Sunday, July 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1031



আড়ালে তুমি পর্ব – ৯

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৯
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এমন সময় পিয়ন এসে আমাকে একটা খাম দিয়ে গেলো। খামের উপরে কোম্পানি লোগো দেওয়া আছে। বুঝলাম এটা কোম্পানি থেকে দেওয়া। তবে কি হতে পারে? তাই খুলে দেখলাম৷

তবে ভিতরে যা ছিলো তা দেখে আমি অনেকটাই বিস্মিত হলাম। কারণ ভিতরে ছিলো আমার প্রমোশান লেটার। আমাকে এক ধাপ প্রমোশন দিয়ে কর্মকর্তা থেকে জুনিয়র কর্মকর্তার পোষ্ট দেওয়া হয়েছে। তবে আমি এটা জীবনেও আশা করিনি। আর আমার আসা হলো মাত্র কয়েকদিন এর ভিতর কিভাবে প্রমোশন পায়? এটা কি আদৌ সম্ভব? আমি এর কারণ জানার জন্য ম্যামের কেবিনে গেলাম।

আমিঃ আসতে পারি?

শিলা ম্যামঃ আসো আসো। কিছু বলবে?

আমিঃ না মানে ম্যাম আমাকে হঠাৎ করে প্রমোশন দেওয়া হলো কেনো?

শিলা ম্যামঃ আসলে তোমার কাজ বসের অনেক পচ্ছন্দ আর কম সময়ে তুমি অন্যদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছো। তাই তোমার রিপোর্ট দেখে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। আর তোমার বেতন বেড়ে ৩৭ হাজার হয়েছে। এটা সবাইকে এখনও বলা হয়নি৷ পরে বলে দিব।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম আমার জয়েন করা এখনও ১ বছরও পূর্ণ হয়নি। ১ বছর পূর্ণ হতেও অনেকটা সময় বাকি আছে। তার থেকেও বড় কথা আমি কোনো বড় কাজে এখনও অবদান রাখিনি। তাহলে প্রমোশন কিসের জন্য?

শিলা ম্যামঃ দেখো এতো কৈফিয়ত আমি দিতে পারবনা। প্রমোশন পেলে সবাই খুশি হয় আর তুমি কিনা কারণ জানতে চাইছো? আচ্ছা প্রমোশন না চাইলে চাকরি ছেড়ে দিড়ে দাও। ( রেগে)

আমিঃ সরি ম্যাম। আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দিবেন। আর কখনও আপনার উপর কথা বলবোনা। ( মাথা নিচু করে)

শিলা ম্যামঃ মন খারাপ করলে? সরি আমি এভাবে বলতে চাইনি। আর তোমার কাজের জন্যই তোমাকে প্রমোশন দিয়েছি। প্লিজ কিছু মনে নিয়ো না? ( নমর গলায়)

আমিঃ আরে ম্যাম কি বলছেন? কিছু মনে করিনি।

শিলা ম্যামঃ তাহলে আপনি করে বলছো যে?

আমিঃ সরি আর বলবোনা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা যাও। কাল থেকে নতুন ডেস্কে কাজ করবা।

আমি চলে এলাম। সত্যি বলতে প্রমোশন পেয়েও কেনো জানি খুশি হতে পারছিনা। কেমন জানি মনে হচ্ছে আমার যোগ্যতার অধিক কিছু দিচ্ছে আমাকে। তারপরও এসব ভাবনা বাদ দিলাম। বেতন বেশি এটাই আসল কথা। ডেস্কে এসে বসতেই বর্না আপু জিজ্ঞেস করলো

বর্না আপুঃ নীল ম্যামের রুমে কেনো গিয়েছিলে? কোনো কাজ ছিলো?

আমিঃ আসলে আমাকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। কিজন্য দিয়েছে তা জানতে গিয়েছিলাম৷

বর্না আপুঃ কিহহ? তোমার প্রমোশন হয়েছে?। congratulations

আমিঃ ধন্যবাদ আপু।

রফিক ভাইঃ কিসের কংগ্রাচুলেশনস?

বর্না আপুঃ তোমার ভাই প্রমোশন পেয়েছে?

রফিক ভাইঃ সত্যিইই? ( খুশি হয়ে)

আমিঃ হ্যাঁ।

রফিক ভাইঃ অভিনন্দন নীল। তবে প্রমোশন অনেক তাড়াতাড়ি দিয়ে দিলো। যদিও তোর অগ্রগতি অনেক বেশি।

আমিঃ ধন্যবাদ ভাই।

রফিক ভাইঃ এখন কাজ কর। বাসায় গিয়ে আজকে দুই ভাই মিলে অনেক মজা করব।

আমিঃ আচ্ছা।

আমি কাজে মন দিলাম। অফিস শেষে রিফাতকে আনতে গিয়ে গরুর মাংস, মিষ্টি নিলাম। আজকে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে।

রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রফিক ভাইয়ের কাছে গেলাম। বেল বাজার পর আপু দরজা খুলে দিলো। আমার হাতে ব্যাগ দেখে জিজ্ঞেস করলো

বর্না আপুঃ নীল তোমার হাতে কি এগুলো?

আমিঃ আপু মিষ্টি আর গরুর মাংস আছে। আজকে মাংস রান্না করো। সবাই মিলে জমিয়ে খাবো আজকে।

বর্না আপুঃ এসবের কি দরকার ছিলো?

আমিঃ ওহহ আপু আজকের দিনে কোনো প্রশ্ন করবেনা। যাও যাও এগুলো রান্না করে নিয়ে এসো।

বর্না আপুঃ আসলে তুমি একটা পাগল।

আমাদের কথা বলতে দেখে রফিক ভাই জিজ্ঞেস করলো

রফিক ভাইঃ কি হয়েছে বর্না ভাই বোন মিলে কি কথা বলছ?

বর্না আপুঃ তোমার ভাই গরুর মাংস আর মিষ্টি নিয়ে এসেছে।

রফিক ভাইঃ অযথা এসব করার কি দরকার ছিলো?

আমিঃ দরকার আছে। আর বেশি কথা বলবেনা। চলো গিয়ে গল্প করি।

বর্না আপুঃ রিফাত কই?

আমিঃ ও রুমে আছে।

বর্না আপুঃ তুমি কি পাগল নাকি? ওকে একাই রেখে এলে কেনো? আমি নিয়ে আসছি। মায়ের সাথে দুষ্টুমি করবে।

আমিঃ আচ্ছা। ভাই চলো আমরা গল্প করি গিয়ে।

অনেক মজা করে পার করলাম সময়টা। পরেরদিন অফিসে আমার প্রমোশনের কথা বলে দিলো। সবাই আমাকে অভিনন্দন জানালো। আমাকে নতুন ডেস্ক দেওয়া হলো।

পার হয়ে গেলো আরও ২ মাস। শিলার ব্যাপারে কোনো তথ্য পেলাম না। এর মাঝে ভাইয়া একটা বাইক কিনেছে। যদিও কোনো দরকার ছিলোনা তবুও শখের বসে কিনেছে।

আজকে শুক্রবার। আজকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছি। আজকে আমার তৃপ্তি আর রাকিবের সাথে দেখা করার কথা। মূলত আমিই ওদের ডেকেছি শিকার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য। ওরা সকাল ১০ টায় আমাকে সেই ক্যাফেতে ডেকেছে। আমি রেডি হয়ে ভাইয়ার বাইক নিয়ে চললাম। আমি পৌছে দেখও ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি গিয়ে ওদের সালাম দিলাম

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো তোমরা?

ওরাঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি তৃপ্তি।

তৃপ্তিঃ বলো।

আমিঃ আমি যা জিজ্ঞেস করবো তা সত্যি সত্যি বলবা। যদি কোনো সময় বন্ধু মনে করে থাকো তবে মিথ্যা কথা বলবানা।

তৃপ্তিঃ হয়েছে কি বলবা তো?

আমিঃ আচ্ছা শিলার সাথে কি তোমার কোনো ধরনের যোগাযোগ আছে?

তৃপ্তিঃ না না৷ ওর সাথে প্রায় ৬ বছর থেকে কোনো যোগাযোগ নাই আমার। কেনো কি হয়েছে?

আমিঃ সত্যি বলছ তো?

তৃপ্তিঃ কসম করে বলছি ওর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নাই৷

আমিঃ আসলে প্রায় ৪ মাস আগে হঠাৎ শিলা আমাকে একটা এস এম এস দিয়েছিলো। তারপর অনেক কল করলেও আমি আর ফোন খোলা পাইনি।

তৃপ্তিঃ কি বলছো নীল? ( অবাক হয়ে)

আমিঃ হুম। তবে আমার সন্দেহ ও আমার আশে পাশেই আছে। কারণ আমার নতুন নম্বর ওর জানার কথা না। তবুও যেহেতু জেনেছে তাই ও আমাদের থেকে দূরে নেই এটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু তুমি যদি নম্বর না দিয়ে থাকো তাহলে দিলো কে?

তৃপ্তিঃ এটাই তো ভাবার বিষয়। আর আদিবার সাথে যোগাযোগ করলে ও অবশ্যই আমাকে বলতো। তার মানে আদিবাও কিছু জানেনা। আর ও যদি তোমার আশেপাশেই থাকে তবে সামনে আসছেনা কেনো?

আমিঃ এটাই তো আমার কথা। এখন কেনো ও আড়াল করে রেখেছে নিজেকে? তবে ওকে সমানে নিয়ে আসতে হলে কিছু একটা করতে হবে।

তৃপ্তিঃ কি করবা?

আমিঃ কিছু একটা করাই লাগবে। আচ্ছা বাদ দাও এটা নিয়ে ভেবে দেখবো। তা তোমাদের কি অবস্থা?

তৃপ্তিঃ অনেক ভালো। আর একটা গুড নিউজ দেওয়ার আছে।

আমিঃ কিসের গুড নিউজ?

তৃপ্তিঃ আসলে আমি মা হতে চলেছি৷ ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমি।

আমিঃ বাহ। অনেক ভালো একটা খবর শোনালে। কংগ্রাচুলেশনস তোমাদের। তা এতো দিন জানাও নি কেনো?

তৃপ্তিঃ আসলে ব্যস্ততার কারণে বলা হয়নি।

আমিঃ আচ্ছা। আবারও তোমাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা আর দোয়া৷ আচ্ছা আজ আমি চলি পরে আরেকবার দেখা করবো।

রাকিবঃ আরে ভাই কি বলেন? এলেন তো মাত্র কিছু সময় আগে। এখনই চলে যাবেন?

আমিঃ আসলে একটু কাজ আছে।

রাকিবঃ ভাই অন্তত একটা কফি খেয়ে যান।

আমিঃ আচ্ছা।

তারপর আর কিছুক্ষন থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম৷ ও হ্যাঁ আপনাদের তো বলাই হয়নি। আদিবা আর নাহিদ ভাইয়ের একটা ছেলে হয়েছে। নাহিদ ভাই ফোন করে বলেছে। যখন আদিবা আমাদের সাথে দেখা করতে আসে তখন ও ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। আপনাদের এটা বলাই হয়নি।

যাই হোক আমি বাইক নিয়ে বাসায় ফিরছি আর একটা কথাই ভাবছি আসলে শিলা চাই কি? কেনো ও আড়ালে রয়েছে? এসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম৷ বাইক টার্ন করতে গিয়ে সমানে থেকে আচমকা একটা কার এসে সজোরে আঘাত করল। আমি বাইক থেকে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লাম। আমার পাঁ অনেক ব্যাথা করছে। হেলমেট পরা ছিলাম তাই মাথায় কম আঘাত লেগেছে তবে একেবারে কম লাগেনি। আমার শরীর অনেক বেশি ব্যাথা করছে। হাত পাঁয়ের অনেক জায়গয় আঘাত পেয়েছি। মূহুর্তেই সেখানে ভিড় জমে গেলো। একটু পর আমি সেন্স হারিয়ে ফেললাম।

এদিকে উপস্থিত মানুষ এম্বুলেন্স ডেকে পাঠালো। একজন আমার পকেট থেকে ফোন বের করে রফিক ভাইকে ফোন দিয়ে সব বলল। রফিক ভাইতো শুনে পাগল প্রায়। রিফাতকে তার শাশুড়ীর কাছে রেখে বর্না আপুকে নিয়ে হাসপাতালে চলে এলো। এসে আমার খোজ নিয়ে আমার কেবিনের কাছে এলো। একজন লোক রফিক ভাইকে দেখে জিজ্ঞেস করল

লোকটাঃ আপনি কি রফিক?

রফিক ভাইঃ জ্বী।

লোকটাঃ আমিই আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম। ওনাকে ইমিডিয়েটলি অপারেশন করাতে হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। আপনি এক্ষুনি গিয়ে ডাক্তারের সাথে দেখা করে আসুন। পেসেন্টের অবস্থা সিরিয়াস।।

লোকটা মুখে এই কথা শুনে ভাইয়া আর আপু স্তব্ধ হয়ে গেলো। ভাইয়া লোকটাকে বিদায় দিয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে গেলো।

রফিক ভাইঃ ডাক্তার আমার ভাইয়ের কি হয়েছে?

ডাক্তারঃ দেখুন উনি অনেক বেশি আহত হয়েছেন। ইমিডিয়েটলি অপারেশন না করলে উনাকে বাঁচানো যাবে না।

রফিক ভাইঃ তো শুরু করুন। আর দেরি করছেন কেনো?

ডাক্তারঃ তার জন্য ৩ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে।

রফিক ভাইঃ আমি এক্ষুনি সব করে দিচ্ছি৷ আপনি অপারেশনের ব্যবস্থা করুন।

এরপর ভাইয়া টাকা জমা দিলেন আর আমার অপারেশন শুরু হলো। ভাইয়া আর আপু দুজনেই অনেক কান্না করছে। আল্লাহর কাছে আমার জীবন ভিক্ষা চাইছেন।

৩ ঘন্টা অপারেশনের পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলেন। ভাইয়া তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন

রফিক ভাইঃ ডাক্তার সাহেব আমার ভাইয়ের কি অবস্থা?

ডাক্তারঃ দেখুন আমরা সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করেছি। তবে এর আগেও ওনার মাথায় অনেক বড় একটা চোট লেগেছিলো। এবারের চোট বড় না হলেও আগের জায়গাতে চোট লাগায় রোগি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সাথে ওনার ডান পাঁ ভেঙে গেছে। ৩ দিনের ভিত জ্ঞান না ফিরলে আমার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়।

ভাইয়া আর আপু অনেক হতাশ হলেন। তবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখলেন। ওনারা আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আমার অবস্থা উনারা সহ্য করতে পারেন নি৷

রাতে ভাইয়া আর আপু রিফাতের জন্য বাসায় আসলেন। তারাকে আসতে দেখেই রিফাত জিজ্ঞেস করলো

রিফাতঃ আংকেল আমার আব্বু কই?

রফিক ভাইঃ তোমার বাবা কাজের জন্য বাইরে গেছে। দুই দিন পর আসবে।( কান্না আটকে রেখে কথাটা বললো।

রিফাতঃ বাবা আমাকে নিয়ে গেলোনা কেনো? আমাকে ফেলে গেলো কেনো? ( কান্না করে)

বর্না আপুঃ কাঁদছো কেনো বাবা? তোমার বাবা চলে আসবে৷

রিফাতঃ আমি কার কাছে থাকবো? ( ফুঁপিয়ে কান্না করছে)

বর্না আপুঃ তুমি আমার কাছ থাকবে।

তারা অনেক চেষ্টা করে রিফাতের কান্না থামালো। রাতে ভাইয়া আপু কেউ ঘুমাতে পারলোনা। রিফাতের জন্য বাড়ি এসেছে আমার জন্য একটা নার্স ঠিক করে। এসেছে।

পরদিন দুজন মিলে অফিস থেকে ৩ দিনের ছুরি নিলো। ম্যাম আমার কথা জিজ্ঞেস করলে ভাইশা বলেন আমি একটু অসুস্থ তাই আসতে পারিনি। অতঃপর ছুটি নিয়ে ওরা হাসাপাতালে চলে আসলো। আমাকে এক নজর দেখে ভাইয়া ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেলো।

রফিক ভাইঃ ডাক্তার সাহেব আমার ভাইয়ের অবস্থা এখন কেমন?

ডাক্তারঃ দেখুন আমি আগেই বলেছি ৩ দিনের মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে কিছুই বলা সম্ভব না। এখন ওনার অবস্থা দেখে কিছুই বলা যাচ্ছেনা। তবে আমার মনেহয়..

রফিক ভাইঃ কি মনেহয় ডাক্তার?

ডাক্তারঃ আমার মনেহয় উনি বাঁচতে পারবেন না। ওনার পালস রেট কম। সাথে সুস্থতার কোনো লক্ষণ দেখছিনা।

রফিক ভাইঃ ডাক্তার কি বলেন এসব? আপনি কি মজা করছেন?

ডাক্তারঃ না আমি মজা করছিনা। আমি সত্যটা আপনাকে বললাম। মিথ্যা কথা বলে আস্বাস দিতে চাইনা। তবে সুস্থ হয়ে যেতেও পারেন। আশা ছাড়বেন না।

রফিক ভাই কাঁদতে কাঁদতে বর্না আপুর কাছে এলো। বর্না আপু ভাইয়ার চোখে পানি দেখে জিজ্ঞেস করলেন

বর্না আপুঃ ডাক্তার কি বললেন?

রফিক ভাইঃ নীল তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।

বর্না আপুঃ তাহলে কাঁদছো কেনো?

রফিক ভাইঃ না মানে এমনি।

বর্ণা আপুঃ দেখো আমার থেকে কিছু লুকাবেনা৷ আমি স্পস্ট বুঝতে পারছি তুমি কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে।

রফিক ভাইঃ আরে না। আমি আবার কি লুকাবো।

বর্না আপুঃ আচ্ছা তাহলে আমিও ডাক্তারের সাথে দেখা করে আসি।

বর্না আপু ডাক্তারের কেবিনের দিকে হাঁটা দিবে তখনই রফিক ভাই আপুকে থামিয়ে দিলো। তারপর আপুকে সব খুলে বললো। সব শুনে দুজনেই চোখের জল ছেড়ে দিলো। কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা।

এদিকে ২ দিন হয়ে গেলেও আমি অফিসে আসছিনা দেখে ম্যামের মনে কেমন জানি ভয় কাজ করতে লাগলো। সারাদিন কাজে মন দিতে পারলেন না। তবে কাউকে জিজ্ঞেস করবেন এই উপায়ও নাই৷

পরেরদিন শুক্সবার। ম্যাম সকালে উঠে সিদ্ধান্ত নিলেন বর্ণা আপুকে ফোন দিবেন৷ কারণ একমাত্র রফিক ভাই আর বর্না আপুই বলতে পারেন আমার কথা। যেই ভাবা সেই কাজ। শিলা ম্যাম বর্না আপুকে ফোন দিলেন৷

বর্না আপুঃ আসসালামু আলাইকুম।

শিলা ম্যামঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।

বর্না আপুঃ আজকে ফোন দিলেন যে? কোনো কাজ আছে?

শিলা ম্যামঃ না মানে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।

বর্না আপুঃ কি কথা?

শিলা ম্যামঃ আসলে নীলের কি হয়েছে বলতে পারবেন?

বর্না আপুঃ সেরকম কিছুই না। একটু অসুস্থ আরকি।

শিলা ম্যামঃ কি হয়েছে প্লিজ বলুন।

বর্না আপুঃ কিছু হয়নি ম্যাম। ঠিক হয়ে যাবে। ( কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)

শিলা ম্যামঃ আপনি প্লিজ বলুন আমাকে।

এবার আর বর্না আপু নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না৷

বর্না আপুঃ আসলে ম্যাম হয়েছে কি ( সব খুলে বললেন ম্যামকে)

সব শুনে ম্যাম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। অস্থির হয়ে পড়লেন তিনি। তারপরও নিজেকে শান্ত রেখে জিজ্ঞেস করলেন

শিলা ম্যামঃ এখন ওর অবস্থা কেমন আর কোথায় আছে ও?

