সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসতেসে
মনে হয় প্রান ফিরে পেয়েছে আহানা
এক দৌড়ে শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো “তুমি এখানে আসছো কেন?কি হইসে?”
.
আপনি কোথায় গেসিলেন,আপনাকে না দেখতে পেয়ে ভয় করছিল আমার
.
আমি ম্যানেজারের কাছে জানতে গিয়েছিলাম ঢাকার ট্রেন কবে ছাড়বে
.
কবে?
.
কাল বিকালে
.
ওহ
.
চলো এখন
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে আবার রুমে ফিরে আসলো,এই নিয়ে কতবার ওকে ঘুম পারিয়েছে,কিসের জন্য যে বারবার জেগে যায় সে,জেগেই শান্তর দিকে তাকিয়ে থাকে
শান্ত বিরক্ত হচ্ছে না একটুও
তাকে আহানাকে হারানোর ভয় গ্রাস করছে রীতিমত
আহানা প্লিস ঘুমাও
.
আসতেসে না তো
.
তাহলে চলো
.
কোথায়?
.
আমি যেখানে নিয়ে যাবো সেখানে
.
শান্ত আহানার হাত ধরে ওকে বিছানা থেকে নামিয়ে ওর ওড়নাটা মাথায় পেঁচিয়ে ওকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো
অন্ধকার শূন্য মাঠে তারা হাঁটতেসে তাও খালি পায়ে,ভেজা ঘাস পায়ে লাগতেই ভালো লাগা কাজ করতেসে,আহানার এতক্ষণ জোঁকের ভয় লাগতেসিলো কিন্তু শান্তর ভরসায় সেই ভয়টা কেটেছে
অনেকদূর চলে এসেছে তারা
চাঁদ আছে তবে মাঝে মাঝে বিলীন হয়ে যায় সেটা
আবহাওয়া ভালো না,বৃষ্টির ভয়ে তাই চাঁদ লুকাচ্ছে মেঘের আড়ালে
শান্ত আহানাকে নিয়ে এবার ঘাসের উপর বসে পড়লো,ওর সামনে বসে ওর হাত ধরে বললো চোখ বন্ধ করতে
বলো আহানা কি দেখতে পাচ্ছো?
.
কিছুই না
.
আর আমি দেখতে পাচ্ছি আমার আহানার মত একটা কিউট বাচ্চা মেয়ে তোমার গলা জড়িয়ে খিলখিল করে হাসতেসে
তার দুই ব্রুর মাঝখানে একটা তিল আছে,একদম তোমার মত যেমন তোমার থুতনিতে তিল
আমার মেয়ের কখনও টিপ দিতে হবে না কারণ তার কপালে টিপ ন্যাচারালি রয়েছে
.
আহানা হেসে বললো আর এখন আমি দেখতে পাচ্ছি একটা কিউট হ্যান্ডসাম ছেলে শান্তর পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,হুবুহু শান্তর মত দেখতে,চোখজোড়া খালি আমার মত,চোখে মুখে এটিটিউড পুরো আপনার মতো
.
আহানা মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে তার ছেলেকে কল্পনায় দেখতেসে
হঠাৎ কানের কাছে শান্তর ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই চোখ খুললো সে
আর দেরি না করে শান্ত আহানার হাত ধরে ওকে নিয়ে রিসোর্টে ফিরে আসলো
এবার আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে ভালোমতন
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে শান্ত ও এবার চোখ বুজলো
.
আবার সকাল হতেই উঠে পড়লো সে,আহানা এখনও ঘুমাচ্ছে
ঘড়িতে চেয়ে দেখলো ৫টা ৩২বাজে
শান্ত ফ্রেশ হয়ে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলো,নওশাদকে কল করে বললো রুপা যেনো আহানার পাশে থাকে,সে ঢাকার ট্রেনের খবর নিতে যাচ্ছে
শান্তর কথামতো রুপা এসে আহানার পাশে শুয়ে পড়লো
শান্ত স্টেশনে এসে জানতে পারলো বিকাল ৪টা ২মিনিটের ট্রেন আছে মোহনগঞ্জ টু ঢাকা
♣
সকাল ৮টা বেজে গেছে
আহানা চোখ খুলতেই বারান্দার বটগাছটা দেখতে পেলো,পর্দা সরিয়ে দিয়েছিলো শান্ত
হাসিমাখা মুখে উঠে বসলো সে,এপাশে তাকিয়ে শান্তকে দেখলো,শান্ত উল্টো হয়ে শুয়ে আছে
চাদর সরিয়ে বটগাছটার গাছে গিয়ে দাঁড়ালো আহানা
গাছটা পুরো ভিজে আছে,বৃষ্টি হয়েছিল কাল গভীর রাতে
তাই হয়ত গাছটার এই দশা
.
বেশ ভালোই লাগতেসে
ফ্রেশ মাইন্ড নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে একটা নতুন জামা পরে রুম থেকে বের হলো সে
রিসোর্টের ঘাস ভর্তি খোলা মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে আকাশ দেখছে,হালকা রোদের ছটা আর মিষ্টি আবহাওয়া
তারপর দেখলো কজন মিলে চেয়ার টেবিল আনতেসে এদিকে
আহানা চমকে তাকালো,ম্যানেজার বললো শান্ত বলছে এখানে নাস্তা করবে
আহানা মাথা নাড়িয়ে এসে চেয়ারে বসলো,দোতলার দিকে তাকিয়ে আছে সে
ভাবতেসে শান্ত কি উঠেছে?নাকি উঠে নাই!
রুপা আর নওশাদ সেজেগুজে এসে পড়েছে,খাওয়াও শুরু করে দিয়েছে,আহানা শান্তকে ডাকার জন্য উঠতেই দেখলো শান্ত আসতেসে
পেস্ট কালারের জ্যাকেট,ব্ল্যাক জিন্স,খুব সুন্দর লাগছে ওকে,আহানাও আজ পেস্ট কালারের জামা পরে নিচে নেমেছিলো
“শান্ত তো তখন ঘুমে ছিল দেখলো কি করে আমি কি পরে নেমেছি,হয়ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছে”
শান্ত হেসে ওর পাশে বসে পড়লো,মনোযোগ দিয়ে পাউরুটিতে জেলি মাখতেসে সে
আহানা চমকে বললো “কার জন্য??রুটি ভাজি চিকেন সবই তো আছে তাহলে এটা?”
.
তোমার জন্য
.
কি?!!!আমি এসব খাবো না,আমি তো রুটি ভাজি খাবো
.
না তুমি হেলদি ফুড খাবা,আগে পাউরুটি পরে নাহয় রুটি খাইও
.
রুপা মুখ চেপে হাসতেসে
.
আহানা গাল ফুলিয়ে অনেক কষ্টে পাউরুটি ২পিস খেলো
তারপর রুটির দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো সে
এটা দেখে শান্ত ওকে রুটি খেতে দিলো
.
খাওয়া শেষ করে শান্ত আর আহানা একটা গাছতলায় এসে বসলো আর রুপা নওশাদ মিলে দৌড়াদৌড়ি করতেসে
একটা সময় দুজনেই কাদায় পড়ে গেলো
রুপা নওশাদের অবস্থা দেখে আহানা আর শান্ত হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
শেষে নওশাদ আর রুপা এসে ওদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলো কাদায়,৪জনে কাদায় মাখামাখি হয়ে ভূত হয়ে গেছে
শান্ত এক মুঠো কাদা নিয়ে আহানার সারামুখে গায়ে মেকআপের মত মাখাচ্ছে
আর আহানা রোবটের মত দাঁড়িয়ে থেকে শান্তর কান্ড দেখে যাচ্ছে
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬৫
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬৫
#Writer_Afnan_Lara
?
কি?এমন করে চেয়ে আছো কেন?এটা কি নতুন নাকি?
.
দরজা নক হলো তখনই
শান্ত গিয়ে দরজা খুলে চা আর বিসকিট নিয়ে আসলো
.
আহানা এখনও রোবটের মত তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
♣
চা খাওয়া শেষ করে সবাই এবার বের হলো ভূতের বাড়ি যাবে
আইডিয়াটা রুপার,সে তার গুগলে সার্চ করে বের করেছে রিসোর্টের আশেপাশে নাকি একটা প্রাচীন ভূতের বাড়ি আছে,রাতে গেলে মজা বেশি পাওয়া যাবে,রাত করে নাকি কিসব সাউন্ড আসে সেখানে
শান্ত তো এসব শুনে এক পায়ে খাড়া,সে ভূতের বাড়ি যাবেই যাবে
রইলো নওশাদ আর আহানা,তারা দুজনে ভয়ে শুধু ঢোক গিলছে
চা বিসকিট খেয়ে সন্ধ্যা হতেই ৪জন মিলে বেরিয়ে পড়লো,বিরাট এই মাঠ শেষ হলে একটা জঙ্গল পড়বে,সেটার মাঝ বরাবর ভূতের বাড়ি আই মিন জমিদার বাড়িটা অবস্থিত
শান্ত আহানার হাত ধরে হেঁটে চলছে আরেকহাতে টর্চ
আর পিছন পিছন নওশাদ রুপার হাত ধরে আসতেসে তাদের কাছেও টর্চ আছে
ঘুটঘুটে অন্ধকার,পিচ্ছিল মাটির সরু পথ,চারপাশে ঘাস,সেগুলো ভিজে আছে কারণ আজ সারাদিন ধরে গুটিগুটি বৃষ্টি হয়েছে
ভেজা ঘাস পায়ে লাগলেই মনে হয় এই বুঝি জোঁকে ধরলো
আহানা প্লাজো একটু উঠিয়ে হাঁটতেসিলো কিন্তু যখন শুনলো জোঁকের কথা আবার নামিয়ে ফেললো
খালি পায়ে না লেগে জোঁক যদি প্লাজোয় লাগে তাহলে মন্দ কি?
একটা বাদুড় উড়ে সামনে দিয়ে গেলো এটা দেখে আহানা আর নওশাদ এমন চিৎকার করলো বাদুড় নিজেই ভয় পেয়ে তার পথের দিশা হারিয়ে কোনদিকে না কোনদিকে চলে গেলো
এটা সিউর!! সে মানুষের চিৎকারে এমন ভয় পেয়েছে যে আজ তার পরিবারের কাছে ফিরেই অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে থাকবে
কিসের যেন আওয়াজ আসতেসে সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আওয়াজটা বুঝার চেষ্টা করছে অবশেষে বুঝতে পারলো আওয়াজটা হলো পেঁচার
যাই হোক মাঠ পেরিয়েছে তারা এবার জঙ্গলে ঢুকবে,আহানা তো শান্তর হাত যত শক্ত করে ধরতে পারে তত শক্ত করে ধরে রেখেছে
জঙ্গলে ঢুকতেই মনে হলো আশেপাশে ভূত আর ভূত,অথচ ভূতের নিশানাও নেই
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শুধু পথ চেয়ে চেয়ে তারা জমিদার বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালো
ইয়া বড় এক পুরোনো রাজবাড়ি,,শতে শতে শেকড় দ্বারা আবৃত যা বাড়িটাকে প্রাচীন হওয়ার পরিচয় বহন করে
শেউলা জমে আছে,লাইট মেরে মেরে সব দেখতেসে ওরা
শান্ত তো আর অপেক্ষা না করেই ঢুকেই পড়লো
ভিতরে
কোথাও পুরনো একটা জিনিসপাতিও নেই,এলাকাবাসী সব লুটেপুটে নিয়ে গেসে,এখন খালি বাড়িটা রয়ে গেসে
নওশাদ আর রুপা নিচের তলা ঘুরে দেখতেসে
আর শান্ত আহানাকে টেনে দোতলায় নিয়ে গেসে
.
শান্ত প্লিস চলুন ফিরে যাই,আমার খুব ভয় করতেসে,প্লিস চলুন?
.
আরে আমি আছি না?এত ভয় পাচ্ছো কেন??
.
ভয় পাবো না? কি বলেন,যদি এখন ভূত এসে পড়ে বা পাগল ছাগল ও তো থাকতে পারে এখানে তাই না?
.
মেরে তাহলে ওদের সত্যিকারের ভূত বানাই দিবো?
.
উফ আপনি বুঝতেসেন না কেন?
.
শান্ত আহানার কোমড় জড়িয়ে টান দিয়ে কাছে নিয়ে এসে ওর মুখ চেপে ধরলো
.
চুপ, একদম চুপ,এত কথা কি করে বলতে পারো তুমি?তোমার না অসুখ?অসুখের মাঝেও এত এত কথার জোর তোমার??
.
তো কি করতাম আমি?কি দরকার ছিল এত রাত করে এখানে আসার,শান্তিতে রুমে থাকা যেতো না নাকি?
.
যেতো তবে এরকম সুযোগ বারবার আসেনা বুঝলা
আমরা নিউ কাপল,আমাদের উচিত এসব ইঞ্জয় করা আর তুমি কিনা আমাকে বকেই যাচ্ছো?
.
আমি কাল সকালে ঢাকায় ফিরতে চাই ব্যস
.
না কাল না,পরশু,পরেরটা পরে দেখা যাবে
♣
হেহে হেহে,কারা তোরা??এখানে কি করিস?
.
লোকটার কথা শুনে আহানা চোখ বড় করে শান্তর পিছনে লুকিয়ে পড়লো
.
একটা পাগল লোক দাঁড়িয়ে আছে ওদের সামনে,হাতে লাঠি আর পরনে সাদা ময়লা পাঞ্জাবি
লোকটা আহানাকে দেখে এগিয়ে আসতে ধরতেই শান্ত হাত দিয়ে আটকালো উনাকে
.
কি??
.
লোকটা ব্রু কুঁচকে বললো “তোরা এখানে কেন এসেছিস?সুখে থাকতে তোদের ভূতে কিলায়,যা চলে যা”
.
আহানা শান্তর জ্যাকেট চেপে ধরে মুখ লুকিয়ে রেখেছে
.
শান্ত কিছু বললো না আর,আহানাকে নিয়ে দোতলা থেকে নেমে আসলো,লোকটা এগিয়ে এসে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বললো”চলে যা তোরা,আমি আমার বউরে এই বাড়িতে হারিয়েছি,তোরাও হারাবি দেখিস!”
.
শান্ত থেমে গিয়ে আহানার হাত শক্ত করে ধরে নওশাদ আর রুপাকে ডাক দিলো
.
কি হলো ভাইয়া??
.
আচ্ছা রুপা!!অনেক দেখা হইসে,চলো আমরা ফিরে যাই,রাত বেশি হয়ে গেলে বিপদ বাড়বে,আর এই লোকটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার
.
ভাইয়া কি বলো,পুরো বাড়িটা তো দেখাই হলো না
.
লাগবে না থাক
.
হ্যাঁ শান্ত ঠিক বলতেছিস তুই,চল যাই
.
রুপা মন খারাপ করে সেও সাঁই জানালো নওশাদ আর শান্তর সিদ্ধান্তে
সবাই মিলে আবার রিসোর্টের উদ্দেশ্যে হেঁটে চলেছে
অবশেষে তারা জলদি পা চালিয়ে রিসোর্টে পৌঁছেই গেলো
.
আহানা হাত পা ধুতে ধুতে বললো”আমার কথায় কানই দেন না আপনি,দিলে আজ এত কষ্ট করে জমিদার বাড়ি গিয়ে সন্ধ্যাটা বরবাদ করতে হতো না
ঘুরলেই মন ভালো হয় না,আপন মানুষের পাশে বসে থাকলেও মন ভালো হয়ে য়ায়
কে বুঝাবে আপনাকে,আপনি তো আমার কথা বুঝতেই চান না!!”
শান্ত জ্যাকেট খুলে,টিশার্টটাও খুলে আয়নায় নিজের পিঠ দেখতেসে,জঙ্গলের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার ফলে পোকামাকড় কিছু একটা মনে হয় কামড় দিয়েছে, তাই তোয়ালে নিয়ে গোসল করতে চলে গেলো সে,আহানার কথায় কান দিলো না
আহানা বিছানায় এসে বসে আছে,চাদর মুড়ি দিয়ে বারান্দার দিকে তাকালো,পাগল লোকটার কথা মনে পড়ে ভয় লাগলো ওর
যদি এখন সেই লোকটা এই বট গাছ ধরে এখানে এসে যায়,কি করবো তখন আমি??
