Sunday, July 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1033



তুই শুধু আমার পর্ব-৩৬+৩৭

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 36+37

চৌধুরী ম্যানশনে সবাই ড্রইংরুমে থমকে আছে। আরসাল যেনো কিছুতেই ব্যাপার টাহ মেনে নিতে পারছে নাহ। সবাই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দুইজন ব্যাক্তির দিকে। আর তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে আশফি এবং নেহা। নেহার পরনে লাল বেনারসি, গহনা, এক কথায় বধু বেশে দাঁড়িয়ে আছে নেহা। এইটা দেখে কারোর আর বুঝতে বাকি নেই যে আশফি আর নেহা বিয়ে করেছে। কেউ কিছু বলছে নাহ শুধু তাকিয়ে দেখছে আশফি আর নেহাকে। কিছু সময় পরে আরসাল আশফির সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” কি করলি এইটা? এইটা করার আগে কি একাবারও মনে হলো নাহ, বাসায় কাউকে অন্তত কথাটাহ বলা উচিত ছিলো?”

আশফি কিছুই বলে নাহ। কবির চৌধুরী আশফিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কবির দাড়া! আশফি, তোর যদি নেহা কে পছন্দ হয়ে থাকে তুই আমাদের বলতে পারতি। তাহ নাহ করে এরকম ভাবে বিয়ে করে আসার মানে কি?”

আশফি তাও চুপ করে থাকে। আশফিকে চুপ থাকতে দেখে জিহাদ চৌধুরী আবার বলে ওঠে,
–” আশফি আমি তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি।”

আশফি তখনও চুপ করে আছে দেখে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আচ্ছা! বলছি যে, যে কারনেই হোক আশফি নেহাকে বিয়ে করে এনেছে। মানে নেহা এই বাড়ির বউ। আর বাড়ির নতুন বউকে এভাবে রাখাটা চৌধুরী বাড়ির নিয়ম নাহ। আর তাছাড়া আজ নাহোক কাল তোহ আমাদের আশফিকে বিয়ে দিতেই হতো। আশফি যখন পছন্দ করে বিয়ে করেই ফেলেছে আমরা নাহ হয় বড় করে অনুষ্ঠান করে দিবো। আরসাল সেহেরের বিয়ের জন্য একটা অনুষ্ঠান করবো ভাবছিলাম। এইবার তাহলে একসাথেই অনুষ্ঠান করা হবে, আরও বড় করে। মেঝো, যাহ বউমা কে ঘরে তোল।”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে কেয়া চৌধুরী মাথা ঝাকিয়ে আশফি এবং নেহার সামনে এসে দাড়ায়। কেয়া চৌধুরী নিজের গলা থেকে চেইন খুলে নেহা কে পরিয়ে দেয়। আরসালের যেনো এইসব সহ্য হচ্ছিল নাহ, কারন কেউ নাহ জানলেও আরসাল তোহ জানে কি হতে পারে। আরসাল আর কারো দিকে নাহ তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। নেহা আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দেয়।

★★★
আরসাল নিজের রুমে পায়চারি করছে। আরসালের খুব অস্থির অস্থির লাগছে। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এই নেহার উদ্দেশ্য কি? আশফি কি করলি তুই এইটা? কি করতে চাইছে নেহা? উফ!”

চুল মুঠি ধরে বিছানায় বসে পড়ে আরসাল। সেহের কি মনে করে আরসালের রুমে আসতেই আরসাল কে এমব অবস্থায় দেখে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তুমি ঠিক আছো?”

আরসাল মাথা তুলে সেহেরকে দেখে দাড়িয়ে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের তোকে আমার কিছু বলার আছে। প্লিজ নাহ করিস নাহ। একটু সময় দে আমাকে।”

–” কি হয়েছে?”
আরসাল নেহার সব কথা সেহেরকে বলে, কিভাবে নেহা সেহেরের ফটো দিয়ে আরসাল কে ব্লাকমেইল করেছিলো, কেনো আরসাল সেহেরকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানিয়েছিল, আরসাল নেহার সব কিছু হ্যাক করে সেহেরের ফটো গুলো ডিলিট করে সব বলে দেয়। সেহের যেনো হতভম্ব হয়ে গেছে আরসালের কথা শুনে। সেহেরের লজ্জা লাগছে এইসব কথা শুনে। কিভাবে একটা মেয়ে হয়ে আর একটা মেয়ের ফটো নিয়ে এইসব করতে পারে ভেবেই পায় নাহ সেহের। আবার বিনা কারনে আরসালকে দোষী ভেবেছে সেহের, এইটা ভাবলেও সেহেরের কান্না পাচ্ছে। আবার আশফির কথা মনে আসলেও সেহেরের খুব কষ্ট হচ্ছে, ভাইটাহ যে নাহ যেনেই আগুনে ঝাপ দিয়েছে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! কি হবে এখন?”

–” জানি নাহ। কিচ্ছু জানি নাহ আমি। আশফি এমন একটা কাজ করে ফেলবে কখনো ভাবি নি আমি। নাহ জানি, নেহা মাথায় কি পাকিয়ে এসেছে। ও অনেক নিচে নামতে পারে। আমি তোহ ভেবেছিলাম চলে গেছে আর আসবে নাহ। কিন্তু ও যে এই ভাবে ফিরে আসবে কখনো ভাবি নি।”

–” আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে নাহ। কি হলো এইটা? খুব ভয় করছে আমার।”

★★★
নেহা আশফির রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে। কোনো সাজ নেই রুমটাতে। অবশ্য থাকবেই বাহ কিভাবে? নেহা ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” I am coming Arsal and Seher. গতকাল আমি এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। কারন তখন তুমি আমাকে যে কোনো সময় বের করে দিতে পারতে আরসাল। কিন্তু এখন পারবে নাহ। কারন এই বাড়ির উপর আমি অধিকার নিয়ে এসেছি। তোমার ভাইয়ের বউ হয়ে এসেছি। বোকা আশফি। প্রথম দিন থেকেই তুমি যে দূর্বল হয়েছো আমার প্রতি আমি তাহ বুঝতে পেরেছিলাম। আর আজ সেইটাকেই কাজে লাগালাম।”

নেহা শয়তানি হাসি দিয়ে আজকের দিনের কথা ভাবতে লাগলো।

Flashback…………

সকালে আশফির ফোনে নেহাই ম্যাসেজ করেছিলো। আশফি নেহার ম্যাসেজ পেয়ে দ্রুত চলে যায় নেহার দেওয়া ঠিকানায়। নেহা আশফিকে একটি কফিশপে ডাকে। আশফি কফিশপে এসে দেখে নেহা অনেকটাহ মন মরা হয়ে বসে আছে। আশফি নেহার সামনে গিয়ে অপোজিট চেয়ারে বসে বলে ওঠে,
–” নেহা!”

–” আশফি! তুমি এসেছো?”

–” হুম! কি হয়েছে নেহা? তুমি ঠিক আছো?”

–” হুম! আসলে তোমাকে একটা কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছি।”

–” কি কথা নেহা?”

–” আমি বিদেশে চলে যাচ্ছি।”
কথাটা শুনতেই আশফির মাথায় যেনো বাজ পড়ে। আশফি তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
–” কেনো যাবা তুমি?”

–” কেনো যাবো নাহ বলো? বিডি তে কে আছে আমার? তোমরা? তোমাদের বাসায় আর কতদিন? কোন অধিকারে থাকবো আমি তোমাদের বাসায়? কেউ কি আছে যে আমাকে বউ বানিয়ে অধিকার তৈরি করে দিবে।”

–” নেহা তোমাকে একটা কথা বলতে পারি?”

–” বলো! যাহ মন চায় বলো। আমি তোহ তোমার কথা শুনবো জন্যই এখানে এসেছি। প্লিজ বলো।”

–” I love you Neha!”

–” মানে?”

–” মানে, আমি তোমাকে ভালোবাসি নেহা। কিন্তু কখনো বলতে পারি নি। আমি তেমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমাকে আমার বাসায় থাকার অধিকার টাহ যদি আমি তৈরি করে দেই। তাহলে কি খুব একটা সমস্যা হবে তোমার?”
নেহা উঠে দাড়াতেই আশফিও দাড়িয়ে যায়। নেহা আশফিকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” আমিও তোমার প্রতি দূর্বল আশফি। আমিও চাইছিলাম তুমি এই কথাটা আমাকে বলো। Thanks!”

আশফিও নেহাকে জড়িয়ে ধরতেই নেহা আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে আর মুখে ফুটে উঠে শয়তানি হাসি। তারপরেই নেহা আর আশফি বিয়ে করেই চৌধুরী ম্যানশনে আসে।

Present…………..

হঠাৎ দরজায় কারো আওয়াজে ধ্যান ভাঙে নেহার৷ নেহা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আশফি এসেছে। নেহা আশফির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। আশফি এগিয়ে এসে নেহাকে জড়িয়ে ধরে। নেহাও জড়িয়ে ধরে আশফিকে আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” বেচারা আশফি। খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার জন্য। তুমি কি ভেবেছো? আমি তোমার সাথে সংসার করবো জন্য এই বাড়িতে এসেছি? ভুল! টোটালি ভুল! আমার উদ্দেশ্য তোহ এখন অনেকগুলো দাড়িয়েছে। আরসাল আর সেহেরের ভাঙন, সেহের সর্বনাশ, আরসালকে পাওয়ার চেষ্টা, এক কথায় সেহেরকে কষ্ট দেওয়া। যার জন্য আমি আমার আরসালকে হারিয়েছি।”

★★★
সেহের নিজের রুমে বসে আছে। কি করবে, নিজের রুমে থাকবে নাকি আরসালের রুমে যাবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। আরসালের উপর এতোদিন রাগ থাকলেও কিছুক্ষণ আগে আরসালের বলা কথাগুলো শুনে সেহেরের বুঝতে পারছে আরসালের কোনো দোষ নাই। তাই আরসালের উপর এখনো রাগ দেখানো মানে বিনা দোষে আরসালকে শাস্তি দেওয়া। এইটাহ তোহ ঠিক, সেহের এখনো আরসাল কে ভালোবাসে। রাহুলকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল শুধু মাত্র যেদের জন্য। রাহুল তোহ শুধু সেহেরের শরীর টায় পেতো, মন টাহ যে অনেক আগেই আরসাল নিয়ে গেছে। কি করবে সেহের? সব ভুলে আরসালের সাথে নতুন জীবন শুরু করাটাই কি উত্তম নই? যতই হোক আরসাল এখন তার স্বামী, যত যাই করুক নাহ কেনো আরসালকে ছেড়ে যাওয়ার তোহ কোনো উপায় নাই। তাছাড়া ছেড়ে কোথায় বাহ যাবে, আরসালকে যে বড্ড ভালোবাসে সেহের, ভালোবাসার মানুষ কে ফেলে যে কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। সেহের কিছুক্ষণ নিজের রুমে পায়চারি করে, জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে আরসালের রুমের দিকে চলে যায়।

★★★
রাহুল নিজের রুমে বসা। সেইদিনে বাসর ঘরের সাজ এখনো রাহুলের রুমে আছে। রাহুল খুলতে দেয় নি সেই সাজ। মি. মুবিন অনেকবার খুলতে চেয়েছেন কিন্তু রাহুল খুলতে দেয় নি। মি. মুবিন রাহুলের এই অবস্থা মেনে নিতে পারছে নাহ। কারন রাহুল যে তার একমাত্র সন্তান। ছেলের কষ্ট হবে ভেবে কোনোদিন ২য় বার বিয়ের কথা মাথায়ও আনেন নি, অনেক আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন ছেলেকে। কোনো কিছুর কমতি রাখে নি, যাহ চেয়েছে সব দিয়েছেন। তাও আজ সেই ছেলে যদি এতো কষ্ট পায়, কোন বাবা সেইটা সহ্য করতে পারবে? সেইদিনের পর থেকে রাহুল অনেক চুপচাপ থাকে, রুম থেকেও খুব একটা বের হয় নাহ, বেশির ভাগ সময় সেহেরের সেই বড় ফটো টার সামনে বসে থাকে।
মি. মুবিন ড্রইংরুমে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ দরজায় কলিংবেলের আওয়াজে মি. মুবিন তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখে সে চলে এসেছে। মি. মুবিনের দিকে তাকিয়ে মানুষটাহ বলে ওঠে,
–” ফুপা, রাহুল কোথায়?”

–” রুমে, আমি আর পারছি নাহ ছেলেটার এই অবস্থা সহ্য করতে। প্লিজ তুই পারবি আমার ছেলেটাকে ঠিক করতে। তুই তোহ ওর বেস্ট ফ্রেন্ড, ওর সব কিছুর সাথী, প্লিজ আমার ছেলে কে ঠিক করে দে।”
মানুষটাহ আর কিছু নাহ বলে রাহুলের রুমের দিকে চলে যায়।
দরজায় কারো আওয়াজ পেয়ে রাহুল পিছন ঘুরে যাকে দেখে তাকে দেখে যেনো মুখে হাসি ফুটে উঠে রাহুলের। মানুষটার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়াশ! তুই?”

হ্যা! মানুষটাহ ইয়াশ। রাহুলের মামাতো ভাই ইয়াশ৷ ইয়াশ যেমনই হোক নাহ কেনো, রাহুল আর ইয়াশ দুইজন দুইজনের জানের জিগার। ইয়াশ রাহুলের বিয়ের সময় বিদেশে ছিলো, তাই রাহুলের বিয়েতে আসতে পারে নি। পরবর্তীতে রাহুলের বিয়ের ঘটনা এবং রাহুলের বর্তমান অবস্থা জানতে পেরেই বিডি তে চলে আসে ইয়াশ। আর এখন এয়ারপোর্ট থেকে সোজা রাহুলদের বাসায় চলে এসেছে ইয়াশ। ইয়াশকে দেখেই রাহুল এগিয়ে এসে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরেই বলে ওঠে,
–” তুই বিদেশ থেকে কবে আসলি?”

–” আমার কথা বাদ দে। আগে তোর কথা বল। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছিস? কি হাল করেছিস নিজের? রাহুল একটা মেয়ের জন্য, রাহুল একটা মেয়ের জন্য এমন করছে। আমি জাস্ট ভাবতে পারছি নাহ। আচ্ছা কি আছে ঐ মেয়ের মধ্যে যে তুই এমন করছিসস?”

–” কি আছে? তুই বুঝবি নাহ। বাদ দে।”

–” মেয়েটাহ কই থাকে? আমি মেয়েটাকে দেখবো, আর মেয়েটার সব ডিটেইলস দে। দেখি কোন সে মেয়ে যার জন্য তুই দেবদাস হয়ে গেছিস।”

–” মেয়েটাকে দেখবি?”

–” হুম! দেখা।”

–” ঐ দেখ।”
রাহুলের দেখানো দিকে ইয়াশ তাকাতেই যেনো চমকে উঠে। কারন রাহুলের রুমের একপাশের পুরো দেয়াল জুড়ে সেহেরের একটা ফটো ঝোলানো আছে। ইয়াশ আস্তে আস্তে ফটো টার দিকে এগিয়ে এসে তাকিয়ে দেখে আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের! সেহেরের সাথে রাহুলের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এইটা কিভাবে সম্ভব? আমি বিদেশে যাওয়ার আগে যতটুকু খবর নিয়েছিলাম, তাতে জানতে পারি, আরসাল সেহেরকে ভালোবাসে। আর আরসালের বিদেশে যাওয়ার কারনটাও এই সেহেরই ছিলো। তাহলে রাহুলের সাথে সেহেরের বিয়ে ঠিক হয় কিভাবে?”

রাহুল এগিয়ে এসে ইয়াশের কাধে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” কি দেখছিস এতো মনোযোগ দিয়ে?”

–” সেহেরের বিয়ে কার সাথে হয়েছে?”

–” ইয়াশ! তুই জানলি কিভাবে ওর নাম সেহের?”

ইয়াশ আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” মামা বলেছিলো। যাই হোক, কার সাথে বিয়ে হয়েছে সেহেরের?”

–” ওর কাজিন! আরসালের সাথে।”

–” কিভাবে?”
রাহুল ইয়াশকে সব বলে দেয়। ইয়াশের সেহেরের প্রতি এট্রাকশন কাজ করতো। যাহ সময়ের সাথে কেটে গেছে। কিন্তু ইয়াশ চেয়েছিলো সেহেরকে রেপ করতে, সেইদিনে অপমানের শোধ তুলতে। কিন্তু এখন ব্যাপার টাহ কমপ্লিটলি ঘুরে গেলো। রাহুল, তার জানের জিগার যখন এই সেহেরকে এতো ভালোবাসে তাহলে সেহেরের ক্ষতি নাহ, সেহেরকে সুস্থ ভাবে আনতে হবে। ইয়াশ রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই চিন্তা করিস নাহ। সেহের শুধু তোর। আর কারো নাহ। আমি সেহেরকে তোর কাছে এনে দিবো। বুঝলি?”

–” নাহ ইয়াশ! এইটা করিস নাহ। আমি শুধু চাই সেহের ভালো থাকুক। আমার খুশি আমার চাই নাহ, আমি সেহেরের খুশি দেখতে চাই। ভালবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এমন কোনো কথা নাই। কিছু ভালোবাসা ত্যাগেই পূর্ণতা পাই।”
কথাগুলো বলেই রাহুল বারান্দায় চলে যায়। কিন্তু ইয়াশ সেহেরের ফটোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” সেহের! তোমার জন্য আমি মাইর খেয়েছি, সেইটা মেনেও নিয়েছি বাট তোমার জন্য আমার জানের জিগার দোস্ত এতো কষ্ট পাবে আমি সেইটা মেনে নিবো নাহ। রাহুল, তোমাকে সুখে দেখতে চায়। তুমি আরসালের কাছে সুখী হবে ঠিকই বাট আরসালই যদি এই পৃথিবীতে নাহ থাকে। তাহলে রাহুলই পারবে তোমাকে সুখী করতে৷ আর সেই ব্যাবস্থা আমি করবো।”

★★★
আরসাল নিজের রুমে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। হঠাৎ রুমের দরজা খোলার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে সেহের এসেছে। আরসাল ল্যাপটপ টাহ পাশে রেখে দাড়িয়ে যায়। অনেকটাহ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেহরের দিকে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এমন ভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার কি আছে?”

–” তুই এখন আমার রুমে?”

–” তোমার রুম মানে? এইটা আমার স্বামীর রুম, তার মানে এই রুমে আমারও সমান অধিকার আছে। যাই হোক আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমোতে গেলাম।”
সেহের রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ব্লু সেডের ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আরসাল এখনো ওখানেই দাড়িয়ে আছে, সবকিছু যেনো আরসালের মাথার উপর দিয়ে গেলো। সেহের ঘুরিয়ে পেচিয়ে বললেও তাকে স্বামী বলেছে। মানে সেহের তাকে মেনে নিতে শুরু করেছে। আরসাল যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে নাহ। আরসাল ল্যাপটপ টাহ অফ করে দিয়ে বিছানায় গিয়ে সেহেরের মাথা টেনে নেয় নিজের বুকেট উপর। সেহের একটু সরে যেতে গেলেই আরসাল সেহেরকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে ওঠে,
–” স্বামীর কথা শুনতে হয়।”

সেহের কেমন যেনো শান্ত হয়ে যায় কথাটাহ শুনতেই। আরসাল সেহেরকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। সেহেরও আরসালের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুম দেয়। সেহেরের মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সব শান্তি যেনো আরসালের বুকে এসে জমা হয়েছে। আর যে শান্তি উপভোগ করার একমাত্র অধিকার শুধু সেহেরের।

★★★
সকাল হয়ে গেছে। চারিদিকে রোদের ছোয়া ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই সুন্দর সকালে আরসাল কে জড়িয়ে ধরে শান্তির ঘুম দিচ্ছে সেহের। আর আরসাল, তার তোহ কখন ঘুম ভেঙে গেছে, কিন্তু তাকিয়ে আছে সেহেরের মায়াবী মুখের দিকে। আরসাল জানতো সেহেরকে সব কিছু বুঝিয়ে বললে সেহের বুঝবে। আর তাই হলো, তার সেহের আবার তার কাছে ফিরে এসেছে। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় সেহের। তাকাতেই দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেহেরের কেমন যেনো লজ্জা লেগে উঠে আরসালের তাকানো দেখে। সেহের তাড়াতাড়ি সরে যেতে নিলেই, আরসাল সেহের কে টান দিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজে সেহেরের উপর আধশোয়া হয়ে, সেহেরের হাত বিছানায় চেপে ধরে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছো?”

–” নতুন সকাল! নতুন ভাবে শুরু করা উচিত।”

–” মানে?”
আরসাল কিছু নাহ বলে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের একটু কেঁপে উঠে। আরসাল সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। সেহের আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আরসাল সেহেরের বন্ধ চোখের পাতায় চুমু দিয়ে সেহেরের ঠোঁটে হালকা চুমু দিতেই সেহের কেঁপে উঠে। কোনোভাবে আরসালের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সেহের।
সেহের ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোতেই নেহার সাথে দেখা হয়। নেহা সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” Good morning Seher!”

–” তোমার জন্য আমার কাছে আপাততো সকাল টাহ গুড নাহ। তোমার এই নাটক আশফি ভাইয়া আর বাসার বাকি মেম্বার দের সামনে দেখিও। আমার সামনে নাহ। কারন, আমি সব জানি। আর এইটাও জানি কিভাবে নিজের স্বামীকে বদনজর থেকে বাচাতে হয়। আফসোস তোহ একটা জায়গায়। আমার সহজ সরল ভাইকে নিজের জালে ফাসিয়েছো। সুযোগ দিচ্ছি নেহা, নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি, নিজের মানসিকতা ঠিক করে আশফি ভাইয়ার সাথে সংসার করো। এইটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছি আশফি ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসে। তাই ভাইয়ার ভালোবাসাকে সম্মান দেও। নাহলে, সুযোগ কিন্তু আমি বার বার দেবো নাহ। পরে যেনো এমন নাহ হয়, আশফি ভাইয়াও তোমাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিলো। মাইন্ড ইট!”
কথাগুলো বলেই সেহের নিচে চলে যায়। আর নেহা রাগী চোখে সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক তেজ হয়েছে তোমার। আমিও দেখি এই তেজ তোমার কতদিন থাকে?”

–” আরসালের বউ এর তেজ অফুরন্ত।”
কারো আওয়াজ শুনে নেহা পেছনে তাকিয়ে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসাল নেহার দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” নেহা তুমি আশফি কে বিয়ে কেনো করেছো, সইটা বোঝার আইডিয়া আমার আছে। আমার ছোট ভাইয়ের বউ, অধিকার নিয়ে এসেছো এই বাসায়। গুড থিংকিং। তুমি যাহ করেছো, আমিই তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিতাম। কিন্তু এই মুহুর্তে পারবো নাহ। কারন হাজার হোক ছোট ভাইয়ের বউ বলে কথা। নেহা তোমাকে সুযোগ এবং সময় দুইটায় দিচ্ছি। ঠিক হয়ে যাও। সুখে সংসার করো। নাহলে আশফি ভালোবাসলেও, আশফিই তোমাকে ঠাই দেবে নাহ। তাই নিজেই নিজের সংসার ভেংগো নাহ। I hope you are understand.”

কথাগুলো বলেই আরসালও নিচে চলে যায়। আর নেহা আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” বাহ! স্বামী স্ত্রী দুইজনেই ভালো উপদেশ দিয়ে গেলো। গুড! আগে আহে দেখো হোতা হে কেয়া।”

কথাগুলো ভাবতেই নেহার মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠে। পেছন থেকে আশফি এসে বলে ওঠে,
–” নেহা এখানে কেনো দাড়িয়ে আছো? নিচে চলো।”

–” হুম চলো।”

রিসোর্ট টি আলোয় আলোয় ভরে গেছে। চারিদিকে টুরি বাল্ব, ফুল, বেলুন, কালার পোপার, ডিজাইনিং কাপড় ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে। কাচের গ্লাসের রিন রিন আওয়াজেও ভরে গেছে চারপাশ। আজ আরসাল + সেহের এবং আশফি + নেহার রিসিপশন করা হচ্ছে। আর তার জন্য একটা রিসোর্ট হাউজ ঠিক করা হয়েছে। আরসাল, সেহের, আশফি, নেহা চারজনই স্টেজে বসে আছে। সবাই সবার মতো করে এনজয় করছে। সবাই আরসালকে রিকোয়েস্ট করে একটা গান গাওয়ার জন্য। আর আরসাল সেহেরকে রিকোয়েস্ট করে তার সাথে ডুয়েট করার জন্য। অবশেষে সবাই বললো ২কাপেল একসাথে গান গাইবে। আরসাল গিটার নিয়ে বাজানো শুরু করে দেয়।

সেহের ঃ ( আরসালের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,,,,,,জীবন এতো সুখের হলো,,,,,,,
,,,,,,,আমার পাশে তুমি আছো তাই,,,,,,,,

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,,,,এক জীবনে এর চেয়ে বেশি,,,,,,
,,,,,,,,,আমার যে আর চাওয়ার কিছু নাই,,,,,,

সেহের ঃ ( মুচকি হেসে )
,,,,,,তোমার আমার ভালোবাসা শেষ হবার নই,,,,,,,,
,,,,,,,,,শুধু তোমায় কাছে চাই এই হৃদয়,,,,,,,

আরসাল ঃ ( মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

আমান ঃ ( নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

সবাই সবার মতো গান উপভোগ করলেও, কেউ একজন সবার চোখ ফাকি দিয়ে রিসোর্টে ভিতর ঢুকে পড়ে। লোকটা চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ যায় আরসাল আর সেহেরের দিকে। আরসাল আর সেহেরের দিকে চোখ যেতেই লোকটির মুখে বাকা হাসি ফুটে উঠে। লোকটা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দিয়ে চলছে। লোকটার হাতে একটা গ্যাস লাইট আছে। গ্যাসলাইট টাহ খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।

নেহা ঃ ( আরসালের সামনে দাড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,হুম.. দিন গেলো মাস গেলো,,,,,,
,,,,,,,,গেলো বহু বছর,,,,,,
,,,,,,,,,তবু যেনো শেষ হয় নাহ ভালোবাসার প্রহর,,,,,

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,, ও ও ও ও ও,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,দিন গেলো মাস গেলো,,,,,,
,,,,,,,,গেলো বহু বছর,,,,,,
,,,,,,,,,তবু যেনো শেষ হয় নাহ ভালোবাসার প্রহর,,,,,

আশফি ঃ ( নেহার দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,তুমি আমার ঘরে আসো পূর্নিমা হয়ে,,,,,,,
,,,,,,,এ জীবন সাজিয়েছো তুমি পূর্নতা দিয়ে,,,,,,

সেহের ঃ ( আরসালের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

লোকটা একটা জায়গা খুজে সেখানে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই গানের দিকে বিভোর হয়ে আছে। লোকটা হাতের গ্যাস লাইট দিয়ে সাজিয়ে রাখা কয়েকটা কাপড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে শুরু করে।

নেহা ঃ ( আশফি এসে নেহার সামনে দাড়াতেই নেহা আশফির দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,ও.. তুমি আমি ভালোবেসে,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,, থাকবো জীবন ভর,,,,,,,,,
,,,,,মরন যেনো আমাদের করে নাহ তো পর,,,,,,

সেহের ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,তোমায় নিয়ে সারাজীবন,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,কাটাতে যে চাই,,,,,,,,
,,,,,তুমি ছাড়া এ আমার আপন কেহ নাই,,,,,,

আরসাল ঃ ( চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে )
,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

আরসাল + আশফি ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

গান শেষে সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আর সেই লোকটি কয়েক জায়গায় আগুন লাগিয়ে গান শেষ হওয়ার আগে আগেই রিসোর্ট থেকে বের হয়ে যায়।

★★★
রাহুল ইয়াশের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু কথা কানে আসায় দরজার কাছে দাড়ায় আর শুনতে পায় ইয়াশ কাউকে বলছে,
–” ভালোভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিস।”

ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে,
–” জি স্যার! কয়েক জায়গায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছি।”

–” কেউ তোকে দেখে নি তো?”

–” নাহ স্যার! কেউ দেখেনি। আমি একদম মুখ ঢেকে রেখেছিলাম আর সবাই গান শোনাতে বিভোর ছিলো কেউ দেখতে পায় নি।”

–” গুড! তাও তুই এই শহর থেকে কয়েক মাসের জন্য অন্য কোথাও চলে যাবি। তোকে যেনো কোথাও নাহ দেখি। সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকতে পারে। তাই তোকে যেনো কয়েকমাস এই শহরে নাহ দেখি।”

–” ওকে স্যার!”

–” এইবার চৌধুরী বাড়ির সব মারা গেলে সেহেরের আর কেউ থাকবে নাহ। তখন সেহের শুধু রাহুলের।”

–” কিন্তু স্যার। ওখানে তোহ বাকি সবার সাথে সেহের ম্যামও মারা যেতে পারে।”

–” আমাকে কি তোর এতোই বোকা মনে হয়? আমি লোক ঠিক করে রেখেছি। যখন চারপাশে ধোয়ায় ভরে যাবে, আমার লোক গিয়ে সেহেরকে সুন্দর ভাবে বের করে আনবে।”

–” Wow! Great idea.”

–” ইয়াহ, আচ্ছা যাই হোক তোকে যেইটা বললাম মাথায় রাখিস বাই।”
ইয়াশ ফোন টাহ কেটে দিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়। হ্যা! রিসোর্টে ঐ আগুন লাগিয়ে দেওয়া অচেনা ব্যাক্তিটিকে ইয়াশ পাঠিয়েছে।
ইয়াশ কথা বলে পিছনে ফিরতেই চমকে উঠে। কারন রাহুল ইয়াশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
রাহুল ইয়াশের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি করেছিস তুই?”

–” কিছু নাহ।”

–” কিছু নাহ মানে কি? আমি নিজে শুনেছি তুই কাউকে জিজ্ঞাসা করছিলি আগুন লাগিয়েছে কি নাহ। ইয়াশ তুই কি করতে চাচ্ছিস? ওয়েট ওয়েট, আজ তোহ ওদের রিসিপশন পার্টি করা হচ্ছে। তুই ওখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিস? তাই নাহ? কি হলো চুপ করে আছিস কেনো বল?”

–” হ্যা! আমি পাঠিয়েছি। কি করতাম আমি? ছোট বেলা থেকে বাবা, মায়ের কাছে নাহ থেকে তোর কাছে থেকেছি। নিজের বুকের মাঝে বসিয়েছি তোকে। সেই তোর কষ্ট আমি দেখতে পারছিলাম নাহ। তাই আমি।”
ইয়াশ আর কিছু বলার আগেই রাহুল ইয়াশ কে একটা চড় মেরে দেয়। ইয়াশ গালে হাত দিয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাহুল আরসালকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই আমার চেনা ইয়াশ নাহ। আমার চেনা ইয়াশ প্লেবয় হতে পারে। যে মেয়েদের সাথে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু কাউকে মারতে নাহ। ওহ গড! আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।”

রাহুল চলে যেতে নিলেই ইয়াশ রাহুলের হাত ধরে আটকিয়ে বলে ওঠে,
–” কই যাচ্ছিস তুই?”

–” রিসোর্টে! আমার হাত ছাড়।”

–” কখনো নাহ। ওখানে এখন তোকে আমি যেতে দিবো নাহ। কিছুতেই নাহ।”

–” ইয়াশ আমার হাত ছাড়।”
কথাটাহ বলে রাহুল ইয়াশের থেকে নিজের হাত ঝাড়ি দিয়ে ছুটিয়ে এনে গাড়ি নিয়ে রিসোর্টের দিকে যাত্রা শুরু করে। ইয়াশ পিছন থেকে চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” রাহুল, রাহুল দাড়া ইয়ার।”

কিন্তু রাহুলকে এভাবে চলে যেতে দেখে ইয়াশও গাড়ি নিয়ে রাহুলের পিছনে পিছনে রিসোর্টের দিকে যেতে থাকে।

★★★
গান শেষ হতেই, হঠাৎ সবার চোখ যায় রিসোর্টের চারদিকে আগুন ছড়িয়ে গেছে। সবাই ভয় পেয়ে যায়। আস্তে আস্তে ধোঁয়াতে চারপাশে ভরে যাচ্ছে। সেহের ভয় তে আরসালকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল এক হাত দিয়ে সেহেরকে জড়িয়ে নেয়। সবার মাঝে একটা আতংক চলে আসে। আরসাল তাড়াতাড়ি ফোন বের করে দমকল বাহিনীদের কল করে। কিন্তু তারা আসতে আসতে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আরসাল সেহেরের মুখ তুলে দেখে সেহের অনেক ভয় পেয়ে গেছে এবং কান্না করছে। আরসাল সেহেরের মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” সেহের কান্না করা যাবে নাহ। শক্ত হতে হবে। সবাইকে বের করতে হবে। নাহ হলে সবাই মারা যাবো।”

–” কিন্তু কিভাবে? চারিদিকে কিভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দেখো।”

–” কিচ্ছু হবে নাহ। শোন তুই সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা কর।”
সেহের হ্যা বোধক মাথা ঝাকাতেই আরসাল, আমান আর আশফির সামনে গিয়ে বলে ওঠে,
–” আমান তুই মানুষদের শান্ত রাখার ট্রাই কর নাহলে বড় ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। আর আশফি তুই আগে আমাকে সব বাচ্চাদের এগিয়ে দিবি আমি বাইরে রেখে আসবো।”

আশফি আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বাইরে রেখে আসবি মানে কি? ডোরের দিকে তাকিয়ে দেখ পুড়ে যেতে পারিস?”

–” এখন এইসব ভাবার সময় নেই আশফি। কাম ফাস্ট।”
আশফি আরসালকে একটা একটা করে বাচ্চা কে ধরে দিচ্ছে আর আরসাল আগুন বাচিয়ে বাচ্চা গুলোকে বাইরে রেখে আসছে। দরজার ওখানে আগুনের প্রভাব বেশি হওয়ায় আরসালের অনেক জায়গায় আগুনের তাপ এবং আঁচে হালকা হালকা পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যাথায় আরসালের কিছু হচ্ছে নাহ। আরসাল আর একটা বাচ্চা কে বাইরে রেখে আসতেই একটা গাড়ি এসে দাড়ায়। এবং গাড়ি থেকে রাহুল নেমে আসে। রাহুল আসার সময় নিজের গাড়িতেই কয়েকজন দমকলের লোক নিয়ে আসে। পরপরই পুরো দমকল বাহিনী চলে আসে। পাশাপাশি আরও একটা গাড়ি এসে থামে এবং সেই গাড়ি থেকে ইয়াশ বেরিয়ে আসে। ইয়াশকে এখানে দেখে আরসাল মারাত্মক আকারে অবাক হয়ে যায়। দমকলকর্মীরা সব মানুষ কে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসে এবং আগুন নিভিয়ে ফেলে। সেহের বাইরে আসতেই রাহুল আর ইয়াশ কে দেখে অনেক অবাক হয়ে যায়। রাহুলকে দেখে অবশ্য সবাই অবাক হয়ে যায়। রাহুল আস্তে আস্তে সেহেরের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” Seher! I am sorry.”

–” মানে? সরি, কিন্তু কেনো? আর তুমি এখানে কেনো?”

–” আসলে এই আগুন টাহ, মানে, আসলে এখানে আগুন।”

–” ওয়েট। তুমি এমন করে তোতলিয়ে বলছো কেনো? আর এই আগুন কি তুমি লাগিয়েছো? রাহুল ভাইয়া! তুমি এই আগুন তুমি লাগিয়েছো?”

–” সেহের!”
সবার মাথায় যেনো বাজ পড়ছে। একভাবে তাকিয়ে আছে রাহুলের দিকে। সেহের রাহুলের কলার্ট ধরে ঝাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ছিহ! তুমি এই জঘন্য কাজ টাহ করলে। আমাকে বিয়ে করতে পারো নিহ জন্য কাজ টাহ করেছো, তাই নাহ? ছিহ রাহুল ভাইয়া ছিহ! এতোটাহ নিচু মন তোমার। আমি ভাবতেই পারছি নাহ, আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম। যে কারনেই হোক, তোমাকে লাইফ পার্টনার বানাতে চেয়েছিলাম। ছিহ! কিভাবে করতে পারলে? লজ্জা করলো নাহ, এরোকম একটা নোংরা কাজ করতে?”

কথাগুলো বলতে বলতে সেহেরের চোখ যায় ইয়াশের উপর। সেহের আবার রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়াশ এখানে কেনো?”

–” তুমি ইয়াশকে চিনো? ও আমার কাজিন।”
কথাটাহ শুনতেই আরসাল, সেহের অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়। সেহের জোরে হেসে দেয়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহের হাসি থামিয়ে ছলছল চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এখন বুঝলাম, তোমার মন মানসিকতা এতোটাহ চিপ কেনো? কারন দুইজনই তোহ একই ব্লাডের। তুমি তোহ ইয়াশের থেকেও এগিয়ে আছো। ইয়াশ তোহ শুধু আমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো। আর তুমি? আমার পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, স্বজন সবাইকে মেরে ফেলতে গিয়েছিলে। এখানে তোহ শুধু আমি আর আরসাল ভাইয়া দোষী তোমার কাছে। আর কেউ তোহ দোষী নাহ। এর আগের ফাংশনে অনেক রিলেটিভদেরই ইনভাইট করা হয় নায়। কিন্তু এই ফাংশনে করা হয়েছে। তাদের দোষ টাহ কি, বলতে পারো? কত ছোট ছোট বাচ্চারা রয়েছে, যারা এখনো পৃথিবী সম্পর্কেই কিছুই জানে নাহ, তারাই বাহ কি অন্যায় করেছে? আমার পরিবারও তোহ তোমার সাথে কোনো অন্যায় করে নি, তারা তোহ তেমাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসা দিয়ে গেছে। তাহলে তাদের কেনো মারতে চেয়েছো? আজ যদি ওদের কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো কি হতো তখন?”

