Sunday, July 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1930



এ শহর মেঘলা ভীষণ পর্ব – ৭

0

এ শহর মেঘলা ভীষণ
পর্ব – ৭
জান্নাতুল ফেরদৌস মীম

আরো দুদিন চলে যায়। কিন্তু মোজাম্মেল শিকদার এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত আর কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু ছায়ার দেয়া ম্যাসেজ আর তাকে মোজাম্মেল শিকদারের বিরক্ত করার মাধ্যমে প্রমাণ হয় না যে, হত্যাটা তিনিই করেছিলেন। যদি হত্যা মোজাম্মেল শিকদার না করে অন্য কাওকে দিয়ে করান সেটাও প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু পুলিশ আর কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না। এদিকে মোজাম্মেল শিকদার তার জবাবে অটল। তিনি কিছুতেই হত্যা কান্ডের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করছেন না। পুলিশ পরেছে মহা ঝামেলায়। উপর মহল থেকে চাপ আসছে দ্রুত এ মামলার তদন্ত করে কোর্টে চালান দিতে। প্রমাণ ছাড়া আসামীকে কোর্টে তুললে তারপর দেখা যাবে আসামী পক্ষের উকিল তাকে খুব সহজে ছাড়িয়ে নিবে। তখন মিডিয়া পুলিশদের নিয়ে রসালো খবর ছাপাবে আনন্দের সাথে। পুলিশ ভুল ভাল লোকদের ধরে খুনি সাজাতে চায়, এ ধরনের খবর নিয়ে দেশের পত্রিকা গুলোতে রসালো নাটক সাজানো খুব সহজ। তাই যত দ্রুত সম্ভব পুলিশকে কিছু করতে হবে। এদিকে মোজাম্মেল শিকদার বড় মাপের মানুষ। ঢাকা শহরে তার বিজনেস আছে কয়েকটা। এমন একটা লোককে লকাপে আটকে রাখাও সহজ কথা নয়। তিনি এ নিয়ে সৌরভের সাথে কথা বলেছেন। সৌরভ নিজেও এ বিষয় নিয়ে টেনশনে আছে। তার অবচেতন মন বিভিন্ন কথা চিন্তা করে যাচ্ছে। কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না নিজেকে। রাতে ঠিক ভাবে ঘুম হয় না। বার বার চোখের সামনে ছায়ার মুখটা ভেসে উঠে। মনে হয় ছায়া ভালো নেই। সে কষ্ট পাচ্ছে। তার ছায়ার জন্য কিছু করা উচিত। ছায়ার খুনিকে খুঁজে বের করলেই ছায়ার আত্মা শান্তি পাবে। এ ধরনের হাজারো চিন্তা সৌরভের মাথায় ঘুর ঘুর করে সারাক্ষণ। অস্থির লাগে। মনকে শান্ত করা জরুরি। নিজেকে সময় দিতে হবে। সৌরভ রাজিবের নাম্বারে ডায়েল করলো।
– ‘ হ্যাঁ বল দোস্ত।’
– ‘ কাল ছুটি নিয়ে নে অফিস থেকে। ‘ স্পষ্ট ভাবে বললো সৌরভ।
– ‘ কেনো ? ‘ রাজিবের কন্ঠে কৌতুহল।
– ‘ ভালো লাগছে না কিছু। ভাবছি গাজিপুরের দিকে যাবো। একটু ঘুরে আসবো।’
– ‘ ঠিক আছে। ‘

মোহন আর মিলি বসে কথা বলছিলো আমেনা বেগমের সাথে। তিনি বিছানায় বসে আছেন। তার কোলে মাথা রেখে ফ্লোরে বসা মিলি, মোহন। যেন ছোট পাখির ছানা দুটো তার মায়ের কোলের সাথে লেপ্টে আছে। ছায়া থাকলে এখন দু ভাইবোন কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তাদের মাঝে এসে বসতো। আমেনা বেগম ছেলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
– ‘ এবার তো আমাদের ফিরে যেতে হয়। আর কতদিনই বা এখানে থাকবো। ‘
মোহন মৃদু স্বরে বললো,
– ‘ হ্যাঁ মা। আমি টিকিট কেটেছি। কাল কুমিল্লা ফিরে যাচ্ছি আমরা। ‘
– ‘ বুঝলি মোহন। সৌরভের মুখের দিকে তাকাতে পারি না আমি। কষ্টে বুকটা ফেঁটে যেতে চায়। ছেলেটা কেমন যেন হয়ে গেছে। ঠিক মতো খায় না, না ঘুমিয়ে চোখের নিচে কালি জমিয়ে ফেলেছে। থানায় ছুটে যায় বার বার। এভাবে কতদিন চলবে ? ‘

– ‘ সময় যেতে দাও মা। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। ‘

আমেনা বেগম কিছু বলেন না। ঢুকরে কেঁদে উঠেন। মোহন এতে বিরক্ত হয়ে বলে,
– ‘ আহ মা! তুমি কিছু হতেই এভাবে কাঁদবে না তো। সৌরভ এসব দেখলে ঠিক হবে কিভাবে! বার বার চোখের সামনে আমাদের ভেঙে পড়তে দেখলে সে নিজে ঠিক থাকবে ?’

মোহনের কথার মাঝে দরজায় নক পরে। ওপাশ থেকে বলে,
– ‘ আসবো মা ?’
সৌরভ এসেছে। তার কন্ঠ পেয়ে আমেনা বেগম দ্রুত চোখ মুছেন।
– ‘ এসো বাবা, এসো। ‘

মিলি আর মোহন উঠে বসে বিছানায় মায়ের পাশে। সৌরভ এগিয়ে এসে তাদের পাশে বসে।
– ‘ আপনার শরীর কেমন মা ? ‘ তার কন্ঠ শান্ত।

আমেনা বেগমের আবারো কান্না পায়। তিনি কান্না চেপে হাসি হাসি মুখ করে বলেন,
– ‘ ভালো বাবা। ভালো আছি এখন। ‘
– ‘ আপনারা নাকি কাল চলে যাচ্ছেন! আমি তো বলেছিলাম আরো ক’টা দিন থাকতেন। আমরা দু ভাই বোন একা বাসায়। আপনারা থাকলে ভালো লাগতো। ‘
আমেনা বেগম জোড় করে নিজের হাসিটা বজায় রেখেই বললেন,
– ‘ সেখানেও তো যাওয়া দরকার। সব দিক সামলাতে হবে। তুমি ভেবো না বাবা। আমরা মাঝে মাঝেই চলে আসবো। মিলি আসবে, মোহন আসবে। ‘

মায়ের কথার পিঠে মোহন বললো,
– ‘ হ্যাঁ। আমাকে তো ঢাকায় কাজে আসতেই হবে মাঝে মাঝে। এদিক হয়ে যাবো। সুবর্ণা, মিলি ওরাও এসে মাঝে মাঝে থাকলো। আর তুমিও সময় পেলেই তোহাকে নিয়ে চলে যাবে। ‘
-‘ আপনারা কি কাল সকালেই বের হবেন ?’
মোহন সৌরভের কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বললো,
– ‘ হুম। এদিকের কি হচ্ছে সব কিন্তু আমাদের জানাবে। আর কোন প্রয়োজন হলে অবশ্যই ফোন দিবে। ‘
– ‘ আচ্ছা ভাইয়া। ‘

দেলোয়ার হোসেনের ফোন আসলো রাত্রি বেলা। তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
– ‘ প্রমাণ পাওয়া গেছে মোজাম্মেল শিকদার ঘটনার দিন নিজের বাড়িতেই ছিলেন। তিনি সেদিন বাহিরে বের হয়েছেন রাত আটটার দিকে। তবুও সাথে স্ত্রী, পুত্র ছিলো। ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া সারাদিন বাসা থেকে বের হননি। এমনকি সেদিন অফিসেও যাননি তিনি। ‘

সৌরভ অবাক হলো। মাথাটা কেমন ঝিম ধরে গেছে তার। যদি মোজাম্মেল শিকদার সারাদিন বাসায় থাকেন তাহলে খুনটা করলো কে! নাকি অন্য কাওকে দিয়ে খুন করিয়েছেন তিনি। প্রশ্নটা মনে আসতেই করে ফেললো সৌরভ।
– তাহলে খুনটা কি অন্য কাওকে দিয়ে করিয়েছেন তিনি ?
– ‘ হতে পারে। তবে নিশ্চিত না। ‘
– ‘ কিন্তু সেদিন ছায়ার দেয়া ম্যাসেজে তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো মোজাম্মেল শিকদার তাকে ডিস্টার্ব করছে। যদি সারাদিন বাসায় থাকে তাহলে ডিস্টার্ব করলো কিভাবে ? স্ট্রেঞ্জ! ‘
– ‘ ঝামেলাটা সেখানেই। মোজাম্মেল শিকদার অতি চালাক ব্যক্তি। তিনি নিজেও বিষয়টা চাপা দেয়ার জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। সবই সম্ভব। তবে আমাদের চোখে কিছু ধরা পরছে না। তদন্তটা আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে। ‘

সৌরভ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো সে। ভালো লাগছে না আর। কি হয়েছিলো সেদিন ছায়ার সাথে, কে তাকে হত্যা করলো কিচ্ছু জানা যাচ্ছে না। কেমন পাগল পাগল লাগছে নিজের কাছে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পরদিন সকালে মোহনরা সকলে চলে গেলো। মিলি যাবার আগে অনেক কেঁদেছে তোহাকে জড়িয়ে ধরে। আমেনা বেগমও কাঁদছিলো। এখানেই তার মেয়ের শেষ স্মৃতিটা রেখে ফিরতে হচ্ছে। আহা! কি সুখ ছিলো মেয়ের। কি শান্তি! জামাই টা কে দেখলেই নয়ন জুড়িয়ে যায়। আর সেই সংসারের মায়া ছেড়ে চলে যেতে হলো তাকে।

সকলে চলে যাবার পর সৌরভ বের হলো রাজিবের সাথে। তারা আসলো ঢাকার বাহিরে গাজিপুরের কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টটা একদম নিরিবিলি একটা জায়গায় তৈরী করা হয়েছে। শহরের কোলাহল নেই সেখানে। গাছ পালার ছায়ায় চারপাশ শান্ত, নির্মল দেখায়। লোক জনের খুব বেশি ভীর নেই বললেই চলে। শহর থেকে হঠাৎ হঠাৎ কিছু লোক ঘুরতেও আসে এখানে। সৌরভ প্রায়ই ছায়াকে নিয়ে এখানটায় আসতো। অনেকটা সময় কাটাতো নিজেদের মতো। কেনো যেনো এই জায়গাটায় আসতে ভালো লাগে সৌরভের। আজ ছায়া নেই। সব কিছুতে অস্থির লাগছে। নিজের মতো একটু সময় কাটাতে ইচ্ছে করছিলো সৌরভের। তাই ঠিক করলো এখানটায় আসবে। তাছাড়া জায়গাটা ছায়ার খুব পছন্দের ছিলো। সে কারণেই আসা।

রেস্টুরেন্টের বাহির দিকটায় খোলা আকাশের নিচে একটা টেবিলে বসলো রাজিব আর সৌরভ। রাজিব চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে বললো,
– ‘ জায়গাটা কিন্তু অনেক সুন্দর দোস্ত। ভাবতেছি বিয়ের পর বউ নিয়ে মাঝে মাঝে আসবো। ‘

সৌরভ হালকা হাসলো। কিছুক্ষণ পর একজন অল্প বয়সি ওয়েটার আসলো। সে সৌরভকে দেখা মাত্র সালাম দিয়ে বললো,

– ‘ অনেক দিন পর আসলেন স্যার। আগে তো রেগুলার মাসে একবার হলেও আসতেন। ‘
সৌরভ হালকা হেসে বললো,
– ‘ হ্যাঁ। লাস্ট কয়েক মাস ঝামেলায় ছিলাম বলে আসা হয়নি। ‘

ছেলেটা মেনু কার্ড এগিয়ে দিয়ে হাসি মুখে বললো,
– ‘ তবে ম্যাডাম এসেছিলো কিছুদিন আগে। অনেক্ষণ ছিলো। আপনারা হলেন এখানের রেগুলার কাস্টমার। এখন না আসলেও মনে মনে খুঁজি। ‘
ছেলেটা কথা শেষ করে হাসলো। মনে হলো এ কথা বলাতে সে নিজেই বেশ খুশি হয়েছে।  তাদের কাজ হলো কাস্টমারদের খুশি রাখা। তাদের ভালো ভালো কথা বলা যাতে খুশি হয়ে বেশি বেশি কাস্টমার আসে। তবে সৌরভ খুশি হতে পারলো না। সে চমকালো। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
– ‘ ম্যাডাম এসেছিলো মানে ! কবে এসেছিলো? ‘

ছেলেটার মুখের হাসি সরলো না। সে সৌজন্যতা বজায় রেখেই বললো,
– ‘ সপ্তাহ দুয়েক আগে এসেছিলো। গত মাসে। উনার সাথে আরো একজন ছিলো। ‘

এবারে সৌরভ আর রাজিব দুজনই বেশ বিস্মিত হলো। রাজিব অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করলো,
– ‘ কে ছিলো ? ‘
– ‘ লম্বা করে একজন ছেলে। মনে হলো ম্যাডামের পরিচিত কেউ। ‘

অবাক হলো সৌরভ। তার জানা মতে ছায়ার কোন ছেলে বন্ধু ছিলো না। তাছাড়া ছায়ার কোন রিলেটিভ ঢাকায় থাকে না। ছেলেদের সাথে তেমন মেলামেশা করতে ছায়াকে কখনোই দেখেনি সৌরভ। তাহলে কে ছিলো ছায়ার সাথে যাকে নিয়ে এখানে আসতে হলো তার!

চলবে…

এ শহর মেঘলা ভীষণ পর্ব – ৬

0

এ শহর মেঘলা ভীষণ
পর্ব – ৬
জান্নাতুল ফেরদৌস মীম

লকাপের ভেতর এক পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে মোজাম্মেল শিকদার। চল্লিশোর্ধ্ব লোকটির চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। দেখতে বিধ্বস্ত লাগছে। মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। মাথায় এলো মেলো চুল। পানসে চোখ। এরকম বয়সে জেলে আসতে হবে কখনো হয়তো ভাবেনি। সে কারণে বিষয়টা হজম করতে পারছে না। অথচ তার অপকর্ম তাকে আজ এ জায়গায় নিয়ে এসেছে। মানুষ বড়ই নির্মম জাতি। কঠোর তাদের মন। তারা চায় নিজের ইচ্ছা স্বধীন চলতে। চাইলে দুএকটা অপকর্ম করবে কিন্তু কেউ তাদের কিছু বলবে না। তারা থাকবে নিরাপদে, ঝামেলাহীন। দু একটা অন্যায় কাজ করলে যেন দোষের কিছু নেই। দোষটা হয় তাদের সে অন্যায়ের জন্য শাস্তি দিলে।

সৌরভ ধীর পায়ে লকাপের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মোজাম্মেল শিকদার লোকটিকে সে আগে কখনো দেখেনি। যেটুকু শুনেছে সেটুকুও ছায়ার থেকে। লোকটির মুখ দেখে কেউ বুঝতে পারবে না এ চেহারার আড়ালে একটা নোংরা মন লুকিয়ে আছে। আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষই এমন। তারাও দেখতে আর দশটা মানুষের মতোই। তাই এদের মাঝে কোনো বিকৃত মস্তিস্কের মানুষকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় না। মানুষের মুখে যদি ফুটে উঠতো তার মনে কি চলছে তাহলে হয়তো প্রতিটি মানুষ সতর্ক হয়ে, সাবধানে চলতে পারতো। আর কোন জীবন নষ্ট হতো না।

সৌরভ এর মুখের দিকে মোজাম্মেল শিকদার কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। চিন্তে পেরেছেন কী না বুঝা গেল না। না চিনারই কথা। তাদের আগে কখনো দেখা হয়নি। মোজাম্মেল শিকদার আবার মাথা নামিয়ে ফেললেন। তাকিয়ে রইলেন মেঝের দিকে। সৌরভ হালকা ভাবে ডাকলো,
– ‘ শুনুন। ‘
মোজাম্মেল শিকদার এগিয়ে এলেন। দাঁড়ালেন সৌরভের মুখোমুখি।
– ‘ কেনো মেরেছেন আমার স্ত্রী কে? ‘ সৌরভের গলা কাঁপছিলো।

মোজাম্মেল শিকদার এবারে হয়তো বুঝতে পেলেন এই ছেলেটিই ছায়ার স্বামী। যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তিনি হুট করে সৌরভের হাত চেপে ধরলেন নিজের দুহাতের মুঠোয়। আকস্মিক ঘটনায় সৌরভ কিছুটা চমকালো। কিন্তু তাকে বিচলিত দেখা গেলো না। কারণ মোজাম্মেল শিকদারের চোখ মুখে তখন অস্থিরতা। তিনি বললেন,
– ‘ আমি আপনার স্ত্রী কে খুন করিনি। বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি। ‘
সৌরভ কিছুই বললো না। এতোক্ষণ এই লোকটিকে ভালো লাগলেও এখন তার রাগ হচ্ছে। তবুও সে নিজেকে যথেষ্ট সংযত রাখার চেষ্টা করছে। মোজাম্মেল শিকদার আবার বললেন,
– ‘ আমার বাসায় স্ত্রী, সন্তান আছে। তারা ভেঙে পরেছে। আমি না থাকলে তারা মরে যাবে। বিশ্বাস করুন আমি মারিনি ছায়াকে। ‘

সৌরভ সেখানে আর দাঁড়ালো না। হন হন করে হেঁটে চলে আসলো অফিসারের রুমে। সেখানে দেলোয়ার হোসেন আর রাজিব বসে আছে। রাজিবের পাশের চেয়ারটায় গিয়ে সৌরভ বসলো। তার চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণ সেখানে থাকলে সে লোকটিকে মেরেই ফেলতো। অফিসার সৌরভেরর দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন। সৌরভ ঢক ঢক করে সবটা পানি খেলো। পর পর কয়েকটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো। 
– ‘ উনি তো বলছেন কাওকে খুন করেননি। ‘
সৌরভের কথা শুনে অফিসার তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। মুখ শক্ত রেখে বললেন,
– ‘ কোন খুনিকে বলতে শুনেছেন ? যে সে ধরা পরার পর বলছে , হ্যাঁ আমিই খুন করেছি। ‘