বর্না আপুঃ ডাক্তার বলেছে আজকের মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে হয়তো আর কোনো আশা থাকবেনা। ওকে ***** হাসপাতালে ভার্তি করে এসেছি।

শিলা ম্যামঃ এসেছি মানে?

বর্না আপুঃ বাড়ি এসেছি। ওর ছেলেটাকে তো সামলাতে হবে। কাউকে কিছু বলিনি। তাই রাতে বাড়ি আসতে হয়।

ম্যাম আর কিছু না ভেবে ফোন রেখেই হাসপাতালে দৌড় দিলো। তার কান্না যেনো থামতেই চাইছেনা৷ কোনো রকমে হাসপাতালে এসে আমার রুম নম্বর জেনে আমার কেবিনের সামনে চলে আসলেন। এসে দেখতে পেলেন আমার শরীরের অনেক জায়গায় ব্যান্ডেজ করা৷ মুখে মাস্ক লাগানো এবং কোনো রকম রেসপন্স নাই৷ ম্যাম আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। ম্যাম কোনো বাধা না মেনে কেবিনে ঢুকে পড়লেন৷ নার্স বাধা দিলেও তার কোনো বাধা না মেনেই সোজা এসে আমার পাঁ ধরে কাঁদতে লাগলেন।

শিলা ম্যামঃ নীল নীল কি হয়েছে তোমার? কথা বলো প্লীজ। দেখো আমি আমি তোমার শিলা। এতোদিন পরে তোমাকে পেয়েও হারাতে পারব না। এতোদিন পাশে থেকেও নিজেকে আড়াল করার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি বাধ্য ছিলাম নীল। তোমার ভালোর জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম৷ আর এতোদিন পরে তোমাকে পেয়েও তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য তোমার সামনে আসিনি৷ আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসো কিনা৷ আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি নীল। আমাকে একটাবার সুযোগ দাও। শেষ একটা সুযোগ দাও আমাকে৷ তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা৷ আমাকে এভাবে একা রেখে যেওনা৷ আমি বাঁচতে পারবোনা। ( ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে)

এদিকে যে সময়ে শিলা ম্যাম আমার কেবিনে ঢুকে ঠিক সেই সময়ই রফিক ভাই আর বর্না আপু হাসপাতালে আসেন। এসে ম্যাম কে আমার পাঁ ধরে কান্না করতে দেখেন। বর্না আপু তাড়াতাড়ি করে উনাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেন তবে ছাড়াতে পারলেন না। অনেক চেষ্টা করে ছাড়িয়ে নিলেন।

বর্না আপুঃ এসব কি করছেন? দেখছেন তো অসুস্থ। এসবের মানে কি?

শিলা ম্যামঃ আমাকে যেতে দিন ওর কাছে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবোনা। প্লীজ আমার জানের কাছে যেতে দিন।

বর্না আপুঃ মানে কি বলছেন? আপনার জান মানে?

শিলা ম্যামঃ আমি ওর বউ। আমিই ওর শিলা। আজ আমার জন্য আমার কলিজাটা মরতে বসেছে। ওর অবস্থার জন্য আমি দায়ি। ( এক নাগারে কেঁদেই চলেছে)

রফিক ভাইঃ ও তার মানে আপনিই সেই ছলনাময়ী? ছেড়ে যখন গিয়েছিলেন তখন আবার ফিরে এলেন কেনো? ঠিকই তো নিজেকে সামলে নিয়েছিলো। আপনার কথা ভেবে কাঁদলেও নিজের ছেলের জন্য নিজেকে ধৈর্য ধরে থেকেছে। আপনাকে অনুরোধ করছি আপনি চলে যান। ওর ঠিক হয়ে যদি আপনাকে সামনে দেখে তাহলে আর নিজেকে সামলাতে পারবেনা। প্লিজ ওকে বাঁচতে দিন। আল্লাহর কাছে এটাই চাওয়া যদি চোখ খুলে তাহলে আপনাকে দেখার থেকে আল্লাহ যেনো ওকে নিজের কাছে ডেকে নেন৷ আর হ্যাঁ ওর কিছু হলে রিফাতের আশা করবেন না। ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো।

শিলাঃ এরকম অলক্ষুণে কথা বলবেন না। মানছি আমি ভুল করেছি তবে আমি যা করেছি সব বাধ্য হয়ে করেছি আর ওদের ভালোর জন্যই করেছি৷ আমি সব খুলে বলবো প্লিজ আমাকে ওর কাছে থাকতে দিন। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। আমার মতো স্ত্রী বেঁচে থাকার অধিকার রাখেনা।

বর্না আপুঃ পাঁচ বছর দূরে ছিলেন মানলাম তারপরও ওকে কাছে পেয়েও কেনো দূরে রেখেছিলেন? আর আজ কেনো ফিরে এসে ওর কাছে থাকার কথা বলছেন? যার জন্য ওকে ছেড়ে এসেছিলেন সে কি আপনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে?

শিলাঃ বিশ্বাস করুন ও ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষের স্পর্শ আমার গায়ে নেই। একমাত্র আল্লাহই জানেন আমি পবিত্র। আমি যা করেছি আমার স্বামী সন্তানের জন্যই করেছি তবে খারাপ কিছু করিনি। ওকে ছেড় যে কতটা কষ্টে কাটিয়েছি তা আমিই জানি৷ ওদের সুরক্ষার জন্য যোগাযোগ করতে পারিনি। ও আমাকে যতটা ভালোবাসে তার থেকে দ্বিগুন বেশি ভালোবাসি আমি ওকে। আমি সব খুলে বলবো। আমাদের দুইজনকে আলাদা করতে যে মানুষটার অবদান ছিলো সে তার কর্মের ফল দুনিয়াতেই পেয়েছে। আমি সব খুলে বলবো। ওকে কাছে পেয়েও কিছু বলিনি কারণ আমি দেখতে চেয়েছিলাম ও এখনও আমাকে ভালোবাসে কিনা। তবে আমার এই ভুলের জন্য যে আজ ওকে হারাতে বসব এটা আমি কোনোদিনও ভাবিনি। প্লিজ আমাকে ওর কাছে যেতে দিন। ( কেঁদে কেঁদে)

ভাইয়া আর আপু শিলার চোখের পানি দেখে আর ওকে আটকে রাখলেন না। আমার কাছে আসার অনুমতি দিলেন। ও আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বলতে লাগলো

শিলাঃ এই জান উঠো বলছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আর কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবোনা৷ আর আড়ালে থাকবোনা। দয়া করে একটা বারের জন্য চোখ খুলো? আমার উপর রাগ করে থেকো না। প্লিজ উঠো ( কাঁদতে কাঁদতে)

এরপর যা হলো তার জন্য বাকি সবাই প্রস্তুত থাকলেও শিলা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। ও হতভম্ব হয়ে গেলো। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিলোনা৷ চোখ থেকে পানি পড়াও বন্ধ হয়ে গেলো। এক মুহূর্তের জন্য পুরো শরীর অবশ হয়ে গেলো ওর। কারণ এরপর যা ঘটলো………………..

চলবে…………….

আড়ালে তুমি পর্ব – ৮

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৮
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

আমি তৃপ্তির দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী গেলাম। ক্যাফে খুঁজে পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। ভিতরে ঢুকে তৃপ্তি আর রকিবকে দেখতে পেলাম। তবে তাদের সাথে আরও দুইজন বসে গল্প করছে।আমি ওদের ওখানে গিয়ে হাই বললাম। এবার উল্টোদিকে ফিরে থাকা দুইজন আমার দিকে ফিরলো। ওমা এতো আদিবা আর নাহিদ ভাই! ওরা এখানে? কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাহিদ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। একটু পর ছেড়ে দিয়ে বললো

নাহিদ ভাইঃ তুমি তো আমাকে ভাই বলেছিলে। তাহলে কিভাবে পারলে তুমি আমাকে না জানিয়ে চলে আসতে?

আমিঃ আমি বধ্য ছিলাম ভাই। নিজের ছেলেটার জন্য আমাকে এসব করতে হয়েছে।

নাহিদ ভাইঃ বসো আগে। বসে কথা বলি।

আমি বসলাম। তারপর বললামঃ ভাই আপনি হঠাৎ ঢাকাতে?

নাহিদ ভাইঃ যেদিন তোমার সাথে তৃপ্তির দেখা হয় সেদিনই ও আমাদের ফোন করে জানাই। আর আমার কাজও সেরম ছিলোনা তাই শহরটা ঘুরতে আর তোমাকে দেখতে চলে এলাম। তা নম্বর বন্ধ করেছো কেনো?

আমিঃ সব আশাই তো শেষ হয়ে গেছিলো আমার৷ আমিও আড়ালে চলে যেতে চেয়েছিলাম।

আদিবাঃ আচ্ছা নীল আর শিলা কিসের জন্য নিজেকে আড়াল করে নিলো?

আমিঃ হয়তো আমার থেকেউ ভালো কাউকে পেয়েছিলো। তাছাড়া আমার কাছে থেকে কষ্ট ছাড়া পেয়েছে কি? সব সময় তো কষ্টই করেছে। আমিও চলতাম তার টাকায়।

আদিবাঃ শিলা এমনটা করতে পারেনা। এর পিছনে নিশ্চয় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।

আমিঃ রহস্য থাকলেও এখন আর কোনো যায় আসেনা৷ এখন আমার ছেলেটাই আমার সব। তবে সেদিন যদি ও আমার ছেলেটাকেও নিয়ে চলে যেতো তাহলে আমি নিজেকে মুক্ত করে দিতাম।

আদিবাঃ এসব বলছো কেনো? আমরাও ওকে অনেক খুঁজেছি। তার বিন্দুমাত্র কোনো হদিস পাইনি। আচ্ছা শিলার মায়ের সাথে যোগাযোগ হয়নি?

আমিঃ না। চেষ্টা করিনি আর।

আদিবাঃ রিফাত কেমন আছে?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে এখন। হয়তো আমার ভাগ্য ভালো কারণ যেখানেই আমি যেখানেই থাকি আমার সেখানেই একটা বড় ভাই হয়ে যায়। এখানেও এলজন বড় ভাই পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ ওদের নিয়ে এখন ভালো আছি।

নাহিদ ভাইঃ তা আর কতদিন এভাবে একা থাকবে নীল? একটা বিয়ে করে নিলেই তো পারো।

আমিঃ নাহ। পরিশ্রুতি দিয়ে যে একা করে চলে গেলো তারপর আর কাউকে কিভাবে বিশ্বাস করবো? তাছাড়া আমার কাজের জন্য রিফাত অবহেলিত হোক এটা আমি সহ্য করতে পারবোনা।

আদিবাঃ এখন এসব বাদ দাও তো। অনেকদিন পর দেখা হলো একটু জমিয়ে আড্ডা দেই।

নাহিদ ভাইঃ ঠিক বলেছো। বাদ দাও ওসব কথা।

তারপর ওদের সাথে ভালো একটা সময় পার করলাম। বাসায় ফিরতে একটু দেরি হলো। রফিক ভাই ফোন দিয়েছিলো তবে আমি দেরি হবার কারণ বলে দিয়েছি।

বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে রিফাত ভাইয়ের ফ্ল্যাটে গেলাম। ওদের সাথে কিছু কথা বলে রিফাতকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে আসলাম।

রাত ১১ টা। রিফাত ঘুমিয়ে গেছে। আমি ফোন টিপছি। এমন সময় শিলা ম্যামের ফোন আসলো।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।

শিলা ম্যামঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করছো?

আমিঃ আমি শুয়ে আছি। তুমি?

শিলা ম্যামঃ আমিও শুয়ে আছি। আচ্ছা একটা কথা বলার জন্য তোমাকে ফোন দিলাম।

আমিঃ কি কথা?

শিলা ম্যামঃ তুমি চাইলে রফিক সাহেবের মাকেও নিয়ে আসতে পারো।

আমিঃ সেটা রফিক ভাইয়ের ব্যাপার। কিন্তু বাকি স্টাফরা কি বলবে?

শিলা ম্যামঃ ওদের যা মনে আসবে বলবে তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। তুমি রফিক সাহেবকে বলে দিও।

আমিঃ আচ্ছা বলে দিবো।

শিলা ম্যামঃ তোমার ছেলে কি করছে?

আমিঃ ও ঘুমিয়ে গেছে।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা তুমি রফিক সাহেবকে বলে দিও। তারপরও আমি নিজেই উনাকে বলবো।

আমিঃ আচ্ছা।

ম্যাম ফোন কেটে দিলো। যাক একদিক দিয়ে অনেক ভালো হয়েছে। কিছুদিন ঘুরে আসা যাবে তাহলে। বাইরে কোথাও ঘুরতে যাইনি কোনোদিন। আসলে যাইনি বললে ভুল হবে যাওয়ার যোগ্যতাই হয়নি৷ এবার ঘুরেই আসি।

সকালে রফিক ভাইকে সবটা জানালাম। এটা শুনে অনেক খুশি। আসলে আন্টি সব সময় বাড়িতেই থাকে। কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়না এবার যেহেতু সুযোগ পেয়েছেন তাই খুশি হলো অনেক।

কয়েকদিন অফিস করার পর আজকে আমাদের ট্যুর। রাতে বাস ছাড়বে। অনেক বিলাসবহুল বাস। এসি, ওয়াইফাই সব আছে। যাইহোক রাত ১০ টায় সবাই এসে উপস্থিত হলো। সবাই নিজের নিজের সিটে বসে পড়লো। আমি মাঝের দিকে একটা ট্রিপল সিট পেলাম। আমি, জানালার পাশে বসে রিফাতকে মাঝে বসিয়ে দিলাম। তবে আরেকটা সিট কার এটা বুঝতে পারলাম না৷ একবার দাড়িয়ে দেখলাম সবাই নিজের নিজের সিটে বসে পড়েছে। একটাও ফাঁকা নাই আমারটা বাদে। এসব ভাবনা বাদ দিয়ে আমি রিল্যাক্সে বসে পড়লাম। রিফাতকে ফোন দিলাম। ও কার্টুন দেখতে ব্যস্ত।

আমি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি৷ এমন সময় মেয়েলি গলায় কেউ বললো ” নীল আমাকে জানালার পাশের সিটটা দিবে?”

আমি তাকিয়ে দেখি এটাতো শিলা ম্যাম! তার মানে উনি এসই সিটে বসবেন? এর মাঝে ম্যাম আবারও বললো

শিলা ম্যামঃ কি হলো? আমাকে জানালার পাশের সিটটা দিলে খুশি হতাম।

আমিঃ সমস্যা নাই তুমি আসো।

আমি বেরিয়ে এসে ম্যামকে ভিতরে ঢুকতে দিলাম। তিনি সিটে গিয়ে বসলেন। রিফাত মাঝের সিটে বসে আছে আর আমি কিনারায়। ঘুরতে এসেও তিনি বোরকা পরেই আছেন। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগলো। একটু পর বাস ছাড়লো। ছাড়ার কিছুক্ষন পর ম্যাম বললো

শিলা ম্যামঃ নীল আমার পাশে এসে বসবে?

আমিঃ কিছু বলবে ?

শিলা ম্যামঃ রাস্তা তো কম না। তাই ভাবলাম একটু গল্প করি।

আমিঃ ওখান থেকেই বলো। আমি ঠিক মতোই শুনতে পাচ্ছি।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা। তা তুমি কি আজীবন এভাবেই থাকবে?

আমিঃ এভাবে মানে?

শিলা ম্যামঃ মানে এভাবেই একাই সারাজীবন পার করবে?

আমিঃ তাছাড়া আর কি করার আছে?

শিলা ম্যামঃ একটা বিয়ে তো করতে পারো।

আমিঃ হাহ্। এসব কথা আমার মাথায় আসেনা আর আনতেও চাইনা। তা তোমার হাসবেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে না?

শিলা ম্যামঃ কিভাবে দিবো বলো? যদি হাসবেন্ড নাম প্রাণীটা কাছেই না থাকে।

আমিঃ মানে?

শিলা ম্যামঃ মমমম মানে আমি এখনও বিয়ে করিনি।

আমিঃ কথা আটকাচ্ছে কেনো?

শিলা ম্যামঃ ওই এমনি আরকি। আচ্ছা একটা কথা বলবে?

আমিঃ কি?

শিলাঃ তোমার বিয়ের প্রতি এতোটা অবিশ্বাস কেনো?

আমিঃ এটা অনেক বড় ঘটনা। আমি বলতে চাচ্ছিনা।

শিলা ম্যামঃ বললে সমস্যা কি?

আমিঃ ব্যাপারটা আমার জন্য অনেক কষ্টদায়ক তাই।

শিলা ম্যামঃ তাও বলো। আমার জানতে অনেক ইচ্ছা হয়।

আমিঃ প্লিজ জোর করিও না৷

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা আমাকে বললে তো আমি কাউকে বলবনা।

আমিঃ আপনি যদি মিডিয়ার সামনেও প্রচার করেন তাও আমার কিছু যাই আসেনা। তবে আমার অতীতটা অনেক বেশি কষ্টদায়ক।

শিলা ম্যামঃ রাস্তা তো অনেক দূরের সংক্ষেপে বলো প্লিজ।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে শুনুন তাহলে ( তারপর সব বললাম আমার অতীতের ব্যাপারে)

বলার ইচ্ছা ছিলোনা কারণ আমি ব্যাপারটা ভুলাতে চায় তবুও কেনো জানিনা সবাই এটা শুনতেই ব্যস্ত। আমার ভিতরের অবস্থা কেউ জানার চেষ্টা করেনা। মনে পড়লে যে আমার বড্ড কষ্ট হয়।

আমার বলা শেষ হলে আমি ম্যামের দিকে লক্ষ করলাম চোখ দুটো কেমন জানি ভেজা ভেজা লাগছে। তবে বুঝতে পারছিনা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ওনি এমনটা কেনো করেছিলেন? ওনিই তো নিজে থেকেই সব করেছেন তারপর ছেড়ে গেলেন কেনো?

আমিঃ জানিনা। হয়তো আমার থেকে বেটার কাউকে নিজের জীবনে পেয়েছিলো। আর আমি কি বা দিয়েছি তাকে?

শিলা ম্যামঃ ওনার উপর তোমার বিশ্বাস নাই? ওনি এমন কাজ করতে পারে এটা তুমি বিশ্বাস করো?

আমিঃ আমি বিশ্বাস করতে চাইনা। তবে যে আমার ছেলেকে ফেলে চলে গেছে তাকে বিশ্বাস করতেও চাইনা৷ হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার জিনিস ছিলো সে তবে তার কারণেই আমাকে বাকি জীবন কষ্ট নিয়ে কাটাতে হবে। আমি ওকে কোনোদিন ভুলতে পারবোনা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ওনার খোজ নেওয়ার চেষ্টা করোনি?

আমিঃ দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রতিটা দিন ওকে ফোন করেছি তবে খোলা পাইনি৷ যে শাশুড়ী আমার সংসার দেখে মন খুলে দোয়া করেছিলেন তারও আর খোজ পাইনি৷ তার বাড়ি যাবার সাহস হয়নি কারণ ওর বড়লোক বাবা হয়তো আমার কিছু করে বসতে পারে। আর আমার কিছু হলে আমার ছেলেটার কি হবে? আমি জানি এতিমদের জীবন কতটা কষ্টের হয়। তাই নিজের ছেলের ভালোর জন্য নিজেকে সামলে নিয়েছি।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা যদি ওনি কখনও ফিরে আসেন?

আমিঃ আসতে পারে তবে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হবে।

শিলা ম্যামঃ সেটা কি?

আমিঃ আমি শুধু আমাকে এভাবে ফেলে যাবার কারণটা জানতে চাইবো। জানো ওকে এখনও আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। ও ফিরে আসলে আমি না করতে পারবোনা৷ তবে কারণটা ওকে বলতে হবে। জানো এখনও রাতের তারাদের প্রশ্ন করি ” আমাকে একা রেখে কেনো #আড়ালে_তুমি?