সেহেরের প্রতিটাহ কথা যেনো রাহুলের বুকের ভিতর টাহ ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। সেহের নিজের চোখ মুছে রাহুলের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” I hate you. I hate of your mind. ছিহ! তুমি এতোটাহ নোংরা মনের আমি কোনোদিনও ভাবতে পারি নি। শুধুমাত্র প্রতিশোধের তাড়নায় আজ এতো বড় একটা জঘন্য কাজ করলে? ঘৃনা করি আমি তোমাকে। ঘৃনা করি তোমার নোংরা মন মানসিকতাকে। আমার তোহ ভাবতেও ঘৃনা লাগছে আমি তোমার মতো একটা চিপ মাইন্ডের ছেলের সাথে জীবন বাঁধতে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস ভাইয়া ঐদিন ঐ ঘটনা ঘটিয়েছিল, নাহলে তোহ তোমার মতো একটা ছেলেকে আমি বিয়ে করে ফেলতাম। I hate you. I hate your chip mind. লিসেন, তোমার এই খারাপ মুখটাহ যেনো আমি আর নাহ দেখি। আর কখনো আসবা নাহ আমার সামনে। আমি তোমাকে আর লাইফেও দেখতে চাই নাহ। তুমি আর কখনো আমার সামনে আসবা নাহ। I hate you. I hate you. Hate you.”

কথাগুলো বলে সেহের দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। আরসাল রাহুলের সামনে দাড়াতেই রাহুল করুন চোখে আরসালের দিকে তাকালে, আরসাল কিছু নাহ বলে চলে যায়। আস্তে আস্তে সবাই চলে যায়। শুধু দাড়িয়ে থাকে রাহুল আর ইয়াশ। পোড়া রিসোর্টের সামনে শুধু ওরা দুইজন, আর কেউ নেই। রাহুল হাঁটুর উপর ভর করে ওখানে ধপ করে বসে পড়ে। রাহুলকে এভাবে বসে পড়তে দেখে ইয়াশ দৌড়ে এসে রাহুলের সামনে হাটু ভাজ করে বসে পড়ে। রাহুল একবার ইয়াশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। রাহুলের চোখে পানি ছলছল করছে আর মুচকি হাসছে, দেখে ইয়াশের বুকের ভেতরটাহ কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠে। ইয়াশের চোখে পানিতে ভরে যায়। ইয়াশ রাহুলের দিকে তাকিয়ে কান্না করে বলে ওঠে,
–” I am sorry Rahul. আমি বুঝতেই পারি নি এমন হবে। তুই এতো টাহ কষ্ট পাবি। আমি তোহ তের কষ্ট কে মুছে দিতে চেয়েছিলাম। সেই আমি কি নাহ, তোকে আরও বেশি কষ্ট দিয়ে দিলাম। কেনো তুই বললি নাহ বলতো, যে এইসব আমি করেছি তুই নাহ। I am so sorry Rahul.”

রাহুল আজ নিজেকে সামলাতে নাহ পেরে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি আর পারছি নাহ, ইয়াশ। আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে নাহ। শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। যন্ত্রনা হচ্ছে। আর পারছি নাহ। আমি সেহেরকে ভালোবাসি। ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি। পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার বুকের ভেতর টাহ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর সহ্য করতে পারছি নাহ। সেহের এখন আমাকে ঘৃনা করে। মেনে নিতে পারছি নাহ, এইটা আমি। কি করবো ইয়াশ। মেরে ফেল আমাকে প্লিজ।”

ইয়াশ আর কিছু নাহ বলে রাহুলকে জোরে জড়িয়ে ধরে রাখে।

★★★
সেহের বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল রুমে এসে সেহেরকে কোথাও পায় নাহ। আরসাল বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখে সেহের দাড়িয়ে আছে। আরসাল সেহেরের পিছনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” সেহর!”

সেহের কারো আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসাল সেহেরের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে?”

–” ভাইয়া! আমি কিছুতেই আজকের ঘটনা ভুলতে পারছি নাহ। রাহুল ভাইয়া এমন নাহ। নাকি সত্যিই এমন?”

–” প্লিজ শান্ত হ। যাহ হয়েছে, তাহ হয়ে গেছে।”
আরসাল এগিয়ে এসে সেহেরের শাড়ির নিচ দিয়ে হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সেহেরের মুখের উপর পড়া চুল গুলো কানের নিচে গুজে দেয় আরসাল। আরসাল সেহেরের কপালে একটা চুমু দিতেই সেহের চোখ বন্ধ করে নেয়। আরসাল সেহেরকে রেলিং এর সাথে চেপে ধরে নিজেও সেহেরের সাথে মিশিয়ে দাড়ায়। সেহের জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আরসাল সেহেরের চুলের নিচ দিয়ে হাত দিয়ে সেহেরের মুখ কাছে নিয়ে এসে, সেহেরের ঠোঁটে হালকা করে চুমু দিতেই সেহের কেঁপে উঠে, আরসালের কলার্ট চেপে ধরে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই দেখে সেহেরের ঠোঁট কাপছে। আরসাল আর নিজেকে সামলে রাখতে নাহ পেরে সেহেরের ঠোঁটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দেয়। শুষে নিতে থাকে সেহেরের ঠোঁটের মিষ্টতা। হারিয়ে যাচ্ছে সেহের আরসালের ভালোবাসায়। আরসাল যেনো পাগল হয়ে যাচ্ছে সেহেরকে ছুতে পেরে। এক অজানা সুখে ভেসে যাচ্ছে দুইজন।
বেশ কিছু সময় পর আরসাল সেহেরের ঠোঁটের স্পর্শ ত্যাগ করে। সেহের এখনো চোখ বন্ধ করে রয়েছে। আরসাল সেহেরের চোখ বন্ধ দেখে মুচকি হাসি দিয়ে সেহেরের বন্ধ চোখের উপর চুমু একে দেয়। এতে যেনো সেহেরের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আরসাল সেহেরকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে, সেহেরের উপর আধশোয়া হয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক কষ্ট, নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেক কষ্ট। বাট, তাও আমি তোকে এই মুহুর্তে নিজের করতে চাই নাহ। কারন সেই সময় এখনো হয় নি। যখন আবার তুই আমার কাছে এসে বলবি, আরসাল আমাকে নিজের করে নেও, তারপর আমি তোকে নিজের করে নিবো। ভাসিয়ে নিয়ে যাবো নিজের ভালোবাসার সাগরে। ভালোবেসে পূর্ণ করে দেবো তোকে। একটা কথা তোকে বলতে চাই, শুনবি?”

সেহের হ্যা বোধক মাথা ঝাকাতেই আরসাল বলে ওঠে,
–” সেহের, #তুই_শুধু_আমার।”

কথাটাহ শুনতেই সেহের মুচকি হাসি দেয়। আরসাল সেহেরকে বুকের উপর নিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। সেহের আরসালের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমিয়ে যায়।

চলবে………………..🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-৩৪+৩৫

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 34+35

চারিদিকে আলোয় ঝলমল করছে। আলোয় আলোয় ভরে গেছে চারাপাশ। সাথে বাজছে মিউজিক। খাবারের গন্ধে চারদিকে ভরে গেছে। সবাই সেজে উঠেছে নতুন পোশাকে, নতুন সাজে। রাহুল কে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই রাহুলের সাথে কথা বলছে, ফটো তুলছে। কিন্তু রাহুলের মন পড়ে আছে সেহেরের কাছে। সেহেরকে বধু বেশে একবার দেখার জন্য মনটাহ অনেক অস্থির অস্থির লাগছে।
বেশ কিছু সময় পর জিহাদ চৌধুরী মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মায়া যাও, সেহের মা কে নিয়ে আসো।”

–” হুম! যাচ্ছি।”
মায়া চৌধুরী আশার দিকে ইশারা করতেই আশা সেহেরের রুমে চলে যায় সেহেরকে নিয়ে আসার জন্য। আশা সেহেরের রুমে এসে দেখে সেহের কোথাও নেই। আশা ভাবে হয়তো ওয়াশরুমে আছে, তাই ওয়াশরুমের দরজা নক করতেই দরজা খুলে যায়। আশা ওয়াশরুম চেক করে দেখে সেহের নেই। আশা কেমন যেনো ভয় পেয়ে যায়। আশা তাড়াতাড়ি বারান্দা এবং অন্যান্য রুম চেক করে কিন্তু সেহেরকে কোথাও পায় নাহ। আশা অনেক ভয় পেয়ে যায়। আশা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসে জিহাদ চৌধুরীর কাছে যেয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আব্বু!”

–” হুম! কি হলো তোকে নাহ বলা হলো সেহেরকে নিয়ে আসার জন্য?”

–” বড় আব্বু তোমার সাথে একটু কথা আছে।”

–” এখন?”

–” হুম! খুব ইম্পর্টেন্ট।”

–” আচ্ছা চল।”
আশা আর জিহাদ চৌধুরী কে একপাশে যেতে দেখে মায়া চৌধুরী আর আহিয়া চৌধুরীও এগিয়ে যায়, কারন আশাকে খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছে। আশা তাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কোথাও নেই।”

আহিয়া চৌধুরী, মায়া চৌধুরী, জিহাদ চৌধুরী আশার কথা শুনে চমকে যায়। জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কি বলছিস এইসব?”

–” হ্যা! ঠিকই বলছি। আমি সব জায়গায় খুজেছি, কিন্তু সেহেরকে কোথাও পাই নি।”
তারা সবাই কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। জিহাদ চৌধুরী পড়ে যেতে গেলেই আশা৷ আর মায়া চৌধুরী তাড়াতাড়ি ধরে বসে। আশা কান্না করে দিয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আব্বু! শান্ত হও প্লিজ।”

–” কি হবে এখন? সেহের কোথায় গেছে? কি উত্তর দিবো আমি রাহুল আর মুবিন কে। বাড়ির সম্মান তোহ নষ্ট হয়ে যাবে। কি করবো আমি?”
আমান আশা, জিহাদ চৌধুরী, মায়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী কে এক জায়গায় দেখে তাদের দিকে এগিয়ে এসে দেখে আহিয়া চৌধুরী, আশা, মায়া চৌধুরী কান্না করছে। আমান ব্যাপার টাহ দেখে চিন্তিত মুখে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? আশা কি হয়েছে?”

–” আমান, সেহেরকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে নাহ।”

–” What? কি বলছিস এইগুলো? সব জায়গা খুজেছিস ভালো করে?”

–” আমি বাড়ির সবা জায়গা খুঁজেছি। কিন্তু সেহেরকে কোথাও পাই নি।”
আমান কিছু নাহ ভেবেই আরসালের রুমে যায়, আরসালকে ব্যাপার টাহ জানানোর জন্য। আরসালের রুমে গিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যায় আমান। আরসাল কোথাও নেই। হঠাৎ আমানের চোখ যায় ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় লাগানো একটা কাগজের দিকে। আমান কাগজটাহ নিয়ে দেখে আরসালের লেখা। আমান কাগজটাহ পড়তে থাকে,
“””””আমি জানি তুই আমার রুমে আসবি। আমাকে খুজে লাভ নাই। আমি বাসায় নেই। আর সেহেরকে আমি আমার কাছেই নিয়ে এসেছি। চিন্তা করিস নাহ, আজ রাতেই বাসায় ফিরবো। আর সেহেরকে নিয়েই ফিরবো। তুই শুধু সবাইকে একটা কথা জানিয়ে দে, আরসাল সেহেরকে সাথে করে নিয়ে আসছে।””””””

★★★
সেহের আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাতে চাইলেও পারছে নাহ। কারন অনেক আলো। সেহের আস্তে আস্তে উঠে বসে চোখ মুখ কুচকে মাথা চেপে ধরে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারপাশে তাকাতেই সেহের চমকে উঠে। ভালোভাবে খেয়াল করতেই সেহের বুঝে যায় এইটা ওদের বাগান বাড়ি। সেহের ভাবছে ও এখানে এলে কিভাবে। সেহের চোখ বন্ধ করে কিছু সময় আগের কথা মনে করতে থাকে।

কিছুক্ষন আগে……..

সেহের জানালা দিয়ে রাহুলের ওয়েলকাম দেখছিলো। হঠাৎ সেহেরের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। সেহের ম্যাসেজ টাহ ওপেন করতেই দেখে আশার নাম্বার থেকে এসেছে। ম্যাসেজে লিখা আছে,” সেহের একটু বাসার পেছন সাইডে আই। তোকে কিছু কথা বলার আছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি আই।” আশার এমন ম্যাসেজ দেখে সেহের কিছু নাহ ভেবেই বাসার পেছন দিকে যেয়ে বলে ওঠে,
–” আশা! আশা! কোথায় তুই?”

হঠাৎ কেউ একজন সেহেরের মুখে একটা রুমাল চেপে ধরে। তারপর আর সেহেরের কিছু মনে নাই।

বর্তমান…….

সেহের তাড়াতাড়ি চোখ খুলে বলে ওঠে,
–” বাসার সবাই এতোক্ষণে তোহ আমাকে খুজছে মনে হয়। হায় আল্লাহ! বাড়ির সম্মান শেষ হয়ে যাবে। আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌছাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।”

সেহের তাড়াতাড়ি দরজা খুলতেই দেখে আরসাল। আরসালকে দেখতেই সেহের চমকে উঠে। আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তুমি?”

–” কেনো? তুই কি অন্য কাউকে এক্সেপ্ট করছিলি নাকি?”

–” তুমি এখানে। যাই হোক, আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।”

–” কেনো ঐ রাহুলকে বিয়ে করার জন্য। তাহলে আমি এতো কষ্ট করতে কেনো গেলাম?”

–” মানে?”

–” তুই এখনো বুঝিস নি?”
সেহের আরসালের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কেনো করলে এমন?”

–” তুই কি ভেবেছিলি? তুই আমার চোখের সামনে অন্য একজন কে বিয়ে করবি আর আমি চুপচাপ সব মেনে নিবো? এতোই সহজ মনে হয় তোর?”

–” কি বলছো তুমি এইসব?”

–” আমি ঠিকই বলছি। তুই হয়তো ভুলে গেছিস আমি তোকে একটা কথা বলেছিলাম যে, #তুই_শুধু_আমার। সেহের শুধু আরসালের। এতো সহজে কি করে ছেড়ে দেয়। দেখ সময় বেশি নেই, নিচে বিয়ে পড়ানোর জন্য সবাই ওয়েট করছে, তাড়াতাড়ি চল। তারপর আমাদের বাসায় ফিরতে হবে।”
আরসাল সেহেরের হাত ধরতে গেলে সেহের কয়েক পা পিছিয়ে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের বলে ওঠে,
–” কি ভাবো বলোতো আমাকে? পুতুল? খেলার পুতুল মনে হয় আমাকে? যে যতক্ষণ ইচ্ছে হলো আমাকে নিয়ে খেললে, খেলা শেষ হলে ফেলে দিলে। আমি কারো খেলনা হতে পারবো নাহ। আমি একটা মানুষ! আমারও একটা মন আছে, নিজস্ব মানসম্মান আছে। তোমার যখন ইচ্ছে হয়েছিলো সবার সামনে বলেছিলে আমাকে হেট করো, আবার ইচ্ছে হলো আমাকে প্রপোজ করলে, আমার কাছে আসলে, আবার ইচ্ছে হলো আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানালে, আবার আমাকে এইটাও বললে সব প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য করেছো, আর আজ আবার ইচ্ছে হলো কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা নাহ করে আমাকে এখানে নিয়ে এলে, আবার এখন বলছো বিয়ে করতে। কি মনে করো তুমি নিজেকে? সব তোমার মর্জিতে চলবে? অন্য কারোর ইচ্ছার কোনো দাম নেই?”

–” সেহের আমার কথাটা শোন প্লিজ। হ্যা আমি মানছি, অনেক কিছু করেছি। কিন্তু সেহের তোকে বিয়ে করতে আমি যে অস্বীকার করেছিলাম এর জন্য যথেষ্ট কারন ছিলো। সেহের আমি নিজের ইচ্ছায় এইসব করি নি। দেখ আমি তোকে সব বলবো। আমাকে একটু সময় দে প্লিজ। কিন্তু এখন আমাদের এখানে বিয়ে করে বাসায় যেতে হবে। তারপর আমি তোকে সব বলবো, প্লিজ।”

–” কখনো নাহ। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই নাহ। আমি রাহুল ভাইয়া কে বিয়ে করবো।”
সেহেরের মুখে এই কথা শুনে আরসালের রাগ উঠে যায়। আরসাল শক্ত করে সেহেরের মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” তোর সাহস কি করে হয় এই কথা বলার? খুব শখ নাহ রাহুলকে বিয়ে করার? তোকে তোহ আমাকেই বিয়ে করতে হবে। আর সেইটাও কিভাবে, তাও আমি খুব ভালো করেই জানি। ভালো ভাবে বললাম কিন্তু তুই শুনবি নাহ, বোঝা হয়ে গেছে আমার। তাই আমাকে বাঁকা রাস্তা ধরতেই হবে।”

–” মানে? কি করবে তুমি?”

–” তুই যদি এখন এই বিয়েতে কোনো ঝামেলা করিস তাহলে, আমার একটা ফোনে রাহুলের লাশ মাটিতে পড়ে যাবে।”

–” কি? কি বলছো তুমি এইসব?”

–” এতো সময় খুব ভালো করে বোঝাতে চাইছিলাম তোকে। কিন্তু তুই আমার এতো ভালো ব্যাবহার মনে হয় নিতে পারছিলি নাহ। তাই এখন আমাকে আমার মতো কাজ করতে হবে।”

–” ভাইয়া প্লিজ। তুমি এমন কাজ করতে পারো নাহ।”

–” আমি কি করতে পারি আর নাহ পারি সেই ব্যাপারে তোর কোনো ধারনাই নেই। যাই হোক কয়েক সেকেন্ড সময় দিচ্ছি। ভেবে দেখ কি করবি? আমাকে বিয়ে করবি নাকি রাহুলের মৃত্যু দেখবি? আমি জানি তুই একটা নির্দোষ ছেলের পরিনতি এমন হতে দিবি নাহ। তাও দেখ। আমি ফোন দেয়।”
আরসাল ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে হ্যালো বলতেই সেহের চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি রাজি!”

সেহেরের কথা শুনতেই আরসাল ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। আরসাল সেহেরের হাত ধরে নিচে নিয়ে আসতেই দেখে কিছু মানুষ বসে আছে। সেহেরের দিকে এগিয়ে দেওয়া হলো একটা কাগজ। সেহের আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল সেহেরকে ইশারা করে কাগজটাতে সই করার জন্য। সেহের কি আর করবে? কোনো উপায়ই তোহ নেই। সাইন করে দেয় সেহের।

★★★
চৌধুরী ম্যানশন একদম নিরব হয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেও যেখানে বিয়ের আনন্দে ভরপুর ছিলো, এখন সেখানে পিনপিন নিরাবতা চলছে। আমান এসে সবাইকে আরসালের লিখে যাওয়া কথা বলাতেই ব্যাপারটাহ অন্যরকম হয়ে গেছে। নেহা রেগে ফায়ার হয়ে আছে। কারন আরসাল এমন কাজ করে কিভাবে, যেখানে সেহেরের এতো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। নেহা অপেক্ষা করছে আরসালের। কারন আরসালের সাথে কথা বলে কোনো সমাধান বের করতে নাহ পারলে সেহেরের ফটো ভাইরাল করে দিবে।
রাহুল চুপ করে বসে আছে। হ্যা, রাহুল এখনো বসে আছে। কারন রাহুল সেহেরের সামনাসামনি হতে চায়। রাহুল সেহেরের কাছের থেকে জানতে চায় যে, তার অপরাধ কি ছিলো? সে তোহ সেহেরকে জোর করে নি, তাহলে? যদি বিয়ে করবেই নাহ এমন ভাবনা থাকে তাহলে কেনো তাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো? কেনো অসম্মান করলো তাকে এবং তার ভালোবাসা কে? সব উত্তর চায় রাহুলের।
সবাই নিজের মতো করে ভাবনায় ব্যাস্ত। ঠিক তখনি দরজায় কলিংবেলের আওয়াজে সবাই চমকে উঠে। সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু দরজা খোলার মতো শক্তি পাচ্ছে নাহ। আশফি সবার দিকে একবার তাকিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে দেয় আশফি। দরজা খুলতেই সবার নজর যায় আরসাল আর সেহেরের দিকে। আরসাল আর সেহের ভেতরে আসে। নেহার চোখ যায় আরসাল আর সেহেরের হাতের দিকে, যেখানে আরসাল সেহেরের হাত ধরে রেখেছে। রাহুল এসে আরসাল আর সেহেরের সামনে দাড়ায়। সবাই তাকিয়ে আছে আরসাল, সেহের আর রাহুলের দিকে। রাহুল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে তোমাকে। ভেবেছিলাম এই সাজে সেহেরকে আমার রাজ্যের রানি বানাবো। আফসোস! ব্যার্থ চেষ্টা। আচ্ছা সেহের, আমি কি তোমাকে জোর করেছিলাম এই বিয়ে তে রাজি হওয়ার জন্য? বা আমি তোমাকে কখনো বলেছি, আমাকে বিয়ে করতেই হবে? বলি নি তোহ, তাই নাহ? তাহলে? তাহলে, কেনো আজ এই কাজ টাহ করলে? কেনো আমাকে আর আমার ভালোবাসা কে অপমান করলে? কেনো আমার স্বপ্ন কে এইভাবে ভেঙে দিলে? আমি তোহ কোনো অন্যায় করি নি। তাহলে?”

সেহের অশ্রুসিক্ত নয়নে রাহুলের দিকে তাকিয়ে আছে। রাহুলের চোখ ছলছল করছে, কিন্তু রাহুল পানি পড়তে দিচ্ছে নাহ, আটকে রেখেছে চোখের পানি। সেহের কিছু বলার আগেই আরসাল বলে ওঠে,
–” সরি রাহুল। কথাগুলো আমি বলছি। কারন সেহেরের কোনো দোষ নাই। কারন সেহের নিজ ইচ্ছায় এই বিয়ের আসর থেকে যায় নি।”

–” মানে?”

–” মানে সেহেরকে আমি সেন্সলেস করে নিয়ে গেছিলাম। আর ওকে নিয়ে গিয়ে আমি বিয়ে করি। সেহের তোমার সাথে কোনো বেইমানি করে নি। যাহ করার আমি করেছি। তাই সেহেরকে কোনো প্রকার দোষারোপ করো নাহ। কারন ওর কোনো দোষই নেই।”

–” কিছুই বলার নাই।”
রাহুল আর কিছুই নাহ বলে বেরিয়ে যায় চৌধুরী ম্যানশন থেকে। সবাই এখনো তাকিয়ে আছে আরসাল আর সেহেরের দিকে। জিহাদ চৌধুরী আরসালের সামনে দাড়াতেই আরসাল মাথা নিচু করে ফেলে। জিহাদ চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তুমি সেহেরকে বিয়ে করবে কি নাহ? কিন্তু তুমি সেহেরকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানিয়েছিলে। তাহলে আজ এরকম করার কারন কি, আরসাল?”

–” বাবা, আমি সরি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো নাহ। কারন তখন কিছু কারনে আমি বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিলাম। কিন্তু কারন গুলো এই মুহুর্তে তোমাদের বলতো পারবো নাহ।”
কথা গুলো বলতে বলতে আরসাল নেহার দিকে শক্ত চোখে তাকায়। নেহাও অবাক + রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আরসাল আর সেহেরের দিকে। জিহাদ চৌধুরী আবার আরসালকে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আরসাল বলে ওঠে,
–” বাবা প্লিজ। আমি আর এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই নাহ। শুধু একটা কথা জানিয়ে দিচ্ছি। সেহেরকে আমি আজ বিয়ে করেছি। মানে চৌধুরী বাড়ির মেয়ের পাশাপাশি সেহের চৌধুরী বাড়ির বউ।”

আরসাল আর কারো দিকে নাহ তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। সেহের এখনো সেইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সেহের যেনো বুঝতেই পারছে নাহ। কি হচ্ছে তার সাথে। আহিয়া চৌধুরী মেয়ের এমন অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েন। আশা আহিয়া চৌধুরী কে সামলাতে থাকে। মায়া চৌধুরী সেহেরের সামনে দাড়াতেই, সেহের আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে নাহ। মায়া চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় সেহের। মায়া চৌধুরী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ। কার তার নিজের ছেলেই তোহ সেহেরের জীবন কে নাটকীয় বানিয়ে তুলছে।
নেহা যেনো কিছুতেই মানতে পারছে নাহ আরসাল আর সেহেরের বিয়ে। নেহা উপরে আরসালের রুমে গিয়ে দেখে আরসাল মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। নেহাকে দেখে আরসাল বাঁকা হাসি দেয়। আরসালের এমন হাসি দেখে নেহার মনে হচ্ছে, তার শরীরে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। নেহা আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” তুমি যাহ করেছো তার পরিনাম কি হতে পারে, তাতোহ তোমার অজানা ছিলো নাহ। তারপরও এমন কাজ করলে।”

–” কি করবে নেহা? ফটো ভাইরাল করবে? কোন ফটো? একটু দেখাবে প্লিজ!”

–” কোন ফটো তোমার মনে নাই? আচ্ছা ওয়েট।”
কথাটা বলেই নেহা নিজের ফোন ওপেন করে দেখে সমস্ত ফাইল ফাকা। কোথাও কিছুই নাই। নেহা রাগী চোখে আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল বলে ওঠে,
–” এতো সহজ নেহা? আমার সাথে তুমি গেম খেলবা, আর আমি আরসাল তোমার গেমের গুটি হবো? তুমি ভাবলে কি করে? এতো সহজ নাহ। দেখলে তোহ কি হয়ে গেলো। নেক্সট টাইম এমোন কিছু করার ট্রাই করো নাহ, ফল ভালো হবে নাহ।”

নেহা আর কিছু নাহ বলেই নিজের রুমে এসে হাতে থাকা মোবাইল টাহ ভেঙে ফেলে। নেহা কিছুতেই রাগ সামলাতে পারছে নাহ। নেহা আয়নার সামনে দাড়িয়ে, নিজের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” এইটা তুমি ঠিক করো নি আরসাল। এর জন্য শুধু তুমি নও আরও অনেকে ভুগবে। তোমাকে এতো সহজে আমি ছাড়বো নাহ। তুমি তোহ আমার হবেই আরসাল। তোমাকে আমার হতেই হবে। কারন, #তুমি_শুধু_আমার। আর সেহের, তোমার জীবনে কাল হয়ে আসবো আমি। শেষ করে দিবো তোমাকে। এইবার দেখো আমি কি করি।”

নেহা জোরে হেসে দেয়। আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার দাবার গুটি আমি পেয়ে গেছি সেহের। একই সাথে তোমার জীবন শেষ করবো আবার আরসালকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো। Just wait and watch.”

সেহেরকে আরসালের রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আরসালের রুম তেমন সাজানো হয় নি। কিছু ক্যানন্ডেল আর বিছানায় কিছু গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেহেরকে একটা লাল কালারের নরমাল শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেহের জানালা দিয়ে একভাবে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ হতে তাকিয়ে দেখে আরসাল এসেছে। আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকায় সেহের। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই দেখে সেহেরকে কেমন যেনো উদাস দেখাচ্ছে। আর কারনটাও যে আরসালের অজানা নয়। আরসাল এগিয়ে সেহেরের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের!”

আরসালের ডাক শুনে সেহের আরসালেরর দিকে শান্ত চোখে তাকায়। এই প্রথম সেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে নাহ। আরসাল তাও সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, আমার তোকে কিছু বলার আছে।”

–” বলো! আর কি বলার আছে তোমার? বলো! আমাকে নিজের ইচ্ছে মতো চালিয়ে নিচ্ছোই। আমিও চলছি। এখন তোহ তুমি আমার স্বামী, আমার উপর তোমার সব অধিকার আছে। সামান্য কিছু কথা তোহ অনেক দুরের বিষয়। বলো, বলো।”

–” সেহের!”

–” আমাকে প্লিজ কিছু সময় আমার মতো থাকতে দাও। প্লিজ, হাত জোর করছি আমি।”

–” হ্যা! থাক তুই তোর মতো করে। যেভাবে তুই ভালো থাকিস। কিন্তু সেহের সেইদিন আমি যাহ করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি আর আজ যাহ করেছি তোকে ভালোবাসি তাই করেছি।”

কথাটাহ বলেই আরসাল বারান্দায় গিয়ে দরজা আটকে দেয়। সেহের সোফায় শুয়ে পড়ে কান্না করতে করতে।
আরসাল প্রায় মাঝ রাতে রুমে এসে দেখে সেহের সোফায় ঘুমিয়ে গেছে। আরসাল সেহেরকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়। কম্বল টাহ টেনে দেয় সেহেরের শরীরের উপর। সেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে,
–” আমি জানি, আমি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে। I am sorry. আমি আর কখনো তোকে কষ্ট দিবো নাহ। প্রমিস।”

কথাগুলো বলে আরসাল সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়।

★★★
সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে। নেহা গতকাল রাতেই চৌধুরী ম্যানশন ছেড়ে চলে গেছে। সবাই চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করছে। আশফিও ব্রেকফাস্ট করছে সবার সাথে। আশফির মন টাহ ভালো নেই। কারন গতকাল রাতে নেহা চলে গেছে। হঠাৎ এরোকম ভাবে চলে যাওয়ার কারন কি, নেহাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো আশফি। কিন্তু নেহা সেরকম কিছু বলে নি। ব্রেকফাস্ট শেষে আশফি নিজের রুমে ডিভানে বসে বসে গেম খেলছে। হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজের শব্দ হতেই ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজটি দেখতেই, আর একমিনিট ও দেরি করে নাহ আশফি। বেরিয়ে যায় চৌধুরী ম্যানশন থেকে কোনো এক জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

★★★
আরসাল আজ অফিস যায় নি, নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। অনেক সময় হয়ে গেলো সেহেরকে দেখে নি আরসাল। তাই সেহেরের রুমে চলে যায় আরসাল। সেহেরের রুমে যেতেই দেখে সেহের বিছানায় বসে বসে কান্না করছে। আরসাল সেহেরের সামনে দাড়িয়ে সেহেরের মাথায় হাত দিতেই সেহের আরসালের দিকে তাকায়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এতো কষ্ট পাচ্ছিস আমাকে বিয়ে করে? আমি কি এতোটায় খারাপ? আচ্ছা যাই হোক, একটা কথা বলি, আমি কখনো তোর কাছে কোনো প্রকার অধিকার নিয়ে আসবো নাহ। যখন তুই নিজে বুঝবি, যে আমার কোনো দোষ নেই, বা আমাকে বলার সুযোগ টাহ দিবি নিজেকে বোঝানোর তারপর তোকে আমি কাছে টেনে নিবো। ততদিন তুই যদি তোর রুমে আগের মতো থাকতে চাস থাকতে পারিস। সমস্যা নেই। আমার রুমে তোকে আপাততো থাকতে হবে নাহ। টেক ইওর টাইম।”

আরসাল সেহেরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার সেহেরের চোখে পানি নাহ, মুখে হাসি দেখতে চাই।”

কথাটাহ বলেই আরসাল রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে এ কেমন মানুষ। আরসালকে যেনো আজ পর্যন্ত বুঝেই উঠতে পারলো নাহ।

★★★
সন্ধ্যা নেমে গেছে অনেক আগেই। এখন রাত। চারিদিকে যান্ত্রিক আলোয় ভরে উঠেছে। চৌধুরী ম্যানশনে সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে। কেউ টিভি দেখছে আবার কেউ ফোন চালাচ্ছে। মেয়েয়া কিছু কাজকর্ম করে নিচ্ছে। সেহের বসে বসে টুকটাক মা চাচীর সাথে কথা বলছে।
হঠাৎ দরজায় কলিংবেলের আওয়াজে সবাই দরজার দিকে তাকায়। সাথী গিয়ে দরজা খুলতেই দুইজন মানুষ ভেতরে আসে। আর সবাই তাদের দুইজন কে দেখে চমকে যায়। কিভাবে সম্ভব এইটা?

চলবে………………🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-৩২+৩৩

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 32+33

মি. মুবিন এবং রাহুল চৌধুরী ম্যানশনে এসেছে বিয়ের কথা ফাইনাল করতে। সবাই ড্রইংরুমে আছে। জিহাদ চৌধুরী, মায়া চৌধুরী, কবির চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, মি. মুবিন সবাই কথা বলাবলি করছে। আশফি, নেহা, আরসাল, সেহের, রাহুল তাদের কথা শুনছে। আরসাল সেহেরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। সেহের আরসালের দিকে তাকাচ্ছে নাহ, তাই আরসালের তাকিয়ে থাকতে কোনো সমসস্যা হচ্ছে নাহ। সবাই সেহের আর রাহুলের বিয়ের অনুষ্ঠান, দিন নিয়ে কথা বলছে। হঠাৎ সেহের জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আব্বু!”

–” হুম মা বল। কিছু বলবি?”

–” বড় আব্বু আমার কিছু চাওয়ার আছে।”

–” কি চাস বল?”

–” বড় আব্বু আমি চাই, এই বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি যেনো হয়ে যায়। সম্ভব হলে এই সপ্তাহের মধ্যে। আরও একটা কথা, আমি চাই নাহ আমার বিয়েতে বাড়তি কোনো অনুষ্ঠান হোক। সর্বোচ্চ গেলে গায়ে হলুদ টাহ করতে পারো।”

–” কিন্তু সেহের?”

–” প্লিজ বড় আব্বু। তোমরা যদি তাও অন্যান্য অনুষ্ঠান করতে চাও, করতে পারো। কিন্তু আমি বিয়ে ছাড়া আর কোনো কিছুতে এটেন্ড করবো নাহ। আর হ্যা বিয়েটাহ এই সপ্তাহে হলেই ভালো হয়।”

–” কিন্তু সেহের।”
রাহুল জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আংকেল।”

–” হ্যা বাবা বলো!”
রাহুল সেহেরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে, সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আংকেল সেহের যাহ বলছে তাই করুন। গায়ে হলুদ আর বিয়ে ছাড়া অন্য কোনো অনুষ্ঠানের দরকার নাই। আর বিয়েটাহ এই সপ্তাহেই হবে। বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ আর শুক্রবার বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন।”

–” ঠিক আছে তোমরা দুইজনেই যখন এইটায় চাও, তাহলে এইটায় হোক, বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ এবং শুক্রবার বিয়ে ফাইনাল।”
আরসাল জিহাদ চৌধুরীর কথা শুনে কোনোদিকে নাহ তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। সবাই আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

★★★
রাতে আমান বাসায় এসে দেখে আশা বসে বসে কিছু চিন্তা করছে। আশাকে এভাবে চিন্তা করতে দেখে আমান ভ্রু কুঁচকে তাকায় আশার দিকে। আশার যেনো কোনোদিকে কোনো খেয়ালই নাই। আমান আশার পাশে বসে আশার কাধে হাত দিতেই আশা চমকে উঠে। আশা পাশে তাকিয়ে দেখে আমান ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমান বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে তোর? কি ভাবছিস এতো মনোযোগ দিয়ে?”

–” কেনো? তুমি কি কিছু জানো নাহ?”

–” কি জানবো?”

–” আরসাল ভাইয়ার সাথে কথা হয় নাহ তোমার?”

–” আসলে এই দুইদিন অফিসে অনেক প্রেসার। আরসালের সাথে কোনো কথা হয় নি। কেনো কি হয়েছে?”

–” সেহেরের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
আশার কথা শুনে আমান খুশি হয়ে বলে ওঠে,
–” সত্যি? আরসাল আর সেহেরের বিয়ে! ওয়াও!”

–” নাহ। আরসাল ভাইয়া আর সেহেরের নাহ। সেহের আর রাহুল ভাইয়ার।”

–” মানে?”

–” মানে রাহুল ভাইয়ার সাথে সেহেরের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
কথা গুলো শুনতেই আমানের হাসি মিলিয়ে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। আমান বলে ওঠে,
–” আরসাল সব মেনে নিচ্ছে কিভাবে?”‘

–” আরসাল ভাইয়া নিজে বিয়েতে অস্বীকার জানিয়েছে।”

–” মানে কি? আমি কিছুই বুঝতেছি নাহ। প্লিজ একটু ক্লিয়ার করে বল।”
আশা আমানকে সব কিছু বলে দেয়, আরসালের বিয়েতে অস্বীকার করার কথা সব বলতেই আমান বলে ওঠে,
–” আরসাল সেহেরকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানিয়েছে। বিশ্বাস হচ্ছে নাহ। আরসাল সেহেরকে বিয়ে করতে চায় নাহ। হাউ পসিবল?”

আমান আরসালকে ফোন দেয়। প্রথমে কল রিসিভ হয় নাহ। আবারও কল দেয় আমান এইবার কল রিসিভ করে আরসাল বলে ওঠে,
–” আমান বল।”

–” কোথায় তুই?”

–” বাসায়। আমার রুমে।”

–” কাল ফ্রি থাকবি?”

–” হুম! কিন্তু কেনো?”

–” কথা আছে তোর সাথে।”

–” আচ্ছা কাল দেখা করিস। বাই।”
আরসাল ফোন কেটে দেয়। আমান ফোন রেখে আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিছু একটা কারন তোহ আছেই। কারন আরসাল সেহের কে বিয়ে করতে অস্বীকার জানাবে এইটা একদম ইম্পসিবল।”

★★★
সেহের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে আর দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সেহের কখনো ভাবতেও পারে নি তার জীবনে এমন দিন আসবে। সেহের বারান্দার রেলিং ঘেসে বসে পড়ে আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” কেনো করলে এমন? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তোমার? ভালোবেসে ছিলাম এইটায় কি আমার অপরাধ? কেনো করলে এমন? আমি যে আর সহ্য করতে পারছি নাহ। আমি যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। অনেক কষ্টে নিজেকে শক্ত রেখে বিয়েতে রাজি হয়েছি। কিন্তু পারছি নাহ আর। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। থাকবে যখন নাহ তাহলে কাছে কেনো এসেছিলে? শুধু মাত্র প্রতিশোধের তাড়নায়। এতোটাহ ঘৃনা করো আমাকে।”

সেহের হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে।

★★★
আরসাল অফিসে নিজের কেবিনে কাজ করছে। হঠাৎ কেবিনের দরজায় আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে আমান। আমান আরসালের সামনে এসে বসে। আরসাল ল্যাপটপে তার মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। আমান একভাবে আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। এতে আরসাল ঠিক মতো কাজ করতে পারছে নাহ। আরসাল কাজ বন্ধ করে দিয়ে আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?”

