Sunday, July 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1034



তুই শুধু আমার পর্ব-১৭+১৮

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 17+18

রংখেলা………

গার্ডেন টাহ খুব সুন্দর করে বাঁশের সাথে সাদা কাপড় আর লাল সাদা বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। ছোট, বড় প্লেটে করে সাজিয়ে রং রাখা হয়েছে।
আরসাল নিজের রুমে রেডি হচ্ছে। আজ আরসাল কে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে। আরসাল আজ একটা সাদা কালারের পাঞ্জামি, লাল চুড়িদার, লাল পান্জামি ওড়না, পান্জামির হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে রাখা, হাতে ব্রাউন বেলটেড ওয়াচ, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি আর কপালে কয়েকটি পড়েই আছে, আরসাল আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছিল। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে আরসাল ফিরে দেখে আমান এসেছে। আমানকে দেখে আরসাল বলে ওঠে,
–” রেডি?”

–” আমার যেতে ইচ্ছা করছে নাহ ওখানে।”

–” কেনো যাবি নাহ? সাইফ তোহ আর নাই প্রব্লেম নাই।”
বলেই আরসাল হেসে দেয়। আরসালের হাসি দেখে আমানের রাগ উঠে আর বলে ওঠে,
–” তুই হাসছিস?”

–” আচ্ছা সরি বাবা! চল।”
বলেই আমানকে নিয়ে গার্ডেনে চলে আসে। আরসাল আর আমান এসে দেখে গার্ডেনে আশা, আশিকা, সাথী, নেহা, আশফি, আরও অনেক বন্ধু বান্ধব রয়েছে। কিন্তু সেহের নেই। আরসালকে দেখতেই নেহা এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” wow, Arsal. পাঞ্জাবি পরে তোমাকে দারুণ লাগছে।”

–” Thanks, Neha!”
আরসাল চারপাশে তাকিয়ে দেখে সেহেরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে নাহ। আরসাল আশার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আশা বাকি সবাই কোথায়?”

–” বড়রা বলেছে এই রং খেলা ছোটদের অনুষ্ঠান। এখানে বড়রা কেউ আসবে নাহ।”

–” ওহ।”
আরসাল কিছুতেই সেহেরের কথা জিজ্ঞাসা করতে পারছে নাহ। কিছুক্ষণ পর সেহেরের গলার আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকাতেই, সেহেরকে দেখে যেনো একবার তার হার্ট মিস হয়ে গেলো মনে হয়। সেহের একটা সাদা শর্ট কামিজ, সাদা ধুতি সালোয়ার আর লাল ওড়না পরেছে, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, চোখ ভর্তি কাজল, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, হাতে লাল চুড়ি, কানে লাল ঝুমকা, সেই সাথে সেহেরের মন হরন করা হাসি, সব মিলিয়ে পরি লাগছে। সেহের আশফির সাথে হাত নাড়িয়ে কথা বলছে, আর আরসাল সেহেরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। বিষয় টাহ আবার নেহার চোখে পড়ে। নেহা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের সামনে থাকলে আরসাল সব সময় এমোন করে তাকিয়ে থাকে কেনো ওর দিকে? কিছু তোহ কারন আছে। কিন্তু কারন টাহ কি হতে পারে? সেহের তোহ আরসালের কাজিন। বাট আরসাল সেহেরকে নিজের বোন কখনই ভাবে নাহ এইটা তোহ প্রথম দিনই মনে হয়েছিল। আরসালের কাছে সেহের অন্য কিছু। তাহলে কি আরসাল সেহেরকে, নাহ। আর যদি আমি যাহ ভাবছি তাই হয় তাহলেও আমি তোমাকে ছাড়ছি নাহ আরসাল। তোমাকে ছেড়ে থাকতে নাহ পেরে বিডি পর্যন্ত চলে এসেছি, তোমাকে হারিয়ে ফেলার জন্য নয়। তুমি শুধু আমার আরসাল। তার জন্য আমাকে যা যা করা লাগে আমি তাই করবো। তাতে যদি কাউকে মারতেও হয়, তাহলেও আমি ভাববো নাহ। কিন্তু তোমাকে আমার হতেই হবে আরসাল।”

নেহা কথা গুলো ভেবে আরসালের দিকে এগিয়ে এসে, আরসালের হাত ধরে। কারো স্পর্শে আরসালের ধ্যান ভাঙে, সেহেরের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে নেহা। নেহা আরসাল কে বলে ওঠে,
–” রং খেলাকে আরও রঙিন করা উচিত আরসাল।”

আরসাল নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায় রং এর প্লেট সাজানো টেবিলের দিকে। আরসাল প্লেট থেকে কিছু রং মুঠ করে নেই।

আরসাল ঃ ( হাতে ভর্তি রং নিয়ে উপরের দিকে ছুুড়ে দেয় )
,,,,,,,,,,,,,,বালাম পিচকারি,,,,,,
,,,,,,জো তুনে মুঝে মারি,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,তোহ বলে রেজামানা,,,,,,,,,
,,,,,,খারাবি হো গায়ি,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,মেরে আং রাজা,,,,,,,,,
,,,,,,,,জো তেরা রাং লাগা,,,,,,,
,,,,,তোহ ছিধি ছাধি চোরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,সারাবি হো গায়ি,,,,,,,,

সেহের এইদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়। কিন্তু তারপরেই নেহাকে আরসালের সাথে নাচতে দেখে রাগে আর সেদিকে যায় নাহ। একপাশে মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে।

নেহা ঃ ( আরসালের চারপাশে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,,,,ইতনা মাজা,,,,,,,,
,,,,,,কিউয়া রাহ হায়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,,তুনে হাওয়া মে ভাং মেলাইয়া,,,,,

আশা আমানের দিকে তাকিয়ে আছে। আশাকে আশিকা টেনে নিয়ে যায় তাদের মাঝে।

আশিকা ঃ ( আশাকে রং মাখিয়ে দিয়ে )
,,,,,,,,,,,,,ইতনা মাজা,,,,,,,,
,,,,,,কিউয়া রাহ হায়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,,তুনে হাওয়া মে ভাং মেলাইয়া,,,,,

নেহা ঃ ( আশিকা এবং আশার দিকে এসে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,দুগনা নেশা,,,,,,,
,,,,,,,,কিউ হো রাহ হাইয়ে,,,,,,
,,,,,আখোসে মিঠা তুনে খিলায়া,,,,,,,

আরসাল ঃ ( নেহা, আশিকা, আশার দিকে এগিয়ে এসে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,হো তেরি মাল মাল কি কুরতি,,,,,,
,,,,,,,,,,,গুলাবি হো গায়ি,,,,,,
,,,,,মানচালি চাল ক্যাইসে নায়াবি হো গায়ি,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,তোহ,,,,,,,,,,,

সবাই ঃ ( সেহের, আমান বাদ দিয়া সবাই আশাকে মাঝে রেখে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,,,,,বালাম পিচকারি,,,,,,
,,,,,,জো তুনে মুঝে মারি,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তোহ ছিধি ছাধি চোরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,সারাবি হো গায়ি,,,,,,,,
,,,,,,হ্যা জিন্স পেহেং কে যো,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তুনে মারা থুৃমকা,,,,,,,
,,,,,,,তোহ লাট্টু পাদোনসান কি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,বাবি হো গায়ি,,,,,, 2x

সবাই সবাইকে রং মাখাচ্ছে। আমান এগিয়ে এসে হাতে কিছু রং নিয়ে আশার সামনে দাড়ায়। আশা আমানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমান আশার মুখে রং মেখে দেয়। আমানের ছোয়া পেতেই আশা চোখ বন্ধ করে নেয়। এই দৃশ্য দেখে আরসাল মুচকি হাসি দেয়। আমান আশার থেকে একটু পিছিয়ে আসে। আশা আমানের দিকে চোখ খুলে তাকিয়ে থাকে।

আমান ঃ ( আশার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে )
,,,,,,,,,তেরি কা লাইয়ি হে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,হাতোহ মে হাইয়ি হে,,,,,,,,,
,,,,,,,,,মেইনে মারোডা তোহ,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,লাগতি মালাই হ্যায়,,,,,,

আশা ঃ ( আমানের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,,মেহেংগা পেডাগা য়ে,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,চাসকা মালায়া কা,,,,,,,,,
,,,,,,,উপভাস কারনে মেইন,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,তেরি ভালাইয়ি হে,,,,,,,,,,,,,,

আশফি ঃ ( নেহার পাশে গিয়ে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,হো বিনদিয়া তেরি মেহতাবি হোগাইয়ি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,দিলকে আরমানো,,,,,
,,,,,,মে বেহিসাবি হো গাইয়ি,,,,,,
,,,,,,,,,,তোহ,,,,,,,,,

সবাই ঃ ( সেহের বাদে সবাই আশাকে মাঝে রেখে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,,,,,,,বালাম পিচকারি,,,,,,
,,,,,,জো তুনে মুঝে মারি,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তোহ ছিধি ছাধি চোরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,সারাবি হো গায়ি,,,,,,,,
,,,,,,হ্যা জিন্স পেহেং কে যো,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তুনে মারা থুৃমকা,,,,,,,
,,,,,,,তোহ লাট্টু পাদোনসান কি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,বাবি হো গায়ি,,,,,, 2x

সবাই সবাইকে রং মাখাচ্ছে আর নাচছে। সেহের রাগে তেহ যাচ্ছেই নাহ ওখানে। একপাশে দাড়িয়ে আছে। সবাই নচে ব্যাস্ত থাকায় খেয়াল করছে নাহ। কিন্তু আরসাল ঠিকই খেয়াল করছে কিন্তু এমোন ভাব করছে যেনো সেহেরকে দেখছেই নাহ। আরসাল বুঝতে পারছে সেহের নেহার সাথে ওরে দেখে রেগে গেছে। আরসালেরও কেনো জানি ভালো লাগছে সেহেরকে এইভাবে রাগাতে। তাই আরসাল নেহার সাথে আরও বেশি করে নাচতে থাকে।

আরসাল ঃ ( নেহার কাছে গিয়ে নেহার সাথে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,কাইউন নো ভাচানচি কি,,,,,,,
,,,,,হোতোং পে গালি হায়,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,জাবকে তেরে দিলকা,,,,,,
,,,,,,,কামরা তোহ খালি হেয়,,,,,,,,,,,

নেহা ঃ ( আরসালের সাথে নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,মুঝকো পাতা হায় রে,,,,,,
,,,,,,,,,,,,কায়া চেহাহাতা হায় তু,,,,,,,
,,,,বলি বাহাযান তেরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,নিইয়াত কুয়ালি হ্যায়,,,,,,,

কেউ একজন ঃ ( সেহেরকে টেনে নিয়ে, সেহের তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেও তার সাথে তাল মিলিয়ে নেয় )
,,,,,,,,,,,,,,জুলমিয়ে হাজির,,,,,
,,,,,,,,,,,,জাওয়াবি হো গায়ি,,,,,,
,,,,,,,তু হার তালে কি আজ ছাবি হো গায়ি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,তোহ,,,,,,,,,

সবাই ঃ ( লোকটিকে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলেও লোকটিকে দেখে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে, কিন্তু আরসাল রেগে যায় এবং নাচের থেকে সরে যায়, আরসাল বাদে বাকি সবাই নাচতে নাচতে )
,,,,,,,,,,,,,,বালাম পিচকারি,,,,,,
,,,,,,জো তুনে মুঝে মারি,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তোহ ছিধি ছাধি চোরি,,,,,,,,
,,,,,,,,,সারাবি হো গায়ি,,,,,,,,
,,,,,,হ্যা জিন্স পেহেং কে যো,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তুনে মারা থুৃমকা,,,,,,,
,,,,,,,তোহ লাট্টু পাদোনসান কি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,বাবি হো গায়ি,,,,,, 2x

নাচ শেষে সবাই এক মুঠো রং নিয়ে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়ে!”

সবাই লোকটির দিকে খুশি ভরা মুখ নিয়ে তাকায়। আর লোকটাহ সেহেরের দিকে হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সেহেরও হাসি + অবাক মুখ নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। সেহের লোকটার দিকে হেসে বলে ওঠে,
–” রাহুল ভাইয়া তুমি? এখানে কিভাবে? তুমি তো আবার কোন একটা কাজে বিদেশে চলে যাবে বলেছিলে?”

(( আগে এই মানুষ টার পরিচয় দেয়। রাহুল হার্শ, সেহেরের বাবা আজিজ চৌধুরীর বেস্ট ফ্রেন্ড মুবিন হার্শের ছেলে। আরসাল বিদেশে যাওয়ার কয়েকদিন পরই রাহুল বিদেশ থেকে দেশে আসে। তারপর আর বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে নি। আরসালের থেকে ২…..৩ মাসের বড় রাহুল। আরসাল আর রাহুল একে অপরকে চিনলেও রাহুল বিদেশে থাকায়, আবার রাহুল দেশে আসলে আরসাল বিদেশ থাকায় সেরকম বন্ধুত্ব কখনো গড়ে উঠেনি। রাহুল এইবার দেশে ব্যাক করে সেহেরকে দেখেই ভালো লেগে যায়। আস্তে আস্তে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় পরিনত হয়। কিন্তু কখনো সেহেরকে বলে নি। কিন্তু এই ৩ বছরে রাহুল আর সেহেরের ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গেছে। সাথে আশা, আশফি, সাথী এক কথায় চৌধুরী বাড়ির সবার সাথে মিশে গেছে রাহুল। ))

–” হুম বলেছিলাম, বাট যাওয়া হয় নি। এর মাঝেই আশার বিয়ের কথা শুনে ভাবলাম সারপ্রাইজ দেই। তাই আর তোমাদের বলি নি।”

–” ওয়াও।”
আশা এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” তাহলে আমার বিয়ের কথা শোনার আগেও তোহ অনেক দিন আসো নি কেনো?”

–” তার জন্য সরি। বিদেশে যাতে যেতে নাহ হয়, তার জন্য দেশে থেকে বিদেশের কাজ গুলো এখান থেকে কমপ্লিট করার জন্য একটু বিজি ছিলাম।”

–” আচ্ছা, ঠিক আছে।”

–” সে যাই হোক! তোমরা সবাই নাচছিলে বাট আমার জান টাহ কেনো নাছিলো নাহ? মজা করছিলো নাহ?হুম?”

রাহুল কথাটা বলেই সেহের কে এক হাত দিয়ে কাছে টেনে একাপাশে জড়িয়ে ধরে রাখে। এতো সময় আরসাল শুধু দেখছিলো আর শুনছিলাে, কিন্তু রাহুলের সেহের কে জান ডাকা আর একহাত দিয়ে কাছে টেনে জড়িয়ে নেওয়া দেখে আরসালের মাথায় যেনো রক্ত উঠে যায়। আরসাল অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেহের আর রাহুলের দিকে। রাহুল কথা বলতে বলতে হঠাৎ আরসালের দিকে চোখ যেতেই আরসালের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আরসাল রাইট?”

আরসালের রাগ হলেও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
–” হুম।”

–” আমাকে চিনতে পারছো?”

–” রাহুল!”

–” ইয়াহ। তারপর কেমন আছো?”

–” হুম। গুড!”

–” ওকে। সেহের!”
সেহের বলে ওঠে,
–” হুম, বলো।”

–” তোমার হাতের কফি খাওয়াবা নাহ?”

–” সিওর।”

–” ওকে, তুমি কফি বানিয়ে নিয়ে আসো। আমি সবার সাথে কথা বলে আসি।”

–” ওকে।”
বলেই সেহের চলে যেতে গেলেই আরসালের দিকে চোখ যায়। আরসালের দিকে তাকাতেই সেহের যেনো ভয় পেয়ে যায়। মনে হচ্ছে আরসালের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আরসাল কে এমন মনে হওয়ায় সেহের আর দাড়ায় নাহ চলে যায় কফি বানাতে। রাহুলও বাকি সবার সাথে কথা বলতে চলে যায়।আরসালও রাগেতে নিজের রুমে চলে যায়। আমান এগিয়ে এসে আশফির কাছে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” ছেলেটা কে রে?”

–” রাহুল ভাইয়া! তোমাদের বয়সের। ছোট আব্বুর বেস্ট ফ্রেন্ডের ছেলে। অনেক ফ্রেন্ডলি।”

–” ওহ।”
আমান মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আরসাল কে দেখে মনে হলো নাহ স্বাভাবিক আছে। যে আরসাল সেহেরের দিকে কাউকে তাকাতে দিতো নাহ। সেই সেহের কে কেউ জান বলে ডাকলো, আবার কাছেও টেনে নিলো, এইটা আরসাল সহজে মেনে নিবে এইটা ভাবাও যায় নাহ। আরসাল কই গেলো? দেখে আসি।”

আমান আরসাল কই গেছে দেখতে চলে যায়। ব্যাপার টাহ শুধু আমান নাহ আরও একজন খেয়াল করেছে। আর সে হলো নেহা। নেহাও মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” রাহুল ছেলেটা যখন সেহের কে কাছে টেনে নিলো, তখন তোমার মুখের রাগ আমি দেখেছি আরসাল। এই সেহেরকে নিয়ে তোমার ধারনা ঠিক কি? আমি যাহ ভাবছি তাই? আমাকে জানতে হবে। সব জানতে হবে আমাকে।”

★★★
আজ মেঘলা মেঘলা আবহাওয়া। রোদ নেই, মেঘ হলেও বৃষ্টি পড়ার সম্ভবনা কম। ওয়েদারটাহ বেশ সুন্দর। আরসাল আর আমান গার্ডেনে বসে আছে। আরসাল যে রেগে আছে আমান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু আরসাল নিজের রাগ কন্ট্রোল করে চুপ করে আছে। কিন্তু ভয় হলো কতক্ষণ কন্ট্রোল থাকবে আরসালের এই রাগ। আরসাল হঠাৎ দেখে সাথী একটা রং এর প্লেট নিয়ে যাচ্ছে। আরসাল উঠে সাথীর কাছে গিয়ে বলে ওঠে,
–” সাথী, রং খেলা তোহ শেষ। এই রং নিয়ে কই যাও?”

–” আসলে, রাহুল ভাইয়া বললো যে সেহের আপুকে রং মাখাবে। সবাই রং মেখেছে, সেহের আপু মাখে নি। তাই রাহুল ভাইয়া প্রথম রং মাখিয়ে দিবে। তাই আমাকে বললো রং নিয়ে যেতে।”
সাথীর কথা শুনেই আরসালের মেজাজ আরও গরম হয়ে গেলো। কোনো ভাবে নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
–” কই ওরা?”

–” সেকেন্ড রুফটপে।”

–” আচ্ছা শুনো, তোমার রাহুল ভাইয়া কে গিয়ে বলবা যে ওর আম্মু ওকে ডাকছে। আর এক্ষুনি। ওকে!”

–” ওকে।”
সাথী চলে যায়। আমান দুর থেকে দেখছিলো কিন্তু কিছু শুনতে পেলো নাহ। আমান এগিয়ে আসতেই আরসাল বলে ওঠে,
–” তুই রুমে যাহ আমি একটু আাসছি।”

–” আরে আরসাল কই যাস তুই?”
কিন্তু আরসাল কিছু নাহ শুনেই চলে যায়। আমান এরও আর কি করার নিজের রুমে চলে যায়।

সেহের রুফটপে রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে বাইরে টাহ দেখছে। এতো সময় রাহুলের সাথে কথা বলছিলো সেহের। সাথী এসে বললো রাহুলের আম্মু নাকি রাহুল কে ডাকছে। তাই রাহুল তার আম্মু ডাকছে শুনে কিছু সময়ের চলে যায়। তাই সেহের একা একা দাড়িয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছে। হঠাৎ রুফটপের দরজায় একটু আওয়াজ পেয়ে পিছন ঘুরে দাড়িয়ে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসাল কে দেখে সেহেরের কেমন যেনো ভয় লাগতে থাকে। কারন আরসালের চোখ লাল হয়ে আছে। সেহের আস্তে আস্তে আরসালের পাশ দিয়ে যেতে গেলে আরসাল সেহের এক হাত ধরে ফেলে। আরসাল সেহের হাত ধরতেই সেহের আরসালের দিকে ভিতু চোখে তাকিয়ে থাকে। আরসাল সেহেরের হাত ছেড়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” কিরে, আমি আসলাম আর তুই চলে যাচ্ছিস? আমার সাথে থাকতে মনে হয় তোর ভালো লাগে নাহ তাই নাহ? শুধু রাহুলের সাথে থাকতে ভালো লাগে তোর।”

আরসালের কথা শুনে সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তাও সেহের কি মনে করে বলে ওঠে,
–” তোমার সাথে কি, কথা বলা যায়?”

সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহের কে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে দিয়ে, একহাত সেহেরের পাশে দেওয়ালের উপর রেখে, সেহেরের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” ওহ, আমার সাথে কথা বলা যায় নাহ, তাই নাহ? তাহলে কার সাথে কথা বলা যায়? ঐ রাহুলের সাথে?”

–” কি বলছো তুমি এইসব?”

–” কেনো, ভুল বললাম নাকি? হাজার হলেও রাহুলের জান বলে কথা।”

–” কি বলছো এইসব?”

–” আমি কি বলছি তাই নাহ? তাহলে এতো সময় তোহ ঠিকই ছিলি যত সময় রাহুল ছিলো। আমি আসতেই চলে যাচ্ছিলি কেনো?”

–” কারন তুমি তোহ ঘৃনা করো আমাকে। তুমিই তোহ বলেছো তাই নাহ তুমি আমাকে ঘৃনা করো। তাহলে আমি রাহুল ভাইয়ার সাথে বা আর যার সাথেই কথা বলি নাহ কেনো তাতে তোমার কি?”
সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেহেরের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আরসাল সেহেরের চোখের পানি এক হাত দিয়ে মুছে দেয়। অন্য হাতে মুঠো করা রং রয়েছে আরসালের হাতে। আরসাল সেহেরের মুখে সেই মুঠো ভর্তি রং এর হাত রাখতেই সেহের চোখ বন্ধ করে নেয়। সেহেরের গলা দিয়ে হাত দিয়ে আরসালের হাত নেমে এসে সেহেরে হাতে মুঠি বেধে ধরে। সেহেরের মুখ, গলা, হাত দিয়ে লাল রংএ ভরে যায়। সেহেরের এই রূপ যেনো আরসালের কাছে বড্ড আবেদনময়ী লাগছে। তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহেরের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে আরসাল। সেহেরের আরসালকে এগিয়ে আসতে দেখে পিছিয়ে যেতে যেয়ে বাধা পায় দেওয়ালে। আরসাল সেহেরের অনেক কাছে চলে আসে। আরসালের নিশ্বাস সেহেরের মুখে আছড়ে পড়ে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আমাকে এতো ঘৃনা কেনো করো ভাইয়া? এখন নাহ বাসো, একটা সময় তোহ আমাকে ভালোবাসতে। তাহলে আজ এতো ঘৃনা কেনো করো?”

সেহেরের কথা শুনে আরসাল আবার পিছিয়ে আসে সেহেরের থেকে আর উল্টো দিকে ঘুরে দাড়ায়। সেহের এবার আরসালের সামনে এসে বলে,
–” আচ্ছা আগেও যদি আমি কারো সাথে মিশতাম তাহলেও তুমি এমোন করতে। কারন তখন আমাকে ভালোবাসতে। কিন্তু এখন তোহ আমাকে ভালোবাসো নাহ। তাহলে এখন আমি রাহুল ভাইয়ার সাথে কথা বললে এমোন কেনো করছো?”

আরসাল আবার উল্টো দিকে ঘুরে দাড়ায়। সেহের আবার আরসালের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” চুপ করে কেনো আছো? বলো! তোমাকে আজ বলতেই হবে। বলো ভাইয়া।”

আরসাল কিছুই নাহ বলে রুফটপ থেকে নিচে চলে যায়। সেহেরের চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি বেরিয়ে আসে। সেহেরও নিচে চলে যায় চোখ মুছতে মুছতে। কিন্তু রুফটপে আরও একজন আছে যে এইসব কিছু দেখেছে। আর সে হলে নেহা৷ আরসাল কে রং নিয়ে রুফটপের দিকে আসতে দেখে নেহার কেমন সন্দেহ হয়। তাই আরসালের পিছু নেয়, আর যাহ দেখার দেখে নেয়। নেহা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” যাহ সন্দেহ করেছিলাম তাই সত্যি হলো। তার মানে আরসাল সেহেরকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন কোনো একটা কারনে সেহের ঘৃনাও করে। কিন্তু ঘৃনা করার কারন টাহ কি হতে পারে? এই কারন টাহ আমাকে জানতে হবে। কিন্তু কার কাছে জানবো? কে বলবে আমাকে এই কাহিনি? একজন আছে, যে আমাকে এই কারনটাহ বলে দিবে।”

★★★
আশফি গার্ডেনে ঘুরে ঘুরে কাজ দেখছে। আসলে সন্ধ্যায় সঙ্গীত মেহেনদির জন্য গার্ডেনকে আবার সাজানো হচ্ছে। আশফি ঘুরে ঘুরে সেই সাজনো দেখছে। হঠাৎ চোখ পড়ে নেহা এগিয়ে আসছে তার দিকে। নেহাকে দেখতেই আশফির মুখে হাসি ফুটে উঠে। নেহা আশফির দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” হাই! কি করো?”

–” সঙ্গীত, মেহেন্দির জন্য সাজানো হচ্ছে তাই দেখছি।”

–” ওয়াও! অনেক সুন্দর হচ্ছে সাজনো।”

–” হুম।”

–” আচ্ছা আশফি। একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?”

–” কেনো নয়? বলো!”

–” আচ্ছা আশফি। আমি এইটা জানি যে আরসাল সেহেরকে ভালোবাসতো। কিন্তু কোনো একটা কারনে আরসাল সেহেরকে এখন আর ভালোবাসে নাহ। কেনো?”

–” কে বলেছে, ভাইয়া এখন সেহেরকে ভালোবাসে নাহ? ভাইয়া এখনো সেহেরকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে ভাইয়া। কিন্তু ভাইয়া তোহ অনেক যেদী, তাই সেদিনের ঘটনার জন্য ভাইয়া সেহেরকেই দায়ী করে। তাই হয়তো এমোন বলে। কিন্তু ভাইয়া এখনো সেহেরকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।”

আশফির কথা শুনে নেহার মারাত্মক রাগ উঠে। তাও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছিল সেইদিন।”
আশফি সেইদিনের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে দেয়। আরসাল সেহেরকে কতটা ভালোবাসতো, সেহেরকে হঠাৎ করেই তার নানা বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া, আরসালকে মায়া চৌধুরীর থাপ্পড় মারা, জোর করে বিদেশে পাঠানো সব বলে দেয়। নেহা সব শুনে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” তাহলে ঘটনা টাহ এই। সেহের কে আরসাল এতোটা ভালোবাসতো। কিন্তু এখন তোমার পরিবার এই ভালোবাসা মেনে নিলেও আমি যে মেনে নিবো নাহ আরসাল। চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে আরসাল চৌধুরীর বউ নেহা হবে। আর এইটায় ফাইনাল। তুমি যদি আমার নাহ হও, তাহলে সব শেষ করে দিবো আমি।”

নেহাকে কিছু ভাবতে দেখে আশফি বলে ওঠে,
–” নেহা কিছু কি ভাবছো?”

–” নাহ।”

–” আচ্ছা চলো, ঐদিকে যায়।”

–” ওকে! চলো।”
আশফি আর নেহা হেটে কথা বলতে থাকে।

সঙ্গীত + মেহেন্দি অনুষ্ঠান………

আরসাল রেডি হয়ে গার্ডেনে আসে। এসে দেখে এক অন্যরকম দৃশ্য। মেয়েরা বড় টুলের উপর বসে আছে আর মেহেন্দি আর্টিস্টরা মেহেন্দি পরাচ্ছে। আজ সব মেয়েরা একইরকম ড্রেস সহ সেজেছে। আরসালের হঠাৎ চোখ যায় সেহেরের উপর, আর সেহেরের উপর চোখ যেতেই যেনো চোখটাহ স্থির হয়ে যায়। বাকি সবার মতো সেহেরও একটা লাল কালারের ফুলানো ঘাগরা, সবুজ টপ, চুলগুলো সামনে পাফ করে পেছনে ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল, লাল লিপস্টিক, আর্টিফিশিয়াল ফুলের টিকলি, ফুলের কানের দুল, ফুলের গলায় সিম্পিল নেকলেস, লাল কাচের চুড়ি, সব মিলিয়ে পরি, আরসালের স্বপ্নের পরি। আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহের এখনো মেহেদি লাগানো শুরু করে নি, আশার হাতে মেহেদি পরানো হচ্ছে তাই দেখছে, কথা বলছে আর হাসছে।

*এইদিকে কেউ একজন একটা বাটি নিয়ে তার ভেতর থাকা মেহেদিতে একটা মেডিসিন মিশিয়ে দেয়। আর মনে মনে বলে ওঠে,
–” সেহের সোনা। এখন এই মেহেদি লাগালেই তোমার হাত এমন জ্বালা করবে, যে তুমি সইতেও পারবে নাহ। কান্না করবে তুমি। চিন্তা করো নাহ সেহের সোনা, এতে তোমার হাতের ক্ষতি হবে নাহ। জাস্ট একটু লাল হয়ে যাবে, কিন্তু প্রচন্ড জ্বালা করবে। তোমার আর আমার সম্পর্কটাহ তোমার চোখের পানি দিয়ে শুরু হোক।”

কথাগুলো মনে মনে বলেই অচেনা মানুষটি হেসে দেয়। তারপর মেহেদির বাটিটাহ একজন সার্ভেন্ট কে দিয়ে বলে সেহেরকে এইটা দিয়ে আসতে।
একজন সার্ভেন্ট এসে সেহেরের হাতে মেহেদীর বাটি টাহ এগিয়ে দিয়ে বলে,
–” ম্যাম, আপনার মেহেদি।”

–” দাও।”
সেহের মেহেদির বাটি টাহ হাতে নিয়ে একজন মেহেদি আর্টিস্ট এর হাতে দিয়ে নিজে টুলে বসে পড়ে। আরসাল দুরে একটা চেয়ারে বসে আমানের সাথে গল্প করছে আর সেহেরকে দেখে যাচ্ছে। মেয়েদের মেহেদি দেওয়া শেষ হলে, সঙ্গীতের অনুষ্ঠান শুরু করা হবে। মেহেদি আর্টিস্ট টিউবে মেহেদি ভরে নেয়। সেহের হাত বাড়িয়ে দেয়, মেহেদি দিতে থাকে হাতে।
কিছুক্ষণ মেহেদি দেওয়ার পর সেহেরের হাতে কেমন জ্বালা জ্বালা করছে। কিন্তু সেহের প্রথম এতো খেয়াল দেয় নাহ, ভাবে যে হয়তো হালকা জ্বালা হচ্ছে, পরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আর একটু সময় যেতেই সেহেরের হাতে প্রচুর জ্বালা শুরু হয়। সেহের মেহেদি আর্টিস্ট এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার হাত টাহ বেশ জ্বালা জ্বালা করছে।”

–” কি বলছেন ম্যাম? আমরা পুরােনমেহেদি চেক করে এনেছি। কোনো সাইড ইফেক্ট হওয়ার কথা নাহ।”

–” নাহ অনেক জ্বালা করছে তোহ। আহ!”

–” কিন্তু ম্যাম।”
সেহের নিজেই নিজের হাত ধরে রাখে, আর সেহেরের চোখ দিয়ে পানি বের হতে থাকে। আরসালের হঠাৎ মনে হয় সেহের একটু অস্বাভাবিক হয়ে আছে, আর মেহেন্দি আর্টিস্ট মেহেদি লাগানো অফ করে কি যেনো বলছে। আরসাল উঠে দাড়ায়, আরসালের মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। হঠাৎ দেখে সেহের কান্না করে দিয়েছে। আরসাল আর এক সেকেন্ডও নাহ দাড়িয়ে সেহেরের কাছে চলে আসে আর উদগ্রীব হয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কি হয়েছে? আপনি চুপ করে আছেন কেনো? সেহেরের কি হয়েছে।”

মেহেন্দি আর্টিস্ট মেয়েটাহ আরসালের কথায় ভয় পেয়ে যায়, আর বলে ওঠে,
–” আসলে স্যার ম্যাম বলছেন ওনার হাতে নাকি জ্বালা করছে।”

–” জ্বালা করছে মানে কি? আপনাদের তোহ বলা হয়েছিল মেহেদি চেক করে আনার কথা।”

–” জ্বি স্যার আমরা তোহ চেক করেই এনেছি।”

–” তাহলে জ্বালা করে কিভাবে?”
আরসাল চিৎকার করে বলে উঠে। মেহেদি আর্টিস্টও মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়। সবাই আরসালের চিৎকারের আওয়াজ শুনে এগিয়ে আসে। সবাই জিজ্ঞাসা করতে থাকে কি হয়েছে। কিন্তু আরসাল আর কিছু নাহ বলে সেহেরের দিকে তাকায়। আমান মেহেদি আর্টিস্ট এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? আর সেহের কাদছে কেনো?”

মেহেদি আর্টিস্ট বলে দেয় সেহেরের হাত জ্বালা করছে। এইদিকে সেহের কান্না করতেই আছে। প্রচন্ড জ্বালা করছে সেহেরের হাত। সেহের যেনো আর সহ্য করতে পারছে নাহ। আরসাল যেনো সেহেরের কান্না আর সহ্য করতে পারছে নাহ। আরসাল আশফির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আশফি দ্রুত পানি নিয়ে আই, যাহ।”

আশফি তাড়াতাড়ি পানি আনতে চলে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে সেহেরের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কিছু হবে নাহ কলিজা। সব ঠিক হয়ে যাবে জান। একটু ধের্য ধর।”

–” খুব জ্বালা করছে আর সহ্য করতে পারছি নাহ।”

–” সব ঠিক হয়ে যাবে জান। আরে পানি কই। পানি আনতে এতো টাইম লাগে নাকি।”
আশফি পানি নিয়ে আসলে আরসাল দ্রুত পানি নিয়ে সেহেরের হাত ধুয়ে দেয়। সেহেরের হাত ধুতেই দেখে সেহেরের হাত পুরো লাল হয়ে গেছে। আরসালের চোখেও পানি জমা হয়ে যায়, সেহেরের কষ্ট দেখে। আরসাল তাড়াতাড়ি পলক ফেলে নিজেকে সামলে নেয়। আর কোনো কথা নাহ বলে সেহেরকে কোলে তুলে নেয়। সেহেরের হাতে জ্বালার জন্য যেনো কিছুই খেয়াল নাই। সবাই ওদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নেহা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরসালের এইসব খেয়াল করার সময় নাই। আরসাল সেহেরকে কোলে করে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসে। এসে সেহেরকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে, একটা মলম নিয়ে আসে। আরসাল সেহেরের হাত এগিয়ে নিয়ে মলম টাহ লাগিয়ে দেয়। এতে সেহেরের হাতে একটু আরাম লাগে। এতোক্ষণে সেহের আরসালের দিকে খেয়াল দেয়। আর দেখে আরসাল খুব আস্তে আস্তে মলম টাহ লাগাচ্ছে, মনে হচ্ছে ব্যাথাটা সেহের নাহ আরসালই পেয়েছে। আরসালের চোখে পানি জমে আছে, আর তাহ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। আরসাল মলম টাহ লাগিয়ে দিয়ে সেহেরের দিকে তাকাতে দেখে সেহের ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আরসালের সেইদিকে খেয়াল নাই, আরসালের মনে হচ্ছে কোনো পরির থেকেও সুন্দরী কেউ তার সামনে বসা। কাউকে কান্না করলেও যে এতো সুন্দর লাগতে পারে এই প্রথম আরসাল বুঝতে পারলো। এই সাজের সাথে কান্না করার জন্য সেহেরের চোখের পাপড়িতে ফোঁটা ফোঁটা পানি আর নাক টাহ লাল হয়ে আছে, এ যেনো অন্যরকম সুন্দরের উধাহরন।
আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে ওঠে,
–” জ্বালা কমেছে।”

–” হুম। হালকা।”

–” ঠিক হয়ে যাবে।”
কথাটাহ বলেই সেহেরের মুখ এগিয়ে নিয়ে এসে সেহেরের কপালে চুমু দেয় আরসাল। সেহেরও চোখ বন্ধ করে নেয় আরসালের স্পর্শে। আরসাল আবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এখানে রেস্ট নে। কোথাও যাবি নাহ। আমি একটু গার্ডেনে যাচ্ছি।”

কথাটাহ বলেই আরসাল বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

★★★
রাহুল একটা কাজে বাইরে গেছিলো। এসেই সেহেরের কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়ে আর জানতে পারে সেহের আরসালের রুমে আছে। আর কিছু নাহ ভেবেই আরসালের রুমে এসে দেখে সেহের বিছানার উপর বসে আছে। রাহুল রুমে ঢুকতেই সেহের দাড়িয়ে পড়ে। রাহুল সেহেরের কাছে এগিয়ে এসে বলে,
–” হাতে জ্বালা কমেছে।”

–” হুম।”
রাহুল আরও কিছু কথা বলার পর সেহের জোর করে রাহুল কে পাঠিয়ে দেয় ফ্রেশ + খাওয়া + রেস্টের জন্য।

★★★
কেউ একজন একা একা বলতে থাকে,
–” এতো কষ্ট করে মেহেদীর বাটিতে মেডিসিন দিলাম যেনো সেহেরের কষ্ট দেখে শান্তি পায়। আর সেখানে এখন রাগ উঠতেছে। আরসাল ওর কোলে করে নিয়ে চলে গেলো। আরসাল তুমি শুধু আমার, শুধু আমার। সেহের এখন আমার লাইফের সবচেয়ে বড় শত্রু। কারন ঐ একমাত্র মেয়ে যে তোমাকে আমার কাছে থেকে নিয়ে যেতে পারে। তাই ওকে আমি আমার লাইফে ঢোকার আগেই সরিয়ে দিবো।”

কথাগুলো বলেই মানুষটাহ শয়তানি হাসি দেয়।

চলবে……………..🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-১৫+১৬

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 15+16

আজ আশার এইংগেজমেন্ট। ঘরোয়া ভাবে এইংগেজমেন্ট হলেও কাজ তোহ আর কম নাহ। তাই সবাই ব্যাস্ত। বাড়ি সাজানোর লোকজন এসে বাড়ি সাজানোর কাজে ব্যাস্ত। বাইরে থেকে শেফ আনা হয়েছে। তারা রান্নাবান্না করছে।
আশা জানালার কাছে দাড়িয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে,
–” আজ থেকে এক একটা দিন যাবে আর আমি তোমার কাছের থেকে দুরে সরে যাবো আমান। অনেক দুরে সরে যাবো আমি। কয়েকদিনের মাঝেই অন্য কারো নামে লেখা হয়ে যাবো আমি। আমার উপর শুধু তার অধিকার থাকবে। একে বারের জন্য হারিয়ে যাবো আমি তোমার জীবন থেকে।”

সেহের নিচে ঘুরে ঘুরে ঘর সাজানো দেখছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায় সেহের। ধাক্কা খেয়ে কয়েক পা পিছে চলে যায় সেহের। কার সাথে ধাক্কা খেয়েছে নাহ দেখে বলে ওঠে,
–” কোন দেশের জিরাফরে, একদম আমার সামনে এসে খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছে। উফ!”

সেহের কথাগুলো বলেই সামনে তাকিয়ে দেখে আরসাল তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরসালকে দেখেই সেহেরের গলা শুকিয়ে আসে। সেহের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ভা ভা ভা ভাইয়া তু তু তু তুমি।”

–” কি যেনো বলছিলি তুই আমাকে?”

–” আ আ আমি, ক ক কই নাহ তোহ।”

–” আমি জিরাফ, আমি খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছি।”

–” ওমা এগুলো কি আমি তোমাকে বললাম নাকি?”