শিলা ম্যামঃ অভিমানের পাহার জমিয়ে রেখেছেন দেখছি।

আমিঃ ৫ বছর আর কয়েকদিন পর ৬ বছর হবে। এতোদিনে কি অভিমানের পাহার জমা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু?

শিলা ম্যামঃ এমনটাও তো হতে পারে যে ওনি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন৷

আমিঃ ম্যাম আমি আর কথা বাড়াতে চাইনা। প্লিজ সবাটাই তো জানলেন এখন আপাতত আর এই নিয়ে প্রশ্ন করবেন না?

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আরও ৬ ঘন্টার পথ বাকি। ঘুমিয়ে পড়ো।

আমি কষ্টগুলো বুকে মাঝে দাবিয়ে রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সাধারণত ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে ৮-৯ ঘন্টা লাগে। তবে বাস একটু ধীরে চালাচ্ছেন সাবধানতার জন্য।

ঘুম থেকে উঠে দেখি বাস এখনও চলছে। পৌছাতে কতক্ষন লাগবে এটা দেখার জন্য গুগল ম্যাপে ঢুকলাম। দেখি আরও ৩ ঘন্টার পথ। এর মধ্যে সকাল হয়ে গেছে। ম্যামের দিকে চেয়ে দেখি উনিও জেগে আছেন আর ফোন টিপছেন। একটু পর একটা হোটেলের সামনে বাস থামে।

অনেক্ষন বসে থাকার ফলে প্রায় সকলেই প্রকৃতির ডাক অনুভব করছে। সবাই বাস থেকে নেমে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলো। তারপর মুখ হাত ধুয়ে সকালের খাবার খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে আবার বাস ছাড়লো।

২.৩০ ঘন্টা পর আমরা পৌছে গেলাম আামদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে। এরপর হোটেলে রুম বুক করা হলো। সকালে ফ্রেশ হলো। সকলকে বলে দেওয়া হয়েছে দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে লাঞ্চ করা হবে। সবাই অনেক টায়ার্ড দীর্ঘ একটা জার্নি করার পর।

দুপুরের খাবারের আগে কেউ বেরই হলোনা৷ দুপুরে খাবারের পর সবাই মিলে রুমে গেলো। তবে আমার একটু সমস্যাই হলো কারণ মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হলো। আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম তবে ব্যাথার কারণে ঘুম আসছেনা। ভাবলাম আজকে রুমেই পার করবো দিনটা৷

বিকালে রফিক ভাই আর বর্না আপু ঘুরতে যাবার জন্য ডাকলো। তবে আমি অসুস্থ হবার কারণে গেলাম না। রুমেই থাকলাম। হাতে ৪ দিন পড়েই আছে ঘুরার জন্য। আমি রিফাতকে নিয়ে যেতে বললাম। ওনারা রিফাতকে নিয়ে গেলেন। আমি শুয়ে থাকলাম। একটু পর ঘুমিয়ে পড়লাম।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ফিরে আসলো সবাই। তবে অসুস্থ হবার কারণে কেউ ডাক দেয়নি। আমার ঘুম ভাঙলো ৮ঃ৩০ মিনিটে। ডিনারের টাইম রাত ৯ টায়। উঠে দেখি মাথা ব্যাথা আর নেই সাথে অনেক ফ্রেশও লাগছে। আমি উঠে রফিক ভাইকে ডাক দিলাম। উনি আমাকে দেখে আমার শরীর কেমন আছে জিজ্ঞেস করলো। আমিও ওনাকে বললাম যে আমি ঠিক আছি। তারপর রিফাতকে নিয়ে খেয়ে আসলাম।

তবে এসে আর ঘুম আসছেনা৷ অনেক্ষন ঘুমার কারণে এখন আর ঘুম আসছেনা। তাই মুভি দেখতে বসলাম। Marvel এর মুভি ভালো লাগে দুটো মুভি দেখলাম। দেখার পর ঘুমালাম।

সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেছে। দেখি ৭ টা বাজে। ব্রেকফাস্টের টাইম ৯ টায় তাই ফেসবুকে গল্প পড়ছিলাম। এর মাঝে আবার রিফাত জেগে গেছে। ওকে তৈরি করে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম। তারপর উঠে আসার সময় আমার শিলা ম্যাম ডাক দিলো।

শিলা ম্যামঃ তা শুনলাম কালকে নাকি তুমি অসুস্থ ছিলে? তা এখম কেমন আছো?

আমিঃ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।

শিলা ম্যামঃ তাহলে ইনজয় করো।

সকালে কয়েক জায়গায় গেলাম। বিকালের দিকে বীচে ঘুরতে যাবো। আমি, রফিক ভাই, বর্না আপুরা একসাথে ছিলাম। তবে সাথে আরেকজনও ছিলো সেটা আর কেউ না শিলা ম্যাম। উনি আমাদের সাথেই ঘুরছেন। তাছাড়া একলা যাবেন বা কোথায়? আমার সাথে কোনো কথা নাই। ওনি বর্না আপুর সাথে থাকছেন। অনেক ভাব জমে গেছে দুজনের মধ্যে। এদিকে রফিক ভাই ব্যাচেলারের মতো আমার সাথে থাকছেন। যদিও কোনো সমস্যা হয়না।

বিকালের দিকে আমরা বীচে ঘুরতে গেলাম। সেখানে অনেক্ষন সময় কাটালাম। তবে এখানেও শিলা ম্যাৃ সম্পূর্ণ ঢেকে রেখেছেন নিজেকে। সন্ধ্যার পর সকলে মিলে সি ফুড খেলাম। শিলা ম্যাম আদর্শ পর্দাশীল নারীর মতে করে খাচ্ছেন।

ফিরতে একটু রাত হলো। অনেক কিছু খাবার ফলে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে উঠে ভাবলাম ছাদ থেকে ঘুরে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। ৭ তলা হোটেল৷ আমি লিফটে করে টপ ফ্লোরে গেলাম সেখান থেকে সিড়ি হয়ে ছাদে গেলাম। তবে সেখানে গিয়ে দেখি আরেক অবাক করা ঘটনা। ছাদে আগে থেকেই শিলা ম্যাম আর অফিসেরই একজন কর্মচারী দাড়িয়ে কথা বলছে। ওরা একটু আড়ালে ছিলো। তবে এরপরও যে আরও ঘটনা ঘটবে এটা বুঝতে পারিনি৷ কারণ কথার মাঝেই ছেলেটা পকেট থেকে একটা আংটি বের করে ম্যামের সামনে বসে পড়লো

ছেলেটিঃ আজি জানিনা আপনি কথাটা কিভাবে নিবেন হয়তো ভাবতে পারেন আমি আপনার টাকার জন্য আপনাকে এসব বলছি তবে না। আমি যেদিন এই অফিসে প্রথম এসেছিলাম সেদিন আপনার মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে আমি চোখদুটোর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আপনাকে বিয়ে করে আপনার সাথে থাকতে চাই। দিবেন আমাকে সেই সুযোগ? হয়তো আমার বেশি কিছু নাই তবে ঢ়া আছে সবটা দিয়ে আমি আপনাকে ভালোবাসবো। আপনি কি আমার জীবনসঙ্গী হবেন?

ম্যামকে দেখি দাঁড়িয়েই আছেন। একটু পর ছেলেটার হাত থেকে আংটিটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো। তারপর বলতে শুরু করলো

শিলা ম্যামঃ How dare you talk to me like this? Do you forget who am I? Just look at yourselfe, who are you? You are noting but a simple employee and I am you boss. I am giving you a last warning if such incident happens further, you will get your rewad.

( আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এসব বলার? আপনি কি ভুলে গেছেন আমি কে? নিজের দিকে দেখুন, কে আপনি? আপনি একজন সাধারণ কর্মকর্তা ছাড়া আর কিছুই না এবং আমি আপনার বস। আমি আপনাকে লাষ্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি যদি এরকম কোনো কাহিনী ভবিষ্যৎ ঘটে, তাহলে আপনি তার পুরষ্কার পেয়ে যাবেন।)

ছেলেটিঃ ম্যাম সত্যি আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আমাকে ফিরিয়ে দিয়েন না। আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা আমি যেনো একটা ভালো মেয়ে বিয়ে করি। আর আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে। প্লিজ ম্যাম।

শিলা ম্যামঃ Don’t try to get sympathy including you mother into this. I don’t care about your mother and I don’t care about her last wish. These words can’t make me emotional. If that is her last wish then go and find some others. And I also don’t care about you. So just leave otherwise I will take hard steps.

( নিজের মায়ের কথা বলে সহানুভূতি অর্জন করার চেষ্টা করবেননা। আমি আপনার মায়ের শেষ ইচ্ছা বা আপনার মা কোনোটার ব্যাপারেই পরোয়া করিনা। আর আপনার কথায় আমি আবেগি হয়ে পড়বোনা। সেটা যদি তার শেষ ইচ্ছা হয় তাহলে অন্য কাউকে খুজে নিন। আর হ্যাঁ আমি আপনারও কোনো পরোয়া করিনা। চলে যান নাহলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো)

ছেলেটিঃ সত্যি আপনি এসবের পরোয়া করেন না? আমি যদি মরেও যায় তাও না?

শিলা ম্যামঃ আপনি কে হ্যাঁ? আপনি মরলে বা বাঁচলে আমি কেনো সেসবের পরোয়া করবো? আর এইমাত্র না বললেন আপনার মায়ের শেষ ইচ্ছার কথা? এখন তো আমি আরও সিওর যে আপনি আমার টাকার জন্যই সব করছেন। নিজের মায়ের কথা ভাবলে কখনও মরার কথা মাথায় আনতেন না। আর হ্যাঁ আপনি চাইলে মরতে পারেন। আমরা এখন ৭ম ফ্লোরের ছাদে। এখান থেকে লাফ দিলে সিওর মারা যাবেন। চাইলে চেষ্টা করতে পারেন৷ তবে যদি ভাবেন তারপর আমি অনুশোচনায় ভুগবো এমনটা মোটেও হবেনা৷ যান লাফ দেন৷

ছেলেটা এবার মাথা নিচু করে নিলো। আমিতো শুধু এটাই ভাবছি যে ম্যাম রাগতেও পারে? সব সময় ওনাকে নম্র ভাবে থাকতে দেখেছি তবে আজ এই রাগ প্রথম দেখলাম। ছেলেটা আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

শিলা ম্যামঃ আমি প্রথমেই বলেছিলাম বেশি কথা না বলতে। অনেক বেশি বলে ফেলেছেন এখন অফিস গিয়ে পুরষ্কারের প্রস্তুতি নিতে থাকুন।

শিলা ম্যাম চলে আসতে গিয়ে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন

শিলা ম্যামঃ তুমি কখন আসলে?

আমিঃ এই মাত্র এলাম।

শিলা ম্যামঃ ওহ৷ আচ্ছা আমি নিচে যাবো। একটু পর ঘুরতে বের হবো তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিও।

আমিঃ আচ্ছা।

শিলা ম্যাম চলে গেলেন। ছেলেটা এখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওনার ব্যাপরে না ভেবে রুমে ফিরে এলাম। ব্রেকফাস্টের পর পাশের একটা মেলাতে ঘুরতে গেলাম। সেখানে শামুকের অনেক সুন্দর জিনিস দেখতে পেলাম৷ অনেক সুন্দর কারুকার্য। অনেক ভালো লাগলো।

আজ ৩য় দিন পার হলো। আর ২ দিন বাকি। সুন্দর সময়গুলো হয়তো তাড়াতাড়ি চলে যায়। এই ৩ দিন অনেক ভালো কাটলো। রিফাতও অনেক খুশি ঘুরতে পেয়ে আর সাথে জায়গাটাও এতোটা মনোরম যে শুধু ঘুরতে ইচ্ছা হয়। রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেও অনেক সুন্দর একটা দৃশ্য চোখে পড়ে৷ সব মিলিয়ে দারুন একটা সময়। যদি যথেস্ট পরিমান টাকা থাকতো তাহলে একটা বাড়ি করে এখানেই থেকে যেতাম।

রাতে বসে আড্ডা দিচ্ছি। অফিসের অনেকগুলো কলিগ একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি হোটেলের ছাদে৷ মেয়েরা একটু দূরে বসে আছে। সবাই মিলে একটা গেম খেলছে। একটা বাটিতে সকালের নাম লিখা আছে৷ একজন তুলবে আর যার নাম উঠবে তাকে গান গাইতে হবে। ৪ জনের সাথে এরকম হলো। বেচারিরা গান গাইতে না পারলেও বাধ্য হয়ে ২-৪ লাইন রিডিং এর মতো করে বলছে। ৪র্থ জন শেষে এবার একটা চিট তোলা হলো। যেটা ভয় পেয়েছিলাম সেটাই৷ এবার আমার নাম উঠেছে। গান মোটামুটি পারি। তবে গাইতে লজ্জা লাগে। এখন আর কি করার? এখন তো গাইতেই হবে। সব লাজ লজ্জা দূর করে একটা রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া শুরু করলাম

“কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না
মোহমেঘে তোমারে…
অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে ‘হারাই-হারাই’ সদা হয় ভয়
‘হারাই-হারাই’ সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে
আশ না মিটিতে হারাইয়া- পলক না পড়িতে হারাইয়া-
হৃদয় না জুড়াতে হারাইয়া ফেলি চকিতে
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
ওহে কী করিলে বল পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে-
ওহে কী করিলে বল পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে-
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ
এত প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে
আমার সাধ্য কিবা তোমারে-
দয়া না করিলে কে পারে-
তুমি আপনি না এলে কে পারে হৃদয়ে রাখিতে
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
ওহে আর-কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আজই প্রাণপণ-
ওহে আর-কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আজই প্রাণপণ-
ওহে তুমি যদি বল এখনি করিব…
তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয় -বাসনা বিসর্জন
দিব শ্রীচরণে বিষয়- দিব অকাতরে বিষয়-
দিব তোমার লাগি বিষয় -বাসনা বিসর্জন
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না”

গান গাওয়া শেষে সবাই হাত তালি দিলো। গলাটা খুব সুন্দর না হলেও চলার মতো। সবাই অনেক প্রসংসা করলো। গানটা আমার পচ্ছন্দের। অনেক শুনি তাই মুখস্ত হয়ে গেছে।

আড্ডা শেষে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম৷ আজকে ট্যুরের শেষ দিন। এখন পর্যন্ত অনেক ঘুরলাম তবে কোনো কিছু কিহা হয়নি। তাই ভাবলাম আজকে কিছু পচ্ছন্দ হলে কিনে নিবো। অনেক কিছু কিনলাম। ঘর সাজানোর জন্য কিছু উপকরন আর কিছু সো পিস কিনলাম।

আজকে রাতে আবার রওনা দিবো। রাত ১১ টায় বাস ছাড়বে তাই তার আগেই সব গুছিয়ে নিলাম। তারপর সময় মতো বাসে উঠে পড়লাম৷ রাত ১১ঃ৩০ টায় আবার বাস ছাড়লো। রিফাত ঘুমিয়ে গেছে। আমি নিজে থেকে শিলা ম্যামকে বললাম

আমিঃ আচ্ছা কিছু কথা বলতে পারি?

শিলা ম্যামঃ হ্যা বলো

আমিঃ আসলে সেদিন ছাদে যে ছেলেটা তোমাকে প্রপোজ করেছিলো তাকে ওভাবে না বললে হতোনা?

শিলা ম্যামঃ তার মানে তুমি সব শুনেছিলে? ( অবাক হয়ে)

আমিঃ হুম। হয়তো তোমাকে সত্যি ভালোবাসতো।

শিলা ম্যামঃ আরে রাখো তো এদের ভালোবাসা। ওটা ভালোবাসা না ওটা আমাকে ফাঁসানো ধান্দা ছাড়া আর কিছুই না।

আমিঃ এমনটা কেনো মনে হলো?

শিলা ম্যামঃ ও যখন কথার মাঝে ওর মাকে ঢুকিয়েছিল তখনই বুঝে গিয়েছলাম যে এটা কিছুইনা। কারণ ও আমাকে ইমোশনাল করে সিম্প্যাথি অর্জন করতে চাইছিলো।

আমিঃ আচ্ছা ও যদি সত্যি কিছু করে বসতো?

শিলা ম্যামঃ করলে করতো তাতে কার কি আসে যায়?

আমিঃ ওর প্রতি মায়া হয়নি?

শিলা ম্যামঃ আজব? ওর প্রতি কেনো আমার মায়া হতে যাবে? সত্যি মরে গেলেও আমার সামান্যটুকু অনুশোচনা হতোনা। আর আমার মনে আগে থেকেই অন্যের বসবাস রয়েছে। তাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছিনা।

আমিঃ এটা ওকে বুঝিয়ে বললেই পারতেন।

শিলা ম্যামঃ বুঝালেও বুঝতোনা। তবে ওর ব্যবস্থা করে রেখেছি। অফিসে গিয়েই বুঝবে।

আমিঃ মানে?

শিলা ম্যামঃ ওকে সিলেট ট্রান্সফার করে দিবো।

আমিঃ এটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?

শিলা ম্যামঃ বেশি কি হলো? তাছাড়া আমি তো ওর চাকরি নিচ্ছিনা বরং উপকার করছি। ওখানে গিয়ে একটা ফ্ল্যাট পাবে। এতে বেশির কি হলো?

আমিঃ তাহলে ঠিক আছে। তা আপনার মনের কথা আপনার পচ্ছন্দের মানুষটাকে বলতে পারছেন না কেনো?

শিলা ম্যামঃ কারণ আমি দেখতে চাই সে আগের মতো আছে কিনা। ( একটু আনমনে কথাটা বললো)

আমিঃ মানে?

শিলা ম্যামঃ নননন না মমমম মানে কিছুনা।

আমিঃ তবে দেরি হয়ে যাবার আগেই সব করে ফেলুন। দেরি হয়ে গেলে আর ফিরে পাবেননা।

শিলা ম্যামঃ দেরি হলেও সে হারাবেনা। আমি কিছুটা সময় চাই। আমি তাকে আরেকটু বুঝতে চাই৷

আমিঃ তুমি যে কি বলো তার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝিনা।

শিলা ম্যামঃ তোমাকে কিছু বুঝতে হবেনা। সময় হলে সেই মানুষটাকে সকলের সামনে নিয়ে আসবো।

আর কোনো কথা বললাম না। কারণ তার কথা আমি কিছুই বুঝিনা। সোজাভাবে কোনো কথা বলেননা। যাইহোক আমি ফেসবুকে গল্প পড়তে লাগলাম। ৩০ মিনিট পর আমার ফোনে একটা মেসেজ আসলো। আমি মেসেজটা দেখলাম।

তবে যে নম্বর থেকে মেসেজ আসলো আর যে মেসেজ আসলো তা দেখার পর আমি কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে থাকলাম৷ এতোদিন পর হঠাৎ সেই চিরোচেনা নম্বর থেকে মেসেজ আসলো৷ তবে সব চাইতে বড় কথা আমার এই নম্বর পেলো কোথায়? তাহলে কি ও আশেপাশে কোথায়ও আছে? আসলে যে নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে তা আর কারও নয় নম্বরটি ছিলো শিলার আগের নম্বরটা। মেসেজে লিখেছে

“কেমন আছো প্রিয়?”

আমি এই ঘটনার জন্য আমি মানসিক ভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। পুরো অস্থির হয়ে পড়লাম। এই মূহুর্তে আমার কি করা উচিৎ আমি বুঝতে পারছিনা। চোখের জল বেরিয়ে আসতে চাইছে তবে আমার জন্য পারছেনা। আমি আর দেরি না করে সেই নম্বরটিতে কল করতে লাগলাম। কিন্তু কানে ভেসে আসলো সেই চিরচেনা কন্ঠ যা পাঁচ বছর ধরে শুনে আসছি।

” আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মূহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার কল করুন—- The number you are calling can not be reached at the moment, please try again later”

আমি অনবরত কল করতে থাকলাম তবে আর কল ঢুকছেনা। আমি পারছিনা চিৎকার করে কান্না করতে। অস্থির হয়ে গিয়েছি। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছি ও আমার আশে পাশেই আছে। তার থেকেও বড় কথা আমার এই নম্বর পেলো কোথায়? এই নম্বর তো তৃপ্তি আদিবা এরাকেও দিয়েছি। তার মানে কি ওরা আমাকে মিথ্যা বলছে? ওরা কি জানে শিলা কোথায়? যদি না জানে তাহলে শিলা আমার নম্বর পেলো কোথায়? আমি কিভাবে ওকে খুজবো? এখন আমার কি করা উচিৎ?

