Sunday, July 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1369



শুরুটা অন্যরকম পর্ব-২৩+২৪

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৩
#অধির_রায়

— আমি আমি এ খাম দিয়ে কি করব?

— খাম দিয়ে কিছু করতে হবে না৷ এখন খামটা খুলে দেখো। এখানে কি লেখা আছে?

নির্বণ খামটা খুলে দেখে দুইটা সুইজারল্যান্ডের টিকেট। একটা নির্বণের নামে, অন্যটা নিয়তির নামে। পাঁচ দিনের জন্য টিকেট কেটে রেখেছেন নির্বণের মা৷

— মা এখানে তো আমার আর নিয়তির সুইজারল্যান্ডের টিকেট।

— হ্যাঁ, আমি তোমাদের হানিমুনের ব্যবস্থা করেছি৷ ছয় দিন পরেই তোমাদের ফ্লাইট। আমি কোন অজুহাত শুনতে চাইনা৷

— মা তুমি জানো আমাকে অফিসে অনেক কাজ করতে হয়৷ আমি না থাকলে অফিসে কেউ তেমন কাজ করে না৷

— সেসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না৷ আমি সব সামলে নিব।

— নির্বণ আশ্চর্য হয়ে, “মা তুমি এই শরীরে অফিস জয়েন্ট করবে৷ প্লিজ মা এমন করো না, তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে আবার৷ আমি তোমাকে হারাতে পারব না৷
কথাগুলো বলার সময় নির্বণের গলা ধরে আসছিল।

— যদি সৃষ্টি করে চান তাহলে আমার কোন ক্ষতি হবে না৷ ডাক্তার তো বলে দিয়েছিল আমার আয়ুষ্কাল মাত্র ৩০ দিন। বাট আমি এখনো বেঁচে আছি৷ আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷

— মা তুমি সব আমাকে ব্লাকমেইল কেন কর? তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারব না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমার জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করতেও দু’বার ভাবাবো না৷

_________

নিয়তি, নিয়তির বাবা, নির্বণ, নির্বণের মা এক সাথে অফিসে প্রবেশ করে। তাদের সকলকে এক সাথে প্রবেশ করতে দেখে সকলের মুখে হাসি।সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন তাদের মালকিন নির্বণের মাকে দেখে৷ সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়।

নির্বণের মায়ের হুকুমে সবাই বড় একটা হল রুমে একত্রিত হয়৷ নির্বণের মা সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠেন, ” আজ থেকে আমি আর নিয়তির বাবা এই কোম্পানি দেখাশুনা করব৷ আর তোমাদের স্যার এন্ড তোমাদের ম্যাম কিছুদিনের জন্য দেশের বাহিরে যাবে। যতদিন ব্রেক না করছে ততদিন আমরাই এই কোম্পানি পরিচালনা করব৷”

নির্বণের মায়ের বক্তব্য শুনে সকলেই হাত তালি দেয়৷ নির্বণ একে একে সবাইকে সব কাজ বুঝিয়ে দেয়৷

— নিয়তি বলে উঠে, ” আপনারা এই সময় বসে থাকবেন, রেস্ট নিবেন। আমাদের জন্য ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবেন৷”

— নির্বণের না অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে, ” আমি তোমাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত এজন্য নিয়েছি যেন আমি নাতি বা নাতনির মুখ দেখতে পাই৷”

— “মা সেটা আপনার ছেলেকে বলেন৷ আমি কিছু জানি না৷”

নিয়তি লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে যায়৷ নির্বণ এবার বিপদের মুখোমুখি। নির্বণের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে তার মা৷ তার মা হলে মেনেজ করে নেওয়া যেত৷ ড্যাবড্যাব করে তার শ্বশুর মশাইও তাকিয়ে আছে।

— নির্বণ আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” আসলে মা আমার একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে। আমি এখনি আসছি৷”

নির্বণ কোন রকম নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে রুম থেকে চলে আসে৷ নির্বণের মা আর নিয়তির বাবা অট্ট স্বরে হাসি দেয়৷
________

রাতের আঁধারে নিয়তি পেটের উপর হালকা কারো স্পর্শ পেয়ে জেগে উঠে। ঘুম ঘুম স্বপনে তাকিয়ে দেখে নির্বণ নিয়তির পেটে ট্যাটু একে যাচ্ছে৷ নিয়তি লাফ দিয়ে উঠে পড়ে।

— কিছুটা ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি এসব কি করছেন? সকলের নজর এখন থেকে আমার পেটের উপর থাকবে।”

— কেউ দেখতে পারবে না। কাদের এত বড় সাহস আছে, আমার নিয়তির দিকে নজর দিতে। চোখ তুলে ফেলবো।

— আপনি আমার পেটে ট্যাটু আর্ট করছেন কেন?

— আমি তোমার পেটে ট্যাটু আর্ট করিনি৷ আমার বেবিকে ওয়েলকাম জানাচ্ছি। চুপচাপ কোন কথা বলবে না৷

— ভাগাড়ে গিয়ে মারা যান৷ আপনি একটা লুচু পোলা৷ আগে ভাবতাম আপনি খুব ভালো একজন মানুষ৷ দিনে দিনে আপনি এত লুচু টাইপের পোলা হয়ে যাচ্ছেন যে, “কইতেও শরম লাগে।” লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলে উঠে।

— নিয়তির পেটে শুরশুরি দিয়ে, ” আমি এখনও কোন লুচু কাজ করিনি৷ আর তোমার মম্ আমাকে লুচু বানিয়ে দিল। তুমি তোমার মমকে বকে দাও৷”

— নিয়তি হেঁসে , ” এই আপনি বার বার এমন করেন কেন? আমার ঘুমটা না ভাঙানো অব্দি আপনার শান্তি হয়নি৷ এখন আমার সাথে অসভ্যতামি শুরু করলেন?”

— নিয়তিকে চোখ মেরে, ” তুমি মাকে কি বলেছিলে? তুমি তো বলেছিলে ‘আসবে তোমার কোলে ছোট সোনা’ সেটা আমি জানি৷ তাই আমি আমার ছোট সোনার আসার ব্যবস্থা করছি৷”

— নিয়তি চোখ পাকিয়ে, ” আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এখন আসছে আহ্লাদ দেখাতে৷ আমি ঘুম আসবো৷ আমাকে বিরক্ত করবেন না৷”

নিয়তি কম্বল টেনে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে কম্বলের নিচে চলে যায়৷

— নিয়তির দুই হাত বিছানায় চেপে ধরে গলায় নাক ঘেঁষে, ” তুমি আমার ঘোর লাগানোর বর্ষা৷ তোমাকে কাছে পেলে আমি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি৷”

নিয়তি নির্বণের নেশা ভরা কন্ঠের মায়াজালে আটকে পড়ে৷ নিয়তি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নিয়তি বুঝতে পারছে না, সে কি বলবে?

নির্বণ নিয়তির গলায় কয়েকটা ডিপ কিস করতে থাকে৷ নিয়তি নির্বণের ছোঁয়ায় পাগল হয়ে যায়। নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷

________

দেখতে দেখতে ফ্লাইটের সময় এসে পড়ে। নিয়তি নির্বণ সকলের আশীর্বাদ নিয়ে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

তারা সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেলে উঠে৷ ছবির মতো সুন্দর মধ্যপ্রাচীর শহর বার্ন, সুইজারল্যান্ডের রাজধানী। ১২ শতকের পুরানো ইতিহাস লুকিয়ে আছে এই শহরটির মাঝে৷ ১৬ শতের আগে এরা সুইসের সাথে যুক্ত হয়নি৷ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো প্রাচীন ক্লক টাওয়ার। যাতে জলন্ত আশ্চর্যজনক পুতুল আছে, একে “Zytglogge” বলে।

নিয়তি প্রথমবার সুইজারল্যান্ডে আসে৷ মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেল সুইজারল্যান্ডে নামকরা বিখ্যাত হোটেল। এই হোটেলের প্রতিটি আসবাবপত্র দেখে মনে হচ্ছে রাজকীয় কোন রাজবাড়ী। সবকিছু খুব সুন্দর করে সাজানো৷ মুগ্ধ নয়নে নিয়তি সব অপরুপ দৃশ্যগুলো দেখে যাচ্ছে৷ অপরুপ দৃশ্যগুলো হাত দিয়ে টার্চ করতে খুব মন চাইছে৷ কিন্তু হাত দিয়ে টার্চ না করে মন দিয়ে টার্চ করছে। দুই তলায় সিঁড়ির সাথে যে দেয়াল বিদ্যমান সে দেয়ালটি এমনভাবে গাছপালার প্রেইন্টিং করা দেখে মনে হচ্ছে বাস্তব দৃশ্য। নিয়তি এমন দৃশ্য মিস করতে চাইনা, তাই সে নিজের ফোনে কিছু ছবি তুলে নিচ্ছে।

নিয়তি দেখে মনে হচ্ছে কোন মানসিক হসপিটাল থেকে পালিয়ে আসা রোগী। একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে নিয়তি দৌড়ে দৌড়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। নির্বণের কোন কথা নিয়তির কান অব্ধি যাচ্ছে না৷

নির্বণ বাধ্য হয়ে নিয়তির হাত ধরে এক প্রকার টেনে নিয়তিকে রুমে নিয়ে যায়৷ নির্বণদের রুম হলো সাত তলায়।

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” তুমি কি পাগল হয়েছো? এভাবে কেউ দৌড়ে দৌড়ে পিক তুলে। তুমি কি এটা ইন্ডিয়ান মনে কর?”

— নিয়তির নির্বণের রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” আসলে আমি বুঝতে পারিনি৷ মানে আমি নিজের মাঝে ছিলাম না৷ কোনদিন তো এসব কিছু দেখিনি। আসলে আমি নিজের মাঝে ছিলাম না৷”

— নির্বণ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে, “তুমি নিজের মাঝে ছিলে কিন্তু বুঝার চেষ্টা করনি৷ এমন ভাব করলে মানুষ তোমাকে পাগল ভাববে৷” এভাবে আর ছুটাছুটি করবে না৷ সেলফি তুলবে ভালো কথা৷ ধীরে সুস্থে সেলফি তুল৷ তোমাকে তো কেউ মানা করবে না৷

— হুম বুঝতে পেরেছি।

নির্বণ নিয়তির দিকে এক নজর তাকিয়ে নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নিয়তি বেড়ে বসে ভাবতে থাকে, ” এই লোকটার রাগ সব সময় ওঠেই থাকে। নিজে সেলফি তুলে না বলে আমাকেও সেলফি তুলতে দিবে না৷ যত্তসব ফাউল পোলা একটা।”

নিয়তির ভাবনার মাঝে বুঝতে পারে নিয়তি শূর্ণে ভাসছে৷ নিয়তিকে নিয়ে নির্বণ হাঁটা শুরু করলে নিয়তি বুঝতে পারে সে নির্বণের কোলে৷

— এই আপনি হুট হাট করেই আমাকে পাঁজা কোলায় তুলে নেন কেন? আপনার মতলব কি?

— আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই তোমাকে হুট হাট করে কোলে নেওয়ার৷ তোমাকে অনেকবার ডাকা হয়েছে। কিন্তু মহারানী ভাবনার মাঝে রাজ্য জয়ের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

— আমাকে নামান৷ আর আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন৷ আমি রাজ্য জয় করেই ফেলেছিলাম।

ওয়াসরুমে নিয়ে এসে নিয়তিকে নামিয়ে দেয় নির্বণ৷ কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই নিয়তির ঠোঁটে আঙ্গুল দেয়৷ নিয়তিকে বলার সুযোগ না দিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়৷ দু’জনে ঝর্ণার জলে ভিজে যাচ্ছে।

নির্বণ অপলক দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে৷ ঝর্ণার জল নিয়তির ফ্রেসটা মুক্ত দানার মতো চকচক করছে। এলো কেশ বেয়ে ঝড়ে যাচ্ছে জল। লালচে ঠোঁটগুলো নির্বণকে কাছে টানছে৷ নিয়তিও নির্বণের দিকে ঘোর লাগানোর চাহনিতে তাকিয়ে আছে। সিল্কি চুলগুলো চোখের পাপড়ি ছুঁই ছুঁই অবস্থা। সিল্কি চুল থেকে কপোল বেয়ে ঝড়ে যাচ্ছে ঝর্ণার জল। একে অপরের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে৷

নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। নির্বণ এত কাছে আসাতে নিয়তি অনেকটা লজ্জা পেয়ে যায়৷

— নিয়তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠে, ” আপনি আগে স্নান করে নেন৷ আমি পরে স্নান করছি৷”

— নিয়তির কোমর চেপে ধরে, ” আমি একা স্নান করতে পারব না৷ তুমি আমার সাথে স্নান করবে।”

— আমি পারব না আপনার সাথে স্নান করতে৷ আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমি পরে স্নান করে নিব৷

— তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরে রাখিনি। আর আমি তোমার কথা শুনবো কেন? আমি এখানে আমার বেবির মায়ের সাথে হানিমুনে এসেছে৷ আমার বেবি যা চাইবে তাই হবে। তুমি আমার এসিস্ট্যান্ট, এসিস্ট্যান্টের মতো থাকবে।

— কি আমি আপনার এসিস্ট্যান্ট! তাহলে থাকেন আপনি আপনার বেবির মমকে নিয়ে৷ আমি চললাম৷

— নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির গলায় থাকা কালো তিলটায় ডিপ কিস করতে থাকে। নিয়তি বাধ্য হয়ে নির্বণের সাথে স্নান করে৷ নির্বণ দিনে দিনে যেমন লুচু টাইপের পোলা বের হচ্ছে যে, “নিয়তি চিনতেই পারছে না।”
________

দুপুরের খাবার খেয়ে নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নির্বণ ঘুমিয়ে পড়লেও নিয়তির চোখে ঘুম নেই ৷ নিয়তির মন শুধু হোটেলের বাহিরে ঘুরে দেখা৷ নিয়তি ধীরে ধীরে নির্বণের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একা হোটেলের বাহিরে চলে আসে৷

— নিয়তি হোটেলটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে৷ নিয়তি সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুইমিং পুলের নীল জল দেখে যাচ্ছে। গোধূলি বেলা সোনালী রোদ নিয়তির রুপটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে।

— সুইজারল্যান্ডের একজন হাফপ্যান্ট পড়া বিলাই মার্কা ছেলে নিয়তির সামনে দাঁড়িয়ে, ” ইউ আর সো হট৷ ইউ আর লুকিং সো সুইট। ইউ লিভ ইন উইথ মি৷

লিভ ইন কথাটা শুনে নিয়তির মাথায় রক্ত ওঠে যায়৷ নিয়তি রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “কুত্তার বাচ্চা। মানুষ চিনে কথা বল৷ তুই আমার সাথে লিভ ইন করতে চাস৷”

— নিয়তির কথা বুঝতে না পেরে লোকটি মিষ্টি স্বরে বলে উঠে, ” ইউ এগ্রি।”

— নিয়তি কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” কুত্তার বাচ্চা তুই আমার সাথে লিভ ইন করতে চাস৷ আমি যদি তোর বারোটা না বাজিয়েছি তাহলে আমি ইন্ডিয়ান নয়৷ মেয়ে মানুষ দেখলে উল্টে পড়তে মন চাই।”

— নিয়তি শয়তানি হাসি দিয়ে, ” বেবি, উই ক্যান সুইমিং।

— খুশি হয়ে, “ইয়া সিউর৷ কম অন বেবি৷”

নিয়তি লোকটির হাত ধরে সুইমিং পুলের কাছে নিয়ে আসে৷ নিয়তির চোখ যায় ছোট একটা স্টিকে৷ নিয়তি দৌড়ে নিয়ে আসে৷

— “হোয়াইট আর ইউ ডুইন দিস স্টিক?”

— এটা দিয়ে তোকে পিটাবো কুত্তার বাচ্চা৷ কিভাবে মেয়েদের সম্মান করতে হয়, তোর আজ সে বিষয়ে ক্লাস নিব?

নিয়তি আর দেরি না করেই লোকটার চুল মুঠোয় চেপে ধরে। লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। কেউ নিয়তিকে আটকাতে আসছে না৷ নিয়তির অগ্নি দৃষ্টি দেখে সবাই দূরে দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে।

নিয়তির লোকটা পিছনে লাথি দিয়ে লোকটাকে সুইমিং পুলে ফেলে দেয়৷

— লোকটি চিৎকাট করে বলে উঠে, ” আই উইল সি ইউ।”

চলবে…

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৪
#অধির_রায়

রাতের আকাশে তাঁরার মেলা। সব তারকাদের হার মানিয়ে উঠেছে পূর্নিমার চাঁদ। চাঁদের আলোই সুইজারল্যান্ডের বিচের সমুদ্রসৈকতে আয়েশ করে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে দু’জনে।

— নিয়তি নির্বণের কাঁধে মাথা রেখে, “চলেন আমরা বালির উপর দিয়ে হেঁটে কথা বলি৷ এভাবে বসে বসে আইসক্রিম খেতে ভালো লাগছে না৷”

— হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিক বলেছো, আমরা হেঁটে হেঁটে আইচক্রিম খেতে পারি৷

আইসক্রিম হাতে নিয়ে দু’জনে হেঁটে হেঁটে খেয়ে যাচ্ছে। খাওয়ার কথা বললে ভুল হবে৷ নিয়তির একবার নির্বণের আইসক্রিমের উপর অট্যাক করছে৷ নির্বণ নিয়তির আইসক্রিমের উপর। অবশেষে সুইজারল্যান্ডের স্পেশাল চক্রবাক আইসক্রিম ডাস্টবিনে জায়গা করে নিল।

বিচের সব থেকে বড় সুন্দর এবং আকর্ষনীয় দৃশ্য হলো সাগরের জল। চাঁদের আলোয় জলের গায়ে সাথে মিশে রয়েছে৷ প্রতিটি ঢেউয়ের বাঝে বাঝে ভিন্ন ভিন্ন কালারে পতিত হচ্ছে৷ ঢেউয়ের সাথে অনেকে খেলা করছে৷ যখন ঢেউ আসে তখন জল হালকা নীল রঙের দেখায়। যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অদ্বিতীয়।

— মুখে এক ঝাঁক হাসির রেখা টেনে বলে উঠে, “আমিও স্নান করব সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে ? দেখেন সকলে কত ঢেউয়ের সাথে মেতে উঠেছে৷”

— নির্বণ গম্ভীর কণ্ঠে, ” না, একদমই না৷ এখন স্নান করলে তোমার জ্বর আসতে পারে। আমরা এই আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি এখনও।” আমরা আসলাম মাত্র এক দিন হলো।

— “কিছু হবে না৷ প্লিজ চলেন না! আমি তো অনেল সয়মে অসময়ে স্নান করেছি৷” প্যাঁচার মতো মুখ করো

— অন্যদিকে মুখ করে, ” আমি সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে নামতে পারব না৷ তোমার ইচ্ছা হলে তুমি নিজেই স্নান করে নাও৷”

— নির্বণের সামনে দাঁড়িয়,” কেন? প্লিজ আমি আর কিছু করব না৷ একদম ভালো মেয়ের মতো থাকবো৷ আপনাকে কখনও বিরক্ত করতে যাব না৷ আপনি যত ইচ্ছা মুখ গম্ভীর করে থাকতে পারেন৷”

— কর্কশ কন্ঠে, ” তুমি কি কিছু বুঝতে চাও না৷ নাকি বুঝার চেষ্টা করো না। তোমার কোন আইডি আছে৷ রাত ১১ টার দিকে স্নান করবে৷ স্নান করা মানে জ্বরকে নিমন্ত্রণ করা৷”

— নির্বণকে জড়িয়ে ধরে, “আপনার কিছু হবে না, আমি আছি তো৷ জ্বর হলে আপনার সব জ্বর আমি নিজের করে নিব৷ আপনাকে কখনও কষ্ট পেতে দিব না৷ ”

নিয়তি নির্বণের কোন কথা না শুনে নির্বণকে টেনে নিয়ে যায় স্নান করতে৷ নির্বণ বাধ্য হয়ে নিজের জিনিসপত্র একটা আইসক্রিম ওয়ালার কাছে রাখে। তারপর নিয়তির মুখের হাসির জন্য সমুদ্রের জলে নামে৷

অল্প জলে বালির সাথে খেলা করছে নিয়তি। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। নির্বণ নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিয়তির হাসি নির্বণের মনে ভালোবাসার দাগ কেটে যাচ্ছে। যদি এই মুহুর্তটা থেমে যেত৷ তাহলে নির্বণ সারাজীবন নিয়তির দিকে এভাবে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো।

— নির্বণের ঘোর কাটে নিয়তির জল ছিঁটানোতে। নির্বণ অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠে, “ননসেন্স।” এসব কি? আমার দিকে এভাবে জল ছিঁড়ে দেওয়ার মানে কি?