–” তাহলে কাকে বললি।”

–” আমাকে!”

–” অনেক চালাক মনে করিস নিজেকে তাই নাহ?”

সেহের কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ। এমন সময় মায়া চৌধুরী তাদের দিকে এগিয়ে এসে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, মা কি হয়েছে? এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

–” কিছু নাহ বড় আম্মু।”

–” আরসাল তুই কি সেহের কে বকা দিয়েছিস নাকি?”

আরসাল সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে, মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নাহ।”

–” আচ্ছা, ওহ হ্যা ভালো কথা। নেহাকে বলেছিস আরসাল আজ আসার কথা।”

–” হুম, বলেছি।”
কথাটা বলেই আরসাল উপরে নিজের রুমে চলে যায়। আর সেহের মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” হুমমমম, নেহাকে বলবে নাহ আবার। ঐ নেকা নাহ আসলে মি. আরসালের তোহ আবার কিছুই ভালো লাগবে নাহ। নেহা এসে ওনার সাথে চিপকে থাকবে এইটায় তোহ ওনি চায়। অসহ্য।”
সেহের রেগে নিজের রুমে চলে যায়।

In evening………

ঘরোয়া ভাবে করার কথা থাকলেও, চৌধুরী বাড়ির কোনো কিছু কম আয়োজন করতে গেলেও ভালোই আয়োজন হয়ে যায়। যেমন আশার এইংগেজমেন্ট। ঘরোয়া ভাবে করতে চায়লেও বেশ কিছু মানুষকে ইনভাইট নাহ করলেই নয়, এমোন মানুষ এসেছেন। আরসাল, আশা, সেহের, আশফি, সাইফের কিছু ফ্রেন্ড সারকেল, এবং দুই বাড়ির অর্থাৎ আরসাল এবং সাইফদের কিছু নিকট আত্নীয় দিয়ে, জিহাদ চৌধুরী, কবির চৌধুরী এবং আজিজ চৌধুরী, সিরাজ রহমানের কিছু বন্ধু মহল দিয়ে মোটামুটি বেশ একটা আয়োজন হয়েছে।
আরসাল রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো। আরসাল নিচে আসতেই নেহা আরসালের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” Wow, Arsal. You looking so handsome.”

–” Thanks Neha. তোমাকেও সুন্দর লাগছে।”

–” Thank you dear.”
আরসাল আর কিছু নাহ বলে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। আরসালকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে নেহা বলে ওঠে,
–” আরসাল কাউকে খুজছো নাকি?”

–” হুম, আমানকে দেখছি নাহ।”

–” হেই ব্রো!”
কারো আওয়াজে আরসাল আর নেহা পাশ ফিরে দেখে আমান দাড়িয়ে আছে। আরসালের কাছে আমানকে মনে হচ্ছে, চোখে হতাশা, মুখে কৃত্রিম হাসি ফোটানো। আরসাল আমানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ওঠে,
–” আর কিছুদিন ওয়েট কর দোস্ত। বিয়ের দিন পর্যন্ত এই কষ্ট মেনে নে। তারপর আমি সব ঠিক করে দিবো। প্রমিস করেছি নাহ তোকে, তোর লাইফের সব কষ্ট আমি দুর করে দিবো। Just wait and watch.”

আমান আরসালের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কিরে, কি ভাবছিস?”

–” কিছু নাহ।”
হঠাৎ মায়া চৌধুরী জোরে বলে ওঠে,
–” ঐতোহ সেহের আশাকে নিয়ে এসেছে।”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে সবাই সিড়ির দিকে তাকায়। আমানও আস্তে আস্তে সিড়ির দিকে তাকাতেই যেনো মনে হয় কোনো পরি নেমে আসছে। আশা আমানের পছন্দ করা লেহেঙ্গা টাহ পরেছে। লেহেঙ্গার ঘাগরা চকলেট কালারের, সাদা কালারের টপ, চকলেট কালারের দোপাট্টা, মুখে একটু মেকাপ, চুলগুলো সামনে পাফ করে খোপা করে স্টোনের ক্লিপ লাগানো, কানে ঝুমকা, হাত ভর্তি চুড়ি, কপালে টিকলি, গলায় হালকা গহনা, সব মিলিয়ে আশাকে পরির মতো লাগছে। আমান যেনো আশার দিক থেকে চোখ সরাতেই পারছে নাহ। আশাকে নিয়ে সাইফের পাশে বসানো হলো।
শুধু আমান নয়, আরও এক জোড়া চোখ আরও একজনকে মুগ্ধ নয়নে দেখতে ব্যাস্ত। সে আর কেউ নয়, সে হলো আরসাল, আর দেখছে সেহেরকে। সেহের আরসালের পছন্দ করা লেহেঙ্গা পরেছে। যার ঘাগরা ব্লু কালারের, টপ পিংক কালারের, দোপাট্টা হোয়াইট কালারের, সেহের একদম হালকা মেকাপ করেছে, চোখ ভর্তি কাজল, ঠোঁটে পিংক লিপস্টিক, চুল গুলো সামনে হালকা পাফ করে ছেড়ে দেওয়া, কানে সিলভার কালারের ঝুমকো, হাতে চুড়ি, গলাই একটা লকেট সহ চেইন এতেই যেনো সেহেরকে কোনো পরির থেকে কম লাগছে নাহ। আরসাল কোনোভাবেই যেনো সেহেরের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছে নাহ।
সেহের আশার পাশে বসে কথা বলতে বলতে আরসালের দিকে চোখ যায়। আর আরসালকে দেখেই সেহের মনে মনে বলে ওঠে,
–” ক্রাস এগেইন।”

আরসাল আজ হোয়াইট শার্ট যার ওপরের দুইটা বাটন খোলা, ব্লাক ব্লেজার, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি আর কপালে কয়েকটি পড়ে আছে, পায়ে ব্লাক লোফার, আরসালকেও দেখে সব মেয়েরা ফিদা হয়ে গেছে।
আরসাল আর সেহের একে অপরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা নেহার নজরে পড়তেই আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল!”

নেহার কথায় আরসালের ধ্যান ভাঙে। সেহেরের থেকে চোখ সরিয়ে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম, বলো।”

–” এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো? চলো ওদিকে যায়।”

–” ওকে চলো।”
সেহের দেখে আরসাল নেহার সাথে কোথায় যেনো যাচ্ছে। দেখেই সেহেরের মেজাজ গরম হয়ে যায়। সেহেরেরও ওদের পিছন পিছন যেতে শুরু করে কোথায় যায় দেখার জন্য। আরসাল কিছুদুর গিয়ে সাইডে একটা মিররে দেখতে পায় সেহের তাদের দিকে উকি দিয়ে দিয়ে পিছন পিছন লুকিয়ে আসছে। দেখেই আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের এইভাবে উকি দিয়ে পিছন পিছন লুকিয়ে কেনো আসছে? তাহলে কি সেহের আমাকে আর নেহাকে ফলো করছে?”

আরসাল নেহাকে নিয়ে রুফটপের দিকে গিয়ে কায়দা করে সেহেরের চোখের আড়ালে গিয়ে নেহাকে বলে ওঠে,
–” নেহা, আমাকে একটা ফোন করতে হবে। তুমি পার্টির ওখানে যাও। আমি কলটাহ শেষ করেই আসছি।”

–” ওকে।”

–” শোনো এইদিক দিয়ে যাও, ঘোরা কম লাগবে।”

–” ওকে।”
নেহা চলে যায়। আরসাল এবার লুকিয়ে সেহেরের কান্ড দেখতে থাকে। সেহের দেখে হঠাৎ করেই দুইজন উধাও হয়ে গেছে। সেহের মাজায় হাত দিয়ে জোরে জোরে বলতে শুরু করে,
–” এমা! দুনোটা গেলো কই? রুফটপে যায় নিহ তোহ আবার। সবাই নিচে পার্টির ওখানে আর এই দুইটা রুফটপে কেনো আসবে? নিশ্চয় কোনো কু মতলব আছে। ঐ নেহার সাথে মি. আরসাল চৌধুরী নিশ্চয় কোনো কুমতলবে রুফটপে এসেছে। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

সেহেরের কথা শুনে আরসালের প্রচন্ড রাগ উঠতে থাকে। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের, ফাজিল একটা। এইসব ভাবে আমাকে নিয়ে। আমি নেহাকে নিয়ে কুমতলবে রুফটপে এসেছি। তুই কি মজা দেখাবি আমাকে, মজা তোহ আমি তোকে দেখাবো।”

সেহের রুফটপে এসে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে নাহ পেয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” রুফটপে তোহ কেউ নাই। তাহলে কোথায় গেলো ওরা?”

সেহের ভাবতে ভাবতে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কোনো একজোড়া হাত তাকে টান দেয়। সেহের গিয়ে সেই লোকটার বুকের মাঝে গিয়ে পড়ে। সেহের ভয় পেয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকাতেই দেখে আরসাল। এতোসময় এসির নিচে থাকায় আরসালের হাত মারাত্মক ঠান্ডা হয়ে আছে। আরসাল সেহেরের দোপাট্টার নিচ দিয়ে এক হাত দিয়ে সেহেরের কোমর জড়িয়ে রেখেছে। আরসালের ঠান্ডা হাত সেহেরের কোমরে লাগতেই সেহের শিউরে উঠে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই আমাকে ফলো করেছিলি কেনো?”

আরসালের কথা শুনে সেহের অবাক হয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর নিজেকে সামলে সেহের বলে ওঠে,
–” কখন?”

–” তুই আমাকে ফলো করেছিলি। তারপরে কি যেনো বলছিলি, আমি নেহার সাথে কুমতলবে রুফটপে আসছি।”

–” নাহ মানে।”

–” কু মতলবে যখন এসেছি, তাহলে কাজ সেরেই যাবো।”

–” নেহা কই?”

–” নিচে, নেহার সাথে নয় তোর সাথে।”

–” মানে!”

–” মানে, বোঝাচ্ছি।”
আরসাল আর কিছু নাহ বলে সেহেরের মুখের দিকে মুখ এগিয়ে আনতেই সেহের চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে, আরসালের কলার্ট চেপে ধরে এক হাত দিয়ে, আর এক হাত দিয়ে নিজের ঘাগরা চেপে ধরে। আরসাল সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর দুই গালে চুমু একে দেয়। সেহেরের যেনো পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করে আরসালের ছোয়ায়। আরসালের নিশ্বাস সেহেরের মুখের উপর আছড়ে পড়ছে। সেহেরকে নিজের দিকে আরও মিশিয়ে নেয় আরসাল। আরসাল সেহেরের মাথার পিছনে আর এক হাত দিয়ে সেহেরের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ কি মনে করে আরসাল সেহেরকে ধাক্কা মেরে দুরে সরিয়ে দিয়ে আরসাল নিচে চলে যায়। সেহের অবাক হয়ে আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুই বুঝতে পারছে নাহ সেহের। আরসাল নিজেই তার কাছে এলো, আবার নিজেই তাকে দুরে সরিয়ে দিলো। সেহের আর কিছু নাহ ভেবে নিচে চলে আসে।
জিহাদ চৌধুরী স্টেজে উঠে বলতে শুরু করে,
–” গুড ইভিনিং লেডিস এন্ড জেন্টেল ম্যান। সবাইকে জানায় আজ এই এইংগেজমেন্ট পার্টিতে আসার জন্য হাজারো ধন্যবাদ। আজ চৌধুরী বাড়ির আদরের মেয়ে আশা চৌধুরীর এনগেজমেন্ট আমার বন্ধু সিরাজ রহমানের ছেলে সাইফ রহমানের সাথে। আগামী কয়েকদিনের মাঝেই তাদের শুভ বিবাহ সম্পন্ন করা হবে। আপনারা সবাই ওদের সুখী জীবনের জন্য দোয়া করবেন।”

জিহাদ চৌধুরী কথাগুলো বলে আশা আর সাইফ কে হাতের ইশারা করে তার কাছে আসতে বলে। সবাই এগিয়ে আসে স্টেজের দিকে। আশা এবং সাইফও গিয়ে জিহাদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে দাড়ায়। সিমা রহমান একটা বক্স থেকে একটি আংটি বের করে সাইফের দিকে এগিয়ে দেয়। কেয়া চৌধুরী আশার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আশা হাতটাহ এগিয়ে দে মা, সাইফ আংটি টাহ পরিয়ে দিক।”

আশা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে একপাশে আমান দাড়িয়ে আছে তার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে। আশার হাতটি কেয়া চৌধুরী তুলে দেন সাইফের বাম হাতের উপর। আমান তাকিয়ে আছে সাইফের উপর রাখা আশার হাতের দিকে। আশা মাথা নিচু করে চোখের পানি সামলানোর চেষ্টা করছে। সাইফ আশাকে আংটি পরিয়ে দেয়। আশাও কাঁপা হাতে সাইফ কে আংটি পরিয়ে দেয়। দৃশ্যটি দেখার সাথে সাথে আমান চোখ বন্ধ করে ফেলে। আমানের এমোন মনে হচ্ছিল যে তার দম বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আরসাল এগিয়ে এসে আমানের কাঁধে হাত রাখে। আমান পাশে আরসালের দিকে তাকায়। আরসাল আমানের দিকে তাকাতেই আরসাল বুঝতে পারে আমান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে। আরসাল আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এনজয় আমান। বিয়ের আগের মুহুর্ত পর্যন্ত। রেডি থাক, নতুন কাউকে পাওয়ার জন্য।”

–” মানে!”

আরসাল আর কিছু নাহ বলে আমানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়।

পার্টিতে যে যার মতো আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, মজা করছে। আশফি নেহার সাথে কথা বলছে। আশফি কি মনে করে যেনো স্টেজে উঠে স্পিকার ঠিক করে বলতে শুরু করে,
–” হ্যালো এভ্রিওয়ান। আজ আমার আদরের ছোট বোনের এইংগেজমেন্ট। আপনারা সবাই যে অনুষ্ঠানে এসেছেন তার জন্য আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজ এই অনুষ্ঠান কে আরও রঙিন করে তোলার জন্য, আমি দুইজন মানুষের কাছে একটা রিকুয়েষ্ট করবো। আচ্ছা, আরসাল ভাইয়া আর আমান ভাইয়া তোমাদের মনে আছে, আগে তোমরা কত সুন্দর ডুয়েট গান করতে। অনেক দিন তোমাদের ডুয়েট পার্ফমেন্স দেখি নাহ। কিন্তু আজ খুব ইচ্ছা করছে। প্লিজ দুইজনে মিলে একটা গান শোনাও।”

আশফির কথা শেষ হলে সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আশফি স্টেজ থেকে নেমে এসে একটা গিটার নিয়ে আরসালের সামনে দাড়ায়। আরসাল গিটারটাহ হাতে নিয়ে মুচকি হেসে আশফির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আশফিও হেসে দেয়। আরসাল গিটার নিয়ে স্টেজে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে। আমান স্টেজে উঠে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাড়ায়। বেজে ওঠে আরসালের গিটার। সবাই তাকিয়ে আছে স্টেজের দিকে।

আরসাল ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,,এই অবেলায়,
তোমারই আকাশে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,, নীরব আপোষে, ভেসে যায়,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,সেই ভীষন, শীতল ভেজা চোখ,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,, কখনো দেখাইনি তোমায়,,,,,,,,,,,

আমান ঃ ( আশার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,,,,,,,,কেউ কোথাও ভালো নেই যেন সেই,,,,,,,,,
,,,,,,,,,কতকাল আর হাতে হাত অবেলায়,,,,,,,,
,,,,,,কতকাল আর ভুল অবসন্ন বিকেলে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়,,,,,,,

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,সেই কবেকার ভায়োলিন,,,,,,,,,
,,,,,,,,,বেজে যায় কতদিন,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,প্রানে চাপা ঢেউ,,,,,,,,
,,,,,,,,,,দেখেনি আর কেউ,,,,,,,,,

আরসাল + আমান ঃ ( একে অপরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,,কখনো অভিমান,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,অবাধ্য পিছুটান,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,জানি নাহ কি কষ্টে এই অবেলায়,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তবুও নির্বাসন বাসর সাজিয়ে,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,ঠোঁটে চেপে ধরা থাক ভালোবাসায়,,,,,,,,

সেহের একভাবে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। সেহেরের ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে আরসাল কে টাইট করে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পারছে নাহ। আবার জানেও নাহ এমোন ইচ্ছে করার কারন কি? চোখ ছল ছল করছে সেহেরের। আশার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছে একভাবে। আশার কেনো জানি নাহ মনে হচ্ছে আমান ভালো নেই। আমানের লাইফে তার নিজেকে খুব দরকার।

আরসাল ঃ ( সেহেরে দিকে আবেগী চোখে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,,,ঘুনে খাওয়া মেঘে কালো হয়ে যায়
হৃদয় যখন,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,একা একা শুধু অকারণেই ঝরে বৃষ্টি এমোন,,,,
,,,,,,,,,,,আজো তাই,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,অবাক রঙে একে যায়,,,,,,
,,,,,,,সাদা কালো রং মাখা ফানুসের মুহুর্ত রাঙায়,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,ভীষণ কালো মেঘ,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,পুড়ে ছাই আবেগে আজো তাই,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,অবাক জোছনায় পোড়া চোখ,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,তবুও সাজাই,,,,,,,

আমান ঃ ( আশার দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,,,,,এই সন্ধ্যায়,,,,,,,,
,,,,,,দুচোখ সাগরে,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বুকের পাজড়ে ভেসে যায়,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,অবাক জোছনায় লুকিয়ে রেখেছি,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়,,,,,,,,

আরসাল ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,,এই অবেলায়,
তোমারই আকাশে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,, নীরব আপোষে, ভেসে যায়,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,সেই ভীষন, শীতল ভেজা চোখ,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,, কখনো দেখাইনি তোমায়,,,,,,,,,,,

আরসাল + আমান ঃ ( দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে )
,,,,,,,,,,,,,,,,কেউ কোথাও ভালো নেই যেন সেই,,,,,,,,,
,,,,,,,,,কতকাল আর হাতে হাত অবেলায়,,,,,,,,
,,,,,,কতকাল আর ভুল অবসন্ন বিকেলে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,ভেজা চোখ দেখাইনি তোমায়,,,,,,,

আরসাল আর আমানের গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আমান আর আরসাল একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল স্টেজ থেকে নিচে নেমে এসে, সেহেরের দিকে তাকাতেই দেখে সেহেরের চোখ পানিতে ছল ছল করছে। সেহেরের চোখে পানি দেখে আরসালের বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। আরসাল সেহেরের দিকে এগিয়ে আসতেই সেহেরের উপরে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। আরসাল সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

★★★
আশা নিজের রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। অনুষ্ঠান অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। চারপাশে গাঢ় অন্ধকার হলেও রাতের এই বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোই লাগছে আশার। আশা মনে মনে ভাবছে,
–” বিয়ের দিন ফিক্সড হয়ে গেলো আমান। সামনে সপ্তাহেই আমার বিয়ে। আর আমিও তোমার থেকে একেবারের জন্য দুরে চলে যাচ্ছি। অন্য একজনকে নিজেকে লিখে দিবো। তার ছোয়া, চাওয়া দেখতে হবে আমাকে। হারিয়ে ফেললাম তোমাকে আমান।”

কাঁদতে কাঁদতে বারান্দার রেলিং ঘেসে বসে পড়ে আশা।

★★★
কেটে যায় দিন। এগিয়ে আসে নতুন সময়। ঠিক সেরকমই দেখতে দেখতে আশার বিয়ের সময় চলে আসে। একটা রিসোর্টে আশার বিয়ের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। রিসোর্ট টাহ বেশ ভালোই দুর। সেখান থেকেই বিয়ের সব ফাংশন করা হবে। প্রথম দিন সকালে রং খেলা, বিকালে সংগীত মেহেন্দি, ২য় দিন গায়ে হলুদ, তার পরের দিন বিয়ে।
সবাই রেডি হচ্ছে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য। সবার ব্যাগ, লাগেজ আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রিসোর্টে। এখন শুধু মানুষ গুলোর যাওয়া বাকি।
আরসাল নিজের রুমে রেডি হচ্ছে এমন সময় একটা কল আসে। আরসাল ফোন টাহ তুলে দেখে নেহা ফোন দিছে। আরসাল কল রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যা, নেহা বলো।”

–” আরসাল, একটা প্রব্লেম হয়েছে। আমি তোদের বাসায় এসে তোদের মিট করতে পারছি নাহ। এদিকে তোহ আমি বাংলাদেশে অনেক দিন পর, রিসোর্ট টাও ঠিক মতো চিনি নাহ। কি হবে?”

–” ওকে ওকে, ডোন্ট ওয়ারি। তুমি চিন্তা করো নাহ। আমি আশফি কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ও তোমাকে রিসোর্টে নিয়ে আসবে৷ ওকে!”

–” হুম।”

–” বাই।”
আরসাল ফোন কেটে দিয়ে আশফিকে ফোন করে বলে তার রুমে আসার জন্য। কিছুক্ষণ পর আশফি আরসালের রুমের দরজা হালকা খুলে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া।”

–” ওহ, আশফি এসেছিস। এদিকে আয়। শোন, নেহা কিছু প্রব্লেমের জন্য এখানে আসতে পারছে নাহ। তোর কাজ হলো নেহার বাসায় গিয়ে ওকে নিয়ে রিসোর্টে আসা। ওকে।”

–” ডান ভাইয়া!”
আশফি আরসালের রুম থেকে বেরিয়ে খুশিতে লাফাতে থাকে। আর দেরি নাহ করে নেহার বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে আশফি।
আরসাল রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতেই মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আরসাল!”

–” আম্মু, তুমি এখনো যাও নি? আর কে কে বাদ আছে যেতে?”

–” হ্যা, আমি এখুনি বেরিয়ে যাবো। তুই, আমান, আশা, আর সেহের একসাথে আই।”

–” সেহের, আশা এখনো যায় নি।”

–” নাহ, ওদের নিয়ে তোরা আই। আমি গেলাম।”

–” হুম, যাও। সাবধানে যেও।”

–” তোরাও সাবধানে আসিস।”
বলেই মায়া চৌধুরী বেরিয়ে যায়। আরসাল কিছুসময় দাড়িয়ে থেকে উপরে দেখতে যায় ওদের কত দুর হলো। আরসাল সেহেরের রুমের দরজা হালকা নক করতেই ভেতর থেকে সেহের বলে ওঠে,
–” আশা এসেছিস, ভেতরে আই। দেখ আমার জামার চেইন টাহ কিছুতেই আটকাতে পারছি নাহ। একটু লাগিয়ে দে তোহ।”

সেহের চেইন লাগাতেই পিছন ফিরে লোকটাকে দেখে চেচিয়ে উঠে। আসলে আরসালই সেহেরের চেইন লাগিয়ে দিয়েছে। সেহের চেচিয়ে উঠতেই আরসাল এক হাত দিয়ে সেহেরের মুখ চেপে ধরে আর এক হাত দিয়ে সেহেরের কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আরসাল রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” চেচাচ্ছিস কেনো ইডিয়েট?”

সেহের উম উম করতে থাকে। আরসাল সেহেরের মুখের থেকে হাত সরিয়ে নিজেও সরে দাড়ায়। সেহের হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ওঠে,
–” তুমি আমার জামার জিপার লাগিয়েছো?”

–” তুই তোহ বললি, লাগিয়ে দিতে।”

–” আমি তোমাকে বলেছি, আমি তোহ আশাকে বলেছি।”

–” এখানে আমি ছাড়া তোহ আর কাউকে দেখতে পারছি নাহ।”
এমন সময় আশা সেহেরের রুমে এসে বলে ওঠে,
–” কিরে তুই রেডি? আরে ভাইয়া তুমি এখানে?”

–” হুম। তোদের হয়ে গেলে নিচে আই।”
আরসাল কথাটাহ বলেই নিচে এসে দেখে আমান দাড়িয়ে আছে। কিছু সময় পর আশা আর সেহের নেমে আসলে ওরা গাড়িতে উঠে বসে এবং রিসোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

★★★
আশার বিয়ে যে রিসোর্টে ঠিক করা হয়েছে, রিসোর্ট টাহ অনেক বড়। রিসোর্টে তিনটি বাংলো আছে। সবাই মিলে ঠিক করেছে, একটা বাংলোতে অবিবাহিত ছেলেরা, আর একটা বাংলোতে অবিবাহিত মেয়েরা, আর একটা বাংলোতে বিবাহিতরা থাকবে। রিসোর্টের এক পাশে বড় গার্ডেন আছে, একপাশে বড় সুইমিংপুল আছে, বলতে গেলে এক কথায় অনেক সুন্দর পরিবেশ।
আরসালদের গাড়ি রিসোর্টে এসে থামে। সেহের গাড়ি থেকে নেমেই বলে ওঠে,
–” Wow! Nice! আশা দেখ কত সুন্দর রিসোর্ট টাহ।”

–” হুম! অনেক সুন্দর।”
আরসাল ওদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এখনো অনেক সময় আছে পরে দেখিস। অনেক রাস্তা জার্নি করে এসেছিস, ভেতরে গিয়ে রেস্ট নে।”

কথা টাহ বলেই আরসাল আর আমান ভেতরে চলে যায়। সেহের আর আশাও ভেতরে চলে যায়।

★★★
সেহের নিজের রুমে এসে দেখতে থাকে। জায়গাটা সেহেরের খুব পছন্দ হয়েছে। সেহের বারান্দায় এসে দাড়িয়ে চারপাশে দেখতে থাকে। সেহেরের বারান্দার পাশেই ছেলেদের বাংলো আর সেহেরের বারান্দার সাথেই প্রায় লাগানো একটা বারান্দা আছে। সেহের চারপাশে দেখতে ব্যাস্ত। এমন সময় পাশের বারান্দায় তাকাতেই সেহেরের চোখ যেনো সেখানেই স্থির হয়ে যায়। আরসাল মাত্র শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে। আরসালের গায়ে একটা ব্লাক ট্রাউজার আর সাদা টিশার্ট, টিশার্ট টি যেনো বডির সাথে চেপে ধরে আছে যার জন্য জিম ওয়ালা বডি পুরো বুঝা যাচ্ছে, কাধে একটা সাদা টাওয়াল রেখে চুল গুলো হাত দিয়ে ঝাড়তেছে। মাত্র গোসল করে আসার জন্য আরসালের ঠোঁট আরও গোলাপি দেখাচ্ছে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এই ছেলে এতো সুন্দর কেনো? মেয়ে হলে এতোদিনে নির্ঘাত কিডন্যাপ হয়ে যেতো। ছেলে মানুষকেও এতো সুন্দর হতে হয়। ঠোঁট গুলো ঠিক বাচ্চাদের মতো গোলাপি। মাশাআল্লাহ!”

আরসাল হঠাৎ পাশে তাকাতেই সেহের কে দেখে হালকা চমকে উঠে। আরসাল সেহেরে দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি দেখছিস এভাবে? আর এখানে কেনো তুই?”

আরসালের কথায় সেহেরের ধ্যান ভাঙে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখছিলাম, আমার মতো সুন্দর হতে তোমার এখনো অনেক দেরি। আর শোনো, এখানে আমি, কারন এইটা আমার রুম। বুঝলে, মিস্টার।”

বলেই সেহের চুলগুলো একটু ভাব নিয়ে সরিয়ে ভেতরে চলে যায়। আরসাল সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে রুমের ভেতরে চলে যায়।

চলবে……………🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-১৩+১৪

0

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 13+14

ড্রইংরুমে জিহাদ চৌধুরী, কবির চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী, মি. আশরাফ ( আমানের বাবা ), মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, মিসেস. আখি ( আমানের আম্মু), আরসাল, আমান, আশিকা ( আমানের বোন ), আশফি, সাথী সবাই উপস্থিত রয়েছে।
গেস্টদের মাঝে রয়েছে সাইফ ( যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ), সিরাজ রহমান ( সাইফের বাবা ), সিমা রহমান ( সাইফের মা ), সিফা ( সাইফের বোন )।
সবাই গল্প করছেন। আমানের কেনো জানি সাইফকে দেখলেই রাগ হচ্ছে। তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে আমান। হঠাৎ জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” সাথী, তোমার সেহের আপুকে বলো আশাকে নিয়ে আসতে।”

–” ঠিক আছে বড় আব্বু।”
সাথী চলে যায় উপরে বলতে। এইদিকে আমানের অস্থিরতা বেড়ে গেছে। আমান কিছুতেই যেনো ব্যাপার টাহ মেনে নিতে পারছে নাহ। আমানকে একটু অন্যরকম হতে দেখে আরসাল বলে ওঠে,
–” কিরে তুই ঠিক আছিস? এমন অস্থির অস্থির করছিস কেনো?”

–” নাহ ঠিক আছি। একটু গরম লাগছে।”

–” মানে। ওয়েদার তোহ ঠান্ডায় আছে, আবার এসিও চলছে। তাও তোর গরম লাগছে।”

–” নাহ, সেরকম কিছু নাহ বাদ দে।”

আরসালের কাছে আমানকে মোটেও ঠিক লাগছে নাহ। কিন্তু এখানে অনেক মানুষের জন্য বেশি কিছু জিজ্ঞাসা ও করতে পারছে নাহ। তাই পরে জিজ্ঞাসা করবে ভেবে আর কিছু বললো নাহ। হঠাৎ মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” ঐ তোহ, আশাকে নিয়ে চলে এসেছে সেহের।”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে সবাই সিড়ির দিকে তাকায়। আমানও সাথে সাথে সিড়ির দিকে তাকায়, আর সিড়ির দিকে তাকিয়ে যেনো চোখটাহ সেখানেই স্থির হয়ে যায়। আশাকে কোনো পরির থেকে কম লাগছে নাহ। একটা পারপেল কালারের শাড়ি পরানো হয়েছে আশাকে, সাথে চোখ ভর্তি কাজল, হালকা মেকাপ, ঠোঁটে হালকা পিংক লিপস্টিক, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, কানে পারপেল স্টোনের কানের দুল, হাতে পার্পেল কালারের চুড়ি, গলায় একটা লকেট সহ চেইন, সব মিলিয়ে আশাকে পুরো পরির মতো দেখাচ্ছে আশাকে। আশাকে এনে সোফায় বসানো হলো। আশা একবার আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে, আমান তার দিকে হতাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়। সিমা রহমান ( সাইফের আম্মু ) নানা ধরনের প্রশ্ন করছেন। আশা উত্তর দিতে গেলেও কথা কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে। তাই পাশে থেকে আহিয়া চৌধুরী উত্তর দিয়ে দিচ্ছে।
সেহের মুচকি হাসি দিয়ে সব দেখছে, হঠাৎ সেহেরের চোখ যায় আরসালের উপর। সেহের আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল চোখ সরিয়ে নেয়। যেইটা সেহের খেয়াল করে ফেলে। সেহের মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ভাইয়া তোহ মনে হলো এই মাত্র চোখ সরালো। তাহলে কি, ভাইয়া এতোক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো?”

এরপর সেহের মাঝে মাঝেই আরসালের দিকে তাকাচ্ছে। যেইটা আরসাল খেয়াল করে আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে কেনো? তাহলে কি সেহের সন্দেহ করছে যে আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম? উফ! কি করবো আমি? সেহের সামনে থাকলে তোহ বেহায়া চোখ দুইটা শুধু ওর দিকেই যায়।”

হঠাৎ সিমা রহমান বলে ওঠে,
–” বলছিলাম যে, আমরা সবাই তোহ কথা বলছি। কিন্তু আশা আর সাইফকেও একটু আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত।”

কথাটা শুনেই আমানের মাথায় মনে হচ্ছে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিলো। নাহ পারছে কাউকে কিছু বলতে নাহ পারছে সহ্য করতে। রাগী চোখে আশার দিকে তাকিয়ে আছে আমান। আশা কোনা চোখ দিয়ে আমানের দিকে তাকাতেই মনে হলো তাকে যেনো চোখ দিয়েই পুড়িয়ে দিচ্ছে। আশার নিজেরই ভয় লাগছে আমানের মুখের রাগী ভাব দেখে। কিন্তু আমান এতো রেগে কেনো যাচ্ছে এইটায় বুঝছে নাহ আশা।
সিমা রহমানের কথা শুনে জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” ঠিক বলেছেন ভাবি। আশা, যাও তোহ মা সাইফ কে তোমার রুম টাহ দেখিয়ে নিয়ে আসো।”

–” জি, বড় আব্বু।”
বলেই আশা উপরের দিকে যেতে শুরু করে। যাওয়ার সময় আমানের সামনে হালকা একটু তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

★★★
আশা নিজের রুমে দাড়িয়ে আছে। সাইফও দাড়িয়ে আছে৷ আশা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। কিন্তু কিছু তোহ বলা দরকার। আশা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” বসুন।”

–” নাহ, ঠিক আছে। প্রব্লেম নেই। বলছি একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?”

–” জি, বলুন।”

–” আপনার কোনো সমস্যা নেই তোহ এই বিয়েতে।”

আশা কিছু সময় নিয়ে বলে ওঠে,
–” বড়রা যেইটা বলবে সেইটায়।”

–” ওহ। একটা সত্যি কথা বলি আমার কিন্তু আপনাকে ভালো লেগেছে।”

আশা একবার সাইফের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। কি বলবে আশা বুঝে উঠতে পারছে নাহ।

★★★
আমানের বার বার শুধু মনে হচ্ছে ওরা এতো সময় নিয়ে কি কথা বলছে। বার বার শুধু উপরের দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ দেখে সাইফ নামছে সিড়ি দিয়ে আর পেছন পেছন আশা নামছে। আশা এবং সাইফ তারা তাদের নিজেদের জায়গায় বসলে জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আশা, মা তুমি কি সময় চাও নাকি এখনই কিছু বলতে চাও। তুমি চাইলে বলার জন্য সময় নিতে পারো সমস্যা নেই।”

আশা একবার আমানের দিকে তাকায়। আমান আশার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” তুমি তোহ এইটায় চাও আমান, যে আমি অন্য একজন কে বিয়ে করে নিই। তোমার মনের কথাই পূর্ণ হোক তাহলে।”

আশা জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আব্বু তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি রাজি এই বিয়েতে।”

আশার কথায় সবাই প্রশান্তির হাসি দিলেও আমানের মনে হচ্ছে তার বুকের মাঝে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। আমানের চোখে পানি জমা হচ্ছে। কিন্তু আমান বার বার চোখের পলক ফেলে নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। জিহাদ চৌধুরী সাইফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সাইফ তুমি?”

–” আংকেল আমিও রাজি।”
সাইফের কথা শুনে সিরাজ রহমান বলে ওঠে,
–” আলহামদুলিল্লাহ, জিহাদ আসলে আমাদের হাতে সময় কম। মানে কিছুদিন পরেই বিজনেসের কিছু কাজে লং টাইমের জন্য আমাকে দেশের বাইরে যেতে হবে। তাই, আমি চাচ্ছি তার আগেই যেনো সাইফ আর আশার বিয়েটা হয়ে যায়।”

–” কতদিনের মাঝে চাচ্ছিস?”

–” আগামী সপ্তাহের মধ্যে।”

–” সে কি তাহলে তোহ হাতে সময়ই নেই।”

–” হ্যা, সময় খুব কম। আসলে আমি চাচ্ছি যে পরশু দিন আমরা ঘরোয়া ভাবে আশা আর সাইফের এইংগেজমেন্ট করিয়ে দিই। আর ঐদিন বিয়ের সবকিছু ফিক্সড করে ফেলি।”

–” হুম, এইটাও খারাপ নাহ। তাহলে পরশু দিন সন্ধ্যায় এখানে ঘরোয়া ভাবে ওদের এইংগেজমেন্ট আর ঐদিনই সব ঠিক করা হোক।”

–” হুম, সেইটায় বেটার হবে।”

ওনাদের কথা শেষ হতেই সিমা রহমান এগিয়ে এসে আশার গলায় একটা সোনার চেইন পরিয়ে দেয়। সিফা এগিয়ে এসে আশার পাশে বসে বলে ওঠে,
–” ভাবি, আমি কিন্তু তোমার একমাত্র ননদ।”

আশা কিছু বলে নাহ। মাথা নিচু করে থাকে। আমান এইসব আর সহ্য করতে নাহ পেরে উপরে আরসালের রুমের দিকে চলে যায়। আরসালের কাছে আমানকে স্বাভাবিক লাগছে নাহ, তাই আরসালও আমানের পিছন পিছন চলে যায়।
রুমে এসে আরসাল দেখে আমান বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল আমানের পিছনে এসে বলে ওঠে,
–” আমান, কি হয়েছে তোর?”

–” কিছু নাহ।”

–” আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতো কিছু হয় নি।”

–” আরসাল কি শুরু করেছিস বলতো?”

–” কি হয়েছে তোর, এতো আপাসেট কেনো তুই? গতকাল রাতে স্মোক কেনো করেছিস? এমন অস্থির অস্থির কেনো তুই?”

আমান আরসালের দিকে ফিরে তাকায়। আরসাল আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে আমানের চোখে পানি জমা হয়ে আছে। পলক ফেলতেই পানি গড়িয়ে পড়ে আমানের গাল বেয়ে। আমান তাড়াতাড়ি উল্টো দিকে ফিরে পানি মুছে নেয়। আরসাল আমানকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে ওঠে,
–” আমান কি হয়েছে? কেনো এতো কষ্ট পাচ্ছিস তুই?”

–” আমি জানি নাহ। আমার কি হয়েছে।?”

–” মানে।”

এতোদিন আশার বিষয়ে সন্দেহ করা, সেদিন কফি শপে ঘটে যাওয়া কাহিনি, এই কয়েকদিন নিজের অবস্থা সব বলে দেয় আরসালকে। আরসাল সব শুনে যেনো হতভম্ব হয়ে যায়। সরাসরি আমানকে জিজ্ঞাসা করে,
–” তুই কি আশাকে ভালোবাসিস?”

–” আমি জানি নাহ। আমি আজও জেরিনকে ভুলতে পারি নাহ। আজও ভাবি ওর কথা। আশাকেও মেনে নিতে পারছি নাহ আবার আশাকে অন্য কারো সাথে সহ্যও করতে পারছি নাহ। আমি নিজে কি চাচ্ছি সেইটাও বুঝতে পারছি নাহ।”

–” তোকে আর বুঝতে হবে নাহ। বিয়ের টাইমেই তোর সব কষ্ট আমি দুর করে দিবো। প্রমিস! এইবার বিয়ের অনুষ্ঠান টাহ এনজয় কর।”

–” মানে!”

–” মানে, পার্ফেক্ট টাইম।”

আমান আরসালের কথা কিছুই বুঝতে নাহ পারলেও, আরসালের ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি দেখতে পায়।

সেহের সকালে ঘুম থেকে উঠেই আশার রুমে এসে দেখে আশা কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। সেহের আশার পেছনে এসে বলতে শুরু করে,
–” এই তুই কই যাবি? রেডি হচ্ছিস কেনো?”

–” ভার্সিটি যাবো।”

–” ভার্সিটি যাবি মানে! আজ আমরা শপিংমলে যাবো।”

–” শপিং এ আজ কেনো? কালকের পরে যাওয়ার কথাতো।”

–” আরে, সেতো বিয়ের শপিংএর জন্য যাবো। আগামীকাল তোর এইংগেজমেন্ট। তার জন্য শপিং করতে যাবো আজ।”

–” ঘরোয়া ভাবে এইংগেজমেন্ট হবে। এতে শপিং করার কি আছে?”

