Sunday, July 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1370



শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১২

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১২
#অধির_রায়

দেয়ালে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে নিয়তির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্বণ৷ নিয়তি নির্বণের তাকানি দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়৷ ড্যাব ড্যাব করে শুধু তাকিয়েই থাকেনি চোখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে রেখেছে৷

— ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” স্যার কিছু বলবেন? এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন?”

— মুচকি হেঁসে, ” মিস নিয়তি তুমি নিজেকে ওভার স্মার্ট ভাবো। কিন্তু তুমি ততটাপ স্মার্ট নয়।”

— প্লিজ স্যার হেয়ালি না করে কি বলতে চান? ধাঁধা আকারে কিছু আমার দিকে ছুঁড়ে মারলে আমি তার সমাধান বের করতে পারি না৷

— আজ মাকে বাহিরে বের করার খুব দরকার ছিল। ডাক্তারের কাছে নেওয়া অব্ধি ঠিক আছে৷

— স্যার সেই সকালের বিষয় আপনি এখনো ভুলেননি। মাকে হাঁটানোর জন্য আমি বাহিরে নিয়ে গেছি৷

— হ্যাঁ আমি মানলাম তুমি মাকে হাঁটানোর জন্য বাহিরে নিয়ে গেছো। “তাহলে মাকে ফেলে দিচ্ছে কেন? বাড়িতে কি সার্ভেন্টের অভাব পড়েছে। তাদের ডাক দিলে তারা মনের সুখে কাজ করে দিত।” চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।

— স্যার এখানে রাগের কি হলো? আমি ভেবেছিলাম মাকে আমি একাই নিয়ে যেতে পারব। কিন্তু সদর দরজায় কিছু একটার সাথে আটকে পড়ে যাচ্ছিলাম তার জন্য..

— ব্যাস৷ আমি তোমার মুখ থেকে কোন এক্সকিউজ শুনতে চাইনি৷ তোমাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলেও তুমি তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে চাও না৷ তুমি ভেবে নিয়েছো তুমি একাই সব করে মহান সাজবে৷

— নিয়তি মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আসলে স্যার আমি এমনটা কখনো চাইনি৷ আমার নিজের মা নেই৷ আমি উনাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসি৷”

— ন্যাকা কান্না বন্ধ কর৷ কথায় কথায় চোখে জল আসে কোথা থেকে? আবার কিনা নিজেই বলে উঠে, ” চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে। ”

— স্যার আমি সত্যি বলছি আমি মার কোন ক্ষতি চাইনা৷ আমিও চাই মা আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠুক। মা সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসে৷

— নিয়তি আমি তোমাকে আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, “আমার মা আমার কাছে সব৷ যদি মায়ের যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোমাকে ছাড়বো না৷”

— স্যার মায়ের কিছু হবে না৷ ডাক্তার তো বলেছে মা এখন বিপদমুক্ত। মায়ের বিপি, হার্ট, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷

— হ্যাঁ আমিও সেটা জানি৷ আর হ্যাঁ তোমাকে কতবার বলেছি মা সামনে আমাকে স্যার ডাকবে না৷ আজ থেকে কোথাও আমাকে স্যার ডাকবে না৷

— “ওকে স্যার। ” মাথা নিচু করে বলে উঠে।

— আবার স্যার বলছো। তোমাকে প্রথম দিন বলা হয়েছে আমাকে স্যার বলা বন্ধ করবে৷

— হাত কাচুমাচু করে ঠিক আছে। আর স্যার বলবো না৷ এখন প্লিজ আমার উপর রেগে থাকবেন না৷

— মনে থাকে যেন৷ আমি মাকে দেখে আসি মা ঘুমিয়ে আছে কিনা৷

— ওকে স্যার৷

— আবার স্যার।

নির্বণ তেড়ে নিয়তির কাছে যেতেই পা স্লিপ করে নিয়তিকে নিয়ে বিছানায় পড়ে যায়। নিয়তি স্নান করার পর ভেজা চুল শুকিয়েছে সেখানে। ভেজা চুলের জল ফ্লোরে পড়ে ছিল৷ নির্বণ অস্বাভাবিকভাবে ফ্লোরে পড়ে থাকা জলে পা রাখতেই স্লিপ খায়৷

নির্বণ পড়ার সময় নিয়তি যেন ব্যথা না পায় সেজন্য নির্বণ হাত বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্তু নির্বণের ঠোঁট জোড়া নিয়তির ঠোঁটে লেগে যায়৷
__________

— “মিস নিয়তি তুমি নিচে বিছানা করছো কেন?” ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে

— আমি খেয়াল করেছি আপনি সোফায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না৷ সেজন্য আজ থেকে আমি মাটিতেই থাকব৷ আপনি বিছানায় থাকবেন৷

— এই মেয়ে পাগল হলে নাকি৷ মাটিতে শুয়ে নিজেকে কি প্রমাণ করতে চাও?

— কিছুই না স্যার৷ আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব সারাজীবন। আপনার জন্য আজ আমার বাবা সুস্থ। এর থেকে বেশি কিছু চাইনা৷

— ওকে ফাইন। তুমি ফ্লোরে শুয়ে ঠান্ডা লাগাবে আর সেই দায় বইতে হবে আমায়৷ বলবে আমি কোন খেয়াল রাখি না৷

— স্যার আপনি ভুল ভাবছেন? আমার কিছু হবে না৷ বাংলায় একটা কথা আছে , ” ব্যাঙের আবার সর্দি।” ধরে নেন আমি একটা ব্যাঙ৷

— তোমায় ডায়লগ বন্ধ হলে তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই কর৷ তোমাকে তো বুঝানো কোনদিন সম্ভব হয়নি৷

নিয়তি আর কোন কথা না বাড়িয়ে ফ্লোরে বিছানা করতে শুরু করে দেয়৷ নির্বণ এদিকে রাগে ফুসফুস করছে। মনে মনে বলছে, ” কিছু মানুষের মমতা দেখলে নিজেরই করুণা হয়৷”

নিয়তি বিছানা করে বালিশ নিতে যাবে, ঠিক তখনই নির্বণ নিয়তির সুন্দর বিছানাটি ডাস্টবিনে পরিণত করে। নিয়তির বিছানায় ইচ্ছা করে জল ঢেলে দিয়ে বিছানা স্থানচ্যুত করে ফেলে।

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” স্যার কি করলেন আপনি? আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আর আপনি আমার বিছানা ডাস্টবিনে পরিণত করলেন৷” এভাবে জল ঢেলে দেওয়ার মানে কি?”

— কিছু না মিস নিয়তি৷ তুমি তো নিজের মুখেই স্বীকার করলে “ব্যাঙের আবার সর্দি।” ব্যাঙ তো জলে বাস করে। সেজন্য তোমার জন্য জলের ব্যবস্থা করলাম৷

— নিয়তি চোখ পাকিয়ে, ” আমি একজন মানুষ৷ সারারাত আমি কি জলের মাঝে থাকব।”

— তুমি মানুষ আমার জানা ছিল না৷ একটি আগেই বললে ব্যাঙ তো জলে বাস করে৷ বাই দ্যা ওয়ে আমার ঘুম পাচ্ছে। তুমি চাইলে আমার সাথে বেড শেয়ার করতে পার৷

আপনার সাথে আমি কোনদিনও বেড শেয়ার করব না৷ আমিও দেখিয়ে দিব আমি জলে থাকতে পারি৷ আমি বজ এখানেই ঘুম আসব৷ দেখি আপনি কি করেন? আপনার জিত যদি আকাশ সমান তাহলে আমার জিত সপ্ত আকাশ পর্যন্ত।

নিয়তি বিছানা ঠিক করে সেই ভেজা বিছানায় ঘুমাতে যাবে৷ নিয়তি রাগে গজগজ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ দেখতে পাই এই মেয়ে ভাঙবে ঠিক মচকাবে না৷ নির্বণ নিয়তিকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” এখানে উঠার চেষ্টা করলে পা ভেঙে দিব৷ আমি বলেছি আজ থেকে তুমি আমার সাথে বেড শেয়ার করবে৷ আমার কথায় শেষ কথা৷ ”

— আমি পারব না আপনার সাথে বেড শেয়ার করতে৷ আমি বরং সোফায় শুয়ে পড়ব৷

— এই মেয়ে তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ যার জন্য তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ব৷ তুমি চাইলে আমাদের মাঝে বাংলাদেশ ভারত বর্ডার রেখা টানতে পার।

— হ্যাঁ আমি তাই করব৷ আমি বাংলাদেশ ভারত বর্ডার রেখা টানব। মাঝখানে বালিশ থাকবে৷ আপনি আমার দিকে আসবেন না। আমি আপনার দিকে যাব না৷

বিছানার মাঝে কোলবালিশ রেখে দুই জনে দুইদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে। কারো চোখে ঘুম নেই৷ দু,জনে ঘুমে ছটফট করছে তবুও ঘুমাতে পারছে না৷ কখন যে তারা ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷

___________

নির্মল অম্বরে নিজের দ্যুতি ছড়িয়ে দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। পূর্বের স্বচ্ছ কাঁচের জানালা বেধ করে তার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন৷ পরো ঘর আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে।

নিয়তিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে নির্বণ৷ আজ নির্বণের আগে নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি চোখ মেলে দেখে নির্বণ তাকে বাহুজড়ো করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে৷ নিয়তি নির্বণের বুকে ছোট বাচ্চা মেয়ের মতো শুয়ে আছে৷

নিয়তি নির্বণের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু নির্বণ শক্ত করে চেপে ধরাতে নিয়তি ছাড়াতে ব্যর্থ হয়। নিয়তির নড়াচড়াতে নির্বণ জেগে উঠে৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নেয়৷ নিয়তিকে এমন অবস্থায় মুখ গোমড়া নির্বণ দেখলে একশটা কথা শুনাবে৷

নির্বণ চোখ মেলে দেখে নিয়তি ছোট অবুঝ শিশুর মতো নির্বণের বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে৷ নিয়তিকে ডাক দিতে নিয়েও ডাক দিল না৷ নির্বণ চাইনি নিয়তির ঘুম ভাঙাতে৷ নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির মাথা বালিশের রাখে৷ নিয়তির মাথা বালিশের উপর রেখে সরে যেতে নিলেই নিয়তির চেইনের সাথে নির্বণের চেইনের টান পড়ে৷ নিয়তি ব্যথা পেয়ে “আউচ” করে উঠে।

— নিয়তি না জানার ভান করে বলে উঠে, ” আপনার লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই৷ এভাবে আমার দিকে ঝুঁকে আছেন কেন?”

— নির্বণ আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” প্লিজ নিয়তি আমাকে ভুল বুঝবে না৷ আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি৷ আমার গলার চেইন তোমার গলায় চেইনের সাথে লেগে রয়েছে৷”

— হুংকার দিয়ে, ” কি! আপনি ইচ্ছা করে এমন কাজ করেছেন৷ আমার কাছে আসার জন্য৷ ”

— করুন স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ নিয়তি বুঝার চেষ্টা কর৷ তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না৷ আসলে ঘুমের মাঝে তুমি আর আমি৷”

— কি আপনি ঘুমের মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন! আপনার তো সাহস কম নয়৷

— এক সেকেন্ড তুমি কি করে জানলে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলাম৷ তুমি নিশ্চয় জানতে তাহলে আমাকে স্মরণ করিয়ে দাওনি কেন? তোমার দোষের কারণে এমন হয়েছে৷

নিয়তি মনে মনে বলে, ” নিয়তি তোর মাথায় কোন বুদ্ধি নেই৷ কোন সময় কোন কথা বলতে হয় তোর জানা নেই৷ তোকে পিটিয়ে উগান্ডা পাঠাতে হবে৷”

— কি হলো মিস নিয়তি? তুমি ইচ্ছা করে এমন কাজ করেছো তাইতো৷

— আপনি পাগল হলেন নাকি৷ আমি ইচ্ছা করে এমন কাজ করব৷ আর আমি এমনি বললাম৷ কারণ বালিশ বিছানার নিচে পড়ে আছে৷ আমার তো মনে হয় আপনাকে রাচি থেকে ঘুরে আসতে হবে৷ না…. বাংলাদেশের পাবনা পাঠাব।

— এই মেয়ে কথা বন্ধ করে চেইনের বাঁধা খুলতে সাহায্য কর। এতেই আমাদের মঙ্গল হবে৷

_____________

— নিয়তি চা নিয়ে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে, ” গুড মর্নিং মা৷ ঘুম কেমন হলো? ”

— গুড মর্নিং। নির্বণ আজ এত সকালে অফিসে চলে গেল কেন? তুমি কিছু জানো।

— আজ অফিসের মিটিং আছে৷ সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা আজ সকল ডিজাইন দেখতে আসতে হবে৷ ক্লাইনরা তো শুধু উপস্থাপন দেখেছে। এখন দেখবে আমাদের উপস্থাপন কথাটা কার্যকর।

— আমার কাছে একটু বসে যা৷ আজ তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না৷ নির্বণ বলে গিয়েছে তোমাকে যেন কোন কাজ করতে দেওয়া না হয়।

— নিয়তি অবাক হয়ে, ” কি বলছেন মা! স.. নির্বণ আমাকে কাজ করতে মানা করেছে। উনি বললেই হলো আমি কাজ করেই যাব৷”

— মাথা ঠান্ডা রাখ।এমন সময় কাজ না করাই ভালো।

— নিয়তি ব্রু কুঁচকে, ” এমন সময় মানে কি? আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন৷”

— মুচকি হেঁসে, ” তেমন কিছু না সোনা মা৷ তুমি পরে নিজে থেকেই জানতে পারবে৷ অপেক্ষা কর এবং দেখে যাও৷ ভবিষ্যতে কি হয়? ”

— আমার মাথায় কোন ধাঁধার সমাধান আসছে না৷ তবে আমি একটা কথা জানতে চাই?

— কি কথা জানতে চাও? আমার সোনা মা কিছু জানতে চায় আর আমি সেটা না বলে থাকতে পারি৷

— নির্বণ এখন সকলের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খায় না কেন?

নিয়তির কথা শুনে নির্বণের মায়ের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়৷ হাসিমাখা মুখটা আষাঢ়ের ঘনঘটার মতো কালো হয়ে যায়৷ মুখে পড়ে চিন্তার ছাপ৷

চলবে….
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১১

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১১
#অধির_রায়

নির্বণ নিজেকে রক্ষা করতে পারল না৷ ছোঁয়ার কাছে শেষে হার মানতে হলো। নির্বণের চোখে শুধু তার মা বাবার ছবি ভেসে উঠছে৷ নির্বণ জলে হাবুডুবু খাচ্ছে।নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে৷ ধীরে ধীরে জলের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।
বৃষ্টি বাড়ির জেলেরা নদীতে মাছ ধরছিল৷ হঠাৎ করে জলে পড়ার বিকট শব্দ পেয়ে জেলেরা নৌকা ঘুরিয়ে নির্বণের দিকে আসে৷ তারাই নির্বণকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে।

নির্বণ আর কিছু বলতে পারল না৷ নির্বণ কান্নায় ভেঙে পড়ে। নির্বণ নিয়তির হাত চেপে রেখে কান্না করে করছে ৷ নির্বণের সাথে নিয়তিও কান্না করে করছে ৷ একটা মেয়ে কিভাবে জীবনটা শেষ করে দিল?

— নিয়তি চোখের জল মুছে বলে উঠে, ” আচ্ছা স্যার ছোঁয়ার সাথে আপনার পরিচয় হয় কিভাবে? কিভাবে তার প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েন?”

নির্বণ নিয়তির দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” আজ বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই৷ আমি আজ তোমাকে সব বলব।”

_________

–“আজ রাতে তুমি আর আমি এক থাকে থাকব। অনেক মজা হবে সুইটহার্ট। তোমাকে অনেক সুখ দিব।” ছোঁয়ার বুকের ওড়না টান দিয়ে দুইটা বখাটে ছেলে বসে উঠে।

— ছোঁয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ দাদা! আমার সাথে এমন করবেন না৷ আমি তো আপনাদের বোনের মতো।”

— প্রথমজন অট্টাহাসি দিয়ে বলে উঠে, ” দুনিয়ার সব মেয়ে আমাদের বোন হলে আমাদের চাহিদা কে মেটাবে। ”

— করুন স্বরে হাত জোর করে বলে উঠে, “আমি আপনাদের পায়ে পড়ি৷ আমার সম্মান নষ্ট করবেন না৷” নারীর সম্মান নারীর কাছে সবচেয়ে দামী।

— “এই পল্টু আমার সুইট বেবির মুখটা বেঁধে গাড়িতে তুল। আজ আমাকে সোহাগ করবে, আমার এই সুইট বেবি৷” ছোঁয়ার গালে হাত দিয়ে বলে উঠে।

পল্টু ছোঁয়ার হাত পিছন দিক থেকে চেপে ধরে। বখাটের প্রথম ছেলে ছোঁয়ার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়৷ পল্টু ছোঁয়ার ওড়না নিয়ে পিছন দিক থেকে ছোঁয়ার হাত বেঁধে ফেলে। ঠিক তখনই রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছিল নির্বণ চৌধুরী।

নির্বণ গাড়ির ব্রেক কষে সিচুয়েশনে বুঝার জন্য৷ ল্যামপোস্টের আলোতে দেখা যাচ্ছে দুইজন ছেলে মিলে একটা মেয়েকে ইভটিজিং করছে৷ নির্বণ সময় নষ্ট না করে হকি খেলার স্টিক নিয়ে একটা ছেলেকে পিছন থেকে মাথায় আঘাত করে। ছেলেটি মাটিতে থুবড়ে পড়ে৷

— নির্বণের হাতে হকি স্টিক দেখে পল্টু বলে উঠে, ” ও হিরো, এখানে হিরোগিরি দেখাতে এসেছিস৷”

— নির্বণ হাতের তলায় হকি স্টিক আপ ডাউন করতে করতে বলে উঠে, ” এই মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে ভালো ভালোই চলে যা৷ তাহলে তোর অবস্থা তোর সঙ্গীর মতো হবে৷ ”

— পল্টু নিজের পকেট থেকে গুলি বের করে,” তুই আমার পথ থেকে সরে দাঁড়া। আমার পথে বাঁধা দিতে আসলে তোকে স্বর্গে পাঠিয়ে দিব৷”

— নির্বণ ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আমার কোন ক্ষতি করবেন না৷ আমি চলে যাচ্ছি৷ আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন৷”