— সরি। আপনিকে অনেকক্ষণ থেকে ডাকা হচ্ছে৷ কিন্তু আপনি কোন সাড়া দেননি৷ এজন্য আমি আপনার চোখে মুখে জল ছিঁড়ে দেয়৷

নির্বণ বুঝতে পারে সে নিয়তির দেখার নেশার ঘোরে ভুল কিছু বলে ফেলেছে। নির্বণ নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য নিয়তির হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে৷

— কোমল স্বরে, “আমার বেবির মম্ বুঝি রাগ করেছে আমার উপর৷ আমি তো সেটা ফার্ন করেছি৷ প্লিজ মন খারাপ কর না৷”

— অসহায়ভাবে বলে উঠে, “আমি কিছু মনে করেনি৷” চলেন আমরা এখন হোটেলে ফিরে যায়৷

নিয়তি চলে আসতে নিলেই নির্বণ এক হাত দিয়ে নিয়তির হাত ধরে অন্য হাত দিয়ে নিয়তির দিকে জল ছুঁড়ে মারে। নিয়তি চোখে হাত দেয়৷

— এই থামেন৷ আমার চোখে জল আসছে। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না৷

কিন্তু নির্বণ নিয়তির চোখের দিকে জল ছুঁড়েই যাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অতি কষ্টে এগিয়ে আসে৷ আর নির্বণের মাথা ধরে জলে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তির মাথা ধরে জলে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে৷

___________

অনেকক্ষণ ধরে স্নান করছে কিন্তু কিছুতেই বালি গা থেকে উঠছে না৷ নির্বণ খুব রেগে আছে নিয়তির উপর৷ কিছুতেই নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে না৷ প্রায় এক ঘন্টা থেকে নিয়তি ওয়াসরুমে স্নান করে যাচ্ছে। এই দিকে নির্বণের গায়ের বালি শুয়ে কাট হয়ে গেছে৷ ধীরে ধীরে শুকনো বালিই গা থেকে ঝড়ে যাচ্ছে৷

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” নিয়তি ওপেন দ্যা ডুর। আর কতক্ষণ লাগবে। প্রায় এক ঘন্টা থেকে তুমি ওয়াসরুমে কি করছো?”

— নিয়তি নির্বণের কথা শুনেও না শুনার ভান করে, “কি বললেন? বুঝতে পারি নি৷ প্লিজ পুনরায় আবার বলেন৷

— “নিয়তি ভালোভাবে বলছি দরজা খোল, না হলে দরজা ভেঙে ফেলবো।” রেগে বলে উঠে নির্বণ।
আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না৷

নিয়তি বুঝতে পারে তার উপর অনেক রেগে আছে৷ কোন উপায় না পেয়ে ওয়াসরুমের দরজা খোলে দেয়৷

— নির্বণ ওয়াসরুমে প্রবেশ করে বলে উঠে, ” স্নান করতে কতক্ষণ লাগে। আমি তো মনে করতেছি তুমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছো।”

— ইনোসেন্ট ফ্রেস নিয়ে বলে উঠে, ” আমি কি করব বলেন? গা থেকে কিছুতেই বালি উঠছে না? দেখেন সোপ অর্ধেক হয়ে গেছে। কিন্তু বালি এখনও অর্ধেক হয়নি৷”

— নিয়তির মাথায় টুকা দিয়ে, “আরে বুদ্ধু এসব বালি একা তুলতে পারবে না৷ মানুষের গায়ের স্পর্শে এসব বালি উঠে যায়৷ কোনদিন হিন্দি মুভি দেখোনি৷ মানলাম তুমি সুইজারল্যান্ডে এর আগে আসো নি। কিন্তু বইয়ের পাতায় কোনদিন পড়েনি মান্টিকালো বিচের বালির কথা।”

— মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে, ” আমি জানলে এমন কখনোই করতাম না৷ সোপ দিয়ে অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই কাজ হচ্ছে না।”

— সোপ দিয়ে এসব বালি উঠবে না৷ আমি তোমার বালি তুলে দিচ্ছি। তুমি আমার বালি তুলে দাও৷ তাহলে আমরা এই বালি থেকে মুক্তি পাবো৷

একে অপরকে সাহায্যের মাধ্যমে দেহ থেকে অনেক কষ্টে বালি দূরে করে। তাদের জীবনে এটা একটা বড় অভিজ্ঞতা।

__________

ক্যাফেতে নির্বণের জন্য বসে অপেক্ষা করছে নিয়তি৷ সেই সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি৷ খাওয়া হয়নি বললে ভুল হবে। তাদের মাঝে কেউ তো সকালে উঠেনি৷ তাহলে খাবে কি করে?

রাতে অনেক দেরিতে ঘুমানোর জন্য তাদের ঘুম ভাঙে দুপুর বারো টার দিকে। নিয়তি ক্ষুধা লাগাতেই নিয়তি নির্বণকে ছেড়ে একাই ক্যাফেতে চলে আসে।

এই দিকে নির্বণ নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে নিয়তিকে খুঁজে যাচ্ছে। হোটেলের ছাঁদে, বেলকনিতে, হোটেলের চারপাশে। কিন্তু কোথাও নিয়তিকে খুঁজে পাচ্ছে না৷ নির্বণের চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে৷ অচেনা শহরে কিভাবে নিয়তিকে খুঁজে যাবে? যেভাবেই হোক নিয়তিকে খুঁজে বের করতে হবে৷ নির্বণ আবার রুমে ফিরে আসে৷

নির্বণ ফোন হাতে নিয়ে মনে মনে বলে উঠে, “না নিয়তিকে একটা ফোন করে দেখি৷ নিয়তি মেবি ফোন নিয়ে গেছে। পুলিশের কাছে ডায়েরি না করে আগে নিয়তির কাছে ফোন দেয়।”

যেই ভাবা সেই কাজ৷ নির্বণ নিয়তির নাম্বারে ফোন দেয়৷ সুইজারল্যান্ডে আসার আগে নির্বণ এন্ড নিয়তি দুইটা সুইজারল্যান্ডের সিম কিনে নেয়৷ হঠাৎ কোন বিপদ হলে যেন তারা যোগাযোগ করতে পারে খুব সহজেই।

— নির্বণ কাঁদো কাঁদো স্বরে, ” নিয়তি তুমি ঠিক আছো কি? নিয়তি তোমার কিছু হয়নি তো।”

— নিয়তি চকিত হয়ে, ” আমার আবার কি হবে! আমি তো ঠিক আছি৷ আপনার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি৷”

— নির্বণ নিয়তির কথায় একটা ছোটখাটো ধাক্কা খায়। তার জন্য অপেক্ষা করছে মানে। আশ্চর্য হয়ে বলে উঠে, ” তুমি আমার জন্য কোথায় অপেক্ষা করছো? আর এই দিকে..(থেমে যায়) ”
না নিয়তিকে এই বিষয়ে না জানানোই ভালো।

— কি হলো? আমার প্রচুর ক্ষুধা লাগছে৷ আপনি হোটেলের সামনের ক্যাফেতে চলে আসেন৷ আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না৷

নির্বণ ফোন রেখে শার্টের হাতা হোল্ড করতে করতে লিফ্টের কাছে চলে আসে৷ নির্বণ এই কয়েক মিনিটের মাঝে প্রায় হ্যাফ মেন্টাল হয়ে গিয়েছিল।


— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” এভাবে না বলে চলে আসার মানে কি? কাউকে চিন্তায় না ফেললে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না৷’

— এভাবে বলার কি আছে? আমি ওয়াসরুমে ছিলেন৷ আর আমি তো আপনাকে জানিয়েছি৷ আপনি মেবি শুনতে পারেন নি৷

— ওকে ফাইন৷ এর পর যেন এমন ভুল আর না হয়৷ আমাকে না বলে কোথাও যাবে না৷

— প্রমিজ করছি৷ আর কখনও এমন ভুল করব না৷


নির্বণ নিয়তি খাবার শেষ শেষ করে হোটেলে ফিরে আসে৷ একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বিচের সাগরসৈকতে আবার আসে। কিন্তু তাদের পথ আটকিয়ে দাঁড়ায়।

চলবে…

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-২১+২২

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২১
#অধির_রায়

চন্দ্রদেবের মুগ্ধ সিদ্ধ চাঁদের আলোর অবসান ঘটিয়ে নতুন দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। সকালের সূর্যের লালবর্ণ হলুদ রশ্মি কাঁচ বেধ করে নিয়তির গায়ে পড়ছে ৷ রাতে লেট করে ঘুমানোর জন্য সকাল সকাল উঠতে পারেনি৷

নিয়তি চোখ মেলে দেখে বিছানা খালি৷ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৬ঃ৩০ বাজে। নির্বণকে দেখতে না পেয়ে নিয়তির বুকটা চিন চিন করে ব্যথা করতে থাকে। নিয়তি হন্তদন্ত হয়ে নির্বণকে খুঁজতে থাকে৷ নিয়তি নির্বণকে ওয়াসরুম, বাড়ির ছাঁদ ইভেন প্রতিটি ঘরে খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছে৷

নিয়তি কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না৷ এত সকালে কোথায় যাতে পারে? নির্বণের ফোন সুইচ অফ দেখাচ্ছে। যার জন্য নিয়তির হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে৷ নিয়তি মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়ে৷ হঠাৎ করেই চোখ আটকে যায় ট্রি টেবিলে। ট্রি টেবিলের গ্লাসের নিচে একটা চিরকুট নিয়তির চোখে পড়ে৷

নিয়তি অতি আগ্রহ নিয়ে চিরকুটটা খোলে৷ চিরকুটটা খুলতেই নিয়তির মুখে উজ্জ্বল হাসির রেখা ফুটে উঠে। নিয়তি মুচকি হেঁসে চিরকুট পড়তে শুরু করে,

“প্রিয়তমা,
শুভ সকাল। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের সাথে গল্প করবে৷ আমি তোমাকে বিরক্ত করতে চাইনি। আমি জানি তুমি গতকাল রাতে অনেক লেট করে ঘুমিয়েছো। তোমাকে না জানানোর জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি৷ আমার অফিসে আজ অনেক কাজ আছে৷ সারাদিন খুব বিজি থাকবো৷ ফোন বন্ধ থাকবে৷ প্লিজ রাগ করো না অভিমানী।
নির্বণ

________

–“মা আপনাকে একটা কথা বলবো প্লিজ কিছু মনে করবেন না৷” হাত কাচুমাচু করে।

— আভয় বানী দিয়ে, “আরে পাগল মেয়ে তুমি তো আমার সোনা মা। আমি কি তোমার কথায় রাগ করতে পারি?”

— আচ্চা মা নির্বণ কি কি খেতে ভালোবাসে? আমি চাই আজ নিজ হাতে নির্বণের জন্য রান্না করতে৷

— বেশ তো৷ এতে রাগের কি হলো? আমিও চাই তোমরা এভাবে একে অপরকে এভাবে ভালোবেসে যাও৷ তুমি কি জানো?

— মা আপনি কোন বিষয়ে জানার কথা বলছেন? হ্যাঁ, মা ৷ আমি মোটামুটি রান্না করতে পারি৷

— আমি রান্নার কথা বলিনি৷ মেয়েরা রান্নার মাধ্যমে স্বামীদের মন জয় করে৷ ভালো রান্না হলে স্বামীদের মন গলতে একটুও সময় লাগে না৷ আমি মন জয়ের কথা বলছি৷

— আমি সে জন্য রান্না করবো না৷ আমি আজ নির্বণের জন্য ভালোবেসে রান্না করব৷ যতটুকু পারি ততটুকু দিয়ে চেষ্টা করব৷ কিন্তু কি খেতে পছন্দ করে, বললেন না তো?

— নির্বণও আমার মতো বাঙালি খাবার খেতে পছন্দ করে। যেমনঃ চিতলের মইঠা, সরষে ইলিশ, সব থেকে বেশি পছন্দ করে স্যান্ডউইচ। যদিও স্যান্ডউইচ বাঙালি খাবার নয়৷

— আচ্চা মা আমি আজ চিতলের মইঠা, সরষে ইলিশ রান্না করব৷ কিন্তু মা আমি চিতলের মইঠা তেমন রান্না করতে পারি না৷

— অরিন রুমে ঢুকতে ঢুকতে, ” কোন চিন্তা নেই। আমি অরিন, সব কাজ পারি৷ আমি ছোট ম্যামকে মইঠা বানানোর কাজে সাহায্য করব৷”

— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” তাহলে তোমার কোন চিন্তা নেই৷ আজ তাহলে জমিয়ে খাওয়া হবে৷ কি বল নিয়তি?”

— হ্যাঁ, মা। আজ রাতে আমরা সবাই এক সাথে বসে খাবো৷
এখন আর আপনি আমাকে কথায় মায়াজালে আটকিয়ে রাখতে পারবেন না৷

— আমি তোমাকে আটকাতে যাব কেন? আমি জানি তুমি এখন আমাকে হাজারটা বকা দিবে৷ আমি নিজেকে নিয়ে কেন ভাবি না ?

— একদম আপনি সত্যি নিজেকে নিয়ে ভাবেন না৷ আমি আপনাকে বলেছি যে, “আপনি সব সময় মোভ অন করে যাবেন৷” কিন্তু আপনি একটু নড়াচড়া করতে চান না৷

— আমার খেয়াল রাখার জন্য আমার সোনা মা আছে৷ সেজন্য আমি নিজেকে নিয়ে চিন্তা করি না৷

— একটু উঁচু স্বরে বলে উঠে, “তাই তো দেখতেই পাচ্ছি৷ এখন কথা না বলে ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন৷”

— চকিত হয়ে, “আমি একা ওঠে দাঁড়াব!” আমার দ্বারা হবে না৷ আমার খুব ভয় লাগে। যদি পড়ে যায়।

— মা আপনাকে পারতেই হবে৷ এভাবে হলে চলবে না৷ আর কতদিন আপনি এভাবে শুয়ে থাকবেন৷ আপনাকে আমি এই অবস্থায় দেখতে পারব না৷

— প্লিজ আমার সোনা আমার উপর রাগ করে না৷ আমি তো এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ। ওঠে বসতে পারি৷ হুইলচেয়ার বসে চলাচল করতে পারি৷ নিজ হাতে খাবার খেতে পারি৷ উভয় হাতে শক্তি পায়৷

— আপনি শুধু ইমোশনাল কথা বলেন৷ যার ফলে আমার কষ্ট হয়৷ আমি জানি আপনি খুব ভয় পান৷কিন্তু কিসের ভয়? আমি সব সময় আপনার সাথে আছি, থাকব, আর চিরকাল আপনার পাশে থেকে যাব। আমি থাকতে আপনাকে কোন কষ্ট পেতে হবে না।

— এইতো আমার সোনা মায়ের মতো কথা৷

নিয়তি নির্বণের মাকে ধরে ধরে হাঁটানো শিখাচ্ছে। নির্বণের মা এখন একদম ছোট বাচ্চা হয়ে গেছে। ছোট বাচ্চাদের যেমন বাবা হাত ধরে হাঁটানো শেখান৷ তেমনি নিয়তিও নির্বণের মাকে হাঁটানো শেখাচ্ছেন।

__________

নিয়তি ডাইনিং রুমে পায়েচারী করছে৷ রাত ১২ টা বাজে এখন নির্বণ অফিস থেকে আসছে না কেন? নির্বণ তো কখনও এত রাত করেনি৷ নির্বণের জন্য রান্না করা খাবার সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷

হুট করেই ডাইনিং রুমের সব লাইট বন্ধ হয়ে যায়৷ নিয়তি ভয়ে চিৎকার করতে নিলেও থেমে যায়৷ কারণ এখন অনেকে ঘুমিয়ে আছে৷ ঘুমটা একদম কাঁচা। নিয়তি ধীরে ধীরে সোফার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ হুট করেই নিয়তিকে পিছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরে। নিয়তির বুঝতে বাকি রইল না লোকটি কে?

— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আপনি খুব পচা লোক। আর একটু হলে আমি ভয়ে মারা যেতাম৷”

— নিয়তির পেটে সোরসোরি কেটে, ” আমি ছাড়া আমর বউটাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার সাহস রাখে কে? যে হাত বাড়াবে সে হাত আমি কেটে রেখে দিব৷”

— হয়েছে এবার তো লাইট অন করেন৷ আর আমাকে সারপ্রাইজ দিতে হবে না৷ আমি আপনার উপর রেগে আছি৷ আপনি একটা বারও আমাকে ফোন করে জানানোর কথা ভাবলেন না৷

নির্বণ লাইট অন করে কান ধরে ওঠ বস শুরু করে। নিয়তি নির্বণের কান্ড দেখে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

— চকিত হয়ে, ” আপনি কি পাগল হলেন!” এভাবে কানে ধরার মানে কি?

— প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কখনও এমন করব না৷ তুমি যা বলবে আমি তাই করব৷

— নির্বণকে রাউন্ড করে, ” সত্যি বলছেন তো আমি যা করতে বলব আপনি তাই করবেন।”

— নির্বণ কিছু একটা চিন্তা করে, ” হ্যাঁ ম্যাম। আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।হুকুম করেন আমি কি করতে পারি?”

— আপনাকে কিছু করতে হবে না এখন। এখন ফ্রেশ হয়ে আসেন৷ আমি আপনার জন্য খাবার সার্ভ করছি।

— আসলে নিয়তি খাওয়ার আগে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই৷

— আজ আবার কিসরে সারপ্রাইজ? আর হ্যাঁ আমি এমনি অনেক সারপ্রাইজ হয়ে আছি৷ আমি আর সারপ্রাইজ হতে চাই না৷

— অসহায়ের মতো মুখ করে, ” জানিস নির্বণ তোর কথা শুনার মতো কারো সময় নেই৷ তোকে কেউ চিনে না৷ তুই কে?”

— এই যে মি. স্বামী। আপনি আপনার নাটক বন্ধ করেন৷ আপনি বলেন আমি ড্রামাবাজ। তুফাল মেইল৷ এখন দেখছি আপনিও কম কথা জানেন না৷ আর নাটকে আপনি আমার থেকে বেস্ট।
,
— আমি আপনার সাআ কথা মাথা পেতে মেনে নিলাম৷ এখন আমার সাথে তোমাকে একটু বাগানে যেতে হবে।

— আমি রাতে বাগানে যেতে পারব না৷ আর এত রাতে আমি বাগানে গিয়ে কি করব?

— ওই তো আমরা আকাশের চাঁদ দেখবো। রাতের আকাশে চাঁদের আলোই বসে তোমার সাথে গল্প করব৷

— মহাশয় আমি এখন রোমান্টিক মুডে নেই৷ আর চাঁদের আলো দেখার জন্য বাহিরে যেতে হবে না৷ আমরা বরং ছাঁদে চাঁদের আলো উপভোগ করতে পারি।

— হ্যাঁ পারি৷ প্লিজ আমার সাথে তোমাকে এখন বাহিরে যেতে হবে৷ আমার একটা কাজ আছে৷

— কি কাজ? আর এত রাতে বাহিরে আপনার কি কাজ থাকতে পারে?

— আরে বাহিরে না গেলে জানতে পারবে কিভাবে? আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না৷ তুমি আমার সাথে এখন বাহিরে যাবে৷

নির্বণ নিয়তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিয়তিকে এক প্রকার টেনে বাহিরে নিয়ে আসে। নিয়তি বাহিরে এসে সামনের মানুষকে দেখে ফ্রিজ হয়ে যায়৷ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। ভাবতেও পারেনি নির্বণ এমন কাজও করতে পারে।

চলবে…..

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২২
#অধির_রায়

নিয়তি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কিছুই বুঝতে পারছে না কি করা উচিত? নির্বণের নিয়তিকে হালকা করে ধাক্কা দিলে নিয়তি বাস্তবে ফিরে আসে৷

— নির্বণ কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” কি হলো নিয়তি, তুমি খুশি হও নি?”

নিয়তি দৌড়ে লোকটাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে৷ নিয়তি কিছু বলছে না৷ শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। নিয়তি এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে, ” তার সামনে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে৷”

— নিয়তির মাথায় হাত বুলিয়ে, ” পাগল মেয়ে এবার কান্না থামাও। আর কত কান্না করবে৷”

— নিয়তি চোখের জল মুছে বলে উঠে, ” বাবা তুমি দুইদিন থেকে ফোন রিসিভ করনি কেন? আমি তোমাকে কতবার ফোন করেছি, তুমি জানো?”

— আসলে একটা কাজে বিজি ছিলাম৷ সেজন্য ফোন ধরতে পারিনি৷

— তুমি একা এসেছো, দিদি আসেনি কেন?

— না মা তোমার দিদিকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে নিয়েছে৷ তাদের বাড়িতেই ছিলাম এতদিন৷ আজ বাড়িতে আসার পর নির্বণ বাবা আমাকে এখানে নিয়ে আসে৷ আমি আসতে চাইনি৷

নিয়তি মুগ্ধ নয়নে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নির্বণ দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বাবা মেয়ের ভালোবাসা উপভোগ করছে৷ নিয়তি চাহনি দেখে নির্বণ বলে উঠে, ” এখানেই কি দাঁড়িয়ে থাকবেন? নিয়তি বাবাকে ভিতরে নিয়ে আসো ৷ অনেক রাত হয়েছে৷

নিয়তি তার বাবাকে ভিতরে নিয়ে আসে। খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নির্বণ এক প্রকার বাধ্য হয়ে খাবার খেলো। নির্বণ খাবার না খেলে নিয়তি রাতে খাবে না৷ নিয়তি তো জানে না, সে খেয়ে এসেছে।

নিয়তি খাচ্ছে আর নির্বণের দিকে তাকাচ্ছে। নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” আমি কত কষ্ট করে নিজের হাতে রান্না করলাম৷ রান্নার বিষয়ে কিছু বলল না৷ আমি কি খুব বাজে রান্না করেছি?”

______

— পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, ” এভাবে মন খারাপ করে আছো কেন সুইটহার্ট? আজ তোমাকে এত বড় সারপ্রাইজ দিলাম কই আমাকে ধন্যবাদ দিবে তা। আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো?”