–” মানে কি? এইংগেজমেন্ট ঘরোয়া ভাবে হোক আর বড় করে হোক, এইংগেজমেন্ট তোহ। তাই শপিং করা টাহ ইমপর্টেন্ট। বাড়ির সবাই এইংগেজমেন্টের জন্য শপিং করতে যেতে বলেছে। আর সাইফ ভাইয়াও আসছে।”

কি আর বলবে আশা। নিজের সুখ তোহ বিলিয়েই দিচ্ছে। তাই বিয়েটা পরিবারের মানুষেরা যেমন ভাবে চাচ্ছে, সেরকম ভাবেই হোক। আশা মাথা ঝাকিয়ে হ্যা জানিয়ে দেয় সেহের কে। সেহের খুশি হয়ে আনন্দে নিচে চলে যায়। আশা সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। মেয়েটা যেনো আর বড় হলো নাহ, এতো শপিং করে তাও শপিং করার কথা শুনলে সে সবার আগে।

★★★
আরসাল অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। মায়া চৌধুরী আরসাল কে দেখে কাছে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

–” কোথায় আবার, অফিস যাবো।”

–” আজ সাইফ আসবে। ওদের নিয়ে কালকের জন্য শপিং এ যাবে। আমাদের এখান থেকেও ছেলেদের কারও যাওয়া উচিত। আশফি একটু কাজে বাইরে গেছে তুই তোহ জানিসই, আশফির আসতে নাকি রাত হয়ে যাবে। আমান আর তুুই যদি যেতি। তাহলে ভালো হতো।”

–” আমার এইসব ভালোলাগে নাহ তুমি যানো।”

–” হুম। কিন্তু তারপরও যাওয়া উচিত। সেহের আর আশা যাচ্ছে। তুই আর আমানও যা।”
মায়া চৌধুরীর কথা শুনে আরসাল মনে মনে বলে ওঠে,
–” সেহের তোহ যাবেই, ও তোহ শপিং এর কথা শুনলে আগে লাফাই। কি এতো মজা পায় শপিং করে কে যানে। অযথা হাটাহাটি। এইসব নাহ করে বাসা থেকে অনলাইনে অর্ডার করলে হয়ে যায়। তাহ নাহ, ওখানে গিয়ে এই শপ ঐ শপ করে কেনাকাটা। অসহ্য।”

মায়া চৌধুরী আরসাল কে কিছু ভাবতে দেখে বলে ওঠে,
–” আরসাল!”

–” হুম।”

–” কি ভাবছিস বাবা?”

–” কিছু নাহ। বলছিলাম যে শপিং এর জন্য বাইরে যাওয়ার কি দরকার। বাসায় বসে অনলাইনে অর্ডার দিলেই তোহ হয়।”

–” একদম নাহ।”
করো কথার আওয়াজে আরসাল আর মায়া চৌধুরী সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের নেমে আসছে। সেহের নিচে নেমে এসে আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” একদম নাহ। আমারা মার্কেটে গিয়েই শপিং করবো। অনলাইনে শপিং করে কোনো মজা নাই। বড় আম্মু প্লিজ, মার্কেটে গিয়ে শপিং করবো।”

মায়া চৌধুরী সেহেরের মুখে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম, ঠিক আছে। মার্কেটে গিয়েই শপিং করবি। কেমন! আর হ্যা, আরসাল, অফিস যাচ্ছিস যাহ, কিন্তু বিকালের মধ্যে আমান কে নিয়ে ফিরে আসিস। আর ওদের শপিংমলে নিয়ে যাস। আর এখন আই ব্রেকফাস্ট করে নে।”

মায়া চৌধুরী কথাগুলো বলে ডাইনিং টেবিলের দিকে চলে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে হালকা রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে। সেহের আরসালের রাগ কে উপেক্ষা করে একবার মুখ ভেঙিয়ে মায়া চৌধুরীর পেছন পেছন চলে যায়। আরসাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে।

★★★
বিকালে আরসাল অফিস থেকে বেরিয়ে আমানকে ফোন দেয়। আমান ফোন রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যা, আরসাল বল।”

–” কই তুই?”

–” এই তোহ বাসায়।”

–” বাসায়, আজ অফিস যাস নি?”

–” নাহ।”

–” কেনো?”

–” এমনি, যেতে ইচ্ছে করছিলো নাহ তাই।”

–” ওহ, আচ্ছা রেডি হ। আমি তোকে বাসা থেকে পিক করে নিবো।”

–” কিসের জন্য রেডি হবো?”

–” আগামীকাল আশার এইংগেজমেন্টের জন্য শপিং এ যেতে হবে।”

–” Are you mad, Arsal? আমি আশার এইংগেজমেন্টের জন্য শপিং করতে যাবো?”

–” হুম, যাবি। আর কোনো কথা নাহ আমি আসছি।”

–” আরসাল, হ্যালো! হ্যালো!”

আরসাল ফোন কেটে দিয়েছে। আমান ফোনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এই আরসাল করতে চাচ্ছে টাহ কি? কিছুই মাথাই ঢুকছে নাহ। আবার সেদিন যাহ বললো। কি করবে এই ছেলে? ধুর, কি আর করবো রেডি হয়ে নি। নাহলে এসে নিজেই আবার রেডি করিয়ে নিয়ে যাবে। যাহ যেদি রে বাবা, যাহ বলবে তাই।”

★★★
আরসাল রেডি হয়ে নিচে দাড়িয়ে আছে। সেহের আর আশার নাম গন্ধও নাই। মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী ও আরসালের পাশে দাড়িয়ে আছে। আরসাল তাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এই কারনে মেয়েদের সাথে আমার বেরোতে ইচ্ছে করে নাহ। অলওয়েজ লেট করে।”

আহিয়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” চলে আসবে বাবা। ঐ তোহ চলে এসেছে।”

আরসাল সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের আর আশা নেমে আসছে। আরসাল ওদের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু নাহ বলে বাইরে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। কেয়া চৌধুরী আশা আর সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোরা এতো লেট করলি কেনো? আরসাল কতো রেগে গেছে জানিস।”

কেয়া চৌধুরীর কথা শুনে সেহের হাসতে হাসতে বলে ওঠে,
–” আহা মেঝো আম্মু তোমারদের এই ছেলে তোহ অলটাইম পেচার মতো থাকে।”

সেহেরের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। এর ভিতর গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেয়ে সেহের আর আশা দেরি নাহ করে বাসা থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসে।

In shopping mall……..

আরসাল, আমান, সেহের, আশা গাড়ি থেকে নামতেই সাইফ তাদের দিকে এগিয়ে আসে। সাইফকে দেখেই আমানের মেজাজ বিগড়ে যায়। রাগী চোখে একবার আরসালের দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে তাকায় আমান। সাইফ আরসালের সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যালো, ভাইয়া!”

আরসালও সাইফের সাথে হাত মিলিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” হাই! কেমন আছো?”

–” জি, ভালো। আপনি?”

–” ভালো। চলো ভেতরে যাওয়া যাক।”

–” জি, ভাইয়া। আশা এসো।”

আশা একবার আমানের দিকে তাকিয়ে আবার সাইফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি!”

সবাই ভেতরে চলে যায়। ওরা একটা লেহেঙ্গার শপে যায়। দোকানদার অনেক রকম লেহেঙ্গা দেখাচ্ছে আশাকে। সাইফ আশার পাশে দাড়িয়ে লেহেঙ্গা দেখছে আর কথা বলছে। আশার যেনো এইসবে মন নেই। আশা মাঝে মাঝে আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে, আমান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সাইফ একটা লেহেঙ্গা তুলে আশার হাতে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আশা দেখো তোহ, এইটা কেমন লাগে?”

–” হুম।”
আশা লেহেঙ্গা টাহ হাতে নিয়ে আয়নার সামনে যেয়ে নিজের উপর ধরে। আয়নায় আমানকে দেখা যাচ্ছে। আমান আয়নার ভেতর দিয়েও আশার দিকে তাকিয়ে আছে। আশা আয়না দিয়ে আমানের দিকে তাকালে। আমান মাথা নাড়িয়ে নাহ জানিয়ে দেয়। আশা লেহেঙ্গাটাহ নিজের উপরের থেকে নামিয়ে নেয়। আমান আশাকে দেখিয়ে টেবিলের উপর একটা লেহেঙ্গা রেখে ওখান থেকে সরে যায়। আশা পিছন ফিরে দেখে আমান লেহেঙ্গা টাহ রেখে সরে গেছে ওখান থেকে। আশা হাতের লেহেঙ্গাটাহ রেখে, টেবিলের উপর আমানের রেখে যাওয়া লেহেঙ্গা টাহ হাতে নিয়ে নেয়। আয়নার সামনে দাড়িয়ে আমানের রেখে যাওয়া লেহেঙ্গা টাহ নিজের উপর ধরতেই আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে আমান আবার সেই জায়গায় এসে দাড়িয়ে আয়নায় তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমান এবার আয়নায় আশার দিকে তাকিয়ে, মাথা ঝাকিয়ে হ্যা জানিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ওখান থেকে সরে যায়। আশা লেহেঙ্গাটাহ হাতে নিয়ে দোকানদারের কাছে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি এই লেহেঙ্গা টাহ নিতে চায়।”

সাইফ আশার হাতে অন্য একটা লেহেঙ্গা দেখে বলে ওঠে,
–” এইটা তোহ অন্য একটা মনে হচ্ছে।”

–” হ্যা, আসলে এই কালার টাহ আমার খুব পছন্দের। তাই এইটায় নিলাম।”

–” ওকে।”

এইদিকে,
সেহের অনেকগুলো লেহেঙ্গা দেখে ফেলেছে। কিন্তু একটাও যেনো তার মন মতো হচ্ছে নাহ। খুব রাগ হচ্ছে সেহেরের। হঠাৎ একজন লোক সেহেরের কাছে এসে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ম্যাম, এইটা আপনার। গায়ে উপর ধরে দেখেন কেমন লাগে!”

–” কিন্তু এইটা কে দিয়েছে?”

–” ঐ স্যার পাঠিয়েছেন।”
সেহের লোকটার দেখানো ইশারায় তাকিয়ে দেখে আরসাল ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। সেহের বুঝলো যে, আরসালই পাঠিয়েছে। সেহের মুচকি হেসে প্যাকেট থেকে লেহেঙ্গা বের করে দেখে আসলেই অনেক সুন্দর লেহেঙ্গাটা। আয়নার সামনে দাড়িয়ে লেহেঙ্গাটা নিজের উপর মেলে ধরে সেহের। সেহেরের লেহেঙ্গা টাহ অনেক পছন্দ হয়। সেহের লেহেঙ্গা টাহ সেইভাবেই ধরে রেখে আরসালের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল এগিয়ে এসে সেহেরের হাতের থেকে লেহেঙ্গা টাহ নিয়ে টেবিলের উপর রেখে শুধু দোপাট্টা টাহ হাতে নেয়। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল দোপাট্টা টাহ সেহেরের মাথার উপর দিয়ে দেয়। সেহের অবাক হয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল সেহেরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বের হয়ে যায় ঐ দোকান থেকে। সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, আরসাল চলে গেলে সেহের মাথার উপর থেকে দোপাট্টা টাহ নামিয়ে নিয়ে, দোকানির দিকে লেহেঙ্গা টাহ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এইটাহ প্যাকেট করে দিন।”

★★★
কেনাকাটা করতে করতে রাত ১০ টাহ বেজে যায়। এখন সবাই ডিনার করতে যাবে। কিন্তু আরসাল একবার আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে আমান চুপচাপ তার পাশে হেটে যাচ্ছে, আবার আশা আর সাইফের দিকে তাকিয়ে দেখে আশা চুপ করে হেটে যাচ্ছে কিন্তু সাইফ কি কি যেনো আশাকে বলছে। আরসাল কি মনে করে যেনো বলে ওঠে,
–” সাইফ।”

–” জি ভাইয়া!”

–” বলছিলাম যে তুমি এইদিকে এসো। তোমার সাথে কিছু কাজ আছে।”

–” কি কাজ ভাইয়া?”

–” আসলে, তোমার রিং টাহ এখান থেকে নিতে চাচ্ছিলাম।”

–” বাট আমার রিং তোহ কেনা হয়ে গেছে।”

–” হ্যা, কিন্তু আম্মু আরও একটা রিং কেনার কথা বলেছিলো৷ হয়তো কোনো দরকার আছে তাই। বাট, রিং টাহ আশাকে দেখাতে নিষেধ করেছে। তাই আমি, তুমি আর সেহের গিয়ে কিনে নিয়ে আসি। আর আশা তুই আমানের সাথে গিয়ে খাবার অর্ডার দে।”

আমান আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল আমানকে বলে ওঠে,
–” তোরা গিয়ে ওয়েট কর আমরা আসছি।”

–” কিন্তু। ”

–” কোনো কিন্তু নাহ। যাহ আসছি।”

–” হুম। চল আশা।”

আশা আর আমান এগিয়ে গেলে সেহের, আরসাল আর সাইফ রিং শপের দিকে এগিয়ে যায়।
আশা আর আমান পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে কেউ কিছু বলছে নাহ। কিছুক্ষণ পর আমান বলে ওঠে,
–” Congratulations.”

–” Thank you.”

–” তোদের দুইজন কে ভালো মানাবে।”

–” তাই! থ্যাংক্স। আচ্ছা আমাকে বিয়েতে গিফট করবা নাহ কিছু?”

–” কি গিফট চাস?”

–” বলছি, বসো আগে। আর অর্ডার টাহ দিয়ে দাও। ওরা চলে আসবে।”

–” হুম, তুই বোস, আমি অর্ডার দিয়ে আসি।”

–” হুম।”

আমান গিয়ে অর্ডার দিয়ে এসে আশার অপোজিট চেয়ারে বসে বলে ওঠে,
–” বল, কি গিফট চাস তুই?”

–” আমি চাই, তুৃমি আমার বিয়ের সব ফাংশনে এটেন্ড করো।”

–” মানে!”

–” মানে, আমার বিয়ের প্রত্যেকটা ফাংশনে তুমি থাকবে। আমি আর সাইফ যখন একে অপরকে রিং পরাবো, কবুল বলবো এজ ইউজুয়াল বিয়ের সব ফাংশনে আমি তোমকে দেখতে চাই। তুমি নিজেকে আমাকে সাইফের গাড়িতে তুলে দিবে। এইটা আমার কাছে তোমার থেকে পাওয়া বিয়ের গিফট।”

আশার কথা শুনে আমান অবাক হয়ে আশার দিকে তাকায়। আমান ভেবেছিলাে আশার বিয়ের কয়েকদিন কোথাও চলে যাবে। কিন্তু আশা এখন যে কথাগুলো বলছে, তাতে তোহ আমান পুরো বেধে গেলো। আমান মুচকি হেসে আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বেশ, তুই যাহ চাইছিস তাই হবে। আমি তোর বিয়ের সব ফাংশনে থাকবো। প্রমিস!”

কিছুক্ষণের মাঝেই আরসাল, সাইফ আর সেহের চলে আসে। ওরা ডিনার করে বেরিয়ে আসে। তারপর সাইফ নিজের গাড়িতে এবং আরসাল, সেহের, আমান, আশা এক গাড়িতে উঠে চলে আসে।

চলবে………….🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-১১+১২

0

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 11+12

ওয়াশরুমে হাত কে পেছন করে বেধে বসিয়ে রাখা হয়েছে সেহেরকে। আর সেহেরের সামনে দাড়িয়ে আছে আরসাল। সেহের একবার আরসালের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে।

একটু আগে,
সেহের অন্য কারো সাথে নাহ, আরসালের সাথে ধাক্কা খায় আর আরসালের উপর গ্লাসের সব পানি পড়ে যায়। আর চোখ লাল করে সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহেরের কলিজা শুকিয়ে আসে। আরসাল রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” Are you mad? What are you doing?”

–” নাহ, মানে ভাইয়া, মানে আমি।”

–” কি মানে মানে করছিস?”

–” আসলে।”

–” Just shut up.”

আরসালের রাগী কন্ঠ শুনে সেহের ভয়ে কেপে উঠে। আরসাল নিজে আর কিছু নাহ বলে সেহেরকেও আর কিছু বলার সুযোগ নাহ দিয়ে সেহেরের হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসে চারিদিকে তাকাতে থাকে। সেহের ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে,
–” ভা, ভা, ভাইয়া তু, তু তুমি কি খুজছো?”

আরসাল কোনো উত্তর নাহ দিয়ে সোফার উপর থেকে তার টাই নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে সেহেরের হাত পিছনে নিয়ে বেধে বসিয়ে রাখে। তখন থেকেই সেহের একবার ভয়ে আরসালের দিকে আর একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে। আর আরসাল সেহেরের দিকে রাগান্বিত ভাবে একভাবে তাকিয়ে আছে। সেহের এইবার ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে,
–” ভা ভা ভা ভাইয়া আ আ আমাকে এ এ এইভাবে বে বে বেধে রেখেছো কে কে কেন?”

–” আমাকে ভিজিয়েছিস তাই নাহ। এইবার তোকে আমি শাওয়ার দিয়ে ছাড়বো।”

–” আমি ইচ্ছে করে তোমার গায়ে ফেলেছি নাকি? তুমি আমাকে ধাক্কা দিছো তাই পড়ে গেছে।”

–” আমি তোকে ধাক্কা দিছি মানে!”

–” হ্যা, তুমিই তোহ ধাক্কা দিলা।”

–” শোন, একদম মিথ্যা কথা বলবি নাহ বলে দিচ্ছি।”

–” শোনো, সবাইকে নিজের মতো মনে করবা নাহ বুঝছো। আমি মিথ্যা বলি নাহ।”

–” What do you mean? আমি মিথ্যা কথা বলি?”

–” আমি কি তোমাকে বলেছি নাকি, যে তুমি মিথ্যা বলো।”

–” ডিরেক্টলি নাহ বলিস ইনডিরেক্টলি এইটাই বলতে চাচ্ছিস।”

–” একদম নাহ, পড়লো কথা হাটের মাঝে, যার কথা তার বুকে বাজে। তোমার হয়েছে সেই দশা।”

–” তোকে তোহ।”

আরসালের রাগে যেনো চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। সেহের এতোক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো, নাহলে আরসালের বর্তমান মুখের অবস্থা দেখলে সেহেরের গলা দিয়ে আর কথায় বের হতো নাহ। এইবার আরসালের আর কোনো আওয়াজ নাহ পেয়ে আরসালের দিকে তাকাতেই সেহেরের ভয়তে গলা শুকিয়ে যায়। আরসালের চোখ মুখ একদম লাল হয়ে গেছে রাগেতে। আরসালের রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে নাহ এইটা সেহেরের অজানা নয়। তাই সেহেরের আরও ভয় করছে। আরসাল নিজের চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আর আরসালের এই অবস্থা দেখে সেহের ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে। বেশ কিছুক্ষন পর আরসাল চোখ খুলে একটা জোরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আর কিছু নাহ বলে সেহেরের হাতের বাঁধন খুলে দেয় আরসাল। সেহেরও আর কিছু নাহ বলে চলে যেতে নেয়, কিন্তু ওয়াশরুমে একটু পানি থাকায় স্লিপ করে পড়ে যেতে নেয়। সেহেরকে পড়ে যেতে দেখে আরসাল তাড়াতাড়ি সেহেরকে এক হাত দিয়ে ধরে আর এক হাত দিয়ে নিজেকে সামলানোর জন্য দেওয়াল ধরতে গিয়ে শাওয়ার অন হয়ে পানি পড়া শুরু করে দেয়। হঠাৎ এই রাতের বেলা ঠান্ডা পানি গায়ে পড়ায় সেহের কেঁপে উঠে আরসালের হাত জোরে চেপে ধরে। আরসালের এক হাত সেহেরের কোমর দিয়ে সেহেরেকে ধরে রেখেছে আর এক হাত শাওয়ারের সুইচের কাছে। আরসালের মুখ বেয়ে পানি পড়ছে সেহেরের উপর। সেহের পানির জন্য ভালোভাবে তাকাতে পারছে নাহ, কোনো রকম ভাবে নিবু নিবু করে তাকাচ্ছে। কিন্তু আরসালের তাকাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাহ, কারন আরসাল সেহেরের দিকে ঝুকে রয়েছে। আরসাল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে, সেহেরের মুখে এসে পড়ছে পানির ফোঁটা গুলো, চোখ টাও ভালো করে খুলতে নাহ পারার জন্য নিবু নিবু ভাবে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে, পানি পেয়ে ঠোঁট টাহ যেনো আরও গোলাপি হয়ে উঠেছে এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে যেনো কালো তিলটাহ আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। আরসাল তাকিয়ে আছে একভাবে, সেহেরের ঠোঁট যেনো আরসালকে সবসময় একটা ঘোরের মাঝে ফেলে দেয়। আরসাল বুঝেই উঠতে পারে নাহ, সেহেরের ঠোঁট তার কাছে এতো আকর্ষনীয় কেনো লাগে। আরসাল সেহেরের মুখ ধরে কাছে নিয়ে আসে। সেহের টের পায় আরসাল আর তার মাঝে এখন খুব বেশি দুরত্ব নেই। সেহেরও আর চোখ খুলে তাকায় নাহ আরসালের দিকে। আরসাল সেহেরের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মেলাতে যাবে এমন সময় রুম থেকে কারও আরসাল ডাকার আওয়াজে আরসালের ঘোর কেটে যায়। আর তাড়াতাড়ি সেহেরের কাছের থেকে সরে আসে আরসাল। সেহের আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে যায়। আরসাল টের পায় রুম থেকে তার আম্মু মায়া চৌধুরী কথা বলছে। আরসাল শাওয়ার অফ করে দেয়। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আরসাল, তুই কি শাওয়ার নিচ্ছিস?”

–” হ্যা, আম্মু।”

–” আরসাল এই রাতের বেলা কেউ শাওয়ার নেয়। এমনি আবহাওয়ার অবস্থা ভালো নাহ। ঠান্ডা লেগে যাবে তোহ।”

–” নাহ সমস্যা নাই।”

–” আচ্ছা, শাওয়ার নিয়ে ডিনার করতে নিচে আসবি নাকি আমি খাবার এখানে দিয়ে যাবো?”

–” নাহ আমি নিচে আসছি। তুমি নিচে যাও।”

–” আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আয়। আর পানি নিস নাহ।”

–” আচ্ছা।”

আরসাল সামনে তাকিয়ে দেখে সেহের উল্টো দিকে ঘুরে রয়েছে। আরসাল বলে ওঠে,
–” তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে যা।”

কথাটা বলে আরসাল ওয়াশরুমের দরজা খুলে বারান্দার দিকে চলে যায়। সেহের পিছন ফিরে দেখে আরসাল নেই। সেহের চারিপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

★★★
সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার করছে। শুধু সেহের আর আশা নেই। তাই দেখে জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” একি সবাই আছে, কিন্তু সেহের আর আশা কই?”

জিহাদ চৌধুরীর কথাতে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আশা নাকি খাবে নাহ। শরীর টাহ নাকি ভালো লাগছে নাহ। মনে হয় গ্যাস্ট্রিক পব্লেম হয়েছে। মেডিসিন দিয়ে আসলাম, ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।”

–” আর সেহের।”

–” সে নাকি কিসব চকলেট ফকলেট খেয়েছে। খাবে নাহ বললো।”

আরসাল মায়া চৌধুরীর কথা শুনে নিজের খাওয়া বন্ধ করে হুট করেই নিজের রুমে চলে গেলো। তাহ দেখে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আরসাল খাবার শেষ নাহ করে কোথায় যাচ্ছিস বাবা।”

কিন্তু আরসাল কোনো উত্তর নাহ দিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।

★★★
আমান বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে আছে। হাতে একটা জলন্ত সিগারেট। চোখ টাহ ছানির মতো রক্ত লাল হয়ে আছে। আশিকা আমানের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কি ভেবে যেনো আমানের রুমে ঢুকে পড়ে।
(( আশিকা, আমানের আদরের ছোট বোন। এইবার ইন্টার সেকেন্ড সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে আশিকা। আমান আশিকা কে মারাত্মক ভালোবাসে আবার আশিকাও। ))
আশিকা আমানের রুমে ঢুকতেই সিগারেটের গন্ধ পায়, কিন্তু রুমে আমানকে নাহ পেয়ে চারিপাশে তাকাতে থাকে। হঠাৎ বারান্দার দিকে নজর যায় আশিকার। আশিকা সোজা চলে যায় বারান্দায়। বারান্দায় গিয়ে দেখে আমান স্মোক করছে। আশিকা কখনো আমানকে স্মোক করতে দেখেনি। আশিকা বলে ওঠে,
–” ভাইয়ু তুমি স্মোক করছো।” ( আশিকা আমানকে ভাইয়ু বলে ডাকে )

আমান কারো আওয়াজ পেয়ে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে আশিকা অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমান দ্রুত তার হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে রুমে চলে আসে। আশিকাও আমানের পিছন পিছন এসে বলে ওঠে,
–” তুমি ঐদিকে ফিরে আছো কেনো? আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি। তুমি স্মোক কেনো করছিলে?”

আমানকে জোর করে সামনে ফেরায় আশিকা, সামনে ফিরিয়ে আমানের দিকে তাকাতেই আশিকা চমকে উঠে। আমানের চোখ লাল হয়ে আছে, চুল গুলো উস্কো খুস্কো হয়ে আছে, মুখে যেনো হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছে। আশিকা আমানের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” ভাইয়ু, কি হয়েছে তোমার?”

–” কিছু হয় নি।”

–” মিথ্যা, বলো কি হয়েছে?”

–” সত্যি, কিছু হয় নিরে বোন।”

–” বলবা নাহ?”

–” আশিকা, আমার কিছুই হয় নি। শরীর টাহ খারাপ লাগছে। তাই!”

–” শরীর খারাপ লাগলে বুঝি স্মোক করতে হয়?”

–” আরে নাহ, আমি তোহ কখনো এইসব খাই নি। তাই একটু শখের বসে খেয়েছি।”

–” বলবানা যখন ঠিক করেছো, বলো নাহ। কিন্তু মিথ্যা কথা বলো নাহ। কারন আমার ভাইয়ুর মুখে মিথ্যা মানায় নাহ।”
বলেই আশিকা রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমান আশিকার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” আমাকে ক্ষমা করে দে বোন, আমি তোকে মিথ্যা বলতে চায় নি। কিন্তু আমি যে এখন সত্যিটা বলতেও পারবো নাহ।”

আমান বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আচ্ছা, আমি তোহ এইটায় চেয়েছিলাম। যেনো আশার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়, আমাকে যেনো ভুলে যায়। তাহলে আজ যখন আশার অন্য কারো সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে তাহলে আজ আমি খুশি হতে পারছি নাহ কেনো? আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

★★★
সেহের বারান্দায় দোলনায় বসে আছে। আর মনে মনে ভাবছে,
–” আজ আরসাল ভাইয়া আমার কতো কাছে এসেছিলো। কিন্তু আমি আরসাল ভাইয়া কে আজ নিষেধ করলাম নাহ কেনো? বড় আম্মু যদি তখন নাহ আসতো, তাহলে!”

আর কিছু ভাবার আগেই সেহের দোলনা থেকে উঠে রুমে চলে আসে। তখনই সেহেরের ফোনে একটা কল আসে। সেহের ভাবে এতো রাতে আবার কে ফোন দিলো। ফোনটাহ হাতে নিয়ে দেখে ইয়াশের নাম্বার। কল টাহ দেখেই বিরক্তিতে মুখ ভরে যায় সেহেরের। ফোন টাহ নাহ ধরে সাইলেন্ট করে রেখে দেয়।

★★★
ইয়াশ সেই কখন থেকে সেহেরকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। অথচ মেয়েটা ফোনই তুলছে নাহ। ইয়াশ মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” সেহেরকি ফোনের কাছে নেই নাকি ইচ্ছে করেই ফোন টাহ তুলছে নাহ। সেহের রানি তুমি এখনো আমাকে ভালো করে চেনো নাহ। তুমি যদি ভালোই ভালোই আমার বউ নাহ হও, তাহলে কয়েক ঘন্টার বেড পার্টনার হয়ে যাবা আমার।”

হঠাৎ কোনো একজোড়া হাত ইয়াশকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ইয়াশ পেছন ঘুরে দেখে জেনি। জেনির সাথে ইয়াশ এই দুইদিন হলো সময় কাটাচ্ছে। ইয়াশ জেনির দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দেয়, আর জেনির কোমরে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। জেনি একটা ছোট্ট ফ্রক পরা। ইয়াশ জেনির জামার পেছনের চেইন টাহ খুলে দিয়ে জেনি কে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়।

আমান অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। আমান নিচে আসতেই দেখে মিসেস. আখি টেবিলে ব্রেকফাস্ট গোছাচ্ছেন আর মি. আশরাফ টেবিলে বসে পেপার পড়ছেন।
(( মিসেস. আখি, আমানের আম্মু আর মি. আশরাফ আমানের বাবা। মি. আশরাফের নিজস্ব বিজনেস আছে। যে বিজনেসে কয়েকদিন হলো আমান জয়েন্ট করেছে। ))
মিসেস. আখি আমানকে দেখে বলে ওঠে,
–” আমান, রেডি হয়ে গেছিস। আই খেয়ে নে বাবা।”

–” আম্মু এখন খেতে ইচ্ছে করছে নাহ।”

–” ওমা, কেনো? গতকাল থেকেই তোকে কেমন মনমরা দেখছি। কি হয়েছে বাবা তোর? কোনো সমস্যা?”

–” নাহ, আম্মু। আমি ঠিক আছি। আশিকা কই?”

–” ওহ ঘুমাচ্ছে।”

–” কেন? আজ কলেজ নেই ওর?”

–” হ্যা আছে, কিন্তু আজ যাবে নাহ।”

–” কেনো? শরীর ঠিক আছে ওর?”

–” হ্যা, শরীর ঠিক আছে। আসলে আজ একটু পর আরসালদের বাসায় যেতে হবে। কেনো তুই জানিস নাহ? আজ তোহ আশাকে দেখতে আসবে। তাই গতকাল রাত থেকে জিহাদ ভাই অনেকবার তোর বাবাকে ফোন করেছে।”

–” ওহ।”

–” শোন, তুই একদম আরসালদের বাসায় চলে যাস বুঝলি।”

–” আম্মু তোমরা চলে যেও। আমি যেতে পারবো কি নাহ বলতে পারছি নাহ?”

মি. আশরাফ এতোক্ষণ মা ছেলের কথা শুনছিলো, কিছু বলছিলো নাহ। কিন্তু আমানের শেষ কথা শুনে মি. আশরাফ বলে ওঠে,
–” মানে কি, আমান? আমান, আরসাল তোমার বন্ধুর আগে জিহাদ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তুমি খুব ভালো করেই জানো এই দুই পরিবারে যেকোনো ধরনের কাজে দুই পরিবারই উপস্থিত থাকে। আর যেখানে আজ আশাকে দেখতে আসবে, এতো বড় একটা কাজ আর সেখানে তুমি যাবে নাহ।”

আমান মি. আশরাফের কথা শুনে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” কি করে বলবো বাবা তোমাকে, আমার নাহ যাওয়ার কারনই তোহ এইটা। আশাকে অন্য কোনো ছেলে এসে বিয়ের কথা বলবে আর আমি সেইটা কিভাবে সহ্য করবো? কিন্তু আমি তোহ এইটায় চেয়েছিলাম। তাহলে কেনো সহ্য করতে পারছি নাহ আমি? কি করবো আমি? নাহ পারছি আশাকে মেনে নিতে আর নাহ পারছি আশাকে দুরে ঠেলে দিতে।”

আমানকে চুপ করে থাকতে দেখে মি. আশরাফ আবার বলে ওঠে,
–” কি হলো আমান? চুপ করে আছো কেনো?”

–” বাবা আসলে।”

–” আমান কোনো আসলে নকলে নেই। তুমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে জিহাদের বাসায় আসছো এইটায় ফাইনাল।”

–” ঠিক আছে বাবা। চলে আসবো।”

–” আর শুনো, আমি আজ অফিস যাচ্ছি নাহ। সবকিছু দেখে সামলে এসো।”

–” Ok. আসি আম্মু।”

মিসেস. আখি আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ব্রেকফাস্ট?”

–” অফিসে করে নিবো।”

বলেই আমান অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।

★★★
সেহের, আশা কেউ আজ ভার্সিটি যায় নি। আশা একভাবে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর সেহের তার নিজের মতো করে বক বক করেই যাচ্ছে। কেউ তার কথা শুনলো কি নাহ বা শুনছে কি নাহ, এতে তার কিছু যায় আসে নাহ। সে একাই বক বক করে যেতে পারে। তখনই কেয়া চৌধুরী এবং আহিয়া চৌধুরী রুমে আসেন। এসে দেখেন আশা জানালার কাছে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আর সেহের একা একা বক বক করেই যাচ্ছে। আহিয়া চৌধুরী সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এতো কথা বলিস কিভাবে বলতো? একা একা বক বক করেই যাস।”

সেহের আহিয়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আসলে আম্মু, আমি নাহ চুপ করে থাকতে পারি নাহ। চুপ করে থাকলেই আমার ভেতরের কথার পোকা গুলো হরতাল শুরু করে দেয়। কথা বলো, কথা বলো।”

সেহেরের কথা শুনে আহিয়া চৌধুরী এবং কেয়া চৌধুরী হেসে উঠে। কেয়া চৌধুরী আশার কাছে গিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে দেখে চোখ থেকে পানি পড়ছে। কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, সেহের সবার মুখের হাসি মিলিয়ে যায় আশার দিকে তাকিয়ে। কেয়া চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে মা, তুই কাদছিস কেনো?”

–” আম্মু, আমি বিয়ে করতে চাই নাহ। আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো নাহ।”

–” ধুর বোকা মেয়ে। এমন সবারই প্রথম প্রথম মনে হয় পরে ঠিক হয়ে যায়। তার জন্য এইভাবে কাঁদতে আছে নাকি? তাছাড়া আজ তোহ তোকে শুধু দেখতে আসছে। বিয়ে তোহ আর আজ নাহ, তাই নাহ। এমোন করে কাদে নাহ মা।”

সেহের আশার দিকে তাকিয়ে নিজের মাজায় হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” এই তুই কি পাগল নাকি? তোর বিয়ে হলে কতো শপিং করতে পারবি বলতো৷ এমন সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করে।”

সেহেরের কতা শুনে আশা রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা, তাই নাহ। তাহলে আই তোকেও বিয়ে দিয়ে দেই। তাহলে তোরও শপিং করার সুযোগ চলে আসবে।”

–” আরে না নাহ। এতো তাড়াতাড়ি তোর ঐ বদরাগী আরসাল ভাইকে বিয়ে করার ইচ্ছা আমার নাই। তাহলে আমাকে আলু ভর্তা বানিয়ে দেবে। বেডা একটু বুইড়া হোক, তাহলে মেজাজ টাহ একটু নরম হবে। তারপর বিয়ে করবো ঐ বেডারে।”

সেহেরের কথা শুনে সবাই অবাক চোখে সেহেরের দিকে তাকালো।
–” বিয়ে করবি আমার বদরাগী ছেলেটাকে?”

কারোর কথা শুনে সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী মুচকি হাসি দিয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেহেরের এতক্ষণে খেয়াল এলো সে কি বলে ফেলেছে। সেহেরের একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। সেহেরের ইচ্ছা করছে মাটি ফুড়ে নিচে চলে যেতে। সেহের মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। মায়া চৌধুরী সেহেরের সামনে এসে দাড়ায়। সেহের একবার মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। মায়া চৌধুরী মুচকি হেসে সেহের থুতনি ধরে মুখটাহ উচু করে বলে ওঠে,
–” কিরে, বললি নাহ যে? বিয়ে করবি আমার বদরাগী ছেলেটাকে? সামলে দিবি আমার বদরাগী, যেদী ছেলেটাকে? খেয়াল রাখার দায়িত্ব নিবি আমার ছেলেটার?”

–” বড় আম্মু।”

–” হুম বল, নিবি আমার ছেলেটার দায়িত্ব?”

–” আমার একটা ফোন করার আছে। আমি একটু পর আসছি।”

বলেই সেহের আর এক সেকেন্ডও দাড়ায় নাহ। চলে যায় রুম থেকে। আর সবাই সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আশা এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” কি বুঝলে বড় আম্মু?”

–” এইটায় বুঝলাম, যে সেহেরের মনেও আমার বদরাগী ছেলেটার জন্য জায়গা আছে।”

আহিয়া এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ঠিক বলেছো, বড়দি। কিন্তু বড়দি আরসাল তোহ বলে যে ও সেহের কে ঘৃনা করে তাহলে।”

–” আহা, ছোটো তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? আরসাল মুখে যতই বলুক ও সেহেরকে ঘৃনা করে কিন্তু আমি জানি আরসাল সেহেরকে আজও ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে।”

★★★
আরসাল, আশফি কেউই আজ অফিস যায় নি। আরসাল নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর আশফি আরসালের পাশে বসে ট্যাবে গেম খেলছে। হঠাৎ আরসালের ফোন বেজে উঠে। আরসাল ফোন টাহ হাতে নিয়ে দেখে নেহা ফোন করেছে। আরসাল আশফির দিকে ফোনটাহ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা ফোন করেছে। কলটাহ রিসিভ করে বল আমি একটু ব্যাস্ত আছি।”

নেহার কল শুনেই আশফি ফোন টাহ নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। এবং তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”

–” হ্যালো! কে বলছেন?”

–” আমি আশফি।”

–” ওহ, আশফি তুমি।”

–” হুম, কেমন আছো?”

–” ফাইন, তুমি?”

–” আমিও ভালো আছি।”

–” আচ্ছা, আরসাল কোথায়? আর ওর ফোন তোমার কাছে কেনো?”

–” আসলে, ভাই একটু কাজে ব্যাস্ত আছে। তাই আমাকে বললো তোমাকে বলে দিতে।”

–” ওহ, আচ্ছা।”

–” হুম।”

–” ওকে বাই, পরে কথা হবে।”

–” হুম, বাই।”
নেহা ফোন কেটে দেয়। কিন্তু আশফি এখনো ফোন কানে রেখে দিয়েছে। যদি আরও প্রিয় সেই কন্ঠস্বর টাহ শোনা যায় এই আশায়। কিন্তু নাহ, আর শোনা যায় নাহ। আশফি ভেতরে এসে আরসালের পাশে ফোন টাহ রেখে দেয়। আরসাল আশফির দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আশফি শোন। কিছু ইমেইল পাঠিয়েছি তোকে। একটু চেক করে নিস।”

–” ওকে।”
আশফি আর কিছু নাহ বলে আরসালের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

In evening……..

