হঠাৎ করেই আমি দরজা আটকানোর শব্দ পেলাম।পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম যা তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কারন আমার সামনে শান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে তাও রক্তিম বর্ণ চোখে। সেটা দেখে সাথে সাথে আমার হাতে থাকা তাওয়ালটা নিচে পড়ে গেলো।আমি সাথে সাথে তাওয়ালটা উঠিয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি এখন আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তা দেখে বললাম
ইশাঃ ভাইয়া আ…… আ… আপনি এখানে (তুতলিয়ে)
শান ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
শানঃ হ্যাঁ আমি এখানে কেই তুই কি অন্য কাউকে আশা করেছিলি( দাঁতে দাঁত চেপে বলল আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে )
আমি উনার কথার আগা মাথা বুঝলাম।তবে এটা বুঝলাম উনি রেগে আছেন। উনার এই রাগটাকেই আমি ছোট বেলা থেকে ভয় পাই।কিছু হলেই উনি রেগে যায়।কিন্তু আজ কেনো রেগে আছেন আমি কি কিছু করছি। আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ মানে!!! কি বলছেন এসব শান ভাইয়া
শানঃ কিছু জানো না তাই না অবুঝ তুমি
শান ভাইয়া আমার একদম কাছে আসতেই।আমি আমার পা পিছিয়ে নিতে গেলেই।নিচে আমার ভেজা চুলের পানি পড়ে ছিলো সেখানে পা পড়তেই আমি পড়ে যেতে নিলাম।সাথে সাথে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।কিন্তু হঠাৎ করে দুটো হাত এসে আমাকে ধরে ফেললো।আমি বুঝতে পারলাম এটা শান ভাইয়া।কিন্তু এখন আমি চোখ খোলার সাহস পাচ্ছি। কারন আমি জানি চোখ খুলেই উনার সেই রাগে ভর্তি চোখ দুটো দেখতে পাবো তাই বন্ধ করে ছিলাম। এভাবে কিছু সময় কাঁটানোর পর ।
আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম কি হলো উনি কিছু বলছে না কেনো। একবার চোখ খুলে দেখবো। না না ইশা এই ভুল করিস না চোখ খুলতেই যদি বকাবকি শুরু করে দেয় তাহলে না থাক। হঠাৎ শান ভাইয়া নরম কন্ঠে বলে উঠলেন
শানঃ ইশা***
উনার কন্ঠে এভাবে আমার নাম শুনে। আমার উপর দিয়ে যেনো ঠান্ডা একটা বাতাস বয়ে গেলো। কারন উনি এভাবে কখনও আমার নাম ধরে ডাকেনি। আমি সাথে সাথে চোখে খুলে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম।উনি আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমাকে তাকাতে দেখে উনি আবারও বলে উঠলেন
শানঃ ঠিক আছো তুমি( নরম সুরে)
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম
উনি সেটা দেখে আমাকে আস্তে করে উঠিয়ে দিলেন।কিন্তু আমাকে ছাড়লেন না। সেটা দেখে আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ ভাইয়া আমি ঠিক আছি ছাড়ুন
শানঃ যদি না ছাড়ি
কথা শোনা মাএ আমি উনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম
সেটা দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি উনার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে বলে উঠলাম
ইশাঃ আসলে ভাইয়া নিচে যেতে হবে আপনি কি কিছু বলবেন( নিচের দিকে তাকিয়ে)
শানঃ না (অভিমানের সুরে)
ইশাঃ ঠিকাছে
এই বলে উনাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম
দরজা খুলে বাহিরে বেড় হতেই দেখলাম অহনা আপু। আপুকে দেখে বলে উঠলাম
ইশাঃ আপু তুমি
অহনাঃ তোমাকেই ডাকতে এসেছি চলো নিচে চলো মা খেতে ডাকছে,
ইশাঃ হুম চলো
এই বলে আমারা দুজন এক সাথে চলে যেতে নিলেই অহনা আপু অচমকা দাড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল
অহনাঃ ওহো
ইশাঃ কি হলো
অহনাঃ মা ভাইয়াকে আর ওই মেয়েটা কি যেনো নাম
ইশাঃ রুসা!!
অহনাঃ আরে তোমার তো দেখি মেয়েটার নাম বেশ ভালো মনে আছে।যাই হোক ওকেও ডাকতে বলেছে তুমি যাও আমি ভাইয়া আর রুসা কে ডেকে আনছি।
শান ভাইয়াকে ডাকার কথা শুনে আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।কারন উনি তো উনার রুমে নেই। তখনই অহনা আপু আবার বলে উঠল
অহনাঃ তুমি নিচে যাও আমি এখুনি আসছি
আমি শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে নিচে যাবার জন্য পা বাড়ালাম।
ওদিকে……শান………..
মেয়েটা সেই আগের মতন আমাকে ভয় পায়। শুধুমাএ আমার এই রাগের কারনে।ও শুধু আমার রাগটাই দেখলো এই রাগের পিছনে লুকিয়ে থাকা কিছু অনুভূতি আছে সেই টুকু দেখলো না।আমাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ও কি পায় কথা গুলো ভেবেই শান দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।তারপর অহনার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের কাছে যেতে দেখলো অহনাকে।অহনা এত সময় ওর ভাইয়াকে রুমে খুঁজে না পেয়ে বাহিরে বেড় হতেই শানকে দেখতে পেয়ে বললাম
অহনাঃ ভাইয়া কোথায় গিয়েছিলে তুমি
শানঃ ছাঁদে
অহনাঃ এই রোদে
শানঃ খুব ইচ্ছে করছিলো তাই গিয়ে ঘুরে আসলাম
অহনাঃ আচ্ছা শোন না ভাইয়া মা খেতে ডাকছে।
শানঃহুম,তুই যা আসছি
অহনাঃ না রুসাকে ডাকতে হবে তো
শানঃ অহনা রুসা তোমার বড় ওকে আপু বলবে (কিছুট রেগে বলল)
অহনাঃ sorry ভাইয়া, আমি রুসা আপুকে ডেকে আনছি (মাথা নিচু করে)
শানঃ তার কোন দরকার নেই তুই যা আমি ওকে ডেকে আনছি
অহনাঃ ঠিকাছে (মুখ গোমরা করে)
এই বলে অহনা নিচে চলে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো। তার মা আর ইশা দুজনে টেবিল সাজাচ্ছে।এমনিতেও ইশা তার বাড়িতে কোন কাজ করে না।হয় তো কলেজে যায় নয়তো সারাদিন টিভি দেখেই কাটিয়ে দেয়।তার মা আর একটা কাজের লোক রাখা আছে তারাই সব করে।একমাএ মেয়ে হওয়াতে ইশার বাবা মেয়েকে রাজকুমারীর মতন রাখে।তবে ইশা বাড়িতে যেমন থাকুক না কেনো কোথাও গেলে সবার সাথে সাথে কাজ করে।
অহনা তার মা আর ইশার সামনে গিয়ে মুখ গোমরা করে দাড়িয়ে রইলো। ইশা সেটা দেখে বলে উঠলো
ইশাঃ আপু কি হলো এভাবে মুখ গোমরা করে দাড়িয়ে আছো কেনো।
অহনাঃ ভাইয়া রাগ করছে
অহনা আপুর মুখ থেকে এমন কথা শুনে বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ কেনো??
অহনাঃ ওই মেয়েটাকে রুসা বলার জন্য
ইশাঃ তাতে কি উনার নামতো রুসা
অহনাঃ ভাইয়া বলেছে নাম ধরে ডাকবে না। আপু বলে ডাকবে।
বড় আন্টিঃ এতে ও কোথায় রাগ করলো ঠিকই তো বলেছে শান।
অহনাঃ ভালো ভাবে বলতো রেগে বলার কি আছে মা
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম আহারে অহনা আপু, আমি বুঝি না উনার এতো রাগ কিসের, নিশ্চই বড় আম্মু উনার হবার আগে বেশি বেশি ঝাল খেয়েছে তার জন্য মাথায় সব সময় রাগ থাকে। এসব ভাবছিলাম এরই মধ্যে দেখলাম।
উনি আর রুসা দুজনে নিচে নামছে।উহু শুধু নামছে না কি যেনো বলছে আর দুজনে হাসছে।সেটা দেখে আমার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো কেনো সেটা আমার জানা নেই। হঠাৎ করে উনারা চোখের সাথে আমার চোখ পড়াতেই সাথে সাথে নামিয়ে নিলাম। দুজনে এসে টেবিলের কাছে দাড়ালো।বড় আন্টি উনাকে আর রুসাকে টেবিলে বসতে বলেই।উনি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লে।আর রুসা গিয়ে উনার ঠিক পাশের চেয়ার টাতে বসলেন। আমি সেটা দেখে না দেখার ভান করে বড় আন্টিকে বলে উঠলাম
ইশাঃ বড় আন্টি আঙ্কেল কোথায়
শানঃ হ্যাঁ মা বাবা কোথায়
বড় আন্টিঃ আরে ইশা মা তোর আঙ্কেল খেয়ে অফিসে চলে গেছে কি একটা জরুরি মিটিং আছে
ইশাঃ ও
বড় আন্টিঃ তুই দাড়িয়ে আছিস কেনো বস, এই অহনা বস
অহনাঃ হুম
ইশাঃ তুমি খাবে না বড় আন্টি
বড় আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ খাবো মা, তোদের খেতে দি তারপর
তখনই শান ভাইয়া বলে উঠলো
শানঃ মা আমি কত দিন পর এসেছি আজ সবাই এক সাথে খাবো।
বড় আন্টিঃ আচ্ছা ঠিক আছে
সন্ধ্যায়………..
দুপুরের খাওয়ার পর শান ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়ে ছিলো সাথে করে রুসা কে নিয়ে গেছে।আমি অহনা আপু দুপুরে খেয়ে দুজনে কিছু সময় গল্প করে ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলাম।একটু আগে হাত মুখ ধুয়ে নিচে নামছিলাম তখন দেখলাম বড় আন্টি হাতে ট্রে নিয়ে উপরে যাচ্ছে আমি তাকে দেখে বলে উঠলাম।
ইশাঃ বড় আন্টি এগুলো কার জন্য
বড় আন্টিঃ আরে ইশা মা শান আর রুসার জন্য কফি
ইশাঃ ও আমাকে দেও আমি দিয়ে আসছি
বড় আন্টিঃ নে (হাসি মুখে)
ইশাঃ হুম
আমি ট্রেটা হাতে নিয়ে আমি গেলাম উনার রুমের উদ্দেশ্য।দরজার কাছে যেতেই দেখলাম দরজাটা চাঁপানো।আমি ভাবলাম নক করে ঢুকি নক করতে যাবো ঠিক সেই সময় আমি একটা মেয়ের হাসির শব্দ শুনলাম।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কে হতে পাড়ে।তবে আমার কিছুটা খারাপ লাগলো।তবুও নিজেকে সামলে আমি দরজায় নক করলাম।
কারন শান ভাইয়ার সাথে আরও একজন আসছে তাই দুটো গাড়ি নিতে হয়েছে। এক গাড়িতে সবাইকে ধরবে না তার জন্য। গাড়ি তার নিজ গতিতে চলা আরম্ভ করলো। কিছু সময় পর দেখলাম।বড় আন্টি আমার হাতে একটা টিফিন বাটি ধরিয়ে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ ইশা মা এটার মধ্যে নুডুস আছে খেয়ে নে
আমি অবাক হয়ে বলাম
ইশাঃ বড় আন্টি তুমি আবার এসব করতে গেলে কেনো
বড় আন্টি হেসে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ তো কে করবে শুনি, আমি তো তোর মা তাই না।আমাদের প্রত্যেক মায়ের উচিত সন্তানের খেয়াল রাখা।তাড়াতাড়ি কারনে তো সকালে খেতও পারিস নি নে খেয়েনে।
অহনা আপু আমার পাশ থেকে বলে উঠলো
অহনাঃ সব আদর নিজের ছেলের বউকে দিলে হবে আমাকেও একটু ভাগ দেও
বড় আন্টিঃ তোকে দিতে দিতে আমি বিরক্ত এখন আমি আমার সব আদর বউমাকে দেবো (ইশার গালে হাত দিয়ে)
অহনা আপু মুখ গোমড়া করে বলল
অহনাঃ তাহলে তুমি আর আমাকে আদর করবেনা
অহনা আপুর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি আর বড় আন্টি এক সাথে হেসে দিলাম।অহনা আপু সেটা দেখে বলল
অহনাঃ তোমরা হাসছো,,, আর এদিকে আমার কত খারাপ লাগছে জানো
আমি হাসতে হাসতে বললাম
ইশাঃ আপু বড় আন্টি তোমার সাথে মজা করছে
বড় আন্টি আমাকে ইসারা দিয়ে জানালার পাশে সরিয়ে দিয়ে অহনা আপুর কাছে বসে আপুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ তুই তো আমার নাড়ি ছেড়া ধন তোকে ভালো না বেশে যাবো কোথায়।
অহনা আপু এটা শুনে বড় আন্টিকে জোরিয়ে ধরে বললো
অহনাঃ আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি মা।
দুজনে কিছুটা, Emotional হয়ে গেলো।সেটা দেখে আমি একটু কাশি দিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক করতে বললাম।
ইশাঃ বড় আন্টি নুডুসে সবজি দেও নি তো
বড় আন্টি অহনা আপুকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ দিয়েছি তবে অল্প, একটু আকটু সবজি খেতে হয় ইশা মা।
ইশাঃ কিন্তু আমার তো খেতেই ভালো লাগে না।
অহনাঃ আমারও ভালো লাগতো না তবে এখন ভালো লাগে তুমিও খাও ভালোলাগবে।
অবশেষে কি আর করার খেয়ে নিলাম।
এয়ারপোর্টে…………
কিছু সময় আগে এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছালাম।আমি আর অহনা আপু দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম।হঠাৎ করে বড় আন্টি শান বলে চিল্লিয়ে উঠলো। আমি আর অহনা আপু সামনে তাকালাম।দেখলাম একজন সুদর্শন পুরুষ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে দেখে আমার চিনতে ভুল হলো না এত তো শান ভাইয়ার। আমি তার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। শান ভাইয়া কাছে আসতেই অহনা আপু, বড় আন্টি, আঙ্কেল তার দিকে ছুটে গেলো আমি সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম।আসলে উনাকে দেখে আমি যেনো কেমন ফ্রিজ হয়ে গেছি পা চলছে না।
_______________________________________
এদিকে শান তার মা, বাবা, আর বোনকে তার দিকে আসতে দেখে দ্রুত পায়ে তাদের দিকে এসে। মা বাবা কে সালাম করলো,শান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে কান্না করছে।এটা দেখে শান তার মাকে জোরিয়ে ধরে বলল
শানঃমা কান্না করছো কেনো আমি তো এসে গেছি।
শানের মাঃ কত দিন তোকে দেখিনি বলতো। (কান্না করতে করতে)
শানের বাবাঃ আহ্ তুমিও না ছেলেটা সবে এলো আর তুমি কি কান্না কাটি আরম্ভ করলে
শানের মা শানকে ছেড়ে দিয়ে ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
শানের মাঃ তুমি কি করে বুঝবে একজন মায়ের কত কষ্ট হয় সান্তান কাছে না থাকলে।
অহনাঃ মা এখন তো ভাইয়া এসে গেছে এখন please কান্না করো না
কথাটা বলে অহনা তার ভাইয়াকে জোরিয়ে ধরে বলল
অহনাকে ছেড়ে দিয়ে শান আশেপাশে তাকাতে লাগলো।তার চোখ তো অন্যকাউকে খুঁজছে।মনে মনে ভাবতে লাগলো তাহলে কি ইশা আসেনি।কিন্তু তার জানা মতে এখানে ইশার ও থাকার কথা ।
হঠাৎ করে অহনা ইশা কথা মনে পড়তেই পাশে ফিরে ইশাকে দেখতে না পেয়ে তার মাকে বলে উঠলো
অহনাঃ মা ভাবি কোথায়
শানের মাঃ আসলে তো ইশা মা কোথায় গেলো (আশেপাশে তাকিয়ে)
কথাটা শুনে শানের মনে হলে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার Heartbeat মিস করলো।
সবাই ব্যাস্থ হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। হঠাৎ করেই শানের চোখ পড়লো একটা মেয়ের দিকে পরনে তার হালকা গোলাপি কালারের সালোয়ার খোলা চুল পিঠ অব্ধি । চুল গুলো হালকা বাতাসে উড়ছে। তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শানের আর চিনতে ভুল হলো না মেয়েটি কে। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইশার দিকে।
অহনা একটু পেছেন তাকিয়ে দেখলো ইশা দাড়ানো দেখে বলে উঠলো
অহনাঃ ওই তো ভাবি
সবাই ইশার দিকে তাকালো………..
হঠাৎ করে সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার কেমন জানি লাগছিলো তখনই বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ কি রে ইশা মা ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো এখানে আয়।
কিন্তু আমার যেতেই ইচ্ছা করছিলো না।শান ভাইয়াকে দেখলেই কেনো জানি আমার ভয় সাথে লজ্জা ও করছিলো। আর আমি খেয়াল করলাম শান ভাইয়া আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে।উনাকে এভাবে তাকাতে দেখে আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম।তখনই অহনা আপু আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো।আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম ঠিক তখনই
Hey everyone!!!!!!!.
একটা মেয়ের গলা শুনতে পেয়ে আমি সামনে তাকালাম। দেখলাম শান ভাইয়ার পাশে একটা মেয়ে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটাকে দেখে শান ভাইয়া বলে উঠলেন
শানঃ মা,, বাবা,,, ও রুসা আমরা এক সাথে লন্ডনে পড়াশুনা করেছি।
রুসাঃ hi
আমরা সবাই মেয়েটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম।কারন মেয়েটা জিন্স আর আর T-shirt পড়া মুখ ভর্তি মেকাপ। পুরো মেকাপ
সুন্দরিদের মতন লাগছিলো।
বড় আন্টি আর আঙ্কেল এক সাথে বলে উঠলো ~~ভালো মা তুমি কেমন আছে~~~
রুসাঃ আমিও ভালো আছি
অহনা আপু আমার কানের কাছে এসে বলতে লাগলো।
অহনাঃদেখছো ভাবি কি পরিমান মেকাপ করেছে আর জামা কাপড়ের কি ছিড়ি বাবা গো
তখন শান ভাইয়া মেয়েটাকে বলে উঠলো
শানঃ কি রে এতো লেট কেনো করলি
রুসাঃ আর বলিস না dad এখুনি চট্টগ্রাম যেতে বলছে।
শানঃ মানে তুই না এ কয়েকদিন এখানে থাকবি
রুসাঃ হুম সেটা dad কে বললাম
শানঃ কি বলছে আঙ্কেল
রুসাঃ থাকতে বলেছ আচ্ছা এই মেয়ে দুটো কে তোর বোন
শানভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল দুটো না। অহনা আপুকে দেখিয়ে বলল
শানঃ ও আমার ছোট বোন আর ও
আর কিছু বলতে পারলো না শান তার আগেই রুসা বলে উঠলো
রুসাঃanyway শান মাথাটা ভিষন ব্যাথা করছে
শানঃ ok ok বাড়ি চল তারপর মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে
রুসঃYeah, let’s go.