— চালাকি করার চেষ্টা করবি না গুলি চালিয়ে দিব৷

নির্বণ পিছনে ঘুরে পায়ের পাতার উপর ভর করে রাউন্ড করেই পল্টুর হাতে হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করে৷ যার ফলে পল্টুর গুলি নিচে পড়ে যায়৷ নির্বণ পল্টুকে হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করে আহত করে। ছোঁয়াকে নিয়ে সেখান থেকে তারাতাড়ি কেটে পড়ে।

— “এই মেয়ে রাত দু’টার পর তোমার বাহিরে কি কাজ থাকতে পারে? নাম কি তোমার?” ক্ষেপে বলে উঠে।

— কান্না করে দিয়ে, ” আমি ছোঁয়া। আমার মা অসুস্থ। উনার জন্য মেডিসিন নিয়ে ফিরছিলাম৷ তখন তারা আমার পথ আটকায়৷ ”
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার বাসা এটাই আমি চলে যেতে পারব৷

ছোঁয়া চলে যায় তার বাসায়। নির্বণ ফিরে এসে আর ঘুমাতে পারেনা৷ চোখের সামনে ছোঁয়ার মায়াবী মুখটা ভেসে উঠে। এভাবে কিছুদিন পার হয়ে যায়৷ নির্বণ প্রায় ছোঁয়াকে ভুলে গেছে৷ হঠাৎ করেই ক্যাফেতে ছোঁয়ার সাথে নির্বণে দেখা৷ সেদিন নির্বণ ছোঁয়ার সাথে অনেক সময় কাটায়৷ এরপর থেকে চিরকুট লেখা। ফোনে কথা বলা৷ ধীরে ধীরে ছোঁয়ার ভালোবাসায় আটকে যায় নির্বণ।
_________

নির্বণ আর কিছু বলতে পারে না৷ কান্না করতে থাকে৷ আজ নিজেকে নিজের কাছে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। নির্বণ আর কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ নিয়তি নির্বণকে বিরক্ত না করে নিয়তি ফ্লোরে শুয়ে পড়ে।

আঁধার কেটে নিয়ে আসে দিনের আলো। মানুষের মনে জাগিয়ে তুলে বেঁচে থাকার নতুন ইচ্ছা৷ সূর্য্যি মামার সকালের সোনালী রোদ্দুরের আলো থ্রাই গ্লাস বেঁধ করে নির্বণের চোখে পড়ছে৷ নির্বণ বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে যায়৷ নির্বণ ঘুম থেকে উঠে দেখে নিয়তি ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে।

— নিয়তির মুখে জল ছুঁড়ে মেরে, ” ভোরের প্রহর শেষ হতে চলছে মহারানী। উঠে নিজের কাজে যাও৷ ”

— ঘুম ঘুম নয়নে নির্বণের দিকে তাকিয়ে সুরু গলায় বলে উঠে, ” স্যার আপনি আমার গায়ে জল ছিঁড়ে মারলেন কেন? আমাকে ডাক দিলেই তো পারতেন৷ ”

— ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে, ” যে লোক মরার মতো ঘুমিয়ে থাকে তাকে এভাবেই জাগিয়ে তুলতে হয়৷”

নিয়তি চোখ বড় করে তাকাতেই নির্বণ ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” সালা খবিশ, তুই মানুষ হবি না৷ ছোঁয়ার তোর সাথে ঠিক কাজই করেছে। রাতে কত সুন্দর কথা বলল। এখনই গোমড়া মুখু হয়ে গেছে৷ মনে হয় জন্মের সময় মুখে নিম পাতার রস দিয়েছিল।
________

— মা আপনাকে আজ হাঁটতে হবে৷ এভাবে বসে থাকলে আর চলবে না৷

— অবাক হয়ে, ” কি আমি হাঁটতে পারব! ” আমার দ্বারা সম্ভব নয়৷

— কেন সম্ভব নয়? আপনি জানেন না ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়৷

— ইচ্ছা তো করে আবার সকলের সাথে হাঁটতে ঘুরে বেড়াতে। প্রকৃতির দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে।

— আপনি আজ বাহিরে যাবেন৷ আজ আপনাকে বাগানে ঘুরতে নিয়ে যাব৷

— আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” তুমি সত্যি বলছো! আমাকে বাহিরে নিয়ে যাবে৷ আমি সেই অনেকদিন থেকে বাহিরে বের হয়না৷ আমাকে একটু বাহিরে নিয়ে যাও৷”

— হুম বাহিরে নিয়ে যাব৷ তবে আমি নয়৷

— মুখটা ফ্যাকাশে করে বলে উঠে, ” তাহলে কে নিয়ে যাবে? আমার তাহলে আর যাওয়া হবে না৷ ”

— আপনাকে কেউ বাহিরে নিয়ে যাবে না৷ আপনি নিজে থেকে বাহিরে যাবেন৷

— কি আমি নিজে থেকে বাহিরে যাব! আর ইউ ক্রেজি? তুমি কি বলছো তা তুমি কি জানো?

— আমি পাগল নয়৷ আর আমি যা বলছি আমার আত্নবিশ্বাস থেকেই বলছি৷ আপনি ঠিক পারবেন, নিজ পায়ে হেঁটে বাহিরে যেতে। এখন ওঠেন তো৷ আর বসে থাকতে হবে না৷

— প্লিজ নিয়তি আমাকে এত বড় শাস্তি দিও না! আমার খুব ভয় লাগছে। যদি আমি পড়ে যায়৷ আমার তো এক পায়ের এখনো কোন শক্তি নেই৷

— “কে বলেছে শক্তি নেই? এইতো কত সুন্দর করে আপনি পা নাড়াতে পারছেন৷” নির্বণের মায়ের পা আপ ডাউন করে।
আমাকে ধরে ওঠার চেষ্টা করেন৷

নিয়তির হাত ধরে ওঠার চেষ্টা করেন। বার বার ওঠতে নিলেও পড়ে যাচ্ছেন৷ নিয়তির হাত শক্ত করে ধরে তিনি অবশেষে ওঠতে সক্ষম হন৷

— এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠেন, “আমি আর বাহিরে যেতে চায় না৷ আমি এখানেই ঠিক আছি৷”

— আপনি একদম ঠিক নেই৷ আমাকে ভর করে হাঁটার চেষ্টা করেন৷ আমি কোন কথা শুনতে চাই না৷

— পা ফেলব। আমি কি পারব?

— হুম পারবেন৷ আর হ্যাঁ পায়ে প্রচুর পরিমাণ ভর দেওয়ার চেষ্টা করবেন৷ মনে রাখবেন আপনার সমস্ত ভর আপনার পায়ে শক্তি ফিরিয়ে আনবে।

নিয়তির কাঁধের উপর এক হাত রেখে নিয়তিকে ভর করে ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছেন৷ নিয়তির অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিয়তি সেই কষ্টকে ভালোবাসার কাছে উৎসর্গ করে দিয়েছে। ডাইনিং রুমের মেইন দরজার কাছে আসতেই নির্বণের মা পা উল্টোভাবে ফেলার ফলে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ দৌড়ে এসে তাদের ধরে ফেলে।

— নির্বণ চোঝ রাঙিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে, ” একা পারবে না তাও একা করতে চাও কেন? মানুষের কাছে মহান সাজতে চাও৷ আজ যদি তোমরা পড়ে যেতে তাহলে কি হত?”

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” আসলে স্যার আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি ঠিক৷ প্লিজ ক্ষমা করে দেন৷ ”

— নির্বণের মা অবাক হয়ে বলে উঠে, ” নিয়তির তোমার মাথা ঠিক আছে৷ তুমি কাকে স্যার বলছো?”

নিয়তি জিহ্বায় কামড় দেয়৷ নির্বণও নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ভুল জায়গায় ভুল কিছু বলে ফেললে কেমন সিচুয়েশনে পড়তে হয় নিয়তি আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷

— নির্বণ মুচকি হেঁসে, ” আসলে মা নিয়তি আগে আমাদের অফিসে কাজ করত। সেখান থেকে আমাকে স্যার বলে। আসলে তার কাজের এক্টিভিটি দেখে আমি..”

— আর লজ্জা পেতে হবে না৷ আমি বুঝতে পারছি৷ আমাকে একটু বাগানে দিয়ে আয়৷

— ওকে মা৷

— নির্বণ তার মাকে পাঁজাকোলা নিতেই নিয়তি বলে উঠে, ” না না ভুলেও এমন কাজ করবেন না৷ মাকে হাঁটাতে হবে৷”

— দেখতে পাচ্ছো তো মায়ের কষ্ট হচ্ছে। মা হাঁটতে পারছে না৷ কেন জিত ধরে বসে আস?

— আপনি বুঝার চেষ্টা করেন। মাকে এখন হাঁটাতে হবে৷ মাকে এইটুকু কষ্ট সহ্য করতে হবে। মাকে হাঁটতে শিখতে হবে। আপনি বরং মাকে ধরে হাঁটানো শেখান৷

নির্বণ নিয়তির কথা বুঝতে পেরে তার মাকে পাঁজাকোলা থেকে নামিয়ে ধরে ধরে বাগানে নিয়ে আসে৷ মাকে দোলনায় বসিয়ে দেয়৷

নির্বণের মা অনেকদিন পর বাহিরে আসতে পেরে অনেক খুশি৷ চোখ বন্ধ করে সবকিছু উপভোগ করছে। আজ সামডে সেজন্য নির্বণ তার মায়ের পাশে বসে আছে। আজ অফিস বন্ধ।

— নির্বণ তার মাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে,” মা আমি আর কিছু চাইনা৷ তুমি তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও৷ আমি এটাই চাই৷”

নির্বণের মা কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়৷ ডাক্তার তো বলেছে তিনি আর মাত্র ৩০ দিন বাঁচবে। দেখতে দেখতে ১২ দিন কেটে গেছে। নির্বণ তার মায়ের ফ্যাকাসে মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করতে পারে।

— মাকে সাহস জুগিয়ে বলে উঠে, ” মা ডোন্ট ওরি। তোমার কিছু হবে না৷ ডাক্তারের তো সব কথা সত্যি হয় না৷ অনেক সময় তো ভুল হয়৷”

— নিয়তি নির্বণের পায়ের পাশে বসে বলে উঠে, ” মা আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ সৃষ্টি কর্তা আমাদের সাথে কোন অন্যায় হতে দিবেন না৷ জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে তিনটা জিনিসে আমাদের কোন হাত নেই৷ আপনাকে আমি আজ হসপিটালে নিয়ে যাব৷ কোন চিন্তা করতে হবে না৷”

এমন সময় বাগানে অরিন নামের একটা সার্ভেন্ট আসে৷ এসেই নিয়তিকে বলে উঠে, ” ছোট ম্যাম আপনি যেগুলো কাজ দিয়েছিলেন সব কলমপ্লেইন।”

— নির্বণ অবাক হয়ে, ” হোয়াট ইস কলমপ্লেইন৷”

নিয়তিও বুঝতে পারছে না কলমপ্লেইন কি? পরে বুঝতে পারল সে সব কাজ শেষ করেছে৷

— নিয়তিকে অরিনকে কাছে টেনে, “কলমপ্লেইন না৷ কমপ্লিট হবে।”

— ছোট ম্যাম ওটা কলমপ্লেইন হবে৷ আমি কলমপ্লেইনই বলব।

অরিনের কথা শুনে উপস্থিতি সবাই হেঁসে উঠে৷

চলবে…..

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১০

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১০
#অধির_রায়

— নিয়তি নির্বণের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে” আপনি যদি কাউকে মন থেকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আজ সব কিছু বলবে।”

— আমি কাউকে মন থেকে ভালোবাসি কিনা সেটা জেনে তোমার কি? তুমি আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়াও৷ আমাকে রাগিয়ে তুল না৷

— আমাকে একটা কথা বলবেন? আপনি রাগ করা ছাড়া আর কি করতে পারেন? মাঝে মাঝে হাসতেও তো পারেন৷

— মিস নিয়তি তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো৷ আমার পার্সনাল লাইফে ঢুকার চেষ্টা করবে না৷

— আমি ঢুকতে চাই না৷ আমি আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা করতে চাই৷

— সত্যি তাই! আমি ডিপ্রেশনে কেন আছি তুমি জানো? আমার লাইফ নিয়ে তোমায় মাথা ঘামাতে হবে না৷ আমার জীবনে এক সময় একজন ছিল।

— নির্বণ পিছনে ফিরে ওয়াসরুমে দিকে পা বাড়াতেই নিয়তি বলে উঠে, ” যদি বলি ছোঁয়া আপনার এমন লাইফের জন্য দায়ী৷ তখন কি করবেন?”

— নির্বণ ক্ষেপে নিয়তির হাত ধরে বলে উঠে, ” আমার সামনে ছোঁয়া নামটাও নিবে না৷ আমি ছোঁয়া নাম সহ্য করতে পারি না৷ ”

নির্বণ নিয়তির হাত খুব জোড়ে চেপে ধরে৷ ব্যথায় নিয়তির চোখে জল চলে আসে৷ টলমল চোখে নিয়তি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমার লাগছে৷”

— নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে মিহি স্বরে, ” সরি! আমার খেয়াল ছিল না৷”

— ইট’স ওকে। স্যার আমি যতটুকু জানি আপনি ছোঁয়াকে ভালোবাসেন৷ তাহলে তাকে ঘৃণা করার কথা কোথা থেকে আসছে?

— আমি এই নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না৷ ছোঁয়া আমার জীবনে কেউ না৷ ছোঁয়া আমার জীবনে একটা দুঃস্বপ্ন ছিল।

— ছোঁয়া আপনার জীবনে এখনো রয়েছে। আপনি তাকে এখনো ভুলতে পারেননি৷

— নির্বণ ভাঙা গলায়, ” হ্যাঁ আমি ছোঁয়াকে ভুলতে পারিনি৷ তার সেই মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো এখানো কানে বাজে।”

নিয়তি নির্বণের হাত ধরে নির্বণকে বিছানা বসতে বলে৷ নির্বণ নিয়তির কথামতো বিছানায় বসে পড়ে। নিয়তি এক গ্লাস জল নির্বণের দিকে এগিয়ে দেয়৷

— জলটা খেয়ে নেন৷ ভালো লাগবে৷ জল অনেক সময় মানুষের জীবনে শক্তি এবং সাহস জোয়ায়৷

নির্বণ জল খাওয়ার পর নিজের কোর্টটা খুলে ফেলে৷ অফিস থেকে এসে এখনো চেঞ্জ করা হয়নি৷ ট্রাই টাও খুলে রেখে দেয়৷

— নিয়তি নির্বণের পাশে বসে নির্বণের হাত ধরে, “স্যার আমি জানি আমি আপনার কাছে অন্যায় দাবী করছি৷ তবুও বলব মনের ভেতরে কষ্ট লুকিয়ে রাখতে নেই৷ আপনি আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন৷ আমি আপনাকে সাহায্য করবে ছোঁয়ার কাছে নিয়ে যেতে৷”

— অনেক দেরি হয়ে গেছে নিয়তি৷ ছোঁয়া আমার জীবনে আর নেই৷ সে ফিরে আসতে চাইলেও আমি তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব না৷ ছোঁয়াকে অন্ধের মতো ভালোবাসতাম৷”

— আপনার সাথে ছোঁয়ার কি হয়েছিল? যার জন্য ছোঁয়া সোনা ছেড়ে পিতল বেছে নিল।
________

নির্বণ বলতে শুরু করে….

নির্বণ কেবিনে বসে অফিসের কাজ করছিল৷ তখন ছোঁয়া নির্বণের কেবিনে প্রবেশ করে।

— ছোঁয়া নির্বণের কাঁধে হাত রেখে, ” আর কত কাজ করবে৷ চলনা একটু ঘুরে আসি৷ ”

— নির্বণ ছোঁয়ার হাত টান নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে, ” এই তো হয়ে এসেছে। জাস্ট অ্যা টু মিনিট। ”

— আহ্লাদীর স্বরে বলে উঠে, “রেখে দাও না এসব ফাইল। আগামীকাল চেক করে নিবে৷”

— রেখে দিতে পারি একটা শর্তে। যদি তুমি আমায়.. চোখের ব্রু নাচাতে থাকে৷

— ছোঁয়া চোখে মুখে হাত রেখে লজ্জা পেয়ে বলে উঠে, ” তুমি এত দুষ্টু কেন? সত্যি তুমি একটা অসভ্য।”

— নির্বণ ছোঁয়ার হাত সরিয়ে নাকে নাক ঘেষে, ” আমি শুধু তোমার প্রেমে অসভ্য। প্লিজ একটা মাত্র কিস৷ আর কিছু না৷

— চোখ বন্ধ করতে হবে৷

ছোঁয়ার কথা মতো নির্বণ চোখ বন্ধ করে ছোঁয়া নির্বণের গালে আলতো করে একটা কিস দেয়৷ কিস দিয়েই নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে।

— তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করলে না৷ আমি শোধসহ আসল তুলে নিব৷

— তোমার কথা শেষ হলে এখন যাওয়া যাক।

ছোঁয়া আর নির্বণ সেদিন অনেক ঘুরাঘুরি করে। এভাবে তাদের প্রেম আরও গভীর হতে থাকে।

একদিন নির্বণ তার মা বাবাকে নিয়ে বিয়ের কথা বলে৷ সে ছোঁয়াকে বিয়ে করতে চাই৷ বিয়ের কথা শুনে নির্বণের মা বাবা খুব খুশি৷

নির্বণ ছোঁয়াকে “নর্থ ক্যারোলাইনার” হোটেলে নিয়ে আসে। অনেক প্রকার গল্পে তারা মেতে উঠে৷ নির্বণ ছোঁয়ার দিকে অপলক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে।

— ছোঁয়া নির্বণের চোখে ফুঁ দিয়ে, ” এভাবে তাকিয়ে থাকবে৷ আমাদের তো বাড়ি ফিরতে হবে৷”

— ওকে চল।

ছোঁয়াকে নিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই নির্বণ ছোঁয়াকে কোলে তুলে নেয়৷

— এই কি করছ? সকলে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে?

— ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে বলে উঠে, ” আমি তো অন্য কাউকে কোলে তুলিনি৷ আমি আমার পাখিকে কোলে তুলে নিয়েছি৷”

— লজ্জা মুখে বলে উঠে, ” যা অসভ্য। ভরা লোকসমাজে আমার তো সম্মান আছে৷”

নির্বণ কোন কথা না বলে ছাঁদের দিকে হাঁটতে থাকে৷ ছাঁদে নিয়ে এসে ছোঁয়াকে নামিয়ে দেয়৷ ছোঁয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাতে রিং নিয়ে নির্বণ বিয়ের প্রপোজাল দেয়৷

ছোঁয়া হিরার রিং দেখে সাথে সাথে নিজের হাতে পড়ে নেয়৷ আর নির্বণকে একটা আলতো করে লিপ কিস দেয়৷ নির্বণ ভেবে নেয় ছোঁয়া তার প্রপোজালে খুশি৷

— নির্বণ মুখে হাসি রেখা নিয়ে বলে উঠে, ” তাহলে আমরা আগামী সানডে বিয়ে করে নিব৷ আমি মা বাবাকে সব কিছুর আয়োজন করতে বলি৷”

— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি এখন বিয়ে করতে প্রস্তত নয়৷ প্লিজ আমাকে বিয়েতে জোর করবে না৷”

ছোঁয়া এক ঝাঁক বিরক্তি নিয়ে চলে আসে৷ নির্বণ আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নেয়। এভাবে কেটে যায় প্রায় একমাস৷ কিন্তু ছোঁয়া নির্বণের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি৷ নির্বণ ফোন দিলে ছোঁয়ার ফোন সুইচ অফ পাই৷ ছোঁয়া যে বাসার ঠিকানা দিয়েছে সেটা ছোঁয়ার বাসা নয়৷

________

নির্বণ মন খারাপ করে ছাঁদে বসে বসে গিটারে টুং টুং শব্দ তুলার চেষ্টা করছে। ছোঁয়ার কোন বিপদ হয়নি তো। ছোঁয়া নিখোঁজ কিভাবে হতে পারে৷ তখন নির্বণের ফোন বেজে উঠে। ছোঁয়ার নাম্বার দেখে নির্বণের মৃত দেহে প্রাণ ফিরে আসে৷

— ছোঁয়া আমি জানতাম তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে৷ তুমি ঠিক আছো তো৷ এতদিন কোথায় ছিলে।

— অপর পাশ থেকে ছোঁয়া বলে উঠে, ” আমার সাথে বৃষ্টি বাড়ির ধামের ধারে ব্রিজে দেখা কর৷”

— তুমি সেখানে কি করছো? ওই জায়গায় কিভাবে পৌঁছলে।

ছোঁয়া কোন রিপ্লাই না দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে রাখে৷ ছোঁয়া বিপদে আছে জেনে নির্বণ তাড়াতাড়ি করে বৃষ্টি বাড়ি দামের ধারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়৷

সন্ধ্যার দিকে নির্বণ ব্রীজে পৌঁছে যায়। পাহাড়ি এলাকা সেজন্য সন্ধ্যায় কোন লোকজন নেই৷ একদম জনশূন্য জায়গা৷ নির্বণ এসে দেখে নিয়তি একটা ছেলের ঘাঁ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।

নির্বণ রেগে তাদের দিকে তেড়ে আসতেই ছোঁয়া সামনে এসে নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নির্বণ ছোঁয়ার এমন ব্যবহার দেখে খুবই আশ্চর্য হয়৷

— ছোঁয়া বলে উঠে, ” তোর মতো দুইটার ব্যবসীকে আমি বিয়ে করব৷ তোকে তো সাথে রেখেছিলাম নিজেকে প্রটেক্ট করতে।” আরও একটা কারণ আছে, ” সেটা হলো আমি গরিব৷ তাই তোর টাকা দিয়ে চলতে হয়েছে। আমার জীবনে তোর দিন শেষ এখন তুই যেতে পারিস৷ ”

— নির্বণ কান্না করে দিয়ে, ” প্লিজ ছোঁয়া আমাকে ছেড়ে দিও না৷ আমি তোমায় খুব ভালোবাসি৷”

ছোঁয়ার সামনে হাতজোড় করে ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসে পড়ে।

— ছোয়াঁ অচেনা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে, ” জান এই কালপ্যাট বেঁচে থাকলে আমাদের জীবনে সমস্যা হতে পারে৷ চল একে মেরে ফেলা যাক। ”

— ইয়া সিউর৷

দু’জনে এক সাথে নির্বণের বুকে লাথি মারে। যার ফলে নির্বণ ব্রীজ থেকে পড়ে যায়৷ কিন্তু নির্বণ নিজেকে বাঁচানোর জন্য ব্রীজের পাড় ধরে৷

— প্লিজ ছোঁয়া আমাকে মেরে না৷ আমি ছাড়া আমার মা বাবার কেউ নেই৷ ছোঁয়া আমি সাতার জানি না৷

— তুই বেঁচে থাকলে আমাদের অনেক ক্ষতি করবি৷ তোকে বাঁচিয়ে রাখবো না৷

ছোঁয়া নির্বণের হাতে লাথি মারতে থাকে৷ নির্বণ চিৎকার করতে থাকে৷ তবুও ব্রীজ পাড় থেকে হাত সরিয়ে নিচ্ছে না৷ হাত থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে। এক সময় নির্বণ সহ্য করতে না পেরে ব্রীজের উপর থেকে পড়ে যায়।

চলবে……

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-০৯

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৯
#অধির_রায়

নিয়তি ভয়ে ভয়ে অফিসের ভিতরে প্রবেশ করল। প্রায় চারিদিকে অন্ধকার। শুধু নির্বণের কেবিনে লাইট অন করা৷ তাছাড়া অন্যান্য কেবিনে ড্রিম (আবছা আলোয় লাইট) লাইট অন করা৷ নিয়তি নির্বণের কেবিনের দরজা খুলে চমকে ওঠে৷ নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ এমন ভাবে ভেঙে পড়বে৷

নির্বণ তার চেয়ারে বসে কয়েকটা চিরকুট সামনে রেখে ভীষণভাবে কেঁদে যাচ্ছে। নির্বণের কোন খেয়াল নেই, তার আশে পাশে কি হচ্ছে? নিয়তি নির্বণের কাঁদে হাত রাখতেই নির্বণ চমকে উঠে। নিয়তি দেখে চিরকুটগুলো লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই নিয়তি একটা চিরকুট ছোঁ মেরে নিয়ে যায়৷

— নির্বণ কাঁদো স্বরে ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” প্লিজ নিয়তি আমার চিরকুট টা দিয়ে দাও৷ আমি তোমার কাছে হাত জোর করছি৷”

নির্বণ কারো সামনে এভাবে হাত জোর করতে পারে নিয়তির চিন্তার বাহিরে৷ নিয়তি নির্বণের অসহাত্ব দেখে খুব দয়া হয়৷ নিয়তি কিছু না বলে চিরকুটটা দিয়ে দেয়৷

— নির্বণ হাতে চিরকুট পাওয়া মনে হাতে চাঁদ ফিরে পাওয়া৷ নির্বণ মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি৷ তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাব, সেই ভাষা আমার জানা নেই৷ ”

— নিয়তি অবাক চোখে হতদন্ড হয়ে বলে উঠে, ” স্যার এখন কয়টা বাজে জানেন। ”

— নির্বণ চিরকুটগুলো ওয়ালেটে রাখতে রাখতে বলে উঠে, ” মেবি দশটা বাজে৷ তুমি এত রাতে অফিসে কেন?”

— চোখ ছোট করে হতাশ হয়ে বলে উঠে, ” আপনার মাথা ঠিক আছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন কত বাজে? ”

— নির্বণ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে, ” এখন তো রাত ২ঃ৫৬ মিনিট। প্রায় রাত ৩ টা বাজে৷”

— হ্যা স্যার এখন রাত তিনটা বাজে৷ আপনি আজ আমাকে একটা কথার জবার দিবেন!

— কি কথা? মা নিশ্চয় এখনো জেগে আছেন৷ লেট করলে চলবে না৷ আমাদের তারাতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে৷

নির্বণ দ্রুত গতিতে চলে যেতে নিলেই নিয়তি নির্বণের হাত ধরে ফেলে। নিয়তি নির্বণের সামনে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” স্যার মাকে নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না৷ আমি মাকে ঘুম কথা বলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি৷ ”

— ” তুমি এভাবে আমার পথ আটকানো চেষ্টা করছো কেন? বাড়ি ফিরতে হবে।” কর্কট কন্ঠ বলে উঠে

— হ্যাঁ আমরা বাড়ি ফিরব৷ তবে আজ আপনাকে একটা কথার জবাব দিতে হবে।

— কি কথা? আর আমি তোমার কাছে জবাব দিতে যাব কেন? কে হও তুমি?

— ধরে নেন আমি আপনার কাছের কেউ। বা আমি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে তো আপনি সব শেয়ার করতে পারেন৷

— নির্বণ দেয়ালে ঘুশি মেরে, ” আমার জীবনে বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে কিছু নেই৷ সব মেয়েরাই বেইমানি করে। কোন মেয়ে কারো আপন হতে পারে না৷ ”

— যদি একই প্রশ্ন আপনার দিকে আমি ছুঁড়ে দেয়৷ তাহলে কি জবাব দিবেন?

— কিসের প্রশ্ন? তোমাকে আমার জীবন নিয়ে ভাবতে হবে না৷ সামনে তোমার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তুমি বরং সেখানেই মন দাও।

— আমি কোন স্বার্থপর মেয়ে নয়৷ আমার চোখের সামনে একজন মানুষ নিবরে দগ্ধ হয়ে ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। আমি তাকে ফেলে সামনে এগিয়ে যাব৷ আর হ্যাঁ সব মেয়েরা এক নয়৷ যেমনঃ ছেলেরা ধর্ষক হয়৷ আবার সেই ছেলেরাই কারো ভাই, কারোর আদর্শ স্বামী, কোন কাঙালি মায়ের আদর্শ ছেলে। তেমনি সব মেয়ে এক না৷

— নির্বণ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হোয়াট ডু ইউ মিন? তুমি বলতে চাইছো তোমরা বেইমানি কর না৷ তুমি আজ আমার সাথে বউ হিসেবে আছো। কাল আমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর তুমি কি বসে থাকবে? তুমি তো টাকার জন্য নিশ্চয়ই একটা কাজ করবে৷ ”

— অবশ্যই আমি কাজ করব৷ কাজ না করলে খাব কি? আমার জীবন নিয়ে আমাকেই ভাবতে হবে৷ আমি ছাড়া আমার জীবন নিয়ে ভাবার মতোন কেউ নেই।

— ঠিক তেমনই৷ আমি আমার জীবন নিয়ে ভালোই আছি৷ আমার জীবনে কি হবে, সেই নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না?

নিয়তি কিছু বলতে নিবে তার আগেই নির্বণ নিয়তির মুখের উপর আঙুল দিয়ে কথা বলতে মানা করে দেয়। নিয়তি বুঝতে পারে এখন নির্বণকে এভাবে ফোর্স করা যাবে না৷ এই নিয়ে পরে কথা বললে ভালো হবে। নির্বণ এমনিতেই অনেক আপসেট।
______________

নির্বণ ঘুম থেকে উঠে অবাক। আজ নিয়তি নির্বণকে কোন বিরক্ত না করে নির্বণের পোশাক। খাবার রুমে রেখে দিয়েছে। অফিসের ফাইল, নতুন প্রজেক্টের অনেক কাজ করে এগিয়ে রেখেছে৷

আসলে নিয়তি রাতে আর ঘুমাতে পারেনি৷ মাথায় হাজারটা চিন্তা চেপে বসেছে। চিন্তাগুলো দূরে করতেই নিয়তি এসব কাজ করেছে।

নির্বণ ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিচে চলে আসে। নিচে এসে দেখে পাই নির্বণের মা সকলের সাথে হুইলচেয়ার বসে গল্প করে যাচ্ছে। নির্বণ তার মাকে দেখে খুব খুশি। সকল সার্ভেন্ট মাকে ঘিরে বসে আছে। মার কাছ থেকে রুপকথার গল্প শুনে যাচ্ছে। নির্বণ তার মাকে এভাবে দেখে ফাইলগুলো ট্রি টেবিলে রেখে এক প্রকার দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে।

— নির্বণ টলমল চোখে বলে উঠে, ” মা আমি কতটা হ্যাপি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ তোমাকে ডাইনিং রুমে দেখে আমি খুব খুশি। আমার অনুভুতি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না।”

— মা ছেলের মাথায় হাত রেখে বলে উঠে, ” আমিও খুব খুশি৷ এসব কিছু শুধু নিয়তির জন্য সম্ভব হয়েছে৷ নিয়তির মতো লক্ষী বউমা থাকলে আমার কি লাগে?”

— মায়ের দিকে সুরু চোখে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” হুম মা তুমি একদম ঠিক বলেছো। নিয়তি আমাদের সবাইকে একটা নতুন জীবন দান করেছে। আমি তার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারব না৷ ”

— সার্ভেন্টরা বলে উঠে, ” আমাদের ছোট ম্যামের হাতে জাদু আছে। আবার আমাদের এক করে দিয়েছে৷ আমাদের মুখের হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। ছোট ম্যামের কাছে আমরা সারাজীবন ঋণি থাকব৷ ”

— নিয়তি সবার উদ্দেশ্য বলে উঠে, ” মা তো আমার মা৷ আমি যা করেছি আমার মায়ের জন্য৷ আমিও চাই মা তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক। তিনি যেন এই সংসারকে আবার আলোকিত করতে পারে৷”

— নির্বণের মা নিয়তির হাত ধরে বলে উঠে, ” এটা এখন থেকে তোমার সংসার৷ তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে এই সংসারকে আলোকিত করবে৷”

নিয়তি নির্বণের মায়ের কথা শুনে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? সে তো আর এই বাড়িতে থাকতে আসেনি৷ সে এসেছে এই বাড়িতে চুক্তি হিসেবে৷ ধরতে গেলে একবার মাইনে করা কর্মচারী। নিয়তি অসহায় দৃষ্টিতে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নির্বণ নিয়তিকে ইশারা করতে হ্যাঁ বলতে বলে।

— কি হলো আমার সোনা মায়ের? আমি যতদূর জানি আমার সোনা মা কিছুতেই ভয় পায় না৷ আজ সেই সোনা মায়ের মুখে ভয়ের ছাপ ছড়িয়ে পড়েছে৷

— আসলে মা.. আপনারা আমাকে এত ভালোবাসা দিবেন৷ আমি জীবনে কখনো ভাবতে পারিনি৷ আমি কি এই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?

— নির্বণের কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি সব সময় মায়ের সাথে সাথে থাকবে৷ তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না৷”

— হ্যাঁ ছোট ম্যাম। আপনাকে আজ থেকে কিছুই করতে হবে না৷ আমরা সব কাজ করে দিব৷ কখন কি করতে হবে শুধু আমাদের বলবেন? আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করব৷

— নির্বণ হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, ” আমার লেট হয়ে যাচ্ছে৷ তোমরা সকলে মিলে আড্ডা দাও৷ সকলের মুখে যেন হাসি থাকে৷”
_________

নিয়তি নির্বণকে ফলো করতে করতে সেও অফিসে চলে আসে ছদ্মবেশ নিয়ে৷ নিয়তি সবাইকে বলে এসেছে তার বাহিরে দরকার আছে। নির্বণের গাড়ি গেইট দিয়ে ঢুকার সময়ই নির্বণ খেয়াল করে গেইটের দারোয়ানের চোখে জল। নির্বন গাড়ি সেখানেই থামিয়ে দারোয়ানের কাছে যায়৷

— দারোয়ান চেখের জল মুছে, “নমস্কার স্যার৷ প্লিজ স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিবেন৷ গতকাল রাতে আমার ছেলে আসতে পারেনি৷ প্লিজ তাকে চাকরি থেকে বের করে দিবেন না৷” হাত জোর করে।

— নির্বণ দারেয়ানের হাত ধরে, ” কাকা আমি সেজন্য নামিনি৷ মানুষের জীবনে সমস্যা থাকতেই পারে। আর একদিন গেইটে না থাকলে কোন সমস্যা হবে না৷ কারণ ভিতরে লোক আছে। ”

— স্যার আপনার মনটা অনেক বড়৷ আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব আমার জানা নেই?

— আচ্ছা কাকা আপনি বসে চোখে জল মুছছিলেন কেন? কি হয়েছে আপনার?

— না স্যার৷ আপনি ভুল ভাবছেন৷ চোখে কোন একটা পড়েছিল৷ সেজন্য এমন হয়েছে৷ আমি একদম ঠিক আছি৷

— কাকা আমার কাছ থেকে কি লুকাতে চান? আমার কাছ থেকে কিছু লুকাবেন না৷ আমি কিন্তু খুব রেগে যাব৷

— দারোয়ান কাকা কেঁদে বলে উঠে, ” স্যার আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে কোন টাকা নেই৷ এত টাকা পাবো কোথায়? ”

— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” কাকা চিন্তা করতে হবে না৷ জাস্ট অ্যা মিনিট। ”

নির্বণ গাড়ি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা এনে দারোয়ান কাকার হাতে খুব যত্নসহকারে তুলে দেয়৷

— কাকা আজ আমাকে আর কাজ করতে হবে না৷ এই টাকা নিয়ে কিছু কিনা কাটা করে ফেলেন৷ কাল আমার মিটিং আছে আমি বিজি থাকব৷ আগামী পরশু আমার সাথে দেখা করবেন৷ আমি টাকা দিয়ে দিব৷

নির্বণ আর কিছু না বলে গাড়ি পার্কিং করে কেবিনে চলে যায়৷ নিয়তি বুঝতে পারে নির্বণ শুধু মেয়েদের ইনগোর করে। মেয়েদের সহ্য করতে পারে না৷ দারোয়ান কাকাকে কত সুন্দর ভাবে টাকা হাতে বুঝিয়ে দিল। আর আামকে টাকা ছুঁড়ে মেরে দিয়েছেন৷ নিশ্চয় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে৷ কি রহস্য লুকিয়ে আছে, আমি বের করেই ছাড়ব?

______________

— “নিয়তি তুমি আমার আলমারির সামনে কি করছো?” পিছন থেকে চিৎকার করে বলে উঠে নির্বণ।

নিয়তি নির্বণের কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায়। নিয়তি কিছু জানার জন্য আলমারি খোলার চেষ্টা করছিল।

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” কই কিছু না তো। এমনি রুম পরিষ্কার করছিলাম।”

— নির্বণ নিয়তির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে, ” রুম পরিষ্কার করছিলে তাহলে তোমার হাতে কোন টিস্যু বা নেকরা নেই। হাউ ফানি!”

