আহিল ভাইয়া পাড়ে এনে রিংকিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আশেপাশের সবার দিকে একবার চোখ বুলালেন৷ কয়েকজন ছেলেরা রিংকির দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে৷ আহিল ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝে ভাইয়ার গা থেকে শার্ট খুলে রিংকির গায়ে জড়িয়ে দিলেন৷ রিংকি লজ্জা মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি আর সামু একেবারে বেকুব বনে গেছি৷ কী হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা৷
আরুহিঃওরে সামুরে আমারে কেউ ধর এতো ভালোপাশা দেখে আমি যে অজ্ঞান হইয়া যামু৷
.
সামান্তাঃহোতা হে কিয়া৷
.
আহিল ভাইয়া রিংকির কাছ থেকে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন তারপর কোমড়ে হাত গুজে বললেন,
বেশি পাকনা হয়ে গেছিস তোরা৷ দেখলি কিভাবে পানিতে পড়ে গেলো৷ তোরা তো আর ওকে তুলবিনা তাই আমিই তুললাম৷
.
সামন্তাঃ বুঝি বুঝি৷ মায়ের চাইতে মাসির দরদ বেশি হুহ৷
.
আহিল ভাইয়া কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো৷
আরুহিঃএই বেটা বেটির মনে আবার কি লাড্ডু ফুটছে আল্লাহই জানেন৷
🍁🍁🍁🍁
আয়েশা আপু ওরা সবাই চলে গেছে৷ দুটো গাড়ি আনাতে বেশ সুবিধাই হয়েছে৷এখন আমি,সামু,রিংকি,আহিল ভাইয়া যাবো৷ আমি আর সামু ব্যাক সিটে এসে বসেছি৷ রিংকি আমাদের কাছে আাসতে চাইলে ওকে ফ্রন্ট সিটে আহিল ভাইয়ার কাছে পাঠিয়ে দিলাম৷
আমি আর সামু এদেরকে ফলো করছি৷ কী সুন্দর একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে৷ চোখে চোখ পরতেই রিংকি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিচ্ছে৷
আরুহিঃচোখে চোখ যেই পরেছে এন্টার্নটিক নড়েছে৷
.
সামান্তাঃহৃদয়ের কানেকশনে তরতাজা সিগনাল৷
.
আহিল ভাইয়া আমার আর সামুর কাউয়া কন্ঠ মার্কা গান শুনে বিরক্তির সহিত বললেন,এটা কীরকম গান আর ওই তোরা ওতো ফলো করছিস কেনো বলতো?
.
আরুহিঃওহো বেশ করেছি ফলো করেছি করবোইতো৷
.
আহিলঃযা পারিস কর৷
🍁🍁🍁🍁
রিসোর্টে আসার পর থেকেই খেয়াল করছি রিংকি কেমন মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷ আমরা কিছু বললে পাত্তাই দিচ্ছেনা৷
আরুহিঃবুঝলি সামু,এই বেটি আহিল ভাইয়ার প্রেমে পড়েছে৷ আর আহিল ভাইয়াও৷
.
হুম আমিও সেটাই ভাবছি৷ তবে রিংকিকে ভাবী বানাতে আমার কোনো আপত্তি নেই৷
.
আমাকে ভাবী বানাতে আপত্তি আছে??(আনমনে)
.
রুহি আর ইউ সিরিয়াস এটা তুই বলছিস৷ আই জাস্ট কা’ন্ট বিলিভ দিস ইয়ার৷
.
আমার যখন খেয়াল হলো আমি কী বলে ফেললাম তখুনি আমার মনে তক্তা+বাঁশ দিয়ে বারি শুরু হয়ে গেলো৷ আমি কী বললাম আমি নিজেই জানিনা৷
.
ধুর আমি সেভাবে বলিনি৷
.
হুম৷
🍁🍁🍁🍁
পরেরদিন আবার সবাই বেড়িয়েছি চায়ের বাগান ঘুরার জন্যে৷আমি, আহিল ভাইয়া,রিংকি,সামু আমরা একসাথে৷ আর বাকি সবাই এক সাথে৷ রিংকি আসার পর থেকেই আহিল ভাইয়া আমদের সাথে সাথে আছে৷ আমরা চায়ের বাগানে ঘুরার সাথে সাথে চা গাছের কুড়িও চুরি করছি আর ব্যাগে ঢুকাচ্ছি৷
হঠাৎই একটা ছোট মেয়ের দিকে চোখ পরলো মেয়েটি এক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে৷
‘আইচ্ছা তোমরা কোনানের৷ কোনান থেকি আইসো৷ তোমার নাম কিতা৷ আর ওই পোলা কিতা তোমার জামাই নাতা৷
.
মেয়েটির কথা শুনে সামু হাসতে হাসতে মাটিতে পরে গেছে৷ আদিল ভাইয়াও মুখ টিপে হেসে তাকিয়ে আছে৷
রিংকি আমাদের সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,, “আচ্ছা এখানে তো আরও দুজন আছে এদেরকে তো বললি না আমায় কেন বললি৷ আর উনি আমার জামাই না৷
.
না মানে দেখছি উনি তোমার ছবি তুলতাছইন আর হাসতাছইন৷
.
আর এরলাগি আমার জামাই অইগেছে৷
.
আইচ্ছা কও গ তোমরা কোনান থেকি আইসো৷
.
আমরা ঢাকা থেকে আইছি৷
.
ওহ আইচ্ছা৷
.
তে তোমার বাড়ি কই??
.
আমরার বাড়ি সুনামগঞ্জ ওখানো বেরানিত আইসি ঘুরবার লাগি৷ আইচ্ছা আমি যাই নাইলে আম্মু মারবা৷
.
আইচ্ছা যা৷
.
আহিল ভাইয়া রিংকির আর মেয়েটির কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ৷ তারপর হাসি বন্ধ করে বললেন,
আরেহ্ বাহ রিংকি তুমি তো খুব সুন্দর করে সিলেটি বাসায় কথা বলো৷ কোথায় থেকে শিখলে৷
.
ওই আমার প্রাইমারি স্কুলের এক ফ্রেন্ড সিলেটের ছিলো তার কাছ থেকেই শিখেছি৷
.
হুম খুব ভালো৷
.
সামান্তাঃরিংকি তোর বিয়ে হলে ভাইয়ার সাথে সিলেটি ভাষায় কথা বলিস৷
.
মানে??
.
কিছু না এমনি৷
আমরা চায়ের বাগান থেকে বেড়িয়ে গেলাম সবাই৷ এবার বিছানাকান্দি যাবো৷
🍁🍁🍁
আরুহিঃও আল্লাহ্ গ বিছানাকান্দি তো আরও সুন্দর৷ কী সুন্দর চারিদিকে পাহাড় পাথর৷ পানির উপরে আবার নৌকাও আছে৷
.
সামান্তাঃরুহি দেখ এতো কম পানিতে আবার নৌকাও আছে৷।
.
আদনান ভাইয়া আমাদের সবাইকে নিয়ে নৌকায় উঠলেন৷ পাথরের উপরে কী সুন্দর স্বচ্ছ পানি৷নৌকা পানির মধ্যেখানে আসতেই সামান্ত বলে উঠলো,,
“এমা এখানে এতো কম পানি৷”
কথাটা বলে সামান্তা পানিতে নেমে গেলো৷
.
সামান্তাঃও আল্লাহ গ এখানে তো কোমড় পানি এখন কী করবো আমি৷এ্যা এ্যা এ্যা৷
.
সামান্তার অবস্থা দেখে সবাই পেটে হাত দিয়ে হাসছে৷ ওদের হাসির জন্যে নৌকাও কাঁপছে৷ সামান্তা কোমড় পানিতেই দাঁড়িয়ে আছে৷ আদনান ভাইয়া হাত বাড়িয়ে দিলেন যাতে ভাইয়ার হাতে ধরে উঠে আসে৷ সামান্তা হাত ধরে নৌকার পাশে পা রেখে ভর দিয়ে উঠতেই সবাই নৌকা উল্টে পরে গেলো৷ আদনান ভাইয়া সামান্তাকে নিয়ে একেবারে পানির নিচে৷
সামান্তাঃও আমার আল্লাহ গ৷ আমি যে পানি খাইসি৷
.
আহিলঃরোমান্স করার আর জায়গা নাই পানির নিচে৷
.
আদিবঃআজ রোমান্স করার মানুষ নাই বলে৷
আদিব ভাইয়ার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো৷
ভাইয়ারা সবাই সাতার কাটছে আয়েশা আপু,অদ্রিতা আপু আর রিংকিও সাতার কাটছে৷ আমি আর সামান্তা শুধু নৌকায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি৷
এখন প্রতিযোগিতা হবে কে কত দূর পানির নিচে ডুব দিয়ে যেতে পারে৷
সবাই ডুব দিয়েছে৷ আহিল ভাইয়া বেশি দূর যেতে পারলোনা শ্বাস নেওয়ার জন্য পানির উপরে উঠে এলো৷ রিংকি ও ডুব দিয়ে সাতার কাটছে৷ পানির নিচে কারও সাথে ধাক্কা খেয়েছে বলে আবার পানির নিচ থেকে উঠে এলো৷ ওর থেকে এক আঙুল দূরে আহিল দাঁড়িয়ে আছে৷ আর নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ রিংকি আহিলের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো৷আহিল ওর দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে এতে ওর মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে৷
আদিল ভাইয়া পানির উপর দিয়েই সাতার কেটে নৌকার কাছে আসছেন৷ হঠাৎ ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে আমি আদিল ভাইয়ার উপরে পরে গেলাম৷ ভাইয়া আমার কোমড় দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন৷ আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে সামুর দিকে তাকালাম সে নৌকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে৷ আর চোখ টিপ দিচ্ছে৷ বজ্জাত মাইয়া আমারে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এখন দাঁত বের করে হাসছে৷ ইচ্ছে তো করছে সিলেটের সব পাথর এর দাঁতে ছুড়ে মারি৷
“রুহি তোকে ভেজা অবস্থাতে কিন্তু খুব সুন্দর লাগে৷” আদিল ভাইয়ার এমন কথা শুনে তারাতাড়ি সরে গেলাম আমি৷ ভাইয়া এমন কথা বলবে কখনো ভাবিনি৷ ভাইয়ার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ আমি সামান্তার হাত ধরে নৌকায় উঠে পরলাম৷ আদিল ভাইয়া পানিতে থেকেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম৷
চলবে♥️
[প্রায় সবাই কনফিউজড এদের সবার নাম নিয়ে৷ কে কার ভাই আর কে কার বোন এটা অনেকেই বুঝতে পারছেনা৷ (আদনান,আদিব,আয়েশা,আরুহি),,(আদিল,অদ্রিতা,আহিল,সামান্তা) এরা আপন ভাইবোন৷ গল্পের কাপল চারটা৷ (আদিল,আরুহি),(আদনান,সামান্তা),(আহিল,রিংকি) আর রইলো বাকি আদিব,ওর জন্য পরে খুঁজবো😜😜 আর গঠনমূলক মন্তব্য অবশ্যই করবেন]
আদিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া আমাদের পাড়ে রেখে আবারও বোটে উঠে পরলো৷আরও কতগুলো মেয়েরাও উঠেছে৷ মেবি ওরা পিকনিকে এসেছে৷আমি আর সামান্তা ভেজা শরীর নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছি৷ এক বোট আরেক বোটকে ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে৷ ধাক্কা ধাক্কির এক পর্যায়ে একটা মেয়ে ছিটকে পানিতে পরে গেলো৷ আমি আর সামান্তা মেয়েটাকে পানিতে পরতে দেখে হাসতে হাসতে শেষ৷ আমরা এই মুহুর্তে ভুলে গেছি যে একটু আগে আমরাও পানিতে পরেছিলাম৷ মেয়েটা ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে হেল্প হেল্প করছে৷ ওরা হেল্প করবে দূরের কথা দাঁত আরও কেলিয়ে হাসছে৷
একটা ছেলে পুলে নেমে পরলো৷ তারপর মেয়েটার কাছে গিয়ে বললো সে মেয়েটাকে হেল্প করবে৷ মেয়েটি ভাইয়াদের দিকে একবার তাকিয়ে সাতরে পাড়ে চলে এলো৷
সামান্তাঃওরে রুহি রে বেটি তো বারি বজ্জাত৷দেখলি সাতার জানে তারপরও কিভাবে অভিনয় করলো৷ এরে তো নবেল দেওয়া দরকার৷
.
আরুহিঃহুম সবই ভাইয়াদের কোলে উঠার ফন্দি বুঝলি৷
.
সামান্তাঃতার মানে আমাদের যখন ভাইয়ারা কোলে নিয়েছিলো তখন আমাদের খুব রোমান্টিক কাপল লাগছিলো আর এটা দেখেই এদের জেলাস+কোলে উঠার শখ হয়েছে৷
.
আরুহিঃএকটু বেশিই ভাবিস তুই৷ আমাদের রোমান্টিক কাপল লাগতে যাবে কেন?আমরা ভাইয়ার কোলে উঠেছি হাসবেন্ডের কোলে উঠিনি৷
.
সামান্তা কিছু না বলে মুচকি হেসে আদনান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো৷৷
”
“এই বেটির মনে আবার কী চলছে আল্লাহ্ই জানেন৷
🍁🍁🍁🍁
পার্ক থেকে রিসোর্টে এসেছি বেলা ২টায়৷ এখন আবার সবাই জাফলং যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি৷ জৈন্তি হিল রিসোর্ট থেকে জাফলং মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে৷ তাই এখন যাওয়া যাবে৷
রিংকির ফোন দেখে আমার বুক ধক করে উঠলো৷
রিংকিকে তো জানানোই হয়নি যে আমরা সিলেট এসেছি৷ বেচারি শুনলে খুব কষ্ট পাবে৷ আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম৷
“হ্যালো রিংকি৷
.
রুহি তুই আমার সাথে এতো বড় অন্যায় কিভাবে করলি৷ তোরা সিলেটে এলি আর একবারও আমাকে বললি না৷ এতটা পর হয়ে গেছি আমি৷
.
প্লিজ বইন রাগ করিস না৷ আমার একদম মনে ছিলোনা৷ তারাহুরোর মধ্যে আসা হয়েছে৷
.
আচ্ছা ঠিকাছে৷ কিন্তু আমি তো সিলেট এসে গেছি৷ এখন তোরা কোথায় আমি তো জানিনা৷
.
কীহ!!!! তুই সিলেট এসেছিস বাট হাউ??
.
কেনো বাস দিয়ে৷ কাল আহিল ভাইয়া দেখেছি তোদের সবার গ্রুপ ছবি ফেইসবুকে আপলোড দিয়েছে৷ আর ক্যাপশন দিয়েছে সিলেটের বিকেল বেলা৷ তখুনি বুঝতে পারলাম তোরা সিলেট আছিস৷ মা বাবাকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে সকালেই রওনা দিলাম একটু আগে পৌঁছিয়েছি৷
.
কোথায় আছিস তুই এখন৷
.
উসমানী মেডিকেলের পাশে৷
.
এখান থেকে তো অনেক দূর৷আচ্ছা আমি কাউকে পাঠাচ্ছি৷ বাই৷
রিংকির সাথে কথা বলে বাইরে বেড়িয়েই দেখলাম আহিল ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে৷
ভাইয়া আমার একটা হেল্প করবে??
.
কী হেল্প??
.
একচুয়েলি রিংকিকে আনতে যেতে হবে৷ ও আমাদের সিলেট আসার খবর শুনে চলে এসেছে৷ এখন উসমানী মেডিকেলের পাশে আছে৷ প্লিজ ভাইয়া তুমি তারাতাড়ি যাও৷
.
আচ্ছা যাচ্ছি৷ ওকে বলে রাখিস এক পাও যাতে না নড়ায়৷ আর সবাইকে বলে দিস জাফলং যাতে চলে যায় আমি রিংকিকে নিয়ে সেদিক থেকে চলে যাবো
🍁🍁🍁🍁
আদিল উসমানী মেডিকেলের কাছে গিয়ে রিংকিকে খুঁজে চলেছে৷ এতো বড় মেডিকেল কোন দিকে থাকবে সেটা ওতো জানেনা৷ হঠাৎই আহিলের চোখ পরলো দূরে একটা মেয়ে ব্রেঞ্চে বসে আছে৷ পরনে একটা শর্ট কুর্তি আর প্যান্ট গলায় স্কার্ফ পেছিয়ে রেখেছে৷ চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে একপাশে এনে রেখেছে৷ মুখও ভালো করে দেখা যাচ্ছেনা তবে আহিলের ডাউট হচ্ছে এটাই রিংকি৷ তাই সে তার ডাউট দূর করার জন্য মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো৷ মেয়েটার মুখ দেখে নিশ্চিন্ত হলো আহিল না এটা রিংকিই৷
“ম্যাডাম চলুন৷ ”
আহিলের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো রিংকি৷ সে ভাবতেই পারছেনা আহিল ওকে নেওয়ার জন্য এসেছে৷
.
কী হলো চলো৷
.
রিংকি আহিলের সাথে চলে গেলো৷ আহিল কারে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসেছে আর রিংকি ব্যাক সিটে৷
“এই যে মিস আমাকে কী আপনার ড্রাইভার মনে হয়৷ ব্যাক সিটে বসেছো কেনো ফ্রন্ট সিটে এসে বসো৷
রিংকি যেন এটাই চাইছিলো৷ আহিলের বলতে দেড়ি ওর ফ্রন্ট সিটে যেতে দেড়ি নেই৷ তারাহুরো করতে গিয়ে একেবারে হোঁচট খেয়ে আহিলে উপরে পরে গেলো৷ রিংকি তারাতাড়ি সরে যেতেই ওর চুলে টান অনুভব করলো৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ওর চুল আহিলের শার্টের বোতামের সাথে আটকে গেছে৷ রিংকি আলতো করে ওর চুল ছাড়াচ্ছে৷ পরে যেতে নিতেই আহিল রিংকির কোমড় ধরে আবার উপরে উঠালো৷ রিংকি তো লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেছে৷ লজ্জা মাখা মুখ নিয়েই সে আহিলের দিকে তাকালো৷ আহিলও ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ রিংকি তারাতাড়ি চুল ছাড়িয়ে সিটে বসে পরলো৷ আহিলও একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো৷
অনেকবারই রিংকি আর আহিলের চোখাচোখি হয়েছে৷ দুইজন দুজনের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে৷ চোখে চোখ পরার সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে৷ এসব করতে করতেই ওরা জাফলং পৌঁছে গেলো৷
🍁🍁🍁🍁
রিংকিকে দেখে আমি আর সামু দু’জনেই দৌড়ে গেলাম৷ আয়েশা আপু আর অদ্রিতা আপুও ভিষন খুশি৷আপুদেরও রিংকির কথা খেয়াল ছিলোনা৷ আদনান ভাইয়ারা গেছে বিরিয়ানি আনার জন্যে৷কিছুক্ষন হেটে হেটে দেখার পর সবাই বসে পরলাম জাফলংয়ের বড় বড় পাথরের উপরের৷ আমি একটা জিনিস অনেক্ষন যাবত খেয়াল করছি রিংকি খুব লজ্জা পাচ্ছে৷ আশ্চর্য এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে৷ আগে তো এতো লজ্জা পেতে দেখেনি৷
বিরিয়ানির প্যাকেট আনা হয়েছে ৫টা কিন্তু আমরা মানুষ ৯জন৷ শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে একটা দুজনে ভাগ করে খাবে৷ আমি আর আদিব ভাইয়া, আদিল ভাইয়া আর আয়েশা আপু,আদনান ভাইয়া আর সামান্তা,আহিল ভাইয়া আর রিংকি৷আর অদ্রিতা আপু একা একটা৷ যদিও নিজের ভাগ থেকে আমাদেরও দিয়েছে৷
সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে শুধু আমি ছাড়া৷আমি মাংস নিতে যাই ওমনি আদিব ভাইয়া মাংস নিয়ে মুখে পুরে ফেলে৷ বিরিয়ানি মাংস ছাড়া খেতে ভালো লাগে নাকি৷ সবার দিকে একবার চোখ বুলালাম৷ ওরা সবাই কতো সুন্দর করে খাচ্ছে৷ আয়েশা আপু আদিল ভাইয়াকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে,একজন আরেকজনকে মাংস বেছে দিচ্ছে৷ সামান্তা মাংস পেলে আদনান ভাইয়াকে দিচ্ছে আর ভাইয়া পেলে সামান্তাকে দিচ্ছে আহিল ভাইয়া আর রিংকির সেম অবস্থা৷ অথচ আমাকে দেখো আদিব ভাইয়া সব মাংস খেয়ে আমাকে দারচিনি,এলাচি,তেজপাতা,কাঁচামরিচ বেছে দিচ্ছে৷ এরকম ভাই থাকলে শত্রুর দরকার পরেনা৷আমি রেগে আমার এটু হাত দিয়েই আদিব ভাইয়ার চুল টানতে শুরু করলাম৷ ইচ্ছে মতো টেনে তারপর ছাড়লাম৷ আদিব ভাইয়া চুলে হাত দিয়ে নাকের কাছে এনে ঘ্রাণ শুকলেন৷
“এমা আল্লাহ্ গো৷ আমি এত দামী জেল দিসিলাম চুলে এখন দেখি আমার চুলে খালি বিরিয়ানির গন্ধ করে৷
.