— একদম ঠিক কাজ করছি৷ আজ আমি কত কষ্ট করে শুধু আপনার জন্য.. (থেমে যায়)

— আমার জন্য কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না৷
নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” আমার জন্য মেবি বাসরের ব্যবস্থা করেছো?”

— নিয়তি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে, ” আপনি কিছু বুঝবেন না৷ শখ কত বাসর করতে আসছে। মেরে ভর্তা বানিয়ে দিব৷”

— নির্বণ পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে, ” দেখ তোদের গুন্ডি পাষাণ মা৷ আমাকে মেরে ফেলতে চায়৷” আমি এত কষ্ট কোথায় রাখবো? এক কাজ কর, তোদের ডানাগুলো আমাকে দান কর। আমি আকাশে উঠে যায়।”

— হয়েছে, আর নাটক করতে হবে না৷ আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি যদি ঘুমাতে না চান তাহলে এখানে বসে বসে, ” দ্যা ক্যামেরা” গল্প পড়েন৷ আপনি তো আবার বাংলা গল্প পড়েন না৷

নিয়তি অভিমান করে চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷ নিয়তিকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

— নেশা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমার সাথে সব সময় রেগে থাকো কেন? মাঝে মাঝে ভালোবাসাও তো দিতে পারো।”

— আপনি একটা পঁচা লোক। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে আমাকে কিছু না জানিয়ে চলে গেছেন৷ কি এমন রাজ কাজ করেছেন? মানুষকে চিন্তায় ফেলতে ভালো লাগে।

— সুইটহার্ট তুমি ঘুমিয়ে ছিলে সে জন্য বিরক্ত করতে চাইনি৷ তোমার জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে আসলাম তাও রেগে থাকবে৷ কান ধরে ক্ষমা চাইছি।

— “হ্যাঁ, আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না৷ আজ কত কষ্ট করে আমি আপনার জন্য রান্না করলাম৷ আপনি কিছুই বললেন না৷” অভিমানী স্বরে বলে উঠে।

— “কে বলেছে আমি কিছু বলিনি? সত্যি বলতে খাবার গুলো একদম বাজে ছিল। আমি তো প্রথম ভেবে নিয়েছিলাম সস্তা হোটেল থেকে নিয়ে এসেছো?” নিয়তিকে রাগান্বিত করার জন্য।

— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তাহলে আপনি তখন বলেন না কেন? বাবা কিছু না বলেই খেলে নিও। আপনি আসলেই একটা পঁচা লোক।” তার থেকে বড় কথা একজন ড্রামাবাজ। কারণ সবাই খেয়ে প্রশংসা করেছে।

নিয়তি কথাগুলো চোখ বন্ধ করে এক টানা বলে ফেলে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে কোথাও নির্বণ নেই৷ নিয়তির দৃষ্টি নিচের দিকে পড়তেই নির্বণকে দেখতে পাই৷ নির্বণ হাঁটু গেড়ে বসে আছে৷

— চকিত হয়ে, ” একি আপনি নিচে কেন! উঠেন বলছি৷”

— নির্বণ মিষ্টি হেঁসে, “তোমার পা দুটো একটু বাড়াও।”

— নিয়তি এক কদম পিছিয়ে, ” আপনি পাগল হলেন? আমি আপনার দিকে পা বাড়াবো৷ আপনি এটা কিভাবে ভাবলেন?” আমি পা বাড়াতে পারব না৷

— নিয়তি তুমি কি এখনো সেই সত্য যুগের মেয়ে রয়েছে? আমি বলছি তুমি তোমার পা আমার হাঁটুর উপর রাখো।

— নিয়তি নরম স্বরে বলে মনে, ” আমি এমন কাজ করতে পারব না৷ প্লিজ আমাকে এই কাজে জোর করবেন না৷”

— নির্বণ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” নিয়তি আমাকে বাধ্য করো না এমন কোন কাজ করতে৷ তুমি ভালো করেই জানো আমি চাইলে কি করতে পারি?”

নিয়তি নির্বণের রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ কারণ নিয়তি এই রাগের সাথে অনেক পরিচিত। নিয়তির সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকে। কাঁপা কাঁপা পা’দুটো ধীরে ধীরে নির্বণের দিকে বাড়িয়ে দেয়৷

নির্বণ নিয়তির পা টার্চ করতেই নিয়তির দেহে কারেন্ট বয়ে যায়৷ নিয়তি চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। নির্বণ অতি যত্নে নিয়তির পায়ে নুপুর পড়িয়ে দেয়৷ নিয়তি এখনো চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না৷

— অন্য পা এখন বাড়িয়ে দাও৷ আর ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷ আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো না৷

নিয়তি অন্য পা ধীরে ধীরে নির্বণের দিকে বাড়িয়ে দেয়৷ নির্বণ অতি যত্ন সহকারে দুই পায়েই নুপুর পড়িয়ে দেয়৷ নির্বণ নিয়তির চোখে ফুঁ দেয়৷ যার ফলে নিয়তি আঁখি মেলে তাকায়।

— ভয়ের কিছু নেই৷ আমি তোমার জন্য ভালোবেসে এই নুপুর জোড়া নিয়ে এসেছি৷ ধরে নাও এটা তোমার রান্নার জন্য গিফট।

নিয়তি ভাবতেও পারিনি নির্বণ তাকে এত তারাতাড়ি ভালোবেসে ফেলবে। যে নির্বণ নিয়তিকে সহ্য করতে পারত না৷ আজ সেই নির্বণ নিয়তিকে এত ভালোবাসে। নাকি নির্বণ কোন অভিনয় করছে?

নিয়তির বুকটা কেঁপে উঠতেই নির্বণ নিয়তিকে পাঁজা কোলা করে বিছানা বসিয়ে দেয়৷

— ম্যাম এবার ঘুমাতে পারেন৷ আপনাকে আর বিরক্ত করব না৷

নিয়তি শুয়ে শুয়ে শুধু নির্বণের কথা ভেবে যাচ্ছে। নির্বণ তার সাথে কোন গেম খেলছে না তো। হঠাৎ করে এমন চিন্তা মাথায় কেন আসলো?

নির্বণ নিয়তিকে টান দিয়ে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসে৷ নিয়তির দিকে ছোট আঁখি মেলে তাকিয়ে বলে উঠে, ” তোমাকে আমি কি বলেছিলাম? ”

— নিয়তি কথাটা বুঝতে না পেরে অসহায়ের মতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আপনি তো আমাকে এই মাত্র ঘুমাতে বললেন? আমি তো ঘুমানোর চেষ্টা করছি৷”

— আমি তোমাকে বলেছিলাম যে, ” তুমি আমার বুকের মাঝে ঘুম আসবে। যেহেতু অন্যায় করেছো তার জন্য শাস্তি পেতেই হবে।”

— নিয়তি একটু নড়তেই নির্বণ নিয়তিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। নিয়তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিয়তি চুলে মুখ লুকায়৷ নিয়তি নির্বণের এমন স্পর্শ পেয়ে পাগল হয়ে উঠে৷ নিয়তিও নির্বণকে চেপে ধরে। নির্বণ নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়।

__________

পাখির কিচির মিচির শব্দে নিয়তির ঘুম ভাঙে। নিয়তি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে এখনও সকাল হতে প্রায় এক ঘন্টা সময় আছে৷ নিয়তি নিজেকে আবিষ্কার করে নির্বণের উম্মুক্ত বুকের মাঝে।

নিয়তি একটু নড়তে পারছে না। নির্বণ দুই বাহুর মাঝে চেপে ধরে আছে। বাধ্য হয়ে নির্বণের উম্মুক্ত বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকে৷ আসলে নির্বণের কাছ থেকে দূরে যেতে মন চাচ্ছে না৷

প্রতিদিনের মতো নির্বণের ঠিক টাইমে ঘুম ভেঙে যায়৷ ঘুম থেকে উঠে নিয়তিকে প্রতিদিনের নিজের বুকে আবিষ্কার করে। নিয়তির অবাধ্য কেশগুলো কানের পাশে গুছে দিচ্ছে। আর নিয়তিকে অপলক দৃষ্টিতে দর্শন করে যাছে৷

— নিয়তি আঁখি মেলে, ” তাহলে এভাবে প্রতিদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙানো হয়৷”

— ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে, “তুমি আজ ঘুম থেকে উঠে পড়েছো। কখন উঠলে? আমাকে ডাক দিলে না যে।”

— কিভাবে ডাক দিব? আমি একজন অবলা শিশু৷ আর আপনি কিনা আমাকে দুই বাহুর মাঝখানে চেপে ধরে আছেন৷ আমি একটু নড়তে পারছি না৷

— “তোমার বাসা তো আমার বুকেই৷ যদি তুমি কোথাও হারিয়ে যাও তাই তোমায় বুকের মাঝে খুব যত্ন করে আগলে রাখি৷” হারিয়ে যাওয়ার কথা বলার সময় নির্বণের গলার স্বর পাল্টে যায়।

— আপনি এখনও খালি গায়ে আছেন কেন? আপনার ট্রি শার্ট কোথায়? আমি আপনাকে বলেছিলাম আমার সামনে খালি গায়ে থাকবেন না৷

— নির্বণ শয়তান হাসি দিয়ে, ” রাতে তুমিই আমার গায়ের ট্রি শার্ট খুলে দিয়েছো? রাতের কথা মনে আছে তো। আবার হয়ে যাক।”

— আপনি সত্যিই একটা অসভ্য। এমন করলে পাঠকরা আপনাকে পিটাবে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। নির্বণ মুচকি হেঁসে কম্বল মুড়িয়ে দিয়ে লম্বা বরাবর শুয়ে পড়ে।
_____________

ব্রেকফাস্টের পর নির্বণের মা জরুরি কাজের জন্য নির্বণ নিয়তি সহ বাড়ির সকলে ডেকে পাঠিয়েছেন। নিয়তির বাবাকেও ডেকে পাঠিয়েছেন।

নিয়তি একটু দৌড়ে দাঁড়িয়ে রাম রাম জব্দ করে যাচ্ছে৷ হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে এটা ভেবে যে, “তার বাবাকে নিয়ে কিছু বলবে নাতো৷ বর্তমান সমাজে মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে মেয়েদের মা বাবাকে এলাউ করে না। ”

— সবার হয়ে নির্বণ বলে উঠে, “মা তুমি আমাদের সবাইকে এক সাথে ঢাকার কারণ কি? কোন কি সমস্যা হয়েছে?”

— নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “জীবন চলার পথের সব চেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে৷ যা বুঝার ক্ষমতা তোমার হয়নি৷”

নিয়তি আরও ভয় পেয়ে যায় নির্বণের সাথে কর্কশ কন্ঠে কথা বলাতে৷ নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” মা কি সমস্যা হয়েছে? আমাদের বলেন আমরা সেই সমস্যা এক হয়ে সমাধান করব৷”

— কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে, ” পারবে কি তুমি সেই সমস্যার সমাধান করতে?”

— মা আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব৷ আপনি শুধু বলেন না, আমায় কি করতে হবে?

— তাহলে দূরে সরে দাঁড়াও৷ আমি সেই কথা মুখে বলবো না, করে দেখাবো।

নির্বণের মায়ের কথামতো সবাই দূরে সরে দাঁড়ায় নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” অরিন আমার লাঠিটা এনে দে তো?”

অরিন নির্বণের মায়ের কথামতো লাঠি না দিয়ে একটা চিরকুট এর খাম দেয়। এতে সবাই অবাক হয়ে যায়৷ চাইল লাঠি দিল চিরকুটের খাম৷ কিভাবে কি হচ্ছে কারো মাথায় ঢুকছে না?

নির্বণের মা আজ নিজে থেজে বিছানা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করে৷ সকলের মুখে হাসি চোখে আনন্দের জল। কেউ কোনদিন বিশ্বাস করেনি নির্বণের মা হাঁটতে পারবে৷

— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” কেমন সারপ্রাইজ দিলাম? সবাই তো ভয় পেয়ে গিয়েছে।”

নির্বণ তার মাকে নিজ থেকে হাঁটতে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়৷ নির্বণের মাথায় হাত বুলিয়ে, ” বাচ্চা পোলাপানের মতো কান্না করার কি আছে?” আমি খুব রেগে আছি তোমাদের উপর৷

— নির্বণ চকিত হয়ে, “মা আমরা কি করলাম!”

— নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠেন, “হাতটা বাড়িয়ে দাও৷”

নির্বণ ভয়ে ভয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। নির্বণের মা চিরকুট এর খামটা নির্বণের হাতে তুলে দেয়৷ নির্বণ চিরকুট পড়ে অবাক হয়ে যায়৷ নির্বণ ভাবতে পারেনি, মা তাদের জন্য এসব করতে পারে।

চলবে…

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-২০

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২০
#অধির_রায়

নির্বণ বাসায় এসে দেখে নিয়তি এখনো রেডি হয়নি৷ নিয়তি সকলের সাথে বসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্যারের আনন্দমঠ উপন্যাস শুনছে। মা সকলকে আনন্দমঠের অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছে, যেখানে বুঝতে কষ্ট হয় অন্যদের৷

— নির্বণ তার মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে , ” মা নিয়তিকে আজ রাতের জন্য ছেড়ে দেওয়া যায় না৷”

— নির্বণের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” কেন নির্বণ? আজ ক্লাইনের সাথে তোমার পার্টি ছিল তো। তুমি ফিরে আসলে যে।”

— মা আমি ফিরে এসেছি এই জন্য যে, “তোমাদের জিনিয়াস বউমা নিয়তিকে নেওয়ার জন্য। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলাম তৈরি হয়ে থাকতে৷ কিন্তু এই মহান জিনিয়াস এখানে বসে বসে আড্ডা নিচ্ছে৷”

— নিয়তি নির্বণের সামনে গিয়ে, ” আপনি সবার সামনে কি আবোলতাবোল বকে যাচ্ছেন? আমি যাব না আপনার সাথে।”

নির্বণ চোখের ইশারায় তার মায়ের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নেয়৷ নির্বণের মায়ের একটায় চাওয়া তাদের এক করা৷ এর মাধ্যমে সম্ভবত এক হতে পারে। কিন্তু তিনি জানেন না যে, “তারা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে। ”

নির্বণ নিয়তির কথার কোন উত্তর না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়তিকে রুমে নিয়ে আসে৷

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” এটা কি ধরনের অসভ্যতা? আপনি সবার সামনে এমন না করলেও পারতেন৷ আমি কি ছোট বাচ্চা! হাত ছেড়ে দিলে হারিয়ে যাব৷”

— নির্বণ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তোমাকে আমি কি বলে গিয়েছিলাম? বলেছিলাম তো সন্ধ্যায় রেডি থাকতে৷ আমার কথা অমান্য করার মানে কি?”

— একটু ভয়ে ভয়ে কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি তো আপনাকে বলে দিয়েছিলাম আমি যাব না৷ আমি পার্টিতে.. ”

— নিয়তির ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে, ” আমি কোন অজুহাত দেখাতে বলিনি৷ তুমি আমার সাথে যাবে মানে আমার সাথেই যাবে৷”

— মাথা নিচু করে, “আসলে আমি পার্টিতে না গেলে হয়না৷ সেখানে তো সবাই থাকবে৷ আমি বরং বাড়িতে থেকে মায়ের সাথে গল্প করে সময় কাটিয়ে দিব৷”

— নিয়তির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমি তোমাকে মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছি না৷ মা অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। কথা না বাড়িয়ে তৈরি হয়ে নাও৷”

নিয়তি কিছু বলতে নিবে কিন্তু নির্বণের অগ্নি দৃষ্টি দেখে বলতে পারল না৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ধীরে ধীরে আলমারির দিকে এগিয়ে যাছে। যাকে বলে পিঁপড়ার চলা৷ এক কদম এগিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দুই কদম পিছিয়ে যাচ্ছে৷

নির্বণ বুঝতে পারে নিয়তি ভয় পেয়ে আছে৷ নিয়তিকে এভাবে বকা ঠিক হয়নি৷ নির্বণ নিজেই নিয়তির আলমারি থেকে পছন্দ করে সাদা রঙের একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস বের করে৷ সাদা ওয়েস্টার্ন ড্রেস অন্যান্য ওয়েস্টার্ন ড্রেসের থেকে তুলনামূলক ছোট৷

— নিয়তি চকিত হয়ে বলে উঠে, ” আমি সবার সামনে এই ড্রেস পড়ে যাব! আপনি কি পাগল হলেন?”

— আমার মাথা ঠিক আছে৷ সবাই এর থেকে ছোট ছোট ড্রেস পড়ে আসবে৷ সেখানে তোমার মতো বাঙালি কম পাওয়া যাবে৷ বেশিরভাগই ফরেনার৷ আর তুমি তো ওয়েস্টার্ন ড্রেস অফিসে পড়েছো৷ আজ কেন এত সংকোচ?

— আসলে আমি এখন বিবাহিত মেয়ে। আমাকে এসব পোশাক এখন মানাবে৷ এই সাদা ড্রেসটা হাঁটু অব্ধি। আর একটু বড় হলে ভালো লাগত৷

নির্বণ নিয়তিকে টান দিয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিয়তিকে আভয় বানী দিয়ে বলে উঠে, ” তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন? আমি তো আছি তোমার সাথে। তোমাকে এই পোশাকে অনেক সুন্দর লাগবে৷ আমি তোমাকে নিজ হাতে পড়িয়ে দিচ্ছি৷”

— এক কদম পিছিয়ে, ” না.. না.. একদমই না৷ আমি নিজে পড়তে পারি৷ আমাকে পড়িয়ে দিতে হবে না৷”

নিয়তি নির্বণের হাত থেকে ড্রেসটা নিয়ে ওয়াসরুমে দৌড়ে চলে যায়।
সাদা ওয়েস্টার্ন পোশাকে নিয়তি একদম পরীর মতো লাগছে৷ নির্বণ নিয়তির দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না৷ নির্বণ অপলক দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে৷

— নিয়তির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে, “বিউটিফুল! ইউ আর লুকিং সো সুইট। তোমাকে একদম এঞ্জেলস লাগছে।”

— হয়েছে এভার আমরা এখন যেতে পারি তো৷ এখন কি আপনার লেট হচ্ছে না?

— হ্যাঁ, আমরা এখন যেতে পারি৷ কিন্তু তোমার সাজ এখনো পরিপূর্ণ হয়নি৷ আমি তোমাকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিচ্ছি।

নিয়তি নির্বণের সহযোগিতা নিয়ে হালকা মেকআপ। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক। হালকা সাজে নিয়তি অসাধারণ লাগছে। [লেখাঃ অধির রায় ]

নির্বণ নিয়তির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়৷ নিয়তি নির্বণের হাতে নিজের হাত রাখে। নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে হিরোর মতো এন্ডি করে পার্টিতে৷
___________

নির্বণের সাথে নিয়তিকে দেখে অনেকে হিংসা করতে থাকে। অনেক মেয়ের হার্ট অ্যাটাকের উপক্রম হয় এটা শুনে যে, “নির্বণ বিবাহিত। আর নির্বণের ওয়াইফ নিয়তি। ”

স্টাফদের মাঝে একজন মেয়ে স্টাফ নিয়তিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” কাজের লোক থেকে মালকিন। বাহ্ বাহ্, তোমরাই পারো বড়লোক ছেলেদের মাথা বাজে চিন্তা চেপে দিতে! ”

নিয়তি মাথা নিচু করে চলে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে, ” এক্সকিউজ মি ম্যাম। সি ইজ নট সার্জেন্ট। সি ইজ মাই ওয়াইফ।”
একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে ইনসাল্ট করতে আপনার মুখে বাঁধল না৷ আমি যদি চাই আমি এই ডিল মাঝ পথে ছেড়ে দিতে পারি৷ আমাদের কোম্পানির কোন ক্ষতি হবে না৷ যা ক্ষতি হবার আপনাদের ক্ষতি হবে৷” কারণ আমরা আমাদের পরিশ্রমের চেয়ে বেশি পেয়ে গেছি৷ ক

নির্বণ রেগে ডাকতে শুরু করে, “মি. দত্ত…. নি. দত্ত” যার সাথে নির্বণের ডিল কন্টাক্ট হয়েছে।

নির্বণের ডাক শুনে মি. দত্ত নির্বণের সামনে আসে৷ ভদ্রতার সাথে বলে উঠেন, ” মি. নির্বণ চৌধুরী আপনি রেগে আছেন কেন? এনি প্রবলেম।”

— ইয়া মি. দত্ত৷ আপনার এসিস্ট্যান্ট মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে না। এমন এসিস্ট্যান্ট আপনার সাথে যুক্ত থাকলে আমি এই ডিল ক্যানলেস করে দিব ৷ ইভেন আমরা চাইনা এই ডিল এগিয়ে নিয়ে যেতে।”

— মি. দত্ত কোমল কন্ঠে বলে উঠেন, ” নির্বণ চৌধুরী মেবি আপনার কোথাও কোন ভুল হচ্ছে৷ আমরা কাউকে এমনভাবে ইনসাল্ট বা ছোট করে দেখিনি। প্লিজ শান্ত হন৷”
মি. দত্তের এসিস্ট্যান্টকে বলে উঠে, ” তুমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও৷”

— স্টাফ অহংকার নিয়ে বলে উঠে, ” নো স্যার৷ আমি দুই টাকার মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইব না৷ দরকার পড়লে আমি আপনার জব ছেড়ে দিব৷”

— নিয়তি নির্বণকে এন্ড মি. দত্তকে থামিয়ে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আপনার এসিস্ট্যান্টকে বকতে হবে না৷ আর আমরা এই ডিল ক্যানসেল করব না৷”
মি. দত্ত মানুষের টাকা থাকলেই মানুষ বড়লোক হয় না৷ সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন মানুষ হিসেবে। হোক সে গরিব, হোক সে ধনী। সৃষ্টিকর্তা আমাদের পরীক্ষা করার জন্যই টাকা দিয়েগছেন৷ আমরা কি টাকার অহংকার দেখায় কিনা? আজ টাকা আছে কাল নেই৷ এই নিয়ে আমি মন খারাপ করিনি৷ আপনি বরং পার্টির দিকে খেয়াল রাখেন৷ কোন সমস্যা হলে আপনার সম্মান হানী হবে৷

— মিসেস চৌধুরী আমি আপনার যুক্তি বুঝতে পেরেছি৷ আমি তার হয়ে আপনার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি৷ আপনারা এই পার্টির মধ্যমনি৷

_______

— জানেন ম্যাম আজ ছোট ম্যামকে কি সুন্দর লাগছিল যে, “আমি ছোট ম্যামের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম!”