আর কিছুক্ষনের মাঝেই সিরাজ রহমানের বাড়ি থেকেই সবাই চলে আসবে। জিহাদ চৌধুরী, কবির চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী এবং মি. আশরাফ সবাই ড্রইংরুমে বসে গেস্টদের জন্য অপেক্ষা করছে এবং গল্প করছে।
আরসাল নিজের রুমে পায়চারি করছে আর আমানকে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু আমান ফোন টায় তুলছেই নাহ। আরসালের প্রচন্ড রাগ উঠতেছে আমানের উপর। এইদিকে আবার মিসেস. আখি এবং আশিকার কাছের থেকে শুনেছে যে আমান হয়তো কোনো কারনে আপসেট। আশিকা এইটাও বলেছে আরসালকে, যে সে গতকাল আমানকে স্মোক করতে দেখেছে। আরসাল মনে মনে ভাবছে,
–” কি হয়েছে আমানের? আমান তোহ কখনো স্মোক করে নাহ। তাহলে, তাছাড়া আমান নাকি আপসেট। বাট হোয়াই? আমান তোহ কখনোই আমার কাছের থেকে কিছু লুকাই নাহ তাহলে।”

এইসব ভাবতে ভাবতে আবার আমানকে ফোন দেয় আরসাল। এইবার আমান রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”

–” কই ছিলি তুই? কতগুলো ফোন দিয়েছি দেখেছিস।”

–” আসলে ফোন টাহ সাইলেন্ট ছিলো। তাই টের পাই নি।”

–” আচ্ছা। এখনি এখানে চলে আই।”

–” আসতেই হবে।”

–” আসতেই হবে মানে কি? আমি তোকে যেনো আর কিছুক্ষনের মাঝেই আমার রুমে দেখি।”

আরসাল, আমানকে আর কিছু বলার সুযোগ নাহ দিয়ে ফোন কেটে দেয়। আমানেরও আর কি করার। আরসালের বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।

কিছুক্ষনের মাঝেই আমান চলে আসে চৌধুরী ম্যানশনে। আমান এসেই আরসালের রুমে চলে আসে। আরসাল দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে আমান। আমানকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সার্ভেন্ট এসে বলে যায় গেস্টরা চলে এসেছে। আমান আর আরসালও নিচে নেমে আসে।

চলবে……………🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-০৯+১০

0

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 9+10

চারিদিকে রিমঝিম আওয়াজ। বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানির শব্দ। সেই যে বিকালের একটু আগে বৃষ্টি শুরু হয়েছে থামার নামই নিচ্ছে নাহ। সন্ধ্যা গড়িয়ে চারিদিকে এখন বেশ রাত। ওয়েদার টাই যেনো অন্যরকম। এমন আবহাওয়া তে কবিতা লেখা, গান গাওয়া বা শোনা, প্রিয় মানুষের পাশে বসে গল্প করা, একা একা বসে এক কাপ কফি হাতে কারো কথা ভাবা, আবার অনেকের কষ্ট জাগিয়ে তোলা, এক কথায় নিজেকে নিয়ে থাকার বা অন্যকে নিয়ে ভাবার সবথেকে ভালোসময় মনে হয় এইটাকেই বলে। সেরকম অনেকেই আজ এই অবস্থায় রয়েছে। একজন অন্য একজনের ভাবনায়।

আশফি বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে কানে ইয়ারফোন গুজে গান শুনছে। আর একজনের কথা ভাবছে, আর তার কথা ভাবতেই মনের মাঝে আলাদা প্রশান্তি কাজ করছে। তার কথা মনে আসতেই আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে। তার কথা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি, চোখ বন্ধ করলেই তার মুখ ভেসে ওঠা, আর বৃষ্টির রিমঝিম আওয়াজ। সব মিলিয়ে আশফির ভেতর অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। আশফি যাকে নিয়ে ভাবছে, সে আর কেউ নাহ, সে হলো নেহা। হ্যা, আশফি নেহাকে নিয়েই ভাবছে। নেহাকে প্রথম আমানের সাথে দেখে আশফিও ভেবেছিলাে আমানের গফ হতে পারে। কিন্তু পরে জানে যে আরসাল আর আশফির বান্ধবী নেহা৷ সেইদিন নেহাকে প্রথম দেখাতেই ভালোলেগে যায় আশফির। নেহার হাসি, তাকানো, কথা বলা, স্মার্টলি চলাফেরা আশফিকে যেনো আকৃষ্ট করে। তারপর থেকেই চোখ বন্ধ করলে শুধু নেহার চেহারায় আশফির চোখের সামনে ভাসছে। নেহাকে নিয়েই ভাবছে সবসময়। নিজেও বুঝতে পারছে নাহ কি হচ্ছে ওর সাথে। আগেও তোহ কত মেয়ে দেখেছে কই কখনো তোহ এমন হয় নিহ আশফির। আশফি মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি হচ্ছে এসব আমার সাথে? আমার কেনো বার বার নেহার কথা মনে পড়ছে? ওরে কথা ভাবতেই এতো ভালো লাগছে কেনো? নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগতেছে।”

এইসব ভাবতে ভাবতেই আশফি চোখ বন্ধ করে, আর তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে নেহার মুখটা। কিন্তু আশফি আর চোখ খুলে নাহ। নিজের কল্পনাতে নেহার ছবি দেখতে থাকে আশফি।

★★★
নেহা নিজের রুমে আয়নার সামনে বসে আছে। আয়নার সামনে বসে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। হাত বাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা আরসালের ফটো টাহ মুখের সামনে এনে তাতে চুমু একে দিয়ে, আবার সামনে ধরে বলতে শুরু করে,
–” I love you. I love you very much Arsal. কেনো বুঝো নাহ আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি? আমার যে শুধু তোমাকে চায়। তুমি শুধু আমার, শুধু আমার। কেনো আমাকে, আমার ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিলে জানি নাহ। কিন্তু তুমি আমার ছাড়া আর কারো হতে পারবা নাহ। আজ হোক বাহ কাল তুমি শুধু আমার।”

আরসাল ছবি টাহ হাতে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় নেহা। চোখ মুখ শক্ত করে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেইদিন আরসালের সেহেরের দিকে তাকিয়ে গান গাওয়া আমার কাছে নরমাল মনে হয় নি। আরসাল শুধু আমার। আরসাল আর আমার মাঝে যদি কেউ আসার চেষ্টাও করে তাকে আমি শেষ করে দিতে দুইবারও ভাববো নাহ। আরসাল যদি আমার নাহ হয়, তাহলে সব কিছু শেষ করে দিবো আমি।”

নেহা এইসব ভাবছে আর তাকিয়ে আছে মেঘ ভরা আকাশের দিকে। নেহার চোখে আরসাল কে পাওয়ার ইচ্ছা তীব্র ভাবে দেখা যাচ্ছে।

★★★
আরসাল নিজের রুমের বারান্দায় ডিভানের উপর আধশোয়া হয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে বৃষ্টির শব্দ সহ মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সেইদিকে তাকিয়ে আরসাল মনে মনে ভাবছে,
–” কি করতে যাচ্ছিলাম আমি? কেনো সেহের কে দেখলে নিজের উপর কন্ট্রোল থাকে নাহ আমার? যেখানে আমি সেহের কে বার বার বলছি যে আমি ওরে ঘৃনা করি সেখানে আমি সেহেরকে। নাহ, কন্ট্রোল আরসাল কন্ট্রোল। এতোটাহ কন্ট্রোল হারালে চলবে নাহ।”

আরসাল উঠে বসে হাত দিয়ে মুখ ডলতে থাকে। কিছুক্ষণ পর হাটুর উপর হাত ভাজ করে রেখে তারউপর মুখ রেখে বসে বাহিরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করতেই আরসালের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেহেরের বৃষ্টি ভেজা মুখ, ঠোঁট, চোখ। আরসাল তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে। উঠে দাড়িয়ে বারান্দার কর্নারে এসে দাড়ায় আরসাল। বৃষ্টির পানি হালকা গায়ে এসে লাগছে আরসালের। আরসাল আবার মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আজও চোখ বন্ধ করলে তোকে দেখি। আজ একবারের জন্য হলেও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যদি আমি আজ ঐ রাস্তায় নাহ যেতাম, তাহলে কি হতো তোর সেহের। ওরা তোহ তোরে, নাহ আর ভাবতে পারছি নাহ। মাথায় পেইন হচ্ছে খুব।”

আরসাল আবারও তাকিয়ে থাকে বাহিরের দিকে, আরসালের মনে হতে লাগে মেঘ থেকে আসা আলোর ঝলাকানিতেও সেহেরের মায়া ভরা মুখ ভেসে উঠছে।

★★★
সেহের চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে বারান্দার কর্নারে। বৃষ্টির পানি হালকা ভিজিয়ে দিচ্ছে সেহেরকে। আর সেহের চোখ বন্ধ করে সেই বৃষ্টির হালকা পানি অনুভব করছে। হঠাৎ সেহের মনে আসে আরসালের কথা। আজ আরসাল তার কতোটা কাছে চলে এসেছিলো। যদি সেহের আরসালকে আটকানোর জন্য ডাক নাহ দিতো, তাহলে কি হতো? সেহের মনে মনে ভাবছে,
–” আচ্ছা ভাইয়া তোহ আমাকে ঘৃনা করে, তাহলে আজ আমার এতো কাছে কেনো এসেছিলো। আমার পায়ে হাত দিয়ে ব্যাথাটাও ঠিক করে দিলো কেনো? আজ যদি ভাইয়া সময়মতো নাহ আসতো তাহলে কি হতো আজ আমার? ওরা তোহ।”

এইসব কথা ভাবতেই সেহেরের ভয় লেগে উঠে। আসলেই আজ সেহেরের সাথে অনেক খারাপ হতে পারতো। সেহের আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার ভাবতে থাকে,
–” আমার কেনো জানি নাহ মনে হয়, ভাইয়া আজও আমাকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে আমাকে। কিন্তু তার রাগের কাছে ভালোবাসাটাহ ধূসর হয়ে আছে। নাকি, সত্যিই ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে নাহ আর। আচ্ছা আমি কেনো এইসব ভাবছি। ভাইয়া আমাকে ভালোবাসুক বাহ নাহ বাসুক তাতে আমার কি? আমি কেনো ভাবছি এইসব নিয়ে? ভাইয়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে মিশলে আমার রাগ কেনো হয়? আমি কেনো সহ্য করতে পারি নাহ ভাইয়াকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে? ভাইয়াও নাকি সহ্য করতে পারতো নাহ আমাকে অন্য কোনো ছেলের সাথে। কিন্তু তার তোহ কারন ছিলো, ভাইয়া আমাকে ভালোবাসতো জন্যই অন্য কাউকে সহ্য করতে পারতো নাহ। কিন্তু আমার তোহ কোনো কারন নেই। নাকি আমিও ভাইয়াকে, নাহ নাহ এইসব কি ভাবছি আমি। আমি ভাইয়াকে কখনো পসিবেল নাহ। ভাইয়াকে তোহ আমার ভয় লাগে। আমার লাইফের ডেভিল। আমার দ্বারা এইটা কখনোই সম্ভব নাহ।”

এইসব ভাবছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে সেহের।

★★★
আমান তার রুমের বারান্দায় একটি চেয়ারের উপর মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। সামনে একটা কাচের ছোট্ট টেবিলে এক কাপ কফি রাখা। কফি ঠান্ডা হয়ে পানি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমানের যেনো সেইদিকে খেয়াল নেই। আমান তার ভাবনায় ব্যাস্ত। আমান মুখে হাত দিয়ে ভাবছে,
–” আমার সাথে এমন কেনো করলে জেরিন ( আমানের এক্স গফ )। আমার সাথে এইভাবে প্রতারনা কেনো করলে? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তোমার? আমার ভালোবাসা নিয়ে এইভাবে কেনো খেললে জেরিন। যন্ত্রনা দেয় তোমার সাথে কাটানো দিন গুলো। ভুলতে চায় তোমাকে, তাও পারছি নাহ। আশাকেও কষ্ট দিলাম আজ। কি করতাম আমি। আমি যে আজও জেরিনকে ভুলতে পারি নাহ। এই মুহুর্তে আশাকে মেনে নেওয়া মানে আশার প্রতি অন্যায় করা। মেয়েটা খুব কাদছিলো। ছেড়ে চলে এলাম তাও। কি করবো আমি, আশাকে যে মেনে নিতেও পারছিলাম নাহ আবার ওর কান্নাও সহ্য করতে পারছিলাম নাহ। এ কোন দোটানার মাঝে পড়লাম আমি। নাহ পারছি জেরিন কে ভুলতে, নাহ পারছি আশাকে মেনে নিতে, নাহ পারছি আশার কান্না সহ্য করতে আবার নাহ পারছি আশার কান্না মুছে দিতে। কি করবো আমি?”

আমান উঠে গিয়ে বারান্দার রেলিং ধরে দাড়ায়। বৃষ্টির হালকা পানি এসে গায়ে লাগে আমানের। কিন্তু এতে আমানের কিছু যায় আসে নাহ। আমানের চোখে তোহ শুধু আশার কান্নারত মুখ আর কানে ”আমি তোমাকে ভালোবাসি” কথাটাহ বাজছে।

★★★
বারান্দায় দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে আশা। কোনো দিকে খেয়াল নেই আশার। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে আশার। শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে আজ যেমন মেঘ করে বিদ্যুৎ চমকিয়ে বৃষ্টি নামছে। আশারও সেই একই অবস্থা। আশার মনেও আজ মেঘ জমে বজ্রপাত হচ্ছে। চোখ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ধারা। আশা মনে মনে ভাবছে,
–” কেনো এতো ভালোবাসলাম তোমাকে? কেনো ফিরিয়ে দিলে আমাকে? ঐ মেয়েটা নাহ হয় তোমার সাথে বেইমানি করেছে। তাই বলে আমিও করবো নাকি, যে আমাকে ফিরিয়ে দিলে। আমি তোহ তোমাকে কখনো বলতেই চাই নি, যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আজ তোমাকে জানিয়ে তোমার কাছে থেকে ভালোবাসাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসাটা যেনো মেনে নিতে পারছি নাহ। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। খুব ভালোবাসি তোমায় আমান। খুব বেশি ভালোবাসি।”

কথা গুলো ভেবে হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগে আশা।

***সবাই আজ বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টির পানির সাথে নিজের কথাগুলো বলে যাচ্ছে। যাকে নিয়ে ঘর বাধতে চায় বা চেয়েছিলো তাকে নিয়ে ভাবছে। কি হবে এর শেষ পরিনতি। কে পাবে কার ভালোবাসা। কার কাছে গিয়ে কে পৌছাবে। কে বাহ জয় করে নিবে নিজের ভালোবাসা। কারো ভালোবাসা কি পূর্নতা পাবে নাকি কোনো অজানা ঝড় সবার এলোমেলো জীবনকে আরও এলোমেলো করে দিয়ে যাবে।

কেটে গেছে সাত দিন।
এই সাত দিনে আরসাল প্রতিদিন অফিস গেছে। নিজের মতো করে কাজ করেছে। নেহাকে নিয়ে দুইদিন ঘুরতে গেছে। পরিবারের সবার প্রতি একটু নরম হয়েছে। কিন্তু সেহেরের থেকে দুরত্ব বজায় রেখেছে।
সেহেরও এই সাতদিন ভার্সিটি গেছে। বাসায় দুর থেকে দেখেছে আরসালকে। আরসালের প্রতি কেমন যেনো দূর্বল হয়ে যাচ্ছে সেহের। আবার মাঝে মাঝে রেগে বমও হয়ে যাচ্ছে সেহের। যখন নেহা এই বাসায় আসে, বা আরসালের সাথে ঘুরতে বের হয় তখন সেহেরের মেজাজ একদম টপে উঠে যায়।
আশফি এই কয়েকদিনে নেহার সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছে। নেহার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে আশফি। নেহাও কয়েকবার এসেছে এই বাড়িতে। সবার সাথে কথা বলেছে। মাঝে মাঝে আরসালের অফিসে গিয়ে আরসালের সাথে সময় কাটিয়েছে। আরসালের সাথে দুইদিন ঘুরতে বেরও হয়েছে। একদিন আমান সহ আর একদিন আমানকে ছাড়া।
আমানও এই সাতদিন মাঝে মাঝে আরসালের বাসায় এসেছে। আশাকে দেখেছে কিন্তু কিছু বলার আগেই আশা আমানের সামনে থেকে চলে যায়। এতে যেনো আমানের বুকের কোথাও ব্যাথা অনুভব হয়।
আশা এই কয়দিন ভার্সিটি যায় ঠিকই কিন্তু কথা কম বলে সবার সাথে। আমানকে দেখলেই সামনে থেকে সরে আসে। নাহলে আমানকে দেখলে তার প্রতি ভালোবাসার পরিমান যদি আরও বেড়ে যায়। কিন্তু এতে বিশেষ কোনো লাভ হয় নাহ। দিন শেষে রাতের বেলা চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভেজায় আশা।

In morning…..

জিহাদ চৌধুরী ডাইনিং টেবিলে বসে পেপার পড়ছেন। মায়া চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর সামনে ব্রেকফাস্ট রাখতেই জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” মায়া শোনো, আজ সন্ধ্যায় সবাই যেনো বাসায় থাকে। সবাইকে বলে দিও। কথা আছে।”

–” হঠাৎ, কি হয়েছে যে এমন করে সবার সাথে কথা বলতে হবে।”

–” সেইটা তখনই জানতে পারবে। সারপ্রাইজ বলতে পারো।”

–” কি করতে চাচ্ছো বলোতো?”

–” সেইটা তখনই দেখতে পাবে।”

বলেই জিহাদ চৌধুরী ব্রেকফাস্ট করা শুরু করে। মায়া চৌধুরীও আর কিছু বলে নাহ।

এইদিকে,
আরসাল আজ অফিস যাবে নাহ। তাই রুফটপে এসেছে। সকালের এই প্রকৃতি আরসালের ভালোই লাগছে। হঠাৎ শুনতে পায় আশেপাশে কোথাও একটা আওয়াজ হচ্ছে।
আরসাল আশেপাশে উকি ঝুকি মেরে দেখতে থাকে। হঠাৎ একটা মাঝারি সাইজের গাছের পাশে যাহ দেখে তাতে কান্না করবে নাকি হাসবে আরসাল বুঝে উঠতে পারছে নাহ। আসলে সেহের গাছের পাশে উবুর হয়ে অন্য কোনো গাছ লাগানোর জন্য মাটি ঠিক করছে। কিন্তু সেহেরের পুরো মুখে মাটি লেগে গেছে এবং চুলে গাছের পাতা আটকে আছে। আরসালের কাছে সেহেরকে ঠিক একটা কিউট বিড়াল মনে হচ্ছে। আরসাল জোরে হেসে দেয়। সেহের কারো হাসির আওয়াজ পেয়ে উপরে তাকিয়ে দেখে আরসাল হাসতেছে। সেহের এই প্রথম মনে হয় আরসালকে এমন হাসতে দেখছে। আরসালের হাসিটাহ আসলেই খুব সুন্দর। সেহের একভাবে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল কোনোভাবে নিজের হাসি থামিয়ে বলে ওঠে,
–” তোকে দেখতে দারুন লাগছে।”

কথাটাহ বলেই আরসাল আবার হেসে উঠে। আরসালের কথা শুনে সেহেরের ঘোর ভাঙে, কিন্তু আরসালের এতো হাসির কারন কি বুঝে উঠতে পারছে নাহ সেহের। তাই সেহের বলে ওঠে,
–” মানে, আর তুমি এতো হাসছো কেনো?”

–” ওয়েট, ওয়েট।”

আরসাল নিজের হাসি থামিয়ে ফোন বের করে সেহেরের একটা ফটো তুলে সেহেরের চোখের সামনে ধরে। সেহেরের ছবিতে নিজেকে দেখে চেচিয়ে উঠে। তাহ দেখে আরসাল আরও জোরে হেসে দেয়। আরসালের হাসি দেখে সেহেরের খুব রাগ উঠে। আর বলে ওঠে,
–” খুব হাসি পাচ্ছে, তাই নাহ। দাড়াও বের করছি তোমার হাসি।”

বলেই নিচে থেকে কিছু মাটি নিয়ে আরসালের মুখে মাখিয়ে দেয় সেহের। সেহের এমন কান্ডে আরসাল হতভম্ব হয়ে যায়। সেহেরের আরসালের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে যখনই দৌড় দিতে যায়, আরসাল সেহেরের হাত ধরে টান দিতেই সেহেরের আরসালের কাছে চলে আসে। আরসাল একহাত দিয়ে সেহেরের কোমর পেচিয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে বলতে শুরু করে,
–” এইটা কি করলি তুই?”

–” আমাকে দেখে হাসছিলে কেনো? তাই করেছি।”

–” তাই নাহ। এখন দেখ আমি কি করি।”

আরসাল সেহেরের মুখের যেখানে যেখানে মাটি ছাড়া ছিলো সেখানে সেখানে নিজের মুখে লেগে থাকা মাটি ঘসে লাগিয়ে দিতে শুরু করে। আরসালের খোচা খোঁচা দাড়ি মুখে লাগতেই কেঁপে উঠে সেহের। আরসালের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেহের। আরসাল সেহেরের মুখে নিজের মুখ দিয়ে মাটি লাগিয়ে হেসে দিয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে, সেহের একভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এতোক্ষণে আরসালের খেয়াল এলো সে কি করছে। আরসাল আস্তে আস্তে সেহেরের কোমর থেকে নিজের হাত সরিয়ে, ২ পা পিছিয়ে যায়। আরসাল সেহের কে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই সেহের রুফটপ থেকে নিচে নেমে যায়। আরসাল সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এইটা কি করছিলাম আমি। কেনো নিজের উপর কন্ট্রোল রাখিস নাহ আরসাল? সেহের কি ভাবলো? কি ভাবছে সেহের আমাকে নিয়ে? উফ, অসহ্য, মাঝে মাঝে নিজের কাজে নিজের উপরই এমন রাগ উঠে।”
আরসাল এগুলো ভেবে নিচে চলে যায়।

In evening….

আরসাল নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে আমান। আরসাল আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। আমান আরসালের পাশে বসে ফোন চালাতে চলাতে বলে ওঠে,
–” কি করছিস।”

–” দেখতেই তোহ পাচ্ছিস।”

–” ওহ হ্যা।”
আমান আবার কিছু বলতে যাবে তার আগে আবার দরজায় কেউ নক করায় আরসাল বলে উঠে,
–” ভেতরে এসো।”

একজন সার্ভেন্ট ভেতরে এসে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া, বড় ম্যাম নিচে সবাইকে ডাকছেন।”

–” আম্মু ডাকছে, কেনো?”

–” তাতোহ বলতে পারবো নাহ। কিন্তু সবাইকে নিচে যেতে বলেছে।”

–” আচ্ছা তুমি যাও।”

সার্ভেন্টটি চলে যায়। আরসাল আবার নিজের কাজ শুরু করে দেয়। আমান তাহ দেখে বলে ওঠে,
–” কিরে, নিচে যাবি নাহ?”

–” নাহ, তুই যা। আমার কাজ আছে।”

–” মানে কি? আন্টি সবাইকে যেতে বললো আর তুই যাবি নাহ কেনো? চলতো।”

–” আমান।”

–” আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি নাহ। চল।”

আমান আরসালকে জোর করে নিচে ড্রইংরুমে নিয়ে আসে। নিচে আসতেই আমান আর আরসাল দেখে সবাই ড্রইংরুমে হাজির, শুধু জিহাদ চৌধুরী ছাড়া। আমানের চোখ যায় আশার দিকে, তাকাতেই আশা দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়, তাহলে কি আশা এতো সময় তার দিকে তাকিয়ে ছিলো? আরসালও সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহেরেরও আরসালের দিকে তাকায়। আরসাল তাড়াতাড়ি নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে, মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আম্মু, কি হয়েছে? সবাইকে নিচে ডাকার কারন কি?”

–” আসলে তোর আব্বু কি যেনো বলবে সবাইকে তাই। তোর আব্বু চলে আসবে এক্ষুনি। ঐ তোহ চলে এসেছে।”

সবাই তাকিয়ে দেখে জিহাদ চৌধুরী চলে এসেছেন। জিহাদ চৌধুরী এসেই সোফার উপর বসে পড়েন। জিহাদ চৌধুরী বসতেই কবির চৌধুরী বলে ওঠে,
–” দাভাই, এইবার সবাইকে খবর টাহ দিয়ে দাও। আমরা তিনজন জানলেই তোহ হবে নাহ। বাকি সবারও জানা দরকার।”

–” হুম, আসলে, আমার বন্ধু সিরাজ রহমানের ছেলে সাইফ দেশে ফিরেছে কিছু দিন হলো। সিরাজ তোহ আমার বাসায় সবসময় যাওয়া আসা করে। তোমরা সবাই চিনো। তোহ সিরাজ আমার কাছে একটা প্রস্তাব রেখেছে, কথাটা আমি কবির এবং আজিজ কে বলতেই ওরা বলে আমি যাহ বলবো তাই হবে। আর এই প্রস্তাবে আমি সহজে নাহ করতে পারছি নাহ। কারন সাইফ আসলেই অনেক ভালো একটা ছেলে।”

জিহাদ চৌধুরীর কথা শুনে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” হ্যা, সব ঠিক আছে। কিন্তু কিসের প্রস্তাব?

জিহাদ চৌধুরী উঠে দাড়িয়ে আশার সামনে এসে মুচকি হাসি দিয়ে আশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে,
–” সিরাজ, আশাকে তার ছেলে সাইফের বউ বানাতে চায়।”

কথাটা শুনে আশা চমকে জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকায়। আমানের যেনো মনে হচ্ছে তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আশার বিয়ে অন্য একজনের সাথে এইটা আমান যেনো কিছুতেই মেনে নিতে পারছে নাহ। আর আশা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ। জিহাদ চৌধুরী আবার বলে ওঠে,
–” আগামীকাল সিরাজরা সবাই আমাদের বাসায় আসছে। আশা এবং সাইফ কাল যদি একে অপরকে পছন্দ হয়। তাহলে কাল সব কথা পাকা করা হবে।”

আশা কি বলবে বাহ কি বলা উচিত এইটায় বুঝে উঠতে পারছে নাহ। রুমের সবাই অবাক হয়ে গেলেও খুশিই হয়। সেহের দৌড়ে আশার কাছে এসে ফিসফিস করে বলতে শুরু করে,
–” আশা তোর বিয়ে। ওয়াও, আমি তোহ ভাবতেই পারছি নাহ। কত মজা হবে। ইয়ে, শোন আমরা অনেক অনেক শপিং করবো বুঝলি।”

সেহেরের কথা শুনে আশা সেহেরের দিকে তাকায়। সেহের আশার দিকে তাকাতেই সেহেরের হাসি মিলিয়ে যায়। কারন আশার চোখ পানিতে ভরে গেছে। সেহের আর কিছু নাহ বলে আশাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।
জিহাদ চৌধুরী নিজের রুমের দিকে যেতে গিয়ে থেমে যায়। আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমান।”

আমান যেনো এতোক্ষণ নিজের মাঝেই ছিলো নাহ। জিহাদ চৌধুরীর ডাক শুনে আমানের ধ্যান ভাঙে। আমান কোনো মতে নিজেকে সামলিয়ে জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি, আংকেল।”

–” আগামীকাল যেনো তোকে দেখতে পাই। আমার ভালো লাগবে।”

–” জি, আংকেল। আমি আসবো।”

–” হুম।”

জিহাদ চৌধুরী নিজের রুমে চলে যায়। আরসালও নিজের রুমে চলে যায়। আমান আর আরসালের কাছে যায় নাহ, সোজা বেরিয়ে যায় চৌধুরী ম্যানশন থেকে।

★★★
–” কি হয়েছে আশা? তুই ঠিক আছিস?”
আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে সেহের। আশার চোখ দিয়ে পানি বের হয়েই যাচ্ছে। সেহের আশাকে দুই হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করে,
–” তাকা আমার দিকে, বল কি হয়েছে তোর?”

আশা নিজের চোখ মুছে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,
–” কিছু নাহ।”

–” কিছু নাহ বললেই হলো তাই নাহ। কি হয়েছে আমাকে বলবি নাহ?”

–” সেহের আমি এখন বিয়ে, কি করে পসিবেল। আমার স্টাডির কি হবে?”

–” আরে বোকা। এই জন্য কাদছিস তুই। একদম ভাবিস নাহ। তোর স্টাডির কোনো ক্ষতি হবে নাহ।”

বলেই সেহের আশার জন্য পানি আনতে চলে যায়। আশা উঠে দাড়িয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” কি করে বলি তোকে সেহের। ভালোবাসি আমি আমানকে। আমি কি করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারি। কিন্তু আমান তুমি তোহ আমাকে মেনে নিবে নাহ, তুমি তোহ আমাকে ভালোইবাসো নাহ, তুমি তোহ এইটায় চাও যে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিই। বেশ তাহলে তাই হোক, আমি এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাবো। দেখি কেমন সুখ পাও তুমি। তোমার সুখের জন্যই নাহ হয় নিজের ভালোবাসা কে খুন করলাম আমি।”

বলেই আশা নিজের রুমে চলে যায়।

এইদিকে,
সেহের আশার জন্য গ্লাসে করে পানি নিয়ে যাচ্ছিলো। একটু বেশি পানি ভরে ফেলেছে গ্লাসে। তাও সেইভাবে নিয়ে যাচ্ছিলো সেহের, দুষ্টুমি চাপলে যাহ হয় আরকি।
নিয়ে যেতে যেতে কারোর সাথে ধাক্কা লেগে সব পানি সামনে থাকা ব্যাক্তির গায়ের উপর পড়ে, সেহের কার উপর পড়লো তাহ দেখার জন্য সামনে যাকে দেখে, তাকে দেখেই সেহেরের মনে হলো তার প্রান পাখি ওড়ার জন্য রেডি হচ্ছে। সেহের ভয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে, কি হবে এখন সেহেরের।

চলবে……….🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-০৭+০৮

0

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 7+8

,,,,,,ও ও ও ও ও ও ও ও,,,,,,,,
,,,,,,,,,কতবার বোঝাবো বল,,,,,,,,
,,,,,,কতবার জানাবো বল,,,,,,
,,,,,,,,,,,নিঃস্ব এ জীবনে
শুধু তুই আমার সম্বল,,,,,
,,,,,,,,,কতবার বোঝাবো বল,,,,,,,,
,,,,,,কতবার জানাবো বল,,,,,,
,,,,,,,,,,,নিঃস্ব এ জীবনে
শুধু তুই আমার সম্বল,,,,,
,,,,,,,,,,যতনে রেখেছি তোকে মনের গভীরে,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,তোর দেখা নাহ পেলে
হয় মন বড়ই চঞ্চল,,,,,,,,,
,,,,,,,,,কতবার বোঝাবো বল,,,,,,,,
,,,,,,কতবার জানাবো বল,,,,,,
,,,,,,,,,,,নিঃস্ব এ জীবনে
শুধু তুই আমার সম্বল,,,,,

{{ বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন 😊 }}

আরসাল গান টাহ সেহেরের দিকে এক দৃষ্টিতে গেয়ে গেলো। আর এইটা সবাই খেয়াল করলো। আরসাল গান শেষ করতেই সবাই হাত তালি দিয়ে ওঠে। আরসাল গান শেষ করে আর কারো দিকে নাহ তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। নেহাও জিনিসটা খেয়াল করে আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” আরসাল পুরো গান টাহ সেহেরের দিকে তাকিয়ে গাইলো কেনো? এমোন মনে হলো যেনো প্রতিটি লাইন সেহেরকেই বলছে। তাহলে কি আরসাল, নাহ আরসাল শুধু আমার। আর কারো নাহ। আর কেউ যদি আমার আর আরসালের মাঝে আসার চেষ্টা করে তাহলে তাকে সরিয়ে দিতে আমি ২বার ভাববো নাহ। সে যেই হোক নাহ কেনো।”

নেহা কথা গুলো মনে মনে ভেবে আরসালের রুমের দিকে চলে যায়। আরসাল যখন গান গায়ছিলো সেহের আরসালের দিকে তাকাতে পারে নি। কারন যখনই সেহের আরসালের দিকে তাকাচ্ছিলো, দেখে আরসাল তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আরসালের চোখে চোখ রাখা সম্ভব নাহ সেহেরের কাছে, তাই চোখ সরিয়ে নিচ্ছিলো, আরসালের উপর থেকে।
আরসাল চলে যেতেই সেহেরও নিজের রুমে চলে যায়।

এইদিকে,
আরসাল বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমের দরজা খোলার আওয়াজে রুমে এসে দেখে নেহা দাড়িয়ে আছে। আরসালকে দেখেই নেহা এগিয়ে এসে বলতে শুরু করে,
–” হঠাৎ পার্টি ছেড়ে চলে এলে যে।”

–” ভালো লাগছে নাহ। আর পার্টিও তোহ প্রায় শেষ। বাকিটাহ ওনারা সামলে নিবেন। আমার মাথায় পেইন হচ্ছে হালকা।”

–” ওহ, তাহলে চলো মেডিসিন নিবা।”

–” আমি নিয়ে নিবো। তুমি চিন্তা করো নাহ। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। তুমি আজ এখানে থেকে যেতে পারো।”

–” নাহ, ওহ হ্যা। তোমাকে তোহ বলাই হয় নি। ড্যাড এন্ড মাম্মামও এসেছেন।”

–” আংকেল, আন্টিও এসেছেন।”

–” হুম, আসলে আমি যখন বললাম আমি বাংলাদেশে আসবো। তখন তারাও আসতে চাইলো। তাই সবাই মিলে চলে আসলাম।”

–” হুম, ভালো করছো। আচ্ছা চলো আমি তোমাকে ড্রপ করো দেই।”

–” নাহ, তোমাকে আর মাথায় পেইন যেতে হবে নাহ। আমি গাড়ি এনেছি প্রব্লেম নেই।”

–” ওহ, ওকে।”

–” বাই।”

–” বাই।”

চলে যায় নেহা। আরসালও গায়ের ব্লেজার খুলে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় শাওয়ার নেওয়ার জন্য।

★★★
সেহের পুরো রুম অন্ধকার করে বিছানার উপর হেলান দিয়ে বালিশ কোলের উপর বসে আছে। আর মনে মনে ভাবছে,
–” আরসাল ভাইয়া আজ আমার দিকে তাকিয়ে কেনো গান গায়লো? ওনি তোহ আমাকে ঘৃনা করে তাহলে, আমার দিকে তাকিয়ে কেনো গায়লো?
আচ্ছা আরসাল ভাইয়াকে নেহার সাথে দেখে আমার কেনো এতো রাগ হচ্ছিল? আরসাল ভাইয়া নাহ হয় আমাকে ভালোবাসতো, কিন্তু আমি তোহ আরসাল ভাইয়ার প্রতি কখনো এইসব নিয়ে ভাবিও নি। তাহলে, কেনো আমার রাগ হচ্ছিল?”
এইসব ভাবতে ভাবতেই সেহের ঘুমিয়ে যায়।

এইদিকে,
আরসাল শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে এগোতেই পায়ের নিচে কিছু একটা অনুভব করে, পায়ে একটু ব্যাথাও পায়। পা সরিয়ে তাকিয়ে দেখে একটা কানের দুল পড়ে আছে। আরসাল হাত দিয়ে কানের দুলটাহ উঠিয়ে চোখের সামনে ধরে। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এই এয়ার রিং এখানে কোথা থেকে এলো। নেহার এয়ার রিং নাকি? কিন্তু নেহা যাওয়ার সময় তোহ ওর ২ কানেই রিং দেখেছি। তাহলে?”

আরসাল এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে সেহের কে সে নিজের কাছে এনেছিলো তখন হয়তো ব্লেজারে লেগে ছিলো, পরে ব্লেজার খুলে রাখার সময় নিচে পড়েছে। আরসাল ভাবছে কি করবে এইটা, নিজের কাছে রেখে দিবে নাকি সেহেরকে দিয়ে আসবে। আরসাল আর কিছু নাহ ভেবে সেহেরের রুমের সামনে চলে যায়। দরজায় একটু ধাক্কা দিতেই দরজাটাহ খুলে যায়। আরসাল দেখে পুরো রুম অন্ধকার, গ্রিন শেডের হাল্কা ড্রিম লাইট জ্বালানো আছে। যার জন্য পুরো রুম আবছা আলো অন্ধকারে ভরে গেছে। আরসাল একবার ভাবলো চলে যাবে রুম থেকে, পরে নাহ হয় দিয়ে দিবে। রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বিছানার দিকে চোখ যায় আরসালের, আর চোখ যেনো সেখানেই দাড়িয়ে যায় সেহেরকে দেখে। সেহের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে, এলোমেলো হয়ে। সেহের একটা লাল টপ আর সাদা প্লাজু পরা, প্লাজু টাহ একটু উপরে উঠে আছে, চুলগুলো ছাড়া এলোমেলো হয়ে আছে, কিছু চুল মুখের উপর এসে রয়েছে। আরসালের মনে হচ্ছে সেহের যেনো তাকে টানছে, কোনো এক ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে আরসাল সেহেরকে দেখে। সেহেরকে দেখতে দেখতে কখন সেহেরের কাছে চলে এসেছে আরসাল নিজেও জানে নাহ। সেহেরের উপর হাল্কা ঝুকে আরসাল, আলতো ভাবে সেহেরের মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরসাল সেহেরের দিকে। কত মায়াবী লাগছে সেহেরের মুখ, হাল্কা সবুজ আলো সেহেরের ফর্সা মুখের উপর পড়ে সৌন্দর্য যেনো হাজার গুন বেড়ে গেছে। আরসাল সেহেরকে দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ যায় সেহেরের ঠোঁটের উপর। ঠোঁটের দিকে তাকাতেই যেনো আরসালের মনে হতে থাকে এই ঠোঁটে কোনো নেশার দ্রব্য আছে, যাহ আরসালকে টানছে। তারউপর সেহেরের ঠোঁটের উপর গাঢ় তিল টাহ যেনো আরসাল কে ঠিক থাকতে দিচ্ছে নাহ। আরসাল ঘোরের মাঝেই সেহেরের ঠোঁটের কাছে চলে যায়, আর মাত্র ১, ২ সে.মি দুরত্ব আরসাল আর সেহেরের ঠোঁটের। হঠাৎ সেহের একটু নড়ে উঠতেই আরসালের ঘোর কেটে যায়। দ্রুত সরে আসে সেহেরের কাছের থেকে। হাতে থাকা কানের দুল টাহ বিছানার পাশে থাকা ছোট্ট রাউন্ড টেবিলের উপর রেখে দ্রুত সেহেরের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে আসে আরসাল। আরসাল বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি করতে যাচ্ছিলাম এইটা আমি? শিট, যদি সেহেরের ঘুম ভেঙে যেতো তাহলে। ওহ নো, কান্ট্রোল আরসাল। কি করতে যাচ্ছিলি এইটা।”

কথা গুলো ভেবেই চোখ বন্ধ করে আরসাল, আর চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আজকে সেহেরের রাগী মুখ, গান গাওয়া সময় সেহেরের অস্বস্তিকর মুখ, আর এখন দেখে আসা আলো অন্ধকারে ভরা সেহেরের মায়াবী মুখ। তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে আরসাল। আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আজও চোখ বন্ধ করলে তোকেই দেখতে পাই সেহের। আমার সব কিছুতেই তোরে দেখি। কিন্তু তোরে আমি ঘৃনা করি। তোরে যদি এতো ভালো নাহ বাসতাম তাহলে আমাকে এতো কষ্ট পেতে হতো নাহ। তোরে যদি ভালো নাহ বাসতাম তাহলে আম্মু আমার গায়ে হাত তুলতো নাহ, এই বাড়ি থেকে আমাকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়াও হতো নাহ। শুধু তোকে ভালোবেসেছি জন্য আমার সাথে এইসব হয়েছে। আই হেট ইউ। তাহলে আজও কেনো আমার তোর প্রতি এতো টান আসে। কেনো তোকে দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নাহ? কেনো তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারি নাহ? কেনো তোকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করে? কেনো?”

আরসাল এইগুলো ভাবতে ভাবতে আবার রুমে চলে আসে। রুমের লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে সেহেরকেই মনে করতে করতেই ঘুমিয়ে যায়।

★★★
সকালে সেহের ঘুম থেকে উঠে পড়ে এলার্মের আওয়াজে। উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে থাকে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। হঠাৎ বিছানার পাশে থাকা ছোট্ট রাউন্ড টেবিলের উপর চোখ যায় সেহের, দেখে কি যেনো একটা রাখা। সেহের এগিয়ে এসে দেখে কানের দুল, যেইটা গতকাল রাতে খুঁজে পাচ্ছিলো নাহ। কিন্তু এখানে কোথা থেকে এলো সেইটা বুঝে উঠতে পারছে নাহ সেহের। যাই হোক, সেহের আর বেশি নাহ ভেবে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। সেহের নিচে এসে দেখে মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী আর আহিয়া চৌধুরী ব্রেকফাস্ট গোছাচ্ছে। সেহেরকে দেখে আহিয়া চৌধুরী অবাক হয়ে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে, যে মহারানি কে নাহ ডাকতেই নিজে উঠে চলে এসেছে। ”

আহিয়া চৌধুরীর কথা শুনে মায়া চৌধুরী এবং কেয়া চৌধুরী হেসে উঠে। তাই দেখে সেহের রেগে বলে ওঠে,
–” আম্মু, তুমি এমন ভাবে বলছো যেনো আমি একা একা তাড়াতাড়ি উঠতে পারি নাহ কখনো।”

–” নাহ, আমি কি সেরকম কিছু বলছি নাকি?”