শান্ত তো এমনিতেও বিকাবেলায় সব বন্ধ করে দিয়েছিল আমি গাছে উঠেছিলাম বলে
আমি তাও খুলসি বারান্দার দরজা বটগাছটা দেখার জন্য,হুমমম বটগাছ দেখতে হবে না আর
আহানা উঠে গিয়ে বারান্দার দরজাটা লাগিয়ে দিলো,পর্দাও টেনে দিলো,লাগবে না বারান্দায় যাওয়া,গা এখনও গুলিয়ে আসতেসে আমার
আবার এসে বিছনার মাঝখানে বসে চাদর গায়ে পেঁচিয়ে গাপটি মেরে বসে রইলো সে,যত দোয়াদরুদ আছে সব পড়া শেষ,শান্ত বাথরুম থেকে বের হলে ওকে জড়িয়ে বসে থাকবো তাহলে ভয় যাবে
.
শান্ত কয়েক মিনিট বাদেই বের হলো,বেরিয়ে দেখলো আহানা চাদর মুড়ি দিয়ে ঢুলতেসে
.
কি হইসে?ভূতে ধরলো নাকি তোমাকে?
.
না যদি ঐ লোকটা এসে যায়?
.
আরে কিছু হবে না,ঐ লোকটা ওখানেই থাকে,তুমি এখনও ওসব নিয়ে ভাবতেসো??
বাদ দাও ওসব,এখন আমরা রুই মাছ খাবো,পুকুরের টাটকা মাছের তরকারি সেই লাগবে খেতে,আমি রুম সার্ভিসে কল করতেসি, বসো তুমি
.
প্লিস এখন না আরেকটু পর,আমার খিধা নেই এখন,আপনি প্লিস এখানে এসে বসুন না
.
শান্ত এসে আহানার পাশে বসে পড়লো,তারপর ফোন নিয়ে গেমস খেলায় মনোযোগ দিলো সে
.
আহানা শান্তকে ধরে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে বোকার মতন,বিয়ের আগে এত রোমান্টিক ছিল আর এখন কিনা বিয়ের পর পুরো আনরোমান্টিক?হাউ?হাউ?
.
শান্ত গেমস খেলতে খেলতে বললো”বিকালেও তো কিস করলাম,আনরোমান্টিকের কি দেখলা তুমি?আর তোমার শরীরের অবস্থার কথা মাথায় আছে তোমার??এত কিছুর পরও তুমি আবার এত কিছু আশা করো,মাই গড!!,তুমি এত…।
.
এই!! এই!! কি বলতে চান কি আপনি??আমি এত মানে??আমি কি কিছু বলসি আপনাকে?আর কখনও কিস ও করতে দিব না,আপনি খুব খারাপ!
.
আহানা আরেকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো
১৬সেকেন্ড বাদে গলার কাছে শান্তর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির স্পর্শ পেতেই উঠে বসে পড়লো সে
.
কি??কি হইসে?এত ঢং করতে হবে না আর হুহ!!
.
তুমি এত রাগ করো কেন?আমি তো মজা করসিলাম
.
রাখেন আপনার মজা,আমার ভাল্লাগতেসে না
আমি ঘুমাবো,রাতে খাবো না,ঘুম থেকে উঠাবেন না আমাকে
.
মানে কি বলতেসো তুমি?তোমাকে আমি খালি পেটে ঘুমাতেও দিব না
.
আমি খাবো না আপনার কি তাতে?
.
আমার কি??
দেখাচ্ছি আমার কি
.
শান্ত আহানার গাল টিপে ধরে বিছানার সাথে লাগিয়ে ধরলো
.
আচ্ছা সরি আর বলবো না আপনার কি,বলবো আপনার কিছু না
.
কিহহহ?আহানা!তুমি অনেক দুষ্টু হয়ে গেসো!!
.
কবে বুঝি শান্তশিষ্ট ছিলাম?
.
ওহ তাহলে এটা আগেরই স্বভাব ছিল?আমাকে দেরি করে দেখাইলা এই তো?
.
হুম,মুখ থেকে আপনার হাত সরান আমার মুখ ব্যাথা হয়ে গেসে
.
আহানা!
.
কি?
.
অনেক ভালোবাসি তোমায়,কখনও ভুল করেও আমাকে ছেড়ে যাবা না তো?
.
না
.
শান্ত আহানাকে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় মুখ গুজলো
আহানা হালকা চোখ বুজে শান্তকে ধরে রাখলো
তারপর শান্তর ভেজা চুলে হাত বুলাতে লাগলো সে
.
আমাকে চুল মুছার জন্য বকা দিয়ে এখন নিজেই চুলে সব পানি রেখে দিসে
কথাটা বলে আহানা হাত বাড়িয়ে নিজের ওড়নাটা পাশ থেকে নিয়ে শান্তর চুল গুলো মুছতে লাগলো
শান্ত আহানার গলায় বারবার খোঁচা দিচ্ছে দাঁড়ি দিয়ে
.
আহানা নড়তে নড়তে অনেক কষ্টে চুল মুছে নিলো ভালো করে
একটা সময় শান্ত আহানার গলা থেকে মাথা উঠিয়ে ছোঁ মেরে ওড়নাটাই নিয়ে নিলো আহানার দিকে
.
কি?
.
এত মুছে কি হবে?এমনিতেও শুকায় যাবে,তুমি যেভাবে মুছতেসে যেন আর শুকাবে না
.
চুলে পানি থাকা ভালো কথা নয় হুমমম
.
তুমি প্লিস আমার আম্মুর সব ডায়ালগ মেরো না
.
আমি আপনার আম্মুর কাছে বিচার দিব কিন্তু
.
আমার মায়ের সাথে আমি কথা বলতে পারি কিন্তু তুমি না
.
আমিও পারি,কারন এখন থেকে তো আমি ও আপনার অংশ হলাম তাই না?তাহলে আমিও তো কথা বলতে পারবো আর মা আমাকে বেশি ভালোবাসে ?
.
তাই নাকি?কে বললো তোমায়?
.
কে আবার মা বললো,তুমি মাকে জিজ্ঞেস করিও
.
এক মিনিট,তুমি??তুমি আমাকে তুমি বললা?
.
?সরি মুখ ফসকে বলে দিসি
.
ইটস ওকে,তুমি শুনতে ভালোই লাগে
.
তুমি/ আপনি/ তুমি /আপনি,একবার একটা বলবো,পুরোপুরি বলার সাহস নেই আমার
.
কেন?আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলবো নাকি?
.
হ্যাঁ
.
“”হ্যাঁ””শুনে শান্ত ব্রুটা নাচিয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে
আহানা দাঁত কেলিয়ে জিভে এক কামড় দিয়ে চুপ করে রইলো
মাঝে মাঝে যতসব উল্টা পাল্টা বলে ফেলি
.
আজ তোমাকে ছাড়বো না আহানা দ্যা পাতানো বউ টু রিয়েল বউ!
.
এইটা আবার কি নাম,সুন্দর একটা নাম দেন
.
আহান্ত!!
.
বাহ!!কিউট নাম
.
এখন আমার দিকে তাকাও
.
কি জন্যে?
.
দেখাচ্ছি কি জন্যে
(ছোট করে দেওয়ার জন্য সরি, ব্যস্ত থাকাই এইটুকুই লিখতে পারলাম,ব্যস্ততা থাকবে আরও কদিন,তাও গল্প দিবোই,আকারে ছোট হবে এই আর কি)
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬৪
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬৪
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা হেসে দিয়ে পিছন থেকে দৌড়ে এসে শান্তর গলা জড়িয়ে ধরে উঁচু হয়ে গেলো
শান্ত আহানার হাত দুটো ধরে খিলখিল করে হাসতেসে
“ভাবলাম আহানা আমার কথাগুলো সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছে কিন্তু না সে আমার মজা করে বলা কথা মজা হিসেবেই নিয়েছে!!!
“””যদি তুমি ভালোবাসো, ভালো করে ভেবে এসো,
খেলে ধরা কোনো খানে, রবে না,
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে, অকালেই যাবে ঝরে,
গলে যাবে যে বরফ, গলে না.
আমি গলা বেচে খাবো, কানের আশেপাশে রবো,
ঠোঁটে ঠোঁটে রেখে কথা, হবে না.
কারো একদিন হবো, কারো একরাত হবো,
এর বেশি কারো রুচি, হবে না.
|| আমার এই বাজে স্বভাব, কোনোদিন যাবে না ||
.
যাওয়ার দরকার নেই,আমার এই বাজে স্বভাবআলা শান্তকেই চাই!!
.
তাই??
.
হুম
.
আচ্ছা চলো আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে আজ নাস্তা করবো
.
ওকে
.
দুজনে মিলে আশ্রমে ঢুকে বাচ্চাদের রুমে আসতেই বাচ্চারা দৌড়ে এসে ওদের হাত পা ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো,শান্ত হাঁটু গেড়ে বসে ওদের কয়েকজনের গাল টিপে দিলো তারপর ওদের পাশে বসলো
শান্ত এসেছে শুনে ম্যানেজার মিলে বাকি কর্মচারীরা ভালো নাস্তার ব্যবস্থা করলো,শান্ত বাচ্চাদের সাথে খেলতে খেলতে বললো সবার জন্য একই খাবারের ব্যবস্থা করতে
.
আরিফ আঙ্কেল খুশি হয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আহানা আর শান্তকে দেখে যাচ্ছে
“আজ শান্তি মা থাকলে কতই না ভালো হতো,সবকিছুই আছে শুধু উনার কমতিটা রয়ে গেসে”
শান্ত একটা পুচকিকে উঁচু করে ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”মা আছে!!!
মা এই ছোট ছোট বাচ্চাদের মাঝে আছে,এরা এখনও অবুঝ,এদের দ্বারা এখনও কোনো পাপ হয়নি,আমার মা এদের মাঝেই আছে,দেখুন না এদের মুখে হাসি আমার মায়ের হাসির মতন,আমি এদের দিকে তাকালেই আমার মাকে দেখতে পাই
আমার মায়ের দুটো প্রান ছিল,একটা আমি আর একটা এই আশ্রমের সবকয়টা অনাথ সন্তান,আমার মা এদের খুব ভালোবাসতো””
.
আহানা আশ্রমের বাইরের পিলারটা ধরে ডোবাটার দিকে তাকিয়ে আছে,হঠাৎ করে মাথার ভেতর টনটন শুরু হয়ে মাথার ভেতর জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গেলো,অস্বস্তি লাগতেসে অনেক
(আপনাদের একটা কথা বলতে চাই,আপনারা অনেকেই বলতেসেন আহানা যেন তার মা বাবাকে খুঁজে পায়,কিন্তু বাস্তবে এমন হয় না,এটা সিনেমায় হয় যে হারিয়ে যাওয়া মা বাবা ফিরে আসে
বাস্তবে একবার হারালে আর পাওয়া যায় না,গল্পের থিম আমি বাস্তব থেকে নিয়েছি তাই কাল্পনিক কিছু যোগ করবো না,আশ্রমের অনাথেরা অনেকেই তাদের মা বাবা পায় তবে আসল না,যারা দত্তক নেয় তাদের পায়,আসল মা বাবাকে পায় না তারা,আহানাও পাবে না)
♣
আহানা?
.
হুম
.
আসো নাস্তা করবা,তুমি আবার সেখানে গেসো??
.
আহানা শান্তর সামনে এসে ওর হাত ধরে বললো” একটা জিনিস চাইবো দিবেন?”
.
সব তোমার
.
এই ডোবাটা আমার নামে করে দিন
.
কি করবে?
.
আমি ডোবাটায় মাটি ফেলে ভর্তি করে একটা পার্ক তৈরি করবো এখানে,আশ্রমের বাচ্চাদের জন্য,তাদের খেলার জন্য আশ্রমে তেমন কোনো সুব্যবস্থা নেই
আর….
.
আর?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আর আবার কোনো মা বাবা তাদের অবৈধ সন্তানকে ফেলতে আসলে ডোবায় ফেলবে না,পার্কে ফেলে যাবে
সে বড় হলে কেউ তাকে বলতে পারবে না যে তোমাকে তো ডোবায় ফেলে গেসিলো,বলবে তোমাকে পার্কে রেখে গেছে
একটু হলেও তো সম্মান থাকবে তাই না?
.
শান্ত আহানার মাথা ধরে ওকে কাছে টেনে আনলো
“ঠিক আছে,আমি এখানে পার্ক বানিয়ে দিব”
.
ধন্যবাদ
.
আহানা আর শান্ত নাস্তা করে বের হতেই দেখলো নওশাদ আর রুপা এসেছে আশ্রমে
.
কিরে শান্ত রিসোর্টে কবে যাবি তোরা,আমার আর তর সইছে না
.
তোরা বললে আজ দুপুরে খেয়ে রওনা দিব,রিসোর্ট এখান থেকে ১০মিনিটের পথ
.
ভাইয়া আমি একটা কথা বলি,আমরা এখন তো সকালের নাস্তা করেছি,এখন গেলে কেমন হয়?
.
রুপা আজ তো বৌভাত
.
হুম তাই তো
.
আচ্ছা তাহলে আমরা বরং দুপুরেই যাব
.
৪জনে মিলে সেই সরু পথটা ধরে হাঁটতেসে,সামনে নওশাদ আর রুপা
পিছনে শান্ত আর আহানা,সরু পথটার দুপাশে বিরাট বিরাট ঝাউ গাছ,আর দুপাশে ধানের ক্ষেত
পথটা মাটির,আহানা পথের দিকে চেয়ে হাঁটতেসে,মাঝে মাঝে চুলগুলো কানে গুজে দিচ্ছে,আর শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে সেন্টার ফ্রেশ চিবাচ্ছে
নওশাদ জায়গাটা ভিডিও করায় ব্যস্ত,রুপা একটা পকেট মিররে আইব্রো ঠিক করছে হেঁটে হেঁটে
.
আহানা কাদায় পা দিতেই পা আটকে গেলো আর সে দুম করে পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ধরে ফেললো ওকে
আহানা মুখ তুলে চেয়ে দেখলো শান্ত আরেকদিকে তাকিয়ে আছে
আহানা হেসে ওর হাত জড়িয়ে ধরে আবার হাঁটা ধরলো
বাসায় এসেই দেখলো অনেক মেহমান এসে গেসে
তাড়াতাড়ি করে আহানা শাড়ীর আঁচল নিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিলো
সবাই আহানার থুতনি ধরে টেনে বলতেসে বাহ কি সুন্দর
আহানা দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে ফুফু আর বাকিদের দিকে
.
আহানা?ওমা কি সুন্দর কোমড়ের বিছা দিয়েছো তুমি
আমি তো একদমই খেয়াল করিনি,অনেক সুন্দর এটা
.
তাই না ফুফু??কি কিউট তাই না?
.
তুই এত লাফাস কেন,ওহহহ আচ্ছা,তাহলে এটা তুই দিয়েছিস?
.
জি!!আর কে দিবে??
.
বাহ পছন্দ তো মাশাল্লাহহহ?
.
বউ ও,কোমড়ের বিছাও?
♣
বৌভাতের অনুষ্ঠানটা জমজমাট হয়েছে,,নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্যের কারণে,ওরা লুঙ্গী ডান্স দিয়েছে তার উপর ঘোড়ার গাড়ী করে ১কিলোমিটার ঘুরেছে তাদের ইচ্ছা পূরন হলো অবশেষে
৩টা বেজে গেসে,নওশাদ রুপা আর শান্ত আহানা বাবা আর পরিবারের সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো রিসোর্টের উদ্দেশ্যে
রিকসায় বসে আহানা বাইরের ঝাউগাছ গুলো দেখছে
আর শান্ত গালে হাত দিয়ে আহানাকেই দেখে যাচ্ছে শুধু
হঠাৎ ডাক্তারের কথা মাথায় আসতেই তাকে কল করলো সে
ওমা তার দেখি ফোনই নট রিচেবল বলতেসে,আজব তো!