— কেন? তুইতো অনেক সুন্দর। তুই কি কারো থেকে কম সুন্দর?

— আন্নে কি যে কন? আমি কহন সুন্দর হলাম৷ আমি কি ছোট ম্যামের মতো ফার্সা। আমি তো কালা মানুষ৷

— সৌন্দর্য মানুষের রুপে নয়৷ সৌন্দর্য মানুষের গুণে ফুটে উঠে। তোর শ্যামবর্ণ মুখটা মায়ায় জড়ানো। তোকে দেখলে মানুষের মন জুগিয়ে যাবে।

— কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন বরফ ফ্রেন্ড জুগার করতে পারলাম না৷ জানেন অনেকে ফোনে তাদের বরফ ফ্রেন্ডের সাথে কথা কই৷ আমার মন চাই বরফ ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলতে।

— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, “বরফ ফ্রেন্ড নয়৷ ওইটা বয়ফ্রেন্ড হবে। বর্তমান জেনারেশনে কোন ভালোবাসা নেই। আছে শুধু ধোঁকা আর স্বার্থ। নিজের স্বার্থ ফুরিয়ে গেলেই ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়। তাই কখনো ভালোবাসার কথা মুখে আনবি না৷ তুই ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর তুই কারো প্রেমে পড়িস নি৷”

— হ্যাঁ ম্যাম৷

— অনেক রাত হয়েছে। যা ঘুমিয়ে পড়৷ আর আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ আমি এখন ঠিক আছি।

___________

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” এসব কি? তোমাকে সে মেয়ে ইনসাল্ট করল আর তুমি তাকে ছেড়ে দিলে।”

— প্লিজ শান্ত হন৷ কে বলছে আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি৷

— তাহলে এসব কি? আমি জানতাম মি. দত্ত তাকে আজই চাকরি থেকে বের করে দিত৷

— আস্তে কথা বলেন৷ কেউ শুনে ফেলবে। আমি তাকে শাস্তি দিব বলেই তখন তাকে ছেড়ে দিয়েছি৷

— নির্বণ চকিত হয়ে, ” তুমি! তুমি তাকে কিভাবে শাস্তি দিবে?” তার সামনে তুমি পড়লে তোমাকে আবার ইনসাল্ট করবে৷ আমি সহ্য করতে পারব না৷

— আমি তার সামনে যাব না৷ এভার মুডটা ঠিক করেন। এমন করলে আমি চলে যাব৷ আমি বলেছি তাকে শাস্তি না দিয়ে যাব না। মানে যাব না৷

— যদি তুমি আমায় একটা কিস দাও তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

— ড্যান্সের সময় দিব৷ এখন সকলের সাথে হাসিমুখে কথা বলেন৷


মি. দত্ত মাইক হতে নিয়ে এনাউন্স করল, ” আজ প্রতিটি কাপলদের জন্য ড্যান্সের ব্যবস্থা করেছি৷ যারা কাপল নয় তারা তাদের ফ্রেন্ডদের সাথে পার্টিসিফ্রেন্ড করবে৷”
মিউজিক স্টার৷ এক এক করে সবাই ড্যান্সে অংশগ্রহণ করছে।
♪♪
Dil ibaadat kar raha hai, dhadakane meri sun.
Tujhako main kar loon haasil lagi hai yahin dhun.

— এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন৷ চলেন আমরা যোগদান করব৷ আর এখানেই ওই মেয়েকে শাস্তি দিব৷

নির্বণ নিয়তির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়৷ নিয়তি নির্বণের হাত ধরে ড্যান্স শুরু করে।

Jindagi ki shaak se loon kuchh haseen pal main chun.
Tujhako main kar loon haasil lagi hai yahin dhun.
Jo bhi jitane pal jiu, unhe tere sang jiu
Jo bhi kal ho abb mera use tere sang jiu
Jo bhi saansein main bharu unhe tere sang bharu.
♪♪
নিয়তির নজর শুধু ওই মেয়েটার দিকে। মেয়েটা কাছে আসতেই মিয়তি মির্বণকে বলে উঠে, ” আমাকে চারিপাশে রাউন্ড করান৷ আজ দেখে যান নিয়তির খেলা৷

নির্বণ নিয়তির কথা মতো রাউন্ড করাতে থাকে। নিয়তি সুযোগ বুঝে মেয়েটার পায়ে লাথি বসিয়ে দেয়৷ আর মেয়েটি চিৎকার করে নিচে বসে পড়ে।
গান বন্ধ করে দেওয়া হয় খারাপ সিচুয়েশন দেখে।

— নিয়তি তার দিকে দৌড়ে এসে, ” একি আপনি পড়ে গেলেন কিভাবে?” আপনার বেশি ব্যথা লাগেনি তো৷” আমাকে ধরেন৷ আমি আপনাকে সাহায্য করছি ৷”

কোন উপায় না পেয়ে মেয়েটি নিয়তির হাত ধরে উঠে দাড়ায়৷ নিয়তি মেয়েটিকে নিয়ে একটা টেবিলে বসিয়ে দেয়। নির্বণকে চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দেয় “নিয়তিও কোন অংশে কম না৷”

— তুমি জুস খাবে। আই নো ইউ আর টায়ার্ড।

— হ্যাঁ এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস হলে ভালো হয়৷

নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” শাঁকচুন্নি তোকে আমি অরেঞ্জ জুস খাওয়াব৷ কিন্তু এমন অরেঞ্জ জুস খাওয়াবো তুই সারাজীবন মনে রাখবি৷”

নিয়তি অরেঞ্জ জুসে ড্রিংকস মিশিয়ে দেয়৷ ড্রিংকসযুক্ত অরেঞ্জ জুস খেয়ে মেয়েটির নেশা হয়ে যায়৷ তার পার একের পর এক মদ পান করতে থাকে।
_________

— বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে নির্বণ বলে উঠে, ” তোমায় মাথায় এত শয়তানি বুদ্ধি আসে কোথা থেকে? মি. দত্তের PA কে মদ খাইলে দিলে।”

— পায়ে বেশি ব্যথা না পেলে ওই মেয়েটা আরও বাজে হাল করে ছেড়ে দিতাম। সে উঁচু হিল পড়াতে অল্প লাথিতেই পড়ে গেছে। আর হিলের জন্য অনেক ব্যথা পেয়েছে।” একটু কম ব্যথা পেলে নাটক জমে যেত।

— নির্বণ নিয়তিকে কাছে টেনে নিয়ে, ” আমার সাথেও তাহলে এতদিন এমনভানে শয়তানি করে এসেছো। আজ ছাড়ছি না, সব গুলোর প্রতিশোধ নিব।

— ছাড়েন আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। অনেক রাত হয়ে গেছে। একটা কথা বলবো?

— নেশা ভরা কন্ঠে “হুম বল?”

— আপনি ওইভাবে সিনক্রিয়েট করলেন কেন আমার জন্য? ওই মেয়ে তো সত্য কথাই বলেছিল। আমি তো কাজের লোকই ছিলাম। আমার তো কিছুই নেই..

— নিয়তির মুখে আঙুল দিয়ে, ” একদম এসব কথা মুখে আনবে না৷ সবার আগে তুমি একজন মানুষ৷ আর কে বলেছে তোমার কিছু নেই? আমার সবকিছুই তোমার। আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। তোমাকে কেউ অপমান করলে আমি মেনে নিতে পারব না৷”

— আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।

চলবে..

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১৯

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৯
#অধির_রায়

নির্বণ নেশা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিয়তির দিকে৷ বাঁকা হেসে নিয়তির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ নিয়তি ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে নিয়তির পীঠ দেয়ালের সাথে লেগে যায়৷ নিয়তি বাঁ দিকে যেতে নিলে নির্বণ ডান হাত দিয়ে আটকিয়ে ফেলে৷ ডান দিয়ে যেতে নিলে নির্বণ বাঁ হাত দিয়ে আটকিয়ে ফেলে৷ নির্বণ নিয়তির অনেক কাছে চলে আসে । নির্বণের প্রতিটি গরম নিঃশ্বাস নিয়তির উপর পড়ছে৷ নিয়তি ভয়ে লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে আছে ।

— নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে, “এখন কোথায় পালাবে নিয়তি৷” তোমার পালানোর সব পথ বন্ধ।

নিয়তির কানে কাছে ফিসফিস করে বলায় নিয়তি কেঁপে উঠে৷ নির্বণকে চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠে, ” প্লিজ আমার খুব ভয় লাগছে৷ আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন কেন?”

— নিয়তিকে আরও নিজের কাছে টেনে নিয়ে, ” মাই সুইটহার্ট, ভালোবাসা আদায় করছি৷ আমার মাঝে একটুও ভালোবাসা নেই৷ আজ দেখিয়ে দিব আমি কতটা রোমান্টিক এন্ড ভালোবাসতে পারি।”

— নরম কোমল কন্ঠে, ” আমি আপনার রোমান্টিকতা দেখতে চাইনি৷ আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে৷ ঘুমের ঘরে আমার মাথা ঠিক থাকে না৷ কখন কি বলে ফেলেছি আমি জানি না?”

— নেশা ভরা কন্ঠে, ” কিন্তু আমি জানি৷ আজ ঘুমালে বাসর করব কার সাথে?” নিয়তির পেট হালকাভাবে চেপে ধরে৷”

— নিয়তি কেঁপে উঠে, ” আপনি সত্যি একটা অসভ্য।”

নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়৷ নিয়তি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়৷ নির্বণ নিয়তির পিছু পিছু বেলকনিতে চলে আসে৷ নির্বণ নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে৷ নিয়তির খোলা কেশগুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে কানে গুঁজে দেয়৷ গলায় থাকা কালো তিলটায় একটা ডিপ কিস করে। নিয়তি কেঁপে উঠে নির্বণের হাত চেপে ধরে।

— নিয়তি লজ্জা মাখা চোখ বন্ধ করে মিষ্টি স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ নির্বণ আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমি আপনার ভালোবাসা বুঝতে পেরেছি৷”

— দুষ্টু হাসি দিয়ে, ” এখনো আমার ভালোবাসা প্রকাশ করিনি৷ এখনই সব লজ্জা শেষ করো না৷ বাসরের জন্য কিছু লজ্জা লুকিয়ে রাখো৷ তোমার লজ্জা মাখা স্ট বেরির মুখটা একদম হট।”

— নিয়তি কিছুটা ক্ষেপে, ” আপনি এখান থেকে যাবেন৷ নাকি আমি আপনাকে ঠেলে পাঠিয়ে দিব৷”

নির্বণ নিয়তির গলায় হালকা করে আরও একটা কিস দেয়৷ এতে নিয়তি কেঁপে উঠে৷ নির্বণ নিয়তিকে পাঁজা কোলায় তুলে নেয়৷ নিয়তি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই নির্বণ ঠোঁট বাড়িয়ে দেয়৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে৷ নির্বণ নিয়তিকে বিছানায় চেপে ধরে।

— নিয়তির ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে, ” আরও বলবে এখান থেকে চলে যাবে৷ ”

— নিয়তি কোমল কন্ঠে আস্তে করে বলে উঠে, ” আর কোনদিন চলে যাওয়ার কথা বলব না৷ আমি সারাজীবন এখানেই থাকব।”

— নিয়তিকে বুকে জড়িয়ে, ” নাও এখন ঘুমিয়ে পড়। আজ থেকে তুমি আমার বুকের মাঝে ঘুম আসবে৷”

নিয়তিও মুচকি হেঁসে নির্বণের বুকে ছোট ছানার মতো ঘুমিয়ে পড়ে৷ নির্বণ পরম যত্নে নিয়তির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মনে মনে বলে উঠে, ” আজকের লাভ টর্চারটা একটু বেশি হয়ে গেছে। আমাকে আনরোমান্টিক বলা৷ কাল থেকে বুঝবে নিয়তি রোমান্টিক কাকে বলে?” [লেখাঃ অধির রায়]

___________

— “মা আমার দিকে এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি কিন্তু এখন চলে যাব৷ আমার লজ্জা লাগছে৷” অসহায়ভাবে বলে উঠে।

— “তুমি কি সত্যি নিয়তি!” চকিত হয়ে।
ইউ আর লুকিং সো কিউট। আমি ভাবতেই পারিনি তোমাকে ওয়েস্টার্ন ড্রেসে অসাধারণ লাগবে৷ সত্যি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে৷

নিয়তি আজ নির্বণের পছন্দের ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়েছে৷ তবে ছোট ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়েনি৷ লং ওয়েস্টার্ন ড্রেসে নিয়তিকে একদম অন্য রকম লাগছে। সাথে হালকা মেকআপে সকল নারীদের সুন্দর লাগে৷ নিয়তি বাদ পড়েনি৷

— অরিন দৌড়ে নির্বণের মায়ের রুমে আসে। হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, ” এই মেয়ে তোমাকে ম্যামের রুমে প্রবেশ করার অনুমতি কে দিয়েছে?” বাহির থেকে এসে সরাসরি ম্যামের রুমে প্রবেশ কখনও কেউ করে না৷ তুমি জানো না ম্যাম অসুস্থ।” এক টানে কথাগুলো বলে দেয়৷

নিয়তি পিছনে ঘুরতেই অরিন চকিত হয়ে উঠে৷ অরিন “হ্যাঁ ইশ্বর ” বলে দুই কদম পিছিয়ে যায়৷

— ম্যাম আপনাকে যে সুন্দর লাগছে বলে বুঝাতে পারব না৷ একদম পরীর মতো লাগছে৷ আপনি এখন থেকে আর শাড়ি পড়বেন না৷ আপনাকে এমন পোশাকে সুন্দর লাগে।

— নির্বণের মা নিয়তিকে কাছে বসিয়ে, ” আজ এত সাজুগুজু করার কারণ কি? আমি তো কখনও এত সাজুগুজু করতে দেখিনি তোমায়৷”

নিয়তি নির্বণের মায়ের কথায় লজ্জা পেয়ে যায়৷ মাথা নিচু করে বলে উঠে, ” আসলে মা এগুলো কিনে নিয়ে আসার পর পড়া হয়নি। তাই ভাবলাম ড্রেসগুলো পড়ি৷ এখন তো মোটা হয়ে যাচ্ছি। পরে এসব পড়তে পারব না৷”

— এই মেয়ে মাথা তুল। আমাকে কি তোমার সিরিয়ালের শ্বাশুড়ি মনে হয়? যে আমি তোমার কাছ থেকে তোমার স্বাধীনতা কেঁড়ে নিব৷ আমি জানি তুমি শাড়িতে কমফোর্টেবল নয়৷ তুমি যেটা কমফোর্টেবল সেসব ড্রেস পড়বে। নির্বণ খুব ভালোবাসে ওয়েস্টার্ন ড্রেস।

— “ধন্যবাদ মা৷ আমি তাহলে আজ থেকে শাড়ি পড়ব না৷ শাড়ি আমার একদম ভালো লাগে না।” বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে বলে উঠে।

— আরে বিয়ে হলেই কি মেয়েদের সব বিসর্জন দিতে হবে? তুমি যেমন ছিলে তেমনই থাকবে৷ মানুষের বাহিরের সৌন্দর্যটা আসল নয়৷ যে ভিতর থেকে খাঁটি সেই আসল সুন্দর।

— হুম মা৷ কিন্তু আমাদের সমাজের লোকেরা এসব কম বুঝে৷ যেমনঃ অনেকে মনে করেন সাদা চামড়া ওয়ালা মেয়েরা সব থেকে বেশি সুন্দর। তাদের ধারণা ভুল৷ বর্ণে মানুষের পরিচয় নয়৷ কর্মই মানুষের আসল পরিচয়৷

— হ্যাঁ মা তুমি একদম ঠিক বলেছো?

— অরিন পিছন থেকে বলে উঠে, ” আমি আজ কালা বলে আমার একটাও বরফ ফ্রেন্ড নেই৷ আজ যদি আপনাদের মতো সুন্দর হতাম তাহলে আমার কতোগুলো বরফ ফ্রেন্ড থাকত৷

— নির্বণের মা চকিত হয়ে, ” বরফ ফ্রেন্ড কি!”

— নিয়তির অরিনের কাঁধে হাত রেখে, ” অরিন ওইটা বরফ ফ্রেন্ড হবে না৷ ওইটা বয়ফ্রেন্ড হবে৷”

— ছোট ম্যাম, ” বয়ফ্রেন্ড আর বরফ ফ্রেন্ড এক কথা৷

অরিনের কথা শুনে নিয়তি, নির্বণের মা হেঁসে উঠে। নিয়তি আর অরিন মিলে আজ নির্বণের মাকে ছাঁদে নিয়ে আসে৷

ছাঁদে নিয়ে আসার কারণ হলো নিয়তি এখনো ছাঁদটা ভালো করে দেখতে পারেনি। একদিন ছাঁদে এসেছিল তখনই নিয়তির ডাক পড়ে৷ তার আর ছাঁদ দেখা হয়নি৷ বেচারি নিয়তির স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে।

___________

— “একি আজ আপনি এখনও অফিসে যান নি! বিকাল ২ টা বাজে!” নিয়তি রুমে ঢুকে অবাক হয়ে বলে উঠে।

— না আমি আজ এখনও অফিসে যায়নি৷ আজ আমার অফিসে কোন মিটিং নেই৷ আজ ক্লাইনরা ফাইভ স্টার হোটেলে মিটিং এর আয়োজন হয়েছে। সে্খানে ছোটখাটো একটা পার্টিরও আয়োজন করেছে। সেখানে সবাইকে নিমন্ত্রণ করেছে। আমি চাই তুমিও আমার সাথে পার্টিতে যাবে।

— না আমি আপনার সাথে পার্টিতে যেতে পারব না৷ কারণ আমি পার্টিতে উপস্থিত হলে মায়ের খেয়াল কে রাখবে? মা এখনও নিজে থেকে হাঁটতে পারেন না৷ মা সুস্থ হলে আমি যাব৷

— নিয়তি শুধু আজ রাতের জন্যই তো৷ মায়ের খেয়াল রাখবে সবাই৷, সম্যুদা, অরিন, সিনথিয়া, কণিকা, লাবু, জেসি, রুহি, রিয়া, ফাইজা, রিমি, মিহু, লাখি, অনিমা, ঊর্মি, তানিশা,(সব লেখিকাদের ডাক নাম) তারা ঠিক মাকে দেখে রাখবে৷

— আপনি একে একে সব সার্ভেন্টের নাম বলে যাচ্ছেন ঠিক। কিন্তু সব সার্ভেন্ট রাত অব্দি থাকে না৷ আর হ্যাঁ আপনি এখনই তাহলে রেডি হচ্ছেন কেন?

— অফিসে কিছু কাজ আছে। সেগুলো করে আমি সেখান থেকে চলে যাব৷ তুমি রেডি থাকবে। যাওয়ার সময় তোমাকে ড্রপ করে নিয়ে যাব৷

— নিয়তি বিরক্ত নিয়ে বিরবির করে বলে উঠে, ” আমার দিকে একবারও তাকাল না৷ আমি আজ উনার পছন্দের ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়লাম। ভাবছিলাম কত প্রশংসা করবে। কিন্তু না উনি উনার মতো আছেন।”

— “কিছু বললে নিয়তি?” সোল্ড ঠিক করতে করতে।

— না কিছু বলিনি৷ আমার অনেক কাজ আছে৷ আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন৷ আমি আপনার সাথে যাব না৷

নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ ডাক দেয়৷ বিরক্ত নিয়ে নিয়তি নির্বণের কাছে আসে।

— নিয়তি আমার সিলভার কালারের রোজ খুঁজে পাচ্ছি না (ল্যাপেল/ রোজ)। প্লিজ একটু খোঁজে দাও।

— আপনার হাতের বাঁ পাশের ড্রয়ারে রাখা আছে। সেখান থেকে নিয়ে পড়ে নেন৷ আপনি তো সব নিজে গুছিয়ে রাখেন৷ তাহলে না জানার ভান করেন কেন?