সৌরভ কিছু বললো না। অফিসার আবার বললেন,
– ‘ আমরা যখন তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে বলি, ছায়া আপনার অফিসে জব করতো ? ‘ তখনই উনি ঢোক গিলতে শুরু করেন। তারপর শুরু করেন যত এলোমেলো কথা। এখন এসে বলছে খুন করেনি। তাহলে সেই ম্যাসেজ আপনার স্ত্রী দিয়েছিলো কেন! এখানে সমস্ত সন্দেহ তো একমাত্র উনার দিকেই যাচ্ছে।

সৌরভ নিশ্চুপ। অফিসারের কথা ঠিক। তাছাড়া ছায়া অনেকবার এই লোকের বিরক্তির শিকার হয়েছে এসব মিথ্যা নয়। এই লোক অফিসের বাহিরেও ছায়াকে ফলো করতো। আর সেদিন ছায়ার সেই ম্যাসেজ। সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে এই হত্যার পেছনে মোজাম্মেল এর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে হাত আছে। লোকটা অতি ধুরন্ধর মানুষ।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সৌরভ বাসায় ফিরলো সন্ধ্যায়। ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। শরীরের ক্লান্তি থেকে মনের ক্লান্তিটা যেন বেশি। দুচোখ জুড়ে ঘুম আসছে । সে চোখ বন্ধ করতেই ছায়ার মুখটা ভেসে উঠলো। ঘুমানো আর হলো না। কিছুক্ষণ পর কফি হাতে রুমে আসলো তোহা। সৌরভের দিকে কফি এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
– ‘ ওদিকের কি খবর ? পুলিশ কিছু জানতে পারলো ? ‘
– ‘ মোজাম্মেল শিকদার কে অ্যারেস্ট করেছে।’
– ‘ মোজাম্মেল শিকদার ? ‘ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো তোহা।

– ‘ হুম। এই মুহূর্তে প্রথম সন্দেহের তালিকায় উনিই আছেন। ‘

সৌরভ তোহাকে মোজাম্মেল শিকদার বিষয়ে সবটা বললো। সব শুনে তোহা বললো,
– ‘ ওই লোকরে সামনে পেলে আমি নিজেই মেরে ফেলবো। কত বড় খারাপ হলে মানুষ এরকম বয়সে এসেও নিজের পুরুষত্ব ফলাতে চায় অন্য একটা মেয়ের উপর। ‘

এরপর সৌরভ আর তোহার সাথে এ বিষয়ে কথা বলেনি। রাতে ডিনার করে সে শুয়ে পরে। তবে ঘুম কিছুতেই হয় না। মোজাম্মেল শিকদার ধরা পরাতেও সৌরভের অস্থিরতা কিছুতেই কমছে না। সৌরভ ফোনটা নিয়ে দেলোয়ার হোসেনের নাম্বারে ডায়েল করল।

– ‘ হ্যাঁ সৌরভ সাহেব। বলুন। ‘
সৌরভ ইতস্ত করে বলে,
– ‘ আমার মনে হয় মোজাম্মেল শিকদার খুনটা করেননি। ‘
– ‘ এমনটা মনে হবার কারণ ? ‘
– ‘ জানি না। আমার মনে কেমন খটকা লাগছে। খুনটা হয়তো অন্য কাওকে দিয়ে করানো হয়েছে। তিনি নিজে করেননি। ‘

দেলোয়ার হোসেনের মুখের এক্সপ্রেশনটা ফোনের মাঝে বুঝা গেলো না। কিন্তু তার কন্ঠ বেশ ভারী আর গম্ভীর। তিনি কাঠ কাঠ স্বরে বললেন,
– ‘ দেখুন, খুনটা যদি অন্য কাওকে দিয়েও করানো হয় সেটাও মোজাম্মেল শিকদার এর মাধ্যমেই তো হয়েছে। কান টানলেই মাথা আসে। আর যদি মাথাটাই আগে পাওয়া যায় তো কানের সন্ধান খুব সহজেই পাওয়া যাবে।’

অফিসারের কথায় যুক্তি আছে। তিনি যা বলেছেন সবই ঠিক। সৌরভের ধারনা খুনটা অন্যকাওকে দিয়ে করানো হয়েছে। তবে অন্যকেউ যদি করেও থাকে সেটা তো মোজাম্মেল শিকদারের হুকুমেই। তিনি কি ভারা করে লোক দিয়ে মেরেছেন ? নাকি তার সাথে আরো কেউ যুক্ত ছিলো এ কাজে? এসব কথা বের করতে হলে উনার থেকেই বের করতে হবে। আর এ কাজ এখন পুলিশের। তার আপাততো কোন কিছু করার নেই আর।

মোহনদের ফ্লাইট ছিলো রাত এগারোটা ত্রিশ মিনিটে। তারা বাংলাদেশ এসে পৌঁছেছে সকাল নয়টার দিকে। এয়ারপোর্ট থেকে ডিরেক্ট চলে এসেছে সৌরভের বাসায়। মিলি মোহনকে দেখা মাত্র গিয়ে জড়িয়ে ধরে। তারপর অনেক্ষণ চাপা কান্না কাঁদে দু ভাই বোন। মোহনদের থাকার জন্য আলাদা ঘর দেয়া হয়। মিলি আগে থেকেই তোহাকে নিয়ে সব রেডি করে রেখেছিলো। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় তারা। সৌরভ এর সাথে তাদের দেখা হয় সকালের নাস্তার টেবিলে। মোহন অবশ্য ছায়াকে নিয়ে কোন কথা জানতে চায়নি সৌরভ এর সামনে। সে জানে সৌরভ এর মনের অবস্থা এখন কেমন। তাই এ নিয়ে কোন আলোচনা করেনি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছিলো নিজেদের মাঝে। মোহন খেতে খেতে বলে,
– ‘ বুঝলে সৌরভ। এবারে একেবারেই চলে এলাম দেশে। ভাবছি মাঝে মাঝে গিয়ে ব্যাবসা গুলো দেখে আসবো শুধু। ‘

সৌরভ হালকা হেসে বললো,
– ‘ ভালো করেছেন ভাইয়া। আর আপনারা কিন্তু এখনি চলে যাবার কথা মুখেও নিবেন না। এখানে থাকবেন। তোহার বিয়ের পর যাবেন। ‘
– তোহার বিয়ে ? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মিলি। তার মুখে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা সেই সাথে কৌতুহল।

তোহা সৌরভের সাথেই বসা ছিলো। এমন একটা পরিস্থিতিতে পরে তার বেশ লজ্জা লাগতে শুরু করেছে। সৌরভ বললো,
– ‘ হ্যাঁ। আমার বন্ধু রাজিবের সাথে। ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে। কিছুদিন আগেই জানতে পারি বিষয়টা। আমি আর অমত করিনি। বিয়ের কথাটা আগানোর আগেই সব এলোমেলো হয়ে গেলো। ‘
সৌরভের মুখে একটা ছাই রঙা আভার সৃষ্টি হয়েছে। উপস্থিত সকলে সেটা লক্ষ্য করলো। মোহন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই বললো,
– ‘ তা তে কি হয়েছে। এবারে সব হবে। বিয়ের দিন ক্ষণ ঠিক করো। এখন বাড়ি গিয়ে সব গুছিয়ে আসি। তারপর বিয়েতে লম্বা সময়ের জন্য চলে আসবো। অনেক মজা করবো সকলে মিলে।’

মোহনের কথার সাথে তাল মিলিয়ে মিলি বললো,
– ‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ। ধুম ধাম করে বিয়ে হবে আমাদের তোহার। ‘

তোহা লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। সেটা দেখে সুবর্ণা বললো,
– ‘ আরে মেয়ে যে এখনই লজ্জায় মরে যাচ্ছে। তোমরা থামো তো। ‘

উপস্থিত সকলে হাসলো। সেই হাসিটা শুধুই লোক দেখানো। একে অন্যের থেকে শোকটা লুকানোর জন্য। এ জগৎ সংসারের নিয়মই দুঃখ কে সামলে উঠে আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন করা। প্রতিটি মানুষ সেটাই করে থাকে। শোক নিয়ে কে বা থাকতে চায়! কে বা দুঃখ কে বরণ করে স্মৃতি নিয়ে বাঁচে। সকলে ব্যস্ত সুখী হতে।

চলবে…

এ শহর মেঘলা ভীষণ পর্ব – ৫

0

এ শহর মেঘলা ভীষণ
পর্ব – ৫
জান্নাতুল ফেরদৌস মীম

মোহন ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। তার মাথার উপর সিলিং ফ্যানটা ভন ভন করে ঘুরছে। ফ্যানের শো শো শব্দ গুলো যেন গভীর থেকে আরো গভীর লাগছে। মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে মোহনের। অফিসে যায়নি সে। দুদিন হলো বাসায়ই বসে আছে। কারো সাথে কথা বলতেও ভালো লাগছে না। একা থাকতেই ভালো লাগছে। একাকীত্ব যখন খুব কষ্ট দেয় তখন একটু বাহিরে হেঁটে আসতে বের হয়। এই একাকীত্বের কারণ কী ? প্রিয়জন ছেড়ে গেলে এমনই লাগে হয়তো। মোহন সিলিং ফ্যানটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবে তার মস্তিস্ক জুড়ে আছে ছায়ার স্মৃতি। যে বছর প্রথম অস্ট্রেলিয়া এসেছিলো মোহন, অনেক গুলো বছর আগের কথা। ভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ নিয়ে আসা হয়েছিলো এ দেশে। আসার সময় ছায়া আর মিলি মিলে সে কী কান্না! ছায়া তখন কলেজে পড়ে। সে এসে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো, ‘ এটা তোমার জন্য ভাইয়া। ‘
মোহন প্যাকেট টা হাতে নিয়ে অবাক হয়েছিলো। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে জানতে চেয়েছিলো, ‘ কী আছে এতে ? ‘
ছায়া তখন কিছু বলেনি। বলেছিলো অস্ট্রেলিয়া আসার পর খুলে দেখতে। মোহন অস্ট্রেলিয়া আসে। এখানকার ভার্সিটিতে জয়েন করে। ভার্সিটির কাছেই একটা বাসা নেয়। ছায়ার দেয়া প্যাকেট টা খুলে সেদিন দেখতে পায় সেখানে তার জন্য দুটো টি-শার্ট, একটা ঘড়ি আর দুটো কলম। টি-শার্ট দুটোতে ছোট করে চিরকুট লিখা। লাল টি-শার্ট টা গরম কালে পড়বে। এটা অনেক পাতলা। গরম কম লাগবে। আর কালো টি-শার্ট টা পড়বে শীত কালে। পাতলা কাপড়ের মাঝে তবে খুব শীত মানবে এটাতে। ঘড়িটির মাঝে ছায়া, মিলি আর মোহনের এক সাথে তোলা একটা ছবি বাধানো। সব গুলো গিফট বের করে একটা চিরকুট দেখতে পায় মোহন। সেখানে লিখা,
– ‘ এই সব গুলো জিনিস আমি কলেজের টাকা জমিয়ে কিনেছি। তুমি কলম দুটো দিয়ে  তোমার জীবনের সব এক্সাম দেয়ার আগে লিখবে। আর ওই ঘড়িটা তোমার কাছে রাখবে সব সময়। যখন মনে পড়বে তখনি সেখানে দেখতে পাবে আমাদের। এতো দূরে থাকতে হবে তোমাকে। নিজের খেয়াল রেখো। কখনো বলা হয়নি, তোমাকে আমরা সবাই খুব ভালোবাসি ভাইয়া। ‘

সেদিন ছায়ার দেয়া এই কয়েক লাইনের চিরকুট পড়েই মোহনের চোখ ভিজে উঠেছিলো। ছায়া যখন কোন সমস্যায় পড়তো তখনই সে মোহন কে ফোন দিতো। তার সমস্যার কথা বলতো না। তবে ফোন দিয়ে কিছুক্ষন কথা বলাতেই নাকি তার হালকা লাগতো। সেই বোন, আদরের ছোট বোন তাকে এতো মায়া লাগিয়ে চলে গেলো। নাহ, ভালো লাগছে না। কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

মোহন চেয়ার ছেড়ে উঠলো। ছায়ার দেয়া ঘড়িটা হাতে নিয়ে অনেকটা সময় সেদিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেলো সুবর্ণার দিকে। সুবর্ণা মায়াকে খাওয়াচ্ছিলো। মোহন গিয়ে তার পাশের চেয়ারটায় বসলো। শান্ত, ভারী কন্ঠে বললো,
– ‘ কাল আমাদের ফ্লাইট। ‘
মায়ার মুখে খাবার দিতে দিতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে সুবর্ণা বললো,
– ‘ কিসের ফ্লাইট। ‘
– ‘ আমরা বাংলাদেশ যাচ্ছি কাল। ‘
সুবর্ণার মুখে খুশির ঝিলিক দেখা গেলো। সে উৎফুল্ল হয়ে বললো,
-‘ সত্যি! ‘
– ‘ হ্যাঁ। এখানকার সব গুছিয়ে নিও। আমরা আর এখানে আসবো না। ‘

সুবর্ণাকে এবারে একটু বিচলিত দেখালো। তার মুখের হাসির রেখাটা মিলেয়ে গেছে।
– ‘ আসবো না মানে ? ‘

– ‘ আমরা বাংলাদেশে একেবারে ফিরে যাচ্ছি। ‘

সুবর্ণা অবাক হয়ে তাকালো মোহনের দিকে। তার চোখে মুখে কৌতুহল। মুখটা ফ্যাকাশে।  মেয়েকে খাওয়ানো বন্ধ করে দিয়ে সে মোহনের দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে। মায়ের হাত থেকে হালকা ছাড় পেয়েই মায়া দৌড়ে চলে গেলো অন্য রুমে।

– ‘ তাহলে এখানের সব কি হবে ?  আর তোমার বিজনেস ? ‘ সুবর্ণা মলিন ভাবে প্রশ্ন করলে।

– ‘ এভাবে থাকবে সব। ম্যানেজার কে দায়িত্ব দিয়ে যাবো। আর মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবো আমি। ‘

– ‘ হুট করে দেশে একেবারে চলে যাবো বললেই হলো ? সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে তো। ‘

মোহন বিরক্ত হলো সুবর্ণার কথায়। ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,
-‘ এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। সব ব্যবস্থা করেই যাচ্ছি আমি। ‘

– ‘ ফ্লাইট কখন ? ‘ সুবর্ণার আহত স্বরে প্রশ্ন।
–  ‘ কাল রাতে । ‘

সুবর্ণা আর কথা বাড়ালো না। উঠে চলে এলো। তার দেশে যাবার ইচ্ছা আছে। সকলকে দেখারও ইচ্ছা আছে। তবে একেবারেই ইচ্ছা নেই অস্ট্রেলিয়ার বিলাসিতা ছেড়ে দেশে গিয়ে জীবন যাপন করার। সে চেয়েছিলো বাকি জীবনটা এখানেই থাকবে। মেয়ে বড় হবে। তারপর, এদেশি কোন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে। এখন এসবের কিছুই হবে না। ভাবতেই গা রি রি করছে রাগে। কিন্তু মোহন কে যে কিছু বলে লাভ হবে না সেটা সে জানে। মোহন হলো পরিবার বলতে কাতর। নিজের পরিবারের জন্য যেন জীবন দিয়ে দিতেও সমস্যা হবে না ! এসব আদিক্ষেতা একদম সহ্য হয় না তার।

আজ ছায়ার জন্মদিন ছিলো। কত প্ল্যান করেছিলো সৌরভ। ভেবেছিলো অনেক বড় করে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু কিছুই হলো না।সব থেকে বড় সারপ্রাইজ টা ছায়া নিজেই দিলো। চলে গেলো সকলকে ফাঁকি দিয়ে। সৌরভ বারান্দায় বসে ছিলো। তার হাতে মোবাইল। হোম স্ক্রিনে ছায়ার ছবি। সৌরভ সে ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনের মাঝে চলছে অশান্তির উথাল পাথাল ঢেউ। থানা থেকে ফোন এসেছিলো। পুলিশ মোজাম্মেল শিকদার কে গ্রেপ্তার করেছে। এখন মোজাম্মেল শিকদার এর স্টেটমেন্ট নেয়া হবে। তার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ যদি থাকে তাহলে এ খুনের জন্য তার কঠিন শাস্তি হবে। হয়তো ফাঁসি নয়তো যাবত জীবন তো হবেই। কিন্তু কি লাভ হবে এতে ? ছায়াকে কি সে ফেরত পাবে ? তার ছায়া কি আবারো তার কাছে চলে আসবে ?  আসবে না তো। তবে কেনো এতো আয়োজন! কেনো এতো খোঁজা খুঁজি, এতো প্রমাণ করার প্রচেষ্টা ! কি  হবে এসব করে?  ছায়া তো আর আসবে না।  নাহ!  লাভ আছে। যে ছায়াকে হত্যা করেছে তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে যে ছায়া শান্তি পাবে না। শান্তি পাবে না সৌরভ। এতো সব কথা মাথার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছিলো সৌরভের। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো। রুম ছেড়ে বের হতেই তোহার সাথে দেখা হয়। তার পাশেই মিলি দাঁড়িয়ে। মিলিকে দেখতে ছায়ার মতোই লাগে। কিছুটা অমিল হলেও খুব একটা ব্যবধান নেই। এই মুহূর্তে তাকে দেখে কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে। এ দুদিন চোখ মুখ ফোলা ছিলো। এখন সেটা নেই। চোখের কোলে হালকা কালি জমেছে। রাতে হয়তো ঠিক ভাবে ঘুম হয় না। মিলি গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে না। সব সময় স্মার্টলি কথা বার্তা বলে। মিলি তার স্বভাবসুলভ ভাবেই সৌরভকে বললো,
– ‘ দুলাভাই কাল ভাইয়ারা অস্ট্রেলিয়া থেকে চলে আসবে। আমরা যেহেতু এখানে আছি তাই তারা এখানে এসে উঠতে চাচ্ছে। তারপর সকলে এক সাথে বাড়ি চলে যাবো। আপনার কোন অসুবিধে নেই তো ? ‘

সৌরভ মাধুর্যের সাথে বললো,
– ‘ আমার কোন অসুবিধে নেই মিলি। তোমরা যদি সব সময়ও এখানে থাকো আমাদেরই ভালো লাগবে। ‘

মিলি জানে সৌরভ কখনো এসব নিয়ে কিছু বলবে না। সে সব সময় ছায়ার ফ্যামিলিকে নিজের ফ্যামিলির মতো দেখেছে। শালি হওয়ার পরও কখনো মিলির সাথে কোন ঠাট্টা, তামাশা করেনি। স্বভাব, চরিত্র, আচরণ সব দিক দিয়ে সৌরভ একজন আদর্শ পুরুষ বলা যায়। তার বোন ভাগ্য গুণে এমন স্বামী পেয়েছিলো।