.
১০/১২মিনিটের মধ্যেই ওরা রিসোর্টে পৌঁছে গেলো,দোতলা দালানের রিসোর্টটা,,কমলা রঙের দালান,পাশ দিয়ে একটা বট গাছ অনেক উঁচুতে উঠে গেসে,আহানা দোতলার বারান্দাটার দিকে চেয়ে আছে,কারণ সেই বারান্দায় দাঁড়ালে অনায়াসেই বটগাছটা ছোঁয়া যাবে,,আহানা মনে মনে ভাবছে কিরকম লাগবে তখন
শান্ত আহানার তাকানো দেখে উপরের তলার চাবিটাই নিলো ম্যানেজার থেকে
নওশাদ রুপাও দোতলায় তবে তারা বাম পাশের ইউনিটে,সেখান দিয়ে সবুজ ঘাসে ঘেরা মাঠের মতন জায়গা দেখা যায়,রুপা বটগাছটা খেয়াল করেনি করলে পাগল হয়ে যেতে ডান পাশের ইউনিটের জন্য
শান্ত আর আহানা রুমে ঢুকলো দোতলায় এসে
রুমটায় ঢুকে আহানা কোনোদিক না তাকিয়েই বারান্দায় চলে আসলো,মাথা উপরে তুলে বটগাছটার শেষ সীমানা পর্যন্ত দেখতেসে সে
গাছটায় সিঁড়ির মত ডিজাইন করা মনে হচ্ছে
আহানা হাত দিয়ে জায়গাটা চেপে দেখলো উঠা যাবে কিনা
মজবুত দেখে হেসে শান্তকে ডাকতে যাবে তার আগেই শান্ত এক লাফে বারান্দা থেকে গাছে উঠে গেলো
আহানা ভয় পেয়ে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
আরে ভয় পাও কেন,আসো তুমিও আসো,আমার হাত ধরো
.
না আমার ভয় করে
.
আমি আছি না?
.
আহানা হেসে শান্তর হাত ধরলো,শান্ত এক টানে ওকেও গাছের উপর নিয়ে আসলো,একজনের দাঁড়ানোর জায়গা আছে আর সেটাতে শান্ত দাঁড়িয়ে আছে আর আহানা তার গায়ে ভর দিয়ে কোনোরকম দাঁড়িয়েছে
.
আহানা দেখো সাপ!!
.
সাপের কথা শুনে আহানা চিৎকার করে শান্তকে চেপে ধরলো
.
হিহি
.
হাসতেসেন কেন,তার মানে মিথ্যা?
.
হুমম?
.
আহানা শান্তকে ধরে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো
.
কেউ দরজায় নক করতেসে মনে হয়,চলো বারান্দায় নেমে যাই
শান্ত আহানার হাত ধরে ওকে নামিয়ে তারপর নিজে নামলো,গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো নওশাদ দাঁড়িয়ে আছে
পরনে হাফ প্যান্ট, টিশার্ট, চোখে চশমা,পায়ে স্যান্ডেল, একটা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে
ও আবার হাতে একটা ফুটবল ও আছে
.
কিরে নওশাদ?কি হইসে তোর??এরকম শুটকি মাছের মত ব্যাকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?শরীর খারাপ নাকি তোর?
.
ধুর হারামি!!খেলতে যাবো চল,তোকে ডাকতে আসলাম তাই
.
খেলবো?কই?
.
আরে রিসোর্টের চারপাশে খোলা জায়গা আছে,আমি আর তুই ফুটবল খেলবো সেখানে
.
গোলকিপার কে হবে?
.
আমাদের বউরা আছে না
.
তোর মাথা গেসে?আহানা অসুস্থ,, ও এত দৌড়াদৌড়ি পারবে না
.
তাহলে বল কি খেলবি
.
ভাইয়া আমি বলি?
.
হুম বলো
.
কানামাছি খেলবো
.
রুপা এসে বললো হ্যাঁ এটা বেস্ট হবে
.
ব্যস সবাই মিলে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে আসলো খোলা মাঠে
আহানা তার একটা ওড়না নিয়ে এসেছে সাথে করে
.
শান্ত সেন্টার ফ্রেশ চিবাতে চিবাতে বললো “তা আগে চোখ বাঁধবে কে?”
.
নওশাদ বললো”” সবাই দাঁড়াও গোল হয়ে,, আমি বের করতেসি””
.
অপু,১০,২০,৩০.৪০.৫০.৬০.৭০.৮০.৯০.১০০!
হাহা,,রুপা তুমি চোখ বাঁধবা
.
ধুরু!!
.
রুপাকে আহানা চোখ বেঁধে দিলো,চরকার মত ঘুরতেসে সে,নওশাদ ওকে চিমটি কেটে কেটে পালাচ্ছে বারবার
অবশেষে রুপা শান্তর হাত ধরে বললো “এটা নওশাদ”
তারপর চোখ থেকে ওড়না খুলে দেখলো শান্ত দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে আর নওশাদ রাগে ফুলতেসে
.
“তুমি আমাকে চিনলে না??”কথাটা বলে নওশাদ এক দৌড়ানি দিলো রুপাকে,দৌড়াতে দৌড়াতে দুজনে হাঁপিয়ে গেলো
তারপর কিলাকিলি করে আবার ফেরত আসলো
এবার চোখ বাঁধবে নওশাদ
রুপা আহানার হাত নিয়ে নওশাদকে ধরিয়ে দেওয়ার আগেই নওশাদ রুপার হাত ধরলো
রুপা তো লজ্জায় শেষ
.
না এইটা রুপা না,রুপার হাত এত খসখসে না,আমার রুপার হাত নরম
নওশাদ এবার আহানার হাত ধরে হেসে বললো “এই তো আমার রুপা☺”
.
তোমার মাথা,বেয়াদব,অসভ্য!!
.
নওশাদ জিভে কামড় দিয়ে এক দৌড় দিলো
.
এই তোরা কি শুধু মারামারি করবি?এখনও তো আমরাই চোখ বাঁধলাম না
.
এবার শান্ত বাঁধলো
.
রুপা আহানাকে অনেক দূরে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে তারপর নওশাদ এর হাত নিয়ে শান্তর হাতে ধরিয়ে দিলো
শান্ত দাঁত বের করে বললো “এই হাতের আর গরিলার হাতের কোনো তফাৎ নাই,এইটা তো মাস্ট নওশাদের হাত
.
কি বললি তুই?তোর চোখ বাঁধাই থাক,যতক্ষন না আহানাকে চিনতে পারিস!!
.
এবার রুপা নিজের হাত ঘষে মেজে শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
শান্ত রুপাকে টাচ ও করলো না,শুধু মুচকি হেসে বললো “রুপা সরো”
.
রুপা এবার আহানাকে দাঁড় করিয়ে আহানার পিছন দিয়ে নিজের হাত এগিয়ে এনে শান্তর হাতের সামনে নিলো
শান্ত রুপার হাত ধরলো না,সে তার হাত এগিয়ে নিয়ে আহানার ঠোঁট স্পর্শ করলো,আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটটা এলিয়ে দিয়ে হেসে বললো “এইটা আহানা”
.
ভাইয়া কেমনে বুঝলেন?কেউ কেউ তো হাত ধরেও চিনে না আর আপনি কিনা ঠোঁট ধরে চিনতে পারলেন?
.
আহানা ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়নি তাই চিনেছি আমি,, ওর শ্বাস নিশ্বাস সব কিছুর সাথে পরিচিত আমি
.
ওহ!!আচ্ছা,নওশাদ দেখে কিছু শিখো
.
হুহহহ!!শান্ত চল এই পুকুরে মাছ ধরবো
.
চল!!
.
আর আমরা?
.
তোমরা তাকায় তাকায় দেখো
.
শান্ত আর নওশাদ পুকুরের মালিকের সাথে কথা বলে জাল নিয়ে এসে হাজির
রুপা পিক তুলতেসে কারণ শান্ত আর নওশাদ লুঙ্গি পরে সেটা পেঁচিয়ে উদম গায়ে পুকুরে নেমেছে
আহানা মুখে হাত দিয়ে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে
প্রচন্ডভাবে লজ্জা করছে তার,এর আগে সে শান্তকে এমন বেশে দেখেনি,আর শান্তকে উদম গায়ে দেখলে তার নিজেরই গায়ে কাঁটা দেয় শুধু
কিছুক্ষন বাদে আহানা চোখ বড় করে সামনে তাকালো,তার সামনে একটা ইয়া বড় রুই মাছ ঝুলতেসে,শান্ত ঝুলিয়ে ধরে রেখেছে
.
দেখসো?তোমার জামাই মাছ ধরায় কত এক্সপার্ট ?
.
নওশাদ ভাইয়া কি ধরছে?
.
হেহে?আমি তো শান্তর থেকে এক কদম এগিয়ে,আমি একটা রুই মাছ আর একটা….
.
কার জামাই দেখতে হবে না??রুপার জামাই নওশাদ তো বেশি মাছ ধরবেই হুহহহহ?
.
পুরো কথা তো শুনো রুপা!!আমি একটা রুই মাছ আর একটা তেলাপিয়া মাছের বাবু ধরসি?
.
কথাটা শুনে রুপা রেগে নওশাদের চুল টেনে দিলো
.
আরে এমন করো কেন,এটা ভাজি করতে অনেক মজা লাগবে
.
শান্ত আর আহানা হাসতে হাসতে রিসোর্টের দিকে যাচ্ছে
রিসোর্টের রান্নাঘরে গিয়ে যিনি রান্না করেন তার হাতে মাছগুলো দিয়ে তারা যে যার রুমে ফিরে আসলো
শান্ত গোসল করতে গেসে
আহানা শাড়ীটা পাল্টিয়ে একটা থ্রি পিস পরে নিলো,আবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সে
.
বিকাল হয়ে গেসে,৫টা বাজে মনে হয়,আহানা বারান্দার থেকে উঠে বটগাছটায় পা দুলিয়ে বসলো,বেশ লাগতেসে,চা হলে আরও বেশ হতো
.
পা দুলিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে সে,দূর দূরান্তে কোনো বাড়িঘর নেই,বিরাট এক সবুজ মাঠের মাঝখানে রিসোর্টটা আর রিসোর্টের পিছনে একটা খাল বয়ে গেসে,পাশে এই বটগাছটা আর সামনে এক কাতারে ১কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কলাগাছ লাগানো,জায়গাটা বেশ সুন্দর,ঠাণ্ডা নিরিবিলি তাই হয়ত রিসোর্টটার নামও “নিরিবিলি”
শান্ত গোসল করে এসে দেখলো আহানা পা দুলিয়ে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে
কিছুক্ষণের জন্য শান্তর মনে হলো এই বুঝি আহানাকে হারিয়ে ফেললো সে
দৌড়ে এসে আহানার কোমড় জড়িয়ে ওকে উপর থেকে নামিয়ে নিলো সে
.
আরে আরে কি হইসে??
.
কি হইসে মানে?তুমি এত রিস্ক নিয়ে উঠে বসতে গেসো কেন?তাও পা দুলিয়ে,মাথা কি গেসে তোমার??বলদা গার্ডেন একটা
.
কথাটা গুলো বলে শান্ত চুল মুছতে মুছতে ল্যান্ডলাইনে কল করে বললো দুকাপ চা আর বিসকিট পাঠাতে
.
আহানা গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে আছে
.
কি?হাড্ডি ভাঙ্গলে ভালো লাগতো তোমার?
.
পড়ি নাই তো,জায়গাটা সেফ,আর আমি এক হাত দিয়ে গাছ ধরেও রাখসিলাম
.
শান্ত হাতে থাকা তোয়ালে আহানার গায়ে ছুঁড়ে মেরে গিয়ে ঠাস করে বারান্দার দরজা লাগিয়ে ফেললো
আহানা তোয়ালে মুখ থেকে সরিয়ে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে,মনে হয় এখনই বুঝি কেঁদে দিবে
.
তারপর শান্ত রুমের পর্দা টেনে দিলো,পুরো রুম কিঞ্চিত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে
আহানা এখনও বোকার মত চেয়ে আছে শান্তর মুখের দিকে
শান্ত এগিয়ে এসে হঠাৎ আচমকা আহানার ঠোঁটটা ৫সেকেন্ড ছুঁয়ে ওকে ছেড়ে পাশ থেকে তোয়ালে নিয়ে আয়নার সামনে চলে গেলো
আহানা ভূত দেখার মত ভয় পেয়ে থ মেরে বসে আছে
হুট করে শান্ত কিস করে বসবে তা একদমই ভাবেনি সে
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬৩
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬৩
#Writer_Afnan_Lara
?
তো আমি একদিন বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে দেখলাম সামনে দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যাচ্ছে
আমি কি ভয়টা না পেয়েছিলাম সেদিন
সাথে সাথে গোয়াল ঘরে লুকিয়ে পড়সিলাম,আমাকে তারা দেখতে পায়নি,তারা চলে যাওয়ার পর আমি মাঠে ফিরে গেসি বাবার জন্য চাল আর ডাল নিয়ে,মা রেঁধে দিসিলো
.
নওশাদ চাচার পিছন দিয়ে মাথা বাঁকিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে হেসে যাচ্ছে
শান্ত হাত দিয়ে তার মাথার চুল টানতেসে
.
রাত ৮টার দিকে চাচার কথা বলা শেষ হলো,শান্তর ঘুম এসে গেসিলো
নওশাদ তো সোফায় ঘুমিয়ে গেসে কাহিনী শুনতে শুনতে,পরে রুপা ফিরে এসে ওকে টেনে রুমে নিয়ে গেছে
.
শান্ত ঘাড়ে হাত দিয়ে চাপতে চাপতে নিজের রুমে ফিরে আসলো
“”লাইট অফ কেন!””
শান্ত লাইট জ্বালালো
লাইট অন করে দেখলো আহানা বিছানার এক কোণায় শুয়ে আছে হাত পা গুটিয়ে
শান্ত হেসে দিয়ে পুরো রুমটার দিকে তাকালো,খুব সুন্দর করেই সাজিয়েছে নওশাদ আর রুপা মিলে
হঠাৎ করে পিছন থেকে নওশাদ এক ধাক্কা মেরে ওকে রুমে ঢুকিয়ে বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো
.
এতক্ষন পর সুযোগ পেলি বউয়ের কাছে আসার আর এখন আবার ড্যাবড্যাব করে রুমই দেখে যাচ্ছিস,হারামি!!
.
তাই বলে ধাক্কা দিবি?আমার আর একটুর জন্য হার্ট এ্যাটাক হতো
.
শান্ত পিছন ফিরে আহানার দিকে তাকালো,পা টিপে টিপে ওর পাশে এসে হাঁটু গেড়ে নিচে বসলো
আহানার থুতনির তিলটা ধরে টেনে দিয়ে সেখানে কামড় বসিয়ে দিতেই আহানা ভয় পেয়ে উঠে বসে পড়লো
ভালো করে চেয়ে দেখলো শান্ত বসে আছে হাঁটু গেড়ে,ভয় টা চলে গেলো সাথে সাথে,খুশি হয়ে আহানা বিছানা থেকে নেমে গিয়ে শান্তকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে
.
কি হয়েছে?ভয় পেলা?
.
আপনি কোথায় ছিলেন সারাদিন?আমি আপনাকে একবারের জন্যও দেখতে পাইনি,একবারও কি আমাকে দেখতে মন চায়নি আপনার?
.
চেয়েছে,কিন্তু সময় পাইনি,তার জন্য সরি
এক মিনিট তোমার গা কাঁপতেসে কেন,শরীর খারাপ নাকি??
.
না,এমনি একটু দূর্বল লাগতেসে
.
খেয়েছিলা কিছু?
.
হুমম,দুপুরে রুপা এনে দিয়েছিলো খাবার
.
তারপর থেকে কিছু খাওনি?
.
আমার খিধে নেই তো
.
চুপ!
.