— প্লিজ নিয়তি একটু লাগিয়ে দাও না৷ আমি লাগাতে পারছি না৷ আজ আমার কি হয়েছে নিজেও জানি না৷
মনে মনে, ” সামনে আসো না একবার দেখাবো আমি কি জিনিস? তুমি ভাবছো আমি তোমাকে দেখছি না৷ সামনে এত বড় গ্লাস থাকতে তোমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে থাকার কোন মানে নেই৷”

নিয়তি সিলভার কালারের রোজটা নিয়ে নির্বণের বুকের বাঁ দিকে লাগাতে নিলেই নির্বণ “আউচ% করে উঠে।

— আপনার লাগেনি তো? সরি আমি আসলে খেয়াল করতে পারিনি৷ আর এমন হবে না৷ বেশি লাগেনিতো।

— লেগেছে অনেক। মেবি রোজের পিন কিছুটা বয়ে গেছে৷ রক্ত ঝরছে মেবি৷

— দেখি রক্ত ঝরছে কিনা৷ আমি একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারিনা৷ আপনাকে কতটা কষ্ট দিয়ে ফেললাম।

নিয়তি নির্বণের শার্টের বাটন খুলতে নিলেই নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

— নেশা জনিত কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি কোন আঘাত পাইনি৷ তোমার সাথে ফার্ন করলাম।”

— আমার সাথে ফার্ন করা৷ আমি কিন্তু এভার সত্যি সত্যি বুক ফোটু করে দিব৷

— বুকের বাঁ পাশে ফোটু করে তোমার নাম লিখে দাও৷

— ছাড়েন আমাকে আমার অনেক কাজ আছে।

— তোমাকে ওয়েস্টার্ন ড্রেসে অসাধারণ লাগছে৷ একদম পরীর মতো লাগছে। মনে হচ্ছে তুমি আকাশের কোন অপ্সরা। তোমাকে যতই দেখি ততই..

— আমাকে যতই দেখেন ততই কি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন কেন? ছেড়ে কথা বলেন? কেউ রুমে চলে আসলে কি ভাববে? “সেই সকাল থেকে আপনার পছন্দের ড্রেস পড়ে আছি। একবারও বললেন না তো আমাকে কেমন লাগছে৷ এখন আসছে ভালোবাসা দেখাতে।” একটু অভিমানী স্বরে বলে উঠে।

— নিয়তির কেশে মুখ লুকিয়ে, ” আই ডোন্ট কেয়ার। আর কেউ রুমে আসবে না৷ আমি তোমার ড্রেসকে নয়৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ অবশ্য ড্রেসটা তোমাকে দারুণ মানিয়েছে। আমি চয়েস করেছি বিধায় তোমায় মানিয়েছে।”

— হয়েছে আপনার আজাইরা কথা৷ আজাইরা কথা শেষ হলে আমাকে নিচে যেতে হবে৷ অনেক কাজ আছে৷ ছাড়েন আমাকে?

— আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না৷ ছাড়তে পারি একটা শর্তে?

— কি শর্ত, তারাতাড়ি বলেন? মা কখন ডাক দেয় জানা নেই?

— নির্বণ ঠোঁট বাড়িয়ে দিয়ে, ” প্লিজ একটা কিস। কিস করলেই তুমি এখান থেকে যেতে পারবে৷”

— না পারব না৷ আপনি এখনই আমাকে ছাড়বেন৷

— নিয়তিকে আরও চেপে ধরে,” আমার কোন সমস্যা নেই৷ আমি বাড়ির সবাইকে ডাক দিচ্ছি৷ সবাই এসে দেখে যাক তাদের ম্যাম কতটা অসভ্য।”

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” একদমই না৷ আপনি এমন কোন কাজ করবেন না৷ ”

— যদি শর্ত না মনো তাহলে তো তাই করতে হবে৷ ডাকা শুরু করলাম ওয়ান. টু..

— ওকে আমি আপনার শর্তে রাজি৷ তবে আপনাকে চোখ বন্ধ করতে হবে৷

নির্বণ চোখ বন্ধ করতেই নিয়তি নির্বণের গোলমুলু গালে আলতো করে একটা উম্মা দিয়ে চলে যায়৷

— শোধ তুলে নিব। তুমি আমাকে এখনও চিন না৷
________

নির্বণকে দেখে সবাই হেঁসে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিয়তি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি চলে যেতে নিলে অরিন নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷ সকলের সাথে নির্বণ বন্ধুসূলভ আচরণ করে৷ সেজন্য সবাই নির্বণের অবস্থা দেখে হেঁসে যাচ্ছে।

— আয়াত এগিয়ে এসে, ” স্যার ভালোবাসা জমে ক্ষীর হয়ে গেছে। আপনার গোলমুলু গাল তার প্রমাণ দিচ্ছে৷

নির্বণ চকিত হয়ে আয়াতসহ অন্য সার্ভেন্টের দিকে তাকায়৷ নিয়তি ইশারায় বুঝিয়ে দেয় নির্বণের গালে নিয়তির লিপস্টিক লেগে আছে। সেটা নিয়েই সবাই হাসাহাসি করছে।

চলবে….

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১৮

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৮
#অধির_রায়

নিয়তির ঘুম হারাম করে দিয়েছে নির্বণ। নির্বণের কথাগুলো শুধু নিয়তির মনে ঘন্টা বাজে যাচ্ছে। নিয়তির কখন চোখ লেগে এসেছে, সে নিজেও জানে না।

কিন্তু ঘুম ভেঙে যায় ভোর না হতেই৷ নিয়তি ঘুম নির্বণের আগে ভাঙার পর নিয়তি নির্বণের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকায়৷ নিয়তির দৃষ্টি আটকে যায় নির্বণের ঠোঁটে।

— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” একি নির্বণের ঠোঁটের হাসি ঘুমের মাঝেও ফোঁটে আছে।”
নির্বণের ঠোঁট নিয়তিকে টানছে। নিয়তির উদ্দেশ্য হলো নির্বণের ঠোঁটে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেওয়া৷ নিয়তি ধীরে ধীরে নির্বণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যেই নির্বণের ঠোঁটের কাছে যাবে ঠিক তখনই নির্বণ আঁখি মেলে তাকায়।

— ঘুম ঘুম স্বপনে নির্বণ বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি এখানে কি করছো?”

নির্বণের চোখের দিকে তাকিয়ে নিয়তি খুব লজ্জা পায়৷ নিয়তির মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না৷ নিয়তি একইভাবে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷

— কি হলো নিয়তি? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তুমি ঠিক আছো তো?

— নিয়তি আহ্লাদী স্বরে বলে উঠে, ” হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি৷ আমি যতই দেখি ততই প্রেমে পড়ি৷ কি আছে আপনার মাঝে? ”

— উঁচু গলায় বলে উঠে, ” আর ইউ ক্রেজি? তুমি কি বলছো এসব আবোল তাবোল? তোমার মাথা ঠিক আছে৷ আমি তোমাকে কিন্তু… (থেমে যায়)”

নিয়তি নির্বণের উঁচু গলার আওয়াজ শোনে বাস্তবে ফিরে আসে৷ নিয়তি নিজেও জানে না এতক্ষণ সে কোথায় ছিল?

— নিয়তি হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, ” আপনার কি হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন তো! এভাবে রেগে আছেন কেন?”

নির্বণ নিয়তির কথা শুনে হাসবে নাকি কান্না করবে ভেবে পাচ্ছে না৷ নির্বণ চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” মিসেস নিয়তি আমার সামনে অতন্ত্য নাটক করা বন্ধ কর। আমি এসব নাটক একদম পছন্দ করি না৷”

নির্বণ ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নিয়তি বোকার মতো নির্বণের যাওয়া দেখচ্ছে৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” আমি কি করলাম? সকাল সকাল আমার ওপর রাগ দেখাচ্ছে কেন?”
নিয়তি আর কিছু না ভেবে রান্না ঘরে চলে যায়৷
__________

— “নিয়তি শালিক পাখি পছন্দ হয়েছে তো?” নিয়তিকে কাছে টেনে নিয়ে বলে উঠেন।

— হ্যাঁ আমার খুব পছন্দ হয়েছে৷ আমি কতটা খুশি বলে বুঝাতে পারব না৷ আমি শালিক পাখিকে খুব ভালোবাসি। আমি ভাবতেই পারিনি নির্বণ আমার জন্য এমন একটা সারপ্রাইজ ব্যবস্থা করবে।

— আমাকে কিন্তু জানায় নি নির্বণ যে “তোমাকে পাখি এনে দিয়েছে৷”

— নিয়তি চকিত হয়ে, ” কি বলেন মা! তাহলে আপনি জানতে পারলেন কিভাবে?”

— অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ আজ সকালেই নির্বণ আমাকে বলেছে৷ আমায় জানায়নি কারণ আমি যদি তোমাকে বলে দেয় ৷

— মা এটা অন্যায় করেছে৷ আপনাকে জানানো উচিত ছিল৷ আজ রাতে অফিস থেকে ফিরে আসুক তার পর মজা দেখাবো।

— আমাকে ছেলেকে শুধু টর্চার করা হচ্ছে৷ একটু ভালোবাসা হচ্ছে না৷ আমি খুব রেগে আছি তোমার উপর৷

— ব্রু কুঁচকে, ” মা আপনি এসব কি বলছেন? আমি আপনার ছেলেকে টর্চার করব৷ বাহ্ বাহ্। যে কিনা আমাকে প্রতিনিয়ত টর্চার করে যাচ্ছে। আমাকে উঠতে বসতে বকা শুনিয়ে যাচ্ছে ৷”

— হয়েছে আর বলতে হবে না৷ এখন যা করার আমাকেই করতে হবে। তোমরা দুইজনেই সাপ বেজি৷

— আপনি কি করবেন? প্লিজ নির্বণকে কিছু বলবেন না৷ আপনার কথা উল্টো বুঝবে৷ আর আমাকে ভুল বুঝবে।

— নিয়তির হাত ধরে, ” মা’রে, আমি তো মা৷ আমি আমার ছেলেকে চিনি৷ আমার ছেলে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তোমাদের ভালোবাসা অটুট থাকবে সারাজীবন।”

— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” মা আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছুই নেই নির্বণের মাঝে। নির্বণ আমাকে একটুও ভালোবাসে ন। নির্বণের মনে আজও শাঁকচুন্নি ছোঁয়ার বাস। শাঁকচুন্নি আমার জীবনের একটা কাটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাকে এখন সামনে পেলে আমি তাকে দিয়ে ফুটবল খেলতাম৷ ”

— কি হলো নিয়তি? কি ভাবছো? এটাই তো ভাবছো, তুমিও নির্বণকে খুব ভালোবাসো। আমি জানি তোমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসো।

নিয়তি নির্বণের মায়ের কথাতে লজ্জা পায়৷ নিয়তি মাথা নিচু করে ফেলে। নির্বণের মা নিয়তিকে আরও লজ্জায় ফেলতে চাই৷

— আমার সামনে লজ্জা পেতে হবে না৷ তবে আমি আমার লজ্জাবতী বউমার কাছে খুশির খবর শুনতে চাই৷ আমি নাতি নাতনির সাথে খেলতে চাই৷

নিয়তি আর নিজেকে সামলাতে পারল না৷ নিয়তি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে রুম থেকে দৌড়ে চলে আসে৷

_____________

— মা তোমার অবস্থা এখন কেমন? তোমাকে কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব৷ নিয়তি তোমাকে কিছু বলেনি৷

— নির্বণ আমি একদম ঠিক আছি৷ প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে হাঁটা হচ্ছে। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি। এখন আমি পায়ে শক্তি পাচ্ছি৷ আমাকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না৷

— মা তুমিই আমার স্বর্গ। তোমাকে নিয়ে না ভাবলে আমি কাকে নিয়ে ভাববো?

— আরে বাবা আমি একদম ঠিক আছি৷ আমি সুস্থ হয়ে যাব যদি তোমরা…

— যদি কি? আর এখানে শুধু আমি আছি৷ আমি এখানে অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছি না৷ মা তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তোমার চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷

— আমার চোখের সমস্যা নেই৷ আমি তোমরা বলতে তুমি আর নিয়তিকে বুঝিয়েছি৷ আমি চাই তোমরা আমাকে একটা খুশির খবর দাও৷ আমি এই বুড়ো বয়সে আমার খেলার সঙ্গী চাই৷

— মা অনেক রাত হয়ে গেছে৷ প্লিজ মা ঘুমিয়ে পড়। এসব কথা মাথা থেকে ফেলে দাও৷ আমি আসছি৷

— আমার কাছ থেকে কি লুকাতে চাও? তুমি কি আজও নিয়তিকে মেনে নাওনি৷ তাহলে এত ভয় কেন?

— নির্বণ আমতা আমতা করে, ” কই ভয় না তো৷ বেশি রাত জাগলে তোমার শরীর খারাপ করবে। তাই বলছি ঘুমিয়ে পড়তে।”
আমি আসছি তুমি শুয়ে পড়৷ তোমাকে আর ডিস্টার্ব করব না৷ “গুড নাইট ”

নির্বণ রুমে থেকে বাহিরে এসে মনে মনে বলে উঠে, ” সরি মা! আমাকে ক্ষমা করে দিও৷ আমি নিয়তির কাছে আসলে আমার চোখের সামনে ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠে৷ কেন আমি ছোঁয়াকে ভুলতে পারছি না?

________

এভাবে কেটে যায় ৩০ দিন৷ আজ ছোঁয়ার চুক্তির শেষ দিন৷ রাত ১২ টার পর ছোঁয়ার এই বাডি থেকে চলে যাবে জানিয়ে দিয়েছে নির্বণকে৷ নির্বণ নিয়তিকে ভালোবাসে ফেলেছে৷ নির্বণ নিয়তির চলে যাওয়ার কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না৷

নিয়তি সবকিছু গুছিয়ে গাড়িতে রেখে এসেছে৷ নির্বণ অনেক বুঝিয়েছে সকালে চলে যেতে৷ কিন্তু নিয়তি নির্বণের কথায় রাজি নয়৷ সকাল হলে মা আর চলে যেতে দিবে না৷

— “স্যার আমার চুক্তিনামার আজ শেষ দিন৷ আর আপনি এই বিয়ের বন্ধন মানেন না। তাই আমি জোর করে এই বিয়ের বন্ধনে আটকে থাকতে চাই না৷” কথা বলার সময় নিয়তি গলা ভার হয়ে আসছিল।

— নির্বণ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” কাল সকালে চলে গেলে হয় না৷ আমি তোমার কাছে এই রাতটা চাইছি৷ মা সকালে জানতে পেলে কষ্ট পাবে।” মাকে তুমি বুঝিয়ে চলে যাও। আমি তোমাকে আটকাবো না।

— মা শুধু কষ্ট পাবে। আর তো কেউ কষ্ট পাবে না৷ কিছুদিন পর মা ঠিক বুঝতে পারবে৷ তবে আমি আমার জীবনে মায়ের আদরটুকু পেয়েছি উনার কাছ থেকে। কিছুতেই উনাকে ভুলতে পারব না৷

— নির্বণ টলমল চোখে নিয়তির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” তুমি একটা দিনের জন্যও আমার ভালোবাসা বুঝতে চাওনি৷ আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে। আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না৷ তুমি আমায় ছেড়ে যেও না৷ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”

— নিয়তি নির্বণের দিকে ছোট করে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে , ” আপনি আমাকে একটিও বারের জন্যও ভালোবাসার কথা বলছেন না৷ আমি আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি৷ আমি আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকব? আমি জানি আপনি কষ্ট পাবেন৷ কিন্তু একবারও জন্য বলছেন না৷ নিয়তি লাভ ইউ৷ আমি এই বিয়ের বন্ধনে থাকতে চাই৷”

একে অপরকের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কারো মুখে কোন কথা নেই৷ চোখে চোখে কথা হচ্ছে। না বলা ভাষাগুলো আজ চোখের দেখায় শেষ হয়ে যাচ্ছে৷

— নিয়তির চোখের জল মুছে, ” স্যার আমি শালিকের জোড়া নিতে পারি৷ আমি আর কিছু নিব না৷ আমি পাখিগুলোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি৷ তাদের ছাড়া থাকতে পারব না৷”

— ভাঙা গলায় বলে উঠে “তোমার যা যা লাগে নিয়ে যাও৷ ”
একবারও তো বললে না আমায় ভালোবাসো৷ আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না৷ আজ আমি স্যার হয়ে গেলাম৷ মানুষের মন দুই মিনিটের মাঝেই পরিবর্তন হয়ে যায়। পাখিগুলো ছাড়া থাকতে পারবে না৷ কিন্তু আমায় ছাড়া দিব্যি ভালো থাকবে৷

নিয়তি পাখিগুলো নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। চোখের জল মুছতে মুছতে মনে মনে বলছে, ” আমাকে আটকাবেন না৷ আমাকে একটুও ভালোবাসেননি৷ আমি একটুও আপনার মনে জায়গা করতে পারিনি।” নিয়তি অসহায় দৃষ্টিতে বার বার তাকাচ্ছে।

নিয়তি চৌকাঠে পা রাখার আগেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিশে নেয়। নিয়তিও পরম আদরে নির্বণকে জড়িয়ে ধরে৷ কেউ কোন কথা বলছে না৷ শুধু দুইজনের চোখের জল তাদের ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।

নির্বণ নিয়তিকে এমনভাবে দুই বাহুর মাঝে আটকিয়ে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলেই দূরে কোথাও হারিয়ে যাবে। নিয়তিও যেন আজ নির্বণের বুকে চির সুখের জায়গা খুঁজে পেল৷

পাতা উল্টে দেখো একটা গল্প লেখা।
একটু জানা কাহিনি কিছু কিছু অজানা।
একটা গোধুলি বেলা কনে দেখা আলোতে।
একটু উলো সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে। (২)
ছবির মতো একটা ছোট ঘরে৷
বরণ ডালায় সাজালো কে?

তুমি আমি দুজনে রয়েছি হৃদয়ের বাঁধনে
→→সাত পাকে বাঁধা ←←

— নিয়তি প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না৷ আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। আমি তোমাকে হারাতে পারব না৷

— আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।অনেক বার অনেক ভাবে বুঝাতে চেয়েছি৷ কিন্তু কোনদিন বুঝাতে পারিনি৷ কারণ আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।

— একদম এসব কথা আমার সামনে বলবে না৷ তুমি কোথায় থেকে বড় হয়েছো। সেটা আমার কাছে বড় কিছু নয়৷ সবার আগে তুমি একজন মানুষ৷ আমি তোমায় কখন ছাড়তে পারব না৷

— চলেই তো যাচ্ছিলাম। কই একবারের জন্যও মানা করেননি তো।

— তুমিও তো একবারও বল নি, তুমি আমায় ভালোবাসো। আমি না আটকালে তো তুমি চলেই যেতে।

— তো কি করব? আপনি তো সেই ছোঁয়াকে এখনো ভুলতে পারেন নি৷ আমায় ভালোবাসবেন কিভাবে? আমি আপনাকে ঠিকই ভালোবাসি৷ কিন্তু আমি আজ থেকে এই রুমে থাকতে পারব না৷

নিয়তি কথা শুনে নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷ নিয়তির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” আমি ছোঁয়াকে ভালোবাসি না৷ আর এই রুমে থাকবে না তো কই থাকবে?”

— আমি গেস্ট রুমে থাকব৷ যতদিন পর্যন্ত আপনি ছোঁয়াকে না ভুলে আমায় এই ঘরে নিয়ে না আসবেন, ততদিন আমি অপেক্ষা করব আপনার৷
নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আপনাকে নাকে দড়ি দিয়ে যদি না ঘুরাতে পারি আমিও নিয়তি নয়৷ আজই আমি ছোঁয়ার ভুত আপনার মাথা থেকে নামাব।

নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷

— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হাত ধরলেন কেন।”

— আর এক পা এগিয়ে দেখো তোমার পা ভেঙে এখানে রেখে দিব৷

— আপনি তাই তো করতে পারেন। শুধু হুমকি দিয়ে পারেন৷ ভালোবাসা দিয়ে মন থেকে জয় করতে হয়৷

— কিভাবে ভালোবাসা আদায় করতে হয় আমার জানা আছে?

চলবে…..

বাবান ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১৭

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৭
#অধির_রায়

— “নিয়তি আমি আজ খুব খুশি। তুমি আমার কাছে কি চাও? তুমি যা চাইবে আমি তাই দেওয়ার চেষ্টা করব৷” আনন্দের সাথে বলে উঠে নির্বণ।

— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আমি যা চাইব আপনি তাই আমাকে এনে দিবেন৷ কথাটা ভেবে বলছেন তো?”

— হ্যাঁ, আমি কথা ভেবেই বলি৷ বল তোমার কি লাগবে?