এই বলে উনি আর মেয়েটা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো
আমার কেনো জানি না ভিষন খারাপ লাগলো। কারন শান ভাইয়া আমার সাথে একটি বারও কথা বললো না।
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম। আচ্ছা উনি কি আমার উপর রেগে আছে।গত দু বছর উনার সাথে যোগাযোগ করিনি তার জন্য। উনিও তো আমাকে কখনও জোর করেন নি।আর মেয়েটা ওনার কেমন বন্ধু।যেমন বন্ধু হোক তাতে আমার কি। কিন্তু কেমন বন্ধু????
এসব দাড়িয়ে দাড়িয়ে গালে হাত দিয়ে ভাব ছিলাম।তখন অহনা আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল
অহনাঃ ভাবি কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো সবাই তো গাড়ির কাছে গেছে।
অহনা আপুর ধাক্কায় আমি ভাবনার যগত থেকে বেড়িয়ে এলাম আর বললাম
ইশাঃ ইস এসব আমি কি যাতা ভাবছি
অহনাঃ কি ভাবছিলে
আমি অহনা আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম।সে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তখন আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ কিছু না চলো
আমি আর অহনা আপু গাড়ির কাছে গিয়ে দেখলাম সবাই আমাদের জন্য দাড়িয়ে আছে।এরই মধ্যে বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ শান তুই আর রুসা,ইশা তিনজনে এক গাড়িতে যা আমরা আর এক গাড়িতে আসছি।
আমি বড় আন্টির মুখ থেকে এমন কথা শুনে ফট করে বলে দিলাম
ইশাঃনা আমি তোমার সাথে যাবো বড় আন্টি
বলেই শান ভাইয়ার দিকে তাকালাম দেখলাম উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আমি উনার থেকে চোখ সরিয়ে বড় আন্টি দিকে তাকালাম।
বড় আন্টিঃ কেনো ইশা মা কোন সমস্যা
ইশাঃ না এমনি
তখনই শান ভাইয়াকে বলে উঠলো
শানঃ মা তোমরা যাও ইশা আমার সাথে আসছে
বড় আন্টিঃ ঠিকছে সাবধানে আসিস(হেসে দিয়ে)
শানঃ ওকে
তখনই রুসা মেয়েটা শান ভাইয়ার কাছে এসে বলতে লাগলো
রুসাঃ ও যখন এ গাড়িতে আসতে চাচ্ছে না তাহলে তুই কেনো ওকে জোর করছিস যেতে দেনা ওকে
শানঃ সেটা তুই বুঝবি না গাড়িত বস,
কথাটা বলেই শান ভাইয়া আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো।সেটা দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেলো।আমি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে বসলাম।
গাড়িতে আমরা কেউ তেমন কথা বললাম না।গাড়িটা শান ভাইয়াদের বাড়ির সামনে থামলো। সবাই আস্তে আস্তে নামলাম। তারপর যে যার রুমে চলে গেলাম fresh হতে। অহনা আপু আমার আগে fresh হয়ে নিচে গেলো।আমি ভাবলাম এক বারে গোসল করবো।আজ বড্ড গরম লাগছে।যেই ভাবা সেই কাজ গোসল করতে গেলাম।গোসল করে বের হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে তাওয়াল দিয়ে মাথার চুল মুছিলাম।হঠাৎ করেই আমি দরজা অটকানোর শব্দ পেলাম।পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম
ইশাঃ বড় আন্টি তুমি শুধু শুধু খাবার আনতে গেলে কেনো আমি তো ভাইয়াকে বলেছি আমি খাবো না দুপুরে( মুখটা গোমড়া করে বললাম)
আন্টি আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমে বিছানার উপর বসে বললেন
বড় আন্টিঃ চুপ চাপ এখানে এসে বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।আর হ্যাঁ আমি কোন না শুনতে চাই না ভুলে যেও না আমি তোমার শাশুড়ী হই শাশুড়ী মায়ের কথা শুনতে হয়। (গম্ভীর ভাব নিয়ে)
আমি বড় আন্টির মুখ থেকে এমন কথা শুনে দ্রুত ছুটে গিয়ে পেলেটা হাতে নিতে চাইলাম।কিন্তু বড় আন্টি সাথে সাথে পেলেটা সরিয়ে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ উহু,,,, আমি খাইয়ে দিচ্ছি
আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম।বড় আন্টি এক লোকমা ভাত মাখিয়ে আমার গালে তুলে দিলেন।আমি খাবার টা গালে নিয়ে খেতে লাগলাম।তখনই বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃশান কে তুই খুব ভয় পাস তাই না।
উনার কথা শুনতেই আমি ভিষম খেলাম।সেটা দেখে বড় আন্টি পানি গ্লাসটা আমার হাতে দিলেন। আমি ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলাম।
বড় আন্টিঃ কি হলো ঠিক আছিস তো
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম ঠিক আর কোথায় আছি বড় আন্টি তোমার ছেলের সাথে বিয়ে হবার পর থেকে আমার জীবনের সব কিছু যেনো কেমন হয়ে গেছে।এসব ভাবছিলাম ঠিক তখন বড় আন্টি আর এক লোকমা ভাত গালের কাছে ধরলো আর বলল
বড় আন্টিঃ নে হা কর
আমি বড় আন্টির হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম
ইশাঃ বড় আন্টি আমার আর খেতে ইচ্ছা করছেনা।
বড় আন্টি তবুও আমাকে জোর করে কয়েক লোকমা ভাত খাইয়ে দিলো। আর শান ভাইয়ার ব্যাপে অনেক কিছু বলল উনি কেমন, কি খেতে পছন্দ করে, কি গান শুনতে ভালোবাসে, আরও অনেক কিছু সেগুলোর কিছু কিছু আমি জানি আর বাদবাকি আজ জানলাম।আমি বুঝতে পারলাম না আজ হঠাৎ বড় আন্টি এসব আমাকে বলছে কেনো।কারন উনার ব্যাপারে আন্টি কারও সাথে শেয়ার করেন না।তাই আমি ফট করে জিজ্ঞেস করলাম
ইশাঃ বড় আন্টি তুমি হঠাৎ উনার ব্যাপারে এত কথা আমাকে বলছো যে
বড় আন্টি হেসে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ না জানলে তুই বুঝবি কি করে শানের কি পছন্দ।আর তুই তো ওর বউ তোকে সবটা জানানো আমার দায়িত্ব
আমি কিছুটা অভিমানের সুরে বললাম
ইশাঃ বয়েই গেছে তোমার ছেলের বিষয়ে জানতে 😏
বড় আন্টি শুধু আমার কথায় হাসলো।আমি মনে মনে ভাবলাম আমি উনার তা জানতে যাবো কেনো উনি কতটুকু জানে আমার বিষয়ে।যখনই দেখা হতো তখন বকা, ধমক ছাড়া কখন কথাই বলতো না। এমন একটা ভাবে থাকতো আমি যেনো তার চিরো শত্রু।
বড় আন্টিঃ নে এবার বিশ্রাম কর, আর হ্যাঁ কাল কিন্তু আমাদের সাথে ঢাকায় যাচ্ছিস
ইশাঃ কেনো!!! (না জানার ভাব করে)
বড় আন্টিঃ কেনো আবার কি ছেলেটা তো আমার বাড়ি ফিরছে কেনো তুই জানিস না তোর সাথে কথা হয় নি
ইশাঃনা
বড় আন্টি মাথায় হাত দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ ইস ও বোধয় তোকে surprise দিতে চেয়েছিলো
আমি মনে মনে বললাম তোমার ছেলের সাথে গত দুই বছর আমার কোন যোগাযোগ নেই। আমি ওর সাথে কখনও কথা বলি না আর বলবই বা কেনো আমার এখনও সেদিনের কথা মনে আছে।
বড় আন্টিঃযা হবার তা হয়ে গেছে।তুই ওকে বুঝতে দিসনা যে তুই সবই জানিস।একটু না জানার ভান করিস মা ছেলেটা তাহলে surprise টা দিতে পারবে।
ইশাঃহুম
বড় আন্টিঃ আচ্ছা মা আমি এখন যাই রাতে তোর ব্যাগ গোছানোর সময় আমাকে ডাক দিস আমি তোকে সাহায্য করে দেবো
আমি বড় আন্টির দিকে হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললাম
ইশাঃ ঠিকাছে।
বিকালে আমি বসার ঘরে এসে দেখি ভাইয়া সোফার উপর বসে গেইম খেলছে। আমি ওর পাশে বসে টিভি অন করে কাটুন দেখতে লাগলাম। হঠাৎ করে ভাইয়ার ফোনে কল আসলে সেটা দেখে ভাইয়া বলে উঠলো
জিসানঃ এ বাবা শান ফোন করেছে
আমি একটু আড়চোখে ওর দিকে তাকালাম। তারপর আমি আমার কাটুন দেখায় মন দিলাম
ফোনে….
জিসানঃ হুম জামাই বলেন কি খবর শুনলাম পরশু আসছে
ওপাশ থেকে
শানঃ ধুর শালা এসে কি করবো তোর বোন তো আমাকে পাত্তাই দেয় না
জিসানঃ হুম
শানঃ একবার দেশে আসি তোর বোনকে এমন টাইট দিবো জীবনের ভুলবে না তোর বোন
জিসানঃ হুম
শানঃ কি তখন থেকে হুম হুম করছিস
জিসানঃ আরে আশেপাশে লোকজন তাই জবাব দিতে চাইলেও দিতে পারছি না
আমি ভাইয়ার মুখ থেকে এমন কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালাম
শান হেসে দিয়ে বলল
শানঃ পাশে আছে নাকি
জিসানঃ হুম দিবো
আমি এত সময় ওদের কথা মন দিয়ে শুনলাম।যখন ভাইয়া বলল ফোনটা আমাকে দিবে আমি হুড়মুড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলাম।সেটা দেখে ভাইয়া শান ভাইয়াকে বলে উঠলো
জিসানঃ চলে গেছে
শানঃ কে ইশা
জিসানঃ হুম, আচ্ছা ও তোকে এত ভয় পায় কেনো, না মানে সব কাজিনদের সাথেই তো ও ভালোভাবে কথা বলে কিন্তু তোর সাথে বলতে চায় না কেনো।
শান মনে মনে ভাবতে লাগলো গত দুই বছর তুমি আমাকে বড্ড জ্বালিয়েছো ইশা পাখি এবার আমি আসছি দেশে তোমাকে আমার প্রেমের দহে এ পুড়াবো তখন বুঝতে পারবে আমার কতটা কষ্ট হয়েছিলো।
জিসানঃ কি রে চুপ কেনো
জিসানের ডাকে শানের হুস ফিরলো তারপর বলল
শানঃ হুম,,,, সেটা তোর বোন কে জিজ্ঞেস করবি।
জিসান হেসে দিয়ে বলল
জিসানঃ তোর কি মনে হয় ও বলবে উহু।যে তোর নাম শুনে পালিয়ে যায় সে আমাকে তোর ব্যাপারে কথা বলবে হতেই পারে না।
শানঃ আরে বলবে বলবে তুই চিন্তা করিস না
ওদিকে
ভাইয়ার কাছ থেকে এসে আমি সোজা রান্নাঘরে গেলাম দেখলাম মা পিঠা বাচ্ছে বড় আন্টি আর আঙ্কেল এর জন্য। আর ফোনে কথা বলছে। আমি মায়ের পাশে দাড়িয়ে বললাম
ইশাঃ মা ( নরম সুরে)
দেখলাম মা ফোনে কথা বলছে।মা আমার দিকে তাকিয়ে ফোনে বলতে লাগলো
ইশার মাঃ নেও তোমার মেয়ে এসেছে কথা বলো,
ইশার বাবাঃদেও
ইশার মাঃ নে তোর বাবার সাথে কথা বল
আমি মায়ের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে বললাম
ইশাঃ hi বাবা
ইশার বাবাঃ hi মামনি কি করছো খাওয়া দাওয়া করছো
ইশাঃ হুম,,, তুমি করছো বাবা
ইশার বাবাঃ হুম মামনি, শুনলাম কাল নাকি তোমার শাশুড়ী আর শশুড় এর সাথে ঢাকায় যাচ্ছো।
ইশাঃ হুম
ইশা বাবাঃ ভালো ভাবে গিয়ে আমাকে ফোন করো মামনি
ইশাঃ হুম কবে আসবে তুমি বাবা
ইশার বাবাঃ এই তো খুব তাড়াতাড়ি আসবো শান বাবা আসুক আগে দেশে তারপর।ঠিকাছে মা এখন রাখি পরে কথা বলি
ইশাঃ হুম
এই বলে বাবা ফোনটা রেখে দিলো।আসলে আমার বাবা ব্যবসার কাজে সিলেটে থাকে। আর আমরা গ্রামে থাকি। মাসে একবার বাড়িতে আসে দুই তিন দিন থেকে আবার চলে যায়।
আমি হাত বাড়িয়ে মাকে ফোনটা দিয়ে বলে উঠলাম
ইশাঃ মা!!!!!
মা ফোনটা আমার কাছ থেকে নিতে নিতে বললেন
ইশার মাঃ বলে ফেলো
ইশাঃ বলছি যে তোমরাও চলো
মা আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললো
ইশার মাঃ কেনো
ইশাঃ না মানে সবাই গেলে ভালো হতো না এই জন্য
মা আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিয়ে বলেন
ইশার মাঃ যা গিয়ে ব্যাগ গোছা আমি আসছি।
আমি মুড অফ করে ঘরে চলে গেলাম।
সকালে……
খুব সকালে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।তারপর কয়েক ঘন্টা মধ্যে পৌঁছে গেলাম।বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই অহনা আপু দরজা খুলে দিলো।আমাকে দেখতে পেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে জোরিয়ে ধরলেন তারপর বললেন
অহনাঃ কেমন আছো ভাবি
ইশাঃ ভালো তুমি কেমন আছো আপু
অহনা আপু আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
অহনাঃ ভালো আছি ভাবি।
আমার পিছন থেকে বড় আন্টি অহনা আপুকে বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ আরে অহনা মেয়েটাকে আগে ঘরে তো ডুকতে দে
অহনা আপু জিব্বা কামড় দিয়ে বলল
অহনাঃ ওহ sorry sorry আসো ভাবি ভিতরে আসো
আমরা সবাই ভিতরে ঢুকলাম।অহনা আপু আমার হাত ধরে সোফার কাছে নিয়ে বসিয়ে দিলেন তারপর নিজেও বসলো।এটা দেখে বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ অহনা ইশা মাকে নিয়ে সোফায় বসে পড়লি কেনো যা তোর ঘরে নিয়ে যা
অহনাঃ মা plz একটু গল্প করি না ভাবির সাথে কতদিন পর দেখা।
বড় আন্টিঃ আহ্ অহনা মেয়েটা journey করে এসেছে। আগে ওকে একটু fresh হতে দে।
অহনাঃ ঠিকাছে (মুখটা কালো করে)
অহনা আপুকে এমন ভাবে মুখ কালো করতে দেখে আমি আপুর কানের কাছে গিয়ে বলে উঠলাম
ইশাঃ আপু চলো তোমার রুমে ওখানে গিয়ে গল্প করি
আমার মুখ থেকে অহনা আপু এমন কথা শুনে হুট করে বসা থেকে উঠে বলল
অহনাঃ চলো চলো
আমরা দুজন উপরে গেলাম।বড় আন্টি আর আঙ্কেল ও তাদের রুমে গেলো।এ বাড়িটা বেশ বড় আমাদের বাড়ির থেকে। দুইতলা বাড়ি। তো আমি আর অহনা আপু দুজনে তার রুমে গেলাম।বেশ কিছু সময় গল্প করলাম।তারপর fresh হয়ে নিচে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম।তারপর সবাই মিলে এক সাথে গল্প করলাম। এ বাড়ির সবাই আমাকে ভিষন ভালোবাসে। বিশেষ করে বড় আন্টি আর অহনা আপু আঙ্কেল ও বাসে। এনাদের সাথে সারাদিন আমার ভালোই সময় কাঁটলো। রাতে সবাই এক সাথে খাবার খেয়ে। যে যার রুমে গেলো।আমি আর অহনা আপু তার রুমে গেলাম।রুমে গিয়ে আমি অহনা আপুকে বললাম
ইশাঃ আপু তোমার একটু ফোনটা দিবে মায়ের সাথে কথা বলবো
অহনাঃ ইস এটা আবার বলা লাগে নাকি ওই তো বিছানার উপর নিযে নেও ভাবি।
আমি বিছানার থেকে ফোনটা নিলাম তারপর মায়ের নম্বরে কল দিলাম।কিন্তু দেখলাম কল যাচ্ছে না। আমি ফোনটার হাতে নিয়ে অহনা আপুকে বললাম
ইশাঃ কল তো যাচ্ছে না
অহনা আপু আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল
অহনাঃ ও হো নেটওয়ার্ক নেই এক কাজ করি ছাদে যাই
ইশাঃ এত রাতে
অহনাঃ হুম কেনো ভয় পাও ভাবি
ইশাঃ না মানে
অহনাঃ আহ্ চলো না
ইশাঃ ঠিকাছে
দুজনে ছাদে গেলাম।ছাদে গিয়ে মাকে কল করে মায়ে সাথে কত সময় কথা বলে। কিছু সময় ছাদে বসে দুজনে গল্প করলাম।তারপর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকালে…………
বরাবরই আমি ঘুম থেকে দেরি করে উঠি তাই আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।উঠতে বেশ দেরি হলো।সবাই প্রায় রেডি হয়ে গেছে।আমি কোন রকম একটা হালকা গোলাপি কালারের সালোয়ার পরে চুলটা কোন রকম brush করে বেড়িয়ে গেলাম সাজ গোজ ছাড়া এমনিতেও আমি সাজি না তেমন একটা।দেখলাম সবাই আমার জন্য wait করছে আমি দেড়ি না করে গাড়িতে উঠে পড়লাম। আঙ্কেল আর একটা গাড়িতে গেলো আর আমি বড় আন্টির অহনা আপু একটা গাড়িতে গেলাম।কারন শান ভাইয়ার সাথে আরও একজন আসছে তাই দুটো গাড়ি নিতে হয়েছে। এক গাড়িতে সবাইকে ধরবে না তার জন্য।
[[[[ওকে তো অনেকেই এটা বলেছেন inter 1st year এর মেয়ের ১৬ বছর হয় কিভাবে।আপনাদের সাথে এসব বিষয়ে তর্ক করে লাভ নেই। কারন এব বিষয়ে যদি কিছু লিখতে যাই যে গল্পটা লিখছি তার থেকেও বড় হয়ে যাবে।যাই হোক কথা বাড়াতে চাই না আমার যদি বয়স বেপারটা লেখা ভুল হয়ে থাকে। তাহলে ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই। আমি ওর বয়স ১৮ দিলাম।আর Inter 2nd yearএ পড়ে এটা দিলাম। আর হ্যাঁ ক্লাস নাইনের পড়ার সময় বিয়ে হয়েছে ওটা টেন ক্লাস করে দিলাম ]]]]
কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরে দেখলাম বাড়ির দরজাটা খোলা ভিতরে ঢুকে দেখলাম।আমার বড় খালা,, খালু,,। আমি অবশ্য তাদের বড় আন্টি আর আঙ্কেল বলে ডাকি। দেখলাম তারা সোফার উপর বসে আছে আর চা খাচ্ছে।
[গল্প শুরু করার আগে চলুন আমাদের নায়িকার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আমাদের নায়িকার নাম ইশা আক্তার ইশা, ইশা inter 1st years এ পড়ে।বয়স ১৬ বছর, দেখতে মাশাল্লাহ নূরের মতন। গায়ের রং তার দূধে আলতা। এখন এই টুকুই আস্তে আস্তে সব গল্পে জানতে পারবেন]
গল্পে ফেরা যাক👇
বড় আন্টি আমাকে দেখে বসা থেকে উঠে আমার কাছে এসে বলল
বড় আন্টিঃ এই তো ইশা মা চলে এসেছে
বড় আন্টি আমার গালে হাত দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ কি রে মা কেমন আছিস
আমি হাসি মুখে বড় আন্টিকে সালাম করে বললাম
ইশাঃ জী ভালো আপনি কেমন আছেন
বড় আন্টিঃ ভালো রে মা
আমি আন্টির থেকে চোখ সরিয়ে দেখলাম আঙ্কেল আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।আমি আন্টিকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে আঙ্কেল কে সালাম করলাম আর বললাম
ইশাঃ কেমন আছেন আঙ্কেল
আঙ্কেল হেসে দিয়ে বলল
আঙ্কেলঃ ভালো আছি মা
এরই মধ্যে মাকে দেখলাম রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।মা আমাকে দেখে বলে উঠলো
ইশার মাঃ কিরে ইশা কখন এলি
ইশাঃ মা এই মাএ এলাম,
মা এসে আমার ওড়নাটা মাথায় দিয়ে বললেন
ইশার মাঃ শশুড় শাশুড়ী সামনে মাথায় কাপড় দিয়ে থাকতে হয় কত বার বলতে হবে তোকে। (ধমকের সুরে)
ইশাঃ………… (চুপ)
বড় আন্টি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
বড় আন্টিঃ আরে তুই চুপ কর তো তুই সেই আগের জগতে পড়ে আছিস, ইশা মা এসবের কোন দরকার নেই তোমার শশুড় আর আমি এসব নিয়ে কিছু মনে করবো না। কি গো তাই তো
বড় আন্টি আঙ্কেল এর দিকে তাকিয়ে বললেন।আঙ্কেল একটা হাসি দিয়ে আমাকে বললেন
আঙ্কেলঃ হ্যাঁ রে মা তোমার শাশুড়ী ঠিক বলেছে।
বড় আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ যাও ভিতরে ফ্রেস হয়ে আসো
ইশাঃ হুম
আমি যাবার সময় মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তারপর নিজের রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম।আর ভাবতে লাগলাম বড় আন্টি আর আঙ্কেল হঠাৎ করে আমাদের বাড়ি কেনো এলেন।কারন সেদিনের পর থেকে তো তাড়া গত দুই বছরে এ বাড়িতে পা রাখেনি।অবশ্য ফোনে কথা হতো আজ হঠাৎ করে এলেন বেপার টা ঠিক আমার হজম হলো না।এসব ভাবছিলাম আর হাঁট ছিলাম।হঠাৎ করে কারো সাথে থাক্কা খেলাম।
ইশাঃ আউচ!!!!