সৌরভ বের হচ্ছিলো। তোহা পেছন থেকে ডেকে বললো,
– ‘ কোথাও যাচ্ছো ভাইয়া ? ‘
– ‘ থানায় যাবো। অফিসার একবার যেতে বলেছেন। মোজাম্মেল শিকদার অ্যারেস্ট হয়েছে। সে বিষয়েই হয়তো কোন কথা।’ এটুকু বলে সৌরভ বের হয়ে গেলো।

সৌরভের ব্যাংকে যাওয়া হচ্ছে না। সে মনের দিক দিয়ে একদম ভেঙে পরেছে। এ অবস্থায় কেউ অফিস করতে পারে না। গুলশানের ইসলামি ব্যাংক এর ম্যানেজার সে। মালিকের পরই সব কিছু তার দেখাশুনা করতে হয়। মালিক পরিচিত এক বন্ধুর বড় ভাই। সে হিসেবে অনেক ছাড় দেয়া হয় তাকে। তবে সেসব এর কোন সুবিধাই সৌরভ এতো দিন নেয়নি। বরং প্রতিটি রুলস নিজেও যথাযথভাবে মেনেছে। কিন্তু ছায়ার মৃত্যুর পর এখন অফিসে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। তাই মালিক নিজেই তাকে বলেছে যতদিন ইচ্ছা সময় নাও। নিজেকে ঠিক করো, তারপর কাজ।

রাজিবের কাজ আছে। গত দুদিন সৌরভের জন্য অফিসে যায়নি সে। আজ থেকে আবার জয়েন করেছে। তবে সকালে সৌরভ ফোন করে বলে দিয়েছে লাঞ্চে ছুটি নিয়ে অফিসের সামনে থাকতে। থানায় যাবে। বন্ধুর এরকম একটা সময় রাজিবও তার পাশে থাকতে চায় সব সময়, সব ভাবে। দশ মিনিট হলো সে ব্যাংকের সামনে অপেক্ষা করছে কিন্তু সৌরভের এখনো খবর নেই। সৌরভ আসলো আরো মিনিট পাঁচেক পর। তারপর দুজন মিলে গেলো পুলিশ স্টেশন।

চলবে…

এ শহর মেঘলা ভীষণ পর্ব – ৪

0

এ শহর মেঘলা ভীষণ
পর্ব – ৪
জান্নাতুল ফেরদৌস মীম

‘সৌরভ। বস আজও খুব বিরক্ত করছে । ‘

ব্যাস এটুকুই ছিলো ম্যাসেজটা। ছায়ার নাম্বার থেকে। দেলোয়ার হোসেন ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে বললেন,
-‘ ম্যাসেজটা আপনার স্ত্রী পাঠিয়েছিলেন ?’
-‘ জি ‘ হালকা স্বরে বললো সৌরভ।
– ‘কবের ম্যাসেজ এটা ?’
সৌরভ নিজের ফোনটা আবার হাতে তুলে নিয়ে ম্যাসেজ আসার সময়টা দেখলো। দৃঢ় কন্ঠে বললো,
– ‘ঘটনার দিন। সন্ধ্যা ছয়টা চৌত্রিশ মিনিট।’

দেলোয়ার হোসেন  এবার কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন,
– ‘ সন্ধ্যায় আপনাকে কি ডেড বডি ম্যাসেজ পাঠিয়েছে ? সে সময় অলরেডি আপনার স্ত্রী ডেড ছিলো। তার ফোন আমরা কালেক্ট করেছিলাম। আর তারপরই আপনাকে ফোন দিয়ে জানানো হয় বিষয়টা। ‘

সৌরভ কিছু বললো না। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে অফিসার আবার বললেন,
– ‘ আমরা স্পটে যাই বিকেল পাঁচটার পর। সেখানে গিয়ে লাশ ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। তারমানে আপনার স্ত্রীর মৃত্যু হয় আরো অনেক আগে। তো আপনার এখানে সন্ধ্যায় ম্যাসেজ যাবার কোন প্রশ্নই আসে না। কারণ তখন আপনার স্ত্রীর ফোনটাও আমাদের সংগ্রহে ছিলো। আর ফোনে ছিলো ফিংগার প্রিন্ট পাসওয়ার্ড দেয়া। যে কারণে সেটা খোলাও যায়নি। ‘

সৌরভ আরো খানিক সময় চুপ থেকে বলে,
– ‘ আমার ফোনটা আমি সন্ধ্যায় অন করি। কারণ আমাদের অফিসে ফোন অন রেখে কাজ করার রুলস নেই। তাই অফ করেই রাখা হয়। অফিস শেষে যখন আমরা বাহিরে শপিং করতে যাই তখন বোনকে ফোন করার সময় ফোনটা অন করা হয়। আর সে সময়ই ম্যাসেজটা এসেছে। ‘
– ‘ তাহলে সেটা আপনি এ দুদিন বলেননি কেনো! ‘ অফিসার তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে প্রশ্নটা করেন।

সৌরভ আগের মতোই স্বভাবিক থেকে বলে,
-‘ কারণ সে মুহূর্তেই আপনারা আমাকে ছায়ার মৃত্যুর খবরটা দেন। আমি ছুটে যাই হসপিটাল। তখন ম্যাসেজ লক্ষ্য করা হয়নি। আর পরের দিনও আমি ফোনের খেয়ালে ছিলাম না। ম্যাসেজটা দেখি আমি কাল রাতে। ‘

অফিসার শান্ত হলেন। কিছু একটা ভেবে বললেন,
– ‘ তো এই ম্যাসেজে বোঝা যাচ্ছে আপনার স্ত্রীকে তার বস বিরক্ত করতো। রাইট ? ‘
– ‘ জি। ‘
– ‘ কে উনি ? ‘
– ‘ ছায়ার আগের অফিসের বস। মিস্টার মোজাম্মেল  শিকদার। ‘
– ‘আপনি ঘটনা প্লিজ খুলে বলুন আমাকে।’
সৌরভ একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস আড়াল করলো। তারপর ছায়ার অফিসের মালিক মোজাম্মেল শিকদারের বিষয়ে বললো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

মিলি তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মায়ের চোখে পানি। তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর নিরবে অশ্রু ঝরাচ্ছেন। মিলি বাচ্চা মেয়ের মতো গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। তার গলা ধরে আসছে। খুব বেশি মিস করছে নিজের বড় বোনটাকে। মিলি মাকে আরো ভালো করে দুহাতে আঁকড়ে ধরে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো,
-‘ বাবা কোথায় মা ? ‘
আমেনা বেগমের গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। কান্নার দমক চেপে বহু কষ্টে তিনি বললেন,
– ‘ ছাদে গেছে। ‘
– ‘মা। ভাইয়া কে একটা ভিডিও কল দেই? ‘

আমেনা বেগম কিছু বললেন না। তিনি নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছেন। মিলি মায়ের কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসলো। নিজের ফোনটা নিয়ে এসে কল দিলো মোহন এর নাম্বারে। ফোন রিসিভ করলো মোহনের স্ত্রী সুবর্ণা। মোহন, মিলি আর ছায়ার বড় ভাই।  অস্ট্রেলিয়া থাকে। সেখানে তার বিশাল বিজনেস। ঢাকাতেও একটা কোম্পানির সাথে শেয়ারে আছে মোহন। তাদের একটা চার বছরের মেয়ে আছে। মায়া। নামটা রেখেছিলো মিলি। তার নিজের নামের মাথে মিলিয়ে। যদিও এ নামে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছিলো ছায়া। সে আনন্দিত হয়ে বলেছিলো, ‘ ছায়া, মায়া। বাহ! ভারী সুন্দর। ‘

মোহন প্রতি বছর ঈদে বাড়িতে আসে। অস্ট্রেলিয়া বিজনেস করা নিয়ে তার বিশাল কাহিনী। অনেক সময় লেগেছে সেখানে স্যাটেল হতে। করতে হয়েছে অনেক পরিশ্রম।  তবে দেশের প্রতি, পরিবারের প্রতি টান কমেনি। সে কারণেই প্রতি বছর দেশে আসা হয় তার। ছায়ার হঠাৎ মৃত্যুতে সব  কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। মোহন চেষ্টা করেও আসতে পারেনি। রাতে সংবাদ পেয়েছে তবে টিকিট পায়নি। পরদিন সকালেই কবর হয়ে যায় ছায়ার। তার আর আসা হয়নি। মনটা একদম ভেঙে গেছে। নিজের আদরের বোনটা ছেড়ে চলে গেলো আর সে কী না দূর দেশে পরে রইলো! একটা বার দেখার জন্যও আসতে পারলো না! বড্ড বেশি অভিমান জমেছে নিজের উপর। বড্ড বেশি।

সুবর্ণা অনেকটা সময় শাশুড়ী আর ননদের সাথে কথা বললো। মোহন একটু বাহিরে গিয়েছে। ভুলে ফোন রেখে গেছে বাসায়। তাই তার সাথে আর কথা হলো না।

সৌরভ বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়েছে। ঘড়িতে সময় রাত একটা। তোহা খাবার দিয়ে গিয়েছিলো রুমে। এখনো খাওয়া হয়নি। ছায়াকে ছাড়া এ নিসঙ্গতার জীবন একদমই অসহনীয় লাগছে তার। মাঝে মাঝে রাত জেগে কাজ করতে হতো সৌরভকে। শেয়ার বাজারের বিজনেস গুলোর খোঁজ রাখতে হতো। তখন এভাবে না খেয়ে কাজে ডুবে থাকলে ছায়া রেগে আগুন হয়ে যেতো। শেষ কয়েকটা মাস ছায়া অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলো। একদম অন্যরকম। তার মাঝে অনেক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করছিলো সৌরভ। সেই আনমনা হয়ে থাকার কারণ গুলোও সৌরভের অজানা নয়।

বেশ কিছুদিন আগে সৌরভ অফিস শেষ করে বাসায় এসে দেখে ছায়া নিজের রুমে শুয়ে আছে। সেদিন রাতের খাবারও খায়নি সে। ডিনারের জন্য ডাকলে বলেছিলো ইচ্ছে করছে না। খাবে না। তারপর ঘুমোতে যাবার সময় সৌরভ ছায়ার কাছে গিয়ে তার হাতটা ধরে বলেছিলো,
– ‘ অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করছি তুমি অন্যমনস্ক হয়ে আছো। ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করছো না। কিছু কি হয়েছে ? ‘

ছায়া বিছানা থেকে উঠে বসে বলেছিলো,
-‘ আমার অফিসের বসকে ঠিক লাগছে না। ‘
সৌরভ ভ্রু কুঁচকে বলেছিলো,
– ‘ ঠিক লাগছে না মানে? ‘
-‘ উনি সাধারণত বেশি সময়ের জন্য অফিসে আসেন না। সকাল দিকে আসলে লাঞ্চ টাইমেই চলে যান। দেখা যায় এগারো টার দিকে আসলে দু ঘন্টা কাজ গুলো দেখে লাঞ্চেই বের হয়ে যান। ম্যানেজার সাহেবই সব দেখাশুনা করেন। কিছুদিন আগে একটা ফাইল সাইন করাতে উনার রুমে গেলাম। উনি আমার দিকে কিভাবে যেনো তাকিয়ে ছিলেন। এরপর আরেক দিন আমি লক্ষ্য করেছি উনি আমার শরীরের দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে থাকেন। সেই দৃষ্টিটা কতটা নোংরা তা শুধু আমিই বুঝতে পারি। ‘

এটুকু বলে ছায়া থামে। সৌরভ কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। সে শুধু ছায়ার হাত ধরে বলেছিলো,
– ‘ চিন্তা করো না। সব জায়গায় এমন ধরনের কিছু লোক থাকে। এদের এড়িয়ে চলে একটু সাবধানে থাকবে। ‘

এরপর অনেক গুলো দিন যায়। ছায়া তেমন কিছু বলেনি তার বস সম্পর্কে। তারপর আসে এক শনিবার। সৌরভের অফিস বন্ধ। সে বাসাই ছিলো। ছায়া অফিস থেকে এসে অস্থির চিত্তে  বলে, সে আর এ অফিসে জব করবে না। সৌরভ কারণ জানতে চাইলে ছায়া কেমন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলো,
– ‘ আমি আজও উনার রুমে গিয়েছিলাম একটা ফাইল নিয়ে। উনি উঠে এসে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফাইলটায় সাইন করলেন। তারপর হঠাৎ আমার কোমড় নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরলেন। আমি কোনভাবে ছুটে চলে এসেছি। অফিস বলে কোন ঝামেলা করতে পারেনি। ‘

একথা শুনে সৌরভের মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো। সে ছায়াকে সেদিন বলে দেয় পরের দিনই যেন অফিসে রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেয়। ছায়াও সৌরভের কথা মতো রেজিগনেশন দেয়। সেই অফিস ছেড়ে দিয়ে জয়েন করে অন্য একটা অফিসে। কিন্তু সেটাও কোনভাবে সেই লোক টের পায়। নতুন অফিস থেকে ফেরার পথে একদিন তিনি ছায়ার পথ আটকায়। ছায়াকে বিভিন্ন ভাবে অফার করে নিজের কাছে নেবার। সেটা ছায়ার ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় যেভাবেই হোক। এরপর অবশ্য তেমন কোন কিছু আর হয়নি। ছায়া তাকে এ বিষয়ে আর কিছুই জানায়নি। তবে ছায়া সব সময় ভয়ে থাকতো। এই বুঝি লোকটা আবার তার পথ আটকায়। এই বুঝি তার কোন ক্ষতি করে দেয়।

চলবে….

এ শহর মেঘলা ভীষণ পর্ব – ৩

0

এ শহর মেঘলা ভীষণ
পর্ব – ৩
জান্নাতুল ফেরদৌস মীম

-‘আমরা লাশটা পেয়েছি বিকেলে একশো ফুট প্রথম ব্রিজের নিচে। পানিতে ভাসতে ভাসতে ব্রিজের কাছে চলে এসেছিলো। সেখানে বিকেলে অনেক মানুষ হাঁটতে যায়। তেমনি এক কাপল ঘুরতে গিয়েছিলো। লাশটা প্রথমে তাদের দৃষ্টিতেই পড়ে। বস্তার ভেতর ঢুকানো ছিলো। কোন ভাবে বস্তার মুখটা খুলে যাওয়ায় হাত বেড়িয়ে এসেছিলো। তখনই সেই দম্পতি বিষয়টা লক্ষ্য করে। আশেপাশের আরো অনেক লোক জড়ো হয়। পুলিশকে খবর দেয় তাদের মাঝেই একজন। তখন আমরা গিয়ে লাশ উদ্ধার করি পানি থেকে। ‘
অফিসার এটুকু বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। সৌরভ তখন অফিসারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ ভরে আছে নোনাজলে। দুফোটা জল গাল বেয়ে গলা দিয়ে গড়িয়ে পরলো। ছায়াকে কেউ এতো কষ্ট দিয়ে মেরেছে সেটা ভাবতেও সৌরভের কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।

অফিসার আবার বললেন,
-‘সাধারণত এ ধরনের হত্যায় কেউ কোন প্রমাণ রাখে না। সব কিছু লুকিয়ে ফেলে। মার্ডার করা হয় খুব প্ল্যান করে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আপনার স্ত্রীর লাশের সাথে তার অফিসের আইডি কার্ড, মোবাইল সহ পার্স ব্যাগটাও রাখা ছিলো। আরো একটি বিষয় আমরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জেনেছি। উনারর শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে।’

সৌরভ কিছু বলতে পারলো না। তার চোখ মুখের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। সে নিজেও জানে না ছায়াকে এভাবে কে হত্যা করবে। সৌরভের জানা মতে ছায়ার কোন শত্রু ছিলো না। বরং সকলে তাকে অল্পতেই পছন্দ করে ফেলতো। দেখা যেতো ছায়া নিজেই লোকজনদের একটু এড়িয়ে চলতো। খুব দরকার ছাড়া মেলামেশার স্বভাব তার মাঝে ছিলো না।

অফিসার সৌরভের থেকে তেমন কোন ক্লু পেলো না। বরং যতবারই সৌরভ শক্ত হয়ে কথা বলতে চেয়েছে ততোবার ছায়ার হত্যার কথা শুনে সে ভেতরে ভেতরে দুমরে মুচরে গেছে। চেষ্টা করেও জানা গেলো না সৌরভের থেকে কিছু।  যতটুকু বোঝা গেছে এই মেয়ের তেমন শত্রু নেই। কারণ তেমন কিছু হলে তার হাসব্যান্ড প্রতিটি কথা শুনে অবাক হতো না। কোন কিছু জানতে না পেরে অনেকটা হতাশ হয়েই ফেরত যেতে হলো দেলোয়ার হোসেনের।

মাঝ রাত। তোহা আর মিলি দুজন দুপাশ ফিরে শুয়ে আছে। কারো চোখেই ঘুম নেই। সব কিছু কেমন যেনো গুমোট হয়ে গেছে। মনের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে একটা ঘন কালো মেঘের ছায়া। সে মেঘ কখনো কখনো বৃষ্টি হয়ে ঝরছে। তোহা উঠে এসে বেলকনিতে দাঁড়ালো। দুতলা বিশিষ্ট এ বাড়িটা তার বাবা তৈরী করেছিলেন। তবে বেশি দিন থাকার ভাগ্য হয়নি তার। অনেক আগেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে তিনি চলে গেছেন। মা আর ভাই ছিলো তার জীবনে। সেই ভাইয়ের বিয়ের পর যখন মা মারা গেলো তখনও তাকে কোন কষ্ট পেতে দেয়নি সৌরভ। ভাইয়ের বিয়ে হলে সেই সংসারে খুব কম মেয়েই বাবা মা ছাড়া সুখে থাকে। তবে তোহার বেলায় তেমন হলো না। ছায়া তার ভাবী হলেও মায়ের মতো স্নেহ করতো তাকে। সেই ভাই আর ভাবীকে নিয়ে সে খুব ভালো ছিলো। যে ভাই তাকে খুব যত্ন করে আগলে রেখেছিলো সেই ভাই আজ সব থেকে বেশি যন্ত্রনা বুকে নিয়ে বেঁচে আছে। ছায়া চলে গেছে ঠিকই তবে সাথে করে নিয়ে গেছে তার ভাইয়ের সমস্ত সুখ, বেঁচে থাকার ইচ্ছা।

ফোনের রিংটোন বাজছে। রাজিব ফোন করেছে। তোহা ফোন রিসিভ করে কানে ধরে রাখলো। কোন কথা বলছে না সে। রাজিব বললো,
– ‘ঘুমাওনি ?’
– ‘ঘুম আসছে না।’
– ‘রাতে খেয়েছো ?’
– ‘হুম।’
– ‘সৌরভ ?’
– ‘ভাইয়া রুমের দরজা বন্ধ করে আছে। তাকে ডেকেছিলাম। খেতে নামলো না।’
– ‘ঠিক আছে। তোমরা আর কিছু বলো না। কাল সকালে আমি আসবো। একবার থানায় যেতে হবে। পুলিশকে আমরা হেল্প না করলে তো চলবে না। সৌরভ যদি কোন কিছু জানে সেটাও জানাতে হবে তাদের।’
– ‘হুম।’

ড্রইং রুমে সকলে বসে নাস্তা করছে। সকাল সকাল সবার ঘুম ভেঙে যায় আজ। ঘুম ভেঙেছে বললে ভুল হবে। আসলে কারোর ঘুমই হয়নি। তোহা আর মিলি সকালে উঠে নামাজ পরেছে।  আমেনা বেগম নামাজ পরে মেয়ের নামে কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। সকলের মনের অবস্থা খারাপ। তবুও সৌরভকে দেখে তার জন্যই যেনো নিজেদের সামলে রেখেছেন তারা। আশফাক আহমেদ বরাবরই কম কথা বলার মানুষ। তিনি নিজের ভেতরের কষ্ট বাহিরে প্রকাশ করতে পারছেন না। মূর্তিমান হয়ে বসে আছেন। মেয়েটাও ছিলো তার মতো। ভেতর লুকানো স্বভাবের। সৌরভকে তিনি শুরুতেই পছন্দ করে নিয়েছিলেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন ধুম ধাম করে। আজ তিনি বুঝতে পারছেন ছেলেটা সত্যি তার মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্র ছিলো। কিন্তু কি হয়ে গেলো! যে মেয়ের সুখের কথা ভেবে এতো কিছু করলেন, সেই মেয়েই কী না চলে গেলো। সন্তানের লাশ যখন বাবা মা কে দেখতে হয় তখন এর থেকে বেশি কষ্ট দুনিয়াতে আর কী বা থাকে!  