–” কেনো করছিস এইসব?”

–” কি করছি?”

–” তুই জানিস নাহ তুই কি করছিস?”

–” বুঝতে পারছি নাহ, কোন বিষয়ে কথা বলছিস?”

–” আরসাল কেউ জানুক বাহ নাহ জানুক। আমি খুব ভালো করেও জানি তুই সেহেরকে কতটাহ ভালোবাসিস। কতটা চাস সেহেরকে। তাই বাচ্চা ভোলানো কথা নাহ বলে এখন বল, কেনো করছিস এইসব?”
আরসাল কিছু নাহ বলে কেবিনের একসাইডে পুরো থাইগ্লাস, সেখানে গিয়ে বাইরের ব্যাস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমান আরসালের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল আমি এইটাও বিশ্বাস করি যে, তোর এইসব করার পিছনে কোনো কারন আছে। প্লিজ আরসাল কেনো করছিস এইসব? বল আমাকে।”

–” আমি আর এখন সেহেরকে ভালোবাসি নাহ।”

–” চোখের সামনে সেহেরকে রাহুলের হতে দেখতে পারবি তোহ?”
আমানের কথা শুনে আরসাল চমকে আমানের দিকে তাকায়। আমান মুচকি হাসি দিতেই আরসাল আবার অন্য দিকে ফিরে যায়। আমান আবার বলে ওঠে,
–” আরসাল আমি জানি নাহ তুই এই কাজ গুলো কেনো করছিস? কারন কি? কিন্তু একটা কথা আরসাল সেহেরের সাথে যদি রাহুলের বিয়ে একবার হয়ে যায়, তাহলে পরে আফসোস করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে নাহ।”

কথা গুলো বলেই আমান চলে যায়। আরসাল আমানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি করবো আমি? আমার হাত পা যে বাঁধা।”

★★★
আজ সেহের আর রাহুলের বিয়ের শপিং করতে যাবে সবাই। কিন্তু সেহের বলেছে সে যাবে নাহ শপিংমলে। বাকি সবাই যেনো যায়। সেহেরকে কেউ জোর করে নাহ শপিং যাওয়ার জন্য।
সময়টাহ বিকাল, চারিদিকে মেঘ জমেছে। সারাদিন ভালোই রোদ ছিলো। হঠাৎ মেঘের আগমন। পুরো বাসায় সেহের একা। হঠাৎ দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে সেহের দরজা খুলে দেখে আরসাল। এইসময় আরসাল কে বাসায় দেখে সেহের কিছুটাহ অবাক হলেও, কিছু বলে নাহ। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বাসায় কেউ নেই?”

–” নাহ, সবাই শপিংয়ে গেছে।”

–” শপিং? কিসের শপিং?”

–” আমার আর রাহুলের বিয়ের শপিং।”
কথাটাহ শুনতেই আরসালের মেজাজ টাহ একদম বিগড়ে যায়। আর কিছু নাহ বলে নিজের রুমে চলে যায় আরসাল। সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে।
চারিদিকে বজ্রপাত সহ ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আরসাল নিজের রুমে কিছু ফাইল চেক করছিলো। হঠাৎ একটা বিকট আকারে বজ্রপাতের আওয়াজে আরসালের সেহেরের কথা মাথায় আসে। সেহের তোহ মেঘের আওয়াজ অনেক ভয় পায়। বাসায় তোহ আর কেউ নাই। আরসাল আর কিছু নাহ ভেবেই সেহেরের রুমে এসে দেখে সেহের বিছানার উপর ভয়ে জড়ো হয়ে আছে। আরসাল সেহেরের কাছে যেতেই সেহের কিছু নাহ ভেবেই আরসাল কে জড়িয়ে ধরে। আরসালও সেহেরকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। সেহের আরসালকে জড়িয়ে বুকে মাথা দিয়ে আছে। হঠাৎ সেহেরের কানে যায় হৃদপিণ্ডের ধক ধক আওয়াজ। সেহেরের এমন মনে হচ্ছে আওয়াজ টাহ যেনো তার নামই নিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে আওয়াজ টাহ শুনতে থাকে সেহের। হঠাৎ সেহেরের খেয়াল হয় সে আরসালকে জড়িয়ে ধরে আছে। তাড়াতাড়ি আরসালের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় সেহের। আরসাল সেহেরকে এরকম সরে যেতে দেখে প্রচুর রাগ উঠে। আরসাল সেহেরের হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করে,
–” আমাকে এভোয়েড কেনো করছিস?”

–” ছাড়ো ভাইয়া। কি হচ্ছে এইসব?”

–” কি হচ্ছে মানে? এইটা তোহ আমার তোকে বলা উচিত। আমাকে এইভাবে এভোয়েড কেনো করছিস?”

–” তাতে তোহ তোমার খুশি হওয়ার কথা। আর আমাকে এইভাবে ধরেছো কেনো? আমি একদিন পর অন্য একজনের বউ হবো ছাড়ো আমাকে।”

–” খুব শখ নাহ রাহুলের বউ হওয়ার?”

–” সেইটা আমার ব্যাপার। প্লিজ ছাড়ো আমাকে। তুমি এখন আমাকে এইভাবে ধরতে পারো নাহ।”
সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহেরকে আরও জোরে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে ওঠে,
–” যার জন্য চুরি করছি সেই আমাকে চোর বলছে। বাহ!”

–” মানে?”

–” বলবো। সময় আসতে দে। আর একটা কথা মাথায় রাখ, #তুই_শুধু_আমার। আমিও দেখি তোকে এভাবে আর কে ধরতে পারে। আমি আবারও বলছি, #তুই_শুধু_আমার।”

–” আমি আর কখনোই তোমার হবো নাহ। পুতুল পেয়েছো আমাকে তাই নাহ? যাহ খুশি তাই করবা। কখনো নাহ। এতোটাহও সস্তা হয়ে যায় নি। আমি আর তোমার কখনোই হবো নাহ।”

–” সে তোহ সময় বলে দেবে কে কার হবে।”
কথাটা বলেই আরসাল সেহেরকে ছেড়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

চলবে………………🌹

কেটে যায় আরও একটা দিন। আজ সেহের আর রাহুলের গায়ে হলুদ। সেইদিনের পর থেকে সেহের আরসাল কে আর দেখে নি। খুব মিস করছে আরসালকে সেহের। কিছু সময় পর সেহেরকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক আসবে। আশা সেহেরের রুমে এসে দেখে সেহের জানালা দিয়েে বাইরে তাকিয়ে আছে। আশা সেহেরের কাছে এসে সেহেরের কাধে হাত রাখতেই সেহের চমকে পাশে তাকিয়ে দেখে আশা দাঁড়িয়ে আছে। আশা সেহেরের মুখে হাত রেখে বলে ওঠে ,
–” কিরে, এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

–” এমনি।”

–” আরসাল ভাইয়াকে ভালোবাসিস?”
আশার কথা শুনে সেহের আশার দিকে তাকিয়ে আর নিজেকে সামলে রাখতে নাহ পেরে আশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বলে ওঠে,
–” ওহ আমাকে বুঝলো নাহ আশা। আমার ভালোবাসাকে বুঝে নি। আমার ভালোবাসা ব্যার্থ হয়ে গেছে। আমি কি করে ভুলবো ওকে?”

–” তাহলে বিয়েতে রাজি কেনো হলি?”
সেহের আশার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” নিজেকে সম্মান দেওয়ার জন্য। আমার কি কোনো সম্মান নেই? তাই এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। নাহলে নিজেকে খুব সস্তা মনে হচ্ছিলো।”

আশা কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। সেহেরকে কখনো চাচাতো বোন হিসাবে দেখে নি আশা। সবসময় নিজের বোনের মতো আগলে রেখেছে। আজ সেই বোন টাহ কত কষ্ট পাচ্ছে। আশা সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিছুক্ষণ পরেই পার্লার থেকে লোক আসবে সাজাতে। রেডি হয়ে নিস গায়ে হলুদের জন্য।”

কথাটাহ বলেই আশা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর সেহের আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে।

★★★
চৌধুরী ম্যানশন আজ আলোয় আলোয় ভরে গেছে চারিদিকে। গার্ডেনে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে চারিদিকে। সেহেরকে বসিয়ে রাখা হয়েছে স্টেজে। সেহেরকে ঠিক একটা পরির মতো দেখাচ্ছে। সেহেরের পরনে আজ লাল পাড় গাঢ় হলুদ কালারের শাড়ি, চুলগুলো সামনে হালকা পাফ করে বেনি করে সামনে রাখা হয়েছে এবং ফুল লাগানো, হালকা মেকাপ, কাচা ফুলের গয়নায় সেহেরকে পরির মতো লাগছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখে আরসালকে কোথাও দেখা যাচ্ছে নাহ। তার মানে আরসাল এখানে আসে নি। হঠাৎ সব লাইট অফ হয়ে যায়। সবাই চমকে উঠে। তার মাঝেই কারো মাথার উপর একটা হালকা ব্লু সেডের লাইট জ্বলে উঠে। সবাই ভালোভাবে তাকাতেই দেখে মানুষটাহ আরসাল, গিটার হাতে নিয়ে বসে আছে। বেজে উঠে গিটার। পুরো গার্ডেনে একটা লাইট আরসালের উপর ফেলা হয়েছে। সবার নজর আরসালের দিকে। আরসাল গিটার বাজাতে বাজাতে চোখ বন্ধ করে গেয়ে উঠে,

,,,,,পাছ আইয়ে,,,,,
,,,,,,,দোরিয়ান ফির বিহ কাম নাহ হুই,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,এক আধুরি,,,,,,,,
,,,,ছি হামারি কাহানি রাহি,,,,,,
,,,,,,,আছমান কো জামিন,,,,,,,,,
,,,,,,,,ইয়ে জারুরি নাহি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,জা মিলে,,,,,,জা মিলে,,,,,,,,,
,,,,,,ইশকে সাচ্চা ওয়াহি,,,,,,
,,,,,,,,,,,জিসকো মিলতি নাহি,,,,,,,
,,,,,মানজিলেন,,,,,,মানজিলেন,,,,,,,
,,,,,,রাং থে নুর থা,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,জাব কারিব তু থা,,,,,,,,
,,,,,,,এক জান্নাত ছা থা ইয়েহ জামান,,,,,,,
,,,,,,,,ওয়াকত কি রে পে,,,,
,,,,,কুছ মেরে নাম ছা,,,,,,,
,,,,,,লিখ কে ছুড গায়া,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,তু কাহান,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,হামারি আধুরি কাহানি,,,,,
,,,,,হামারি আধুরি কাহানি,,,,,,,,( 3x )

{{ বাকি টাহ নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন😊 }}

আরসালের গান শেষ হতেই সব লাইট জ্বলে উঠে। সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। সেহের ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল গিটার টাহ পাশে রেখে সেহেরের দিকে এগিয়ে যায়। বাড়ির সবাই + নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। সেহেরেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল সেহেরের সামনে দাড়িয়ে সেহেরে দিকে হালকা ঝুকে বাটি থেকে একটু হলুদ নিয়ে সেহেরের মুখে লাগিয়ে দেয়। সেহেরের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে আরসালের ছোয়ায়। দৃশ্যটাহ দেখতেই নেহা রেগে অস্থির হয়ে উঠে। আরসাল আর কারো দিকে নাহ তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। এরপর বাকি সবাই সেহেরকে হলুদ মাখাতে থাকে। কিন্তু সেহেরের যেনো কোনোদিকে খেয়াল নেই।
আরসালকে বাসার ভেতর যেতে দেখে নেহাও আরসালের পেছনে পেছনে আসে। আরসাল রুমে এসে পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে নেহা দাঁড়িয়ে আছে। আরসাল নেহাকে দেখে কিছু নাহ বলে অন্যদিকে ফিরে যায়। নেহার এতে আরও রাগ উঠে যায়। নেহা এগিয়ে এসে আরসালকে নিজের দিকে ফিরিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” তুমি কি ভুলে যাচ্ছো সব কিছু?”

–” কিছুই ভুলি নি।”

–” তাহলে ফাংশনে যাহ করছিলে সেইসব কি ছিলো আরসাল?”

–” তার কৈফিয়ত কি আমাকে এখন তোমাকে দিতে হবে?”

–” আরসাল তুমি জানো নাহ আমি কি কি করতে পারি।”

–” You are wrong, Neha. আমি সব জানি তুমি কি কি করতে পারো। আর তোমার ক্ষমতা কতটুকু। কিসের ভয় দেখাচ্ছো আমাকে? সেহেরের ঐ ফটো গুলোর? নেহা তুমি নিজেও জানো ফটো গুলো তুমি ভাইরাল করতে পারবে নাহ। কারন আমি সেহেরকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানাবো এইটায় কন্ডিশন ছিলো। অন্য কিছু নাহ। আমি আমার কাজ করছি। এরপরও যদি ফটো গুলোর কিছু হয়, তাহলে তুৃমিও জানো নাহ আমি কতটাহ ভয়ংকর হতে পারি। সব সহ্য করবো কিন্তু সেহেরের কোনো ক্ষতি সহ্য করবো নাহ। মাইন্ড ইট!”
কথা গুলো বলেই আরসাল ওয়াশরুমে চলে যায়। নেহাও রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়।

★★★
পরনে গায়ে হলুদের সাজে শাওয়ারের নিচে বসে আছে সেহের। দুচোখের পানি শাওয়ারের পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। গায়ে হলুদের ফাংশন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আর সহ্য হচ্ছিল নাহ এই গায়ে হলুদের সাজ। নিজেকে হালকা করার জন্য কান্না করছে। খুব কান্না করছে সেহের। নিজের কষ্টকে যেনো শাওয়ারের পানিতে ধুয়ে দিতে চাইছে সেহের।
প্রায় দেড় ঘন্টার মতো শাওয়ার নিয়ে, নিজের বিছানায় বসে আছে। আহিয়া চৌধুরী সেহেরের রুমে এসে দেখে, সেহেরের চুল ভেজা, ফ্লোরে গায়ে হলুদের শাড়ি ভেজা অবস্থায় পড়ে আছে, ফুলের গহনা গুলোও ভিজে পড়ে আছে ফ্লোরে, মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে আহিয়া চৌধুরীর বুকের ভেতরটাহ মোচড় দিয়ে উঠে। আহিয়া চৌধুরী এগিয়ে এসে সেহেরের পাশে বসে সেহেরের মাথায় হাত রাখে। সেহের পাশে তাকিয়ে দেখে তার মা। সেহের আস্তে আস্তে আহিয়া চৌধুরীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। আহিয়া চৌধুরী কিছুই জিজ্ঞাসা করে নাহ সেহেরকে, সেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করে। সেহের চোখ বন্ধ করে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

★★★
রাহুল দাড়িয়ে আছে, সেহেরের সেই হাসি মুখের ফটোর সামনে। রাহুল হাত বাড়িয়ে সেহেরের ফটোর উপর হাত রেখে বলে ওঠে,
–” আর আজকের রাত টাহ। কাল থেকে তুমি আমার। শুধু আমার। কাল থেকে আমি তোমাকে বলতে পারবো সেহের #তুমি_শুধু_আমার। I love you, Seher. I love you very much. আমার সব স্বপ্ন কাল পুরন হতে চলেছে। আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চলেছে। I am so happy. এতো টাহ আনন্দ লাগছে যে বলে বোঝাতো পারবো নাহ। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। আমি তোমাকে অনেক সুখে রাখবো সেহের। তোমার জীবন ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে দিবো। তোমার জীবনে কোনো কষ্ট আমি আসতে দিবো নাহ। সেহের, তোমাকে দেখার পর আমি বুঝেছি ভালোবাসা কি? ভালোবাসার অনুভূতি কি? শুধু এইটুকুই বলতে চাই, অনেক ভালোবাসি তোমাকে। অতিরিক্ত ভালোবাসি। আমার ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। নিখুঁত ভালোবাসা আমার।”

★★★
আরসাল বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে কি হয়ে গেলো সবকিছু। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” হারিয়ে ফেলবো তাহলে তোকে সেহের। কি করবো, তোর সম্মান টাহ যে বেশি ইম্পর্টেন্ট আমার কাছে। অনেক ভালোবাসি সেহের। অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে। খুব করে চেয়েছিলাম তোকে। কিন্তু?”

হঠাৎ আরাসাল কিছু একটা মনে পড়ে যায়। আরসাল তাড়াতাড়ি রুমে এসে ল্যাপটপ ওপেন করে কিছু একটা বের করেই দেখতেই আরসালের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে।

★★★
আমান ল্যাপটপে কাজ করছে। আশা ঘুমানোর জন্য বিছানা রেডি করছে। আশার মন টাহ ভালো নেই। শুধু সেহেরের সকালের সেই কান্না আর তার বলা কথা গুলো মনে পড়ছে। হঠাৎ আশার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসার শব্দে ফোন টাহ হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজ টাহ ওপেন করতেই দেখে লিখা আছে, ” তোমার সুখের সংসার শেষ হয়ে যাওয়ার সময় এসে গেছে।” ম্যাসেজ টাহ দেখে আশা অনেক ভয় পেয়ে যায়। হঠাৎ আমানের চোখ যায় আশার দিকে। আশাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেকটাহ ভয় পেয়ে আছে। আমান ল্যাপটপ টাহ বন্ধ করে আশার সামনে এসে আশার কাধে হাত রেখে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে?”

আমানের কথায় চমকে উঠে আশা। আশাকে এমন করে চমকে উঠতে দেখে আমান বলে ওঠে,
–” রিলাক্স! এতো ভয় পেয়ে আছিস কেনো?”

–” আমান এইটা দেখো।”
আমানের দিকে ফোন টাহ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে আশা। আমান ফোন টাহ হাতে নিয়ে ম্যাসেজ টাহ দেখে আশার দিকে তাকায়। আশা যে ম্যাসেজ টাহ দেখে অনেক ভয় পেয়েছে তাহ তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। তাই আমান আশাকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে ওঠে,
–” আরে ভয় পাচ্ছিস কেনো? আমার মনে হয় এইটা কেউ ইচ্ছা করে তোর সাথে মজা করছে। এইটা নিয়ে এতো ভাবার কিছু নাই।”

–” কিন্তু আমান?”

–” কোনো কিন্তু নাহ। আচ্ছা চল, এই ভয় টাহ কে দুরে সরিয়ে অন্য ভয় নিয়ে আসি তোর মাঝে।”

–” মানে?”

–” মানে!”
কথাটাহ বলেই আমান বাঁকা হাসি দিয়ে আশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আশার শাড়ির নিচ দিয়ে কোমর চেপে ধরে আমান। আশা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আমান আশার সামনের চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে কপালে একটা চুমু দেয়। আশা আমানের স্পর্শে চোখ বন্ধ করে নেয়। আমান আশার বন্ধ করা দুই চোখের উপর চুমু দেয়। আশার পুরো শরীর কাঁপতে থাকে। আমান আশার চুলের নিচে দিয়ে আশার কাধে হাত দিয়ে মুখ টাহ এগিয়ে নিয়ে এসে নিজের ঠোঁটের সাথে আশার ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আশা যেনো হারিয়ে যাচ্ছে আমানের ভালোবাসায়। আশা এক হাত দিয়ে আমানের টিশার্টের কলার্ট আর এক হাত দিয়ে নিজের শাড়ি চেপে ধরে রাখে। কিছুক্ষন পর আমান আশার ঠোঁটের স্পর্শ ত্যাগ করে আশাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়। আশা আমানের দিকে তাকিয়ে আছে। আমান রুমের লাইট অফ করে দেয় এবং হালকা গ্রিন সেডের ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আমান আশার উপর আধশোয়া হতেই, আশা আমানের মুখে হাত রেখে আমানের কপালে একটা চুমু দেয়। আমানও আশার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে ওঠে,
–” আশা!”

–” হুম!”

–” একটা নতুন মানুষ আনলে কেমন হয়? যে আমাকে পাপা বলে ডাকবে আর তোকে মাম্মাম।”
আশা কিছু নাহ বলে আমানকে জড়িয়ে ধরে। আমান মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আপনি কি রাজি ম্যাম?”

আশা কিছু নাহ বলে আমানের বুকে একটা চুমু দিতেই আমান তার উত্তর পেয়ে যায়। আমান আশার কপালে একটা চুমু দিয়ে আশার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আশার এক হাত আমানের চুল আকড়ে ধরে। আমান আশার শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিয়ে আশার গলায় মুখ ডুবায় আমান। উষ্ণ ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে থাকে আশাকে। আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে আমান আর আশার মাঝের সব আবরন। আশাকে নিয়ে নতুন স্বপ্নের জ্বাল বুনতে থাকে আমান। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে থাকে আশাকে। আমান আর আশা ভেসে যেতে থাকে এক ভালোবাসার রাজ্যে।

★★★
সেহেরের আজ খুব ভোরেই ঘুম ভেঙে গেছে। আজ সেই দিন, আজ সেহের পুরোপুরি অন্য একজনের হয়ে যাবে। তার উপর সৃষ্টি হবে নতুন একজনের অধিকার। সেহেরের ভালেবাসার বলি হবে আজ। সেহের কি মনে করে যেনো আরসালের রুমের সামনে আসে। সেহের হালকা চাপ দিয়ে দরজা খুলে দেখে আরসাল উবুড় হয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। আরসালকে পুরো একটা বাচ্চার মতো দেখাচ্ছে। আরসালের ঘুমন্ত ফেস সেহেরের প্রচন্ড ভালো লাগে, মনে হয় যেনো কোনো বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে, অনেক কিউট দেখায় আরসালকে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ওঠে,
–” আজ আমি পুরোপুরি অন্য কারো হয়ে যাবো। তোমার আর কোনো অধিকার থাকবে নাহ আমার উপর। আমার ভবিষ্যত অন্য একজন হবে৷ তুমি তোহ আমাকে ভালোবাসোয় নাহ। ঘৃনা করো আমাকে। কিন্তু আমি যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা হেরে গেলো ভাইয়া। যেখানে কোনো দোষ করি নি, তাও তার দোষী হয়ে গেলাম। তোমাকে বোঝাতেই পারলাম নাহ, কতটাহ ভালোবাসি তোমাকে। তুমি ভালো থেকো! আমি তোমার জন্য সবসময় দুর থেকেই দোয়া করবো।”

সেহের এগিয়ে এসে আরসালের কপালে একটা চুমু দেয়। কারন এইটায় হয়তো আরসালকে দেওয়া তার শেষ ছোয়া। আর তোহ কখনো পারবে নাহ আরসালকে ছুতে, তাই আর নিজেকে সামলাতে পারে নি সেহের। সেহেরের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। সেহের চোখ মুছতে মুছতে আরসালের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
সেহের চলে যেতেই আরসাল চোখ মেলে সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

★★★
সেহের বউ সাজে রেডি। কিছুক্ষণের মাঝেই রাহুলরা চলে আসবে। সেহেরকে পুরো পুতুলের মতো দেখাচ্ছে। সেহেরকে একটা লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে। যার টপ গোলডেন কালারের, ঘাগরা লাল রং এর, দোপাট্টা লাল কালারের, এবং ঘোমটা গোলডেন কালারের, ভারি মেকাপ, চুল গুলো সামনে পাফ করে পেছনে খোপা করে ফুল লাগানো, আর সোনার গহনায় সেহেরকে একদম পুতুলের মতো লাগছে। আয়ানায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছে সেহের। নিজেকে কার জন্য সাজাতে চেয়েছিলো আর কার জন্য সাজলো, তাই ভেবে তাচ্ছিল্যের হাসি দিচ্ছে। হঠাৎ নিচে ব্যান্ড পার্টির আওয়াজে সেহেরের বুঝতে দেরি হলো নাহ রাহুলরা এসে গেছে। সেহের জানালার কাছে দাড়াতেই দেখতে পাই সবাই রাহুল কে ওয়েলকাম করছে। রাহুল একদম বর বেশে এসেছে। মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠেছে রাহুলের। সেহের ভাবছে আজ থেকে তার নতুন জীবন শুরু কিন্তু সেইটা আরসালের হাত ধরে নাহ, রাহুলের হাত ধরে।

চলবে………………..🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-৩০+৩১

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 30+31

সবাই যার যার মতো পার্টি এনজয় করছে। আশা সেহের কে নিয়ে কেকের সামনে দাড়ায়। সেহের কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দেয়। কেক কাটা শেষে সবাই নিজের মতো করে একজয় করছে। হঠাৎ পুরা লাইট অফ হয়ে যাওয়ায় সবাই চমকে উঠে। সবাই কিছু বুঝে উঠার আগেই স্টেজে একটা লাইট জ্বলে উঠে এবং কেউ একজন গিটার নিয়ে বসে আছে এবং বাজানো শুরু করে। এরপর পুরো রুমের লাইট জ্বলে উঠতেই দেখে মানুষ টাহ আরসাল। আরসাল গিটার বাজাতে থাকে।

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে৷)
,,,,,,,তোর মন পাড়ায়,,,,,,
,,,,,,,,,,,থাকতে দে আমায়,,,,,,,,
,,,,,আমি চুপটি করে দেখবো,,,,,,,
,,,,,,,আর ডাকবো ইশারায়,,,,,,,,
,,,,,,,,তুই চাইলে বল,,,,,,
,,,,,,,,,,আমার সঙ্গে চল,,,,,,,,
,,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,
‘,,,,,,,,অভিমানি মন আমার,,,,,
,,,,,,,,,,,চাই তোকে বারে বার,,,,,,( 2x )
,,,,তাই বলি আয়রে ছুটে আয়,,,,,,
,,,,,,,তোর মন পাড়ায়,,,,,,
,,,,,,,,,,,থাকতে দে আমায়,,,,,,,,
,,,,,আমি চুপটি করে দেখবো,,,,,,,
,,,,,,,আর ডাকবো ইশারায়,,,,,,,,
,,,,,,,,তুই চাইলে বল,,,,,,
,,,,,,,,,,আমার সঙ্গে চল,,,,,,,,
,,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,

সেহের মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসালও মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। আশফি নেহার দিকে তাকিয়ে মনে হলো, নেহার মন টাহ মনে হয় খুব একটা ভালো নাই। আশফির মাঝে মাঝে মনে চায় নেহা কে বলে দিতে, যে সে কতটাহ ভালোবাসে নেহাকে। কিন্তু পারে নাহ। রাহুল একটু এগিয়ে এসে আর একটা গিটার নিয়ে আরসালের সাথে তাল মিলিয়ে বাজানো শুরু করে।

রাহুল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,,,তোর হৃদয় আঙিনায়,,,,,
,,,,,,,,থাকতে আমি চায়,,,,,,,
,,,,,,,,,,,তুই ছাড়া বাঁচার নেই রে উপায়,,,,,
,,,,,,কিভাবে ওরে তোকে ছেড়ে,,,,,,
,,,,,,,,,একাকী আমি জীবন কাটাই,,,,,,,
‘,,,,,,,,অভিমানি মন আমার,,,,,
,,,,,,,,,,,চাই তোকে বারে বার,,,,,,( 2x )
,,,,তাই বলি আয়রে ছুটে আয়,,,,,,
,,,,,,,তোর মন পাড়ায়,,,,,,
,,,,,,,,,,,থাকতে দে আমায়,,,,,,,,
,,,,,আমি চুপটি করে দেখবো,,,,,,,
,,,,,,,আর ডাকবো ইশারায়,,,,,,,,
,,,,,,,,তুই চাইলে বল,,,,,,
,,,,,,,,,,আমার সঙ্গে চল,,,,,,,,
,,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,

সেহের রাহুলকে গান করতে দেখে অবাক হয়ে তাকায় রাহুলের দিকে। রাহুলের দিকে তাকাতেই সেহেরের মনে হলো, রাহুলের চোখ কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু সেহের বুঝছে নাহ। কিন্তু আরসালের চোখের দিকে তাকাতেই সেহেরের বুঝতে একটুও কষ্ট হয় নাহ, যে এই মানুষটাহ তাকে কত করে চায়।

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,শুধু তোকে ঘিরে,,,,,
,,,,,,,,,,,,শত স্বপ্নের ভিড়ে,,,,,,,,
,,,,,,এখন আমার বসবাস,,,,,,,
,,,,,,,,,তুই এলে জীবনে,,,,
,,,,,পাবো বাঁচার মানে,,,,,,,
,,,,,,,,,,পাবো সুখেরি আভাস,,,,,,
,,,,,,,,অভিমানি মন আমার,,,,,
,,,,,,,,,,,চাই তোকে বারে বার,,,,,,( 2x )
,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,

আরসাল + রাহুল ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,তোর মন পাড়ায়,,,,,,
,,,,,,,,,,,থাকতে দে আমায়,,,,,,,,
,,,,,আমি চুপটি করে দেখবো,,,,,,,
,,,,,,,আর ডাকবো ইশারায়,,,,,,,,
,,,,,,,,তুই চাইলে বল,,,,,,
,,,,,,,,,,আমার সঙ্গে চল,,,,,,,,
,,,,,,,ঐ উদাস পুরের বৃষ্টিতে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজ ভিজবো দুজনায়,,,,,,,

গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আরসাল আর রাহুল একবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুইজন একসাথে সেহেরের দিকে তাকায়।

★★★
রাহুল নিজের রুমে রকিং চেয়ারে বসে আছে। সেহেরের বার্থডে পার্টি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন রাহুল নিজের রুমে রকিং চেয়ারে বসে বসে কফি খাচ্ছে। সামনে সেহেরের একটা বড় ফটো ঝুলানো আছে। রাহুল এই ফটো টাহ অনেক আগেই নিজের রুমে লাগিয়েছে। রাহুল রকিং চেয়ার থেকে উঠে এসে সেহেরের ফটোর সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” কবে পাবো তোমাকে নিজের করে? আমার স্বপ্নের রানি বানিয়ে। আমার সব চাওয়া তোহ তুমি সেহের। বিদেশে থাকতে কখনো ভাবিই নি যে, কাউকে এতো টাহ ভালোবাসবো। কিন্তু বেসে ফেললাম। আর এখন সেই ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়া বাকি। যেইটা খুব তাড়াতাড়ি করবো।”

কয়েকদিন পর……….

নেহা রেডি হচ্ছে বাইরে যাওয়ার জন্য। নিচে নেমে আসতেই দেখে মায়া চৌধুরী, জিহাদ চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, কবির চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী সবাই মিলে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে। নেহা তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই তারা সবাই নেহার দিকে তাকায়। নেহা তাদের সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিছু কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?”

মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে নেহার সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আসলে, রাহুলের বাসা থেকে রাহুলের সাথে সেহেরের বিয়ের সমন্ধ এসেছে৷ এখন আরসালকে নাহ জানিয়ে কিছু বলতেও পারছি নাহ। ভাবছি আরসাল কে জিজ্ঞাসা করি। এখন তোহ সেহের আর আরসাল এর ভিতর বন্ডিংটাহ বেশ ভালো। আরসাল বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে। তারপর রাহুলদের বুঝিয়ে, আরসাল আর সেহেরের বিয়ে টাহ দিয়ে দিবো। কি বলো?

নেহা মুখে চাপা হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম! আচ্ছা আন্টি আমার একটু কাজ আছে। আসছি।”

–” হুম! সাবধানে।”
নেহা বাসা থেকে বেরিয়ে এসে গাড়ির সামনে দাড়িয়ে মনে মনে বলে ওঠে,
–” নেহা এই কয়েকদিন সব কিছু মেনে নিয়ে এসেছিস। এখন ফাইনাল রাউন্ড চলে এসেছে, আরসালকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার জন্য।”

★★★
দরজায় বেল বাজতেই সেহের দরজা খুলে দেখে আরসাল। আরসাল সেহেরের দিকে নাহ তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। সেহের ব্যাপার টাহ দেখে একটু অবাক হয়। আরসাল ওকে দেখলো নাহ, ব্যাপারটাহ কেমন হলো?
সেহেরও আরসালের পিছনে পিছনে আরসালের রুমে আসে। আরসাল ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দেখে রুমে সেহের। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। কিন্তু এতে যেনো আরসালের কোনো রিয়াকশন নাই। সেহের আরসালের এমন ব্যাবহারে অনেকটাহ অবাক হয়ে যায়। সেহের আরসালের সামনে এসে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া!”

–” হুম বল।”

–” কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেনো?”

–” কেমন করছি।”

–” আমার দিকে তাকাচ্ছোই নাহ?”

–” তোর দিকে তাকানোর কি আছে?”

–” মানে?”

–” সেহের আমার ভালো লাগছে নাহ, তুই যা।”
আরসাল কথাটাহ বলেই বারান্দায় গিয়ে দরজা আটকে দেয়। সেহের অনেক অবাক হয়ে যায় আরসালের এমন ব্যাবহারে। সেহের বুঝেই উঠতে পারছে নাহ, আরসালের এমন ব্যাবহারের কারন কি?
আরসাল হয়তো ক্লান্ত এই ভেবে নিজের রুমে চলে যায় সেহের।

★★★
আশা সব কাজ কমপ্লিট করে নিজের রুমে এসে দেখে আমান রুম অন্ধকার করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে। আশা রুমের লাইট জালাতেই আমান চোখ মুখ কুচকে আশার দিকে তাকাতেই আশা বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? এতো তাড়াতাড়ি, রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছো।”

–” কিছু নাহ।”

–” কিছু তোহ হয়েছে।”

–” এমনি কিছু হয় নি। আসলে একটা জিনিস মনে পড়লো। তাই!”

–” কি মনে পড়ছে?”

–” কিছু নাহ। তুই কষ্ট পাবি শুনলে।”

–” নাহ পাবো নাহ। প্লিজ বলো কি হয়েছে?”

–” আজ জেরিনের বার্থডে ছিলো।”
আমানের কথা শুনে আশার খারাপ লেগে উঠলেও, আমান কে বুঝতে নাহ দেওয়ার জন্য মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” ওহ!”

–” হুম।”

–” আমান?”

–” হুম কিছু বলবি?”

–” তুমি তোহ এখনে জেরিন কে ভালোবাসো তাই নাহ?”

–” জানি নাহ। সত্যি জানি নাহ। আসলে মনে পড়লো আজ ওর বার্থডে৷ তাই আগের ওর সাথে কাটানো সময় গুলো মনে পড়তেই মন টাহ কেমন করে উঠলো। হ্যা, এইটা সত্যি আমি আজও ওকে ভুলতে পারি নি। কারন যদি ভুলে যেতাম, তাহলে আজ ওর কথা মনে পড়তো নাহ৷ কিন্তু আশা আমি যে তোকে ভালোবাসি, এতে কোনো খাদ নাই৷ আমি সত্যিই তোকে ভালোবাসি। তুই কষ্ট পাচ্ছিস তাই নাহ?”

–” নাহ! বিশ্বাস করো, আমি কষ্ট পাচ্ছি নাহ। প্রথম শোনা মাত্রই একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। কিন্তু এখন পাচ্ছি নাহ। কারন তুমি যদি এখন এইটা বলতে তুমি জেরিন কে একটুও মনে করো নাহ, তাহলে আমি ভাবতাম তোমার কোনো প্রব্লেম আছে। কারন ভালোবাসা তোহ আর এতো সহজে ভোলা যায় নাহ। তাই এই কথা শুনে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, বিশ্বাস সব যেনো বেড়ে গেলো।”
আশার কথা শুনে আমান মুচকি হাসি দিয়ে আশার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আশাও আমানকে জড়িয়ে ধরে।

★★★
আরসাল বাদে সবাই ডিনার করার জন্য চলে এসেছে। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” সাথী, রাহুল ভাইয়া কে গিয়ে বলো ডিনারে আসার জন্য।”

–” ওকে! বড় আম্মু।”
সাথী যেয়ে আরসাল কে ডেকে নিয়ে আসলে সবাই ডিনার করতে বসে পড়ে। জিহাদ চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”

–” হুম বলো।”

–” দেখো আরসাল কথা গুলো সরাসরি আলোচনা করা দরকার। তাই বলছি, আগে তুমি সেহেরকে চেয়েছিলে, কিন্তু সেই সময় টাহ উপযুক্ত ছিলো নাহ তোমাদের জন্য। কিন্তু এখন উপযুক্ত সময়। তাই আমি সরাসরি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি সেহেরকে বিয়ে করতে চাও?”
সবাই আরসালের দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। সেহের মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি সেহেরকে বিয়ে করতে চাই নাহ।”

সেহের নিজের রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় আগে ডাইনিং এ ঘটে যাওয়া ঘটনা যেনো সেহেরের মাথায় ঘুরছে। কিছুই মিলাতে পারছে না সেহের। চোখ বন্ধ করে কিছু সময় আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করছে সেহের।

কিছু সময় আগে………..

জিহাদ চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”

–” হুম বলো।”

–” দেখো আরসাল কথা গুলো সরাসরি আলোচনা করা দরকার। তাই বলছি, আগে তুমি সেহেরকে চেয়েছিলে, কিন্তু সেই সময় টাহ উপযুক্ত ছিলো নাহ তোমাদের জন্য। কিন্তু এখন উপযুক্ত সময়। তাই আমি সরাসরি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি সেহেরকে বিয়ে করতে চাও?”
সবাই আরসালের দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। সেহের মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি সেহেরকে বিয়ে করতে চাই নাহ।”

কথাটা শোনা মাত্রই সেহের চমকে আরসালের দিকে তাকায়, মুখের হাসি মিলিয়ে যায়, অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়। শুধু সেহের নাহ প্রত্যেকেই অবাক হয়ে যায়। কারন এই কয়েকদিন সেহের আর আরসালের আচরন সবাই খেয়াল করছে। সবাই অনেক আশাবাদী ছিলো৷ মায়া চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল তুই যাহ বলছিস, মানে!”