— নিয়তি আস্তে আস্তে বলে উঠে, ” আমি তো আপনাকে চাই৷ আপনাকে কখন, কবে, কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি নিজের অজান্তে, আমার জানা নেই৷ আমি শুধু আপনাকে চাই৷”

— কি বলছে? আমি কিছুই শুনতে পারলাম না৷ প্লিজ একটু জোরে বল।

— আপনার সময় সম্পর্কে একটুও জ্ঞান নেই৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন কয়টা বাজে৷ আপনার অফিসের সময় হয়ে গেছে৷ এখন বের না হলে লেট হয়ে যাবে।

— “তাহলে তোমার কিছু লাগবে না৷ আমি তোমাকে একটা উপহার দিতে চাইলাম আর তুমি না করে দিলে।” অভিমানী স্বরে বলে উঠে।

— আমার যখন লাগবে আমি চেয়ে নিব৷ ধরে নেন এটা আপনার কাছে আমার পাওনা৷ আর আপনার শর্ত ভুলবেন না কিন্তু।

________

— “নিয়তি তুমি আজ ম্যাজিক দেখিয়ে দিলে।” আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না৷

— নিয়তি চকিত হয়ে, ” মা আমি কি ম্যাজিক করলাম? আমি তো কিছুই করিনি৷”

— মুখে হাসি রেখা ফুটিয়ে, ” মা তুমি আজ সব থেকে বড় কাজ করেছো৷ যা আমরা সবাই মিলেও করতে পারিনি৷ আমরা অনেক চেষ্টা করেছি সেই কাজ করার জন্য। ”

— নিয়তি চোখ ছোট করে কোমল কন্ঠে, ” মা আপনি সব সময় আমাকে ধাঁধায় ফেলে দেন৷ আমি তো সকাল বেলা কোন কাজই করিনি৷ আপনি কোন কাজের কথা বলছেন? ”

— কে বলেছে তুমি কাজ কর নি? তুমি সব থেকে কষ্টকর কাজ সম্পন্ন করেছো সকাল বেলা৷ একমাত্র তুমিই নির্বণকে খাবার টেবিলে নিয়ে আসতে পেরেছো৷ আমরা অনেকে অনেক চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু কখনও সফল হয়নি৷ প্রতিবার আমরা ব্যর্থ হয়েছি৷

— না মা এটা আমার কোন কাজ নয়৷ আমি সকলের মুখের হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য নির্বণকে খাবার টেবিলে নিয়ে এসেছি৷ নির্বণও চাই হাসি খুশিতে বাঁচে থাকতে। কিন্তু… (থেমে যায়)

— কিন্তু কি? বল না নির্বণ কেন হাসতে ভুলে গেছে? আমার ছেলেকে আগের মতো করে দাও৷ আমি তোমার পায়ে পড়ি।

— ছি! ছি! এসব কি বলেন? আমি আমার সর্বত্র দিয়ে চেষ্টা করব, নির্বণের মুখে হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ৷ আমি নির্বণের সমস্যা সম্পের্ক জানতে পেরেছি৷

— তোমার কোন সাহায্য লাগবে আমাকে বলবে? আমি যতটা পারি সাহায্য করব৷

— ওকে মা। আমার সাহায্য লাগলে আপনাকে না বলে কি থাকতে পারব? আপনিই আমাকে শক্তি জোগান। আমি আপনার কাছ থেকেই সাহায্য নিব৷ “কিন্তু আমি এখন আপনার ওপর রেগে আছি৷” অভিমানী স্বরে বলে উঠে।

— চকিত হয়ে, ” আমার ওপর রেগে থাকার কারণ কি? আমি কি ভুল করেছি ম্যাম? প্লিজ ম্যাম আমি কোন ভুল করে থাকলে আমায় ক্ষমা করে দিবেন৷”

— মা আমি একটু ফার্ন করছি না৷ আমি এভার সত্যি সত্যি রেগে যাব৷ আপনাকে মুভ অন করতে বলেছি৷ কিন্তু আপনি একটুও নড়াচড়া করেন না৷ এভাবে চলে না৷

— আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি৷ প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দেন৷ আজ থেকে আমি মুভ অন করব৷ আমি আর হেয়ালি করব না৷ আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই৷

নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে ধীরে ধীরে দাঁড় করায়৷ নির্বণের মা নিয়তিকে ভর করে অনেকক্ষণ হাঁটাচলা করে৷ নির্বণের মা আর পারছে না৷ তিনি নিয়তির কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিচে বসে পড়েন৷

— নিয়তি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে, ” মা আপনাকে প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে হাঁটতে হবে৷ থেমে গেলে চলবে না৷ ”

— পায়ে উপর হাত রেখে বলে উঠেন, ” প্লিজ নিয়তি আজ আর নয়৷ আমার পা ভীষণ ব্যথা করছে৷ আমি আর পারব না৷”

— নিয়তি কর্কশ কন্ঠ বলে উঠে, ” মা আপনাকে হার মানলে চলবে না৷ আপনাকে উঠে দাঁড়াতে হবে৷ আপনি যদি মন থেকে প্রথমেই হেরে যান তাহলে তো আপনি বাস্তবে সফো হতে পারবেন না।”

— “আমার পায়ে ব্যথা৷ ব্যথা পায়ে মনোবল ফিরিয়ে নিয়ে আসব কিভাবে? ” অসহায়ভাবে বলে উঠেন।

— অরিন মাকে ধর তো। মায়ের কোন কথা শুনতে চাই না৷

নিয়তি আর অরিন নির্বণের মাকে ধরে একটু হাঁটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু নির্বণের মা পা ফেলতে আর পারছে না৷ নিয়তি নির্বণের মায়ের কষ্ট বুঝতে পেরে মাকে রুমে নিয়ে আসে৷

— মা আজ আপনাকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু কাল আপনাকে আর ছাড়বো না৷ পুরো দুই ঘন্টা আপনাকে হাঁটতে হবে৷

নির্বণের মা অসহায় ভাবে নিয়তির দিকে তাকয়৷ বির্বণের মায়ের মুখটা একদম ছোট হয়ে গেছে৷

— মা ভয়ের কিছু নেই৷ আমি আপনাকে ফিজিওথেরাপি দিব এখন। যা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে পায়ের ব্যথা চলে যাবে।

_________

রাতে ডিনার শেষে নিয়তি আর নির্বণ এক সাথে রুমে প্রবেশ করছে৷ ধরতে গেলে নিয়তি একটু এগিয়ে৷ নির্বণ পিছু পিছু আসছে৷ নিয়তি রুমের ভিতরে পা না রাখতেই নির্বণ নিয়তিকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷

নিয়তিকে এমনভাবে নির্বণ টান দেয়, যেন নিয়তি দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি ভয়ে চিৎকার করতে নিলেই নির্বণ নিয়তির মুখ চেপে ধরে৷

— নিয়তি কিছুটা উঁচু স্বরে বলে উঠে, ” আপনি আমাকে রুমে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছেন কেন? কি আছে রুমে? আমি তো রুমে যাবই৷ ”

— তুমি তো রুমেই যাবে৷ তবে এভাবে যেতে পারবে না৷ আমি তোমাকে রুমের ভিতরে এভাবে যেতে দিতে পারব না।

— সন্দেহের চোখে, “আপনি রুমে কাকে লুকিয়ে রেখেছেন? আমি অনেকবার রুমে প্রবেশ করতে চেয়েছি৷ কিন্তু আপনি প্রতিবারই আমাকে আটকিয়ে দিয়েছেন৷ কেন?”

— তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷

— নিয়তি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” আমার জন্য সারপ্রাইজ! আমি স্বপ্ন দেখছি৷ নির্বণ চৌধুরী এই নিয়তির জন্য সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করছে৷ [লেখাঃ অধির রায়]

— তো কি হয়েছে? আমি কি কাউকে সারপ্রাইজ দিতে পারি না৷ আমার মাঝে কি কোন মূল্যবোধ নেই?

— তাহলে চলেন দেখি, আপনি আমার জন্য কেমন সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছেন৷ নাকি এখনো বাদ আছে৷

নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” হ্যাঁ, ইশ্বর। তুমি সাহায্য কর৷ যেন নির্বণ আমাকে তার ভালোবাসার কথা বলে৷ আমি জানি নির্বণ আমাকে এখন ভালোবাসে৷”

— সারপ্রাইজ পেতে চাইলে তোমাকে চোঝ বন্ধ করতে হবে৷

— না না আমি চোখ বন্ধ করতে পারব না। আপনি যদি আমাকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন৷ আপনি তো আমাকে সহ্য করতে পারেন না৷

— মিসেস কূটনীতি, আমি এমন কোন কাজ করব না৷ তোমার চোখ বন্ধ করতে হবে না৷ আমি তোমার চোখ বেঁধে দিচ্ছি৷

— নির্বণ দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে, ” আমার চোখ বাঁধার চেষ্টা করবেন না৷ চোখ বাঁধলে নিজেকে অন্ধ মনে হয়৷ আমাকে আপনি অন্ধ বানিয়ে দিতে চান৷”

নির্বণ নিয়তির আঙ্গুল নিচে নামিয়ে নিয়তির কোমর চেপে ধরে নিয়তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ নিয়তি কোমরে নির্বণের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে৷ নির্বণের শার্ট চেপে ধরে৷

— নির্বণ নিয়তি গলায় নাক ঘেঁষে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি জানি তুমি সহজে হার মানবে না৷ তোমাকে কিভাবে হার মানাতে হয়, আমার ভালো করেই জানা আছে?

নিয়তি নির্বণ কথায় আরও নির্বণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে৷ নিয়তি ঠোঁট জোড়া কাঁপতে থাকে। নির্বণ সুযোগের সৎ ব্যবহার করে নিয়তি চোখ বেঁধে দেয়৷

— এখন চল আমার সাথে। আমার সাথে কেউ কোনদিন পেরে উঠেনি৷ আর কোনদিন পেরে উঠতেও পারবে না৷

— আকুল কন্ঠে বলে উঠে, “ছাড়েন আমাকে। এভাবে আমাকে ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমি আপনার সাথে যাব না৷”

— একটা কথা বললে তোমাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসব৷ আমাকে তুমি এখনও চিন না৷ তাই চুপচাপ আমার সাথে হাঁটতে থাকো৷

নিয়তি ভয় পেয়ে নির্বণের সাথে হাটতে থাকে। নির্বণ নিয়তিকে বেলকনিতে নিয়ে আসে৷

— একটা শর্তে তোমার চোখ খুলে দিতে পারি৷

— কি শর্তে?

— চোখ খুলে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে আঁখি মেলে তাকাবে।

— আমি আপনার শর্তে রাজি। প্লিজ আমাকে এভাবে অন্ধ বানিয়ে রাখবেন না!
“আগে চোখের বাঁধন খুলে দেন৷ পরের বিষয় পরে দেখা যাবে। আমার একদম অস্বস্তি লাগছে।” মনে মনে বলে উঠে।

নির্বণ নিয়তির চোখ খুলে দিয়েই আঙুল দিয়ে নিয়তির চোখ চেপে ধরে৷

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি আমার সাথে দুর্নীতি করতে পারেন না৷ আপনি এভাবে চোখ চেপে ধরলেন কেন?

— আমি জানতান তুমি সোজা কথার মানুষ নয়৷ আমি ধীরে ধীর হাত সরাবো তুমি ধীরে ধীরে চোখ মেলতে পারবে।

নিয়তি বিরক্ত স্বরে বলে উঠে, ” আসলে আপনি এমন একটা লোক, যাকে চেনা খুব কঠিন৷”

নির্বণ নিয়তির চোখ ছেড়ে দেয়৷ নিয়তি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নিয়তির সামনে এক জোড়া শালিক পাখি৷

— নিয়তি খুশি হয়ে বলে উঠে, ” আপনি কি করে জানলেন শালিক আমার প্রিয়৷” আমি খুব খুশি হয়েছে৷ আপনি আমাকে সব থেকে ভালো সারপ্রাইজ দিয়েছেন৷

নিয়তি খুশিতে ঠেলায় নির্বণকে জড়িয়ে ধরে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না সে কি করছে? নির্বণ নিয়তির মুখের হাসির কথা ভেবে নিয়তির কানে কানে বলে উঠে, ” মিসেস নিয়তি আমাকে জড়িয়ে না ধরে পাখিগুলো দেখো৷ তোমাকে দেখার জন্য পাখিগুলো আকুতি মিনতি করছে৷”

নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরেছে নিয়তি নিজেই জানে না৷ আসলে নিয়তি শাকিল পাখি পেয়ে কতটা খুশি হয়েছে যা বলে বুঝাতে পারব না৷ নিয়তি এখন নিজেই লজ্জা পাচ্ছে৷ নিয়তি চোখ তুলে তাকাতে পারছি না৷ নির্বণ নিয়তির লজ্জা মাখা মুখটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। নিয়তি কেঁপে নির্বণে হাত চেপে ধরে৷

— নির্বণ নিয়তি কানে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” তোমার লজ্জা জনিত মুখটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে৷ তোমাকে একদম স্ট বেরির মতো লাগে।”

নির্বণ কথায় নিয়তি আরও লজ্জা পায়৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে ফেলে৷ নির্বণ নিয়তির গলায় থাকা কালো তিলটাতে ডিপ কিস দিয়ে, ” কি হলো নিয়তি? কথা বলছো না কেন? আমার পছন্দ হয়নি পাখিগুলো৷”

— নিয়তি আর নিতে পারছে না৷ নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার এত কাছে চলে আসবে৷ নিয়তির কেন জানি আজ খুব ভালো লাগছে। অন্য দিন নির্বণ তার হাত ধরলেই ঘৃণা হতো৷ আজ কেন এমন অনুভব হচ্ছে৷

নিয়তি নির্বণের হাত সরিয়ে লজ্জা মাখা মুখে নির্বণের দিকে ছোট করে তাকিয়ে রুমে চলে আসে৷ নির্বণ তখন বুঝতে পারে সে কি করেছে নিয়তির সাথে?

নিয়তির গলায় কালো তিলটা নির্বণকে আকৃষ্ট করেছে। মেয়েদের গলায় কালো তিল যেকোনো ছেলেকে আকৃষ্ট করতে পারে। নির্বণ দেয়ালে ঘুশি মেরে, “আমি কিভাবে করতে পারলাম এমন কাজ? আমি নিয়তির প্রতি এতটা কেন দুর্বল হয়ে পড়লাম?” আমি তো নিয়তিকে ভালোবাসি না৷

নির্বণ দ্রুত গতিতে রুমে চলে আসে৷ রুমে এসে দেখে নিয়তি এখনও লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বসে আছে৷ নিয়তির গলার কালো তিলটা আবারও দেখা যাচ্ছে। নির্বন একটা ওড়না নিয়ে নিয়তি গলায় ঝুলিয়ে দেয়৷

— কিছুটূ কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে, ” গলা থেকে যেন কখনো ওড়না না নামে। বিশেষ করে তোমার কালো তিলটা যেন না দেখা যায়৷”

নির্বন আর কিছু না বলে উল্টো দিক হয়ে শুয়ে পড়ে৷

নিয়তি ছোট থেকেই কালো তিনটা লুকিয়ে রেখেছে৷ শাড়ির আঁচল সরে যাওয়ার ফলে তিলটা নির্বণের চোখে পড়ে।

চলবে…..
বানান ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১৬

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৬
#অধির_রায়

“আপনি একটা প্লে বয়৷ আপনি এতগুলো প্রেম করছেন! তৃনা, মিনা, রিনা, চিনা৷ ঘরে বউ থাকতে বাইরে মেয়ের সাথে প্রেম।” কিছুটা ক্ষেপে বলে উঠে নিয়তি৷

— নির্বণ নিয়তির কাঁধে হাত রেখে নিয়তির নাকে নাক ঘেঁষে, ” কেন তোমার হিংসা হচ্ছে?”

— নিয়তি এক কদম পিছিয়ে, ” আপনি কি করলেন আজ?” আমার চোখের সামনে অন্য মেয়েদের জন্য শপিং করলেন৷

— চকিত চোখে তাকিয়ে, ” আমি কি করলাম! আমার মতো নিষ্পাপ শিশু এই ত্রি ভবনে পাবে না৷”

— নিয়তি অট্টহাসি দিয়ে, ” আমার হাসতেও কষ্ট হয়। আপনি নিষ্পাপ শিশু৷ আপনি শিশু তাহলে ফিটার খান৷ বাবু খাইছো৷”

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি এসব কি ধরনের কথা? তোমাকে আমার বাবু মনে হয়? ”

— “আপনাকে আমার বাবু মনে হবে কেন? আপনি চাইলে তো প্রতিবছর জোড়ায় জোড়ায় বাচ্চা জন্ম দিতেন৷ আর আপনি কিনা ঘরে বউ থাকলে বাইরে মেয়েদের জন্য শপিং করলেন৷ তাও আবার কোনগুলো। মর্ডান ওয়েস্টার্ন পোশাক।” কিছুটা আফসোস নিয়ে বলে উঠে।

নিয়তি কথা শুনে নির্বণ বুঝতে পারে নিয়তি খুব রেগে আছে৷ নিয়তিকে আরও রাগানোর জন্য বলে উঠে, ” ঘরের বউ কি কোনদিন প্রেমিকা হতে পারে৷ ”
নিয়তির দিকে ঠোঁট জোড়া এগিয়ে দিয়ে, ” প্রেমিকা মিষ্টি হিসেবে আমার ঠোঁট জোড়া বেছে নেয়৷ কিন্তু ঘরের বউ তা করে না। ”

নির্বণেট কথা শুনে নিয়তির পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়৷ নিয়তি আর সহ্য করতে পারছে না৷ নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে৷ নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নিয়তি রাগে নির্বণের ঠোঁটে খুব জোরে একটা কাপড় বসায়৷

নির্বণ নিয়তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি এই বিয়ে বাধ্য হয়ে করেছি৷ আমাকে এই বিয়ের বন্ধনে জড়াবে না৷”
আর পোশাক গুলো আমি বাহিরের কোন মেয়ের জন্য কিনে নিয়ে আসনি৷ সবগুলো পোশাক তোমার৷

নির্বণ আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়৷ নিয়তি নির্বণকে আবারও ভুল ভাবে৷ নিয়তি ভেবে নিয়েছিল নির্বণ অন্য কারো জন্য এসব করেছি৷ কিন্তু আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করল?

নিয়তি নিজের কাছে নিজেকেই দোষী মনে করছে৷ নির্বণের চোখে জল টলমল করছে৷ নির্বণের চোখে শুধু ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠছে৷ কেন নির্বণ ছোঁয়াকে ভুলতে পারছে না?

নির্বণ ট্রি টেবিলে একটা ঘুশি মেরে, ” আমার চোখের সামনে কেন ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠে৷ ছোঁয়া আজও আমি তোমায় ভালোবাসি৷ তোমাকে কোনদিন আমি ঘৃণা করতে পারব না৷ কথা দিয়েছিলাম তোমার জায়গা কাউকে দিব না৷ আমি আমার কথা রেখেছি৷ আমি নিয়তিকেও ফিরিয়ে দিয়েছে৷ অথচও যার সাথে এখন আমি সাত জন্মের বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছি৷ ”

নিয়তি নির্বণের সব কথা শুনে নেয়৷ নিয়তি বুঝতে পারে তাকে অনেক কষ্ট করতে নির্বণকে পাওয়ার জন্য। আজও তার মনে ছোঁয়া রয়েছে।

________

নির্বণ রাতে কখন ঘুমিয়েছে জানা নেই৷ নির্বণ বেলকনিতেই ঘুমিয়ে আছে৷ নিয়তি বাসার সকল কাজ সেরে নির্বণের জন্য খাবার নিয়ে আসে৷ নির্বণ স্নান করে ওয়াসরুমে থেকে বের হচ্ছে।

নিয়তি হাঁ করে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণের পরনে শুধু তাওয়াল। ফর্সা গায়ে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা মুক্ত দানার মতো দেখাচ্ছে৷ বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী নির্বণ৷ যেকোনো মেয়ে নির্বণের এমন রুপ দেখে প্রেমে পড়তে বাধ্য।

নির্বণ হাত দিয়ে চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিয়তির কাছে আসে৷ নিয়তি গাল টেনে বলে উঠে, ” ওই দিকে কাকে দেখছো? আমি এখানে।”

নির্বণের কথায় নিয়তি লজ্জা পায়৷ নিয়তি নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে নির্বণের দেহ ঢেকে দেয়৷ নির্বণ চকিত হয়ে নিয়তির দিকে তাকয়৷

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনাকে আমি বলেছিলাম আপনি খালি গায়ে আমার সামনে আসবেন না৷”

— কেন? আমায় খালি গায়ে দেখলে তোমায় আদর করতে মন চাই৷ আমি ছেলে মানুষ৷ আমিতো এখন থেকে খালি গায়েই বেশি থাকবো৷

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” না। আপনি খালি গায়ে থাকবেন না৷ যদি কোনদিন খালি গায়ে দেখছি তাহলে.. ”

— তাহলে কি নিয়তি? আমার গায়ের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে নাও৷

— না সারাবো না৷ আপনি আগে একটা ট্রি শাট পড়েন। তার পর আমি শাড়ি সরিয়ে নিব৷

— আমায় খালি দেখলে তোমার লজ্জা লাগে। তখন তোমার মুখ রংধনুর সাত রং হয়ে যায়৷ তখন তোমায় অনেক মিষ্টি লাগে। কিন্তু তোমার পিছনের কালো তিলটা গ্লাসে দেখা যাচ্ছে৷

— আপনি একটা অসভ্য লোক। আপনার একটু লজ্জা নেই৷

নিয়তি শাড়ি সরিয়ে নিতে নিলেই নিয়তির শাড়িতে আঁচল নির্বন পা দিয়ে ধরে রাখে। যা নির্বণ বা নিয়তি কেউ জানে না৷ শাড়ি টান দিতেই নিয়তি পড়ে যেতে নেয়৷ কিন্তু নির্বণ হিরোর মতো নিয়তিকে বাঁচিয়ে নেয়৷

নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রেখে নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তির নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রাখতেই নিয়তির দেহে ১২০০ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ উঠানামা করছে৷

নিয়তি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে লজ্জা লজ্জা ভাব করে বলে উঠে, ” ধন্যবাদ। আপনি পোশাক পড়ে নেন৷ আমি বাহিরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি৷”

নিয়তি চলে যেতেই নির্বণ গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” হ্যাঁ ভগবান, মেয়েদের মন কি দিয়ে তৈরি করছো? ঝগড়া করবে আবার লজ্জায় পাবে। ”

__________

— স্যার একটা কথা বলবো? প্লিজ রাগ করবেন না!