শান্ত দরজার কাছে গিয়ে নক করতে লাগলো বারবার,কেউ নেই,যে যার রুমে চলে গেছে
.
আমি বললাম তো আমি ঠিক আছি,আমার খিধে নেই
.
এবার শান্ত ফোন নিয়ে নওশাদকে ফোন করে আনালো
.
কিরে??সবে না তোকে ঠেলে ঢুকালাম,আবার কি চাই?বাইরে কিছু রেখে গেছেন নাকি?আমি আনি দিব???
.
হারামি দরজা খোল,আহানা কিছু খায়নি দুপুর থেকে ওর জন্য খাবার আনবো
.
তুই থাক আমি খাবারের ব্যবস্থা করতেসি
.
ওকে
.
আহানা গাল ফুলিয়ে খাটে বসে আছে
এবার তার নজর গেলো রুমের দিকে,রুমটা তো বেশ সাজানো হয়েছে বাহ কি সুন্দর,গোলাপ আর গোলাপ,মনে হয় গোলাপের মেলা বসেছে,আমি তো খেয়ালই করিনি
.
শান্ত দরজা থেকে সরে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির উপরের কোটিটা খুলে ফেললো
নওশাদ খাবার এনে দরজা খুলে খাবারের প্লেট শান্তর হাতে দিয়ে চোখ মেরে চলে গেলো সে
শান্ত হাত ধুয়ে এসে আহানার পাশে বিছানায় গোল হয়ে বসলো
আহানাকে জোর করিয়ে পুরো প্লেটের পোলাও মাংস খাইয়ে দিলো সে
তার এক কথা সেটা হলো খাওয়া দাওয়া যেন বেশি বেশি করে
.
আহানা দরজার দিকে তাকিয়ে একটু নড়েচড়ে বসলো
শান্ত হাত ধুয়ে এসে নিজের পাঞ্জাবি খুলতেসে এবার
আহানা ঢোক গিলে কোমড় থেকে কাগজটা নিয়ে চেয়ে রইলো
শান্ত আয়নায় চোখ রেখে বললো”আমি তোমাকে জোর করবো না,ঘুমিয়ে পড়ো”
.
কথাটা বলেই শান্ত আহানার পাশে এসে শুয়ে পড়লো
আহানা কাগজটার দিকে একবার তাকাচ্ছে আবার শান্তর দিকে
শান্ত চ্যাপটা হয়ে শুয়েছে,পুরো পিঠ তার উপরের দিকে
আহানা শান্তর পিঠের দিকে তাকিয়ে বসে আছে,ঠিকই এই ডিসিশনের দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে,এদিকে আমি কি করবো
আহানা কাগজটা ল্যাম্পশ্যাডের উপরে রেখে শান্তর দিকে তাকালো,তারপর লাইটটাও অফ করে দিলো
পুরো রুম অন্ধকার,আহানার চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজটাই হচ্ছে শুধু
বসে বসে অন্ধকারে সে নিজের চুড়ি গুলো খুলতেসে শান্তর ঘুমের যেন ডিস্টার্ব না হয় তাই লাইট ও জ্বালায়নি সাথে আস্তে আস্তে চুড়ি খুলে যাচ্ছে
অন্ধকারে কানার মত চুড়ি গুলো সব খুলেছে সে,এবার সমস্যা হলো গলার নেকলেস গুলো নিয়ে,ওগুলা টানতে টানতে হাত গলা ব্যাথা হয়ে গেসে কিন্তু সেগুলো খোলাই যাচ্ছে না
বাধ্য হয়ে সে লাইট জ্বালালো আবার,শান্ত ঘুমাচ্ছে তবে হাবভাব দেখে মনে হয় না এখন ঘুমে বিভোর সে
কারণ রাত সাড়ে ৮টার সময় শান্ত কোনোদিন ঘুমায় না
আহানা শান্তর পিঠে হাত রেখে ওকে জাগানোর চেষ্টা করলো
শান্ত সাথে সাথে মুখ তুলে বললো”কি?
.
ঐ আসলে নেকলেস গুলো খুলতে পারছি না
.
আচ্ছা
.
শান্ত উঠে এক এক করে নেকলেস সব খুলে দিয়ে আবার দুম করে শুয়ে পড়লো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে,এতদিন রোমান্টিক মুড দেখিয়ে আর আজ কিনা তাকাচ্ছেও না??
এসব ভেবে তারপর শুয়ে পড়লো আহানা,ল্যাম্পশ্যাডের উপরের কাগজটার দিকে তাকিয়ে থেকে কাগজটা বলপয়েন্ট দিয়ে চাপা দিয়ে শান্তর দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে
.
এটা ভাবতে এতক্ষণ লাগছে আপনার আহানা ম্যাডাম?
.
আপনি বুঝবেন না
.
কেন বুঝবো না?
.
কিছু না,বাদ দেন
.
শান্ত উঠে বসে পড়লো,আহানা চমকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত এগিয়ে আসতেই আহানা একটু পিছিয়ে গেলো সাথে সাথে
শান্ত হাত বাড়িয়ে ল্যাম্প শ্যাড অফ করে দিলো
.
অন্ধকারে আহানা শান্তর হাত খুঁজে ধরে রেখেছে ভয়ে
.
২সেকেন্ড বাদেই কানের কাছে শান্তর ঠোঁটের স্পর্শ পেলো সে
শান্ত ওর কানে ঠোঁট লাগিয়ে চুপ করে আছে,তারপর ফিসফিস করে বললো”আজ কাগজটা দেখাবা না?”
.
উহু
.
কেন?আজ শান্তকে চাই বুঝি?
.
আহানা আর কিছু বললো না চুপ করে জানালার বাইরের দিকে চেয়ে রইলো
ক্ষেতের মাঝখানে থাকা পিলারটায় যে বাতি জ্বলতেসে সেটারই আলো আসতেসে এখন রুমে
.
আজ শান্ত আহানাকে নিজের মত করে ভালোবাসতেসে,আহানা তার জীবনের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়েছে আজ,শান্ত একবারের জন্যও তাকে সেসব মনে করতে দেয়নি
শেষরাতে একটা দুঃস্বপ্নে জেগে গেলো আহানা,রুম অন্ধকার বলে খুব ভয় হলো তার,তাড়াতাড়ি করে ল্যাম্পশ্যাডের সুইচে টিপ দিলো,জ্বলতেসে না মনে হয় কারেন্ট নেই
এদিক ওদিক ছটফট করে শান্তর গায়ের স্পর্শ পেতেই ভয়টা কমলো তার,তখনই কারেন্ট চলে আসলো
শান্ত চাদর জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে,আহানা কিছুক্ষন ওর দিকে চেয়ে রইলো তারপর ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো,৩টা বাজে মনে হয়,কিছুক্ষন বাদেই আবছা আলোতে ভরে যাবে চারিদিক
আহানা জানালার ধারে এসে আনমনে বাইরের দিকে চেয়ে আছে
কি একটা যেন খারাপ স্বপ্ন দেখলাম,তবে কি দেখেছি সেটাই মনে আসতেসে না
শান্তকে কি জাগাবো?নাহ থাক!ঘুমাক
ফজরের আজান দিতে আর কয়েক মিনিট বাকি
আহানা ব্যাগ থেকে একটা সুতির খয়েরী রঙের শাড়ী নিয়ে গোসল করে পরে আসলো
আজানা দিয়ে দিয়েছে ততক্ষনে
আহানা জায়নামাজ নিয়ে শান্তকে ২বার ডেকে জানালার পাশে ফ্লোরে নামাজ পরে নিলো
শান্ত ততক্ষণে উঠে গেসে,চোখ ডলতে ডলতে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেসে সে
আহানা নামাজ শেষ করে বিছানা থেকে ফুলগুলো ঝেড়ে বিছানায় এসে বসলো
শান্ত বাথরুম থেকে বের হতেই দেখলো আহানা খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে
চুপচাপ নামাজটা পড়ে শান্তও এসে আহানার পাশে বসলো,ওর চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে দিচ্ছে সে
আহানা ঠিক করে চুল ও মুছতে জানে না
শান্ত ওর চুল মুছে দিচ্ছে আর সে আয়নার দিকে তাকিয়ে বসে আছে চুপ করে
চুল মোছা শেষ করে শান্ত এক হাত দিয়ে আহানাকে ধরে বুকে এনে রাখলো
শান্তর বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে আহানা
সকাল ৮টার দিকে মিতু চা বিসকিট নিয়ে এসে দরজায় নক করলো
শান্ত নামাজ পরে যে বিছানায় বসেছে তেমনই ছিল ঘুম আসেনি তার,আহানা ঘুমিয়েছে সেটাই শুধু দেখেছে সে
গিয়ে দরজা খুলে মিতুর হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে আবার ফিরে আসলো,আহানা খুব সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে,গালের নিচে তার দুহাত গুছিয়ে রেখে শুয়েছে,মুখে হাসি,নিশ্চয় স্বপ্নে ভালো কিছু দেখতেসে
শান্ত আহানার চুল গুলো নিয়ে কানের পাশে গুজে দিলো ভালোমতন করে
তারপর আহানার থুতনির তিলটা ধরে টেনে দিলো
আহানা জেগে গিয়ে উঠে বসে পড়েছে
.
ইস জেগে গেলা?সরি,আচ্ছা জাগছো যখন চা খেয়ে নাও
.
কয়টা বাজে??ইস,৮টা বেজে গেছে,আমি এত কেন ঘুমাইলাম ধুর!
.
ইটস ওকে,বাসায় কেউ আমাদের অপেক্ষা করছে না আহানা
.
ওহহ,তারপরেও এত দেরি হয়ে গেলো,কি ভাববে সবাই
.
আহানা চায়ে এক চুমুক দিয়ে উঠে পড়লো
চুল এখনও ভিজে আছে, আয়নার সামনে এসে শাড়ীর সাথে মিলিয়ে চুড়ি পরতেসে সে
শান্ত একটা বিসকুট খেয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আহানার পিছনে এসে দাঁড়ালো
মুখ নিয়ে আহানার ঘাড়ে রাখতেই আহানা নড়ে উঠতে গেলো
শান্ত ফিসফিসিয়ে বললো “খবরদার নড়বা না!আমার হাতে কিন্তু গরম চায়ের কাপ”
.
আহানা রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে
শান্ত ওর ঘাড়ে একটা চুমু দিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চলে গেলো
আহানা মুচকি হেসে চুড়িগুলো পরে চা শেষ করলো তারপর সেও বের হলো রুম থেকে
.
সোফার রুমে এসে দেখলো কেউ নেই,রেনু মা,খালা,ফুফু রান্নাঘরে, বাবা বাগানে মিতুর সাথে কথা বলতেসেন
আহানা সব দেখে পিছন ফিরতেই দেখলো রুপা দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
কি?
.
কি মানে??তুই এখন আমাকে বলবি কি কি হইসে কাল
.
এটা কোন ধরনের প্রশ্ন??কি কি হইসে মানে,বাসর রাতে কি কত কিছু হয় নাকি যেভাবে জিজ্ঞেস করতেছিস?
.
নেগেটিভ নেস কেন?আমি কি চুম্মাচাম্মির কথা জিগাইসি নাকি?ভাইয়া কি দিলো সেটা বল,খালি উল্টা পাল্টা ভাবোস তুই,আমি কি তোকে এত খারাপ কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি নাকি,আমার ও তো লজ্জা আছে
.
তোর লজ্জা আছে বুঝি?আজ জানলাম আমি
.
বল না ভাইয়া তোকে কি দিয়েছে?
.
আহানা হেসে বললো আমার জীবনকে পূর্নতা দিয়েছে সে,আর কি চাই
.
কি বলিস তুই?বাসর রাতে হাসবেন্ড তার ওয়াইফকে কিছু না কিছু গিফট দেয়,আর শান্ত ভাইয়া বুঝি তোকে দেয়নি?এটা আমি বিশ্বাস করতে পারতেসি না
কথাটা বলে রুপার চোখ গেলো আহানার কোমড়ের দিকে,চিকচিক করতেসে,চোখ বড় করে সে আহানার কোমড় থেকে শাড়ী সরিয়ে যা দেখলো তার তো মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা
আহানার কোমড়ে সোনার একটা কোমড়ের বিছা
.
তুই আমাকে মিথ্যা বললি??তোকে ভাইয়া এত গর্জিয়াস একটা গিফট দিয়েছে আর তুই বলিস কিছু দেয়নি??
.
আহানা চমকে তার কোমড়ে হাত দিয়ে চেয়ে রইলো,এত সুন্দর দামি একটা জিনিস তার কোমড়ে ছিল সে বুঝতেই পারেনি
দৌড়ে বাসা থকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তকে খুঁজতে লাগলো সে,টুটুল মিয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করলো শান্ত কই
উনি বললেন “বাইরে হাঁটতে গেসে”
আহানা বাসা থেকে বেরিয়ে দেখলো শান্ত আশ্রমের দিকে যাচ্ছে,আহানা দৌড়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
আহানা?তুমি এখানে?আশ্রমে যাচ্ছি,যাবা?
.
এক মিনিট,এটা আপনি দিসেন কখন??
.
পছন্দ হয়েছে তোমার?
.
এত দামি গিফট দেওয়ার কি ছিল??
.
শান্ত হাঁটতে হাঁটতে বললো ” আমার বউকে আমি গিফট দিয়েছি,তাতে তোমার কি”??
.
আমার কি মানে?এটা কেন দিলেন আপনি?
.
এটা দেওয়ার কারণ আছে
.
কি?
.
তোমার কাগজের শর্ত কাল আমি ভেঙ্গেছি, তোমার কোমড়ে থাকা কাগজটা তো মন খারাপ করেছে সাথে কোমড় ও,কারণ কাগজটার বউ ছিল তোমার কোমড়,তাই কোমড়কে সাজিয়ে দিলাম সোনার কোমড়ের বিছা দিয়ে,সেও খুশি তার স্বামী কাগজটাও খুশি সাথে আমার বউ ও
.
আপনি কখন পরালেন এটা?আমি তো দেখিনি
.
তুমি যখন নামাজ পরে ঘুমিয়ে পড়েছিলা তখন পরিয়ে দিয়েছিলাম
.
আহানা কোমড়ের দিকে তাকিয়ে শান্তর পাশে হাঁটতেসে,শান্তর ফোন বেজে উঠলো,শান্ত বললো ডাক্তারের ফোন
.
হ্যালো
.
শাহরিয়ার শান্ত??
.
হুম
.
আপনার ওয়াইফের রক্ত নিয়ে যে টেস্ট গুলো করিয়েছিলেন ওগুলোর রিপোর্ট তো এসে গেছে কাইন্ডলি এসে নিয়ে যাইয়েন আর হ্যাঁ রিপোর্টটা দেখলাম.আপনার ওয়াইফের তো….
.
হ্যালো??আমি শুনতেসি না,নেট নেই এখানে,কি বলতেসেন??
উফ!! এই নেটওয়ার্ক সিরিয়াস টাইমে কাজে আসে না
.
কি বললো?
.
বললো রিপোর্ট এসে নিয়ে যেতে,রিপোর্ট এসে গেসে
.
ওহ,তাহলে আমরা ঢাকা ফিরবো কবে?
.
এখন না,এখানে একটা নাম করা রিসোর্ট আছে,আমি তুমি আর নওশাদ রুপা যাবো সেখানে,কয়েকদিন ঘুরে সোজা ঢাকায় ফিরবো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে গেলো শান্ত ওর হাত ধরে ফেলেছে,পিছন ফিরতেই সে শান্তর মুখের দিকে চমকে তাকালো,হঠাৎ এসময়ে হাত ধরলো কেন সেটাই বুঝতেসে না
.
শান্ত count down করতেসে
৫…৪…৩…২…১!!!
একটা জড়ো বাতাসে উপর থেকে শতে শতে পাতা আর কৃষ্ণচূড়া ফুল পড়তেসে আহানার গায়ে,আহানা হেসে হাত বাড়িয়ে এক মুঠো ফুল নিয়ে হাসতে হাসতে বললো “এখানে এই গাছটা আছে?আমি তো জানতামই না একদম খেয়াল করিনি”
.