–” তোহ, কি বলছো তুমি?”

–” আচ্ছা বাদ দে। আই ব্রেকফাস্ট করে নে।”

–” হুম, কিন্তু আশা কই? নাকি আজও ভার্সিটি যাবে নাহ?”

–” আমি চলে এসেছি।” কারো কথার আওয়াজে সবাই তাকিয়ে দেখে আশা রেডি হয়ে নিচে নেমে এসেছে। তারপর আশা আর সেহের টেবিলে বসতেই কেয়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” ঐতোহ আরসালও চলে এসেছে।”

কেয়া চৌধুরীর কথা শুনে সেহের পেছনে তাকিয়ে দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই চোখ যায় সেহেরের ঠোঁটের উপর। সেহের ঠোঁটে কিছুই দেয় নি, যার জন্য গোলাপি আভার ঠোঁটের উপর গাঢ় ছোট্ট কালো তিল টাহ বেশি ফুটে উঠেছে। এমন সময় আশা বলে ওঠে,
–” ভাইয়া, তুমি কি অফিস যাবা?”

আশার কথায় আরসালের ঘোর কেটে যায়। আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম, আমাকে কয়েকদিন অফিস কন্টিনিউ করতে হবে। ”

–” ওহ, আচ্ছা। তাহলে আসো বসো, ব্রেকফাস্ট করে নাও।”

–” নাহ, আমার এমনিই লেট হয়ে গেছে। অফিস থেকে করে নিবো।”
আরসালের কথা শুনে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” অফিস থেকে কেন করবি? খাবার তোহ রেডি হয়ে গেছে। বাসা থেকে করে যাহ।”

–” নাহ, সময় নেই। আসি।”
আরসাল আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ নাহ দিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। তারপর পরই সেহের আর আশাও বেরিয়ে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

★★★
আশা ভার্সিটি থেকে একটা কফি শপে যায় একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। সেহের আর আশা একই ভার্সিটিতে একই ক্লাসে পড়লেও ওদের সাবজেক্ট আলাদা। তাই দুইজন একসাথে ভার্সিটিতে আসলেও ক্লাস টাইম আলাদা থাকায় যে যার মতো বাসায় চলে যায় বা অন্য কোনো কাজ থাকলে একাই যায়। তাই আশা একা এসেছে। আশার ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে জানাই যে সে আসতে পারছে নাহ। তাই কফি শপ থেকে বের হয়ে যেতেই একদিকে চোখ যায় তার। আর যাহ দেখে তার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো নাহ আশা। দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে আশার। তাহলে কি,,,,,,

আশা আর আমান কফি শপের রুফটপে দাড়িয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে নাহ। আশা মুখ দিয়ে কোনো শব্দ করছে নাহ ঠিকই কিন্তু অঝোর ধারায় চোখ দিয়ে পানি ফেলছে। আমান যদিও কিছুটা আন্দাজ করে আসছে এতোদিন কিন্তু কখনো সেরকম খেয়াল দেয় নি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তার খেয়াল দেওয়া উচিত ছিলো।

কিছুক্ষণ আগে,
আশা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোনোর সময় দেখতে পায়, আমান একটি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর দৃশ্যটি দেখা মাত্রই আশার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে আশার। কোনোভাবেই আমানের সাথে অন্য একটা মেয়েকে মেনে নিতে পারছে নাহ। আশা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমান আর জড়িয়ে ধরা মেয়েটির দিকে। আমান মেয়েটিকে সরিয়ে কি যেনো একটা বলে সামনের দিকে এগোতেই দেখে আশা কান্না ভেজা চোখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। যাহ দেখে আমানের বুকের ভেতর কোথাও চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে। আমান আশার দিকে এগিয়ে আসতেই আশা ঘুরে চলে যেতে নেয়। কিন্তু আমান সাথে সাথে আশার হাত ধরে আটকে দেয়। আশা ঘুরে আমানের দিকে তাকায়। আমানও আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এখানে?”

–” কেনো, আমাকে আশা করো নি?”

–” মানে।”

–” তাহ, এইটা কি তোমার গফ নাকি?”

–” মানে, কার কথা বলছিস? ছোয়া।”

–” তাহ, আমি কি করে জানবো ওর নাম ছোয়া কি নাহ?”

–” হ্যা, ওর নাম ছোয়া। যাই হোক তুই কান্না কেনো করছিস?”

–” তাতে তোমার কি?”

–” চল।”

–” কোথায়? আমি যাবো নাহ তোমার সাথে কোথাও।”

আমান আর কোনো কথা নাহ বলে আশার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে। আশা মুখে নাহ বললেও যাওয়ার সময় কোনো বাধা দেয় নাহ। আমান আশাকে কফি শপের রুফটপে এনে ছেড়ে দেয় আশার হাত। তারপর থেকেই দুইজন চুপ করে আছে আর আশা নিঃশব্দে চোখ দিয়ে পানি ফেলে যাচ্ছে। আমান আশার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” ভালোবাসিস আমাকে?”

আমানের সরাসরি এমন কথায় আশা চমকে আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে আমান তার দিকে সোজা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশা কান্না ভেজা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” হুম। খুব ভালোবাসি তোমাকে।”

–” তাহলে এতোদিন বলিস নি কেনো?”

–” ভয়ে, যদি তুমি আমার সাথে কথা বলা দেখা করা বন্ধ করে দেও এই ভয়ে বলি নি।”

–” আমি অনেক আগেই এমন কিছু টের পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমি যদি তোকে পাত্তা নাহ দেয়, তাহলে হয়তো তুই থেমে যাবি। কিন্তু তুই যে এতো এগিয়ে যাবি, আর কষ্ট পাবি এমন ভাবে তাহলে অনেক আগেই তোকে বারন করে দিতাম।”

–” কেনো, আমি কি এতটাই খারাপ যে আমাকে ভালোবাসা যায় নাহ।”

–” নাহ, তুই কেনো খারাপ হতে যাবি। তুই তোহ অনেক ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু তুই যে ভালোবাসার কথা বলছিস, সেই ভালোবাসার প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস নেই।”

–” মানে!”

–” মানে, My heart has been deceived once. ”

আমানের কথায় চমকে উঠে আশা। তার আমান কাউকে ভালোবাসতো বাহ এখনো হয়তো বাসে, আশা একভাবে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে তাকিয়ে আছে। আশার চোখ দিয়ে কোনো পানি পড়ছে নাহ। শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে। আমান আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি একজনকে ভালোবাসতাম। খুব ভালোবাসতাম, এখনো হয়তো বাসি৷ কিন্তু ঠকিয়েছে সে আমাকে। আমার ভালোবাসাকে ঠকিয়েছে।”

–” কবে এসেছিলো সে তোমার জীবনে?”

–” অনার্স ফাস্ট ইয়ারে তার সাথে আমার দেখা এবং পরিচয় হয়। আস্তে আস্তে আমার অনেক ভালো বন্ধুও হয়। আমিও আস্তে আস্তে ওরে অনেক ভালোবেসে ফেলি। একদিন ওরে প্রোপোজও করি। ও রাজিও হয়ে যায়। ভালোই যাচ্ছিলো আমাদের সম্পর্ক। আমি ওকে এতোটায় ভালোবেসে ফেলি যে। ওর সাথে একদিন দেখা বা কথা নাহ হলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো। পাগল পাগল লাগতো নিজেকে। কিন্তু ও আমাকে ভালোবাসতো নাহ। একদিন ওকে একটা ছেলের সাথে দেখি। কিন্তু সন্দেহ করি নি, ইনফ্যাক্ট ওরে এইটাও জিজ্ঞাসা করি নি যে ছেলেটা কে? তার সাথে কি করছিলো? এতোটাই বিশ্বাস করতাম ওরে, এতোটাই ভালোবাসতাম। তারপর হঠাৎ একদিন ছেলেটার সাথে ওরে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখি, ওরে কিছু জিজ্ঞাসা নাহ করে ওর সম্পর্কে খোজ নিয়ে জানতে পারি ও এইরকমই। অনেক ছেলের সাথেই ওর সম্পর্ক আছে। ওরে কথাটা বলতেই আমাকে বলে যে হ্যা। আর ও নাকি আমাকে নাহ আমার টাকা কে ভালোবাসতো। ওর যখন যেইটা লাগতো আমি ওরে দিতাম। ভালোবেসে দিতাম সবকিছু, কিন্তু আমি কি পেলাম, ধোকা। তখন থেকেই আমার এইসব ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস উঠে গেছে। কিন্তু ও নাহয় নাটক করেছিলো আমার সাথে, অভিনয় করেছিলো কিন্তু আমি তোহ আর করি নি। তাই আজও ওকে ভুলতে পারি নাহ। ওর জন্য ভালোবাসা আমার আজও রয়ে গেছে। পারবো নাহ ওরে ভুলতে। কারন আমি যে ওকে ভালোবেসেছি।”

আমানের কথা শুনে আশার ভেতরটাহ কেমন খালি খালি লাগছে। কতটা ভালোবাসে আমান একটি মেয়েকে। মেয়টা কত লাকি ছিলো। আশা তাও বলে ওঠে,
–” আমি তোহ ওরে ভুলতে বলছি নাহ। ওর জায়গায় ঐ থাক। আমি তোহ তোমার মনের কোনে নিজের জন্য একটু জায়গা চাচ্ছি।”

–” এইটা সম্ভব নাহ আশা। এইটা আমি পারবো নাহ। তোর ভালোবাসার কথা জানি নাহ। কিন্তু আমি কারো ভালোবাসা বিশ্বাস করতে পারি নাহ। শুধু আরসালের সেহেরের প্রতি ভালোবাসাটাহ আমি বিশ্বাস করি। কারন আমি জানি আরসাল সেহেরকে এখনো ভালোবাসে। এই ৩ বছর আমি আরসালকে সেহেরের প্রতি কষ্ট পেতে দেখেছি। কিন্তু আর কারো ভালোবাসার প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস নেই।”

–” একবার বিশ্বাস করো। প্লিজ, খুব ভালোবাসি তোমায়। হাত জোর করছি তোমার কাছে। পায়ে পরছি, ভিক্ষা চাচ্ছি তোমার কাছে আমার ভালোবাসা। ” আশা কথা গুলো কান্না করে বলতে বলতে হাটু ভেঙে বসে পড়ে আমানের পায়ের কাছে।
আমান দ্রুত বসে আশার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলতে শুরু করে,
–” ক্ষমা করে দে আমাকে। আমি পারবো নাহ এতো বড় অন্যায় করতে। তোর জীবনে আমার মতো তোহ নয়ই, আরও অনেক ভালো ছেলে আসবে৷ যে তার নিজের সবটুকু দিয়ে তোকে ভালোবাসবে। যার জীবনে তুই হবি একমাত্র চাওয়া। যে তোকেই শুধু ভালোবাসবে। যার মনে শুধু তুই থাকবি। আমার দ্বারা এইটা হবে নাহ রে। আমি পারবো নাহ এতো বড় অন্যায় করতে। ক্ষমা চাচ্ছি আমি তোর কাছে। ভুলে যাহ আমাকে।”

আমান কথা গুলো বলে চোখ মুছতে মুছতে চলে যায় সেখান থেকে। আর আশা ওখানে বসেই কান্না করতে থাকে।

★★★
সেহেরের ক্লাস শেষ। ড্রাইভার ফোন করে বলেছে গাড়িতে নাকি সমস্যা দেখা দিয়েছে,তাই আসতে পারছে নাহ। তাই সেহের ভার্সিটির বাহিরে এসে দাড়িয়ে আছে রিকশা বা ট্যাক্সির জন্য। এইদিকে আজ আবার আকাশের অবস্থাও ভালো নাহ। আবহাওয়ার অবস্থা যাহ হয়েছে কখন বৃষ্টি হয়, কখন রোদ ওঠে কিছুই বোঝার উপায় নাই। কোনো গাড়ি নাহ পেয়ে আকাশের দিকে একবার তাকায় সেহের, দেখে আকাশের অবস্থা ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। সেহের আর কিছু নাহ ভেবেই হাটা শুরু করে। কিছুদুর আসতেই ঝম ঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সেহের চারিদিকে তাকিয়ে দেখে একপাশে একটা বন্ধ টং দোকান আর সেখানে কিছু লোক দাড়িয়ে আছে। সেহের সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সেহেরের ভয় লাগতে শুরু করে, কারন যে লোক গুলো দেখা যাচ্ছিলো তখন, তারা যে খুব একটা সুবিধার নাহ এখন বেশ বুঝতে পারছে সেহের। কেমন কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে সেহেরের দিকে। সেহেরের পরনে একটা নীল কুর্তি আর সাদা জিন্স প্যান্টের সাথে, সাদা একটা স্কার্ফ গলায় পেচানো। কিন্তু বৃষ্টিতে জামাটাহ অনেক খানি ভিজে যাওয়ায় গায়ের সাথে এটে রয়েছে সেহেরের। লোকগুলো কি কি যেনো বলাও শুরু করেছে। এখানে থাকার সাহস সেহেরের আর হলো নাহ। সেহের বৃষ্টির মাঝেই নেমে হাটা শুরু করে। হঠাৎ সেহের টের পায় লোক গুলোও তার পিছন পিছন আসছে। সেহের ভয় পেয়ে যায় আর দৌড়ানো শুরু করে। ছেলেগুলোও সেহেরের পিছন পিছন দৌড়ানো শুরু করে।
সেহের দৌড়াতে দৌড়াতে সামনেই দেখে একটা গাড়ি আসছে কিন্তু গাড়ি টাহ সাথে সাথে ব্রেক করে ফেলে, তাও সেহেরের হালকা ধাক্কা লাগে আর সেহের পড়ে যায়। পেছনে আসা ছেলেগুলোও দাড়িয়ে পড়ে আর কেমন করে হেসে ওঠে৷ যা দেখে সেহেরের ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায়। হঠাৎ গাড়ির দরজা খুলে কারো নেমে আসার আওয়াজে সেহেরে বসা অবস্থায় মাথা ঘুরিয়ে যাকে দেখে, গাড়ি থেকে যে নেমেছে তাকে দেখে যেনো সেহেরের জানে পানি আসে। নেমে আসা ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় আমাদের হিরো আরসাল। আরসাল বৃষ্টির পানিতে একদম ভিজে গেছে। আরসাল এগিয়ে এসে ছেলেগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে সেহেরের সামনে গিয়ে এক হাটু ভাজ করে বসে বলে ওঠে,
–” ব্যাথা পেয়েছিস?”

সেহের মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” নাহ।”

সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহেরের হাত ধরে উঠাতে গেলে সেহের উঠতে পারে নাহ। পায়ে ব্যাথা পেয়েছে সেহের, পা মচকে গেছে। আরসাল সেহেরের দিকে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” মিথ্যে বললি কেনো, যে ব্যাথা পাস নি?”

–” তখন তোহ বুঝি নিহ যে ব্যাথা পেয়েছি।” আহ্লাদী কন্ঠে বলে ওঠে সেহের। আরসাল কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঐ ছেলেগুলোর মাঝে একজন বলে ওঠে,
–” ঐ হিরো। ও কোথায় ব্যাথা পেয়েছে আমরা দেখে নিবো। তুই যা।”

ছেলেটার কথা শুনে আরসাল উঠে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে। তাহ দেখে সেহেরের মাথায় যেনো বাজ পড়ে। আরসাল তাকে এমোন অবস্থায় ফেলে চলে যাচ্ছে। কিন্তু সেহেরের ভাবনাকে ভুল প্রমান করে আরসাল গাড়ির দরজা খুলে রেখে আবার এগিয়ে এসে সেহেরকে কোলে তুলে নেয়। আচমকা এমন হওয়ায় সেহের ভয় পেয়ে আরসালের গলা জড়িয়ে ধরে। আরসাল সেহেরকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসার জন্য পা বাড়াতে কেউ একজন আরসালের কাধে হাত রাখে। আরসাল তাকিয়ে দেখে ঐ ছেলেগুলোর মাঝে একজন। ছেলেটা বলে ওঠে,
–” তোর তোহ সাহস কম নাহ। বললাম তোকে চলে যেতে আর তুই মেয়েটা কে নিয়েই চলে যাচ্ছিস।”

–” তোরা ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে এমনিই মৃত্যুর টিকিট হাতে নিয়ে নিয়েছিস। আর এখন আমার কাধে হাত দিয়ে সময় টাকে এগিয়ে নিয়ে আসলি।”

কথা গুলো বলেই আরসাল ছেলেটাকে একটা লাথি মারে। ছেলেটাহ ছিটকে পড়ে। এরপর একে একে সব কয়টা ছেলেকে একদম মেরে আধমরা বানিয়ে ফেলে। গাড়ির ভেতর থেকে সেহের এইসব দেখে মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়। পায়ে ব্যাথার জন্য গাড়ি থেকে নেমে আরসালকে থামাতেও পারছে নাহ। এইদিকে আরসাল মেরেই যাচ্ছে ছেলেগুলোকে। ছেলেগুলোর অবস্থা একদম করুন হয়ে গেলে আরসাল ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে এসে বসে এবং গাড়ি স্টার্ট দেয়। সেহের ভয় তে আর আরসালের দিকে তাকাতে পারে নাহ। গাড়ি টাহ চৌধুরী ম্যানশনের সামনে এসে থামে। আরসাল গাড়ি থেকে বেরিয়ে সেহেরের পাশে এসে ডোর ওপেন করে সেহেরকে কোলে তুলে নেয়। মেইন ডোরের কাছে এগিয়ে এসে আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে কলিংবেলে প্রেস করে। ভেতর থেকে মায়া চৌধুরী দরজা খুলতেই দেখে আরসাল সেহেরকে কে কোলে করে ভেজা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে৷ তাদের এই অবস্থায় দেখে মায়া চৌধুরী ভয় পেয়ে যায়। আর চিন্তিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? আরসাল, সেহেরের কি হয়েছে?”

সবাই ড্রইংরুমে এসে আরসাল আর সেহেরকে এই অবস্থায় দেখে একই প্রশ্ন করতে থাকে। আরসাল কাউকে কোনো উত্তর নাহ দিয়ে শুধু বলে যে এখন যেনো সেহেরের রুমে কেউ নাহ আসে, যতক্ষণ আরসাল সেহেরের রুমে থাকবে। আরসাল সেহেরকে নিয়ে সেহেরের রুমে চলে যায়। এইদিকে আরসালের এমন কথা শুনে সেহেরের ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
আরসাল সেহেরকে নিয়ে রুমে এসে বিছানার উপর বসিয়ে দেয়। আরসাল সেহেরের পা ধরতে গেলেই সেহের হাত দিয়ে বাধা দিয়ে বলে ওঠে,
–” একি করছো ভাইয়া, প্লিজ তুমি আমার পায়ে হাত দিও নাহ।”

আরসাল সেহেরের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকায় যে সেহের ভয়তে তাড়াতাড়ি নিজের হাত সরিয়ে নেয়। আরসাল আবার সেহেরের পা ধরে দেখতে থাকে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে আরসালের সিল্কি চুলগুলো কপালের সাথে লেপ্টে গেছে, সারা মুখে পানি, উপরের ব্লেজার টাহ এখন পরা নেই শুধু সাদা একটা শার্ট পরা, যা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়ে জিম ওয়ালা বডি দৃশ্যমান, গোলাপি ঠোঁট গুলো পানিতে ভেজার জন্য আরও গোলাপি হয়ে উঠেছে, এককথায় অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে আরসালকে। সেহের একভাবে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কোনো ছেলে এতো টাও সুন্দর হয় কিভাবে? আরসালের দিকে তাকিয়ে আরসালকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো সেহের। এমন সময় পায়ে একটা চাপ পড়ায় চেচিয়ে চোখ বন্ধ করে আরসালের কলার্ট চেপে ধরে সেহের। আরসাল সেহেরের মচকানো পা চাপ মেরে আবার বসিয়ে দেওয়ার জন্য এমন হয়েছে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই যেনো ঘোর লেগে যায় আরসালের। সেহের চোখ বন্ধ করে আছে, চোখের পাপড়িতে ফোঁটা ফোঁটা পানি লেগে আছে, সারা মুখে জমে আছে বৃষ্টির পানি, ভেজা এলো মেলো ছাড়া চুল, তারউপর পানির ছোয়া পেয়ে ঠোঁটের উপর তিল টাহ আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে এবং ঠোঁটের উপর বিন্দু বিন্দু পানি আরসালকে যেনো নেশায় ফেলে দিচ্ছে। একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরে দিকে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেহেরের মুখের অনেক কাছে চলে যায় আরসাল। সেহেরও তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল আর সেহেরের ঠোঁটের মাঝে কয়েক সে.মি এর তফাৎ। আরসালের নিশ্বাস সেহেরের মুখে আছড়ে পড়ছে। আরসাল আর একটু এগোতেই সেহের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আরসাল ভাইয়া।”

সেহেরের ডাকে আরসালের ঘোর কেটে যায়। দ্রুত সেহেরের কাছের থেকে দুরে সরে যায় এবং সেহেরের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। সেহেরও তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে বিছানা থেকে। আর খেয়াল করে পায়ে কোনো ব্যাথা নাই৷ কিন্তু সেহেরের মাথায় এখন, আরসাল তার এতো কাছে এসেছিলো এইটা ঘুরছে। আর কিছু নাহ ভেবে সেহের ওয়াশরুমে চলে যায়।

চলবে…………..🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-০৫+০৬

0

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 5+6

চারিদিকে সূর্য তার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ভরে গেছে চারিদিকে। রোদ মুখের উপর পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে হাত দিয়ে রোদ আটকানোর চেষ্টা করে আরসাল। আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে সে বারান্দায় ডিভানের উপর সোয়া। কাল রাতে ডিভানের উপর সুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায় নি আরসাল। আরসাল ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

এইদিকে,
সেহের আজ ঘুমিয়ে আছে। কারন আজ শুক্রবার ভার্সিটি বন্ধ। কিন্তু এই শান্তির ঘুম বেশিক্ষণ টিকলো নাহ তার। আহিয়া চৌধুরী এসে চেচিয়ে বলতে শুরু করে,
–” সেহের, সেহের ওঠ৷ কত বেলা হয়ে গেছে দেখ। এতো বেলা করে কেউ ঘুমায়।”

–” আহ, আম্মু আজ শুক্রবার। ভার্সিটি বন্ধ তোহ।”

–” ভার্সিটি বন্ধ জন্য এতো বেলা করে ঘুমাতে হবে। আজ সবাই বাসায় আছে। সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করবে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়।”
সেহের আর ঘুমাতে পারলো নাহ। কি আর করার ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে সেহের। এসে দেখে ডাইনিং টেবিলে সবাই আছে শুধু আরসাল ছাড়া। সেহের সবার সামনে গিয়ে বলতে শুরু করে,
–” একি, সবাই কে দেখছি। কিন্তু আরসাল ভাইয়াকে দেখছি নাহ কেনো।

সেহেরের কথা শুনে মায়া চৌধুরী সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল আসে নি। গিয়েছিলাম ডাকতে, কিন্তু আসলো নাহ। বললো খাবার পাঠিয়ে দিতে।”

–” কেনো, আজ ছুটির দিন, সবাই একসাথে খাবার খাবে। ওনি কেনো আলাদা খাবে। আচ্ছা তোমরা বসো আমি আসছি।”
সেহের আরসালের রুমের দিকে চলে যায়।
আরসালের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে সেহের। সবার সামনে সাহস করে বললেও এখন সেহেরের ভয় করছে। আরসালকে তোহ সেহের মারাত্মক ভয় পায়৷ তাও কেনো যে এমন সাহস করে চলে এলো বুঝতে পারছে নাহ সেহের। মনে সাহস জুগিয়ে আরসালের রুমে ঢুকে পড়ে সেহের। রুমে আসতেই দেখে আরসাল বারান্দা থেকে ভেতরে আসছে। আরসাল কে দেখে সেহেরের ভয়ে গলা শুকিয়ে যায় তাও নিজেকে শক্ত রাখে। আরসাল সেহেরকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ব্রেকফাস্ট করবা নাহ। নিচে সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে।”

–” আমি এখানে ব্রেকফাস্ট করবো।”

–” এখানে কেনো করবা নিচে চলো। সবাই মিলে একসাথে,”

কথা শেষ করতে পারে নাহ সেহের তার আগেই আরসাল সেহেরকে দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে চেপে ধরে। সেহের ভয়ে চোখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেলে। আরসাল সেহেরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলতে শুরু করে,
–” একদম আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করবি নাহ। আমি কি করবো নাহ করবো সেইটা আমার পারসোনাল ম্যাটার। আমার লাইফে কোনো প্রকার কথা বলার চেষ্টা করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আর যত পারবি আমার চোখের সামনে কম আসবি৷ মাইন্ড ইট।”

আরসাল কথা গুলো বলে সেহের কে ধাক্কা দিয়ে সরে আসে। সেহের এতো সময় ভয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। এখন আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে আরসাল অন্যদিকে ফিরে আছে। সেহেরের চোখে পানিতে ভরে যায়। আরসাল হাতের যেখানে চেপে ধরেছিলো, সেখানে জ্বালা করছে। সেই সাথে আরসালের বলা কথাগুলো যেনো আরও বেশি জ্বালা দিচ্ছে। সেহের বলে ওঠে,
–” কি করেছি আমি, যে আমার ওপর রাগছো। আমাকে তোহ কখনো তুমি এইটাও বলো নি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। তুমি তোহ,’

–” ভালোবাসি নাহ, ভালোবাসতাম। এখন শুধু ঘৃনা করি তোরে। I hate you. শুনেছিস কি বললাম তোরে। আমি ঘৃনা করি তোরে।”

–” ভালোবাসা এতো তাড়াতাড়ি কি শেষ হয়ে যায়। ঠিক আছে তাও মেনে নিলাম, এখন আর ভালোবাসাে নাহ, ঘৃনা করো আমাকে। তাহলে গতকাল রাতে চকলেট কেনো এনেছিলে? তুমি তোহ চকলেট খাও নাহ। তাহলে কেনো এনেছিলে?”

–” সাথীর জন্য এনেছিলাম।”

–” তাহলে আমাকে কেনো দিলে।”

–” তুই চেয়েছিলি তাই দিয়েছিলাম।”

–” আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার সব কথা মেনে নিলাম। আচ্ছা তুমি তোহ আমাকে ঘৃনা করো। তাহলে বড় আম্মু আব্বু কে কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছো। তুমি জানো তারা এতোদিন কত কষ্ট পেয়েছে। আর এখনও কষ্ট পেয়েই যাচ্ছে। বাড়ির প্রতিটি মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। নিজের খুশির জন্য নাহ হোক, অন্যদের খুশির জন্য তোহ একসাথে খেতেই পারো৷ বললাম, ইচ্ছে হলে এসো, অপেক্ষায় আছি সবাই।”
কথাগুলো বলে সেহের রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে আসে। সবাই সেহেরের দিকে আগ্রোহী চোখে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সেহের সবাইকে কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারে নাহ। সেহের কিছু বলতে যাবে, তার আগে সাথী আনন্দের সাথে বলে উঠে,
–” ঐতোহ আরসাল ভাইয়া এসেছে।”

সেহের চমকে পিছে তাকিয়ে দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেহেরের চোখ বেয়ে পানি পড়ে। সেহেরের চোখে পানি দেখে আরসালের বুকের ভেতর কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠে। শুধু পারছে নাহ এগিয়ে এসে সেহেরের চোখের পানি মুছিয়ে দিতে। সেহের নিজেই চোখের পানি মুছে উল্টো দিকে ফিরে যায়। মায়া চৌধুরী আরসালের সামনে এসে দাড়ায়, আরসালও মায়ের দিকে তাকায়। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আই বাবা, চল খেয়ে নিবি।”

মায়া চৌধুরী আরসালের হাত ধরে টেবিলে বসিয়ে দেয়। সেহেরও বসে পড়ে। সবাই খুশি মনে খাওয়া শুরু করে। আরসালের খেতে খুবই অস্বস্তি হচ্ছে, কিন্তু প্রকাশ করছে নাহ।

★★★

,,,,,,,,তোর মন খারাপের দেশে,,,,,,,
,,,,,যাবো প্রেমের খেয়াই ভেসে,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,তোর মনটাহ ভালো করে,,,,,,
,,,,,দেবো অনেক ভালোবেসে,,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,ডাকলে কাছে আসিস,,,,,,,,,
,,,,,,,পারলে একটু হাসিস,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,বুকটা রাখিস পেতে,
ভালোবাসা নিতে,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,সব অভিমান,,,,,,,,,
,,,,,,ভেঙে দেবো,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,তোর কাছে এসে,,,,,,,,
,,,,,,,,তোর মন খারাপের দেশে,,,,,,,
,,,,,যাবো প্রেমের খেয়াই ভেসে,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,তোর মনটাহ ভালো করে,,,,,,
,,,,,দেবো অনেক ভালোবেসে,,,,,,,,,,,,,,,,,,

এতোক্ষণ গিটার বাজিয়ে গান করছিলো আরসাল। আর আরসাল এইটাও জানে যে দরজার ওপাশে দাড়িয়ে সেহের তার গান শুনেছিল এতক্ষণ। গান শেষ হতেই চলে গেছে সেহের। আরসাল সেইভাবেই গিটার হাতে বসে আছে।

এইদিকে,
সেহের রুমে এসে জানালার কাছে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো।আর সকালে আরসালের বলা কথাগুলে মনে করতে থাকে। সেহের মনে মনে বলতে থাকে,
–” আরসাল ভাইয়া আমাকে কেনো দোষারোপ করছে। এতে আমার দোষ টাহ কোথায়। আমি তোহ জানতামও নাহ আরসাল ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। আমাকে তোহ হঠাৎ করেই নানুর বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাহলে আমার দোষটাহ কোথায়। আমাকে কেনো এতো ঘৃনা করছে আরসাল ভাইয়া। বেশ, ভাইয়া যদি আমাকে ঘৃনা করে খুশি হয়, তাহলে তাই হবে।”

সেহের এইসব ভাবছে তখনই আশা সেহেরের রুমে আসে। এসে দেখে সেহের জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আশা সেহেরের পিছনে যেয়ে দাড়ায় আর বলে ওঠে,
–” কিরে, একা একা জানালার কাছে দাড়িয়ে কি করিস?”

কারো কথা বলার আওয়াজে সেহের পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে আশা দাড়িয়ে আছে। আশাকে দেখে সেহের মুচকি হেসে এগিয়ে এসে বলে,
–” কিছু নাহ।”

–” আচ্ছা, শোন রেডি হয়ে নে।”

–” কেনো?”

–” আরসাল ভাইয়া এতোদিন পর বাসায় এসেছে। তাই একটা পার্টি রাখা হয়েছে।”

–” ওহ, আরসাল ভাইয়া কোনো সমস্যা করে নি তোহ আবার।”

–” তাকে তোহ এখনো জানানোই হয় নি। বড় আম্মু, আমার আম্মু আর ছোট আম্মু যাচ্ছে তাকে বলার জন্য।”

–” ওহ, মেনে নিলে হয়।”

এইদিকে,
আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছে। আরসাল আমান কে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে আমানের। তাই আরসালের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে সেইদিকে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী ( আশফির আম্মু ), আহিয়া চৌধুরী দাড়িয়ে আছেন। ৩ জনকে একসাথে এই সময় নিজের রুমে দেখে অবাক হয়ে যায়। দাড়িয়ে যায় আরসাল তিনজনের দিকে তাকিয়ে। মায়া চৌধুরী আরসালের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছিস বাবা?”

–” সেরকম কিছু নাহ। অফিসের কিছু কাজ করছিলাম।”
তারপর আহিয়া চৌধুরী আরসালের সামনে দাড়িয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে,
–” অনেক কাজ হয়েছে। এইবার তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

–” রেডি হবো কিন্তু কেনো?”
আরসাল অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে। আরসালের কথা শুনে কেয়া চৌধুরী বলেন,
–” কারন, তুই এতোদিন পর বাংলাদেশে এসেছিস। আমাদের কাছে এসেছিস। তাই আমরা একটা পার্টি রেখেছি।”

–” মানে কি? তোমার আমার জন্য পার্টি রেখেছো কিন্তু আমাকেই বলো নি।”
আরসাল রাগী গলায় বলে ওঠে। আরসালের কথা শুনে মায়া চৌধুরী বলেন,
–” দেখ বাবা, জানি তোকে বলা উচিত ছিলো। কিন্তু বলা হয় নি। আসলে তুই এতোদিন পর এসেছিস, তোর বাবা তোর অনারেই পার্টিটাহ রেখেছে। অনেকে আসবে পার্টিতে, তুই নাহ গেলে যে বাড়ির অসম্মান হবে।”

–” যখন জানোই যে, আমি নাহ গেলে বাড়ির অসম্মান হবে। তাহলে আমাকে নাহ বলে পার্টি রেখেছো কেনো?”

–” হয়ে গেছে তোহ রাখা। এখন নাহ গেলে তোহ বাড়ির অসম্মান হবে। এখন তুই কি এইটায় চাস, যে বাড়ির নাম খারাপ হোক।”

–” তোমরা আমাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছো। এই কারনেই আমাকে আগে জানাওনি তাই নাহ। যাতে আমাকে পরে এই চাপ টাহ দিতে পারো।”
আরসালের কথা শুনে আহিয়া চৌধুরী বলে উঠেন,
–” দেখ, যা হওয়ার হয়ে গেছে। তোকে বলার দরকার ছিলো তাই বললাম। এখন তোর যদি মনে হয় বাড়ির অসম্মান হোক তাহলে আসিস নাহ। আর যদি চাস যে বাড়ির অসম্মান নাহ হোক তাহলে আসিস।”

আহিয়া চৌধুরী কথাটা বলে মায়া চৌধুরী এবং কেয়া চৌধুরী কে নিয়ে আরসালের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আরসাল তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর কি করবে তাই ভাবছে।

In evening…

পার্টির লোকজন আসতে শুরু করেছে। বাড়ির সবাই নিচে চিন্তিত মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সেহের এই মাত্র নিজের রুম থেকে ড্রয়িংরুমে আসলো। পার্টি টাহ ড্রইংরুমে রাখা হয়েছে। চারিপাশে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সেহের এসেই মায়া চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আম্মু, আরসাল ভাইয়া তোহ এখনো আসে নি। ভাইয়া কি আসবে নাহ?”

–” জানি নারে মা। বুঝিয়ে তোহ এলাম। ইমোশনালি কথাও বলে এলাম। ছেলেটা তাও যদি যেদ করে নাহ আসে। তো বাড়ির মানসম্মানে আঘাত লাগবে।”
মায়া চৌধুরীর কথা শুনে সেহেরের মন খারাপ হয়ে যায়। সেহের চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে,
–” আল্লাহ, আরসাল ভাইয়া যেনো পার্টিতে আসে। নাহলে যে বাড়ির অসম্মান হবে। আল্লাহ দয়া করো, আরসাল ভাইয়ার মনে পার্টিতে আসার ইচ্ছে জাগিয়ে দেও। দয়া করো, আরসাল ভাইয়া পার্টিতে যেনো আসে। নাহলে বড় আম্মু আব্বু, বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কষ্ট পাবে। প্লিজ আল্লাহ, দয়া করো।”

সেহের মনে মনে কথাগুলো বলে আস্তে আস্তে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখে কেউ একজন আসছে। ব্রাউন কালারের শার্ট এবং শার্টের উপরের ২টা বাটন খোলা, হোয়াইট ব্লেজার, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ, বাম কানে একটি ব্লাক টপ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি এন্ড কপালে কয়েকটা পড়েই আছে। হ্যা, এতোক্ষণে সবাই বুঝেই গেছো সেই কেউ টাহ হলো আরসাল। আরসাল কে দেখে সেহের আবার ক্রাশ খেলো। আরসাল নিচে নেমেই সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে ওর আম্মুর সামনে অর্থাৎ মায়া চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাড়ায়। মায়া চৌধুরী মুচকি হেসে আরসাল কে জড়িয়ে ধরে। আরসালও আজ আর কোনো বাধা নাহ রেখে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে।
সবাই আরসাল কে ঘিরে ধরেছে। হঠাৎ কেউ একজন ‘আরসাল’ বলে ডেকে উঠে। সবাই আওয়াজের দিকে তাকিয়ে দেখে আমান এবং সাথে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আমানের সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখে আশার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমান এবং সেই অচেনা মেয়েটির দিকে।

পার্টি চলছে তার নিজের মতো করে। এখনো অনেক মানুষই পার্টিতে উপস্থিত হতে পারে নি। তারা সবাই আসছে। সবাই সবার মতো মজা করছে। মজা করতে পারছে নাহ শুধু সেহের। আরসালের সাথে ঐ মেয়েটা একদম চিপকে রয়েছে। আরসালও মেয়েটার সাথে অনেক হাসি মুখে কথা বলছে। যাহ, কেনো জানি সেহেরের সহ্য হচ্ছে নাহ। তারউপর আবার একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা। যা সেহেরের মনে পড়লেই মেজাজ টাহ আরও গরম হয়ে যাচ্ছে।
একটু আগে,

আমান আর অচেনা মেয়েটির দিকে আরসাল এগিয়ে আসতেই মেয়েটি দৌড়ে এসে আরসাল কে জড়িয়ে ধরে। যাহ দেখে সেহেরের মেজাজ টাহ একদম টপে উঠে যায়। কত বড় খারাপ মেয়ে, এতোগুলো মানুষের সামনে অন্য একটা ছেলেকে কিভাবে জড়িয়ে ধরেছে। চৌধুরী বাড়ির সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরসাল এবং তাকে জড়িয়ে ধরা মেয়েটির দিকে। আরসাল মেয়েটিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে, মৃদু হেসে বলে ওঠে,
–” নেহা, তুমি?”