–” কি মানে আম্মু? তোমরা ভাবলে কি করে আমি সেহেরকে বিয়ে করবো? এই কয়েকদিন সেহেরের সাথে কথা বলেছি এইজন্য? হাউ ফানি! হ্যা! এই কয়েকদিন ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলেছি, কারন ও আমার কাজিন, আমার লাইফে ওকে পরিচয় দিতে হয়। তাই একটু কথা বলেছি, যাতে মানুষের সামনে কথা বলতে কোনো অসুবিধা নাহ হয়। আর তোমরা সেইটা বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে গেছো, হাউ পসিবল?”
সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসালের কথা শুনে নিজেকে যেনো পাথরের মতো লাগছে। সেহের বুঝতেই পারছে নাহ আরসালের বলা কথাগুলো। কি বলছে আরসাল এইসব? সেহের শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” সেহেরকে আমি বিয়ে করতে চাই নাহ। বিকজ আই হেট সেহের।”

কথাটা বলেই আরসাল নিজের রুমে চলে যায়। সবাই সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের সবার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

বর্তমান…………

সেহের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সেহের মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ভাইয়া আমাকে ঘৃনা করে, তাহলে এতোদিন যাহ ছিলো সেইসব কি? ভাইয়া যদি আমাকে ঘৃনাই করবে তাহলে এতো সুন্দর ভাবে প্রপোজ কেনো করেছিলো? বার্থডে উইশ কেনো করেছিলো? কেনো? ভাইয়াকে এর উত্তর দিতেই হবে।”

সেহের নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে আরসালের রুমের দিকে যায়।

★★★
কবির চৌধুরী রুমে বিছানায় কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছেন। আহিয়া চৌধুরী কবির চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলে ওঠে,
–” শুনছো?”

–” হুম বলো!”

–” আরসাল?”

–” আরসালের সাথে সেহেরের বিয়ে মনে হয় আর হবে নাহ। দাভাই এর সাথে কথা বলে রাহুলের সাথে সেহেরের বিয়ে ফাইনাল করবো।”

–” আমার কাছে আর শোনার দরকার নেই। সেহেরের কাছে শুনে বিয়ে ফাইনাল কর।”
জিহাদ চৌধুরী কথা গুলো বলতে বলতে রুমে আসে। জিহাদ চৌধুরী কে দেখে কবির চৌধুরী উঠে বসে। কবির চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” দাভাই, বলছি যে আরসাল কে কি আর একবার!”

–” কোনো দরকার নাই। এরপরও আরসাল কে বোঝানো বা এই বিষয়ে কোনো রকম কথা বলা মানেই হলো সেহের মা কে অপমান করা। আরসাল নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করছে। এতে কি সেহের মায়ের সম্মানে লাগছে নাহ? আমি ধুমধাম করে সেহের মায়ের বিয়ে দিবো। এবং সেইটা আরসালের সামনে, রাহুলের সাথে।”

–” হুম!”

★★★
আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাৎ দরজা বন্ধ করার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে সেহের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। আরসাল ল্যাপটপ টাহ পাশে রেখে দাড়িয়ে পড়ে। সেহেরের মুখ লাল হয়ে গেছে, মুখ টাও একটু ফোলা ফোলা লাগছে। সেহেরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ কিছু সময় কান্না করেছে। সেহের আরসালের সামনে দাড়িয়ে কাঁদো গলায় বলে ওঠে,
–” এইসব কি ভাইয়া?”

–” কোন সব?”

–” তুমি আমাকে ভালোবাসাে নাহ?”

–” নাহ।”

–” তাহলে এতোদিন যা ছিলো? সেইসব কি?”

–” নাটক।”

–” নাটক? কিন্তু নাটক করার কারন কি?”

–” প্রতিশোধ।”

–” প্রতিশোধ? কিসের প্রতিশোধ?”
সেহের যেনো অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার অতীতের। তোর জন্য এই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল, নিজের মায়ের হাতে থাপ্পড় খেতে হয়েছিল। সব কিছুর প্রতিশোধ নিলাম। আর তোকে আমি লাভ করি নাহ, শুধু হেট করি। আর এইটায় সত্যি।”

সেহের অবাক হয়ে আরসালের কথা আরসালের কথা শুনছে। কি বলবে কিছুই যেনো মাথায় আসছে নাহ সেহেরের। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” এইবার তুই যেতে পারিস।”

সেহের এখনো আরসালের দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। আরসাল সেহেরের হাত ধরে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দেয়।
সেহের আস্তে আস্তে নিজের রুমে চলে এসে বিছানায় বসে পড়ে। সেহেরের মাথায় যেনো এখনো কিছুই আসছে নাহ। বিছানায় শুয়ে পড়ে সেহের। এখন কান্না করছে নাহ সেহের। আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে সেহের।

★★★
সেহের বাদে সবাই ডাইনিং এ বসে আছে ব্রেকফাস্ট করার জন্য। হঠাৎ কেয়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” ঐতোহ সেহের আসছে।”

কেয়া চৌধুরীর কথা শুনে সবাই সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের আসছে। সেহেরের মুখটাহ কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। সেহের এসে টেবিলে বসে, খাবার খাওয়া শুরু করে। জিহাদ চৌধুরী সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের মামনি!”

–” হুম! বড় আব্বু বলো।”

–” তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো মামনি।”

–” হুম বলো!”

–” আসলে বলছিলাম যে, আমি তোমার সাথে রাহুলের বিয়ে দিতে চাই। এই ব্যাপারে তোমার মতামত কি?”
জিহাদ চৌধুরীর কথা শুনে আরসাল চমকে তাকায় সেহেরের দিকে। সেহের আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে, আবার জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি রাজি বড় আব্বু।”

সেহেরের কথা শুনে সবাই সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের আবার বলে ওঠে,
–” তোমরা সবাই এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? তোমরা আমার মতামত চেয়েছিলে আমি হ্যা বলেছি। আমার এই বিয়েতে কোনো সমস্যা নাই। বাকি টাহ তোমাদের ইচ্ছা।”

সেহের কথাটাহ বলতেই আরসাল খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। সেহের একবার আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার খেতে শুরু করে। বাকি সবাই কিছুই যেনো বুঝছে নাহ।
কিন্তু এইসব দেখে একজনের ঠোঁটের হাসি যেনো সরছে নাহ। আর সে হলো নেহা। নেহা সেহেরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” খুব শখ তাই নাহ, আরসালের বউ হওয়ার। কিন্তু ভাগ্যে সইলো নাহ। খুব কষ্ট হচ্ছে সেহের তোমার জন্য৷ আফসোস, কিছুই করার নেই।”

★★★
আরসাল নিজের রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে আছে আর আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ দরজার আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে নেহা বাঁকা হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। নেহা কে দেখেই যেনো আরসালের রাগ হাজার গুন বেড়ে গেছে। নেহা আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” তুমি ব্রেকফাস্ট নাহ করে চলে এলে কেনো?”

–” লিসেন নেহা, তুমি যাহ করছো তার জন্য কিন্তু তোমাকে পস্তাতে হবে। মাইন্ড ইট!”

–” আরসাল! আমি জানি আমি কি করছি আর এর ফলাফল কি হতে পারে। আরসাল আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

–” কিন্তু আমি বাসি নাহ। কেনো বুঝতেছো নাহ?”

–” বুঝতে চাই নাহ। শুধু যাহ বলেছি তাই করো। নাহলে, জানোই তোহ কি হবে।”
আরসাল আর কিছু বলে নাহ। চোখ, মুখ শক্ত করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। নেহা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চলে যায়। আরসাল বারান্দায় গিয়ে রেলিং এ হাত রেখে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সেদিন অফিসের ঘটনা মনে করতে থাকে।

Flashback……….

আরসাল অফিসে নিজের কেবিনে কাজ করছে। হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজের শব্দ পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসছে। ম্যাসেজ টাহ ওপেন করে দেখে কিছু ফটো পাঠানো হয়েছে, তাও সেহেরের। ফটো গুলো খুবই বাজে ভাবে তোলা হয়েছে। ফটোগুলো দেখে আরসাল অবাক হয়ে যায়, সাথে রাগে যেনো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আরসালের। আরসাল বুঝতেই পারছে নাহ সেহেরের এমন বাজে ফটো কিভাবে তোলা হয়েছে, আর কেই বাহ তুলছে? সেইসময় কেবিনের দরজার আওয়াজে সেইদিকে তাকিয়ে দেখে নেহা এসেছে। নেহা আসতেই আরসাল ফোন টাহ অফ করে দিয়ে, নিজেকে সামলে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা তুমি এখন, এইসময় এখানে?”

–” হুম! আসলে জানতে আসলাম ফটো গুলো কেমন হয়েছে?”
নেহার কথা শুনে আরসাল চমকে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মানে?”

–” সেহের ফটো গুলো কেমন হয়েছে?”

–” তারমানে তুমি?”

–” হুম! আমি, আমিই এই ফটো গুলো তোমাকে পাঠিয়েছি।”

–” এরকম ফটো তুমি কোথায় পেলে? আর সেহের এরকম ভাবে ফটো গুলো তুলবেই বাহ কেনো?”

–” সেহের তোহ তুলে নি।”

–” তাহলে এই ফটো গুলো?”

–” এডিট করা।”

–” এডিট?”

–” হুম! এডিট করা।”

–” কিন্তু, কেনো করেছো এইসব?”

–” কারন টাহ তুমি।”
নেহার কথা শুনে আরসাল যেনো অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে। আরসাল নেহার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নেহা আরসালের সামনে দাড়িয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” দেখো আরসাল, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছেড়ে বিদেশে থাকতে পারছিলাম নাহ জন্য, বিডি তে আসলাম। আর তুমি আমারই চোখের সামনে সেহেরকে বিয়ে করবা এইটা তোহ হতে দিবো নাহ। এই কয়েকদিন আমি সব মেনে নিচ্ছিলাম, চুপচাপ ছিলাম, কারন, আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। আর এর থেকে বড় সঠিক সময় আর কিছুই হতে পারে নাহ। এখন তুমি যদি আমার কথা মতো কাজ নাহ করো, তাহলে আমি এই ফটো গুলো ভাইরাল করে দিবো। পারবে তোহ সেহের এইটা মেনে নিতে?”

–” কি করতে হবে আমাকে?”

–” সমস্যা নেই আমাকে বিয়ে করার কথা বলছি নাহ। নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।”

–” আমি বলেছি, কি করতে হবে আমাকে?”

–” আজ সকালে শুনলাম, রাহুল নাকি সেহেরকে বিয়ে করার জন্য প্রপোজাল পাঠিয়েছে। তোমার কাছে শোনা হবে তুমি সেহেরকে বিয়ে করবে কি নাহ? কিন্তু তুমি বলবে তুমি সেহেরকে বিয়ে করতে চাও নাহ। করবে নাহ তুমি এই বিয়ে, শুধু তাই নয়, তুমি সেহেরের সাথে খারাপ ব্যাবহার করবে। এক কথায় সেহেরকে কষ্ট দিতে হবে তেমায়।”
আরসাল নেহার কথা শুনে নেহার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” Are you mad, Neha? কি বলছো তুমি এইসব?”

–” আমি যাহ বলছি ঠিকই বলছি। আর তুমি যদি এইগুলো নাহ করো, ফটো ভাইরাল করতে আমার দুই মিনিটও লাগবে নাহ।”

–” নেহা তুৃমি যাহ করছো তার জন্য কিন্তু তোমাকে অনেক মূল্য দিতে হবে।”

–” I don’t care. যাহ বললাম তাই করো। নাহলে জানোই তোহ।”

–” ঠিক আছে। কিন্তু ফটো গুলো আগে ডিলিট করো।”

–” আমাকে কি এতোই বোকা মনে হয় আরসাল? ফটো গুলো একদম ভ্যানিশ করে দিবো। চিন্তা নেই, কিন্তু সেহেরের সাথে রাহুলের বিয়ের পর।”

Present………….

আরসালের ঘটনা গুলো ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আরসাল ডিভানের উপর বসে, হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে মনে মনে বলে ওঠে,
–” I am sorry Seher. আমি তোকে হার্ট করেছি। কিন্তু কি করবো? তোর সম্মান বাঁচানোর জন্য যে আমি বাধ্য হয়ে গেছি। ফটো গুলো ভাইরাল হয়ে গেলে যে সুইসাইট করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে নাহ তোর। তাই বাধ্য, আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ। I love you, Seher. I love you very much.”

চলবে…………….🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-২৮+২৯

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 28+29

আমান আর আশা আজ হিমছড়িতে যাবে বলে ঠিক করে, সাথে আজ কিছু কেনাকাটাও করবে। আশা আজ একটা নীল কালারের কুর্তী, ব্লাক জিন্স, ইয়োলো কালারের স্কার্ফ গলায় পেচিয়ে নিয়েছে। আশা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুলে আচড়িয়ে নিচ্ছে। আমান একটু বাহিরে গেছে। হঠাৎ দরজার কারোর নক করার আওয়াজে সেহের দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। আশা আবার দরজা লক করে দিয়ে ভেতরে আসতেই আবার নক করার আওয়াজ পায় আশা। কিন্তু দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। আশা দরজা লক করে ভেতরে আসতেই আবার একই রকম আওয়াজ পেয়ে রাগ উঠে দরজা খুলে দেখে আমান দাড়িয়ে আছে। আমানের কাছে আশার মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো কারনে সে বিরক্ত। আমান বলে ওঠে,
–” কিছু হয়েছে?”

–” কে যেনো বার বার দরজায় নক করছে? কিন্তু দরজা খুলে দেখি নেই।”

–” কোনো বাচ্চা হবে হয়তো! আচ্ছা ওদের বলে দিবো।”

–” নাহ, থাক। বাচ্চাই হবে মেইবি। দুষ্টামি করছে। বাদ দাও।”

–” ওকে! আচ্ছা চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

–” হুম!”
আশা আর আমান বেরিয়ে যায় হিমছড়ির উদ্দেশ্যে। আমান আর আশা বেরিয়ে যেতেই অচেনা লোকটিও বেরিয়ে এসে, ওদের ফলো করতে থাকে।

★★★
নেহা পুরো রুম জুড়ে নুপুর খুজছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে এক পায়ে নুপুর নেই। নুপুরটাহ নেহার অনেক পছন্দের। কখন খুলে গেছে নেহা বুঝতেই পারে নি। সকালে চোখ পড়তেই দেখে এক পায়ে নুপুর নেই। তখন থেকেই পুরো রুমে নুপুর টাহ খুজছে, আর বলতে থাকে,
–” উফ! নুপুর টাহ যে কই? কোথাও খুঁজেই পাচ্ছি নাহ। পা থেকে কখন খুলে গেছে সেইটাও বুঝতে পারছি নাহ।”

আরসাল নেহার রুমে এসে দেখে নেহা কিছু খুজছে, আর নেহার মুখের কথা শুনেই আরসাল বুঝতে পারে নেহা কি খুজছে। আরসাল বলে ওঠে,
–” নেহা এইটা খুজছো নাকি?”

নেহা কারো আওয়াজে পিছন ফিরে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে, আর আরসালের এক হাতে রয়েছে তার নুপুর টাহ। নেহা এগিয়ে এসে অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যা! এইটাই তোহ আমার নুপর। এইটাই খুজছিলাম। কিন্তু এইটা কোথায় পেলে তুমি?”

–” গতকাল রাতে আমাদের বাগান বাড়িতে তুমি ফেলে এসেছিলে। তাই নিয়ে এলাম।”
আরসালের কথা শুনে নেহা চমকে আরসালের দিকে তাকায়। দেখে আরসাল মুচকি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নেহা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” মানে?”

–” মানে গতকাল রাতে ক্যান্ডেল টাহ ভেঙে কাপড়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার সময় মেইবি এটা খুলে পড়ে গেছিলো। কিন্তু তুমি মনে হয় খেয়াল করো নি। তাই আমি নিয়ে এলাম।”
নেহা আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আরসালকে একদম শান্ত দেখাচ্ছে। আরসাল নুপুর টাহ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” নেও, তোমার নুপুর। আমি জানি তোমার নুপুর অনেক পছন্দ। কি হলো নাও। আরেহ নাও।”

আরসাল নেহার হাত টাহ টেনে নিয়ে নুপুর টাহ ধরিয়ে দিয়ে চলে আসতে যেয়েও থেমে যায়। আর উল্টা দিক ফিরেয় বলে ওঠে,
–” আমার আর সেহেরের মাঝে আগুন জ্বালাতে এসো নাহ নেহা৷ তাহলে নিজেই সেই আগুনে পুড়ে যাবে। বি কেয়ার ফুল।”

কথাটাহ বলেই আরসাল বেরিয়ে যায় নেহার রুম থেকে। নেহা আরসালের দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। নেহা ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
–” আগুন তোহ জ্বালাবোই। এক আগুনে সেহের আর তোমাদের ভালোবাসা পুড়বে। আর এক আগুনে তুমি আমার কাছে আসবে।”

★★★
সেহের আরসালের রুমে এসে দেখে আরসাল সোফায় বসে ফোনে কি যেনো করছে। সেহের রুমে এসে আরসালের পাশে দাড়াতেই আরসাল সেহেরের দিকে তাকায়। আরসাল ফোন টাহ সেন্টার টেবিলের উপর রেখে সেহেরের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের কোলের উপর বসায়। আরসালের মনে হলো সেহেরের মন খারাপ। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, তোর কি মন খারাপ?”

–” নাহ।”

–” আমার দিকে তাকিয়ে বল।”

–” নাহ।”

–” প্লিজ জান, চুপ করে থাকিস নাহ বল।”

–” তুমি কি আর আমাকে ভার্সিটি যেতে দিবা নাহ?”
সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহেরের মুখ কাছে এনে কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর সেহেরের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভার্সিটি যেতে চাস?”

–” হুম! আমার স্টাডির ক্ষতি হচ্ছে।”

–” আচ্ছা। কাল থেকে আমি নিয়ে যাবো আবার নিয়ে আসবো। ওকে!”

–” তুমি কেনো এতো কষ্ট করবা? আমি একাই যেতে পারবো। তাছাড়া ড্রাইভার আছে তোহ।”

–” থাকুক। ইয়াশ কে আমি খুব ভালো করেই চিনি। আমি তোকে নিয়ে যাবো এইটাই ফাইনাল। নাহলে ভার্সিটি অফ।”

–” নাহ, তুমিই নিয়ে যাবা।”

–” তাই?”

–” হুম।”
আরসাল সেহেরের মুখ একদম কাছে নিয়ে এসে হাতে বৃদ্ধ আঙুল সেহেরের ঠোঁটে ছোয়াতেই সেহের চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর তাহ দেখে আরসাল মুচকি হেসে সেহেরের কপালে একটা চুমু দেয়। আরসালের ভালোবাসার পরশ পেতেই সেহেরের মুখে ফুটে উঠে প্রশান্তির হাসি।

★★★
আমান আর আশা হিমছড়ি চলে এসেছে। আশা ঝরনার কাছে গিয়ে পানি ধরছে। কিছুক্ষণ পর ওরা পাহাড়ে উপর উঠতে থাকে। পাহাড়ের উপর উঠে দাড়াতেই যেনো বোঝা যায়, কত সুন্দর এই প্রকৃতি, আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য। আশা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে। আর আমান আশাকে।
ওখানে থেকে বিকালে কিছু শপিং করে আশা। সেহেরের জন্য বেশ কিছু জিনিস কিনে নেয় আশা। তারপর হোটেলে ফিরে আসে।
আশা বারান্দায় দাড়িয়ে সমুদ্রের বাতাস উপভোগ করছে। আমান একটু বাহিরে গেছে। দরজায় নক করার আওয়াজে আশা ভাবে আমান এসেছে। তাও গিয়ে দরজা খুলে সামনে যাকে দেখতে পায়, তাকে দেখে যেনো আশা চমকে যায়। আর আশার সামনে শয়তানি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে সাইফ। আশা কাপা কাপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” সাইফ! আপনি?”

–” কেনো আমাকে দেখে ভালো লাগে নিহ?”

–” আপনি এখানে কিভাবে?”

–” আমাকে চাপে ফেলে আমানকে বিয়ে করে সংসার করবা, আর আমি কি বসে বসে তোমাদের সংসার দেখবো?”

–” মানে?”

–” মানে! এমন ভাব করছো যেনো কিছুই যানো নাহ। আশা এমন নয়তো এইসব কিছুর পিছনে তুমিই আছো।”

–” সাইফ আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতেছি নাহ।”

–” তাই নাকি? একটু পরে সব বুঝে যাবে। আমিও দেখি, আমি তোমাকে ছোয়ার পর আমান তোমাকে মেনে নেয় কি নাহ?”
আশা সাইফের কথা শুনে দরজা বন্ধ করতে গেলে সাইফ দরজা চেপে ধরে, ভেতরে ঢুকে যায়। আশা ভয় পেয়ে পেছনে যেতে থাকে, আর বলতে থাকে,
–” দেখুন আমার কাছে আসবেন নাহ বলে দিলাম। ভালো হবে নাহ কিন্তু।”

সাইফ আশাকে ধরতে গেলেই আশাকে ধরতে গেলেই আশা সাইফকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তাকিয়ে দেখে আমান। আশা আমানকে জড়িয়ে ধরতেই আমান আশাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে সাইফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখো ফাস্ট কথা তোমার সাথে যাহ যাহ হয়েছে আশা এই ব্যাপারে কিছুই জানে নাহ। তাই ওর উপর এইসব রাগ দেখাইও নাহ।”

–” রাগ নাহ। ওকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছি। এখন ওর ঘর ভাঙার স্বপ্ন দেখি।”

–” তাই নাকি। তাহলে ভেঙে দেখাও। ওকে ভালোবাসি আমি। এতো সহজ নাহ।”
সাইফ রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমান আশার দিকে তাকিয়ে দেখে আশা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমান আশার মুখে হাত রেখে বলে ওঠে,
–” কি দেখছিস?”

–” কি বললে তুমি?”
আমান আশার হাত ধরে এক হাটু ভাজ করে বসে আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” I love you Asha. নিজের অজান্তেই ভালোবেসেছি তোকে। তোকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আর বলতে চাই, #তুই_শুধু_আমার।”

আশার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। গতকাল রাতে আমানকে নিজের করে পেয়ে আজ আমানের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনতেই আশার মনে হচ্ছে তার জীবন আজ পরিপূর্ণ। নিজের ভালোবাসার মানুষকে এরকম ভাবে কেই বা পায়। আশা আমানের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। আমান দাড়িয়ে আশার চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখে নিজের সাথে। আশাও আমানকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।

★★★
আশফি নিজের রুমে যাওয়ার জন্য উপরে উঠতেই চোখ যায়, নেহা রুফটপের দিকে যাচ্ছে। আশফিও নেহার পিছনে পিছনে যায়। নেহা রুফটপের রেলিং এর কাছে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আশফি নেহার পেছনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা!”

কারো আওয়াজ পেয়ে নেহা পিছনে তাকিয়ে দেখে আশফি দাড়িয়ে আছে। আশফি আবার বলে ওঠে,
–” তুমি এতো রাতে রুফটপে কেনো এসেছো?”

–” এমনি, ভালো লাগছে নাহ তাই।”

–” কি হয়েছে নেহা?”

–” কিছু নাহ এমনি।”

–” বলবা নাহ?”

–” মম ড্যাড এর কথা মনে পড়ছে।”

–” ওহ আচ্ছা।”
নেহা হঠাৎ করে আশফির দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আমার ফ্রেন্ডস হবা আশফি?”

আশফি মুখে হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
_” Yes!”

নেহা আশফির দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই আশফি মুখে নেহার হাতের উপর হাত রাখে, আর নেহার মুখে ফুটে উঠে শয়তানি হাসি।

★★★
আরসাল বারান্দায় ডিভানের উপর বসে আছে। হঠাৎ ফোনে ভাইব্রেটের শব্দে তাকিয়ে দেখে আমানের ফোন। আরসাল ফোন টাহ রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” কিরেহ, কেমন লাগছে কক্সবাজার?”

–” ভালো। বাট একটা প্রব্লেম হয়ছে।”

–” প্রব্লেম? কি প্রব্লেম?”
আমান সাইফের সাথে আজকের সব ঘটনা আরসালকে বলতেই, আরসাল বলে উঠে,
–” আশা কি সব জেনে গেছে?”

–” নাহ! বলি নি।”

–” হুম! বলার দরকার নাই। শোন তোদের ওখানে থাকাটাহ আর ঠিক হবে নাহ। ঢাকা ব্যাক কর।”

–” আমিও সেইটায় ভাবছি, আগামীকাল ঢাকা ব্যাক করবো।”

–” হুম, চলে আই।”
আরসাল ফোন কেটে দিয়ে, বারান্দায় রেলিং এর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি করতে চাচ্ছে এই সাইফ। বিষয় টাহ ভালো লাগলো নাহ। আমানকে আরও সাবধান করতে হবে। আর সাইফের সম্পর্কে তেমন কিছুই তোহ জানি নাহ। খোঁজ নিতে হবে।”

আরসাল কাউকে ফোন করে। কলটাহ রিসিভ হলেই আরসাল বলে ওঠে,
–” সিরাজ রহমানের ছেলে সাইফ রহমানে সব ডিটেইলস আমার চাই।”

ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে,
–” Ok sir.”

আরসাল ফোন কেটে দিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।

কেটে যাচ্ছে দিন। এগিয়ে যাচ্ছে সময়। এই কয়েকদিনে আরসাল আর সেহেরের ভালোবাসা আরও বেড়ে গেছে। আরসাল সেহেরকে ভার্সিটি নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে, কখনো কোথাও ঘুরতে চলে যায়, আরসালের কেয়ার, সেহেরের দুষ্টামি দিয়ে কাটছে দিন। নেহা সেইদিনের পর আর কিছুই করে নি, মাঝে দুই একদিনের জন্য বাহিরে কোথাও গিয়েছিল, আবার চলে এসেছে। আশফির সাথে নেহার বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে, নেহার প্রতি বেড়েছে আশফির ভালোবাসা। আমান আর আশা কক্সবাজার থেকে পরেরদিনই ফিরে আসে, সংসারে খুশি নামক জিনিস দিয়ে ঘিরে রেখেছে, আমানের ভালোবাসা আর আশার ভালোবাসা যেনো বেড়েই চলেছে, সেইদিনের পর সাইফও আর কোনো ঝামেলা করে নি তাদের জীবনে।

এখন বেশ রাত, ১১:৪৫ বাজে। সেহের একটা বই পড়ছে। হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজের শব্দে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আরসালের ম্যাসেজ। আরসাল লিখেছে, ” তাড়াতাড়ি রুফটপে আই। আমি রুফটপে তোর জন্য ওয়েট করছি। কাম ফাস্ট।” এতো রাতে এরোকম ম্যাসেজ পেয়ে সেহের অনেকটাহ অবাক হয়ে গেলেও রুফটপে চলে আসে সেহের। সেহের রুফটপে এসে আরসাল কে কোথাও দেখতে নাহ পেয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া কোথায় তুমি? ভাইয়া? আমার ভয় করছে আমি গেলাম।”

কথাটাহ বলে সেহের নিচে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই একটা শব্দে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে রুফটপের বাম পাশে একটা বোর্ডে হলুদ কালারের বাতি দিয়ে “HAPPY” লেখা ভেসে উঠেছে। সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আবার একটা শব্দ হতেই সেহের আবার চমকে রুফটপের মাঝে তাকিয়ে দেখে আরও একটা বোর্ডে “BIRTHDAY” লেখা ভেসে উঠছে। আবারও একটা শব্দে ডানপাশে তাকিয়ে দেখে আরও একটা বোর্ডে “SEHER” লেখা ভেসে উঠছে। সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সেহেরের মনেই নেই আজ তার জন্মদিন। হঠাৎ পেছন থেকে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে ওঠে,
–” Happy birthday. Happy birthday to you Jan.”

সেহেরের বুঝতে অসুবিধা হয় নাহ মানুষটি তার ভালোবাসা আরসাল। আরসাল সেহেরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে মুচকি হাসি দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
–” আজকের এই সময়টাহ আমার জন্য খুব স্পেশাল। কারন এই দিনটাতেই এই পৃথিবীতে একটা পরির জন্ম হয়েছিল। যার রুপের আগুন আজও আমাকে মুগ্ধ করে, যার বাচ্চামো স্বভাব আমি আজও দুচোখ ভরে দেখি, যার গলার মধু মাখা কন্ঠ আমাকে মাতাল করে দেয়, আমার স্বপ্নের রানি, যাকে নিয়ে আমি সারাজীবন বাঁচতে চাই, আজ সেই পরি, রানির জন্মদিন। অনেক স্পেশাল! এই দিন টাহ এসেছিলো বলে সেই রাজকন্যা আমার জীবনে এসেছিলো, এই দিন টাহ এসেছিলো জন্য আমি তাকে পেয়েছি। তাই আজ সারা দুনিয়াকে বলতে চাই, সবাই তাকে উইশ করো, সবাই বলে ওঠো, Happy birthday to you Seher.”

সেহের অবাক+ ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল আগেও সেহেরকে বার্থডে উইশ করেছে, কিন্তু এরকম ভাবে নাহ। একদম আলাদা, একদম অন্যরকম, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, জীবনের প্রথম এমন উইশ। সেহের আরসালের দিকে এগিয়ে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। সেহের কোনো কিছু নাহ বলেই আরসালকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” I love you. I love you very much.”

কথাটাহ শুনেই আরসাল প্রশান্তির হাসি দিয়ে সেহেরকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে। কিছুসময় পর আরসাল সেহেরকে নিজের কাছের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা ভালোবাসা আরও পরে হবে। আগে কেক কেটে নে।”

কথাটাহ বলেই আরসাল সেহেরকে হালকা জড়িয়ে ধরে একটা টেবিলের সামনে দাড়ায়। টেবিলের উপর একটা চকলেট ফ্লেভারের কেক রাখা আছে। আরসাল সেহেরের হাতে একটা নাইফ ধরিয়ে দিয়ে নিজে তার উপর হাত রেখে কেক কেটে সেহেরের মুখের সামনে ধরলে, সেহের একটু খেয়ে, আরসালের মুখে কেক তুলে দিতেই আরসাল সেহেরের হাত ধরে থামিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি কেক খাবো, বাট এভাবে নাহ।”

–” মানে? তাহলে কিভাবে?”

–” আমি আমার মতো করে কেক খাবো।”
কথাটাহ বলেই আরসাল সেহেরের হাত থেকে কেক নিয়ে সেহেরের মুখে মাখিয়ে দেয়। সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আরসাল সেহেরের কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। হঠাৎ এমন হওয়ায় সেহের চমকে উঠে আরসালের টিশার্ট এর কলার্ট চেপে ধরে। আরসাল সেহেরের মুখ কাছে এনে সেহেরের মুখের কেক লিক করে খেতে থাকে। আরসালের এমন স্পর্শে সেহের কাপতে শুরু করে। সেহের চোখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেলে। আরসাল সেহেরের মুখে লিক করতে করতে সেহেরের ঠোঁটে হালকা করে চুমু দেয়। সেহের কেপে চোখ খুলে আরসালের দিকে তাকায়। সেহের আরসালের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু সরে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আরসাল সেহেরের পিছনে দাড়িয়ে সেহেরের কাঁধের চুল গুলো সরিয়ে একটা চুমু দিতেই সেহের কেঁপে উঠে। আরসাল সেহেরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এক হাত সেহেরের কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর সেহেরের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের আমি কি তোকে একটা কিস করতে পারি?”

সেহের কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারে নাহ। সেহের চোখ বন্ধ করে রেখে, আরসালের টিশার্টের কলার্ট চেপে ধরে আরসালকে নিজের দিকে হালকা টান দিতেই আরসাল তার উত্তর পেয়ে যায়। আরসাল সেহের কে নিজের সাথে আরও জোরে চেপে ধরে সেহেরের ঠোঁটে হালকা চুমু দিতেই সেহের কেঁপে উঠে। সেহেরের ঠোঁট গুলো কাপছে। আরসাল আর দেরি নাহ করে সেহেরের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আরসাল সেহেরের কোমরের দিকের টিশার্টের নিচে হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে। আরসাল যেনো মাতাল হয়ে যাচ্ছে সেহেরের ঠোঁটের ছোয়া পেয়ে। সেহের এক অদ্ভুত শান্তির মাঝে আছে। সেহেরের চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
কিছুসময় পর আরসাল সেহেরের ঠোঁটের স্পর্শ ত্যাগ করে, সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের চোখ বন্ধ করে আছে। আরসাল মুচকি হেসে সফট ভয়েজে বলে ওঠে,
–” সেহের!”

আরসালের ডাকে সেহের চোখ খুলে আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল বলে উঠে,
–” তুই তোহ আমাকে পাগল বানিয়ে দিবি। পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি তোর ভালোবাসায়। এতো মিষ্টতা কেনো তোর মাঝে?”

আরসালের কথা শুনে সেহের লজ্জা পেয়ে আরসালের বুকে মুখ লুকায়। আরসালও সেহেরকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল সেহেরকে কোলে তুলে নিয়ে রুফটপ থেকে নিচে এসে সেহেরের রুমে চলে যায়৷ আরসাল সেহেরকে বিছানার উপর শুইয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়বি। ওকে?”

–” হুম!”
আরসাল সেহেরের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে সেহেরের শরীরে কম্বল টেনে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

★★★
আশা নিজের রুম গুছিয়ে নিচ্ছে। হটাৎ দেখে আমান আলমারিতে কিছু খুজছে। আশা এগিয়ে এসে আমানকে বলে ওঠে,
–” কিছু খুজছো?”

–” হুম! একটা ফাইল রেখেছিলাম। বাট এখন পাচ্ছি নাহ।”

–” নীল কালারের ফাইল?”

–” হুম দেখেছিস?”

–” হ্যা! ঐ ড্রয়ারে আছে।”

–” আচ্ছা।”
আমান ফাইলটাহ নিয়ে বের হবে, তার আগেই আশা বলে ওঠে,
–” শোনো।”

–” হুম বল।”

–” আজ তোহ সেহেরের বার্থডে। তুমি ঐ বাসায় যাবা নাহ?”

–” হ্যা, তোরা চলে যাস আমি বিকালে যাবো।”

–” আচ্ছা।”

★★★
আজ সকাল থেকেই অন্যরকম কাটছে সেহেরের। কাল ১২ টায় আরসালেরে সাথে কাটানো সময় টাহ যেনো সবথেকে বেশি সুখময় ছিলো। সেহেরের জন্য আজ একটা বড় বার্থডে পার্টি রাখা হয়েছে। সেহের রেডি হয়ে গেছে। সেহের আজ আরসালের দেওয়া একটা ব্লাক কালারের গাউন পরেছে, চুল গুলো সামনে পাফ করে ব্যান্ট বেনি করে ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল, ঠোঁটে রেড লিপস্টিক, হাতে একটা হোয়াইট ব্রেসলেট, গলায় একটা লকেট, কানে হোয়াইট কালারের টপ, সব মিলিয়ে সেহেরকে যেনো অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
ড্রইংরুমে পার্টি রাখা হয়েছে। চারপাশে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আস্তে আস্তে ড্রইংরুমের লাইট কমিয়ে নিয়ে, সিড়ির দিকে একটা এন্ট্রি লাইট ফেলতেই সবার নজর পড়ে সেদিকে। সবার মতো আরসালও সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সেহের দাড়িয়ে আছে। এন্ট্রি লাইটে সেহেরকে আরও ঝলমলে দেখাচ্ছে। আরসালের পাশেই এসে দাড়ায়, সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকা মুগ্ধ নয়নে রাহুল। সেহেরের সামনে একই জায়গায় একইভাবে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে আরসাল এবং রাহুল।
***কি হবে? আরসাল রাহুল দুইজনেরই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। কার ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে, আরসাল নাকি রাহুল নাকি এদের মাঝের কেউই নাহ।কোন ভালোবাসার জয় হবে? আর কোন ভালোবাসা গাছের পাতার মতো ঝরে যাবে কে জানে?

চলবে……………..🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-২৭

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 27

আশা আর আমান আজ কলাতলী বিচ আর ইনানি বিচ ঘুরতে যাবে। প্রথমে কলাতলি বিচ তারপর ইনানি বিচ যাবে ওরা। আমান রেডি হয়ে আশার দিকে তাকাতেই যেনো আমান আর চোখ সরাতে পারে নাহ। আশা একটা মিষ্টি কালারের লং ড্রেস পরেছে সাথে সাদা সালোয়ার + ওড়না, চোখে হালকা কাজল, ছাড়া চুল, কানে সাদা ঝুমকা, এক হাতে একটা ডিজাইনিং ঘড়ি, সব মিলিয়ে অনেক মায়াবী লাগছে আশাকে। আমান এগিয়ে এসে আশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়নায় আশার দিকে তাকায়। আশাও আয়ানায় আমানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। আশা আয়নায় আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এভাবে তাকিয়ে থাকলে কি হবে? যাবা নাহ?”

–” হুম! বাট তুই তোহ যেতে দিচ্ছিস নাহ।”

–” আমি? মানে?”
কথাটা বলেই আমানের দিকে ঘুরে তাকায় আশা। আমান আশার কোমরে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এতো সুন্দর করে সেজেছিস, এখন আমার বাইরে নাহ, তোকে আদর করতে ইচ্ছা করছে।”

আমানের কথা শুনে আশা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমান আশার থুতনি ধরে মুখ উচু করে বলে ওঠে,
–” এতো লজ্জা পাস নাহ। এতে আরও বেশি সুন্দর লাগে।”

আমান কথাটাহ বলে আশার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে ওঠে,
–” চল!”

–” হুম!”
আমান আর আশা হোটেল থেকে বেরিয়ে কলাতলী বিচের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। শুধু আমান আর আশা নাহ আরও একজন যাচ্ছে ওদের ফলো ফলো করতে করতে।

★★★
সেহের নিজের রুমে একটা টেডি কোলে নিয়ে বসে আছে। তখনই আহিয়া চৌধুরী ভেতরে আসেন। সেহের ভাবনায় এতোটাই মগ্ন যে, আহিয়া চৌধুরী তার রুমে এসেছে সে খেয়ালই করে নি। আহিয়া চৌধুরী সেহেরের মাথায় হাত রাখতেই সেহেরের ধ্যান ভাঙে, পাশে তাকিয়ে দেখে আহিয়া চৌধুরী। আহিয়া চৌধুরী সেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে মা? এমোন চুপচাপ বসে আছিস কেনো?”

–” কিছু হয় নি আম্মু।”

–” কিছু তোহ হয়েছে। মায়ের কাছে লুকাবি?”

–” আম্মু! আরসাল ভাইয়া।”

–” আরসাল কিছু বলেছে?”

–” নাহ! আসলে আম্মু আমি নিজেকে নিয়ে ভাবছি।”

–” কি ভাবছিস তুই?”