মাংস যে খাইসো ওইটার প্রমাণ৷
🍁🍁🍁🍁🍁
খেয়েদেয়ে আবারও আমরা জাফলংয়ের চারিদিক দেখছি৷ কি সুন্দর পাথর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়৷ ইন্ডিয়াও দেখা যায়৷ অনেক স্টুডেন্টদেরও দেখা যাচ্ছে হয়তো স্কুল থেকে থেকে পিকনিক করতে এসেছে৷ রিংকি পানির নিচে পাথর দেখে ধপাস ধপাস করে পাথরে হাটতে লাগলো৷ আমি আর সামু ওর পিছু পিছু আছি৷ আহিল ভাইয়া ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে৷ রিংকি হাটঁতে হাঁটতে হিল জুতো মুচরে ধপাস করে পরে গেলো পানিতে৷পাথরও ছিলো ব্যাথা তো পেয়েছে নিশ্চয়৷
রিংকিকে দেখে আমি আর সামু হেসে কুটিকুটি৷ আজ খালি একের পর এক পরছেই পরছে৷ ধপাস ধপাস,ধপাস ধপাস৷ রিংকি বাকি ছিলো এবার রিংকি ও পরে গেলো৷ রিংকি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ ওর এমন চাহনি দেখে আমরা আরও বেশি হাসছি৷
আহিল ভাইয়া দৌড়ে এসে আমার কাছে ক্যামেরা দিয়ে চলে গেলেন রিংকির কাছে৷ তারপর কোন কিছু না ভেবে কোলে তুলে নিলো ওকে৷রিংকি লজ্জায় মুখ লুকালো আহিল ভাইয়ার বুকে৷ আর ভাইয়ার মুখেও কেমন এক হাসি৷ আমি আর সামু তো অবাক, হায় আল্লায় আজ এসব কী হচ্ছে৷ আমার তো মনে হচ্ছে সিলেট এসে কোনো এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে৷
আয়েশাঃআদনান এসব কী বলছিস তুই?
.
আহিলঃআমরা সব শুনেছি আপু তাই কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই৷ আদিল ভাইয়া যখন এখানে এসেছিলো তখন ভাইয়ার পিছুপিছু আমরাও এসেছিলাম আর সব শুনেছি আমরা৷
.
আদনানঃহাউ ডেয়ার ইউ আদি!!! তুই আমার বোনের গায়ে হাত তুলিস৷ তোকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম আমি এটা দেখার জন্যে যে কেউ যাতে আমার বোনের গায়ে একটা আছড়ও না দিতে পারে আর এই তুই তোর দায়িত্ব পালন করলি বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে৷
.
আদিবঃভাইয়া তুমি ভালো করেই জানো যে রুহি আমাদের সকলের নয়নের মনি ওর গায়ে কেউ হাত তুলেনা কিন্তু তুমি কী করলে৷ এটা তোমার কাছ থেকে এক্সেপ্ট করিনি৷
.
আদনানঃঅদ্রিতা আপু ঠিকই বলেছে তোকে সব অধিকার দিলেও ওর গায়ে হাত তোলার অধিকার দেয়নি৷
.
আরুহিঃব্যস অনেক হেয়েছে,,আমি কাকে কোন অধিকার দিবো না দিবো সেটা আমি ডিসাইড করবো৷আদিল ভাইয়াকে যেমন আমি আমার গায়ে হাত তোলার অধিকার দেইনি তেমনি তোমাদেরও আমার ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার দেইনি৷ তোমরা আমার বড় ভাই৷ অবশ্যই আমার ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করতে পারো৷ কিন্তু সব ম্যাটারে নয়৷ কিছু কিছু ম্যাটারও ছেড়ে দিতে হয়৷ আদিল ভাইয়া আমায় মেরেছে তার কারণ আছে৷ ভাইয়া রিফাতের সম্পুর্ন ডিটেইলস নিয়েছে কিন্তু তোমরা কী করেছিলে৷ একবারো রিফাতের সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করেছিলে?? করোনি তো৷তাহলে এখন কেনো চিল্লাচ্ছো৷ তোমরা চার ভাই একসাথে থাকো৷ আমার বিষয় আমি দেখে নিবো৷
.
আহিলঃশত হোক এতো রাগ ভালো নয়৷
.
আদিলঃআমি জানিনা আমার তখন কী হেয়েছিলো৷ রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না আমি৷ তার জন্য আমি রুহির কাছে অনেক বার ক্ষমা ও চেয়েছি৷ তারপরও যদি তোমাদের আরও কিছু বলার থাকে তাহলে বলো আমি শুনবো৷ (ভাঙা গলায়)
.
আদিল ভাইয়ার জন্য অনেক খারাপ লাগছে আমার৷ প্রথমে আমি ভাইয়াকে কতো কথা শুনাচ্ছিলাম৷ তারপর আবার অদ্রিতা আপু চড়ও মেরেছে আবার যা নয় তাই বলেছে এখন আবার আদনান,আহিল,আদিব ভাইয়েরা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে রাগারাগি করছে৷ একটু আগেও সবাই মিলে কত হাসাহাসি করেছিলো৷
এক এক করে সবাই রুম থেকে চলে গেলো৷ আমি জানি এখন সবাই আমার সাথে অভিমান করবে৷ কিন্তু আমিই বা কী করবো৷
🍁🍁🍁🍁
রাতে কেউই ডিনার করিনি৷ মা আর চাচীমনি সবাইকে ডেকেছেন কিন্তু কেউই আসেনি৷ সবাই যেমন কেমন হয়ে গেছে সামান্তাও আমার সাথে তেমন কথা বলছেনা৷ আমাদের এমন হাসিখুশির ফ্যামিলির সদস্যরা কেমন মনমরা টাইপ হয়ে গেছে৷ না আমার আর এসব সহ্য হচ্ছেনা৷ সামনে বিয়ে এভাবে থাকলে চলবে নাকি৷ যেভাবেই হোক সবাইকে আবার আগের মতো করতে হবে৷ আদিল ভাইয়া,, আদিল ভাইয়া তো বেশি কষ্ট পেয়েছে৷ কী করছে ভাইয়া এখন৷ আমি চুপিচুপি ভাইয়ার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম৷ দরজা একটু ফাঁক করা তারমনে ঘুমায়নি৷ আমি দরজায় একটু আলতো করে ধাক্কা দিতেই ভাইয়া” কে” বলে এগিয়ে এলেন৷
ভাইয়া আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালেন৷
.
তুই!! তুই এখানে কী করছিস??নাকি তুইও আরও কিছু বলতে এসেছিস৷
.
সেরকম কিছুনা৷ আসলে সবাইকেই দেখতে আসছিলাম ঘুমিয়ে পরেছে কী না৷ তাই৷
.
“আচ্ছা৷”
কথাটা বলে ভাইয়া দরজা বন্ধ করে ফেললেন৷ আমার ভাইয়ার জন্য খারাপ লাগছে৷ এক সাথে এতো অপমান বেচারা সহ্য করবে কী করে৷ না আমাকেই কিছু একটা করতে হবে৷ কিন্তু কী করবো?? ধুর মাথায় কিচ্ছু আসছেনা৷মাথাটাও প্রচন্ড ব্যাথা করছে৷ কিচেনে যাওয়া দরকার তারপর কড়া করে চা বানিয়ে খাবো৷ তাতে যদি একটু মাথা ব্যাথা কমে৷
কিচেনে যেতেই দেখলাম অদ্রিতা আপুও চুলায় চা বসিয়েছে৷ পানি ফুটে গেছে কিন্তু আপু চা পাতা দিচ্ছেনা৷ কেমন যেন এক ধ্যানে রয়েছে৷ আমি এগিয়ে গেলাম আপুর দিকে৷
“আপু আর ইউ ওকে??
.
হুম আ’ম ওকে৷ ওই একটু মাথায় ব্যাথা করছিলো তাই চা বসিয়েছি কিন্তু তুই এখানে এতো রাত্রে??
.
আমারও মাথা ব্যথা করছিলো তাই চা খাবো ভেবেছিলাম৷ তোমার খুব মুড অফ তাই-না আপু৷
.
না তা হবে কেনো৷
.
আমি জানি৷ হয়তো প্রথম বার তুমি আদিল ভাইয়ার গায়ে হাত তুলেছো আর কটু কথাও শুনিয়েছো৷ তারমধ্যে আবার ওরা তিন ভাইয়ের অপমান৷ তোমার খুব খারাপ লাগছে আমি জানি৷ আমি বুঝতে পারিনি বিষয়টা এতো বড় হয়ে যাবে৷ আমি তো তোমাদের শুনাতেও চাইনি৷ কিন্তু ভাইয়া নিজেই বলে দিলো৷ আমাকে ক্ষমা করে দিও আপু৷
আপু চায়ে চিনি দিতে দিতে বললো,,
ধূর পাগলী৷ তুই কোনো অন্যায় করসিনি৷ তুই কেন ক্ষমা চাইছিস৷ আর ধর চা হয়ে গেছে৷ চা টা খেয়ে মাথা ব্যাথা কমলে ঘুমিয়ে পরিস৷ বেশে চাপ নিসনা৷ কাল সকালে উঠে যা করার তা ভাবা যাবে৷ আপতত আজ রাত ঘুমানো প্রয়োজন৷
আমি আর আপু চা টা খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম৷ বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি৷কিন্তু চোখে ঘুম আসছেই না৷
🍁🍁🍁🍁🍁
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে খেয়াল করছি আদিল ভাইয়ার সাথে কেউ কথা বলছেনা৷ ভাইয়াও কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকে৷সবাইকে এড়িয়ে চলে৷ এভাবে চলতে থাকলে তো বড় কিছু হয়ে যাবে৷
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকদিন৷ আপুর বিয়ের আর মাত্র দশদিন বাকি আছে৷ এই কয়েকদিনে আমরা নানান ভাবে চেষ্টা করেছি সব ভাইদের মিল করার কিন্তু কোনো কাজ হয়নি৷ আয়েশা আপু প্ল্যান করলো ট্যুরে যাওয়ার৷ হয়তো ট্যুরে গেলে ওদের মিল হতে পারে৷ যেই ভাবা সেই কাজ৷ আপু বড় চাচ্চু আর বাবাকে জানিয়েছে ব্যাপারটা উনারা রাজি হয়েছেন৷ ডিসাইড করা হয়েছে সিলেট যাওয়ার৷ সেখানে জাফলং, বিছানাকান্দি,ড্রিম ল্যান্ড পার্ক, চায়ের বাগান আরও খুব সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে যা একেবারে নজর কাড়া৷ কখনো দেখা হয়নি তাই সবাই এবার দেখবে৷ সকাল থেকেই সবাই রেডি হওয়া শুরু করে দিয়েছে৷ ঢাকা থেকে সিলেট অনেক দূরে তাই সকাল সকাল যেতে হবে৷ দশটার দিকে আমরা আট ভাইবোন রওনা দিলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে৷
সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বেলা ৩টায় এসে পৌঁছালাম সিলেটে৷ সবাই সবার ব্যাগপত্র টেনে টেনে রিসোর্টের বুক করা রুমে রাখছে৷তিন চারদিন থাকার প্ল্যানিং করেই আসা হয়েছে৷ একদিন বা দুইদিনে তো আর সব দেখা সম্ভব নয়৷আহিল ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড নাকি সিলেটের তাকে দিয়েই রিসোর্ট বুক করিয়েছে৷
🍁🍁🍁🍁
আমরা সবাই লাঞ্চ করে রিসোর্টের চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম৷আদিল ভাইয়া আমাদের থেকে আগে আগে যাচ্ছেন৷ আমরা জৈন্তা হিল রিসোর্টে উঠেছি৷ রিসোর্টটা অনেক উঁচুতে৷ চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়৷ পাহাড়ার মধ্যে সবুজ গাাছগাছালি পাহাড়কে আরও মোহনীয় করে তুলেছে৷প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি মেঘালয় পাহাড়ের জলপ্রপাতও দেখা যায়৷ পাহাড়,ঝর্না,নদী সুনীল আকাশ ছাড়াও জৈন্তা হিল রিসোর্ট থেকে আরো চোখে পড়ে স্বচ্ছ পানির গভীর থেকে শ্রমিকদের পাথর তুলে আনার দৃশ্য৷ আমরা সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম৷ সিলেটের নেচার আসলেই মুগ্ধকর৷
সামান্তা সেলফি তুলতে তুলতে এসে বললো,,
.
“চল দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্দী করে রাখলে মন্দ হয়না”৷ আমি সামান্তার কথায় হ্যাঁ মিলিয়ে সবাইকে ছবি তোলার জন্য বললাম কিন্তু কেউই ছবি তুলছেনা৷ আমি আর সামান্তা নিজেদের ছবি যা পারছি তুলছি৷
🍁🍁🍁🍁
রাতে খাবার খেতে এসে হলো সমস্যা৷ আমরা সবাই ডিনার করতে এসে পরেছি কিন্তু অনেক্ষন হয়ে গেছে আদিল ভাইয়ার কোনো খুঁজ নেই৷ সবাই বেশ চিন্তিত৷ আদনান ভাইয়া তো রেগে বোম৷ আহিল ভাইয়া,আদিব ভাইয়া ফোন করছে ফোন সুইচ অফ বলছে৷
আদনানঃকী মনে করেছে কী ও৷ ওর যা ইচ্ছা তাই করবে৷ একবারও ভেবেছে আমরা কতো চিন্তা করছি ওর জন্য৷ ও বোধহয় আমাদের কথা ভাবেনা কিন্তু আমরা তো ভাবি নাকি৷ এভাবে কাউকে না জানিয়ে হারিয়ে যাওয়ার মানে কী৷
.
আয়েশাঃতাহলে ওকে খোঁজে নিয়ে যা৷ হয়তো রিসোর্টের বাইরে আছে৷
.
আয়েশা আপুর কথা শুনে ওরা সব ভাইরা চলে গেলো আদিল ভাইয়াকে খুঁজতে৷ আহিল আর আদিব চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকছে কিন্তু আদিলের কোনো রেসপন্স নেই৷ ওরা রিসোর্ট থেকে অনেক দূরে চলে গেছে৷ রিসোর্টের আলো আর সেখানে পৌঁছাচ্ছে না৷ ওরা ফোনের টর্চ জ্বালিয়েছে৷ আরও কিছুটা দূর যাওয়ার পর চোখে পরলো আদিলকে৷ সে নদীর পারে একটা পাথরের উপর বসে আছে৷ আর এক ধ্যানে স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে আছে৷ আদনান এগিয়ে এসে আদিলকে দাঁড় করিয়ে কষিয়ে তাপ্পর মেরে দিলো গালে৷
আদনানঃকী মনে করেছিস তুই?? এভাবে একা একা এখানের আসার মানে কী এতো রাত্রে৷ এখানে সাপ ওতো থাকতে পারে৷ যদি কামড়ে দিতো তখন?? তুই বোধহয় আমাদের চিন্তা করিসনা কিন্তু আমরা তো করি৷
.
আদিলঃ কেনো এসেছো তোমরা?? আমাকে একা থাকতে দাও৷ একাকিত্বই এখন আমার একমাত্র সঙ্গি৷ মৃত্যু হলেও আমার কোনো আফসোস নেই৷
.
আদনানঃ আরেকটা চড় বসিয়ে দিবো৷ এসব কী বলছিস তুই হে৷ আমরা তোকে একা ছেড়েছিলাম বলে তুই এখন মৃত্যুকে বরন করে নিচ্ছিস৷ শোন আমরা সব সময় জোড়া ছিলাম আর জোড়াই থাকবো৷আর এরকম পাগলামু করবিনা৷
আদনানের কথা শুনে আদিল ওকে জড়িয়ে ধরলো৷
আদিলঃ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস??
.
আদনানঃহুম৷
🍁🍁🍁
সবার সাথে আদিল ভাইয়াকে ফিরে আসতে দেখে সবাই চিন্তা মুক্ত হলো৷ অদ্রিতা আপু তো কেঁদেই দিয়েছে৷ কোন বোনেরই ভালো লাগবেনা এতো রাতে তার ভাই মিসিং হয়ে গেলে৷
🏜️🏜️🏜️🏜️
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই দেখছি ওরা চার ভাই আবার আগের মতো হয়ে গেছে৷ হেসে হেসে কথা বলছে আনন্দ করছে৷ ছবি তুলছে৷ আমরা এখন উসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে৷ কখনো এই এয়ারপোর্ট দেখেনি৷ এয়ারপোর্টের একদিকে চা পাতার বাগান৷ বেশ উন্নত৷ এয়ারপোর্টের পূর্বের দিকে তাকালে চোখে পড়ে ড্রিম ল্যান্ড পার্কের উচ্চ নাগরদোলা৷
আমরা সবাই এয়ারপোর্ট দেখার পর ড্রিম ল্যান্ড পার্কে আসলাম৷ এই পার্কটা নামের চাইতেও বেশি সুন্দর৷ আদিব ভাইয়া নাগরদোলার টিকিট কেটেছে৷ আমি,আয়েশা আপু,অদ্রিতা আপু,সামান্তা এতো উঁচু নাগরদোলা দেখে ভয়ে শেষ৷ অন্য সবার কথা বলতে পারবোনা কিন্তু আমার ভয়ে গলা কাঠ হয়ে গেছে৷ ভাইয়ারা আশ্বস্ত দিয়েছে তারা আমরা চারজনের সাথে একজন একজন করে বসবে৷ সামান্তা আর আদনান ভাইয়া,আয়েশা আপু আর আদিব ভাইয়া, অদ্রিতা আপু আর আহিল ভাইয়া,আমি আর আদিল ভাইয়া৷
নাগরদোলায় উঠার পর আমি ভাইয়ার চেয়ে ডিস্টেন্স রেখে বসেছি৷ নাগরদোলা ঘুরতেই আমার মনে হলো প্রাণ একেবারে বেড়িয়ে যাবে৷ আমি ভয়ে ভাইয়াকে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম আর তার বুকে মাথা রাখলাম৷ উপরে উঠলে ভয় করেনা কিন্তু যখন নিচে নামে তখন খুব ভয় করে৷ কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম ভাইয়া তার হাত একটা আমারে পিঠে রেখেছে৷ আমি ভাইয়ার বুকে থেকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ ভাইয়া এক দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ আমি সরে আবারও ভাইয়ার হাত জড়িয়ে ধরলাাম৷ এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই৷ সামান্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও কেঁদে কেটে শেষ৷ আদনান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর ভাইয়া মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷ আপু আর অদ্রিতা আপু তেমন ভয় পাচ্ছেনা৷ প্রায় পাঁচ মিনিট ঘুরার পর নাগরদোলা অফ হলো৷ আমি নেমেও টাল সামলাতে পারছিনা৷ মনে হচ্ছে এখনও ঘুরছি৷ অদ্রিতা আপুর হাত ধরে ধরে হাঁটছি৷
অদ্রিতাঃকার কেমন লেগেছে জানিনা বাট আমার কিন্তু সেই লেগেছে৷ আমি আবারও আসবো৷
.
আরুহিঃতুমি আইসো বইন আমি আর জীবনেও আসবোনা৷ যদি আসিও এই নাগরদোলায় উঠবোনা৷ এ কী উঁচুরে বাবা৷ নাগরদোলা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দেখা যায়৷
.
সামান্তাঃশুধু কী তাই!! যখন পাহাড়ের দিকে তাকাই তখন মনে হয় ছিটকে পাহাড়েই পরে যাবো৷
.
আয়েশাঃএখন কোথায় যাবো তাহলে???
.
আদিবঃএখন পার্কের ভিতরে যাবো৷ সেখানে পুল আছে৷ পুলের মধ্যে বোটও আছে৷
.
আদনান ভাইয়া টিকিট কেটে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলো৷ সেখানে অনেক জায়গা নিয়ে পুল৷ আর সেখানে এক বোট আরেক বোটকে ধাক্কা দিচ্ছে৷ আর উপরে উঠছে৷
আরুহিঃসামু এখানে মজা হবে তাইনা???