আমার বসে থাকতে ইচ্ছা করছেনা৷ মন চাইছে বাস থেকে নেমে চিৎকার করে কান্না করি। তবে সেই সুযোগ নেই। আমি সিটে বসে ছটফট করছি। পাশে তাকিয়ে দেখি শিলা ম্যামও ঘুমিয়ে গেছে। বাসের সবাই ঘুমিয়ে গেছে। তবে আমি পারছিনা। এভাবে হঠাৎ মেসেজ দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখার মানে কি? তার কি আমার কথা একটুও মনে পড়ছেনা?

সারা রাস্তা ছটফট করতে করতে এসেছি। এক সেকেন্ডের জন্যও চোখ বুঁজতে পারিনি। তবে ও আমার আশেপাশে আছে। আমার কিছু একটা করতে হবে যাতে ওকে আমি ওকে আমার সামনে নিয়ে আসতে পারি। কিছু একটা ভাবতে হবে৷

বাড়িতে এসেও চোখে একটুও ঘুম নাই। বার বার আমি ওর নম্বরে ফোম দিচ্ছি। সারাদিন আমার একটুও ঘুম হলোনা৷ রাতেও খেতে গিয়ে আমার অন্যমনস্ক হয়ে থাকা দেখে রফিক ভাই প্রশ্ন করলো

রফিক ভাইঃ নীল কি ব্যাপার কোনো সমস্যা?

আমিঃ না কোনো সমস্যা নাই।

রফিক ভাইঃ তাহলে না খেয়ে অন্যমনস্ক হয়ে আছিস কেনো?

আমিঃ এমনিই ভালো লাগছেনা

রফিক ভাইঃ কোনো সমস্যা থাকলে খুলে বল।

আমিঃ কোনো সমস্যা নেই ভাই।।

রফিক ভাইঃ তাহলে খেয়ে নে।

আমি চুপচাপ খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। কোনো মতেই ঘুম আসছেনা। শেষ রাতের দিকে ঘুম আসলো।

সকালে উঠে না খেয়েই অফিসে গেলাম৷ সারাদিন চুপচাপ কাজ করলাম৷ আমি শুধু একটা কথাই ভাবছি কিভাবে শিলাকে সামনে আনবো? সেদিনের মতো কাজ শেষ করলাম৷

দেখতে দেখতে আরও ২ মাস কেটে গেলো। এই দুই মাসে প্রতিদিন আমি শিলাকে ফোন দিয়েছি। লাভ হয়নি৷ আজকে অফিসে বসে কাজ করছি। তখন পিয়ন এসে আমাকে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে গেলো।
আমি বুঝতে পারলাম না কিসের খাম এটা।

খামটা খুলে ভিতরে যা দেখালাম তা দেখে আমি বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম। এটা কিভাবে সম্ভব? এতো কম সময়ে এটা কি আদৌ হওয়া পসিবল? কারণ খামের ভিতরে যা ছিলো…………..

চলবে……………….

আড়ালে তুমি পর্ব – ৭

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৭
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিলার নম্বর থেকে ফোন আসলো। প্রথমবার কেটে দিলাম। তারপর দিলো তখন ধরে আস্তে করে বললাম

আমিঃ ক্লাসে আছি একটু পরে ফোন দাও

ওপাশ থেকেঃ বাবা আমি আমি তোমার শাশুড়ী । শিলা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছে। অনেক্ষন হলো জ্ঞান ফিরছেনা। তাই আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।( কেঁদে)

কথাটা শুনে আমার অনেক ভয় হলো। শিলা তো সুস্থই ছিলো। হঠাৎ ওর কি হলো? কোনো খারাপ কিছু হয়নি তো? না না এসব আমি কি ভাবছি? ওর কিছু হতে পারেনা।

আমি আর দেরি না করে হাসাপাতালে দিকে চললাম। ১০ মিনিট পর পৌছালো। তারপর ফোন দিলে শাশুড়ী বলে ওনারা নিচ তলায় ১১৯ নম্বর রুমে আছে। আমি দৌড়ে চলে গেলাম। কেবিনে ঢুকে দেখি শিলা অজ্ঞান হয়ে আছে আর ওর পাশে বসে আমার শাশুড়ী কান্না করছে আর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আমিঃ মা কি হয়েছে ওর?

শাশুড়ীঃ জানিনা বাবা। সব কিছু ঠিক ছিলো। আমরা টিভি দেখছিলাম। এমনি বসে থাকতে ভালো লাগছিলোনা তাই ওকে কফি বানাতে পাঠাই৷ অনেকক্ষণ পর ফিরে না আসলে আমি দেখতে যায়৷ গিয়ে দেখি ও ফ্লোরে পড়ে আছে। আমি তাড়াহুড়ো করে আমাদের গার্ড ডেকে ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ( কান্না করছেন)

আমিঃ মা ডাক্তার কি বললো?

শাশুড়ীঃ টেস্ট করতে দিয়েছি রিপোর্ট একটু পর পাবো।

আমিঃ আপনি শান্ত হন মা। কিছু হবেনা শিলার।

আমিও ওর পাশে বসলাম। আমি কিছু বলতে পারছিনা তবে ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। একটু পর একজন নার্স এসে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে গেলেন। গিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম

আমিঃ ডাক্তার সাহেব আমার ওয়াইফ কেমন আছে?

ডাক্তারঃ উনি ঠিক আছেন তবে..

আমিঃ তবে কি স্যার বলুন প্লিজ।

ডাক্তারঃ একটা সমস্যা হয়েছে। তবে তার জন্য সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে।

আমিঃ এটা কেমন ধরনের মজা? আমার স্ত্রী অসুস্থ আর আপনি মিষ্টি খেতে চাইছেন?

ডাক্তারঃ তো এমন খুশির খবরে মিষ্টি খাওয়াবেন না?

আমিঃ মানে?

ডাক্তারঃ মানে আপনাদের ঘরে নতুন সদস্য আসছে

আমিঃ মমমম মানে আআআমি বাবা হতে চলছি?

ডাক্তারঃ জ্বী।

কথাটা শুনে আমি অনেক অনেক অনেক বেশি খুশি হলাম৷ আজ যেনো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। তবে এমনটা তো চাইনি আমরা। আগে সেটেল হয়ে বাচ্চা নিতাম। আমি শিলাকে গিয়ে কি বলবো? তারপরও আমি গিয়ে শাশুড়ীর সামনে দাঁড়ালাম।

শাশুড়ীঃ বাবা কি বললেন ডাক্তার?

আমিঃ শিলা মা হতে চলেছে।

শাশুড়ীঃ তার মানে আমি নানী হবো? ( তার মুখে খুশি স্পস্ট)

এরই মাঝে শিলার জ্ঞান আসলো। জ্ঞান আসতেই শিলা প্রথমে জিজ্ঞেস করলো

শিলাঃ আমি এখানে কেনো? আমি তো বাড়িতে ছিলাম।

শাশুড়ীঃ তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি তাই তোকে এখানে নিয়ে এসেছি।

শিলাঃ কি হয়েছে আমার?

শাশুড়ীঃ তোর কিছু হয়নি তবে আমি নানী হতে চলেছি।

শিলাঃ সত্যিইইইইই ( অনেক বেশি খুশি হলো)

শিলার চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখে আমিও কিছুটা খুশি হলাম। তবে শিলার জন্য টেনসন হচ্ছে। এতো ভালো স্টুডেন্ট যদি এখন বাচ্চা নেয় তাহলে যদি ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়?

ওকে নিয়ে বাড়িতে আসলাম। রাতে ঘুমানোর সময় ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো

শিলাঃ নীল তুমি খুশি হওনি?

আমিঃ খুশি অনেক হয়েছি তবে তোমার জন্য চিন্তা হচ্ছে।।

শিলাঃ কেনো?

আমিঃ এখন বাচ্চা নিলে যদি তোমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়?

শিলাঃ হলে হবে তাতে সমস্যা কি?

আমিঃ আমি তো তোমার সব কেড়ে নিলাম৷ তোমার পরিবার সব। এখন যদি তোমার পড়াশোনাও শেষ হয় তখন?

শিলাঃ কিচ্ছু হবেনা। আমি সব চালিয়ে যাবো।

আমিঃ কিভাবে?

শিলাঃ ওটা আমি দেখে নিবো।

আমিঃ জানো আমি আজ অনেক খুশি হয়েছি৷ তুমি আমার জন্য সব করলে। আজ আমাকে বাবা হবার খুশিও দিলে।

শিলাঃ পাগল তোমার জন্যই তো আমার সব।

তারপর ওর কপালে চুমুু দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। কিছুদিন পর শাশুড়ী চলে গেলো। আমি আর শিলা আগের মতো ভার্সিরি যাওয়া শুরু করলাম।

সময় চলতে থাকলো তার নিজের গতীতে। ৭ মাস পার হয়ে গেলো। ভাগ্য ভালো সেমিস্টার ফাইনাল হয়ে গিয়েছিলো।তাই এখন ওর সাথে থাকতে পারবো। আমি বেশির ভাগ সময় ওর সাথে থাকি৷ আর মাঝে মাঝে ভার্সিটির গেলেও ওর দরকারী সব ওর পাশে রেখে আসি। এর মাঝে শাশুড়ী এসেছিলেন ২ বার। অনেকদিন থেকে গেছন৷ তিনি এখনও পারেন নি শশুরের রাগ ভাঙ্গাতে।

সময়গুলো অনেক দ্রুত চলে গেলো। এখন ৯ মাস ২৫ দিন চলছে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন যেকোনে সময় পেইন উঠতে পারে তাই সব সময় যাতে ওর পাশে থাকি। হঠাৎ দুপুরের দিকে শিলার পেইন উঠে। আমি পাশে ছিলাম। ওর গোঙ্গানির আওয়াজ শুনে উঠে দেখি অনেক ছটফট করছে।

আমিঃ শিলা কি হয়েছে তোমার? এরকম করছো কেনো?

শিলাঃ নীল অনেক ব্যাথা করছে গো। আস্তে আস্তে বাড়ছে।

আমি বুঝলাম ওর পেইন উঠেছে। আমি দেরি না করে না নাহিদ ভাইকে ফোন করে এম্বুলেন্স পাঠাতে বললাম। সেই সাথে তিনি একজন গাইনি ডাক্তার ঠিক করলেন।

একটু পর এম্বুলেন্স আসলো। ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম আর শাশুড়ীকে ফোন দিয়ে বললাম। হাসাপাতে পৌছে দেখি আদিবা আর নাহিদ ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে সাথে ওকে নামিয়ে পর্যবেক্ষনে রাখা হলো। ডাক্তার ওর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গেলেন৷ তিনি বেরিয়ে আসলে আমি জিজ্ঞেস করলাম

আমিঃ ম্যাম আমার ওয়াইফ কেমন আছে?

ডাক্তারঃ উনি ঠিক আছেন। বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে সাথে সব স্বাভাবিক আছে৷ তবে O+ রক্ত লাগতে পারে আপনি ব্যবস্থা করে রাখুন। আর নর্মাল ডিলেভেরি হবে কোনো ঝুকি নাই।

একটু হালকা হলেও ভায় হচ্ছে। একটু পর শাশুড়ীও আসলেন৷

শাশুড়ীঃ বাবা শিলা কেমন আছে?

আমিঃ মা টেনসনের কোনো কারণ নাই ও একদম সুস্থ আছে। আপনি বসুন ডাক্তার সব কিছুর ব্যবস্থা করছেন।

একটু পর ডাক্তার ভিতরে গেলন। রুম সাউন্ডপ্রুফ হবার কারণে শিলার চিৎকার শোনা যাচ্ছেনা৷ অনেকক্ষন পর একজন নার্স আমার বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।

নার্সঃ অভিনন্দন আপনার ঘরে ছেলে এসেছে।

আমিঃ আপু শিলা কেমন আছে?

নার্সঃ ওনি ঠিক আছেন৷ ওনাকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে। তবে ১ ব্যাগ রক্ত লাগবে। আপনি আমার সাথে আসুন।

আমি ওনার সাথে গিয়ে এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে আসলাম৷ এসে দেখি আমার শাশুড়ী আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে আছে। একটু পর আদিবা নিলো। আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেলাম৷

আমিঃ ম্যাম ওর সব ঠিক আছে?

ডাক্তারঃ হুম সব স্বাভাবিক আছে। একটু পর জ্ঞান আসবে।

আমিঃ ধন্যবাদ ডাক্তার।

ডাক্তারঃ ধন্যবাদ কেনো? এটাই আমার কাজ। আর আপনার স্ত্রী অনেক শক্ত মেয়ে। হয়তো আপনাদের ভালোবাসার কারণে নিজেকে এতোটা শক্ত রাখতে পেরেছিলো।

আমিঃ ম্যাম আমি ওকে দেখে আসি

আমি ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হয়ে শিলার কেবিনে গেলাম। আমার শাশুড়ী আর আদিবা বসে আছে। ৩০ মিনিট পর ওর জ্ঞান ফিরলো। আমার শাশুড়ী ছেলেকে ওর পাশে শুইয়ে দিয়ে বাইরে গেলেন। আমি থাকলাম ভিতরে। শিলা আমার ছেলের কপালে চুমু দিয়ে ওর বুকে হাত দিয়ে থাকলো।

আমিঃ শিলা তুমি ঠিক আছো?

শিলাঃ আমার আবার কি হবে? একদম ঠিক আছি আমি৷ এই বাবুকে দেখেছো? একদম তোমার মতো হয়েছে।

আমিঃ দেখতে হবেনা ছেলে কার?

শিলাঃ আমার আর কার?

আমিঃ তোমার আর আমার। ( বলে ওর কাপলে চুমু দিলাম)

নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে খুব তাড়াতাড়ি বিকভার করলো। ২ দিন পরেই ওকে বাড়ি নিয়ে আসলাম। শাশুড়ী আসতে পারলেন না। তবে আমি পাশে থাকি সব সময়।

আমার ছোট সংসারে আরও খুশি নিয়ে আসলো আমা ছেলে। আমার ছেলে নাম রাখলাম রিফাত কবির। ১০ দিন পর আমার শাশুড়ী এসে দেখে গেলেন৷ আরও ১ মাস এভাবে গেলো। এই ১ মাস ভার্সিটি যেতে পারেনি শিলা। শাশুড়ী তার বাসা থেকে একজন কাজের মেয়েকে পাঠালো। আমি ভার্সিটি গেলে ওর শিলার খেয়াল রাখতো।

অনেক সুখে, ভালোবাসায়, দুষ্টুমিতে আমাদের দিন চলছিলো। তবে কথায় আছেনা বেশি সুখ কারও কপালে সইনা। আমার সাথেও যে এমনটা হবে আমি বুঝতে পারিনি৷

আমার ছেলের বয়স তখন ৩ মাস। আমি রিফাতকে নিয়ে ছিলামা পাশে শিলা ছিলো। হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসে। ও অন্য ঘরে গিয়ে আড়ালে কথা বলে ৩০ মিনিট। রুমে এসে ওকে জিজ্ঞেস করলে বলে তার মা ফোন দিয়েছিলো।

পরেরদিন কাজের মেয়েটা আসেনা। শিলা নাকি সেদিন ভার্সিটি যাবে। ওর যাওয়া নাকি জরুরি ছিলো আমি সিফাতের কাছ থাকলাম। সকাল ৯ঃ৩০ এ ও বের হয়। সাধারণত ক্লাস শেষ হয় দুপুর ২ঃ৩০টার সময়। বাড়ি ফিরতে ২ঃ৪৫ বাজার কথা৷ দেখতে দেখতে ৪ টা বেজে যায়। এবার আমি ওকে ফোন দিলাম। দেখি ওর ফোন বন্ধ। এবার আমি টেনসনে পড়ে গেলাম৷ একের পর এক কল দিতে থাকলাম তবে ফোন বন্ধ।।

রাত ৯ টা আমার ছেলেটা কেঁদে একাকার করে দিয়েছে। কাঁদছে ও তবে আঘাত আমাকে লাগছে। আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা যে শিলা কোথায় যেতে পারে। শাশুড়ী নম্বরে ফোন দিলে সেটাও বন্ধ পায়। রাতটা আমি কিছুতেই চোখের পাতা বন্ধ করতে পারলাম না। আমার ছেলেকে ফিডার দিয়ে চুপ করিয়েছি।

সকাল হলে আমি আদিবা ফোন দিয়ে সব খুলে বলি। একটু পর ওরাও আমার এখানে হাজির। তন্ন তন্ন করে খুজতে থাকি ওকে। তবে ওর কোনো খোজ পাইনা। আদিবা ওদের বাড়িতে গিয়েছিলো তবে আমার শশুরের নাকি কোনো রকম রিয়্যাকশন দেখতে পাননি। তিনি সাফ জানিয়ে ছিলেন যে তার ব্যপারে কেউ কিছু জানেনা। এমনকি এটাও বলেছে যে আমি যদি ওখানে যায় তবে আমাকে আর ছেলেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করা হবে।

এরপর দিন গেলো, মাস গেলো, কেটে গেলো এক বছর। তবুও শিলার কোনো খোজ পেলাম না। আমার ছেলেটাও বড় হচ্ছিলো। কোনো রকমে ওর খেলাল রাখতাম। ২ মাস ওই বাসায় থাকার পর আর্থিক কারণে সেটা ছাড়তে হয়। তারপর একটা হোটেলে কাজ করি। আমার ছেলেকে আমি সেই কাপড়ের মালিকের বউ আমি চাচি বলতাম ওদের কাছে রেখে আসি। উনিও আমার ছেলেকে অনেক আদর করতেন। ওনার ছেলে এখন বড় চাকরি করছেন। বিয়ে করেনি এখনও৷ আমি কাজ করতাম আর মাঝে মাঝে ভার্সিটি যেতাম। রেজাল্ট আগের তুলানায় খারাপ হতে থাকে। তবে চলার মতে।

অনার্স শেষ করার ইচ্ছা না থাকলেও ভাইয়ের অনেক বুঝানোর পর আমি নিজের উপর জোর দেই। একবার ফেইল করায় ১ বছর পিছিয়ে পড়ি।
তারপরও কোনো রকমে অনার্স শেষ করি। এর মাঝে ভাইয়ের বিয়ে হয়। রিফাত ও বড় হতে থাকে। তবে ছোট থেকেই ওর মধ্যে কোনো চঞ্চলতা ছিলোনা৷ সব সময় গোমরা হয়ে বসে থাকতো। ওকে এক জায়গায় বসিয়ে রাখতে ওভাবেই থেকে যেতো। ক্ষুধা লাগলে কান্না করতো।

৫ বছর কেটে গেলো। আমি কোনো জবের জন্য এপ্লাই করিনি। রুচিও ছিলোনা। আমার ছেলেটা এখন মাঝে মাঝে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। ভাইয়ের একটা ছেলে হয়েছে। তবে চাচি এখনও অনেক ভালোবাসে আমার ছেলেকে। হাজার হলেও ছোট থেকে দেখে রেখেছেন৷ আর কোনোদিন শিলা বা শাশুড়ীর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। ওদের মোবাইল নম্বর আর খোলা পাইনি৷

তবে বিপদ যেনো আমার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে। যে হোটেলে কাজ করতাম একদিন সেখানে পুলিশ রেইড মারে আর অবৈধ নারী ব্যসসার কেইস করা হয়। ব্যাস সেটাও বন্ধ হয়ে গেলো।

এবার আমি চাকরির প্রয়োজন মনে করলাম৷ জমানো ছিলো প্রায় ৩০ হাজার মতো। ভাই বললো ঢাকাতে যেতে কারণ আমার রেজাল্ট চলার মতো ওখানে গিয়ে নাকি কোনো কোম্পানিতে জব পেতে পারি।

তারপর আমি ঢাকা আসি৷ ২ মাস চেষ্টা করেও কোনো কুল কিনারা পেলাম না। অবশেষে আমি এই অফিসে এসে চাকরি পাই৷ আর তারপরের সব কিছু তো তোমরা জানোই

★বর্তমান★

আমার অতীতের কাহিনী বলা শেষ হলো। আমি নিচ দিকে মাথা করে কাঁদছি৷ পুরনো কথাগুলো অনেক বেশি কষ্ট দেয়। একটু পর মাথা তুলে দেখি ভাই আর আপুও কান্না করছে।

আমিঃ কি হলো তোমাদের? তোমরা কান্না করছো কেনো?