জিসানঃ oh god,,,, চুন্নি কোথাকার দেখে চলতে পারিস না
আমি আমার হাত ঢলতে ঢলতে সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার বড় ভাই জিসান।আমি ওর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম
ইশাঃ ভাইয়া দেখে চলতে পারো না
জিসান ভাই আমার থেকে দশ গুণবেশি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
জিসানঃ তুই দেখতে পারিস না চুন্নি দিলি তো আমার গেইম খেলাটা নষ্ট করে
আমি আমার ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম
ইশাঃ মানে!!!
জিসানঃ কিছু না যা ভাগ চুন্নি
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম এ কি আমার ভাই নাকি। বোন এত ব্যাথা পেলো সেটা না দেখে গেইম নিয়ে পড়ে আছে।হঠাৎ করে ভাইয়া আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বলল
জিসানঃ কি রে এখানেই কি আজ দাড়িয়ে থাকবি ভেতরে যা (কিছুটা জোর বলল)
আমি ভাইয়ার দিকে তাকাতের হঠাৎ আমার মনে পড়লো বড় আন্টি কথা আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম
ইশাঃ ভাইয়া!!!
জিসানঃ কি
ইশাঃ বলছিলাম বড় আন্টি এসেছে কেনো
ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
জিসানঃ কেনো তুই জানিস না
আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম,
জিসানঃ অবশ্য জানবি কি করে আমিও তো আজ জানলাম।শান চৌধুরী আসছে তো
শান ভাইয়ার নাম শুনে আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। আমি কিছু বলার আগে ভাইয়া আবার বলে উঠলো
জিসানঃ তোকে হয় তো নিতে এসেছে maybe
আমি sure জানি না। কারন শান মানে আমাদের বাড়ির জামাই পরশু flight আসছে।অবশ্য শান এর সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে বলেছিলো আসবে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আসবে সেটা বলে নি।এবার চুন্নি তুই বিদায় হোবি। আর আমি চাকরিটা পেলে ঘরে বউ নিয়ে আসবো (মজা করে হেসে বলল)
ভাইয়ার কথা শুনে আমি পুরো নিরব হয়ে গেলাম।
জিসানঃ কিরে ইশা কথা বলছিস না কেনো
আমি ভাইয়ার ডাক শুনে নিরবতা ভেঙে বলে উঠলাম।
ইশাঃ আমার মাথাটা ভিষন ধরেছে ভাইয়া মাকে বলিস আমি দুপুরে কিছু খাবো না
এই বলে আমি চলে গেলাম।এদিকে ভাইয়া আমার এমন ব্যবহার দেখে তো পুরো অবাক কারন বরাবরই আমি আর ভাইয়া ছোট খাটো বিষয় নিয়ে প্রচুর ঝগড়া করি।ভাইয়া আমার যাবার দিকে কত সময় তাকিয়ে থেকে নিজের ফোন নিয়ে busy হয়ে গেলো।
আমি কোন রকম রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম।ব্যাগটা বিছানার উপর ফেলে। বিছানার গাঁ ঘেসে বসে দুই হাঁটুর ভিতর মুখ গুঁজে অতীতের পাতায় ডুব দিলাম।
অতীতে………
আমি তখন সবে নাইনে উঠেছি।একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখলাম।বাসায় অনেক লোকজন এসেছে।আমি ভিতরে আসতেই সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে দেখতে লাগলো। আমি ভালো ভাবে সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এদের সবাইকেই আমি চিনি আমার কাজিনরা আর বড় আন্টি শশুড় বাড়ির লোক।আমি কিছুটা অবাক হলাম আর ভাবতে লাগলাম বাড়িতে কি কোন অনুষ্ঠান নাকি যে এত লোক এসেছে। হঠাৎ করে বড় আন্টির ননদ রাবেয়া আন্টি আমার কাছে এসে বলল
রাবেয়াঃ মাশাল্লাহ মেয়ে তো ভারি সুন্দর
বড় আন্টিঃ হুম আমার ইশা মা যেমন সুন্দরী তেমন লক্ষী।
এদের কথা শুনে অবাক হচ্ছি।এবার আমি বড় আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম
ইশাঃ বড় আন্টি মা কোথায়
সব মহিলারা আমার কথায় হেসে দিয়ে বলল এখন মা মা করবে আর বিয়ের পর জামাই জামাই করবে
বড় আন্টিঃ চুপ করোতো তোমরা যা মা তোর মা রান্না ঘরে আছে।
আমি স্কুল ব্যাগটা খুলে পাশের একটা টেবিলে রেখে দিয়ে দৌড়ে রান্না ঘরের উদ্দেশ্য গেলাম।রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম মা রান্না বান্না নিয়ে খুব ব্যস্ত।আমি মায়ের পাশে দাড়িয়ে নরম শুরে বললাম
ইশাঃ মা!!!!!!!
মা একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের কাজে মন দিতে দিতে বলল
ইশা মাঃ আমি জানি তুই কি বলতে চাস।কিন্তু এখন আমি তোকে কিছু বলতে পারবো না যা হচ্ছে শান্তি মতন হতে দে কোন কথা বলবি না ইশা।
আমি শুধু হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম আর ভাবতে লাগলাম মা এসব কি বলছে। আমার তো সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এরই মধ্যে অহনা আপু আমার কাছে আসলে আমি তাকে দেখে বললাম
ইশাঃ কেমন আছেন আপু
অহনাঃ ভালো আছি ভাবি
অহনা আপুর থেকে ভাবি ডাক শুনে আমি তো পুরো অবাক হয়ে বলে উঠলাম
ইশাঃকি বলছো আপু তুমি এসব
হঠাৎ দেখলাম কত গুলো মেয়ে এসে অহনা আপুর পাশে দাড়ালো। অহনা আপু তাদের দেখে আমাকে বলে উঠলো
অহনাঃ চলো ভাবি রেডি হতে হবে
ইশাঃমানে!!!
আমি অসহায় এর মতন মায়ের দিকে তাকালাম। দেখলাম মা তার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত
অহনা আপু আমার কানের কাছে এসে বলল
অহনাঃ এসব মানে টানে ভাইয়া আসলে বুঝতে পারবে।
আমি মনে মনে বলতে লাগলাম ভাইয়া মানে কে??
অতঃপর………….
মেয়ে গুলো আমাকে একটা বেনারসি শাড়ি পড়িয়ে দিলো।তার সাথে হালকা মেকাপ।গহনা,আমি এসব দেখে বুঝতে পারলাম আমার সাথে কি হতে যাচ্ছে।তবুও চুপ হয়ে থাকলাম কিছুই বললাম না।আর বলেই বা কি হবে কে শুনবে আমার কথা।আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে বসার ঘরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। কাজি সাহেব এলো কিন্তু বর কে সেটা এখনও জানতে পারলাম না।আমার কাজিনরা পাশে বসে হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো।আর আমি নিচুপ হয়ে বসে রইলাম।হঠাৎ করে অহনা আপু কোথা থেকে এসে বলে উঠলো।
অহনাঃ মা ভাইয়া এসেছে
বড় আন্টিঃশান চলে এসেছে
আমার কাজিনরা আমার পাশ থেকে উঠে দাড়িয়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বলল
বর এসেছে বর!!!
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম পাগোল নাকি বললো শান ভাইয়া এসেছে। আর ওরা বর এসেছে বর এসেছে করছে।
অবশেষে শান ভাইয়া বাড়িতে ঢুকলো।আমি উনার দিকে তাকিয়ে পুরো অবাক সাদা শার্ট,ব্লু জিনসপ্যান্ট, সিল্কি চুল পুরো হিরোদের মতন লাগছে তাকে।আমি তাকাতেই দেখালাম উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।কারন সব সময় উনি একটা গম্ভীর মুখ নিয়ে থাকে শুধু আমার সাথে আর বাকিদের সাথে হেসে হেসে কথা বলে।হঠাৎ করে কাজি সাহেব বলে উঠলেন
কাজিঃ তাড়াতাড়ি ছেলেকে মেয়ের পাশে বসান আমাকে আরেক জায়গায় যেতে হবে
আমি এখনও ভাবছি বর কোথায়। এরই মধ্যে বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ শান গিয়ে ইশার পাশে বস
কথাটা শোনা মাএ আমি যেনো বড় সরো একটা শক খেলাম।তারমানে শান ভাইয়ার সাথে আমার ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো।কারন লোকটাকে আমি ভিষন ভয় পাই।আর তারই সাথে নাকি আমার বিয়ে।ভয়ে আমি আমার শাড়ি খামচে ধরলাম।হঠাৎ করে অনুভব করলাম শান ভাইয়া এসে আমার পাশে বসলেন। আর কাজি চট করে বিয়ে পড়াতে আরম্ভ করলেন। কিছুসময় পর কাজি আমাকে কবুল বলতে বললেন।আমার মুখ থেকে কোন কথাই বেড় হতে চাচ্ছিলো না আমি আমার শাড়িটা হাত দিয়ে আরো জোরে খামচে ধরলাম। তখনই অহনা আপু আমার কানের কাছে এসে বললেন
অহনাঃ ভাবি কবুল বলো
আমি মুখ তুলে অহনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম।অহনা আপু আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
অহনাঃ কি হলো ভাবি কোন সমস্যা
আমি না সূচক মাথা নাড়িয়ে বললাম না
প্রায় ১০ মিনিট পরে সবার জোরাজোরিতে কোনরকম ভাবে তিনবার কবুল বলে দিলাম।
কিন্তু আমি একটা বিষয় দেখে খুব অবাক হলাম আর সেটা হলো শান ভাইয়াকে যখন কাজি কবুল বলতে বললেন উনি চটপট বলে দিলেন।বিয়ে পড়ানোর পর আমরা দুজন দুজনকে আঙটি পড়ালাম। অবশেষে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
বর্তমানে………………..
হঠাৎ করেই ইশার রুমের দরজায় নক পড়লো ইশা অতীত থেকে বেড়িয়ে গেলো। আসতে করে হাঁটু থেকো মাথা তুলে দরজার দিকে তাকালো।তারপর উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখ ওর বড় আন্টি মানে শাশুড়ী পেলেটে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি বড় আন্টিকে হাতে খাবারের পেলেট দেখে বললাম
ইশাঃ বড় আন্টি তুমি শুধু শুধু খাবার আনতে গেলে কেনো আমি তো ভাইয়াকে বলেছি আমি খাবো না।
কান্না করতে করতে নিয়তি চোখ মুখ কালো হয়ে গেছে৷ নিয়তির দিকে চোখ তুলে তাকানো যাচ্ছে না৷ একদিন এক রাত না খাওয়াতে একদম ভেঙে পড়েছে৷
নির্বণ সূর্যদেবকে প্রমাণ জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় “সে কখনও নিয়তির ক্ষতি হতে দিবে না৷ আমি আমার সন্তান স্ত্রীর কোন ক্ষতি হতে দিব না৷” নির্বণ ঠিক করে নেয় সে নিয়তি এখন একা ছাড়বে না৷ সব সময় নিয়তির পাশে ছায়া হয়ে থাকবে৷
নিয়তি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সারা রুম বাহারি রকমের ফল দিয়ে ভর্তি৷ রুমের মাঝে দু’টাে নিউ ফ্রিজ।
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” এসব কি, রুম ফল দিয়ে ভর্তি কোন?”
— নির্বণ নিয়তির পাশে বসে, ” এসব কিছুই না৷ তুমি সব সময় ফল খাবে৷ আমি তোমার বা আমাদের বেবির কোন ক্ষতি হতে দিব না৷”
— কিন্তু আমি এত ফল কিভাবে খাবো?
— তোমাকে খেতেই হবে৷ তোমার স্বাস্থ্যের সাথে আমাদের সন্তানেও খেয়াল তোমাকে রাখতে হবে৷ আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে জানতে পারি তুমি রক্তশূন্যতায় ভোগছো৷ তোমাকে আমি কিছুতেই অসুস্থ হতে দিব না৷”
— কিন্তু এসবের কোন দরকার নেই৷
— কোন কথা নয়৷ আমি যা করতে বলবো, আজ থেকে তাই করতে হবে৷ আমার কথামতো তোমাকে চলতে হবে৷ আমি দিনকে রাত বললে রাতই হবে৷
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” কি আমার মহাগুরু এসেছেন, তার কথা মতো নিয়তি চলবে? নিয়তি কারো কথামতে চলে না৷”
— নির্বন নিয়তিকে গালে টুপ করে একটা লাভ ব্রাইট দিয়ে, ” তোমার মাথা থেকে বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দাও৷ এখন তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না।”
— নিয়তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নির্বণের হাত চেপে ধরে বলে উঠে, ” আপনি আমার বেবিকে এবর্শনের জন্য কোন পরিকল্পনা করছেন না৷”
— নির্বণ নিয়তিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে, ” আমাকে দেখে তোমার তাই মনে হয়৷ আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না৷”
— নিয়তি কান্না করে, ” আমাকে কথা দেন আমাদের সন্তানকে আপনি কখনও অবহেলা করবেন না৷ যদি আমি কোনদিন এই পৃথিবীতে না থাকি৷”
— নিয়তির কথা নির্বণের বুকের তীরের মতো লাগে৷ নির্বণ কাঁপা কাঁপা ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ আমি থাকতে তোমাকে স্বয়ং যমরাজ আমার কাছ থেকে তোমাকে কেঁড়ে নিতে পারবেন না৷ আমি তোমার ঢাল হয়ে থাকবো৷”
— নির্বণের হাত চেপে ধরে, ” আর আমাদের সন্তান৷ আমি কখনও আমার সন্তানের গায়ে ফুলের টোকা পড়তে দিব না৷ নিজের জীবন উৎসর্গ করে হলেও আমি আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখবো।”
— নিয়তির চোখের জল মুছে দিয়ে, ” আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি কেউ তোমাকে এবর্শনের জন্য জোর করবে না৷ আমি আমার সন্তানের কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ প্লিজ সুইটহার্ট এবার একটু হাসো৷”
নির্বণের ভরসা পেয়ে নিয়তি মুচকি হাসে৷ নির্বণ মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” সরি সুইটহার্ট যদি আমাকে আমাদের সন্তান আর তোমার মাঝে যেকোন একটা বেছে নিতে বললে আমি তোমাকে বেছে নিব৷”
________
নির্বণ নিয়তির সব দায়িত্ব নিয়ে মিজ হাতে খাইয়ে দেয়৷ নিয়তির দেখাশোনা করার জন্য আলাদাভাবে দুইটা নার্স রেখে দিয়েছেন৷ নিয়তি প্রায় প্রতি ১০ দিন পর পর চেকআপ করেন৷ নিয়তি এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ৷
নিয়তি পেটে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে নির্বণের বাচ্চা। নিয়তি নির্বণ এই বাড়ি এখন মাতিয়ে রাখে৷ নিয়তি রাতে হুট করেই নির্বণের হাত চেপে ধরে৷
— নির্বণ তড়িঘড়ি করে বলে উঠে, ” নিয়তি তোমার কি হয়েছে? আমাকে বল তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”
নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে নির্বণের হাত অনেক জোরে চেপে ধরে আছে৷ নির্বণের হাতে মিয়তির নখ ঢুকে যাচ্ছে৷ নির্বণ তবুও নিজেকে শান্ত রেখেছে৷
— নিয়তিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে, ” কি হলো নিয়তি এভাবে ভয় পেয়ে আছো কোন?”
— নিয়তি কান্না করে দিয়ে, ” আমি মনে হয় আর বাঁচবো না৷ আমার খুব কষ্ট হয় যখন আমার পেটে বেবি নাড়াচাড়া করে৷ আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা।”
— প্লিজ নিয়তি এমন কথা বলো না৷ সৃষ্টি কর্তা তোমার সাথে আছে৷ তিনি তোমার কিছু হতে দিবে না৷
— নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে, ” আমাকে কথা দেন আমার কিছু হলে আমার বাচ্চাকে কোনদিন অবহেলা করবেন না৷ তার মাথা থেকে বাবার ছায়া কেঁড়ে নিবেন না৷”
— নির্বণ আধো আধো চোখ থেকে নোনাপানি ফেলে বলে উঠে, ” আমি তোমার কিছু হতে দিব না৷ আমি তোমার আর বেবির দুই জনের মাঝে কারো কোন ক্ষতি হতো দিব না৷”
নিয়তি ঘাড়ে গরম জলের স্পর্শ পেয়ে বলে উঠে, ” আপনি কান্না করছেন কেন? আমি আমার সাহস৷ আপনি এভানে ভেঙে ফেললে আমি নিজে কিভাবে শক্তি পাবো?”