–” আম্মু, আরসাল ভাইয়া নাহয় আমাকে ভালোবাসতো। আমি তোহ কখনো এইসব ভাবিও নি। কিন্তু আম্মু বিশ্বাস করো, এখন আরসাল ভাইয়ার পাশে আমি কাউকে সহ্য করতে পারি নাহ। এমনকি নেহাকে দেখলেও আমার রাগ উঠে যায়। আমি কাউকে সহ্য করতে পারি নাহ। কেনো হচ্ছে এমন আম্মু। বলো, কেনো হচ্ছে এমোন?”

–” সত্যি টাহ জানতে চাস?”

–” হুম! আমি সত্যি টাহ জানতে চাই আম্মু। প্লিজ তোমার জানা থাকলে আমাকে বলো।”

–” আরসালের পাশে তুই কাউকে সহ্য করতে পারিস নাহ, কারন তুই নিজের অজান্তেই আরসালকে ভালোবেসেছিস।”

–” কিহ? কি বলছো তুমি এইসব? আমি কখনো আরসাল ভাইয়া কে নিয়ে এইসব ভাবি নি।”

–” আচ্ছা, আমি কিছু কথা বলি, দেখ তোহ কোনো মিল পাস কি নাহ?”

–” হুম।”

–” সেহের, আমরা যাকে ভালোবাসি তাকে আমরা কারো সাথে সহ্য করতে পারি নাহ। কারন আমাদের কাছে এমোনই মনে হয়, সে একান্তই আমার। তার পাশে অন্য কাউকে দেখলে খুব রাগ হয়। সে যখন আশেপাশে থাকে মনের ভেতর অন্যরকম এক অনুভুতি কাজ করে। সে যখন আমাদের চোখের সামনে থাকে, নাহ চাওয়া সত্বেও তার দিকে বার বার চোখ চলে যায়। সে কাছে আসলে এমন মনে হয় যেনো দম টায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সে কাছে আসলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। সে যখন ছুয়ে দেয় তখন পৃথিবীর সব শান্তি সেখানে উপস্থিত হয়। তার এতোটুকু কষ্ট দেখলেও নিজের ভেতর সেইটা অনুভব হয়। সে যখন চোখের সামনে থাকে নাহ তখন তাকে মিস করা। ভালো বাহ খারাপ যাই হোক নাহ কেনো তাকে নিয়ে সবসময় ভাবা। আর সব থেকে বড় কথা কি জানিস চোখ বন্ধ করলেই তার মুখটাহ ভেসে উঠে। এইটায় ভালোবাসা। এইবার তুই ভেবে দেখ তুই আরসালকে ভালোবাসিস কি নাহ? ভালোবাসা কিন্তু মনের কথা শোনে বিবেকের নাহ। তাই মন দিয়ে ভাব, বিবেক দিয়ে নাহ। আমি যাই, তোর জন্য জুস পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
কথাগুলো বলেই আহিয়া চৌধুরী চলে যায়। সেহের উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আম্মু এইসব কি বলে গেলো? তাহলে কি আমি আরসাল ভাইয়া কে ভালোবাসি। কিন্তু কিভাবে সম্ভব?”

কথাগুলো মনে করেই সেহের চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠে আরসালের ঘুমন্ত কিউট ফেস, আরসালের রাগী ফেস, চমকে চোখ খুলে ফেলে সেহের। সেহের জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। সেহের মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” তাহলে কি সত্যিই আমি আরসাল ভাইয়া কে ভালোবাসি? নিজের অজান্তেই ভালোবাসলাম তোমাকে। যাকে ভয় পেতাম, তাকেই ভালোবাসলাম। এখন সেই আমাকে ঘৃনা করে, আবার ভালোও বাসে। এ কিসের মাঝে এসে পড়লাম আমি? কি হবে এই ভালোবাসার পরিনতি। ভাইয়াকে আমি কিভাবে বলবো, যে আমি তাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলছি।”

★★★
আমান আর আশা কলাতলী বিচে চলে আসছে। এখানে ওরা সমুদ্রের পানিতে গোসল করবে বলে আরও এক সেট ড্রেস নিয়ে আসছে। আশা এসেই পানিতে নেমে লাফালাফি করছে। আর আমান দুর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আশার সেই বাচ্চামো দেখছে। আমান এগিয়ে আসতেই পানি ছুড়ে মারে আশা। আমানও পানি ছুড়ে আশার দিকে। দুইজনে দুইজনের দিকে পানি ছুড়ে আনন্দ করছে।
কিন্তু সেই অচেনা মানুষটি কোনো ভাবেই ব্যাপার টাহ মেনে নিতে পারছে নাহ। রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আমান আর আশার দিকে।
কিছুক্ষণ পর আমান আর আশা গিয়ে নিজেদের পোশাক পাল্টে আসে। সেখানে লান্চ করে ইনানি বিচের দিকে যাবে বলে, কয়েক ঘন্টার জন্য ঠিক করা হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই আশা বলে ওঠে,
–” আমান! আমি আমার ঘড়ি টাহ হোটেল রুমে ফেলে এসেছি।”

–” আচ্ছা, সমস্যা নাই আমি কিনে দিবো চল।”

–” নাহ ঐটাহ আমার খুব পছন্দের। প্লিজ।”

–” আচ্ছা, তুই এখানে থাক আমি গিয়ে নিয়ে আসি।”

–” ওকে।”
আশা ওখানে দাড়িয়ে আছে আর চারিদিকে তাকিয়ে দেখছে। হঠাৎ আশার মনে হতে থাকে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে সেরকম কাউকে নাহ দেখে আশা তার মনের ভুল ভাবে। কিন্তু নাহ, আসলেই তাকে একজন খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছে। মন দিয়ে দেখছে আশাকে। কিছু সময় পর আমান ঘড়ি টাহ নিয়ে আসলে আশা আর আমান ইনানী বিচের দিকে যাত্রা শুরু করে। আর তাদের পিছন পিছন সেই অচেনা লোকটিও যায়।

★★★
বিকাল হয়ে গেছে। সূর্য একদিকে হেলে পড়েছে। আর সেহের সেই রুফটপে দাড়িয়ে সেই রোদের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে। রোদ এসে সেহেরের শরীরে পড়ছে।
আরসালের রুমে ভালো লাগছিলো নাহ তাই রুফটপে আসে আর এসেই সেহেরকে দেখতে পাই। আরসাল সেহেরের পিছনে এসে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের।”

কারো আওয়াজে সেহের পিছনে ফিরে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে রোদে মুখ একদম লাল হয়ে গেছে। আরসাল সেহেরের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” তুই এইভাবে রোদের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছিস কেনো? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছিস কি অবস্থা হয়েছে। ঘেমে, লাল হয়ে। Are you mad, Seher?”

সেহের কিছু নাহ বলেই আরসালকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরসাল সফট কন্ঠে বলে ওঠে,
–” সেহের কি হয়েছে?”

সেহের আরসালের কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে ওঠে,
–” আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

আরসালের যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে নাহ। আরসালের মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। সেহের তাকে ভালোবাসার কথা বলছে, এইটা যেনো আরসাল কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে নাহ। সেহের আরসালের মুখের সামনে মুখ নিয়ে, আরসালের চোখের দিকে তাকিয়ে ছল ছল চোখে বলে ওঠে,
–” আমি তোমাকে ভালোবাসি। এখন তুমি কি আমাকে ফিরিয়ে দিবে? আমার ভালোবাসা আমাকে ফিরিয়ে দিবে?”

আরসাল এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে, এখনো যেনো কিছুই মাথায় ঢুকছে নাহ আরসালের। আরসালকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেহের আবারও বলে ওঠে,
–” কি হলো? কিছু বলছো নাহ কেনো? ফিরিয়ে দিবে আমাকে, আমার ভালোবাসাকে?”

আরসাল কিছু নাহ বলেই সেহেরকে জড়িয়ে ধরে, ধরা গলায় বলে ওঠে,
–” সেহের আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি নাহ তোহ। যদি স্বপ্ন হয়ে থাকে তাহলে আমি চাই নাহ এই স্বপ্ন ভেঙে যাক। এই কথাটাহ, শুধুমাত্র এই কথাটা তোর মুখ থেকে শুনবো জন্য ব্যাকুল হয়ে থেকেছি আমি।”

–” কিন্তু তুমি তোহ আমাকে ঘৃনা করো?”
আরসাল সেহেরের মুখ ধরে সেহেরের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” রেগে ছিলাম। জিদ ছিলো, তুই তোহ জানিস এইসময় গুলোতে আমি কি বলি কি করি নিজেও জানি নাহ। আরও রাগ হতো তুই আমার ভালোবাসা বুঝতি নাহ, ঐ রাহুলের সাথে দেখেও রাগ হতো। তাই আরও বেশি বলতাম। কিন্তু তোর মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনতেই সব রাগ কেমন যেনো মিলিয়ে গেছে।”

সেহের আরসালকে আবার জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” আমাকে প্রপোজ করবা নাহ।”

–” কিন্তু আমার কাছে তোহ এখন তোকে প্রপোজ করার মতো কিছুই নাই।”

–” আমার কিছু লাগবে নাহ। আমার শুধু তুমি হলেই চলবে। তাই তুমি এইভাবেই করো।”

–” আমি জানি আমার জানের কিছু লাগবে নাহ। তাও আমি আমার মতো করে প্রপোজ করতে চাই। আজ সন্ধ্যায় রেডি থাকবি। তোর আরসাল তোকে নিজের ভালোবাসার গল্প শোনাবে।”
কথাটাহ বলেই আরসাল আবার সেহেরকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কেউ একজন তাদের এইসব দেখে রাগে আগুন হয়ে গেছে৷ সে আর কেউ নাহ, সে হলো নেহা। নেহা আরসালকে রুফটপের দিকে আসতে দেখে পিছন পিছন আসছিলো। আসতেই সেহের আর আরসালকে দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে সব কিছু দেখতে থাকে। কিন্তু এখন যেনো আর সহ্য হচ্ছে নাহ। চোখ দিয়েই যেনো শেষ করে দিচ্ছে সেহেরকে। নেহা আর সহ্য করতে নাহ পেরে নিজের রুমে চলে আসে, আর মনে মনে বলে ওঠে,
–” শেষ করে দিবো সেহের। আমি যদি আরসাল কে নাহ পাই তাহলে তোমাদের ভালোবাসা তছনছ করে দিবো। আরসালই আমার লাইফে প্রথম কেউ, যাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসেছি। এতো সহজে তোহ আরসালকে আমি হারাতে দিবো নাহ। প্রয়োজন হলে, তোমাকে দুনিয়া থেকে হারিয়ে দিবো সেহের। এতোদিন চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু আজ যাহ হলো, ভয়ংকর পরিনতি হবে তোমার সেহের। আজ সন্ধ্যায় ভালোবাসার প্রদিপ জ্বালাবা, ঐ আগুনেই তোমাকে জ্বালিয়ে দিবো সেহের, পুড়িয়ে দিবো তোমাদের ভালোবাসা।”

★★★
আশা আর আমান ইনানী বিচে চলে এসেছে। এই বিচ টাহ অনেক শান্ত। এখানে সাধারণত এতো ঢেউ থাকে নাহ, কিন্তু এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। আশা আর আমান সমুদ্রের পাশে দাড়িয়ে আছে। আশেপাশে অনেক মানুষ এই সূর্যাস্ত দেখার জন্য উৎসাহ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছু সময়ের মাঝে সূর্যাস্ত যাবে। দৃশ্যটাহ দেখলে এমোনই মনে হবে, যে সূর্য তার রক্তিম লাল আভা নিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের অতল তলে। সূর্যের লাল আভা এসে সবার মুখে পড়ছে। আশা খুব খুশি মুখে সূর্যাস্ত দেখছে, আর আমান তাকিয়ে আছে আশার মুখের দিকে। আশার মুখে রক্তিম আভা পড়তেই সৌন্দর্য যেন আরও হাজর গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আমান আশার সেই সৌন্দর্য ভরা লাল আভায় ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

#Part : বোনাস✌️

সেহের রেডি হচ্ছে। সেহের আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে। একদম আরসালের স্বপ্নের পরীর মতো। সেহের আজ একটা পার্পেল কালারের গাউন পরছে, চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া, ঠোঁটে পার্পেল লিপস্টিক, কানে পার্পেল কালারের ঝুমকা, হাতে একটা পার্পেল কালারের ব্রেসলেট, গলায় একটা লকেট, সব মিলিয়ে সেহেরকে খুব গর্জিয়াস দেখাচ্ছে। সেহের রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আরসালের কথা ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। মায়া চৌধুরী সেহেরের রুমে এসে দেখেন সেহের আয়নার সামনে দাড়িয়ে মুচকি হাসছে। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” মাশাআল্লাহ, আমার বাচ্চা টাকে তোহ পরির মতো লাগছে। তাহ কোথায় যাওয়া হচ্ছে এরকম ভাবে, এই সন্ধ্যায়, হুম?”

–” বড় আম্মু।”

–” আজ তোহ বড় আম্মুর পারমিশন নিতে আসিস নিহ? নাকি মেইন মানুষ টাই নিয়ে যাচ্ছে?”

–” এরকম কিছুই নাহ। এমনি বাহিরে যাচ্ছি। তোমার ছেলেকে ভয় পাই নাকি? যে তার পারমিশন ছাড়া কোথাও যেতে পারবো নাহ।”

–” ওহ, আচ্ছা।”
সেহের খেয়াল করে মায়া চৌধুরী মুচকি হাসি দিচ্ছে। হঠাৎ সেহেরের ফোনে একটা ম্যাসেজের শব্দ হওয়ায়, ফোন ওপেন করে দেখে আরসালের ম্যাসেজ। আরসাল লিখেছে, ” বাসার সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, ঐ গাড়িতে বোস, ড্রাইভার নিয়ে আসবে তোকে, তাড়াতাড়ি।” আরসালের ম্যাসেজ দেখে সেহের মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি গেলাম।”

–” হুম! সাবধানে।”
সেহের বেরিয়ে আসতেই দেখে বাসার সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সেহের এগিয়ে যেতেই ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দিলে, সেহের গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু সেহের একা নয়, নেহাও সেহেরকে ফলো ফলো করতে করতে যাচ্ছে।
গাড়িটাহ একটা জায়গা থামতেই সেহের তাকিয়ে দেখে তাদের বাগান বাড়ি। সেহের গাড়ি থেকে নেমে সমানে তাকাতেই দেখে কেউ একজন হেটে আসছে, কিন্তু মুখ টাহ পরিষ্কার বোঝা নাহ গেলেও সেহের বুঝে যায় মানুষ টি তার ভালোবাসা আরসাল। আরসাল সামনের দিকে একটু এগিয়ে আসতেই রোড লাইটের আলোতে সেহেরকে দেখে থমকে দাড়িয়ে যায়। সেহেরকে যেনো পরির মতো দেখাচ্ছে, মনে হচ্ছে এখনই সেহেরের পাখনা গজিয়ে সেহের উড়ে যাবে। কিন্তু আরসাল তোহ এই পরিকে উড়ে যেতে দিবে নাহ, আটকে রাখবে নিজের কাছে। আরসাল এইসব ভেবে একটু মুচকি হাসি দিয়ে সেহেরের দিকে এগিয়ে আসে। আরসাল আর একটু এগিয়ে আসতেই, রোড লাইটের আলো আরসালের উপর পড়তেই সেহের আরসালকে দেখতে পাই৷ আজ আরসালকে দেখে যেকোনো মেয়ে ঘায়েল হয়ে যাবে। আরসাল আজ একটা হোয়াইট শার্ট পরেছে যার উপরের দুইটা বাটন খোলা, ব্রাউন কালারের ব্লেজার, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, হাতে ব্লাক ব্রান্ডেড ওয়াচ, চুল গুলো সবসময়ের মতো সিল্কি এন্ড কপালে দু একটা পড়ে আছে, পায়ে ব্লাক শু, আর ঠোঁটে সেই ঘায়েল করা হাসি। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে, আরসাল ও সেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
সেহের মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” কি যাবা নাহ?”

–” হুম! চল।”
আরসাল সেহেরকে গার্ডেনে নিয়ে আসে। সেহের চারিদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। চারপাশে অনেক সুন্দর করে সাজানো। গার্ডেনে একটা রাউন্ড টেবিল রাখা, যেইটা সাদা টেবিল ম্যাট দেওয়া হয়েছে, টেবিলের উপর একটা চকলেট ফেলেভারের কেক রাখা এবং তিনটাহ বড় মোমবাতি রাখা, দুইটা চেয়ারও রাখা আছে, গার্ডেন কে ছোটো ছোটো কালারিং লাইট, সাদা লাভ বেলুন, সাদা কাপড় আর সাদা মোমবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে, একটা পাশে স্পিকারে সফট মিউজিকও বাজছে, একদম রোমান্টিক পরিবেশ যাকে বলা হয়। হঠাৎ আরসাল সেহের সামনে এক হাটু ভাজ করে বসে বলে ওঠে,
–” সেহের, আমি লাভ পোয়েট্রি পারি নাহ। আমি খুব একটা গুছিয়েও কথা বলতে পারি নাহ। তাই, আমি আমার মতো করে বলছি। সেহের আমার প্রথম কথা, #তুই_শুধু_আমার। সেহের আমি তোকে নিয়ে বাচতে চাই, আমার ভাবনা গুলো তোকে ঘিরেই রাখতে চাই৷ সেহের আমি আমার আশি বছর বয়সেও তোর হাতের এক কাপ চা খেতে চাই। আমি জানি নাহ, আমি কিভাবে তোকে বোঝাবো, যে আমি তোকে কতটাহ চাই। ভালোবাসতে চাই তোকে। I love you Seher. আমি তোকে ভালোবাসি। আমি দিনের শুরুতে আবার দিন শেষেও তোকে একটা কথায় বলতে চাই, #তুই_শুধু_আমার।”
কথা গুলো বলেই আরসাল সেহেরের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয়। সেহেরের চোখ ছল ছল করছে। কিভাবে একটা মানুষ, এতো টাহ ভালোবাসতে পারে কাউকে। সেহেরের নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে, যে তাকে কেউ এতোটাহ ভালোবাসে৷ আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেহের তার হাত বাড়িয়ে আরসালের হাতের পর রেখে ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” #আমি_শুধু_তোমার।”

আরসাল মুচকি হেসে সেহেরের হাতে একটা আংটি পরিয়ে দিয়ে, দাড়িয়ে সেহেরকে জড়িয়ে ধরে।
নেহা একটা গাছের পাশে দাড়িয়ে এইসব দেখছিলো এতসময় ধরে। আরসাল সেহেরকে জড়িয়ে ধরতেই হাত দিয়ে গাছে চেপে ধরে রাগে তে।
আরসাল সেহেরকে নিয়ে টেবিলের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” তোর ফেবারিট! চকলেট ফেলেভার। নেহ কাট।”

আরসাল সেহের একসাথে কেক কাটে। সেহের কেকের একটা পিস আরসালের মুখে তুলে দেয়। আরসালও খাইয়ে দেয় সেহেরকে। আরসাল হঠাৎ সেহেরকে বলে ওঠে,
–” তুই এখানে ওয়েট কর। আমি আসছি।”

–” কই যাও?”

–” তোকে ছেড়ে কোথাও নাহ।”
বলেই আরসাল চলে যায়। আর সেহের চারপাশে দেখতে লাগে। নেহা সেহেরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ওঠে,
–” এতো ভালোবাসা তোমার কপালে সইবে নাহ সেহের। তোমাদের এই ভালোবাসা, তোমার জন্য কাল হয়ে দাড়াবে।”

কিছু সময়ের মাঝেই আরসাল হাতে একটা ট্রে এনে টেবিলের উপর রাখে। সেহের ট্রের উপর তাকিয়ে দেখে চাউমিন, সুপ, অনথন, আর লাচ্চি আছে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ডিনার রেডি।”

–” হুম!”
আরসাল আর সেহের ডিনার করতে বসে। আরসাল সেহের কে নিজে খাইয়ে দিচ্ছে। আর নেহা অগ্নিদৃষ্টিতে সেইদিকে তাকিয়ে আছে।

★★★

সূর্যাস্ত শেষ হলেই আমান আর আশা চলে আসে লং বিচ হোটেলে। ডিনার কমপ্লিট করে এসেছে বাইরে থেকে। আশা বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের সমুদ্রের বাতাস উপভোগ করছে। বাতাসে আশার শাড়ি, চুল উড়ছে। পাশের বারান্দা থেকে অচেনা লোকটি তাকিয়ে আছে আশার দিকে। আশা লোকটিকে দেখতে পারছে নাহ, কারন লোকটির বারান্দা পুরা অন্ধকার এবং নিজেও ব্লাক ড্রেস পরা। তাছাড়া আশা সমুদ্রের বাতাস উপভোগ করতে থাকায় পাশে এতো টাহ খেয়াল করছে নাহ। অতিরিক্ত বাতাসে আশার কাপড় ওড়ার জন্য পেটের দিক থেকে কাপর সরে গেছে। আর সেই অচেনা লোকটির নজর সেইদিকেই আটকে আছে। কিন্তু হঠাৎই অচেনা লোকটার চোখ রাগে লাল হয়ে যায়। কারন, আমান আশার পেটে হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আশা আমানের ছোয়া পেতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। আমান আশার কাধের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে হালকা কামড় দিতেই আশা কেঁপে উঠে। আশা আমানের দিকে ঘুরে দাড়াতেই, বাতাসে আশার চুলগুলো সামনে এসে পড়ছে। আমান আশার চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে, আশার কপালে একটা চুমু দিয়ে, কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।”

আশা মুচকি হাসি দেয়, আমানের কথা শুনে। আমান আবার বলে ওঠে,
–” আশা!”

–” হুম।”

–” আমি কি আজ তোকে নিজের করে পেতে পারি? নাকি তুই এখনো প্রস্তুত নাহ? তোর সময় লাগলে আমাকে সরাসরি বলতে পারিস। উফ! কি বলছি আমি এইসব? আসলে আমি কথাটা বলতে চাই নি। বাট কি থেকে কি বললাম বুঝতে পারছি নাহ। আচ্ছা, তুই শুয়ে পড় আমি একটু বাইরে থেকে আসছি। জাস্ট ফাইভ মিনিট।”
আমান কথাটা বলে চলে যেতে নিলেই, আশা আমানের হাত ধরে টেনে নিয়ে আমানের ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আমান প্রথমে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও, আশার সাথে তাল মিলিয়ে নেয়। কিন্তু এই দৃশ্যটাহ অচেনা লোকটি দেখতেই হাতে থাকা কাচের গ্লাসটা চেপে ধরে। যার জন্য হাত কেটে রক্ত পড়তে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর আমান আশার ঠোঁটের স্পর্শ ত্যাগ করে আশাকে কোলে তুলে নিয়ে, রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে লাল আভার ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আমান আশার উপর থেকে আঁচল সরিয়ে দিয়ে, আশার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আশার ঠোঁট থেকে সরে এসে আশার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় আমান। আশা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আস্তে আস্তে তাদের মাঝের আবরন সরে যেতে থাকে। আমান আশাকে নিয়ে ভালোবাসার এক রাজ্যে পাড়ি দেয় যেখানে শুধু ওরা দুজন।
এইদিকে অচেনা লোকটি রুমের সবকিছু ভেঙে তছনছ করে ফেলে। আর রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” এতোদিন তোকে কিছু বলি নাই আমান। কিন্তু আজ যাহ করছিস এর জন্য তোকে পস্তাতে হবে। তোমাকেও পস্তাতে হবে আশা। অনেক বড় দাম দিতে হবে তোমাদের। তোমাদের এই ভালোবাসার সংসার আমি কালকেই শেষ করে দিবো।”

★★★
আরসাল আর সেহেরের ডিনার কমপ্লিট। হঠাৎ আরসাল দাড়িয়ে সেহেরকে টেনে নিয়ে স্পিকারে মিউজিক অন করে, সেহেরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সেহের অবাক হয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছো?”

–” ডান্স।”
কথাটাহ বলেই আরসাল সেহেরকে নিয়ে নাচতে থাকে। আরসাল আর সেহের একে অপরের চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।
নেহা এইাব আর সহ্য করতে পারছে নাহ। নেহা মনে মনে বলতে থাকে,
–” তোমার লাইফের কাল শুরু হবে সেহের। তোমাদের ভালোবাসায় দেওয়াল তোলার সময় চলে এসেছে। কিন্তু তার একটা সূচনা তোহ তোমাদের দিয়েই যাবো আজ।”

কথা গুলো ভেবে পাশেই তাকিয়ে দেখে চিকন চিকন লম্বা মোমবাতি দিয়ে সাজানো আছে। আবার পাশেই সাদা কাপড় দিয়ে সাজানো রয়েছে। নেহা একটা মোমবাতি হাত দিয়ে ফেলে দিতে চাইলে দেখে, মোমবাতি গুলো শক্ত করে লাগানো আছে, নিশ্চয় মোমবাতি গুলো কিছু দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে পড়ে নাহ যায়। মোমবাতি গুলো অনেক চিকন হওয়ায় নেহা মোমবাতি টাহ ভেঙে কাপড়ের উপর ফেলে দিতেই কাপড়ে আগুন ধরে যায়। নেহা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে আসে।
সেহেরের আরসালের সাথে নাচতে নাচতে হঠাৎ আগুন লেগে যাওয়া কাপড়ের দিকে চোখ যেতেই কম্পিত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া আগুন।”

সেহেরের কথা শুনে আরসাল পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সাজিয়ে রাখা সাদা কাপড়ে আগুন ধরে গেছে। আরসাল দ্রুত আগুনের কাছে এসে হাত দিয়ে আগুন নিভাতে গেলে সেহের এসে আরসালের হাত ধরে বলে ওঠে,
–” কি করছো? তোমার হাত পুড়ে যাবে তোহ।”

সেহেরের হঠাৎ চোখ যায় গার্ডেনের গাছে পানি দেওয়ার জন্য পাইপের দিকে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া পানির পাইপ।”

আরসাল সেহেরের কথা শুনে পাশে তাকিয়ে পানির পাইপ দেখে পানি দিতে থাকে আগুনের উপর। আগুন নিভে যায়। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এখানে, আগুন লাগলো কিভাবে?”

হঠাং আরসালের চোখ যায় ভাঙা মোমবাতির দিকে। ভাঙা মোমবাতির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ক্যান্ডেল ভাঙা, হাউ পসিবল? কে এসেছিলো এখানে? কে আমার আর সেহেরের মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়াতে চাচ্ছে?”

সেহের এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! এই ক্যান্ডেল ভাঙা কেনো?”

–” হুম! সাজানোর সময় ভেঙে গেছে?”

–” আচ্ছা! কিন্তু আগুন লাগলো কিভাবে?”

–” এক্সিডেন্ট। আচ্ছা, তোকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে নাহ। অনেক রাত হয়ে গেছে বাসায় যেতে হবে।”

–” হুম! আমার পার্স নিয়ে আসি।”

–” হুম!”
সেহের পার্স আনতে চলে গেলে আরসাল চারপাশে আর একবার তাকিয়ে চলে যেতে নিলেই হঠাৎ কিছু একটা চোখে বাঁধে, যার উপর লাইটের আলো পড়ে চকচক করতেছে। আরসাল এগিয়ে গিয়ে জিনিসটাহ হাতে নিতেই দেখে একটা নুপুর। আরসাল ভ্রু কুচকে নুপুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেহের পার্স নিয়ে এসে পেছন থেকে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া চলো।”

আরসাল তাড়াতাড়ি নুপুর টাহ প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে, সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের আজ তুই নুপুর পরিস নি?”

–” নাহ তোহ! কেনো?”

–” নাহ, ভালো লাগে। তাই বললাম।”

–” আচ্ছা, নেক্সট ডে পরবো।”

–” হুম! চল।”

–” হুম।”
আরসাল আর একবার চারিদিকে তাকিয়ে সেহের কে নিয়ে বাগান বাড়ি থেকে বেরিয়ে চৌধুরী ম্যানশনের দিকে রওনা দেয়।

চলবে…………..🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-২৫+২৬

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 25+26

আশা নিজের রুমে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়িয়ে নিচ্ছে। আমান হঠাৎ পেছন থেকে আশাকে জড়িয়ে ধরে দুইটা টিকিট আশার সামনে এগিয়ে দেয়। আশা বলে ওঠে,
–” এইটা কি?”

–” টিকিট।”

–” কিসের টিকিট।”

আশার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠে,
–” হানিমুনের।”
আমানের কথা শুনে আশা লজ্জা পেয়ে সরে যেতে গেলেই, আমান আশার হাত ধরে টান দিতেই আশা আমানের বুকে এসে পড়ে। আমান এক হাত আশার কোমরে দিয়ে চেপে ধরে, আর এক হাত আশার হাতের মাঝে দিয়ে ধরে বলতে শুরু করে,
–” এইসব কি ম্যাডাম। হাজব্যান্ড এতো ভালো একটা গুড নিউজ দিলো। কোথায় হাজব্যন্ড কে খুশি হয়ে কয়েকটা কিস দিবেন, তা নাহ করে আপনি চলে যাচ্ছেন। এটা মানা যায় নাহ।”

আশা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমান, বাসায় মা, বাবা, আশিকা কেউ নেই। আমরা কিভাবে ঘুরতে যেতে পারি।”

–” আরেহ! আমাকে তোহ আম্মুই বলছে হানিমুনে যেতে। ওনারা তাহলে আরও দুইদিন পরে আসবেন।”

–” কিন্তু!”

–” কোনো কিন্তু নাহ। ওহ্যা আম্মু বলেছে, হানিমুন থেকে আসার পর যেনো তারা সুসংবাদ পায়।”

–” মিথ্যাবাদি একটা ছাড়ো আমাকে।”

–” নাহ ছাড়বো নাহ।”

–” ডিনার রেডি করতে হবে ছাড়ো।”
আশা জোর করে আমানের কাছের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যায়। আর আমান মুচকি হেসে ফোন নিয়ে বিছানার হেলান দিয়ে বসে।

★★★
সেহের বারান্দায় দোলনায় বসে বসে গান শুনছিলো। ফোনটাহ হাতে নিয়ে দেখে ১ টাহ বেজে গেছে, তাই রুমে এসে পানি খেতে গিয়ে দেখে বোতলে একটুও পানি নাই। তাই পানি নিতে নিচে আসতে যেতেই, একটা হালকা আওয়াজ পায়। সেহের চারপাশে তাকিয়ে আরসালের রুমের দিকে চোখ যায়। সেহের আরসালের রুমের দিকে একটু এগিয়ে এসে, দরজায় হালকা চাপ দিতেই দরজা খুলে যায় এবং রুমের লাইট অন করা। সেহেরের কেমন যেনো মনে হওয়ায় ভেতরে এসে দেখে, আরসাল বিছানায় শুয়ে কেমন কাঁপছে। সেহের তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তুমি ঠিক আছো?”

সেহের আরসালের কপালে হাত দিতেই দেখে আরসালের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, শুধু তাই নাহ আরসাল ঘুমের মাঝে বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে। সেহের আরসালের মুখের কাছে কান নিয়ে যায় শোনার জন্য। আরসাল জ্বরের ঘোরে বলে ওঠে,
–” সেহের!”

–” ভাইয়া কিছু বলবে। বলো! তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?”

–” I love you Seher. I really love you. Please তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যাস নাহ। আমি বাঁচতে পারবো নাহ তোকে ছাড়া। সেহের আমি সত্যিই তোকে অনেক ভালোবাসি। #তুই_শুধু_আমার সেহের।”
সেহের মুখ উঠিয়ে আরসালের দিকে তাকায়। আরসালকে একদম একটা নিষ্পাপ বাচ্চার মতো লাগছে। জ্বরের জন্য ঠোঁট টাহ হালকা ফুলে লাল হয়ে আছে, এতে যেনো আরসালকে আরও কিউট লাগছে। আরসালের কথা শুনে সেহেরের চোখে পানিতে ভরে গেছে। সেহের চোখে পানি, মুখে মুচকি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” I know, I know mr. Arsal. তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসাে। অনেক ভালোবাসাে। আমিও তোমার প্রতি দূর্বল হয়েছি। কিন্তু এইটা কি ভালোবাসা? আমি জানি নাহ। শুধু এইটুকু জানি, তোমার পাশেও কাউকে আমি সহ্য করতে পারি নাহ।”

সেহের আরসালের কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর নিচে থেকে একটা বাটিতে করে পানি আর একটা কাপড় নিয়ে আসে। আরসালের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে সেহের।

★★★
রাহুল অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখে মি. মুবিন পেপার পড়ছেন। রাহুল বলে ওঠে,
–” গুড মর্নিং ড্যাড!”

–” আরে রাহুল! গুড মর্নিং ডেয়ার। কাম তোর জন্যই বসে আছি। আই, ব্রেকফাস্ট শুরু কর।”
রাহুল এসে ডাইনিং টেবিলে বসতেই মি. মুবিন বলে ওঠে,
–” রাহুল! আমার মনে হয় তোর এখন বিয়ে করা উচিত।”

–” ড্যাড! আমার তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?’

–” হুম বল।”

–” ড্যাড! আমার সেহেরকে ভালো লাগে।”

–” সেহের মানে, আজিজের মেয়ে?”

–” হুম! আসলে ড্যাড।”

–” রাহুল! তুই যখন জন্ম নিয়েছিলি তখন তোর মা মারা যায়। তখন আমাকে সবাই বলেছিলো, বিয়ে করার জন্য। কিন্তু আমি বিয়ে করি নি। কারন সে যদি আমার ছেলে কে দেখতে অস্বীকার করতো। তুই, আমার ছেলে যেনো কষ্ট নাহ পায়, তাছাড়া তোর মায়ের জায়গায় কাউকে বসাতে পারতাম নাহ। তাই আর দ্বিতীয় বার বিয়ে করার কথা ভাবি নি। ছোট বেলা থেকে তুই যাহ চেয়েছিস আমি তোকে দিয়েছি। যখন তুই ছোটো ছিলি আমাকে বলতি, ড্যাড আমার এই গাড়ি লাগবে, ঐ ডল লাগবে, ঐ রোবট লাগবে, এইটা লাগবে ঐটা লাগবে দিয়েছি তোকে। আর একটু বড় হয়ে বললি ড্যাড! আমি এক সাথে ৩ টাহ গাড়ি দেখেছি আমার ৩ টায় চাই। আমি তোকে ৩টাই কিনে দিলাম। যাহ যাহ চেয়েছিস সব দিয়েছি শুধু তাের মাকে ছাড়া। কিন্তু তুই এতো কিছু পেয়েও কখনো বিপথগামী হস নিহ। ভালো ভাবে স্টাডি করেছিস, তোকে নিয়ে আমার স্বপ্নগুলো পূরন করেছিস। I am proud of you my son. আর আজ তুই সেহেরকে চাচ্ছিস। আমি তোকে সেহেরকে এনে দিবো। আমার ঘরের রাজকুমারের জন্য সেহেরই বেস্ট।”

রাহুম মি. মুবিন কে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” I love you dad.”

–” I love you too my son.”

★★★
জানালা দিয়ে রোদ এসে আরসালের মুখে পড়তেই আরসাল চোখ মুখ কুচকে নিয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। আরসালের কাছে বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব হওয়ায় বুকের দিকে তাকতেই সেহেরের ঘুমন্ত মুখ দেখতে পায়। সেহের বিছানার পাশে একটা চেয়ারে বসে মাথাটা আরসালের বুকের উপর দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে, এই মুখটাহ আরসাল যতবার দেখে ততবার আরসাল এই মুখের প্রেমে পড়ে যায়। সেহেরকে একটু নড়ে উঠতে দেখে আরসাল আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। সেহের উঠে আরসালকে ঘুমাতে দেখে আস্তে করে আরসালের বুকের উপর থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসে। সেহের আরসালের মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বর নেই, তাও সেহের আরসালের ঘুম নাহ ভাঙিয়ে কাপড় আর পানির বাটি নিয়ে চলে যায়। সেহের যেতেই আরসাল চোখে খুলে তাকিয়ে উঠে বসে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের কি গতকাল সারারাত এখানে ছিলো? আর আমার কি জ্বর এসেছিল নাকি? আর, আসলেও বাহ সেহের জানলো কিভাবে আমার জ্বর এসেছে?”

আরসাল আর কিছু নাহ ভেবেই ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
মায়া চৌধুরী আরসালের জন্য খাবার নিয়ে আরসালের রুমে ঢুকতেই দেখে আরসাল অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। মায়া চৌধুরী খাবারের ট্রে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে আরসালের কাছে এসে বলে ওঠে,
–” আরসাল! তোর নাকি জ্বর এসেছে? আর তুই রেডি হচ্ছিস কেনো?”

–” আম্মু অল্প এসেছিলো কোনো ব্যাপার নাহ। আর আমাকে অফিস যেতে হবে। কাজ আছে অফিসে।”

–” কিন্তু আমি তোকে কোথাও যেতে দিবো নাহ। আমি গতকালই তোকে বলেছিলাম, কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস নি। ভাগ্যিস সেহের বুঝতো পেরেছিলো। নাহলে সারারাত কি কষ্ট টায় নাহ পেতি। আমি আর তোর কোনো কথা শুনবো নাহ। তুই অফিস যাবি নাহ ফাইনাল।”

–” আম্মু প্লিজ। আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। আর এখন তোহ আমার জ্বরও নেই। তুমি চিন্তা করো নাহ।”

–” আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আগে খাবার খাবি, তারপর মেডিসিন নিয়ে তারপর যাবি।”

–” আম্মু!”

–” আরসাল! আমি কিন্তু এইবার রেগে যাবো।”

–” ওকে ওকে! তোমাকে আর রাগতে হবে নাহ। তুমি যাহ বলছো তাই হবে। চলো খাইয়ে দিবা।”
মায়া চৌধুরীও মুচকি হেসে আরসালকে খাইয়ে দিতে থাকে।

★★★
আশা আর আমান এয়ারপোর্টে বসে আছে। আশা আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা, আমি যে তোমাকে গতকাল রাত থেকে বলে যাচ্ছি যে আমরা কোথায় যাচ্ছি। অথচ তুমি বলছো নাহ। এইটা কি ঠিক হচ্ছে?”

–” সারপ্রাইজ!”