রফিক ভাইঃ এতো কিছু কিভাবে সহ্য করে আছিস তুই ভাই?

বর্নাঃ জানিনা তুমি কিভাবে কষ্টের মাঝেও টিকে আছো।

আমিঃ হয়তো নিজেকে শেষ করে দিতাম। তবে ছেলেটার জন্য সব কষ্ট মাটি চাপা দিয়েছি।

বর্ণাঃ শিলার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি?

আমিঃ না। ৫ বছরে প্রতিটা দিন আমি ওকে ফোন দিয়েছি। তবে পাইনি। এখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছি।

রফিক ভাইঃ তোমার শশুর বাড়ির লোকের সাথে কথা হয়নি?

আমিঃ আমি চেষ্টা করিনি৷ সেদিন খোজ নিয়ে জেনেছিলাম শিলা ভার্সিটিও যায়নি। জানিনা সে কোথায় চলে গেলো আমাদের একা রেখে। এখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে মনেহয় ও আমার থেকেও ভালো কাউকে পেয়েছে। তবে ও আমাকে কথা দিয়েছিলো কোনোদিন আমার হাত থেকে হাত সরাবেনা৷ তবে কিসের জন্য ও চলে গেলো?
আজও আমি জানিনা তার চলে যাবার কারণ। মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি ” আমাকে একা রেখে কোথায় চলে গেলা তুমি? #আড়ালে_তুমি রয়ে গেলে আমাকে একা ফেলে।

কথাগুলো বলেই কাঁদতে লাগলাম। রফিক ভাই আর বর্ণা আপু আমাকে শান্তনা দিতে লাগলেন।

রফিক ভাইঃ নিজেকে শক্ত কর ভাই। তোর ছেলেটার জন্য তোকে সব কিছু জোর করে ভুলতা হবে।

বর্নাঃ আসলে আমাদেরই ভুল হয়েছে। কি দরকার ছিলো ওর অতীত জানতে চাওয়ার? জানো রফিক অতীত অনেক বেশি কষ্ট দেয়। মনটা টুকরো টুকরো করে দেয় অতীত।

রফিকঃ নীল ভাই যা শুয়ে পড়। অনেক রাত হলো। যা ভাই শুয়ে পড়।

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩ টা বাজে। আমি ওদের বিদায় দিয়ে রিফাতের পাশে শুয়ে পড়লাম।
আজকে কিছুতেই ঘুম আসছেনা। অনেক্ষন ছটফট করার পর ঘুমিয়ে গেলাম।

পরেরদিন ছুটি থাকায় অনেক্ষন ঘুমালাম। এমনিতেই রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখি রিফাত পাশে নেই৷ আমি উঠে পাশের রুম, বাথরুম সব জায়গায় দেখলাম তবে কোথাও নেই। এরকম ভাবে হারিয়ে জাওয়ার সাথে আমি আগে থেকেই পরিচিত তাই মনে সেই ভয় ঢুকে গেলো। কিন্তু তখনি মনে পড়লো হয়তো রিফাত রফিক ভাইয়ের বাসায় যেতে পারে। আমিও তাড়াতাড়ি গেলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। রিফাত বর্না আপুর সাথে বসে দুষ্টুমি করছে। আমাকে দেখে বর্না আপু বললো

বর্না আপুঃ কি ব্যাপার নীল তুমি?

আমিঃ আসলে আপু রিফাতকে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

বর্ন আপুঃ আচ্ছা৷ তুমি তো অনেক দেরি করে উঠলে। রিফাত অনেক আগে উঠেছে। ওর ক্ষুধা লেগেছিলো কিন্তু তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে তাই ও আমাদের এখানে চলে এসেছে। আমি ওকে খাইয়ে দিয়েছি।

আমিঃ তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে দিলাম আপু

বর্না আপুঃ এক থাপ্পড় দিবো। রিফাতকে আমি সব সময় নিজের ছেলের চোখে দেখি। ওর জন্য সামান্য কাজটুকু করতে আমার কষ্ট হবে? আমাকে মনেহয় তুমি আপন ভাবতে পারোনা।

আমিঃ আরে আপু এরকম ভাবে বলছো কেনো? আমিতো ভেবেছিলাম তোমাদের ঘুম থেকে জাগিয়েছে তাই বললাম।

বর্না আপুঃ ঘুম থেকে জাগালেই বা কি সমস্যা?

আমিঃ আচ্ছা বাদ দাও তো। রফিক ভাই কই?

বর্না আপুঃ ও তো বাইরে গেলো বাজার করতে। আজকে দুপুরে একটু ভালো খাবার রান্না করবো তাই মাংস আর দই আনতে পাঠিয়েছি।

আমিঃ তাহলে আজকে অনেক মজা হবে৷

বর্না আপুঃ এখন খেয়ে নাও। আমরা খেয়ে নিয়েছি। মা এখনও খাইনি তুমি ওনাকে সাথে নিয়ে খেয়ে নাও।

আমিঃ আচ্ছা। আন্টি কই?

বর্না আপুঃ ঘরে আছে। তুমি টেবিলে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।

আমি গিয়ে টেবিলে বসলাম। একটু পর আন্টি আসলো।

আন্টিঃ বাবা আজকে এতো দেরি করে খেতে আসলে কেনো?

আমিঃ আসলে আন্টি উঠতে দেরি হয়ে গেছে তাই আজকে দেরি হলো।

আন্টিঃ বাবা আর কতোদিন এভাবে বসে থাকবে? একটা বিয়ে করে নাও।

আমিঃ না আন্টি। সৎ মা কোনোদিনও আমার ছেলেকে ভালো রাখতে পারবেনা। এমনিতেই আপনি আছেন, রফিক ভাই আছে আর বর্না আপু আছে সবাই মিলে একসাথে ওকে বড় করবো। আর বাকি জীবনটাও ওকে নিয়ে কাটিয়ে দিবো।

বর্না আপু খাবার নিয়ে আসলো। আমরা খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষ হবার পরই রফিক ভাই আসলো।

রফিক ভাইঃ কিরে তুই এখন খেতে বসেছিস?

আমিঃ কাল রাতে তো তুমিই জাগিয়ে রাখলে আর এখন তুমি জিজ্ঞেস করছো?

রফিক ভাইঃ তা অবশ্য ঠিক। দুপুরে আজকে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে। এখন কোথাও যাবি?

আমিঃ না। এখন আবার কোথায় যাবো?

রফিক ভাইঃ আচ্ছা বিকালে তো কোনো কাজ নাই তোর তাই না?

আমিঃ তুমি জানোনা অফিস ছাড়া আমার আর কোনো কাজ থাকেনা?

রফিক ভাইঃ জানিতো। তাও তো থাকতে পারে তাইনা?

আমিঃ কিছু বলবে?

রফিক ভাইঃ বিকালে ঘুরতে গেলে কেমন হয়?

আমিঃ আইডিয়াটা খারাপ না। ঘুরে আসা যায়। আপু কে বলে দেখো।

রফিক ভাইঃ ও এমনিই রাজি হয়ে যাবে।

আমিঃ তাহলে চলো আজকে ঘুরেই আসি।

রফিক ভাইঃ বিকালে রেডি থাকিস।

আমিঃ আচ্ছা।

আমি আমার ফ্ল্যাটে চলে এলাম৷ রিফাত ওখানেই খেলছে। এখন একটু চঞ্চল হয়েছে। আমি রুমে গিয়ে ফোন টিপছিলাম৷ কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেয়। উঠে দেখি দুপুর হয়ে আসছে। আমি তাড়াতাড়ি গোসল করে রফিক ভাইয়ের সাথে গল্প করত গেলাম। আপু আর আন্টি রান্নার কাজ করছে।

দুপুরে খেতে বসলাম। আমি আপুদের সাথেই খাই। রফিক ভাই আর আন্টি আমাকে রান্না করতে দিবেনা। কি আর করার বিনা কষ্টে খেতে পাচ্ছি এতো ভেবে কি লাভ। খাওয়া শেষ করে রিফাতকে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমি ইউটিউবে ভিডিও দেখে সময় পার করছিলাম। আর ঘুমাবেই বা কতো?

বিকালে উঠে আমি রেডি হয়ে রফিক ভাইদের সাথে ঘুরতে গেলাম। একটা পার্কে এলাম আমরা। অনেকক্ষন ঘুরলাম। দিনটা একটু আনন্দেই কাটলো। কাল থেকে আমার অফিস যেতে হবে।

আজ থেকে আবার অফিস শুরু হলো। অফিসের কেউ জানেনা যে রফিক ভাই আর বর্না আপুর বিয়ে হয়েছে। রফিক ভাই সিনিয়র অফিসার হওয়ায় তাকে অনেক কাজ করতে হয়৷ বর্না আপু নতুন হওয়ায় তার কাজ কম সাথে আমারও। আমরা একে অপরকে সাহায্য করে কাজ করি৷ একসাথেই লাঞ্চ করি আর যাওয়া আসা করি। রফিক ভাই আর বর্না আপু দজনেই আমাকে নিজের ভাই ভাবে।

একদিন অফিসে কাজ করছি। কাজ বেশি না থাকায় আমি বর্না আপুর সাথে কথা বলছিলাম। তখন পিয়ন এসে বললো আমাকে নাকি ম্যাম ডেকেছেন। আমিও গেলাম উনার কেবিনে।

আমিঃ আসবো?

শিলা ম্যামঃ আসো আসো। তা তোমার কাজ কেমন চলছে?

আমিঃ জ্বী ম্যাম ভালোই চলছে।

শিলা ম্যামঃ কাজের পাশাপাশি তো ভালোই মিস বর্নার সাথে তো ভালোই কথা বলো।

আমিঃ কাজ না থাকলে টুকটাক বলি আরকি।

শিলা ম্যামঃ তা তোমাদের মধ্যে কিছু চলছে নাকি?

আমিঃ কি বুঝাতে চাইছেন ম্যাম?

শিলা ম্যামঃ বুঝোনা? প্রেম ভালোবাসা কিছু চলছে নাকি?

আমিঃ ম্যাম উনি আমার বোনের মতো। আমিও ওনাকে নিজের বোনের মতোই মনে করি। তার চেয়ে বড় কথা উনি রফিক ভাইয়ের সহধর্মিণী। আমি উনাকে নিজের বোনের চোখে দেখি আর উনিও আমাকে নিজের ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে।

শিলা ম্যামঃ কিহহ? রফিক সাহেব বিয়ে করেছেন? কই কাউকে তো কিছু বলেনি?

আমিঃ ম্যাম পার্সোনাল কিছু ইস্যু ছিলো তাই কাউকে বলা হয়নি।

শিলা ম্যামঃ বিয়ের কয়দিন হলো?

আমিঃ বেশি না কয়েকদিন মাত্র।

শিলা ম্যামঃ এবার বুঝলাম তাদের একসাথে ছুটি নেওয়ার কারণ।

আমিঃ ঠিক ভাবছেন। বিয়ের জন্যই উনি ছুটি নিয়েছেন।

শিলা ম্যামঃ সরি আমি অন্য কিছু ভাবছিলাম। কিছু মনে করবেন না।

আমিঃ ম্যাম কিছু কাজ আছে?

শিলা ম্যামঃ না। এখন যেতে পারো।

আমি ম্যামের কেবিন থেকে চলে এলাম৷ অফিস শেষ করে আমি একটু মার্কেট গেলাম৷ আমার আর রিফাতের জন্য কিছু জামা কাপড় কিনতে হবে৷ আমি রফিক ভাইকে বলেছি যাতে রিফাতকে নিয়ে চলে যায় বাড়ি।

মার্কেটে গিয়ে অফিসের জন্য নতুন পোশাক, জুতা আর যাবতীয় কিছু জিনিস কিনলাম। রিফাতের জন্য টি-শার্ট, প্যান্ট কিলনাম সাথে ওর জন্য কিছু চকলেট নিলাম।

মার্কেট থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগলো। আমি ওনাকে সরি বলতে যাবো তখনি ওনার দিকে চোখ পড়লো। আমি তো তাকে দেখে অবাক। এটাতো তৃপ্তি। পাশে একজন সুদর্শন ছেলে আছে আমার বয়সি হবে।

তৃপ্তিঃ সরি ভাইয়া আমি দেখতে পাইনি।

ছেলেটা আমাকে আমার জিনিসগুলো তুলে দিলো। আসলে আমাকে চিনতে না পারার কারণ এখহ আমি দাড়ি বড় আছে।

ছেলেটাঃ সরি ভাইয়া। কিছু মনে করবেন না।

আমিঃ কিছু মনে করবোনা মানে? দেখে চলতে পারেন না? ( একটু নাটক করছি)

তৃপ্তিঃ আর অন্যমনস্ক্য হয়ে থাকবোনা। প্লিজ ক্ষমা করে দিন।

আমিঃ ক্ষমা করতে পারি তবে আমার থেকে কফি খেলা হবে।

তৃপ্তিঃ এটা কেমন কথা ভাইয়া ভুল করলাম আমি আর আপনি কফি খাওয়াবেন?

আমিঃ তুমি আমাকে চিনতে পারোনি তৃপ্তি?

তৃপ্তিঃ আপনি আমার নাম কিভাবে জানলেন?( অবাক হয়ে)

আমিঃ এখন তো ডাক্তার হয়ে গিয়েছো। এখন কিভাবে এই এতিমকে চিনবে। ( একটু ন্যাকামু করে)

তৃপ্তিঃ ওয়েট ওয়েট তুমি নীল?

আমিঃ তাহলে এতোক্ষণে চিনতে পারলে?

তৃপ্তিঃ এতোদিন পর তোমাকে দেখে চিনতে পারিনি৷ কি হাল করেছো নিজের?

আমিঃ কি করবো বলো গুছিয়ে দেওয়ার মানুষটাউ তো আর নেই।

ছেলেটাঃ তৃপ্তি তুমি ইনাকে চিনো?

তৃপ্তিঃ আরে এটাই তো নীল যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।

ছেলেটাঃ আপনি তাহলে নীল? তৃপ্তির মুখে অনেকবার আপনার কথা শুনেছি। তা কেমন আছেন আপনি?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া চলছে কোনো রকমে। আপনি কেমন আছেন?

ছেকেটাঃ আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।

তৃপ্তিঃ নীল ইনি আমার হাসবেন্ড আকাশ শিকদার।

আমিঃ বুঝতে পেরেছি আমি৷ চলুন ভাইয়া কফি খেয়ে আসি।

ওদের নিয়ে একটা কফিশপে গেলাম। কফি খেতে খেতে কথা বলছি

তৃপ্তিঃ তা তুমি ঢাকা কখন এলে?

আমিঃ হলো কয়েক মাস মতো। তোমার তো রংপুরে থাকার কথা।

তৃপ্তিঃ আসলে রাকিবের পোস্টিং তো ঢাকাতে হয়েছিল তাই আমিও ঢাকাতে চলে এসেছি। গত বছর বিয়ে করেছি।

আমিঃ ওহ। আদিবার কথা জানো?.

তৃপ্তিঃ তুমি চলে আসার পর ওরা অনেক খুজেছে তোমাকে। কিন্তু তোমাকে পাইনি। আর ফোনও বন্ধ পেয়েছে।

আমিঃ আসলে আমি সিম পরিবর্তন করে নিয়েছিলাম।

তৃপ্তিঃ আচ্ছা তোমার নম্বটা দাও তো।

আমিঃ ০১৭৩৮******।

তৃপ্তিঃ আচ্ছা নীল আজকে আসি তাহলে। পরে আবার কথা হবে।

আমিঃ আচ্ছা। ভাইয়া আবার দেখা হবে।

রাকিবঃ আচ্ছা। ভালো থাকবেন।

অনেকদিন পর দেখে ভালোই লাগলো। জানি শিলার কথা তুলেনি কারণ আমি কষ্ট পেতে পারি ভেবে। আমি বাড়ি ফিরে এলাম।

এভাবেই ২ মাস পার হলো। আজকে ডেস্কে বসে একা কাজ করছিলাম৷ একটু পরে ম্যাম আমাদের সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন

ম্যামঃ আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সবাই একটু আমার কথায় ফোকাস করুন।

আমরা সকালে কাজ ফেলে ম্যামের দিকে কথায় কান দিলাম

ম্যামঃ আপনাদের সকলের উদ্দেশ্য আমি বলতে চাই সামনে সপ্তাহে আমাদের অফিস থেকে বক্সবাজারের ৫ দিনের ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা যেতে আগ্রহী তারা কালকের মধ্যে কনফার্ম করবেন। আর ফ্যামিলি এলাও না। জাস্ট অফিসের মেম্বাররা এলাউড। আশা করি কালকের মধ্যে সবাই জানিয়ে দিবেন।

সবাই খুশি হলেও আমি, রফিক ভাই, বর্না আপু খুশি হতে পারলাম না। কারণ ফ্যামিলি এলাউ না হলে আমি আমার ছেলেকে নিতে পারবোনা৷ আর রফিক ভাই তার শাশুড়ীকে নিতে পারবেন না। মনে মনে এখনি ঠিক হয়ে গেলো আমাদের যাওয়া হবেনা।

অফিস শেষে বাসায় এলাম৷ খাওয়া শেষে রফিক ভাই বললেন

রফিক ভাইঃ নীল তুই কি ট্যুরে যাবি?

আমিঃ ফ্যামিলি যেহেতু এলাউ না তাহলে যাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।

রফিক ভাইঃ হ্যারে। আমি তো মাকে রেখে কোনো মতেই যেতে পারবোনা।

আমিঃ আর তোমরা না গেলে আমিও যাবোনা৷

রফিক ভাইঃ ভালোই হবে এই কদিন ছুটি কাটাতে পারবো।

আমিঃ হুম। জমিয়ে আড্ডা দিতে পারবো।

রাতটা পার করে আজকে অফিস গেলাম। বিকালের মধ্যে সবাইকে জানাতে হবে৷ আমি এসে কাজই করছিলাম। তখন আবার ম্যামের ডাক পড়লো

আমিঃ আসবো?

ম্যামঃ আসো। তা তুমি তো কিছু বললেনা।

আমিঃ আমার যাওয়া হবেনা ম্যাম। আমি আমার ছেলেকে রেখে যেতে পারবোনা।

ম্যামঃ সাথে নিয়ে নাও। সমস্যা কি?

আমিঃ তারপরও যেতে পারবোনা। রফিক ভাইও যাবেনা আর বর্ণা আপুও যাবেনা৷ ওরা না গেলে আমিও যাবোনা।

ম্যামঃ ওনারা যাবেননা কেনো?

আমিঃ কারণ বর্ণা আপুর মাকে একা রেখে যেতে পারবেন না তারা।

ম্যামঃ আচ্ছা কি আর বলবো তাহলে।

মনটা খারাপ হলো আমার। কারণ প্রথম বার কোথাও ঘুরার সুযোগ পেলেও হাতছাড়া হয়ে গেলো।
আমি ডেস্কে ফিরে এসে কাজে মন দিলাম। একটু পর একটা আননোন নম্বর থেকে কল আসলো। আমি পিক করলাম

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?