— নির্বণ মুচকি হেঁসে, ” এই দেখো আমি চোখের জল মুছে নিয়েছি৷ আর কখনও কান্না করবো না৷ তুমি আমাকে কথা দাও! কখনও বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে আসবে না৷”
— নির্বণের হাত ধরে, ” আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি৷ আর কোনদিন বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে আসবো না৷ এবার একটু হাসেন৷”
নির্বণ নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে৷ যেন নিয়তি কোন কিছুতে কষ্ট না পায়৷
_________
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না৷ নদীর জলের মতো বয়ে যেতে থাকে৷ এভানে পার হয়ে যায় নিয়তি নির্বণের জীবন৷ নিয়তি সকলের সাথে বসে কথা বলছে৷ ডক্টরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী এখনো দুইদিন বাকি আছে।
হঠাৎ করেই মিয়তির ল্যাভার পেইন উঠে৷ নিয়তি চিৎকার করে বলে উঠে, ” মা আমার ভীষণ ব্যথা করছে।”
নিয়তি কথা বুঝতে পেয়ে নিয়তিকে সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে চলে আসে৷ ডক্টর কিছু বন্ডের ফাইল পূরণ করার জন্য তাদের কাছে আসে৷
— ডক্টর বলে উঠেন, ” আমি আপনাদের অনেক আগেই বলেছিলাম এবর্শন করাতে৷ এখন আপনারা কাকে বাঁচাবেন৷ সন্তান নাকি মা৷”
— নির্বণ পিছন থেকে বলে উঠে, ” ডক্টর নিয়তি বাঁচিয়ে দেন৷ নিয়তিকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।”
— ডক্টর নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” তাহলে প্রচুর ব্লাড প্রয়োজন হবে। আপনারা কি ব্লাডের ব্যবস্থা করেছেন?”
— নিয়তির বাবা বলে উঠেন, ” আমি আমার মেয়েকে রক্ত দিব৷ আমার আর নিয়তি রক্তের গ্রুপ এক। আমাদের দুইজনের রক্তের গ্রুপ (O+).”
— নির্বণ নিয়তির বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” না বাবা তার দরকার পড়বে না৷ আমি ব্লাডের ব্যবস্থা করে রেখেছি৷”
কই তোমরা আসো।
নির্বণের ডাক শুনে নির্বণের তিনটা ফ্রেন্ড আসে। ডক্টরের সাথে তারা চলে যায়৷
অপারেশনের লাল লাইট অন হতেই সকলের মাঝে চিন্তার উত্তেজনা উঠে যায়। নির্বণ সেখান থেকে মন্দিরে চলে আসে৷
ইশ্বরের কাছে নিয়তির জন্য প্রার্থনা করে৷ নির্বণ ইশ্বরের কাছে কান্না করতে করতে বলে উঠে, ” হ্যা, সৃষ্টিকর্তা। আপনি আমার নিয়তিকে বাঁচিয়ে দেন৷ আমি এই পৃথিবীতে আর কিছু চাইনা৷ আমি কোনদিন আপনর কাছে হাত পেতে কিছুই চাইনি৷ আজ আপনার কাছে এসেছে আপনার বান্দা৷ আপনার বান্দাকে ফিরিয়ে দিবেন না৷ নিয়তিকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷ আমার নিয়তিকে যদি নিয়ে যান৷ আমাকে নিয়ে যেতে হবে৷”
_______
ডক্টর বেরিয়ে আসলেই সবাই ডক্টরকে ঘিরে ধরে৷ সকলের মাঝে টান টান উত্তেজনা। কিন্তু নির্বণ এক ধ্যানে চেয়ারে বসে আছে৷ যেন জীবন্ত একটা লাশ হয়ে গেছে৷
— নির্বণের মা কান্না জনিত কন্ঠে বলে উঠেন, ” আমার নিয়তি ঠিক আছে তো? ডক্টর আমরা বেবি চাইনা৷ আপনি আমার মেয়েকে ঠিক করে দেন৷”
— ডক্টর হাসিমুখে বলে উঠেন, ” চিন্তার কোন কারণ নেই৷ আউট অফ ডেঞ্জার। ইশ্বর আপনাদের সহায় ছিল৷ মা ও সন্তান উভয়েই ভালো আছে৷”
সকলের মুখে হাসি৷ নির্বণ দৌড়ে এসে ডক্টরের হাত ধরে, ” আমি কি নিয়তির সাথে দেখা করতে পারি৷ প্লিজ ডক্টর আমাকে একটু দেখা করতে দেন৷”
— সরি মি. নির্বণ চৌধুরী। আমরা এখনই কাউকে এলাউ করবো না৷ তবে আপনাদের জন্য খুব ভালো খবর আছে৷”
— নির্বণ চকিত হয়ে, ” কি খবর ডক্টর! নিয়তির কিছু হয়নি তো?”
— ডক্টর মুচকি হেঁসে, ” আপনার স্ত্রীর টুইন বেবি হয়েছে৷ একটা ছেলে একটা মেয়ে। বাচ্চাদের সাথে আপনারা দেখা করতে পারেন৷”
ডক্টর চলে যেতেই নার্স সন্তান দু’টোকে নির্বণের হাতে দিয়ে যায়৷ নির্বণ দুই হাত দিয়ে নিজের ছেলে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেন৷ যাকে বলে আনন্দের অশ্রু।
নির্বণ তাদের সন্তানকে তার মা আর নিয়তির বাবার কাছে দিয়ে সে নিয়তির সাথে দেখা করতে যায়। নিয়তির এই মাত্র জ্ঞান ফিরেছে৷ নিয়তির অবুঝ চোখ দু’টো শুধু পরিচিত কারো খুঁজ করছে। নির্বণকে দেখে ঠোঁটে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে পাশে বসে। নিয়তি টলমল চোখে তাকিয়ে বলে, ” আমার বেবি কই? প্লিজ আমি একটু আমার সন্তানকে দেখতে চাই৷”
— নির্বণ নিয়তির হাত বুকে নিয়ে, ” তারা একদম ঠিক আছে৷ আমি বলেছিলাম না কারো কোন ক্ষতি হতে দিব না।”
— মির্বণ চকিত হয়ে, ” তারা মানে কি?”
— তারা মানে আমাদের টুইন বেবি হয়েছ। একটা ছেলে একটা মেয়ে। ইশ্বর আমাদের মনের আশা পূরণ করেছে৷ আমি তাদেরকে তোমার কাছে নিয়ে আসছি৷
পাতা উল্টো দেখো, একটা গল্প লেখা
কিছু জানা কাহিনি, কিছু কিছু অজানা
গোধূলি বেলা কনে দেখার আলোতে
উলু সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে৷
ছবির মতো ছোট ঘরে, বরণ ডালায় চৌকাঠে সে৷
নির্বণ আর নিয়তি তাদের বেবির নাম আগেই ঠিক করে রেখেছিল। নিধি আর নিহানকে নির্বণ নিয়তির কাছে দেয়৷ নিয়তির একটু কষ্ট হলেও নিধি & নিহানের কপোলে ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷ নির্বণও তাদের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।
____________
সময় চলে যায় স্রোতের মতো। কারো জন্য অপেক্ষা করে না৷ দেখতে দেখতে ছয় বছর পার হয়ে গেছে। নিয়তির বাবা এই সময়ের মাঝে গত হয়ে গেছেন৷ ছোঁয়ার মা তাদের গ্রামের বাড়ি চলে এসেছেন৷ ছোঁয়ার কাকার ছেলে ছোঁয়ার মাকে নিয়ে চলে এসেছে৷
— নিধি ক্ষেপে বলে উঠে, ” দাঁড়া নিহান৷ এখন না দাঁড়ালে তোর সাথে কথা নেই৷”
— নিহান বলে উঠে, ” তুই স্বীকার কর তুই হার মেনে নিয়েছিস৷”
— নিধি মুখ গোমড়া করে চলে আসতে নিলেই নিহান নিধির সামনে এসে কান ধরে, ” প্লিজ রাগ করিস না৷ আমি আমার সব চকলেট তোকে দিয়ে দিব৷”
— নিধি মুচকি হেঁসে, ” তুই কান ধরে উঠ বস কর৷ তাহলে তোকে ক্ষমা করে দিব৷”
নিধির কথামতো নিহান কান ধরে উঠ বস শুরু করে৷ নিধি বলে উঠে, ” এই কুম্ভকর্ণ হাত বাড়া।”
নিহান হাত বাড়ালে নিধি নিহানের হাতে রাখি পড়িয়ে দেয়৷” নিহান তার সব থেকে প্রিয় ডল নিধিকে গিফট করে৷ নিধি খুশিতে নিহানকে জড়িয়ে ধরে৷
— নিধি আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” লাভ ইউ দাদা৷” আমার কথা না শুনলে তোকে আর কোনদিন রাখি পড়াবো না৷”
— ওকে। এখন থেকে তোর কথা শুনেই চলবো৷
— চল গ্রেনির কাছে।
নিধি নিহান নির্বণের মাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। নিধি তার গ্রেনির কোলে মাথা রাখে৷ নিধির সাথে সাথে নিহানও মাথা রাখে৷ নিধি একটা গান ধরে৷ যা কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি৷
ভাই সাথী মোর কত না আপন
নেয় ভুলে যাওয়ার কোন কারণ৷ (!!)
মনে মনে কবু দেবনা তো দুঃখ
হাসাবে তোমায় সারা জীবন। (!!)
রাখি বাঁধলে বোন রাখনে মান৷(!!)
“”””””” রাখি বন্ধন “””””'””
আনন্দ উল্লাসের সাথে মেতে উঠে সবাই৷ ভাই বোনের বন্ধন আত্মার বন্ধন৷
হসপিটালের করিডরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে নিয়তি৷ নিয়তির পাশেই আসে আছে নির্বণের মা৷ নিয়তির চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কতদিন থেকে কিছু খায় না৷ চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
নিয়তি এই জন্য ভয় পেয়ে আছে যে, “গতকাল রাতে বমির সাথে রক্ত এসেছে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না কি হবে? তার সাথে কিছু হলে মেনে নিতে পারবে৷ কিন্তু তার বেবির কিছু হলে মেনে নিতে পারবে না৷
— নার্স এসে বলে উঠেন, ” ম্যাম আপনাদের রিপোর্ট এসে পড়েছে। স্যার আপনাদের ডাকছন।”
রিপোর্টের কথা শুনে নিয়তি হাত পা কাঁপতে থাকে৷ সে নিজের মাঝে নেই৷ মনের ভিতরের ভয়টা আরও চেপে ধরেছে৷ সবকিছু পজিটিভ আসবে আসবে তো।
— নিয়তির কাঁধ হাত রেখে, ” কি হলো? এভাবে ভয় পেয়ে আছো কেন? তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে ? ”
— নিয়তি কেঁপে উঠে, ” হ্যাঁ মা যাচ্ছি৷ আর আমি একদম ঠিক আছি৷ আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না৷ ”
ধীরে পায়ে ডক্টরের চ্যাম্বারে প্রবেশ করেন দু’জনে৷ নিয়তি মুখ একদম ফ্যাকাশে হয়ে আছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেন তার মাঝে ভয় চেপে ধরে বসে আছে?
— নির্বণের মা বলে উঠেন, ” ডক্টর সবকিছু ঠিক আছে তো৷ কোন সমস্যা নেই তো। দেখেন কিভাবে ভয় পেয়ে আছে৷ প্রথমবার মা হতে যাচ্ছে তো৷ ”
ডক্টর নির্বণের মায়ের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে৷ এতে নিয়তির ভয়টা সত্যতে প্রমাণ হয়৷ ডক্টররা কোন কারণ ছাড়া মাথা নিচু করে না৷
— নিয়তি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে, ” ডক্টর আমার বেবি একদম ঠিক আছে তো৷ প্লিজ ডক্টর আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”
— মুখ কালো করে ডক্টর বলে উঠেন, ” দেখেন ম্যাম, আমরা ডাক্তার। আমরা রোগীর কাছ থেকে কিছু লুকাতে চাইনা৷ তবে আপনাকে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আগে৷”
— ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,” কি জানতে চান? আমি একদম ঠিক আছি৷”
— ম্যাম বমির সময় বমির সাথে কখনও ব্লাড আসতো কি?
ব্লাডের কথা শুনে নির্বণের মায়ের চোখ অনেক বড় হয়ে যায়৷ নির্বণ মা নিজেকে সামলিয়ে নেয়৷ নিয়তি বুঝতে পারে এখানে মিথ্যা কথা বললে তার সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখানো যাবে৷
— নিয়তি মাথা নিচু করে বলে উঠে, ” বমির সাথে কখনও ব্লাড আসেনি। আর আমার ঘন ঘন বমি আসে না৷ আমি প্রায় সারাদিন টক খায়৷”
— গ্রেট। আপনার রিপোর্টে রক্তশূন্যতার কথা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা চাইনা আপনি রিস্ক নিয়ে সন্তান জন্ম দেন এভিয়েশন করে ফেলেন৷
— নিয়তি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” হোয়াইট! আপনার মাথা ঠিক আছে৷ আপনি কি বলছেন এসব৷ আমি এভিয়েশন করব৷”
— ম্যাম বুঝার চেষ্টা করেন এভিয়েশন না করলে আপনার লাইফ রিস্ক হতে পারে৷ হয় মা বাঁচবে না হয় সন্তান বাঁচবে।
— নিয়তি পেটে হাত রেখে, ” আমি আমার সন্তানকে হত্যা করতে পারব না৷ নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিব তবুও আমার সন্তানের গায়ে কোন আঁচ লাগতে দিব না৷”
নিয়তি রাগ দেখিয়ে হন হন করে বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে৷
— ম্যাম আপনি বুঝার চেষ্টা করেন। সন্তান নেওয়া তার জন্য রিস্কের বিষয়৷
— নির্বণ মা কোমল হতাশা জনিত কন্ঠে বলে উঠে, ” নিয়তি বাচ্চা মানুষ৷ আমি তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো। তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললে সে সবকিছু বুঝতে পারবে।”
— থ্যাংকস ম্যাম৷ যেভাবেই হোক এভিয়েশনে উনাকে রাজি করাতে হবে৷ অলরেডি ছয় মাস চলছে৷ এর পর এভিয়েশন করা ক্ষতি কর হবে৷ এমনকি বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে৷
নির্বণের মা ডক্টরের কথা শুনে একটা বড় সড় ধাক্কা খায়৷ তিনি কখনো ভাবতে পারেনি এতটা ক্রিটিক্যাল হয়ে যাব৷
__________
নিয়তি নির্বণের পায়ের কাছে বসে বাচ্চা পোলাপানের মতো কান্না করে যাচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তিকে দাঁড় করায়৷
— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” কি হয়েছে তোমার? তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? প্লিজ আমাকে বল না৷”
নিয়তি কান্না করার কারণে কোন কথা বলতে পারছে না৷ ডক্টরের কাছ থেকে ফিরে এসে ঘরে নিজেকে বন্ধি করে রেখেছে। নির্বণ আসাতে নিয়তি ঘরের দরজা খুলে দিয়েছে।
— নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে, ” প্লিজ নিয়তি কান্না কর না৷ তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারব না৷ তোমার চোখের জল দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়৷”
— নির্বণ নিয়তির দিকে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।”
— আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনি সব সময় আমার পাশে থাকবেন তো৷
— নিয়তি হাত কষ্ট করে চেপে ধরে, “হ্যাঁ আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো৷ তোমার হাত আমি কোনদিন ছেড়ে দিব না৷”
— এভাবে আমার হাত কষ্ট করেই ধরে থাকবেন৷ আমাকে আজ একটা কথদ দিতে হবে৷
— বল কি কথা? আমি আমার জীবন দিয়ে তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো।
— নিয়তি এক বুক কষ্ট নিয়ে বলে উঠে, ” আমি বাচ্চা এভিয়েশন করবো না৷ আমি আমাদের বাচ্চাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই৷”
নিয়তির কথা শুনে নির্বণ নিয়তির হাত ছেড়ে দেয়৷ নির্বণ বুঝতে পারছে না সে কি করবে? নির্বণ নিজের হাত বুকের বাঁ পাশে রাখে৷ বুকটা চিনচিন ব্যথা শুরু করে দিয়েছে৷ নির্বণ চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷
— নিয়তি কান্না করে, ” আমার জীবন থাকতে আমি আমার বাচ্চার গায়ে কোন আঁচ লাগতে দিব না৷ ”
— বুকে পাথর জমা রেখে নিয়তির গাল ধরে কান্না করে, ” প্লিজ নিয়তি তুমি বুঝার চেষ্টা করো৷ এভাবে হয় না৷ তোমাকে আমি হারাতে পারবো না৷ আমার কাছে আর কোন শক্তি নেই৷”
— আমার কাছে আমার সন্তান আগে৷ আমি কিছুতেই আমার সন্তানকে একা হতে দিব না৷ আমি তার ঢাল হয়ে থাকবো৷ আমার ধারের কাছে কাউকে ঘেঁষতে দিব না৷
— নিয়তি আমি যতটা তোমায় ভালোবাসি ততটায় আমাদের সন্তানকে ভালোবাসি৷ আমরা পরবর্তীতে চেষ্টা করতে পারি তো।
— নিয়তি ঘৃণার সাথে বলে উঠে, ” আপনি কিনা বাবা৷ বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলতে চান ৷ আমার কিছু লাগবে না৷ আমি আমার সন্তনকে ঠিক আগলে রাখবো৷
— নির্বণ এক বুক কষ্ট নিয়ে, ” আচ্ছা নিয়তি৷ তুমি যা বলবে ঠিক তাই হবে।।তুমি যা যাও আমি তাই করে দিব৷
নিয়তি নিজের চোখের জল মুছে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। মিয়তি কিছুতেই এত বড় ধাক্কা নিতে পারছে না৷
নির্বণ অপলক দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ না চাওয়া সত্ত্বেও চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে।
নির্বণ মনে মনে বলে উঠে, ” আমি কি করে তোমায় ছাড়া থাকবো৷ তুমি ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার৷ তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া মানে মনে আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেওয়া৷ আমি এই ঘরে কার সাথে কথা বলবো? কাকে বলবো নিয়তি বুকের রোজটা ঠিক করে দাও৷ কে আমার ট্রাই বেঁধে দিবে৷ কে আমার সাথে পায়ে পা রেখে ঝগড়া করবে৷”
নির্বণ আর নিতে পারছে না৷ নির্রণের মুখ থেকে আর কিছু বের হচ্ছে না। মুখে সব কথা আটকে পড়ে যাচ্ছে৷ মাথা ঘুরতেছে৷ বুকটা চিনচিন ব্যথা করছে৷ একবার নিয়তির চাঁদ মাখা মুখের দিকে তাকাচ্ছে অন্য বার নিয়তির পেটের দিকে তাকাচ্ছে৷
নিয়তির হাত ধরে নিয়তির পাশে বসে কান্না করতে করতে নির্বণ ঘুমিয়ে পড়ে৷ তবে নির্বণ আশা ছাড়েনি যে, ” সে নিয়তিকে বুঝাতে পারবে না৷ আজ না হয় কাল ঠিক নিয়তিকে বুঝাতে সক্ষম হবে৷”
নিয়তি গা গুলিয়ে আসাতে নিয়তি কোন মতো নিজের গাড়ে শাড়ি প্যাঁচিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ তড়িঘড়ি করে নির্বণও তার পিছু পিছু ছুটে আসে৷
— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি তোমার কি হলো? এভাবে বমি করার কারণ কি? প্লিজ নিয়তি নিজেকে সামলিয়ে নাও৷ আমার খুব ভয় লাগছে৷”
আমি এখনই ডাক্তারকে ফোন করছি৷
নির্বণ চলে আসতে নিলেই তার হাত ধরে ফেলে নিয়তি৷ নির্বণের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “ব্যস্ত হতে হবে না৷ এমন সময় আমাদের বমি বমি ভাব হবেই এবং বমি আসবেই ৷ এটাই তো মা হবার আনন্দ।”
নির্বণ নিজের কষ্ট মনের মাঝে জমা রেখে নিয়তির হাত ধরে নিয়তিকে ধীরে ধীরে রুমে নিয়ে আসে৷ বিছানায় নিয়তিকে ধীরে ধীরে শুইয়ে দেয়৷ পিছন থেকে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে৷
_______
আবারও একটা নতুন দিনের সুচনা করলেন সূর্যদেব। সূর্যের তেজস্বী আলোতে আকাশের চাঁদ তারকা হার মেনে নিয়েছে। অন্ধকার আছেই বলেই দিনের এত কদর৷ নিয়তি ঘুম থেকে উঠে নির্বণকে পাশে পায় না৷ নির্বণকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায়৷ কেন এমন নেশা হয়ে গেছে নির্বণকে দেখার৷
নিয়তি মন ভার করে টিপ টিপ পায়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ ওয়াসরুম থেকে বের হতেই নির্বণ তার পথ আটকায়।
— নিয়তি ব্রু কুঁচকে বলে উঠে, ” এভাবে পথ আটকানোর কারণ কি? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
— ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ আমি মানুষ, কোন হনুমান বা উগান্ডা নয়৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আপনাকে দেখে আমার হনুমানই মনে হয়। সত্যি বলছি আপনার পিছনে যদি লেজ থাকতো একদম হনুমান দেখাতো৷ কল্পনাতেই হাসি পায়৷”
— হাসা হয়ে থাকলে এবার হাসি থামিয়ে আমার সাথে আসো৷
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ধীরে পায়ে নিয়ে আসে৷ তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে কিছু শপিং ব্যাগ তার দিকে এগিয়ে দেয়।
— নিয়তি অবাক চোখে তাকিয়ে, ” এসব কি? আর আপনি সকালে শপিং এ গিয়েছিলেন! আমার জানামতে এত সকাল বেলা শপিংমল খুলে না৷”
— কে বলেছে সকাল বেলা শপিং মল খুলে না? এটা কোন অভিধানে লেখা আছে৷ তবে আমি এসব কিছু তোমার জন্য বানিয়ে এনেছি৷ তারাতাড়ি খুলে দেখে বল তো কেমন হয়েছে?