আমেনা বেগম তোহাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– ‘মা। তুমি একবার সৌরভ বাবাকে ডেকে আনো।  ছেলেটা ঠিক ভাবে কিচ্ছু খাচ্ছে না। এভাবে থাকলে তো মরে যাবে আমার বাচ্চাটা।’

তোহা মুখ নিচু করে রইলো। সে অনেকবার ডেকেছে তার ভাইকে। কিন্তু সৌরভ বের হচ্ছে না। আমেনা বেগমের ভেজা কন্ঠের সামনে তোহা কোন উত্তর দিতে পারলো না।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

কলিং বেল বাজছে। রহিমা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। রাজিব এসেছে। রাজিবকে দেখা মাত্র আমেনা বেগম যেনো একটু স্বস্তি পেলো। এই মুহূর্তে সৌরভকে কন্ট্রোল করতে পারবে একমাত্র সে। তিনি রাজিবকে ডাকলেন,
– ‘আসো বাবা। আসো। বসো চেয়ারটায়।’

রাজিব আমেনা বেগমের পাশের চেয়ারটায় বসলো। তোহার মুখের দিকে তাকালো একটাবার। মেয়েটার মুখ শুকিয়ে ছোট হয়ে গেছে। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো সে। তোহার সাথে তার একটা সুন্দর সম্পর্ক। এ সম্পর্কের একটা নাম হবে কিছুদিন পর। আর এর মাঝে এমন একটা কান্ড হয়ে গেলো!

আমেনা বেগম রাজিবের প্লেটে নাস্তা দিচ্ছিলেন। সে সময় নেমে এলো সৌরভ। তার পরনে সাদা পাঞ্জাবী, পাজামা। মুখটা ঘোলাটে দেখাচ্ছে। ফর্সা গায়ের রঙ যেন কিছুটা রক্তশূন্য হয়ে গেছে। সকলে সৌরভকে নেমে আসতে দেখে একটু অবাক হলো। সেই সাথে বুকের মাঝে চাপ দিলো একটা অসহ্যকর ব্যাথা। যদিও সৌরভকে তেমন বিচলিত দেখালো না। সে সুন্দর করে এসে চেয়ার টেনে বসলো। নিজের প্লেটে খাবার তুলে নিয়ে খেতে লাগলো। সকলে এখন বেশ চিন্তিত। সৌরভ কী করতে চাচ্ছে বা কী হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারলো না। দুদিন পাগলের মতো হয়ে থাকা ছেলেটা এখন কী না স্বাভাবিক আচরণ করছে ! বেশ ধাক্কা খেলো উপস্থিত সকলে। তোহা কান্না ভেজা চোখে তাকালো রাজিবের দিকে। রাজিব চোখের ইশারায় তাকে আশ্বস্ত করে শান্ত হতে বললো।  তবে এসবের কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই সৌরভের। সে নিজের  মতো খাওয়া শেষ করলো। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে রাজিবকে বললো,
-‘ চল। বের হবো। ‘
– ‘ কোথায় যাবো ? ‘ রাজিবের প্রশ্ন।
সৌরভ কোন উত্তর দিলো না। বের হবার আগে একবার আশফাক আহমেদ কে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে নিলো। সালাম করলো আমেনা বেগমকেও। আমেনা বেগম কিছু বুঝতে পারলেন না। তবুও সৌরভের মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন তিনি। সৌরভের চোখের কোণ ভারী হয়ে আসছে। সে নিজেকে বহু কষ্টে সামলালো। আমেনা বেগমের হাতটা ধরে বললো,
– ‘আমি আপনাকে কখনো ছায়ার মা ভাবিনি।  আমার নিজের মা ভেবেছি। থানায় যাচ্ছি মা। দোয়া করবেন। যারা ছায়ার এ অবস্থা করেছে তাদের খুঁজে শাস্তির ব্যবস্থা করতে পুলিশকে আমি আমার সবটা দিয়ে সাহায্য করবো।’

কথাটা শেষ করে সেখানে আর দাঁড়ালো না সৌরভ। সে আর ভেঙে পরবে না। নিজের সাথেই প্রতিজ্ঞা করেছে। শক্ত হতে হবে তাকে।

দেলোয়ার হোসেনের সামনের দুটো চেয়ারে বসে আছে সৌরভ আর রাজিব। তিনি একটা মামলার ফাইল দেখছিলেন। সেটার কাজ শেষ করে তারপর কথা বলবেন বলে সৌরভদের একটু অপেক্ষা করতে বলেছেন। থানায় সব সময় বিভিন্ন মামলা আর তদন্তে ব্যস্ত থাকতে হয় পুলিশদের। একটা মামলা নিয়ে বসে থাকার মতো অবস্থায় তারা থাকেন না। এক সাথে সব দিক, সব মানুষের সমস্যা দেখতে হয় তাদের। সেই সাথে থাকে উপর মহলের চাপ। মিডিয়ার বিভিন্ন আলোচনা তো আছেই। হাতের ফাইল টা দেখে সেটা সাইডে রেখে অফিসার  সৌরভের উদ্দেশ্যে বললেন,
– ‘ হ্যাঁ। বলুন। আপনার সন্দেহ হয় কাকে ? বা কোন ক্লু অথবা কোন কিছু কি সন্দেহ জনক আছে যা আপনি জানুন ?’ 

সৌরভ নিজের মোবাইলটা বের করে দেলোয়ার হোসেন এর সামনে রাখলেন। ফোনের স্ক্রিনে একটা ম্যাসেজ দেখা যাচ্ছে শুধু। ম্যাসেজটা এসেছিলো দুদিন আগে। যেদিন ছায়ার মৃত্যু হয়।

চলবে…

এ শহর মেঘলা ভীষণ পর্ব – ২

0

এ শহর মেঘলা ভীষণ
পর্ব – ২
জান্নাতুল ফেরদৌস মীম

মর্গের ভেতর দুজন পুলিশ সহ একজন ডাক্তারের সাথে সৌরভ আর রাজিব প্রবেশ করেছে। তাদের সামনেই সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে ছায়ার লাশ। সৌরভ যেন তার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সে মনে মনে হাজার বার আল্লাহ কে ডেকে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে তার জীবনের শেষ চাওয়া মুখ থেকে কাপড় সরানোর পর যেন দেখতে পায় এটি ছায়া না। সৌরভের চোখ রক্তবর্ণ। মুখ থমথমে। হাত পা অনবরত কাঁপছে। সে কাঁপা হাতে আস্তে করে লাশের মুখ থেকে কাপড়টি সরালো। তার সামনে ফুটফুটে পুতুলের মতো মেয়েটি শুয়ে আছে। সকালে পড়া কপালের টিপটি নেই। চোখের নিচে কাজল লেপ্টে কালো হয়ে আছে। আর কোন কিছু বলতে পারলো না সৌরভ। ধপ করে সেখানেই বসে পরলো।

রাজিব সৌরভকে বহু কষ্টে ধরে হসপিটালের ওয়েটিং রুমে নিয়ে এসে বসেছে। সে বুঝতে পারছে না কি বলবে। সৌরভকে শান্তনা দেয়ার মতো ভাষা তার জানা নেই। তাই বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে তার পাশে বসে রইলো। সৌরভ কে দেখে মনে হচ্ছে তার দেহে প্রাণ নেই। নিষ্প্রাণ একটা ছেলে বসে আছে। চোখ গুলো লাল টকটকে । সে চোখে নেই কোন অশ্রু। ‘চোখের অশ্রু তো সবাই দেখে। মনের অশ্রু দেখে কে ?’

বেশ কিছুটা সময় পর দুজন পুলিশ এসে ঢুকলেন রুমে। সৌরভের সামনে এসে দাঁড়িয়ে একজন বললেন,
– ‘আমরা লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়েছি।’

সৌরভ কোন উত্তর দিলো না। তার দৃষ্টি মেঝের দিকে। মুখটা ম্লান। চারপাশের জগতের কোন দিকে তার নজর নেই। সব যেন মিথ্যে হয়ে গেছে। পুলিশ লোকটি আবারো বললেন,

– ‘আমরা বুঝতে পারছি আপনার মনের অবস্থা ঠিক নেই। তবে আপনাকে এখন শক্ত হতে হবে। আপনি সাহায্য করলেই আমরা দ্রুত তদন্ত করতে পারবো।’

সৌরভ তখনো কিছু বললো না। তাকে চুপ থাকতে দেখে রাজিব উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

– ‘ আপনারা নিজেদের মতো তদন্ত শুরু  করুন অফিসার। ও একটু স্বাভাবিক হলেই কথা বলবে। ‘

অফিসার আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। একটু পরই দৌড়িয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো তোহা। তার চুল এলো মেলো। প্রসাদনী বিহীন ম্লান মুখ। চোখ গুলো কান্নার কারণে ফুলে আছে। তোহা এসেই সৌরভ কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলো। তবে সৌরভ তখনো ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। তার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। নেই কোন উত্তেজনা। সে যেনো তার রক্তাভ চোখ দিয়ে শুধু পৃথিবীকে ধ্বংস করে যাচ্ছে।

তোহা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। হসপিটালে এতো জোড়ে কান্না করা কেউ এলাও করে না। দুবার দুজন নার্স এসে তাকে শান্তনার স্বরে সতর্ক করে গেছে। কিন্তু মন কি আর বাঁধ মানে ? সৌরভের ওপর পাশের চেয়ারটায় বসে তোহা মুখে ওড়না চেপে কান্না করছে। তোহাকে এভাবে কাঁদতে দেখে রাজিবের খুব খারাপ লাগছিলো। সে এসে তোহার কাঁধে হাত রাখে। ইশারায় তাকে বুঝায় সৌরভের কথা। এ সময় তাদের উচিত সৌরভকে সামলানো। সৌরভ যে ইতোমধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে তা বুঝতে বাকি নেই কারো। ভাইয়ের কথা চিন্তা করে তোহা নিজের কান্নার আওয়াজটা কমিয়ে এনেছে। কিন্তু কিছুতেই শান্ত হতে পারছে না সে। একটু পর পর কেঁপে কেঁপে কান্না করে যাচ্ছে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ওরা বাড়ি ফেরে রাত একটার দিকে। হসপিটালের সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে লাশ নিয়ে বাড়ি আসা পর্যন্ত সকল ব্যবস্থা রাজিব আর তোহাই করেছে। আত্মীয় স্বজনদের খবর পাঠানো হয়েছে। কাল সকাল দশটায় মাটি দেয়া হবে। রাতেই ছায়ার বাড়ি কুমিল্লা থেকে তার মা বাবা আর বোন চলে এসেছে খবর পেয়ে। এসেছে আরো কিছু ঘনিষ্ঠ লোক। ছায়ার মা আমেনা বেগম এসে লাশের সামনে বসে প্রলাপ করে করে কান্না করছে। মিলি তোহাকে ধরে বোনের সামনে শক্ত হয়ে বসে আছে। তার চোখ থেকে শুধু টপ টপ করে পানি ঝরছে। মিলি ছায়ার ছোট বোন। এবারে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে আছে। দু বোনের মাঝে অনেক মিল। বয়সের ব্যবধানও আকাশ পাতাল না বিধায় ওরা ছিলো বন্ধুর মতোন।

আশফাক আহমেদ মেয়ের শোকে বাকশক্তি হারানোর উপক্রম। তিনি ড্রইং রুমের চেয়ারে বসা। এক হাত কপালে দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছেন। আর সৌরভ ? সে তো এখন শুধুই পাথরের মূর্তি। বাড়িতে কে আসছে, কে যাচ্ছে সেদিকে তার কোন নজরদারী নেই। সে ছায়ার মাথার কাছে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছায়ার মুখের দিকে। তার চোখ গুলো এখনো লাল, রক্তাভ।

পরদিন সকালে লাশ কবর দেয়া হলো। দূর আত্মীয়রা সকলে চলে গেছে। এখন বাড়িতে শুধু ছায়ার পরিবারের লোকজন। পুলিশ এসেছে। তাদের সাথে রাজিব কথা বলছে। কিন্তু পুলিশ চাচ্ছে সৌরভের স্টেটমেন্ট। রাজিব তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে সৌরভ কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু পুলিশ বুঝতে চাইছে না। আশফাক আহমেদ এগিয়ে গিয়ে অফিসারকে বললেন,
– ‘ জামাই আমার মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসতো। ছায়ার মৃত্যুটা ওর কাছে অনেক বড় একটা ধাক্কা । ছায়ার মা ও পাশের রুমে বিলাপ করে কান্না করছে। ওরা কেউ এখন কথা বলার অবস্থায় নেই অফিসার। আপনারা আসুন এখন। ‘
কথাগুলো বলেই আশফাক আহমেদ ঢুকরে কেঁদে উঠলেন। উনাকে ভেতরে নিয়ে গেলো রাজিব।

তোহা আর ছায়াকে বেশির ভাগ সময় এক সাথে কাটাতে হতো। সৌরভ কোন কাজে বাহিরে গেলে বা অফিসে থাকলে ছায়ার সাথে খুনশুটি করে সময় কাটতো তোহার। যদিও ছায়া একটু গম্ভীর ভাবে থাকতো সব সময়। তেমন ভাবে হাসিখুশি থাকতে খুব বেশি তাকে দেখা যায়নি। কম কথা বলেছে। কিন্তু তোহা নিজ থেকে গিয়ে আড্ডা দিলে বা জ্বালাতন করলেও ছায়া কখনো রাগেনি। সে কারণেই ছায়াকে বেশি ভালো লাগতো তোহার।  সে বিরক্ত হলেও অন্য সব ভাবীদের মতো মুখে কিছু প্রকাশ করে যা তা শুনিয়ে দিতো না। ছায়া ছিলো অন্যরকম একটা মানুষ। যেনো যা হচ্ছে সব মেনে নিতো। কোন কাজের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ ছিলো না। আজ থেকে এ বাড়িতে কার সাথে কথা বলবে তোহা ? তার ভাই যখন অফিসে থাকবে কে তাকে সময় দিবে? নিজের বোনের মতো করে কে বোঝাবে ? এসব ভাবতেই তোহার চোখ উপচে জল গড়িয়ে পড়ছে।

রাজিব এসেছিলো দুপুরের খাবার খেতে সকলকে ডাকতে। কাল রাত থেকে কারো খাওয়া হয়নি। তোহার রুমে মিলিও ছিলো। সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কান্না করছে। রাজিবকে রুমের সামনে আসতে দেখেই তোহা দৌড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাপিয়ে পরলো। রাজিবের শার্ট খামচে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
– ‘কি হয়ে গেলো এটা ? আমার ভাইটার কি হবে এখন ? ‘

রাজিব তোহার মাথায় আলতো করে একটা হাত রেখে বললো,
– ‘শান্ত হও তুমি প্লিজ। এভাবে আর কেঁদো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সকলে দুর্বল হয়ে গেলে বাকিদের কিভাবে সামলাবে? সৌরভ কে দেখেছো?  ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না আমি।’

তোহা আর কিছু বললো না। সে রাজিবের বুকে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছে। এই মানুষটার বুকে এই মুহূর্তে একটু শান্তি খোঁজা ছাড়া তার আর কিচ্ছু করতে ভালো লাগছে না।

বিকেলে পুলিশ অফিসার আসলো। দরজা খুলে দিলো মিলি। অফিসার ভেতরে প্রবেশ করে বললেন,
– ‘সৌরভ সাহেব কে একটু ডেকে দিন। ‘
মিলি আবছা চোখে তাকিয়ে বললো,
-‘ দুলাভাই কি ডাকলেই আসবেন ? উনি তো কারোর সাথেই কথা বলছেন না। ‘

– ‘আমাকে উনিই ফোন করে ডেকেছেন।’

মিলি একটু অবাক হলো। তারপর অফিসারকে ড্রইং রুমে বসতে দিয়ে ডাকতে চলে গেলো সৌরভকে। 

– ‘আপনি অফিসার দেলোয়ার হোসেন ?’
ভারী গলায় বললো সৌরভ। তাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। চোখ মুখ ফুলে আছে। বোঝাই যাচ্ছে সবে মাত্র চোখে পানি দিয়ে এসেছে।

– ‘জি।’ দৃঢ় গলায় বললেন অফিসার।

অফিসার আবার বললেন,
– ‘আপনার স্ত্রীর বিষয়ে কিছু জানার ছিলো আমাদের।’
-‘ হ্যাঁ। বলুন। ‘