.
সামান্তাঃহ্যাঁ দেখ কী সুন্দর একটা আরেকটাকে ধাক্কা দিচ্ছে৷ তুই আর আমি একসাথে বসবো৷
.
আরুহিঃআচ্ছা৷
.
অদ্রিতাঃআদি আমরা তো কাপড় আনিনি৷ বোটে উঠলে তো কাপড় ভিজে যাবে৷
.
আয়েশাঃআমি এনেছি, ব্যাগ আদিবের কাছে আছে৷
সবাই ড্রেস চেঞ্জ করে বোটে উঠে পরলাম৷ এখন বসেছি আমি সামু, অদ্রিতা আপু আর আয়েশা আপু,আদনান ভাইয়া আর আদিল ভাইয়া,আদিব ভাইয়া আর আহিল ভাইয়া৷ আমি আর সামু সামনের বোটে উঠেছি৷ যেমনি পিছন থেকে আরেক বোট ধাক্কা দিলো ওমনি আমি আর সামু একে ওপরকে খামচি মেরে ধরেছি৷ ও আল্লাহ্ গো এটাতো দেখছি নাগরদোলা থেকেও আরও ভয়ানক৷ পিছন থেকে আরেক ধাক্কা দিতেই আমি আর সামু একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে পানিতে পড়ে গেলাম৷
ইয়া আল্লাহ পানি এতো গভীর কেনো শুনেছিলাম পুলের পানি গভীর কম হয়৷ কিন্তু এটাতে ভারী ডিপ৷ হয়তো পুলে পানি বেশি পরে গেছে৷ আমি নিজেই সাতার জানিনা তার মধ্যে আবার সামু আমার ঘাড় ধরে আছে৷
সামান্তা আর আরুহিকে পানিতে দেখে আদনান আর আদিল ও পানিতে জাম্প দিলো৷ আদনান সামান্তাকে আরুহির কাছে থেকে সরিয়ে নিজের কাছে নিয়ে গেলো৷ আর আদিল আরুহিকে৷ কোনোমতে দুটোকে কোলে করে পাড়ে নিয়ে গেলো৷
নিজেকে আদিল ভাইয়ার কোলে দেখে আমার দিকে তাকালাম ভালো করে আমি৷ কাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে৷ ভাইয়া আমাকে কোল থেকে নামাতেই আমি তারাতাড়ি ব্যাগ তেকে দুটো ওরনা বেড় করে একটা সামুকে দিয়ে আরেকটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলাম৷ আদিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে৷ আমি তারাতাড়ি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম৷ এমন পরিস্থিতিতে পরবো সিলেটে এসে কখনো ভাবিনি৷
আদনানঃসামু তুই এতো ভারী৷ আগে জানলে কোলে নিতাম না৷
.
সামান্তাঃএই তুমি জীম করো৷ আটচল্লিশ কেজির একটা মেয়েকেই কোলে নিতে পারোনা৷
আমি সামান্তা, রিংকি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি৷ গেটের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম আদিল ভাইয়া বাসায় ঢুকছেন৷ নিশ্চয় পাত্রের চরিত্র কেমন সেটা জানার জন্য বেড়িয়ে গেছিলেন৷
আরুহিঃএই দেখুন আপনার গুনধর ভাই বাসায় প্রবেশ করছেন৷
.
সামান্তাঃসকালে গিয়েছিলো আর এখন বাসায় এসেছে৷ কোথায় গিয়েছিলো ভাইয়া বলতো??
.
আরুহিঃআর কোথায় যাবে,নিশ্চয় পাত্রের সম্বন্ধে জানার জন্য বেরিয়ে গেছিলো৷ একটা কথা বলি,তোর ভাই যে আমাদের পাত্রের পিছনে লেগেছে সে নিজে কেমন হ্যাঁ৷ আদিল ভাইয়ার চেয়ে রিফাতই বেটার৷ ও এটলিস্ট তোর ভাইয়ের মতো মেয়েদের গায়ে হাত তুলেনা৷
.
সামান্তাঃতো যা না রিফাতের কাছে যা, আমরা কেউ তোকে মানা করবোনা৷
.
ছাঁদে আরও বেশ কিছুক্ষন ঝগড়া করে চলে এলাম নিচে৷ আমরা তিনজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছি তখুনি একটা ৩ বছর বা ৪ বছরের হবে পিচ্চি মেয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর ঠোঁট উল্টে বললো,,
“আপুলা আমাদেল মিত্তি কই৷
.
আরুহিঃওলে পিচ্চিলে,,,মিত্তি কিসের মিত্তি৷
.
আমলা যে আসাল তময় নিয়ে এতেতি ওই মিত্তি৷
.
আরুহিঃওরে সামু,ওরে রিংকু তোরা দেখলি ভালো করে কথা বলতে পারেনা আবার মিষ্টির হিসাব ঠিকই করতে পারে৷
.
সামান্তাঃদেখ বইন তুই আবার এর সাথে ঝগড়ায় লেগে পড়িস না৷
.
আরুহিঃমিত্তি খাবি৷ কয়তা মিত্তি খাবি৷ আয় তোলে মিত্তি দেই৷
.
মেয়েটা আমার কথা শুনে ফোকলা দাঁতে হেসে ফেললো,,
.
আল্টি তবাই বলে আমি নাকি তুন্দল কলে কথা বলতে পালিনা এখন দেখি তুমিও কথা বলতে পালনা,,হিহি৷
.
ওই ছেমরি আমি সুন্দর করে কথা বলতে পারি ওকে৷
আমি মেয়েটাকে নিয়ে যেখানে মিষ্টি রাখা সেখানে গেলাম তারপর হাতে দুইটা মিষ্টি ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করলাম৷
🍁🍁🍁🍁
সাড়ে চারটার দিকে পাত্র পক্ষরা বিদায় হলো৷ উনারা উনাদের মতামত রাতে ফোন করে জানাবেন৷আমরা সবাই আপাতত খাবার খেতে বসেছি৷ কারও খাওয়া হয়নি দুপুরে৷ সামান্তা সবার প্লেটের দিকে তাকাচ্ছে একবার তো নিজের প্লেটের দিকে তাকাচ্ছে একবার৷ আমি সামুর অবস্থা বুঝতে পেরে মিটিয়েমিটিয়ে হাসছি৷
সামান্তাঃমা,চাচীমনি৷ আমার সাথে কিন্তু গুরুতর অন্যায় করছো তোমরা৷ সবার পাতে মাংসের বড় বড় পিস অথচ আমার পাতে গলার পিস৷
.
আরুহিঃতো আর কী পেতে চাস তুই৷ সকাল থেকে যে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম তখন কোথায় ছিলে তুমি৷ আর এখন বড় পিস কেনো দিয়েছেন সেটা নিয়েও ঝেড়া করছিস৷
.
সামান্তা নাক ফুলিয়ে এসব দিয়েই খেয়ে যাচ্ছে৷
🍁🍁🍁
সন্ধ্যায় বিছানা ঝাড়ু দিচ্ছি আর সামান্তা ফোন টিপছে৷ ঝাড়ু দিতে দিতেই আমার মনে হলো আহিল ভাইয়া তো আমার জন্যে পেস্ট্রি এনেছিলো৷ ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম৷বিছানা ঝাড়ু দিয়ে ফ্রিজ থেকে পেস্ট্রির প্যাকেট বেড় করে এনে বিছানায় আসাম করে বসে প্যাকেট খুললাম৷ মোট চার ফ্লেভারের পেস্ট্রি আছে, ভ্যানিলা,চকলেট,স্ট্রবেরি,ম্যাংগো৷ আমি সবগুলো বেড় করে মনোযোগ সহকারে খেতে লাগলাম৷ পাশে তাকাতেই দেখলাম সামু ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে৷
আরুহিঃদেখতে পাচ্ছিসনা খাচ্ছি? এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী? আমার পেটে ব্যাথা করবে তো৷
.
সামান্তাঃআমারে না দিয়ে খেলে পেটে ব্যাথা করবেই৷ প্লিজ বইন আমারে ইট্টু দে৷
.
আরুহিঃদিনশেষে আমার কাছেই আসা লাগে৷ এই নে ধর চকলেট ফ্লেভারের৷ শুধু মনে রাখিস আমি কতো দয়ালু৷
.
সামান্তাঃখোঁটা দিচ্ছিস??
.
আরুহিঃমনে করতে পারিস৷
.
সামান্তা ভেঙচি কেটে খাওয়ায় মন দিলো৷ নিচ থেকে কেমন যেন ঠাসঠুস আওয়াজ আসছে কানে৷ আমি সামান্তাকে নিয়ে নিচে গেলাম দেখতে কিসের আওয়াজ করছে৷
গিয়ে দেখলাম,আদনান ভাইয়া, আদিব ভাইয়া, আদিল ভাইয়া, আহিল ভাইয়া তারা চারজন ক্যারম খেলছে৷
আদনান ভাইয়া আমাকে দেখে একটু দাঁত খেলিয়ে বললেন,,
আদনানঃএকটু চা হবে৷ আসলে খেলতাম আর খেতাম আরকি৷
.
আরুহিঃতোমরা সবাই কী আমাকে কাজের বেটি,জরিনা,মর্জিনা ,ছকিনা পাইছো নাকি৷ সকাল থেকে একটার পর একটা ফায় ফরমাশ দিয়েই যাচ্ছো৷
.
আহিলঃসামান্তা তুই বানাতো আজ৷ দেখি কেমন বানাস৷
.
সামান্তাঃআমি পারি না তো৷
.
আরুহিঃতা পারবি কেনো৷ শুধু তো গিলতেই পারিস৷ আর ভাইয়া একে না বললে কী হতো৷ আমিতো একটু ভাব দেখাচ্ছিলাম৷ দুমিনিট পর এমনি এমনি চা বানাতে যেতাম৷ ওকে বলে শুধু শুধু মুখটা নষ্ট করলে তো৷ কথাটা বলে কিচেনে চলে গেলাম আমি৷ আমার পিছন পিছন সামান্তাও আসছে৷ আমি তাকের উপর থেকে কয়েকটা আলু নিলাম৷ পাকোড়া বানাবো বলে৷
সামান্তা আরও দুটো আলু নিলো৷
পাতিলে চায়ের পানি দিতেই সে আরও এক কাপ পানি ঢেলে দিলো৷ আমি শুধু সামান্তার কান্ড দেখছি৷ সে আজকে সব কিছুই বাড়িয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে৷
আরুহিঃআচ্ছা তোর আজ কী হয়েছে বলতো৷ সব কিছু বাড়িয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছিস যে৷
.
সামান্তাঃদিচ্ছি এই কারনেই তুই তো আর আদিল ভাইয়ার ভাগ দিসনি তাই৷
.
আরুহিঃ সব সময় মানুষকে নিজের মতো ভাবিস কেনো?তোকে একবারও বলেছি আমি৷ যে আমি ভাইয়ার ভাগ দেইনি৷ মানছি ভাইয়া আমার সাথে যা করেছে অন্যায় করেছে তাই বলে সবাই খাবে আর ভাইয়া চেয়ে চেয়ে দেখবে নাকি৷ ভাইয়ার ভাগও দিয়েছি৷ এতটাও খারাপ না আমি৷
আমি চা পাকোড়া বানিয়ে ভাইয়াদের দিলাম৷ আদিব ভাইয়া পাকোড়া দেখে হেসে ফেললেন,,,
আদিবঃতোকে শুধু চায়ের কথা বলেছিলাম তুই দেখছি পাকোড়াও এনেছিস৷ খুব ভালো করেছিস৷
.
আরুহিঃশুধু চা খাওয়া যায় নাকি৷ তাই পাকোড়াও এনেছি৷
.
আমি ভাইয়াদের কাছ থেকে চলে গিয়ে অদ্রিতা আপু আর আয়েশা আপুর কাছে গেলাম চা পাকোড়া নিয়ে৷ ওরা দুজন একি রুমে বসে বসে গল্প করছে৷ আমার হাতে চা আর পাকোড়া দেখে দুজনই এগিয়ে এলো৷
অদ্রিতাঃবাহ্ বেশ করেছিস চল আজ চা আর পাকোড়া খাবো আর ছোটবেলার কথা গল্প করবো৷
অদ্রিতা আপু পাকোড়া একটা মুখে দিয়ে বললেন,,,
জানিস রুহি তুই যখন জন্ম নিয়েছিলি তখন কে বেশি এক্সাইটেড ছিলো৷
.
না তো৷ না বললে জানবো কী করে
.
হুম সেটাই৷ আদিল বেশি এক্সাইটেড ছিলো৷ ওই সবার আগে তোকে কোলে নিয়েছিলো৷ তখন ওর বয়স ছয় বা সাত হবে৷ তোকে কোলে নিয়ে সেকি আদর৷ কারও কাছে দিবেনা৷ সব সময় তোর কাছে থাকতো৷ ভিষন আদর করতো তোকে৷
.
আয়েশাঃআর যে আদর করতে পারে সে মারতেও পারে৷
.
অদ্রিতাঃমারায় মারায় ব্যবধান আছে৷ মার দিলে শুধু একটা চড় দিতে পারবে এর বেশি কিছুনা৷
.
কিন্তু আমি যে বেল্ট দিয়ে মেরেছি৷
আদিল ভাইয়ার কথা শুনে সবাই তাকালাম তার দিকে৷ ভাইয়া পকেটে দুই হাত গুজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
অদ্রিতাঃমানে কী আদি তুই রুহিকে মেরেছিস৷ কিন্তু কেনো??
.
আদিল ভাইয়া এ টু জেট সব খুলে বললো অদ্রিতা আপুকে৷ আপু শুনে ঠাসসস করে চড় বসিয়ে দিলো ভাইয়ার গালে৷
অদ্রিতাঃছিঃ আদি ছিঃ৷ তোকে নিজের ভাই বলতেও লজ্জা করছে আমার৷ ও তোকে ভাইয়ের অধিকার দিয়েছে কিন্তু বেল্ট দিয়ে মারার অধিকারটা দেয়নি৷ কী করে পারলি তুই ওর সাথে এরকম মিসবিহেভ করতে আর নির্মম ভাবে মারতে৷ তুইতো দেখছি পশুর চাইতেও কম নস৷ জানি তোর রাগ বেশি তাই বলে রাগ কন্ট্রোল করবিনা৷বুঝিয়ে বলতে পারতিস আর না বুঝলে চড় দিতে পারতি তা না করে তুই সোজা ওকে বেল্ট দিয়ে মেরেছিস৷ আর রুহি তোরও দোষ আছে৷ তোরও উচিৎ ছিলো আদিকেও কয়েক ঘা বসিয়ে দেওয়া৷ তখন আদিও বুঝতো বেল্টের একেক টা বারি কতটা মজার৷
আদিল ভাইয়া গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর অদ্রিতা আপু কথা শুনিয়েই যাচ্ছে৷
আয়েশাঃহয়েছে যা হবার তা হয়ে গেছে৷ আমার মনে হয়না আদি আর দ্বিতীয় বার এমন কিছু করবে৷
.
অদ্রিতাঃকেনো ও এমন করবে৷ ছোট নাকি ও৷ যে সব সময় যা মন চাইবে তাই করবে৷ এখন ও সময় আছে আদি নিজের রাগ বর্জন কর৷ রাগকে প্রাধান্য দিসনা৷ তুই বুঝতে পারছিস বিষয়টা বাসায় জানাজানি হলে ব্যাপারটা কী হবে৷ আদনান, আদিব এক মুহুর্তের জন্য ভুলে যাবে যে তুই ওদের ভাই হস৷
বাড়িতে তোরজোড় চলছে৷ আজ নাকি বাড়ির সবচেয়ে বড় মেয়ে অদ্রিতা আপুকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে৷ যেহেতু আমার বিয়েটা হয়নি তাই বড় আব্বু অদ্রিতা আপুর বিয়ের ব্যবস্থা করছেন৷ আমাদের তো আবার বোনের অভাব নেই একটা একটা করে আস্তে আস্তে সবকটাকে বিদায় করতে হবে৷ আমি শুধু বসে বসে সামান্তাকে দেখছি৷ বেচারি সকাল থেকে সাজা শুরু করেছিলো এখনও সাজতেছে৷ আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ভেংচি কেটে বললো,,,
“কী রে এভাবে কী দেখছিস??
.
“তোকে দেখছি৷তোকে খুব বান্দর লাগছে ইয়ার আমিতো প্রেমে পড়ে গেছি৷ না জানি আজ পাত্র পক্ষ তোকে দেখে ভয়ে না পালিয়ে যায়৷
.
“তুই তো আমার প্রশংসা জীবনেও করিস না৷ কী বলতে চাস সেটা বল৷ আমি জানি তুই কিছু বলতে চাস৷
.
“রিংকিকে তো আসার জন্য বললি না সেদিকে খেয়াল আছে৷
.
ওহ্ তাইতো৷ প্লিজ ওকে একটু ফোন করে বলে দে যাতে ও তারাতাড়ি চলে আসে৷ আমার একটুও মনে ছিলোনা৷
.
“মনে থাকবে কী করে৷ আমি পারবোনা ফোন দিতে৷ পারলে নিজে দে আর না দিলে নাই৷ আমি যে স্মরণ করে দিয়েছি সেটাই অনেক৷
.
“তুই সব সময় আমার সাথে এমন করিস৷ ঠিক আছে আমিই ফোন দিচ্ছি৷ তা তুই সাজবি না??
.
বিয়ে তো আর আজই না৷ আমার ড্রেস পড়ে আরেকটু লিপস্টিক লাগালেই সাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে৷ তোর মতো এত সাজ না সাজলেও চলবে৷আমরা তো আর নিজেকে হিন্দি নায়িকা মনে করিনা৷
.
তুই সবসময় আমাকে টিজ করিস৷ না করলে তোর পেটের ভাত হজম হয়না৷
.
না হয়না৷
কথাটা বলে সামান্তার রুম থেকে চলে আসলাম৷ সকাল থেকে চাচীমনি আর আম্মুকে হেল্প করে যাচ্ছি৷ আর উনি সকাল ৯টায় উঠেছেন তারউপর আবার কাউকে হেল্প না করে সাজায় বসে পড়েছে৷ আমার কী ট্যাকা পড়ছে নাকি৷ এখন আবার যেতে হবে গিয়ে ছাঁদ ঝাড়ু দিতে হবে৷ এতো বড় ছাঁদ আমার পক্ষে একা ঝাড়ু দেওয়া সম্ভব নয়৷ রিংকি আসুক তাকে নিয়েই না হয় ছাঁদ ঝাড়ু দিবো৷ বাকি সবাই তো কাজে ব্যাস্ত৷ আর সামুতো সেজে সেজে মডেল হচ্ছে৷ আরে ইয়ার কাজ সেরে তারপর রেডি হস তখন দেখিস আমি তোকে টিজ করি কী না৷
ছাঁদে অনেক্ষন বসে রইলাম একা একা৷ একটা ব্রেঞ্চে বসে রেলিঙয়ে মুখ দিয়ে রেখেছি৷ গেটের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম রিংকি ওর চুল ঠিক করতে করতে আসছে৷ আমি ওকে দেখে মুখ তুলতেই থুতনিতে ব্যাথা অনুভব করলাম৷ এতোক্ষন রেলিঙে মুখ দিয়ে রাখার ফলে থুতনিতে ব্যাথা করছে৷ আমি থুতনি ডলতে ডলতে নিচে গেলাম৷ গিয়ে দেখলাম ও সোফায় বসে আছে৷ কিচেনে গিয়ে ওর জন্য এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস বানিয়ে ওর সামনে ধরলাম৷ রিংকি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“আজ অরেঞ্জ জুস দিচ্ছিস যে!!
.
আগে খা তারপর বলবো৷
.
আচ্ছা
.
রিংকি জুস খাওয়ার পর ওকে নিয়ে ছাঁদে গেলাম৷ তারপর হাতে একটা শলার ঝাড়ু ধরিয়ে দিলাম৷
“একি রে এটা তো ঝাড়ু এটা দিয়ে কী হবে৷ কী করবো আমি৷
.
বোন এটা দিয়ে আমাকে মার৷ মেরে তারপর তোর ব্যাগে পুরে নিয় যাস৷
.
তোকে মারবো তো বুঝলাম৷ কিন্তু আবার ব্যাগে করে নিয়ে যাবো কেনো৷
.
এটা দিয়ে ছাঁদ ঝাড়ু দিবো ছাগলনি৷ এই জিনিসটা বুঝতে তোর এতো সময় লাগে৷ নে এবার কাজে লেগে পর পাত্র পক্ষ এই এলো বলে৷
.