শান্ত আহানার চুলে গোটা একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল গুজে দিতে দিতে বললো “”♥আমার মায়াবতী যেখানে তার প্রিয় সবকিছু সেখানে♥””
.
আহানা খুশি হয়ে শান্তকে জড়িয়ে ধরলো কাছে এসে
.
শান্ত মুচকি হেসে পকেট থেকে সানগ্লাসটা পরে হঠাৎ করে আহানাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে হাঁটা ধরলো আর একটা ভাব নিয়ে বললো-
“কোথা থেকে এসেছো তুমি মেয়ে??আমাকে চড় দিয়েছিলা যে মনে আছে তোমার??
যাও ভাগো,তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই!!
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬২
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬২
#Writer_Afnan_Lara
?
সকাল ১১টা বাজে,,মেহমানে ভর্তি পুরো বাড়ি,আর কেউ আসা বাকি নেই কারণ সবাইকে বলা হইসে ৯টায় চলে আসতে যেখানে এখন ১১টা বেজে গেছে তাই আর কেউ আসবে না,আসার বাকিও নেই,সবাই দখল করে নিয়েছে যার যার সিট
শান্ত সানগ্লাস পরে স্টেজে বসে আছে,নওশাদ ঝুলে /শুয়ে/উল্টে শান্তর ছবি তোলায় ব্যস্ত
আর রুপা একবার এক ফুল নিয়ে তার মাথায়,কোমড়ে,কানে গুজতেসে
আহানা ড্রয়িং রুমে রোবটের মতো বসে আছে,ওর ডান পাশে শান্তর ফুফু ছোটজন আর বাম পাশে ওর নানু
তারা একবার এক প্রশ্ন করতেসে,তবে কেউ কোনো নেগেটিভ মন্তব্য করেনি কারণ আহানা সয়ং শান্তির পছন্দ করা মেয়ে,তাই কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না
কিন্তু বিয়ে বাড়ি বলে কথা একজন না একজন তো কটু কথা বলবেই আর তাই হলো
রেনুর মা এসে আহানার পাশে বসে মুখ ফুটে বলেই দিলেন কটু কথা
আর তা হলো “শুনসো তোমরা??মাইয়ার নাকি জন্মের ঠিক নাই,অনাথ?
অনাথ মাইয়ারা তো সব অবৈধ হয়”
.
আহানা মুখ তুলে উনার দিকে তাকিয়ে আবার ফ্লোরে দিকে চোখ নামিয়ে নিলো,এই কথা সে আরও শুনেছে
এই বাড়িতে এসে এত হাসি আনন্দের মাঝে সে আসলেই ভুলে গেসিলো সব এখন মনে পড়লো আবার,সমাজ আপনাকে আপনার অতীত মনে করিয়ে দিতে কখনও পিছু পা হবে না,আপনার মরনের সময় ও না,এটাই হয়ে আসছে,পরেও হবে
সমাজ কে বদলানোর ক্ষমতা নেই কারও
.
মিতু শরবতের ট্রে নিয়ে সামনে এসে ওর নানুর হাতে শরবত এক গ্লাস দিয়ে বললো”” মা তোমাকে ডাকে যাও সেদিকে যাও
তোমার কি এতো??এসব শান্ত ভাইয়া বুঝে নিবে
তুমি এসব বললে তার মা বাবা ফিরে এসে তোমাকে সালাম করবে না,মেয়ের হবু জামাইয়ের সৎ মায়ের মা হিসেবে তোমাকে কানাকড়ি ও দিবে না
তাহলে তোমার এত কিসের কথা,যাও ভিতরের রুমে গিয়ে আরাম করো,তোমার না বাতের ব্যাথা??বাতের ব্যাথার জন্য নাকি জগ থেকে পানি ঢেলেও খেতে পারো না তাহলে এত কথা আসে কই থেকে??””
আহানা মুচকি হেসে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে
মিতু ট্রেটা নিয়ে যেতে যেতে বললো “তোমারে আমি পছন্দ করি না, আবার ঘৃনাও করি না,তুমি আমার ভাইয়ার বউ বলে ব্যস এইটুকু,আর কিছু না হুহহহ”
♣
কিরে ভাই নওশাদ?আমার বউ কোথায়??কতক্ষণ হলো দেখি না তারে
.
ঢং!!রুপা গেসে আনতে
.
রুপা আহানাকে স্টেজে নিয়ে আনলো,আহানা শান্তর পাশে বসে শান্তর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে তারপর সামনের দিকে তাকালো,সামনে সবাই চেয়ার নিয়ে বসে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে
.
শান্ত সবার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখ নিয়ে বললো”কেঁদেছিলে কেন?কেউ কিছু বলছে নাকি?”
.
আহানা অবাক হয়ে শান্তর দিকে তাকালো””শান্ত জানে কি করে যে আমি কেঁদেছিলাম”
.
মিতু স্টেজে উঠে শান্তর পাঞ্জাবির পকেটে একটা গাঁদা ফুল আর গোলাপ সেফটিপিন দিয়ে লাগাতে লাগাতে বললো “”ভাইয়া!! ভাবীকে নানু কথা শুনাইসিলো আমিও কম না আমিও শুনাই দিসি তারে””
শান্ত হা করে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে,মিতুর হলো টা কি!!!
যে মেয়েটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জীবনে কথা বলতো না আর সে কিনা এখন আমার সাথে বোনের মত মিশে গেসে যেমনটা আমি এতটা বছর ধরে চেয়েছিলাম”
শান্ত ছলছল চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে
মিতু শান্তর চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে চলো যেতে যেতে বললো “খাতির এমনি এমনি করতেসি না,বড় টেডিবিয়ার একটা কিনে দিতে হবে হুমমম!””
.
ওকে ডান!!!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা শান্তর হাসি দেখে নিজেও খুব খুশি হলো
শান্ত আহানার দিকে না তাকিয়ে ওর হাতটা ধরে বললো “”জানো আমাদের বিয়েটা আমাকে এক এক করে কত খুশি দিচ্ছে??
.
হুম
.
আই এম সো হ্যাপি,ইচ্ছে করছে তোমাকে ধরে…
.
আহানা চোখ বড় করে কোমড়ে হাত দিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে রইলো
শান্ত আহানার কোমড়ে হালকা করে চিমটি দিয়ে সোজা হয়ে বসে গাল ফুলিয়ে বললো “তোমার এই কাগজ কাল রাতে আমি ইঁদুর ভাড়া করে কাটাবো মনে রেখো তুমি!!
.
আহানা হাসতেসে শান্তর কথা শুনে
আত্নীয় স্বজন সবাই এক এক করে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে আহানা আর শান্তকে
বিকাল সাড়ে ৫টা বেজে গেসে,শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে বাঁকা হয়ে হাঁটতেসে,সকালে যে বসছে আর সারাদিন গিয়ে এখন উঠলো
কোমড় ব্যাথা হয়ে গেসে তার
“ভাবসি বাবা তার ১৪গুষ্টিকে ইনবাইট করেছে কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ২০গুষ্টিকেই দাওয়াত করেছে,তার উপর একজন একজন করে গায়ে হলুদ লাগিয়েছে আমার
মাগো মা!!১জন করে করে যদি ৯৮৭জন হলুদ লাগায় তাহলে কত ঘন্টা লাগে??””
.
হিসাব করিস না আমি বলতেসি,গোটা একদিন লাগে?
.
নওশাদ তুই হাসতেসিস??উফ!! আমি শেষ
শান্ত নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বাথরুমে গেলো গোসল করতে
.
একি দরজা লক কেন,কে ভিতরে??
.
আমি!
.
তুমি?তুমি না তখন নিচে ছিলে এখন এখানে এলে কি করে,বাহির হও আমি ফ্রেশ হবো
.
আমি গোসল করে নিসি এবার বের হবো,আপনি সরুন
.
কেন সরবো?
.
সরতে বলসি সরুন,ঐদিকে ফিরে দাঁড়ান
.
শান্ত উপায় না পেয়ে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়ালো
আহানা তোয়ালে পরে বেরিয়ে বিছানা থেকে শাড়ীটা নিয়ে বললো যান এবার
.
শান্ত বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো “”আয়না কিন্তু আমার সামনে ছিল””
.
কিহহহহ!
.
আহানা আয়নার দিকে তাকিয়ে থ মেরে বিছানায় বসে গেলো,ইস কি লজ্জা!?
.
শান্ত গোসল করে বেরিয়ে দেখলো আহানা নেই
সুযোগ পেয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো সে
অনেক খাটা খাটনি গেসে আর হাঁটা চলা কোনোমতেই সম্ভব না
হুদাই বিয়ের কাগজে সাইন করার জন্য মানুষ এত বড় বড় অনুষ্ঠান কেন করে কে জানে,সেই যার বিয়ে সে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে হয়
লাভ হলো কি?আমার এখন বর হিসেবে নাচানাচি করার সময় আর এখন কিনা আমি ক্লান্ত হয়ে চিটপটাং হয়ে গেসি
.
আহানা দৌড়ে রুমে ঢুকলো,শান্ত সবেমাত্র একটু ঘুমে বিভোর হচ্ছিলো আহানার আসার আওয়াজে জেগে লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে
আহানা এদিক ওদিক সব জায়গায় কি যেন খুঁজতেসে
.
কি হইসে?কি খুঁজো?
.
আরে আমার সেই কাগজটা,গোসল করার কোমড় থেকে নিয়ে এখানে রাখসিলাম,এখন পাচ্ছি না
.
শান্ত চাদর মুড়ি দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো, ফালতু এই কাগজ নিয়ে কত ঝামেলা যে ক্রিয়েট হচ্ছে!!
অবশেষে আহানা কাগজটা খুঁজে পেলো,খাটের নিচে ছিল,কাগজটা কোমড়ে ঢুকিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে
.
সন্ধ্যা হয়ে গেসে সবাই এবার লেগে গেছে বিয়ের আয়োজনে
.
আহানা সোফায় বসে আছে রুপার সাথে
রুপা ওকে বিয়ের ছবি দেখাচ্ছে
আর শান্ত মরার মত ঘুমাচ্ছে তার রুমে
মিতু ফুল কতগুলো নিয়ে খেলতেসে,,ফুফু,রেনু মা আর খালা মিলে শাড়ী গহনা সব রেডি করতেসে
বাবা বাবুর্চির সাথে বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতেসেন
.
রুপা দাঁত কেলিয়ে বললো কিরে??কি খবর তোর??
.
আহামা ব্রু কুঁচকে বললো “”তোর পাশেই বসে আছি দেখতে পাস না কেমন আছি??আবার জিগানোর কি আছে??”
.
হিহি,প্রশ্নের উত্তর অন্যটা আছে??তুমি বুঝে নাও
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে সবার জন্য চা বানাতে লেগে পড়লো
হঠাৎ রান্নাঘরের কারোর উপস্থিতি টের পেলো সে
ভাবলো খালা বা ফুফু হবে কিন্তু তার কোমড়ে হাত লাগতেই আহানা চুলার পাশের থেকে খুন্তি নিয়ে দুম করে এক বাড়ি দিয়ে দিলো কারন তার ধারনা হলো শান্ত তো হবে না,কারণ সে ঘুমাচ্ছে,সায়ন হতে পারে বলেই আহানা খুন্তি দিয়ে এক বাড়ি দিয়ে দিলো
.
আউচচচচ!
.
আহানা চোখ বড় করে চেয়ে আছে, শান্ত হাত ধরে ঝাঁকাচ্ছে ব্যাথায়
.
আহানা এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে বললো “সরি আমি বুঝতে পারিনি আপনি,আমি ভাবসি…”
.
কথা বলতে বলতে আহানা শান্তর হাত মুছতেসে বারবার
.
ওকে কুল ডাউন,কিছু হয়নি,ব্যাথা বেশি পাইনি
.
আহানা মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
শান্ত মুচকি হেসে ওর গাল টিপে দিয়ে বিসকিট একটা নিয়ে চলে গেলো
আহানা চা বানাতে বানাতে ভাবলো শান্ত ও তো হতে পারে এটা ভাবলাম না কেন!ধুর ধুর!!
♣
চা খাওয়া শেষ করে আহানা আর শান্ত ছাদে এসে বসে আছে আকাশের তারার দিকে চেয়ে,তারাগুলো গুনার কম্পিটিশন করতেসে দুজনে,আকাশকে দুভাগ করে এই পাশের তারা শান্ত গুনতেসে আর ওপাশের গুলো আহানা
১০মিনিট বাদে শান্ত আহানাকে জিজ্ঞেস করলো কতগুলো গুনলে??
.
পারতেসি না,শুধু এলোমেলো হয়ে যায় হিসাব,এক কাতারে থাকলে গুনা যেতো কিন্তু এগুলো তো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,আচ্ছা আপনি কতগুলো গুনলেন?
.
২হাজার ১০৯টা
.
বললেই হলো??আপনি এত সিউর দিয়ে কি করে বলতে পারলেন?
.
আরে আমি যদি বলি ১০হাজার ১টা আছে কার সাধ্য আছে এসে গুনার?আমাকে ভুল প্রমান করতে গিয়ে সে তার জীবনের অর্ধেক সময় নষ্ট কেন করতে যাবে তাও তারা গুনার জন্য??
.
তাও তে কথা
.
হুম তাই আন্দাজে ঢিল মারি দিসি?
.
আপনি পারেন ও বটে!!
.
ওকে চলো অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবো,কাল সকাল সকাল আবার বিয়ের কাজ শুরু হয়ে যাবে
শান্ত আহানার হাত ধরে রুমে ফিরে আসলো,আহানা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আছে,বাইরের এক মিষ্টি বাতাস এসে গায়ে লাগতেসে
শান্ত এগিয়ে আসা ধরতেই দরজায় কে যেন নক করলো
এই অসময়ে কে আসলো আবার??
শান্ত দরজা খুলতেই দেখলো নওশাদ দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে,ওর হাতে বালিশ ও আছে
.
কিরে তুই এখানে কেন?রুপা কি তোরে বের করে দিয়েছে নাকি?
.
না,আঙ্কেলের অর্ডার বিয়ের আগের দিন তোরা একসাথে থাকতে পারবি না,যদিও আগে বিয়ে হয়েছে তাও এটা মানতে হবে,আহানাকে বল রুপার সাথে গিয়ে ঘুমাতে
.
নওশাদ গিয়ে শান্তর বিছানায় শুয়ে পড়লো
আহানা মুচকি হেসে তার নিজের বালিশ নিয়ে চলে গেলো
শান্ত ওর পিছন পিছন করিডোর পর্যন্ত চলে এসেছে
আহানার হাত ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো কি হলো??
.
যাচ্ছো?
.
হুম
.
আচ্ছা যাও
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো
.
আহানা কপালে হাত রেখে হেসে রুপার পাশে এসে শুয়ে পড়েছে
পরেরদিন সকালটা ছিল খুব খুবই মধুর!!কোথা থেকে কোয়েল পাখি এসে ডাকতেসে, ঠিক জানালার পাশের একটা মেহগনি গাছে বসে
আহান চোখ খুলেই হেসে দিলো,আশা করি যেন আজ দিনটা ভালো যায়,কিন্তু না,,বিছানা থেকে উঠে ফ্লোরে পা রাখতেই আহানার মনে হলো তার শরীরের সমস্ত শক্তি গায়েব
শরীর ভেঙ্গে আসতেসে,সারারাত ঘুমানোর পরও মনে হয় শরীরে ক্লান্তিতে ভরা
মাথা ঘুরাচ্ছে,,ঠিক তেমন লাগতেসে যেমন রক্ত দেওয়ার আগে লাগতো
অনেক কষ্টে উঠে মুখটা ধুয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বাসার নিচে চলে আসলো সে,সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে মনে হলো এই বুঝি পড়ে যাবো
শেষ সিঁড়িতে পা রেখে স্লিপ খেয়ে পড়েই যাচ্ছিলো সে,সাথে সাথে সিঁড়ির রেলিং ধরে নিজেকে সামলে নিলো আহানা
ফুফু এগিয়ে এসে আহানার মাথায় হাত রেখে বললেন”” কি হয়েছে?? শরীর খারাপ নাকি তোমার?””