–” আমার সারপ্রাইজ চাই নাহ। প্লিজ বলো।”

–” আচ্ছা বাবা বলতেছি। আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি।”

–” সত্যি। ইয়ে! কক্সবাজার আমার অনেক ভালো লাগে।”

–” I know!”
কিছুক্ষণ পর এনাউন্সমেন্ট হতেই আমান আর আশা গিয়ে প্লেনে উঠে। কিন্তু ওদের প্লেনে আরও একজন আছে, যে ওদের দুইজনের দিকে তীক্ষ্ণ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” তোমাদের এই সুখের সংসার আমি শেষ করে দিবো। একটা কথা আমার কাছে সবসময় মূল্যবান আর সেইটা হলো, আমি যাহ চাই তাহ পাই আর আমি যদি নাহ পাই তাহলে আর কাউকে সেটা পেতে দেই নাহ।”
কথাগুলো বলেই অচেনা লোকটাহ আমান আর আশার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দেয়।

★★★
আরসাল অফিসে নিজের কেবিনে বসে কাজ করছে। তখনই কারো “আরসাল” ডাকার আওয়াজে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নেহা। আরসাল নেহাকে দেখে বলে ওঠে,
–” নেহা তুমি এখানে?”

–” হুম। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এলাম।”

–” এয়ারপোর্টে কেনো গিয়েছিলে।”
নেহা আরসালের অপোজিটে রাখা একটি চেয়ারে বসে আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মম, ড্যাড কে সি অফ করতে।”

–” মানে, আংকেল আন্টি কি চলে যাচ্ছে?”

–” হুম।”

–” ওহ। তাহলে তুমি কি তোমার বাসায় একা থাকবা।”

–” নাহ, কোনো হোটেলে থাকবো। ওতো বড় বাসায় আমি একা একা থাকতে পারবো নাহ।”

–” তাহলে তুমি হোটেলে কেনো থাকবা? তুমি আমার বাসায় শিফট করে যাও।”

–” সেইটা কিভাবে হয়?”

–” কোনো কথা নাহ তুমি আমার বাসায় শিফট হচ্ছো। আর সেইটা আজই। ওকে! ওয়েট আমি বাসায় ফোন করে বলে দেয় তোমার জন্য রুম গুছিয়ে রাখতে।”
আরসাল ফোন টাহ নিয়ে জানালার পাশে চলে যায়। আর নেহা মুখে শয়তানি হাসি দিয়া মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আমি তোহ এইটায় চেয়েছিলাম আরসাল। তাই তোহ মম, ড্যাড কে বিদেশে পাঠিয়ে দিলাম। আর আমিও কি সুন্দর করে তোমার বাসায় শিফট হয়ে গেলাম। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তোমার আর সেহেরের ভিতর চিরদিনের জন্য দেওয়াল তুলে দেওয়া।”

সেহের ডাইনিং টেবিলের উপর বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে চকলেট খাচ্ছে। মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী সোফায় বসে বসে গল্প করছে। এর মাঝে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে সেহের যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলেই সামনে তাকিয়ে সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কারন সামনে আরসাল এবং নেহা দাড়ানো আছে, সাথে বড় লাগেজ। সেহেরকে সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরসাল ধমক দিয়ে বলে ওঠে,
–” কিরে সামনে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

আরসালের ধমক শুনে সেহের তাড়াতাড়ি সরে যায়। নেহা ভেতরে আসতেই মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কেমন আছো নেহা?”

–” জি আন্টি ভালো।”

–” হুম। কে আছিস নেহাকে ওর রুম টাহ একটু দেখিয়ে দে। যাও মা। আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। আরসাল তুইও যা ফ্রেশ হয়ে নে।”
নেহা আর আরসাল চলে যায়। সেহের এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরী কে জিজ্ঞাসা করে,
–” বড় আম্মু, এই নেহা আমাদের বাসায় কেনো?”

–” আজ থেকে ও এখানে থাকবে।”

–” কিহ? কেনো?”

–” ওর বাবা মা আবার বিদেশে চলে গেছে। তাই ও হোটেল থাকবে বলে ঠিক করে। আরসাল তাই ওকে এখানে নিয়ে এলো।’
মায়া চৌধুরীর কথা শুনে সেহেরের মারাত্মক রাগ উঠে। সেহের আর কোনো কিছু নাহ ভেবেই রেগে আরসালের রুমে চলে যায়। আরসালের রুমে আসতেই দেখে আরসাল রুমে নাই। চারপাশে একবার তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কোথায় গেলো?”

কথাটা বলেই পিছন ঘুরতেই সামনে আরসালকে দেখে ভয় পেয়ে পড়ে যেতে গেলে আরসাল ধরতে যায়, কিন্তু তাল সামলাতে নাহ পেরে সেহেরকে নিয়ে বিছানার উপর পড়ে আরসাল। আরসাল মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছিলো। বের হতেই সেহেরকে বিছানার কাছে দাড়িয়ে কি যেনো বিড়বিড় করতে দেকে এগিয়ে আসে। তারপরই এই অবস্থা হয়।
সেহের চোখ কুঁচকে বন্ধ করে রেখেছে। আরসালের চুল থেকে পানি পড়ছে সেহেরের মুখের উপর। আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহেরের মুখে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ে মুখ ভিজে যাচ্ছে। সেহের আস্তে আস্তে করে চোখ খুলে দেখে আরসাল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেহের বলে ওঠে,
–” ওঠো।”

সেহেরের কথায় আরসালের ধ্যান ভাঙতেই তাড়াতাড়ি সেহেরের উপর থেকে উঠে যায়। সেহের উঠে বসে ওড়না দিয়ে নিজের মুখের পানি মুছে নেয়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এখন এখানে কেনো?”

তখনই সেহেরের মনে পড়ে আবার নেহাকে এই বাসায় আনার কথা। উঠে দাড়িয়ে নিজের কোমরে হাত দিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” ওহ হ্যা! তুমি ঐ নেহাকে কেনো আনছো?”

–” তাতে তোর কি?”

–” আমার কি মানে? কি ভেবেছো তুমি নাহ বললে আমি কিছু বুঝতে পারবো নাহ?”

–” আচ্ছা তোহ, কি বুঝিস তুই?”

–” ঐ নেহার সাথে চিপকে নাহ থাকলে তোহ আর তোমার আবার ভালো লাগে নাহ। তাই বলে বাসায় নিয়ে আসবা?”
সেহেরের কথা শুনে আরসালের প্রচন্ড রাগ উঠে। আর সেহেরের হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” কি ভাবিস আমাকে বলতো? ক্যারেক্টারলেস?”

আরসালের রাগ দেখে সেহেরের গলা শুকিয়ে যায়। সেহের আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” নান নান না, তা তা তাহ ম মনে ক ক করবো কেনো? ব ব ব বলছিলাম।”

–” Shut up. কি, তোতলায়া কথা বলতেছিস কেনো?”
সেহের কান্না করে দেয় শব্দ করে। আর সেহেরের এমন ভাবে কান্না দেখে ভেবাচেকা খেয়ে সেহেরকে ছেড়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এরোকম ভাবে কান্না করছিস কেনো?”

–” তুমি আমাকে সবসময় বকো কেনো?”

–” আমি সবসময় বকা দেয় মানে। কান্না অফ কর।”

–” নাহ!”

–” এই তুই আমার রুম থেকে যাহ তোহ।”

–” সত্যি?”

–” হুম! যাহ।”
সেহের তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে এসে একটা লাফ দিয়ে বলে ওঠে,
–” যাক বাবা বাচলাম! এখানে আর একটু সময় থাকলে নির্ঘাত আমাকে মেরে ফেলতো। ঐ নেহার সাথে চিপকে থাকলে পরে দেখা যাবে। এখন প্রান নিয়ে বাচি বাবা।”
কথাগুলো বলেই সেহের নিজের রুমে চলে যায়।

★★★
আশা আর আমান কক্সবাজারের লং বিচ হোটেলে এসে উঠে। আমান ফ্রেশ হতে গেছে আর আশা বারান্দায় দাড়িয়ে সমুদ্র দেখছে। হোটেলের বারান্দা থেকে সমুদ্র খুব ভালো ভাবেই দেখা যায়। সমুদ্রের শীতল হাওয়া উপভোগ করা যায়। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় আশা চমকে উঠলেও বুঝে যায় যে ব্যাক্তিটি আমান। আমান আশার শাড়ির নিচ দিয়ে হাত দিয়ে আশার পেট আকড়ে ধরে। আশা আমান ছোয়া পেতেই জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আমান আশার চুল গুলো সরিয়ে কাধে চুমু দিতেই আশা কেঁপে উঠে। আমান আশাকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আশার কপালে একটা চুমু একে দেয়। আশা আমানের ভালোবাসার ছোয়া পেতেই মুচকি হাসি দেয়। আশার মুখে হাসি দেখে আমানের মুখেও হাসি ফুটে উঠে। আমান আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” যাহ ফ্রেশ হয়ে নে। আমি ডিনার অর্ডার করছি।”

–” হুম।”
আশা ফ্রেশ হতে চলে যায় আর আমান ডিনার অর্ডার দিতে থাকে। কিন্তু কেউ একজন তাদের ভালোবাসা দেখে রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে। আমানদের পাশের রুমের বারান্দায় একজন দাড়িয়ে তাদের এই ভালোবাসা দেখে মনে মনে বলে ওঠে,
–” তোমাদের এই সুখের সংসার বেশিদিন থাকবে নাহ। আশা, তোমাকে আমার চাই। আর যদি তোমাকে নাহ পাই, তাহলে আর কাউকেই পেতে দিবো নাহ। কথাতেই আছে, আমি যাহ চাই, তাহ পাই। আর আমি নাহ পেলে তাহ মাড়িয়ে দিয়ে যায়।”

★★★
সেহেরের আজ খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেছে। তাই সেহের ছাদে গিয়ে হেটে বেড়াচ্ছে। সাদের রেলিং এর কাছে গিয়ে নিচে তাকাতেই দেখে আরসাল জগিং করতে করতে আসছে। আরসালকে দেখে সেহেরের চোখ যেনো আরসালের উপরই আটকে যায়। আরসাল একটা ব্লাক জগিং সুট পরেছে, হাতে একটা ব্লাক ব্লেটেড ব্রেসলেট, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, হাতে হাত মোজা যার আঙুল কাটা জাস্ট হাতের তালু ঢাকা আছে, পায়ে ব্লাক কের্চ, মাথায় একটা ব্লাক রাবার ব্যান্ট পরা যেটার উপরে কয়েকটা চুল পড়ে আছে, একদম অন্যরকম লুক। যে কেউ আরসালের এই লুক দেখলে ফিদা হয়ে যাবে। সেহের আরসালকে দেখছে, হঠাৎ সেহেরের মেজাজ গরম হয়ে যায়, আরসালের পাশে নেহাকে দেখে। নেহা ও তাহলে আরসালের সাথে জগিং করতে গেছিলো। আরসাল আর নেহা জগিং করে এসে গার্ডেনে দাড়িয়ে কি নিয়ে যেনো কথা বলছে এবং হাসাহাসি করছে। সেহের তোহ রাগে পুরা লাল হয়ে গেছে। আরসাল নেহার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের সাদ থেকে তাদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে আবার নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা ভেতরে চলো, ফ্রেশ হতে হবে।”

–” হুম চলো!”
আরসাল সেহেরের দিকে আর একবার তাকিয়ে ভেতরে চলে যায়। সেহেরের ও রেগে নিচে চলে আসে। সেহের নিচে এসে দেখে একজন সার্ভেন্ট ট্রেতে খাবার নিয়ে আরসালের রমের দিকে যাচ্ছে। সেহের সার্ভেন্টের কাছে এসে বলে ওঠে,
–” শোনো এইগুলা নিয়ে কই যাও।”

–” আরসাল ভাইয়া আজ নিচে আসবে নাহ খেতে, তাই নেহা আপু বললো ওনাদের দুইজনের জন্য খাবার নিয়ে যেতে।”

–” কে কোনটা খাবে?”

–” আরসাল ভাইয়া সালাদ আর কফি খাবেন আর নেহা আপু চিকেন স্টু খাবেন।”

–” ওহ, তুমি আমার কাছে দাও।”

–” নাহ আপু কি বলেন, আমি দিয়ে আসি।”

–” নাহ তোমাকে বলছি তোহ আমার কাছে দাও। আর তুমি যাও।”

–” ওকে আপু।”
সার্ভেন্টটি চলে যেতেই সেহের ট্রে টাহ ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে কিচেন রুম থেকে লবন নিয়ে এসে চিকেন স্টু তে মিশিয়ে দেয়। আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” খা এইবার। গিয়েছিলি নাহ আরসালের সাথে জগিং আর হাসাহাসি করতে। এখন এই সল্ট চিকেন স্টু খেয়ে সেইটা হজম কর।”

সেহের ট্রে টাহ নিয়ে আরসালের রুমে ঢুকে দেখে আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছে আর নেহা সামনে বসে একভাবে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। দৃশ্যটাহ দেখেই সেহেরের মনে হচ্ছে তার শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিছে। নেহা হঠাৎ সেহেরের দিকে তাকাতেই নেহার রাগ উঠলেও নিজেকে সামলিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আরে! সেহের তুমি?”

নেহার কথা শুনে আরসাল দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের হাতে ট্রে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সেহের এগিয়ে এসে ট্রে টাহ সেন্টার টেবিলের উপর রেখে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমাদের ব্রেকফাস্ট।”

–” তাহ তুমি কেনো আনতে গেলে? সার্ভেন্টই তোহ এনে দিতো।”

–” নাহ কোনো প্রব্লেম নেই। তোমরা ব্রেকফাস্ট করে নেও।”
কথাটা বলে সেহের বেরিয়ে যায় রুম থেকে। কিন্তু রুম থেকে বেরিয়ে সেহের দরজার পাশ থেকে উকি দিয়ে দেখতে লাগে সবকিছু। নেহা আরসালের দিকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল আগে খেয়ে নাও। পরে কাজ ওকে!”

–” হুম!”
আরসাল খাবার এগিয়ে নিয়ে খাবার খেতে শুরু করে। নেহা খাবার মুখে দিতেই চোখ বড় করে ফেলে আর ওয়াশরুমের দিকে দৌড়ে যায়। নেহাকে এরকম ভাবে যেতে দেখে আরসাল বলে ওঠে,
–” Neha are you ok? কি হয়েছে?”

নেহা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল খাবারে অনেক লবন। মুখেই তোলা যাচ্ছে নাহ।”

–” বাট নেহা আমাদের শেফ তোহ অনেক ভালো রান্না করে।”

–” মেবি কোনো ভাবে লবন পড়ে গেছে৷”

–” হুম। হতে পারে।”

–” ইশ! মুখের ভেতর কেমন যেনো করছে।”
আরসাল নেহাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখে সেহের মুখ চেপে হাসছে। আরসালকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে সেহের তাড়াতাড়ি সরে যায়। কিন্তু আরসাল বুঝে যায় নেহার খাবারে এতো লবন হওয়ার কারন কি? আরসাল নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট নাও৷ আমি সার্ভেন্ট কে বলছি আবার ভালো খাবার পাঠানোর জন্য।”

–” হুম!”
নেহা তার রুমে চলে যায়। আর এইদিকে আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আমি জানি সেহের এইটা তোর কাজ। তুই করেছিস এইসব। দেখাচ্ছি মজা তোকে।”

আরসাল এসব ভেবেই সেহেরের রুমের দিকে চলে যায়। সেহের নিজের রুমে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ দরজা লক করার আওয়াজে পিছনে তাকিয়ে দেখে আরসাল। আরসাল কে দেখেই সেহের বলে ওঠে,
–” ভাইয়া, তুমি দরজা কেনো লক করছো?”

–” তোর সাথে বাসর করবো তোহ তাই।”

–” মানে?”
আরসাল সেহেরের একদম কাছে চলে আসে। সেহের আরসালকে এতো কাছে দেখে ভয় পেয়ে যেয়ে পিছনে সরতেই আরসাল সেহেরের হাত ধরে বলে ওঠে,
–” একদম পিছিয়ে যাবি নাহ। আগে আমার কথার এ্যান্স দে।”

–” কিক কিক কি কথা?”

–” নেহার খাবারে লবন কেনো মিশিয়েছিস?”

–” আমি?”

–” হ্যা তুই। একদম নাটক করবি নাহ, যে তুই কিছুই জানিস নাহ। এখন বল লবন কেনো মিশিয়েছিস?”

–” হ্যা, তুমি ঠিকই বলেছো। আমি মিশিয়েছি লবন। আর যাহ করেছি বেশ করেছি।”

–” কেনো মিশিয়েছিস আমি সেইটা আস্ক করছি?”

–” তোমার সাথে অলটাইম চিপকে থাকে কেনো, তাই মিশিয়েছি। আমার রাগ হয়, ও যখন তোমার কাছে যায়।”

–” কেনো? তোর কেনো রাগ হয়? আমার সাথে যার ইচ্ছে মিশুক, চিপকে থাকুক, যাহ খুশি করুক। তোর কেনো রাগ হয়?”
আরসালের এই কথা শুনে সেহের চুপ হয়ে যায়। সেহের মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সত্যি তোহ! আমার কেনো রাগ হয়। আমার রাগ হওয়ার তোহ কোনো কারন নেই। আরসাল ভাইয়ার সাথে যার খুশি মিশবে। কিন্তু আমি কেনো মেনে নিতে পারি নাহ? কেনো এমন হচ্ছে?”

আরসাল সেহেরকে কিছু ভাবতে দেখে বলে ওঠে,
–” কি ভাবছিস? আমার পাশে কাউকে দেখলে তোর খারাপ কেনো লাগে, সহ্য কেনো করতে পারিস নাহ, এইসব ভাবতেছিস তোহ?”

–” হ্যা, তাই ভাবছি। কিন্তু আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।”

–” সেহের ভাব, তাড়াতাড়ি ভেবে নে সেহের। উত্তর বের কর, নাহলে অনেক দেরী হয়ে যেতে পারে।”
কথাটাহ বলেই আরসাল সেহেরের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আর সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে।

চলবে……………….🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-২৩+২৪

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 23+24

সারাদিন কাঠফাটা রোদ ছিলো, অথচ সন্ধ্যার পর হালকা মেঘ আর এখন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে পুরো আকাশ। আবহাওয়ার যেনো কোনো ঠিকই নাই, কখন বৃষ্টি কখন রোদ কিছুই যেনো বোঝার উপায় নাই।
আরসাল আর সেহের গাড়িতে করে যাচ্ছে। আরসাল কোনো কথা বলছে নাহ। চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। সেহের ভয়তে চুপ মেরে আছে। বেজে উঠে। সেহের ফোন অন করে দেখে মায়া চৌধুরী কল করেছে। আরসাল একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। সেহের চুপচাপ আরসালের হাতের উপর ফোন টাহ দিয়া দেয়। আরসাল ফোন টাহ রিসিভ করে কানে রাখতেই ঐপাশ থেকে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” সেহের কই তুই মা? আরসাল চলে আসলে বিপদ হয়ে যাবে, তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আই।”

–” হুম আসছে।”
আরসালের কন্ঠ শুনে মায়া চৌধুরী ভেবাচেকা খেয়ে যায়। হালকা কম্পিত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আরসাল! তুই?”

–” হুম। রাখছি।”

–” আরসাল, আরসাল শোন।”
আরসাল ফোন কেটে দেয়। সেহেরের দিকে আবার ফোন এগিয়ে দেয় আরসাল। সেহের ফোন নিয়ে আবার চুপ করে বসে থাকে। কিছু সময়ের মাঝে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়ে যায় সাথে ঝড়ো হাওয়া। হঠাৎ শব্দ করে গাড়িটাহ থেমে যায়। সেহের ভয় পেয়ে বলে ওঠে,
–” কি হলো?”

আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের চুপ মেরে যায়। আরসাল গাড়ি থেকে নামতে গেলে সেহের আরসালের হাত ধরে বলে ওঠে,
–” কই যাও? বাইরে কেমন ঝড় হচ্ছে দেখতে পাচ্ছো নাহ?”

আরসাল সেহের দিকে তাকিয়ে তার হাত ধরা সেহেরের হাতের দিকে তাকাতেই সেহের হাত সরিয়ে নেয়। আরসাল আবার সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই আরসাল একদম ভিজে যায়। গাড়ির টায়ারের কাছে এসে দেখে টায়ার পান্চার হয়ে গেছে। গাড়িতে একটা এক্সট্রা টায়ার থাকলেও এই ঝড়ের কারনে তাহ বদলানো সম্ভব নাহ। আর তাছাড়া গাড়িতে থাকাটাও একটা বিপজ্জনক হয়ে যাবে। আরসাল চারিদিকে তাকিয়ে দেখে রাস্তার পাশে একটা পুরোনো বিল্ডিং আছে। আরসাল গাড়ির দরজা খুলে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নেমে আই।”

–” কি? এই ঝড়ের মাঝে নামবো কেনো?”

–” এখন গাড়িতে থাকা ঠিক নাহ।”

–” তাহলে কোথায় যাবো?”
আরসালের সেহেরের এতো প্রশ্ন শুনে রাগ উঠে যায়। আর কোনো কথা নাহ বলে সেহেরকে কোলে তুলে নেয়। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সেহেরও ভিজে যায়। আরসাল সেহেরকে নিয়ে পুরোনো বিল্ডিং এ চলে আসে। চারিপাশে একদম অন্ধকার। আরসাল ফোন বের করতে গিয়ে দেখে ফোন নাই, তারমানে ফোন গাড়িতে রেখে এসেছে। সেহের আরসালের হাত ধরে আছে। সেহের অন্ধকার ভয় পায়। আরসাল বলে ওঠে,
–” তুই এখানে থাক। আমি গাড়ি থেকে ফোনটাহ নিয়ে আসি।”

–” কি বলছো আমি একা একা?”

–” পাঁচ মিনিট লাগবে। ওয়েট।”
কথাটা বলেই আরসাল গাড়ি থেকে ফোন আনতে চলে যায়। সেহের ভয়তে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। আরসাল গাড়ি থেকে একটা প্যাকেটে করে ফোন নিয়ে আসে। এসেই ফ্লাস লাইট অন করে সেহেরের দিকে মারতেই আরসালের চোখ যেনো সেখানেই আটকে যায়। সেহের আজ মিষ্টি কালারের একটা গাউন পরেছিলো যাহ বৃষ্টির পানিতে ভিজে শরীরের সাথে একদম এটে আছে, ছাড়া চুলগুলো ভিজে শরীর মুখের সাথে লেগে রয়েছে, মুখ গলা দিয়ে পানির ফোঁটা রয়েছে, চোখ কুঁচকে বন্ধ করে রেখেছে, সেহেরকে দেখতে অনেক আবেদনময়ী লাগছে। মুখের উপর আলোর অনুভব হতেই সেহের চোখ খুলে দেখে আরসাল ফ্লাশ লাইট অন করে তাকিয়ে আছে। সেহের দৌড়ে গিয়ে আরসালকে জড়িয়ে ধরে ভিতু কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আমি কত ভয় পাচ্ছিলাম জানো?”

আরসাল এক হাত দিয়ে সেহেরকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” ফোন আনতে গেছিলাম।”

–” আর যাবা নাহ।”
হঠাৎ অনেক জোরে বাজ পড়ার শব্দে সেহের আরসালকে আরও জোরে আকড়ে ধরে। আরসাল পাশে একটা উচু জায়গার উপর ফোন টাহ উবুড় করে রাখে, যার কারনে পুরো জায়গায় হালকা আলোতে ভরে যায়। আরসালের সেহেরকে এতো কাছে পেয়ে কেমন যেনো নিজেকে মাতালের মতো লাগছে। আরসালের কাছে সেহের একটা নেশা জাতীয় দ্রব্য, যাকে দেখলেই আরসালের নেশা হয়ে যায়, মাতালের মতো লাগে নিজেকে। সেহের কিছু সময় পর আরসালের থেকে সরে এসে আরসালের দিকে তাকাতেই সেহেরের মনে হয় আরসালের চোখ অনেক নাহ পাওয়া জিনিস পেতে চায়। তাকিয়ে থাকতে পারে নাহ সেহের আরসালের চোখের দিকে। চোখ সরিয়ে নিয়ে কিছুটা দুরে গিয়ে দাড়ায় সেহের।

★★★
আশা বিছানা গুছিয়ে নিচ্ছে। আমান মাত্র বাসায় এসে ফ্রেশ হচ্ছে। আজ বাসায় কেউ নেই। মি. আশরাফ, মিসেস. আখি, আশিকা সবাই আমানের নানুর বাসায় গেছে বেড়াতে। হঠাৎ বাইরে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। আশা তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরতে থাকে। বারান্দায় রেলিং এর কাছে দাড়ানোর জন্য আশা অনেকটায় ভিজে যায়। আমান ফ্রেশ হয়ে দেখে আশা নেই, আশা হয়তো নিচে গেছে ভেবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখে ঝড় হচ্ছে। বারান্দার দরজা আটাকানোর জন্য এগোতেই দেখে আশা বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরছে সেই সাথে ভিজেও যাচ্ছে। আমান গিয়ে আশার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি করেছিলি? বড় আর হলি নাহ? ভিজে যাচ্ছিস দেখিস নাহ?”

–” আরে তাতে কি হয়েছে?”

–” তাতে কি হয়েছে মানে! ঠান্ডা লেগে গেলে।”

–” আরে কিছু হবে নাহ।”

–” তোকে এতো বুঝতে হবে নাহ।”
বলেই আশার দিকে তাকাতেই থেমে যায় আমান। এতো সময় আশার সাথে কথা বললেও আশাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে নি আমান। এখন আশার দিকে তাকাতেই যেনো থেমে যায় আমান। আশা একটা আকাশী কালারের শাড়ি পরা যার সামনের দিকে বৃষ্টির পানিতে অনেকটাহ ভিজে গেছে, সামনের চুলগুলো হালকা ভিজে মুখের সাথে লেগে আছে, শাড়ি টাহ গুছিয়ে কাধের উপর নেওয়ার জন্য কোমরের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে এবং বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা পানি চিকচিক করছে, এক কথায় আশাকে দেখে আমান অনেকটাহ ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে। আশা আমানকে নিজের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আমান হঠাৎ করেই আশার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। আমানকে নিজের দিকে আসতে দেখে আশা অনেকটা ঘাবড়ে যেয়ে পেছনে যেতে থাকে। আমানও আশার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, আশা পেছনে যেতে যেতে দেওয়ালে বাধা পায়। আমান এগিয়ে এসে একহাত আশার মাথার পাশে দেওয়ালে রাখে, আর একহাত আশার কোমরে রাখে। আমান আশার কোমরে হাত রাখতেই আশা কেঁপে উঠে আমানের হাত চেপে ধরে। আমান নিজের মুখটাহ একদম আশার সামনে আনতেই আশার মুখে আমানের নিশ্বাস আছড়ে পড়ে। আমান আস্তে করে আশার কোমরে চাপ দিতেই আশা আরও জোরে আমানের হাত চেপে ধরে এবং চোখ বন্ধ করে, জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আমান আশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আশার কপালে চুমু একে দেয়। আশা এই প্রথম আমানের ভালোবাসার পরশ পেয়ে, আমানকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। আমান বুঝতে পারে আশার এমোন করার কারন, আমানও মুচকি হেসে আশাকে জড়িয়ে ধরে। আশা আমানের দিকে তাকিয়ে কাঁদো গলায় বলে ওঠে,
–” আমি তোমাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি তোমায়।”

আমান মুচকি হেসে আবারও আশার কপালে চুমু একে দেয়। আশা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়৷ আমান আশাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে, আশার দুই চোখের উপর চুমু দেয়। আমান আশার ঠোঁটে হালকা চুমু দিতেই আশা চোখ খুলে আমানের দিকে তাকাতেই দেখে আমান মুচকি হাসছে। আশা লজ্জা পেয়ে সরে যেতে নিলেই আমান আশার হাত ধরে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমানের এক হাত আশার পেটে গিয়ে আকড়ে ধরে। আশা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আমান আশার কাঁধের থেকে চুল গুলো সরিয়ে চুমু দিতেই আশা কেপে উঠে। আমান আশাকে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আমান আশার কোমরে এক হাত দেয় আর এক হাত আশার মাথার পিছনে দিয়ে আশার মুখ এগিয়ে এনে আশার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আশা আমানের হাত জোরে চেপে ধরে। আমান যেনো এক অন্যরকম সুখের ঠিকানায় চলে যাচ্ছে। আশার চোখের কোনা বেয়ে পানি পড়ছে।

★★★
আরসাল সেহেরের থেকে অনেক দুরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে আছে। কারন আরসাল চায় নাহ, সে কোনো ভুল করে ফেলুক। তাই দুরে আছে। কিছু সময়ের মাঝেই বৃষ্টি কমে আসলে আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” চল।”

–” হুম।”
গাড়ির কাছে এসে গাড়ির টায়ার পান্চার দেখে সেহের বলে ওঠে,
–” ওমা! গাড়ির টায়ার তোহ গেছে। এখন?”

আরসাল কিছু নাহ বলে গাড়ির ব্যাকসাইড থেকে একটা টায়ার এনে ঠিক করতে শুরু করে। সেহের চুপ করে দাড়িয়ে আছে, আর আরসালের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ভাইয়া এতো শান্ত আছে কি করে? যাহ হলো, এতো শান্ত থাকার তোহ কথা নাহ। তাহলে? আচ্ছা এইটা আবার ঝড় আসার পূর্ব লক্ষণ নাহ তোহ? সেহের তোর জীবনে আবার কি বিপদ আসতে চলেছে কে জানে?”

আরসাল টায়ার টাহ ঠিক করে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এখানে দাড়িয়ে থাকবি নাকি যাবি?”

–” হুম? ওহ হ্যা চলো।”
সেহের গাড়িতে উঠে বসে। আরসাল নষ্ট টায়ার টাহ ব্যাক সাইডে রেখে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালানো শুরু করে।

★★★
প্রায় মিনিট পাঁচেক পর আশার ঠোঁটের স্পর্শ ত্যাগ করে আমান। আশার দিকে তাকিয়ে দেখে আশা এখনো চোখ বন্ধ করে রয়েছে। আমান একদম সফ্ট কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আশা!”

আশা আস্তে আস্তে চোখ খুলে আমানের দিকে তাকায়। আমান আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সময় লাগবে?”

আশা কি বলবে বুঝে উঠতে পারে নাহ, চোখ নামিয়ে নেয় আমানের থেকে। আশা মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে। আমান বলে ওঠে,
–” আশা তুই আমাকে ভালোবাসিস এইটা ঠিক। কিন্তু তুই এখনো আমার সংস্পর্শে আসার জন্য প্রস্তুত নাহ। তোর সময় দরকার। আর আমি তোকে সেই সময় টাহ দিতে চাই। তুই হয়তো বলতে পারিস, সময় তোহ তোমার আরও বেশি দরকার। আশা, আমি এই কয়েকদিন অনেক ভেবেছি। নিজেকে নিয়ে ভেবেছি। জেরিনকে আমি ভুলতে পারবো নাহ এইটা যেমন ঠিক, তার থেকেও বড় ঠিক তোর পাশে কাউকে সহ্য করতে পারছিলাম নাহ। জেরিন আমার অতীত, আর তুই আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। আমি অতীত নিয়ে নাহ, আমি আমার বর্তমান আর আমার ভবিষ্যত নিয়ে থাকতে চাই। আমার জীবনসঙ্গিনীর সাথে থাকতে চাই। দিন শেষে তোকেই বলতে চাই, #তুই_শুধু_আমার। বলতে চাই, ভালোবাসি তোকে, ভালোবাসতে চাই তোকে।”

আশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে। অবশেষে আমান তার ভালোবাসা কে পেলো আশা। আশার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসতেই আমান সেইটা মুছে দেয়। আমান আশাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দেয়। বিছানায় শুয়ে আশাকে বুকে টেনে নিয়ে আমান বলে ওঠে,
–” আজ থেকে এইটাই তোর ঘুমানোর জায়গা।”

আশার আজ কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছে নাহ। আজ তার ভালোবাসার মানুষ কে পেলো এইটায় তার কাছে সবথেকে বড় পাওয়া জীবনের। আশা আমানের বুকে মাথা রেখে এতোদিনের স্বপ্ন পূূরন করে।

★★★
মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, জিহাদ চৌধুরী, কবির চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী, আশফি সবাই ড্রইংরুমে চিন্তিত ভাবে বসে আছে। মায়া চৌধুরী সবাইকে সবটা বলতেই সবার চিন্তা শুরু হয়ে যায়। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ হতেই সবাই চমকে উঠে। আশফি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে আরসাল আর সেহের দুইজনেই ভিজে রয়েছে। আরসাল ভেতরে এসে কাউকে কিছু নাহ বলে উপরে চলে যেতে নিলে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আরসাল!”

–” আম্মু একদম ভিজে গেছি এখন কথা বলা পসিবেল নাহ। কিন্তু একটা কথা বলে যায়। আগামীকাল থেকে সেহেরের ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ।”

কথাটা বলেই আরসাল কারো দিকে নাহ তাকিয়ে উপরে চলে যায়। সবাই আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সেহের চুপ করে কাউকে কিছু নাহ বলে মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে যায়।

সেহের নিজের রুমে বসে আছে। আশা ফোন দিয়েছিল ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেহের যাবে কি করে? আরসাল তোহ বারন করে দিয়েছে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। তখনই মায়া চৌধুরী সেহেরের রুমে এসে দেখেন সেহের চুপচাপ বসে আছে। মায়া চৌধুরী পিছন থেকে সেহেরের মাথায় হাত রাখতেই সেহের পিছনে ঘুরে মায়া চৌধুরী কে দেখে জড়িয়ে ধরে। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কিরে মা, মন খারাপ?”

–” সবাই ভার্সিটি যাচ্ছে বড় আম্মু। শুধু আমারই যাওয়া বারন হয়ে গেলো।”

–” গতকাল কি হয়েছে কিছু বললিও নাহ।”

–” আমি যার বার্থডে পার্টিতে গেছিলাম সেখানে আরসাল ভাইয়াও ইনভাইটেড ছিলো।”

–” হায় আল্লাহ, কি বলিস?”

–” হুম, সে যাই হোক আমি কি আর ভার্সিটি যাবো নাহ?”

–” কে বলেছে যাবি নাহ? আমি ঠিক আরসালকে বুঝিয়ে দিবো।”

–” হুম।”
মায়া চৌধুরী সেহেরের মুখটাহ কাছে এনে কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে, আরসালের রুমের দিকে যান।
আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছে। দরজা খোলার আওয়াজ হতে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী। মায়া চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়ে আবার কাজ করতে থাকে আরসাল। মায়া চৌধুরী আরসালের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল!”

–” বলো।”

–” মায়ের দিকে তাকিয়ে কি কখনো একটুও কথা বলতে ইচ্ছে করে নাহ তোর?”

–” আমি কাজ করছি।”

–” কাজ তোহ তুই সবসময় করিস। এমোন ভাবে কথা বলিস, যেনো আমার আরও পাঁচ দশটা ছেলে আছে, তুই কথা নাহ বললে তাদের কাছে যাবো।”
আরসাল কিছু বলে নাহ। কিন্তু কাজও করছে নাহ, শুধু কোলের উপর ল্যাপটপ টাহ ধরে রেখেছে। মায়া চৌধুরী আবার কাদো কন্ঠে বলে ওঠে,
–” সেদিনের জন্য এখনও মায়ের উপর রেগে আছিস। আমি তোহ তোদের ভালোর কথা ভেবেই সব করেছি। আমার তোহ তুই একটায় ছেলে। তুই এমন রেগে থাকলে আমি কার কাছে যাবো বল।”

কথা গুলো বলেই আশা চৌধুরী কেঁদে উঠে। আরসাল কোল থেকে ল্যাপটপ টাহ নামিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে, মায়া চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” I am sorry ammu. I am so sorry. Please don’t cry. I am sorry.”

মায়া চৌধুরীও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। এতোদিন পর ছেলেটাহকে জড়িয়ে ধরতে পেরে চোখের পানি ছেড়ে দেয় মায়া চৌধুরী। আরসাল মায়া চৌধুরী কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের হাতে মায়ের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি তোমার খুব খারাপ ছেলে তাই নাহ আম্মু? আমার জন্য তোমাকে কত কষ্ট পেতে হয়। সত্যিই আমি খুব খারাপ।”

–” এইসব কি বলছিস বাবা তুই। আমার ছেলে তোহ আমার কাছে বেস্ট। আমার একমাত্র মানিক তুই। তুই কখনো খারাপ হতেই পারিস নাহ।”
মায়া চৌধুরী কথাগুলো বলে আবার আরসালকে জড়িয়ে ধরে। আরসালও তার মাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। মায়া চৌধুরী আরসালকে সরিয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে একটু চিন্তিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” আরসাল! বাবা, তোর শরীর টাহ গরম গরম লাগছে। তুই ঠিক আছিস? গতকাল তোহ বৃষ্টিতে একদম ভিজে এসেছিস। তোর জ্বর আসে নি তোহ আবার?”

–” আম্মু তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো। আমি একদম ঠিক আছি। শরীর একদম সুস্থ। মাঝে মাঝে শরীর গরম লাগতেই পারে। এইটা কোনো ব্যাপার নাহ।”

–” কিন্তু আরসাল!”

–” প্লিজ আম্মু। কিছু হয় নি আমার।”

–” আচ্ছা, ঠিক আছে। আরসাল তোকে একটা কথা বলার ছিলো।”

–” হুম বলো।”

–” আরসাল! সেহেরের ভার্সিটি।”

–” আম্মু তুমি যদি এই বিষয়ে কথা বলতে আসো, তাহলে বলবো এখানেই থেমে যাও।”
কথাটাহ বলেই আরসাল উঠে দাড়ায়। মায়া চৌধুরীও উঠে দাড়িয়ে আরসালের সামনে এসে বলে উঠে,
–” কিন্তু আরসাল এইভাবে ভার্সিটি বন্ধ করে। আর তাছাড়া গতকাল ও তোহ।”

–” আম্মু প্লিজ! তোমরা জানো ইয়েসটারডে আমি যদি নাহ থাকতাম কি হতো? সেহেরের সাথে কি কি ঘটে যেতে পারতো? তাছাড়া ঐ ইডিয়েট টার মাথায় তোহ এতটুকু থাকা উচিত ছিলো, তাই নাহ?”