রিংকি ছাঁদ ঝাড়ু দিতে দিতে বললো,,
“পাত্র পক্ষ কী আজ রাত্রে ঘুমায়নি নাকি৷ যে সকাল এগারোটায় চলে আসবে৷ সব নাহয় বুঝলাম কিন্তু সামু কোথায় ওকে তো দেখতে পাচ্ছিনা৷
.
আমিও ঝাড়ু দিতে দিতে বললাম,,ওতো রুমে, সেজে সেজে মডেল হচ্ছে৷ সামু থাকলে কী আমি আর তোকে কাজে লাগাই নাকি৷কিছু মনে করিসনা হে,বিপদে পড়েই কাজে লাগিয়েছি৷
.
ধুর তোরা তো আমার বোনের মতোই৷ আর এই বাড়িকে আমি আমার নিজের বাড়িই মনে করি৷
.
ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ছাঁদের এক কোনায় রাখতেই আহিল ভাইয়ার আগমন৷ ভাইয়াকে দেখে রিংকি তারাতাড়ি নিজের ওরনা জরিনার মতো যে দিয়েছিলো সেটা তারাতাড়ি এখন আধুনিকার মতো দিলো৷ আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে আহিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“আরে তুমি এখানে৷
.
তোকে খুঁজতেই এসেছিলাম৷
.
কী দরকার৷
.
আসলে আমার কয়েকটা ময়লা টি-শার্ট আর প্যান্ট ছিলো ওগুলো যদি একটু ধোয়ে দিতি৷
.
আজ সবাই আমাকে কী পেয়েছে হ্যা৷ প্রথমে মা আমাকে দিয়ে পেয়াজ কাটালো৷ চোখ থেকে আনলিমিটেড পানি ঝরছিলো তখন৷ তখন যদি কোনো সাংবাদিক আমাকে দেখতোনা একটা নিউজ বানিয়ে ফেলতো সাথে সাথে৷ যেমন,,এই দেখুন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভাগী নারী৷ যিনি কষ্টে কেঁদে কেটে গঙ্গা যমুনা বহিয়ে ফেলছেন৷মানে তখন সাংবাদিকেরও আমার জন্য কষ্ট হতো৷ কিন্তু আমার মায়ের হয়নি৷ আমার মা আমাকে মোট পাঁচ থেকে ছয় কেজি পেয়াজ কাটিয়েছে৷ এখনও আমার চোখ জ্বলতেছে৷ তার উপর আবার চাচীমনি আমাকে সবজি কাটায় বসিয়ে দিয়েছেন৷ আজ বসতে বসতে আমার কোমড় গেছে৷
.
কেনো আয়েশা কোথায়??
.
আয়শু আপু সারা বাড়ি পরিষ্কার করছে৷
.
আর সামান্তা সে কোথায়??৷
.
সে তো মডেল হচ্ছে৷
.
আাচ্ছা আমার এগুলো ধোয়ে দিস বাজার থেকে আসার সময় পেস্ট্রি আনবো৷
.
তাহলে ঠিক আছে৷
.
“আহিলেরটা ধোয়ে দেওয়ার সময় আমারও কতগুলো শার্ট আছে ওগুলো ধোয়ে দিস৷”
আদিব ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি আমি৷ এরা কী পেয়েছে কী আমাকে৷
“আমি পারবোনা তোমরা গিয়ে সামান্তাকে বলো৷ আমি সব কাজ একা একা করবো নাকি৷
.
আদিবঃ সে তো সাজছে তাই তোকে বলেছি৷ প্লিজ বোন আমার রাগ করিস না৷ একটু কষ্ট কর৷ বাজারে যেতে হবে তা নাহলে নিজেই ধোতাম৷
.
ঠিকাছে৷ধোয়ে দিবো তার আগে তোমরা ওই যে কোনায় ময়লা রাখা আছে ওগুলো ফেলে আসো৷
.
আহিলঃ কী আমাদের মতো হ্যান্ডসাম ছেলেরা এসব করবো৷
.
তোমরা নিজেকে হ্যান্ডসাম,ডেশিং,স্মার্ট ভাবতেই পারো কিন্তু আমার কাছে তোমরা মোটেই এসব না তাই টাইম ওয়েস্ট না করে তারাতাড়ি ময়লা ফেলে দাও৷
.
আদিবঃ চল আহিল ময়লা গুলো ফেলে দেই৷
আমি আর রিংকি ছাঁদ থেকে এসে সোজা আহিল ভাইয়ার রুমে ঢুকলাম খাটের মধ্যেই সব কাপড় রাখা৷ ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই দেখলাম ১২ঃ১০ বাজে৷ হায় আল্লাহ্ ওরাতো চলে আসবে৷ রিংকি তুই গিয়ে রেডি হয়ে নে৷ আমি কাপড় কেচে তারপর রেডি হবো৷
.
“তুই এতো কাপড় নিজে কাচবি৷ চল আমিও হেল্প করি৷
.
যথেষ্ট হেল্প করেছিস এবার গিয়ে রেডি হো যা৷ যদি তোর মতো সামুও আমার একটু দরদ বুঝতো৷
.
রিংকি চলে গেলো৷ আমি আদিব ভাইয়ার কাপড় এনে দুজনের কাপরই কাচতে লাগলাম৷ অনেক গুলো কাপড়৷ বেশ কিছুক্ষন পর কেমন অচেনা অচেনা কন্ঠ শুনছি৷ তারমানে ওরা চলে এসেছে৷ আমি তারাতাড়ি করে কাপড় গুলো ধুতে থাকলাম৷ কাপড় ধোয়ে বালতি হাতে ড্রয়িং রুমে তাকাতেই দেখলাম ছোট বড় কতো সদস্য বসে আছে৷ আমি আর না দাঁড়িয়ে সিড়িতে পা রাখতেই পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো,,
“আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা কিন্তু খুব সুন্দর৷ এতো সুন্দর কাজের মেয়ে পান কই থেকে৷
.
ছিঃ ছিঃ কী লজ্জা কী লজ্জা৷ শেষে কী না কাজের মেয়ে হতে হলো৷
আমি আর দেড়ি না করে তারাতাড়ি ছাঁদে গেলাম৷ কাপড় রোদে দিয়ে নিজের রুমে গেলাম তারপর একটা ড্রেস বের করে সেটা পড়ে একটু সাজুগুজু করলাম৷ একেবারে রেডি হয়েই নিচে গেলাম৷ সামু আমাকে দেখে ফিসফিসিয়ে বললো,,
সামান্তাঃতুই এতো ফাস্ট!!
.
আরুহিঃতোমার শান্তি হয়েছে তো৷ নিজে তো মেহমানের সামনে মডেল,নায়িকার পরিচয় পেলে আর আমি কাজের মেয়ের৷
.
সামান্তাঃসোয়াগ সে কারিঙ্গে সাবকা সোয়াগাত৷
.
আরুহিঃতুই গান গাইছিস৷
.
সামান্তাঃএকচুয়েলি নট৷ আমি মেহমানদের বরন করার কথা বলছি৷
আরুহিঃওদেরকে বরন করা হয়ে গেছে অলরেডি৷
সামান্তা আর আমার ফিসফিসানি দেখে আম্মু আমাদের ড্রয়িং রুম থেকে বিদায় করে দিয়েছেন৷
আমি, রিংকি, সামান্তা আমার রুমের খাটে বসে আছি৷ বেশ কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এলো৷ আমরা কেউ ওই তাকে চিনতে পারছিনা৷ তার দিকে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি৷তারপরও নিজেকে ঠিক করে সৌজন্যতার খাতিরে বললাম,,
“আরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন?
.
ছেলেটা ধপ করে সোফায় বসে পরলো তারপর বললো,
আপনারা আমাকে চিনতে পারছেননা আমি বুঝতে পারছি৷ আসলে আমি পাত্রের ভাই আকাশ৷ আপনাদের পরিচয়টা কী জানতে পারি৷
.
“হ্যা নিশ্চয়, আমি আরুহি,ও আমার কাজিন সামান্তা আর ও আমার বেস্টফ্রেন্ড রিংকি এন্ড আমরা তিনজন একসাথেই লেখাপড়া করি৷এটাই আমাদের পরিচয়৷
.
তা একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
.
হ্যাঁ নিশ্চয়৷
.
আপনাদের বয়ফ্রেন্ড নেই৷
.
আছে তো আমাদের তিনজনেরই বিএফ আছে৷
.
ছেলেটা কিছু না বলে মোবাইল ঘাটতে শুরু করলো৷ আরও কিছুক্ষন বসে তারপর চলে গেলো৷
সামান্তাঃতুই মিথ্যা বললি কেনো?ইশ ছেলেটা কতো কিউট ছিলো৷
.
আরুহিঃতুই চুপ কর ছেলে দেখলেই শুরু হয়ে যায় তোর৷ বল আমি ছেলেটিকে আবার ডেকে আনছি৷
.
রিংকিঃএই আদিল ভাইয়াকে তো দেখছিনা৷
.
সামান্তাঃহ্যাঁ আমি ও দেখতে পারছিনা৷ ভাইয়া কোথায় গেছে বলতো৷
.
আরুহিঃজাহান্নামে যাক তোর ভাই৷
.
সামান্তাঃরুহি!!!তুই ভাইয়াকে জাহান্নামে পাঠাচ্ছিস৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ পাঠাচ্ছি৷ তোর ভাই আমাকে নির্যাতন করেছে তারপর তার জায়গা তো জাহান্নামেই হবে৷ যদি আমি ক্ষমা না করি৷ আর আমি জানিও না তোর ভাইকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো কী না৷
ভার্সিটিতে গিয়ে দেখলাম আদিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া মেয়েদের সঙ্গে বসে হেসে হেসে কথা বলছে৷
আজবতে কাল আমি পাত্র পক্ষের সামনে গিয়েছিলাম বলে আমাকে কীরকম মেরেছিলো৷ আর যে নিজে মেয়েদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে এসব কিছুই না৷ যদি আদিল ভাইয়া আমার ছোট হতো তাহলে এখন আমি গিয়েও কয়েক ঘা বসিয়ে দিতাম৷
আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিংকি আর সামান্তা দুজনেই ভ্রু কুচকালো৷
“কী রে এরকম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী দেখছিস৷ ক্লাসে চল৷ (রিংকি)
.
হুম চল৷
.
ক্লাসে অনেক্ষন যাবত বসে আছি আর আড় চোখে রিংকি আর সামান্তাকে দেখছি৷ ওরা আমার দিকে ভ্রু কুচকানোর পাশাপাশি কপাল কুচকেও তাকিয়ে আছে৷ তাকানোর কারন হলো আমি ওদের সাথে কথা বলছিনা৷ ওরা বকবক করছেই কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছিনা৷ খাতার মধ্যে ইচ্ছে মতো আঁকিবুঁকি করছি৷ সামান্তা আর না পেরে আমার কাছ থেকে খাতাটা কেড়ে নিলো,,,
“অনেক হয়েছে রুহি৷ আমাদের সাথে এমন করছিস কেনো তুই৷ কী হয়েছে তোর৷ আচ্ছা রুহি একটা কথা বলতো কাল বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তো সবকিছু ঠিকই ছিলো কিন্তু আজ সকাল থেকেই তোকে একদম ঠিক লাগছেনা৷ আমি জানি তুই রিফাতের ব্যাপার নিয়ে একদমি আপসেট নস৷ তাহলে কী নিয়ে আপসেট তুই (সামান্তা)
.
“হ্যাঁ আমিও লক্ষ করছি৷কী হয়েছে বলতো৷ তুই তো এমন চুপচাপ থাকিস না৷ (রিংকি)
.
কাম অন ইয়ার আমার কিছু হয়নি৷ জাস্ট ভালো লাগছিলোনাা তাই একটু আকিঁবুকিঁ করছিলাম৷ কিন্তু তোরা তো শান্তিতে এটাও করতে দিলিনা৷
.
কথা ঘুরাস না রুহি তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি কিছুটা একটা হয়েছে তোর৷ প্লিজ বল৷(সামান্তা)
.
বলবো তাহলে শুন!!! তোর ভাই কাল রাতে আমায় বেল্ট দিয়ে পিটিয়েছে৷ বোনকে কেউ এভাবেও মারতে পারে সেটা আমার দৃষ্টির অগোচরে ছিলো কিন্তু কাল প্রাকাশ্যে চলে এসেছে৷ দোষ কী ছিলো আমার জানিস শুধু তোর ভাইয়ের কথা অমান্য করে রিফাতের সামনে গিয়েছিলাম বলে৷ মানছি আমি রিফাতের ক্যারেক্টার ভালোনা৷ আমি তো আর আগে জানতাম না৷ বাবার কথা অমান্য করতে পারছিলাম না তাই আমি রিফাতের সামনে গিয়েছিলাম৷ ছোট বোন হিসেবে একটা চড় ওতো মারতে পারতো, তা না করে আমায় বেল্ট দিয়ে মেরেছে৷ বেশি হলেও দশটা বারি তো দিয়েছেই এখনও আমার পিঠ ব্যাথা করছে৷ জানিস আবার হিরোদের মতো ব্যালকনি দিয়ে এসে মলমও লাগিয়ে দিয়েছে৷ কী পেয়েছে আমাকে তোর ভাই আমি ওতো একটা মানুষ নাকি৷ এরকম অমানুষিক অত্যাচার কেউ করে নাকি৷ সি ইয়ার তোর ভাই বোনকে যেভাবে মেরেছে না জানি তার বিয়ে হলে নিজের বউকে কীভাবে পেটায়৷ তবে এরকম যদি হয় তাহলে তোর ভাইকে নিষেধ করবি এমন যাতে না করে খুব ব্যাথা করে রে বেল্ট দিয়ে মারলে৷বুঝতে পারছিস আদনান ভাইয়া আর আদিব ভাইয়া যদি শুনে তাহলে এক মুহুর্তের জন্য ভুলে যাবে যে ওরা একে অপরের ভাই হয়৷ তোর ভাই নব্বই দশকেই পড়ে আছে৷ দেখতিনা তখন বেত বেল্ট দিয়ে যে মারতো৷ তোর ভাইও সেম৷ কি হতো এভাবে না মারলে৷ আমি মানছি আদিল ভাইয়ার রাগ বেশি তাই বলে রাগ কন্ট্রোল করবেনা৷ দেখ সামু এটা আকস্মিক হয়েছিলো তাই আমি তোর ভাইকে আমাকে মারা থেকে আটকাতে পারিনি৷ কিন্তু এরপরও যদি এমন করে তাহলে আমিও তার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো৷ আমি ভুলে যাবো যে সে আমার বড় ভাই হয়৷ নারী নির্যাতন আমি এমনিতেই সহ্য করিনা আর সেটা কিনা নিজের সাথেই ঘটলো৷
এক নাগারে কথাগুলো বলে থামলাম আমি৷ মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা কথাগুলো বলে দিলাম৷
.
এসব কী বলছিস রুহি!!!ভাইয়া তোকে এভাবে মেরেছে চিৎকার তো নিশ্চয় করেছিলি তাহলে আমরা কেউ তোর চিৎকার শুনিনি কেনো৷
.
প্রথমে এটা নিয়ে আমিও চিন্তিত ছিলাম আফটার মনে হলো আমাদের রুম তে স্পেশাল সাউন্ড প্রুফ করা যার জন্য আমার চিৎকার কারো কানে পৌঁছায়নি৷
.
ছিঃ!!!আদিল ভাইয়া এতোটা চিপ৷ আমার ভাবতেই কেমন লাগছে৷ এই জন্যেই আমার আহিল ভাইয়াকে ভালো লাগে৷ ভাইয়ার মেজাজ একেবারে ঠান্ডা৷ যা করবে একশোবার ভেবেচিন্তে করবে৷ রাগকে কোন সময়ই প্রাধান্য দেয়না৷ আদিল ভাইয়া একেবারে আহিল ভাইয়ার বিপরীত৷ ওরা সিবলিংস বাট কেউ দেখলে বুঝবেই না৷
.
এক্সেক্টলি,,তাইতো আমার আহিল ভাইয়া কে এতো ভালো লাগে৷ হি লাইক এ ইনোসেন্ট বয়!!
.
রিংকির কথা শুনে আমি আর সামু দুজনই ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছি ও যখন আহিল ভাইয়ার কথা বলছিলো তখন মনে হয়েছিলো যেন অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছে৷ আমাদের দুজনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,,,
“আব আমি এভাবে বলতে চাইনি৷ আসলে আহিল ভাইয়া ভালো এটাই বলেছি৷ নাথিং এল্স৷
.
হুম আমরা কী তোকে কিছু বলেছি নাকি৷(আরুহি)
রিংকি একটা ভেংচি কেটে বই মেলে বসে রইলো এমন ভাবে বই পড়ছে মনে হচ্ছে এক মিনিটেই সে বিদ্যাসাগর হয়ে যাবে৷ আমার মনে হয় ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও এরকম মনোযোগ দিয়ে বই পড়েননি৷৷ সামান্তা ও বাইরে গেছে৷ বেশ কিছুক্ষন পর সামান্তা এলো ওর চোখ ছলছল করছে৷
“কী রে সামু তোর আবার কী হয়েছে৷(আরুহি)
.
রুহি আদনান ভাইয়া একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছে৷ আমি দেখেছি৷(সামান্তা)
.
হ্যাঁ এটতো গুড নিউস৷ আমরা ভাইয়ার কাছ থেকে এর জন্যে ট্রিটও চেয়ে নিবো৷ কিন্তু তোর কী হলো???
.
না কিছুনা৷
.
আরে বুঝতে পারছিস না রুহি, তোর ভাই যে মেয়েটাকে প্রপোজ করেছে সেটা সামু মেনে নিতে পারছেনা৷ ওর মনে অলরেডি আদনান ভাইয়ার জন্য লাড্ডু ফুটছে৷(রিংকি)
.
“কী যা তা বলছিস এসব একদমি না৷
.
হ্যাঁ সেটাতো দেখতেই পারছি৷
.
ওকে ওকে এখন ঠিক হয়ে বসেন ঘন্টা পড়ে গেছে স্যার চলে আসবেন৷ (আরুহি)
🍁🍁🍁🍁🍁
বাড়িতে এসে শাওয়ার সেরেই আমি আদনান ভাইয়ার রুমে গেলাম৷ ভাইয়া তখন শার্টের বোতাম লাগাচ্ছেন৷ আমাকে দেখে বললেন,,,
.
কী রে কিছু আনতে হবে নাকি??
.
উহু,,একটা কথা জানতে এসেছি৷
.
কী কথা??
.
তুমি নাকি ভার্সিটির একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছো? তা কে সে??
.
ওটা প্রপোজ ছিলো নাকি৷
.
তাহলে কী ছিলো??
.
আমার এক ফ্রেন্ড একটা মেয়েকে প্রপোজ করবে এখন কীভাবে প্রপোজ করবে সেটা বুঝতে পারছেনা৷ তাই তাকে একটু অভিনয় করে দেখালাম৷
.
তা মেয়েটা যদি সত্যি মনে করে যে তুমি তাকে প্রপোজ করেছো৷ সত্যি ভালোবাসো৷
.
না এমন মনে করবেনা৷ কারন ওর বয়ফ্রেন্ড আছে৷ আর জানে আমরা যে অভিনয় করেছি৷
.
আরেহ বাহ,,তুমিতো খুব শেয়ানা হয়ে গেছো৷ কিভাবে প্রপোজ করতে হয় সেটাও জানো দেখি৷
.
ওই একটুই৷ আচ্ছা আমি বেড়োচ্ছি আসার সময় তোর জন্য চকলেট আনবো৷
🍁🍁🍁🍁
আমি ভাইয়ার রুম থেকে এসে সামান্তার রুমে গেলাম৷ বেচারি ভার্সিটি থেকে এসে শাওয়ার সেরে আর বাইরেই যায়নি৷ খাটে উপুর হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে রেখেছে৷
“আদনান ভাইয়া মেয়েটিকে প্রপোজ করেনি৷”
.
আমার কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো সামান্তা৷ মুখে বালিশের চাপ পরে মুখ লাল হয়ে গেছে৷
“মানে৷ তাহলে আমি তখন যা দেখলাম সব কী ভ্রম ছিলে নাকি৷
.
না ভ্রম ছিলোনা৷ তুই যা দেখেছিস ওইটা অরিজিনাল প্রপোজ ছিলোনা৷ ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড প্রপোজ করতে চিনেনা তাই ভাইয়া শিখিয়ে দিয়েছিলো৷ এ ছাড়া আর কিছুইনা৷
.
ওহ৷
.
কেনো তুই খুশি হসনি,ভাইয়া যে মেয়েটাকে অরিজিনাল প্রপোজ করেনি৷
.
খুশি হওয়া না হওয়ার কী আছে আজব৷
.