— নিয়তি শাড়ির আঁচল হাতে নিয়ে, ” এইতো আমি শাড়ির আঁচল দিয়ে পরিষ্কার করছিলাম৷”

নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির একদম কাছে চলে আসে। নিয়তি নির্বণকে এত কাছে দেখে আলমারির সাথে আরও লেগে যায়৷

— নির্বণ নিয়তির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি.. তোমাকে বলা হয়েছিল তুমি আমার এই আলমারিতে হাত দিবে না৷ ”

নির্বণের গরম নিঃশ্বাস নিয়তির ঘাড়ে পড়ছে৷ নিয়তি একটা নেশায় চলে যাচ্ছে৷ খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। চোখ মেলাতে ভয় লাগছে। তবুও অনেক চেষ্টায় আধো চোখে তাকায়৷

— নিয়তি আমতা আমতা করে বলে উঠে, প্লিজ স্যার দূরে সরে দাঁড়ান৷ আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে৷”

— আচ্চা নিয়তি সত্যি করে বল কি করছিলে?

— আসলে.. স্যার আপনার বিষয়ে কিছু জানার চেষ্টা করছিলাম। আপনি কি এমন লুকিয়ে রেখেছেন এখানে, যা কাউকে হাত লাগাতে দেন না?

— নির্বণ নিয়তির দুই বাহু চেপে ধরে, ” নিয়তি তুমি কেন বার বার আমার বিষয় জানার চেষ্টা করছো? জেনে কি করবে তুমি? ফিরিয়ে দিতে পারবে কি সেই আগের স্বাভাবিক জীবন?”

নির্বণ চোখ বন্ধু করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। নির্বণ রুম থেকে চলে যেতে নিলে নিয়তি নির্বণের সামনে দাঁড়ায়৷

নিয়তি নির্বণকে যা বলে উঠে তা শুনে নির্বণ নিয়তির উপর কিছু একটা ভরসা হয়৷ তবুও নিয়তিকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷

চলবে……

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-০৮

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৮
#অধির_রায়

নিয়তি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নির্বণের মুখে জল ছুঁড়ে মারে৷ নির্বণ মুখে জলের স্পর্শ পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে৷ উঠে দেখে নিয়তি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ নির্বণ বুঝতে পারে নিয়তিই এমন কাজ করেছে৷

— নির্বণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হাউ ডেয়ার ইউ। তোমার সাহস হলো কি করে, আমার মুখে জল ছিঁড়ে মারার?”

— নিয়তি ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে বলে উঠে, ” মি. এক মাসের স্বামী। আপনি নিশ্চয় ভুলে যাননি আমি আপনার এক মাসের জন্য চুক্তির বউ৷”

— নির্বণ নিয়তির কথা শুনে আরও ক্ষেপে যায়৷ রাগে গজগজ করে বলে উঠে, “হোয়াট ডু ইউ মিন? ”

— আই মিন.. আজ থেকে আমি যা বলবো আপনাকে তাই করতে হবে৷ চুক্তির বউ বলে কথা৷

— “তুমি কে? আর তোমার কথা শুনে চলবে নির্বণ চৌধুরী, ইম্পসিবল।” মুচকি হেঁসে বলে উঠে।

— স্যার আপনার মুচকি হাসি আমার কিছু হবে না৷ কারণ আমার কাছে চুক্তিনামা আছে৷ আমার কথা মতো না চললে সংশোধানাগারে সারাজীবন কাটাতে হবে৷

— মিস নিয়তি, “যত বড় মুখ তত কথা৷”

— নিয়তি নির্বণের কথা পাত্তা না দিয়ে, ” স্নান করে ভদ্র ছেলের মতে নিচে খেতে আসেন৷ এখন থেকে কেউ আপনার খাবার উপরে দিয়ে যাবে না৷”

— নির্বণ ট্রি টেবিলে লাথি দিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি”

নির্বণকে নিয়তি তা জানেই না৷ নির্বণের দিকে না তাকিয়ে রুম থেকে চলে আসে৷ নিচে এসে খাবার তৈরি করতে শুরু করে।
___________

নির্বণ রাগে গজগজ করে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ ফ্রেশ হয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে ছোট বাচ্চাদের মতো রুপকথার “লোভী রাজকুমারী”
গল্প শুনে যাচ্ছে।

— আচ্ছা মা আমাকে একটা কথা বল তো? মেয়েটা এতটাই নিষ্ঠুর কেন হয়? রাজকুমারী রাজ্যের লোভে তার বোন, মা, বাবাকে হত্যা করে৷ তেমনি বর্তমানে এমন অনেক মেয়ে আছে যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে পারে।

— হুম নির্বণ অনেক মেয়ে আছে যারা ছেলেদের ফাঁসিয়ে টাকা হাসিল করে৷ আবার অনেক মেয়ে মা লক্ষী। যারা ছেলেদের সম্মান করে। তাদের ভালোবাসে। তাদের সম্মানের কথা বিবেচনা করে৷

— মা যেসব মেয়েটা ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে তাদের নিয়ে কোন গল্প নেই৷

— হ্যাঁ নির্বণ তাদের নিয়েও অনেক রুপকথার গল্প আছে৷ তারা কখনো সুখী হতে পারে না৷ মূল কথা হলো তারা তাদের কর্মফল দুনিয়ায় পায়৷

— আচ্ছা মা৷ তুমি রেস্ট নাও৷ আমি আসছি৷

নির্বণ দরজার কাছে এসে আবার মার কাছে ফিরে আসে৷

— নির্বণের মা মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” কিছু বলবে?”

— “মা আমি খুব খুশি। আমি কতটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ তুমি এখন নিজ থেকে উঠে বসতে পারছো৷ জানো মা আমার আর কিছু চাই না৷ তুমি সুস্থ হয়ে উঠ৷ ” কথাটি বলার মাঝে নির্বণ কেঁদে উঠে। আজ কিছুতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারল না৷

— নির্বণের মা নির্বণের চোখের জল মুছে দিয়ে, ” দূর পাগল ছেলে। কান্না করে না৷ জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, এই তিনটা জিনিস ওই উপর ওয়ালার হাতে৷ সেখানে আমাদের কোন হাত নেই৷ তিনি যদি চান আমি এই যাত্রায় বেঁচে যায় তাহলে কোন শক্তি তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না৷

— নির্বণ তার মাকে জড়িয়ে ধরে, ” মা তুমি আমাকে একা করে প্লিজ ছেড়ে যাবে না৷ তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না৷”

ছেলের ছোখের জল দেখে আমার মন ভেঙে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মায়ের চোখেও জল।তবে সে জল টলমল করছে৷ ছেলেকে শক্তি জোগানোর জন্য সেই জলকে বহু কষ্টে আটকে রেখেছেন৷

— কাঁদো কাঁদো ভাঙা গলায় বলে উঠেন, ” নির্বণ আমি তোমাকে এই শিক্ষা দেয়নি৷ তোমাকে ভেঙে পড়তে আমরা দেখতে চাই না৷ তুমি সব পরিস্থিতিতে মাথা উঁচু করে থাকবে। পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করতে হবে তোমাকে৷

— মা আমি আর পারছি না৷ আমি মনে মনে মরে যাচ্ছি৷ তোমাকে এই অবস্থায় দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়৷ আমি সব সময় প্রার্থনা করি সৃষ্টি কর্তার কাছে তোমাকে সুস্থ করে দিতে৷

— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” নির্বণ তুমি কি জানো না৷ চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে দেয়৷ আমি তোমার চোখে জল নয়৷ ভালোবাসা দেখতে চাই৷ বিপদের সময় চোখে আগুন দেখতে চাই৷”

— হ্যাঁ মা। চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে। আমি আর কাঁদবো না৷ এইতে হাসছি, ” বুকের মাঝে হাজারও কষ্ট লুকিয়ে রেখে মিষ্টি করে মুচকি হাসে৷

— এই তো আমার সোনা ছেলে। আমি সব সময় তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই৷ ভুলেও চোখে জল আনবে না৷

— ওকে মা৷ তুমি রেস্ট নাও৷ কিছু সময় পর নিয়তিকে পাড়িয়ে দিচ্ছি৷
________

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” এই যে স্যার৷ আপনাকে কি বলা হয়েছে?” তবুও এখানে বসে আছেন কেন?

–” কি বলা হয়েছে? তোমার কথার ধরণ ঠিক কর? এভাবে অসভ্যের মতে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে? ” নরম কন্ঠে বলে উঠে।

— আমি জানি আমি যথেষ্ট সভ্য ভদ্র একটা অবুঝ মেয়ে। আপনাকে নিচে ব্রেক ফাস্ট করতে বলা হয়েছে। চলেন ব্রেক ফাস্ট করবেন।

— আমি নিচে ব্রেক ফাস্ট করি না৷ ইভেন আমি আমার রুম ছাড়া কোথায় খাবার খাই না, এই বাড়িতে।

— গোমড়া মুখ করে রুমে বসে খাওয়া চলবে না৷ আমার সাথে নিচে যাবেন আর এক সাথে বসে খাবার খাবেন।

— মিস নিয়তি আমাকে রাগিও দিও না৷ তুমি নিচে টেবিলে বসে সবার সাথে খেয়ে নাও৷ বাড়ির সকল সার্ভেন্ট অনেক ভালো। তারাও টেবিলে বসে খাবার খায়।

— আমি যতদূর জানি আপনারা সকল সার্ভেন্টের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খেতেন৷ তাহলে এখন টেবিলে বসে খাবার খান না কেন?

— নিয়তি তোমাকে এই বাড়িতে এক মাসের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে৷ তোমাকে যে কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে৷ সে কাজ কর? টাকা লাগলে আরও টাকা দিব৷

— স্যার আমাকে কি আপনার লোভী মনে হয়৷ আমি গরিব হতে পারি কিন্তু লোভী বা অহংকারী নয়৷ আর আমি আমার কাজ ভুলিনি৷ আমি আমার কাজ করেই যাচ্ছি৷

— আমি জানি তুমি যথেষ্ট একটা ভালো মেয়ে। আমি সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করতে চাই না৷ আমার মন মানসিকতা এমনিতেই ভালো নেই।

— সকলের সাথে আড্ডা দেওয়ার সাথে সাথে খাবার খেলে মন মানসিকতা ভালো হয়ে যাবে। চলেন আমার সাথে।

নিয়তি নির্বণের হাত ধরে টান দিতেই নির্বণ নিয়তির গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ নিয়তি গালে হাত দিয়ে অসহায়ের মতো নির্বণের দিকে তাকায়৷

— নির্বণ রেগে বলে উঠে, ” তোমাকে বলা হয়েছে তুমি আমার ব্যাপারে মাথা ঘামাবে না৷ কতবার বলেছি আমি টেবিলে বসে খেতে পারব না৷”
চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা একটু কমিয়ে,” নিশ্চয় কোন কারণ আছে। কারণ না থাকলে আমি নিশ্চয় টেবিলে বসে খাবার খেতাম।”

নির্বণের চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে৷ চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে দুই চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে৷ নিয়তি নির্বণের চোখে জল দেখে অবাক। এই মানুষের মনে এত কষ্ট। নিয়তি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না?

নির্বণ বিছানা থেকে শার্ট নিয়ে শার্টের বাটন লাগাতে লাগাতে অফিসে চলে যায়৷ অফিসের সকল ফাইল ট্রি টেবিলের উপর রাখা আছে।

নিয়তি ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ে। গালে হাত দিয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” কি এমন কারণ আছে? যার জন্য স্যার এখন সকলের সাথে বসে এক সাথে খাবার খান না৷ কেন তিনি সব সময় রেগে থাকেন? কেন মেয়েদের এত ইগনোর করে? স্যার কি অহংকার থেকে ইগনোর করে নাকি কোন রহস্য থেকে ইগনোর করে। আমাকে সব কিছু জানতে হবে৷

_________

— সোনা মা নির্বণ তোমার গায়ে হাত দিয়েছে? তোমাকে নির্বণ কেন টর্চার করেছে। আজ বাড়িতে ফিরতে দাও আমি তাকে শাস্তি দিব৷

— নিয়তি নির্বণের মায়ের কথা শুনে অবাক। নিয়তি চরের দাগ ওড়না দিয়ে ঢেকে রেখেছে। মনে মনে বলে উঠে, ” মা কিভাবে জানতে পারল? আমি তো ঢেকে রেখেছি।”

— মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া এত সহজ নয়৷ গালে এন্টিসেপ্টি মলম লাগিয়ে নাও৷ নাহলে কালো দাগ পড়ে যাবে।

নিয়তি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না৷ তখন একটা হিন্দি সিরিয়ালের কথা মনে পড়ে যায়৷ মশা কথা বলে নায়কা বেঁচে যায়৷
— মা আপনি ভুল ভাবছেন! আমাকে কেউ আঘাত করেনি৷ রাতে মশা মারতে গিয়ে গালে আমি নিজেই ঠাস করে বসিয়ে দিয়েছি৷

— আমাকে মিথ্যা বলা৷ আমাদের বাড়িতে কোন জায়গায় কোন কোন মশা নেই৷ মশা আসল কোথা থেকে।

— আসলে মা রাতে আমাদের রুমে একটা মাছি চলে আসে৷ মাছি না মশা জানি না ঠিক। কানের মাঝে শব্দ করতে থাকে। তাকে মারতে নিয়েই এমন অবস্থা।
মা এখন এসব নিয়ে গবেষণা না করে আপনি থেরাপিতে মন দেন৷

নিয়তি নির্বণের মাকে থেরাপি দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আর নির্বণের কথা বলবে বলবে ভাবছে৷

— নিয়তি কি ভাবছো আজ? তোমার মন তো অন্য দিকে? আমার কাছ থেকে কিছু লুকাতে চাইছো কি?

— না মা। আমি তেমন কিছু ভাবি না৷
এখন কি বলি? নির্বণের কথা আজ জানতে চাইলে মা বুঝে যাবে৷ নিয়তি উপস্থিতি বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আবারও বলে উঠে, “আমার মা যদি আজ বেঁচে থাকতো৷ তাহলে আপনার মতো আমাকেও আগলে রাখতো।”

— আমি আছি তো? আমি তোমার মায়ের জায়গা নিতে পারব না ঠিক৷ কিন্তু এখন থেকে মায়ের অভাব বুঝতে দিব না৷ আর মন খাবার করবে না৷

নিয়তি মুচকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে জবাব জানায়৷

_________

রাত একটা বাজে এখনো নির্বণ বাসায় ফিরেনি৷ নিয়তি রুমের মাঝে পায়েচারী করছে। মা নির্বণের কথা অনেকবার জানতে চেয়েছেন৷ বাধ্য হয়ে মাকে জানানে হয়েছে নির্বণের মাথা ব্যথা সে ঘুমাচ্ছে।

দেখতে দেখতে রাগ দুই টা বেজে গেছে। নিয়তি আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারল না৷ নিয়তি গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে আসে। নির্বণের কেবিনে প্রবেশ করে যা দেখে সেজন্য নিয়তি মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷

চলবে….

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-০৭

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৭
#অধির_রায়

নিয়তির মাথা সরাতে নিলে নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷ দু’জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷ একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই৷

— নিয়তি নিজেকে সংযত করে, ” আমার হাত ছেড়ে দেন৷ আপনার সাহস কি করে হলো আমার হাত ধরার?”

নির্বণ নিয়তির হাত ছাড়তেই নিয়তি নির্বণের উপর থেকে উঠে যায়৷ নিয়তি ফ্লোরে বিছানা করতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত থেকে চাঁদর কেড়ে নেয়৷

— নিয়তি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” একি আপনার পা ঠিক হয়ে গেছে স্যার৷ আপনি তো.. ”

— নিয়তিকে থামিয়ে, ” আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি৷ আর আমার পা একদম ঠিক আছে। আমি ইচ্ছা করেই তোমাকে দিয়ে এমন কাজ করিয়েছি৷”

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনার মূল্যবোধ বলতে কিছু নেই৷ মানুষের ইমোশনাল নিয়ে খেলা করতে খুব ভালো লাগে। একদিন এমনও দিন আসবে কেউ আপনার ইমোশনাল বুঝতে আসবে না৷”

— রেগে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হাও ডেয়ার ইউ৷ তোমার এত বড় সাহস হলো কি করে, আমার মুখের উপর কথা বলার?”

— আমি সাহস দেখায় না৷ সত্য কথা বলি৷ আর আমি বড়লোকদের মতো অহংকারী নয়৷

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” হ্যাঁ আমার টাকা আছে৷ আমার অহংকার থাকবে না তো তোমার থাকবে।”

— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” হ্যাঁ টাকা আছেই বলে আজ একটা মেয়েকে এক মাসের জন্য বউ করে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন৷” একবার কি ভেবে দেখেছেন, একটা মেয়ে কোন পরিস্থিতিতে এমন বাজে শর্তে রাজি হয়েছে? ”

— হোয়াট ডু ইউ মিম? তুমি কি বলতে চাও? তুমিও পরিস্থিতির স্বীকার আমিও পরিস্থিতির স্বীকার। এটা ভুলে যাও কেন?

— আমি বলতে চাই টাকা থাকলেই সব হয় না৷ টাকা দিয়ে কি আপনি আপনার বাবাকে বাঁচাতে পেরেছেন? আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করেন৷ মানুষদের দাম দেন৷

নিয়তি কথাতে নির্বণ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়৷ নির্বণ আর কিছু না বলে সোফায় শুয়ে পড়ে। নিয়তি কথা বলে যাচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তির কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না৷

নিয়তি এক প্রকার বাধ্য হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সারারাত শুধু নির্বণের কানে একটা কথাই বাজে টাকা দিয়ে কি আপনি আপনার বাবাকে বাঁচাতে পরেছেন?

__________

সারারাত ঘুমাতে পারেনি নির্বণ। চোখের জল ফেলে গেছে সারারাত৷ চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে।

— নির্বণের এমন অবস্থা দেখে নির্বণের মা নির্বণকে কাছে টেনে নেন৷ পাশে বসিয়ে বলে উঠে, ” নির্বণ তোমার চোখ মুখ এভাবে ফোলা ফোলা লাগছে কেন? তোমার কি হয়েছে?”

— নির্বণ আমতা আমতা করে, ” আসলে মা কাল রাতে ঘুম হয়নি৷ অফিসের কাজ নিয়ে বিজি ছিলাম।”

— শক্ত গলায় বলে উঠেন, ” তোমাকে কতবার বলেছি, আগে নিজের খেয়াল রাখবে৷”

— প্লিজ মা রাগ কর না৷ তুমি তো আমার সোনা মা৷ প্লিজ একটু হাসো। তোমার হাসিমাখা মুখ না দেখে আমি অফিসে কোনদিন যায় না৷

— হয়েছে। আর আদর দেখাতে হবে না৷ লাঞ্চ করে নিও দুপুরে।

নির্বণ মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দরজার কাছে আসতেই নিয়তি নির্বণের হাতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার ধরিয়ে দেয়৷

— নির্বণ অবাক চোখে, ” আমি এটা দিয়ে কি করব?”