– ‘উনার কি পার্সোনাল কোন শত্রু ছিলো ?’
সৌরভ কিছু বললো না। তাকে চুপ থাকতে দেখে অফিসার বললেন,
– ‘দেখুন কাল আপনি স্বাভাবিক ছিলেন না বলে আপনাকে কিচ্ছু জানানো হয়নি। এখন চুপ থাকলে হবে না। এ বিষয়ে আপনার সাহায্য লাগবে আমাদের। ইটস অ্যা মার্ডার কেস।’

সৌরভ বিস্ময় নিয়ে তাকালো অফিসারের দিকে। মুখে কিছুই বললো না। মার্ডার শব্দটা তার মাথার ওপর যেন ভন ভন করছে। সে কাল নিজের মাঝে ছিলো না। ইনফেক্ট এখনো নেই। তবুও কাল একটা ঘোরে চলে গিয়েছিলো বলে কিচ্ছু জানা হয়নি। ছায়ার মতো একটা ভালো মেয়েকে মার্ডার করবে কে ! কে সেই ব্যক্তি? কেন মেরেছে তার ছায়াকে ? হাজার খানেক প্রশ্ন মাথার মাঝে জেঁকে বসেছে। যার কোন উত্তর তার কাছে  নেই। তার চোখের সামনে শুধু ভাসছে ছায়ার সেই নিষ্পাপ মুখটা।

চলবে…

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৭২(শেষ পর্ব)

4

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৭২(শেষ পর্ব)
#Writer_Afnan_Lara
?
আমি শাহরিয়ার শান্ত আজ আগস্ট ৬তারিখ,২০২০সালে #########কে বিয়ে করতেসি,এরপর থেকে আমি ওর লাইফে দখল দিব না,স্বামীর অধিকার ফলাবো না,ওকে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে দিব,এই বিয়ে শুধু নামেই বিয়ে হবে
আমি শাহরিয়ার শান্ত #####কে রেখে কখনও দ্বিতীয় বিয়ে করবো না
———–
সাইন
শাহরিয়ার শান্ত
.
সো কিউট তো!!!আরিয়ান!!দেখে যাও আমি কি পেয়েছি
.
আরিয়ান বাথরুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে হিয়ার হাত থেকে ফটো ফ্রেমটা নিয়ে চেয়ে রইলো
তারপর হেসে দিয়ে বললো “দারুন শর্ত তো,তাও আবার ফটো ফ্রেমে বাঁধায় করা,কোথায় পেলে তুমি??”
.
আরে আমি খাটের তলায় পরিষ্কার করতে গিয়ে পেলাম
শর্তটা দেখে এত হাসি পেলো সাথে ইন্টারেস্টিং লাগলো,আচ্ছা আরিয়ান এটা নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করলে কেমন হয়??আজকে আমাদের চ্যানেলে যে শো আছে সেটাতে এটা পেশ করা যায় না?
.
বেস্ট হবে,তবে এটা কারা লিখসে বা কার সেটা তো আমরা জানি না!তুমি শো তে কি বলবে?সব তো উল্লেখ করতে হবে!স্পেশালি যে লিখসে তার নাম আর যে সই করছে তার নাম
.
এখানে শর্ততে যে সাইন করছে সে নিশ্চয় মেয়েটার হাসবেন্ড??তার নাম শাহরিয়ার শান্ত!
.
যে লিখসে তার নাম কি?
.
হু,তার নাম তো জানা দরকার,কারণ শাহরিয়ার শান্ত যাকে বিয়ে করবে বলেছে সেই নাম টাতে আর পুরা ফ্রেমে রঙ জাতীয় কিছু একটা পড়ে আছে,তাই নামটা একটুও বুঝা যাচ্ছে না,,আমি অনেক কষ্টে ফ্রেমটার লেখাগুলো বুঝলাম, রঙ পড়লো তো পড়লো একেবারে মেয়েটার নাম দুবার লেখা ছিল সে নামের উপরই পড়তে গেলো
প্রতিবেদন তো একজনের নামে হবে না তার উপর আমরা তো জানিও না তারা শর্তটা কেন লিখেছে,তারা এখন কেমন আছে,শর্ত ভেঙ্গেছে কিনা বা শর্তটা ফ্রেমে বাঁধায় করলো যখন তার মানে তাদের মাঝে এখন ভালোবাসাটা ঢুকে গেসে,ইস কি জোসসসস,আমরা মন চাচ্ছে সব তথ্য বের করতে
.
এই যে হিয়া ম্যাডাম,রিপোর্টার থেকে এবার ডিটেক্টর হবেন নাকি??
.
রাখো তুমি,নিশ্চয় আমাদের আগে এরা এই বাসায় থাকতো,যাওয়ার সময় রেখে গেসে হয়ত,আমি খবর নিয়ে আসতেসি
.
আরে হিয়া দাঁড়াও,কফি বানিয়ে দিয়ে যাও,হিয়া?
.
হিয়া বের হতে হতে বললো “জান! তুমি কফি বানালে আমার জন্যও বানাইও,উম্মাহহহহ”
.
আরিয়ান মুখ বাঁকা করে কফি বানাতে গেলো
হিয়া মালিকের বাসায় গিয়ে দেখলো উনারা বাসায় নেই,তালা ঝুলছে
মন খারাপ করে বাসায় ঢুকতে যেতেই হিয়ার মনে পড়লো সামনের ইউনিটের ওরা তো কিছু হলেও জানতে পারে
জলদি গিয়ে কলিংবেল বাজালো সে
একজন গোলগাল চেহারার লোক দরজা খুললেন,তার পেট ১কিলোমিটার জুড়ে
হিয়া দাঁত কেলিয়ে উনার ভুড়ি থেকে চোখ উঠিয়ে বললো
.
ভাইয়া!আপনি কি বলতে পারেন আমাদের আগে এই ফ্ল্যাটে কে ছিল??
.
লোকটা হাতে থাকা চিকেন ফ্রাই খেতে খেতে বললো “হুম!! ৪জন টিচার থাকতো,পাশেই একটা স্কুল আছে সেখানের টিচার ছিল তারা,এখানে ম্যাচের মত থাকতো,বেশি থাকেনি,২মাসের মত ছিল”
.
হিয়া মন খারাপ করে চলে যেতে নিতেই আবার ফেরত আসলো
আচ্ছা ভাইয়া তাদের আগে কে ছিল জানেন??
.
না সেটা তো বলতে পারবো না,কারণ আমি যখন এসেছি তখন এই ফ্ল্যাট খালি ছিল তার কয়েক মাস বাদেই টিচারগুলো থাকতে এসেছিলো
.
ওহ,আচ্ছা আমাকে ঐ টিচারের গুলোর মধ্যে কারোর নাম্বার দিতে পারবেন??
.
হুম,একজনের নাম্বার দিতে পারবো,সে আমার ছেলেকে টিউশনি করাতো,নাম হলো রাকিব,ওয়েট নাম্বার দিচ্ছি
লোকটা হাতে থাকা চিকেন ফ্রাই শেষ করে ডাইনিং থেকে আরেকটা চিকেন ফ্রাই নিয়ে রুমের ভেতর চলে গেলেন,ফোন এনে ঘেঁটে ঘেঁটে নাম্বার বের করে দিলেন হিয়াকে
হিয়া সাথে সাথে সেই নাম্বারে কল করলো,রিসিভ করলো না কেউ
গাল ফুলিয়ে বাসায় এসে সোফায় বসলো সে
আরিয়ান ওকে কফি দিয়ে ওর পাশে বসে টিভি নিয়ে বসলো
কিছুক্ষন বাদেই সেই নাম্বার থেকে কল আসলো
হিয়া খুশিতে এক চিৎকার দিয়ে রিসিভ করলো সাথে সাথে
এমন জোরে চিৎকার করলো যে আরিয়ান মুখ থেকে পুরুত করে কফিই ফেলে দিলো
.
হ্যালো হ্যালো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হাই,আপনি কিছুক্ষন আগে আমাকে কল করেছিলেন?
.
হ্যাঁ,আপনি কি রাকিব?
.
জি,কি হইসে?
.
আপনি কি শাহরিয়ার শান্তকে চেনেন??
.
আমি তো অনেক শান্তকেই চিনি,তবে শাহরিয়ার শান্তকে চিনি না,কেন বলুনতো?
.
ওহহ,আপনি যে গুলশানে কিচিরমিচির নিবাসের ৪র্থ তলায় থাকতেন তার আগে এখানে কারা ছিল সে ব্যাপারে কিছু জানেন?
.
না তো,আমি ওখানে যাওয়ার আগে ফ্ল্যাটটা খালি ছিল
.
ওহ,আচ্ছা আপনি কি কোনো ফটো ফ্রেম পেয়েছিলেন এই ফ্ল্যাটে?
.
আসলে আমরা ৪টা খাট এনে রেখেছি,ব্যস প্রতিদিন কাজ শেষ করে সেই খাটে শুয়ে পড়তাম,রুমে আর কিছু আছে নাকি নাই সে ব্যাপারে জানতাম না
.
ওহ,ফাইন,থ্যাংক ইউ
.
হিয়া মন খারাপ করিও না তো,এক কাজ করো তুমি এই ফ্রেমটা নিয়ে শো তে লাইভ হইও,শাহরিয়ার শান্ত যেখানেই থাকুক দেখতে পেলে কল করবে নিশ্চয় ?
.
হুম বাট যদি শো এর টাইমে সে টিভি না দেখে?
.
ভাগ্যে থাকলে তার সাথে আমাদের মিট হবে না থাকলে হবে না
.
আমার শুধু জানতে ইচ্ছে করে এত কিউট একটা শর্ত লেখা মেয়েটির নাম কি!
.
তবে এটা বলতে পারি ছেলেটা মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে,তা না হলে তাকে না ছোঁয়ার শর্তে সাইন তো করলো আবার এটাও মানলো যে সে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না
.
মেয়েটাও ওকে ভালোবাসে তা না হলে লাস্টের শর্তটা দিতো না
.
হুম সেটাই
.
আচ্ছা রেডি হয়ে নাও,অফিস যেতে হবে আমাদের,তুমি কি শো টা ঠিকভাবে করতে পারবে?
.
পারবো,অবশ্যই,আমি এই দুজনকে খুঁজে বের করবোই
.
পাগলি বউ আমার
.
দুজনে রেডি হয়ে অফিসে আসলো,,হিয়া ছটফট করতেসে কখন সে শো টা শুরু করবে
অবশেষে অনেক প্রতিক্ষার পর শো এর টাইম হলো
হিয়া একটা টপস পরেছে সাথে জিন্স,টপসের উপর ওড়না গলায় পেঁচিয়ে সে রুমে ঢুকেছে হাতে তার ফ্রেমটি
অফিসের বসের অনুমতি নিয়ে সে আজ এই শো টা করবে
.
সিটে বসে মুখে হাসি ফুটালো
.
হ্যালো everyone!!! কেমন আছো তোমরা??নিশ্চয় ভালো??
আজ আমি একটা কাপলের প্রেমকাহিনী নিয়ে আলোচনা করবো!!পুরো শো টায় থাকবে একটা ইন্টারেস্টিং থিম
তার মধ্যে নায়কের নাম হলো শাহরিয়ার শান্ত

একটা ৬বছরের বাচ্চা ছেলে সোফায় বসে বসে শো টা দেখতেসে,তার ডান হাতে কোকাকোলা আর বাম হাতে পটেটো ক্রেকার্স
শাহরিয়ার শান্ত নামটা শুনে সাউন্ড বাড়ি নড়েচড়ে বসে ইয়া বড় এক চিৎকার দিলো
আব্বুউউউউউউউউউউউ
.
কি হইসে!!!কি হইসে!!ব্যাথা পাইসো?আহান্ত? পড়ে গেছো??কোথায় লেগেছে?ঝাল লাগছে?পানি খাবা?
.
আরে না আব্বু!!বলতে তো দিবা,টিভিতে দেখো তোমার নাম বললো
.
উফ!তাই বলে এত জোরে চিৎকার করবা?শয়তান ছেলে কোথাকার!!
কই কি বলসে?
.
বলসে শাহরিয়ার শান্তর প্রেমকাহিনী বলবে
.
কিহহ!শুনো বাংলাদেশে বহুত শাহরিয়ার শান্ত আছে শুধু আমি না
কথাটা বলে শান্ত চলে যেতে নিতেই থেমে গেলো,একটা লাইন শুনে
চমকে টিভির দিকে তাকালো সে
হিয়ার হাতে সেই ফটো ফ্রেমটা,এক দেখাতেই চিনে ফেলেছে সে
হিয়া শর্তটা পড়ে বলতেসে
শান্তর চোখে পানি এসে গেলো,,আহান্তর পাশে সোফায় বসে রিমোট নিয়ে সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো সে
.
একটাই আফসোস কাহিনীতে নায়িকার নামটা স্পষ্ট নয় বলে আমি আপনাদের নায়িকার নামটা বলতে পারতেসি না,তবে শাহরিয়ার শান্ত?আপনি যদি এই শো টা এখন এই মুহূর্তে দেখতেসেন তাহলে প্লিস কল করুন,১৬৭৮৯০নাম্বারে
আমরা আপনাকে আর আপনার ওয়াইফের সাথে পরিচিত হতে চাই,আপনার ওয়াইফের নাম জানতে চাই
.
শান্ত হেসে পাশে তাকিয়ে দেখলো আহান্ত ফোন নিয়ে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
শান্ত ফোন হাতে নিলো কল করার জন্য তার আগেই হিয়ার শো তে অন্য একজনের কল আসলো
শান্ত ফোন হাতে নিয়ে চেয়ে রইলো টিভির দিকে
.
হ্যালো??শাহরিয়ার শান্ত??আপনি কি শান্ত বলতেসেন?
.
না,আমি তার স্ত্রী আহানা ইয়াসমিন বলতেসি
.
ওয়াওওওওও,আপনি এখন কোথায়?আপনি কি আমাদের শো দেখতেসিলেন??আপনি কি এখন আমাদের শো তে আসতে পারবেন?
.
আব্বু দেখসো?আম্মু টাইম পায় না বলে আমাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যায় না আর এখন এই শো দেখতেসিলো আবার এখন কথাও বলতেসে
.
শান্ত মুখে হাত দিয়ে হাসতেসে,হাসি থামিয়ে আহান্তকে নিয়ে বাসা লক করে বেরিয়ে গেলো সে
.
আচ্ছা আমি আপনাদের শো তে আসতেসি
.
শান্ত আহান্তকে নিয়ে সেই শো তে আসলো,হিয়া তো লাফাচ্ছে শান্তকে দেখে
.
এ বুঝি আপনার আর আহানার ছেলে?
.
হ্যাঁ
.
আচ্ছা আহানা কই তাহলে,আপনাদের সাথে আসলো না?
.
আহানা ওর চাকরিতে,সে একজন প্রাইমারি স্কুলের টিচার,এখন সে স্কুলে তাই সেখান থেকে আসতে দেরি হচ্ছে,আপনাদের শো টা মেবি টিচার্স রুমে থেকে টিভিতে দেখতেসিলো
.
আর আপনি কি জব করেন?
.
হাহা,আমি তো সেই স্কুলের হেডমাস্টার,আসলে আমরা যতই দূরে থাকার চিন্তাও করি না কেন
শুরু থেকেই আল্লাহ আমাদের এক সাথে রেখেছে আর এখন ও আমরা একসাথে
আমার ছেলে আজ বাসায় একা বলে আমি আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এসেছিলাম
.
এক্সিউজ মি!আমি কি আসতে পারি??
.
আহানা?
.
জি
.
হিয়া দৌড়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরলো
আই এম সো হ্যাপি,আমি তোমাকে আর তোমার পুরো পরিবারকে দেখতে পেলাম,আমি এটা চিন্তাও করতে পারিনি তোমাদের আমি খুঁজে পাবো!!!
.
আপনি এই ফ্রেমটা কই পেলেন?
.
সেটা বড় কাহিনী
আগে এটা বলো তোমরা কি গুলশানের কিচিরমিচির নিবাসে থাকতা আগে?
.
হ্যাঁ,,কয়েক মাস আগেই আমরা নতুন বাসা নিয়েছি তাই ঐ ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে চলে এসেছিলাম
.
এই ফ্রেমটা সেখানে রয়ে গেসিলো,আমি আজ পেলাম
.
এটার মধ্যে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে,অনেক খুঁজেছি এটা!
কথাটা বলে আহানা ফ্রেমটা হাত দিয়ে মুছলো
.
হিয়া বললো”এত রঙ পড়লো কেন এটায়??আমি তোমার নামটা জানার জন্য জাস্ট পাগল হয়ে গেসিলাম”
.
এই যে এই পুচকু আছে না?সে ছোট থেকেই রঙ দিয়ে আকিবুকি করে,বড় হয়ে আর্টিস্ট হবেন,একদিন আঁকাআঁকি করতে গিয়ে আমাদের এতদিনের স্মৃতির উপর রঙ ঢেলে দিয়েছিলেন!
.
কি পুচকু??এত দুষ্টু কেন তুমি?
.
আরে ওর জন্যই আজ আমরা আমাদের এই স্মৃতি আবার ব্যাক পেয়েছি
শো টা ও নিজেই দেখতেসিলো
.
তাহলে তো তোমাকে গিফট স্বরুপ কিছু দিতে হয়,কি নিবা বলো আহান্ত
.
আমি বেশি গিফট চাই না,জাস্ট চিপস,চকলেট,কোক(কোকাকোলা,আইসক্রিম,)এগুলা দিলেই আই এম ডান!
.
শান্ত হেসে ওর গাল টেনে দিলো
.
হিয়া আর আরিয়ানর সাথে ভালো কিছু সময় কাটিয়ে ৩জনে বাসায় ফিরে আসলো
আহানা জানালার পাশে চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা পরীক্ষার খাতা চেক করে যাচ্ছে,ক্লাস ওয়ানের খাতা
শান্ত ফ্রেমটা নিয়ে বসে আছে আর মাঝে মাঝে টিভির দিকে তাকাচ্ছে আর আহান্ত বই খাতা নিয়ে বড় বড় চোখ করে লেখাগুলো রেখে দৃশ্য গুলো দেখে যাচ্ছে
.
ল্যান্ডলাইনের ফোন বাজতেসে
.
আহান্তর কানে আওয়াজ আসতেই ১সেকেন্ড ও দেরি না করে গিয়ে ফোন ধরলো
.
হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,কে???কে কল করেছে,??নাম বলো,আমি শাহরিয়ার আহান্ত বলছি!
.
তোমার পুরো নাম বলতে হবে না হান্ত!
.
মাইশা তোমাকে না বললাম আমাকে হান্ত বলবা না,আমার নাম আহান্ত!
.
আঙ্কেলের নাম শান্ত,তোমার নামে আরেকটা অক্ষর বাড়িয়েছে কেন সেটাই বুঝি না,এত বলার মুড নাই আমার,আমি হান্তই বলবো,তো শুনো হান্ত!!শান্ত পাপা টু আর আহানা মাম্মাম টু কে ফোন দাও আমার মাম্মাম কথা বলবে
.
আচ্ছা দিচ্ছি,আম্মুউউউউ!রুপা মামনির ফোন!
.
আসতেসি
.
হ্যালো রুপা বল!
.
আমরা কাল যে পিকনিকে যাবো সব রেডি করছিস তো??কাল শুক্রবারে তোকে আর শান্ত ভাইয়াকে ফ্রি পাবো আবার কবে পাবো কে জানে
.
হ্যাঁ রেডি আমরা,কাল সকাল সকালই এসে পড়িস তোরা
.
ওকে!
.
আহানা ফোন রেখে আহান্তের তাকিয়ে চোখ রাঙাতেই সে চলে গেলো পড়তে
.
আহানা রুমে এসে আবারও কাজ করতে বসলো তবে এখন মন বসতেসে না আর
.
শান্ত ফ্রেমটা ল্যাম্পশ্যাডের টেবিলে সাজিয়ে রেখে আহানার কাছে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো
.
কোথাই ভাবলাম কাল একটু ঘুমাবো সারাদিন তা আর হলো কই,নওশাদের জ্বালায় আর থাকা যায় না,এখন রেডি হয়ে নাও,কাল তো সময় পাবো না তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার
.
হুম!আমি তো ভুলেই গেসিলাম
.
দুজন মিলে রেডি হয়ে আহান্তকে নিয়ে হসপিটালে আসলো,আহানার রক্তের পয়েন্ট চেক করে ডাঃরোস্তম হাসলেন,মুখ তুলে বললেন”এখন সব ঠিক আছে,আমি বলেছিলাম কোর্সটা শেষ হলে আপনার শরীরে নিজ থেকেই রক্ত উৎপন্ন হবে,আর বারতি রক্ত দিতে হবে না
আমি খুব খুশি আমি একজনকে সুস্থ করতে পেরেছি,আজও আমার সেদিনের কথা মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে,৬টা বছর হয়ে গেছে
সেদিন আহান্তকে দুনিয়ায় আনার পর আমরা সবাই ভেবে বসেছিলাম আহানা মারা গেছে,পরেই ওর নাড়ি চেক করে আমার বুক কেঁপে উঠলো,সচল দেখে আমরা সবাই মিলে আহানাকে সেদিন আল্লাহর রহমতে বাঁচিয়ে নিয়েছিলাম
শরীরে রক্ত এত কম ছিলো আহানার আমরা মাথায় বিশাল ভারী টেনসন নিয়ে আহানার চিকিৎসা করেছিলাম
আমাদের ভয় হয়েছিল শুধু এই ভেবে যে শেষ মুহূর্তে কিছু হয়ে না যায়
আর শান্ত!আহান্তকে আপনার হাতে দিতেই আপনি ওর মুখের দিকেও তাকাননি,আহান্তকে নওশাদের হাতে দিয়ে আপনি আহানা আহানা বলে শুধু চিৎকার করে যাচ্ছিলেন
আহানা চোখ খুলেছে ঠিক পরেরদিন সকালে
তার বাচ্চাকে মায়ের থেকে আলাদা রাখতে হয়েছিলো বলে আহান্তকেও ট্রিটমেন্ট দিয়ে রেখেছিলাম সেদিন
শান্ত আহান্তকে কোলে নিয়েছে ঠিক তখন যখন আমরা ওকে জানিয়েছি আহানা এখনও বেঁচে আছে
এরকম miracle খুব কম হয়,অনেক অনেক দোয়ার ফলেই হয়ত এটা সম্ভব হয়েছে সেদিন
আহানা চোখ খুলে সেদিন সবার আগে তার আহান্তকে খুঁজেছে,তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলেছে”শান্ত আমি পেরেছি!!”
.
সত্যি রেকর্ড করে রাখা উচিত ছিল আমাদের!!এখন তো কোর্স করানো হয়ে গেছে, অনেক বছর ও কেটে গেছে,আহান্তর বয়স এখন ৬বছর চলে
এখন আপনারা ১০০%সিউরিটি নিয়ে আবারও বাবা মা হোন,কোনো সমস্যা হবে না
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো

পরেরদিন সবাই মিলে একটা পিকনিক রিসোর্টে আসলো
আহানা আর শান্ত একটা গাছের সাথে লাগানো সিটে পা দুলিয়ে বসে কথা বলছে
রুপা আর নওশাদ হাঁটতেসে দূরের একটা চিকন রাস্তায়
আর আহান্ত আর মাইশা গোল হয়ে বসে আছে একটা কার্পেটের উপর,কার্পেটটা ঘাসের উপর
মাইশা একটা বার্গার খেতে খেতে হঠাৎ ঠাস করে আহান্তের গালে চড় বসিয়ে দিলো
আহান্ত গালে হাত দিয়ে চেয়ে আছে বোকার মত
তারপর গাল ফুলিয়ে ব্রু কুঁচকিয়ে মাইশার চুল টেনে দিয়ে বললো”মারলা কেন?”
.
তুমি একা একা গোটা একটা ক্যাটবেরি বাবলি শেষ দিচ্ছো!!আমাকে একটুখানিও দিচ্ছো না!
.
তাই বলে চড় মারবা??তোমার পুতুলের বিয়ে কি করে হয় আমিও দেখে নিব,চুল ছিঁড়ে দিব তোমার পুতুলের,তখন তোমার পুতুল বেলু বেলু চেহারা নিয়ে বিয়ে করবে
.
শান্ত আহান্ত আর মাইশার কান্ড দেখে হাসতেসে
মাইশা আহান্তর থেকে কয়েক মাসের ছোট
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে ওর কোমড় ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো
.
এই যে মেয়ে শুনো!!তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই
.
ইন্টারেস্ট নেই?
.
না তো!!একটুও না
.
দুটো আছে
.
দুটো?
.
একটা ঘাসের উপর বসে মাইশার সাথে ঝগড়া করতেসে আরেকটা…..
আহানা শান্তর হাত নিয়ে নিজের পেটের উপর রাখলো
“আরেকটা এখানে”
.
শান্ত হা করে সিট থেকে নেমে গেলো
.
কি বললে!!!!!
.
কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছিলো আমি প্রেগন্যান্ট
আজ সিউর হয়ে জানালাম
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো
“এই যে মেয়ে শুনো! এখনও তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই”
♥♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥♥♥♥
(গল্পটা তৈরি করতে বাস্তব থেকে অনেকটাই নিয়েছি,শেষটাও!
বাস্তবে সুখ দুঃখ মিলিয়েই সবটা,সবার জীবনেই কষ্ট আছে আবার সুখ ও আছে
শুধু কষ্ট নিয়ে জীবন হয় না
আবার শুধু সুখ দিয়েও জীবন হয় না
এ দুটো মিলিয়েই জীবন!
আহানা শান্তর “প্রেমের পাঁচফোড়ন”
অনেক অনেক রেস্পন্স পেয়েছি,ইনশাল্লাহ কোনো একদিন প্রেমের পাঁচফোড়ন সিজন ২আসবে,তবে আজ থেকে নতুন একটি গল্প আসবে
এটাও বাস্তবতা নিয়ে,থাকবে বাস্তবতা আর মিষ্টি প্রেম,সাথেই থাকবেন)

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৭১

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৭১
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা হালকা হেসে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে রইলো
আচ্ছা যদি ভয়টা সত্যি হয়ে যায়?
আমার শান্ত কি করে থাকবে,সে কি বিয়ে করবে আবার?ওর বাবার মত,তখন আমার সন্তানকেও কি তার বাবার মত অবহেলা অনাচার সহ্য করতে হবে তার সৎ মা থেকে?
আমার সন্তানকে আমি অনাথ করে দিবো?
আমার কাছে তো কোনো উপায় নেই,আমি এবোরশান করলেও তার সাথে অন্যায় করা হবে আর না করলে ভবিষ্যতেও তার সাথে অন্যায় হবে!
শান্ত ল্যাপটপের বাটনে টিপাটিপি করতে করতে আহানার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চুপ করে ফ্লোরের দিকে চেয়ে আছে
তার গাল বেয়ে একের পর এক অশ্রু বেয়ে বেয়ে নিচে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে
শান্ত হাত থেকে ল্যাপটপটা রেখে আহানাকে বুকে টেনে নিলো
সে জানে আহানা কেন কাঁদছে,তার হাতেও যে কিছু নেই
আহানা এবোরশান করাবে না আর না করালে তার লাইফ রিস্ক!
এখন তো ৬মাস শেষ হয়ে ৭মাসে পা রাখলো আহানা,এখন চাইলেও এবোরশান করানো যাবে না
আহানা তুমি ভেবো না,তোমার কিছু হলে তোমার মিঃ অশান্ত ও তোমার সাথে চলে যাবে,তার এই পৃথিবীতে থাকার কোনো অধিকার নেই
বাচ্চা তার দাদার কাছে থাকবে
.
পরেরদিন ভোরবেলায় শান্ত আহানাকে নিয়ে আশ্রমের দিকে চললো
বৃষ্টি এখন আর তেমন হয় না,রাস্তাঘাট পরিষ্কার,আহানা আর শান্ত এখানকার কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে আছে
শান্ত কৃষ্ণচূড়া ফুলের কলি থেকে খোসা নিয়ে আহানার হাতে নখ বানাচ্ছে আর আহানা আশেপাশে তাকিয়ে দৃশ্য দেখে যাচ্ছে
খালি ক্ষেত,ধান নিয়ে যাওয়ার পর যে গোড়া থেকে যায় সেটাই আছে এখন
দূরের বড় রোডটায় রিকসা,বাইক,অটো এসব চলছে দেখা যায় সেসব
.
দেখো কি সুন্দর নখ বানাই দিলাম তোমার
.
ওয়াও! এজ লাইক রাক্ষসী
.
হুহ,আমার বউয়ের হাতে বড় নখ সুন্দরই লাগছে
.
আহানা শান্তর মাথা থেকে একটা শুকনো পাতা সরিয়ে ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো”আমাদের ভবিষ্যত কি শান্ত?”
.
শান্ত আরেকদিকে ফিরে বসে কয়েকটা কঙ্কর নিয়ে মাটির রাস্তায় ফেলতে ফেলতে বললো”সেটা তো তুমি জানো আহানা!আমাকে কেন বলতেসো,তবে একটা কথা মাথায় রেখো তোমার কিছু হলে আমি থাকবো না এরপরে
তোমার কাছে দুটো অপশন ছিল,একটি সুন্দর জীবন আর একটি আপনজনকে হারানোর জীবন
তুমি ২য়টা বেছে নিয়েছো এর আবার কিসের ভবিষ্যত থাকবে?
.
আহানা আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বললো”যদি ২য় অপশনেই আমি তোমাকে সুখের জীবন এনে দিতে পারি?”
.
আমার মা আমার হাত ধরে বলেছিল সে এই রোগ থেকে সেরে উঠবে!
.
আমার হাতে কিছু নেই শান্ত!যা হবে তা দেখা যাবে,আপনার জন্য যদি আমি থেকে থাকি তাহলে এই বড় ঝড় -বৃষ্টি শেষ হয়ে একটা রঙধনু ফুটে উঠবে,মিলিয়ে নিয়েন!
.
সবসময় পজিটিভ হয় না আহানা,আমার সাথে আজ পর্যন্ত কোনো পজিটিভ হয়নি,সব নেগেটিভ,সবচেয়ে আপনজনকে হারিয়ে এখন আবার আরেক আপনজনকে হারাতে চলেছি আমি
ছেলে হয়েছি বলে কি এত এত কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা রাখি?
আমার মনের ভেতরটা ঠিক তোমাদের মতন,আমার ও আঘাত লাগে
বাট তুমি বুঝবা না,তোমার কাছে… থাক যাই হোক এসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না,সব তোমার কারণে হচ্ছে,তুমি খুশি থাকো
কথা গুলো বলে শান্ত উঠে চলে গেলো আশ্রমের দিকে
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে বললো”আমি তো কদিন পরে চলেই যাবো! তাহলে এ কদিন ভালোবাসবে না?”
.
কথাটা শুনে শান্ত থেমে গেলো,আহানার দিকে পিছন ফিরে তাকানোর শক্তি তার নেই
হাঁটু গেড়ে সেই জায়গাতেই বসে গেলো সে,দুহাত দিয়ে মাথা ধরে এক চিৎকার দিলো
আহানা তার জায়গায় দাঁড়িয়ে কাঁদতেসে
শান্ত ও কাঁদতেসে,কাঁদতে কাঁদতে বললো”আহানা আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিব না,তুমি আমার আহান্ত হয়ে আমার কাছেই থাকবে”
.
আহানা আস্তে আস্তে শান্তর পাশে এসে দাঁড়ালো,শান্তর হাত ধরে ওকে উঠতে বললো
দুজনে এবার আশ্রমে এসেছে,শান্ত তার মায়ের কবর দেখতেছে আর আহানা ডোবাটার কাছে এসে পেটে হাত দিয়ে বললো”বাবু জানো,তোমার মা কে এই ডোবাটায় তোমার নানা নানু রেখে গিয়েছিল কিন্তু আমি এমন করবো না তোমার সাথে,আমি তোমাকে বাঁচানোর জন্য সবটা করবো,করতেসিও,ভয় পাবা না একদম,তুমি একজন স্ট্রং মায়ের স্ট্রং সন্তান হবে,স্বাধীন হবে,নিজের খরচ নিজে চালাবে বড় হয়ে
ততদিন তোমার বাবা তোমার খেয়াল রাখবে
যদি মাও থাকে তাহলে মাও খুব খেয়াল রাখবে তোমার টেনসন নিবা না কেমন?
.
আহানা?
.
হুম
.
চলো যাই,সকাল ৯টা বেজে গেসে,সবাই নাস্তা নিয়ে বসে আছে হয়ত,ওয়েট করতেসে মনে হয়
আরে হ্যাঁ তোমাকে একটা কথাই তো বলতে ভুলে গেসিলাম
.
কি?
.
নওশাদ ফোন করেছিল রুপা নাকি সেন্সলেস হয়ে গেসিলো
সে ওকে নিয়ে হসপিটালে এখন
.
সেকি!!কি হইসে ওর,ঠিক আছে তো?
.
হুম ঠিক আছে,খুশির খবর আছে
.
কি?
.
রুপা প্রেগন্যান্ট!
.
আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো খুশির খবর!!!আমার বেস্টুও মা হতে চলেছে,আমি অনেক খুশি
.
শান্ত আহানার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললো সব ঠিকঠাক থাকলে আমাদের বাবুর সাথে নওশাদ রুপার বাবুর বিয়ে দিব দেখো,তারপর আমি আর নওশাদ হবো বেয়াইন
.
হাহা!আচ্ছা দিয়েন
.
বাসায় ফিরে আহানা সবার সাথে নাস্তা করতে বসলো,ফুফু কোথা থেকে এসে আহানার হাতে তাবিজ লাগিয়ে দিলেন
মূলত শান্তর কথায় তিনি এই তাবিজটার ব্যবস্থা করেছেন
শান্ত কিছুুই বাদ রাখছে না যেটা দিয়ে সে আহানাকে সেভ করতে পারবে,প্রতিদিন প্রতিটা মূহুর্তে আহানাকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে শান্তিতে দাঁড়াতে বসতে দেয় না
সকালের নাস্তা সেরে আহানা শান্তর রুমে এসে জানালার ধারে বসে আছে,মাথা ধরে আছে সেই কখন থেকে
শান্তকে কিছু বললেই ভেবে নিবে সব শেষ হতে যাচ্ছে
এমনিতেও প্রচুর টেনসনে থাকে আজকাল

মোহনগঞ্জে ১০/১২দিনের মত থেকে শান্ত আর আহানা ঢাকায় ফিরে আসলো,সকাল থেকে দাদি পায়ে ব্যাথা উপেক্ষা করে কয়েকবার আহানাকে দেখে গেছেন
শান্ত অফিসে গেছে,রুপা তাই আহানার কাছে এসে থাকতেসে,ও প্রেগন্যান্ট হলো কয়েকদিন আগে আর ওর বাবা মা যখন শুনলো তারা বিয়ে করার জন্য মিথ্যে বলসিলো যে রুপা প্রেগন্যান্ট এটার জন্য তেমন বকা দেয়নি তারা
আহানা শুনে বেশ খুশি হলো ও তো ভাবসে যেদিন তারা সত্যিটা জানবে সেদিন বিরাট বড় একটা ঝড় হবে
রুপা রান্না করবে আজ,কিছু কিছু শিখেছে,যেমন আলুর ভর্তা,ডাল,ডিম ভাজি এসব,কিন্তু অলি এসে বললো দাদি বলেছেন আজ তিনি খাবার পাঠাবেন,রুপা যেন রান্না না করে,রুপাও প্রেগন্যান্ট এটা তিনি জানতে পেরে আজ ওদের জন্য রান্না করতেসেন উনি
নওশাদ একটা প্রাইভেট ব্যাংকে জব পেয়েছে ব্যাংকারের
তাই রুপার বাবা রুপাকে নওশাদদের বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছেন এখন
শান্ত ২বার ফোন করে আহানার খোঁজখবর নিয়েছে
দাদি অলিকে দিয়ে খাবারের বক্স উপরে পাঠিয়ে দিয়েছেন
আহানা আর রুপা খেয়ে দেয়ে এখন দুজন মিলে ঘুমাচ্ছে
শান্ত সন্ধায় বাসায় ফিরেছে নওশাদের সাথে,নওশাদ যাওয়ার সময় রুপাকে নিয়ে যাবে,দুজনে এসে দেখে তাদের বউরা ঘুমাচ্ছে
দুজনেই স্বস্তি পেলো তাদের সুস্থ সবল দেখে