— নিয়তি তুমি এর আগেও ভুল করেছো৷ এখনও ভুল করে যাচ্ছে৷ আমাদের এখন বিয়ে হয়ে গেছে৷ আমাকে স্যার বলা বন্ধ কর। আমাকে নির্বণ বলে সম্মোধন করবে৷ যদি নির্বণ বলে ডাকতে না পারো তাহলে তোমার কথা শুনছি না৷ আমার নাম ধরে বল, ” নির্বণ আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”

— নিয়তি আমতা আমতা করে, ” নি..নি..নি…”

— কি নি..নি করে যাচ্ছো? আমার নাম নি. নয় আমার নাম নির্বণ৷

— নিয়তি চোখ বন্ধ করে, ” নির্বণ আপনার সাথে কিছু কথা ছিল?”

— হুম বল, কি কথা? আমি শুনছি। আর হ্যাঁ রাগ করব না৷

— “আপনি আপনার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন তাই না৷ ” কোমল স্বরে ভয়ে ভয়ে বলে উঠে।

— নির্বণ ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” হুম আমাকে কাছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তিনি এখন আর নেই৷ জানো নিয়তি রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটা আমার বাবা৷ ”

— আপনি জানেন আপনার জন্য আপনার বাবা কষ্ট পাচ্ছে । আপনি অনেক ভুল করছেন৷ আপনি কেন খাবার টেবিলে যান মা৷

— নিয়তি আমি কেন খাবার টেবিলে যায় না সেটা না জানলে ভালো?

— আমি সব জানি৷ আর এইজন্য তো আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি৷ আপনি জানেন কি?, ” বাবা সে দূর আকাশে তাকিয়ে আমাদের সবাইকে দেখছেন৷ প্লিজ আপনি বাবাকে আট কষ্ট দিবেন না৷ বাবা চাইনা আপনি আলাদা ভাবে খান৷ ”

— নির্বণ কিছু একটা ভেবে বলে উঠে, ” আমার এখন কিছু ভালো লাগে না৷ আমাকে এসব নিয়ে প্লিজ বিরক্ত করবে না৷”

— আপনি তাহলে রাজি এক সাথে খাওয়ার জন্য৷ আপনার পায়ে পড়ি আপনি প্লিজ আর বাবাকে কষ্ট দিবেন না৷ আপনার এমন ব্যবহারে বাবা কষ্ট পায়৷

— নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ভাঙা গলায় বলে উঠে , “আমি জানি তুমি ভুল বল না৷ তোমার সাথে নিশ্চয় বাবার কথা হয়৷ আমাকে একটু কথা বলিয়ে দাও না৷ আমি সকলের সাথে খাবো৷ আমি আর বাবাকে কষ্ট দিব৷”

চলবে….

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১৫

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৫
#অধির_রায়

নিয়তির চিৎকার শুনে নির্বণ দ্রুত পায়ে রুমে ফিরে আসে৷ রুমে এসে দেখে নিয়তি ফ্লোরে পড়ে আছে৷ নির্বণ দৌড়ে নিয়তির কাছে আসে৷ নিয়তিকে পাঁজা কোলা করে বিছানা শুয়ে দেয়৷

— হন্তদন্ত হয়ে, ” প্লিজ নিয়তি চোখ মেলে তাকাও? ” নিয়তি আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ জল লাগবে৷

নির্বণ নিয়তির মুখে জল ছিঁটিয়ে দেয়৷ যার ফলে নিয়তি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। নির্বণ যেন প্রাণ ফিরে পেল৷ নিয়তি এমন অবস্থা দেখে নির্বণ বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব করছিল। কেন এমন অনুভূতি হয়েছিল নির্বণ নিজেই জানে না?

নিয়তি চোখ মেলে তাকাতেই নির্বণ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে৷ নির্বণ নিজেও জানে না সে কি করেছে? নিয়তি নির্বণকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ নির্বণের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” মি. নির্বণ চৌধুরি৷ আমাকে ধরার অধিকার আপনি এখনও পাননি৷ যদি সারাজীবন আমাকে আগলে রাখতে পারেন তাহলে আমার কাছে আসবেন।”

নিয়তি নির্বণের উপর রাগ দেখিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নির্বণ গালে হাত ঘষতে ঘষতে মনে মনে বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি কাজটা ঠিক করলে না৷ আমার গায়ে হাত তুলার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে ৷”
নির্বণ অফিসে চলে যায়৷

নিয়তি ওয়াসরুমের গ্লাসে নিজেকে দেখছে আর কেঁদে যাচ্ছে৷ নিয়তি কান্না করতে করতে, ” আমি এই হাত দিয়ে আজ আমার স্যারের গায়ে হাত তুললাম৷ কি করে পারলাম এমন অন্যায় কাজ করতে৷ কেন স্যার আমার ভালোবাসা বোঝে না৷ আমি স্যারকে ভীষণ ভালোবাসি৷ ” কিন্তু আমি স্যারকে নিজের করে পাওয়ার জন্য মাকে কিছু বলিনি৷
________

— এভাবে মন খারাপ করে আছ কেন? আমার উপর তোমার একটুও বিশ্বাস নেই৷ আমি যা করেছি তোমার আর নির্বণের ভালোর জন্যই করেছি৷

— আই অ্যাম ওকে৷ আমি এসব কিছু নিয়ে ভাবছি না৷ এক মুহুর্তের মাঝে আমার জীবনে কত বড় পরিবর্তন এসে পড়েছে৷ আমি নিজেই জানি না৷ যাকে একটু আগে স্যার বলে সম্মোধন করতাম সে আজ থেকে আমার স্বামী!

— তো কি হয়েছে? এসব বাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে দাও৷ আমি জানি আমার ছেলে একটু গম্ভীর টাইপের৷ কিন্তু সে ভালোবাসার কাঙাল। সে ভালোবাসা পেলে তোমাকে কখনও কষ্ট দিবে না৷ তুমি পারবে না আমার ছেলের কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করতে৷ আমি তোমাকে সাহায্য করব৷

— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আমি পারব৷ আপনি আপনার কাজে মন দেন৷ ঠিকমতো থেরাপি নেন৷ আপনি সুস্থ থাকলেই আমি শক্তি পাব।”

— সোনা মা তোমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে৷ তুমিই পারবে নির্বণকে আবার আগের মতো হাঁসাতে।

— নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে, ” ডোন্ট ওরি। আমি আমার যথেষ্ট দিয়ে চেষ্টা করব৷ এভার দেখে যান নিয়তির খেলা৷”

— নিয়তির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে, ” এই তো আমার সোনা মা৷ আমি জানি তোমার কাছে সব সমস্যার সমাধান আছে। তুমি যে আমার ঘরের লক্ষ্মী।”
__________

নির্বণ অফিস থেকে ফিরে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে৷ এমন সময় নিয়তি নির্বণের খাবার নিয়ে রুমে আসে৷

— আপনার খাবার খেয়ে নেন৷ আজ থেকে আমিই আপনার খাবার নিয়ে আসব। আজ আপনি দিনে কিছু খান নি৷

— কাজে মনোনিবেশ করে, ” তুমি খেয়েছো?”

— আমি কে? আমি না খেলে আপনার কিছু যায় আসবে না৷ আপনার খাবার আপনি খেয়ে নেন৷

— নির্বণ চোখ রাঙিয়ে, ” সিম্পল কথাটা বলতে পার না৷ আমি তোমার কাছে কোন কৈফিয়ত চাইনি৷”

— আপনি সারাদিন খাননি কেন? কি মহাকাজে বিজি ছিলেন? খাবারের জন্য দশ মিনিট সময় পাননি৷

— তুমি কে? আমি তোমাকে কেন বলব কখন খাব, কখন খাব না ? আর আমার কোন ক্ষুধা নেই৷ খাবার রেখে আসো৷

— আমি খাবার নিয়ে এসেছি আপনার জন্য৷ আপনি খাবেন তার পর কাজ করবেন৷

— নিয়তি তুমি ভালো করেই জানো আমি কাজের সময় বিরক্ত একদম পছন্দ করি না৷

— আমিও যখন কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন সে সিদ্ধান্তে অটল থাকব।

নিয়তি কোন কথা না বলে নির্বণের ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়৷ নির্বণের হাত ধরে নিয়ে এসে বিছানায় নির্বণকে বসিয়ে দেয়৷ নিয়তি নিজ হাতে নির্বণকে খাইয়ে দেয়৷ নির্বণও কম নয় নির্বণ এক লোকমা খাবার মুখে দেওয়ার পর অন্য লোকমা জোর করে নিয়তির মুখে তুলে দেয়৷ নিয়তি খাবার যেন ফেলতে না পারে সেজন্য নিয়তির নাক মুখ চেপে ধরে৷ এভাবে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মাধ্যমে একে অপরকে খাইয়ে দেয়৷

_______________

— ” নির্বণ আজ তো রবিবার। আজ তোমাকে অফিসে যেতে হবে না৷ ” হাতের নখ কাটতে কাটতে।

— নির্বণ নিয়তির দিকে একবার তাকিয়ে, ” মা আমার একটা জুরুরি কাজ পড়ে গেছে৷ আমাকে আজ এক জায়গায় যেতে হবে৷”

— নিয়তি নির্বণের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমাকে দাও তো৷

— মা তুমি ফোন দিয়ে কি করবে? আমার ফোনে কত দরকারি ফোন আসে৷

— নির্বণের মা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে, ” তোমার কাছে আমি ফোন চেয়েছি৷ তুমি আমাকে ফোন দাও। আমি চাইনা তুমি আমার মুখের উপর কথা বল৷”

নির্বণ ভেজা বিড়ালের মতো হাত কাচুমাচু করে ফোনটা মায়ের দিকে এগিয়ে দেয়৷ নির্বণের মা নির্বণের ফোন ঘাটাঘাটি করে দেখে তেমন কোন ফোন আসেনি৷

— অগ্নিমূর্তি ধারণ করে, ” নির্বণ তুমি আমাকে মিথ্যা বললে! সেজন্য তোমাকে শান্তি পেতে হবে৷ শাস্তি হিসেবে তুমি আজ নিয়তিকে শপিং করাতে নিয়ে যাবে৷”

— নির্বণ কিছুটূ উঁচু স্বরে বলে উঠে, ” মা আমি পারব না নিয়তিকে শপিং এ নিয়ে যেতে৷ টাকা দিয়ে দাও, সে নিজে থেকে কিনে নিয়ে আসবে।”

— গম্ভীর কণ্ঠে, ” নির্বণ এসব কি ধরনের কথা? তুমি নিয়তিকে শপিং করাতে নিয়ে যাচ্ছো মানে নিয়ে যাচ্ছো। ইট’স মাই লাস্ট ওয়ার্নিং।”
___________

নিয়তি নিজের ইচ্ছামত শপিং করছে। কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনেনি৷ নির্বণ দেখতে পাচ্ছে নিয়তি বাড়ির সকলের জন্য অনেক কেনা কাটা করল।

— আমার সব শপিং শেষ৷ আপনার কি কি লাগবে কিনে নেন?

— আমার কিছু লাগবে না৷ আমি অন্য একদিন সময় করে কিনে নিব।

— অন্য একদিন কিনে নিবেন মানে কি? আমি আপনার জন্য পছন্দ করে দিচ্ছি৷

— লাগবে না। তোমার পছন্দ কেমন আমার জানা আছে? তুমি যেমন মিডিল ক্লাসের মেয়ে তেমনি তোমার পছন্দ হবে মিডিল ক্লাসদের মতো।

— নির্বণ চৌধুরী এভার মুখটা বন্ধ করেন৷ আর হ্যাঁ আমি যা পছন্দ করে কিনে দেব তাই পড়তে হবে আপনাকে৷
দাদা কালো রঙের পাঞ্জাবিটা বের করেন৷

— আমি পাঞ্জাবি পড়ি না৷ আমি পাঞ্জাবি নিব না৷

— একটা কথা বলবেন না৷ দাদা একটা স্কচটেপ দেন তো এই বাঁদরের মুখে লাগিয়ে দেয়৷

— ক্ষেপে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “কি আমি বাঁদর?”

— হ্যাঁ, আপনি একটা বাঁদর।

— বাসায় চল তারপর তোমাকে দেখাব।

শপিং শেষে নিয়তি নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷ নিয়তি অবাক চোখে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নির্বণ নিয়তির তাকানোর দিকে কোন পাত্তা না দিয়ে নিয়তিকে আবার শপিং মলে নিয়ে আসে।

— আবার আমরা শপিং মলে কি করব? বুঝতে পেরেছি। আমি নৃত্য করব আপনি ভিডিও করবেন৷ আমি ভাইরাল হয়ে যাব৷

— “জাস্ট সাট আপ। একটা কথাও বলবে না৷ আমি তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছি বলে তুমি মাথায় উঠে নৃত্য করবে। ” চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে।

নিয়নি নির্বণের এমন গর্জন শুনে চুপসে যায়। ভদ্র মেয়ের মতো নির্বণের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে৷ নির্বণ নিয়তির জন্য নিজে পছন্দ করে বাহারি রকমের শাড়ি কিনে৷ শুধু শাড়িতেই আবদ্ধ নয়৷ নিয়তির জন্য ওয়েস্টার্ন পোশাকও কিনে।

— আপনি ওয়েস্টার্ন পোশাক কার জন্য কিনছেন? মনে হয় শাড়িগুলো আমার৷ আমি তো ওয়েস্টার্ন পোশাক পড়ি না।

— আমি যার জন্যই কিনা কেন? তোমার জন্য কিনছি না আমি৷ এটা ভেবে নিও৷ তোমার তো কিছু লাগবেই না৷ তাহলে শাড়ি দিয়ে কি করবে?

নির্বণের কথা শুনে নিয়তির মুখটা ছোট হয়ে যায়৷ নিয়তি ভেবে ছিল তার জন্য শাড়ি কিনছে৷ কিন্তু সালা নির্বণ নিয়তির জন্য না কিনে তার প্রেমিকার জন্য কিনেছে৷ নিয়তি মনে মনে হাজারটা বকা দিয়ে যাচ্ছে নির্বণকে৷

নির্বণ নিয়তির এমন অবস্থা দেখে মুচকি হেঁসে যাচ্ছে৷ নিয়তি আরও রাগান্বিত করার জন্য নির্বণ নিয়তির হাত ধরে, ” মিস নিয়তি তুমি চাইলে তোমার জন্য কাজের মেয়ে জরিনার শাড়ি নিতে পারি৷”

নিয়তি নির্বণের কথা শুনে আরও ক্ষেপে যায়৷ নির্বণের হাত এক ঝাঁকি দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ নির্বণের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাহিরে চলে আসে৷

চলবে……

বানান ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১৪

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৪
#অধির_রায়

অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে নিয়তি আর নির্বণ৷ একে অপরকে দিকে আড় চোখাচোখি করছি৷ কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না, কেন তাদের দু’জনকে এক সাথে ডাকা হয়েছে? নির্বণের মাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে৷

— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নির্বণের মা বলে উঠেন, ” নিয়তি দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দাও৷”

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে কোমল স্বরে, ” আচ্ছা মা৷” কিন্তু দরজা লাগানোর কোন দরকার আছে৷

— দরজা লাগানোর দরকার আছে৷ আমি চাই আমাদের কথা ঘরের বাহিরে না যাক।

নিয়তি নির্বণের মায়ের এমন এমন অগ্নিমূর্তি ধারণ করাতে নিয়তি খুব ভয় পেয়ে যায়৷ নিয়তি নির্বণের মায়ের দিকে একবার ছোট করে তাকিয়ে ধীর পায়ে দরজার কাছে আসে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা লাগিয়ে দেয়৷

— গম্ভীর কণ্ঠে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তোমরা আমার কাছ থেকে কি কি লুকিয়েছ? আজ আমি তোমাদের কাছ থেকে সত্য ঘটনা জানতে চাই৷”

— নিয়তি একবার নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” মা আমরা আপনার কাছ থেকে কি লুকাবো? সত্যি বলছি আমরা কিছু লুকিয়ে রাখিনি৷”

— হুংকার দিয়ে “জাস্ট সাট আপ!” তোমরা কি ভেবেছো, আমি কিছু জানি না? আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবে তোমরা৷”

নিয়তি নির্বণের মায়ের হুংকার শুনে শুকনো ঢুক গিলে। মুখটা একদম ছোট হয়ে যায়৷ নির্বণের হাসি পায় নিয়তির এমন অবস্থা দেখে। কিন্তু মায়ের সামনে হাসতে পারছে না৷

— মির্বণ তার মাকে শান্ত করার জন্য, ” মা এমন কি হয়েছে? যার জন্য তুমি নিয়তিকে বকাবকি করছো।” মা নিয়তি খুব ভালো মেয়ে৷ সে কখনো অন্যায় কাজ করে না৷

— নিয়তি কেমন তা জানা আছে৷ আর আমার ছেলে কেমন তাও আমার জানা আছে৷ তোমাদের স্বভাব এত নিচে নেমে যাবে আমি কখনও ভাবতেই পারি নি৷

— মা আমরা কি করেছি? আমার জানামতে আমরা কোন অন্যায় কাজ করিনি৷
নিয়তির দিকে তাকিয়ে, ” বল নিয়তি, আমরা কি কোন অন্যায় কাজ করেছি?

— ব্যাস আমার সামনে নাটক করতে হবে না৷ তোমরা তাহলে স্বীকার করলে না তোমরা অন্যায় করেছো? আমি ভেবেছিলাম তোমরা সব কিছু নিজের মুখে স্বীকার করবে৷ কিন্তু না। সেজন্য তোমাদের শাস্তি পেতে হবেই৷

— নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে, ” প্লিজ মা আপনি শান্ত হন৷ আপনার কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে। আমরা কোন অন্যায় কাজ করিনি৷ আর আপনার ছেলেও খুব ভালো কারো সাথে কখনো অন্যায় হতে দেয় না৷

— হাত ঝাঁকি দিয়ে সরিয়ে, ” আমার কাছে তোমরা একে অপরের সাফাই শুনালে আমি গলে যাব৷ তোমাদের ধারণা ভুল৷”
তোমরা যা অন্যায় করেছ তার কোন ক্ষমা হয় না৷ সমাজে তোমাদের নিয়ে ছি ছি করবে৷ আমরা মানুষ, আমাদের সমাজ নিয়ে চলতে হয়৷

— মা আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন? প্লিজ মা! আমরা আপনার ধাঁধা বুঝতে পারছি না৷। একটু খোলে বলেন? (নিয়তি)

— তোমরা আগে বল তোমরা কি বিবাহিত?

বিবাহিত কথাটি শুনতেই নিয়তি নির্বণ দুই জনের মাথার উপর ছাঁদ ভেঙে পড়ে। তারা বুঝতে পারছে না কি বলবে? তারা তো কাউকে এসব কিছু বলেনি৷

— নির্বণ হাসিমুখে বলে উঠে, ” মা আমরা তো বিবাহিত। নিয়তিকে দেখে কি মনে হয়, নিয়তি বিবাহিত নয়?

— জাস্ট সাট আপ নির্বণ৷ আমার কাছে আবারও মিথ্যা কথা বলছো৷ আমি জানি নিয়তির মাথায় সিঁদুর নেই৷ সেটা রং। আমাকে কি তোমার বোকা মনে হয়৷
নিয়তি আমি কি মিথ্যা বলছি৷

— নিয়তি কাচুমাচু করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” মা আসলে আমরা দুই জনেই এমন পরিস্থিতির স্বীকার।”

— বাহ তোমরা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এমন কাজ করেছ। বিবাহ না করেই এক ঘরে রাত কাটাও৷ তোমাদের কোন তুলনা হয় না৷ সমাজে তোমার কতটা সম্মান হানী হবে সেটা তুমি জানো।

— মা আমার কাছে অন্য কোন উপায় ছিল না৷ আমি বাধ্য হয়ে স্যারের সাথে এমন কাজে জড়িত হয়েছি৷

— ছেড়ে দিলাম আমি আমার ছেলের কথা৷ তুমি তে মেয়ে তোমাকে কে মেনে নিবে৷ তুমি কিভাবে দাঁড়াবে সমাজে। যখন লোকজন বলবে তুমি একজন পতিতা৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” মা তুমি এই কথা কিভাবে বলতে পারলে নিয়তিকে। তুমি তো নিয়তি খুব ভালোবাসো। তাহলে তুমি কিভাবে তাকে পতিতা উপাধি দিলে৷

— আমি যুক্তি দিয়েই কথা বলছি৷ তুমি এখানে আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু সমাজের মুখ কিভাবে বন্ধ করবে? তারা কি মেনে নিবে নিয়তিকে৷ তারা তো ভাববে নিয়তি পতিতা না হলে এমন কাজ করতে পারত না৷

নিয়তি নির্বণের মায়ের কথা শুনে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে কান্না করে যাচ্ছে। নিয়তি তো সত্যিই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে৷ নিয়তিকে কি সমাজ মেনে নিবে না৷ কিভাবে সে সমাজে মাথা দেখাবে?