— নিয়তি কোমরে হাত দিয়ে বলে উঠে, ” কি করবেন মানে কি? আমি লাঞ্চ বানিয়ে দিয়েছি৷ দুপুরে বাহিরের বাজে খাবার খেতে হবে না৷”

— আমি পারব না নিয়ে যেতে। এতদিন বাহিরে খেয়ে এসেছি আজও বাহিরে খেয়ে নিব৷

— নির্বণের মা পিছন থেকে ডাক দেয়, ” নির্বণ খাবার টা নিয়ে যাও। নিয়তি খুব কষ্ট করে রান্না করেছে৷”

— প্লিজ মা বুঝার চেষ্টা কর৷ কেউ অফিসে খাবার নিয়ে আসে না৷ আর আমাদের ক্যান্টিনে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার তৈরি করা হয়।

নির্বণ আর কিছু না বলে নিয়তিকে চোখ পাকিয়ে চলে যায়৷ নিয়তিও নির্বণের চাহনি দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। নিয়তি নির্বণের মায়ের পাশে বসে পড়ে।

— মা আজ কিন্তু আপনাকে নিজে থেকে সব করতে হবে৷ আপনাকে সুস্থ হতেই হবে৷

— নিয়তি বুঝার চেষ্টা কর৷ আমি নিজে থেকে পারব না৷ থেরাপি কাজটা অনেক কষ্টকর৷ আর নিজে থেকে করতে নিলে আরও কষ্ট কর৷

— নিয়তি শক্ত গলায় বলে উঠে, ” আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না৷ আমার একমাত্র এবং প্রধান কাজ হলো আপনাকে সুস্থ করে তোলা৷ ”

— হুম মা৷ আমি তোমার ভালোবাসা বুঝি৷ কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা বুঝ না৷ আমি একা একা পারব না৷

— আপনি পারবেন কিনা আমি জানি না৷ কোন সাহায্য লাগলে আমি করব৷ আমি আছি কিসের জন্য৷ আপনি শুয়ে পা তুলার চেষ্টা করেন৷

নির্বণের মা একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিয়তির কথা মেনে নেন৷ তিনি তো জানেন নিয়তি তার মঙ্গল চায়৷ কষ্ট হলেও তিনি পা তুলার চেষ্টা করেন৷ অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই পা উপরের দিকে তুলতে পারছে না৷ চোখে জল টলমল করছে।

— মা আর লাগবে না৷ আপনি অনেক চেষ্টা করেছেন৷ মা আমি বলেছিলাম চোখে জল আনবেন না। জল আমাদের দুর্বল করে তুলে।

— আমি ইচ্ছা করে আনিনি৷ কখন যে ব্যথার কারণে জল এসে পড়েছে নিজেই জানি না৷

— আমি তো ভেবেছিলাম আজ আপনাকে হাঁটানোর চেষ্টা করব৷ কিন্তু তা আর হলো না৷ তবে আমি কাল ছাড়ছি না৷

নিয়তি নির্বণের মায়ের পা মালিশ করে দেয়৷ মালিশ শেষে ইলেকট্রনিকস তাপ দেয়৷ যা মানুষের হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
_________

নির্বণ রাত ১২ টার দিকে বাড়ি ফিরে৷ বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। নির্বণ তার মায়ের রুমে উঁকি দিয়ে নিজের রুমে আসে। রুমে এসে দেখে নিয়তি বিছানা পা তুলে বসে আছে। নির্বণকে দেখে সামনে এসে দাঁড়ায়।

— স্যার আজ এত রাত হলো কেন? আপনার ফোন বন্ধ কেন?

— সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিব না৷ আমি কেন রাত করে বাড়ি ফিরেছি সে কথা না জানলেও হবে?

— আমি অফিসে ফোন করে জেনে নিয়েছি আপনি অফিস থেকে সন্ধ্যায় বের হয়েছেন৷ আর কোন মিটিং ছিল না আজ৷

— এই শুন৷ তুমি আমার বিবাহিত বউ নয়। আমাকে এত প্রশ্ন করার দায়িত্ব তোমার নেই।

— নির্বণ সেফায় নিজের কোর্টটা ছুঁড়ে মারে৷ নিয়তি কোর্টটা নিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বণ ওয়াসরুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে যায়৷

— টাকা পৌঁছে দিয়েছে কি?

— কিসের টাকা পৌঁছে দিব৷ আমি তো আপনার টাকায় হাত বুলাইনি।

— আমি আমার টাকার কথা বলছি না৷ তোমার বাবার মেডিসিনের টাকার কথা বলছি৷

— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” হ্যাঁ আমি নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছি৷ আর আপানার দেওয়া নিয়মের অমান্য করেছি। এর পর থেকে আর এমন হবে না৷”

— তুই চাইলে প্রতিদিন তোমার বাবার সাথে দেখা করে আসতে পারো।

নির্বণের কথা শুনে নিয়তি খুব খুশি হয়৷ ভেবেছিল নির্বণ নিয়তিকে বাজেভাবে বকে দিবে৷ নির্বণ নিয়তির মুখে হাসি দেখে সেও মুচকি হেঁসে ওয়াসরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিয়তি নির্বণের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।

— মিস নিয়তি আমি আজ বাহিরে ডিনার করেছি৷

— “কিন্তু আমি আজ নিজ হাতে সব রান্না করেছি৷ একটু খেয়ে দেখবেন না৷ ” নরম স্বরে বলে উঠে।

— “তোমার মতো মিডিল ক্লাসের মেয়ের হাতের খাবার খাবে না এই নির্বণ চৌধুরী।” নিয়তিকে নিচু করে বলে উঠে।

নির্বণ আর কিছু না বলে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে শুয়ে পড়ে। নির্বণের কথা নিয়তির বুকের মাঝে লাগে।

— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” স্যার আজ থেকে আমার কাজ শুধু আপনার মাকে সুস্থ করা নয়৷ আপনাকে সোজা পথে নিয়ে আসাও আমার কাজ। আমি আপনার অহংকার যদি মাটির সাথে মিশাতে না পারছি তাহলে আমিও নিয়তি নয়৷”

চলবে….

ব্যস্থতার মাঝে খুব তারাতাড়ি টাইপিং করেছি৷ রি চেক দেওয়া হয়নি৷ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-০৬

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৬
#অধির_রায়

নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে৷ নিয়তি চিন্তা ধারনার বাহিরে কাজ করে যাচ্ছে নির্বণ চৌধুরী। নিয়তি মুগ্ধ নয়নে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণের কাঁশিতে নিয়তি বাস্তবে ফিরে আসে৷

— নির্বণ ব্রু কুঁচকে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি। তুমি এভাবে কার দিকে তাকিয়ে আছো?” এতো মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকার মানে কি?

— না এমনি৷ আমি একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম। কারো দিকে তাকাই নি৷ আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই ছেলেদের দিকে তাকিয়ে থাকার।

— গুড। এখন আমরা হসপিটালে যেতে পারি৷ তোমার তো ২ ঘন্টা সময় হসপিটালের জন্য বরাদ্দ করা।

নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ নির্বণ নিয়তির হাত ধরে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে যায়৷ নিয়তি নির্বণের হাতে ভর করে হসপিটালে আসে তার বাবার সাথে দেখা করতে যায়৷ নিয়তির বাবা নির্বণকে দেখে খুশি হয়ে যায়৷ নিয়তির বাবা জানে নির্বণ সত্যি সত্যি নিয়তিকে বিয়ে করেছে৷

— নিয়তির বাবা নির্বণকে পাশে বসিয়ে, ” বাবা জীবন ; আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিও না৷ সে ছোট থেকে অনেক কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে৷ ”

নির্বণ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? নিয়তির চোখ টলমল করছে। বৃদ্ধ লোককে মিথ্যাও বলতে পারছে না৷ নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে বলে উঠে, ” কোন চিন্তা করতে হবে না৷ আমি সব সময় খেয়াল রাখবো।” নিয়তিকে উদ্দেশ্য করে, “আমার অফিসে অনেক কাজ আছে৷ আমাকে অফিসে যেতে হবে৷”

নির্বণ নিয়তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বাহিরে চলে আসে। নিয়তির তার বাবার সাথে কথা বলে৷ ডাক্তারের সাথে কথা বলে তার অবস্থা বর্তমানে কেমন৷ কবে তার বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে? নিয়তির বাবার দেখাশোনা নিয়তির বড় বোন করছে৷ সেজন্য নিয়তিকে হসপিটালে থাকতে হয় না৷
___________

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পার হয়ে যায়৷ নিয়তির পা শুকিয়ে গেছে৷ সে আগের মতো হাঁটাচলা করতে পারে। নিয়তি নির্বণের মায়ের সাথে বিভিন্ন ধরনের কথা শেয়ার করছে৷

— মা আপনাকে আগামী কাল থেকে হাঁটতে হবে৷ আপনার পা বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ স্টং।

— নির্বণের মা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সুপ্ত কন্ঠে বলে উঠে, ” সোনা মা৷ আমার পায়ে ভীষণ ব্যথা করে। আমি হাঁটতে পারব না৷”

— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমি কোন কথা শুনতে চাই না৷ আপনি আমার কথা মতো চলবেন৷ ব্যাস আমি আর কিছু জানি না৷”

— দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে উঠে, ” ওকে তুমি যা বলবে তাই হবে৷”

— এখন অনেক রাত হয়ে গেছে । আপনি ঘুমিয়ে পড়েন৷ আমি আবার এসে দেখে যাব আপনি ঘুমিয়ে আছেন কিনা৷

নির্বণের মা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। নিয়তি নির্বণের মায়ের গায়ে কম্বল দিয়ে এয়ারকন্ডিশন অন করে চলে আসে৷
____________

— “স্যার আপনার চা। আমি নিজ হাতে আপনার জন্য চা করে এনেছি৷” উচ্ছাসের সহিত বলে উঠে।

— ফাইলের দিকে মুখে রেখেই, ” বাড়িতে কি সার্ভেন্টের অভাব পড়েছে? তোমাকে চা বানাতে হচ্ছে। আর তুমি কিভাবে ভাবলে তোমার হাতের চা আমি খাবো?”

— নিয়তি অবাক চোখে তাকিয়ে, ” আমি কি করেছি? আমার হাতের চা খেতে কোন সমস্যা নেই তো? আপনার পছন্দের দার্জিলিং চা নিয়ে এসেছি৷ বেশি করে ফ্লেভার দেওয়া৷”

— জাস্ট সাট আপ। আমার সামনে অভিনয় করতে আসবে না৷ এতদিন তুমি অসুস্থ ছিলে সে জন্য তোমাকে সাহায্য করেছি৷ ইট’স বেরি সিম্পল। ভেবে নিও না আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছে।

— নিয়তি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আমি তেমনটা মিন করিনি স্যার৷ আই অ্যাম সরি৷ আমি বুঝতে পারিনি৷”

— মিস নিয়তি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ৷ তুমি এখানে এসেছো এক মাসের জন্য৷ সো, আমার আছে আসার চেষ্টা করবে না৷ তোমাকে যে কাজের জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, সে কাজ মন দিয়ে কর?

— ধন্যবাদ স্যার৷ আমার জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম সেগুলো আপনার মানবিকতা ছিল।

— এখন কথা বলা শেষ হলে নিজের কাজে যাও৷ আমাকে আমার কাজ করতে দাও৷ তুমি ভালো করেই জানো আমি কাজের টাইমে ডিস্টার্ব একদম পছন্দ করি না৷

নিয়তি চোখের জল মুছে চা নিয়ে বাহিরে চলে যায়। নিয়তি সব সময় ভুল করে বসে৷ সবাইকে অল্পতেই আপন ভেবে নেয়৷ কেউ তার আপন নয়, সে কেন বুঝতে পারে না?
__________

নিয়তি রুমে এসে দেখতে পাই নির্বণ এখনো কাজ করছে৷ খাবারগুলো ঢাকা পড়ে আছে৷ এখনো ডিনার করে নি৷ য়তি নির্বণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে৷ নিয়তি শুধু হাত কাচুমাচু করছে।

— নিয়তির এমন অবস্থা দেখে, ” কিছু বলবে মিস নিয়তি?”

— আসলে স্যার একটা কথা বলার ছিল৷ অনুমতি যদি দেন তাহলে বলতে পারি৷

— কি কথা? কথা বলার জন্য হাত কাচুমাচু করছো?

— আসলে স্যার কিভাবে বলবো বুঝে উঠতে পারছি না৷ বলার সাহসও পাচ্ছি না৷

— কর্কট কন্ঠে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি আমি একদম ন্যাকামি পছন্দ করি না৷ বলতে না পারলে বলতে এসেছো কেন? রাতের রাত হয়েছে ঘুমাতে পারো।”

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” স্যার আমার কিছু টাকার দরকার ছিল৷ আপনার দেওয়া পুরো টাকা শেষ হয়ে গেছে৷ এখন বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ বাবার মেডিসিনের জন্য কিছু টাকা লাগবে৷”

নিয়তির কথা শুনে নির্বণ নিয়তির দিকে চোখ ছোট করে তাকায়। চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে, কিছু একটা প্রশ্ন জুড়ে রয়েছে চোখে।

— নিয়তি কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” স্যার আমার কাছে দিনে দুই ঘন্টা সময় ছিল৷ আমি এখন থেকে ২৪ ঘন্টাই এই বাড়িতে থাকবো। প্লিজ আমার টাকাটা খুব দরকার।”

— নির্বণ ফাইল বাঁধতে বাঁধতে বলে উঠে, ” কত টাকা লাগবে? আর টাকা কখন লাগবে?”

— নিয়তি প্রফুল্লের সাথে বলে উঠে, “তেমন লাগবে না৷ হাজার বিশ হলেই চলে যাবে৷”

— নির্বণ সোফায় টাকা ছুঁড়ে মেরে বলে উঠে, ” এখানে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে। আশা করি, এই পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে চলে যাবে। আরও লাগলে বলতে পারো৷”

— না স্যার আর লাগবে না৷ এতেই হয়ে যাবে৷
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” আপনার টাকা আছে বলে, আজ গরিবের দিকে এভাবে টাকা ছুঁড়ে মারেন৷ স্যার অহংকার থাকা ভালো। তবে অতি অহংকার ভালো না৷” আপনি মনে হয় ভুলে যান৷ “অহংকার পতনের মূল।”

— নিয়তি চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে, ” মিস নিয়তি টাকাটা তুলে নাও৷ নাকি আমি সেটাও করে দিব৷ আর দাঁড়িয়ে থেকে আকাশ পাতাল ভাবতে হবে না৷”

— নিয়তি অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠে, ” এভাবে ছুঁড়ে মারা টাকা না নেওয়াই ভালো৷ আমাদের কি মানুষ মনে হয় না? ”

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, “হোয়াট ডু ইউ মিন”

নিয়তি বুঝতে পারে ফুস করে সত্য কথা বলে দিয়েছে৷ এখন তো নিয়তির ১২ টা বাজিয়ে ছাড়াবে।

— নিয়তি শুকনো ঢোক গিলে, ” আসলে স্যার কিছু না৷ এমনি বলে ফেলেছি৷ প্লিজ ফরগেভ মি৷”

নিয়তি টাকাটা নিয়ে নিজের আলমারিতে রেখে দেয়৷ নিয়তি আসার পর নির্বণ নিয়তির জন্য আলাদা একটা আলমারি নিয়ে এসেছে। যেন নিয়তির কোন সমস্যা না হয়৷

— নির্বণ সোফায় শুয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে, ” মিস নিয়তি আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে তার শাস্তি পেতে হবে৷ তো তুমি শাস্তি থেকে বঞ্চিত হবে এটা মানা যায় না৷ শাস্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে নাও।

–নিয়তি টাকা রেখে শুতে যাবে তখনই নির্বণ বলে উঠে, ” আউচ, পা’টা ভীষণ ব্যথা করছে। নিয়তি একটু হ্যাল্প করবে?”

— কি সাহায্য করতে হবে স্যার?

— আমার পা গুলো ভীষণ ব্যথা করছে৷ আমি ঘুমাতে পারছি না৷ যদি তুমি পা গুলো একটু টিপে দিতে ভালো হতো৷ আসলে সোফায় ভালোভাবে পা রেখে ঘুমানো যায় না। সেজন্য মেবি ব্যথা করছে।

— মিয়তি আবাক চোখে তাকিয়ে, ” কি আমি পা টিপে দিব? আমি আপনার পা ধরতে পারব না৷ আমার একটা মূল্যবোধ আছে।”

— চোখ বন্ধ করে, ” আমি কি তোমাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেছি৷ আমি তো বলেছি আমার পা একটু টিপে দিতে৷ মানবতার খাতিরে তো এমন কাজ করতে পারো৷”

— “সালা শয়তান পোলা, আপনি আমাকে দিয়ে পা টিপানোর জন্য এমন নাটক করছেন৷ আর আমাকে বলে আমি ড্রামাবাজ৷ নিজে একটা মস্ত বড় ড্রামাবাজ সেদিকে কোন খেয়াল নেই৷” নিয়তি মনে মনে বলে উঠে।

— নির্বণ পা সোজা করতে নিয়ে, ” আহ্ পারছি না৷ পা ছিঁড়ে যাচ্ছে। প্লিজ নিয়তি এত নিষ্ঠুরতম মনোভাব পোষণ করবে না৷”

— নিয়তি বিরক্তের সাথে বলে উঠে, ” ওকে আমি পা টিপে দিচ্ছি।”

নির্বণ সাথে সাথে পা সোজা করে সোফার উপর রাতে৷ নিয়তি বাধ্য হয়ে পা টিপ যাচ্ছে।

— আহ্ নিয়তি প্রচুর ব্যথা। তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ প্লিজ আস্তে আস্তে একটু টিপে দাও৷

— স্যার আপনি বরং বিছানায় শুয়ে পড়েন। আমি আপনার পা টিপে দিচ্ছি৷ এখানে তো পা সম্পুর্ন সোফায় পড়ে না৷

— আচ্ছা নিয়তি৷

নির্বণ সোফা থেকে উঠে পা ফেলতে নিবে। কিন্তু পা ফেলছে না৷ নির্বণ মনে মনে ভাবছে, ” মিস নিয়তি তুমি যদি পাতায় পাতায় ঘোর আমি ঢালে ঢালে৷ আমি পা ফেললে বলতে পারবে পা ঠিক আছে। দেখাচ্ছি মজা৷”

— নির্বণ এক পা ফেলে বলে উঠে, ” নিয়তি পারছি না৷ প্লিজ আমাকে একটু ধর৷ পড়ে যাব এখনই৷ আমি এই বয়সে কোমরটা ভাঙতে চাই না৷”

নিয়তি নির্বণের কথা বিশ্বাস করে দৌড়ে নির্বণকে ধরে। নির্বণের হাত কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়তি নির্বণকে বিছানায় নিয়ে যায়৷ বিছানায় শুয়ে দিয়ে নির্বণের পা টিপতে থাকে।

— নিয়তি আস্তে আস্তে বলে উঠে, ” মন বলছে আপনার গলা টিপে দিতে৷ একদম ভেজাল শেষ হয়ে যেত৷”

— নিয়তি কিছু বললে? আমি ঠিক শুনতে পারলাম না৷

— না.. না.. স্যার। কিছু বলিনি৷ আপনি কি কিছু শুনেছেন?