ওপাশ থেকেঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি তৃপ্তি বলছি।

আমিঃ আচ্ছা তা কেমন আছো?

তৃপ্তিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা আজকে অফিস শেষে দেখা করতে পারবা?

আমিঃ হুম। কোথায় আসতে হবে?

তৃপ্তিঃ সেন্ট্রাল পার্কের পাশে ” lovers cafe” তে চলে আসবা তাহলে।

আমিঃ আচ্ছা আমি চলে আসবো।

একটু পর অফিস শেষ হলো। আমি রফিক ভাইকে বলে দিলাম যাতে রিফাতকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। আর আমি তৃপ্তির দেওয়া ঠিকানায় গেলাম।

১৫ মিনিট লাগলো পৌছাতে। ক্যাফে খুজে পেতেও কোনো সমস্যা হয়নি। আমি ক্যাফেতে প্রবেশ করে ওদের খুজছিলাম। একটু পর ওদের দেখলাম। তবে উল্টো দিকে ফিরে ওদের সাথে আরও দুইজন বসে আছে। আমি গিয়ে ওদের হ্যালো বলতেই উল্টো দিকে চেয়ে থাকা দুইজন আমার দিকে ফিরে তাকালো।

তবে ওদের দেখে আমি অনেক বেশি অবাক হলাম। আমি ওদের আমি এখানে দেখবো তা আশা করিনি। কারণ আমি যাদের দেখলাম তারা হলো……………

চলবে…………………..

আড়ালে তুমি পর্ব – ৬

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৬
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

আমি শিলার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম।আমার পাঁ হাত যেনো অবশ হয়ে গেছে। আমি তার কথার কি উত্তর দিবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। কারণ শিলা যা বলেছিলো

শিলাঃ দেখো নীল আমি আজকে ঘুরিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা। আমি সোজাসুজি বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই প্রথম দেখার পর থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলামনা। তবে আমার আবেগ না বিবেক খাটিয়ে সব করা লাগবে। তারপরও আমিও তো ওকে ভালোবাসি। কিন্তু ওকে কিভাবে বুঝাব আমার মতো পরিচয়হীনকে ওদের পরিবারের কেউ মেনে নিবেনা।

আমিঃ শিলা দেখো এটা হয়না। আমার কোনো পরিচয় নেই। তাছাড়া কেবল অনার্স ১ম বর্ষে উঠলাম৷ ক্যারিয়ার ঠিক করতে পারলে একটা কথা ছিলো। কিন্তু আমার তো ক্যারিয়ারের কিছুই হয়নি৷ আর সবচেয়ে বড় কথা কোন পরিচয়ে তোমাকে ভালোবাসবো বলো?

শিলাঃ আমাকে তুমি তোমার পরিচয়ে ভালোবাসবে। তুমি কেনো বুঝতে পারোনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিসের জন্য তোমার এতো কেয়ার করি আমি? কিসের জন্য আমি কারও সাথে কথা বলিনা? কিসের জন্য কোনো মেয়ের সাথে তোমাকে কথা বলতে দেইনা? তুমি কি একটুও বোঝার চেষ্টা করোনা? আমি শুধু তোমার পরিচয়ে থাকতে চাই। তোমাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।

আমিঃ তোমার বাবাকে যদি একথা বলো তোমার বাবা একটাই কথা বলবে যে আমি সম্পদের লোভে পড়ে তোমাকে ফাসাচ্ছি। কিন্তু সেই মিথ্যা অপবাদ আমি সহ্য করতে পারবোনা। এমনিতেই তুমি আমার জন্য যা করেছো তার জন্য আমি জীবন দিয়ে দিতে পারি। তবে আমাদের ভালোবাসা কেউ মেনে নিবেনা। জানো আমিও না তোমাকো অনেক বেশি ভালোবাসি। তবে আমাদের এই ভালোবাসার কোনো ভবিষ্যৎ নেই শুধু কষ্ট ছাড়া।

শিলাঃ তুমি আমাকে ভালোবাসো আগে বলোনি কেনো?

আমিঃ বামন হয়ে কিভাবে চাঁদের দিকে হাত বাড়াবো বলো?

শিলাঃ তুমি আমাকে ভালোবাসার সুযোগ দাও আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তবে যদি তোমার বাবা এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে মেনে না নেয় তখন?

শিলাঃ ওটা আমি ম্যানেজ করবো।

আমিঃ আমিও যে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। জানিনা তোমাকে ছাড়া আমার কি হবে তবে তোমাকে আমি ভালোবাসি।

শিলাঃ আমিও তোমাকে ভালোবাসি। অনে বেশি। তোমার থেকে ২ গুন বেশি। ( জড়িয়ে ধরে)

এভাবেই শুরু হয়েছিলো আমার আর শিলার ভালোবাসা। জানিনা মেয়েটা আমার মাঝে কি পেয়েছিলো তবে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। আগে কেয়ার করতো এখন আরও বেশি কেয়ার করে। আমিও তার এই পাগলামির মাঝে গভীর ভালোবাসা খুজে পেতাম।

এভাবেই ১ম বর্ষ শেষ করলাম। তবে আমাদের এই ভালোবাসা যে অন্য এক মোড় নিবে তা বুঝিনি। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। তবে ১ম বর্ষে উঠার কিছুদিন পর ঠিক সেইদিনের মতো শিলা আমাকে ডেকে পাঠায় যেদিন আমাদের ভালোবাসা শুরু হয়। আমি গিয়ে দেখি ও একা বসে আছে।

আমিঃ শিলা

শিলা আমার দিকে ফিরেতই দেখি ওর চোখগুলো রক্তলাল হয়ে আছে। সাথে চোখগুলো ফুলে আছে। আমি তাকে দেখে অনেক বেশি ঘাবরে গেলাম

আমিঃ কি হয়েছে শিলা? তুমি কাঁদছো কেনো?

শিলাঃ নীল আমার বাবা আমাকে না জানিয়েই তার বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। ( ফুঁপিয়ে কান্না করছে)

আমি কি বলবো তখন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।সেইদিন যেমন আমি শক পেয়েছিলাম, আজেও শক পেলাম। তবে আজকের শক আমার হৃদয়ে আঘাত করলো। মনে হাজার কষ্ট চাপা দিয়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম

আমিঃ ওহ। তা তুমি কি রাজি?

শিলা এবার আমাকে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।

শিলাঃ এতোদিনে এই চিনলে আমাকে? আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কারও হবো এটা তুমি ভাবলে কিভাবে? এই ভাবার আগেও আমি আত্মহত্যা করবো। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।

আমিঃ কিন্তু তোমার বাবা তো তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে

শিলাঃ ঠিক করলেই বিয়ে করতে হবে? আমি পারবোনা।

আমিঃ তাহলে কি করবে বলো?

শিলাঃ আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নীল।

আমিঃ কি সিদ্ধান্ত?

শিলাঃ আমি আর তুমি এই মূহুর্তেই কাজি অফিস গিয়ে বিয়ে করবো।

আমিঃ কি বলছো তুমি? তোমার মাথা ঠিক আছে?

শিলাঃ হ্যাঁ আমার মাথা ঠিক আছে। আর তুমি এখম আমার সাথে যাবা এটাই ফাইনাল।

আমিঃ আমি পারবোনা এই কাজ করতে।

শিলাঃ ও আচ্ছা তাহলে ৭ দিন পর আমার বিয়ে। বিয়ের দিন আমার জানাযা পড়তে চলে এসো।

কথাটা বলেই ও দৌড়ে চলে গেলো। আমি ওকে অনেকবার ডাকলেও ও আর ফিরে তাকালোনা। আমি যানি ও যেটা বললো সেটাই করবে তাই আমার অনেক ভয় হতে লাগলো। আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমি ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবোনা৷ তবে ওকে নিয়ে ওকে ভালো রাখতেও পারবোনা। রুমে এসে কান্না করছি। তখন দেখলাম আদিবা ফোন দিয়েছে

আমিঃহ্যাঁ আদিবা বলো।

আদিবাঃ কি বলবো তোমাকো? তুমিকে ওকে ফিরিয়ে দিলো কেনো?

আমিঃ আমি কি করবো বলো? আমি নিজেই কোনো রকমে দিন কাটাই। ওকে কিভাবে ভালো রাখবো? তাছাড়া ও বিলাসিতার জীবন ছেড়ে বস্তিতে থাকতে পারবেনা।

আদিবাঃ তুমি কোনোদিন ওকে বিলাসিতা করতে দেখেছো? ও যদি তোমার সাথে ভালো থাকে তাহলে ওকে মেনে নিতে তোমার সমস্যা কি?

আমিঃ দেখো তুমি বুঝতে পারছোনা।

আদিবাঃ আমি সব বুঝছি। তুমি কি চাও বলো তো? ও তোমার সাথে খুশি থাকবে নাকি নিজেকে শেষ করে দিবে?

আমিঃ আমি ওর সুখের জন্যই পিছনে ফিরে যাচ্ছি। ওকে ছাড়া আমিও ভালো থাকতে পারবোনা। তবে আমি তো শিকলে বাধা।

আদিবাঃ আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা৷ তুমি কালকে ওকে কাজী অফিসে বিয়ে করবে আর নাহয় ওর মৃত্যুর জন্য দায়ি থাকবে।

আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো। আমি বুঝতে পারছিনা কিছুই। তবে ওকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবোনা এটা আমি বুঝে গেছি। আচ্ছা শিলাতো আমার জন্য অনেক কিছু করেছে এবার নাহয় আমি ওর জন্য এতটুকু করি? ডিসিশন ফাইনাল ওকে আমি কালকেই বিয়ে করবো

আমি আর কোনো কিছু চিন্তা না করেই শিলাকে ফোন করলাম। প্রথমবার ও কল রিসিভ করলোনা।তারপর কল দিতে সাথে সাথে রিসিভ করলো।

আমিঃ শিলা।

শিলাঃ চুপ করে কাঁদছে

আমিঃ আমি রাজি।

শিলার যেতো দেহে প্রাণ ফিরে এসেছে। ওর এবার বলে উঠলো

শিলাঃ সত্যি? সত্যি বলছো?

আমিঃ হ্যাঁ। আমিও যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। তবে আমার সাথে থাকতে হলে তোমাকে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

শিলাঃ কি রকম?

আমিঃ আমি তোমাকে আলিশান বাড়িতে রাখতে পারবোনা। আমার সাথে ছোট বাড়িতে থাকতে হবে৷ তিন বেলা মাছ মাংস খেতে খাওয়াতে পারবোনা, বেশিরভাগ সময় ডাল ভাত খেতে হবে। আমি দামি পোশাক কিনে দিতে পারবোনা। এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারবে?

শিলাঃ তোমার জন্য এতটুকু করতে পারবোনা? শুধু আমাকে ভালোবাসা দিও তাহলেই হবে।

আমিঃ তাহলে কাল সকাল ১০ টায় কাজি অফিস চলে আসবে। ও হ্যাঁ সাক্ষী ও লাগবে তো?

শিলাঃ ওটা নিয়ে তুমি টেনসন করিও না। তুমি কাল সময় মতো চলে আসবে

আমিঃ আচ্ছা।

জানিনা কি হবে পরে তবে ওকে নিজের করে পাওয়াটাই এখন আমার লক্ষ। পরের দিন সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে আমি কাজি অফিসে হাজির। এখনও ওরা আসছেনা। ১০ টা পেরিয়ে ১০ঃ৩০ বেজে গেলো তাও এলোনা। তবে এসব ভাবতে ভাবতেই একটা কার প্রবেশ করলো। দেখি ভিতর থেকে শিলা, আদিবা আর ওর হাসবেন্ড সাথে তৃপ্তি ও আছে। আমি এদের সবাইকে দেখে অনেক অবাক হয়েছি। ওরা আমার কাছে আসলো।

আমিঃ তোমরা সবাই এখানে?

আদিবাঃ কেনো আমাদের ব বান্ধবীর বিয়ে আর আমরা আসবোনা?

আমিঃ তুমি তো পাশেই আছো। কিন্তু তৃপ্তি?

তৃপ্তিঃ বারে বান্ধবীর বিয়ে আর আমি আসবোনা? পড়াশোনা তো পরেও করতে পারবো তবে বান্ধবীর বিয়ে তো আর বারবার আসবেনা।

নাহিদ ভাইঃ আরে ভাই কথা পরে বলা যাবে আগে চলে শুভ কাজটা শেষ করে দ। ( নাহিদ ভাই হলো আদিবার হাসবেন্ড)

তারপর সবাই মিলে কাজি অফিসে ঢুকলাম। আদিবা আজকেও সাধারণ লুকেই এসেছে। যাইহোক সব ঝামেলা শেষ করে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। সবাই মিলে একটু হালকা খাবার খেয়ে নিলাম। শিলা আমার হাত ধরে আছে। একটু পর আমাকে নাহিদ ভাই আড়ালে নিয়ে এলেন

নাহিদ ভাইঃ দেখো নীল তোমাদের বিয়েটা যেভাবে হলো তাতে একটু সমস্যা হতেই পারে। তবে মানিয়ে নিও। একটু কথা শুনতে হলে শুনে নিও৷ শিলা আপু তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আর বড় ভাই হিসেবে তোমাকে একটা কথা বলবো?

আমিঃ ভাই আপনি অনুমতি নিচ্ছেন কেনো? বললেন তো বড় ভাই। বড় ভাই আবার অনুমতি নেয়?

নাহিদ ভাইঃ শোনো তোমার সংসারে যদি কোনো সমস্যা হয় মানে আর্থিক সমস্যা তবে তুমি বিনা সংকোচে আমাকে বলবে। একজন বড় ভাই হিসেবে আমি তোমাকে কথাগুলো বললাম।

আমিঃ আপনি আমাদের জন্য যা করলেন তাতেই তো আপনার কাছে ঋণি হয়ে গেলাম। তারপরও যখন আপনি আমাকে ভাই বলেছেন তার জন্য আমিও আপনার কথাটা রাখবো। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই জানাবো আপনাকে।

আসলে মানুষটা অনেক ভালো আর সহজ সরল৷ এরকম মানুষ পাওয়া সত্যি অনেক দুর্লভ। আমার জন্য এতো কিছু করেও তিনি আমাকে ভাই বললেন।

যাইহোক বিয়ে তো হলো এখন? দেখি শিলাকে জিজ্ঞেস করে ও কি বলে।

আমিঃ শিলা এখম আমরা থাকবো কোথায়?

শিলাঃ এখন আমরা বাবার কাছে যাবো। যদি তিনি সবটা মেনে নেন তাহলে আমাদের আর কোনো সমস্যা থাকবেনা৷ তবে না মানলে আমার একাউন্টে কিছু টাকা আছে ওটা দিয়ে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে আমরা সংসার সাজাবো।

আমিঃ সারাজীবন আমাকে এভাবে ভালোবাসবে তো?

শিলাঃ পাগল একটা। তুমি এখন আমার সব৷ মরণ ছাড়া আমি তোমাকে ছাড়ছিনা।

আমরা একটু পর ওদের বাসায় গেলাম৷ বাইরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি তবে ভিতরে ঢুকার সাহস হচ্ছেনা। আগ বাড়িয়ে শিলা বেল বাজালো। একটু পর ওর মা দরজা খুলে দিলো।

শিলার মাঃ কিরে শিলা এই ছেলেটা কে?

শিলাঃ মা এটা তোমার জামাই। আমরা আজকে বিয়ে করে নিয়েছি?

শিলার মাঃ এটা তুই কি করলি শিলা? সামনে সপ্তাহে তোর বিয়ে আর তুই এসব কি করে বসলি?

শিলাঃ মা আমি ওকে ভালোবাসি আর ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারতাম না। তাই আজকে বিয়ে করে নিয়েছি।

শিলার মাঃ তোর বাবা বাড়িতেই আছে তোর কথা শুনলে যে কি করবে ও আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।

এমন সময় শিলার বাবা পিছন থেকে বলে উঠলেন।

শিলার বাবাঃ এই কার সাথে কথা বলছো তুমি? ও শিলা তুই এসেছিস? বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেনো?

শিলাঃ ( চুপ করে মাথা নিচু করে আছে)

শিলার বাবাঃ কি ব্যাপার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছিস যে? আর এই ছেলেটা কে?

শিলাঃ ববব বাবা ওওও ততত তোমার জামাই। আমরা আজকে বিয়ে করেছি।( তোতলাতে তোতলাতে বললো)

শিলার বাবাঃ বিয়ে করেছিস মানে? এটা কোন ধরনের ফাজলামি শিলা? ( রেগে)

শিলাঃ বাবা আমি সত্যি ওকে বিয়ে করে নিয়েছি।

শিলার মাঃ দেখো তুমি শান্ত হও। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো।

শিলার বাবাঃ ৬ দিন বাদে তোর বিয়ে আর আজকে এসব কি নাটক শুরু করেছিস? ( চিৎকার করে)

শিলাঃ বাবা আমি ওকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি আর কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।

শিলার বাবাঃ এই দিন দেখার জন্য তোকে বড় করলাম? আমার মান সম্মানের কথা না ভেবেই তুই কাজটা করে বসলি? আমি এখন ওদের কি জবাব দিবো আমি? আর এই ছেলে কে তুমি?

আমিঃ চুপ

শিলার বাবাঃ এই তোমার মুখে কথা নাই? চুপ করে আছো কেনো বলো? ( রাগে চিৎকার করে)

আমিঃ আমি শাহরিয়ার কবির নীল।

শিলার বাবাঃ তোমার নাম দিয়ে আমি ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবো? তোমার পরিচয় দাও।

আমিঃ চুপ

শিলাঃ বাবা ও আমার সাথে পড়ে।

শিলার বাবাঃ তার মানে একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করলি? একটুও বিবেকে বাধা দিলোনা? নাকি আমার সম্পদ পাবার জন্য তোকে ফাসিয়েছে?

শিলাঃ বাবা আমাদের সম্পদের প্রতি ওর কোনো লোভ নেই।

শিলার বাবাঃ তোমার মা বাবা কি করে?