নিয়তি খুব যত্ন সহকারে শপিং ব্যাগ খুলে। নির্বণ নিয়তির জন্য রাতে পড়া নাইটিং মতো ঠিলেঠালা পোশাক নিয়ে এসেছে৷
— নিয়তি ঠিলে ঠালা পোশাক নির্বণের সামনে ধরে,” এসব কি? এসব দিয়ে আমি কি করব? আমি এমন মোটা মানুষ৷ আমার মতো আস্ত তিনটা লোক এই পোশাকের মাঝে ঢুকতে পারবে৷”
— এটার নাম মেক্সি৷ প্রেগন্যান্সির সময় মায়ের এমন পোশাক পড়ে৷ এতে মা ও বাচ্চা উভয়েই ভালো থাকে৷
— কি! আমি এখন মেক্সি পড়বো৷ আমার জানা মতো মেক্সি গ্রাউনের মতো৷ কিন্তু এটা দেখে মনে হচ্ছে হরর মুভির ভুতের পোশাক মনে হচ্ছে৷
— সে যাই হোক৷ আজ থেকে তোমাকে এসব পোশাক পড়তে হবে৷ ডক্টর তোমাকে এসব পোশাক পড়ার জন্যই বলেছে৷
________
— “নিয়তি তোমাকে আগামীকাল ডাক্টরের কাছে নিয়ে যাব। সকাল সকাল রেডি থেকো৷” নির্বণের মা কাঁথা সেলাই করতে করতে বলে উঠেন।
— মা আমি তো কয়েকদিন আগেই ডক্টর দেখিয়ে আসছি৷ এখন আবার যেতে হবে৷
— হ্যাঁ আমার যখন মন বলবে তখনই তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব৷ আমি কোন রিস্ক নিতে চাইনা৷
— মা আপনি শুধু শুধু টেনশন করছেন৷ আমার কিছু হবে না৷ আমি একদম ঠিক আছি৷
— নিয়তি দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমি তোমার থেকে এই বিষয়ে পারদর্শী বেশি৷ তুমি তো এর আগে কোন দিন মা হওনি। নাকি এর আগেও মা হয়েছো?”
— নিয়তি মাথা নিচু করে, ” না মানে আমি বলতে চেয়েছিলাম কয়েকদিন পর পর না গেলে হয় না৷ প্রতি এক মাস পর পর চেক আপ করলেই তো হতো৷”
— নিয়তিকে কাছে বসিয়ে, ” না সোনা মা হওয়া এতটা সহজ নয়৷ গর্ভকালীন অনেক সমস্যা হতে পারে৷ রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে৷ শরীর কখন খারাপ হয় জানা নেই৷ আমরা তো বমি থেকে দুর্বলতা ধরে নেয়৷”
— নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে, ” আজ যদি আমার মা বেঁচে থাকতো তাহলে আমার খেয়াল এভাবেই রাখতো।”
— কড়া গলায় বলে উঠে, ” একদম কাঁদবে না৷ কে বলেছে তোমার মা বেঁচে নেই? আমিই তোমার মা৷ আমি তোমাকে বউমা হিসেবে দেখি না। আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখি৷”
— চোখের জল মুছে, ” আচ্ছা মা কাঁথা সেলাই করে কি হবে? ”
— অবাক চোখে নিয়তির দিকে তাকিয়ে, “কি হবে! মানে কি? আমি এসব আমার নাতি বা নাতনিকে গিফট করবো৷ গ্রেনির হাতের প্রথম ছোঁয়া লাগবে তার দেহে।”
— নিয়তি মুচকি হেঁসে বলে উঠে, “বুঝতে পেরেছি মা৷”
— ছোঁয়ার মা বলে উঠে, ” আমি কিন্তু টুইন বেবি চাই৷ চাই মানে কি, আমি তো এটাই বিশ্বাস করি আমার নিয়তির টুইন বেবি হবে৷”
মন খারাপ করে, ” ছোঁয়া চলে যাওয়ার পর নিয়তিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি৷”
— নির্বণের মা বলে উঠেন, ” একদম মন খারাপ করবেন না৷ আমরা সব সময় আপনার পাশে আছি৷ আর সারাজীবন আপনার পাশে থাকব৷”
— ছোঁয়ার ভাঙা গলায় বলে উঠেন, ” ইশ্বর আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিচ্ছেন৷ প্রথমে আমার কাছ থেকে আমার রঙ কেঁড়ে নিলেন৷ এখন হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পেয়েও পেলাম না৷ আমি কি অন্যায় করেছি, যার জন্য ইশ্বর আমাকে এত শাস্তি দিচ্ছেন৷”
“আমি জানি ছোঁয়া আপনাদের সাথে অনেক অন্যায় করেছে৷ তনুও আপনারা আমায় মাথায় করে রেখেছেন৷ কোনদিন আপনাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না৷”
— আমাদের কাছে আপনি কোন ফেলনা নয়৷ আপনি আমাদের পরিবারের একটা সদস্য। পরিবারে সবাই আত্মার বন্ধনে আটকে পড়ে৷ আপনার সাথে এখন আমাদের আত্নার সম্পর্ক।
— নিয়তি বলে উঠে, ” আচ্ছা মা আমি রুমে যাচ্ছি, আপনারা গল্প করেন৷”
— নির্বণের মা বলে উঠে, ” ধীরে ধীরে যাবে৷ সব সময় নিজের খেয়াল রাখবে?” কাকে বলছি আমি? যে নিজের খেয়াল রাখেই না৷”
অরিনকে ঢেকে এনে বলে উঠেন, ” নিয়তিকে রুমে পৌঁছে দিয়ে আয়৷”
— নিয়তি বলে উঠে, ” মা আমি একা যেতে পারবো৷”
— অরিন নিয়তির হাত ধরে, ” ম্যাম আপনি একা যেতে পারবেন না৷ আমি আপনাকে দিয়ে আসছি৷”
নিয়তি আর কিছু বলতে পারল না৷ নির্বণ & ছোঁয়ার মা চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তাদের হাতের পুতুলের মতো নিয়তি অরিনের সাথে চলে আসে ।
__________
— নিয়তি বসে বসে তেঁতুলের আচার খাচ্ছে ৷ পিছন থেকে নির্বণ নিয়তির চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরে৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, “আপনি আমাকে বোকা বানাতে পারবেন না। আমি আপনার উপস্থিতি বুঝতে পারি৷”
— নির্বণ মুখ গোমড়া করে, ” দিলে তো মনটা ভেঙে৷ কই বলবে বাঁচাও বাঁচাও? আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে৷ বা ভয়ে কাঁদু হয়ে যাবে।”
“তা না বলে আমি আপনার উপস্থিত বুঝতে পারি৷” ভেংচি কেটে বলে উঠে।
— না আমি চোখ বন্ধ করবো না৷ কি সারপ্রাইজ আছে আমাকে আগে বলেন?
— ব্রু নাচিয়ে, “না বলা যাবে না৷ সারপ্রাইজ কোনদিন কাউকে বলা যায় না৷”
— আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করে নিচ্ছি৷ আপনার সারপ্রাইজ দেখার জন্য আমার মন আকুল হয়ে আছে৷
নিয়তি চোখ বন্ধ করা নাম করে পিন পিন করে চোখ খুলে সব দেখছে৷ নির্বণ তার পকেট থেকে একটা রিং এর বক্স বের করে৷ নিয়তির সামনে বক্স রেখে বলে উঠে , “এবার আঁখি মেলে তাকায়৷”
— অজানার ভান করে অবাক হয়ে বলে উঠে, ” ওয়াও ডায়মন্ডের রিং! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না৷ আমার হাতে একটা চিমটি কাটেন। ”
— তোমার পছন্দ হয়েছে! তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও৷ আমি নিজ হাতে আমার আঙ্গুলে পড়িয়ে দিব৷
নির্বণ নিয়তির হাতে ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দেয়৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” সারপ্রাইজ আপনার দেখার আগেই আমি দেখে ফেলেছি৷ এভাবে না বললে আপনি রাগ করতেন৷ তাই এভাবে একটু অভিনয় করে বললাম৷”
নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷ নির্বণ বলে উঠে, ” আমাদের ছোট একটা রাজকন্যা হবে৷”
— নিয়তি নির্বণের কাঁধে শুরশুরি দিয়ে, ” না আমাদের একটা রাজপুত্র হবে। আমাদের রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে আমাদের মন খারাপ হলে মন ভালো করবে৷”
— নির্বণ চোখ বড় করে, “না আমাদের রাজ কন্যা হবে৷”
— নিয়তি নির্বণের থেকে চোখ আরও বড় করে, “না আমাদের রাজপুত্র হবে৷ ”
— আচ্ছা মেনে নিলাম আমাদের রাজপুত্র হবে৷
— আচ্ছা আমিও মেনে নিলাম আমাদের রাজকন্যা হবে।
নিয়তি নির্বণ দু”জনেই খুশিতে মেতে উঠে। নির্বণ বলে উঠে, ” তোমার রাজপুত্রের নাম কি রাখবে?”
— নিয়তি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠে, ” আমার রাজপুত্রের নাম রাখবো ‘নিহান’। আমার খুব প্রিয় নাম নিহান৷”
আপনার রাজকন্যার নাম কি রাখবেন?
— নিয়তির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে, “আমার রাজকন্যার নাম হবে নিধি। ”
— বাহ্ খুব সুন্দর নাম৷ নিধি নামটা আমারও খুব পছন্দের৷
— তুমি কি জানো?
— নিয়তি অবাক হয়ে, ” আমি কি জানবো?”
— আমাদের টুইন বেবি হবে৷ আমাদের মনের আশা পূরণ করবে৷ একটা ছেলে, একটা মেয়ে৷
— নির্বণ কাজে কনসোনেন্ট করেই বলে উঠে, ” আমি অফিসে কেন যাব? রোজ রোজ অফিসে যেতে ভালো লাগে না৷”
— নিয়তি কিছুটা উঁচু স্বরে, ” বললেই হলো অফিসে যাবেন না৷ এইতো কিছুদিন আগে অনেক অফিস মিস করলেন৷ সুইজারল্যান্ডে ঘুরে আসলাম, তারপর ছোঁয়া।”
— “সুইটহার্ট তুমি কি আমায় একটুও ভালোবাসাে না? সারা দিন স্বামীকে দিয়ে কাজ করাতে মন চাই৷” ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠে।
— ভেংচি কেটে, ” এ্যা শখ কত? আসছে এখানে রোমাঞ্চকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে৷” কোনদিন হবে না, রোমাঞ্চকর পরিবেশ।
— প্যাঁচার মতো মুখ করে, ” তুমি সব সময় আমাকে ইগনোর কেন করো?”
— আমি আপনাকে কখন ইগনোর করলাম! আপনার মাথা পুরো গেছে৷ একে কেউ ধরে বেঁধে বাংলাদেশের পাবনা পাঠিয়ে দাও৷
— নিয়তির দিকে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” আমাকে পাবনায় কেন পাঠাবে? কি আছে পাবনায়?”
— আমাদের দেশে রাচি, আর বাংলাদেশের পাবনায় পাবনায় মানসিক হসপিটাল আছে৷ সেখানে আপনার মতো পাগলদের চিকিৎসা করানো হয়৷
— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” কি আমি পাগল? আমি পাগল হলে তুমি পাগলী।”
“”পাগলী তোর মনের আশায় কাটে না দিন রাত৷”” এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে।
— নিয়তি মাথা নিচু করে হাতের উপর আঙ্গুল দিয়ে হিসাব করে, “আপনি একটা এনাকন্ডা। সরি আস্ত একটা হাতি….”
নির্বণ নিয়তিকে ভয় দেখানোর জন্য তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ নিয়তি আঁখি উপরে তুলতেই নির্বণকে খুব কাছে দেখতে পাই৷ নিয়তি সরে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে৷
— নিয়তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে, ” আপনি কি করতে চাইছেন? বিশ্বাস করেন আমি আর কিছু বলবো না৷ আমার মতো ভালো মেয়ে এই পৃথিবীতে আর খুঁজে পাবেন না৷”
— তুমি আমাকে কি বলে গালি দিচ্ছিলে সুইটহার্ট? আর একবার দাও না৷ তোমার প্রতিটি গালি আমার কানে ভালোবাসার বার্তা নিয়ে আসে।
— আপনি সত্যি একটা কালপিট। দূরে সরে দাঁড়ান। আমার কেমন জানি লাগছে।
— দুষ্টু হাসি দিয়ে, “কেমন লাগছে? আমার সাথে বাসর করতে মন চাচ্ছে। এত কিছু লাগবে না৷ আজ সানডে। তাই একটা লিপ কিস দিলেই চলবে৷”
— কিস তো দূরের কথা৷ কাছেও ঘেঁষতে দিব না৷ কাছে আসলে খুন করে ফেলবো৷
নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে নিয়তি দৌড়ে নির্বণের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু নিয়তির মাথা সেন্টার হয়ে যায়। তাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরতে শুরু করে ৷ নিয়তি মাথায় হাত রেখে সেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ ধরে ফেলে।
______
নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” এখানে দাঁড়িয়ে মুভির শুটিং দেখে যাচ্ছো৷ কেউ গাড়ি বের করতে বলো। নিয়তিকে এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
— নির্বণের মা নির্বণের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠেন, “প্লিজ নির্বণ শান্ত হও৷ আমি ডক্টরকে ফোন করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন ” অন দ্যা ওয়ে।” আমরা বরং নিয়তির সেন্স ফেরানোর চেষ্টা করি৷”
— কান্না জড়িত কন্ঠে, ” কিন্তু মা নিয়তি কিছুতেই আঁখি মেলে তাকাচ্ছে না৷ আমি তাকে অনেকে ডেকেছি৷ কিন্তু কোন সাড়া দিচ্ছে না৷ প্লিজ কিছু একটা করো। আমার নিয়তিকে ভালো করে দাও।”
— অরিন গ্লাস এগিয়ে দিয়ে, স্যার ম্যামের চোখে মুখে জল ছিঁটিয়ে দেন৷ ম্যামের জ্ঞান ফিরে আসবে৷ ”
নির্বণ অরিনের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে নিয়তির চোখে মুখে জল ছিঁটিয়ে দেয়৷ নিয়তি পিন পিন করে চোখ খুলে। তবে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না৷ সবকিছু ঝাপসা দেখাচ্ছে। কারো কথা তেমন কানে আসছে না৷
— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, “নিয়তি তুমি ঠিক আছো তো?”
— নিয়তি নির্বণের হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে জবার দেয় নিয়তির ঠিক আছে। তখনই ডাক্টর এসে হাজির৷ সবাইকে সাইটে সরিয়ে দিয়ে ডক্টর নিয়তির চেক আপ করেন৷ সকলের মুখে টান টান উত্তেজনা। নিয়তির বাবা রুমের এক সাইট থেকে অন্য সাইডে পায়েচারী করছে৷
— ডক্টর মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” আমি এখন কিছু বলবো না৷ তবে একটা বলতে পারি নিয়তি একদম ঠিক আছে৷”
— নির্বণ রাগী গলায় বলে উঠে, ” ডক্টর আঙ্কেল নিয়তি ঠিক আছে, তাহলে সেন্স হারিয়ে ফেললো কিভাবে? প্লিজ বলেন নিয়তির কি হয়েছে?”
— নির্বণের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে, ” বলতে পারি একটা শর্তে? আমার শর্তে রাজি হলে বলবো।”
— আঙ্কেল আপনি যা চান তাই দিব৷ প্লিজ নিয়তিকে সুস্থ করে দেয়৷
— নির্বণের কাঁধে হাত রেখে, ” নিয়তির কিছু হয়নি৷ এমন সময় এমন একটু হয়৷”
— এ সময় মানে কোন সময়৷ প্লিজ আঙ্কেল আমি এখন কোন ধাঁধার সমাধান করতে পারব না৷
— অরিন যাও সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসো৷
নির্বণের মায়ের দিকে তাকিয়ে, ” নির্বণের মায়ের দিকে তাকিয়ে, ” মিসেস চৌধুরী আপনি গ্রেনি হতে চলছেন৷ আর নির্বণ তুমি বাবা হতে চলেছো।”
পাতা উল্টে দেখো, একটা গল্প লেখা।
কিছু জানা কাহিনি, কিছু কিছু অজানা
গোধূলি বেলায় কনে দেখার আলোতে,
উলু সানাই এ সাত পাকে বাঁধে যে৷
ছবির মতো ছোট্ট ঘরে, বরণ ডালায় সাজালো কে?
তুমি আমি দু’জনে, রয়েছি হৃদয়ের বাঁধনে
“”””’সাত পাকে বাঁধা “”””
সকলের মুখে হাসি। খুশিতে নির্বণের চোখে জল এসে পড়েছে৷ নির্বণের স্বপ্ন আজ পূরণ হতে চলছে। নির্বণ লাফ দিয়ে বলে উঠে, ” ইয়া হু,, হিপ হিপ হুররে নিয়তি৷ আমি বাবা হবো।”
__________
নিয়তি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নিলেই কোথা থেকে নির্বণ যেন উঠে আসে? নির্বণ এভাবে আসলে দেখে নিয়তি ঘাবড়ে যায়৷
— নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “তোমাকে নিচে নামতে কে বলেছে? কি লাগবে আমাকে বল আমি নিয়ে আসছি?”