–” আরসাল কাল রাতে কি খারাপ কিছু হয়েছিল?”

আরসাল অনেকটাহ থতমত খেয়ে যায়। আরসাল কোনোরকম ভাবে বলে ওঠে,
–” নাহ কিছু হয় নি। বাট গতকাল যেভাবে ঝড় শুরু হয়েছিল, ও তোহ প্রবলেমে পড়ে যেতো। আর তাছাড়া তোমরা তোহ জানোই আমি রাতে মেয়েদের এইভাবে একা একা যাওয়াটাহ পছন্দ করি নাহ। তারপরও তুমি ওকে পারমিশন দিলা?”

–” আচ্ছা সরি, ওর আর কখনো এরকম যাবে নাহ। কিন্তু ভার্সিটিতে নাহ গেলে তোহ ওর স্টাডিতে প্রবলেম হবে।”

–” সেইটা পরে দেখা যাবে। বাট ও আপাততো ভার্সিটি যাবে নাহ এইটায় ফাইনাল। এরপরও যদি ও ভার্সিটি যায় তাহলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাবো। আর কখনো আসবো নাহ এই বাসায়।”

–” আচ্ছা, ঠিক আছে। তুই শান্ত হ। সেহের আপাততো ভার্সিটি যাবে নাহ। ওকে।”
মায়া চৌধুরী কথাগুলো বলে বেরিয়ে যায়। আরসাল বারান্দায় এসে ডিভানের উপর বসে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ইয়াশকে আমি যতটাহ চিনি, গতকালকের ঘটনার পর ইয়াশ চুপ করে থাকবে নাহ। আপাততো সেহেরের ভার্সিটি নাহ যাওয়ায় ভালো।”

আরসাল মাথাটাহ হঠাৎ ব্যাথা করে উঠতেই আরসাল হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে বলে ওঠে,
–” উফ! মাথাটা ব্যাথা কেনো করছে কে জানে? চোখ গুলোও জ্বলে যাচ্ছে।”

★★★
রাহুল অফিসে কাজ করতে করতে হঠাৎ সেহেরের কথা মনে পড়ে। রাহুল মনে মনে বলে ওঠে,
–” I love you Seher. কিন্তু তোমাকে বলতে পারছি নাহ। আজই ড্যাড কে বলবো, যে আমি সেহের কে বিয়ে করতে চাই।”

রাহুল বসে বসে সেহেরের কথা ভাবছে এমন সময় ফোন টাহ বেজে উঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে মি. মুবিনের ( রাহুলের বাবা ) ফোন। রাহুল ফোন টাহ রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো ড্যাড!”

–” রাহুল! তুমি একটু আজিজের বাসায় যাবে আজ। ওকে?”

–” But why dad?”

–” আজিজের কাছে আমাদের বিজনেসের একটা ফাইল আছে। কিছু কাজের জন্য ওকে দিয়েছিলাম। কাজ কমপ্লিট হয়ে গেছে আর আমি চাই ঐগুলো তুমি নিজে নিয়ে আসো।”

–” ওকে ড্যাড নিয়ে আসবো।”
রাহুল ফোন কেটে দেখে রাত ৮ টাহ বেজে গেছে। রাহুল অফিস থেকে বেরিয়ে এসে চৌধুরী ম্যানশনের দিকে যাত্রা শুরু করে।

★★★
সেহের টিভিতে কার্টুন দেখতেছে আর চকলেট খাচ্ছে। আরসাল স্টাডি রুম থেকে নিজের রুমে যাওয়ার সময় নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে, সেহের সোফার উপর বসে চকলেট খাচ্ছে আর কার্টুন দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। আরসাল সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” এই মেয়েটাহ জীবনেও বড় হবে নাহ। বাচ্চা বাচ্চাই থেকে যাবে। বাট ওর বাচ্চা বাচ্চা কিউটনেস গুলো অনেক জোস লাগে। শুধু দেখতে ইচ্ছে করে।”

এমন সময় দরজায় বেল বেজে উঠতেই সেহের গিয়ে দরজা খুলে দেখে রাহুল। সেহের রাহুলকে দেখে আনন্দের সাথে বলে ওঠে,
–” রাহুল ভাইয়া তুমি? আমি তোহ ভাবতেই পারছি নাহ। এতো রাতে? এসো।”

আরসালও উপর থেকে তাকিয়ে আছে কে এসেছে দেখার জন্য। রাহুলকে ভেতরে আসতে দেখেই আরসালের মেজাজ গরম হয়ে যায়। সাথে সেহেরের উপরও রাগ উঠতে থাকে। আরসাল রাগেতে নিজের রুমে চলে যায়। সেহের রাহুলকে ভেতরে নিয়ে এসেই চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” আম্মু, বড় আম্মু, মেঝো আম্মু, বাবা, বড় আব্বু, মেঝো আব্বু, আশফি ভাইয়া সবাই দেখে যাও কে আসছে?”

সেহেরের কান্ড দেখে রাহুল হেসে দিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কি করছো এইসব?”

–” সবাইকে জানাচ্ছি যে তুমি এসেছো।”
তখনই কেয়া চৌধুরী এসে রাহুল কে দেখে হেসে বলে ওঠে,
–” আরে রাহুল! কখন এলে?”

–” এইতো আন্টি এখনই এলাম।”

–” আচ্ছা দাড়িয়ে আছো কেনো? বসো।”
এর মাঝে সবাই বেরিয়ে এসে রাহুলকে দেখে খুশি হয় এবং গল্প করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রাহুল আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আংকেল এইবার ফাইলটা দিতে পারলে আমি বাসায় চলে যেতাম।”

–” বাসায় যাবা মানে কি? আমাদের সাথে ডিনার করে তারপর যেও।”

–” কিন্তু আংকেল।”
রাহুলকে আর বলতে নাহ দিয়ে জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কোনো কিন্তু নাহ রাহুল। তুমি আমাদের সাথে ডিনার করছো আর এইটায় ফাইনাল।”

–” ওকে!”
মায়া চৌধুরী সাথীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সাথী যা তোহ মা, আরসাল ভাইয়া কে ডেকে নিয়ে আই।”

–” ওকে বড় আম্মু।”
বলেই সাথী দৌড়ে চলে যায় আরসালের রুমে।
আরসালের মাথার ব্যাথাটাহ একটু কমেছে। তাই কিছু ফাইল চেক করছিলো। সাথী গিয়ে ওঠে,
–” ভাইয়া।”

–” কে? ও টুনটুনি তুই? বল কি বলবি?”

–” ভাইয়া আমাকে টুনটুনি বলবা নাহ।”

–” আচ্ছা, এখন বলতো কেনো এসেছিস আমার কাছে?”

–” নিচে সবাই ডিনার করতে ডাকতেছে।”

–” তুই যা আমি আসছি।”

–” নাহ তুমি এখনই আসো।”
কথাটাহ বলেই সাথী আরসালের হাত ধরে নিচে নিয়ে আসে। আরসাল নিচে আসতেই আরসালের মাথা গরম হয়ে যায়। কারন সেহের রাহুলের পাশের চেয়ারে বসে ডিনার করছে আর হেসে হেসে কথা বলছে। সেহের হাসতে হাসতে আরসালের দিকে তাকাতেই দেখে আরসাল ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আরসালকে দেখেই সেহের চুপ করে যায়।
ডিনার শেষে রাহুল চলে যায়। বাকি সবাইও যার যার রুমে চলে যায় ঘুমাতে।

★★★
নেহা নিজের রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে,
–” অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। আমি এখানে আর তুমি ওখানে থাকলে আমি কিছুতেই তোমার নাগাল পাবো নাহ আরসাল। তাই আমাকে তোমার কাছে যেতে হবে। তাই কালই আমি বাবা মাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর আমি আসছি আরসাল তোমার কাছে। সেই সাথে সেহেরের সর্বনাশ ডেকে আনতে।”

নেহা একটা দুইটা ফটো হাতে নেয়। একটা আরসাল আর একটা সেহেরের। নেহা আরসালের ফটো তে একটা চুমু দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিয়ে সেহেরের ফটো টাহ সামনে নিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আজ আরসাল তোমাকে ঘৃনা করে কিন্তু তাও ভালোবাসে। আর তোমার কাছে যদি আরসাল থাকে তাহলে আজ নাহ হয় কাল আরসাল তোমাকে ঠিকই মেনে নিবে। কিন্তু আমি তোহ তাহ হতে দিবো নাহ সেহের। আমি এইটাও বুঝতে পেরেছি, তুমিও আরসালের উপর দূর্বল হয়ে পড়েছো। কিন্তু আমি তোমাদের মিলতে কি করে দেই বলোতো। তাই আমি আসছি তোমার জীবনের খুশি কেড়ে নিতে এবং আমার আরসালকে নিজের করে নিতে।”

কথাগুলো বলে নেহা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে সেহেরের ফটোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেহেরের পুরো ফটো পুড়ে একদম ছাই হয়ে যায়। আর নেহা সেইদিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দেয়।

চলবে…………….🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-২১+২২

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 21+22

মোমবাতি, হালকা কিছু ফুল, বেলুন দিয়ে সাজানো একটি বাসর ঘরে বসে আছে আশা। এই রুম টাতে আগেও অনেক বার এসেছে। আগে এসেছিলো অন্যভাবে, আর আজ অন্যভাবে। আগে এইরুমের উপর কোনো অধিকার ছিলো নাহ আশার, কিন্তু এখন এই রুমের উপর সম্পুর্ন অধিকার আছে আশার। আর রুম টাহ হলো আমানের। হ্যা, আমানের সাথে আশার বিয়ে হয়েছে। কিছু সময়ের মধ্যেই পুরো জীবনটায় ঘুরে গেছে আশার। আশা চোখ বন্ধ করে ফেলে আর ভাবতে থাকে সেই সময় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো=

সাইফ বিয়ে করতে পারবে নাহ শুনে জিহাদ চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিহাদ চৌধুরী কে এরকম করতে দেখে আশা এগিয়ে এসে জিহাদ চৌধুরীর সামনে বসে বলে ওঠে,
–” বড় আব্বু তুমি এমোন করছো কেনো? আর তুমি তোহ আমাদের শিখিয়েছো যা হবে ভালোর জন্যই হবে। তাহলে আজ তুৃমি কেনো ভেঙে পড়ছো?”

–” তোর জীবনটাহ শেষ হয়ে যাবে মা। একটা বিয়ে ভেঙে যাওয়া মেয়ের যে অনেক বদনাম হয়।”
কেয়া চৌধুরী উঠে এসে আশার পাশে বসে আশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না কান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” এখন কি হবে আমার মেয়ের? সবাই তোহ আমার মেয়েকে দোষারোপ করবে। আমার মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেলো।”

–” কিছুই শেষ হয় নি।”
কথাটা শুনে সবাই তাকিয়ে দেখে আরসাল। আরসাল আবার বলে ওঠে,
–” আশার জীবন এভাবে নষ্ট হতে দিবো নাহ। আজ, এক্ষুনি, এখানে, আশার এই সাজেই আশার বিয়ে হবে।’

আরসালের কথা শুনে কবির চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কিন্তু কার সাথে আরসাল?”

আরসাল কবির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মিসেস. আখির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আন্টি আশাকে তোহ আপনি ছোট বেলা থেকেই চিনেন। আপনি খুব ভালো করেই জানেন আশা কেমন মেয়ে। আশাকে আপনার বাড়ির বউ বানানো যায় নাহ?”

আরসালের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকায় আরসালের দিকে। আশা চমকে তাকায় আমানের দিকে। আমান একবার আশার দিকে তাকিয়ে আরসালের দিকে তাকায়। আরসাল মিসেস. আখির সামনে থেকে এসে আমানের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” বিয়ে করবি আমার বোন টাহ কে?”

–” আরসাল!”

–” হুম বল।”

–” তুই তোহ সব জানিস। তারপরও।”

–” হ্যা, আমি সব জানি। তারপরও বলছি।”

–” কিন্তু আরসাল!”
হঠাৎ মিসেস. আখি আমানের সামনে এসে বলতে শুরু করে,
–” আমি বাসায় চলে যাচ্ছি। বউমা বরন করার জন্য সব গুছিয়ে রাখতে।”

–” আম্মু!”

–” আমান বউমা কে নিয়ে তাড়াতাড়ি আই। আমি অপেক্ষা করছি।”
মিসেস. আখি আশার সামনে গিয়ে, আশার মুখে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” তাড়াতাড়ি আমার ঘর আলো করতে চলে আই। আমি অপেক্ষা করবো তোর পা কখন আমার ঘরে পড়বে তার জন্য।”

কথাটা বলেই মিসেস. আখি রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে আসেন বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। আরসাল আমানের কাধে হাত রেখে বলে ওঠে,
–” চল রেডি হয়ে নিবি।”

বিয়ে হয়ে যায় আমান আর আশার অপ্রত্যাশিত ভাবে। আশা যাহ কখনো ভাবেই নি তাই হয়ে যায় আশার সাথে।
হঠাৎ দরজায় কারোর আওয়াজে বাস্তবে ফিরে আসে আশা। দেখে আশিকা এসেছে। আশিকা এগিয়ে এসে আশার দিকে একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আশা আপু, ওফ সরি। এখন তোহ তুমি আমার ভাবি। আচ্ছা ভাবি শোনো এখানে দুইটা শাড়ি আছে। আসলে আমরা তোহ এখনো তোমার জন্য কিছু কিনতে পারি নি। কিন্তু আম্মু আসার সময় এই দুইটা শাড়ি কিনে নিয়ে আসছে তোমার জন্য। এখন একটা পরো, কাল সকালে একটা পরো কেমন। আর কাল দুপুরের আগেই তোমার সব ড্রেস ওরা ডেলিভারি দিয়ে যাবে। আম্মু অর্ডার করে দিয়ে আসছে।”

–” আচ্ছা।”

–” আমি আসি তাহলে, বাই, গুড নাইট।”
আশিকা চলে যায়। আশা শাড়ির প্যাকেট টাহ ছোট্ট রাউন্ড টেবিলের উপর রেখে বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

★★★
আরসাল আমানদের বাসার রুফটপে দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছে। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের ছোয়া পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে আমান দাড়িয়ে আছে। আরসাল আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরে! তুই এখানে কেনো? রুমে আমার বোনকে একা রেখে তুই এখানে কেনো? দেখ আমাকে তোর বাসায় তুই একেতোহ জোর করে এনেছিস। আবার এখন এখানে তুই। যাহ রুমে যা।”

–” হুম যাবো। কিন্তু তার আগে তোর সাথে কথা আছে। আর কথাগুলো নাহ শুনে আমি কোথাও যাবো নাহ।”

–” আচ্ছা। এখন বল কি বলবি?”

–” কি করেছিস তুই?”

–” মানে! আমি আবার কি করলাম?”

–” আমিও সেইটায় জানতে চাচ্ছি কি করছিস তুই? সাইফ আশাকে বিয়ে করতে চাইলো নাহ কেনো? আর কেউ কিছু বুঝুক বাহ নাহ বুঝুক। আমি খুব ভালো করেই জানি এর পিছে তোর হাত আছে। এখন আমাকে এইটা বল কি করেছিস তুই?”

–” হুম। তুই ঠিকই ধরেছিস। আমিই করেছি এইসব। আর তুই এইটা জানতে চাস যে কি করেছি আমি, তাইতো? ওকে তাহলে শোন।”

Flashback………….

আরসাল বিয়ের দিন বিকালে সাইফকে ফোন দেয়। ওপাশ থেকে সাইফ ফোন তুলে বলে ওঠে,
–” হ্যালো! কে বলছেন?”

–” আরসাল।”

–” ওহ! ভাইয়া আপনি? সরি ভাইয়া। আসলে আপনার নাম্বার টাহ আমার সেভ করা নেই। তাই বুঝতে পারি নি।”

–” It’s ok. সমস্যা নেই। আমি তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি।”

–” জি ভাইয়া বলেন।”

–” সাইফ! তুমি সবাইকে বলে দাও যে তুমি আশাকে বিয়ে করতে পারবে নাহ।”

–” মানে?”

–” মানে। তুমি আশাকে বিয়ে করবে নাহ।”

–” Are you mad? কি বলছেন আপনি এইসব? আপনি জানেন, আমি এখন বিয়ে করতে নাহ আসলে আশার কতো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে?”

–” সেইটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে নাহ। তোমাকে যেইটা বললাম সেইটায় করো।”

–” কখনোই নাহ। আমার আশাকে পছন্দ হয়েছে। আর আমি নিজের ইচ্ছেতে ওকে বিয়ে করছি। তাই আপনার এই কথা আমি কখনোই রাখবো নাহ। আর এই বিয়েটাহ হয়ে গেলে আপনার এই কথা আমি সবাইকে বলে দিবো।”

–” ভালো কথার আর দাম নাই। এইবার আমার নাম্বার টাহ সেভ করে রাখো। কাজে লাগবে। বাই।”
আরসাল ফোন টাহ কেটে একটা বাকা হাসি দেয়।

১ ঘন্টা পর,
সাইফ রেডি হবে এমন সময় একটা ফোন আসে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে অফিস থেকে কল আসছে। সাইফ ফোন টাহ রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”

–” স্যার, আমি প্রিতম বলছি।”

–” হ্যা প্রিতম বলো। কিন্তু তোমার গলা এমোন শোনাচ্ছে কেনো? Are you ok?”

–” No sir, I am not ok.?”

–” কি হয়েছে।”

–” স্যার, হঠাৎ করেই আমাদের সব ডিল ফ্লপ হয়ে যাচ্ছে। অলরেডি ৩০ লাখ টাকা লস হয়ে গেছে৷ এমন অবস্থা মনে হচ্ছে আজ রাতের ভেতর কোটি টাকার উপর লস হয়ে যাবে।”

–” মানে! হঠাৎ, এমোন হওয়ার কারন কি?”

–” জানি নাহ। কিছুই বুঝতে পারছি নাহ।”
সাইফের হঠাৎ আরসালের কথা মাথায় আসে। আর সাইফ এইটাও বুঝে যায়, কার জন্য কি হয়েছে। ওদিক থেকে প্রিতম বলে ওঠে,
–” স্যার, কিছু তোহ বলুন।”

–” আমি দেখছি।”
সাইফ ফোন কেটে দিয়ে নিজের চুল আকড়ে ধরে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ফোন টাহ হাতে নিয়ে আরসাল কে কল করে। আরসাল কল রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” আরে মি. সাইফ। আপনার কল আমার ফোনে এই সময় কেনো? কিছু টাইম পর তোহ আপনি আসছেন এখানে, তাহলে এইসময় আপনার কল, বুঝলাম নাহ।”

–” আমি জানি নাহ কেনো আপনি এমন করলেন।”

–” কি করেছি আমি?”

–” জেনেও নাহ জানার ভান করবেন নাহ প্লিজ। নিজের বোনের এতো বড় ক্ষতি করতে কেনো চাইছেন জানি নাহ। কিন্তু।”

–” ঐ ঐ স্টপ। আমি জানি আমার বোনের কিসে ভালো হবে। কিসে সুখী হবে আমার বোন। সেইটা তোমার নাহ ভাবলেও চলবে।”

–” যাই হোক। আমি এই বিয়ে ক্যানসেল করে দিচ্ছি। আপনি আমার বিজনেস ঠিক করে দিন।”

–” আমার কানে যখন পৌছাবে সাইফ বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। তখনই তোমার বিজনেসও ঠিক হয়ে যাবে। বাই।”
ফোন কেটে দেয় আরসাল। সাইফ কি আর করবে, ভেঙে দেয় বিয়ে। কিন্তু কাউকে বলে নাহ বিয়ে ভাঙার আসল কারন টাহ কি।

Present……….

আমান আরসালের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” এইসব কেনো করতে গেলি তুই?”

–” কারন আজ যদি সাইফের সাথে আশার বিয়ে হতো তাহলে নাহ তুই আর নাহ আশা, কেউ সুখী হতি নাহ। কারন তোর মনে আমার বোন একটু হলেও জায়গা বানিয়ে নিয়েছে। তাই তোহ এতো অস্থির অস্থির ছিলি এই কয়েকদিন। আশার পাশে আর কাউকে মানতে পারছিলি নাহ।”
চুপ করে থাকে আমান। আরসাল আবার বলে ওঠে,
–” আমার বোনটাহ কিন্তু তোর জন্য অপেক্ষা করছে। যাহ, আর শোন অনেক কিছু করে তোর কাছে আমার বোনটাহ কে দিয়েছি। আমার বোনের চোখে যেনো পানি নাহ দেখি।”

আমান কিছু নাহ বলে রুফটপ থেকে নিচে চলে যায়। আরসাল আমানের যাওয়ার তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” আমি জানি আমান, আমার বোন টাহ তোকে অনেক ভালোবাসে। আর আমার বোন টাহ তোর কাছেই সুখী হবে। তুই পারবি ওরে সুখে রাখতে। সেই বিশ্বাস আছে আমার তোর উপর।”

★★★
আশা বিছানার উপর বসে আছে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে আমান ভেতরে এসে দরজা বন্ধ করছে। আশার যেনো কেমন লজ্জা লজ্জা করছে। আমানের বউ সে, ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। আমান দরজা বন্ধ করে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে আশা বসে আছে। এখনো সেই ভারি সাজে রয়েছে। আশাকে সত্যিই আজ একটা পুতুলের মতো লাগছে। আমান বিছানার দিকে এগিয়ে আসতেই আশা নিচে নেমে আমানকে সালাম করতে যায়। আমান আশার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে আশার মুখে এক হাত রেখে বলে ওঠে,
–” তুই আমার পায়ে হাত দিবি নাহ। তোর স্থান আমার পায়ে নাহ, তোর স্থান তোকেই বানিয়ে নিতে হবে। যাই হোক, এইসব ভারি সাজ খুলে ফ্রেশ হয়ে নে।”

–” হুম।”
আশা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে গহনা খুলতে থাকে। একটা নেকলেস খুব বাজে ভাবে আটকে আছে। বার বার চেষ্টা করছে আশা কিন্তু কোনোভাবেই খুলতে পারছে নাহ। হঠাৎ কারো ছোয়া পায় হাতে, আয়নায় তাকিয়ে দেখে আমান। আশা আস্তে আস্তে হাত নামিয়ে নেয়। আমান নেকলেস টাহ খুলতে চেষ্টা করে। একসময় দাত দিয়ে খোলার জন্য নেকলেসে মুখ দিতেই আশার কাঁধে আমানের ঠোঁটের ছোয়া লাগে, আর আশা কেঁপে উঠে। এই প্রথম আমানের ছোয়া পেলো আশা। চোখ কুচকে বন্ধ করে রেখেছে। আমান নেকলেস টাহ খুলে আয়ানায় তাকিয়ে দেখে আশা চোখ কুচকে বন্ধ করে রেখেছে। আমান আয়নায় আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ডান! ফ্রেশ হয়ে নে।”

আশা চোখ খুলে আয়নায় তাকিয়ে দেখে আমান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বারান্দায় চলে যায়। আশা একটা হালকা গোলাপি কালারের শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আমান বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে,
–” আমি পারবো তো আরসালের বিশ্বাস রাখতে? পারবো তোহ আশাকে সুখী করতে? কিন্তু আমি যে জেরিন কে এখনো ভুলি নি। নাহ, ও থাক আমার মনে। জেরিন আমার অতীত, আর আশা আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। একটু সময় লাগবে কিন্তু আশা সুখী হবে আমার কাছে।”

আমান কথাগুলো ভেবেই ভেতরে এসে সামনে তাকিয়ে যেনো থমকে যায়। আশা মাত্র শাওয়ার নিয়ে আসলো। হালকা গোলাপি কালারের শাড়ি, মুখে হালকা পানি, চুলের পানিতে শাড়ি কিছুটা ভিজে গেছে, আশা চুল মুছতে মুছতে আমানের দিকে চোখ যায়। আমান আশার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে, এতে যেনো আশার একটু অসোয়াস্তি লাগে। আমান আস্তে আস্তে আশার দিকে এগিয়ে যায়। আশা আমানকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়, আর পিছিয়ে যেতে থাকে। আশা পেছতে পেছতে দেওয়ালের সাথে লেগে যায়। আমান এগিয়ে এসে এক হাত দেওয়ালে রেখে আশার দিকে একটু ঝুকে। আমানের নিশ্বাস আশার মুখে আছড়ে পড়ছে। আশার পুরো শরীর কাপতে শুরু করে। আমান আশাকে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের বুকের সাথে আশার পিঠ মিশিয়ে নিয়ে, আশার ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে ঘ্রান নিতে থাকে। আশার পুরো শরীর শিউরে উঠে আমানের ছোয়ায়। কিছু সময় পর আমান আশাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। আশা আমানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিছুসময় পর আমান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এই কয়েকদিন অনেক প্রেসার গেছে শুয়ে পড়।”

–” হুম।”
আশা শুয়ে পড়ে। লাইট অফ করে দিয়ে কিছুটা দুরত্বে আমানও শুয়ে পড়ে। দুইকজনের মাঝেই অনেক রকম অনুভূতি, কথা লুকিয়ে আছে। কিন্তু কেউ কিছুই প্রকাশ করে নাহ।

আশা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আমানকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমানের একটা হাত আশার কোমরে আর এক হাত আশার মাথার নিচে। আশা আমানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়, শাওয়ার নিয়ে নিচে এসে কিচেন রুমে চলে যায়। কিচেন রুমে মিসেস. আখি রান্না করছেন সাথে সার্ভেন্টা রাও আছে, যারা মিসেস. আখি কে সাহায্য করছেন। আশাকে কিচেন রুমে দেখে মিসেস. আখি এগিয়ে এসে মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” কিরে মা, তুই এখানে কেনো?”

–” আসলে আন্টি।”

–” আন্টি কি হ্যা। আমি নাহ তোর শাশুড়ী। আর শাশুড়ী হলো আর একজন মা। আজ থেকে আমাকে মা বলে ডাকবি। আর যদি আমি আন্টি ডাকতে শুনি তাহলে খুব করে বকা দিবো কিন্তু।”

–” ঠিক আছে মা।”

–” আচ্ছা, এখন বলতো এখানে কেনো তুই। কিছু লাগবে?”

–” নাহ, আমি তোহ তোমাকে হেল্প করতে এসেছিলাম।”

–” বউ হয়ে এসেছিস জন্য এতো দায়িত্ব পালন করার দরকার নাই। তুই এই বাড়ির মেয়ে। শুধু আমার ছেলের খেয়াল রাখলেই হবে বুঝলি।”
মিসেস. আখির কথায় আশা লজ্জা পেয়ে যায়। তখনি দরজায় বেল বেজে উঠে। মিসেস. আখি আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” দরজা খুলে দেখ।”

আশা গিয়ে দরজা খুলে দেখে সেহের, সাথী আর আশফি দাড়িয়ে আছে। আশা সেহেরকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ওদের ভেতরে নিয়ে আসে। আরসাল, আমান আর আশিকাও নিচে নেমে আসে। মিসেস. আখি এগিয়ে এসে বলে ওঠে ,
–” কখন ফোন দিয়েছি এখন এলি তোরা। ৫মিনিটের রাস্তা তাও এতো লেট।”

আশফি গিয়ে মিসেস. আখিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” আন্টি আমার কোনো দোষ নাই। দোষ সব এই সেহেরের। ঘুম থেকে উঠানোই যায় নাহ। কুম্ভকর্ণ একটা।”

–” এই কি বললা তুমি আমাকে? আশা।”
আশা আশফির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আহা, ভাই। থামো তোহ। সেহের তুই আই তোহ।”

–” বাহ, সকাল সকাল আমার ড্রইংরুমে তোহ দেখি চাঁদের হাট বসেছে।”
মি. আশরাফ সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলেন।
মিসেস. আখি বলে ওঠে,
–” হুম। আচ্ছা গল্প পরে হবে আগে সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসো।”

সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট শেষ করে নেয়। মি. আশরাফ, আরসাল, আমান আর আশফি একসাথে বসে কথা বলছেন। মি. আশরাফ বলে ওঠেন,
–” আমান আর আশার জন্য একটা বড় অনুষ্ঠান করা দরকার। কারন আমাদের কেউ তোহ আর এই বিয়ের কথা জানে নাহ।”

আমান বলে ওঠে,
–” ওকে বাবা। কিন্তু তুমি কবে করতে চাও?”

–” আগামীকাল।”

–” ওকে।”

★★★
রাতের বেলা সেহের নিজের রুমে বসে ফোন চালাচ্ছে। হঠাৎ আরসালের একটা ম্যাসেজ আসে “এতো রাতে অনলাইনে কি করিস” ম্যাসেজ টাহ দেখে সেহের তাড়াতাড়ি ফোন অফ করে দিয়ে বলতে শুরু করে,
–” জল্লাদ একটা। শান্তিতে একটু ফোনও চালাতে পারি নাহ। ইচ্ছা করে মেরে হাড্ডি ভেঙে দেয়।”
আরসালকে বকতে বকতে সেহের ঘুমিয়ে যায়।

Reception party……..

সেহের নিজের রুমে রেডি হচ্ছে। আজ আমান আর আশার রিসিপশন পার্টি। সেহেরকে একটা পরির মতো দেখাচ্ছে। সেহের একটা সাদা গর্জিয়াস গাউন পরেছে, চুলগুলো সামনে পাফ করে উচু করে খোপা করে স্টোনের ক্লিপ লাগানো, চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপবাম, কানে সাদা টপ, পুরাই এঞ্জেল। সেহের একবার ভালো করে আয়নায় নিজেকে দেখে বেরিয়ে আসে। আরসাল রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতেই একজনের উপর চোখ আটকে যায়। সেহের আশফির সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আর আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় পর সবাই আমানদের বাসায় চলে যায়। আশা আর আমান স্টেজে বসে আছে।
আস্তে আস্তে পার্টিতে সবাই চলে আসে। চারপাশে কাচের গ্লাসের আওয়াজে ভরে গেছে। হালকা সফ্ট মিউজিকে ভরে আছে চারিদিকে। এমন সময় আশিকা স্টেজে উঠে বলতে শুরু করে,
–” Hello everyone. আজ এই সুন্দর সময়ে একটা মজা। আর সেইটা হলো কাপেল ডান্স। এখানে সিঙ্গেল মিঙ্গেল সবাই জয়েন্ট করবে। কিছু সময় পর পর পার্টনার এক্সচেঞ্জ করা হবে। সো সবাই রেডি এন্ড লেটস গো।”

নেহা এসে আরসালকে টেনে নিয়ে যায়। যাহ দেখে আশফির খারাপ লেগে উঠে। কিন্তু পার্টনার এক্সচেঞ্জ হবে এইজন্য সেও জয়েন্ট করে। রাহুল এসে সেহেরের দিকে হাত বাড়াতেই সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে দেখে আরসাল নেহাকে সাথে নিয়ে ড্যান্স করছে। সেহেরও রেগে রাহুলের হাতের উপর হাত দেয়। আর যাহ দেখে আরসালের মারাত্মক রাগ উঠলেও চুপ করে থাকে।
শুরু হয় নাচ। নেহা একভাবে আরসালের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখে যে আরসাল কোনো একদিকে তাকিয়ে আছে। নেহাও সেদিকে তাকাতেই দেখে সেহের আর রাহুল একসাথে নাচছে। নেহা মনে মনে বলে ওঠে,
–” আবার সেই সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যে আরসাল এইভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। অসহ্য, তুমি শুধু আমার আরসাল, শুধু আমার।”

হয়ে যায় পার্টনার এক্সচেঞ্জ। আশফির কাছে নেহা, আরসালের কাছে সেহের, রাহুলের কাছে আশিকা, আমান আর আশা সবার মিডলে নাচছে, ওরা আজ চেঞ্জ হবে নাহ। আরসাল সেহেরকে নিয়ে নাচতে নাচতে চাপা রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” রাহুলকে খুব ভালো লাগে তাই নাহ?”

–” হ্যা, লাগে তাতে তোমার কি?”
সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহেরের কোমরে হালকা জোরে চাপ দেয়। সেহের হালকা ব্যাথা + শিউরে উঠে। আরসাল আবার বলে ওঠে,
–” তোকে যেনো আর ঐ রাহুলের সাথে নাহ দেখি।”

–” কেনো? আমি তোমার কোনো কথা শুনবো নাহ।”
আরসাল আবার চেপে ধরে সেহেরের কোমর। সেহেরে ব্যাথা পেয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছো? ব্যাথা পাচ্ছি।”

–” কথা নাহ শুনলে আরও বেশি পাবি।”
সেহের আর কোনো কথা বলে নাহ। চুপচাপ নাচতে থাকে৷ আরসাল আর সেহেরকে নাচতে দেখে নেহার রাগে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আশফি একভাবে তাকিয়ে আছে নেহার দিকে।

★★★
পার্টি শেষ হয়ে গেছে। আশা বিছানায় বসে ফোন চালাচ্ছে। এর মাঝে আমান রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে যায়। আমান বেরিয়ে আসলে আশা আমানের দিকে তাকায়। আমান কে আশার কাছে একটু অস্বাভাবিক লাগছে, অসুস্থ মনে হচ্ছে আমানকে, আশা আমানের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?”

–” মাথায় প্রচন্ড পেইন হচ্ছে।”

–” হঠাৎ।”

–” জানি নাহ।”

–” আচ্ছা তুমি এখানে শুয়ে পড়ো।”
আমান বিছানায় শুয়ে পড়ে। আশা লাইট অফ করে দিয়ে আমানের পাশে আধশোয়া হয়ে মাথা চেপে দিতে লাগে। আমানও আরাম পেয়ে আশাকে জড়িয়ে ধরে।

★★★
কেটে যায় আরও কিছু দিন। কেটে যায় মানুষের জীবন। সময় চলছে তার নিজ গতিতে। এগিয়ে যায় সবার জীবনের গতি, ভালোবাসা, অভিমান।

সেহের ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে আসছিলো। হঠাৎ কেউ সামনে আসায় একটু কেঁপে উঠে সামনে তাকায় সেহের। তাকিয়ে দেখে ইয়াশ। সেহেরের মুখটাহ বিরক্তিতে ভরে যায়। ইয়াশ বলে ওঠে,
–” কেমন আছো সেহের?”

–” ভালো।”

–” হুম। আজ রাতে আমার বাসায় বার্থডে পার্টি আছে।”

–” কার বার্থডে?”

–” আমার।”

–” ওহ, Happy birthday.”

–” Thanks. কিন্তু আজ আমি তোমার কাছে একটা রিকোয়েস্ট করতে চায়।”

–” কি রিকোয়েস্ট?”

–” আমি চাই, আজ আমার বার্থডে পার্টিতে তুমি আসো।”

–” আসলে, আমি জানি নাহ আমি আসতে পারবো কি নাহ। কিন্তু আমি ট্রাই করবো।”

–” প্লিজ সেহের।”

–” আমি চেষ্টা করবো, আসছি।”
চলে আসে সেহের। ইয়াশ সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
অনেকবার ইয়াশের ফোন দেওয়া হয়ে গেছে। সেহেরের শুধু আরসালের ভয় করছে। কারন বাড়ির বাকি সবাই যেতে দিলেও আরসাল কখনোই যেতে দিবে নাহ। রাতে বাড়ির বাইরে বাড়ির মানুষ ছাড়া একা একা সেহেরকে বা আশাকে কখনোই বাইরে যেতে দিতো নাহ আরসাল। সেহের কিছুক্ষণ রুমে পায়চারি করে মায়া চৌধুরীর রুমে চলে যায়। মায়া চৌধুরীর রুমে দরজার সামনে দাড়িয়ে নক করলে মায়া চৌধুরী ভেতরে যেতে বলে। মায়া চৌধুরী একটা বই পড়েছিলেন। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের এসেছে। সেহেরকে দেখে মায়া চৌধুরী বলে ওঠেন,
–” সেহের মা, কি হয়েছে?”

–” বড় আম্মু, আমার এক ফ্রেন্ডের আজ বার্থডে। আমাকে অনেকবার ফোন করেছে। আমি যেতে চাই বড় আম্মু।”

–” কিন্তু সেহের।”

–” প্লিজ বড় আম্মু।”

–” আচ্ছা শোন। আরসাল বাসায় নেই। কোন একটা ফাংশনে গেছে। তুই যাহ আর তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস। আরসাল আসার আগেই। জানিসই তোহ আরসাল রাতে মেয়েদের একা একা বাইরে যাওয়া পছন্দ করে নাহ।”

–” তুমি চিন্তা করো নাহ বড় আম্মু, আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”
সেহের খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হতে চলে যায়।
সেহের রেডি হয়ে ইয়াশের বলে দেওয়া পার্টি সেন্টারে চলে আসে। এসেই ইয়াশ কে ফোন দিয়ে বলে যে সে চলে এসেছে। ইয়াশ বাইরে এসে সেহেরকে দেখে বলে ওঠে,
–” সেহের তুমি আসলা তাহলে। আমি তোহ বিশ্বাসই করতে পারছি নাহ। O my god.”

–” সত্যি কথা বলতে আমি আসতাম নাহ। শুধু আপনার বার্থডে আর এতোবার কল দিচ্ছিলেন তাই আসলাম।”

–” Thank you. Thank you so much.”

–” welcome. এখন কি ভেতরে যাওয়া যাবে?”

–” Sure. Come.”
ইয়াশ সেহেরকে ভেতরে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগে সবার সাথে। সেহেরের এইসব ভালো লাগছিলো নাহ, তাও ইয়াশের বার্থডের জন্য সব মেনে নিচ্ছে। কিছু সময় পর সেহেরকে একজন লোকের সামনে এনে দাড় করিয়ে ইয়াশ বলে ওঠে,
–” এখন আমি আমার একজন ফ্রেন্ডের সাথে ইন্ট্রোডাক করাবো তোমাকে। দোস্ত!”

লোকটা উল্টো দিকে ঘুরে ছিলো। ইয়াশের ডাকে লোকটা ঘুরে দাড়ায়। সেহের লোকটার দিকে তাকাতেই যেনো সেহেরের মাথায় বাজ পড়ে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে আর লোকটাকে দেখেই সেহেরের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। লোকটা তার দিকে অবাক + অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর সেহেরের সামনে থাকা লোকটি হলো আরসাল। ইয়াশ আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল, লুক দোস্ত। She is Seher. My friend. আর সেহের এ হলো আমার ফ্রেন্ড আরসাল। আরসাল চৌধুরী।”

আরসাল সেহেরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে ওঠে,
–” Hello! Miss Seher.”