— না কিছু শুনতে পাইনি৷ তুমি বরং তোমার কাছে মন দাও৷ আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি।
নির্বন চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে উঠে, ” কমপক্ষে তোমাকে দিয়ে আমি দুই ঘন্টা পা টিপাবো। তোমাকে দিয়ে আমি দুই ঘন্টা পা টিপাতে না পারলে আমিও নির্বণ চৌধুরী নয়৷”

আধ ঘন্টার পর নিয়তি দেখে নির্বণ চোখ বন্ধ করে আছে৷ নিয়তি পায়ে আস্তে করে একটা চিমটি কাটে৷ কিন্তু নির্বণ চোখ মেলে তাকায় না৷ নিয়তি শিউর হওয়ার জন্য নির্বণে কাছে আসে। নির্বণের সামনে হাত নাড়িয়ে বুঝতে পারে নির্বণ ঘুমিয়ে গেছে।

নিয়তি চলে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে হেঁচকা টান দেয়। নিয়তি হেঁচকা টানে নির্বণের উপর গিয়ে পড়ে৷ নিয়তির খোলা কেশগুলো নির্বণের সারা মুখে ছড়িয়ে যায়৷ নিয়তির মাথা সরাতে নিলে নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷ দু’জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷

চলবে……

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-০৫

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়

নিয়তির ব্যথার জন্য পা ফেলতে পারছে না৷ তবুও কষ্ট করে পা ফেলার চেষ্টা করছে। ধীর পায়ে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়াতেই নিয়তি শূন্যে ভাসতে থাকে।

— নিয়তি চিৎকার করতে নিলেই নির্বণ বলে উঠে, “স্টপ! একটা কথাও বলবে না৷ হাঁটতে পারছে না মহারানী তাও হাঁটার চেষ্টা করছে৷ ”

— আপনি এখনো জেগে আছেন। আর আপনি হুট করেই ভুতের মতো আমাকে কোলে তুলে নিলেন কেন?

— হাঁটতে পারছো না সেদিকে তোমার কি কোন খেয়াল আছে? নিজের দিকে এভার একটু খেয়াল রাখো।

— আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ আমার কিছু হবে না৷ এর থেকে কত বড় আঘাত পেয়েছি তখন কিছু হয়নি৷ এখন আবার কি হবে?

— কথায় আছে না “ভাঙবে ঠিক মচকাবে না৷” আমি তোমাকে ওয়াসরুমে দিয়ে আসছি৷

— এই এই না৷ নামান আমাকে। আপনি আমার ওয়াসরুমে যাবেন৷ আমি ওয়াসরুমে যাব না৷ আপনিই যান ওয়াসরুমে।

— ওকে ফাইন৷ আমারও কোন ইচ্ছা তোমার মতো মোটুকে কোলে তুলে নিতে।

— আপনার উপর চাঁদ ভেঙে পড়বে৷ আমার ভর মাত্র ৫৬ কেজি৷ আমাকে মোটু বানিয়ে দিলেন৷ আমি এখনো একটা নিষ্পাপ শিশু।

— চোখ বড় করে, ” তুমি শিশু৷ মিস নিয়তি তুমি শিশু নয়৷ তোমাকে বুড়ী শিশু বলতে হবে।”

— নিয়তি নির্বণের বুকে কামড়ে দিয়ে ” ওই ব্যাটা আপনাকে আমি কোলে নিতে বলেছি৷ নামান আমাকে৷”

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” তোমার মতো মেয়েদের সাহায্য করাটাই আমার ভুল।”

নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷ সাথে সাথে নিয়তি ফ্লোরে পড়ে যায়। নিয়তি ভাবতে পারেনি নির্বণ তাকে ফেলে দিবে৷

— নিয়তি কোমরে হাত দিয়ে, “ও মাগো ও বাবা গো আমার কোমর ভেঙে গেছে৷ তোমাদের মেয়ে পঙ্গুত্ব হয়ে গেছে৷ আর কেউ তোমাদের মেয়েকে বিয়ে করবে না৷”

— চেঁচিয়ে বলে উঠে, “সাট আপ। এত রাতে তোমার নাটক না করলে হয় না৷” সব সময় ড্রামা নিয়ে থাকে৷ একটা ড্রামাবাজ মেয়ে।

— আপনি জানেন, “আমার কোমর ভেঙে গেছে৷” একে তো আমি ঠিকভাবে হাঁটতে পারছি না৷ তার উপর কোমরে ভেঙে গেছে৷

নির্বণ নিয়তি কোমরে হাত রেখে দেখার চেষ্টা করে৷ নিয়তি কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে নির্বণের শার্ট খাঁমচে ধরে। নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিয়তিকে কোলে তুলে নেয়৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে৷ এটা ভেবে যে আবার ফেলে দিবে না তো।

নির্বণ নিয়তিকে কোলে করে ওয়াসরুমে নামিয়ে দিয়ে আসে৷ আসার সময় নিয়তি ওয়াসরুমের দরজা বন্ধ করতে নিলেই নির্বণ পা দিয়ে তা আটকাতে বাঁধা দেয়৷

— নিয়তি শুকনো গলায় বলে উঠে, “আপনি দরজা বন্ধ করতে দেন না কেন? আপনার সমস্যা কি?”

— ব্রু নাচিয়ে বলে উঠে, ” আমি বাহিরে আছি৷ দরজা বন্ধ করতে হবে না৷ তোমার কাজ শেষ না হওয়া অব্দি আমি এখানেই আছি৷ ভিতরে যাব না৷ এইজন্য তোমাকে আমি আটকাচ্ছি যেন কোন সমস্যা হলে সাহায্য করতে পারি৷”

নিয়তি বাধ্য মেয়ের মতো নির্বণের কথা মেনে নেয়। নির্বণ ওয়াসরুমের বাহিরে নিয়তির জন্য অপেক্ষা করছে৷ নিয়তি ভাবতেই পারছে না নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে। নিয়তি ভেবে নিয়েছিল নির্বণ বাহিরে নেই৷ হেঁটে চলে যেতে নিলেই নির্বণ চোখ পাকিয়ে সামনে দাঁড়ায়।

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” এই মেয়ে তুমি কি একবার কিছু বললে বুঝতে পার না৷ আমি কতবার বললাম আমি বাহিরে তোমার জন্য ওয়েট করছি৷”

— আসলে স্যার আমি বুঝতে পারিনি৷ আমি ভেবেছিলাম আপনি চলে এসেছেন৷

নিয়তির উপর রাগ দেখিয়ে নিয়তিকে কোলে তুলে নেয় নির্বণ। নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ নিয়তির গায়ের উপর কম্বল দিয়ে দেয়।

— নিয়তি কিছু বলতে নিলেই নির্বণ থামিয়ে বলে উঠে, “যদি মুখ থেকে একটা কথা বের হয় কোমর যতটা ভালো আছে ততটাও ভালো থাকবে না৷”

নিয়তি ভয় পেয়ে কম্বল চোখে মুখে দিয়ে শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ সোফায় এসে নিয়তির দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে৷ নিয়তি চোখ মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে নিয়ে ভাবতে শুরু করে।

” স্যার আপনি সব সময় মানুষের ভালো চেয়ে এসেছেন৷ কিন্তু নিজের দিকটা একবারও ভেবে দেখেছেন৷ নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেন না৷ আপনি সব সময় অন্যের খেয়াল রাখেন৷ অন্যের চাওয়া পাওয়া গুরুত্ব দেন৷ আপনার মনটা ভীষণ ভালো।

নিয়তি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ সকাল বেলা ঘুম ভাঙে নির্বণের ডাকে৷ নির্বণ নিয়তির জন্য চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

— নিয়তি হতদন্ড হয়ে উঠতে নিলে নির্বণ বলে উঠে, ” একদম উঠতে হবে না৷ আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে এসেছি৷ নিজ হাতে চা করে এনেছি।”

— আপনি আমার জন্য চা করে এনেছেন৷ আই কান্ড বিলিভ দিস।

— কেন আমি চা বানাতে পারি না৷ আমি অনেক ভালো চা বানাতে পারি৷ খেয়ে দেখতে পারো৷ আর হ্যাঁ তোমার বিছানা থেকে আজ উঠতে হবে না৷ তোমার সব কাজ আমি করে দিব৷ চা খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷

নিয়তি কোন কথা না বাড়িয়ে চা নিয়ে খেতে শুরু করে৷ চা মুখে দিয়েই ফেলে দিতে চাই৷ কিন্তু কি মনে করে ফেলে দেয় না৷ চায়ে চিনির পরিবর্তে লবণ দেওয়া হয়েছে৷ লবন চা বলতে নিয়েও বলল না৷

— নিয়তি কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” স্যার প্লিজ একবার দেখে আসেন মা ঘুম থেকে উঠছে কি না৷”

— ওকে আমি দেখে আসছি। তুমি চা খেয়ে কাপ হাতেই রাখবে। একদম নিচে নামার চেষ্টা করবে না৷

নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দেয়৷ সে মাটিতে পা ফেলবে না৷ নির্বণ রুম থেকে চলে যেতেই নিয়তি চা বেসিনে ফেলে দিয়ে আসে৷ নির্বণ এসে দেখে নিয়তি একই ভাবে আধ অবস্থায় শুয়ে আছে৷

— নিয়তি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আমাকে মাটিতে নামার অনুমতি দেন৷ আমি মার কাছে যাব৷ মার কাছে না গেলে মা কি ভাববে বলেন না৷”

নির্বণ নিয়তির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়তির হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে রুমের বাহিরে চলে আসে৷ নিয়তি মন খারাপ করে বিছানা থেকে উঠে পড়ে৷

— নিয়তি জোরে জোরে বলে উঠে, ” আমিও দেখে নিব নিয়তিকে আটকায় কে? নিয়তি কারো উপদেশ মানে না৷ নিয়তি একাই একশো দোকানে তিনশো। সরি দু’শো।
_________

— নির্বণের মা চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠে, ” একি নিয়তির কি হয়েছে? এভাবে তুমি কোলে নিয়ে আসলে যে।”

— নির্বণ শান্ত গলায় বলে উঠে, ” উনি তো নিয়তি। উনার আবার কি হবে? রাখে কখনো নিজের খেয়াল। গতকাল রাতে চা ফেলে দিয়েছে নিজের পায়ে।”

— একি কিভাবে? এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে আর তুমি আমাকে এখন জানাচ্ছো?

— কি করব আর? তোমাকে টেনশনে রাখতে চাইনি৷ আমি তুফান মেইলকে বলেছি যে, ” আজ রুমে বসে বিশ্বাম নাও৷ কে শুনে কার কথা? উনি তো এখানেই এসেই ছাড়বে। (নির্বণ)

— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” আমার সোনা মা আমাকে বুঝি মিস করছিলে৷” আমি জানতাম আমার সোনা মা আমাকে খুব মিস করে৷

— নির্বণ দৌড়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” ড্রামাবাজ মেয়ের ড্রামা শেষ হয় না৷ কত ড্রামা করতে পারে। ভাবা যায়৷ একে না দেখলে জানতেই পারতাম না। ”

— নিয়তি নির্বণকে ভেংচি কেটে বলে উঠে, ” আমি অন্যদের কি মতো গোমড়া মুখু? আমি সবাইকে মিস করি৷ আপনাকে না দেখলে আমার দিন যে যায় না৷”

— কিন্তু মা তুমি তো আজ অসুস্থ। তুমি বরং রেস্ট নাও৷ আমি একদম ঠিক আছে৷ আমার জন্য অনেক সার্ভেন্ট আছে।

— মা সার্ভেন্টরা কি কোন কাজ নিজের মনে করে করে? তারা তো লোভ দেখানোর জন্য কাজ করে৷ আমি আপনাকে কথা দিয়েছি তো আপনার সব কাজ আমি করব৷ আর আপনাকে সুস্থ করে তুলবো আমি। আর হ্যাঁ থেরাপি রেগুলার দিতে হয়৷ না হলে সমস্যা হতে পারে৷

— নির্বণ চোখ পাকিয়ে, “এই মেয়ে স্টপ।” মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলে উঠে, ” মা তুমি কোন চিন্তা কর না। নিয়তির সব কাজ আজ আমি করে দিব৷ ”

— কি আপনি আমার কাজ করতে পারবেন? আপনি তো একটা কাজ করতে পারেন না৷ করেছেন কোনদিন এসব কাজ?

— নিয়তি তুমি ভুলে যেওনা নির্বণ কেন চ্যালেঞ্জ হারে নি৷ আর কোনদিন হারবে না৷

— ওকে দেখা যাক। পারলে মাকে উঠিয়ে বসান৷

নির্বণ নিয়তির রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মার দিকে এগিয়ে আসে৷ মাকে কোলে তুলে নিয়ে হুইলচেয়ার বসিয়ে দেয়৷

নিয়তি নির্বণের এমন সাহসিকতা দেখে খুশী হয়ে যায়৷ নিয়তি ভেবে নিয়ে ছিল মাকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিবে।

— নিয়তি বলে উঠে, ” এভার মায়ের পা মালিশ করে দেন৷ দেখি মালিশ করতে পারেন কিনা ?”

নির্বণ তার মায়ের পায়ে ঠান্ডা তেল লাগাতে নিলেই নিয়তি বলে উঠে, ” কথায় আছে না ছাগল দিয়ে হাল চাষ করানো যায় না৷”

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” কি বললে তুমি? আমি ছাগল? ”

— আপনি শুধু ছাগলই নয়৷ আপনি একটা গাধা।

— আর একবার বলে দেখো আমাকে গাধা। তোমার কি অবস্থা করি তুমি নিজেও জানতে পারবে না?

— আপনি গাধার মতো কাজ করবেন৷ আর আপনাকে গাধা বলা যাবে না৷

— আমি গাধার মতো কি কাজ করলাম?

— আপনি কি কচি খোকা। কিছুই জানেন না৷ মালিশ করতে হলে তেলটা হালকা গরম করে নিতে হয়৷ যারা এমন ভুল করে তাদেরকে বলা হয় মাথা মোটা, গাধা।

নির্বণ রেগে গজগজ করতে করতে তেল গরম করতে চলে যায়৷ এই দিকে নির্বণের মা আর হাসি আটকে রাখতে পারছে না। তিনি অট্টহাসি দিয়ে উঠেন৷ নির্বণ এসে দেখে তারা হাসছে।

— নির্বণ হুংকার দিয়ে বলে উঠে, “তোমাদের হাসার পর্ব শেষ হলে কাজটা করতে দাও৷”

নির্বণ খুব যত্ন সহকারে পা মালিশ করে দেয়৷ নির্বণের মাও নির্বণের প্রতি খুব খুশি হয়৷ এভাবে নিয়তির পাশে দাঁড়ানোর জন্য৷
_______________

সন্ধ্যার দিকে নিয়তি মুখ গোমড়া করে বসে আছে৷ প্রতিদিন সে তার বাবার সাথে এই সময়ে দেখা করতে যায়৷ কিন্তু আজ যেতে পারছে না৷ কাউকে কিছু বলতে পারছে না৷

নির্বণ নিয়তির সমস্যা বুঝতে পারে৷ নিয়তির দিকে একটা শাড়ি বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে, ” শাড়িটা পড়ে নাও৷”

— কেন? আমি এই শাড়িতেই ভালো আছি৷ আমি এখন শাড়ি পাল্টাতে পারব না৷

— গতকাল থেকে এক শাড়ি তোমার গায়ে। মা পাল্টাতে বলেছে। আমি চাইনা এই নিয়ে কোন কথা হোক।

— ওকে.. কিন্তু।

— আমি বাহিরে আছি। সমস্যা নেই৷ দরকার পড়লে ডাক দিও৷

নিয়তি শাড়ি পড়ার পর সোফায় বসে আছে। নির্বণ হুট করেই তেড়ে আসে। নিয়তি তো ভয় পেয়ে সোফায় পা তুলে বসে৷ নিয়তিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। নিয়তি কিছু বলতে নিলেই ঝাঁকি দেয়৷ পড়ে যাওয়ার ভয়ে নিয়তি নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে।

নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে৷

চলবে……

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-০৪

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়

— ” স্যার আজ আপনি এত সকালে অফিসে এসেছেন যে। কোন দরকার আছে কি?” অফিসের পিয়ন নির্বণকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।

— নির্বণ নিস্তব্ধ নয়নে পিয়নের দিকে তাকিয়ে, ” না, তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই৷ গতকালের প্রজেক্টটা নিয়ে একটু সমস্যা ছিল তাই সকাল বেলা এসে পড়েছি৷”

— স্যার আপনি তো কিছু খেয়ে আসেননি। আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসতেছি৷ আপনি দুই মিনিট অপেক্ষা করেন৷

— ব্যস্ত হতে হবে না৷ আমার ক্ষুধা নেই৷ আমি খাবার খেয়েই বের হয়েছি৷

নির্বণ পিয়নের সাথে কথা শেষ করে নিজের কেবিন চলে যায়৷ কেবিনে বসে বসে নিয়তির কথাগুলো ভাবছে৷

— নিয়তি কিভাবে আমাকে একজন ধর্ষক বানিয়ে দিল৷ আমি তার সাথে কোন অন্যায় কাজ করলাম না৷ তাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি৷ আমারই ভুল হয়েছে তাকে আপন ভাবা৷