হুম সেটাই৷
সামান্তার রুম থেকে চলে আসার পর দেখা হলো আদিল ভাইয়ার সাথে, কানে ইয়ারফোন গুজে ছাঁদের দিকে যাচ্ছে৷ আদিল ভাইয়াকে এখন এক মুহুর্তের জন্যও সহ্য হয়না আমার৷
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনুভব করলাম পিঠে ব্যাথা খুব কম করছে৷ মলমটা তাহলে কাজ করেছে৷ কিন্তু একটা কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে আমি চিৎকার করলাম বাট কেউ শুনলো না কেনো৷ কিছুক্ষণ ভাবার পর হঠাৎই মাথায় এলো আমাদের বাসায় সবার রুম সাউন্ড প্রুফ৷ যার কারনে আমার চিৎকার কারও কানে যায়নি৷ আর আদিল ভাইয়াও এই সুযোগটাই নিয়েছে৷ ডাকাত এসে যদি মেরে ফেলে তখন চিৎকার করলেও তো কেউ শুনবেনা৷ না বাবা রিস্ক নেওয়া যাবেনা৷ আজ তো শুধু ভাইয়া মেরেছে অন্যদিন যদি অন্য কিছু করে, সাবধানের মার নেই৷ আমি আজই বাবাকে বলবো যাতে রুম আর সাউন্ড প্রুফ না রাখে৷ আর একা একা ঘুমাবো না সামান্তা,আয়েশা আপু বা অদ্রিতা আপুকে সাথে নিয়ে ঘুমাবো৷ আপাতত এখন ব্রেকফাস্ট করতে হবে৷ তারপর আদিল ভাইয়ার সাথে বুঝাপড়া করতে হবে৷ কী পেয়েছিলো আমাকে যে এভাবে গরুর মতো মারবে৷ আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম৷ সবাই তখন ব্রেকফাস্ট করায় ব্যস্ত৷ বাবা আমাকে ডেকে কাছে নিলেন৷ আমি বাবার পাশে গিয়ে ফাঁকা চেয়ারটায় বসে পরলাম৷ বাবা আমাকে কিছুক্ষণ দেখে বললেন,,
“আরুহি তোমার চোখ মুখের এই অবস্হা কেনো?? তুমি কী রাতে রিফাতের ব্যপার নিয়ে কান্না করছিলে?? দেখো মা যা হবার তা হয়ে গেছে৷ তোমার জন্য আমি ওর চাইতেও বেটার কেউ আনবো৷
.
না বাবা তেমন কিছু না৷ আমি তো এখন বিয়ে করতে চাইনি তাই কষ্টের চাইতে বেশি খুশিই হয়েছি৷ বাবা আমি একটা কথা বলতে চাই তোমাকে৷ আসলে আমার মনে হয় আমাদের রুম সাউন্ড প্রুফ না রাখাই বেটার৷ আমাদের যে বিশাল ব্যালকনি কেউ এসে যদি খুনও করে ফেলে তখন চিৎকার করলে ওতো তোমরা কেউ শুনবেনা৷ আর কি দরকার এরকম রুমকে সাউন্ড প্রুফ করে রাখার৷ আমি জাস্ট আমার সমস্যাটা বললাম এখন বাকিটা তোমাদের হাতে৷
.
এতদিন তো তোমার সমস্যা হয়নি তাহলে আজ তোমার সমস্যা হচ্ছে যে৷
.
এতদিন আমি বিষয়টা নিয়ে ভাবিনি তাই৷ আর আগে ভাবলে হয়তো আরও ভালো হতো৷ কথাটা বলে আদিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া খাবারের চামচ প্লেটে রেখে আমার দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে৷ আমি একটু মেকি হাসি দিয়ে বললাম,,,
“আদিল ভাইয়া ইদানিং এখন আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকো কেনো বলতো৷ আমি ব্যাপারটা কিছুদিন ধরেই খেয়াল করেছি৷ মানে এখন কী আমাকে তোমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয় নাকি৷
.
তুই একটু বেশিই কথা বলিস রুহি৷ কখন আমি তোর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়েছি৷ এখন তোর যদি এটা মনে হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই৷
.
এই তোরা খাবি কখন? ঝগড়া পরেও করা যাবে এখন খেয়ে নিন ম্যাম এন্ড স্যার৷ (আদনান)
.
আমি আর কিছু না বলে শুধু একটা ব্রেড নিয়ে চিবোতে থাকলাম৷ বাবা আমার খাওয়া দেখে বললেন,,
“একি আরুহি তোমার মা আর চাচীমনি মিলে এতো রান্না করেছে আর তুমি শুধু ব্রেড খাচ্ছো যে৷???
.
এমনি এগুলা পরে খাবো৷
আমি শুধু ব্রেড খাচ্ছি কারণ আদিল ভাইয়ার খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে৷ ভাইয়ার সাথে কাল রাতের বিষয় নিয়ে কথা বলা দরকার৷ এখন যদি আমি অন্য খাবারে মন দেই তাহলে ভাইয়া এতক্ষণে ভার্সিটিতে চলে যাবে৷
আদিল ভাইয়ার খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমি টেবিল ছেড়ে উঠে পরলাম৷ তারপর ভাইয়ার রুমে ভাইয়ার আসার আগেই চলে আসলাম৷ ভাইয়া আমাকে উনার রুমে দেখে ব্রু কুচকালেন তারপর বললেন,,,
“তুই আমার রুমে কী করিস??
.
সিরিয়াসলি তুমি বুঝতে পারছোনা আমি কেনো এসেছি? কাল তুমি আমার সাথে এরকম বিহেভ কেনো করেছিলে৷ কোন সাহসে আমার গায়ে হাত তুলেছিলে৷ তুমি জানোনা আমার দুই ভাই আদনান আর আদিব তারা আমার গায়ে কোনদিন ফুলের টোকাও দেয়নি আর তুমি কী না আমাকে বেল্ট দিয়ে মেরেছো৷ আমি এতোদিন তোমাকে আদনান আর আদিব ভাইয়ার মতোই নিজের ভাই ভেবে এসেছি আর তুমি নাকি তার এমন প্রতিদান দিলে বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে৷ আমি তোমাকে ভাই ভেবে আসলেও তুমি আমায় কোনদিন তোমার বোন সামান্তা আর অদ্রিতার আপুর মতো ভেবে আসোনি৷ পারতে নিজের বোনদের এভাবে পেটাতে৷ ওদেরকে পিটানোর সময় না তোমার হাত কাঁপতো কিন্তু আমাকে মারার সময় তোমার হাত একটুও কাঁপেনি৷ কী দোষ ছিলো আমার শুধু তোমার কথা অমান্য করে পাত্র পক্ষের সামনে গিয়েছিলাম বলে৷ ওরাতো বিয়ে ভেঙে দিয়েছে তারপরও কেনো তুমি আমায় মেরেছিলে বলো৷আমি জানি আমি কোন ভুল করিনি তারপরও যদিও কোন ভুল করেই থাকি তাহলে একটা চড় মারতে তা না করে তুমি সোজা আমায় ছিঃ,,৷ তোমার উপরে নারী নির্যাতনের কেস চুকবো আমি৷
.
আদিল ভাইয়া আমার দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন,,
আমি জানিনা রুহি আমার কেনো তখন রাগ উঠে গিয়েছিলো৷ রিফাত তোর দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো যেটা দেখে আমার একদম সহ্য হয়নি৷ আর তোকে না করেছিলাম কারণ আমি খুঁজ নিয়ে দেখেছিলাম রিফাতের ক্যারেক্টার একদম ভালো নয়৷ আমার এক বন্ধু থাকে আমেরিকায় সে রিফাতকে খুব ভালো করেই চিনে৷ আর তার কাছ থেকেই শুনেছিলাম সব৷ আর তোকে মানা করেছিলাম যাতে ওর সামনে না যাস যদি ও তোকে বিয়ে করে নিতো তাহলে তোর লাইফ পুরো হেল হয়ে যেতো৷ ও মেয়েদের মধ্যে আসক্ত ঘরে বউ রেখেই বাইরে ফষ্টিনষ্টি করতে যেতো৷ বাঙালী নারী সব সহ্য করলেও নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা৷ তুই কী করে সহ্য করতি তোর স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে দেখে৷ তখন আমার কথা শুনিসনি তাই রাগ উঠে গিয়েছিলো৷ তুই তো জানিসই আমি রাগলে সব কিছু আমার হাতের বাইরে চলে যায়৷ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা৷ শত হউক তোকে এরকম বেল্ট দিয়ে মারা আমার উচিৎ হয়নি৷ ক্ষমা করে দিস আমায়৷
.
আমি ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম “সব না-হয় বুঝলাম কিন্তু কাল রাতে আমার রুমে কে এসেছিলো আর আমার পিটেই বা কে মলম লাগিয়েছিলো৷
ভাইয়া আমার কাধঁ ছেড়ে পকেটে দুই হাতগুজে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,
“আমিই গিয়েছিলাম৷ যখন বুঝতে পারলাম তোর সাথে খুন অন্যায় করে ফেলেছি তখন আমার ভিষন অনুশোচনা হচ্ছিলো৷ তোর হয়তো খুব ব্যাথা করছে সেটা ভেবেই আমি মলম নিয়ে গিয়েছিলাম৷ এবারের মতো আমায় মাফ করে দে আই সোয়ার আর কখনো তোর গায়ে হাত তুলব না আমি৷ আর না তোর কোনো ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করবো৷
.
তার মানে তুমি আমার পিটে হাত দিয়েছো৷
.
তুই যেভাবে বিষয়টা নিচ্ছিস সেরকম কিছুইনা৷ তুই উপুর হয়ে ঘুমাচ্ছিলিস আর টি-শার্ট পড়ে থাকায় আমি খুব সহজেই তোর পিটে মলম লাগাতে পেরেছিলাম৷ ওই যে সিনেমাতে দেখিসনা চোখ বন্ধ করে যেমন করে কাজ করে ঠিক সেরকমই কিছুটা৷
.
তাহলে ঠিক আছে কথাটা বলে আমি চলে এলাম ভাইয়ার রুম থেকে৷যাইহোক আমার গায়ে হাত তুলেছে এতো সহজে মাফ করবোনা আমি হুহ!!
পাত্র পক্ষের সামনে সেজেগুজে গিয়েছিলাম বলে আদিল ভাইয়া আমার রুমে এসে আমার পিটে একের পর এক ঘা দিয়েই যাচ্ছেন৷ ভাইয়াকে চিৎকার করে বলছি মার থামানোর জন্য কিন্তু আমার চিৎকার ভাইয়ার কান অব্দি পৌছাচ্ছে না৷ সে তো মারায় ব্যস্ত৷ শেষে আমাকে মেরে ক্লান্ত হয়ে ভাইয়া চলে গেলেন আর আমিও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম৷
🏙️🌃🏙️🌃
মধ্যরাতে টের পেলাম কেউ আমার পাশে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে৷ আর খুব গভীর ভাবে দেখে যাচ্ছে৷ তার মুখ সম্ভবত আমার মুখের উপরেই আছে যার কারনে তার চোখের জল এসে আমার মুখে পড়ছে৷ আমি কিছুটা নড়ে উঠলাম৷ বেশ কিছুক্ষন পর চোখ খুললাম আমি৷ খুলে দেখলাম আমার রুমে কেউ নেই৷ পোষাকও ঠিকঠাক আছে৷ আর মুখে পানি ঠিকই আছে৷ আমি সারা রুমে আবারও চোখ বুলালাম কিন্তু কেউ নেই দরজা পর্যন্ত ভিতর থেকে লক করা৷
আশ্চর্য কেউ তো এসেছিলো নাহলে আমার মুখে পানি এলো কই থেকে৷ ব্যালকনির কথা মনে আসতেই আমি দৌড়ে ব্যালকনির কাছে চলে এলাম দেখলাম ব্যালকনির দরজা খুলা তারমানে কেউ সত্যি সত্যি এসেছিলো৷ কিন্তু কে??আর কেনই বা আসছে৷ আমি পিছন ফিরে আসতেই দরজার সাথে খেলাম এক ধাক্কা৷ ধাক্কা খেয়ে আমার মনে হয়েছিলো আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো৷ যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেড়ে আমি ফ্লোরেই বসে পড়লাম আর মনে করতে থাকলাম আজ ঘটে যাওয়া আমার সাথে খারাপ মুহুর্তগুলি৷
ফ্ল্যাশব্যাক☘️☘️🌿
পাত্র পক্ষ আজ আমায় দেখতে এসেছে৷ বাড়িতে আয়োজন চলছে৷ মা, চাচীমনি,দাদু সবাই রান্নার কাজে সকাল থেকেই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে যেন আজই আমার বিয়ে দিয়ে দিবে ওরা৷ আমাকে বাড়ি থেকে বিদায় করার জন্য এদের এতো তাড়া৷ পাত্র সম্পর্কে আমার বাবার বন্ধুর ছেলে৷ ছোট বেলা থেকেই নাকি আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে৷ উনারা আমেরিকায় থাকেন তাদের কোনো মেয়ে না থাকায় উনারা আমাকে যত তারাতাড়ি সম্ভব বউ করে উনাদের কাছে নিয়ে যেতে চান৷ পাত্রেরও নাকি আমাকে খুব ভালো লেগেছে৷ কিন্তু আমার বিয়ে করার কোনো মুড নেই এখন৷ বাবাও আমার কথায় রাজী হতেন কিন্তু উনার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে রাজী হননি আর বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছেন৷ আমার কাজিনরা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করা অলরেডি শুরু করে দিয়েছে৷ খাটের এক কোনে অভাগীর মতো বসে আছি আমি৷ আমাকে কিন্তু এই মুহুর্তে কাঙালীর মায়ের চেয়ে কম অভাগী লাগছেনা৷আদনান ভাইয়া,আদিব ভাইয়া,আহিল ভাইয়া,অদ্রিতা আপু,আয়েশা আপু, সামান্তা আর আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড রিংকি৷ সবাই আমাকে এটা ওটা এনে দিচ্ছে৷ হাসানোর চেষ্টা করছে৷ কিন্তু আমি হাসছিনা৷ বিয়ের জন্য এক্সট্রা প্রিপারড্ নিতে হয় কিন্তু আমি মাত্র কালই শুনলাম৷ আমাকে অদ্রিতা আপু আর আয়েশা আপু মিলেই সাজাচ্ছে৷ সাজানো হয়ে গেলে আমার সব কাজিনরা আমায় নিয়ে নিচে গেলো৷ পাত্র পক্ষের সামনে বসানো হলো৷উনারা আমায় আংটি পড়াবার মুহুর্তেই রিফাত(পাত্র) না বলে উঠলো৷ পাত্রের বাবা মাহমুদ আংকেল জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে???
“বাবা আমি আরুহিকে বিয়ে করতে পারবোনা৷
.
এ তুমি কী বলছো রিফাত৷ ওকে বিয়ে কেনো করবেনা তুমি?কী নেই ওর মধ্যে৷
.
বাবা ওর মধ্যে সবই আছে৷ কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করতে পারবোনা৷
.
কিন্তু কেন৷ তুমিতো বলেছিলে যে আরুহিকে তোমার পছন্দ হয়েছে তাহলে আজ কেনো না করছো তুমি৷
.
হ্যা ওকে আমার ভালো লাগে৷ কিন্তু আমি আরেক জনকে ভালোবাসি৷ এ কথাটা আমি তোমাদের আগেই বলতে পারতাম কিন্তু তখন বললে হয়তো তোমরা আমার কথা শুনতেনা তাই আমি আংকেল আর আন্টির সামনে বললাম যেন উনারা তোমাদের বুঝাতে পারেন৷ আর সত্যি বলতে আরুহিরও বয়ফ্রেন্ড আছে তাইনা আরুহি৷
.
না আমার মেয়ের কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই৷ ছোট বেলা থেকে বিয়ে ঠিক ছিলো বলে আমার মেয়ে কোনো ছেলেদের দিকেও সেভাবে তাকায়নি৷ আর তোমাকেই বা কী দোষ দিবো তোমরা এখন যে বয়স পার করছো এটা আবেগপ্রবণের বয়স৷ তোমার আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবেনা৷ আমি চাইনা আমার মেয়ে কারও বিচ্ছেদের কারণ হউক৷ আর এটা আরও আগে বললে ভালো হতো৷ যাইহোক বিয়ে করে বউকে সাথে করে নিয়ে এসো৷ (বাবা)
.
মাহমুদ আংকেল বাবার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন৷ উনার চোখে সুস্পষ্ট অনুশোচনা দেখা যাচ্ছে৷
বাবা আংকেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,,আর হে আমাদের বন্ধুত্বটা যেরকম আছে ঠিক সেইরকমই থাকবে৷ বাবার কথা শুনে মাহমুদ আংকেল বাবাকে হাগ করলেন৷ তারপর সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে চলে গেলেন৷
🌿🌿🌿🌿
রাত ১১টা বেজে ১০ মিনিট৷রুমে একা একা বসে আছি৷ আদিল ভাইয়ার কথা ভিষন মনে পড়ছে৷ ভাইয়া আমায় বলেছিলো আমি যাতে পাত্র পক্ষের সামনে না যাই৷ তা না হলে নাকি ভাইয়া আমার অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে৷ জীবনের প্রথম ভাইয়াকে আমার সাথে এরকম কথ বলতে দেখেছি৷ ভাইয়া আমাকে এই কথা কেন বলেছিলো সেটাও বুঝতে পারছিনা৷ আমার ভাবনার মাঝেই আমার হাতে হেঁচকা টান পরলো৷ আমি হকচকিয়ে গেলাম৷ আদিল ভাইয়া রক্ত চক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ সিল্কি চুলগুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে৷ ফর্সা মুখও লাল হয়ে আছে৷ ভাইয়া আমায় টেনে দাঁড় করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,তোকে কতবার বলেছিলাম ওদের সামনে যাবিনা৷ শুনিসনি তো আমার কথা৷ এবার দেখ কী হাল করি তোর আমি৷ কথাটা বলে আদিল ভাইয়া উনার বেল্ট খুলে একের পর এক ঘা আমায় দিয়েই যাচ্ছেন৷ আমার শরীরর মরিচের মতো জ্বলছে৷ জীবনেও এরকম ঘা একটাও খাইনি৷ আর আজ এক সাথে এতোগুলো৷ আমি চিৎকার করে ভাইয়াকে বলছি যেন ভাইয়া মারা বন্ধ করে কিন্তু ভাইয়া আমার কথা শুনছেনা নিজের ইচ্ছে মতো মেরেই যাচ্ছে৷ আমি শেষে ভাইয়াকে আটকাতে না পেরে হাল ছেড়ে দিলাম৷ ভাইয়া আমাকে ইচ্ছেমতো মেরে হাপিয়ে বললেন,,,,সি আমার কথা যদি দ্বিতীয় বার অমান্য করিস তাহলে এর চাইতেও আরও কঠিন শাস্তি তোকে পেতে হবে গট ইট৷ কথাটা বলে ভাইয়া আমার রুম থেকে হনহনিয়ে চলে গেলেন৷ আমি খুব কষ্টে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলাম৷ চোখের পানি বাঁধ মানছেনা৷ এভাবে টর্চার করলো কেন ভাইয়া আমাকে৷ ভালো করে বুঝাতে ওতো পাড়তো৷ আমি কী তার বউ নাকি যে সে যা বলবে আমি তাই করবো৷ আমিও আরুহি আমি কারও কথা শুনবোনা৷
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড🍀☘️🌿
ভাইয়ার এরকম অমানুষিক নির্যাতনের কথা মনে আসতে আবারও আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে৷ পিটে হাত দিয়ে দেখলাম তরল কিছুর মতে হাতে লাগছে৷ ঘ্রাণ শুঁকে বুঝতে পারলাম এটা মলম৷ কিন্তু এটা কে লাগালো৷ আদিল ভাইয়া তো জীবনেও লাগাবেনা তাহলে কে??