— নিয়তি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে, ” আমি রুমে বসে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে গেছি৷ আমার ভালো লাগে না এখন ওই রুমে।”
— তোমাকে ওই রুমেই থাকতে হবে৷ সিঁড়ি বেয়ে তোমাকে নিচে নামতে হবে না৷ আমি তোমাকে নিচে নামিয়ে দিচ্ছি৷
— আমার কথা বুঝার জন্য তোমাকে আরও সাত বার জন্ম নিতে হবে৷ যদি আমার বেবি ব্যথা পাই আমি তোমাকে ছাড়বো না৷
— মুখ ফ্যাকাসে করে, “আরে কিছু হবে না৷ আমি তো মাত্র ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি সব কিছু করতে পারব৷ আমাকে নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা করতে হবে না৷ ”
নির্বণ নিয়তির মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলে উঠে, ” দুই লাইন বেশি বুঝার কোন দরকার নেই৷ ডক্টর বলেছে তোমাকে রেস্ট নিতে৷ সো তুমি বসে বসে রেস্ট নিবে৷”
— পারবা না আমি বসে বসে রেস্ট নিতে৷ বসে থাকতে থাকতে আমি গোল মোলু হয়ে যাচ্ছি৷ পরে তো আমি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে যাব৷
— নিয়তির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” একদম বাজে কথা বলবে না৷ তুমি মোটু হও বা চিকন হও আমার কোন সমস্যা নেই৷ তুমি আমারই থাকবে সারা জীবন। আর হ্যাঁ ডায়বেটিস তোমার ধারের কাছেও আসতে দিবো না৷
নিয়তি কিছু বলার আগেই নির্বণ নিয়তিকে পাঁজা কোলায় তুলে নিয়ে৷ নিয়তির চোখের দিকে তাকিয়ে নিয়তিকে চোখ টিপল দেয়৷ নিয়তি লজ্জায় নির্বণের বুকে লুখ লুকায়৷
নির্বণ নিয়তিকে দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তিকে নিয়ে এক পা করে সিঁড়ি দিয়ে নেনে যাচ্ছে নির্বণ৷ নিয়তিকে সোফায় বসিয়ে তার পাশে বসে পড়ে নির্বণ৷
— সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” আপনার দেখে ম্যাম আপনাদের ছাড়া একদম থাকতে পারছিল না৷ তাই বাধ্য হয়ে আপনাদের কাছে নিয়ে আসলাম৷
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে বসে সবার সাথে গল্প গুজবে মেতে উঠে৷ সকলের সাথে হাসি তামাশা করে দুপুরে গাড়িয়ে রাত্রি হয়ে যায়। নির্বণ নিয়তিরকে খাবার খাইয়ে আবার পাঁজা কোলা করে রুমে নিয়ে আসে৷
__________
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি কি আমাকে একটিও ভালোভাবে কথা বলার সুযোগ দিবেন না৷ সব সময় আমার নামের দোষ ধরতেই থাকেন৷”
নিয়তির কোন কথায় পাত্তা না দিয়ে নির্বণ নিয়তির দিকে একটা শাড়ি বাড়িয়ে দেয়। নিয়তির চোখ রসে গোল্লায় পরিণত হয়ে। নিয়তি বুঝতে পারছে না নির্বণ কি করতে চাই?
— নিয়তি বিষ্মণ হয়ে বলে উঠে, ” আমি রাতে শাড়ি দিয়ে কি করব? আমি এই পোশাকে দিব্যি আছি৷ আমাকে নিয়ে এভার ভাবা বন্ধ করেন৷ সারাদিন শুধু আমাকে নিয়েই ভেবে যাচ্ছেন৷ আপনার কি এখন কোন কাজ নেই?”
— নিয়তির কোলে মাথা রেখে, ” আমার কোন কাজ নেই এখন৷ আমি অফিসে বলে দিয়েছি আমি অফিসে এখন আসতে পারব না৷ আমি সব কাজ ভিডিও কনফারেন্সে করবো।”
— কিন্তু কেন? আমি তো ঠিক আছি৷ আপনি কাজে মন দেয়৷
— সুইটহার্ট আমার কাছে তুমিই সব। তোমার থেকে আমার কাজ বড় নয়৷ আর হ্যাঁ কোন কথা না বলে শাড়িটা পড়ে আসো।
— আপনি তো জানেন, “আমি ভালোভাবে শাড়ি পড়তে পারি না৷” যতদিন শাড়ি পড়েছি ততদিন আমি ইউ টিউব দেখে পড়েছে। তার উপর বেল্ট লাগিয়ে পড়েছি৷ এখন বেল্ট লাগানো সম্ভব নয়৷
— নিয়তি কোল থেকে মাথা তুলে, ” কোন চিন্তা করতে হবে না৷ এখন তোমাকে এমন টাইট শক্ত পোশাক পড়তে দিতে পারি না৷ তোমাকে আমি শাড়ি পড়িয়ে দিব৷”
“জেনেভা শহরটি জেনেভা লেকের জন্য বিখ্যাত। জেনেভার বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী জেনেভা লেক৷ এখানে এসেছি আর জেনেভা লোক দেখবো না সেটা কখনো কি হতে পারে? চল আজ আমরা জেনেভার লেকে ঘুরে আসবো৷” নির্বণ নিয়তিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।
— আমার জানা মতে জেনেভা লেক রাতের বেলায় বেশি জমকালো হয়ে উঠে। কিন্তু আমরা দিনের বেলায় যাব৷
— হ্যাঁ রাতের বেলায় জমকালো হয়ে উঠে ঠিক৷ কিন্তু তুমি রাতের বেলায় লেকের চারিপাশ ঘুরতে পারবে। তুমি কোন নৌকা ভ্রমণ করতে পারবে না৷
— নিয়তি অসহায় দৃষ্টিতে বলে উঠে, ” সেখানে না গেলে হয় না৷ আমি নদীতে ভয় পায়৷
— জেনেভার সৌন্দর্য ভেনেভা লেককে নিয়ে। সমুদ্রের মাঝে ভয় পাওনি৷ এখন লেকে ভয় পাবে৷
নিয়তি না চাওয়া সত্ত্বেও নির্বণ নিয়তিকে জোর করে জেনেভার লেকে নিয়ে যায়৷ নিয়তি এখানে এসেই চোখ আকাশ পানে করে রাখে৷ জেনেভা লোক বৃহত্তর দ্বিতীয় পর্যটন কেন্দ্র। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এখানে দর্শনের জন্য উপযুক্ত সময়৷ তাছাড়া সারা বছর এখানে আসা যাওয়া চলে।
জেনেভার লেকের ঘাটে বাঁধা আছে ছোট ছোট অনেক ডিঙ্গি নৌকা। যা দিয়ে দুই জন প্রেমিক প্রেমিকা জেনেভা শহরে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবে। লেকের দুই পাশ দিয়ে রয়েছে অনেক শপিং মল। স্বচ্ছ জলে শপিং মনের প্রতিচ্ছবি তাজমহলের মতো ফুটে উঠেছে।
— নিয়তি আনন্দের সাথে বলে উঠে, “আমি নৌকায় উঠবো।”
— অবশ্যই আমরা নৌকায় উঠবো৷ নৌকায় না উঠলে চলে কি? এখানে নৌকা দিয়ে ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখা যায়৷ জলের সাথে বন্ধুত্ব করা যায়৷
— অ আচ্ছা৷ তাহলে তারাতাড়ি চলেন৷ কিন্তু একটা শর্ত আছে৷
— নির্বণ চকিত চোখে, ” তুফান মেইল তোমার আবার কি শর্ত?”
— ডিঙি নৌকায় আমার খুব ভয় লাগে।আমাকে ধরে রাখতে হবে৷ আমার হাত সব সময় ধরে থাকতে হবে৷
নিয়তিকে নিয়ে নির্বণ একটা নৌকা দুই ঘন্টার জন্য হায়ার করে নদীর মাঝে ঘুরতে চলে যায়৷ আকাশের মিষ্টি সোনালী রোদ নদীর জলে ঝলমল করছে৷ দেখে মনটা খুব ভয়ে যায়। নিয়তি নির্বণকে মাঝে মাঝে জল দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে৷ নির্বণও নিয়তিকে মাঝে মাঝে জল দিচ্ছে। এরই মাঝে মনে পড়ে যায় ছোঁয়ার কথা৷ আজ যদি নিয়তির জায়গায় ছোঁয়া থাকতো৷ তাহলে আমাদের হানিমুনটা অন্যরকম হতো৷ মন খারাপ করে নির্বণ নৌকা ঘুরাতে বলে উঠে।
— নিয়তি নির্বণকে বলে উঠে, “এখনো দুই ঘন্টা হয়নি। তাহলে চলে যাবেন কেন? সম্পুর্ন শহর ঘুরে দেখা হয়নি৷
— নির্বণ মন খারাপ করে, ” আসলে ছোঁয়ার কথা মনে পড়ে গেল৷ তার সাথেও মাঝে মাঝে নৌকা দিয়ে ভ্রমণ করতাম৷”
— সময় কারো জন্য থেমে থাকে না৷ আপনি শুধু শুধু মন খারাপ করেন কেন? সৃষ্টি কর্তা মানুষের কর্মফল পৃথিবীতেই দিয়ে যাবে। কারো জন্য মন খারাপ করবেন না৷ আপনি তো নিজে থেকে ছোঁয়াকে ছেড়ে দেননি৷ ছোঁয়া আপনাকে ধোঁকা দিয়েছে৷ আর কখনও ছোঁয়ার নাম মুখে নিয়ে আসবেন না৷
— নির্বণ ডেভিল হাসি দিয়ে, ” আমি আর কখনও মন খারাপ করবো না৷ এই জন্য তোমাকে কিছু করতে হবে৷
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” আমাকে কি করতে হবে? আমি এখন আপনার রাগ ভাঙার কারণ হয়ে দাঁড়াবো৷”
— “সুইটহার্ট এভাবে বলতে নেই৷ তুমিই তো আমার একমাত্র বউ৷ আমার একটা নয় দুইটা নয়৷ আমার একটা মাত্র বউ৷” আহ্লাদী স্বরে।
— বিরক্তি স্বরে, “আমায় কি করতে হবে?”
— নির্বণের গালে হাত দিয়ে, ” তেমন কিছু না৷ শুধু একটা লাভ ব্রাইট দিতে হবে।
— আমি পারবো না৷ সামনে তাকিয়ে দেখেন জেলে নৌকা চালাচ্ছে।
— ওকে আমিও কারো সাথে কথা বলবো না৷ এর পর যেন আমার কোন দোষ না হয়৷
— নির্বণ উল্টো দিক হয়ে ঘুরে বসে৷ নিয়তি হাজার ডাকার পরও নির্বণ কোন রেসস্পন্স করে নি৷ নিয়তি এক প্রকার বাধ্য হয়ে নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে নির্বণের গালে টুপ করে একটা লাভ ব্রাইট দিয়ে দেয়৷
নির্বণ ডিঙি নৌকা থেকে একটা কাগজের ফুল নিয়ে নিয়তির কানে গুঁজে দেয়৷
নৌকায় করে নির্বণ নিয়তি জেনেভার লেকে ঘুরে ঘুরে দেখে৷ সাথে বিভিন্ন ধরনের স্মৃতি করে রেখে দেয়। শুধু নির্বণ আর নিয়তিই যায়নি৷ তাদের সাথে একটা ক্যামেরাম্যানও ছিল।
নৌকা ভ্রমণের পর জেনেভার বুটানিক্যাল গার্ডেনে চলে আসে৷ নিয়তি এমন সবুজের সমাহার দেখে খুব খুশি৷ মনে হচ্ছে সবুজের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে৷ যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির রূপ দেখলেই মন ভয়ে যায়৷ পৃথিবীর প্রায় ১৪,০০০ হাজারও বেশি প্রজাতির গাছ এখানে রয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা এসব গাছ থেকে অনেক মহা ওষুধ উৎপন্ন করেন৷
— নিয়তি দুই হাত মিলিয়ে, “ওয়াও খুব সুন্দর জায়গা৷”
— হুম সুন্দর। আর প্রতিটি গাছের পিক তুলে নাও৷ সাথে বৈজ্ঞানিক নামও দেওয়া আছে৷ শিক্ষার্থী এখানে এসে যেন শিক্ষা গ্রহন করতে পারে।
— আরে রাখেন আপনার শিক্ষা। সব দেশের সরকার শিক্ষার মাঝে লগ ডাউন দিয়েছেন। তা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না৷ শিক্ষার আলো এখন শীতের দিনে ল্যামপোস্টের আলোর মতো নিবু নিবু হয়ে যাচ্ছে৷
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে প্রায় হরেক রকমের প্রজাতির গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়৷ নিয়তির চোখ শুধু নির্বণকে দেখে যাচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তিকে এতটা ভালোবাসা দিবে নিয়তি কোনদিন ভাবতেও পারেনি৷
ঘুরাঘুরি শেষ করে তারা দুপুরের খাবার সন্ধায় খায়৷ খাবার শেষে নিয়তি ক্যাফেতেই বসে আছে৷ সে এক পাও নড়ছে না৷ নির্বণের কথা নিয়তির কান অব্ধি যাচ্ছে না৷
— নির্বণ কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” নিয়তি আর ইউ ওকে। কি হলো তোমার? এভাবে অন্য মনস্ক হয়ে বসে আছো কেন?”
— আমার আর হাঁটতে মন চাচ্ছে না৷ বুটানিক্যাল গার্ডনে হেঁটে আমার পায়ের ১২ টা বেজে গেছে।
— নিয়তি এসব বললে চলবে না৷ আমাদের অলরেডি চারদিন চলে গেছে৷ আমাদের হাতে মাত্র একটা দিন আছে৷ আমরা এখানো সম্পুর্ন ঘুরে দেখতে পারলাম না৷
— নিয়তি কাঁদো কাঁদো স্বরে, ” আপনার পা ব্যথা করে না৷ আমি আর হাঁটতে পারব না৷ আমি এখন হোটেলে ফিরে যাব৷”
— আচ্ছা আমরা এখন হোটেলে ফিরে যাব৷
— হোটেলে ফিরে যাওয়ার কথা শুনে নিয়তি মুখে হাসি রেখা টেনে, ” চলেন তাহলে আর লেট করতে পারবো না। ”
— নির্বণ চোখ বড় করে, ” তার মানে তুমি ঠিক আছো।”
— ইয়া আমি ঠিক আছি।
নিয়তি নিজের ফোন নিয়ে আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তির পিছু পিছু। নির্বণ মনে মনে বলে উঠে, “নিয়তি তুমি আমাকে গাধা বানালে। এখন দেখো আমি তোমাকে কি বানায়?”
— নির্বণ পিছন থেকে বলে উঠে, ” তুমি সিউর তো তুমি আর কোথাও যাবে না৷ সোজা হোটেলে ফিরে যাবে।”
— নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” হ্যাঁ আমি তো ক্যাফেতে তাই বললাম। আমি হোটেলে ফিরে যাব৷
— বাংলার পাঁচের মতোন মুখ করে, ” আমি চেয়েছিলাম পরিবারের সবার জন্য কিছু কিনা কাটা করতে৷ আসলে আগামীকাল রাতেই তো আমাদের ফিরে যেতে হবে৷”
— ইয়া, আমি তো একদম ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি এখন তাহলে সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে যেতে যান। তারাতাড়ি কিছুর আয়োজন করেন৷ এই জন্যই তো আমি ফিরে যেতে চাইছি৷
— আমরা তো এখান থেকেই কিছু শপিং করে নিতে পারি৷ বার্ণ শহর আগামীকাল ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে৷ আর এখান থেকে হোটেলে ফিরে শপিং করা ঠিক হবে না৷
— তাহলে দেরি না করে চলেন শপিং মলে৷
— আমরা শপিং মল থেকে শপিং করব না৷ আমরা জেনেভার লেক থেকে শপিং করব৷
— নিয়তি ব্রু কুঁচকে, ” আপনি এখন আবার নৌকায় উঠতে চাইবে৷”
— নিয়তি তুমি ভুল ভাবছো। রাতের বেলায় নৌকা চলে না৷ তখন নৌকার মাঝে বসে বসে জাস্ট হালকা জাতীয় খাবার খাওয়া যায়।
— বুঝতে পেরেছি,চলেন তাহলে৷ এখন আর দেরি করতে চাইনা৷
নিয়তি লেকের এসে খুব খুশি। চারিদিকে বাহারি রকমের লাইটিং করা৷ লেকের ধারে বসেছে ছোট ছোট শপিং মল। মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস এখান থেকে কিনে নিচ্ছে৷
নির্বণ নিয়তিকে একটা ছোট দোকানে নিয়ে যায়৷ যে দোকানে ঝিনুক দিয়ে অসাধারণ কাজ চলছে৷ নির্বণ একটা ঝিনুকের মালা নিলে নিয়তির গলায় পড়িয়ে দেয়। ঝিনুকের চুরি, পায়েল নিয়তিকে কিনে দেয়৷ শুধু তাই নয়৷ ঝিনুকের কিছু শু-পিচও কিনে নেয়৷
— নিয়তি চকলেট খাচ্ছে আর হেঁটে হেঁটে লেকের চারিপাশ দেখে যাচ্ছে৷ রাতের বেলায় এতটা জমকালো হয়ে উঠে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারত না।
নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে একটা শপিং মলে নিয়ে যায়৷ সেখান থেকে পরিবারের সকলের জন্য কিছু পোশাক কিনে নেয়৷
শপিং করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়৷ যার ফলে দ্রুত গতির গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে যায়।
— নিয়তি এখন আর কোন উপায় নেই৷ টোটো করে যেতে হবে, না হয় পাইক্যা করে যেতে হবে।
— এখন আপনি পাইক্যা করে যাবেন৷ তাহলে হোটেলে পৌঁছতে পৌঁছতে সকাল হয়ে যাবে।
— তাহলে তো ভালোই হয়৷ সারা রাত পাইক্যায় বসে তোমার সাথে প্রেম আলাপন বলতে পারব৷
— আপনি তো আগে গোমড়া মুখু ছিলেন৷ কথা বলতে পারতেন না৷ তাহলে এখন এত রোমান্স আসছে কোথা থেকে।
নির্বণ যদি চেষ্টা করত দ্রুত গতির গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারত৷ কিন্তু ইচ্ছা করেই পাইক্যার ব্যবস্থা করে৷ দুই জনে পাইক্যায় বসে আছে৷ ঝাঁকি খাচ্ছে দু’জনের৷ নিয়তি বার বার রাগি দৃষ্টিতে নির্বণের দিকে তাকাচ্ছে৷ নির্বণের দিকে যতবারই তাকায় নিয়তি ততবারই নির্বণ নিয়তিকে একটা কিস করে৷
__________
নিয়তি নির্বণের খুঁচা খুঁচা দাঁড়ির স্পর্শে মাতু হারা কিশোর হয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি হাসি আটকানোর জন্য নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷
চলবে….
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৮
#অধির_রায়
নিয়তি নির্বণের খুঁচা খুঁচা দাঁড়ির স্পর্শে মাতু হারা কিশোরী হয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি তার হাসি আটকানোর জন্য নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ হাসি থামতেই নির্বণের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷
— লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে উঠে, “আপনি সাজ সকাল বেলা কি শুরু করে দিয়েছেন? সারা রাত পাইক্যা করে যাতায়াত করে আমি বড়ই ক্লান্ত৷”
— নির্বণ দুষ্টু হাসি দিয়ে, ” কেন ভালো লাগেনি? রাতের আকাশের তাঁরা মেলার সাথে কথা বলে বলে বার্ন শহরে ফিরে আসলে?”