.
না ফুফু,ঠিক আছি,এমনি একটু ক্লান্তি লাগতেসে, আর কিছু না,ঠিক হয়ে যাবে
.
এক এক করে বাসার সবার কাজের গতি আর ভাব দুটোই বদলে যাচ্ছে,আহানা সেই কখন থেকে রুপার রুমে বসে আছে,রুপা আর শান্তর কিছু কাজিন মিলে আহানাকে সাজাচ্ছে
আহানা সকাল থেকে একটিবারের জন্যও শান্তকে দেখেনি
শান্তকে তার চাচাতো ভাইরা আর নওশাদ মিলে সাজিয়ে ফেলেছে,রিয়াজ আর সূর্য এসে গেসে সাথে শান্তর শপিং ব্যাগ গুলো ও নিয়ে এসেছে
শান্ত মায়ের জন্য আনা শাড়ী আর চুড়ি নিয়ে আশ্রমের দিকে চললো
আহানা রেডি হয়ে বেরিয়ে সোজা শান্তর রুমে এসে দেখলো শান্ত নেই,শুধু ২টো ছেলে দাঁড়িয়ে ফোনে ছবি দেখাচ্ছে একজন আরেকজনকে
শান্তকে না দেখতে পেয়ে মন খারাপ করে আবার রুপার রুমে চলে আসলো আহানা
মনে হয় কতবছর ধরে ওকে দেখা হয় না,ভালো লাগতেসে না কিছুই
.
শান্ত মায়ের কবরে এসে দেখলো কবর পরিষ্কার করা,ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো আহানা পরিষ্কার করেছে কাল
মায়ের কবরের পাশে এসে বসলো সে,প্যাকেট গুলো একপাশে রেখে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো
.
মা জানো এগুলা আমি আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে কিনেছি,সবার আগে আমি তোমার জন্য উপহার কিনেছি মা,তোমার পছন্দ হয়েছে তো??
আজ তো আমার বিয়ে,তোমার পছন্দ করা আহানার সাথেই,তুমি তো অনেক খুশি তাই না?আমিও খুশি,যাকে ভালোবেসেছি তাকেই নিজের করে নিতে পারবো আজ,তাও তোমার কারণে হয়েছে তুমি তো ঠিক করে গেসিলে আহানাকে তাই না?
আহানা কেমন মেয়ে তা তো তুমি জানো আর তাই তাকে আমার করে দিয়ে গেসো
আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও আমাকে,আর দেখো আমার এত সুখের সময় তুমিই নেই,অথচ এই সুখটার পিছনে সম্পূর্ন তোমার হাত,তোমার ক্রেডিট,একবার এসে দেখে যেও মা,তোমার ছেলের সামনেও আসিও,তোমার ছেলে তোমাকে একবার দেখতে চায় মা
কথাগুলো বলে শান্ত উঠে চলে আসলো,উকিল এসে গেসেন কাগজপত্র নিয়ে
আহানার মা বাবার নামের জায়গায় সালেহা বেগম এবং তার স্বামীর নাম দেওয়া হয়েছে
শান্ত সোফায় বসে আছে,ওর চারপাশে বাবা,নওশাদ,সায়ন আর শান্তর কাজিনরা
শান্ত পেপারে সাইন করে দিয়েছে,এবার পেপারটা গেছে আহানার কাছে
আহানা বড় করে একটা নিশ্বাস ফেলে সাইন করে দিলো
অবশেষে বিবাহ সম্পূর্ন♥
আহানা এখনও শান্তকে দেখেনি,শান্ত ও আহানাকে দেখেনি
আহানার মন খারাপ এই ভেবে যে সে শান্তকে সারাদিনে এখনও দেখতে পারেনি,আর তার উপর শরীর ও ভালো লাগতেসে না
শান্তর মন খারাপ এই দিনে তার মা তার কাছে নেই,মাকে খুব মনে পড়তেসে আজ
মেহমানরা সব এক এক করে রুমে এসে আহানাকে দেখে চলে যাচ্ছেন
আহানাকে আজ লাল একটা বেনারসি পরানো হয়েছে,সাথে নেটের ঘোমটা,গয়না গাটি তো আছেই,হাত ভর্তি চুড়ি
আর শান্ত লাল পাঞ্জাবির উপর গোল্ডেন কালারের কোটি পরেছে
বিকাল হতেই মেহমান কমে আসলো
আহানাকে শান্তর রুমে এনে বসিয়েছে রুপা ,বাসর সাজানো হয়ছে এই কিছুক্ষন আগেই
রুপা,নওশাদ মিলে সাজিয়েছে
পুরো গোলাপ দিয়ে সাজানো,শান্তর পছন্দমত
আহানার সেদিকে খেয়াল নেই,বারবার শুধু দরজার দিকেই তাকাচ্ছে সে
অপেক্ষা করতে করতে শুয়ে পড়লো আহানা
এদিকে শান্ত নড়তেও পারতেসে না তাকে তার বাবার চাচা ঝাপটে ধরে সোফায় বসিয়ে রেখেছে,দুনিয়ার সব অতীতের কথা বলে যাচ্ছেন তিনি
মুক্তিযুদ্ধে কি কি করেছিলেন সেগুলা বলতেসেন
নওশাদ দুবার এসে শান্তকে ছুটাতে চেয়েছিল এখন উল্টা নওশাদ ও ফেঁসে গেসে,দুহাত দিয়ে এপাশে শান্তকে আর ওপাশে নওশাদকে ধরে তিনি বক্তৃতা দিচ্ছেন
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬১
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬১
#Writer_Afnan_Lara
?
“আমাকে একবার তাদের সামনে দিয়ে আসেন,আমি তাদের কাছ থেকে সন্তানের অধিকার চাইবো না শান্ত,আমি শুধু একবার তাদের ছুঁয়ে দেখতে চাই”
.
শান্তর জ্যাকেট টেনে টেনে আহানা বললো “কি হলো শান্ত খুঁজে দাও না তাদের,আমি তাদের কাছে যেতে চাই”
শান্ত চুপ করে ডোবাটার দিকে তাকিয়ে আছে
আহানা কান্না থামিয়ে হেসে দিলো,হাসতে হাসতে হাঁটা ধরলো সে
হাঁটতে হাঁটতে বললো “আমিও না বোকা,আমি তাদের খুঁজতে চাইতেসি যারা আমাকে ডোবায় ফেলে গেসিলো
এখন যদি তাদের সামনে গিয়েও দাঁড়াই আমি তারা তো আমাকে চিনলেও বলবে চিনি না
সেদিন তাদের কোনো কন্যাসন্তান জন্ম হয়নি,তারা ডোবায় তাকে ফেলেনি
বরং এখন আমি তাদের সামনে গিয়ে তাদের এতদিনের সিক্রেট ভাঙ্গতে চাই না
আমার জন্য তাদের সম্মান ক্ষুন্ন হবে পরে,থাক
তারা অজানায় থাকুক,আর আমি?অবৈধ হয়েই থাকি”
.
আহানা আর কোনোদিন এটা বলবে না,চুপ একদম!!
চলো বাসায় যাই,ডিনার করবো সবাই
.
হুম
.
দুজনে বাসায় ফিরে এসে দেখলো ডাইনিং ফুল,একটা চেয়ারও খালি নেই
একটাতে বাবা,একটাতে রেনু মা,বাকিগুলোতে সায়ন,মিতু,নওশাদ,রুপা
.
সায়ন!যাও সোফায় গিয়ে খাও,মিতু তুমিও
.
কেন আমরা কেন যাবো??ডাইনিং এ বসে খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আরও আগে থেকে এসে বসে যেতে হয়,সেটা জানে না শান্ত ভাইয়া??
.
আঙ্কেল! আমি আর রুপা গিয়ে সোফায় বসতেসি,ইটস ওকে!
.
ঐ নওশাদ,চুপ কর এত দায়িত্ববানগিরি দেখাতে হবে না
আমি আর আহানা সোফায় বসতেসি,সোফায় বসে খাওয়ার অভ্যাস আছে আমাদের
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে এসে সোফায় বসলো
ফুফু প্লেট এনে দুজনের হাতে দিয়ে শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন
তার ভাইয়ের ছেলে আর ছেলের বউ কিনা একটা পর ছেলের জন্য সোফায় বসে খাচ্ছ
এই ভেবে তার খুব খারাপ লাগতেসে
.
আহানা এক লোকমা খেয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,খিধা নাই তার,তারউপর শান্তর ভয়ে কিছু বলতেও পারতেসে না
শান্ত খেতে খেতে বললো “”রেখে দাও,আমি খাইয়ে দিচ্ছি,কিন্তু তোমাকে পুরো খাবার শেষ করতে হবেই হবে””
.
আহানা গাল ফুলিয়ে বসে আছে আর শান্ত ওকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে
পুরো এক প্লেট খাবার খাওয়ালো জোর করে
খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেসে,লাইটস অফ!!
.
আহানা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে,কাল থেকে ঠিক করে আঁচড়ানো হয়নি বলে জট পাকিয়েছে অনেক
অনেক কষ্টে চুলের জট খুললো,শান্ত উলটে শুয়ে আছে বিছানায়
আহানা গায়ের শাড়ীটা পাল্টিয়ে একটা কালো রঙের সোনালী পারের শাড়ী পরে আসলো,শান্তর পাশে একটুখানি জায়গা খালি আছে বিছানায়,শান্ত হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে
আহানা মুচকি হেসে সেই একটুখানি জায়গায় গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে পড়লো,এই প্রথম সে শান্তর পাশে শুয়েছে
শান্তর মুখের অর্ধেক দেখা যাচ্ছে শুধু,বাকিটা তার হাতের ভিতরে,হাতের জন্য দেখা যাচ্ছে না,যে টুকু দেখা যাচ্ছে সেটায় চাপা দাঁড়ি আর কিউট একটা চেহারা দেখা যায়, আহানা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আরেকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো
রাত তখন ১২টা ৪৫বাজে
আহানা বিছানার এত কিনারায় শুয়েছে যে ঘুমের ঘোরে নড়তেই দুম করে পড়ে যেতে নিতেই একটা হাত ওকে টেনে কাছে নিয়ে আসলো
আহানা ভয় পেয়ে চোখ খুলে দেখলো শান্ত মুচকি হেসে চেয়ে আছে ওর দিকে
আহানা হেসে দিয়ে একটু সরে যেতেই শান্ত যেতে দিলো না
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হাত দিয়ে আহানার গলার উপরে এসে যাওয়া মাথার চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে সে
আহানা কিসব ভেবে উঠে বসে গেলো
শান্ত ও উঠে বসলো,পুরো রুমের লাইট অফ,শুধু বাইরের ক্ষেতটার মাঝখানের পিলারটায় থাকা বাতিটার আলো আসতেসে রুমে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার ঘাড়ে মাথা ঠেকালো
.
আহানা হাত পা নাড়াচ্ছে,একবার বিছানার চাদর ধরেতেসে আবার নয়ত নিজের শাড়ীর আঁচল,শান্তর স্পর্শে ভয় করছে হুট করে
শান্ত আহানার কোমড়ে হাত দিতেই আহানা উঠে চলে গিয়ে দূরে দাঁড়ালো
কোমড়ে হাত দিয়ে কাগজটা বের করে পিছন ফিরে বাড়িয়ে ধরলো শান্তর দিকে
শান্ত ওর পিছু এসেছিল,ওর হাতে কাগজটা দেখে ব্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে চলে গিয়ে আবার শুয়ে পড়লো
আহানা থম হয়ে আছে
আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেসে,তাহলে আমি কাগজ কেন দেখাইলাম,অবশ্য আমি এই বিয়ে মানি না বলেই তো দেখাইলাম,কিন্তু কাল?
কাল তো শান্তকে….
আহানা চুপ করে খাটের এক পাশে এসে শুয়ে পড়লো
একটা কথা শুনেছিল সে,মন খারাপ করে শুইলে নাকি জ্বীন জড়িয়ে ধরে রাখে সারা রাত ধরে
২মিনিট বাদেই কেউ একজন ওকে খুব সুন্দর করে জড়িয়ে ধরলো,ওর গলায় মুখ গুজালো সে
আহানা ভয় পেয়ে এক চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো
শান্ত তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে ল্যাম্প শ্যাড জ্বালালো
আহানা শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দেখলো পাশে শান্ত ছাড়া কেউ নেই
.
কি হইসে আহানা??ভয় পেলে কেন?আমিই তো ধরলাম তোমাকে,এখন কি জড়িয়ে ধরতেও মানা?
.
আহানা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে এসে শান্তকে জড়িয়ে ধরলো
শান্ত ও ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো
শান্তর বুকে যেন আহানার কোনো ভয় কাজ করছে না,সব চেয়ে নিরাপত্তা এখানেই,শুতেই আহানার চোখ জুড়ে ঘুম এসে গেলো
শান্তর মনে হলো সে দুনিয়ার সব সুখ পেয়ে গেছে,আহানা ওকে যেভাবে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে ওর মন চাচ্ছে সারাজীবন এমন করে কাটিয়ে দিতে,এত ভালো লাগা কাজ করতেসে বলে বুঝানো দুষ্কর!
দেয়ালে টাঙানো মায়ের একটা ছবির দিকে শান্ত তাকিয়ে আছে
মা চলে গিয়ে আমার জন্য আমার জীবনের জন্য গচ্ছিত সুখ রেখে গেসে,আহানাতেই আমি সেই সুখ পাই
মা জানতো আহানাই আমার জন্য বেস্ট,আর তাই মা বাবাকে বলে গেসে আহানাই যেন আমার হয়
বাবা তো ভুলে গেসে কিন্তু মা ঠিকই জানে তার স্বামী না খুঁজলেও তার ছেলে ঠিক খুঁজে বের করবে
অবশ্য আমি খুঁজিনি আহানাই আমাকে খুঁজে বের করেছিল,সেদিনের সেই চড়টা!!
আহানা জীবনে অনেক স্ট্রাগল করেছে,আর হয়ত আমিও!!
এবার যদি দুজনে সুখের দেখা পাই আর কি,তবে আমি আহানার সুখের কোনো কমতি রাখবো না কোনোদিন
আই প্রমিস!!
♣
পরেরদিন সকাল বেলায় ঠুসঠাস আওয়াজে আহানা লাফ দিয়ে উঠে বসলো,ভোর ৫টা বাজে তখন,এত শব্দ কিসের
শান্ত চাদর টেনে মরার মত ঘুমাচ্ছে
আহানা বিছানা থেকে নেমে জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো গায়ে হলুদের সব কাজ রেডি করতেসে কতজন মিলে,কেউ কেউ স্টেজ সাজাচ্ছে,কিন্তু এখন করতেসে কেন,সবে তো ৫টা বাজে
আহানা শান্তর কাছে এসে ওকে জাগিয়ে বললো বাইরে গায়ে হলুদের কাজ হইতেসে কেন এত সকালে
শান্ত চাদর মুড়িয়ে আরেকদিকে ফিরে শুয়ে বললো আমাদের এদিকে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান সকাল থেকে শুরু হয়,শেষ হয় বিকালে
.
ওহ
.
আহানা একটা শাড়ী নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সেটা পরলো,দরজা খুলে বের হয়ে দেখলো বাসার সবাই উঠে গেসে
আহানা সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নামতেসে
ফুফু গাঁদা ফুলের ডালা নিয়ে যাচ্ছিলেন
খালা তার হাত ধরে তাকে থামিয়ে বললেন আহানাকে দেখতে
ফুফু আহানার দিকে তাকালেন, আহানা সিঁড়ির রেলিং ধরে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে নামতেসে
.
ফুফু ইয়া বড় হা করে বললেন “পুরাই শান্তির মত লাগতেসে”
শান্তি এমন করে সিঁড়ি দিয়ে নামতো!!!
.
আহানা নিচে নেমে ফুফুর সামনে এসে হেসে বললো আমি নাস্তা বানাই?