কুঞ্জনের প্রশ্ন শুনে সায়ান উচ্চস্বরেই হাসলো, এই প্রশ্নটা ওর কাছে হুট করেই ফানি মনে হলো। ও নিজেই যখন জেনেছে তখন অকারণেই হাসি পেয়েছিলো কারণ মানুষটি খুব অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো। ও কুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বললো
“রুশির বাবা আমাকে মেসেজ করেছিলো তাও ফ্রেঞ্চে।উনি আমাকে অন্য ভাষায় করেনি কারণ প্রিয় মা যদি দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করে তবে মিথ্যে বলতে পারবে না আর ফেঞ্চে করলে মা ফ্রেঞ্চে কথা বলতে পারলেও পড়তে পারেনা তাই অফিসের কাজ ছাড়া অন্যকিছু ভাববে না।উনি রুশির একাকিত্ব বেশ টের পেয়েছিলেন যেটা মা পাননি কিংবা পেয়েছিলেন কিন্তু সন্তানের বেঁচে থাকার চেয়ে বেশি কিছুই হয়তো মুল্যবান ছিলো না তার কাছে হয়তো ভেতরে ধুকেধুকে মরাটাও না! আমি তার ফিলিংস বুঝতে পারি, উনি হয়তো ওনার জায়গায় ঠিক ছিলেন। কারণ মায়েরা ইমোশনালি দুর্বল হয়, তারা সন্তানের উপর এতোটুকু কষ্টের ছায়া পড়তে দিতে রাজি নন। কিন্তু রুশির বাবা যখন দেখেছেন রুশি স্টেবল হতে পারছে না কারণ সে অতীত মনে করার চেষ্টা করছে, আর এটা সে তখনি করে যখন একা থাকে। উনি তার লাইফে কাউকে আনতে চেয়েছেন যাতে ওকে আর একাকিত্ব আর ঘিরে না ধরে আবার তিনি এটাই ভুলে যাননি যে রুশি তখনো আমার স্ত্রী ছিলো। তাই উনি টেকনিকালি আমার আমানত আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন!”
সায়ান এইটুকু বলে চুপ করে থেকে আবার কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বললো
“কিন্তু একটা জিনিস ভেবে আমিও অবাক হয়েছিলাম যে উনি কিভাবে ওইসময়েই আমাকে মেসেজ করলো যখন আমরা ক্যালিফোর্নিয়ায় শিফট হতাম!পরে জানতে পারি প্রায় একমাস আগে থেকে প্রাইভেট নাম্বারে তারা শাহেদের সাথে যোগাযোগ করতো আর ওকে ওয়াদা দেয়াতে ও আমাদের বলতে পারেনি।কিন্তু ও চেষ্টা করেছিলো বের করতে রুশি কোথায় আছে কিন্তু পারেনি তাই বাবাকে ওই সাজেশন দিয়েছিলো আমাকে মেসেজ দেয়ার জন্য কারণ ও বলেছে আমরা কেউই ভালো নেই। আমি সবকিছু জেনে তো ভালো নেই ই কিন্তু রুশি না জেনেও ভালো ছিলো না। যাইহোক শশুর মশাই সাহায্য না করলে কখনোই ফ্রান্সে যাওয়া হতো না আর কখনোই ওকে খুঁজে পেতাম না। রুশির পাওয়ার প্রায় তিনমাস পর আমরা সবাই লন্ডল শিফট করি আর আমরা টেমস নদীর এখানে থাকা শুরু করি আর তারা তাদের আগের জায়গায় অর্থাৎ ক্যামডেন টাউনে!”
কুঞ্জন কথাগুলো শুনে চুপ করেই ছিলো, তারপর কিছু একটা মনে পড়তেই অভিমানী স্বরেই প্রশ্ন করলো
“তাহলে এতোদিন আমার মামা-মামি আছে, নানু কিংবা পরিবারের আরো সদস্য আছে এটা আমি জানতাম না কেনো?আমি যতটুকু জানি মাম্মা কিংবা পাপা কেউ আমাকে কিছু বলেনি, আমি সবসময় ভাবতাম মাম্মা তার বান্ধুবীর সাথে কথা বলে তাই ইন্টারেস্ট দেখায় নি। আমার থেকে সব লুকানো হলো কেনো?”
সায়ানের হাসিমুখে হঠাৎ গম্ভীরতা দেখা দিলো, সে কিছুটা গম্ভীর স্বরেই বললো
“কারণ সামাদ খানকে আমরা খুঁজে পাইনি আর না তার পরিবার সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা আছে। তবে ক্যামডেন টাউনে আমাদের উপর যে এটাক হয়েছে আমরা আশি পার্সেন্ট শিউর ওইটা তার দ্বারাই হয়েছে কিন্তু আমরা কোন ক্লু খুঁজে পাইনি। আমরা পরিবারের সবাইকে সেফ রাখতে চেয়েছিলাম তাই একে অপরকে ফ্রেন্ড কিংবা দূর আত্মীয় ছাড়া পরিচয় দেয়া হয়না। আর আমরা সবাই প্রায় সেপারেটলি থাকি আর সবগুলোতেই হাই প্রোটেকশন দেয়া যাতে এটলিস্ট ঘরের ভিতরে কোন এটাক না হয়। তুমি তো জানোই তোমাকে অলওয়েজ দুজন বডিগার্ড ফলো করে কিন্তু এটা হয়তো জানোনা তোমার অগোচরে আরো অনেকজন তোমাকে ফলো করে। আর আমাদের কথা হলেও তা প্রাইভেট নাম্বারে কথা হয় আর তা খুব বেশি সময়ের জন্য নয় যাতে করে কিছুতেই কারো লোকেশন ট্রেক করা না যায়। তোমাকে জানানো হয়তো যেতো কিন্তু ইচ্ছে করেই বলিনি কারণ সবটা সলভ হওয়ার পর বলতাম। পাখিকেও বলা হয়নি তাই দেখো না পাখি সামুকে ফুফি না বলে আন্টি বলতো!”
“যদি এভাবে ভয়েই থাকতে হয় তাহলে এই বাচাকে কি বলে?সারাজীবন কি এভাবেই চলতে থাকবে তাদের থেকে পালিয়ে পালিয়ে?”
“নাহ! পালানো অনেক হয়েছে আর না। তোমার বাবা এখানে এসেছেই এটা নিয়ে ডিসকাস করতে কারণ কোন এক সুত্রে উই গট টু নো সামাদ খানের ফেমিলি বাংলাদেশে আছে রিসেন্টলি! তাই এবার তারা এটাক করার পুর্বে আমরা তাদের এটাক করবো, আর সামাদ খানের সাথে তো আমার বোঝাপড়া আছেই!আমার জীবনের প্রত্যেকটা কষ্টের হিসাব তাকে দিতে হবে,আর আমার বউকে মারার অপরাধে তাকে হাজারবার খুন করলেও তা কম হয়ে যাবে!”
সায়ান এইটুকু বলে থেমে গেলো, বাচ্চাদের সামনে এভাবে বলা উচিৎ হয়নি! ও গলা খাকারি দিয়ে উঠে গেলো আর নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। রুশিও তার পিছু গেলো আর বাকি সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলো,কুঞ্জনের বাবা আর শাহেদ আংকেল কথা বলতে লাগলো আর ওর মা আর চন্দ্রিকা আন্টি উঠে গেলো সেখান থেকে। বাকি রইলো ও আর পাখি!
কুঞ্জনের বেশ জিজ্ঞেস করতে মন চাইলো শাহেদকে যে চন্দ্রিকার বাচ্চার বাবা কে ছিলো কিন্তু ছোট হয়ে বড় একজনকে এমন প্রশ্ন করাটা অবান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও কুঞ্জন সেই ডায়েরী থেকে নব্বই পার্সেন্ট শিওর ওইটা শাহেদের বেবি ছিলো কারণ শাহেদ চন্দ্রিকাকে বেশ অপমান করতো কিন্তু যখন চন্দ্রিকা বললো ও ইচ্ছে করে বাচ্চা মারেনি তখন ও ঠিক ভাবে ব্যাবহার করতো এমনকি ও জিজ্ঞেসও করেছিলো যে চন্দ্রিকা কি আসলেই সেই বাচ্চা মারেনি?চন্দ্রিকা না বলাতেই ও বেশ খুশিই হয়েছিলো। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন চন্দ্রিকাকে বেঁধে রাখা হয়েছিলো আর খোলা অবস্থায় কেউ একজন তাকে জোর করেছিলো! হয়তো সেটা শাহেদ ছিলো এবং সে নিজের হুশে ছিলো না। কারণ সামাদ খান চাইলে সবই করতে পারে,আর শাহেদ নিজেই বলেছিলো যে সে সামাদ খানের খারাপ কাজে জড়িত ছিলো, হয়তো চন্দ্রিকার এবর্শন ব্যাপারে শাহেদকে ভুল ইনফরমেশন সেই দিয়েছিলো কিন্তু শাহেদ তবুও চন্দ্রিকাকে ছাড়েনি বরং ভালোবেসে গেছে নিঃস্বার্থভাবে!
কুঞ্জন জানেনা ওর ভাবনার যৌক্তিকতা কতটুকু কিন্তু এই অজানা কথাগুলোর রহস্য উদঘাটন করতে পেরে নিজেকে আসলেই ডিটেক্টিভ মনে হচ্ছে। অবশেষে ও সায়ান-রুশির রহস্য বের করেছে আর তাদের শেষ পরিণতিও জানতে পেরেছে!
কুঞ্জন সম্পুর্ণটা শুনে চুপচাপ বসে ছিলো সেখানে কতক্ষন তারপর উঠে গিয়ে শেষ সিঁড়ির কাছে বসলো! ,ও ভেবেছিলো অন্যসব মুভি কিংবা গল্পের মতো একসময় রুশির স্মৃতি ফিরে আসবে,তার সবকিছু মনে পড়ে যাবে।কিন্তু বাস্তবতা কোন সিনেমা নয় যে পরের অংশ স্ক্রিপ্টে লিখা থাকবে আর সেটার এন্ডিং আগে থেকেই প্রেডিক্ট করা যাবে। লাইফ ইজ মোর দেন ড্রামা!এখানে হুট করেই নাটকীয় ভাবে স্মৃতি ফিরে আসেনা! আবার প্রেমে পড়লে সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায় না, পছন্দের মিউজিক বাজতে শুরু করেনা, না চুল নড়তে থাকে আর না হুট করে ফুল পড়তে থাকে গায়ে। বরং কিছু অনুভুতি ধীরেধীরে জমা হয় তারপর সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকাশ করা যায় না বরং গুমোট অনুভুতি হিসেবে থেকে যায়। কিছু মানুষের ভাগ্য হয়তো অনেক ভালো হয় যে তারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে পায় আর বাকিরা পায়না কিংবা পেয়েও হারিয়ে ফেলে!
উপরওয়ালা সবার জন্যই নির্দিষ্ট জোড়া রেখেছেন, কুঞ্জন এতোদিন সেই মানুষটির অপেক্ষায় ছিলো কিন্তু আজ!পাখিকে দেখেই ও বড়োশড় ক্রাশ খেয়েছে তা আর বলতে বাকি নেই, কোথাও কিছু একটা ফিল হয়েছে তবে সেই অনুভুতির নাম জানেনা ও! অন্যসব গল্পের মতো ওদের গল্পটা বেশ ভিন্ন, পাখি হয়তো মজা করে বললেও নিজের থেকে ছোট কাউকে মেয়েরা কখনোই মেনে নিতে চায়না অথচ “তুই কি আমাকে বিয়ে করবি?” পাখির বলা কথাটা ও সত্যিই সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে! আচ্ছা অনুভুতিগুলোর বেড়াজালে মানুষ কি বড্ড বোকা হয়ে যায়?নাহয় বিষয়টি সম্পুর্ণ মজা জেনেও ও সিরিয়াসলি কি করে নিতে পারলো?সবটা জেনেও সত্যটা মানতে এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে ওর?
________________________
সায়ান রুমে এসে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো, রুশিও পিছু এসে দাঁড়ায়। প্রথম প্রথম সায়ানের কাছাকাছি থাকতে বেশ জড়তা কাজ করতো ওর। খাটে মাঝখানে পাখি আর ওরা দুজন দুপাশে! কিন্তু ধীরেধীরে সেই দুরত্বটা গুচে গেলো হয়তো ভালোবাসে তাই!কিংবা সায়ানের মতে তো ও তাকে আরো আগে থেকে তাকে ভালোবাসে।রুশি সায়ানকে হুট করে জড়িয়ে ধরলো আর শান্ত স্বরে বললো
“আমি মাঝেমাঝে সবকিছু মনে করতে চাই, মনে হয় সেই অনুভুতি গুলো হয়তো অনেক মুল্যবান ছিলো! কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ে না”
“তুমি আবার চেষ্টা করেছো মনে করার?”
“নাহ, মনে করার চেষ্টা করতে চাই।”
“কোন দরকার নেই। আমি চাই তুমি সুস্থ থাকো আর আমার সাথে থাকো সবসময়। এই হাত একবার ছুটে যাওয়াতে অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি,সেই কষ্ট দ্বিতীয়বার সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই!আমাকে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না সত্যিই, প্লিজ আর কখনো ছেড়ে যেওনা”
“উহুম যাবো না,কোথায় যাবো আমি তোমাদের ছেড়ে?আমার যে তোমাদের ছাড়া গতি নেই”
সায়ান মুচকি হেসে রুশির কপালে ঠোঁট ছোয়ালো আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।সৃষ্টিকর্তা যা করে ভালোর জন্যই করে! হয়তো ভালো হয়েছে রুশির কিছু মনে নেই, কারণ ওই দিনগুলোতে রুশি তেমন সুখ পায়নি, অবহেলা আর কষ্ট ছাড়া। তাছাড়া চন্দ্রিকার সাথে রুশির সম্পর্ক অনেক ভালো এখন কিন্তু সব মনে থাকলে হয়তো থাকতো না, রুশির সেই কষ্টের অনুভুতি মনে না পড়ুক এটাই ও চায়। বরং ওর জীবনে শুধু সুখ থাকুক আর ওকে সুখে রাখার জন্য সায়ান সব করতে রাজি আছে, সব!
ও হুট করেই বলে উঠলো
“আই লাভ ইউ মিসেস খান!”
রুশি মুচকি হাসলো তারপর সায়ানের বুকে কিল মেরে বললো
“মি ঠু মিস্টার খান!”
________________________
কুঞ্জনের ভাবনার মাঝেই পাখি এসে ধপ করে ওর পাশে বসলো তারপর মাথায় টোকা মেরে বললো
“কিরে ছোটু! এই ছোট মাথায় কি বিশাল চিন্তা নিয়ে ভাবছিস রে?”
“কিছুনা”
“হুম, কিছু একটা তো ভাবছিলি। যাইহোক জবাব দিলি নাতো? বিয়ে করবি আমায়?”
বলেই খিলখিল করে হেসে দিলো পাখি আর কুঞ্জন মুখ ফুলিয়ে বসলো আর বললো
“আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি পাখি! তাই এখন কিছু বলতে পারবো না”
পাখি আরেকটা গাট্টা মারলো কুঞ্জনের মাথায় তারপর বললো
“বড়োরা পাখি বলে ডাকে বুঝলি! তুই মোটেও এসব বলবি না। আমার নাম রিয়ানা জামিল খান! তুই আমাকে রিয়ানা আপু বলবি বুঝলি!”
“আমার কাউকে আপু বলে ডাকিনা মিস.পাখি!”
“হেই ছোটু!ইটস রিয়ানা ফর ইউ ওকে!”
বলেই পাখি উঠে চলে গেলো আর কুঞ্জন তাকিয়ে রইলো, ও পাখির সামনে মুখ ফুলালেও বিয়ের কথায় ও বেশ খুশি হয়েছে! পাখির প্রতি ওর অজানা অনুভুতি কাজ করে, কিন্তু সেই অনুভুতি গুলো প্রকাশের আদোও সুযোগ হবে কিনা ও জানে না। অদ্ভুতভাবে মাত্র কয়েকঘন্টার পরিচয়ে ওর পাখিকে বেশ ভালো লেগেছে। বলা হয়না “পেয়ার কিলিয়ে এক পাল হি কাফি হ্যায়” ওরও তাই হয়েছে। কিন্তু এই #গুমোট_অনুভুতিরা কি আদোও প্রকাশ পাবে কিনা ওর জানা নেই, শুধু এইটুকু জানে ও এই অনুভুতির মায়াজালে ফেঁসে গিয়েছে, বড্ড বাজেভাবে ফেঁসে গিয়েছে!
~~~সমাপ্ত~~~
(গল্পটি অনেক উত্থানপতনের মাঝে দিয়ে শেষ হয়েছে, হয়তো আরো সুন্দরভাবে সাজানো যেতো কিন্তু পারিনি। যাদের ভালো লাগেনি বা হতাশ হয়েছেন তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। যারা এতোদিন সায়ান-রুশি আর আমার পাশে ছিলেন তাদের অস্যংখ্য ধন্যবাদ আর ভালোবাসা রইলো। আমি জানিনা সব প্রশ্নের উত্তর আপনারা পেয়েছেন কিনা বা আমি ঠিক ভাবে লিখতে পেরেছি কিনা। যদি কিছু বাদ পড়ে যায় তাহলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।সবার জন্য ভালোবাসা রইলো, আল্লাহ হাফেজ!)
সন্ধ্যা হতেই কুঞ্জন ধীর পায়ে মায়ের রুমের গেলো তারপর তার সামনে গিয়ে বসলো, এই মুহুর্তে ওকে দেখলে যে কেউ বলবে ওর থেকে ইনোসেন্ট বাচ্চা আর কেউ নেই। ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে বিচলিত কন্ঠে বললো
কুঞ্জন মাথা নাড়িয়ে না বললো তারপর ছলছল নয়নে মায়ের দিকে তাকালো। মুহুর্তেই কোথা থেকে সব খারাপ লাগা জড়ো হলো নিজেই বুঝতে পারলো না, ও মায়ের দিকে তাকিয়ে খুব কষ্টে বললো
“পাপাকে খুব মিস করছি মাম্মা!”
“তোমার পাপা তো আজ সকালে গেলো বাড়ি থেকে, আমিও হসপিটালের মর্নিং শিফটে ছিলাম তাই তার সাথে দেখা হয়নি। তুমি তাকে বলোনি কেনো তাহলে তো সে যেতো না”
“তখন তো বুঝতে পারিনি কিন্তু এখন খুব খারাপ লাগছে!পাপাকে খুব মনে পড়ছে,আমি তার কাছে যাবো মাম্মা!”
“কিন্তু তোমার বাবা তো মাত্র সেখানে গিয়েছে, এখন আসতে তো সময় লাগবে।আমি তাকে বলবো দ্রুত যাতে কাজ শেষ করে চলে আসে, আমাদের কুঞ্জন তাকে খুব মিস করছে!”
“মাম্মা আমি তাকে এখন দেখতে চাই!”
“ঠিক আছে,সেখানে পৌছলে তুমি ভিডিও কল দিয়ে দেখে নিও”
“আম্মু আমি তাকে সরাসরি দেখতে চাই, ফোনে দেখে হবে না। চলো আমরা পাপার সাথে দেখা করতে লন্ডন যাই,পাপাকে সারপ্রাইজ দেই। তুমি পাপার সাথে যে ওই আঙ্কেলটা আছে না, যে এখন লন্ডন থাকে! তাকে বলো সব ঠিক করে দিতে। তারপর আমরা লন্ডন গিয়ে পাপার সাথে দেখা করলে পাপা অনেক খুশি হবে!”
“না কুঞ্জন! তোমার পাপা দুদিন পর চলে আসবে তাই শুধু শুধু গিয়ে কি লাভ?আমরা অন্যকোন সময় তোমার পাপার সাথে গিয়ে ঘুরে আসবো”
কুঞ্জন মুখ ফুলিয়ে মায়ের কক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়লো, তারপর সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। তারপর মুচকি হেসে চোখের পানি মুছে নিলো আর নিজের জামাকাপড় প্যাক করা শুরু করলো। ও জানে ওর মা বেশিক্ষন না রাজি হয়ে থাকতে পারবে না, ঠিক কতোক্ষণ পর এসে বলবে কুঞ্জন সব গুছিয়ে নাও। আমরা তোমার বাবার কাছে যাচ্ছি, তুমি মন খারাপ করোনা।এইজন্যই মাকে এতো ভালোবাসে ও।বাবাকেও অনেক ভালোবাসে তবে মাকে একটু বেশিই ভালোবাসে!