— মা বিশ্বাস কর, আমি নিয়তিকে একটু টার্চ করিনি৷ নিয়তি এখনো ততটাই পবিত্র যতটা পবিত্র মা দূর্গা।

— নিয়তি এখানে আসো৷ নির্বণ আমি চাই তোমরা যেহেতু ভুল করে ফেলেছো তার একটা উপায় বের করতে হবে৷ এসব কথা যেন বাহিরে না পৌঁছায়।

— নির্বণ তার মায়ের হাত ধরে , ” মা আমরা কথা দিচ্ছি কাউকে এসব কথা বলবো না৷”

— হাত সরিয়ে নিয়ে, ” তুমি মা ডাকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছ। এত বড় অন্যায় করেছ তার কোন অনুশোচনা হচ্ছে না তোমার৷ তুমি তাকে বাধ্য করেছ চুক্তি নামায় সাইন করতে। ”

চুক্তি নামার কথা শুনে নির্বণ মাথা নিচু করে ফেলে৷ নির্বণ তো তার মায়ের মুখের হাসির জন্য এমন অন্যায় কাজ করেছে।

— মা আমি চাইনি বিবাহ বন্ধনে নিজেকে জড়াতে। আমি তোমার মুখের হাসি ফিরিয়ে আনার জন্য এমন অন্যায় কাজ করেছি৷

— আমার মুখের হাসি৷ আমার মুখের হাসি দিয়ে কি হবে? মারা যাওয়া ভালো ছিল তোমাদের অন্যায় দেখার আগে৷ তাহলে তো মানুষের চোখে ছোট হতে হত না৷

— নির্বণ তার মায়ের মুখে হাত দিয়ে, ” প্লিজ মা বাজে কথা বলবে না৷ তুমিই আমার পৃথিবী৷ তোমার হাসির জন্য এমন আরও হাজারটা অন্যায় কাজ করতে রাজি৷

নির্বণের ভালোবাসা দেখে নির্বণের মা মনে মনে খুশি হলেও বাস্তবে খুশি নয়৷ নির্বণের গালে ঠাস করে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন।

— লজ্জা করে না মেয়েদের নিয়ে খেলা করতে৷ তাদের কি তোমার কাছে খেলার পুতুল মনে হয়৷ তোমার দিকে তো আঙ্গুল তুলবে না৷ তুলবে মেয়েটার দিকে। কারণ নিয়তি একজন মেয়ে। তোমার মতো ছেলে নয়৷

নির্বণ গালে হাত দিয়ে মার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। আজ চোখ থেকে নির্বণ নিয়তির জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে।

— তোমরা যেহেতু অন্যায় করেছ৷ তোমাদের দু’জনকেই শাস্তি পেতে হবে।

নির্বণের মা বালিশের নিচ থেকে একটা সিঁদুর কোটা আর মঙ্গল সূত্র নিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি গরিব কিনা ধনী আমার কোন জানার বিষয় নেই৷ আমার চোখে নিয়তি একজন নারী৷ আমি কিছুতেই তার সাথে অন্যায় হতে দিতে পারি না৷ ”
নির্বণ তোমাকে একটা শর্তেই ক্ষমা করতে পারি। যদি তুমি আজ আমার সামনে নিয়তির সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ভরিয়ে দাও৷

— নিয়তি বলে উঠে, ” না মা এমন কাজ করবেন না৷ আপনি যেহেতু জেনে গেছেন সেহেতু আর এমন কাজ করার দরকার নেই৷ আমি মিডিল ক্লাসের মেয়ে৷ আমি স্যারের জন্য উপযুক্ত নয়৷”

— যখন নাটক করছিলে তখন মনে ছিল না৷ আমি তোমাদের কোন কথা শুনতে চাই না। আমার কথা শেষ কথা৷
“নির্বণ কি হলো সিঁদুর পড়িয়ে দাও? ” হংকং করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

নির্বণ ধীর পায়ে সিঁদুর নিয়ে নিয়তির দিকে আসে৷ কাঁপা কাঁপা হাতে সিঁদুর নিয়ে নিয়তির সিঁথির কাছে হাত নিতেই নিয়তি হাত ধরে ফেলে৷ কিন্তু হাত ধরতে সামান্য দেরি হয়ে যায়৷ হাত ধরার সময়ই নির্বণ নিয়তির সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দেয়৷

পাতা উল্টে দেখো একটা গল্প লেখা।
একটু জানা কাহিনি কিছু অজানা।
একটা গোধুলি বেলা কনে দেখা আলোতে।
একটু উলো সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে। (২)
“””সাত পাকে বাঁধা “””
______________

— “মার কথা বিবেচনা করে আমি তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি৷ তোমাকে বিয়ে করেছি বলেই, তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিব এটা কল্পনাও করবে না৷” নরম স্বরে নির্বণ নিয়তিকে বলে উঠে।

— কিন্তু স্যার আমি তো…

— কোন কিন্তু নয়৷ আমি তোমার ভরণ পোষণের সব দায়িত্ব নিব৷ আমি আমার কর্তব্য থেকে কখন পিছপা হব না৷ নির্বণ চৌধুরী কখনও কর্তব্য থেকে পিছপা হয় না৷

— স্যার আমি সেটা বলতে চাইনি৷ আমি বলতে চাচ্ছি, মা আমাদের কথা কিভাবে জানতে পারলেন?

— নিয়তির হাত চেপে ধরে, ” আর কত নাটক করবে নিয়তি ? তুমি এত নাটক করতে পার আমার জানা ছিল না। তুমি ছাড়া এই রচনা রটানো কারো সম্ভব নয়৷ ”

— স্যার আমি কেন মাকে এসব বলতে যাব? আমার মাথা খারাপ হয়েছে কি? আমি মাকে এসব বলে মাকে ডিপ্রেশনে ফেলব।

— তুমি বলতে চাইছো তুমি কিছু বলনি৷ তাহলে মা কিভাবে জানতে পারল? মা তো মনোবিজ্ঞানী নয় যে আমাদের মনের কথা জেনে যাবে৷ আর হ্যাঁ মনোবিজ্ঞানীরাও মনের কথা জানে না৷ তুমি সব সময় মার কাছে থাকো৷ তুমি হুট করেই মাকে এসব কথা বলে দিয়েছো।

— “স্যার প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন৷ লাগছে আমার৷” নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে।

— তোমার জন্য আজ আমার দিনটাই খারাপ হয়ে গেল। যতসব আজাইরা পাবলিক।

নির্বণ নিয়তিকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়৷ নিয়তি নিজেকে সামলাতে না পেয়ে আলমারির সাথে ধাক্কা খায়৷ মাথায় প্রচুর আঘাত লাগায় নিয়তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

চলবে…

শুরুটা অন্যরকম পর্ব-১৩

0

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৩
#অধির_রায়

নির্বণের মায়ের মা আষাঢ়ের ঘনঘটা আকাশের মতো মুখ কালো করে ফেলে।।মুখে স্পর্শ ফুটে উঠে চিন্তার ছাপ।

–মা আপনি এভাবে মুখ ভার করলেন কেন? আমি কিছু ভুল বলেছি। প্লিজ মন খারাপ করবেন না৷ আমি কিছু জানতে চাইনা৷

— নির্বণের মা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠেন, ” না নিয়তি তুমি কোন ভুল বলনি৷ তোমার সবকিছু জানার অধিকার আছে৷”
আমাকে একটা কাজ করে দিবে।

— বলেন কি কাজ? আমি আপনার সব কাজ করে দিব? শুধু আপনি আমাকে বলেন?

— দেয়ালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠেন, ” দেয়াল থেকে নির্বণের বাবার পিকটা একটু এনে দাও৷ ”

নিয়তি নির্বণের মায়ের কথামতো পিকটা এনে দেয়। নির্বণের মা পিকটা পরম যত্নে একটা উম্মা দেয়৷ পিকটা এমনভাবে টার্চ করছে দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, “কোন নবজাতক শিশুর এইমাত্র জন্ম হলো।” নিয়তিকে পাশে বসায়৷

— জানো মা নির্বণ কেন নিচে সবার সাথে বসে খায়না? কারণ তার বাবা গত হওয়াকে নির্বণ মেনে নিতে পারেনি৷ নির্বণ তার বাবার সাথে মোকাবেলা করে খাবার খেত৷ কত দুষ্টামি করত। কিন্তু গত হবার পর নির্বণ সেই টেবিলে আর খাবার খায়নি৷ এখন কেন খায়না জানি না?

— নিয়তি নির্বণের মায়ের চোখের জল মুছে দিয়ে, ” মা আপনি মন খারাপ করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে৷ আপনার ছেলের মুখে হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমার নিজের। ”
সে আবার আগের মতো সবার সাথে নিচে বসে খাবে।

— কোমল কন্ঠে, ” এইতো আমার সোনা মায়ের মতো কথা। আমি জানি তুমি ঠিক পারবে। আমার আশীর্বাদ রইল।”

— হ্যাঁ আপনার আশীর্বাদ আমার মাথার উপর থাকলে কোন কাজই আমার কাছে অসাধ্য নয়৷

মুচকি হেঁসে নিয়তির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন৷ নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে হাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ গতকালের থেকে এখন মা অনেকটা শক্তি পাচ্ছে পায়ে।
___________

— “এভাবে মন খারাপ করে বসো আছো কেন?” নির্বণ রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে।

— কই না তো। আমি কেন মন খারাপ করব? আমার মন বলতে কিছুই আছে নাকি৷

— তোমার মন নেই৷ একদম ঠিক কথা বলেছো। তোমার মন বলতে কিছু নেই৷ তবে অভিনয় ভালো করতে পার।

— আমারও মন আছে। আমার মা আজ বেঁচে থাকলে মনে হয় আমি এই মিথ্যা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তাম না৷ আমার মা কখনো এমন হতে দিত না৷ আমার মন খারাপ হচ্ছে এটা ভেবে যে, ” ১২ দিন পর যখন এই বাড়ি থেকে চলে যাব তখন মায়ের রিয়েক্ট কেমন হবে? মা যদি জানতে পারে তখন কতটা কষ্ট পাবে।” বলতে নিয়েই চোখে জল এসে পড়ল৷

— ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” তোমাকে এই সব নিয়ে ভাবতে হবে না৷ আমি সময় বুঝে মাকে সব বলে দিব৷ আমি বলে দিব আমরা বিবাহিত নয়৷”

— আপনি তো সারাদিন অফিসে থাকেন৷ আপনি আমাকে কাজ করতে মানা করছেন। কিন্তু মা ভেবে নিয়েছে অন্যটা৷

— আমি এইজন্য মানা করেছি, যেন তুমি মায়ের সাথে বেশি সময় কাটাতে পারো। তবে মা কি কোন সন্দেহ করেছে?

— হ্যাঁ মা শুধু সন্দেহ না, বলেও দিয়েছেন৷ তাঁর ধারণা আমি মা হতে চলছি৷ আপনি কেন বলেছেন আমাকে, যেন কাজ করতে না দেওয়া হয়?

— কি! তোমার মাথা ঠিক আছে৷ তোমার সাথে আমার এখনো শারীরিক সম্পর্ক হয়নি৷ আর তুমি কিনা..

— স্যার আমি কিছু করিনি৷ যা করেছেন আপনি করেছেন? আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছি৷

— কি সিদ্ধান্ত? আমি কি জানতে পারি?

— হুম আপনাকে কিভাবে জানাব ভেবে পাচ্ছি না?

— হেয়ালি না করে বলে ফেলো? যদি টাকা লাগে নিয়ে নিও আলমারি থেকে। আমি তোমার কাছে অনেক খুশি৷ তুমি যা চাইবে আমি তাই দিব৷

— টাকার পরিবর্তে যদি আমি আপনাকে চাই৷

— মুচকি হেঁসে, ” হাস্যকর৷ তোমার মাথাটা সত্যিই গেছে৷

নির্বণ তাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায় স্নান করতে৷ নিয়তি বিছানায় ধপাস করে বসে পড়ে। নিয়তি চোখে জল এসে পড়ে৷

— নিয়তি মনে মনে বলে উঠ, ” স্যার আমি সত্যি বলছি। আমি কখন কোন সময় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না৷ কিন্তু আমি গরীর। আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব না৷ আমার অবুঝ মন শুধু আপনাকে কাছে পেতে চাই৷ আমার অবুঝ মন কেন যে, আপনার মতো গোমড়া মুখুকে লাইক করে বসল? আমি নিজেই জানি না৷ আমি আপনার সামনে ভালোবাসা কখনো প্রকাশ করব না৷

নির্বণ স্নান করে এসে দেখে নিয়তি সেই আগের মতো বসে আছে৷ নিয়তিকে বিরক্ত না করে নিয়তির সামনে খাবার নিয়ে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি খাবার খেয়ে নাও৷ ”

— আসলে আমার খেতে ইচ্ছা করছে না৷ আপনি খেয়ে নেন৷

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি তুমি তাহলে কেন খাবার খাওনি? প্রতিদিন কেন খাবার নিয়ে বসে থাকো আমার জন্য। ”

— স্যার আসলে আমার খেতে মন চাইছে না৷ আমি সন্ধ্যার দিকে খেয়ে নিয়েছি৷ আপনি খাবার খেয়ে নেন৷

নির্বণ রাগ করে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ে। নিয়তিও না খেয়ে শুয়ে পড়ে৷

মাঝ রাতে নির্বণের ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি সেই ছোট বাচ্ছার মতো মুখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নির্বণ নিয়তিকে এভাবে ঘুমাতে দেখে মুচকি হাসে। নিয়তি ঘাড়ের কালো তিলটা নির্বণকে নিয়তির দিকে টানছে৷ কিন্তু নির্বণ কিছু সময়ের মাঝেই নিজেকে সংযত করে নেয়৷ নির্বণের সামনে ভেসে উঠে ছোঁয়ার ছবি৷

ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠাতে নির্বণ খুব রেগে যায়৷ নির্বণ ছোঁয়ার কোন স্মৃতি আর আগলে রাখতে চাইনা৷ নির্বণ ছোঁয়ার সকল চিরকুট, ছোঁয়ার দেওয়া সকল প্রকার গিফট একত্রে করে রুমের মাঝে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ সমস্ত ঘর ধোঁয়ায় ঘেরে যায়৷

ধোঁয়া নিয়তি নাকে যেতেই নিয়তি উঠে পড়ে৷ নিয়তি কাঁশতে থাকে। নিয়তি মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখে নির্বণ একে একে কাগজ আগুনে ছুঁড়ে মারছে৷

— নিয়তি নির্বণের কাছে এসে নির্বণে কাঁধে হাত রেখে, ” কি করছেন এসব? আপনি রুমের ভিতরে আগুন লাগিয়েছেন কেন?”

— বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বলে উঠে, ” যখন ভালোবাসা স্মৃতি হয়ে যায় তখন সেই স্মৃতি জড়িয়ে ধরে নিজেকে কষ্ট দিতে চাই না৷ সব সময় নিজেকে অপরাধী মনে হয়।” “কেন ভালোবাসতে গেলাম? ” আফসোস মাখা মুখ নিয়ে।

— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” স্যার আপনি নিজেও জানেন না, আপনি আমার কাজকে কতটা সহজ করে দিয়েছেন। আপনাকে এখন আমি নিজের মতো করে গড়ে তুলতে পারব৷”

— তুমি উঠে পড়লে যে৷ সকাল হতে অনেক দেরি আছে। ঘুমিয়ে নাও।

— আমার আর ঘুম আসবে না৷ আমি সবকিছু পরিষ্কার করে স্নান করে ফেলব৷

নির্বণের চোখে ঘুম নেই৷ শুধু ছোঁয়া প্রতারণা চোখে ভেসে উঠছে৷ নির্বণ সোফায় বসে মাথার চুল চেপে ধরে বসে আছে। হঠাৎ মাথায় কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে নির্বণ হাত সরিয়ে নেয়৷ নিয়তি পরম যত্নে নির্বণের মাথা মাসাজ করে দেয়৷ নির্বণ কখন ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷

_______

নিয়তির মন আজ খুব খুশি। নির্বণ নিজ থেকে ছোঁয়ার স্মৃতি মুছে ফেলেছে৷

নিয়তি আজ নির্বণের পছন্দের সাদা রঙের রেশমি শাড়ি পড়েছে৷ নিয়তি সাদা শাড়িতে সুন্দর মানিয়েছে। নির্বণ নিয়তির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তির কাছে চলে যায়৷ পিছন থেকে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে৷ নির্বণের পরশ পেয়ে নিয়তি কেঁপে উঠে।

— নিয়তি কানে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। আমি জানতাম ছোঁয়া তুমি ফিরে আসবে।”

ছোঁয়ার নাম শুনে নিয়তির সকল অনুভূতি নিমিষেই উড়ে যায়৷ নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” স্যার আমাকে ছাড়েন৷ আমি আপনার ঘরের বউ নয়৷ এভাবে জড়িয়ে ধরার কিছু নেই৷”

নিয়তির কন্ঠ শুনে নির্বণের ঘোর কাটে৷ নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি তুমি এই সাদা শাড়ি কোথায় পেলে? ”

— কোথায় পাবো মানে কি? এই শাড়ি তো আলমারিতে ছিল৷ শাড়িটা অনেক সুন্দর তাই পড়ে নিলাম।

— এই শাড়ি তুমি এখনই খুলে ফেলবে৷ আমি চাইনা তুমি এই শাড়ি পড়৷ আমি তো সব পুড়িয়ে দিয়েছি তাহলে এটা অবশিষ্ট রইল কিভাবে?

— স্যার মাথা ঠান্ডা করেন৷ আপনি এই মাত্র অফিস থেকে আসলেন। আপনার মাথা অনেক গরম৷ আমার শাড়িটা অনেক পছন্দ হয়েছে, দেখেন কত সুন্দর কারুকাজ। তাই আমি পড়ে নিয়েছি৷ এতে সিনক্রিয়েট করার কি দরকার?

— “না তুমি এই শাড়ি পড়বে না৷ আমি কাল তোমাকে এই রকম হাজারটা শাড়ি কিনে দিব৷ এই মুহুর্তে এই শাড়ি খুলে ফেল।” চোখ রাঙিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে।

নিয়তি নির্বণের চিৎকারে ভয় পেয়ে যায়৷ নিয়তি ওয়াসরুম থেকে শাড়ি পাল্টিয়ে আসে৷ নির্বণের হাতে কিছুটা রেগেই শাড়িটা ছুঁড়ে মারে। নির্বণ শাড়িটা নিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়৷

— নিয়তি অসহায়ের মতো বলে উঠে, ” এত সুন্দর শাড়িটা এভাবে নষ্ট না করলেও পারতেন৷”

নির্বণ রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াসরুমে চলে যায়। নির্বণ অফিস থেকে ফিরেছে সেজন্য অরিন খাবার নিয়ে রুমে আসছিল৷ কিন্তু নির্বণ আর নিয়তি ঝগড়া দেখে থেমে যায়। অরিন সব জেনে যায়। নির্বণ আর নিয়তি নাটক করছে।

নিয়তি দগ্ধ হয়ে যাওয়া শাড়ির দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে, ” নিয়তি তুই এত বড় ভুল কিভাবে করতে পারলি? তুই তো ওই মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছিস৷ কিন্তু তুই তাকে কষ্ট দিলি।”

— অরিন দরজায় নক করে, ” ছোট ম্যাম, ভিতরে আসব।”

অরিনের কন্ঠ শুনে নিয়তি চোখের জল মুছে বলে উঠে, ” আসো। ”

— অরিন না জানার ভান করে, ” আল্লাহ গো৷ আপনাদের ঘরে আগুন কেন? কি হয়েছে? ”

— কিছুনা৷ আসলে অফিস থেকে কিছু রিজেক্ট করা কাগজ পুড়িয়ে দিলাম।

— অরিন শয়তানি হাসি দিয়ে, ” অ আচ্ছা। আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে । আমি কাল সকালে প্লেটগুলো নিয়ে যাব৷”

— তুমি ঘুমিয়ে নাও। আমি রেখে আসব।

________

— নির্বণের মা অবাক হয়ে, ” অরিন তুই এভাবে চুরের মতো আমার রুমে ঢুকছিস কেন!”

অরিন রুমের দরজা বন্ধ করে খুব ধীরে৷ যেন কোন শব্দ না হয়৷ ধীর পায়ে নির্বণের মায়ের পাশে এসে বসে।

— নির্বণের মায়ের হাত ধরে, “ম্যাম। আপনি আপনাদের নুন খেয়েছি৷ তাই আপনাদের সাথে বেইমানি করতে পারব না৷”

— কিছুটা হন্তদন্ত হয়ে, আরে তুই কি করলি আবার! তুই তো খুব ভালো।”

— ম্যাম আমি কিছু করিনি৷ যা করেছে ছোট ম্যাম নিয়তি৷

— অবাক চোখে তাকিয়ে বলে উঠে, ” তুই কি বলছিস! কার সম্পর্কে কথা বলছিস জানিস?”

— আমি ভুল কিছু বলিনি৷ আপনি কি জানেন, আমাদের নির্বণ স্যার নিয়তিকে বিয়ে করেনি?

— হোয়াট! বিয়ে করেনি অথচও তারা এক রুমে রাত কাটাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করিনা৷ তাদের দেখে মনে হয় একে অপরকে কত ভালোবাসে।

— ভালোবাসে না ছাই। সব লোভ দেখানো ভালোবাসা। আমি জানতাম আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন না৷

— যদি তুই কোন প্রমাণ দেখাতে পারিস, তাহলে আমি তোর কথা বিশ্বাস করব৷

— প্রমাণ আমার নিজের কান৷ আমি নিজে তাদের রুমের বাহির থেকে তাদের কথা শুনেছি৷ আমি সত্যি বলছি তারা অবিবাহিত৷ আমি আপনাকে মিথ্যা বলতে যাব কেন? তাছাড়া ছোট ম্যাম আমাদের কত ভালোবাসে।

— তুই এখন ঘুমাতে যায়৷ তাদের শাস্তি কাল সকালে দিব৷ দেখ আমি তাদের এমন শাস্তি দিব যে, তারা কল্পনাও করতে পারবে না৷”

চলবে…..