.
ফুফু আহানার থুতনির তিলটা ধরে টেনে বললেন “না মা আমি আর তোমার খালা মিলে করে নিব,তুমি বরং দেখো বাইরে তোমাদের গায়ে হলুদের কেমন কাজ চলছে”
আহানা মাথা নাড়িয়ে বাসা থেকে বের হলো
বাগানটার সামনে খোলা জায়গা আছে,উঠানের মত,নিচে সব সবুজ ঘাস,উঠানটা যেখানে শেষ সেখানেই স্টেজ সাজানো হচ্ছে
আহানা হেসে এগিয়ে গিয়ে স্টেজটার দিকে তাকিয়ে আছে
দেখা শেষে সে আবার বাসায় ফিরে আসলো,মিতু চা বিসকিটের ট্রে নিয়ে নওশাদ রুপার রুমের দিকে যাচ্ছিলো
আহানা ওকে দাঁড়াতে বলে ওর হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে নিজেই গেলো সেদিকে
দরজায় নক করতে করতে হাত ব্যাথা হয়ে গেসে তাও ওরা দরজা খুলছে না,গন্ডারের মত ঘুমাচ্ছে দুজনে
আহানা আরও জোরে বাড়ি দিলো দরজায় শেষে রুপা এসে দরজা খুললো,রুপার গায়ে নওশাদের শার্ট,আর নওশাদ চাদর টেনে ঘুমাচ্ছে বিছানায়
.
রুপা চুল খোঁপা করতে করতে বললো “ভালো করেছিস তুই এনেচিস,মিতু আমাকে এমন হালে দেখলে কি না কি ভাবতো”
.
হুম তাইতো আমি ওর হাত থেকে নিয়ে আমি নিয়ে আসলাম,নে ধর খা,আর ফ্রেস হয়ে নে,এরা তো মনে হয় তাড়াতাড়ি সকালের সব রেডি করে ফেলে
.
হুম তাই তো দেখতেসি
.
ওকে আমি যাই তোরা ফ্রেশ হয়ে আসিস
.
আহানা শান্তর রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থামলো
শান্ত আহানার বালিশ জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে শান্তিতে
আহানা দরজাটা টেনে দিয়ে নিচে চলে আসলো
মিতু কয়েকটা ফুল- গাঁদা আর জবা নিয়ে মালা বানিয়ে মাথায় লাগিয়ে সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াচ্ছে,রেনু মা ডেকোরেশনের ওখানে দাঁড়িয়ে বলতেসে গায়ে হলুদের জন্য সকালে খিচুড়ি হবে আর দুপুরের জন্য বিরিয়ানি
আরও বাকিসব বুঝিয়ে দিচ্ছেন ঠিকমত
শান্তর বাবা বাগানের পাশে রকিং চেয়ারে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে,শান্ত বলেছিল সকাল সকাল এরকম পরিবেশে বাগানে বাবার ঘুমানোর অভ্যাস আছে
ফুফু আর খালা রান্নাঘরে রুটি ভাজি বানানোয় ব্যস্ত
সায়নের রুমের দরজা বন্ধ,,
আহানা বোরিং ফিল করতেসে
মন চাইলো আশ্রমটা একবার দেখে আসতে,তাই সে সেটাই করলো,হেঁটে হেঁটে আশ্রমে চলে আসলো,সবাই জানে শান্তর সাথে আহানার বিয়ে হবে
সবাই তো এখন ওকে মাথায় করে রাখছে
আহানা সালেহা বেগমের কবরটা দেখে শান্তর মায়ের কবরের কাছে আসলো
আগে সে এই কবরের আশেপাশে আসতো না কোনোদিন,দূর থেকে দেখতো,অথচ এখানে যিনি শুয়ে আছেন উনি ওর জীবনের দিশাই বদল করে দিয়ে গেছেন,সেদিন যদি উনি আমাকে তুলে না খাওয়াতেন,আমার আলাদা যত্নের বন্দবস্ত না করতেন হয়ত আজ আমি এখানে এই অবস্থায় থাকতাম না,একটা অনাথ মেয়ের পরিনতি আরও জঘন্য হয়
আমাকে উনি বাঁচিয়ে দিয়েছেন সাথে করে শান্তর জীবনসাথী হিসেবে বলে রেখে গেসেন
আহানা এগিয়ে এসে কবরের উপর থেকে পাতা কয়েকটা সরিয়ে ফেললো,সুন্দর করে পরিষ্কার করে দিলো পুরো কবরটা
তারপর আবার বাসায় ফিরে আসলো,ডাইনিংয়ে ফুফু নাস্তা আনতেসেন,আহানাও জোর করে কাজে হাত লাগালো
শান্ত ফ্রেশ হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আহানাকে খুঁজতেসে
অবশেষে তার দেখা পেলো সে
আহানা কোমড়ে শাড়ীর আঁচল গুজে পাকা সংসারি বউয়ের মতন ডাইনিংয়ে রাখা প্লেটে খাবার সার্ভ করতেসে
শান্ত আহানার কোমড় জড়িয়ে ধরতেই ঠিক সে সময়ে খালা এসে পড়লো
তাই হাতটা ছেড়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাইরের দিকে চলে গেলো শান্ত
আহানা হেসে হেসে কাজ করতেসে
.
কি গো মেয়ে ওমন করে হাসো কেন?
.
নাহ এমনি
♣
সবাই নাস্তা করে নিয়েছে,খিচুড়ি রান্না হয়েছে গায়ে হলুদে আসা মেহমানদের জন্য
.
আহানার হাতে একটা লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী আর গহনা দিয়ে গেলেন ফুফু
আহানার কেমন কেমন লাগতেসে,,হুট করে সব হচ্ছে,রুপা একটা জর্জেট হলুদ শাড়ী পরে এসে আহানাকে তৈরি করায় মন দিলো,আহানাকে শাড়ীটা বেশ সুন্দর করে পরিয়ে গহনা গুলো পরালো সে,চুল গুলো হালকা কার্ল করে দিলো,শান্ত দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললো আহানাকে লিপস্টিক লাগাবা না একদম!
.
ইহহহ বললেই হলো নাকি ভাইয়া??গায়ে হলুদে তো লাগাতেই হবে
.
এই শান্ত তুই এখানে কি করিস?চল!তোকেও তো রেডি করতে হবে চল এখন
নওশাদ শান্তকে টেনে তার রুমে নিয়ে গেলো
রুপা আহানার ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে দিলো সুন্দর করে
আহানাকে আয়নার সামনে এনে দাঁড় করালো সে
আহানা অবাক হয়ে তাকে আয়নায় দেখছে,গলায় সোনার ৩টা হার ও নেকলেস,আজ তাকে সে নিজেই চিনতে পারছে না
জীবনে এই প্রথম সে এমন করে সেজেছে
.
কিরে কেমন সাজালাম??
.
অনেক সুন্দর!!
.
নওশাদ হলুদ পাঞ্জাবি নিয়ে শান্তকে রেডি করাচ্ছে,পাঞ্জাবি টার বোতামের জায়গায় লাল রঙ,ফুফি আর বাবা মিলে শাড়ী আর পাঞ্জাবি মিলিয়ে কিনেছে ওদের জন্য
.
কিরে কেমন লাগে আমাকে?
.
অনেক সুন্দর লাগে তোরে,আহানা আজ জ্ঞান হারাবে
.
তোকেও সুন্দর লাগে,রুপা ভাবী প্রেগন্যান্ট হবে কবে? আজ???
.
নওশাদ শান্তকে এই কথাটা শুনে পুরো বাড়ি দৌড়ানি দিলো
.
স্টেজ রেডি,শান্ত চুল গুলো ঠিক করতে করতে সবগুলো দেখতেসে ঠিকঠাক আছে কিনা,অতিথীদের আসা যাওয়া বেশি হয়ে গেসে,বাবা তার ১৪গুষ্টিকে দাওয়াত করেছেন
তার উপর রেনু মায়ের বাসার ও অনেকেই আসতেসে
এক থালা জিলাপি স্টেজের সামনে রাখা
শান্ত তো চোখ বড় করে ২টা জিলাপি নিয়ে পালালো
জিলাপি খেতে খেতে নিজের রুমে আসলো সে
আহানা আয়নায় নিজেকে দেখে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত দরজায় হেলান দিয়ে একহাতে একটা জিলাপি নিয়ে খাচ্ছে
আহানা হেসে এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো
শান্ত জিলাপি খাওয়া বন্ধ করে আহানার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো,কি সুন্দর লাগতেসে ওকে বলে বুঝানোর মত কোনো সংজ্ঞা নেই তার কাছে,আপাতত শুধু হা করে তাকানোটাই শ্রেয়!!
.
আপনার পাঞ্জাবির বোতামে জিলাপি লেগে গেসে
.
শান্ত চোখের পলক ফেলে নিজের পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে তারপর আহানার দিকে তাকিয়ে বললো আমার দুহাতে তো জিলাপি,ধরতে গেলে হাতের জিলাপিও লেগে যাবে পাঞ্জাবীতে
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”তাহলে কি করা যায়???আমার হাতেও তো মেহেন্দি ”
.
হুমম ভাববার বিষয়!!
.
আহানা মুচকি হেসে শান্তর দুপায়ে তার পা তুলে উঠে দাঁড়ালো
শান্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আহানার দিকে
.
আহানা মুখ ঘুরিয়ে দাঁত দিয়ে শান্তর পাঞ্জাবির বোতাম থেকে জিলাপির টুকরাটা নিয়ে নিলো তারপর হেসে দিয়ে হালকা নড়তেই শান্তর পায়ের উপর থেকে পড়ে যেতে নিলো তখনই শান্ত তার এক হাত দিয়ে টেনে ধরলো ওকে
.
আহানার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো”আমার হাতের জিলাপি কিন্তু তোমার কোমড়ে লাগে নাই,হাত আলগা করে কব্জি দিয়ে ধরেছি হুমম!!””
.
আহানা হেসে নেমে চলে গেলো সিঁড়ির দিকে
.
নওশাদ আর রুপা গান চালু করতেসে বাগানে গিয়ে
.
আজব এটা চলতেসে না কেন!!
.
দুইটা বাড়ি দাও
.
রুপা!এটা রিমোট নয় ওকে?যে বাড়ি দিলেই চ্যানেল পাল্টানো যাবে!!বেকুব মাইয়া কোথাকার!!
.
তুমি দেখিও বাড়ি দিলে কাজ হবে
দুম!!দুম!!!
♥
Zubaan hai feeki sham se… hui na tosay baat bhi
Bina mai tere be-mazaa …. Hua hoon dekho Aaj bhi …
Karoon mai ye Guzarishein … Mohabbaton ka Mol de …
Neendon mai mere Khwaab ka … Zaraa sa meetha Ghol de …
Tu bann ja bann ja tu meri
tu bann ja bann ja …
bann ja bann ja tu meri …
Ishq-e-di Chashni …
O mitthi mitthi chashni …
Main na maangoonga dhoop dheemi dheemi
Mai na maangoon chandni …
Mere jeenay mai tujhse ho … Ishq-e-di Chashni
O mitthi mitthi chashni .mitthi mitthi
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৬০
প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৬০
#Writer_Afnan_Lara
?
অথচ কয়েক মাস আগে যখন সে মোহনগঞ্জ থেকে চলে গিয়েছিলো তখন তারা দুজনেই মনের দিক দিয়ে অচেনা ছিল আর আজ তারা বিবাহিত
ভয় ভয় কাজ করছে,শান্তর বাড়িতে এই প্রথম সে যাচ্ছে,কি জানি তাদের সাথে খাপ খাওয়াতে পারা যাবে কিনা
শান্ত ২টো রিকসা নিলো একটাতে সে আর আহানা,আরেকটাতে নওশাদ আর রুপা
রাত তখন ১১টা বাজে
ঘুটঘুটে অন্ধকার,ব্যাঙ ডাক দিতেসে,কিছুক্ষন আগেই বৃষ্টি হয়েছিল,রাস্তাঘাট পিচ্ছিল,তার উপরে গাছের ঢালে জমে থাকা এক দু ফোটা পানিও পড়তেসে থেমে থেমে
আহানা মনের অজান্তেই শান্তর হাত মুঠো করে ধরে আছে
রিকসাআলার রিকসার নিচে হারিকেন জ্বলতেসে,সেটার আলোয় তিনি পথ চলতেসেন
পিছনের রিকসায় নওশাদ বসে দুঃখের একটা গান ধরেছে
.
দিল আমার কিছু বুঝে না গানটা
রুপা ধুমধাম করে কিল বসিয়ে চুপ করিয়েছে ওকে
রেগে রেগে বলতেসে বিয়ের দিন রাতে কেউ এই গান গায়?বেয়াদব একটা
আহানা হাসতেসে ওদের কথা শুনে,শান্ত ফোনে বাবাকে বলতেসে আর ২মিনিট লাগবে, এসে গেসি আমরা
বাসার সামনে এসে দুটো রিকসাই থামলো
আহানা নেমে বাসার দিকে তাকালো,দোতলা একটা বাসা,দোতলা বলতে নিচের তলা অনেক বড় আর উপরের তলায় ২/৩টে রুম দেখা যাচ্ছে
বাড়ির সামনে এত এত ফুল যে সবার আগে বাগানটাই চোখে পড়বে,বাড়ির উপরে একটা লাইট জ্বালানো আর বাগানে তো প্রতি কদমে কদমে লাইট,নিশ্চয় বাগানটাকে উজ্জল করে তুলার জন্য আর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য এত বাতির ব্যবস্থা করা
বাবা হেসে এগিয়ে আসতেসেন,দারোয়ান গেট খুলে দিয়েছে ততক্ষণে
শুধু বাবা এসেছেন,আহানা উনাকে সালাম দিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,দূরে বাসার ভিতর সোফায় বসে থাকা দুজনকে দেখা যাচ্ছে তবে তারা এদিকে খেয়াল না দিয়ে টিভি দেখায় মগ্ন
আহানার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে একজন ভদ্র মহিলা এক গাল হাসি নিয়ে এগিয়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরলেন
.
আহানা চমকে উনাকে সালাম করে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো,চেহারা তো শান্তর বাবার মত,নিশ্চয় শান্তর ফুফু হবে
.
উনি হেসে বললেন আমি তোমার ফুফু শাশুড়ি, আসো ভিতরে আসো
.
এই যে পুরা শান্ত ব্যাটেলিয়ন!! আমি যে নওশাদ মোহনগঞ্জ এসেছি সেদিকে কি কারও নজর নেই?সাথে যে আমার নতুন বউ আছে সেটাও কারও নজরে নেই
শান্তর বাবা এগিয়ে এসে নওশাদের কান ধরে আলোতে দাঁড় করিয়ে হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ওকে
.
রুপা এসে সবাইকে সালাম দিলো,তারপর সবাই একসাথে বাসার ভিতরে ঢুকলো,আহানা বাসার ভিতর পা রেখেই মিসেস রেনুর দিকে তাকালো
রেনু সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুখটা ফুলিয়ে এগিয়ে এসে আহানার সামনে দাঁড়ালেন
আহানা মুচকি হেসে সালাম করলো উনাকে
উনি “সুখি হও” বলে চলে গেলেন বাসার ভিতর
আহানা শান্তর দিকে তাকালো,শান্ত “ইটস ওকে” বললো ইশারায়
.
কিরে তোর শাশুড়ি এমন ক্যা??তোকে প্রথম দেখায় কিছু দিলো না তো দিলো না আবার জড়িয়েও ধরলো না,উল্টে চলে গেলো??
.
জানি না
.
আজব তো
.
শান্ত আহানার হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো
.
সায়ন সিঁড়ি দিয়ে নেমে ওদের দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো সামনে এসে হঠাৎ করে সবার সামনে নিচু হয়ে আহানার পা ধরে সালাম করতে গেলো
আহানা চমকে ভয় পেয়ে শান্তর পিছনে চলে গেলো
.
সায়ন!এসব কি?
.
ভাই তোমার কি আমার কিছুই ভাল্লাগে না?ভাবী আমার বড় ভাইয়ের বউ,তাকে সালাম করবো না??