দেখতে দেখতে সেই যন্ত্রনার সময়টা এসেই পড়লো
এবোরশান/মৃত্যু/কোইনসিডেন্স এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ৯টা মাস কেটে গেছে কখন বুঝাই যায়নি
শান্ত এক পলকের জন্যও আহানাকে চোখের বাইরে করতেসে না,তার চোখে পানি এসে এসে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে বারবার
আহানাকে বুঝতে দিচ্ছে না সে কতটা কষ্টে আছে আজ সকাল থেকে
অবশ্য আহানার নিজেরই ভয় করছে,তবে তার নিজেকে নিয়ে না তার বাচ্চাকে নিয়ে
শান্ত ৩/৪জন লোক রেডি করেছে তারা ইমারজেন্সিতে আহানাকে রক্ত দিবে
ডাঃ বলেছেন বিকালের দিকে হসপিটালে যেতে
কিন্তু আহানার সকাল ১০টা দেখে শরীর খারাপ শুরু হয়ে গেছে,পেটের অসহ্যকর যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে সে
শান্তর হাত মুঠো করে ধরে এপাশ ওপাশ করছে শুধু আর বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে
শান্ত দেরি না করে ওকে নিয়ে সেই মূহুর্তেই হসপিটালে চলে আসলো
বেডে ওকে শুইয়ে দিয়ে ডাঃ রোস্তমকে আসতে বললো সে
সমস্যাটা অবশেষে দাঁড়িয়েই পড়লো আর তা হলো বাচ্চা বের করার এখনও কিছু করেনি কেউ অথচ এখন থেকে ব্লিডিং শুরু
শান্ত ঘেমে একাকার,শুধু চিৎকার করে বলতেসে আমার কিচ্ছু লাগবে না,আমার আহানাকে লাগবে,আপনি ওসব বাদ দিয়ে আহানাকে বাঁচান
আহানা কাঁপতে কাঁপতে বললো”শান্ত!!এসব আপনি কি বলতেসেন,একদম এসব বলবেন না,আমার বাচ্চার কিছু হবে না”!
কথা বলতে বলতে আহানা জ্ঞান হারিয়ে ফেললো
ডাঃ রোস্তম আরও ১একজন ডাক্তার ডেকে আনলেন,নার্স প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আনলেন
.
উনার সেন্স আনাতে হবে,এই অবস্থায় সিজার করানো যাবে না কোনোমতেই,এমনিতেও এত ব্লিডিং হচ্ছে সিজার করলে ক্ষতি হয়ে যাবে
.
শান্ত বাইরে দাঁড়িয়ে ছটফট করতেসে,তাকে ঢুকতে দিচ্ছে না কেউ
নওশাদ রুপাও এসে গেসে,বাবা আর বাকিরা মোহনগঞ্জ থেকে রওনা দিয়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে
আহানার জ্ঞান ফিরানোর ট্রাই করতেসে নার্সরা মিলে
আহানা চোখ খুললো প্রায়ই ১৫/১৬মিনিট পর,চোখ খুলেই হাত বাড়িয়ে দরজার দিকে দেখিয়ে বললো”শান্তকে আসতে দিন”
.
রোস্তম নার্সকে ইশারা করলো, নার্স গিয়ে দরজা খুলে শান্তকে বললো আহানা ডাকতেসে আপনাকে,ভিতরে আসুন
শান্ত সাথে সাথে রুমে ঢুকে গেলো,পাশে এসে আহানার হাত ধরে নিচে বসে ওর কাছে মুখ নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো “কিছু হবে না তোমার আহানা,আমি তোমাকে বাঁচাবো,সাহস রাখো
.
শান্ত আমি বাঁচবো না,আপনি বাচ্চাকে বাঁচান
.
শান্ত কথা বলতে পারছে না,মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার
সবাই এখন এমন একটা সিচুয়েশনে আছে না পারছে রক্ত দিতে না পারছে ডেলিবারি শুরু করতে
.
আমি আগেই বলছিলাম এমন রিস্ক নিবেন না,এখন আমি ঠিক করে বলতেও পারবো না আদৌ আমি কাকে বাঁচাতে পারবো
.
আহানা শান্তর হাত খাঁমছে ধরে আরেক হাত দিয়ে শান্তর মাথা ধরলো
শশশশানননন্ত!আআআমমমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি,আপনার মতই!তেমনই বাচ্চাটাকেও বাসি,সে তো আপনারই অংশ,আমি তাকে মরতে দিতে পারি না,তার খেয়াল রাখবেন,একটা ভালো মা আনবেন তার জন্য,সবসময় তার চোখের দিকে তাকাবেন,সে ভালো আছে নাকি খারাপ ঠিক বুঝতে পারবেন,তাকে একা থাকতে দিবেন না শান্ত!
.
আহানা প্লিস এসব বলা বন্ধ করো,ডাক্তার আপনারা কিছু করছেন না কেন,আমার আহানাকে বাঁচান ব্যস,আর কোনোদিকে কন্সান্ট্রেট করবেন না
.
আপনি রক্তের ব্যবস্থা করুন,আমরা আমাদের মত কাজ চালু করছি
.
শান্ত চোখ মুছে আহানার দিকে তাকিয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো
আহানা শান্তকে ঝাপসা দেখছে,কালো জ্যাকেট পরা ছেলেটি দৌড়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে রুম থেকে,আর কখনও কি একে আবারও দেখার সুযোগটা হবে?
আহানা চোখ মুছে বড় একটা শ্বাস নিলো,তারপর রোস্তমের দিকে চেয়ে বললো আমি কি বলবো শুনুন
.
আপনারা বাচ্চাকে বাঁচান,আমাকে আজ বাঁচালে আমি কাল নাহয় পরশু এমনিতেও মরে যাবো এটা খুব ভালো করে জানেন আপনি ডাঃরোস্তম!!
যে মরে যাবে তার জন্য একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে মেরে কি উপকার হবে?
সে আমার বাচ্চা,এইটা আমার জীবন,আমার অধিকার সবচাইতে বেশি এসব ব্যাপারে ডিসিশন নেওয়ার,আপনি আমার কথা ভাবা বাদ দিয়ে আমার বাচ্চাকে বাঁচান,আমার শরীর থেকে সব রক্ত চলে যাচ্ছে ৮/৯ঘন্টা ধরে ১ব্যাগ দিলে আপনার কি মনে হয় আমি বাঁচবো??
বাঁচবো না, তাহলে এই অনিশ্চিত জীবনের উপর নির্ভর করে আপনি আমার সন্তানকে মারতে পারেন না,আপনি আমার সন্তানকে বাঁচান,এখন!!!
সিজার করতে হলে করেন,তাকে ঠিকমত এই দুনিয়ায় নিয়ে আসেন,আমারটা ভাবতে হবে না আপানকে
শান্তর কথা শুনবেন না,সে জানে না আমাকে বাঁচালেও আমি দুএকদিনে ঠিকই মরে যাবো তাহলে কেন আমি সাথে করে আমার বাচ্চাকেও মেরে দিয়ে যাব,তা হয়
না
আগে বাচ্চাকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন
.
ঠিক আছে,রুদ্র!সিজার করার ব্যবস্থা করো জলদি!!
.
আহানা হাতের দিকে তাকালো,শান্তর দেওয়া সেই চুড়ি,যেটা শান্ত ওকে ওর জন্মদিনে দিয়েছিলো,হাতটাকে বুকে ধরে সে আরেকদিকে ফিরে গেলো
শান্ত রক্তর ব্যাগ নিয়ে ছুটে এসেছে,ডাঃ বললেন সিজার করতেসেনন,১০মিনিট আগেই সিজারের কাজ আরম্ভ হয়ে গেসে
শান্ত চিৎকার করে রুমে ঢুকতে যেতেই নওশাদ আর বাকিরা মিলে ওকে আটকালো
.
আহানা এটা তুমি কি করলে!!!তুমি আমার কথা রাখলে না আহানা!!আমি বাঁচবো না আহানা!
.
নওশাদ রুপাও কাঁদতেসে,শান্তকে সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে,শান্ত চিৎকার করে শুধু একটা নামই নিচ্ছে সেটা হলো আহানা
আহানার কানে আওয়াজ যাবে না,কারণ তাকে অবশ হওয়ার ইনজেকশান দিয়ে দেওয়া হয়ে গেসে
চলবে♥

এ শহর মেঘলা ভীষণ পর্ব – ১

0

এ শহর মেঘলা ভীষণ
পর্ব – ১
জান্নাতুল ফেরদৌস মীম

পাশে থাকা মানুষটাও মাঝে মাঝে আমাদের ভেতরটা পড়তে জানে না। খুব কাছের মানুষটারও দূরত্ব থাকে অসীম। কখনো আবার হাজার মাইল দূরে থাকলেও মানুষটা সব সময় থাকে মনের মাঝে যত্নে রাখা সজ্জিত কক্ষটিতে। যেখানটার মালিকানা শুধু তার। যেখানটায় রোজ হাজারো স্বপ্ন সাজে তার জন্য। হাজারো ইচ্ছা জাগে তার জন্য। ভালোবাসায় টুইটুম্বুর করে থাকে দুজনার কল্পিত সোহাগে। দূরে থেকেও সে মানুষটির জন্য ক্ষণে ক্ষণে মন কাঁদে। যাকে একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে ভালোবাসার মানুষটিকে হাত বাড়িয়ে একটু স্পর্শ করতে। হ্যাঁ। ছায়াকে এই মুহূর্ত একটা বারের জন্য ছুঁয়ে দেখতে সৌরভের মন প্রাণ অস্থির হয়ে উঠছে। কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ মেয়েটিকে। বেগুনী আর কালোর মিশ্রণে একটি জামদানী শাড়ি পড়েছে আজ ছায়া। কপালে কালো ছোট টিপ। চোখে কাজল দিয়েছে। চুল গুলো এলোমেলো করে ছেড়ে রেখেছে পিঠের ওপর। ছায়ার মুখটা মলিন। গোলাপি ওষ্ঠদ্বয় শুকিয়ে আছে যেনো। তবুও তার এই মলিন মুখটা দেখতেও সৌরভের বেশ ভালো লাগছে। এই মেয়েটির মাঝে আলাদা কিছু আছে। যা সৌরভকে প্রতি মুহূর্তে তার দিকে টানে।

গাড়ি চালাতে চালাতে সৌরভ বার বার আড় চোখে ছায়াকে দেখছিলো। তার পাশের সিটেই ছায়া বসে আছে। দৃষ্টি জানালা ভেদ করে বাহিরের দূর কোন প্রান্তে। তাকে দেখতে আজ বড় উদাসীন লাগছে। সৌরভের কিছুটা খারাপ লাগছিলো। ছায়া মাঝে মাঝে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে রেগে যায়। আবার কখনো দেখা যায় খুব বড় কিছু হয়ে গেলেও সে ঠান্ডা মাথায় বিষটা সামলায়। এই যেমন, কাল রাতে সে বায়না ধরেছিলো মায়ের বাসায় যাবে। কিন্তু সৌরভ এ সময় ছায়াকে কিছুতেই তার মায়ের কাছে পাঠাবে না। দুদিন পরই ছায়ার জন্মদিন। এখন মায়ের কাছে গেলে সে সহজে ফিরবে না। অথচ সৌরভ ঠিক করেছে এবারে ছায়াকে সে খুব বড় করে সারপ্রাইজ দিবে। তাই এ মুহূর্তে ছায়াকে কোথাও যেতে দেয়া যাবে না।  যদিও সে সারপ্রাইজের বিষয়টি বুঝতে না দিয়ে খুব শান্তভাবে বলেছে , ‘এখন কোথাও যাওয়া হবে না।’ তবে এটুকু বলাতেই হলো ঝামেলার শুরু। ছায়া রেগে গিয়ে পাশের রুমে শুয়ে পরেছিলো। সকাল থেকে সে সৌরভের সাথে কোন কথা বলেনি। এমনিতেও ইদানিং ছায়াকে কেমন উদাস উদাস লাগে। সেই উদাসীনতার কারণটা হয়তো সৌরভ বুঝতে পারে। সেজন্যই সে নিজেও ছায়াকে বেশি ঘাটায় না।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হাত বাড়িয়ে সৌরভ ছায়ার কোলের ওপর রাখা একটা হাত স্পর্শ করলো। ছায়া মুখ ঘুরিয়ে তাকালো সৌরভের দিকে। ম্লান হাসলো। সৌরভের কি হলো কে জানে। সে ছায়ার হাতটি এনে নিজের বুকের বা পাশটায় ধরলো। তার বুক তখন ঢিপ ঢিপ শব্দ তুলতে ব্যস্ত। ছায়া তখনো ম্লান হেসেই বললো,

– ‘এক হাতে ড্রাইভ করছো কেনো! হাত ছেড়ে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করো।’

সৌরভ কিছুই বললো না। সে ছায়ার হাতটা বুকের মাঝে ধরে রেখেই গাড়ি চালাতে লাগলো। এই মেয়েটিকে সে ভীষণ ভাবে ভালোবাসে। অসম্ভব রকমের ভালোবাসা।  যেটা সে কখনো হয়তো বোঝাতে পারে না।

ছায়াকে তার অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়ে সৌরভ চলে গেলো নিজের অফিসে। নামার সময়ও ছায়া কিছু বললো না। তবে যেটা করলো সেটা সৌরভের মনটাকে মুহূর্তেই ভালো করে দিলো। ছায়া কিছুটা চলে যাবার পর আবারো ফিরে এসে সৌরভের গোছানো চুল গুলোতেই হাত বুলিয়ে যেন আরো একটু গুছিয়ে দিলো। সুন্দর করে হাসলো। তারপর আবারো চলে গেলো। সৌরভের মনে তখন হাজার রকমের প্রজাপতি রঙ ছড়িয়ে উড়ে গেছে। ঠিক যেমনটা হয়েছিলো যেদিন ছায়াকে সে প্রথম দেখেছিলো। মেয়েটাকে এই এতো গুলো দিনেও তার কাছে পুরোনো মনে হয়নি। বরং প্রতিটা মুহূর্তে সে নতুন ভাবে ছায়ার প্রেমে পড়েছে। নতুন ভাবে উপলব্ধি করেছে ছায়ার জন্য তার মনে তৈরী হওয়া ভালোবাসা।

সৌরভ ব্যাংকে জব করে। তার অফিসটা গুলশানে। ছায়ার অফিস থেকে খুব বেশি দূর না। মিনিট পাঁচেকের মতো লাগে। এদিকে অফিস টাইমও মিলে যায় দুজনের। তাই প্রতিদিনই দুজনে এক সাথে বাসা থেকে বের হয়ে যে যার অফিসে চলে যায়।  দিনটা ব্যস্ততায় কাটার পর এক রাশ ক্লান্তি নিয়ে যখন দুজন বাসায় ফিরে তখন একে অন্যের মুখটা দেখার সাথে সাথে যেন সমস্ত ক্লান্তি উধাও হয়ে যায়। ছায়ার অফিস যদিও চারটার মাঝে শেষ হয়ে যায়। তার কাজের চাপ সৌরভের মতো না। এদিকে সৌরভকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিস করেও এক্সট্রা কিছু সময় নিজের কাজ গোছাতে হয়।  বাসায় ফিরতে ফিরতে তার সন্ধ্যা পেরিয়ে মাঝে মাঝে রাতও হয়ে যায়। এ ব্যাংকের নিয়ম কানুন অনেক বেশি জটিল। সাধারন কর্মচারী থেকে শুরু করে ম্যানেজার, মালিক সকলের প্রতিটি নিয়ম মেনে চলতে হয়। অফিস টাইমে বাহিরের জগতের সকল চিন্তা বাদ দিয়ে কাজে মনোযোগ দিতে হবে বলে সে সময় প্রত্যেকের ফোন ব্যাবহার করা নিষেধ। খুব জরুরী কোন প্রয়োজনে অফিসে রাখা ল্যান্ডফোনে টেলিফোন করে নেয় সকলে। তাই রোজকার মতো সেলফোনটা বন্ধ করেই সৌরভ অফিসে নিজের রুমে গিয়ে বসলো।

কাজে মন বসছে না। বার বার ছায়ার মুখটা চেখের সামনে ভাসছে। ছায়ার সাথে তার বিয়েটা হয়েছে সম্পূর্ণ পারিবারিক ভাবে। তবে সেটা শুধু মাত্র সৌরভের চেষ্টার ফল। একটা চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে তাদের পরিচয়টা হয়েছিলো। সেদিন প্রথম দেখাতেই সৌরভ ছায়াতে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। সেই মুগ্ধতা তার মাঝে জেকে থাকে অনেক গুলো দিন। তাই চাকরী পাবার পর পরই সৌরভের ফ্যামিলি থেকে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়।  কেনো যেনো ছায়া নিজেও রাজি হয়ে যায় বিয়েতে। সেই যে মেয়েটার সাথে তার পথ চলা শুরু হয়। এখন তার প্রতিটি কাজে, পথে চলার সঙ্গী শুধু ছায়া। 

লাঞ্চ টাইমে সৌরভ নিজের সেলফোনটা ওপেন করে রাজিবের নাম্বারে কল করে।
– ‘হ্যাঁ দোস্ত, বল।’
– ‘কোথায় আছিস ?’
রাজিব ঠাট্টার ছলে বলে,
– ‘চান্দে আছি। অফিস টাইমে কই থাকবো আর?’
– ‘ও তাহলে অফিস শেষ করে অপেক্ষা করিস আমি আসবো। ছায়ার জন্মদিন উপলক্ষে কিছু শপিং করবো।’
– ‘ঠিক আছে।’

ফোন রাখার পর সৌরভ আবারো নিজের সেলফোনটা বন্ধ করে দেয়। আজ তাকে একটু তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। রাজিব নিজেও ব্যাংকে জব করে। তবে তার অফিসটা সৌরভদের বাসার কাছেই। বাড্ডা তে। তাই সৌরভের কাজ শেষ করে আবার রাজিবের অফিসে যেতে হলে তাকে দ্রুত কাজ শেষ করে বের হতে হবে। তা না হলে এ ছেলে আবার বড্ড অভিমানী। একটু দেরী হলেই রাগে চলে যাবে। রাজিব তার ইউনিভার্সিটি সময়কার বন্ধু। খুব কাছের বন্ধু বলে তাদের মাঝে এখনো খুব বেশিই ঘনিষ্ঠতা। কেউ কাওকে ছাড়া কোন কাজ করতে নারাজ। ছায়া আর সৌরভের বিয়েতেও অনেক হেল্প করেছে রাজিব। সৌরভের বাবা মারা যায় অনেক আগেই। মা আর বোনকে নিয়েই তার সংসার ছিলো। মা ও তাকে ছেড়ে চলে যায় বিয়ের এক বছর পরই। এখন সৌরভের পৃথিবীতে আপন বলতে ছায়া আর তার বোন তোহা। এদের বাহিরে যদি সৌরভের জন্য কেউ সব থেকে বেশি ভেবে থাকে সেটা হলো রাজিব। নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি আপন এই বন্ধুটি তার।

অফিস শেষে সৌরভ আর রাজিব গেলো যমুনা ফিউচার পার্কে । সৌরভ ঠিক করেছে ছায়ার জন্য আজ অনেক শপিং করবে। কিন্তু সমস্যা হলো প্রথমেই। শাড়ির দোকানে গিয়ে দেখা গেলো রাজিব বা সে কেউই শাড়ি পছন্দ করতে পারছে না। মেয়েদের জিনিস পত্রে সৌরভের কোন কালেই কোন চয়েজ ছিলো না। এসবে সে কম বুঝে। তাদের সাথে কোন মেয়ে থাকলে ভালো হতো। তখন মাথায় আসলো তোহার কথা। তোহাকে ফোন দিলেই তো হয়। সৌরভ নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে খেয়াল করলো অফিস থেকে বের হয়ে ফোন অন করা হয়নি। একটা শাড়ি দেখতে দেখতে ফোনটা অন করলো সৌরভ। তার প্রায় মিনিট খানিক পরই ফোনটা বেজে উঠলো। একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। সৌরভ নাম্বারটার দিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে নিয়ে কল রিসিভ করলো। কে জানতো তার জন্য সব চেয়ে বড় ধাক্কাটা অপেক্ষা করছে! ওপাশ থেকে একটা ভারী পুরুষ কন্ঠ বললো,
– ‘ছায়া আপনার স্ত্রী ?’
সৌরভের চোখে মুখে খেলে গেলো একরাশ বিস্ময়। লোকটা কে ? ছায়াকেই বা কী করে চিনে ? নিজেকে সামলে কোন ভাবে সে বললো,
– ‘জি।’
লোকটা হেয়ালি না করেই যেন বললো,
– ‘ আপনার স্ত্রী আর নেই। দ্রুত চলে আসুন।’
তারপর হসপিটালের ডিটেইলস বলে লোকটি ফোন কেটে দিলো।

কি যেনো একটা হয়ে গেলো ! সৌরভের পিঠ বরাবর শিরদাঁড়া হয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত লম্বা ভাবে নেমে গেলো। চারপাশটা স্তব্ধ লাগছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। নিশ্বাসটা যেন আঁটকে গেছে। কন্ঠনালী ভেদ করে আর কোন শব্দ বের হতে পারলো না।

চলবে….