শিলাঃ ওর মা বাবা কেউ নেই।

শিলার বাবাঃ নেই মানে? শেষ পর্যন্ত তুই একটা এতিমের ফাঁদে পাঁ দিলি? যার কিনা পরিচয় নাই তাকে বিয়ে করলি? আমি এই বিয়ে কিছুতেই মেনে নিবোনা। শিলা তুই ঘরে আই। আর এই ছেলে চলে যাও আর কখনও ওর ধারের কাছে আসবেনা। আমি তোদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি।

শিলাঃ না বাবা আমি নীলকে ছাড়তে পারবোনা। ওকে ছাড়ার কথা বললে আমি নিজের জীবন দিয়ে দিবো।

শিলার বাবাঃ তাহলে আমার বাড়িতে আজ থেকে তোর কোনো জায়গা নেই৷ চলে যা যেদিকে তোর দুই চোখ যায়। তুই আজ থেকে আমার কাছে মৃত।

শিলার মাঃ কি বলছো এসব? ভুল করে কাজটা করে ফেলেছে। তুমি ওদের মেনে নাও প্লিজ

শিলার বাবাঃ আমার শেষ কথা ও যদি এই বাড়িতে থাকে তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। আজকে এখন আর এই মুহূর্তে আমি ওকে তাজ্য পুত্রি করলাম।

শিলা মাথা নিচু করে কান্না করছে। শিলার মা বার বার শিলার বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। তবে তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটুট। শিলার মা এখন চাইলেও আর কিছু করতে পারবেনা। একটু পর শিলা বললো

শিলাঃ বাবা তুমি না সব সময় বলতে আমার সুখই তোমার জন্য সব? তাহলে আজ কেনো আমার সুখের দিকে দেখলেনা? আমি চলে যাচ্ছি বাবা। আর কোনোদিন আসবোনা৷ তবে আমার জন্য দোয়া করবে। মা তুমি বাবার খেয়াল রাখবে। আমি আমার স্বামীকে ছাড়তে পারলাম না। চলে গেলাম বাবা ভালো থাকবে। ( কাঁদতে কাঁদতে বললো)

শিলা চলে আসার সময় ওকে ওর মা আটকানোর অনেক চেষ্টা করলো। তবে সব কিছুতেই তিনি ব্যর্থ হলেন। আমরাও সেখান থেকে চলে এলাম। বাসা থেকে বের হয়ে এসে আমি শিলাকে বললাম

আমিঃ শিলা তুমি আমার জন্য কোনো সবকিছু ছেড়ে দিলে? আজ আমার নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে।

শিলাঃ পাগল তুমি এখন আমার স্বামী তোমাকে কিবাবে ছাড়ব আমি বলো? বাবার রাগ কমলে বাবা ঠিকই আমাদের মেনে নিবেন। মা অবশ্যই চেষ্টা করবে বাবাকে মানানোর।

আমিঃ জানিনা আমি তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারবো কিনা তবে মরার আগ পর্যন্ত তোমার দুটি হাত আমি ছাড়বোনা।

শিলাঃ এতেই আমার সুখ। আচ্ছা চলো একটা বাসা খুজতে হবে। আর সংসারের জন্য জিনিসপত্র কিনতে হবে। চলো আমরা তাড়াতাড়ি সব কিছু খুজে নেই। আর টাকা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। আমার কাছে ৩ লক্ষ টাকা আছে। এই দিয়েই অনেকদিন চলে যাবে। আর পড়াশোনা শেষ করে আমরা চাকরি করবো।

আমি কিছু বললাম না শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ওর ভিতরটা যে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছি। তবে তাও ও হাসিমুখে সব বলছে।

দুপুরে একটা হোটেলে খেয়ে বাসা খুজতে লাগলাম। বিকালের দিকে একটা বাসা পেলাম ভার্সিটি থেকে একটু দূরে। ভাড়া ৬০০০ টাকা। দুটো রুম, একটা বাথরুম আর রান্না ঘর। রাতের মধ্যে দুটো খাট নিয়ে আপাতত রাতটা পার করার মতো একটা ব্যবস্থা করলাম। আজকে আমাদের বাসর রাত হলেও কিছুই করা হয়নি।

পরেরদিন সকালে আদিবা, নাহিদ ভাই হাজির। সংসারের জন্য যা যা লাগে সব কিছু সেট করে দিলেন উনি। আমরা ছোট করে আমাদের সংসারটা গুছিয়ে নিলাম। রাতে আদিবা আর নাহিদ ভাই আমাদের বাসর সাজালেন। রাত ১০ টায় ওনারা আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলেন৷ আমি মেইন দরজা লাগিয়ে রুমে গেলাম৷ দেখি শিলা বিছানার উপর ঘোমরা দিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে উঠে এসে সালাম করতে যাবে তার আগেই আমি ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম

আমিঃ তুমি সবসময় আমার বুকে থাকবে পাঁয়ে নয়।

শিলাঃ আমি সব সময় তোমার বুকটাতেই থাকতে চাই৷

আমিঃ আচ্ছা ওযু আছে তোমার?

শিলাঃ হুম।

আমিঃ চলো আমাদের সম্পর্কটাকে নফল নামায দিয়ে শুরু করি।

তারপর আমি ও শিলা নামায পরে ওকে নিয়ে বিছানায় বসলাম। আমি ও হাত দুটো নিজের দখলে নিলাম।

আমিঃ এই হাতদুটো আমি কোনোদিন ছাড়বোনা প্রীয় কথা দিলাম তোমাকে।

শিলাঃ আমিও কথা দিলাম এভাবেই তোমার কাছে নিজেকে আবদ্ধ রাখবো।

আমিঃ চলো ঘুমিয়ে পড়ি তুমি অনেক ক্লান্ত।

শিলাঃ আজকে আমাদের বাসর রাত আর তুমি ঘুমানোর কথা বলছো?

আমিঃ তো কি করবো?

শিলাঃ আমি এখন তোমার পরিপূর্ণ ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই।

আমিঃ আজকে না হলে হয়না?

শিলা আর আমাকে একটা শব্দ করার সুযোগ না দিয়েই আমাকে ভালোবাসার পরশ দিতে লাগলো। আমিও ওকে সেদিন নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে ছিলাম৷

পরদিন সকালে উঠে দেখি ও আমার পাশে নেই৷ ওকে ডাক দিতেই দেখি ও শাড়ি পড়ে চুল মুছতে মুছতে ভিতরে এলো

শিলাঃ তুমি উঠে গিয়েছো? যাও গোসল করে নাও।আমি খাবার রেডি করছি।

আমিঃ আগে একটা পাপ্পি দিয়ে যাও।

শিলা এসে আমার কপালে একটা পাপ্পি দিলো আর আমি গোসল করে গেলাম। গোসল করে বেরিয়ে রুমে এসে দেখি শিলার নম্বরে একটা মেসেজ এলো। আমি চেক করতে গিয়ে দেখি মেসেজে লিখা

” Your account has been debited 10 lakh taka from ac *********. Your total balance 13 lakh. ”

আমি তো অবাক। কে ওকে এতোগুলো টাকা দিলো? আমি তৎক্ষনাৎ ওকে রুমে ডাকলাম।

শিলাঃ কি হয়েছে গো?

আমিঃ তোমার ফোনে একটা মেসেজ এলো। দেখোতো কিসের।

শিলা দেখলো দেখে একটু মুচকি হাসলো। আমি তখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম

আমিঃ কি ব্যাপার শিলা? এতো টাকা তোমাকে কে দিলো?

শিলাঃ আরে পাগল আমার মা পাঠিয়েছে। আমার যাতে কোনো সমস্যা না হয় তাই তিনি এটা করলেন।

আমিঃ আমার মনেহয় কি ওনাকে একবার ফোন করা দরকার।

শিলাঃ ঠিক বলেছো। আচ্ছা আমি চুলায় মাংস চড়িয়েছি তুমি একটু দেখো গিয়ে আমি কথা বলি।

আমি রান্না ঘরে চলে গেলাম আর শিলা ওর মায়ের সাথে কথা বলছিলো। শিলার মা সবটা মেনে নিলেও ওনার হাসবেন্ডের জন্য কিছু করেতে পারছেন না। ১০ মিনিট পর শিলা আসলো।

আমিঃ মা কি বললেন?

শিলাঃ মা সবটা মেনে নিয়েছেন। মা বললো প্রতিদিন ফোন দিবে আর বাবা দেশের বাইরে গেলে আমাদের এখানে এসে থাকবেন। ( অনেক খুশি হয়ে)

আমিঃ তোমার বাবা ব্যাপারটা মেনে নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

শিলাঃ বাবাও জলদি মেনে নিবেন। আচ্ছা চলো কথা বাদ দিয়ে খেয়ে নিই। তারপর কিছু কিনে নিয়ে আসত হবে।

আমিঃ কি কিনতে হবে আর?

শিলাঃ একটা ফ্রিজ নিবো, একটা মাইক্রোওভেন, ইলেক্ট্রিক চুলা আর জামা একটা ওয়ারড্রব নিবো আর ড্রেসিং নিবো।

আমিঃ এতো কিছুর দরকার আছে?

শিলাঃ হুম। আমার সংসার আমি আমার মতো করে গুছিয়ে নিবো। সাথে তোমাকেও ( একটা হাসি দিয়ে)

আমরা খেয়ে মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনে আনলাম। পরবর্তী দুই দিনে আমাদের ছোট একটা সংসার জীবন শুরু হলো। শিলা এখন আর আমাকে কাজ করতে দেইনা। বিয়ের পর স্বামীরা স্ত্রীর দায়িত্ব নেয় আর আমার ক্ষেত্রে আমার স্ত্রী আমার দায়িত্ব নিলো।

আমরা আবারও আমাদের পড়াশোনা শুরু করলাম। আমরা একসাথে যাই, একসাথে আসি আর সংসাদের সব কাজ দুজন মিলেই করি। এতে আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হলো।

দেখতে দেখতে চলে গেলো ২ মাস৷ আজকে ছুটি তাই বাড়িতেই ছিলাম। দুজনে বসে গল্প করছিলাম। এক পর্যায়ে শিলা বললো

শিলাঃ নীল বাজার থেকে গরুর মাংস, পালাওয়ের চাল, দই নিয়ে আসো তো।

আমিঃ আজকে এতো আয়োজন?

শিলাঃ ছুটির দিন তাই একটু আয়োজন করবো আরকি।

আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি।

আমি বাজার গিয়ে সব কিছু নিয়ে আসলাম। তবে বাড়িতে এসেই দেখি শিলা যেনে কার সাথে কথা বলছে। রুমি গিয়ে দেখি একি এটাতে আমার শাশুড়ী। আমি ব্যাগ গুলো রেখে ওনাকে সালাম করতে গেলাম।

শাশুড়ীঃ আরে বাবা কি করছো তুমি? এসব কেউ করে?

আমিঃ না মা আসলে আপনি তো আমার গুরুজন।

শাশুড়ীঃ তোমাদের দেখে আমি অনেক খুশি হলাম৷ এতো সুন্দর ভাবে তোমরা সবকিছু সাজিয়ে নিয়েছো দেখে অনেক ভালো লাগছে। আমার মেয়ের অন্য কোথাও বিয়ে হলে হয়তো এতোটা সুখে থাকতোনা। বাহ বাড়িটা ছোট হলেও কত সুন্দর ভাবে সাজানো। আমি খুব বেশি খুশি হয়েছি।

আমিঃ আমাদের জন্য দোয়া করবেন মা।

শাশুড়ীঃ পাগল ছেলে। ছেলেমেয়ের জন্য মা দোয়া করবেনা তো কে করবে?

আমিঃ বাবা কি বাইরে গেছেন?

শাশুড়ীঃ হুম ও ১৫ দিনের জন্য দেশের বাইরে গেছে। আমি বাড়ির সব কাজের লোকদের শিখিয়ে দিয়ে এসেছি। কয়েকদিন আমি তোমাদের এই সুখের সংসারে থাকবো। তোমাদের সমস্যা হবেনা তো?

আমিঃ মা আপনি এসব কেনো বলছেন? আমার মা নেই। আপনি যখন আমার মাথায় হাত রাখলেন তখন আমি অনেক খুশি হয়েছি। পারলে আপনাকে আমি এখানেই থেকে যেতে বলতাম।

শাশুড়ীঃ চিন্তা করবেনা সব ঠিক হয়ে যাবে।

শিলাঃ মা তুমি একটু আরাম করো। চলো নীল আমরা গিয়ে রান্না করি।

শাশুড়ীঃ পাগলি মেয়ে আজকে আমি রান্না করবো।

শিলাঃ মা সারাজীবন তো তোমার হাতের রান্না খেয়েছি। আজকে নাহয় তোমাকে খাওয়াই?

শাশুড়ীঃ বাহ আমার মেয়েটাতো অনেক বড় হয়ে গেছে। আচ্ছা মা আজকে আমি আমার মেয়ের হাতের রান্না খাবো।

শিলাঃ তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও

আমি আর শিলা দুজন মিলে রান্না করতে গেলাম। শিলা সব কিছু করে আর আমি ওকে সাহায্য করি। ওকে সবকিছু এগিয়ে দিয়ে আমি একটু রুমে গেলমা। গিয়ে দেখি রুমে একটা টিভি। কিন্তু টিভি কোথা থেকে আসলো? তাও যেই সেই টিভি না Samsung OLED 4k. যেটা কম করে হলেও ৬০ হাজার টাকা হবে। আমি শিলার কাছে গিয়ে বললাম

আমিঃ শিলা এতো দামি টিভি তুমি কিনেছো?

শিলাঃ না মা আসার সময় নিয়ে এসেছে।

আমিঃ এসবের তো দরকার ছিলোনা।

শিলাঃ মা নিয়ে এসেছে মাকে কিভাবে না করি? তাছাড়া ফ্রী টাইমে দুইজন মিলে রোমান্টিক মুভি দেখবো। ( হাসি দিয়ে)

আমিঃ সব তো ঠিক আছে তবে আমাকে জানাও নি কেনো মা আসবে?

শিলাঃ এতোক্ষনে এই কথা বলছো?

আমিঃ কাজের জন্য আর খুশিতে কিছু বলতে পারিনি।

শিলাঃ আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে কিছু বলিনি।

আমিঃ জানো আজ আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি।

শিলাঃ তার জন্যই তো কিছু বলিনি।

রান্না শেষে একসাথে খেতে বসলাম। খাওয়ার সময় দেখলাম আমার শাশুড়ীর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। শিলা ব্যাপারটা দেখে শাশুীকে বললো

শিলাঃ মা কি হয়েছে তোমার? কাদছো কেনো?

শাশুড়ীঃ আমার ছোট মেয়েটা আজ কত বড় হয়ে গেলো। আমাকে রান্না করে খাওয়াচ্ছে। খুব ভালো হয়েছে মা রান্না।

শিলাঃ হয়েছে মা এখন চুপচাপ খেয়ে নাও তো।

খাওয়া শেষে শাশুড়ী আর শিলা অন্যরুমে গিয়ে গল্প করছে আর আমি রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।

১০ দিন কেটে গেলো। আজকে ভার্সিটিতে এসেছি ক্লাস করতে। তবে শিলা আসেনি। ক্লাসের মাঝে দেখি ফোন বাজছে। আমি একবার কাটলে আবার ফোন আসে। জরুরি ভেবে ধরতেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম৷

শিলার ফোন থেকে আমার শাশুড়ী ফোন দিয়েছিলো। তবে ফোন করে তিনি যা বললেন তা শুনে আমার হাত পাঁ কাঁপতে লাগলো। মূহুর্তের মধ্যেই যেনো আমি আমার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলালম। কারণ আমার শাশুড়ী আমাকে যা বললেন…………………….

চলবে……………….

আড়ালে তুমি পর্ব – ৫

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৫
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

সেই অচেনা কন্ঠের ডাকে সমানে মাথা তুলে তাকায়। তাকিয়ে সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপরূপ সুন্দরী। তার চেয়ে বড় কথা সে আমাদের কলেজ টপার। আমার সাথে কথা বলার তার কেনো কারণ দেখিনা৷ ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করলাম

আমিঃ আমাকে বলছেন?

মেয়েটিঃ আপনি ছাড়া আর কেউ আছে এখানে?

আমিঃ কাউকে তো দেখছিনা।

মেয়েটিঃ তাহলে আপনাকেই ডাকছি।

আমিঃ ওহ। কিছু বলবেন?

মেয়েটিঃ আপনি সব সময় এভাবে একা থাকেন কেনো?

আমিঃ আমি তো একাই। যার জীবনে কেউ নেই সে তার তো একাই থাকা ভালো।

মেয়েটিঃ কেনো বন্ধু তো বানাতে পারেন।

আমিঃ বন্ধু বানিয়ে সময় নষ্ট করার মতো সুযোগ আমার নেই

মেয়েটিঃ সব সময় তো দেখি ফ্রী টাইমে নোট করেন তাহলে রেজাল্ট তো টপ হবার কথা?

আমিঃ আচ্ছা আপনি কয়টা প্রাইভেট পড়েন?

মেয়েটিঃ মোট ৬ টা মতো

আমিঃ আমার একটা পড়ারও সামর্থ্য নেই৷ আমি এভাবে যতটুকু পারি নিজে থেকেই করি।

মেয়েটিঃ কেনো পড়তে তো পারেন। পড়লে আরও ভালো করতে পারবেন।

আমিঃ পুরো ক্লাস জানে আমি একটা এতিম। বাবা মায়ের পরিচয় নেই। আপনিও হয়তো জানেন সেটা। তাহলে ভেবে দেখুন আমাকে এতো খরচ কে দিবে?

মেয়েটিঃ তাহলে নিজে চলেন কিভাবে?

আমিঃ টুকটাক কাজ করি।

মেয়েটিঃ আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে পারি?

আমিঃ এটা হয়না। আপনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে আপনি বড়লোক ঘরের মেয়ে। আমার মতো পরিচয়হীনের সাথে বন্ধুত্ব করলে সবাই আপনাকে কথা শুনাবে।

মেয়েটিঃ আমার ২ জন বান্ধবী ছাড়া আমি কারও সাথে কথা বলিনা। আর ওরাও সবার মতো না। আমারা সম সময় চেষ্টা করি সকলকে সম্মান করার। আর আমি বড়লোক হয়েছি বলে বন্ধুত্ব করা যাবেনা?

আমিঃ না।

মেয়েটিঃ কেনো?

আমিঃ আপনার সাথে আমার যাইনা।

মেয়েটিঃ দেখেন হয়তো ভাবতে পারেন আমি ধনী গরিবে কোনো পার্থক্য দেখিনা৷ আমি মনে করি সবাই মানুষ।

আমিঃ ভালো তবুও এটা সম্ভব না। আচ্ছা আমি চলি। মেসে যেতে হবে।

তারপর দিন আবারও মেয়েটা হাজির। আজকে ওর সাথে আরও ২ জন আছে। সেদিনের মতো আজকেও আমার কাছে এসে বললো

মেয়েটাঃ কালকে ওভাবে চলে গেলেন কেনো?

আমিঃ কাজ ছিলো।

মেয়েটাঃ আচ্ছা আমার সাথে বন্ধুত্ব করলে সমস্যা কোথায়?

মেয়ে ১ঃ শুধু এই না আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করে নিন।

মেয়ে ২ঃ হ্যাঁ। বন্ধু হয়ে যান।

আমি কি বলব বুঝছিনা৷ জোর করে বন্ধুত্ব করতে চাইছে৷ আমি ভাবলাম দেখি বন্ধু্ত্ব করে। অন্য কোনো মতলব থাকলে নাহয় দেখা যাবে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আবারও ভেবে নিন। পরে সমস্যা হলে আমার দোষ দিবেন না।

মেয়েটিঃ কোনো সমস্যা হবেনা। যাই হোক আমি সানজিদা পারভিন শিলা।

মেয়ে১ঃ আমি তৃপ্তি বিশ্বাস

মেয়ে ২ঃ আদিবা রহমান।

আমিঃআমি শাহরিয়ার কবির নীল

সবাই একসাথেঃ তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ডস?

আমিঃ আচ্ছা।

শিলাঃ তাহলে আজ থেকে আমাদের সবাইকে তুমি করে বলতে হবে।

আমিঃ আচ্ছা বলবো।

তৃপ্তিঃ আচ্ছা তুমি কিসের জন্য সবার থেকে দূরে থাকো?

আমিঃ জানেন তো আমি এতিম। আমি জানিনা আমার বাবা মায়ের পরিচয়। তারা ছোট থাকতেই আমাকে ফেলে গিয়েছিলো। আমার মতো পরিচয়হীন ছেলে ভালো কলেজে পড়লে তো কথা শুনতে হবেই।

আদিবাঃ তাই বলে তুমি সবাই খোটা মারা কথা মুখ বুজে সহ্য করবে?

আমিঃ তা ছাড়া তো আর উপায় দেখছিনা। সহ্য না করতে পারলে তো টিকে থাকতে পারবোনা।

শিলাঃ যে যা বলার বলুক। কারও কথায় কান দিবেনা৷

আমিঃ কান দেইনা বলেই টিকে আছি।

শিলাঃ আচ্ছা তুমি চাইলে আমাদের সাথে প্রাইভেট পড়তে পারো।

আমিঃ সরি আমার কাছে টাকা নেই। আর সব প্রাইভেটে কোর্স ফি দিতে গেলে প্রায় ৬০ হাজার লাগবে। কোথায় পাবো আমি এতো টাকা?

শিলাঃ তাহলে তাদের রেকর্ডড ক্লাস গুলো তো আমাদের থেকে নিতে পারো। কারণ তারা আমাদের যা পড়ায় তা ভিডিও করে গ্রুপে পোস্ট করে যারা অনলাইন ব্যাচে ভর্তি আছে তার জন্য। আর আমাদের জন্য উন্মুক্ত।

আদিবাঃ হ্যাঁ। বুঝতে অনেক সুবিধা হবে তোমার।

আমিঃ কিন্তু তার জন্য ভালো মোবাইল লাগবে৷ সেটাও তো কিনতে অনেক টাকা লাগবে। আমার কথ বলার মতো একটা ফোন আছে। ওটা দিয়েই চলে।

শিলাঃ আচ্ছা তুমি কি কাজ করো?