___________

নিয়তি চোখের জল মুছে ফ্রেশ হয়ে নির্বণের মায়ের রুমে চলে আসে৷ নিয়তি একজন সার্ভেন্ট দিয়ে নির্বণের মায়ের জন্য হুইলচেয়ার নিয়ে আসে। নিয়তি মাথায় হাত রাখতেই নির্বণের মা চোখ মেলে তাকায়৷

— মা আপনার ঘুম কেমন হলো? নিশ্চিয় কোমরের আজ অনেক ব্যথা করেছে।

— হ্যাঁ মা আজ কোমরে অনেকটা ব্যথা করেছে৷ তবে আমি সেই ব্যথা সহ্য করে নিয়েছি৷

— এইতো মা আপনি মনে সাহস জুগিয়েছেন৷ এভাবে সাহস জুগিয়ে সব সময় চলবেন৷ দেখবেন খুব তারাতাড়ি আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন৷

— “আমি আমি আবার আগের মতো হতে চাই৷ প্লিজ সোনা মা আমাকে সুস্থ করে দাও৷ আমি তোমাদের সাথে বেঁচে থাকতে চাই৷” কান্না করে বলে উঠে।

— নিয়তি চোখের জল মুছে ” মা আমি আপনাকে কি বলেছি চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে? আমার সামনে একদম চোখের জল ফেলবেন না৷ ” আমি যদি আবার চোখে জল দেখি তাহলে আমিও কান্না করে দিব৷

— আচ্ছা সোনা মা আমি আর চোখে জল নিয়ে আসবো না। তোকে কথা দিচ্ছি৷ এভার একটু হাসো। তুমি হাসি আমার খুব ভালো লাগে৷

— নিয়তি মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” এই তো আমি হাসছি৷ আমি আপনার মুখে হাসি দেখতে চাই৷

নিয়তি নির্বণের মাকে একজন সার্ভেন্টের সাহায্যে হুইলচেয়ার বসিয়ে দেয়৷ তারপর নির্বণের মায়ের পায়ে বৈদ্যুতিক থেরাপি দেয়৷ থেরাপি দেওয়ার পর নিজ হাতে নির্বণের মাকে খাইয়ে দেয়৷
__________

নির্বণ অফিস থেকে ফিরে আজ কোন কথা বলেনি৷ মার সাথে দেখা করে রুমে গোমড়া মুখ করে বসে আছে৷ নিয়তি বুঝতে পারে তার ব্যবহারে নির্বণ রেগে আছে৷ নিয়তি নির্বণের জন্য বেশি করে ফিফার দিয়ে চা বানিয়ে রুমে নিয়ে আসে৷

নির্বণ বেলকনির গ্রিল ধরে রাতের আকাশের তারা দেখছে৷ মনটা খুব খারাপ৷ অফিস থেকে এসে পোশাক পরিবর্তন করেনি। নিয়তি ভয়ে ভয়ে বেলকনিতে যায়৷

— নিয়তি শান্ত গলায় বলে উঠে, ” স্যার আপনার চা৷ খেয়ে নেন ঠান্ডা হওয়ার আগে।”

— নির্বণ চোখ বন্ধ করে নিজের অভিমানটা থামিয়ে, ” আমার কিছু খেতে মন চাইছে না৷ মিস নিয়তি তোমার চা তুমিই খেয়ে নাও৷”

— স্যার আজ আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার কিছু হয়েছে কি? অফিসে কোন সমস্যা হয়েছে কি?

— নির্বণ নিয়তির দিকে ঘুরে বলে উঠে, ” আমি কিভাবে কথা বলি৷ এখন কি তোমার কাছে আমার কথা বলা শিখতে হবে? যাও এখান থেকে বিরক্ত করবে না৷”

— স্যার আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার রাগ আমার উপর দিয়ে তুলছেন? ”

— চোখ পাকিয়ে, ” তুমি কি করনি বল? তোমার কাছে তোমার সম্মানের যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটাই আমার কাছে আমার সম্মান গুরুত্বপূর্ণ। আর তুমি কিনা আমাকে ধর্ষণের অপবাদ দিলে।”

— স্যার তখন আমি কি বলে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না? প্লিজ স্যার আমাকে ক্ষমা করে দেন৷

— এটা অফিস নয় বার বার স্যার বলতে হবে না৷ আর হ্যাঁ ধর্ষকের সাথে কথা বলতে তোমার লজ্জা করে না৷ একজন ধর্ষক তো সমাজে সব থেকে কলঙ্কিত হয়৷ তাকে সবাই ঘৃণা করে।

— নিয়তি কান্না করে দিয়ে, ” স্যার প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন৷ আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি৷ প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না৷”

— তোমার প্রতি আমার কোন বিদ্বেষ নেই৷ আর আমি ক্ষমা করার কে? ক্ষমা চাওয়ার হলে সৃষ্টি কর্তার কাছে ক্ষমা চাও। তিনি সকল সৃষ্টির আঁধার। তিনি পারেন না এমন কোন কাজ নেই৷

— নিয়তি সিদ্ধ নয়নে নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” তাহলে আমাকে কেন উপেক্ষা করছেন? আমার সাথে কেন গুরুচন্ডালীভাবে কথা বলছেন? কেন আমাকে ইগনোর করছেন?”

— মিস নিয়তি তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমরা স্বামী স্ত্রী নয়৷ তাই আমাদের মাঝে দূরত্ব থাকাই ভালো। তুমি এখান থেকে চলে যেতে পারো।

— আমি চলে যাব না৷ আগে বলেন আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি একা থাকতে চাই৷ আমাকে একা ছেড়ে দাও।”

— আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। সকালে ঘটনাটা ভুলে যান৷ আমি সব সময় আপনার হাসি মুখ দেখতে চাই৷ অবশ্য হাঁসবেন কিভাবে? আপনি তো সব সময় রেগে থাকেন৷ গোমড়া মুখু একটা৷

নির্বণ এভার নিজের ভিতরের রাগ আর ধরে রাখতে পারল না৷ নির্বণ নিয়তির হাত চেপে ধরে৷ নিয়তির হাতে গরম চা থাকাতে নিয়তির পায়ে গরম চা পড়ে যায়৷ সাথে সাথে নিয়তির পায়ে ফোঁসকা পড়ে যায়। নিয়তি যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নির্বণকে খাঁমচে ধরে। নির্বণ নিয়তিকে সেখানে ফেলে চলে আসে৷

নিয়তি পায়ের দিকে তাকিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। অনেকটা ঝলসে গেছে। নিয়তি দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু নিজ থেকে দাঁড়াতে পারছে না৷ নির্বণ রুমে এসে বিছানায় ধপাস/ধাপ করে বসে পড়ে। কিছুতেই নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না৷ বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা করছে৷

নিয়তি উঠে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ দৌড়ে এসে নিয়তিকে ধরে ফেলে৷ নিয়তিকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে। নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ এন্টিসেপ্টি মলম লাগাতে নিলে নিয়তি পা সরিয়ে নেয়৷

— নির্বণ নিয়তির পা ধরে, “আর যদি একবার পা সরিয়ে নাও তাহলে পা ভেঙে রেখে দিন৷”

— প্লিজ স্যার পায়ে হাত দিবেন না৷ পায়ে হাত দিলে আমার পাপ হবে৷

— মিস নিয়তি তুমি এই যুগের মেয়ে। তাই এসব চিন্তা চেতনা বাদ দাও৷ আমাকে মলম লাগাতে দাও৷

— আপনি কেন আমার পায়ে মলম লাগিয়ে দিবেন? আমি কি হয় আপনার? আপনার কোন অধিকার নেই আমার পায়ে মলম লাগানোর৷

— সাট আপ! তুমি আমার সাথে থাকো৷ তাই তোমার ভালো মন্দ দেখার সব দায়িত্ব আমার৷ আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না৷

— আমার পা পুড়ে গেছে তার জন্য তো আপনার খুশি হওয়ার কথা৷ আমি আপনাকে কত কষ্ট দিলাম৷ ধর্ষণ না করাতেও আপনাকে ধর্ষণ বানিয়ে দিলাম।

— এই মেয়ে এত বেশি বুঝ কেন? চুপ করে শুয়ে থাকো৷ আর একটা কথা নয়৷

নিয়তি নির্বণের হুংকার শুনে ভয় পেয়ে যায়৷ নির্বণ নিয়তির পায়ে মলম লাগিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ফ্রেশ হয়ে নির্বণ সোফায় শুয়ে পড়ে।

— নিয়তি জোর করে উঠে বসে, ” স্যার আপনি সোফায় ঘুমাতে পারবেন না৷ আপনি বিছানায় ঘুম আসেন৷ আমি ফ্লোরে শুয়ে পড়বো। ”

— তুমি বিছানায় আছো বিছানায় থাকবে। বিছানা থেকে পা ফেললে পা ভেঙে রেখে দিব৷ আর আমাকে বিরক্ত করবে না৷ আমার ঘুম পাচ্ছে।

নির্বণ এমনিতেই রেগে আছে। তাই আর নির্বণকে রাগাতে চাইনা নিয়তি তাই নির্বণের কথামতো নিয়তি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে।

মাঝ রাতে নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি পায়ের ব্যথার জন্য ঘুমাতে পারছে না৷ নিয়তি ধীরে পায়ে ওয়াসরুমে চলে যেতে নিলেই….

চলবে…

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-২+৩

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০২_০৩
#অধির_রায়

নিয়তি আলমারি খুলে নির্বণের মায়ের কথা মতো বক্সটা নিয়ে আসে৷ তার পর নির্বণের মা যা বলে নিয়তি উত্তর দেওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷

— নির্বণের মা কোমল কন্ঠে বলে উঠেন, ” নিয়তি এই বক্সে একটা পুরাতন ডিজাইনে গহনা আছে। সেটা আজ থেকে তোমার৷ ওই গহনাটা আমার শ্বাশুড়ি মা আমাকে দিয়েছিলেন। উনার মুখ থেকে শুনা ওই গহনা উনাকে উনার শ্বাশুড়ি মা দিয়েছেন৷ এই গহনা আমাদের বাড়ির বউদের ঐতিহ্য ও সম্মান বহন করে। আজ থেকে তুমি এই বাড়ির বউ। তাই গহনাটা আজ থেকে তোমার। ”

নিয়তি কি বলবে বুঝতে পারছে না? নিয়তি তো এই বাড়ির বউ নয়৷ কিভাবে এই বাড়ির ঐতিহ্য বহন করবে? ড্যাবড্যাব করে হাত কাচুমাচু করছে। নিয়তির এমন অবস্থা দেখে নির্বণের মা হেঁসে উঠেন।

— “আরে বোকা মেয়ে ভাবার কিছু নেই৷ তোমাকে আজ থেকে এই বাড়ির দায়িত্ব বহন করতে হবে৷”

— ইতস্ততভাবে বলে উঠে “আসলে মা… আমি এই গহনা নিয়ে কি করব? আপনি বরং এই গহনাটি আপনার কাছে রেখে দেন। আমি এই গহনার ভার বইতে পারব না৷”

— নিয়তির হাতে হাত রেখে, ” আমাকে কি তোমার নিজের মা মনে হয় না? ভেবে নাও আমি তোমার নিজের মা৷ তোমার মা তোমাকে কিছু দিলে তুমি কি ফিরিয়ে দিতে পারবে?”

— নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে, ” ওকে মা৷ আমি এই গহনা সাদরে গ্রহণ করলাম। এখন আপনি বলেন কি খাবেন? আজ থেকে আপনার সব দায়িত্ব আমার।”
মনে মনে বলে উঠে, ” স্যারের সাথে এই গহনা নিয়ে কথা বলতে হবে। আমি চাইনা কাউকে কষ্ট দিতে। ”

— তুমি যা পছন্দ কর আজ থেকে আমি তাই খাবো। তবে বাঙালি খাবার হতে হবে৷ আমি বাঙালি খাবার বেশি লাইক করি৷

— নিয়তি হাসিমুখে বলে উঠে, ” আপনি রেস্ট নেন৷ আমি আপনার জন্য সব ব্যবস্থা করব৷”

নিয়তি নির্বণের মায়ের গায়ে কম্বল টেনে দেয়। এয়ারকন্ডিশনের পাওয়ার একটু বাড়িয়ে দিয়ে নির্বণের রুমে আসে গহনা নিয়ে৷

— নির্বণ অফিসের কাজ করছিল। নিয়তির উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে তার দিকে না তাকিয়েই বলে উঠে, ” মার সামনে ভালোভাবে অভিনয় করার জন্য ধন্যবাদ। ”

— নিয়তি অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠে, ” কিসের অভিনয়? আমি কোন অভিনয় করিনি৷ যা করেছি সব সত্য ছিল। ”

নিয়তির এমন কথা শুনে নির্বণ নিয়তির সামনে এসে দাঁড়ায়৷ নির্বণের চোখ দেখে নিয়তি বুঝতে পারে সে ভুল বলে ফেলেছে।

— নির্বণ চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” তো মিস নিয়তি৷ তুমি এখন নিজেকে মিসেস ভাবা শুরু করে দিয়েছো। তুমি ভালো করেই জানো তুমি এখানে অভিনয় করতে এসেছো। ভুলেও আমার দিকে পা বাড়ানোর চেষ্টা করবে না৷”

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” আসলে স্যার… আমি কোনদিন মায়ের ভালোবাসা পাইনি সেজন্য ভুল করে বলে ফেলেছি৷ আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই আপনার প্রতি৷”

— এই কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখতে পারলেই তোমার জন্য ভালো। আমি চাইনা তুমি আমার জীবনে আসো। ইভেন বিয়ের বন্ধনে আমি বাঁধা পড়তে চাই না৷”

নির্বণ নিয়তির হাতে একটা চুক্তিনামার একটা কপি দিয়ে চলে যেতে নিলেই নিয়তি নির্বণের সামনে এসে দাঁড়ায়।

— নির্বণ ব্রো কুঁচকে বলে উঠে, “আমার পথ আটকানোর মানে কি?”

— আমাকে চুক্তিনামা দিয়ে কিছু বুঝাতে হবে না৷ আমি কখনো নিজের লিমিট ক্রস করব না৷ সেজন্য আমি আপনার কাছে এসেছি৷

— কি বলতে চাও তুমি?

— নিয়তি গহনার বক্সটা নির্বণের হাতে দিয়ে বলে উঠে, ” এই গহনা আপনার মা আমাকে দিয়েছেন৷ গহনাটা এই বাড়ির বউদের সম্মান বহন করে৷ আমি নিতে চাইনি। তিনি জোর করে দিয়েছেন৷ উনার মনে কষ্ট না দেওয়ার জন্য নিয়েছি৷”

— তো.. এখন এই গহনা আমি পড়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াবো। নিজের কাছে রাখো। গহনার কোন অভাব নেই৷ এটা পছন্দ না হলে গহনা আমি কিনে এনে দিব৷

— আমি সে কথা বলতে চাইনি৷ আমি এই গহনা নিতে পারব না৷ গহনাটি আপনার কাছে রেখে দেন৷ আমি এই বাড়ির বউ নয়৷

— চৌধুরী বাড়ির কেউ কাউকে কিছু দান করলে সেটা ফিরিয়ে নেয় না৷ রেখে দাও তোমার কাছে। তুমি বুঝাতে চাইছো গহনার প্রতি তোমার কোন লোভ নেই৷ গহনার দিকে মন না দিয়ে আমার মায়ের দিকে মন দাও৷

কথাটি বলেই নির্বণ চলে যায়। নিয়তি এই গহনা নিয়ে কি করবে? কিছু না ভেবে গহনাটি নির্বণের আলমারিতে রেখে দেয়৷ গহনা রেখে রুম থেকে বের হতে নিলেই নির্বণের সাথে ধাক্কা খায় নিয়তি৷ ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তিকে ধরে ফেলে।

নিয়তি কোমরে নির্বণের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কিছুটা কেঁপে উঠে। পড়ে যাওয়ার ভয়ে নির্বণের শার্ট চেপে ধরে। নির্বণ নিয়তিকে দাঁড় করিয়ে দেয়।

— নির্বণ চোখে মুখে রাগ করে নিয়ে বলে উঠে, ” ডিজগাস্টিং। চোখ হাতে নিয়ে ঘুর। দেখতে পাওনা।দিলে তো আমার ড্রেস টা নষ্ট করে দিলে।”

— বিনয় স্বরে বলে উঠে, ” এখানে আমার কোন দোষ নেই৷ আপনি অপজিট থেকে আসছেন আমি কিভাবে জানবো? আমি তো রুম থেকে বের হতে নিচ্ছি৷”

— হয়েছে আর ন্যাকা সাজতে হবে না৷ আমি অফিসে যাচ্ছি৷ মিটিং আছে। আর হ্যাঁ তোমাকে এক মাস অফিসে যেতে হবে না৷ এই এক মাসের বেতন আমি দিয়ে দিব৷ তোমার পরিবর্তে আমার নতুন পিএ কাজ করবে।

নিয়তির কোন জবাব না শুনে হন হন করে নির্বণ অফিসে চলে যায়। নিয়তি দাঁড়িয়ে থেকে সেই ধাক্কা লাগার কল্পনা করতে থাকে। কিভাবে নিয়তিকে প্রটেক্ট করল?
__________

নিয়তি নির্বণের মাকে খাইয়ে দিয়ে বলে উঠে, ” মা আজ থেকে আপনাকে আমার কথা মেনে চলতে হবে।”

— নিয়তির দিকে চোখের মনি ঘুরিয়ে, ” আমি আমার সোনা মার কথা কি ফেলতে পারি৷ বলেন সোনা মা আমাকে কি করতে হবে?”