ও যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে,রাতে রুম থেকে বের না হওয়ায় সকালেই ওর মা রাজি হয়ে গেছে আর বলেছে সন্ধ্যায় ওদের ফ্লাইট!আগেই পাসপোর্ট করা থাকায় সবকিছু মেনেজ করতে দেরি হয়নি, কুঞ্জন তো মহাখুশি। নিজেকে কেমন যেনো গোয়েন্দা মনে হচ্ছে,ডায়রির শেষের অংশের রহস্য উদ্ধারে কুঞ্জন দ্যি গ্রেট লন্ডনের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিয়েছে। কথাগুলোর ভাবতেই প্রচণ্ড এক্সাইটমেন্ট ফিল করছে কুঞ্জন! লন্ডনের পথের সারা রাস্তা ঘুমিয়েই এসেছে, লন্ডনে গিয়ে তাকে রহস্য সমাধানে মশগুল থাকতে হবে তাই রেস্টের প্রয়োজন।
দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে তারা একটি বিশাল বাংলোর সামনে এসে পৌছলো, কুঞ্জন একবার ভেবেছিলো মাকে জিজ্ঞেস করবে এটা কার বাড়ি কিন্তু পরে ভাবলো নাহ! নিজেই রহস্য উদ্ধার করবে। মাথার ক্যাপটা ঠিক ঠাক করে কলিংবেল চেপে বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তখনি কেউ একজন দরজা খুলে দিলো, মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে আসতেই ও সেদিকে ফিরে তাকালো। একটা গৌর বর্ণের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, লম্বায় প্রায় ওর সাইজেরই বা ওর থেকে ছোট কিন্তু বয়সে বড়োই মনে হলো! বিদেশের মাটিতে থাকলেও চেহারায় একটা বাঙালিয়ানা ফুটে উঠেছে। বিদেশের মাটিতে বাঙালিরা বাঙালি কাউকে পেলে কতো খুশি হয় তা কেবল তারাই জানে! কুঞ্জন কিছু বলার পুর্বেই সেই মেয়েটি নেটিভ স্পিকারের মতো বলে উঠলো
“হু আর ইউ?হোয়াচ ইউ ওয়ান্ট?”
কুঞ্জনের মুখটা চুপসে গেলো, মেয়েটার ইংলিশ শুনে নিজে যাও একটু আধটু ইংলিশ জানতো তাও ভুলে গেলো। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না! কিন্তু ওই মেয়েটাই হঠাৎ হেসে বললো
“সামু আন্টি!কতোদিন পর তোমাকে দেখলাম!কেমন আছো তুমি?”
বলেই কুঞ্জনের মাকে তাড়াতাড়ি জড়িয়ে ধরলো দৌঁড়ে এসে, মেয়েটির মুখে এতো মার্জিত বাংলা শুনে কুঞ্জন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো! বাংলা যদি জানতোই তবে ওর সামনে এতো ইংলিশে ফরফর করার কি দরকার ছিলো। কুঞ্জন যেনো মহা বিরক্ত হলো, ওই মেয়েটি এবার ওর দিকে ফিরে কৌতুহল নিয়ে বললো
বলে হুট করে এসে জড়িয়ে ধরলো আর আর গালে কিস করে বসলো আর ওর মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে চলে গেলো। যদিও এটাই লন্ডনের কালচার তবুও ও তো এসবে অভ্যস্ত নয়, ও বুক ধড়ফড় ধড়ফড় করছে। প্রত্যেকটা স্পন্দন যেনো বলছে
“এক পারদেসি মেরা দিল লে গায়ি!”
ও নিজেকে সামলে ভিতরে হাটা ধরলো ভিতরে, এখন ওর এসব ভাবার সময় নেই। যদিও ও আরোও এই ছোটু নাম শুনেছে কিন্তু আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে বলতো তার বান্ধুবী বা বান্ধুবীর মেয়ে।তাই তাদের প্রতি তেমন আগ্রহ ও দেখায়নি আর না ভিডিও কলে কথা বলেছে কখনো! তাহলে কি নিজের মায়ের বান্ধুবীর বাসায় আছে ওরা?
ভেতরে ঢুকতেই সোফায় নিজের বাবাকে দেখতে পেলো সাথে তার সমবয়সী আরেকজনকে! তার সাথে একটু আগের মেয়েটির অনেক মিল চেহারার তবে পুরোপুরি নয়। অনেকটাই মিল আবার অনেকটাই অমিল!ওদের দেখেই ওর বাবা দাঁড়িয়ে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আর বলে উঠলো
“সামু!তোমরা?এখানে কখন এলে আর কিভাবে এলে? আমাকে বললে না কেনো তোমরা আসছো? আমিই তো সাথে করে নিয়ে আসতে পারতাম”
“আর বলোনা, তোমরা বাবা-ছেলে কোনদিন শান্তি দিয়েছো আমায়?ইনান তোমার ছেলে রাতের বেলায় হুট করে এসে বলে পাপাকে মিস করছি তার কাছে যাবো। আর জানোই তো তোমার মতো জেদি তাই না মেনে পারা যায়?তাই আসতে হলো এইখানে!”
“তো আমাকে বলোনি কেনো?”
“তোমার ছেলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে তাই বলিনি”
“সেটাই আমার ছেলে আমাকে মিস করবে তাইনা?দেখো তোমার সাথে থেকেও বাবাকে ছাড়া থাকতে পারেনা। আমার ছেলে বলে কথা!”
সামু মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো আর ইনান মুচকি হেসে ছেলের দিকে তাকালো।কুঞ্জন ভেবেছিলো ওর বাবা রেগে যাবে কিন্তু এমনটা হয়নি। বাবার চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখে ওর মুচকি হাসলো, বাবা এতোটা খুশি হবে ও ভাবে নি। ও সোফায় বসে সামনের ব্যাক্তিকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো, ভাবতে লাগলো যদি ও ঠিক জায়গায় আসে তবে ডায়েরি অনুযায়ী এই ব্যাক্তিটি কে হতে পারে?দেখতে লম্বা, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি তবে দেখতে অনেক ইয়াং!গৌর বর্ণ, মুখে চাপ দাড়ি যদিও তার দু একটাতে পাক ধরেছে কিন্তু এখনো হিরোদের মতোই লাগছে। খুব সুদর্শন দেখতে, এখনো নিশ্চই মেয়েরা তার পেছনে ঘুরে?হাতে খবরের কাগজ, চেহারায় আলাদা এক গাম্ভীর্য! তবুও কি মোহনীয় লাগছে!সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট যেনো বেশ মানিয়েছে তাকে! অবশ্য এমন সুপুরুষকে সকল কিছুতেই মানাবে এমন ধারণাই কুঞ্জনের। এমন সময় সদর দরজা দিয়ে দুজন নর-নারী ঢুকলো। ও সেই নারীর দিকে গভীর ভাবে তাকালো, খুব পরিচিত হলো মুখখানি! ও চোখবন্ধ করে ভাবতে লাগলো কে এই নারী?কে হতে পারে?ওর মা যদি সেই ডায়েরীর সামু হয় তবে সামনের জন কে?রুশি না চন্দ্রিকা?যদি রুশি হয় তবে পাশের জন কি সায়ান?তাহলে সায়ান রুশিকে কোথায় খুঁজে পেয়েছিলো আর ওদের মেয়ে কোথায়?
#চলবে
গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৫৩
কুঞ্জন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই নারীর দিকে, বয়স ত্রিশোর্ধ কিন্তু চেহারায় সেই ভাব ফুটে উঠে নি। এই নারী যৌবনে খুব সুন্দর ছিলো তা দেখেই বুঝা যায়!কিন্তু এ রুশি হতে পারেনা, ডায়েরীর মতে রুশির চেহারায় হাজারো মায়া ভীড় করে আর খাড়া নাক সাথে মায়াবিনী চোখ!যদিও সামনের নারী খুব সুন্দরি তবে সে রুশি নয় এটা বুঝতে কুঞ্জনের সময় লাগলো না, ও মুচকি হেসে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো
“আপনি চন্দ্রিকা তাইনা?আপনি আগেও সুন্দরি ছিলেন এখনোও সেইরকম আছেন”
সামনের নারীটি অবাক হলেও মুচকি হেসে বললো
“হুম আমিই চন্দ্রিকা! কিন্তু তুমি আমাকে চিনো নাকি? কিভাবে হুম?”
উত্তরে কুঞ্জন হাসলো আর ভাবলো আমি না জানলে আর কে জানবে?আমার থেকে তো ভালো আর কেউ কিছু জানেই না।ও হাসি হুট করেই ফুস হয়ে গেলো যখন ওর পারদেসি মানে পাখি নামক মেয়েটা কথা বলে উঠলো
“আরে চন্দ্রি ফুপ্পি! ও আমাদের ছোটু তোমাকে ওর কথা বলেছিলাম না!দেখছো কতো বড় হয়ে গেছে!আমিতো চিনতেই পারিনি!”
চন্দ্রিকা খুব মনোযোগ সহকারে কুঞ্জনের দিকে তাকালো, এদিকে কুঞ্জন দেখলো চন্দ্রিকার পাশের পুরুষ লোকটি সোফায় গিয়ে বসলো আর ওর বাবা আর সেই লোকটির সাথে কথায় মেতে উঠলো। তাদের সম্পর্ক খুব ভালো দেখেই বুঝা যাচ্ছে! শাহেদের সাথে তাদের সম্পর্ক এতো ভালো হলো কবে?আর চন্দ্রিকাও এখানে আসছে!তখনি কেউ একজন ওর গাল টেনে ধরলো আর বলে উঠলো
“আমাদের ছোটু তো আসলেই বড় হয়ে উঠেছে!কতটুকু দেখেছিলাম!মনে আছে সামু ওর বয়স যখন দেড় বছর তখন ওকে নিয়ে লন্ডন এসেছিলি তোরা। পাখি তখন দুবছরের ছিলো! বাবুকে দেখেই কোলে নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো, অন্য বাচ্চারা ছোট বাচ্চা দেখলে বলে এটা আমার ভাই বা বোন! কিন্তু পাখি দেখেই বলে উঠলো ‘এটা আমাল বল’ তখন আধোও আধোও কথা বলতো ও, ছোটুকে দেখেই বলতে লাগলো ‘আমি বলো হয়ে ওলে বিয়ে করলবো’ আর সবাই কি হেসেছিলাম!”
“হ্যা মনে আছে! আমিতো এখনো পাখিকে আমার ছেলের বউ হিসেবে মানি, পাখি রাজি থাকলেই হয়!কিরে পাখি রাজি আছিস?”
কুঞ্জন হুট করে কেশে উঠলো, এতো ওপেনলি মানুষ বিয়ের কথা কি করে বলে?তাও আবার সবার সামনে! তারউপর এই মেয়ে গুনে গুনে ওর থেকে একবছরের বড়ো! মানে শেষমেশ কুঞ্জন তুই একটা সিনিয়র আপুর উপর ক্রাশ খাইলি?আর ওর মাকে দেখো ছেলের মতামত বলে যে একটা জিনিস আছে সেটা তো ওনার মাথায় নেই, আমাকে জিজ্ঞেস করা ছাড়াই ছেলের বউ ঠিক করে ফেলেছে। নাহ এসব বিয়ে সাদি মাথা থেকে ঝাড়তে হবে, পারদেসি থুক্কু পাখি থেকে ওর আখি সরাতে হবে। কুঞ্জন ফোকাস অন ইউর গোল!ভুলে যাস না সাত সমুদ্র পাখি দিয়ে কেনো এসেছিস এখানে!
কুঞ্জন পাখি থেকে সত্যি সত্যি নিজের আখি সরিয়ে নিলো তখনি পাখি বলে উঠলো
“কিরে জবাব দিলি না?লজ্জা পাইসস?আচ্ছা থাক পরে জবাব দিস। আমার এতো তাড়া নাই”
কুঞ্জনের মাথা চাপড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে! কি বেশরম রে বাবা!কুঞ্জন ডোন্ট ফল ফর দিস!ফোকাস!
কুঞ্জন আবার সেই বাবার বয়সী লোকটির দিকে তাকালো, নাহ লোকটি শাহেদ নয় কারণ শাহেদ পাশে বসা আর ওর বাবা হচ্ছে ইনান মানে সায়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড মানে সামনের ব্যাক্তি সায়ান ছাড়া অন্যকেউ হতেই পারেনা! তাহলে ওই মেয়েটি কি সায়ান রুশির মেয়ে? ওয়েট মেয়েটির নাম পাখি! সায়ান আদর করে তার মেয়েকে পাখি ডাকতো তারমানে ওই মেয়েটি সায়ান রুশির মেয়ে পাখি?রুশির অনেক বড়ো ত্যাগের ফসল!ওর এতোক্ষন এই জিনিসটা মাথায় কেনো আসেনি?ওহ গড! সবকিছু ওর সামনে ছিলো আর ও বুঝতেই পারেনি! কুঞ্জনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো, সায়ান যেহেতু সামনে তবে রুশিরও থাকার কথা কিন্তু সে কোথায়?
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলো কিন্তু কোন নারী মুর্তিকে খুজে পেলো না। তবে কি সায়ান তার রুশিকে খুঁজে পায়নি কিন্তু সামনের জন যদি সায়ান তবে সে রুশিকে খুঁজে পেয়েছে! কারণ সায়ান রুশিকে অনেক ভালোবাসে আর রুশি ছাড়া তার মুখে এই হাসি থাকতো না বরং থাকতো একরাশ কঠোরতা! কিন্তু তাহলে রুশি কোথায়?
কুঞ্জন তার কৌতুহলি মন দমিয়ে রাখতে পারলো না, ও সামনের ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে বললো
“সায়ান মামা?আপনি তো সায়ান মামাই তাইনা?”
লোকটি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর বললো
“ইনান!তোর ছেলে তো দেখছি খুব বুদ্ধিমান রে, আমাদের সেই দেড় বছর বয়সে দেখেও সবাইকে মনে রেখেছে। বাহ!”
“আমি কিন্তু আরো চিনি যেমন ইনি হচ্ছে শাহেদ!চন্দ্রিকা আন্টির হাজবেন্ড হয়তো! তারপর ওইযে পাখি সে আপনার মেয়ে আর একটু আগে যে পেপার নিয়ে বেরিয়ে গেলো উনি হচ্ছেন সাহেল!”
তখন ইনান মুচকি হাসলো আর কুঞ্জনের কাঁধে হাত রেখে বললো
“আমার ছেলে বুঝলি!টোটাল চ্যাম্প!”
কুঞ্জন বারবার আশেপাশে তাকালো কিন্তু রুশিকে দেখতে পেলো না। ওর বিশ্বাস ও রুশিকে দেখলেই চিন্তে পারবে, রুশির বর্ণনা এতো গভীর ভাবে পড়েছে যে ও রুশিকে কল্পনা পর্যন্ত করেছে বহুবার!ওর ভাবনার মাঝেই ওর মা বলে উঠলো
“ভাই ভাবি কই?সে কখন থেকে আসলাম কিন্তু ভাবির দেখা পেলাম না”
“মেডাম কিচেনে আছেন,সকালে তার হাতের রান্না না খেলে দিন শুরু হয়না বুঝলি!আর উনিও বেশ সুন্দর করে আমাদের খাওয়াতে পছন্দ করেন”
কুঞ্জন ভেবেছিলো সায়ান, রুশিকে রুশি বলে ডাকবে বা মিসেস খান বলে কিন্তু তার কিছুই বলেনি। তাহলে কি রুশিকে খুঁজেই পায়নি?অন্য মুভি বা গল্পের মতো অন্য একজনকে বিয়ে করেছে তারপর তাকে ভালোবেসে ফেলেছে?কুঞ্জনের হঠাৎ করেই বুক কাঁপতে লাগলো আর যাইহোক সায়ান রুশির শেষ পরিণতি ও এমনটা হলে মেনে নিতে পারবে না। সেই বাংলাদেশ থেকে ও এসেছে সায়ান-রুশির গল্পের বাকি অংশ জানার জন্য তবে তাতে যদি এদের মিল না হয় তবে ওর সবকিছু বৃথা হয়ে যাবে।আর তাছাড়া সায়ান রুশিকে পাগলের মতো ভালোবাসে! আর যাইহোক অন্যকেউকে মেনে নিবে এটা ও বিশ্বাস করেনা, অন্তত সেই ডায়েরীতে ভালোবাসার গভীরত্ব অনেক বেশি ছিলো সেসব নিছক মিথ্যে নিশ্চই হবে না!
ওর মন অশান্ত হয়ে উঠলো হঠাৎ! সায়ানের ওয়াইফকে দেখার তীব্র ইচ্ছে ওর কিন্তু ভয়ও করছে যদি সে রুশি না হয়?ওতো মেনে নিতে পারবে না, একবার মনে হচ্ছে গিয়ে দেখুক কিন্তু পরক্ষনেই মনে হচ্ছে না সবরে মেওয়া ফলে। ওর ধৈর্যের কারণেই হয়তো রুশির দেখা মিলতে পারে। ও চুপচাপ বসে থাকার মাঝেই এক নারীকন্ঠ ভেসে উঠলো
“আরে সামু!তুই আসলি আর আমার কাছে গেলি না?আমিতো জানতেই পারতাম না যদি ড্রয়িংরুমে না আসতাম!আজ এতোবছর পর আসলি!কতোকরে বলেছি আসতে কিন্তু এটা ওটার ব্যাস্ততা দেখিয়েই যেতি। কতো সুন্দর হয়ে গেছিস তুই!”
কুঞ্জনের মনে হলো সেই নারীকন্ঠ অনেক সুন্দর হয়তো শুধু কন্ঠ শুনেছে বলে!ও খুব সাহস নিয়ে তারদিকে তাকালো, পাতলা গড়নের একজন নারী!ফর্সাও নয় আবার কালোও নয়। এ যেনো এক শ্যামসুন্দরী!বয়স ত্রিশোর্ধ হলেও চেহারায় আলাদা এক মায়া আছে আর তার হাসি!অদ্ভুতভাবে পাখির সাথে মিলে যায়!তবে কি এই সেই রুশি?ডায়েরী অনুযায়ী তো তাই হওয়ার কথা!ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো! ওর মন বলছে এটা রুশি ছাড়া অন্যকেউ হতেই পারেনা, সায়ানের মতে রুশি খুব বেশি সুন্দর, তার চেহারায় মায়া কাজ করে। দীঘল কালো চুল, টানা চোখ আর খাড়া নাক সবমিলিয়ে খুবই সুন্দরি এক শ্যামল বর্ণের নারী!তিনি ওর তাকিয়ে বললো
“ও ছোটু! মাশাল্লা কতো বড় হয়ে গেছে!সেদিন ছবিতে এইটুকুন দেখলাম! পাখির সাথেও তো একটা ছবি আছে সেটা আমাদের ঘরে টানানো আছে।কি সুন্দর লাগছিলো ওকে!”
কুঞ্জন নিজের কৌতুহলি মন দমাতে না পেরে প্রশ্ন করলো
“আপনি?”
“বলোতো আমি কে?”
কুঞ্জনের যদিও মনে হচ্ছে উনি রুশি তবে কনফার্মেশন চাচ্ছে ও, তাই মায়ের দিকে তাকালো। ও মা বিশেষ কোন ভংগি করলো তাই বুঝার ক্ষমতা নেই দেখে বাবার দিকে তাকালো। দেখে ওর বাবা মাথা নিচু করে বসে আছে!ডায়েরীর ইনান একসময় রুশিকে ভালোবাসতো কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সে রুশিকে পায়নি বরং বাস্তাবতা মেনে নিয়ে সামুকে বিয়ে করেছিলো! কিন্তু ছেলেরা তাদের প্রথম ভালোবাসা কখনোই ভুলতে পারেনা,ইনানের ক্ষেত্রে তার ব্যাতিক্রম হয়তো হয়নি। হয়তো এখন আর ভালোবাসা না থাকলেও স্মৃতি গুলো ভুলতে পারেনি! বা হয়তো ভালোবাসে কিন্তু সামুকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসে!আর সবচেয়ে বড়ো কথা বাস্তাবতা মেনে নিয়েছে!