–” হুম, আমি। তুমি তোহ বাংলাদেশে এসে আমাকে ভুলেই গেছো। একটা নিউজ পর্যন্ত আমার নেও নি।”

–” আসলে, সেরকম নাহ। আমি তোহ এখানে কাজে এসেছি। তাই কাজ নিয়ে একটু বিজি ছিলাম। যাইহোক তুমি এখানে।”

–” আসলে, ফ্যামিলি সহ লন্ডন চলে যাওয়ার পর তোহ আর দেশে আসা হয় নি। তাছাড়া এখানে আসার পর তোমার কোনো নিউজ পাচ্ছিলাম নাহ। কোনোভাবে কনটাক্টও হচ্ছিল নাহ। তাই দেশে আসবো বলে ঠিক করলাম। তাই আমানকে বললাম আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে। ”

–” হুম, আচ্ছা এসো আমার ফ্যামিলি মেমবার দের সাথে ইন্ট্রোডাক করিয়ে দেয়।”

–” হুম, চলো।”

আরসাল নেহাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো শুধু সেহেরকে বাদ দিয়ে। নেহা সেহের কে খেয়াল করে আরসাল কে বলে ওঠে,
–” আরসাল এই মেয়েটা কে?”
আরসাল তাকিয়ে দেখে নেহা সেহেরের কথা বলছে। আরসাল একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে, আবার নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, আমার কাজিন। ছোট আব্বুর মেয়ে।”

–” ওহ, আচ্ছা। ”
তখনের থেকেই সেহেরের মাথা খারাপ হয়ে আছে। কেনো সে নিজেও জানে নাহ। কিন্তু আরসাল কে অন্য কোনো মেয়ের সাথে সেহের যেনো সহ্য করতে পারছে নাহ। তারউপর মেয়েটা আরসালের হাত জড়িয়ে রেখেছে।
জিহাদ চৌধুরী স্টেজে উঠে স্পিকার অন করতে সবাই সেইদিকে তাকায়, জিহাদ চৌধুরী স্পিকার ঠিক করে বলতে শুরু করে,
–” গুড ইভিনিং লেডিস এন্ড জেন্টেল ম্যান। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ এই পার্টির মেইন উদ্দেশ্য হলো আমার ছেলে আরসাল চৌধুরীর দেশে আসা।”

জিহাদ চৌধুরী আরসাল কে হাত দিয়ে ইশারা করে স্টেজে উঠে আসার জন্য। আরসালও সম্মানের কথা ভেবে স্টেজে বাবার পাশে এসে দাড়াতেই জিহাদ চৌধুরী আবার বলে ওঠে,
–” এই হলো আমার ছেলে আরসাল চৌধুরী। যে গত কয়েকবছর বিদেশে থেকে নিজের গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে আমাদের বিজনেস জয়েন্ট করেছে। যদিও আরসাল তার স্টাডি লাইফ থেকেই আমাদের বিজনেসের সাথে জড়িত আছে। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক প্রাউড ফিল করি। হি ইজ এ্যামেজিং। যাই হোক, সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন, যেনো ও আরও বড় হয়। এনজয় দি পার্টি।”

জিহাদ চৌধুরীর কথা শেষ হতেই সবাই হাতে তালি দিয়ে ওঠে। আরসাল জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকাতেই জিহাদ চৌধুরীও আরসালের দিকে তাকায়। আরসাল তাড়াতাড়ি নিজের চোখ সরিয়ে, স্টেজ থেকে নেমে আসে।

এইদিকে,
আমান ড্রিংকস সাইডে বসে হালকা ড্রিংকস করছে এবং ফোন চালাচ্ছে। হঠাৎ সামনে কেউ বসছে মনে হওয়ায় সামনে তাকিয়ে দেখে আশা। আমান কিছু বলার আগেই আশা বলে ওঠে,
–” কি খবর তোমার? ”

–” আমার আবার কি খবর থাকবে। আমি তোহ অলটাইম বিন্দাস থাকি।”

–” হুম, তাহ ড্রিংকস কি অলটাইম করা হয় নাকি?”

–” আরে নাহ, অল্প করি।”

–” তাহ, মেয়েটা কে তোমার গফ নাকি?”

–” কার কথা বলছিস, নেহা৷ আরে ধুর, গফ হতে যাবে কেনো। এমনি ফ্রেন্ড, আর তাছাড়া দেখে বুঝছিস নাহ কার গফ হতে পারে?”
আমানের কথা শুনে আশা নেহার দিকে তাকিয়ে দেখে, নেহা আরসালের সাথে কথা বলে হাসতে হাসতে আরসালের গায়ের উপর পড়ছে। তাই দেখে আমানের দিকে ফিরে বলে ওঠে,
–” ইউ মিন আরসাল ভাইয়ার গফ?”

–” জানি নাহ।”

–” জানি নাহ মানে কি হ্যা। তুমি সব জানো। কিন্তু আরসাল ভাইয়া তোহ সেহেরকে ভালোবাসে।”

–” তোর কি মনে হয়? আরসাল এখনো সেহেরকেই ভালোবাসে?”

–” মানে।”

–” মানে, তোর কি মনে হয়? আরসাল কি এখনো সেহেরকেই ভালোবাসে?”

–” আমার বিশ্বাস আরসাল ভাইয়া এখনো সেহেরকেই ভালোবাসে। কারন সত্যিকারের ভালোবাসা এতো ঠুনকো হয় নাহ। আর আমি আজও ভাইয়ার চোখে সেহেরে জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই। ভালোবাসা চোখে ধরা পড়ে। ভালোবাসার মানুষকে সারাজীবন কাছে নাহ পেলেও তার প্রতি ভালোবাসা কমেও যায় নাহ, আর ভোলাও যায় নাহ।”

–” এমন ভাবে ভালোবাসার বর্ননা দিচ্ছিস। মনে হচ্ছে কাউকে ভালোবাসিস?”

আমানের কথা শুনে আশা কিছু নাহ বলে মুচকি হাসি দেয়। আমান আবার নিজেই বলতে শুরু করে,
–” আরসাল আর আমি লন্ডনে যে ভার্সিটিতে স্টাডি করতাম, সেখানেই নেহার সাথে আমাদের পরিচয় হয়। আরসাল ওখানেও অনেক মেয়ের লক্ষ্য ছিলো। নেহাও ওরে পছন্দ করা শুরু করে। নিজেই আমাদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে। আস্তে আস্তে অনেক ভালো ফ্রেন্ড হয়ে যায় আমাদের। সেই সাথে আরসালকেও ভালোবেসে ফেলে। আরসালকে প্রপোজ করলে, আরসাল নাহ করে দেয়। কিন্তু নেহা বলে এতে যেনো বন্ধুত্বে আঘাত নাহ লাগে। তাই এখনো আমাদের অনেক ভালো ফ্রেন্ড।”

–” হুম, বুঝলাম।”

–” হুম, তাহ বললি নাহ তোহ। কাউকে ভালোবাসিস নাকি?”

–” ভালোবাসলেও বা তোমার কি?”

–” আমার আবার কি হবে? তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবো।”

আমানের কথা শুনে আশার রাগ উঠে যায়। আর রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” খুব শখ নাহ আমাকে বিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার। করবো নাহ বিয়ে।”
কথাটাহ বলেই রাগে গট গট করতে করতে চলে যায় আশা। আর আমান হাসতে হাসতে শেষ।

এইদিকে,
সেহের এখনো রাগেতে ফুলে বম হয়ে আছে। সাদে গিয়ে পায়চারি করছে আর নিজে নিজে বলছে,
–” অসভ্য ছেলে একটা, বাজে ছেলে একটা, কিভাবে মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। কই আমার সাথে তোহ বলে নাহ। আর ঐ নেহা নেকু একটা, লাজ লজ্জা বলতে তোহ দেখি কিছুই নাই। একটা ছেলেকে কিভাবে সবার সামনে জড়িয়ে ধরলো। আর এখনো কিভাবে চিপকে রয়েছে। অসহ্য।”

হঠাৎ কারো আসার আওয়াজ পেয়ে সেহের একপাশে লুকিয়ে পড়ে। লোকটা উপরে এলে তাকিয়ে দেখে আরসাল ফোনে কথা বলতেছে। নিচে হয়তো আওয়াজে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিলো তাই উপরে এসেছে কথা বলতে। আরসাল সাদের রেলিং এর কাছে দাড়িয়ে কথা বলছে। সেহের কি মনে করে, আরসালের পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। আরসাল কথা বলা শেষ করে পিছনে ফিরে সেহেরকে দেখতেই চমকে ওঠে। আরসাল ভালোভাবে খেয়াল করে দেখে সেহের রেগে লাল হয়ে আছে। অনেক কিউট দেখাচ্ছে সেহেরকে। মেয়েটাকে রাগলে সবসময় এমন কিউট দেখায়। কিন্তু সেহের এখন এই সাদে কি করে। আরসাল বুঝতে নাহ পেরে বলে ওঠে,
–” তুই এখানে?”

–” কেনো অন্যকারো থাকার কথা ছিলো নাকি?”

–” মানে।”

–” মানে এখানে তোমার ঐ বিদেশি গফ নেহার থাকার কথা ছিলো নাকি?”

–” গফ মানে?”

–” গফ নাহ তোহ কি? দেখতেই তোহ পাচ্ছি কি করছো? এতো কি ঐ মেয়ের সাথে?”

–” তাতে তোর কি?”

আরসালের বুকে ধাক্কা দিতে দিতে সেহের বলে ওঠে,
–” আমার কি মানে, এতো চিপকে থাকার কি দরকার? কি হয় ঐ মেয়ে তোমার? ওর সাথে এতো কি তোমার?”

সেহের আরসাল কে ধাক্কাতে বলছে কথাগুলো। আরসালের রাগ উঠে যাওয়াতে সেহের কোমোরে হাত দিয়ে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সেহের ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর এক হাত দিয়ে আরসালের কলার ধরে। আরসাল সেহেরের মুখের সামনে মুখ এনে বলতে শুরু করে,
–” নেহা আমার গফ নাকি অন্যকিছু তাতে তোর কি? তোকে বলেছি নাহ আমার পারসোনাল ম্যাটারে কোনো কথা বলবি নাহ। নেহার সাথে আমি কিভাবে মিশবো কি করবো এইটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার।”

সেহের আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলে দেখে আরসালের মুখ একদম কাছে। আরসালের নিঃশ্বাস সেহেরের মুখে আছড়ে পড়ছে। আরসালকে এতো কাছে দেখে সেহেরের পুরো শরীর কাপতে শুরু করে। আরসালের কথা শুনে সেহেরের চোখ পানিতে ভরে যায়। সেহেরের চোখে পানি দেখে আরসালের বুক কেমন যেনো করে উঠে। আরসাল সেহেরের চোখের পানি এখনো সহ্য করতে পারে নাহ। আরসাল সেহেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিচে নেমে যায়। সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছু সময় পর সেহেরও নিচে নেমে আসে। আরসাল সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। হঠাৎ আমান স্টেজে উঠে বলতে শুরু করে,
–” হ্যালো এভ্রিওয়ান। আমি আমান, আরসালের বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার কথা আর নাহ বলি। আজ এই সন্ধ্যা যার জন্য, সেই আরসাল কে এখন একটা গান শোনানোর জন্য রিকোয়েস্ট করা হচ্ছে। ”

আমানের কথা শুনে সবাই জোরে হাত তালি দিয়ে ওঠে। আমান স্টেজ থেকে নেমে আরসালের কাছে আসতেই, আরসাল বলে ওঠে,
–” আর ইউ ম্যাড? আমি এখন গান গাইবো?”

–” ইয়াপ, দেখ দোস্ত আশেপাশে কত কিউট কিউট মেয়ে আছে। সবাইকে পাগল বানাতে হবে তোহ।”

–” ওহ, শাট আপ। আরসাল কে দেখলেই মেয়েরা এমনিই পাগল হয়। তার জন্য আলাদা ভাবে গান গেয়ে এন্টারটেইন করার কোনো দরকার নাই।”

–” দেখ, আমি অলরেডি এ্যানাউন্সমেন্ট করে দিছি৷ এখন যদি তুই গান নাহ গাস তাহলে আমার ইজ্জতের চিনি ছাড়া ফালুদা হয়ে যাবে।”

–” আমি বলেছিলাম তোরে এ্যানাউন্সমেন্ট করতে?”

–” আচ্ছা, বন্ধুর জন্য একটা গান গেয়ে দে নাহ। এমোন করিস কেনো?”

–” ইডিয়ট।”

আরসাল কথাটা বলেই স্টেজের দিকে চলে যায়। আমান একটা জোরে নিশ্বাস ফেলে সবার দিকে তাকিয়ে একটা দাঁত বের করে হাসি দেয়।

চলবে…………..🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-০৩+০৪

0

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 3+4

[ অনেকেই জান্নাত চৌধুরী মেয়েদের নাম বলছো। তাদের বলছি এই নামটাহ ছেলেদেরও হয় আবার মেয়েদেরও হয়। তারপরও যখন তোমাদের সমস্যা হচ্ছে এই নাম নিয়ে তাই আমি নাম টাহ পাল্টায় দিচ্ছি। জান্নাত চৌধুরী থেকে জিহাদ চৌধুরী নাম দিলাম। এইবার মনে হয় আর কোনো সমস্যা নেই। তাও যারা এই সমস্যা তুলে ধরেছো তাদের ধন্যবাদ জানাই ]

আরসাল আজ অফিস যাবে। কিছু কাজ আছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে আরসাল। আজ আরসালকে দেখলে যে কেউ ক্রাশ খাবে। আরসাল আজ হোয়াইট ডেনিম শার্ট এবং উপরের ২ টা বাটন খোলা, ব্লাক ব্লেজার, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, ব্লাক শু, বাম কানে ব্লাক টপ, হাতে ব্লাক ব্রান্ডেড ওয়াচ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি এবং কপালে কয়েকটা পড়ে আছে। যে কোনো মেয়ে আজ আরসাল কে দেখে ফিদা হয়ে যাবে। আরসাল রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে তার আম্মু মায়া চৌধুরী টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। এমন সময় পেছন থেকে কারো আরসাল ডাকার আওয়াজে পেছনে তাকিয়ে দেখে আহিয়া চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। আরসাল ডাক শুনে মায়া চৌধুরীও এইদিকে তাকিয়ে দেখে আরসাল অফিসে যাবার জন্য রেডি হয়েছে। আহিয়া চৌধুরী আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” কোথাও যাচ্ছিস বাবা।”

–” হুম, অফিসে কিছু কাজ আছে তাই অফিস যাচ্ছি। ”
–” ওহ, তাহ আজ আমার বাবাটাকে তোহ অনেক সুন্দর লাগছে।” আহিয়া চৌধুরী কথাটা বলে নিজের চোখ থেকে কাজল নিয়ে আরসালের কানের নিচে লাগিয়ে দেয়। আরসালের চোখে পানি ভরে আসার মতো অবস্থা। কারন আগে রেডি হয়ে কোথাও বেরোনোর সময় আহিয়া চৌধুরী এই কাজ টাহ করতো। আজ অনেকদিন পর আবার সেই একই কাজ। এইসব দেখে মায়া চৌধুরীর চোখেও পানি চলে আসে। তিনি কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” অফিস যাবি, ঠিক আছে। কিন্তু আগে ব্রেকফাস্ট করে নে।”

–” আল্লাহ গো, আজ আবার দেরি হয়ে গেলো। আমি কি কোনোদিন একটু সময় মতো উঠতে পারি নাহ নাকি। আল্লাহ আজ তোহ ওরা আমাকে মেরেই ফেলবে। আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।” কথাগুলো বলতে বলতে নিচে নেমে আসতেছে কেউ একজন। যার কথা শুনে আরসাল তার মাকে উত্তরই দিতে পারে নাহ। পিছন ফিরে দেখে সেহের বক বক করতে করতে দৌড়ে নিচে নেমে আসছে। হঠাৎ আরসালের আগের কথা মনে পড়ে যায়। মেয়েটা সবসময়ই দেরি করে। এখনো এই অভ্যাস গেলো নাহ মেয়েটার।
সেহের নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে বলতে আসছে। নিচে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে সামনে তাকিয়ে দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরসালকে দেখে সেহের একদম সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়ে। এমনিই আরসাল কে মারাত্মক ভয় পায় সেহের, তার উপর গতরাতে যা শুনেছে এখন ভয় হাজার গুন বেড়ে গেছে। আরসাল নাকি তাকে ভালোবাসতো, এইটা যেনো কোনোভাবেই মানতে পারছে নাহ সেহের। এই জন্যই নাকি তাকে কারো সাথে মিশতে দিতো নাহ আরসাল। এখন আরসালের সামনে আসতেও অসস্তি লাগছে তার। তাও সকাল হতেই তার সামনে চলে এলো সেহের। আরসাল সেহেরের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আমি অফিস থেকে ব্রেকফাস্ট করে নিবো।”

কথাটাহ বলেই আরসাল বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। সেহেরে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। কোথাও এক জায়গায় খারাপ লেগে ওঠে সেহেরের। সেহেরের মনে হলো আরসাল হয়তো ব্রেকফাস্ট টাহ বাসা থেকেই করে যেতো, শুধু সেহেরের জন্যই করলো নাহ। তাই সেহেরের মন টাহ আরও বেশি খারাপ হতে শুরু করলো। সেহের আহিয়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আম্মু আমি ভার্সিটি গেলাম।”

–” সে কি, ব্রেকফাস্ট করে যা।”

–” নাহ আম্মু খাইতে ইচ্ছে করতেছে নাহ। একটু পরে ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো। আসি আম্মু, আসি বড় আম্মু।”
কথাটাহ বলেই চলে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায় সেহের। আহিয়া চৌধুরী এবং মায়া চৌধুরী একে অপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

আজ আরসালের প্রথম দিন অফিসে। অফিসের সবাই জানে তাদের ভবিষ্যৎ মালিক আসবে আজ অফিসে। আজ অফিসে নিজের ছেলে প্রথম পা রাখবে তাই জিহাদ চৌধুরী নিজে সবকিছুর এ্যারেজমেন্ট করছেন। জিহাদ চৌধুরী কে কবির চৌধুরী ( আরসালের মেঝো চাচ্চু ) এবং আজিজ চৌধুরী ও সাহায্য করছেন। অফিসের মেইন গেটে সবাই দাড়িয়ে আছে আরসালকে ওয়েলকাম করার জন্য৷ আশফিও দাড়িয়ে আছে ভাইকে ওয়েলকাম করার জন্য। আশফি আরসালের থেকে এক বছরের ছোট। আশফিও গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পাশাপাশি বিজনেস জয়েন্ট হয়েছে। যদিও আশফির গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ার আর কয়েকদিন বাকি মাত্র।

হঠাৎ অফিসের সামনে এসে একটা গাড়ি থামে। সবাই আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আরসাল গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। আরসাল কে দেখে সব লেডিস স্টাফরা যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে। আশফি এগিয়ে এসে আরসাল কে জড়িয়ে ধরে বলে,
–” ওয়েলকাম ভাই।”

আরসাল মুচকি হাসি দিয়ে আশফির দিকে তাকায়। আরসাল সবার সাথে ভালোভাবে কথা নাহ বললেও আশফি, আশা এবং সাথীর সাথে কথা বলে। একজন লেডিস স্টাফ এসে আরসাল কে ফুলের মালা পরিয়ে ওয়েলকাম জানায়। আর বাকি সব স্টাফ রা ফুলের বুকে দিয়ে ওয়েলকাম জানায়। আরসাল সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটু এগোতেই জিহাদ চৌধুরী সামনে এসে দাড়ায়। আরসাল বাবার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। জিহাদ চৌধুরী আরসালের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে। জিহাদ চৌধুরীও এই সুযোগে ছিলো কখন নিজের ছেলেকে জড়িয়ে ধরবে। আরসাল কে জড়িয়ে ধরে বলেন,
–” welcome my champ.”

জিহাদ চৌধুরী সরে আসতেই আরসাল অফিসের ভিতর চলে যায়। আরসালকে আশফি তার কেবিনে দিয়ে আসে। আরসাল কেবিনে এসে দেখে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আশফি আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” ভাই কেবিন পছন্দ হয়েছে।”

–” হুম, অনেক সুন্দর হয়েছে।”

–” বড় আব্বু নিজের হাতে তোর কেবিন গুছিয়েছে।”

আরসাল আর কিছু বলে নাহ। আশফিও আর কিছু নাহ বলে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। আরসাল চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। টেবিলের উপর একটা ব্লাক নিউ এ্যাপল ব্রান্ডেড ল্যাপটপ রাখা। আরসাল ল্যাপটপ টাহ ওপেন করে কাজ করা শুরু করে দেয়।

এইদিকে,
সেহের ভার্সিটি তে চলে আসে। ভার্সিটির ভেতর ঢুকতেই কেউ একজন তার সামনে এসে দাড়ায়। সেহের সামনে তাকিয়ে দেখে ইয়াশ দাড়িয়ে আছে তার সামনে।
( ইয়াশ, ইয়াশ খান। ভার্সিটির ক্রাশ এন্ড চকলেট বয়। এইবার অনার্স চতুর্থ বর্ষের স্টুডেন্ট। ইয়াশ শুধু ক্রাশ বয় তাহ নয়, একজন প্লে বয়ও বটে। ইয়াশের কাজ হলো কোনো মেয়েকে পটিয়ে তার সাথে ডেট করা। কিন্তু ইয়াশ প্রথম দিনই সেহের কে দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। এই প্রথম ইয়াশ কাউকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু সেহেরের এইসব ভালো লাগে নাহ। তাই কোনোদিন রাজি হয় নি, তাছাড়া ইয়াশ কেমন ছেলে সেহেরের ভালো করেই জানা আছে। সেহের সবসময় ইয়াশ কে ইগনোর করে তাও ইয়াশ পিছন ছাড়ছে নাহ সেহেরের……)
ইয়াশ সানগ্লাস টাহ নামিয়ে সেহেরের সামনে দাড়িয়ে বলতে শুরু করে,
–” কেমন আছো? সেহের।”

–” জি, ভালো।”

–” আমাকে জিজ্ঞাসা করবানা আমি কেমন আছি?”

–” আসলে আপনাকে তোহ সুস্থই দেখছি। সুস্থ নাহ থাকলে তোহ আর মানুষ ভার্সিটি আসে নাহ তাই নাহ।”

–” ইন্টেলিজেন্ট, এই কারনেই তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে।”

–” আমার ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, পরে কথা হবে, আসি।”
সেহের কথাট বলে আর এক মিনিটও দেরি নাহ করে ক্লাসের দিকে চলে যায়। আর ইয়াশ সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” সেহের, তুমিই প্রথম একজন। যাকে টেস্ট নয়, সংসার বাঁধতে চেয়েছি। তোমার উপর আমার নজর সবসময় থাকে। চেষ্টা করে যাবো তোমার রাজি হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু কখনো যদি কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াতে দেখি তাহলে তুমি আমার ভোগের সামগ্রী হয়ে যাবে। কারন আমার লাইফে তোমাকে চাই, এক ঘন্টার জন্য হলেও চাই।”

এইদিকে,
আমান আরসালের সাথে দেখা করতে আসে। দরজায় বেল দিতে কেউ একজন দরজা খুলে দেয়। তাকিয়ে দেখে আশা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আশাকে দেখে আমান বলে ওঠে,
–” কিরে তুই এখন বাসায়, ভার্সিটি যাস নি।”

–” নাহ, আসলে আজ শরীর টাহ ভালো লাগছে নাহ। তাই যায় নি।”

–” ওহ, কি হয়েছে তোর। শরীর কেনো ভালো লাগছে নাহ।”

–” তেমন কিছু নাহ। ঐ একটু মাথা ব্যাথা করছে।”

–” হুম, মেডিসিন নিয়েছিস।”

–” হুম, নিয়েছি।”

–” আচ্ছা, আরসাল তোহ রুমে মনে হয়। আমি যায় আরসালের কাছে। তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে।”

–” নাহ, আরসাল ভাইয়া আজ বাসায় নেই। অফিস গেছে।”

–” ওহ নো, আমি তোহ ভুলেই গেছি। আজ তোহ আরসালের অফিস যাওয়ার কথা ছিলো। মাথা থেকে বেরই হয়ে গেছে। আচ্ছা আমি যাই, তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে।”
আমান কথাটা বলেই বের হয়ে যায়। আশা এখনো আমানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে, আমান কি কখনো তার ভালোবাসার কথা বুঝবে কি নাহ। নাকি সারাজীবন তার ভালোবাসা একতরফাই থেকে যাবে। আশা মাঝে মাঝে ভাবে, বলে দিবে আমানকে তার ভালোবাসার কথা, কিন্তু সাহসে পেরে ওঠে নাহ। কি জানি কি হবে আমান আর আশার জীবনে। পূর্ণতা কি পাবে আশার ভালোবাসা, নাকি সারাজীবন একতরফাই থেকে যাবে।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আরসাল এখনো কাজ করে যাচ্ছে। হঠাৎ কেবিনের দরজায় টোকা পড়তেই আরসাল বলে উঠে,
–” Come in. ”

কেউ একজন ভেতরে আসলে আরসাল তাকিয়ে দেখে কবির চৌধুরী এসেছেন। আরসাল কিছু নাহ বলে আবার ল্যাপটপে কাজ করতে শুরু করে। কবির চৌধুরী আরসালের অপোজিট চেয়ারে বসে পড়ে। আর আরসালের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতে আরসাল অস্বস্তি বোধ করে। আরসাল কবির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিছু কি বলবে?”

–” হুম, কেমন লাগলো প্রথমদিন অফিসে?”

–” খারাপ লাগার কি আছে?”

–” হুম, তাও ঠিক। আচ্ছা আজ তোহ প্রথম এলি অফিসে। বলছিলাম কি আজ নাহ হয় থাক, বাকি কাজ কাল করিস।”

–” তোমাদের বিডি অফিস আমার দায়িত্বে নাহ। এইটা তোমাদের। আমার লন্ডনের অফিসের কিছু কাজে আমি এখানে এসেছি। আরও কিছুদিন আমাকে অফিসে আসতে হতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হবে আমার জন্যই ভালো।”

–” কিন্তু বাবা, এই অফিসটাও তোহ তোর। আর এইটাই তোহ মূল অফিস। লন্ডনের ঐটাহ তোহ শুধু একটা শাখা মাত্র।”

–” ইয়াহ, i know, কিন্তু তাও আমি ঐটার কাজই করবো। এই অফিসের কাজ তোমরাই করো। আর আমার এখনো যেতে অনেক লেট হবে। তোমরা চলে যাও।”

–” আরসাল।”

–” প্লিজ মেঝো আব্বু, তোমরা চলে যাও।”

কবির চৌধুরী আর কিছু নাহ বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসেন। কবির চৌধুরী বের হতেই জিহাদ চৌধুরী এবং আজিজ চৌধুরী এগিয়ে আসেন। জিহাদ চৌধুরী বলা শুরু করেন,
–” এখনো কাজ করছে নাকি?”

–” হুম, বললাম আজকের মতো কাজ রাখতে। শুনলো নাহ, আমাদের বাসায় চলে যেতে বললো।”

–” কি করবো এই ছেলেকে নিয়ে আমি। এতো যেদি ছেলেকে সামলাবো কিভাবে আমি?”

আজিজ চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর কাছে এসে দাড়িয়ে বলে,
–” আসবে দাভাই, চিন্তা করো নাহ। আরসালকে সামলানোর জন্য সেহের কেই আসতে হবে।”

আজিজ চৌধুরীর কথা শুনে জিহাদ চৌধুরী অবাক হয়ে তাকাই। আজিজ চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর তাকানো দেখে বলতে শুরু করে,
–” হ্যা, দাভাই। তোমার কি মনে হয় সেহেরের প্রতি আরসালের কোনো অনুভূতি নেই? আছে, দাভাই। অনুভুতি এতো সহজে চলে যায় নাহ। আরসালের অনুভূতি রাগের চাদরে ঢাকা পড়ে আছে। কিন্তু সেহেরই সেই চাদর সরিয়ে আবার সেই আগের অনুভূতি ফিরিয়ে আনবে বলে আমার বিশ্বাস। আরসাল কে নিজের মেয়ের জামাই বানাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তখন যদি আরসালের পাগলামো মেনে নিতাম তাহলে ওদের দুইজনেরই ক্ষতি হতো। কিন্তু এখন সেই চিন্তা নাই।”

–” আমাদেরও ভুল হয়েছে তখন। তখন বুঝিয়ে এইংগেজমেন্ট করে রেখে পরে বিয়ের কথা বললে হয়তো ছেলেটা শান্ত হয়ে যেতো।” হতাশ কন্ঠে বলে ওঠেন কবির চৌধুরী।
কবির চৌধুরীর কথা শুনে জিহাদ চৌধুরী বলে উঠে,
–” নাহ, শান্ত হতো নাহ আরসাল। কারন আরসাল অনেক যেদি। ছোটবেলা থেকে যাহ চেয়েছে তাই দেওয়া হয়েছে, নাহ দিতে চাইলে কেড়ে নিয়েছে। ও যখন বলেছিলো বিয়ে দিতে হবে তাহলে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছুতেই শান্ত হতো নাহ। এতে সেহেরের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো।”

–” হয়তো হতো। কিন্তু দাভাই, যে সেহেরকে ঘিরে আজ এই হয়েছে। সেই সেহেরই ঠিক করবে সবকিছু। দেখে নিও। চলো আমরা চলে যাই। আরসাল ওর মন মতো আসুক।” কথা গুলো বলে আজিজ চৌধুরী জিহাদ চৌধুরী এবং কবির চৌধুরী কে নিয়ে বেরিয়ে আসে।

এইদিকে,
সেহের নিজের রুমে বসে বই পড়ছে। এমন সময় সাথী ( সেহেরের ছোট বোন ) আসে সেহেরের রুমে। সেহেরের পাশে বসে। সেহের সাথীর দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা কিছু বলার জন্য এসেছে বলে মনে হচ্ছে। সেহের বলে ওঠে,
–” কিরে কিছু বলবি?”

–” হুম, আচ্ছা আপু আমি আরসাল ভাইয়া তোহ ভালো গান গায়। কত দিন হয়ে গেলো আরসাল ভাইয়ার গান শুনি নাহ। আজ আরসাল ভাইয়া বাসায় ফিরলে আমি আর তুমি ভাইয়াকে গানের রিকোয়েস্ট করবো ঠিক আছে,।”

সাথীর কথা শুনে সেহেরের অতীতের কিছু কথা মনে পড়ে যায়।
সেহের আরসাল কে ভয় পেলেও আরসালের গান খুব পছন্দ করতো। আরসাল খুব সুন্দর গিটার বাজিয়ে গান করতো। আরসাল যখন গান করতো সেহের দরজার পাশে দাড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে গান শুনতো। কোনো শব্দ করতো নাহ, যদি আরসাল জানতে পেরে বকা দেয়।
সেহেরকে কিছু ভাবতে দেখে সাথী সেহেরের হাত ধরে ঝাকিয়ে বলতে শুরু করে,
–” আপু, কি ভাবছো তুমি।”

–” নাহ কিছু নাহ। আসলে সাথী শোন প্লিজ, আরসাল ভাইয়ার আজ কতো দেরি হচ্ছে বাসায় আসতে। অনেক কাজ কমপ্লিট করে আসছে মনে হয়। বাসায় আসলে নিশ্চয় অনেক ক্লান্ত থাকবে। তাই আজ থাক। আমরা অন্য কোনো একদিন রিকোয়েস্ট করবো। ঠিক আছে।”

–” হুম, তুমি ঠিক বলছো। আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম।”
সাথী চলে গেলো। সাথী এখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। তাই এখনো এইসব কোনো ব্যাপার সে জানেও নাহ। আর তাকে জানানো হয়ও নি।
সেহের পড়া ছেড়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়। আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” আরসাল ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। আর আমি কখনো বুঝতেই পারি নি। ছোট ছিলাম ঠিকই। কিন্তু এতোটাও কি ছোট ছিলাম, যে কিছুই বুঝবো নাহ। নাকি খেয়ালই করি নি কখনো। মনে হয় কখনো খেয়ালই করি নি। এখন জানলাম যে কেনো আমাকে হঠাৎ নানু বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, আরসাল ভাইয়া কে কেনো জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যদিও এতে আমার কোনো দোষ নেই, তাও কোনো নাহ কোনো একদিক দিয়ে আমি জড়িত। বড় আম্মু আব্বু কারো সাথেই আরসাল ভাইয়া ভালো করে কথা বলছে নাহ। এই ৩ বছর বড় আম্মু আব্বু কত কষ্ট পেয়েছে নিজের ছেলেকে দুরে রেখে। আর আজ এতোদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়েও একটু আদরও করতে পারছে নাহ। নাহ, এইটা হতে পারে নাহ। আরসাল ভাইয়া এমন করতে পারে নাহ। তোমাকে তোহ ঠিক হতেই হবে। আমাকে ঘৃনা করো সমস্যা নাই। কিন্তু বড় আম্মু আব্বুর সাথে এরকম করতে তোমাকে আমি দিবো নাহ। তোমাকে ঠিক তোহ আমিই করবো। দেখো কি করি তোমাকে।”

এইসব ভাবছে সেহের তখনই দেখতে পায় বাড়ির গেট দিয়ে একটা গাড়ি ঢুকছে। সেহের বুঝে যায় যে আরসাল এসেছে। সেহের কিছু একটা চিন্তা করে নিচে নেমে আসে। নিচে নেমে আসতেই দরজায় কলিংবেল বেজে ওঠে। সেহের দরজার কাছে এগিয়ে যায়। কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে মায়া চৌধুরী রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে সেহের দরজার কাছে গেছে খুলতে। তাই তিনি আর কোনো আওয়াজ নাহ করে দাড়িয়ে থাকে।
সেহের দরজা খুলে দেয়। আরসাল দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে সেই মায়া ভরা মুখ টাহ দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আরসাল মুখ দিয়ে যতই বলুক সেহেরকে ঘৃনা করে, আসলে তোহ আরসাল সেহের কে ভালোবাসে। এই ৩ বছরে ভালোবাসা কমার বদলে যে আরও বেড়ে গেছে। সেই সাথে রাগ আর যেদ টাও যে বেড়ে গেছে। তাই ভালোবাসা ঢাকা পড়ে আছে রাগ আর যেদের কাছে।
আরসাল কিছু নাহ বলে ভেতরে চলে যেতে যায়। তখনই সেহের বলে ওঠে,
–” আমার চকলেট আনোনি। নাকি এই ৩ বছরে ভুলে গেছো আমার চকলেটের কথা।”

সেহেরের কথা শুনে পা থেমে যায় আরসালের। মনে পড়ে যায় আগের কথা। আরসাল যখনই বাসায় আসতো সেহের এসেই এই কথা বলতো’ আমার চকলেট আনোনি, নাকি ভুলে গেছো আমার চকলেট আনার কথা। আরসাল প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে অনুভব করে চকলেটের প্যাকেট। এই ৩ বছরে এমন কোনোদিন যায় নি যে আরসাল চকলেট কিনে আনে নি। প্রতিদিন চকলেট কিনে এনেছে আর নিজের একটা বক্সে যত্ন করে রেখে দিয়েছে। আজও এনেছে, কিন্তু ভাবে নি আজ সেহের সেই আগের মতো তার কাছে চকলেট চেয়ে বসবে।
আরসাল সেহেরের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখে সেহের তার দিকে হাত বাড়িয়ে তাকিয়ে আছে। আরসাল কি করবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। ঘুরে যায় আরসাল, চলে যেতে যায় নিজের রুমের দিকে। কিন্তু আবার কি মনে করে যেনো প্যান্টের পকেট থেকে চকলেট বের করে সেহেরের হাতে দেয়। চকলেট টাহ দিয়ে আরসাল আর এক মিনিটও দাড়ায় নাহ, চলে যায় নিজের রুমে। সেহের চকলেট টাহ নিয়ে মুচকি হাসে। উপরে যেতে গিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছেন। মায়া চৌধুরী এসে সেহেরের সামনে এসে দাড়ায় এবং বলে ওঠে,
–” পারবি আমার এই যেদি, রাগী ছেলেকে সামলাতে? কিরে বল পারবি নাহ?”

–” বড় আম্মু, কি বলছো এইসব?”

–” ঠিকই বলছে তোর বড় আম্মু। ”

সেহের আর মায়া চৌধুরী কারো গলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে জিহাদ চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। জিহাদ চৌধুরী সেহেরের সামনে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–” আমার তোর উপর বিশ্বাস আছে মা। আমি জানি তুই পারবি, আমার এই অশান্ত ছেলেকে শান্ত করতে। আমার এই ছেলেকে একটু সামলিয়ে দে নাহ মা। অনুরোধ করছি আমি তোর কাছে। ”

–” বড় আব্বু, কি করছো তুমি এইগুলো। আমি জানি নাহ আমি পারবো কি নাহ। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো। তোমাদের ছেলেকে তোমাদের কাছে আগের মতো করে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। ”
সেহের কথাগুলো বলেই তার রুমে চলে যায়। মায়া চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সব ঠিক হয়ে যাবে তাই নাহ?”