— আপনার আকাশের তাঁরা আপনি দেখলেই ভালো হতো? আপনি ইচ্ছা করেই আমাকে পাইক্যায় করে নিয়ে এসেছেন৷ আপনি চাইলে টোটো বা কার হায়ার করতে পারতেন৷
— নিয়তিকে কাছে টেনে, ” কার হায়ার করে এখানে আসলে, আমি আমার বউয়ের চাঁদ পানা মুখটা দেখতাম কিভাবে?”
— এক রাশ বিরক্তি নিয়ে, ” আমাকে ঘুমাতে দেন। রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি৷”
— নিয়তির চুলে মুখ লুকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” সারা রাত আমার বুকে ঘুমিয়ে ছিল কে? মেবি শেওড়া গাছের প্রেত্নী।”
— নিয়তি নির্বণের চোখে চোখ রেখে,” দেখেন আপনি কিন্তু দিনে দিনে আমাকে অপমান করে যাচ্ছেন৷ কই ভালোবেসে কাছে টেনে ঘুম পাড়াবেন? তা না আমাকে প্রেত্নী বানিয়ে দিলেন৷”
নিয়তি মুখ গোমড়া করে উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিয়তির গলায় কিস করে৷ নিয়তি নির্বণের খুঁচা দাঁড়ি ছোঁয়ায় হাত চেপে ধরে৷ নির্বণ ধীরে ধীরে নিয়তিকে গভীরভাবে কিস করতে থাকে৷ নিয়তি নির্বণের ডিপ কিসে মাতুহার হয়ে যায়৷ নির্বণের দিকে ঘিরে নির্বণকে জড়িয়ে ধরে।
— নির্বণ নিয়তির কানে ফিসফিস করে বলে উঠে, “আমাদের একটা সোনা বেবি দরকার৷ তোমার অভিমত কি?”
নিয়তি লজ্জায় নির্বণের বুকের মাঝে একদম মুখ লুকিয়ে ফেলে৷ যেন কোন কাক চড়ুই পাখির ছানাকে তাড়া করেছে। চড়ুই পাখির ছানা তাড়া খেয়ে যেভাবে মায়ের বুকে মুক লুকায় ঠিক তেমনি নিয়তি নির্বণের বুকে মুখ লুকিয়েছে ৷
নির্বন নিয়তির উত্তর বুঝতে পারে । নির্বণ নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নির্বণের সাথে তালে তাল মেলায় নিয়তিও৷ আবারও তাদের দু’টো আত্মার মিলন হয়৷ [রিডার্সরা কিভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে? চোখ বন্ধ করেন সবাই৷]
______
বারোটার দিকে নিয়তি ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি সেই একই ভাবে নির্বণের লোমহীন বুকের মাঝে শুয়ে আছে৷ নিয়তি গতকালের মতো ভুল আজ আর করতে চাইনা৷ তাই সে তারাতাড়ি উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়৷
নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখতে পায় নির্বণ উঠে পড়েছে৷ নির্বণের পীঠ নখ দিয়ে আছড়ানো৷ ফর্সা পীঠ থেকে রক্তের লাভা বেরিয়ে আসছে৷ দৌড়ে নির্বণকে কাছে যায়৷
— হাঁপিয়ে বলে বলে উঠে, ” আপনার পীঠে নখ দিয়ে আছড়ানো কেন? কে করেছে আপনার এমন অবস্থা?”
— নির্বণ ক্ষীণ চোখে নিয়তির দিকে তাকিয়ে, ” এতো দুশ্চিন্তার কি আছে? আমার কিছু হয়নি৷ আমি ঠিক আছি৷”
— হন্তদন্ত হয়ে, ” আপনি একদম ঠিক নেই৷ এগুলো দাগ যদি পীঠে থেকে যায়৷ এখননি এন্টিসেপ্টি মলম লাগাতে হবে।”
— কিছু হবে না নিয়তি। এভাবে ভেঙে পড়তে নেই৷ আমি ঠিক আছি৷ আর দাগ পড়ে গেলেই তো ভালো। ভালোবাসার ছোঁয়া সব সময় কাছে থাকে৷
— চকিত হয়ে, “দাগ পড়ে গেলে ভালো মানে!” আর কিসের ভালোবাসা?
— ডেভিল হাসি দিয়ে, ” তোমার কি কিছু মনে নেই সুইটহার্ট ? তুমিই এই সব দাগ কেটেছো?”
— নিয়তি অবাক চোখে তাকিয়ে, ” আমি কখন এসব করলাম? আমি ভুলেও আপনাকে আঘাতের কথা ভাবতে পারিনা৷” [ লেখাঃ অধির রায় ]
— নিয়তিকে কাছে টেনে নিয়ে, ” আজ সকালে এসব দাগ তুমিই কেটেছো? তোমার কষ্টের কাছে আমার এই কষ্ট কিছুই ছিল না৷”
— নিয়তি নির্বণের কথা বুঝতে পারে। নিয়তি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠে, ” আপনি বলতে পারতেন আপনি ব্যথা পাচ্ছেন৷ শুধু শুধু কষ্ট সহ্য করলেন৷”
নিয়তি নির্বণের সামনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না৷ নিয়তি লজ্জা পেয়ে বেলকনিতে চলে যায়৷ নির্বণ মুচকি হেঁসে ওয়াসরুমে চলে যায়।
_________
পরিবারের সবার জন্য শপিং করে সন্ধ্যার দিকে হোটেলে ফিরে আসে নির্বণ এন্ড নিয়তি৷ নির্বণ আগে আগে চলছে৷ আর নিয়তি নির্বণের পিছু পিছু যাচ্ছে। নির্বণ হোটেলের দরজা খুলেই রেগে যায়৷
— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তুই এখানে কি করে আসলি? তোকে আমাদের রুমে কে নিয়ে এসেছে?”
— নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত দিয়ে, ” প্লিজ মাথা গরম করবেন না৷ আমি তাকে এখানে নিয়ে এসেছি৷”
— নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তোমাকে সব স্বাধীনতা দিয়েছি এই না যে তুমি যা খুশি তাই করবে।”
— আমরা তো ছোঁয়াকে এভাবে একা ফেলে যেতে পারি না৷
— নিয়তি তুমি বুঝতে পারছো না কেন? ছোঁয়া তোমার সরলতার সুযোগ নিচ্ছে৷ সুচ হয়ে ঢুকে খাল হয়ে বের হবে৷ আমি তোমাকে হারাতে পারব না৷
— আপনি কেন এত হাইপার হচ্ছেন? ছোঁয়া আমাদের কিছু করতে পারবে না৷ আমাদের উচিত ছোঁয়াকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া৷
— নির্বণ শপিং ব্যাগ বিছানায় ছুঁড়ে মেরে, “আমি তাকে নিয়ে যেতে পারবো না৷ তার সাথে আমি কিছুতেই কলকাতা ফিরবো না৷”
তুমি বুঝতে পারছো না কেন? সে টাকার লোভে আবার নতুন নাটক শুরু করেছে। এখন তাকে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফিরে যেতে বল৷
নির্বণ আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়৷ নিয়তি বেলকনিতে আসতে নিলেই ছোঁয়া নিয়তির হাত ধরে, ” আমার জন্য কিছু করতে হবে না৷ আমি এখানে ঠিক আছি৷ আমি জীবনে অনেক অন্যায় করেছি৷ আমাকে কেউ কোনদিন বিশ্বাস করবে না৷ আমার এমন শাস্তি পাওয়ার দরকার৷ ”
— নিয়তি ছোঁয়ার হাতে হাত রেখে, ” তোমার কিছু হবে না৷ আমি সব ঠিক করে দিব৷”
–নিয়তি বেলকনিতে পা রাখতেই নির্বণ বলে উঠে, ” এখানে কেন এসেছো? তুমি তো মানব সেবিকা। সবাইকে সাহায্য করবে৷”
— নিয়তি মাথা নিচু করে, ” আমি আপনাকে না জানিয়ে ছোঁয়াকে এখানে এনে ভুল করেছি৷ আপনি নিজেও জানেন না ছোঁয়ার কি হয়েছে?”
— নির্বণ চকিত হয়ে, ” ছোঁয়ার কি হয়েছে! তার কিছু হয়নি৷ ছোঁয়ার এটা একটা নতুন নাটক।”
— ছোঁয়া কোন নাটক করছে না৷ সে আসলে নিরুপায়। তার সুইজারল্যান্ডে কেউ নেই৷ আমি ডাক্তার আর পুলিশের সাহায্যে ছোঁয়ার পাসপোর্ট বানিয়েছি৷
— তুমি এত কিছু করলে আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ টুকুও করোনি৷
— আপনি চাইনি আপনি ছোঁয়ার চিন্তা করে কষ্ট পান৷
— তুমি কেন তাকে এতটা ভরসা করছো? কে হয় তোমার?
— আমার কেউ হয় না৷ কিন্তু তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতেই আমি এসব করছি৷
— আমি বোকা হয়নি৷ বোকা হয়েছেন আপনি৷ কারণ ছোঁয়া ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। সে যেকোন সময় মারা যেতে পারে৷ তার রোগটা প্রায় চার বছর থেকে। বর্তামানে তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে তাকে বাঁচানোর কোন পথ নেই৷
নিয়তি কথা শুনে নির্বণের ঠোঁট শুকিয়ে যায়৷ গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না৷ কিছু না জেনে মৃত্যু শরণাপন্ন রোগীকে এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।
— ডাক্তার আমাকে তার সকল রিপোর্ট দেখিয়েছে। তার মাকে ফোন করে আমাদের বাড়িতে ঢাকা হয়েছে। আমাকে এসব কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন মা৷
নির্বণ আর কিছু বলল না৷ মনে মনে নিজেকে দোষী মনে করল।
______
ভোর ছয়টায় তারা কলকাতায় পৌঁছে যায়৷ নির্বণ সবাইকে সবার গিফট বুঝিয়ে দেয়৷ নিয়তি ছোঁয়াকে ধরে নিয়ে গেস্ট রুমে নিয়ে যায়৷ গেস্ট রুমে যাওয়ার সাথে সাথে ছোঁয়ার মা ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে৷ ছোঁয়ার সমস্ত মুখে ভালোবাসার পরশ একে দিতে থাকে।
সকলে বসে আছে, কিভাবে ছোঁয়ার এমন অবস্থা হলো? ছোঁয়া মাথা নিচে করে বসে আছে৷ ছোঁয়াকে দেখে মনে হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে৷
— নিয়তি আভয় বানী দিয়ে, ” দেখো ছোঁয়া আমরা তোমার পরিবারের লোক৷ কোন সংকোচ না করে আমাদের বলতে পারো। তোমার সাথে অন্যায়ের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করব৷”
ছোঁয়া ছল ছল চোখে একবার নির্বণের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে, ” বৃষ্টি বাড়িতে আমি আর নির্জন (ছোঁয়ার বয়ফ্রেন্ড) নির্বণকে মেরে ফেলার চেষ্টা করি৷ সেজন্য নির্বণকে নদীতে ফেলে দেয়৷ তারপর বৃষ্টি বাড়ি থেকে সেই রাতে কলকাতায় ফিরে আসি৷ নির্জন অনেক আগেই আমাদের জন্য দুইটা সুইজারল্যান্ডের টিকেট কেটে রেখেছিল।”
— এক গ্লাস জল পান করে আবারও বলা শুরু করে, “পরের দিন সকাল বেলা আমি আর নির্জন সুইজারল্যান্ড চলে যায়৷ নির্জন আমাকে বলেছে সেখানে তার মা বাবা থাকেন৷ তাদের সাথে দেখা করেই আমাদের বিয়ে হবে৷ আমাকে একটা বিশাল বড় বাড়িতে নিয়ে যায়৷ সে জানায় এটা তাদের বাড়ি৷ আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়৷ আমি কল্পনাও করতে পারিনি আমি এত বড় বাড়ির বউ হবো৷ আমাকে লুকিয়ে নির্জন একটা রুমে নিয়ে যায়৷ আমাকে বলে যায়, আমি এখানেই যেন থাকি৷ তার মা বাবাকে সারপ্রাইজ দিবে আমাকে দেখিয়ে। তার কথামতো আমি রুমে অপেক্ষা করি৷ সন্ধ্যার দিকে রুমে মধ্যবয়স্ক দুইজন লোক রুমে প্রবেশ করে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম নির্বণের বাবা, কাকা৷ কিন্তু আমি ছিলাম তাদের খাবার৷”
নির্জন রুমে এসে বলে উঠে,” স্যার মালটা একদম পিউর৷ কেউ কোনদিন টার্চ করেনি৷ আমার টাকা বুঝিয়ে দেন। এক রাত আমাদের সাথে থাকবে৷ আমি বাহিরে আছি৷”
“নির্জনের কথা শুনে আমি ঘাবড়ে যায়৷ নির্জনের পায়ে পড়ি৷ নির্জন আমাকে লাথি দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে চলে যায়৷ আমি তাদের কিছু বলতে নিব তার আগেই তারা আমার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়৷ আমার হাত পিছনে বেঁধে ফেলে৷ তার পর তারা আমাকে কুকুরের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়৷”
ছোঁয়া আর কিছু বলতে পারল না। কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ নিয়তির হাত চেপে ধরে আবারও বলতে শুরু করে,” এখানেই শেষ নয়৷ প্রতিদিন রাতে আমি দুইজন তিনজন লোকের ভোগকারী মোহিনী হতাম৷ এভাবে চলে যায় পুরো দুই মাস৷ এক দিনের জন্য বাহিরে বের হতে পারিনি৷ একদিন নির্জন আমাকে খাবার দিতে রুমে আসে, আমি ওয়াসরুমের স্টেন দিয়ে নির্জনের মাথায় আঘাত করি৷ যার ফলে নির্জন মাটিতে থুবড়ে পড়ে। আর সেই দিন নির্জনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়৷ মানে তার হাত থেকে বাচার জন্য তাকে খুন করি৷ রক্তমাখা শরীর নিয়ে বাহিরে বের হলে সেখানকার লোকরা আমাকে ধরে একটা পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়৷ সেখানে দুই বছর আমার জায়গা হয়৷ সেখানেও একদিন সুযোগ বুঝে মালকিনকে মেরে ফেলে পালিয়ে আসি৷ তার পর ভিক্ষা করে চলতে থাকে আমার জীবন।”
সকলে ছোঁয়ার কাহিনী শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ এভানে চলতে থাকে কিছুদিন। হুট করেই একদিন ছোঁয়ার মুখ থেকে ব্লাড ঝরতে থাকে৷ ছোঁয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে৷
নির্বণ নিয়তির পথ আটকিয়ে দাঁড়ায় একটা ছোট মেয়ে। নির্বণ অতি যত্নে মেয়েটার গালে হাত রাখে।
— নির্বণ হাঁটু গেড়ে বসে, ” এনি প্রবলেম।”
— মেয়েটি বলে উঠে, ” আপনারা কি বাঙালি? আমি বাংলায় কথা বলতে পারি। আর সুইজারল্যান্ডের ভাষায় কথা বলতে পারি না, না পারি ইংরেজিতে কথা বলতে৷ অন্য কোন ভাষায় কথা বলতে পারি না৷”
— নিয়তিও হাঁটু গেড়ে বসে, ” আচ্চা তুমি কান্না করছো কেন? কি হয়েছে তোমার?” তোমার মা বাবা কোথায়?
— মেয়েটা কান্না করে বলে উঠে, ” প্লিজ আমার একটা হ্যাল্প করেন। আমিও ইন্ডিয়ান৷ এখানে ঘুরতে এসে হারিয়ে ফেলেছি আমার মা বাবাকে। কিন্তু এখানে এসে আমার একটা ভিক্ষুকের সাথে আমার দেখা হয়৷”
— “ভিক্ষুকের সাথে দেখা হয়েছে! ” অবাক হয়ে বলে উঠে নির্বণ।
তোমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না৷ প্লিজ আমাকে একটু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবে।
— স্যার আসলে আমি যখন মা বাবার জন্য কান্না করছিলাম তখন এক ভিক্ষুক আমাকে তার সাথে নিয়ে যান৷ তিনিও অসহায়, তারও কেউ নেই৷ সকাল থেকে আমরা দু’জনে না খেয়ে আছি। আর উনার মুখ থেকে সকাল থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে৷
— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে, ” এখন উনি কোথায়? আর উনি কেমন আছে? আমাকে নিয়ে চল উনার কাছে।”
মেয়েটি চোখের জল মুছে নির্বণের হাত ধরে ডাস্টবিনের পাশে শুয়ে থাকা একটা মধ্যবয়স্ক মহিলার কাছে নিয়ে যায়৷ নিয়তি অতি যত্নে মহিলাটিকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। বাচ্চা মেয়েটি কান্না করে যাচ্ছে।
নির্বণ মহিলাকে দেখে এক পা পিছিয়ে যায়৷ মহিলাটি আর কেউ নয়৷ মহিলাটি হলো ছোঁয়া। নির্বণের চোখ থেকে জল ঝড়ে যাচ্ছে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নির্বণ কি বলবে বুঝতে পারছে না?
নিয়তি নির্বণকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বণের কোন সাড়া শব্দ নেই৷ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। নিয়তি নির্বণকে টার্চ করলেই নির্বণের ঘোর কাটে৷
— আপনি এভাবে ভয় পেয়ে আছেন কেন? কি হলো আপনার? আপনি কেন ভেঙে পড়ছেন? চোখের জল মুছে ফেলেন?
— হাত দিয়ে ইশারা করে ভাঙা গলায় আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” ছোঁয়া..।”
— হ্যাঁ, আমি ঠিক বলছি ওই মেয়েটা আর কেউ না৷ ওই মেয়েটাই হলো ছোঁয়া।
নিয়তির কাছে হাতজোড় করে, প্লিজ নিয়তি তুমি ছোঁয়াকে ঠিক করে দাও।”
_______
হসপিটালের করিডরে বসে অপেক্ষা করছে নিয়তি, নির্বণ, আর ওই বাচ্চা মেয়েটা৷ নির্বণ পাথরে পরিণত হয়ে গেছে। তার মাথায় কিছু কাজ করছে না৷ এখনও চোখ থেকে অনবরত বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
ভালোবাসা এতটাই পবিত্র যে, ” কখনো কাউকে আলাদা করতে চায় না৷ কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এই ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে। আজ পবিত্র ভালোবাসাকে খেলা হিসেবে বেছে নিচ্ছে৷ যার ফলে ঝড়ে যাচ্ছে বহু যুব সমাজ।
ডাক্তার ছোঁয়াকে দেখার পর বেরিয়ে আসে৷ নিয়তি ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে যায়৷
— নিয়তির ডাক্তারের দিকে ক্ষীর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “ডক্টর ছোঁয়ার কি হয়েছে? ”
— ডাক্তার মাথা নিচু করে বলে উঠে, ” ছোঁয়ার ক্যান্সার ধরা দিয়েছে। উনার আয়ুষ্কাল আর বেশিদিন নেই৷ ”
— নিয়তি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে উঠে, ” ওকে ডক্টর। আমাদের কি রাতে এখানে থাকতে হবে?”