প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৭০

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৭০
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা চোখ খুলে দেখলো শান্ত কানে ফোন ধরে এদিক ওদিক পায়চারি করছে
উঠে বসে পেটে হাত দিয়ে বসে থাকলো সে,তারপর চোখ মুছে নেমে গিয়ে শান্তর পা ধরে বসে পড়লো ফ্লোরে
ছল ছল চোখে চেয়ে রইলো শান্তর দিকে
শান্ত চমকে ফোন থেকে মনোযোগ হটিয়ে নিচে তাকালো
আহানা ওর পা ধরে বলতেসে যেন এবোরশান না করায়
.
আহানা এসব কি করতেসো?
.
শান্ত প্লিস!
.
ওকে ওকে,করবো না,কান্না থামাও প্লিস,উঠো এখন
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে শান্তর হাত ধরে নিজের মাথায় রাখলো
“বলেন কখনও এমনটা করবেন না,কথা দিন আমাকে
.
শান্ত চুপ করে থেকে বললো”কথা দিলাম”
.
আহানা খুশি হয়ে শান্তকে জড়িয়ে ধরলো
শান্ত ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ভাবনার রাজ্যে ডুব দিয়েছে
আহানার মন রক্ষার্থে বলে তো দিলাম কিন্তু এতে তো আহানাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলেও দিলাম
.
বাসায় ফিরে আহানা একটা সুতির শাড়ী নিয়ে বসলো এটা কেটে কেটে বাবুর কাঁথা বানাবে সে
শান্ত চা বানাচ্ছে আর সোফার দিকে বারবার চেয়ে দেখতেসে
আহানার চোখ মুখ হাসিতে টইটুম্বুর
এই মেয়েটার কিছু হলে আমি বাঁচবো না,মেয়েটা বুঝতে চায় না কেন!!
চা বানিয়ে নিয়ে আসলো শান্ত
আহানা চা খাচ্ছে আর সেলাই করতেসে
.
সন্ধ্যা হতেই রুপা আর নওশাদ আহানার বাসায় এসে হাজির,হাতে অনেক অনেক খেলনা আর একটা কিউট বেবির দোলনা
.
আমার একটা মাত্র বেস্টফ্রেন্ডের বাবুর জন্য সামান্য কিছু গিফট!!
.
হুম আর আমার একটা মাত্র বেস্টির?
.
এত কিছু??আচ্ছা রুপা তুই মেয়েদের জামা আনলি যে তুই কি সিউর মেয়েই হবে?
.
আরে মেয়ে হবে দেখিস,আমার আন্দাজ অনেক ভালো হুহ
.
নওশাদ দেখি ছেলেদের জামা আনছে
.
আরে আমার ধারনা ছেলে হবে তোদের!তাই আনলাম,রুপা অনেক ঝগড়া করলো যে মেয়ে হবে কিন্তু আমার মতে ছেলে হবে
.
হইসে ঝগড়া করতে হবে না,বসো তোমরা আমি চা বানাই আনতেসি
.
আরে আহানা বসো,তুমি কাজ করতে হবে না,আজ রুপা রাঁধবে
.
কি বললে তুমি?আমি তো রান্না পারি না
.
আরে আমি আছি না,চলো
.
শান্ত আহানার পাশে বসে একটা খেলনা দিয়ে খেলতে খেলতে বললো “আজ আর নাস্তা করা হবে না,দুটোয় মিলে রান্নাঘরে বোম ব্লাস্ট করে তারপর ফিরবে”
.
আহানা একটা খেলনা গাড়ী হাতে নিয়ে দেখতেসে
“আচ্ছা কোর্সটা এই ৯মাসে করে নিলে হয় না?”
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শান্ত তার হাতের খেলনাটা রেখে আহানার দিকে তাকালো
“হুমমম!তা করাই যায়,আমি ডাঃ রোস্তমের সাথে কথা বলো দেখতেছি”
শান্ত ডাঃরোস্তমকে ফোন করে ব্যাপারটা সম্পর্কে কথা বললো
উনি বললেন গর্ভকালীন সময়ে এটা করা যাবে না
.
নওশাদ জানালো তার জানা মতে বিদেশেও এরকম হসপিটাল নেই যে অসম্ভব কে সম্ভবে পরিণত করবে কথাটা শুনে শান্তর কলিজা কেঁপে উঠলো
এদিকে আহানা রুপার সাথে বসে বাচ্চা নিয়ে গল্প করছে
মেজাজ বিগড়ে গেলো শান্তর,রেগে রুম থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে তার বাসার দিকে চলে গেলো সে
গোটা একদিন হয়ে গেছে শান্ত আহানাকে একটিবার দেখতেও আসেনি
আজ অফিস বন্ধ বলে অফিসের বাহানায় ও আহানা তাকে দেখতে পারার সুযোগটা পোলো না
অফিসের রুমে রঙ করতেসে তাই আজ কাজ নেই
আহানা ভাবতেসে শান্ত হঠাৎ এমন কেন করতেসে
বলা নেই কওয়া নেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো?
.
চিন্তায় থাকতে না পেরে আহানা বাসায় তালা দিয়ে শান্তর বাসার দিকে চললো,বাসায় এসে দেখলো পুরো বাসা ফাঁকা শুধু শান্তর রুমে আলো জ্বলতেছে,শান্ত টিভি দেখতেসে কোলে বালিশ নিয়ে
আহানাকে দেখে এমন ভাব করলো যেন সে খুশিই হয়নি
.
কি ব্যাপার??আপনি আজ সারাদিনে বাসা থেকে বের হোন নি কেন?আমার ফোন ও ধরলেন না!
.
কেন ধরবো?তুমি থাকো তোমার বাবু নিয়ে,এমনিতেও বাবু আসলে চলে যাবা তাই আগে থেকেই দূরত্ব রাখছি যাতে পরে কষ্ট না হয়
কথাগুলো শুনে আহানা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে
.
কি এমন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও বাসায় গিয়ে কাঁথা সেলাই করো
.
আহানা মন খারাপ করে চলে গেলো

শান্তর এবার নিজেরই খারাপ লাগতেসে,কিন্তু সে কি করবে?
তার কাছে যে আহানা সব চাইতে বেশি ইম্পরট্যান্ট
.
রাত ৮টার দিকে শান্ত আহানার বাসায় আসলো,আহানা তার রুমে,বিছানায় গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে আছে
.
আহানা!
.
কি?
.
সরি
.
কেন?
.
বকসি তাই
কথাটা বলে শান্ত আহানাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো ওর পাশে
.
আমি কি করবো বলো,আমি তোমাকে হারাতে চাই না,প্লিস ডিসিশন পাল্টাও
.
কখনওই না
.
শান্ত আর কি করবে,আহানাকে বুঝানোর সব টেকনিক এপ্লাই করে ফেলসে তাও লাভ হলো না,শেষে বাধ্য হয়ে আহানাকে জড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়লো সে
রাত ৯:৪৫এর দিকে আহানা উঠে রান্নাঘরে এসে শান্তর জন্য খাবার নিতেসে
আহানা উঠে যাওয়ার পর পরই শান্ত ও উঠে গেসিলো,গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে টিভি দেখতেসে এখন সে

দেখতে দেখতে কখন যে ৬টা মাস হয়ে গেলো বুঝাই গেলো না
এখন আপাতত শান্তই অফিসে যায় আহানা যায় না
তার ছুটি,মাতৃকালীন,একটু আগেই ছুটি পেয়েছে
প্রাইভেট কোম্পানি তো যতদিন কাজ করবে না ততদিন বেতন পাবে না,শান্ত আর আহানা সেটাতেই রাজি হলো
শান্ত এখন সংসার চালায়,আহানা বাসায় থাকে সারাদিন
আজ মাসের এক তারিখ
শান্ত আর আহানা রেডি হচ্ছে,মোহনগঞ্জ যাবে,বাবার কড়া আদেশ আহানা ১মাস মোহনগঞ্জে থাকবেই থাকবে
আহানা সেই শাড়ীটা পরেছে যেটা শান্তর মা রেখে গেসিলেন আহানার জন্য
আজ ৬মাস তাই নিয়মমাফিক সে এটা পরেছে,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পেটে হাত দিয়ে চেয়ে আছে সে
শান্ত একটা পাঞ্জাবি পরে হাতে ২টা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে দাদা দাদির বাসার দিকে
দাদি আহানাকে আয়াতুল কুরসি পড়ে ফুঁ দিচ্ছেন আরও অনেক দোয়া পড়ে ফু দিয়ে বললেন জলদি চলে আসতে,ঢাকার হসপিটাল ভালো,চিকিৎসা ও ভালো
আহানা বললো ডাঃ রোস্তম অপারেশন করবে এখানেই,তারা জলদিই চলে আসবে
শান্ত রাফির সাথে কথা বলে তার বাসায় ল্যাপটপে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবে এটা বলে সে আপাতত মানিয়েছে আর যদি দরকার হয় তাহলে আহানাকে সাথে করে নিয়ে চলে আসবে ঢাকায়
বাবার কথামত এক মাস থাকা কোনো মতেই সম্ভব না
কদিন থেকেই চলে আসতে হবে নাহলে চাকরিটা যাবে
আর এখন শান্তর মাস্টার্স কমপ্লিট!!
সে এখন আহানার সাথে ঝগড়া লাগলেই বলে “ঠিক করে কথা বলবা আমি তোমার চেয়ে অধিক শিক্ষিত”
আহানাও কিছু বলতে পারে না মাঝে মাঝে মনে মনে ভাবে শান্তর থেকে বয়সে এত ছোট না হলেও হতো,এই এক পয়েন্টের জন্য আহানা ঝগড়ায় হেরে যায় বারবার
ট্রেনে বসে আহানা বাইরে তাকিয়ে পেটে হাত দিয়ে বলতেসে “আমার বাবু!!আজ আমরা প্রথমবার তোমাকে নিয়ে তোমার দাদুর বাড়ি যাচ্ছি,তোমার কেমন লাগছে?”
.
আমি বলি?
.
আপনি কি বলবেন?ওর কেমন লাগছে আপনি জানবেন কি করে?
.
ওর ভাল্লাগতেছে না,কারণ ওর বাবার অফিস বাদ দিয়ে যেতে হচ্ছে এইটা ওর কেন ভাল্লাগবে
.
এখন থেকে বাচ্চাকে নিজের সাইডে করে নিচ্ছেন?স্টুপিড!
.
তো কি সারাদিন ম্যা ম্যা করুক তুমি চাও?
.
ব্যা ব্যা করুক সেটাও চাই না
.
হইসে সে তার মতো হবে,খুশি?
.
হু!!
.
এখন চলেন মোহনগঞ্জ এসে গেসে
.
শান্ত ট্রেন থেকে নেমে আহানার হাত ধরে ওকে নামালো,সকালে রওনা হওয়ায় এখন বিকাল হতে চললো,অনেকটা সময় লেগে গেছে,একটা রিকসা নিয়ে আহানাকে নিয়ে এবার সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে
.
ওমা বাসার গেটে ফুল টুল দিয়ে সাজানো,গেটের সামনে সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,সবার মুখে হাসি,অথচ আনুষ্ঠানিক বিয়ের আগের দিন ওরা যখন এসেছিল তখন বাবা আর ফুফু ছাড়া কেউ ছিল না আর আজ কিনা পুরো ব্যাটালিয়ন??
আহানা রিকসা থেকে নেমে কিছুটা শক খাওয়ার মত দাঁড়িয়ে আছে,মিতু এসে জড়িয়ে ধরলো আহানাকে
রেনু এসে আহানার ডান হাত ধরে ওকে ভিতরে নিয়ে সোফায় বসালো
আহানা তো রীতিমত ভূত দেখার মত করে মুখ করে আছে
শুধু সে না শান্তর ও মুখের ভাবগতি একই,এরকম সবাই বদলে গেলো কেন
ফুফু এসে আহানার কানের পিছনে টিকা লাগিয়ে দিলেন
রেনু একটা গয়নার সেট এনে সেগুলো আহানাকে পরানোর ব্যস্ত হয়ে গেসে
শান্ত ফ্রিজ থেকে জুস নিয়ে খাচ্ছে আর সবার কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছে
খালা মিষ্টির প্লেট নিয়ে যাওয়া ধরতেই শান্ত উনাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো সবাই এমন বদলে গেলো কেন
.
আরে শান্ত বাবা একটা বাচ্চা আসতে চলেছে এটার চেয়ে বড় খুশির খবর আর কি হতে পারে?
.
তাই বলে এতো?
.
আরে এখনও তো হয়নি বলে অল্পসল্প করছে
হলে তো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিবে তোমার বউকে,তবে রেনু আপার এমন বদলে যাওয়াতে আমিও চমকেছি,হুট করে এত বছর পর এমন বদলালেন এখন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়
.
হুমম!সায়ন কোথায়?
.
সে তো তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে পিকনিকে গেসে
.
ওহ,যাক ভালো
.
আহানাকে সাজিয়ে দিয়েছে সবাই,আহানা শান্তর দিকে অসহায়ের মত চেয়ে আছে,ওমা এবার আশেপাশেরর সবাই আহানাকে দেখতে আসতেসে এক এক করে
কি ঝামেলা,আহানার শরীর খারাপ করছে.এত জার্নি করে এসে এখন আবার সবার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলাতে হচ্ছে
.
পাশের বাসার চারু আন্টি বললেন আহানাকে এমন লাগছে কেন
বয়সে প্রবীণ হওয়ায় সবাই উনার কথায় মনোযোগ দিলেন
.
উনি আহানার হাত পা চোখ সব দেখে বললেন “মাইয়ার দেখি শরীরে রক্ত কম”
.
শান্ত কথা কাটিয়ে এসে বললো”হইসে সব বাদ,আমার বাচ্চার মাকে রেস্ট নিতে দাও তোমরা,সেই বিকাল থেকে সবাই খালি দেখেই যাচ্ছো,বাচ্চা হলে তো মনে হয় ২দিন ধরে দেখবা
.
আরে দেখবো না তো কি করবো,গায়ের রঙ কেমন চকচক করতেসে তুই দেখোস না শান্ত?
.
শান্ত চোখ মেরে বললো”ওমা আমার বউকে তো আমি দিনে ৪৫বার দেখি,এটা আবার বলতে হয় নাকি চারু আন্টি?”
.
ওরে বাপরে ৪৫বার??
.
হ?
.
শান্ত! যাও আহানাকে নিয়ে তোমার রুমে চলে যাও,ওকে বলো এসব চেঞ্জ করে হালকা পাতলা সুতির শাড়ী পরতে, এসময়ে এত ভারী শাড়ী, গয়না গাটি পরা ভালো নয়
.
আচ্ছা মা
শান্ত আহানার হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে গেলো
আহানা একটা সাদা কালো শাড়ী পরে নিলো সব গয়না খুলে,শান্তর দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করতেসে মনোযোগ দিয়ে
আহানা ওর পাশে এসে বসে ওর পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো “তা মিঃ অশান্ত??আজ কয়বার দেখলেন আমাকে?”
.
হুমমম!৩৪বার
.
ওরে বাপরে তার মানে আর ১১বার দেখবেন?
.
জি
.
সব গুনে গুনে?
.
হ্যাঁ,এখন যাও টেবিলের উপরে রাখা এক ঝুড়ি ফ্রুটস সব খেয়ে শেষ দাও
.
কিহহ,এত কেন?
.
তোমার জন্য না আমার বাবুর জন্য
.
আমি এত খেতে পারবো না
.
তাহলে আজ রাতে একা ঘুমাইও,অন্ধকারে
.
আপনি এমন করেন কেন,আপনার তো আর আমার মত অবস্থা হয়নি তাই এমন করতেসেন,হলে বুঝতেন
.
ল্যাপটপটা রেখে শান্ত একটা কুশন পাঞ্জাবির নিচে দিয়ে পেটে বসিয়ে প্রেগন্যান্ট এক্টিং করতে করতে ঝুড়িটা নিয়ে বিছানায় আসলো
আহানা হাসতেসে মুখে হাত দিয়ে
.
কি?দেখো এখন সব ফল আমি খেতে পারবো
.
আহানা শান্তর চুল টেনে দিয়ে বললো “আপনি পুরাটাই পাগল!!”
.
আর তুমি মহাপাগল!
.
কেন?
.
কারন তুমি পুরোটাই পাগল এমন ছেলেকে বিয়ে করছো?
.
চলবে♥