— কিছু করতে হবে না৷ তবে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে৷ মনে সাহস জুগাতে হবে৷ আমি আগে একটা ফিজিওথেরাপি হসপিটালে কাজ করতাম। সেখান থেকে আমার এই অভিজ্ঞতা৷ আপনি যদি এইভাবে শুয়ে থাকেন তাহলে আমাকে সুস্থ করা সম্ভব নয়৷

নিয়তির কথা শুনে নির্বণের মায়ের চোখে জল এসে পড়ে৷ প্যারালাইসিসের পর নির্বণের মা এক ভাবে বিছানায় শুয়ে আছে৷ সার্ভেন্টরা নির্বণের মায়ের দেখাশুনা করত৷ প্রকৃতি ডাক দিলে সার্ভেন্টরা এসে সাহায্য করে।

— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” না মা কান্না করবেন না৷ চোখের জল আপনাকে দুর্বল করে তুলবে। এখন থেকে চোখে জল নয়৷ মনে সাহস জোগাতে হবে। ”

— মুচকি হেঁসে, ” কিন্তু মা ফিজিওথেরাপি দিয়ে আমার কোন কাজ নেই৷ আর তো মাত্র ২৭ টা দিন আছি এই দুনিয়ায়।”

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” একদম এমন কথা বলবেন না৷ আপনাকে আমি বলেছি না “রাখে হরি মারে কে?” আপনার কিছু হবে না৷”

— আমার সোনা মা আমার কাছে থাকলে আমার কিছু হবে না৷ তুমি তো মা দুর্গা।

— হয়েছে আর আমাকে কিছু বলতে হবে না৷ এখন আপনার কাজ। আপনাকে এখন উঠে বসতে হবে৷

— অবাক চোখে তাকিয়ে, ” তুমি কি ঠিক আছো? আমি কি করে উঠে বসবো। তুমি ভালো করেই জানো আমি উঠে বসতে পারব না৷”

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। আমার কথামতো কাজ করতে হবে। এটাই আমার লাস্ট কথা৷” আমি সময় নষ্ট করতে চাই না৷ আজ থেকেই আপনার টেইনিং শুরু।

— ওকে আমাকে সাহায্য করতে হবে তো।

নিয়তি ধীরে ধীরে নির্বণের মাকে তুলে বসায়৷ নির্বণের মা ব্যথায় কেঁদে ফেলে। উঠতে খুব কষ্ট হচ্ছে। উঠতে না পেরে নিয়তির হাত চেপে ধরে। নিয়তি হাতে প্রচুর ব্যথা পাচ্ছে। নিয়তির সেদিকে কোন খেয়াল নেই৷ নিয়তির উদ্দেশ্য হলো সুস্থ করা৷ বহু কষ্টের পর নিয়তি তার কাছে সফল হয়৷

— নিয়তি চোখের জল মুছে দিয়ে, ” মা আপনাকে আমি বলেছি চোখে জল আনবেন না৷ চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে।”

— মা আমি আর পারছি না৷ প্লিজ আমাকে আজকের মতো ছেড়ে দাও। একদিনে এতটাই আমার জন্য অনেক কষ্টকর।

— ছেড়ে দিতে পারি৷ তবে আপনাকে এভাবে দুই ঘন্টা বসে থাকতে হবে। আমার দুই ঘন্টা বাহিরে কাজ আছে। কাজ শেষ করেই ফিরে আসবো।

— সোনা মা তুমি নতুন বউ। এমন সময় বাহিরে যাওয়া ঠিক হবে না৷

— মা ডোন্ট ওরি। আমার কিছু হবে না৷ মা আমি একজন বউ হওয়ার সমস্ত দায়িত্ব পালন করব৷ তেমনি আমাকেও বাহিরে দুই ঘন্টা সময় দিতে হবে। আমি যদি ঘরে বসে থাকি তাহলে তো কাজ আটকে থাকবে।

— মাথায় হাত রেখে, ” আমি তোমাকে আশীর্বাদ করছি তুমি ঘরে বাহিরে দু’টোতেই পারদর্শী হও। অল দ্যা বেস্ট।

নিয়তি নির্বণের মায়ের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। একজন সার্ভেন্টকে নির্বণের মায়ের রুমে রেখে যায়।
__________

নির্বণ ডাইনিং রুমে আসতেই নিয়তি দৌড়ে নির্বণের কাছে যায়৷ নিয়তির এমন ব্যবহারে নির্বণ কিছুটা বোকা বনে যায়৷

— মুচকি হেঁসে আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” স্যার আপনার জন্য একটা সুখবর আছে। ”

— চোখ ছোট করে, ” আমি বলেছিলাম বাড়িতে আমাকে স্যার বলে সম্মোধন করবে না৷ ”

— নিচু গলায় বলে উঠে “সরি! আসলে একটু সময় লাগবে সব কিছু মানিয়ে নিতে।”

— তুফান মে এখন বল, কি বলতে চাও? আমার জন্য কি সুখবর আছে?

— সেজন্য আপনাকে চোখ বন্ধ করতে হবে৷

— হোয়াট? আমি চোখ বন্ধ করব কেন?

— হাত কাচুমাচু করে, ” আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনি নিজের চোখে দেখতে পাবেন৷ ”

— ওকে। আমি চোখ বন্ধ করছি৷

নির্বণ চোখ বন্ধ করতেই নিয়তি নির্বণের চোখ চেপে ধরে। এতে নির্বণ খুব রেগে যায়৷

— হোয়াট দ্যা হ্যাল। তোমার সাহস কি করে হলো আমার চোখ ধরার?

— সরি! আমি আমার স্বার্থের জন্য কিছু করছি না৷ যা করছি আপনার জন্য৷ তাই নিজের রাগটা একটু কন্ট্রোল করেন।

নির্বণের চোখ ছেড়ে দিতেই নির্বণের চোখে জল এসে পড়ে। নির্বণ খুশি হয়ে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে।

চলবে…..

গতকাল প্রণামের জায়গায় সালাম লেখা হয়েছিল।সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি ভেবেছিলাম সালাম লিখলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়

নির্বণের চোখ ছেড়ে দিতেই নির্বণের চোখে জল এসে পড়ে। নির্বণ খুশি হয়ে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে।
নির্বণের কোন দিকে তেমন খেয়াল নেই৷ এক মুহুর্তের মাঝে ভুলে গেছে তাদের ছাড়া এখানে তৃতীয় কোন ব্যক্তি আছে৷ নির্বণ তার মায়ের কাশির শব্দে নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷

— নির্বণ আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি খুব খুব খুশি। তুমি আজ আমার মাকে বসাতে সক্ষম হয়েছো। তোমার এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না৷ ”

— উনি আমারও মা হন৷ আমি আমার মায়ের জন্য সব রকম চেষ্টা করব৷ কিছুতেই উনাকে এমন অবস্থায় থাকতে দিব না৷ আমি উনাকে ঠিক করে তুলবই৷

— কিন্তু নিয়তি ডাক্তার তো বলেছিল….

— আপনি নিশ্চয় ভুলে গেছেন আমি আপনার অফিসে কাজ করার আগে আমি ফিজিওথেরাপি হসপিটালে কাজ করেছি৷ সেখান থেকে আমার এমন অভিজ্ঞতা। প্যারালাইসিস বলতে কিছু হয় না৷ মানুষের অঙ্গ কাজ বন্ধ করে দেয় কিন্তু রক্ত চলাচল নয়৷ তখন কোন কিছুই সাহায্যে সেই অঙ্গের অনুভূতি জাগাতে পারলে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়৷

— নির্বণ নিয়তির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে নিয়তির হাত ধরে , ” নিয়তি প্লিজ তুমি আমার মাকে সুস্থ করে দাও৷ আমি তোমার কাছে এর থেকে বেশি কিছু চাই না৷ আমার মা আমার পৃথিবী।”

— নিয়তি বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে উঠে, ” ডোন্ট ওরি। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে ট্রাই করব৷ আমি মাকে সুস্থ করেই তুলবো।”

নিয়তির হাত ছেড়ে দিয়ে নির্বণ তার মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে৷ নির্বনের মাথায় নির্বণের মা হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। নিয়তি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। এভাবে সে কোনদিন মায়ের ভালোবাসা পাই নি৷

— মা আমি আজ খুব খুশি। আমি কতটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ (নির্বন)

— শান্ত কন্ঠে বলে উঠেন, ” আমি চাই আমার ছেলে সব সময় সুখী থাকে যেন৷ সৃষ্টি কর্তার কাছে আমার একটাই চাওয়া৷”
নিয়তিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কাছে আসো।”

নিয়তিকে ডাক দেওয়াতে নিয়তি যেন হাতের তলায় চাঁদ পায়৷ নিয়তি এক প্রকার দৌড়ে নির্বণের মায়ের কাছে যায়৷

— নিয়তি নির্বণের মাকে জড়িয়ে ধরলে নির্বণ কিছুটা ইতস্ততভাবে বলে উঠে, ” মা আমি আসছি৷ অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়নি৷ ”

— নির্বণের মা নির্বণের মাথায় হাত রেখে, ” ওকে বাবা৷”

নির্বণ দরজার কাছে এসে আবার থেমে যায়৷ মার কাছে এসে বলে উঠে, ” মা আজ আমাদের কোম্পানি একটা বিশাল বড় প্রজেক্টের কাজ পেয়েছে৷ এতে লাভ থাকবে ১ কোটি টাকার বেশি৷ আমি সব টাকা কর্মচারীদের বোনাস হিসেবে দিয়ে দিব৷”

— মহান কাজের কথা ভেবেছো তুমি। কর্মচারীরা এতে খুশি থাকবে। তোমার বাবাও মাঝে মাঝে এমন সিদ্ধান্ত নিত৷ অল দ্যা বেস্ট।
___________

নির্বণ ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়৷ খালি গায়ের জলের ফোঁটা মুক্ত মতোর ঝলমলে করছে৷ টাওয়াল প্যাঁচিয়ে রুমে আসে৷ এমন সময় রুমে বসে ছিল নিয়তি৷

নিয়তি নির্বণকে খালি গায়ে দেখে জোরে চিৎকার করে উঠে। নিয়তির চিৎকার শুনে নির্বণ দৌড়ে এসে নিয়তির মুখ চেপে ধরে।

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” এভাবে চিৎকার করার মানে কি?”

— উম… উম …

— কোনদিন কি আমাকে দেখো নি? আজ কি প্রথম দেখছো? কি হলো কথা বলছো না কোন?

নিয়তি হাত দিয়ে তার মুখের দিকে ইশারা করে৷ নিয়তি ইশারা করে বুঝিয়ে দেয় তার মুখ চেপে ধরে আছে। মুখ চেপে ধরলে কি করে কথা বলবে?

নিয়তি মুখ ছেড়ে দিলেও নিয়তিকে ছেড়ে দেয়নি৷ নিয়তি ঠিক একইভাবে জড়িয়ে ধরে আছে।

— লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে উঠে, ” আপনি এভাবে খালি গায়ে বের হয়েছেন কেন?”

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” তুমি আমার রুমে কি করছো?”

— আমি আপনার রুমে ইচ্ছা করে আসিনি৷ আমি রাতে কোথায় ঘুম আসবো ? বাড়ির সবাই তো জানে আপনি আমার হাসব্যান্ড। এখন আমি কি করব?

নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দিতেই নিয়তি আবার চিৎকার করতে নেয়৷ নির্বণ এবার নিয়তিকে সামনে থেকে মুখ চেপে ধরে৷

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” এই মেয়ে তুমি চিৎকার ছাড়া আর কিছু করতে পারো না৷”

— আপনার লজ্জা করে না একটা মেয়ের সামনে এভাবে খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতে।

— নির্বণ চোখ বড় করে, ” আমাকে খালি গায়ে দেখে তোমার লজ্জা করছে। আমি কি মেয়ে যে খালি গায়ে থাকতে লজ্জা পাবো।”

— ইতস্ততভাবে শান্ত গলায় বলে উঠে, আপনি মেয়ে নয়৷ কিন্তু আপনার কোন বুদ্ধি নেই৷ আপনি একটা মাথা মোটা৷ মেয়েদের সামনে এভাবে খালি গায়ে যেতে নেই৷ ”

— নির্বণ অট্টাহাসি দিয়ে, ” আমি খালি গায়ে থাকলে তোমার লজ্জা লাগে। তাহলে তো আমি সব সময় খালি গায়েই থাকবো। তাহলে তোমার মাঝে লজ্জার ভাব ফুটে উঠবে৷ আমার তো কোনদিন মনে হয়নি তোমার লজ্জা বলতে কিছু আছে?”

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” কি বললেন আপনি? আমার লজ্জা নেই। আমাকে কোন দিক থেকে মনে হয় আমার লজ্জা নেই।”

— লজ্জা থাকলে এভাবে তুফান মে হতে না৷ কথা বলতে নিলে তো থামতেই চাও না৷ তুমি একটা টকেটিভ গার্ল।

— নিয়তি চেচিয়ে বলে উঠে, ” দূরে সরে দাঁড়ান৷ এভাবে আমাকে চেপে ধরে আছেন কেন? আপনার লজ্জা করে না, আমাকে এভাবে চেপে ধরে আছেন৷”

নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে আসতে নিলেই নির্বণের পা স্লিপ কাটে। নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়৷ নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটে লেগে যায়৷ দু,জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় মতো হয়ে যায়৷ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? একে অপরকে দেখে যাচ্ছে।

নিয়তি নিজেকে সংযত করে নির্বণের উপর থেকে উঠে যায়৷ নিয়তি লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে যায়৷ নির্বণ ফ্লোর থেকে উঠে টু কোয়াটার এন্ড ট্রি শার্ট পড়ে নেয়৷ বিছানা গা এলিয়ে দিতেই নিয়তির কথাগুলো কানে বাজে৷ লিপ কিস চোখে ভাসে।

নির্বণ তারাতাড়ি বিছানা থেকে উঠে নিয়তির কাছে যায়৷ কোথায় গিয়ে ঘুম আসবে নিয়তি সেটা মাথায় আসে। ডাইনিং রুমে এসে দেখে নিয়তি সোফায় বসে ঘুমিয়ে পড়েছে।

— স্যার ম্যাম তো এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে৷ আপনাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম। সার্ভেন্ট

— তোমাদের সবার খাওয়া হয়ে গেছে।

— স্যার আমরা সবাই খেয়ে নিয়েছি৷ আমাদের কাউকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ ম্যামকে ডেকে দেয়৷

— না লাগবে না৷ আমি তোমার ম্যামকে নিয়ে যাচ্ছি৷

— ওকে স্যার।

নির্বণ তার মায়ের রুম থেকে ঘুরে আসে৷ তার মায়ের রুমের নার্স সার্ভেন্ট দুইজনেই আছে৷ নির্বণ নিশ্চিত হয়ে আসে৷ নিয়তির ঘুম ভেঙে যেন না যায় সেজন্য নির্বণ নিয়তিকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে৷ রুমে নিয়ে এসে নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ নির্বণ চলে আসতে নিলেই নিয়তি নির্বণের হাত ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে নিয়তির পাশে বসে থাকে৷ নিজের হাত ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু নিয়তি কিছুতেই হাত ছাড়ছে না৷ আজ নির্বণ নিয়তিকে এত কাছ থেকে দেখছে। নিয়তির চেহারা মায়ায় জড়ানো। দেখলে মন ভরে যায়৷ ঘুমের মাঝে একদম নিষ্পাপ লাগছে।

নির্বণ কখন যে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে জানা নেই৷
__________

আঁধার কেটে আসে দিনের আলো। শুরু হয় মানুষের জীবনে নতুন অধ্যায়। সকলে ছুটে চলে নিজ নিজ কাজে। জীবনটাকে উজ্জ্বল করার জন্য সকলে ব্যস্ত হয়ে যায়। শান্ত পরিবেশ ধীরে ধীরে ব্যস্ততায় পরিণত হয়৷

পাখির কিচির মিচির শব্দে নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ ঘুম ঘুম ভাবে নিয়তি অনুভব করে কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷ নিয়তি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে নির্বণ তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷

নির্বণকে এত কাছে দেখতে পেয়ে নিয়তি রেগে যায়। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বুঝার চেষ্টা করে রাতের ঘটনা৷ রাতে তার সাথে কি হয়েছে? নিয়তির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। নিয়তি কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে এখানে কি করে আসলো।

— নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে, ” আপনার সাহস কি করে হলো আমার সর্বনাশ করার? আপনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিলেন।”

— নির্বণ ঘুম ঘুম চোখে, ” কি হয়েছে মা? প্লিজ মা আর একটু ঘুমাতে দাও না৷ প্লিজ ডিস্টার্ব কর না৷”

— নিয়তি চিৎকার করে, ” আমি আপনার মা নয়৷ আমি নিয়তি।”

— নিয়তি নাম শুনে নির্বণ ঘুম থেকে উঠে বসে৷ হুংকার দিয়ে বলে উঠে, ” সকাল বেলা আমার ঘুম না ভাঙলে হতো না৷ তোমাকে এই কাজের জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়নি৷”

— নিয়তি চোখ পাকিয়ে, ” আমি কি আপনার হুংকারে ভয় পাই৷ আপনি কিভাবে পারলেন আমার সর্বনাশ করতে৷” রাতে আপনি আমার সাথে… বলেই কান্না করে দিল।

— স্টপ। তুমি নিজেকে কি মনে কর? তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷

— ইন্টারেস্ট নেই৷ তাহলে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলেন কেন? আমি তো এখানে আপনার রুমে ছিলাম না৷

— হ্যাঁ তুমি আমার রুমে ছিলে না৷ তুমি ডাইনিং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিলে। তোমাকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি৷

— আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? আপনার উদ্দেশ্য ভালো ছিল না তাই আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন!

— আমার কোন বাজে উদ্দেশ্য ছিল না৷ আমি সবার সামনে তোমাকে স্ত্রীর পরিচয় দিতেই এখানে নিয়ে এসেছি৷

— এই তো আসল কথা ভের হয়েছে৷ আপনি কি আমাকে বিয়ে করেছেন? আমাকে কিভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চান?

— আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা কর৷

— কি বুঝার চেষ্টা করব৷ আপনি একটা ধর্ষক।

ধর্ষক নাম শুনে নির্বণের মাথার রক্ত চেপে উঠে। নির্বণ বেশ রেগে যায়৷ নির্বণ নিয়তির গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

— নিয়তির মুখ চেপে ধরে বলে উঠে, ” সব সময় বেশি বুঝ কেন? আমি তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়নি৷” তোমার সাথে ঘুমানোর কোন ইন্টারেস্ট ছিল না৷ তুমি আমার হাত ধরে রেখে ছিলে। তাই বাধ্য হয়ে তোমার সাথে ঘুমাতে হয়েছে।

নির্বণ বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে চলে যায়৷ ভাবতে থাকে এই মেয়ে শুধু নেগেটিভ ভাবে কেন সব সময়? মেয়ে হয়েছে বলেই সব সময় নেগেটিভ ভাবতে হবে।

— নিয়তি নিজের গালে হাত রেখে মনে মনে বলে উঠে, ” সরি স্যার! আমি আপনাকে জেনে বুঝে কষ্ট দেয়নি৷ আমি মেয়ে, আমি সব সময় নিজের সম্মান নিয়েই ভাবি৷ মেয়েদের সম্মান মেয়েদের কাছে অমূল্য সম্পদ।

চলবে….
রোমান্টিক + নিরামিষ দুটোই দিয়েছি৷ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।