.
এতই ইসলামিক হলে বাবাকে করো গিয়ে,পরে ভাবীর লাইন আসবে
.
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে সবার সামনে দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো
আহানা কিছুটা ঘোরের মধ্যে আছে,এই ছেলেটা এমন কেন করলো,কি অসভ্য!!
শান্তর রুমে ঢুকতেই সে থ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,রুমের অর্ধেকটা দেয়াল জুড়ে শুধু শান্তর মায়ের ছবি
আহানা এগিয়ে এসে একটা ছবি নিয়ে দেখতে লাগলো
উনি সেই যিনি আমাকে প্রথম খাবার তুলে দিয়েছিলেন,কি মিষ্টি চেহারা উনার
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত দুম করে বিছানার উপর শুয়ে পড়েছে,আহানা ছবিটা রেখে পিছন ফিরে পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো,খাট একটা,একটা আলমারি,আর একটা টেবিল ও চেয়ার,জানালা খোলা সেটা দিয়ে বিরাট একটা ক্ষেত দেখা যায় যেটার মাঝখানে একটা পিলারে এখন আলো জ্বলতেসে
আহানা রুম থেকে বের হতেই দেখলো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা ট্রে,যেটাতে ২গ্লাস পানি,,২কাপ চা আর বিসকিট
মেয়েটা হাসতে চাইছে কিন্তু কোনো এক বারণ এর কারণে সে হাসি আটকে মুখ ফুলিয়ে আহানার হাতে ট্রেটা দিয়ে বললো “আমার নাম মিতু”,ব্যস চলে গেলো সে
আহানা ট্রেটা নিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় রাখলো,শান্ত চ্যাপটা হয়ে ঘুম দিসে
আহানা হাতটা নিয়ে ওর পিঠে রেখে দুবার নাড়া দিলো
শান্ত ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে বললো “কি?”
.
চা খান,ঘুমের ভাব কমবে
.
চায়ের কথা শুনে শান্ত উঠে বসলো
.
আচ্ছা রুপা আর নওশাদ ভাইয়া কোথায়?
.
ওদেরকে বাবা এই করিডোর ধরে শেষ প্রান্তে যে রুমটা আছে ওটা দিয়েছে,ওখানে রেস্ট নিচ্ছে মেবি
.
ওহ,আপনার বোন ও কি বাকি সবার মতন?
.
না,ও একটু আলাদা,ও চাইলেও আমাকে ঘৃনা করতে পারে না,রক্ত তো,আলাদা একটা টান আছে,বাট কথা একটু কম বলে এই আর কি
.
আহানা চা খেয়ে উঠে দাঁড়ালো,মনটা ছটফট করতেসে পুরো বাড়িটা একবার ঘুরে দেখার
.
শান্ত চা খেয়ে উঠেই হাঁটা ধরলো আহানাকে নিয়ে
.
আরে আরে কই যান?
.
তোমাকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাবো
.
অনেক রাত হয়েছে,কাল দেখবো নাহয়
.
আরে আমরা সবাই ডিনার করি রাত ১২টায়,চলো তুমি
.
শান্ত আহানার হাত ধরে বেরিয়ে পড়লো,,
নিচে সোফায় সায়ন পায়ের উপর পা তুলে টিভিতে মুভি দেখতেসে
আহানাকে নামতে দেখে দাঁত কেলিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো,আহানা শান্তর হাত শক্ত করে ধরলো সায়নের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে
শান্ত রাগী চোখে সায়নের দিকে তাকিয়ে আহানাকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো
ফুফু আর খালা রান্না করতেসেন
ফুফু চুলায় মাংস নাড়তেসেন আর খালা নিচে বসে শশা কাটতেসেন সালাদ বানানোর জন্য
আহানা রান্নাঘরে ঢুকতেই খালা হেসে দাঁড়িয়ে পড়লেন
আহানা এগিয়ে এসে খালাকেও সালাম দিলো
খালা খুশি হয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললেন “”শান্ত বাবা একখান খাসা বউ পাইলা””
.
তোমার বোনের পছন্দে??
.
হ,এখন বুঝতেসি শান্তি আপা কেন ওরে বেছে রেখেছিল,আমিও ওকে দেখেছিলাম আশ্রমে শান্তি আপার সাথে গিয়ে,তখন তো একদম পুচকি ছিল সারাদিন তোর হাঁটু জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো,তোকে ছাড়া কিছু বুঝতো না
.
আহানা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো
.
আচ্ছা তাই নাকি খালা??আর কি কি করতো?
.
তোর ও তো সব মনে আছে আমাকে জিগাস কেন?শয়তান পোলা!!
আচ্ছা একটা কথা বল ওর কি শরীর খারাপ??
.
শান্ত ব্রুটা নাচিয়ে বললো “কেন?? কি করে জানলা?”
.
চোখ মুখ শুকিয়ে আছে তাই বললাম,কি হয়েছে ওর
.
শান্ত ফ্রিজের উপরের ঝুড়ি থেকে লিচু নিয়ে খেতে খেতে বললো “মায়ের মত রক্তশূন্যতা রোগ পাইসে”
.
কিহহ বলিস,আল্লাহ রক্ষা করুক
.
তখনই রেনু রুমে ঢুকলো,খালার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললেন “”কি ব্যাপার?কত কাজ পড়ে আছ সব রেখে কিনা কথা বলতে লেগে গেলা?কাজ সব কে করবে?””
.
খালা মুখটা ছোট করে আবারও শশা কাটায় মন দিলেন
আহানা বললো “আমাকে কি কাজ করতে হবে দিন করে দিচ্ছি”
.
রেনু মা ফুফুর থেকে চামচ নিয়ে মাংস নাড়তে নাড়তে বললেন “এখন থেকে কাজের প্রতি এত আগ্রহ দেখানো ভালো না!!
এমনিতেও তো বিয়ের পর এখানে থাকবে না তাহলে শুধু শুধু দু একদিনে বুড়ো শশুর শাশুড়ির সেবা যত্নের ভান ধরে কি লাভ??”
.
শান্ত রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহানা কথা বলা শুরু করলো
.
মা??আপনি বললে আপনার সাথে আজ রাতে ঘুমাই??
.
রেনু মা মাংস চামচ দিয়ে নাড়ানো বন্ধ করে চমকে পিছন ফিরে আহানার দিকে তাকালেন
স্পষ্ট মায়া প্রোজ্জ্বলিত হয়ে আছে আহানার সারা মুখে,রান্নাঘরের দেয়ালে বাম পাশে আর ডান পাশে দুটো বাতি,তাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আহানাকে,অথচ একটুখানি মেকআপ ও সে করেনি কিন্তু তার পরেও উনি কয়েক মিনিটের জন্য থম হয়ে গেলেন
এমন মায়ার চেহারা এর আগে তিনি দেখেন নি
ফকফকা ফর্সাও না আবার কালো ও না,এ কেমন রুপ!!
আমার সায়নের যদি এমন একটা বউ থাকতো,সারাদিনে একবার ওর মুখের দিকে তাকালেই সকল মনের কষ্ট দূর হয়ে যেতো,এই ভেবে উনি আবার মাংস নাড়ায় মন দিলেন
শান্ত আর ফুফু তো অবাক,আহানার প্রশ্নের উত্তর শুনে আর রেনুর চেহারার রিয়েকশান দেখে
.
ফুফু পোলাও বাটিতে নিতে নিতে বললেন “মা!!এখন তোমার কিছু করতে হবে না,আমরা আছি না?যাও বাসাটা ঘুরে দেখো”
শান্ত খালার থেকে ২পিস শশা নিয়ে আহানার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো,এবার গেলো বাবার রুমে
বাবা রকিং চেয়ারে বসে পেপার পড়তেসেন,সকাল থেকে সারাদিন তিনি পেপার পড়ার সুযোগ সময় দুটোই পান না,, মাঝে মাঝে পান তবে তখন পড়তে ভালো লাগে না,ঐ যে রাতে পড়তে পড়তে একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে গেসে তার
তাই এই রাতের বেলায় মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়তেসেন তিনি
শান্ত দরজায় দুটো টোকা দিতেই বাবা চমকে দরজার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বললেন “আয় ভিতরে আয়”
.
শান্ত ভিতরে ঢুকেই বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বললো “বাবা??মায়ের গায়ের গন্ধটা আসতেসে,তুমি আবার মায়ের সেই পারফিউমটা দিয়েছো?”
.
হ্যাঁ রে,তোর মাকে আজ খুব মনে পড়তেসে,আজ থাকলে পুরো বাড়িটা মাথায় করে রাখতো সে,তার ছেলের বউ এসেছে,কতই না খুশি হতো সে,তাই পারফিউমটা দিয়ে তাকে অনুভব করতেসি,মনে হচ্ছে আমার আশেপাশেই আছে
.
পারফিউমটা শেষ হলে কিন্তু তোমাকে সেই আবার কুমিল্লা যেতে হবে
কারণ সেই পারফিউমটা কুমিল্লার একটা ছোটখাটো কারখানায় তৈরি হয়
মায়ের পছন্দ এত নিখুঁত যে মাঝে মাঝে অবাক হতাম আমি
.
হ্যাঁ রে সে নিজেই অানকমন একটা মানুষ ছিল যাকে আমি মৃত্যু পর্যন্ত ভুলতে পারবো না
.
বাবা! আহানা ও এসেছে আমার সাথে
.
তা বাইরে কেন ভিতরে আসতে বল
.
আহানা পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে ঢুকলো রুমে
বাবা হেসে বললেন “”কি মা?এই বাড়ি পছন্দ হয়েছে তোমার??তোমার এই শাশুড়িকে কেমন লাগলো?
.
আরে বাবা ও মাত্র কিছুক্ষণ আগে একটা মারাত্মক জবাব দিয়েছে মায়ের কথায়
.
কি বলেছে?
.
শান্ত বাবার বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে একটা কুশন জড়িয়ে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো “আহানা বলেছে সে আজ রেনু মায়ের সাথে ঘুমাতে চায়”
.
বাবা রকিং চেয়ার থেকে পড়েই যাচ্ছিলেন কথাটা শুনে,উনিও হাসা শুরু করে দিলেন
আহানা দাঁত কেলিয়ে ওয়ারড্রোবের সাথে লেগে মুখ নিচু করে আছে
.
হাহহাহা,ব্রিলিয়েন্ট,সো মাচ ব্রিলিয়েন্ট!!
.
আচ্ছা বাবা তুমি পেপার পড়ো আমি ওকে বাকি রুম গুলো দেখিয়ে আসি
.
ওকে যা
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে সায়নের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থেমে বললো বাইরে থেকে দেখতে,ভিতরে গিয়ে দেখলে মদের গন্ধে আর রুমের হাবিজাবি জিনিসের গন্ধে বমি আসবে
আহানা বললো তার এমনিতেও ইচ্ছা নাই
.
তারপর তারা গেলো মিতুর রুমে
পুরো পিংক কালারের রুমটা,কোণায় একটা সিঙ্গেল বেড,সেটার বেড কভার থেকে শুরু করে পর্দা,আলমারিও পিংক কালার,বাচ্চাদের রুমের মত,মিতু বাথরুম থেকে বেরিয়ে আহানা আর শান্তকে দেখে চুপ করে তাকিয়ে রইলো
শান্ত আর আহানা কিছু বললো না!সোজা হাঁটা ধরলো
.
এবার তারা এসেছে বাগানে,আহানা ফুলগুলোতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতেসে
শান্ত রিয়াজকে ফোন করলো
.
হ্যালো রিয়াজ শুন ভাই আমার রুমে গিয়ে আলমারির প্রথম তাকে কয়েকটা শপিং ব্যাগ দেখবি কাল আসার সময় ওগুলা নিয়ে আসিস
.
কেন বলতো?
.
আরে আমি আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে তোদের সবাইকে শপিং করে দিয়েছি সাথে মা বাবা আর আমার পুরো ফ্যামিলির জন্য ও কিনেছিলাম আসার সময় এত ব্যস্ততায় আনতেই ভুলে গেসি
.
ওকে আমি নিয়ে আসবো
.
ওকে বাই
.
আহানা একটা গোলাপ হাতে নিয়ে ঘ্রান নিয়ে পিছনে তাকাতেই শান্তর সাথে ধাক্কা খেলো,পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ওর কোমড়ে হাত নিয়ে ধরে ফেললো ওকে
.
তা কি খবর আমার পাতানো বউ??
.
আহানা মুচকি হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো
.
শান্ত আহানাকে টেনে বাসার বাইরের সেই সরু রাস্তাটায় নিয়ে গেলো,পুরো রাস্তা অন্ধকার,আশেপাশে ছোটখাটো টিনের ঘরের ভিতর থেকে আলো এসে রাস্তা টাকে কোনোরকম আলোকিত করে রেখেছে
দুজনে সেই আলো ধরেই হাঁটতেছে
.
জানো?তুমি সেদিন এই রাস্তায় আমাকে ধরে যেভাবে কেঁদেছিলে সেদিনই আমি শপথ নিয়েছিলাম আমি তোমার জীবনের দায়িত্ব নিবো
আর দেখো নিয়েও ফেলেছি এভাবে যে নিব তা একদমই ভাবিনি,তবে নিবো এটা ভেবেছিলাম আমি
.
আচ্ছা আমরা এখানে থেকে গেলে হয় না?বাবা মায়ের সাথে
.
শান্ত হাঁটতে হাঁটতে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বললো “”না এখানে থাকা পসিবল না,আমার মা হলে আমি বাধা দিতাম না তোমাকে, কিন্তু এখানে যারা আছে তারা তোমাকে আর আমাকে সুখে থাকতে দিবে না
ইস্পেশালি সায়ন,এক নাম্বারের কেরাক্টারলেস,আমাদের বাসায় একবার একজন বুয়ার মেয়ে আসতো,নাম রাইতা,সায়ন তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে মেয়েটাকে প্রেগন্যান্ট করেছিল,পরে রেনু মা কত টাকা খরচ করে ঐ মেয়েটাকে থেকে সায়নকে ছাড়িয়েছে,পুলিশ কেস হওয়ার আগেই সব solve করে ফেলসে
আজ দেখোনি তোমার দিকে কি নজরে তাকাচ্ছিলো?
.
আহানা শান্তর হাত মুঠো করে ধরে আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো,মুখ ফুটে একটা কথা বললো,আর সেটা হলো”আমার এই জীবনে আপনি ছাড়া আপন আর কেউ নেই”
.
শান্ত হালকা হেসে হাতটা আহানার কাঁধে রেখে হাঁটতে হাঁটতে বললো “আমার তো তুমি আর বাবা ছাড়া কেউ নেই!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে “শান্তি নিবাসে” আসলো
মায়ের কবরটাতে গিয়ে বসে পড়লো সে
আহানা দূর থেকে চেয়ে আছে,শান্ত মাটি হাত দিয়ে ঘষে নিয়ে কপালে লাগিয়ে কেঁদে দিলো
যে ছেলে তার মায়ের মর্ম বুঝে তারই মা হারিয়ে যায়
আর যারা মর্ম বুঝে না তাদের এমন সময় হারিয়ে যায় যখন সে মর্ম বুঝতে শিখেছে
আহানা আশ্রম থেকে বেরিয়ে সেই ডোবাটার দিকে তাকিয়ে রইলো,,হোক না হোক এই ডোবাটার সাথে তার বাবা কিংবা মায়ের সম্পর্ক রয়েছে,তারা তো একদিন এখানে এসেছিল তাই না!!কোন জায়গা দিয়ে এসেছিল তারা,তারা হবে নাকি একজন হবে শুধু,আমাকে মা নাকি বাবা ফেলে গেসিলো সেদিন??
আহানা ডোবাটায় থাকা একটা পলিথিনের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিলো কাঁদতে কাঁদতে পিছিয়ে গিয়ে দেখলো শান্ত ওর দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে
আহানা শান্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো
“আমার মা বাবাকে একবার দেখতে চাই শান্ত!!”
চলবে♥