কুঞ্জন সেই নারীর দিকে মুচকি হেসে বললো
“আপনি রুশি তাইনা?রুশানি আনাম!সম্পর্কে আমার মামি আর সায়ান জামিল খানের ছোট্ট পরী সাথে তার মিসেস খানও”
সবাই কুঞ্জনের কথায় চমকে উঠলো! সবার জিজ্ঞাসু চাহনি দেখে কুঞ্জন নিজের ব্যাগ থেকে সেই ডায়েরীটি বের করলো আর টেবিলের উপর রাখলো তাতে কেউ না চমকালেও সায়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! কুঞ্জন জানতো আর কেউ না চিনিলেও সায়ান চিনবে আর ঠিক তাই হয়েছে! কুঞ্জন তার দিকে তাকিয়ে বললো
“ছোট থেকেই দেখেছি আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো কামরা, তাদের সবগুলোতে আমার যাওয়া আসা ছিলো কিন্তু একটা কামরা আমাকে বেশ আকর্ষিত করতো যার দরজায় বিশাল বড়ো এক তালা ঝুলানো থাকতো! তাই সেই রুমের কাছে প্রতিদিন একবার হলেও ঘুরে আসতাম। বড়ো হওয়ার পর কৌতুহল খুব বেশি থাকলেও অনেক খুঁজে সেই দরজার চাবি খুঁজে পাইনি, তাই কৌতুহল দমাতে না পেরে একদিন সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর সেই রুমের তালা খুললাম মায়ের চিকন ক্লিপ দিয়ে। রুমটা বেশ সাজানো গুছানো ছিলো, মনে হচ্ছিলো কেউ পরম যত্নে নিজ হাতে সবটা সাজিয়েছে! সবকিছু দেখতে দেখতে একসময় বিছানার নিচে একটা ডায়েরী খুঁজে পেলাম,শুরুটা এতোটাই আকর্ষণীয় ছিলো যে প্রতিদিন নিয়ম করে লুকিয়ে সেই ঘরে গিয়ে এই ডায়েরী পড়ে আসতাম আর কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি!প্রথমে ভেবেছিলাম কোন সাহিত্যিক খুব সুন্দর করে একটি গল্প সাজিয়েছে যার মাঝে একজন ছিলো রুশি আরেকজন সায়ান!দুজনের জীবনেই কিছু অতীত, কিছু কষ্ট, বিচ্ছেদ আর ধোঁকা ছিলো! সম্পুর্ণ বিপরীত দুটো চরিত্র হলেও তারা কোন এক দিক দেখে একই সুত্রে গাঁথা!কিন্তু সেই কথাগুলোর এক পর্যায় আমি দুটো নাম খুঁজে পাই, একটা হচ্ছে ইনান আরেকটা সামু!আমার বাবা মায়ের নাম তখন বুঝতে পারো এটা কোন মনগড়া গল্প নয় বরং বাস্তবতা!কেউ একজনের আত্মকথা! আমি ডায়েরীর লিখার শেষপাতা পর্যন্ত পরেও সবটা জানতে পারিনি, অনেক প্রশ্ন, অনেক কিন্তু থেকেই গেলো। আমি সেই উত্তর খুঁজতে আমি এতোদুর এসেছি শুধু জানতে সায়ান-রুশির সাথে এরপর কি হয়েছিলো আর তাদের সেই মেয়েটি কোথায়?আমি জানি আমার এই প্রশ্নের জবাব আপনাদের কাছে আছে তাই আমি সবটা জানতে চাই সেই সায়ান রুশিকে কি করে পেয়েছিলো আর সেই রুশি সায়ানকে এতো সহজে কি করে মেনে নিলো?”
#চলবে
গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৫৪
সায়ান একদৃষ্টিতে ডায়েরীর দিকে তাকিয়ে আছে, এই ডায়েরীতে ওদের কাটানো হাজারো স্মৃতি রয়েছে যাতে আছে কিছু ভালো অনুভুতি সাথে একরাশ তিক্ততা আর কষ্ট! এই জীবনে কম কষ্ট পায়নি ও আর না রুশি পেয়েছে। রুশিকে যতোটা সহজে পেয়েছে তার থেকেও বেশি কঠিন ছিলো ওকে ধরে রাখা। ওদের সম্পর্কে অনেক উত্থান পতন ছিলো, ছিলো মিলন, বিচ্ছেদ আরো কতোকি!আর এই সবকিছুর সাক্ষী ছিলো এই ডায়েরী, ও মুচকি হেসে রুশির দিকে তাকালো আর তার হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো! রুশি বিচলিত কন্ঠে বললো
“আ্ আরে খাবার সার্ভ করতে হবে তো!আমি এখানে বসলে…”
“চুপচাপ বসো! এখানে এমন অনেক কিছু আছে যা তোমার জানা প্রয়োজন! তোমাকে এতোদিন বলিনি কিন্তু আজ যেহেতু বলছি তাই তোমারও শোনার অধিকার আছে!”
সায়ান রুশিকে নিজের পাশে বসিয়ে তারপর কুঞ্জনের দিকে তাকালো, ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি তখনো ঝুলছে!ও বলতে শুরু করলো
“এই ডায়েরীটা আমাদের বিছানার নিচে পেয়েছো তাইনা?আমি রেখে এসেছিলাম সেখানে লুকিয়ে। ভেবেছিলাম যদি বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ হয় আবার তবে এটা রুশিকে দেখাবো। এই ডায়েরীটা রুশির লেখনী, প্রথম থেকে আমাদের পুরো সম্পর্কের সবকিছু আছে এখানে। কিন্তু এর শেষ অংশ আমার লিখা,রুশি আমার কাছ থেকে যাওয়ার প্রায় পনেরো দিন পর আমি এই ডায়েরী খুঁজে পেয়েছি আর পড়ে খুব অবাক হয়েছিলাম! এই ডায়েরী পরার পর রুশিকে আরো বেশি মিস করতাম! পুরো বাড়িতে প্রত্যকটা কোনায় যেনো রুশির আনাগোনা ছিলো আর হুট করে ও কোথাও নেই সেটা মেনে নিতে পারছিলাম না! এই ডায়েরী কতোবার পড়েছি হিসাব নেই,প্রত্যেকবার পড়েছি এটা ভেবে যে ওকে হয়তো কম মিস করবো কিন্তু রুশির শুন্যতা আরো বেশি অনুভব করতাম!এদিকে পাখিও খুব ছোট, ওকে সামলাতে পারছিলাম না। পরে মা আর আমি মিলে নতুন বাড়িতে শিফট হয়ে যাই যার খবর কেউ জানতো না কারণ আমি সামাদ খানকে খুঁজে পাইনি তাই ভয় হতো যদি হুট করে কিছু করে বসে পাখির!তার মাঝেই ইনানের মা মারা যায় আর সামু-ইনান দুজনেই একা হয়ে। তাই আমরা সামু আর ইনানকে আমাদের সাথে শিফট হতে বলি যাতে ইনান অফিসে গেলে সামু একা না থাকতে হয়! আমাদের কোম্পানি তখন কো-পার্টনার ছিলো।আমাদের সেই ছোট্ট পরিবারকে দিন কাটছিলো আর আমি প্রহর গুনছিলাম কবে পাখি একটু বড় হবে আর কবে আমি দেশ ছাড়তে পারবো।”
এতোটুকু বলে সায়ান থামে আর দেখে কতোগুলো কৌতুহলি চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও আবারও বলতে শুরু করলো
“পাখির দুবছরের সময় আমি লন্ডনের উদ্দ্যেশ্য পাড়ি জমাই,সাথে চন্দ্রিকা, শাহেদ আর আমার মা।চন্দ্রিকা আর শাহেদের সাথে সম্পর্ক তখন স্বাভাবিক ছিলো আমাদের, আমরাই ওদের বিয়ে দেই কারণ প্রিয় মা আর বাবা ছিলো না আর তাদের সাথে ওদের যোগাযোগ ছিলো না, বলতে গেলে তারা রুশিকে বাঁচাতে কারো সাথে যোগাযোগ রাখে নি এমন নিজের সন্তান শাহেদের সাথেও না।
আমার মন বলছিলো রুশি লন্ডনে আছে। আর তাছাড়াও প্রিয় আন্টিরা পুর্বে লন্ডনে ছিলো তাই ভেবেছিলাম। উত্তর লন্ডনের ক্যামডেন টাউনে থাকতো তারা তাই আমিও সেখানে থাকা শুরু করি কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। পুরো লন্ডন শহর তন্নতন্ন করে খুঁজেও রুশিকে পাইনি, আমি বেশ হতাশ হলাম। মনের ভিতরের আশার প্রদিপগুলো একটি একটি করে নিভতে লাগলো, মনে হচ্ছিলো রুশিকে কি আর পাবো না আমি তাহলে। ততদিনে প্রিয় আন্টিরা লন্ডনে আসেনি তা আমি শিউর হয়ে গিয়েছিলাম!আমাদের এখানে আসার ছয়মাস পর ইনান আর সামু আমাদের সাথে দেখা করতে আসে তখন কুঞ্জন মানে তোমার বয়স ছিলো দেড় বছর আর পাখির বয়স আড়াইবছর। আমরা সবাই মিলে একদিন ঘুরতে বের হই আর ঘুরার মাঝখানে বেখেয়ালিতে আমি আর পাখি আলাদা হয়ে যাই। আমি পাখির হাত ধরে হাটছিলাম ঠিক তখনি তীক্ষ্ণ কিছু একটা আমার বাম হাত ঘেষে যায়,আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি মাস্ক পরা একজনের হাতে গান আর সে আমাকে এটাক করেছে! আমি পাখিকে কোনরকম কোলে নিয়ে ছুটতে শুরু করি আর বুঝতে পারি তারা অনেকজন তাই আমার পক্ষে একা লড়াই করা সম্ভব নয় তারউপর পাখি আছে সাথে তাই একটা পার্কিংয়ে গাড়ির পেছনে লুকিয়ে পড়ি। সারা রাস্তায় পাখি চিৎকার করে কান্না করলেও গাড়ির পেছনে এসে ও চুপ হয়ে যায় আর আমার গায়ের সাথে মিশে থাকে। এটা কি ভাগ্য ছিলো নাকি ও বুঝতে পেরেছে আমি জানিনা তবে আল্লাহ সেদিন সত্যিই সহায় হয়েছিলেন নাহয় ধরা পড়ে যেতাম!এদিকে দৌড়ানোর ফলে ফোন হারিয়ে ফেলেছি তাই কাউকে কল করতে পারিনি এমনকি কে কোথায় কি অবস্থায় আছে তাও জানা নেই। পরে যার গাড়ির পেছনে লুকিয়ে ছিলাম সে গাড়ি নিতে এসে আমাকে নোটিস করে আর আমাকে তার গাড়িতে উঠায়। তার সাহায্যে সাহিলকে কল করি আর জানতে পারি বাকি সবাই সেফলি বাসায় আছে।লোকটি আমাকে হসপিটালে পৌঁছে দেয় আর ডাক্তার আমার বেন্ডেজ করা অবস্থায় সাহিল সেখানে আসে।ওই যাত্রায় বেঁচে গেলেও আমরা এটাক সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনা তাই ইনান সামুকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেই আর আমরা ক্যালিফোর্নিয়ায় শিফট হওয়ার চিন্তা ভাবনা করি!”
কুঞ্জন হুট করেই প্রশ্ন করে বসলো
“তাহলে রুশি ক্যালিফোর্নিয়ায় ছিলো?আপনি তাকে সেখানেই পেয়েছেন!”
“নাহ! আমাদের ক্যালিফোর্নিয়ায় শিফট হওয়ার চান্সই হয়নি কখনো কারণ আমাদের যেদিন শিফট হবো তার আগের দিন রাতে আমার ফোনে মেসেজ আসে যাতে লিখা ছিলো
“সি তু ভিউক রিনকন্ত্রের তন এমিউর, ভিয়ন্সা প্যারিস”
প্যারিস ছাড়া আর কিছুই আমার বোধগম্য হয়নি, সেই রাতে সাহিলকে কল করে এটা ফরওয়ার্ড করি কারণ ও বহু ভাষায় এক্সপার্ট ছিলো! ও শুধু এইটুকু বলতে পেরেছিলো যে এটা ফ্রেঞ্চ এ কিছু লিখা কিন্তু কি ও জানেনা কিন্তু ও বের করতে পারবে। কতক্ষন পর ও মেসেজ করে পাঠায় এটার মানে হচ্ছে
“যদি নিজের ভালোবাসার দেখা পেতে চাও তবে প্যারিসে আসো”
আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম কি করে পেলে তখন ও বললো গুগলে সার্চ করে, এন্ড আই ওয়াজ লাইক আমার মাথায় এটা কেনো আসলো না?”
সায়ান নিঃশব্দে হাসলো যেনো নিজের বোকামিতে সে বেশ মজা পেয়েছিলো তারপর আবার বলা শুরু করলো
“আমি জানতাম না সে কে ছিলো আর তার উদ্দ্যেশ্য কি ছিলো, শুধু এইটুকু জানতাম রুশিকে খুঁজে পাওয়ার এটাই শেষ উপায় আর সেটা ভুল হোক বা সঠিক আমার কিছু যায় আসেনা। তার বিরোহে পুড়ে মরার চেয়ে তাকে খুঁজে বের করার সবধরনের চেষ্টা করতে আমি প্রস্তুত! আমি সেদিনই প্যারিসের যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি আর একসময় আমার গন্তব্যে পৌঁছে যাই! চন্দ্রিকা আর শাহেদ লন্ডনেই ছিলো তবে দক্ষিণ লন্ডনের টেমস নদীর পাশের এই বাংলোতে যা আমরা ফ্রান্সে যাওয়ার আগে কিনেছিলাম। কারণ মনে হচ্ছিলো ওখানে থাকা সেফ হবে না, আমি আর পাখি সাথে সাহিল আমরা ফ্রান্সের প্যারিসে পৌঁছালাম কিন্তু ওই মেসেজ ছাড়া আর কোন ক্লু ছিলো না। আর সবচেয়ে বড়ো কথা ওই নাম্বার বন্ধ ছিলো, আমি রুশিকে খুঁজতে লাগলাম পাখিকে নিয়ে কিন্তু পাইনি। একদিন সাবওয়ের পাশ দিয়ে আমি একা হাঁটছিলাম, পাখি সাহিলের কাছে ছিলো।আমি বেশ অন্যমনস্ক ছিলাম তাই কোনসময় রাস্তায় চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। হঠাৎ একজোড়া হাত আমাকে টান দিয়ে সরিয়ে দেয় আর আমি হুশে ফিরে আসি। আমি না তাকালেও আমার হাত পা কাঁপছিল, এই স্পর্শ আমার চেনা ছিলো বহুদিনের! আমি না তাকিয়ে বুঝতে পারছিলাম ও রুশি, বহুকষ্টে তাকিয়ে দেখলাম রুশি বাংলায় বকছে আমায় আর কিছু কাগজ নিচ থেকে উঠাচ্ছে। ও দাঁড়াতেই নিজেকে সংযত করতে পারিনি, কি হয়েছে সব ভুলে গিয়েছিলাম! শুধু এইটুকু জানতাম ও আমার রুশি, আমার ভালোবাসা!আমি হুট করে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলাম “আমি পেয়েছি তোমায়, খুঁজে পেয়েছি!”
আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাকে ও ধাক্কা দেয়নি বরং জড়িয়ে ধরে ছিলো শক্ত করে কিন্তু আমি ছেড়ে দিতেই চলে যায় সামনে থাকা গাড়িতে করে আর আমি বাঁধা দেয়ার সময়ই পায়নি। আমি সেখানেই স্তব্ধ ছিলাম কিছুক্ষণ, মনে হচ্ছিলো আমি কি পেয়েও আবার হারিয়ে ফেললাম?মাথা কাজ করছিলো না কিন্তু সেই রাস্তার পাশে থাকা কাগজ দেখে সেটা হাতে উঠিয়ে নিলাম, এটা সেই কাগজ ছিলো যা রুশি উঠাচ্ছিলো। হাতে নিতেই দেখি একটি এনজিওর কাগজ যাতে ডোনেশন চাচ্ছে!মনে হলো হয়তো এখানে গিয়েই ওকে পাবো,সেদিন আমি ঠিক কতো খুশি ছিলাম বলে বোঝাতে পারবো না”
কুঞ্জন উৎসুক মনে প্রশ্ন করলো
“তাহলে সেই এনজিওতে তাকে পেয়েছিলেন?”
সায়ান কিছু বলবে তার পুর্বেই রুশি বলে উঠলো
“সেই এনজিওতে আমি জব করতাম না, মাঝেমাঝে ভিজিট করতাম আর সেই সুবাদে তাদের সাহায্য করছিলাম তাই ও আমাকে সেখানে গিয়ে পায়নি। কিন্তু সেদিন সায়ানের হুট করে জড়িয়ে ধরা আমার মনে বেশ দাগ কেটেছিলো। আমি প্যারিসে প্রায় আড়াই বছরের বেশি ছিলাম কিন্তু আমি বেশ শুন্যতায় ভুগতাম আর সবচেয়ে বড় কথা মা সবমসময় একটা কথাই বলতো যে আমি কোন সম্পর্কে জড়াতে পারবোনা কিন্তু তার কারণ কখনোই বলতো না। আর সত্যি বলতে এখানকার ইউনিভার্সিটিতে আমাকে কম ছেলে প্রোপোজ করেনি কিন্তু আমি সবমসময় শুন্যতায় ভুগতাম। মনে হতো কিছু একটা আমার কাছে নেই, কাউকে আমি খুব মিস করছি কিন্তু সে কে তাই আমার জানা নেই। যখনি তাকে ভাবার চেষ্টা করতাম আমার বুকে ব্যাথা হতো, খুব কষ্ট হতো তাই আমি ভাবতাম না কিন্তু সায়ানকে দেখে একমুহুর্তের জন্য সেই শুন্যতা যেনো পুরণ হয়ে গিয়েছিলো। মাকে প্রশ্ন করেছিলাম সেদিন যে আমার লাইফে কেউ ছিলো কিনা বা আমি কি কাউকে ভুলে গিয়েছি যাকে ভুলে যেতে চাইনি। কিন্তু মা কিছু বলেনি!আমি তাই ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেই কারণ আমি সবসময় তার কথা ভাবতাম যাকে আমার মনে নেই যার ফলে মাথায় খুব প্রেশার পড়ে আর আমি জ্ঞান হারাই। যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি ছোট দুটো হাত আমাকে ধরে আছে আর মাম্মাম বলে ডাকছে।আমি কেনো জানিনা অবাক না হয়ে খুশি হয়েছিলাম অনেক! আমার হসপিটালের দিনগুলোতে সেই বাচ্চাটি ছিলো সাথে। নাম জিজ্ঞেস করলে বলতো ‘আমাল লাম পাখি’। মেয়েটির কথার মাঝে শুধু বাবা ছিলো কিন্তু মা ছিলো না, মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলতো ‘তুমি তো আমাল মাম্মাম’ আমিও একসময় বিশ্বাস করতে থাকি ও আমার মেয়ে। হসপিটালে থাকাকালীন সায়ান আমার সাথে দেখা করেনি কারণ তার ধারণা ছিলো আমার সাথে দেখা করলে আমার মাথায় আবার প্রেশার পড়তে পারে। ধীরেধীরে আমি পাখিকে পেয়ে স্বাভাবিক হয়ে যাই আর সম্পুর্ণ ওর মা হয়ে উঠি আর একদিন হুট করে পাখির বাবা মানে সায়ান আসে আমার সামনে। তখন আমার অবস্থা বেশ স্টেবল ছিলো, সে আমাকে বেশি কিছু বলেনি শুধু এইটুকু বলেছে যে আমাদের একসময় বিয়ে হয়েছিলো আর এটা আমাদের সন্তান আর যদি আমি চাই আমাদের সন্তান আমার সাথে থাকুক তবে আমাকে অতীত সম্পর্কে ভাবা বন্ধ করে দিতে হবে আর তার সাথে থাকতে হবে। যেহেতু কিছুই মনে নেই আমার তাই আমরা আবার বিয়ে করবো”
রুশি থামলো তারপর বললো
“আমার লাইফে পাখি ব্লেসিং ছিলো কারণ আমার এর পুর্বে বেঁচে থাকার কারণ ছিলো না।আমি সত্যিই পাখিকে আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম আর তার জন্য যদি একজন স্ট্রেঞ্জারকে বিয়ে করতে হয় তবে আমি করতে রাজি আছি। সবচেয়ে বড় কথা বাবা-মা এতে কিছু বলে নি তাই আমি বুঝে গেছি ওদের সাথে আমার অতীতে সম্পর্ক ছিলো তাই রাজি হয়েছি যদিও এতোটা সহজ ছিলো একজন অপরিচিত মানুষকে বিশ্বাস করা কিন্তু আমি সেই রিস্ক নিয়েছিলাম আর আমি ঠকিনি। সায়ানের চেয়ে ভালো হাজবেন্ড আমি আর কোথাও পাবো না, আর না পাখির মতো মেয়ে। আমার অতীতের কিছুই মনে নেই তবে বর্তমানে তারা আমার সাথে আছে তাই আমার কোন রিগ্রেট নেই। আমি বর্তমান নিয়ে বেঁচে আছি আর ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।হ্যা আমি আমাদের অতীতের মুহুর্তগুলো মনে করতে চাই, কিভাবে দেখা হয়েছিলো আমাদের, কখন আমি তাকে ভালোবেসেছি, আমাদের লাভ কনফেশন সবকিছু!কিন্তু তার থেকেও বেশি আমি বাঁচতে চাই তাদের সাথে আর আমি তাদের আবারও ভালোবাসি।ব্যস এইটুকুই অনেক!”
কুঞ্জন মুচকি হাসলো সবটা শুনে, ভালোবাসা হয়তো এমনি। সব ভুলে গেলেও অনুভুতি ভুলা যায়না তাই হয়তো রুশি আবারও এতো সহজে সায়ানকে ভালোবাসতে পেরেছে!ও বলে উঠলো
“আচ্ছা সায়ান মামাকে সেই মেসেজ কে করেছিলো যে রুশি মামি প্যারিসে আছে?”