— সরি ম্যাম। আমরা কাউকে রোগীর সাথে এলাউ করি না৷ আমরা কিছুতেই আমাদের নিয়ম ভঙ্গ করতে পারব না৷
।
।
নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত রাখাতে নির্বণ নিয়তির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। নিয়তি আভয় বানী দিয়ে বলে উঠে, ” আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ ছোঁয়া একদম ঠিক হয়ে যাবে।
_______
নিয়তি, নির্বণ, আর বাচ্চা মেয়েটি এক সাথে বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই৷
— নিয়তি নির্বণের দিকে একবার তাকিয়ে বাচ্চাটির গাল আলতো করে বলে উঠে, ” আচ্চা তোমার নাম কি?”
— মিষ্টি হেঁসে বলে উঠে, ” আমার নাম মিহু। আমি ইন্ডিয়ায় থাকি। প্লিজ আমাকে আমার মা বাবার কাছে পৌঁছে দিবে।”
— আচ্চা তোমার মা বাবা কোন হোটেলে উঠেছিল। তুমি কি কিছু জানো?
— হ্যাঁ আমি জানি৷ তারা এই হোটেলেই উঠেছে। কিন্তু আমি এই হোটেলে সেদিন রাতে এসেছিলাম কিন্তু গেইট লক ছিল।
— তুমি কি জানো, তোমার মা বাবা কত তলায় থাকে?
— জানি না৷ তবে আমার বাবার নাম তূর্জয়।
— ওকে সমস্যা নেই৷ তুমি আমার সাথে কাউন্টারে চল৷ তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি কিনা৷
নিয়তি মিহুকে নিয়ে কাউন্টারে আসে৷ কাউন্টারে আসতেই মিহু নিয়তির হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আসলে তারা এখনই বের হচ্ছিল।
তারা মেয়েকে ফিরে পেয়ে মিহুর মুখে একের পর এক ভালোবাসার পরশ একে দিতে থাকে। ফ্লাইডের সময় হয়ে যাছে সে কারণে নিয়তির সাথে তেমন কোন কথা হলো না৷ নিয়তিকে বিদায় জানিয়ে তারা চলে যায়।
_______
নির্বণ স্নান করে ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে৷ ঠিক তখনই নিয়তি রুমে প্রবেশ করে৷ নির্বণ গায়ে জলের ফোঁটা মুক্ত দানার মতো চকচক করছে৷ নিয়তি নির্বণের অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নির্বণ নিয়তির কাছে এসে টুপ করে নিয়তির কপোলে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷ নিয়তি নির্বণের এমন ব্যবহারে খুব শকট। একটু আগে যে মানুষ কথা বলতে পারছিল না৷ এখন কি না সেই মানুষ এতটা পরিবর্তন।
— নিয়তি চোখ বড় করে, ” আপনি কি ঠিক আছেন? নাকি আপনি পাগল হয়ে গেলেন?”
— হোয়াট৷ তোমার মাথা ঠিক আছে৷ আমি কেন পাগল হতে যাব৷ আই অ্যাম ফাইন৷
— আপনার একটুও কষ্ট হচ্ছে না ছোঁয়ার জন্য৷
— ও হ্যালো। আমি অতীতকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাই না৷ আর যে ছোঁয়ার আমাকে প্রাণে মারার জন্য দু’বার ভাবেনি৷ আমি তার জন্য ভাববো। খারাপ লেগেছিল তাকে দেখে। কিন্তু এখন খারাপ লাগছে না৷
— ভুতের মুখে রাম রাম। আমি কি সত্যি বেঁচে আছি নাকি আমি কোমায় চলে গিয়েছি৷
নির্বণ নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত দরজার সাথে চেপে ধরে৷ নিয়তি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ দুই মিনিট পর নিয়তির ঠোঁট ছেড়ে দেয়৷ নিয়তি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে হাঁপাতে থাকে। মনে মনে নির্বণের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে যাচ্ছে৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি কি আমাকে মেরে ফেলবেন? এভাবে কেউ কাউকে কিস করে। আর একটু হলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেত।”
— তার মানে তুমি কোমায় নয়৷ তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। তোমাকে দাঁড়া কিছু হবে না৷ ভালো করে কিসও করতে পারে না৷
— আমি তো আপনার মতো গরিলা নয়৷ যে কিসের ক্ষেত্রে পারদর্শী হবো৷
— আমি গরিলা৷
— হ্যাঁ আপনি গরিলা৷
— আমি গরিলা হলে তুমি প্রেত্নী৷
— আমি প্রেত্নী নয়৷ আমি হলাম মায়া পরী৷
— নির্বণ মুচকি হেঁসে, ” আসছে আমার মায়া পরী৷ দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র কারো বাসা থেকে চুরি করে আসল। না না তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কাজের মেয়ে সকিনা।
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আমি কাজের মেয়ে সকিনা৷ দাঁড়ান আমি আপনাকে দেখোচ্ছে৷
নিয়তি নির্বণের দৌড়ানি দেয়৷ নির্বণ বেডের চারদিকে রাউন্ড করতে থাকে। হঠাৎ করেই নিয়তি পড়ে যেতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত ধরে বেড়ে পড়ে যায়৷
কারো মুখে কোন কথা নেই৷ একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দু’জনেই নেশার ঘোরে আছে। নির্বণের ঠান্ডা স্পর্শ নিয়তিকে কাছে টানছে। নির্বণও নিয়তির মায়া ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে…
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৬
#অধির_রায়
নিয়তি নির্বণের উপর থেকে উঠে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে টান দেয়৷ নিজের বুকের সাথে নিয়তিকে মিশিয়ে নেয়৷
— নিয়তি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে, ” আপনি কি করতে চাইছেন? ছাড়েন আমাকে।”
— নিয়তিকে বিছানার সাথে চেপে ধরে, ” আমি কাছে আসলে তোমার এত লজ্জা কেন? আমাকে এত ভয় পাও কেন? আমি বাঘ নাকি সিংহ।”
— আমি জানি কে আপনি? আপনি একটা এনাকন্ডা। সরেন আমার উপর থেকে৷ আমার ভালো লাগছে না৷
নিয়তি দুই হাত দিয়ে নির্বণের বুকে ধাক্কা দিতে দিতেই নির্বণ নিয়তির দুই হাত চেপে ধরে নিয়তির গলায় মুখ লুকায়৷
ব্যাস নিয়তির জন্য এইটুকুতেই যথেষ্ট। নিয়তির মুখে আর কোন কথা নেই৷ নির্বণের নেশা নিয়তিকে পাগল করে দিচ্ছে৷
— নির্বণ নিয়তির ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” নিয়তি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই৷ তোমার অভিমত কি?”
নিয়তি লজ্জা পেয়ে যায়৷ নিয়তি মুখ থেকে কোন কথাই বের হচ্ছে না৷ নির্বণ নিয়তির উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে৷ নির্বণ মুখ গোমড়া করে চলে আসতে নিলেই নিয়তি নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে৷
নির্বণ তার উত্তর পেয়ে যায়, তবু্ও অসহায়ের মতো নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে। নিয়তি বুঝতে পারে তাকেই কিছু করতে হবে৷ নিয়তিই আজ নিজ থেকে নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে দেয়৷
দুটি অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী আজ পরিপূর্ণ পায়৷ তারা একে অপরের হয়ে যায়৷
এখন আসার বাকি ছোট সোনা৷ [লেখাঃ অধির রায় ]
___________
সোনালী রোদ্দুরের তীব্র জ্যোতি ছড়িয়ে নতুন দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। পূবের স্বচ্ছ কাঁচের জানালা দিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে সোনালী রোদ্দুর। নিয়তি মুখে রোদের জ্যােতি পড়তেই নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷
নিয়তি আঁখি মেলে তাকিয়ে দেখে নির্বণের লোমহীন বুকের মাঝে শুয়ে আছে৷ রাতের কথা মনে পড়তেই নিয়তি লজ্জায় লাল হয়ে যায়৷ নির্বণের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নির্বণের হালকা গোলাপি ঠোঁট নিয়তিকে টানছে৷ নিয়তি নির্বণের ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মেলাতে নিবে ঠিক তখনই নির্বণ আঁখি মেলে তাকায়। নিয়তি লজ্জা পেয়ে সরে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷
— কি লুকিয়ে লুকিয়ে কিস করা হচ্ছে? তুমি দিনে দিনে লুচু টাইপের মেয়ে হয়ে যাচ্ছো৷ বাট রাতের কিসটা খুব মিষ্টি ছিল।
— একদম না৷ আমি লুকিয়ে কিস করতে যাব কেন? আপনি জেগে ছিলেন তাহলে আমাকে ডাক দিননি কেন?
— তোমাকে ডাক দিলে তাহলে তো বুঝতে পারতাম না আমার বউ আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কিস করে।
— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” ছাড়েন আমাকে আমি ওয়াসরুমে যাব৷ আপনি আপনার মতো গরিলা নয় আমি, চুরি করে কিস করতে যাব৷”
নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে নিয়তি ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নির্বণ নিয়তির দিকে ফ্লাইং কিস পাঠিয়ে দেয়৷ নিয়তি জিহ্ব বের করে ওয়াসরুমের দ্বার বন্ধ করে দেয়৷
________
সকালে খাওয়ার পর একে অপরকে দিকে শুরু তাকাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। কারো মুখে কোন কথা নেই৷ নিয়তি এক পর্যায়ে চোখাচোখি বন্ধ করে বলে উঠে,” আমি বইয়ে পড়েছিলাম এখানে জলন্ত পুতুল রয়েছে। যার জন্য সুইজারল্যান্ডের ক্লক টাওয়ার বিখ্যাত পৃথিবীর বুকে৷ চলেন না আমরা আজ সেই ক্লক টাওয়ারে ঘুরে আসি৷
— একদম রাইট৷ ক্লক টাওয়ারের জলন্ত পুতুল রয়েছে। ক্লক টাওয়ারের জলন্ত পুতুলকে বলা হয় Zytglogge। Zytglogge দর্শন করার জন্য প্রতিবছর এখানে ভীড় জমায়৷
— সবই বুঝলাম এখান আমি জলন্ত পুতুল দেখতে চাই৷ তাহলে আমরা কখন বের হচ্ছি জলন্ত পুতুল দেখতে?
— এখনই বের হবো৷ রেডি হয়ে নাও৷
— জাস্ট অ্যা মিনিট।
নিয়তি লাগেজ থেকে নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াসরুমে দৌড়ে চলে যায়৷ নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হতেই নির্বণ হাঁ করে নিয়তির দিকে তাকিয়ে থাকে।
— নির্বণের কাছে এসে, “মুখটা বন্ধ করেন৷ মশা ঢুকবে তো।”
— হ্যাঁ, এখানে অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তো আগেও অফিসে পড়েছি৷
— নিয়তিকে কাছে টেনে নেশা ভরা কন্ঠে, ” তোমাকে অনেক কিউট এন্ড হট লাগছে৷ তুমি যে ড্রেসই পড়না কেন? তোমাকে আমার চোখে সব থেকে সুন্দর লাগে। ”
— এভার যাওয়া যাক। এখানেই কি সময় পার করে দিবেন৷
— আমি তো চাই সময় এখানেই থেমে যায়৷ যেন তোমাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখতে পারি৷ মনের সব ইচ্ছা পূরণ করতে পারি৷
।
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ক্লক টাওয়ারের নিচের দিকে নিয়ে যায়৷ উপরে থেকে ক্লক টাওয়ার নিচের দিকে আরও সুন্দর করে লাইটিং করা। ক্লক টাওয়ারের উপরের অংশ সন্ধ্যায় দিকে জ্বলছে উঠে৷ তখন ক্লক টাওয়ার নিজের সৌন্দর্য চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়৷
— এই মোমের পুতুলটির নামই জলন্ত পুতুল। চারিপাশে আগুনের শিখা দিয়ে ঘেরা৷ যার জন্য একে জলন্ত পুতুল বলে।
— মোমের তৈরি জলন্ত পুতুল দেখে নিয়তি হেঁসে বলে উঠে, “আমাকে পাগল মনে হয় আপনাপপর? এটা যদি মোম হতো তাহলে গলে পড়ে যেত৷ ”
— এটা গলে না তাই এর নাম জলন্ত পুতুল। এটা ১৬ শতকে তৈরি করা হয়েছে৷ তখনকার লোকেরা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপায়ে মোম তৈরি করে এই পুতুল সৃষ্টি করে৷ যা এখানকার লোকের পক্ষে বানানো সম্ভব নয়৷ গলে না বিদায় এর নাম রাখা হয়েছে জলন্ত পুতুল।
— এখন কিছুটা বুঝতে পারলাম৷ তবুও সব কিছু মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।
তারা দুইজনে কিছু পিক তুলে নেয়। নিয়তির হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে নির্বণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে৷ নিয়তি আবার বলে উঠে, ” আমি আর মাত্র একটা কথা বলতে চাই।”
— নির্বণ বিরক্তের সাথে বলে উঠে, ” কি কথা! তোমার কথা এখনো শেষ হয়নি৷ তুমি কি কথা বলা ছাড়া থাকতে পারো না?”
— আমাদের দেশে টাওয়ার বানানো হয় শুধু ফোনের নেটওয়ার্কের জন্য৷ কিন্তু সুইজারল্যান্ডের টাওয়ারে হোটেল, শপিং মল সব কিছু কেন আছে?
— কারণ সুইজারল্যান্ড অনেক উন্নত দেশ৷ এখানে সব কিছু সম্ভব। তারা অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে৷ আর হ্যাঁ আমাদের দেশেও এমন বড় বড় ক্লক টাওয়ার হতে পারে। তার জন্য আমাদের দেশে দুর্নীতি দমন করতে হবে৷ বাঙালি কাজে নয় কথাই পারদর্শী।
— তাহলে আমাদের দেশে এমন টাওয়ার বানাই না কেন? আর বাঙালিদের নিজে কিছু বলবেন না৷ আপনি ব্রিটিশিয়ান৷
নির্বণ নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্লক টাওয়ারের অন্যান্য জায়গায় ঘুরাতে নিয়ে যায়৷
________
ক্যাফেতে বসে কফির খাচ্ছে৷ একে অপরের প্রশংসা করছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে৷
— নিয়তি কফির কাপে চুমু দিয়ে, ” আচ্ছা আমরা এখন ছোঁয়ার জন্য কি করতে পারি৷ তাকে তো আমরা এভাবে ফেলে যেতে পারি না৷”
— নির্বণ নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তোমার খাওয়া শেষ হলে আসতে পারো৷ আমার খাওয়া শেষ৷”
— কোমল কন্ঠে, ” কি হলো? এভাবে রেগে গেলেন কেন? আমাদের তো তার উপর একটা কর্তব্য আছে৷”
— ছোঁয়ার প্রতি দায়িত্ব থাকতে পারে৷ আমার কোন দায়িত্ব নেই৷ যে টাকার জন্য কারো জীবন নিতে দু’বার ভাবে না, সেরকম মেয়েদের আমি দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করে ভুল করব না৷
— আপনি কি জানেন ছোঁয়া কেন….?
— নিয়তিকে থামিয়ে দিয়ে, “ব্যাস আমি ছোঁয়াকে নিয়ে কোন কথা শুনতে চাইনা৷ আর তাকে নিয়ে তোমায় কোন কিছু ভাবতে হবে না৷ এখানে গরিবদের চিকিৎসার ভার বহন করে সরকার। সে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না৷
নিয়তি বুঝতে পারে নির্বণের মনে নিয়তির জন্য কোন ভালোবাসা নেই৷ যতটুকু ভালোবাসা অবশিষ্ট ছিল আজ তা ঘৃণার পরিণত হয়েছে। নিয়তি সেই নিয়ে আর কোন কথা বাড়াল না৷
।
।
সন্ধ্যায় দিকে একে অপরের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে হোটেলে আসছে। যে দিকে চোখ যাচ্ছে সেই দিকে বাহারি রকমের চকলেট দেখা যায়।
— চকলেট কি করে আমি সবগুলো চকলেট বসে বসে খাবো। আপনার কোন সমস্যা।
— না আমার কোন সমস্যা নেই৷ তবে এতগুলো চকলেট এক সাথে খেলে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না৷
— রাখেন আপনার আজাইরা কথা৷
_______
নির্বণ নিয়তির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি একের পর একটা করে চকলেট খেয়েই যাচ্ছে। নিয়তিকে দেখে মনে হচ্ছে নিয়তি কোন চিড়িয়াখানা থেকে এই মাত্র বের হয়েছে খাওয়ার জন্য।
— নির্বণের দিকে চকলেট ছুঁড়ে দিয়ে, ” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার পেটের সমস্যা হবে তো৷ আপনি এত লোভী কেন?”
— নির্বণ চোখ ছোট করে, ” আমি লোভী। আমি কোন জায়গায় লোভ করলাম।”
— লোভী নয় তো কি? আপনাকে দুই দুইটা চকলেট খেতে দিয়েছি৷ এখনও আমার কাছে চকলেট চাচ্ছেন৷
— চকিত হয়ে, ” আমি তোমার কাছে কখন চকলেট চাইলাম! তোমার মাথা পুরোটায় গেছে।”
— তাহলে এভাবে রাক্ষসের মতো তাকিয়ে আছেন কেন? যান অন্যদিকে তাকান।
নির্বণ কিছু না বলে বেলকনিতে চলে আসে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খালি গায়ের পিক তুলছে৷ নির্বণ তার একটা পিক নিউজফিডে আপলোড দেয়৷
নিয়তি চকলেট রেখে নিউজফিডে ঢুকে৷ নিউজফিডে ঢুকতেই নির্বণের খালি গায়ের পিক দেখতে পায়৷ পাঁচ মিনিটেই অনেক কমেন্ট৷ নিয়তি কমেন্ট গুলো পড়তে শুরু করে..
প্রথম কমেন্টঃ ওয়াও সেক্সি বডি৷
দ্বিতীয় কমেন্টঃ সো হ্যান্ডসাম৷ বেবি আই লাভ ইউ
তৃতীয় কমেন্টঃ ইউ আর হট।
চতুর্থ কমেন্টঃ হ্যাঁ, হ্যান্ডসাম৷ তোমাকে আমার প্রয়োজন। তোমার সেই উম্মুক্ত বুকে আমাকে জায়গা দিবে৷ সারা জীবনের জন্য তোমার বুকে মাথা রাখতে চাই৷
নিয়তি আর পারল না কমেন্ট পড়তে৷ নিয়তি ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারে৷ নিয়তি দ্রুত গতিতে বেলকনিতে চলে যায়৷ নির্বণের হাত থেকে ছুঁ দিয়ে ফোনটা নিয়ে নেয়৷
— রসে গোল্লার মতো চোখ করে,” তুমি আমার হাত থেকে ফোন নিচ্ছো কেন? কি হয়েছে?”
— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” কোন কথা বলবেন না৷ কোন কথা বললে আপনাকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব৷
নিয়তি নির্বণের ফোন নিয়ে প্রথমে পিকটা অনলি মি করে৷ তার পর যে শাঁকচুন্নি কেমন্ট করেছিল তাদের উগান্ডায় পাঠিয়ে দেয় বিনা টিকেটে।
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনার সাহস কিভাবে হলো খালি গায়ে পিক আপলোড দেওয়া৷”
— “আপনিও কোন পিক আপলোড দিবেন না৷ মেয়েদের কাছ থেকে ওয়াও সেক্সি বডি, বুকের মাঝে জায়গা হবে, আমি তোমার বুকে থাকতে চাই। এসব শুনতে ভালো লাগে। যদি কোনদিন দেখি। তাহলে পুঁতে রেখে দিব৷ ” ক্ষেপে বলে উঠে।