সেহের আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়। ইয়াশ সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কেক কাটার টাইম হয়ে গেছে। Let’s go.”

সেহের কি করবে বুঝতে পারছে নাহ। তাও ইয়াশের সাথে চলে যায় সেহের। ইয়াশ কেক কেটে সেহেরের মুখের সামনে ধরে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে দেখে আরসালকে খুব শান্ত দেখাচ্ছে। কিন্তু এই শান্ত রুপের ভয়াবহতা সেহের খুব ভালোভাবেই জানে। সেহের কি আর করবে ইয়াশের হাতে হালকা কেক খেয়ে নেয়।
পার্টি চলছে তার মতো করে। আরসাল ড্রিঙ্কস সাইডে বসে হালকা ড্রিঙ্কস করছে। ইয়াশ সেহেরের কাছে এসে বলে ওঠে,
–” সেহের!”

–” হুম।”

–” চলো একটা জিনিস দেখানোর আছে।”

–” কি আর কোথায় যাবো?”

–” উপরে।”

–” কিন্তু!”

–” কোনো কিন্তু নাহ। প্লিজ কাম।”
ইয়াশ সেহেরকে অনেকটা জোর করে নিয়ে যায়। আরসাল হঠাৎ চারপাশে তাকিয়ে দেখে সেহেরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে নাহ। আরসাল বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে চারপাশ দেখতে লাগে। কিন্তু কোথাও সেহের বা ইয়াশ কে দেখা যাচ্ছে নাহ। আরসাল ইয়াশকে খুব ভালো করেই চিনে। আরসাল তোহ এইটায় বুঝতে পারছে নাহ, সেহেরের সাথে ইয়াশের বন্ধুত্ব কিভাবে পসিবেল। আরসাল আশেপাশে তাকিয়ে ওদের খুজতে থাকে।

এইদিকে……

ইয়াশ সেহেরকে একটা রুমে নিয়ে আসে। সেহের চারিদিকে একবার তাকিয়ে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি দেখাবেন এখানে?”

–” Seher, I love you.”

–” What, are you mad?”

–” সেহের বিশ্বাস করো আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।”

–” কিন্তু আমি বাসি নাহ।”
বলেই সেহের রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে ইয়াশ সেহেরের হাত ধরে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এতো দিন তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাট কিছুতেই বুজছো নাহ। সরি সেহের, আজ আমি তোমার এমন অবস্থা করবো যে এরপর থেকে আমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারবে নাহ।”

–” মানে!”

–” মানে!”
কথাটা বলেই ইয়াশ হেসে দিয়ে নিজের ব্লেজার খুলে শার্টের বাটন খুলতে শুরু করে। যাহ দেখে সেহের ভয় পেয়ে যায়, আর কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কি কি করছেন কি আপনি?”

সেহেরের কথা শুনে ইয়াশ হেসে দিয়ে নিজের শার্ট খুলে ফেলে দিয়ে সেহেরের দিকে আগাতে শুরু করে। সেহের ইয়াশকে আগাতে দেখে বসা অবস্থায় পেছনে যেতে যেতে কান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” দেখুন আমার কাছে আসবেন নাহ বলে দিলাম। খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।”

–” আচ্ছা তাহলে দেখি কি কি খারাপ হয়।”
কথাটা বলে সেহেরকে চেপে ধরে বিছানার সাথে। সেহের চেচাচ্ছে আর কান্না করছে। হঠাৎ ইয়াশ কে কেউ লাথি মেরে সরিয়ে দেয়। সেহের তাকতেই দেখে আরসাল। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের আরসালকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া, আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।”

আরসাল তাকিয়ে দেখে সেহেরর জামার হাতের কাছে ছিড়ে গেছে সাথে নখের আঁচড়ের দাগ দেখা যাচ্ছে। ইয়াশ আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” Arsal, are you mad?”

–” তোর সাহস কি করে হয় ওর দিকে চোখ দেওয়ার?”

–” মানে কি? কে হয় ও তোর?”

–” আমার জীবন।”
কথাটা বলেই আরসাল ইয়াশকে মারতে শুরু করে। ইয়াশ কে মারতে মারতে একদম আধমরা বানিয়ে দেয় আরসাল। সেহের ভয় পেয়ে যায়, গিয়ে আরসাল কে থামিয়ে দিতেই সেহেরের হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে আসে আরসাল।

চলবে……………..🌹

তুই শুধু আমার পর্ব-১৯+২০

0

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 19+20

সঙ্গীত……….

আরসাল গার্ডেনে একটা চেয়ারে বসে আছে। আমান এসে আরসালের পাশে বসে। আরসালকে কিছু ভাবতে দেখে আমান জিজ্ঞাসা করে ওঠে,
–” কি ভাবছিস এতো?”

–” ভাবছি, একটু আগে মেহেদি আর্টিস্টরা আমাকে কর্নফর্ম করেছে, যে সেহরের মেহেদীতে নাকি কোনো মেডিসিন এড করা হয়েছে এন্ড মেডিসিনটাহ কোনো মেহেদিতে দেওয়া হয় নাহ। কারন এইটা এমন একটা মেডিসিন যাহ কোনো ক্ষতি করে নাহ বাট হাতে প্রচন্ড জ্বালার সৃষ্টি করে। হাত লাল হয়ে যায়, যেমন টাহ সেহেরের হয়েছে। কিন্তু কথাটা হচ্ছে এরকম মেডিসিন কে মিশালো? কে আছে এখানে যে সেহেরের চোখে পানি দেখতে চায়? কে সে?”

–” কি বলছিস এইসব?”

–” হুম। আরও কিছু প্রশ্ন আছে। যার উত্তর সেহের আমাকে দিবে। বাট কথা বলার পজিসন টাহ হচ্ছে নাহ। সঙ্গীত অনুষ্ঠান টাহ শেষ হলেই সেহেরের সাথে আমার কথা বলতে হবে।”

–” হুম।”
আরসাল আর আমান কথা বলছে। চারপাশে যার যার মতো সবাই রয়েছে। হঠাৎ আরসালের হার্ট জোরে বিট হতে থাকে। আরসাল কি মনে করে যেনো পিছনে তাকায় আর তাকিয়ে দেখে সেহের। আরসাল এইটায় বুঝে উঠতে পারে নাহ সেহেরকে সবসময় পরির মতো কেনো লাগে? এইটাকি ওর মনের জন্য সেহেরকে পরির মতো লাগে নাকি সেহের সত্যি এতো সুন্দর, সবার কাছেই কি সেহের কে এতো সুন্দর লাগে। আরসালের যেনো পলকই পড়ছে নাহ। তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহের লেহেঙ্গা পরেছে, যার ঘাগরা কমলা কালারের, গাঢ় গোলাপি কালারের টপ, লেমন কালারের দোপাট্টা, চুল গুলো সামনে পাফ করে ব্যান্ট বেনি করে পেছনে ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক, কমলা কালারের চুড়ি, কানে কমলা কালারের ঝুমকা, সেহেরকে লাগছে পরি। সেহের আস্তে আস্তে হেটে হেঁটে আসছে। সেহের এগিয়ে এসে আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে আশার কাছে চলে যায়। হঠাৎ করে পুরো লাইট অফ হয়ে যায়। সবাই অবাক হয়ে যায়। এর মাঝেই স্টেজের মাঝে একটা লাইট জ্বলে উঠে। সবাই সেদিকে তাকিয়ে দেখে নেহা। নেহা আরসালের দিকে তাকিয়ে হেসে নাচতে শুরু করে। আর স্পিকারের বেজে ওঠে গান–
,,,,,মেরা ঝুমকা উঠা কে লায়া রে ইয়ার ভে,,,,,,
,,,,,,,,,জো গিরা ধা বেরেলি কে বাজার মে,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,মে তোহ ঠুমকা লাগাকে সারমা গায়ি,,,,,,,,,,
,,,,,,,বোলি ঘোংগার বানধা দেনগে মেইন আ গায়ি,,,,
,,,,,,,,মুঝকো নাচেকা নাচলে,,,,,,
,,,,,,,,,,,আজা,,,,নাচলে,,,নাচলে,,,,মেরি ইয়ার,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,তু নাচলে,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,ঝানাকে ঝানাকে ঝানকার,,,,,,,

[ বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন😊 ]
নেহার নাচ শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়া উঠে। আশফি এতোক্ষণ মুগ্ধ হয়ে নেহার নাচ দেখছিলো, সবার হাত তালির আওয়াজে আশফির ঘোর কাটে। মুচকি হাসি দিয়ে নিজের মাথা চুলকাতে থাকে আশফি। আশফিও কি মনে করে স্টেজে চলে যায়। আর মিউজিসিয়ান দের হাত নাড়িয়ে গান ছাড়তে বলে নাচা শুরু করে। স্পিকারে বেজে ওঠে গান–
,,,,,মেরে হোতোন ছে,,,
,,,,,,,,ঢু আন্ধাকার,,,,,,,নিকালতি,,,,,
,,,,,হ্যায় জো বলি,,,,জ্যাইসে,,,জ্যাইসে,,,,
,,,,,,,,,,,বানদুক কি গলি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,মেরে তেভার মেইন হ্যায়,,,,,,
,,,,,তেহজিব কি,,,,,
,,,,,,,,রাংগেন রাংগোলি,,,,,
,,,,,,,,জ্যায়সে,,,,,জ্যায়সে,,,,,
,,,,,,,,,,,হো ঈদ মেইন হোলি,,,,,,2x
,,,,মেরি জি ভান কে দশা,,,
,,,,,,,থোডা রাসতোন কে নেশা,,,,,
,,,,,,থোডি মানজিল কি পেয়াস হে,,,,,,
,,,,,,বাকি সব ফাস্ট ক্লাস হে,,,,,
,,,,,,,,,,,বাকি সব ফাস্ট ক্লাস হে,,,,,3x

[ বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন😊 ]
আশফির নাচ শেষ হতেই আবার সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আশফি স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসতেই সেহের স্টেজে উঠে যায়। সেহের মিউজিসিয়ান দের গান ছাড়তে বলে। তারা এমন একটা গান ছেড়ে দেয় যে সেহের কি নাচবে বুঝেই উঠতে পারছে নাহ। সেহের করুন ভাবে দাড়িয়ে থাকে। হঠাৎ কেউ একজন সেহের পাশে দাড়িয়ে সেহেরের হাত ধরে কাছে টেনে নিতেই সেহের তাকিয়ে দেখে আরসাল। আরসাল সেহেরের চোখে চোখ রেখে সেহেরকে নিয়ে নাচা শুরু করে। বাজতে থাকে গান–
,,,,,,,তুমকো পায়া হে তোহ জায়সা খোয়া হুন,,,,,
,,,,,,,,,,কেহনা চাহোন বিহি তোহ তুমছে কেয়া কাহুন,,,,
,,,,,,,,,,তুমকো পায়া হে তোহ জায়সা খোয়া হুন,,,,,
,,,,,,,,,,কেহনা চাহোন বিহি তোহ তুমছে কেয়া কাহুন,,,,
,,,,,কিসি যাবান মেইন বিহি,,,,,
,,,,,,,,,,হো লাভজে হি নেহি,,,,,,,,,
,,,,,,কি জিনমিন তুম হো,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,কেয়া তুমহেন বাতা সাকুন,,,,,,,,
,,,,,,,,মেইন আগার কাহুন,,,,,
,,,,,,,,,,তুমছা আহাছিন,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,কায়ানাত মেইন,,,,,,,,
,,,,,,,নেহি হ্যায় কাহিন,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তারিফ ইয়ে বিহি তোহ,,,,,
,,,,,ছাস এহ কুছ বি নেহি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,তুমকো পায়া হে তোহ জায়সা খোয়া হুন,,,,,

[ বাকি টাহ নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন😊 ]
আরসাল আর সেহেরের নাচ শেষ হতেই সবাই অবাক হয়ে হাত তালি দিয়ে উঠে। এতো সময় আরসাল আর সেহের একে অপরের চোখে ডুবে ছিলো। সবার হাত তালির আওয়াজে ধ্যান ভাঙে দুইজনের। সেহেরের ঘোর কাটতেই সরে আসে আরসালের থেকে। আরসাল আর সেহেরের নাচ দেখে সবাই অবাক হলেও সবাই খুশি হয় শুধু দুইজন মানুষ ছাড়া। নেহা আর রাহুল। নেহার রাগ উঠতে থাকে সেহের আর আরসালকে একসাথে নাচতে দেখে। কিন্তু রাহুলের কেমন যেনো খারাপ লেগে উঠে, কারন যতই হোক ভালোবাসার মানুষ তোহ।
সেহের স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসলেও আরসাল এগিয়ে যায় স্পিকারের কাছে। মাউথ স্পিকার টাহ ঠিক করে নিয়ে বলতে শুরু করে,
–” hello everyone…. Welcome to shangit function…..আজ এই শুভ অনুষ্ঠানে নাচ হলো এতো সময় ধরে। কিন্তু সঙ্গীত অনুষ্ঠানে গান হবে নাহ এইটা কি হয়। আজও গান হবে। কিন্তু আজ গান আমি বাহ অন্য কোনো ছেলে নয়। আজ গান গাইবে মেয়েরা। একটু অন্যরকম, তাই আমি ব্রাইডকে সহ বলছি। প্লিজ একটা গান।”

আরসালের কথা শুনে সবাই হাত তালি দিয়া উঠে। আরসাল স্টেজ থেকে নেমে আসে। আশা নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে সেহেরকে কি যেনো ইশারা করতেই সেহের মুচকি হেসে পিয়ানোর সামনে গিয়ে বসে পড়ে। বাজানো শুরু করে পিয়ানো। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারন এইটায় ছিলো আরসালের উদ্দেশ্য। সেহেরকে নিজের হাতে পিয়ানো বাজানো শিখিয়েছিল আরসাল৷ অনেক দিন শোনা হয় নাহ সেই পিয়ানোর আওয়াজ। তাই আরসাল ইচ্ছা করেই এই এনাউন্সমেন্ট টাহ করলো। বেজে উঠে সেহেরের পিয়ানোর আওয়াজ,

সেহের ঃ ( আরসালের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,

আশা ঃ ( আমান দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে )
,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,,,
,,,,,,,,,,কেনো এমোন হাত বাড়ায়,,,,,,,,
,,,,,আবারও হারিয়ে সে যায়,,,,,
,,,,,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,,,

সেহের ঃ ( পিয়ানোর দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে )
,,,,,,,,,,,তুমি জানতে পারো নি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,কতো গল্প পুড়ে যায়,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তুমি চিনতে পারো নি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,আমাকে হায়,,,,,,,
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,

আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। আরসাল এইপ্রথম সেহেরের মুখে এমন গান শুনছে। আর গানের প্রতিটা লাইন সেহের এমোন ভাবে গাইছে যেনো মনে হচ্ছে কাউকে মনে করেই গায়ছে। আমান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। এই প্রথম আশার গান শুনছে আমান। আমান জানে প্রতিটা লাইন আশা তাকে স্বরন করেই গাইছে। রাহুলের সেহেরের প্রতি ভালোবাসা যেনো আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। এই প্রথম সেহেরের গান শুনছে রাহুল। আর শুনে যেনো অবাক এর উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে।

আশা ঃ ( সামনে সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে )
,,,,,,,,,,পথ ভুলে গেছি চলে,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,দূরের কুয়াশায়,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তবু আমার ফিরে আসার,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,সত্যি নেই উপায়,,,,,,,
,,,,,,,তুমি আমার জিতের বাজি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,তুমিই আমার হার,,,,,,

আশা + সেহের ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,

আরসালের কেনো জানি মনে হচ্ছে কথাগুলো তাকেই বলছে সেহের। কিন্তু কেনো বলবে সেহের এইসব কথা। কারন ভালো তোহ সে সেহের কে বেসেছে, সেহের তোহ নয়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, পড়তে চাচ্ছে সেহেরের মন। আমান জানে আশা তাকেই বলছে। কারন আশাকে যে সে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এতে তোহ আমান কখনো খুশি হয় নি। কিন্তু আজ আশার জল ভরা চোখের গান শুনে আমানের মনে হচ্ছে এর থেকে মরে যাওয়া ভালো ছিলো।

সেহের ঃ ( একবার আরসালের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে )
,,,,,,,যদি বলি চোরাগলি,,,,,
,,,,,,,,,,মনের যায় কোথায়,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,আসবে কি,,,,,,,,,,
,,,,,,রাখবে কি,,,,,
,,,,,,,,,,তোমার ওঠা পড়ায়,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,তুমি আমার জ্বালিয়ে নেওয়া,,,,,,,,,
,,,,,,,,কোনো শুকতারা,,,,,,

সেহের + আশা ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,

আশা ঃ ( মুচকি হাসি দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,তুমি জানতে পারো নি,,,,,,
,,,,,,,,,,,,কত গল্প পুড়ে যায়,,,,,,,,,,,,

সেহের ঃ ( আরসালের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,তুমি চিনতে পারো নি,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,আমাকে হায়,,,,,,,,,,,

সেহের + আশা ঃ ( নিচের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,কি করে বলবো তোমায়,,,,
,,,,,,,,,,আসলে মন কি যে চাই,,,,,,,,
,,,,কেনো সে পালিয়ে বেড়ায়,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,তোমার থেকেই,,,,,,,

গান শেষে সবাই হাত তালি দিয়ে ওঠে। সেহের সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে আসতেই রাহুল এগিয়ে এসে সামনে দাড়ায়। সেহের রাহুলের দিকে তাকাতেই রাহুল বলে ওঠে,
–” Wow. Amazing. তুমি এতো সুন্দর গান করো। আর পিয়ানোটাও কত সুন্দর বাজাও। এত সুন্দর পিয়ানো বাজানো কোথা থেকে শিখছো?”

কথাটাহ শুনে সেহেরের চোখ আরসালের দিকে চলে যায়। সেহের তাকাতেই আরসাল চোখ সরিয়ে নেয়। তারমানে আরসাল সেহেরের দিকেই তাকিয়ে ছিলো এতোসময়, সেহের জিনিসটাহ বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দিয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল ভাইয়া শিখিয়েছে।”

–” Wow, brilliant. অনেক সুন্দর হয়ছে।”
সেহের রাহুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।

★★★
সেহের নিজের রুমে বসে একটা গল্পের বই পড়ছে। সঙ্গীত অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। সবাই ক্লান্ত। সেহেরের ঘুম আসছে নাহ। তাই গল্পের বই পড়ে সময় কাটাচ্ছে। হঠাৎ দরজায় কারো নক পড়তেই সেহের উঠে দরজা খুলে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসালকে দেখে সেহের অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তুমি এখন এইসময়!”

–” হুম! তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

–” ওহ, ভেতরে এসে বলো।”
আরসাল ভেতরে এসে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, তুই ঐ মেহেদির বাটি টাহ কোথা থেকে নিয়েছিলি?”

–” ঐটাহ তোহ একটা সার্ভেন্ট আমাকে এনে দিয়েছিল।”

–” সার্ভেন্ট, দেখলে চিনতে পারবি?”

–” আসলে ঐসময় অতোটাহ খেয়াল করে দেখা হয় নি।”

–” শিট! আচ্ছা ঠিক আছে। তুই ঘুমিয়ে পড়। অনেক রাত হয়ে গেছে। গুড নাইট।”
কথাটা বলেই আরসাল বেরিয়ে যায় রুম থেকে। সেহেরও দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। কিন্তু কেউ একজন লুকিয়ে থাকা থেকে বেরিয়ে আসে। সে আর কেউ নাহ, সে হলো নেহা। হুম, নেহাই লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের কথা শুনছিলো। নেহাই হলো সেই কেউ একজন। যে কিনাহ সেহেরের মেহেদীর বাটিতে মেডিসিন মিশিয়েছিলো। আরসালকে সেহেরের রুমের দিকে আসতে দেখে নেহা লুকিয়ে পিছু নিয়ে আসে আর ওদের দুইজনের সব কথা শুনে ফেলে। নেহা মনে মনে বলে ওঠে,
–” এতো সহজ আরসাল আমাকে ধরা। নেহা এতো কাচা কাজ করে নাহ। পারবা নাহ আমাকে ধরতে। আমি খুব ভালো করেই বুঝে গেছি সেহের থাকতে তোমাকে আমি সোজা ভাবে পাবো নাহ। তাই আমাকেও বাকা ভাবে চলতে হবে।”

কথাগুলো ভাবতেই নেহার মুখে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে।

গায়ে হলুদ……………

সবাই ব্যাস্ত। গায়ের হলুূদের দিন কাজ বেশি। সবাই সবার মতো কাজ করে যাচ্ছে। সেহের আশাকে রেডি করে নিজে রেডি হতে চলে যায়। আশা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আশা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” তোমার থেকে দুরে যাওয়ার দিন অনেক নিকটে আমান। আর একটা দিন মাত্র তারপরই তোমার জীবন থেকে একেবারে চলে যাবো আমি। তোমার খুশির জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমান। ভালো থেকো তুমি।”

আশা এইসব ভাবছিলো। হঠাৎ দরজায় খোলার আওয়াজে বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখে আমান এসেছে। আমান রুমে এসে আশাকে দেখেই যেনো থমকে যায়। বিয়ের সময় নাকি মেয়েদের অতিরিক্ত সুন্দর লাগে। তার প্রমান এই কয়েকদিন আশাকে দেখেই আমান পেয়েছে। আর আজ যেনো আশাকে একটা হলুদ পরির মতো লাগছে। গাঢ় হলুদ কালারের শাড়ি, চুলগুলো সামনে পাফ করে পেছনে খোপা, কাচা ফুলের গহনা, মুখে হালকা ভারি মেকাপ, সব মিলিয়ে হলুদ পরি। আমান একভাবে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। আশা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” তুমি এখানে।”

–” হুম। তোকে একটা কথা বলার জন্য এসেছিলাম।”

–” বলো।”

–” আশা, আসলে আমি আসলে।”
আশা আমানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” বলো আমান। তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও। এখনো সময় আছে আমান। প্লিজ, কিছু নাহ হোক তোমার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনলেও আমার শান্তি। প্লিজ বলো আমান।”

আমান বলে ওঠে,
–” তোর বিয়েতে আমার কাছে একটা উপহার চেয়েছিলি তুই। আমি তোর কথা রাখছি। পাশাপাশি এই গিফ্ট টাহও তোকে দিলাম। নে।”

আমানের কথা শুনে আশার শেষ ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। আমান একটা ছোট বক্স আশার দিকে এগিয়ে দেয়। আশা হাত বাড়িয়ে বক্সটাহ নিয়ে আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” Thank you so much.”

–” হুম। আসি।”
বলেই আমান বেরিয়ে যায়। আর আশার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।

আরসাল রেডি হয়ে গার্ডেনে এসে স্টেজে তাকাতেই যেনো চোখ দুটো সেখানেই স্থির হয়ে যায়। আশার পাশে সেহের বসে আছে আর আশার সাথে কথা বলছে। সেহের আজ একটা কাচা হলুদ কালারের শাড়ি বাংলা স্টাইলে পরেছে, চুলগুলো সামনে পাফ করে পেছনে বেনি করে সামনে এনে রেখেছে সাথে লাগিয়েছে রজনীগন্ধা ফুল, চোখে মোটা কাজল, হালকা মেকাপ, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, কানে কাচা ফুলের কানের দুল, হাতে কাচা ফুলের ব্রেসলেট পুরো গ্রামের মেয়ের মতো সাজে সেহেরকে যেনো অপ্সরীর মতো লাগছে। আরসালের চোখের পলক পড়তেও মনে হয় ভুলে গেছে। হঠাৎ কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে আরসালের ধ্যান ভাঙে। পেছন ফিরে দেখে আমান। আমান বলে ওঠে,
–” কিরে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

–” নাহ। কিছু নাহ, চল।”
আরসাল আর আমান এগিয়ে আসে অনুষ্ঠানের দিকে। শুরু হয়ে যায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। সবাই আশাকে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে। আরসাল এগিয়ে এসে আশাকে হলুদ মাখিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” তোকে এখন আমি কোনো গিফট দিবো নাহ। বাট আমি তোকে তোর বিয়ের আগেই তোর গিফট দিবো। আর আমি জানি আমার দেওয়া গিফট টাহ তোর কাছে তোর লাইফের বেস্ট গিফট হবে।”

–” মানে কি দিবা তুমি আমাকে?”

–” সারপ্রাইজ!”
কথাটা বলেই আরসাল নেমে আসে স্টেজ থেকে। সেহের স্টেজে এসে আশাকে হলুদ মাখাতেই আশাও একটু গলুদ মাখিয়ে দেয় সেহেরের মুখে। হেসে দেয় দুইজন একসাথে। হঠাৎ দুইজনের চোখে পানি এসে ভিড় করে। জড়িয়ে ধরে দুইজন দুইজনকে। সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সেহের সরে আসতেই আশা সেহেরের চোখ মুছে দেয়। সেহের মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” ভুলে যাবি নাহ তোহ তুই আমাকে?”

–” তোকে ভোলা কি সম্ভব?”
আবার জড়িয়ে ধরে আশা সেহের একে অপরকে। তারপর সেহের সরে এসে মুচকি হাসি দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসে। আরসাল তাকিয়ে দেখে সেহের কই যেনো যাচ্ছে। আরসাল জানে সেহেরের মন ভালো নেই। কারন আশা আর সেহেরের বন্ডিং টাহ অন্যরকম। দুইজন একই বয়সী হলেও আশা সবসময় সেহেরকে আগলে রেখেছে। দুইজন একে অপরে হাসি খুশি ভালোবাসার সঙ্গী। আরসালও সেহেরের পিছন পিছন আসে। সেহের রুফটপে একপাশে রেলিং এর কাছে দাড়িয়ে আছে। আরসাল সেহেরের পিছনে এসে দাড়ায়। আরসাল হালকা ভাবে বলে ওঠে,
–” সেহের!”

সেহের কারো আওয়াজে পিছন ফিরে দেখে আরসাল। আরসালকে দেখে কিছু নাহ ভেবেই জড়িয়ে ধরে সেহের। আরসাল অবাক হয়ে গেলেও বিষয় টাহ বুঝতে পারে, যে সেহের কষ্ট পাচ্ছে। তাই আরসাল সেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কান্না করে দেয় সেহের। আরসাল সেহেরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে পাশে থাকা একটা চেয়ারের উপর বসিয়ে দেয় আর নিজে সেহেরের সামনে হাটু ভাজ করে বসে পড়ে। আরসাল সেহেরের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” খারাপ লাগছে।”

–” আমি আশাকে অনেক মিস করবো।”

–” হুম। আশা কি আমাদের ছেড়ে একেবারে চলে যাচ্ছে নাকি? শুধু শুধু তুই এতো কষ্ট পাচ্ছিস।”

–” কিন্তু তাও, আশা তোহ এখন অন্য এক জায়গায় থাকবে। আমার যখন মন চাইবে তখন তোহ আর আমি ওর কাছে যেতে পারবো নাহ। মন খারাপ হলে ঐতোহ আমাকে আদর বেশি করে।”

–” হুম! আচ্ছা তোর যখন ইচ্ছে হবে আমি তোকে আশার কাছে নিয়ে যাবো। ওকে।”

–” সত্যি?”

–” হুম, বাট আমার একটা কন্ডিশন আছে।”

–” কি কন্ডিশন?”

–” সবাই হলুদ মাখিয়েছে শুধু আমি ছাড়া। এখন আমাকে তোর হলুদ মাখাতে হবে।”

–” কিন্তু আমি তোহ হলুদ আনি নি। আচ্ছা তুমি বসো আমি হলুদ নিয়ে আসি।”

–” নাহ! আনতে যেতে হবে নাহ। হলুদ তোর কাছেই আছে।”

–” আমার কাছে? কোথায়?”

–” কোথায়! আমি দেখাচ্ছি।”
কথাটা বলেই আরসাল সেহেরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসে। আরসালকে হঠাৎ এতো কাছে দেখে ঘাবড়ে যায় সেহের। চোখ কুচকে বন্ধ করে ফেলে সেহের। আরসাল সেহেরে মুখে লাগানো হলুদ নিজের মুখ দিয়ে ঘসে লাগিয়ে নেয়। আরসালের মুখে হালকা চাপ দাড়ি সেহেরের মুখে ঘসা লাগতেই সেহের কেঁপে উঠে। আরসাল সেহেরের মুখের সামনে এসে বলে ওঠে,
–” দেখলি কেমনে হলুদ লাগালাম। হলুদের খরচ বাচিয়ে দিলাম, আবার হলুদও লাগালাম।”

আরসালের কথা শুনে সেহের হেসে দেয়। সেহেরের হাসি দেখে আরসালও হেসে দেয়। সেহেরের হঠাৎ চোখ টাহ ছল ছল করে উঠে। আরসাল হাসতে হাসতে সেহেরে দিকে তাকিয়ে দেখে সেহেরের চোখে পানি। এতে আরসালের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” তুমি সত্যি সত্যি আমাকে হেট করো?”

সেহেরের কথা শুনে আরসাল উঠে দাড়ায়। সেহেরও উঠে দাড়িয়ে আরসালের সামনে এসে দাড়ায়। আর বলে ওঠে,
–” বলো নাহ ভাইয়া! আমাকে সত্যি সত্যিই তুমি হেট করো? প্লিজ বলো।”

–” হ্যা আমি তোকে হেট করি। আর এইটায় সত্যি।”

–” কিন্তু ভাইয়া কেনো? সেদিন যাহ হয়েছিল তার জন্য তোহ আর আমি দোষী নাহ। তাহলে আমাকে কেনো হেট করো তুমি।”

আরসাল রেগে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই দোষী। সেদিন যাহ হয়েছে সব তোর জন্য হয়েছে। আমি ভালো তোকে বেসেছিলাম। আমাকে আম্মু তোর জন্য মেরেছে। আমাকে জোর করে বিদেশে পাঠানো হয়েছিলো তোর জন্য। তুই দায়ী এইসবের জন্য।”

–” কিন্তু এতে আমার দোষটাহ কোথায়? আমি কি করেছি? তুমি আমাকে কেনো দোষ দিচ্ছো?”

–” কারন তোর জায়গা অন্য কেউ হলে এগুলো হতো নাহ। আর আমার দোষ এইটায় আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম।”
আরসাল কথাগুলো বলে রুফটপ থেকে চলে যায়। সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি থেকে কি বুঝছো জানি নাহ। কেনো আমাকে দোষী বানাচ্ছো তাও জানি নাহ। কিন্তু তোমার এই ঘৃনা আমি মেনে নিতে পারছি নাহ। কেনো পারছি নাহ তাও বুঝছি নাহ।”

সবার মোটামুটি হলুদ দেওয়া শেষ আশাকে। আমানকে আরসাল জোর করে পাঠালো আশাকে হলুদ দেওয়ার জন্য। আমান আশার সামনে আসতেই আশার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি পড়ে। আমান হাতে একটু হলুদ নিয়ে কাঁপা হাতে আশার মুখে মাখিয়ে দেয়। আশা চোখ বুজে আমানের ছোয়া অনুভব করে।

বিয়ের দিন……………

আশা রুমে বসে আছে। দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। দরজা খোলার আওয়াজে চোখ মুছে নেয় আশা। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের। সেহের এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আশা পার্লার থেকে লোক এসে গেছে। তুই একটু ফ্রেশ হয়ে নে, ওরা আসছে।”

–” হুম।”
সেহের চলে যায়। আশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
সেহেরের রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই ব্যাক্তিটিহ ধরে ফেলে সেহেরকে। সেহের প্রথমে চোখ বন্ধ করে ফেললেও পরে চোখ খুলে দেখে আরসাল। আরসাল সেহেরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। সেহের আজও লেহেঙ্গা পরেছে, যার ঘাগরা গাঢ় গোলাপি কালারের, টপ রুপালি কালারের, দোপাট্টাও গাঢ় গোলাপি কালারের, চুলগুলো মাঝে সিথি করে টিকলি লাগিয়ে ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক, কানে রুপালি কালারের ঝুমকা, গলায় একটা লকেট সহ চেইন, হাত ভর্তি রুপালি কালারের চুড়ি, চুলে একপাশে সাদা কালারের জারবেলা ফুল লাগানো, সেহেরকে পরির মতো লাগছে। হঠাৎ পাশে কারো আওয়াজ পেয়ে আরসালের ধ্যান ভাঙে আর সেহেরকে ছেড়ে দেয়। সেহের আরসাল একসাথে পাশে তাকিয়ে দেখে আশফি মুচকি মুচকি হাসছে। আরসাল আশফির দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই আশফি তাড়াতাড়ি সরে যায় ওখান থেকে। সেহের একবার আরসালের দিকে তাকিয়ে আবার চলে যেতে নিলে আরসাল সেহেরের হাত ধরে কোথাও টেনে নিয়ে যেতে থাকে। সেহের যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করতে থাকে,
–” ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? কই যাও?”

আরসাল সেহেরের কোনো কথার উত্তর নাহ দিয়ে, রুফটপে নিয়ে এসে দেওয়ালের সাথে দাড় করিয়ে নিজের দুই হাত সেহেরের দুইপাশ দিয়ে দেওয়ালের উপর রাখে। সেহের আরসালের দিকে তাকাতেই মনে হয় আরসাল নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরসাল সেহেরের আরও কাছে এগিয়ে আসে, আরসালের নিশ্বাস সেহেরের মুখে আছড়ে পড়ছে। আরসাল সেহেরে কপালে একটা চুমু একে দেয়। সেহের কেঁপে উঠে আরসালের ভালোবাসার পরশ পেয়ে। চোখ বন্ধ করে ফেলে সেহের। সেহেরের চোখ বন্ধ দেখে আরসাল সেহেরের চোখের উপর চুমু দেয়। সেহের নিজের ঘাগরা হাত দিয়ে চেপে ধরে। সেহের আরসালকে বাঁধা দেওয়ার ইচ্ছা বা শক্তি কোনোটাই যেনো হচ্ছে নাহ। আরসাল সেহেরের মুখে চুমু দিয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। রুফটপের নানান রকম লাইটের জন্য সেহেরকে খুব রঙিন দেখাচ্ছে। আরসাল সেহেরের গলার দিকে তিলটার দিকে চোখ যায়। আরসাল মুখ এগিয়ে এনে গলার তিলে ঠোঁট ছোয়াতেই সেহের আরসালকে সরিয়ে চলে যেতে নেয়, কিন্তু আরসাল হাত ধরে ফেলে। সেহের জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে, আরসাল এগিয়ে এসে সেহেরের পেছনে দাড়ায়। হাত দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে একপাশে সরিয়ে দেয়। সেহেরকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আরসাল। এক হাত দিয়ে সেহেরের কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আরসাল। আরসাল সেহেরের দিকে মুখ এগিয়ে আনতেই সেহের বলে ওঠে,
–” যাকে ঘৃনা করো, তার কাছে আসতে খারাপ লাগছে নাহ?”

সেহেরের কথায় আরসাল থেমে যায়। আরসাল এতো সময় যেনো একটা ঘোরের মাঝে ছিলো। আরসালের সেই ঘোর কেটে যায় সেহেরে কথায়। সেহেরকে হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আরসাল। সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আরসালের দিকে। আরসাল আর কিছু নাহ বলে রুফটপ থেকে নিচে নেমে আসে। সেহের চোখ বন্ধ করে আরসালের সাথে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করছে। আরসাল একপাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করছে। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি করতে যাচ্ছিলাম আমি এইসব। কি করছিলাম এইগুলো। এমোন মনে হচ্ছিল যে নেশা করেছি। সেহেরকে দেখলে কেমন যেনো নিজেকে মাতাল মাতাল মনে হয়। আজ সেহেরকে দেখে যেনো আর কিছুই মাথায় আসছিল নাহ। শুধু মনে হচ্ছিল সেহেরকে আমার চাই। এমোন মনে হচ্ছিল, #তুই_শুধু_আমার কিন্ত, আমি তোহ সেহেরকে ঘৃনা করি। হ্যা, হেট করি আমি ওকে। কিন্তু!”

কেটে গেলো আরও কিছু সময়। আশাকে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে স্টেজে। আশাকে একটা মিষ্টি পুতুলের মতো লাগছে দেখতে। আমান একভাবে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। আশা মাঝে মাঝে আমানের দিকে তাকাচ্ছে। আর নিজের মনে নিজেকেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় কেটে যায়। রাত ৮ টাহ বেজে গেছে অথচ বর পক্ষের আসার কোনো খোজ খবর নাই। সবার মাঝেই একটা চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। মায়া চৌধুরী জিহাদ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি গো! সিরাজ ভাইয়েরা কোথায়?”

–” জানি নাহ। ফোন টাও তোহ তুলছে নাহ।”

–” ফোন তুলছে নাহ মানে কি?”
আহিয়া চৌধুরী, কবির চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী, মিসেস আখি ও মি. আশরাফও এগিয়ে আসেন তাদের দিকে। তারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিহাদ চৌধুরীর ফোন বেজে উঠে। জিহাদ চৌধুরি দেখেন সিরাজ রহমানের কল এসেছে। জিহাদ চৌধুরী ফোন কানে নিয়ে কথা বলার মাঝেই চেচিয়ে উঠেন। হঠাৎ করেই পুরো শরীর ঘেমে যায়, অস্থির অস্থির করতে থাকেন জিহাদ চৌধুরীর। সবাই ভয় পেয়ে যায়। মায়া চৌধুরী কান্না করে বলে উঠে,
–” কি হলো তোমার। কি হলো বলছো নাহ কেনো? কি হইছে তোমার?”

আরসাল আর আমান দুরে দাড়িয়ে কথা বলছিলো, হঠাৎ চেচামেচির আওয়াজ শুনে আরসাল আর আমান এগিয়ে আসে সেইদিকে। আরসাল নিজের বাবাকে দেখে তাড়াতাড়ি কাছে এসে বলে ওঠে,
–” বাবা, কি হয়েছে তোমার?”

জিহাদ চৌধুরী হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ওঠে,
–” আরসাল বাবা, আমার মেয়ে আশার কি হবে এখন?”

–” মানে!”

–” মানে সাইফ নাকি বলেছে, আশাকে বিয়ে করতে পারবে নাহ। আশাকে বিয়ে করা তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নাহ।”

চলবে………………🌹