–” তুমি একদম চিন্তা করো নাহ মায়া। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এইদিকে,
আরসাল শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে ভাবছে তখন সেহেরের চকলেট চাওয়ার কথা। কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল আগের সেই দিনে ফিরে গেছে আরসাল। লং টাইম শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে আরসাল। সোজা বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আরসাল।

চলবে………….🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-০১+০২

0

#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 1+2

–” সেহের, সেহের, ঘুম থেকে উঠ। বাসার সবাই আজ কত তাড়াতাড়ি উঠে গেছে, আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।”

ঘুম ঘুম চোখে সেহের তার মাকে বললো,” আহা মা, এতো তাড়াতাড়ি উঠতে পারবো নাহ। আর বাসায় আজ কি যে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।”

–” বাসায় আজ কিহ জানিস নাহ।” চোখ মুখ কুঁচকে সেহের কে তার মা বলে উঠলো।

–” নাহ জানি নাহ, কিহ আজ বাসায়।

–” আজ বাসায় আরসাল আসতেছে। আর একটু পরেই চলে আসবে। আর তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস।”

আরসাল এর নাম শুনে সেহরের ঘুম উড়ে গেলো। তোতলাতে তোতলাতে বলো” কে আসছে”

–” আরসাল, তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। আর কিছুক্ষনের মাঝে চলে আসবে।” কথা গুলো বলেই সেহেরের আম্মু চলে গেলো।
আর সেহের সেইভাবেই বসে বসে ভাবছে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্যারা চলে আসলো। সেহের তার জীবনে একজন মানুষকেই ভয় পায় আর সে হলো আরসাল।
(( সেহের চৌধুরী। চৌধুরী বাড়ির সবচেয়ে আদরের কণ্যা সেহের চৌধুরী। সেহের এইবার অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। সেহেররা ২ বোন। সেহেরের ছোট একটি বোন আছে। সেহের দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দরী। টানা টানা চোখ, হলুদ ফর্সা গায়ের রং, গোলাপি ঠোঁট এবং ঠোঁটের উপর একটা গাঢ় ছোট্ট কালো তিল, যা সেহেরের সৌন্দর্যকে হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে, লম্বা চুল গুলো কোমরের নিচে এসে পড়েছে।
সেহেরেরা জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকে। সেহেরের বাবা তিন ভাই। সেহেরের বাবা সবথেকে ছোট। সেহেরের বড় চাচা জান্নাত চৌধুরী এবং বড় চাচী মায়া চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আরসাল চৌধুরী। সেহেরের মেঝো চাচা কবির চৌধুরীর এবং কেয়া চৌধুরীর ২ ছেলেমেয়ে, বড় ছেলে আশফি চৌধুরি এবং ছোট মেয়ে আশা চৌধুরী। আর সেহের বাবা সবার ছোট আজিজ চৌধুরী এবং মা আহিয়া চৌধুরী, সেহেররা ২ বোন, সেহের বড় এবং ছোট বোন সাথি চৌধুরী….আস্তে আস্তে আরও জানা যাবে এখন গল্পে ফেরা যাক,,))
সেহের তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। আর থাকবে নাই বা কেনো আজ ৩ বছর পর বাড়ির বড় ছেলে বাড়ি আসছে। যদিও সবাই চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে, কারন আরসাল বাড়িতে এসে শান্ত থাকলে হয়। কারন আরসালকে জোর করে বিদেশ পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু কেনো, কি কারনে আরসাল কে জোর করে বিদেশ পাঠানো হয়েছিলো তাহ এখনো সেহের জানে নাহ, আর জানার কখনো চেষ্টাও করে নি। আরসাল অনেক যেদি ছেলে তাই বাড়ির সবাই চিন্তিত আছে। আরসাল বিদেশ যাওয়ার পর হাতে গোনা কয়েকদিন বাড়ির সবার সাথে কথা বলেছে তাও ২ বা ৩ মিনিট।
সেহেরও চিন্তিত হয়ে আছে। কিন্তু সবার চিন্তা আর সেহেরের চিন্তা একদম আলাদা। সবার চিন্তা আরসাল বাসায় এসে সবার সাথে ভালো ব্যাবহার করবে কি নাহ আর সেহেরের চিন্তা তার লাইফের ডেভিল আবার তার লাইফে এসে হাজির।
হঠাৎ বাসার কলিংবেল বেজে ওঠে। সবাই চমকে বাসার দরজার দিকে তাকায়। তারপর আশফি গিয়ে আস্তে আস্তে দরজা খুলে। দরজা খুলে দেখে আরসাল এবং আমান দাড়িয়ে আছে। সবাই আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে আসে। মায়া চৌধুরী ভেজা চোখ নিয়ে আরসাল এর সামনে দাড়ায়। আরসাল তার মায়ের দিকে সোজা দৃষ্টিতে তাকায়। এতে যেনো মায়া চৌধুরীর বুকের ভেতর টাহ খা খা করে ওঠে। কারন ওনার তোহ ঐ একটায় সন্তান। তার যে তাকে দুরে রাখতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। তাহ কি এই যেদি ছেলে বুঝবে। সেইদিন যদি তিনি আরসাল কে জোর নাহ করতেন তাহলে যে ২ টা জীবন যে নষ্ট হয়ে যেতো।

সবাই আরসাল কে ঘিরে ধরেছে। সেহের এতো সময় অন্যদিকে ফিরে ছিলো। এইবার আস্তে আস্তে একটু উঁকি দিয়ে আরসাল কে দেখলো। আর দেখেই যেনো বড়সড় একটা ক্রাশ খেলো সেহের।
(( আরসাল, দেখতে কোনো হিরোর থেকে কম নয়। দুধ ফর্সা গায়ের রং, চোখের মনি টাহ হালকা ব্রাউন কালার, যা সবচেয়ে বেশি এট্রাকটিভ, গাঢ় গোলাপি রং এর ঠোঁট, চুল গুলো খুব সিল্কি আর চার পাঁচ টাহ কপালে সবসময় পড়েই থাকে। আরসাল মারাত্নক যেদি ছেলে। ছোট বেলা থেকেই যেটা চেয়ে এসেছে সেটা নিয়েই ছেড়েছে। আর সেটা যেভাবে হোক। নিজের কোনো কথার বিরুদ্ধে কোনো কাজ হলে আরসাল সেইটা মেনে নিতে পারে নাহ।,,,, পরে আরসাল সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা যাবে এখন এখন গল্পে ফেরা যাক,,))
আরসাল কে দেখে সেহের বড়সড় ক্রাশ খেয়ে গেলো। আরসাল এমনিতেই হিরোর মতো দেখতে, তারওপর আরসাল ব্লাক টিশার্ট এর উপর এ্যাশ কালরের জ্যাকেট পরা, ব্রাউন ডেনিম প্যান্ট, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, হাতে একটি ব্লাক ব্রান্ডেড ওয়াচ, পায়ে হোয়াইট কের্চ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি আর কপালে কয়েকটি পড়ে আছে, আাবার টি-শার্টে একটি সানগ্লাসও ঝুলানো আছে।

আরসাল সবার দিকে একবার তাকিয়ে সোজা উপরের দিকে যেতে লাগলো। সবাই হতাশ চোখে আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু কেউ কোনো কিছু বললো নাহ। আরসাল উপরের দিকে যেতে যেয়ে সেহেরের সামনে এসে দাড়ায়। সেহেররের দিকে লাল রাগী চোখ নিয়ে একবার তাকিয়ে চলে যায়। এতে সেহেরের ভয়ে ক্রাশ শব্দ টাহ উড়ে গিয়ে বাশ শব্দটা চলে আসলো। আবার আগের মতো যদি টর্চার করে তার উপর তাহলে সেহের কি করবে, এই ভয় পেতে থাকে।
আরসাল চলে গেলে সবাই আহত চোখে আমানের দিকে তাকায়। আমান আরসাল এর ছোট বেলার বন্ধু। আরসালের বাসা থেকে আমান এর বাসা ৫ মিনিটের হাটা পথ। আমানও আরসাল সাথে বিদেশে চলে গিয়েছিল। আমান খুব ভালো করেই জানে এইসবের কারন কি৷ কিন্তু এই মুহূর্তে আরসালকে এই ব্যাপারে কিছু বলা আর বাঘের মুখে লাফ দেওয়া একই কথা।
আমান সবার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমান বুঝে উঠতে পারছে নাহ কাকে কি বলবে, আর কি বলা উচিত। কিছু সময় পর আমান মাথা নিচু করে আরসালের মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” আন্টি কিছু চিন্তা করবেন নাহ। ওর একটু সময় দরকার। আসলে ৩ বছর আগে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো কাজ হয়েছিল। তাছাড়া আপনিও ওর গায়ে হাত তুলেছিলেন। যা এখনো ওর যিদ কে বাড়িয়ে রাখছে। কিছুদিন সময় দেন, ঠিক হয়ে যাবে।”

–” জানি নাহ বাবা কি হবে। যেদি ছেলেটা বুঝবে কি নাহ। ” আরসালের আম্মু চোখে পানি নিয়ে বলেন।

আমান আর কিছু নাহ বলে বাসা থেকে বেরিয়ে এসে তার বাড়ির দিকে হাটা শুরু করে।
এইদিকে এতোদিন পর একজন আমানকে যেনো চোখ ভরে দেখে নিলো। আমানকে দেখলেই যেনো সে ডুবে যায় আমানের মায়া ভরা মুখে। তার ইচ্ছে করে আমানকে একটু ছুয়ে দিতে, আমানের মুখে ভালোবাসার পরশ দিতে। আর এই ব্যাক্তিটি হলো আশা, আশা চৌধুরী। হ্যা, আশা আমানকে ভালোবাসে। আরও অনেক আগে থেকেই, কিন্তু কখনো বলার সাহস করে নি। আমানের প্রতি আগে ভালোলাগা কাজ করতো। ধীরে ধীরে সেই ভালোলাগা ভালোবাসাতে পরিনত হয়। আশা জানে নাহ তার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে কি নাহ। তাও আশা ভালোবাসে আমানকে। কারন সব ভালোবাসা যে পূর্নতা পেতে হবে এমন কোনো মানে নেই। আমান, আরসালের সাথে বিদেশে গেলে আশা মাঝে মাঝে আমানকে ফোন দিতো আরসালের বিষয়ে জানার জন্য, কিন্তু প্রধান উদ্দেশ্য থাকতো আমানের কন্ঠ শোনা। কারন আরসালের খবর তোহ বাকি সবার কাছে পেয়ে যায়। তাও আমান কে ফোন দিতো ভালোবাসার টানে।

আরসাল তার রুমে এসে তার রুমের চারপাশে তাকিয়ে দেখে। ৩ বছর আগে চলে গিয়েছিল এই রুম, বাড়ি ছেড়ে। আজ আাবার এসেছে। রুমের সব কিছুই আগের মতো আছে, কোনো কিছু বদলায় নি। রুম টাহ দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক যত্ন নেওয়া হয় রুম টার। একপাশে তাকিয়ে দেখে তার ব্লাক গিটার টাও আছে। আরসাল আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় গিটারের কাছে। দেখে একদম আগের মতোই পরিস্কার আছে। আরসাল তার হাত বাড়িয়ে গিটার টাহ ছুয়ে দেখে। এই গিটার টাহ অনেক প্রিয় ছিলো আরসালের। আরসাল চোখ বন্ধ করে ভাবে, যখনই সে গিটার বাজিয়ে গান করতো তখনই কেউ একজন তার রুমের পাশে দাড়িয়ে সেই গান উপভোগ করতো। কিন্তু আরসালের ভয়ে কখনো কোনো শব্দ করে তার অস্তিত্বের জানান দিতে চাইতো নাহ। কিন্তু তাও আরসাল বুঝে যেতো সে এসেছে, কারন সে আশেপাশে থাকলেই আরসালের হার্টবিট বেড়ে যায়, বুঝতে পারে তার অস্তিত্ব। হঠাৎ সেই বাজে দিনটার কথা আরসালের মাথায় চলে আসে। এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া, তার গায়ে তার মায়ের হাত তোলা, তার বাবার বকা, বাড়ির মানুষের করা কথা অপমান, এইসব মনে পড়তেই আরসালের চোখ লাল হতে থাকে৷ আর কিছু নাহ ভেবেই ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার অন করে তার নিচে দাড়িয়ে পড়ে।

এইদিকে সেহের রুমে এসে মুখে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছে আরসালের এমন ব্যাবহারের কারন কি। আজ কতদিন পর আরসাল বাড়ির মানুষের দেখা পেলো, তার তোহ উচিত ছিলো সবাইকে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে কথা বলা। সেহেরের মনে আছে ৩ বছর আগে সেহের কে হটাৎ করেই তার নানুদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর বাড়ি এসে জানতে পারে আরসালকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেনো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এইটা জানার আগ্রহই তখন আসে নি। কারন তার লাইফ থেকে ডেভিল টাহ চলে গেছে এইটায় বেশি ইমপর্টেন্ট ছিলো তার কাছে। কিন্তু এখন সেহের ভাবছে কি হয়েছিলো তখন, যে আরসাল এতো রেগে আছে। আর কেনোই বা আরসাল কে জোর করে বিদেশ পাঠানো হয়েছিলো। সেহের বসে বসে এইসব ভাবছে তখনই সেহেরের মা সেহেরে রুমে এসে রুমে থাকা টেবিলে টাহ একটু গুছিয়ে রাখছে। তখনই সেহের তার আম্মু কে বলে,
–” আচ্ছা আম্মু, ৩ বছর আগে কি হয়েছিল। আরসাল ভাইয়া কে কেনো তোমরা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলে। আর বড় চাচী আম্মা কেনো আরাসাল ভাইয়ার গায়ে হাত তুলেছিলো। কি করেছিলো আরসাল ভাইয়া।”

সেহেরের কথা শুনে সেহেরের আম্মু কাজ থামিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে। যাহ সেহের খেয়াল করে আস্তে আস্তে তার আম্মুর কাছে এগিয়ে এসে কাধে হাত দেয়। কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে সেহেরের আম্মু আহিয়া চৌধুরী কেঁপে উঠে পাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে সেহের আগ্রহী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেহের কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহিয়া চৌধুরী রুম থেকে বেরিয়ে এসে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। সেহের অবাক হয়ে যায় তার মায়ের কাজে। তার আম্মু চলে গেলো কেনো তারে কিছু নাহ জানিয়ে তার মাথায়ই আসছে নাহ।
এইদিকে আহিয়া চৌধুরী নিজের রুমে এসে দেখেন আজিজ চৌধুরী ( সেহেরের বাবা ) খবরের কাগজ পড়ছেন। আহিয়া চৌধুরী এসে আজিজ চৌধুরী সামবে বসেন, এইটা দেখে আজিজ চৌধুরী খবরের কাগজ নামিয়ে আহিয়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে দেখেন তাকে খুবই চিন্তিত মুখ নিয়ে আছেন। আজিজ চৌধুরী কিছু বলতে যাবেন, তার আগেই আহিয়া চৌধুরী বলে উঠেন,
–” মেয়ে যদি জিজ্ঞেস করে যে, ৩ বছর আগে আরসালের সাথে যাহ হয়েছে তার কারন কি? কি উত্তর দিবে তুমি? ”

–” হটাৎ এমন কথার কারন কী?” অবাক হয়ে যান আজিজ চৌধুরী।

–” কেনো করবো নাহ বলো। আজ নাহ হয় কাল মেয়ে তো জিজ্ঞাসা করতেই পারে। কি উত্তর দিবা তখন?”

–” জানি নাহ। কিন্তু আরসাল এখনো সেই আগের ফিলিংস নিয়ে আছে কি নাহ কে জানে। আবার সেই আগের মতো পাগলামি শুরু করলে তখন কি হবে। সেহের এইসব জানতে পারলে তার রিয়াকশন কি হবে, কিছুই জানি নাহ। কিন্তু জানবে তোহ, যে সেহেরের জন্যই এইসব হয়েছিল। যদিও সেহেরের কোনো দোষ নেই এতে। তখন সেহেরের বয়সও কম ছিলো, তাই আমরা এই বিষয় নিয়ে এগোই নি। কিন্তু এখন আরসাল যদি চায় তাহলে সেইটাই মেনে নেওয়া হবে।”

আজিজ চৌধুরীর কথা শুনে আহিয়া চৌধুরীও মনে মনে তাই ঠিক করে নেয়। কিন্তু সেহেরও কি তাই ঠিক করে নিচ্ছে। এই ৩ বছর যে অনেক সময় ছিলো সেহেরের জীবনের। এই ৩ বছর পর আরসাল, আজিজ চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী যাহ চাচ্ছে তাহ কি সেহেরের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে।
এইদিকে মায়া চৌধুরী ( আরসালের আম্মু ) আরসালের জন্য ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে তার রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আরসালের রুমের ভেতরে গিয়ে দেখেন আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছে। কারো রুমে আসার আওয়াজ পেয়ে আরসাল দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার মা খাবার হাতে দাড়িয়ে আছে। আরসাল ল্যাপটপ টাহ পাশে রেখে দাড়িয়ে যায়। আর অন্যদিকে ঘুরে দাড়ায়। মায়া চৌধুরীর বুকের ভেতর কেমন করে উঠে। মায়া চৌধুরী খাবারের প্লেট পাশে একটা ছোট্ট রাউন্ড টেবিলে রেখে দেয়। তারপর আস্তে আস্তে আরসালের পেছনে এসে দাড়িয়ে আরসালের কাঁধে হাত দেয়। আরসাল এতো দিন পর মায়ের স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে কিন্তু তার মায়ের দিকে তাকায় নাহ। মায়া চৌধুরীর চোখে পানি এসে ভিড় করে। তিনি বলতে থাকেন,
–” মায়ের দিকে তাকাবি নাহ। মায়ের উপর এতো রাগ যে মায়ের দিকে তাকাচ্ছিসও নাহ।”

মায়ের কথা শুনে আরসালের চোখেও পানি চলে আসে কিন্তু পানি পড়তে দেয় নাহ। মায়ের দিকে নাহ তাকিয়েই আরসাল বলতে শুরু করে,
–” আমি কারোর উপর রেগে নেই। আমি এখন একা থাকতে চায়।”

আরসালের কতা শুনে মায়া চৌধুরী বুঝতে পারে তার ছেলে কতটা অভিমান নিয়ে আছে তার উপর। তিনি কোনরকম ভাবে কান্না চেপে রেখে বলে উঠে,
–” হুমম, চলে যাচ্ছি। তুই একা থাক। কিন্তু নাহ খেয়ে থাকিস নাহ বাবা। ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসছি। আমি নিজে বানাইছি তোর জন্য। তোর প্রিয় আলুর পরটা আর গরুর মাংস। খাবার টাহ খেয়ে নে।”
কথা টাহ বলেই মায়া চৌধুরী তাড়াতাড়ি চলে যান রুম থেকে। মায়া চৌধুরী যেতেই আরসাল পিছন ফিরে মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের কোনা দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে আরসালের। কি করবে ওর সেই দিন টাহ যেনো আরসালের মাথায় পুরো গেঁথে আছে। কোনো ভাবেই ভুলতে পারে নাহ। তাই কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছে নাহ আরসাল।
মায়া চৌধুরী কান্না করতে করতে রুমে এসে বিছানায় বসে পড়ে। তখনই জান্নাত চৌধুরী ( আরসালের বাবা ) রুমে এসে দেখেন মায়া চৌধুরী কান্না করছে।
তিনি মায়া চৌধুরী কে তার দিকে ফিরিয়ে বলেন,
–” মায়া, কি হয়েছে তোমার?”

–” জান্নাত, আমার ছেলে আমার উপর কত অভিমান নিয়ে আছে তুমি জানো নাহ। কি করবো বলো, তখন ও যেরকম পাগলামি শুরু করেছিলো, তাতে তোহ সেহেরের ক্ষতি হতো। সেহের যে তখন অনেক ছোট ছিলো। তাই আমি ওর গায়ে হাত তুলেছিলাম। ওরে জোর করে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এইটা তোহ ওদের দুইজনের জন্যই করেছি। আমার যেদি ছেলেটা কে এই কথা কে বুঝাবে। আমি আর এইগুলো নিতে পারছি নাহ। ”

–” তুমি শান্ত হও মায়া। এখন আরসাল যাহ চাইবে তাই হবে। সেহের তোহ এখন বড় হয়েই গেছে। এখন আরসালের কথামতো সব হবে। ছেলেটা কে একটু সময় দাও। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। ”
জান্নাত চৌধুরী কথা গুলো বলেই মায়া চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরেন। আর মায়া চৌধুরী জান্নাত চৌধুরীর বুকে কান্না করতে থাকেন। একটাই সন্তান ওনাদের। সবটুকু দিয়ে ভালোবাসেন। এতোগুলো দিন ওর ছেলেকে কাছে পেয়েও একটু আদর করতে পারছে নাহ। কথাও ঠিক মতো বলতে পারছে নাহ। কিভাবেই বা বলবে তাদের দিকে তোহ ছেলেটা ভালোভাবে তাকাচ্ছেই নাহ।

In night…

আরসাল বারান্দায় ডিভানের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ সারাদিন আরসাল রুমেই ছিলো। কারো সাথে কথা বলে নি। নিজের মতো করে ল্যাপটপে কাজ করেছে। আরসাল অনার্স প্রথম বর্ষ থেকেই নিজেদের ফ্যামিলি বিজনেস এ জয়েন্ট আছে। তাই নিজের ল্যাপটপেই কাজ কমপ্লিট করে আরসাল। খুব প্রয়োজন নাহ হলে অফিস যায় নাহ। বিদেশের বিজনেস টাহ আরসালই হ্যান্ডেল করে। তাই আজ সারাদিন রুমে বসে অফিসের কাজ করেছে। কারো সাথে কথা বলে নি। বিকালে আমান এসেছিলো, হঠাৎ আমানের একটা ফোন আসায় তাড়াতাড়ি চলে যায়। আরসাল হঠাৎ দরজায় আওয়াজ পেয়ে রুমে এসে দেখে তার বাবা জান্নাত চৌধুরী এসেছেন। আরসাল হঠাৎ তার বাবাকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আরসাল তার বাবার দিকে একবার তাকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। জান্নাত চৌধুরী আরসালের সামনে এসে দাড়ায়। আরসাল এতে আরও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আরসালের বাবা বলে উঠে,
–” এখন কি উল্টা দিকে ফিরে যাবা। কথা বলবা নাহ আমার সাথে।”

–” আমি কারো সাথে কথা বলতে চায় নাহ।”

–” আচ্ছা, তাহলে ৩ বছর পর বাংলাদেশে ফিরে আসার কারন কি? থেকে আসতে বিদেশে। আসলে কেনো?”

–” আমি তোমাদের জন্য আসিনি। অফিসের কাজে এসেছি।”

–” আরসাল” হঠাৎ একটা মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসায় আরসাল এবং জান্নাত চৌধুরী পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী ভেজা চোখ নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। তিনি আরসালের সামনে এসে ২হাত দিয়ে আরসালের মুখ ধরে বলে,
–” মাকে তোর দেখতে ইচ্ছে করেনি। এতো রাগ মায়ের উপর, যে মায়ের টানে নাহ অফিসের টানে চলে এলি। মাকে একটু দেখতেও ইচ্ছে করে নাহ। বল নাহ বাবা, মাকে কি একটুও দেখতে ইচ্ছে করে নাহ। ”

আরসাল তার মুখ থেকে নিজের মায়ের হাত সরিয়ে জানালার পাশে গিয়ে বাইরের দিকে ফিরে দাড়ায়। মায়া চৌধুরী আবার বলেন,
–” আরসাল, বাবা তুই যদি সেহেরের প্রতি ৩ বছর আগের সেই অনুভূতি রাখিস, তাহলে,”

–” কখনো নাহ। আমি সেহেরের প্রতি কোনো অনুভূতি রাখি নাহ। আমি সেহেরকে এখন শুধু ঘৃনা করি। হেট করি আমি ওরে।” আরসাল তার মাকে আর কিছু বলার সুযোগ নাহ দিয়েই এই কথা গুলো বলে ওঠে।আরসাল তার মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলে,
–” যে মেয়ের জন্য আমাকে নিজের মায়ের হাতে চড় খেতে হয়েছিল, বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল, বাবার বকা শুনতে হয়েছিল, সেই মেয়েকে আমি শুধুই ঘৃনা করি।”

–” কিন্তু এতে তোহ সেহেরের কোনো দোষ ছিলো নাহ আরসাল। পাগলামো তুমি করছিলে।” জান্নাত চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন।
আরসাল তার বাবার সামনে যেয়ে দাড়িয়ে বলতে শুরু করে,
–” আমি পাগলামি করেছিলাম। কাকে নিয়ে করেছিলাম। ওরে নিয়ে করেছিলাম। ওরে নিয়ে করেছিলাম জন্যই তোহ এইসব হয়েছিল। যদি অন্য কাউকে নিয়ে করতাম তাহলে মনে হয় এমন হতো নাহ। এনিওয়ে, আমি একা থাকতে চাই। তোমরা যাও এখন।”

জান্নাত চৌধুরী এবং মায়া চৌধুরী একে অপরের দিকে হতাশ চোখে তাকায়। তারা আর কিছু নাহ বলে বেরিয়ে যায়। আরসালও বারান্দায় চলে যায়।
কিন্তু এখনো একজন আছে যে তাদের এইসব কথোপকথন শুনে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে দরজার অপর পাশে কর্নারে। সে আর কেউ নাহ, সে হলো সেহের নিজে। সেহেরের রুম আরসালের এক রুম পরেই। সেহের নিজের রুমের দিকে যেতে গিয়ে আরসালের রুমের থেকে নিজের নাম ভেসে আসলো এমন মনে হওয়ায় দরজাট পাশে দাড়িয়ে থাকে, এবং শুনতে থাকে। সেহেরের মাথায় যেনো কিছুই ঢুকছে নাহ। আরসাল তাকে ঘৃনা করে, তার জন্য আরসাল কে চড় মারা হয়েছিল, বকা শুনতে হয়েছিল, বাড়ি ছাড়তে হয়েছিলো, এইসবের মানে কি?
সেহের তার রুমে চলে আসে, গিয়ে বারান্দায় দাড়ায়। ভাবতে থাকে কিছু অতিতের কথা। সেহের যখন ক্লাস ওয়ানে পড়তো তখন আরসাল ক্লাস ফোরে পড়ে। একই স্কুলে ছিলো ওরা। কারো সাথে মিশতে দিতো নাহ আরসাল সেহেরকে। কোনো ছেলের সাথে সেহের কথা বললেই আরসাল সেহের কে বকা দিতো। অনেক সময় মাইর ও দিতো। আর যে ছেলের সাথে কথা বলতো তাকেও মারতো। হাই স্কুলে ও একই অবস্থা ছিলো। এই কারনে আরসালকে সেহের নিজের লাইফের ডেভিল মনে করতো। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে সেহের, আরসাল অনার্স ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট, তখন আরসাল কে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কেনো?
–” আরসাল ভাইয়া আমাকে ঘৃনা করে, আমার জন্য আরসাল ভাইয়াকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিলো। কি হয়েছিলো ৩ বছর আগে। আম্মুকে আজ যখন আমি জিজ্ঞেস করলাম আম্মু আমাাকে উত্তর কেনো দিলো নাহ? নাহ আমাকে সব জানতে হবে। যে করেই হোক। কি হয়েছিল ৩ বছর আগে, কি হয়েছিল। কিন্তু কে বলবে আমাকে এইসব। আচ্ছা সেই সময় তোহ আশা বাড়িতে ছিলো। তাহলে আশা নিশ্চয় জানে কি হয়েছিল। হ্যা, আশার কাছেই জানবো।” সেহের নিজে নিজেই কথাগুলো বলে আশার রুমের দিকে যেতে থাকে।

আশা নিজের রুমে বসে বসে বই পড়ছে। দরজার খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে সেহের এসেছে। সেহের কে দেখে আশা উঠে বসে। আর সেহের কে বলে,
–” কিরে তুই এতো রাতে এসেছিস। কোনো দরকার ছিলো? ”

–” হ্যা, দরকার আছে। আশা যা যা বলবো ঠিক ঠিক উত্তর দিবি বলে দিলাম।”

–” আরে বাবা কি হয়েছে। আর আমি আমার বেস্টুকে কখনো মিথ্যা বলেছি বলতো। বল কি হয়েছে?”

–” ৩ বছর আগে কি হয়েছিল। আরসাল ভাইয়াকে জোর করে বিদেশে কেনো পাঠানো হয়েছিলো। ”

সেহেরের কথা শুনে আশা ঘাবড়ে যায়। কি বলবে কিছুই বুঝতে পরছে নাহ। কি বলবে এখন সেহেরকে। সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের অনেক আগ্রোহী চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আশা আমতা আমতা করে বলতে শুরু করে,
–” আসলে সেহের, হয়েছে কি”

–” কি হয়েছিল, আমি বলছি।”
কারো আওয়াজ শুনে সেহের আর আশা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আহিয়া চৌধুরী এবং মায়া চৌধুরী দাড়িয়ে আছেন।
–” আম্মু, বড় আম্মু তোমরা।” সেহের অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে।
মায়া চৌধুরী সেহেরের সামনে এসে দাড়ায়। আর বলে,
–” তোকে আমার বলতেই হবে। তোরে বলার সময় এসে গেছে। তখন তুই ছোট ছিলি তাই বলি নি। কিন্তু এখন তোরে বলাই যায়।”

–” কি হয়েছিল বড় আম্মু ”

–” সেইদিন”

Flashback……..৩ বছর আগে,

মায়া চৌধুরী তার রুমে কাপড় গোছাচ্ছেন। তখন আরসাল তানার রুমে এসেই বলে,
–” আম্মু তোমরা নাকি সেহেরের সাথে ছোট আব্বুর কোন বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করতে চাচ্ছো।”

–” হ্যা, আসলে কি বলতো। সেহের তোহ এখনো ছোট৷ বিয়ের বয়স হয় নি। তাই এমনি ঠিক করে রাখা হচ্ছে। সেহেরের বিয়ের বয়স হলে তারপর বিয়ে দেওয়া হবে।”

–” আম্মু এইটা সম্ভব নাহ।”

–” কেনো? কি হয়েছে? ছেলে তোহ অনেক ভালো। কয়েকদিনের জন্য দেশে এসেছে। আবার বিদেশে চলে যাবে। তার আগে এইংগেজমেন্ট করে রাখতে চাচ্ছে। তারপর ৪….৫ বছর পর দেশে আসবে। সেহেরেরও বিয়ের বয়স হয়ে যাবে। তখন বিয়ে হবে।”

–” আম্মু ছেলে ভালো নাহ খারাপ, কোথায় থাকে নাহ থাকে, বা কবে বিয়ে হবে এই বিষয় নিয়ে কিছু বলি নি। আমি শুধু এইটা বলতে চাচ্ছি যে সেহেরের বিয়ে কারোর সাথে ঠিক হতে পারে নাহ।”
আরসালের কথা শুনে মায়া চৌধুরী অবাক হয়ে আরসালের দিকে তাকায়। আর বলে,
–” কেনো?”

–” কারন, আমি সেহের কে ভালোবাসি।”
আরসালের কথা শুনে মায়া চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে। আর বিস্ফোরিত কন্ঠে বলেন,
–” আরসাল কি বলছিস এইসব।”

–” আমি ঠিকই বলছি। যখন থেকে আমি এইসব বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই সেহেরের প্রতি আমার আলাদা টান কাজ করতো। শুধু তাই নয়, যখন আমি এইসবের কিছুই বুঝতাম নাহ, তখনও কোনো অদৃশ্য কারনে সেহের কে আমি কারো সাথে মিশতে দিতাম নাহ। কারন আমার খুব রাগ হতো৷ আজও আমি ওরে কারো সাথে মিশতে দেয় নাহ। কারন আমার রাগ এবং হারানোর ভয় ২ টায় হয়।”

–” আরসাল, থাম বাবা। এইটা কখনো সম্ভব নাহ।”

–” সম্ভব করতে হবে। আর আমি বুঝে গেছি তোমরা সেহের কে আমার থেকে দুরে সরিয়ে দিবা। তাই আমি আজ রাতেই সেহের কে বিয়ে করবো এন্ড এইটায় ফাইনাল।”
কথা গুলো বলে আরসাল বেরিয়ে যায়। মায়া চৌধুরী খুব ভয় পেয়ে যায়। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। আরসাল যে যেদি ছেলে কি করে ফেলবে ঠিক নাই। এতে আর কারো কিছু নাহ হোক সেহের এবং আরসাল ২ই জনেরই অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। মায়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরীকে বলে তৎক্ষনাৎ সেহেরকে তার নানুর বাড়ি পাঠিয়ে দেয় আরসালের অজান্তেই।
আরসাল রাতে বাসায় ফিরে সেহের কে কোথাও নাহ পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে এসে আরসাল জোরে জোরে ডাকতে শুরু করে,
–” আম্মু, আম্মু, ”
আরসালের আওয়াজে সবাই ড্রইংরুমে চলে আসে। জান্নাত চৌধুরী বলে উঠেন,
–” আরসাল, এতো চেচামেচি কেনো করছো? এইসব কি?”
আরসাল জান্নাত চৌধুরীর কথা নাহ শুনেই আহিয়া চৌধুরীর সামনে এসে উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে,
–” ছোট আম্মু, সেহের কোথায়? চুপ করে কেনো আছো? বলো সেহের কোথায়? ওরে আমি বাসার কোথাও খুজে পাচ্ছি নাহ৷ সেহের কোথায়?”

–” আরসাল বাবা শান্ত হ।”

–” কি শান্ত হবো আমি। সেহের কোথায় বলো ছোট আম্মু।”

–” সেহেরকে তোর কাছের থেকে দুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ” মায়া চৌধুরী বলে উঠেন। মায়া চৌধুরীর কথা শুনে আরসাল মনে হচ্ছে পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আরসাল ওর মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলতে শুরু করে,
–” আম্মু, কি বলছো তুমি এইসব। তুমি তোহ জানো আমি সেহেরকে ভালোবাসি।”

–” তোর এই ভালোবাসার জন্য এতো বড় ক্ষতির কাজ আমি করতে পারবো নাহ আরসাল। সেহের সারাজীবনের জন্য তোর কাছের থেকে চলে গেছে।”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে আরসাল চেচিয়ে ওঠে। আর সব জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করে। সবাই ভয় পেয়ে যায়। আরসালকে থামানোর জন্য মায়া চৌধুরী আরসালকে নিজের দিকে ফিরিয়ে মুখে চড় লাগিয়ে দেয়। আরসাল মুখে হাত দিয়ে তার মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কারন এই প্রথম কেউ আরসালের গায়ে হাত তুললো। তখন জান্নাত চৌধুরী আরসালের সামনে একটা পাসপোর্ট দিয়ে বলেন,
–” এই নাও। রাত ১২ টায় তোমার ফ্লাইট, লন্ডন চলে যাও তুমি।”

–” বাবা, কি বলছো এইসব।”

–” ঠিকই বলছি, চলে যাও এই বাড়ি ছেড়ে।”
আরসাল সবার দিকে একবার তাকিয়ে রাগেতে সেইভাবেই বেরিয়ে পড়ে। আর তার কিছুদিন পর আমান ও চলে যায় বিদেশে।

Present……….

রুমের ভিতর পিন পিন নিরাবতা কাজ করছে। কেউ কোনো কথা বলছে নাহ আর। সেহেরও আর কাউকে কিছু নাহ বলে নিজের রুমে চলে যায়। আর বাকি সবাই তাকেয়ে থাকে সেহেরের যাওয়ার দিকে।

চলবে…………….🌹

এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব-২১(শেষ পর্ব)

0

#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ২১(প্রথম অংশ)
মানব চরিত্র বড়োই জটিল, কারোর তুচ্ছ আঘাতেই বিরাট পরিবর্তন হয়, কারোর আবার হাজার আঘাতের পরেও মানসিকতার কোনো বদল হয় না। অর্ক এই দ্বিতীয় শ্রেণীর, নিজের স্টুডেন্ডদের বন্ধু হয়ে ওঠার যে অভ্যাস তাকে বিপদে ফেলেছিলো একবার, সে অভ্যাস ত্যাগ করা তার অন্তত এ জীবনে আর হয়ে উঠবে না সেটুকু বুঝে গেছে অদিতি। তাই প্রায় প্রতি রবিবারই যখন স্টুডেন্ডদের দল বিভিন্ন রকমের আবদার নিয়ে স্যারের বাড়ি উপস্থিত হয়, তখন অর্কর অনুরোধে চা করতে করতে অদিতি মজা করে,

দেখো! আবার কেউ তাকে তোমার স্পেশাল স্টুডেন্ট না ভেবে বসে!

অর্ক মুচকি হাসে,

উঁহু! এখন ওরা সবাই স্পেশাল, আজ যার কথায় নোটস দি, কাল আর সে বললে দিই না!

সেই যে সমরেশ একদিন একটা কথা বলেছিলেন, যার নয়ে হয়নি তার নব্বইয়েও হবে না, সেই কথাটা অন্তত অর্কর ক্ষেত্রে একশো শতাংশ সত্যি। যে মোবাইল বন্ধ রাখা, সাইলেন্ট রাখা নিয়ে অদিতির সঙ্গে তার অশান্তি এতো বড়ো বিপদ ডেকে এনেছিলো তাদের জীবনে, সেই মোবাইল তার এখনও বন্ধ বা সাইলেন্টই থাকে প্রায়!

চরিত্রে বদল অবশ্য অদিতিরও হয় নি একটুও! অর্কর ফোন বন্ধ থাকলেই সে চিন্তিত হয় এখনও, বাড়ি ফিরলেই তার চিন্তা রাগের আকার নেয়, এবং যথারীতি প্রবল চিৎকারে পরিবর্তিত হয়। সে রাগ দুই বা তিন দিন থাকে খুব বেশি হলে তার মধ্যেই অর্ক তাকে ভবিষ্যতে আর কখনো না হওয়ার যে কথা দিয়ে এসেছে এতদিন, সেই কথাই আবার একবার নতুন করে দিয়ে মিটমাট করে নেয়।

তাই অর্কর ফোন বন্ধ থাকলে রুমা যতটা না বিরক্ত হন, তার থেকেও বেশি বিরক্ত হন অদিতির চিন্তিত মুখ দেখলে,

টেনশন করাটা বন্ধ করতো এবার! সব জানিস, সব বুঝিস, তাও একই জিনিস বারবার! আমাদের সময়ে ফোন ছিলো না, সেই ভালো ছিলো বুঝি এখন।

এই সব টানাপোড়েন নিয়েই এগিয়ে চলছিলো অর্ক, অদিতির সংসার, আর পাঁচটা স্বামী, স্ত্রীর সংসারের মতোই! কখনো রাগ, ঝগড়া, কখনো বা আনন্দে ভালোবাসায়। ইতিমধ্যে সময়ের চাকা গড়িয়েছে, কেটে গিয়েছে পাঁচ পাঁচটা বছর, ওদের কারোর সঙ্গেই আর দেখা হয়নি অর্ক বা অদিতির। রিয়ার চিকিৎসা শুরুর খবর অরিন্দমের মুখে শুনেছে বার কয়েক, তার পরে আস্তে আস্তে সে খবরও আর পাওয়া যায় নি। রিয়ার মা অরিন্দমের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন শেষের দিকে।

সময় এগিয়ে চলছিলো, ইতিমধ্যে সমরেশের স্ট্রোক হয় বছর তিনেক আগে। প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় পড়ে গিয়েছেন সমরেশ, ওখানে থেকে একা দেখাশোনা করা রুমার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাবা, মা কে কলকাতায় নিজের কাছে রেখেছে অর্ক। অদিতির বাবা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকেও নিয়ে আসা হয়েছিলো এখানেই। তাই দু কামরার ফ্ল্যাটে আর এতজন না ধরায়, অরিন্দমের দেওয়া খোঁজেই ওর পাড়াতেই একটা থ্রি বেডরুম ফ্ল্যাট কিনে বছর দুয়েক হলো ওরা উঠে এসেছিলো। যদিও অদিতির বাবা বছর খানেক আগে মারা গিয়েছেন, সমরেশ এখনও বিছানায় শয্যাশায়ী। একমাত্র রুমা এখনও বেশ শক্ত সমর্থ আছেন, সমরেশ কে দেখাশুনা নিজেই করেন, সাহায্যের জন্যে একজন মাঝবয়সী মহিলা আছেন।

ছেলেকে দক্ষিণ কলকাতার এক নামকরা স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে বছর দুয়েক আগে, এতদিন ছোটো থাকায় ও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে বসে থাকতো ওখানে। সেখানে ঘর ভাড়া নিয়ে অনেকেই বসে থাকে, তাদের সঙ্গে বেশ একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এই দু বছরে। ঘরে বসে শাড়ি, কুর্তি কেনা থেকে শুরু করে, পিকনিক, সিনেমা দেখা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, কোনোটাই বাদ যায় না।

এ বছরই প্রথম ছেলে কে একাই পুল কারে করে স্কুলে পাঠাচ্ছে অদিতি, প্রথম প্রথম খুব ভয় লাগতো, গাড়ি ফিরতে একটু দেরি হলেই ফোন করতো ড্রাইভার কে, ইদানিং মাস পাঁচেক হয়ে যাওয়ার পরে ভয় একটু হলেও কমেছে। ঘরের আড্ডাটা কে মিস করে ভীষণ, তাই মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হয় সবার সঙ্গে। বন্ধুরা মাঝে মাঝেই ফোন করে ডাকে,

এই অদিতি চলে আয়! কিন্তু ওরই আর যেতে ইচ্ছে করে না, সকালে উঠে ছেলে কে রেডী করতে করতেই সব এনার্জি চলে যায়! নিজের যাওয়াটা আর হয়ে ওঠে না। রুমাও মাঝে মাঝেই বলেন,

তুই বড্ড কুঁড়ে! একটু মাঝে মাঝে বেরতেও পারিস তো! দু বছর তো দিব্যি যাচ্ছিলি! আর বছর দুয়েক যেতে পারতিস, অতো টুকু ছেলে কে একা ছেড়ে দিলি!

অদিতি হাসে,

ধুর! আমার আর যেতে ইচ্ছে করে না! আর ওকেও এবার একটু বড়ো হতে দাও মা, কতো বাচ্চা ওর থেকেও ছোটো, তারাও একাই যায়!

অর্কও ইদানিং ওর সঙ্গে মজা করে, রুমা কে বলে,

দিতির শাড়ির স্টকটা এবছর বড্ড কম হয়ে গেছে, তাই না মা? দু একদিন ঘুরে এলেই আবার ঠিক হয়ে যেতো!

তবু দিতি বেরোয় না! অর্ক, ছেলে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পরে এই সময়টুকু ওর নিজের, বেশ আরাম করে গুছিয়ে গল্পের বই নিয়ে বসে কখনো, কখনো বা এক কাপ চা নিয়ে টিভির সামনে জনপ্রিয় কোনো ওয়েব সিরিজ খুলে। গত মাস পাঁচেক ধরে এই যে যা খুশি করার নিজের সময়টুকু ও পেয়েছে, সেটা কে লুটেপুটে নিতে চায় ও!

সামনের শনিবার ছেলের ফার্স্ট টার্মের রেজাল্ট বেরোবে, টিচারের সঙ্গে মিটিং আছে স্কুলে, স্কুল থেকে নোটিশ এসেছে পি টি এম এর, সেটাকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলো ও।

এই বারের আণ্টি কেমন রে? খুব রাগী?

ছেলে কে প্রশ্ন করলো অদিতি, ছেলে তখুনি স্কুল থেকে ফিরেছে, ট্রাই সাইকেলে ঘরের মধ্যে পাক খেতে খেতে উত্তর দিলো,

না তো! একটুও বকে না! শুধু ঋজু কে বকে, ও কোনো কথা শোনে না তাই!

রুমা হেসে ফেললেন,

তাই! তুই খুব শান্ত, তাই না! খুব ভালো ছেলে!

ঠাম্মার ইয়ার্কি বোঝার মতো ক্ষমতা নাতির ছিলো না, গর্বের সঙ্গে বললো,

হ্যাঁ, আণ্টি বলে তো! খাতায় গুড দিয়েছে দেখো!

অদিতি হেসে ফেললো,

রাখ এবার সাইকেল, স্নান করে নে! বেলা হয়েছে অনেক!

মনের মধ্যে অনেক প্ল্যান ভেবে ফেললো, রেজাল্ট নিতে যেতে খুব কুঁড়েমি লাগছে! অর্ক কে যে করেই হোক ম্যানেজ করতে হবে! সন্ধ্যে বেলায় অর্ক বাড়িতে ফিরতেই অদিতি ধরে বসলো,

যাও না প্লিজ! বেশিক্ষন লাগবে না, রেজাল্ট টা নিয়েই কলেজে চলে যাবে!!

অর্ক মাথা নাড়লো,

অসম্ভব! কতক্ষন বসে থাকতে হয়! আমার পরশু প্রথমেই ক্লাস আছে! তুমি যাও না, বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডাও হবে আর টিচার কে তো দেখোই নি এবার, একবার দেখেও এসো কেমন তিনি।

সত্যিই অন্যবার ছেলের ছুটির সময় টিচারের সঙ্গে দেখা হতো, এখন ও আর যায়না বলে ছেলের ক্লাস টিচার কে দেখেই নি অদিতি। তাছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার লোভটাও ও ছাড়তে পারলো না, তাই শনিবার শেষ পর্যন্ত ছেলে কে রুমার কাছে রেখে অর্কর সঙ্গে স্কুলে রওনা হলো ও। ওর ছেলের স্কুলে বাচ্চা কে পি টি এমে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। অর্ক ওকে স্কুলের গেটে নামিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পর ও নিচে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ড কে জিজ্ঞেস করে ছেলের ক্লাসে উঠে এলো তিন তলায়। টিচারের সঙ্গে কথোপকথন হলো, রেজাল্ট দিয়ে বললেন,

একটু অঙ্কের টিচারের সঙ্গে কথা বলে যাবেন যাবার আগে, প্লিজ!

অদিতি মাথা নাড়লো, গার্ড কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো, তিনি দোতলায় বসেন, অন্য একটি ক্লাসের ক্লাস টিচার।

মে আই কাম ইন ম্যাম?

বিনীত গলায় উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকা অন্য একজন গার্জিয়ানের সঙ্গে কথা বলতে থাকা ছেলের অঙ্কের টিচার কে জিজ্ঞেস করলো অদিতি, ভদ্রমহিলা ঘুরে তাকাতেই বসে থাকা গার্ডিয়ান কে দেখেই একদম চমকে গেলো ও, এ তো সেই মহিলা! যিনি পাঁচ বছর আগে ওদের বাড়িতে এসেছিলেন, রিয়ার বাবার বান্ধবী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন!

ইয়েস্! প্লিজ কাম ইন!

ভদ্রমহিলার দিকে আর না তাকিয়েই মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকে এলো অদিতি, সামনে পর পর বেঞ্চে অভিভাবকরা বসে আছেন, সেদিকে তাকাতেই ওর দিকে হাত উঠলো,

এই! এদিকে আয় অদিতি!

নিচু গলায় ডাক শুনে অদিতি দুজন কে এক্সকিউজ মি বলে টপকে এসে বসে পড়লো সীমার পাশে, সীমা ওর রুমে বসে, মেয়ে ওর ছেলের থেকে এক ক্লাস নিচে পড়ে। বসেই একটু নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো,

এই মহিলা কে চিনিস? নাম কি?

সীমা মাথা নাড়লো,

হ্যাঁ, চিনি তো, শর্মিলা কুন্ডু। আমার মেয়ের সঙ্গেই পড়ে ওর মেয়ে।

অদিতি একটু অন্য মনস্ক হলো, মেয়ে আছে বলেছিলো বটে! কিন্তু সেতো পাঁচ বছর আগের কথা! এতদিনে তো এতো ছোট থাকার কথা নয়! ওকে চুপ করে থাকতে দেখে সীমা প্রশ্ন করলো,

কেনো রে? তুই চিনিস নাকি!

অদিতি মাথা হেলাল,

হুঁ, চিনি মানে একবার দেখেছি এইটুকুই! এর বেশি কিছু না!

ভদ্রমহিলা বেরিয়ে গেলেন, সীমা উঠে দাঁড়ালো, এবার ওর টার্ন।

রাতে বাড়িতে এসে অর্ক কে বললো দিতি,

ওই মহিলা যিনি আমাদের বাড়িতে এসে ছিলেন না রিয়ার ব্যাপারে ইনফরমেশন দিতে, তাকে দেখলাম আজ। পি টি এমে এসেছিলো, মেয়ে নাকি সীমার মেয়ের সঙ্গে পড়ে! আচ্ছা! এতো ছোট মেয়ে কি করে হলো বলতো?

অর্ক খাতা দেখছিলো, গলায় বিরক্তি এনে বললো,

তোমার যত ভুল ভাল কথা! আমি ওর মেয়ের বয়স হিসাব করে রেখেছি নাকি! খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোমার! মেয়ে ছোটো না বড়ো তাতে আমাদের কি!

অর্কর বিরক্তি দেখে ওকে আর বিরক্ত না করে রুমার কাছে চলে এলো ও,

কি করে হলো বলতো মা! আমার তো হিসাব মিলছে না!

রুমা একটু ভাবলেন,

হতেও পারে, মেয়ে কতো বড়ো ছিলো, সেতো আর জিজ্ঞেস করিস নি তখন! আবার বিয়ে করে থাকতেও পারে হয়তো!

অদিতির মন মেয়েলি উৎসাহে খচ খচ করতে লাগলো,রুমার কথাই ঠিক! ঠিক আবার বিয়ে করেছেন মহিলা! রিয়ার বাবা কেই নাকি? এই মেয়েটা কি এ পক্ষের! প্রবল উৎসাহে সীমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে শর্মিলা কে খুঁজে বার করলো, কিন্তু প্রোফাইল পিকচার ছাড়া আর কিছু দেখা গেলো না। অগত্যা দ্বারস্থ হলো আবার সীমার

সীমা তোর ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ওই শর্মিলা কুণ্ডুর প্রোফাইল টা একবার দেখতে চাই, প্লিজ কাউকে বলিস না!

কেনো রে? কেস টা কি,? আচ্ছা, সোমবার স্কুলে চলে আয় তাহলে!

আবার অহেতুক ঝামেলায় জড়াতে চাইছো দিতি! কি দরকার এতদিন পরে আর এসব করে!

সোমবার স্কুলে যাওয়ার কথা শুনেই বললো অর্ক, অদিতি ঘাড় নাড়লো,

আরে! ঝামেলায় কেনো জড়াবো! ও কি জানতে পারবে নাকি যে আমি ওর প্রোফাইল দেখছি!

এবার রুমা এগিয়ে এলেন,

যাক না! তোর কি অসুবিধা! সব ব্যাপারেই কি তোকে মতামত দিতে হবে? এতে তো কারো ক্ষতি হচ্ছে না! ওতো বাড়ি থেকে বেরোনো ছেড়েই দিয়েছে, এই সুযোগে তাও একটু বেরোনো তো হবে!

যা খুশি করো! পরে কোনো গন্ডগোল হলে আমাকে বলতে এসো না!

ধৈর্য্য ধরছিলো না আর, সোমবার ছেলের সঙ্গেই পুল কারে ম্যানেজ করে উঠে বসলো দিতি। সীমার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে প্রোফাইলটা খুলে দেখতে লাগলো, পর পর ফটো একসঙ্গে চার জনের,দুই মেয়ে আর হাসব্যান্ড। সঙ্গের বয়স্ক ভদ্রলোক কে হাসব্যান্ড এবং একজন কে তারই মেয়ের বন্ধু বলে আইডেন্টিফাই করলো সীমা। এবার মেয়ে ছোটো হবার রহস্য টা পরিষ্কার হলো দিতি র কাছে। বড়ো মেয়েটি তারমানে আগের পক্ষের! তবে কি শেষ পর্যন্ত বিয়েই করেছেন মহিলা রিয়ার বাবা কে! ইনি কি রিয়ার বাবাই!

আচ্ছা, মহিলা ম্যারেড তুই জানিস শিওর?

সীমা ঘাড় নাড়লো,

শিওর কি করে হবো! আমি কি দেখেছি নাকি ওর বর কে কখনো! ছবি দেখে তো তাই মনে হয়। আসলে আমার সঙ্গে খুব বেশি কথা নেই, ওই মিউচুয়াল ফ্রেন্ড অনেক, তাই রিকোয়েস্ট দেখে অ্যাড করেছিলাম।

কার কথা বলছিস?

পাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো প্রিয়াঙ্কা, ওর ছেলেও সীমার মেয়ের সঙ্গে পড়ে। সীমার মুখে শর্মিলার নাম শুনেই মুচকি হাসলো ও,

আরে, হ্যাঁ! ওটা ওর বরই! বেশ বয়সের ডিফারেন্স আছে দুজনের, মাঝে মাঝে মেয়ে কে ড্রপ করতে আসে স্কুলে।

দুজনের কথা শুনতে শুনতেই প্রোফাইলটা স্ক্রল করতে করতে প্রায় এক বছর পুরোনো একটা অ্যালবামের নিচে এসে থমকে গেলো অদিতি, এটা সঙ্গে কে! তিয়াসা না! যদিও বিয়ের সাজে তিয়াসা কে একদম অন্য রকম লাগছে, তবু আইডেন্টিফাই করতে কোনো অসুবিধা নেই! যদিও কিছুটা অদ্ভুত ব্যাপার, তিয়াসা কে ট্যাগ করা নেই! ওর কি প্রোফাইল নেই তাহলে! অ্যালবামের ক্যাপশন, ” বোন ঝির বিয়ে”।

#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ২১(শেষ অংশ)
প্রোফাইলে দেখা ছবিটা যেনো এক মুহূর্তে চোখের সামনে থেকে একটা পর্দা সরিয়ে দিলো অদিতির, পাঁচ বছর আগের স্মৃতিগুলো জীবন্ত হয়ে উঠলো নতুন করে। নিজেকে এই মুহূর্তে একদম বোকা লাগছে! একটা ছবি! শুধু মাত্র একটা ছবি ওর জানা গল্পটা সম্পূর্ন পাল্টে দিলো!

প্রোফাইল কি আদৌ নেই তিয়াসার! নাকি ওর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক যাতে কেউ না বুঝতে পারে তার জন্যেই ইচ্ছা করেই ওকে ট্যাগ করেন নি মহিলা! রিয়া নিশ্চয়ই তিয়াসার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই! কিন্তু এমন কেউ কেউ তো নিশ্চয়ই আছে, যারা দুজনেরই বন্ধু, অনির্বাণ, কৌশিক, শ্রেয়া বা দীপ! তাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার জন্যেই কি এই ব্যবস্থা! কিন্তু কেনো! এতো গোপনীয়তার কারণ কি! তাহলে কি রিয়া তিয়াসার সঙ্গে ওই মহিলার সম্পর্কের কথা জানতোই না কখনো! কেউই কি আদৌ জানতো! অনির্বাণ তো অর্ক কে বলেছিলো তিয়াসা চেনে না ওনাকে, তিয়াসা নিজেও তো তাই বলেছিলো অর্ক কে!

ক্রমশ একটা অস্পষ্ট ছবি যেনো স্পষ্ট হয়ে উঠছিলো অদিতির কাছে! কেনো এতো উৎসাহী হয়ে সাহায্য করতে এসেছিলেন মহিলা ওদের!! তিয়াসার উৎসাহই বা কেনো এতো বেশি ছিলো! যদি ওই মহিলা কে ও চিনতো, তাহলে সেটা স্বীকার করতে বাধা কোথায় ছিলো!! তাহলে কি সবটাই কোনো গভীর চক্রান্ত! সেখানে ওকে জড়িয়ে দেওয়ার কারণ কি! ও কি শুধুমাত্রই সেই চক্রান্তের অংশ, ওর ঘাড়ে বন্দুক রেখেই কি কেউ নিজের উদ্দ্যেশ্য চরিতার্থ করতে চেষ্টা করেছিলো!

ঘটনাগুলো পরপর ভাবতে ভাবতেই ছবিটা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠলো কিছুক্ষনের মধ্যেই, কয়েক মিনিট থম মেরে বসে থেকে প্ল্যান ছকে ফেললো অদিতি, মহিলা কে ও ছাড়বে না, ওকে ধরতেই হবে!

চট করে ছবিগুলোর স্ক্রীন শট নিয়ে সীমার মোবাইল থেকে নিজের মোবাইলে সেন্ড করে নিলো অদিতি,

স্ক্রিন শট নিচ্ছিস! করবি টা কি বলতো!

সীমা আর প্রিয়াঙ্কা একসঙ্গে প্রশ্ন করলো অদিতি কে, অদিতি মাথা নাড়লো,

বলবো, বলবো! আগে কথা বলি ওর সাথে দাঁড়া! মেয়ে কিসে যায় রে?

ছুটির সময় আসে তো নিতে, ওখানেই কথা বলে নে না!

ওর ছেলের যেহেতু সীমার মেয়ের অনেকটা আগে স্কুল শুরু হয় তাই শেষও হয় ওদের আগেই। ছেলে কে স্কুল থেকে নিয়ে পুল কারে তুলে দিয়ে রুমা কে ফোন করে দিলো অদিতি, ওর যেতে কিছুটা দেরি হবে জানিয়ে দিলো। ক্রমশ ওদের ক্লাসের ছুটির সময় এগিয়ে আসছিলো, অভিভাবকরা গেটে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন এক এক করে, ছুটির কিছুটা আগেই উঠে পড়লো অদিতি, সীমা আর প্রিয়াঙ্কা নিজেদের সেকশনের গার্ডিয়ান দের দিকে এগিয়ে যেতে স্কুলের গেট থেকে একটু দুরত্ব রেখে দাঁড়ালো ও।

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মহিলা একটা গাড়ি থেকে নেমে গেটের দিকে এগিয়ে এলেন, ড্রাইভার ওনাকে নামিয়ে দিয়ে সম্ভবত পার্কিং খুঁজতে গেলো। অদিতি ধীরে ধীরে গিয়ে মহিলার সামনে দাঁড়ালো,

চিনতে পারছেন? আমি অদিতি, প্রফেসর অর্ক মিত্র র ওয়াইফ, বছর পাঁচেক আগে আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন আপনি! রিয়ার ফোনের কল রেকর্ডিং দিতে! রিয়ার বাবার বান্ধবী তো আপনি?

ভদ্রমহিলা সানগ্লাসের ভেতর দিয়ে তাকালেন,

সরি! আপনি কিছু ভুল করছেন! আমি রিয়া নামে কাউকে চিনি না!

অদিতি হাসলো, মোবাইলটা বার করে স্ক্রিন শট গুলো দেখিয়ে বললো,

আচ্ছা! আমারই ভুল হচ্ছে তাহলে! একে চেনেন তো? তিয়াসা, আপনার বোন ঝি, তাই তো?

অদিতি লক্ষ্য করলো মহিলার হাত কাঁপছে এবার!

কি জন্যে দেখাচ্ছেন এসব আমাকে! আমার বাচ্চার ছুটি হয়ে যাবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে,

মহিলা কে এগোতে দেখেই দিতি সামনে এগিয়ে গেলো,

ঠিক আছে! বাচ্চা কে নিয়ে আসুন তাহলে, আমি এখানেই ওয়েট করছি। তবে বাচ্চার সামনে এসব কথা হোক আপনি চাইবেন না নিশ্চয়ই!! পাঁচ বছর আগের ভিডিও টা ড্রাইভে রাখা আছে! রিয়ার ক্ষতি করতে চাইছিলেন আমাদের ফ্ল্যাটের লোভ দেখিয়ে, সেটা জানলে আপনার হাজব্যান্ডের সঙ্গেও তো প্রবলেম হবে আপনার! সেটা যদি বাদও দি তাহলেও পুলিশ আপনাকে ছাড়বে তো!!

কি চান এতদিন পরে?

তিয়াসার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিন, আপনার পরামর্শেই সব কিছু করেছিলো নিশ্চয়ই, সেগুলো ওর মুখ থেকে শুনতে চাই!

কয়েক মিনিট চুপ করে থাকার পরে মহিলা কথা বললেন,

আপনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন! পাঁচ বছর আগের ভিডিও নিয়ে গেলে পুলিশ আপনাকেও ছাড়বে না! আপনি এতদিন কেনো চুপ করে ছিলেন সেটাও জানতে চাইবে!

অদিতি হাসলো,

আপনি বেশ গুছিয়ে কথা বলেন, এটা আগেও আমি লক্ষ্য করেছিলাম। কিন্তু এর উত্তরে আমারও কিছু বক্তব্য থাকবে, আমি পুলিশ কে বলবো যে আমরা তখন জানতাম না যে তিয়াসা আপনার বোন ঝি, তাই এটা শুধু মাত্র রিয়ার ওপরে তাৎক্ষণিক রাগে আপনি আমাদের কাছে চলে এসেছেন ভেবে অতোটা গুরুত্ব না দিয়েই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন সত্যি টা জানতে পেরেছি, এটাও বুঝতে পেরেছি যে পুরোটাই প্রি প্ল্যান্ড! ঘটনার সূত্রপাত আরো আগে, আপনার পরামর্শেই আপনার বোন ঝি রিয়া কে ফাঁসানোর জন্যে অনির্বাণের বাড়ি থেকে আমাকে ফোন করেছিলো!

এটা আপনি প্রমাণ করতে পারবেন?

অদিতি মুচকি হাসলো,

আপনি সত্যি খুব শক্ত মনের, তবে এটা ঠিক বলেছেন এই কথাটা আমি কিছুতেই প্রমাণ করতে পারবো না! তবে এর জন্যে আমিও একটা খুব ভালো প্ল্যান করে রেখেছি। আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবো, যে তিয়াসা আপনার বোন ঝি এটা জানার পরে এখন আমরা বুঝতে পেরেছি যে তখন আপনাদের দুজনের জন্যেই রিয়া সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিলো। এটা সুইসাইড করা নয়, সুইসাইড করতে প্রভোক করা! ডাক্তার, কৌশিক, প্রেসক্রিপশন, প্রেসক্রিপশনে লেখা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের বক্তব্য সব জোগাড় করে দেবো। এই সুযোগ রিয়াও নিশ্চয়ই ছাড়বে না! তারপরে অনির্বাণ কেও খুঁজে আনবো যে সাক্ষী দেবে আপনার বোন ঝি কালীঘাট মেট্রোর সামনে আপনার পাশে দাঁড়িয়েও আপনাকে চেনে না বলেছিলো। তিয়াসা আপনাকে কেনো চেনে না বলেছিলো সেটা অন্তত পুলিশ তদন্ত করে দেখুক, এটুকুই আমরা চাই। এবার দেখুন, পুলিশে এই কথা জানানো মানেই তো আপনার বোন ঝি কে ডেকে পাঠাবে পুলিশ, ওর তো নতুন বিয়ে হয়েছে দেখলাম, শ্বশুরবাড়িতে কোনো সমস্যা হলে আমাকে কিন্তু দোষ দেবেন না তখন! ও আর আপনার হাজব্যান্ডও যদি জেনে যান, তখন বলবেন না, আমি আপনাকে সাবধান হওয়ার সুযোগ দিই নি! এবার আবার আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন না যে আমি ওদের কি করে খুঁজে বার করবো! যেভাবে আপনাকে বার করলাম সেভাবেই, আর তাও না হলে আপনার হাসব্যান্ড তো আছেনই, রিয়ার খবর রাখেন নিশ্চয়ই তিনি, শুনলাম মাঝে মাঝেই বাচ্চা কে ড্রপ করতে আসেন স্কুলে!

অবশেষে মোবাইল বার করলেন মহিলা, দিতি নিজের ফোন টা এগিয়ে ধরলো,

এটা থেকে করুন,

নিজের মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট দেখে দিতি র ফোন থেকে ডায়াল করলেন মহিলা, রিং বাজার সঙ্গে সঙ্গে ফোন মহিলার হাত থেকে নিয়ে পাশে সরে এলো দিতি, তিয়াসার গলা শোনা গেলো,

হ্যালো, কে বলছেন?

সঙ্গে সঙ্গেই রেকর্ড বাটনে হাত রাখলো দিতি,

আমি অদিতি তিয়াসা, অর্ক স্যারের ওয়াইফ, তোমার মাসীর কাছ থেকে নম্বরটা নিলাম।

কয়েক সেকেন্ডের নীরবতার পরে তিয়াসার গলা শোনা গেলো,

কোন মাসি?

অদিতি হাসলো,

কেনো? তোমার বান্ধবী রিয়ার বাবার গার্লফ্রেন্ড! ও সরি! এখন তো বোধ হয় মেসোমশাই, তাই না! যার জন্যে তুমি এতো কিছু করলে! এমনকি রিয়া কে ফাঁসাবার জন্যে অনির্বাণের বাড়ি থেকে আমাকে ফোনও করে ফেললে!

আমার কোনো মাসি নেই! কিসব বলছেন এগুলো ম্যাম?

বিরক্তির গলায় বললো তিয়াসা, অদিতি চোয়াল শক্ত করলো,

তাই! কতোগুলো ফটো দেখিয়েছি তোমার মাসি কে, তোমারই বিয়ের সময়ের তোলা! মাসী কে বলো, সময় মতো তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করে দেবে! আর শোন মিথ্যে বলে আর কিছু লাভ নেই, তোমার মাসীর একটা ভিডিও রেকর্ডিং আছে আমার কাছে, সেটা তোমাকেও বিপদে ফেলতে পারে! ওটার ভয়েই তোমার মাসি আমাকে তোমার নম্বর দিলো, দরকার হলে তুমিই যে মাসীর পরামর্শে আমাকে ফোন করেছিলে, সেটাও বলবে এবার। আর তারপরেও সাক্ষীর দরকার হলে অনির্বাণ তো আছেই! দরকার হলে যে করেই হোক খুঁজে নেব ওকে! যার সামনেই ফোনে তুমি তোমার মাসি কে চেনো না বলেছিলে সেদিন স্যার কে রিয়ার হসপিটাল থেকে! আর তোমার বিয়ের ছবিতে দেখলাম অনির্বাণের সঙ্গে তোমার বিয়ে হয় নি, তাই এখন আর ও তোমার কথায় ওঠাবসা করবে না নিশ্চয়ই!

ম্যাম, প্লিজ! এসব করবেন না! আমার নতুন বিয়ে হয়েছে, হাসব্যান্ড জানলে সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে ম্যাম!! আমার ভুল হয়ে গিয়েছে ম্যাম, আমি ক্ষমা চাইছি!

আমার সম্পর্কটা যে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ভেবেছিলে একবারও? একটা মেয়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আমার সংসার নষ্ট করতে চেয়েছিলে যখন, তখন তো ভাবো নি এসব! আমি কোনো কথা তোমাকে দিতে পারছি না তিয়াসা, আর হ্যাঁ, এই কল টা আমি রেকর্ড করেছি, যেখানে নিজে মুখে তুমি অপরাধ স্বীকার করেছ। এটা আমার কাছে থাকলো, ঠিক তোমার মাসীর ওই ভিডিওটার মতন, কখন যে কি করতে ইচ্ছে হবে আমি নিজেই জানি না! হয়ত কোনোদিন তোমার মাসি র মত আমি তোমার হাজব্যান্ড কেও খুঁজে বার করে ফেললাম!

ম্যাম, প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দিন! আমি কথা দিচ্ছি আর কোনোদিনও হবে না!

হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো তিয়াসা,

ভালো কথা, মনে রেখো সেটা! তবে আমি তোমাকে কোনো কথা কিন্তু দিতে পারলাম না, তিয়াসার কান্নার মধ্যেই ফোনটা কেটে দিলো দিতি।

এবার মহিলার দিকে তাকালো অদিতি,

কি সুন্দর প্ল্যান ছিলো তাই না! একবার ফোন করে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে পারলেই যে আমি ফোনের পেছনের ব্যক্তিটি কে খুঁজে বেড়াবো, সেটা তো জানতেনই! তার সঙ্গে রিয়ার আমার হাজবেন্ডের প্রতি মনোভাবও অজানা ছিল না নিশ্চয়ই আপনার বোন ঝির কল্যাণে। রিয়াও তো বলেছিলো ওকে ওর বন্ধুরা স্যারের স্পেশাল স্টুডেন্ট ভাবে, ও চাইলেই স্যার নোটস দেন! সুতরাং ওর ছোটো ছোট মিথ্যে গুলো কে কিভাবে এই ফোনের সঙ্গে রিলেট করা যায় তার জন্যে যথেষ্টই চেষ্টা চালিয়েছেন! কফির কথা, গয়নার কথা, সবই তো এক এক করে বোন ঝি কে দিয়ে আমার হাজবেন্ডের কানে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু তাও আমরা কোনো কিছু প্রুভ করতে পারলাম না! উল্টে রিয়া সুইসাইড করার চেষ্টা করায় আমরা এটা নিয়ে আর এগোতে চাইবো না সেটা বুঝতে পেরে অবশেষে নিজের কলের রেকর্ড নিয়ে আমাদের হেল্প করতে চলে এলেন। অ্যাড্রেস টা নিশ্চয়ই বোন ঝিই দিয়েছিলো আপনাকে!

কৌশিক, ওই ছেলেটি কিছুটা সিম্পথেটিক রিয়ার প্রতি সেটা বুঝে ওকেও আমাদের বাড়ি ডেকে নিয়ে এলো আপনার বোন ঝি, ওদের বাড়ি কেমন, ও কতটা মিথ্যে কথা বলে সেটা কৌশিকের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্যে। এমনকি রিয়ার বাড়ির ঠিকানাও অনির্বাণ কে দিয়ে কৌশিকের কাছে বলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যাতে ও নিজে গিয়ে দেখে আসে রিয়া কেমন জায়গায় থাকে, এবং কতো টা মিথ্যে বলে! যাতে ওর সঙ্গেও রিয়ার সম্পর্কটা খারাপ হয়ে যায়। রিয়া ফোন করেছে আমাকে এটা প্রুভ করার জন্যে তো অনির্বাণ কে দিয়ে ওর বোন ফোন করতে দেখেছে বলে তো মিথ্যে বলিয়েও নিয়েছে আপনার বোন ঝি! কৌশিক সেদিন হসপিটালে আমার হাসব্যান্ড কে বলেছিলো আমি যে সন্দেহ বাতিক, সেই কথাটা রিয়া শুধু মাত্র ওকেই বলেছিলো, আর কাউকে নয়, এখন বুঝতে পারছি এক্সকার্শন থেকে ফেরার সময় ট্রেনে বা কলেজে কোনো সময় এই কথোপকথন কোনো ভাবে তিয়াসা শুনে ফেলেছিলো। ও জানতোই এই রটনা টা ছড়িয়ে গেলে আমাদের সন্দেহ রিয়ার ওপরেই যাবে, কারণ নদীর ধারে বেঞ্চে বসে আমার হাসব্যান্ড আমার সঙ্গে কি কথা বলেছে সেটা শুধুমাত্রই পাশে বসে থাকা ব্যক্তি অর্থাৎ রিয়াই শুনতে পারে! মেয়েটা কে বাঁচতে দিতে চান নি, তাই না? চেয়েছিলেন মেয়েটা সত্যিই মরে যাক! আমার হাসব্যান্ড তখন আপনাদের একসাথে রাসবিহারী তে দেখেও কিচ্ছু বোঝে নি সেদিন! ভেবেছিলো আমাদের মতই ওকে কোনো টোপ দেবার জন্যে ডেকেছেন আপনি!! কি মানসিকতা আপনাদের! নিজেদের শিক্ষিত বলে জাহির করেন! কি শিক্ষা দেবেন সন্তান কে? রিয়া কে মেয়ের মতো ভাবেন বলেছিলেন না তখন? কোনো মা এই কাজটা করতে পারে! আর হ্যাঁ, আপনার বোন ঝি কে যা বলেছি, তা আপনাকেও বললাম, কোনোদিন আপনার হাসব্যান্ড এর নম্বর খুঁজে নিয়ে ভিডিওটা সেন্ড করে দিলে কিছু মনে করবেন না যেনো!

অনেক চেষ্টার পর ওই মা, মেয়েকে আমার স্বামীর জীবন থেকে সরিয়ে অবশেষে শান্তিতে জীবনটা শুরু করেছি, আপনি এরকম কিছু করলে আমার সব কিছু নষ্ট হয়ে যাবে!

কথা বলতে বলতে কান্নায় বুজে এলো মহিলার গলা, দিতি হাত তুলে থামিয়ে দিলো,

যে অন্যের জীবন নষ্ট করে নিজের জীবন সাজাতে চায়, তার ওপরে আমার বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই! আর ওনার স্ত্রীর সঙ্গে হয়ত ওনার সম্পর্ক ভালো ছিলো না, কিন্তু কোনো সন্তান কে তার বাবার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া কে আমি একটুও সমর্থন করিনা!

কথাগুলো বলেই অটো স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে লাগলো অদিতি, ছুটি হতে শুরু করেছিলো ততক্ষনে, পেছন থেকে প্রিয়াঙ্কা ডাকলো,

আরে, শর্মিলার সঙ্গে কি এতো কথা বললি! ঝেড়ে কাস না একটু!

অদিতি হাসলো,

ছড়ানো গল্প ভাই, সময় নিয়ে বলতে হবে! রাতে কল করছি,

ওকে! কনফারেন্সে নিস! সীমাও জানতে চাইছিলো!

ও যখন মেট্রো থেকে নামলো, তখন অর্ক ও নামছে, স্টেশনেই দেখা হয়ে গেলো দুজনের, অর্ক জানতে চাইলো,

হলো কিছু?

অনেক কিছু! কিন্তু সবাই কে আলাদা আলাদা করে বারবার বলতে পারবো না, বাড়ি চলো, একসাথে বলছি!

সমরেশের ঘরে গিয়ে বসলো সবাই, তিনি উঠে আসতে পারেন না তাই এই ব্যবস্থা!

সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করে বলার পরে রুমা মাথায় হাত দিলেন,

ইস! কি বাজে মহিলা! এরকমও করে কেউ কেউ! ভাবতেই পারছিনা।

হ্যাঁ, মা, কতো ধরনের মানুষ হয় বলতো! তিয়াসা আসলে জানতো রিয়া যেহেতু নিজেই নিজেকে অর্কর স্পেশাল স্টুডেন্ট প্রুভ করার চেষ্টা করে সব সময়, আর সেটা করতে গিয়েই বেশ কিছু কাজ সত্যিই করেছে, তাই সব দোষ যে ওর ওপরেই পড়বে সেটা সবাই জানে। এখন আমি সবটা পরিষ্কার বুঝতে পারছি! অনির্বাণের বাড়ি থেকে আমাকে ফোন করে এসেই ও ফোনটা কে সাইলেন্ট করে গ্যাসের ওভেনের তলায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো, যাতে আমি আর ওর সঙ্গে কন্টাক্ট করতে না পারি, এবং আরো বেশি টেনশন করি। তবে একটা কথা এখন আমি বুঝতে পারছি যদি তিয়াসা সেদিন ফোনে আমার মনের মধ্যে সন্দেহ টা ঢুকিয়ে না দিতো, তাহলে হয়তো রিয়ার এই ছোটখাটো মিথ্যেগুলো কে আমি ইগনোরই করতাম! সামান্য পাশে বসে জোরে কথা বলা বা গয়না ও পছন্দ করেছে, ও কফি করেছে অনেকবার, এই রকম মিথ্যে গুলো এতটা বড় হয়ে দাঁড়াতো না! ওর ছোটো ছোটো মিথ্যেগুলো তে ইন্ধনের কাজ কিন্তু ওই ফোনটাই করেছিলো আসলে!

যখন আমি ওকে রাসবিহারী তে ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখেছিলাম তখন এটা একটুও বুঝতে পারিনি। আমি বরং ভেবেছিলাম রিয়া কে ফাঁসাতে ওর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তিয়াসা! একবারের জন্যেও বুঝতে দেয়নি ওর মাসি! কি সাংঘাতিক মেয়ে! এতদিনে রিয়ার ওপরে ওর রাগের কারণটা স্পষ্ট হলো, রিয়া বোধহয় জানতোও না যে এই মহিলা তিয়াসার মাসি! কিন্তু আর এখন এসব ভেবে লাভ কি! মেয়েটা কে যতই ভয় দেখাও ক্ষতি তো করতে পারবে না তুমি, সেটা তুমি নিজেই জানো। ওর বিয়ে ভেঙে দিতে যে আমরা পারবো না সেটা কি আমরা জানি না!

অদিতি হাসলো,

মেয়েটা কে সত্যি কিছু করতে পারবো না! ওর ক্ষতি করা যে সত্যিই সম্ভব নয় আমার পক্ষে সেটা আমি জানি। কিন্তু কিছু করতে পারি যে কোনো সময়, হয়ত ওর হাজব্যান্ড কেও জানিয়ে দিতে পারি, এই যে ভয় টা দেখিয়ে এসেছি না, এটাই ওকে তাড়িয়ে বেড়াবে সব সময়, আর জীবনে শান্তি তে থাকতে পারবে না ও। তবে ওই মহিলা কে আমি ছাড়বো না! এমনিতেও ওর বরের কাছে ভিডিও পাঠিয়ে দেবো বলে ওকে হুমকি দিয়েই এসেছি! তাছাড়াও ওর জন্যে আমার অন্য দাওয়াই আছে। এই দাওয়াই এর জ্বালা যে কি সেটা আমি নিজে জানি!!

কি করবি তুই?

রুমা অবাক গলায় প্রশ্ন করলেন,

সব কীর্তি গুলো ছড়িয়ে দেবো! সব মায়েরা জেনে যাবে এবার! স্কুলের সামনে গিয়ে লজ্জায় দাঁড়াতে পারবে না আর! যখন আমার সন্দেহবাতিক হওয়ার কথা ছড়িয়ে গিয়েছিলো কলেজে, তখন কি হয়েছিলো আমার, সে আমিই জানি শুধু! ঠিক ওই রকমই করবো ওর সঙ্গে, একসঙ্গে এতগুলো সম্পর্ক নষ্ট করা, একটা বাচ্চা মেয়েকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি কি হতে পারে সেটা এবার বুঝবে ও!

ফোন হাতে তুলে নিয়ে ডায়াল করে ফেললো দিতি,

প্রিয়াঙ্কা, আছিস তো? হোল্ড কর, সীমাকেও নিয়ে নিই একটু!! আরে, ওই যে তোদের ওই শর্মিলা, আর ওর ঐ বোন ঝি টা, যার স্ক্রিন শট নিলাম সকালে, আমার বরের এক কলিগের বউ কে ওই মহিলার বরের আগের পক্ষের মেয়ে কে ফাঁসানোর জন্যে……

কথা শেষ হওয়ার পরে ফোন রেখে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো অর্ক অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,

কি বললে? কলিগের বউ! মানে!

তো? আমার বর বলবো? তারপর আমিই নিজেই তো আর দাঁড়াতে পারবো না কোনোদিনও স্কুলের গেটে! যা কথা ছড়ায় এখানে, কালকের মধ্যেই সব ছড়িয়ে যাবে দেখো!

কোনো কোনো গল্প শেষ হয়েও হয়না বোধ হয়! এরও বছর তিনেক পরের কথা, গরমের ছুটিতে সিকিম থেকে বেড়িয়ে এসে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিং মেলে ফেরার রিজার্ভেশন ছিলো অর্ক, অদিতির এবং রুমার। সমরেশ তার আগের বছর মারা গেছেন, তাই অনেকটা রুমার মন ভালো করার জন্যেই আসা। তখনও প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দেয়নি, লাগেজ নিয়ে সামনের একটা বেঞ্চে বসেছিল ওরা।

এমন সময় বেশ অনেক মালপত্র নিয়ে একটা ফ্যামিলি ওদের দিকে পেছন করে এসে দাঁড়ালো, দুজন বয়স্কা মহিলা, সম্ভবত বিধবা আর দুজন অল্পবয়সী স্বামী, স্ত্রী, সঙ্গে একটি ছোটো মাস সাতেকের বাচ্চা। শিশু টি ঘ্যান ঘ্যাণ করছিলো, বোধহয় খিদে পেয়েছে, তার মা এবং বাবা তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কোলে নিয়ে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।

প্ল্যাটফর্মে বসার আর খুব বেশি জায়গা নেই, ততোক্ষনে বাচ্চা টির ঠাকুমা বা দিদিমা যেই হন না কেনো, কৌটো খুলে দুধ বানিয়ে বোতলে ভরে ফেলেছেন, কোথায় বসে খাওয়াবেন তার জায়গা পাচ্ছেন না। ওনাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে অর্ক উঠে দাঁড়ালো, ভদ্রমহিলার দিকে ইশারা করে বললো,

এখানে বসুন!

জায়গা পেয়ে বোতল নিয়ে বসে ওদের কে ডাক দিলেন ভদ্রমহিলা, যুবক টি শিশু কোলে এগিয়ে এলো, অর্ক আর অদিতি এক সঙ্গে চমকে উঠলো, কৌশিক! ততোক্ষনে কৌশিকও অর্ক কে দেখে ফেলেছে,

স্যার! আপনি! বেড়াতে গিয়েছিলেন নিশ্চয়ই!

এরপরেই অন্য বয়স্ক মহিলা এগিয়ে এলেন,

ইস! আমি তো চিনতেই পারিনি! অনেকটা বদলে গেছেন স্যার! চেনাই যাচ্ছে না আপনাকে!

রিয়ার মা! অর্ক অবাক হলো! তার মানে মেয়েটি নিশ্চয়ই রিয়া! অদিতি একটু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, ও আগে মহিলা কে দেখেনি কখনো।

ভদ্রমহিলা প্রচুর কথা বলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যেই রিয়ার বিয়ে থেকে নিজের ডিভোর্স, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের শাশুড়ি, শ্বশুর মশাইয়ের মারা যাওয়া, নিজের মেয়ের কাছে থাকা সব গল্পই করে ফেললেন! কৌশিক অর্কর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করতে থাকলো, একমাত্র রিয়া কোনো কথা না বলে পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। ইতিমধ্যে ট্রেন দিয়ে দিয়েছিলো, ওদের কোচ আরও দুটো পরে, কৌশিক শাশুড়ি আর মা কে ডেকে নিয়ে কিছু লাগেজ হাতে এগিয়ে গেলো, বাকি লাগেজের সামনে রিয়া ছেলে কোলে দাঁড়িয়ে রইলো।

অর্কও ততোক্ষনে রুমা, আর ছেলে কে নিয়ে অদিতি কে বাকি লাগেজ দেখে রাখার কথা বলে ট্রেনে উঠে গেছে। এমন সময় রিয়া একদম অদিতির পাশে সরে এলো, খুব নিচু গলায় বললো,

ম্যাম! আমি ক্ষমা চাইছি! জানি অনেক ভুল করেছি, কিন্তু সব জেনেও আপনারা কৌশিক কে কিছু জানান নি, তার জন্যে থ্যাংকস ম্যাম! তবে একটা কথা এখনও বলছি, আমি আপনাকে কখনো কোনো ফোন করিনি ম্যাম! প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না! আর স্যার কে বলবেন উনি সত্যিই খুব ভালো মানুষ, সব জানার পরেও আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন, আমি ওনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো!

অদিতি হাসলো, রিয়ার হাতে চাপ দিয়ে বললো,

আমি জানি সেটা এখন! যা হয়েছে সেসব আমি বা তোমার স্যার কেউই মনে রাখি নি, তুমিও ভুলে যাও! কৌশিক খুব ভালো ছেলে, তোমরা দুজনে খুব ভালো থাকবে নিশ্চয়ই! আসি, আবার কখনো দেখা হবে নিশ্চয়ই, ভালো থেকো!

সমাপ্ত