আমিঃ আউটসোর্সিং করি।

তৃপ্তিঃ তাহলে তো ভালো ইনকাম করার কথা।

আমিঃ সেজন্য অনেক সময় দিতে হবে। সেদিকে সময় বেশি দিলে আমি পড়বো কখন?

শিলাঃ তোমার জমা করনা?

আমিঃ করি। ৩০ হাজার মতো আছে।

শিলাঃ ১০ হাজার দিয়ে ভালো একটা ফোন কিনে নাও। আর একটা মেমোরি কিনে নাও৷ আমি, আদিবা আর তৃপ্তি তোমাকে ক্লাস গুলো দিয়ে দিবো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তো আর কলেজ করার দরকার হবেনা।

শিলাঃ সপ্তাহে ২ দিন করবা।

আমিঃ আচ্ছা।

শিলাঃ তাহলে কালকে আমরা মার্কেট যাবো। তুমি মোবাইল নিও।

আমিঃ আচ্ছা।

তারপর চলে এলাম৷ যদিও কোনো ইচ্ছা ছিলোনা তবে ভালো রেজাল্ট করার জন্য এতটুকু করতেই পারি। যদিও ওদের সবাই মতোই মনে করেছিলাম তবে তাদের কথাতে বুঝতে পেরেছি ওরা সবার মতো না।

ওহ আগে ওদের সম্পর্কে কিছু বলে দেই। তৃপ্তি আর আদিবা দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। শিলা বাবা একজন ব্যবসিক। সেরাদের মধ্যে না পড়লেও মোটামুটি বড়ই বলা চলে। ভালোই অর্থ সম্পদ আছে। এসব ঘরের ছেলে মেয়েদের অনেক অহংকার থাকে। মানুষকে মানুষ মনে করেনা। তবে শিলা তাদের বিপরীত। কলেজের মধ্যে সবচেয়ে বড়লোক হলেও কোনো অহংকার নেই। চলাফেরা অনেক সাধারণ। হয়তো এই সাধারণ চলাফেরার জন্যই কেউ তার সম্পর্কে জানেনা। নাহলে যদি জানতো তাহলে কুকুড়ের মতো ছেলেরা ওর পিছনে পড়ে থাকতো।

যাইহোক পরেরদিন কলেজ গেলাম৷ ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো।

তৃপ্তিঃ এতো দেরি হলো কেনো?

আমিঃ সকাল সকাল উঠে একটু পড়ছিলাম। কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারিনি। তাই একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।

শিলাঃ আচ্ছা বাদ দাও। আদিবা, তৃপ্তি তাড়াতাড়ি চল।

ওরা নিজেদের তুই করে বলে। আমাকে তুমি করে বলে আর আমিও তুমি করে বলি। ক্লাস শেষ করে আমাকে নিয়ে ওরা একটা মোবাইল মার্কেট নিয়ে গেলো। তারপর সবচেয়ে বড় দোকানটাই আমাকে নিয়ে গিলো। আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। আগে এতো বড় মোবাইল শপ দেখিনি। এর মাঝেই দেখলাম দোকানদার একটা ফোন আনবক্স করছে। তারপর সব সেটিং করে দিলো। দোকানে আসার পর আমি একটা কথাও বলিনি। সব ওরাই করে যাচ্ছে। একটু পর দোকানদার আমার হাতে ফোন দিলো

দোকানদারঃ সব চেক করে নিন।

আমিঃ কি চেক করবো?

দোকানদারঃ যা যা দরকার।

আমিঃ আমিতো সেরকম কিছু জানিনা ফোনের ব্যপারে।

দোকানদারঃ আচ্ছা সমস্যা নেই৷ আমি সব করে দিয়েছি। তবে গিয়ে ৬ ঘন্টা চার্জ দিবেন।

আমি তখনও হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি। শিলা ব্যপারটা বুঝতে পারলো।

শিলাঃ আরে সমস্যা নাই। আমি তোমার প্রয়োজনীয় সব করে দিবো।

তারপর দাম জানতে চাইলে দোকানদার বললো ৯৯৯৯ টাকা। আমার ফোনের ব্যাপারে সেরকম ধারনা না থাকলেও কেমন জানি দামটা শুনে বিশ্বাস হলোনা। তারপরও আমি টাকা দিয়ে চলে আসছিলাম তখন আবার দোকানদার ডাক দেয়। আমি তার কাছে গেলে তিনি বলেন

দোকানদারঃ আসলে ফোনের সাথে একটা ১২৮ জিবি মেমোরি ফ্রী আছে। ওটা নিয়ে যান।

আমার ফোন সম্পর্কে ধারনা কম থাকলেও মেমরি সম্পর্কে ভালো জানি। দোকানদার আমাকে মেমোরি দিলো। এরপর ওরা তিনজন মিলে কি জানি করলো ২ ঘন্টা ধরে। আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না। ২ ঘন্টা পর আমাকে ফোন দিলো আর কিভাবে ক্লাস গুলো দেখা যাবে আর তার সাথে দরকারী সব জিনিসগুলো শিখিয়ে দিলো।

এরপর আমি মেসে এসে ফোন চার্জে লাগিয়ে দেই৷ এভাবেই দিন ভালোই যাচ্ছিলো। সপ্তাহে ২ দিন ক্লাস করতাম। অনলাইনে ক্লাস গুলো অনেক বেশি গুছানো ছিলো ক্লাস গুলো ভালো লাগতো। দিনে ৪ ঘন্টায় ৪ টা বিষয়ের ক্লাস দেখতাম। শিলা অধ্যায় আর বিষয় অনুযায়ি ফোল্ডার করে রেখেছিলো তাই সমস্যা হয়নি। আর হ্যাঁ এর মাঝে আমাকে ফেসবুক আইডিও খুলে দিয়েছি। আমি ব্যবহার একেবারেই করিনা।শুধু মেসেজ দেওয়া হয়। সবাই মিলে একটা গ্রুপ করা আছে। অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করতাম।

দেখতে দেখতে ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা চলে আসে। শিলা আর ওর বান্ধবীদের সাহায্যে আমার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। আমি ২০ থেকে ১৩ তে এসেছি। শিলা ক্লাস টপার, তৃপ্তি ৯ আর আদিবা ২৫। যাইহোক সব মিলিয়ে আমার ভালোই চলছিলো। ওরা সব সময় আমার পাশে থেকেছে আমাকে সাহায্য করেছে।

তবে ভালো দিনগুলো মনেহয় বেশিদিন স্থায়ী হয়না। কেবল ১০ দিন হলো ২য় বর্ষে উঠেছি। এর মাঝে ঘটে এক বিশাল ঘটনা। আমি সেদিন কলেজ আসছিলাম। আমি কলেজ গেলে বড় ফোন রুমে রেখে ছোট ফোন নিয়ে আসি। সেদিন যখন কলেজ আসছিলাম তখন কাজের গেটের সামনে ওদের দেখতে পাই৷ সেইদিন রিকশায় আসছিলাম। হঠাৎ রিকশা ওয়ালার ভুলের কারণে একটা মাইক্রোবাস সজোরে ধাকা মারে। গাড়িটা স্পিডে ছিলো। ধাক্কা লাগার পর আমি ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পাই। শুধু মাথায় না হাতে পাঁয়েও ভালো আঘাত লাগে। রক্ত বেয়ে পড়ছিলো। ২ মিনিট হুস ছিলো। চারপাশে মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।

যখন চোখ খুলি তখন আমি একটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। মাথা আর পায়ে অনেক ব্যাথা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি শিলা আর তৃপ্তি শুয়ে আছে। আমি নড়ে ওঠায় শিলা জেগে যায়।

শিলাঃ নীল, এই নীল তুমি ঠিক আছো তো?

আমিঃ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। কিন্তু তোমরা এখানে কি করছো?

শিলাঃ আজ ২ দিন পর তোমার জ্ঞান আসলো।

আমিঃ কি? আমি দুই দিন সেন্সলেস ছিলাম?( অবাক হয়ে)

শিলাঃ হুম সেদিন কলেজে আসার পথে তোমার এক্সিডেন্ট হয়। মাথায় বেশ ভালো আঘাত পেয়েছিল। তারপর আমি তোমাকে এখানে নিয়ে আসি। গত ২ দিন তুমি অজ্ঞান ছিলা।

আমিঃ তুমি এতো কিছু কেনো করলো আমার জন্য?

শিলাঃ বারে বন্ধুর জন্য এতটুকু না করতে পারলে আমরা আবার কিসের বন্ধু?

আমিঃ আপনারা এখানে আছেন বাড়িতে জানে?

শিলাঃ সেটা তোমাকে ভাবতে হবেনা। এখন তুমি রেস্ট নাও। তোমার রেস্টের প্রয়োজন।

একটু পর আবার আদিবা আসলো। আমাকে কথা বলতে দেখে বললো

আদিবাঃ থ্যাংক গড নীল তোমার কিছু হয়নি। নাহলে একজন পাগল হয়ে যেতো।

আমিঃ মানে?

আদিবাঃ না মানে কিছুনা। আমি খাবার নিয়ে এসেছি তোদের জন্য। শিলা তুই তৃপ্তিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোল। আর সবাই মিলে খেয়ে নে।

জানিনা কোনো সেদিন আমার চোখে চলে এসেছিলো। আমার জন্য তারা এতটা কেনো করছে? বন্ধুর জন্য এতো কিছু কেউ করতে পারে? তারওপর শিলা আর তৃপ্তির চোখ দেখে মনেহয় ভালো মতো ঘুমাইনি। বিশেষ করে শিলা। কেনো আমার এতো কেয়ার করছে? অনেক খুশি হয়েছিলাম ওদের এই ব্যবহার দেখে। ভেবেছিলাম ভবিষ্যতে যদি কোনোদিন ওদের প্রয়োজনে জীবন দিতে হয় তবুও দুইবার ভাববোনা।

হাসপাতালে আরও ৭ দিন থাকা লাগে। সাতদিন পর আমি মোটামুটি সুস্থ হই৷ শিলা, তৃপ্তি আর আদিবা এরা তিনজনে আমার অনেক খেয়াল রেখেছে। শিলা তো বাড়ি যেতে চাইতোনা। ওরা জোর করে পাঠাতো। হাসপাতালে সব খরচ শিলাই দিয়েছিলো। জানিনা শিলা কিসের জন্য এতোকিছু করলো তবে এসবের জন্য ওর প্রতি একটা শ্রদ্ধা তৈরি হয়। আসলেই সে বড় মনের মানুষ। আমি তাকে টাকার কথা জানতে চাইলে এড়িয়ে যেতো। আমাকে সুযোগ দেইনি এসব নিয়ে কথা বলার। পরে জানতে পারি শিলা আমাকে রক্তও দিয়েছিলো।

আজ আমি আবার মেসে উঠলাম। এই কয়দিন তো কাজ করা হয়নি৷ তাই টাকাও কম পাবো। সাথে পড়াশোনাও করা হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও ১৫ দিন লাগলো। তারপর আবার সব শুরু করলাম।

এর মাঝে একদিন জানতে পারি যার কাপড়ের দোকানে কাজ করতাম তিনি মারা গেছেন। মূলত পুরো মার্কেটে আগুন লাগার ফলে অনেক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তার মাঝে ওনার দোকান ছিলো। এই আকস্মিক ঘটনা সহ্য করতে না পেরে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। ওনাকে মাটি দিয়ে গিয়ে দেখেছিলাম ওনার পরিবারের আর্তনাদ।

আজকে আদিবা আমাদের সবাইকে ডেকেছে আর্জেন্টলি। আমরা সবাই সেদিন কলেজ যাই৷ গিয়ে দেখি আদিবা আগে থেকেই বসে আছে।

শিলাঃ কিরে তুই আজকে আগেই চলে আসলি আর আর্জেন্ট ডাকলি হয়েছে কি?

আদিবাঃ বস তুই আমি বলছি।

তৃপ্তিঃ তাড়াতাড়ি বল।

আদিবাঃ আহা বলছি। নীল বসো।

আমিঃ কি হয়েছে বলবা তো নাকি? মানে ভয় বাড়ছে।

আদিবাঃ আসলে তোদের বিয়ের দাওয়াত দিতে আসলাম।

শিলাঃ বিয়ের দাওয়ার মানে কার বিয়ে?

আদিবাঃ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

শিলাঃ ওয়াট? এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে কেনো?

আদিবাঃ আসলে ছেলে ডাক্তার আর তাদের পরিবারও অনেক ভালো। তাই বাবা মা বিয়ে দিতে চান। আর ছেলেও আমার পচ্ছন্দ হয়েছে। তাই আমি না করিনি। আমার অপচ্ছন্দ হলে বাবা বিয়ে দিতো না।

শিলাঃ তার মানে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবি তাই না?

আদিবাঃ আরে পুরো কথাটা শোন। ছেল এই রাজশাহী মেডিকেল থেকে পড়ে এখন এখানেই ডাক্তারি করছে। আর আমাকে পড়াশোনাও করাবে যতদূর পর্যন্ত আমি করতে চাই।

তৃপ্তিঃ সত্যি??? তাহলে তো ভালোই হলো। ইসস কতদিন থেকে বিয়ে খাইনি। জমিয়ে খাবো তোর বিয়েতে।

শিলাঃ যাক তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলে অনেক খারাপ লাগতো।

আদিবাঃ হ্যাঁ। কি ব্যাপার নীল তুমি এতো চুপচাপ কেনো?

আমিঃ তোমরা মহিলা মন্ডল কথা বলছ আমি কি আর সেখানে টাইম পাবো?

তৃপ্তিঃ কথাটা তুমি ভুল বলোনি।

শিলাঃ চল আজকের ক্লাসটা করেই যাই।

তারপর আমরা সব ক্লাস করে চলে গেলাম। সমানে আমাদের অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা আর তারপর আদিবার বিয়ে। পরীক্ষার জন্য পুরো দমে পড়া শুরু করে দিলাম।

দেখতে দেখতে পরীক্ষাটাও শেষ হয়ে যাই৷ আর ৩ দিব পর আদিবার বিয়ে। বড় করে অনুষ্টান করা হচ্ছে। মানুষও মোটামুটি ভালোই আসবে।

বিয়ে রাতে হবে৷ তবে আমরা সকালেই সেখানে চলে গিয়েছিলা। আমাদের ৪ জন আর আদিবার কাজিনরা সবাই মিলে ভালোই মজা করি। রাতে আমরা বিয়ের অনুষ্টানে যাচ্ছি। তবে শিলা এখনও আসছিলো না। ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটু পর ও আসলো। তবে ওকে দেখে পুরোই টাস্কি খেয়েছিলাম। একদম একটা ডানা কাটা পরীর মতো লাগছিলো। তবে এসব ভেবে আমার কি?

বিয়েটা শেষ হয়ে গেলো আর সবাই নিজের নিজের বাড়ি ফিরে গেলো৷ বিয়ের ১৫ দিন পর আবার আদিবা কলেজ আসা শুরু করে। আমি শিলার কাছ থেকে ক্লাস গুলো নিয়ে সব করছিলাম।

চোখের পলকেই সময় কেটে গিয়ে এইচ এস সি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। আমার প্রিপারেশন ভালোই ছিলো। তাই পরীক্ষাগুলোও ভালো দিয়েছিলাম। তবে আসল ধাপ এবার শুরু তা হলো ভর্তি পরীক্ষা।

শিলা, তৃপ্তি, আদিবা এরা বিভিন্ন প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে গেলো। তবে আমি পারছিলাম না। যেহেতু একাডেমিক আমার ভালো করে পড়াছিলো তাই সেগুলোই বার বার ঝালাই করে নেওয়ার চিন্তা করলাম। শিলা ক্লাস দিতো সেগুলো করতাম কারণ এডমিশনে প্রচুর টেকনিকাল হওয়া লাগে।

তৃপ্তি আর আদিবা মেডিকেলের প্রস্তুতি নিতে থাকে আর শিলা বিশ্ব বিদ্যালয়ের। আমার টার্গেট ছিলো বিশ্ব বিদ্যালয়। মেডিকেল আমার পচ্ছন্দ ছিলোনা আর ইন্জিনিয়ারিংয়ের ইচ্ছা ছিলোনা৷ তাই ভার্সিটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

৪ মাস পর আমাদের এডমিশন শুরু হয়। তৃপ্তি আর আদিবার পরীক্ষা আগেই হয়৷ আর পরদিনই তাদের রেজাল্ট হয়৷ তারা দুই জনই মেডিকেলে চান্স পাই। আদিবা পাই রাজশাহী মেডিকেলে আর তৃপ্তি পায় রংপুর মেডিকেলে। তারমানে তৃপ্তি এখন আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে।

২ মাস পর তৃপ্তি চলে যায় কারণ তাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তাই৷ আর ২ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হয়। রেজাল্ট ১ মাস পর। আর তারপর হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হয়।

১ মাস পর রেজাল্ট বের হয় ঢাকার। তবে আমি চান্স পাইনি। তবে শিলা পেয়েছে। আমি তারপর রাজশাহীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ১৫ দিন পর রেজাল্ট বের হলো। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো শিলা এখানেও চান্স পেয়েছে।

আমার ভালোই হলো৷ রাজশাহীতেই সেটেল হয়ে গেলাম। শিলা মনেহয় ঢাকা চলে যাবে। আবার একা হয়ে গেলাম। তবে আমার ধারনা ভুল প্রমাণিত করে শিলা একদিন আমাকে ফোন দেয়।

শিলাঃ কি করো?

আমিঃ এমনিই শুয়ে আছি। তুমি কি করো?

শিলাঃ আমিও শুয়ে আছি। আচ্ছা তুমি কোন সাবজেক্ট পেয়েছো?

আমিঃ আমি গণিত পেয়েছি। তা তুমি ঢাকা যাবে কখন?

শিলাঃ ঢাকা কিসের জন্য যাবো?

আমিঃ কেনো ভর্তি হবেনা?

শিলাঃ ভর্তি তো হয়েই গিয়েছি।

আমিঃ কোথায়?

শিলাঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আমিঃ কিহহ? তুমি রাজশাহীতে ভর্তি হয়ে গিয়েছো? কোন সাবজেক্ট পেয়েছ তুমি?

শিলাঃ আমি পদার্থ বিজ্ঞান পেয়েছি।

আমিঃ তুমি ঢাকা ছেড়ে রাজশাহীতে ভর্তি হলে কেনো?

শিলাঃ ঢাকায় একাই গিয়ে কি করবো? তাছাড়া মাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।

আমিঃ একদিক দিয়ে ভালো হলো পরিচিত কাউকে পেলাম।

শিলাঃ হুম। আচ্ছা ক্লাস শুরু হতে তো ১ মাস বাকি। এই কয়দিন কি করবা?

আমিঃ আমি তো এই কয়দিন বড় বড় কাজগুলো করবো। কিছু টাকা জমিয়ে রাখতে হবে। তুমি কি করবে?

শিলাঃ আমি বাসাতেই থাকবো। Marvel এর মুভি নাকি অনেক ভালো হয় তাই ওগুলা দেখে সময় পার করবো।

আমিঃ আচ্ছা। পরে কথা হবে তাহলে।

ফোন রেখে দিলাম। জানিনা কেনো অনেক ভালো লাগছে। সত্যি বলতে গেলে আমি শিলাকে ভালোবেসে ফেলেছি৷ তার কেয়ারিং গুলো অনেক ভালোবাসি। তবে এটা বামন হয়ে চাঁদ ধরার মতো কথা। আমার মতো মানুষকে বন্ধু বানিয়ে এতো কিছু করেছে এটাই আমার জন্য অনেক। তবে আমার এতো কিছু কিসের জন্য করেছে তাই আমি বুঝতে পারিনা।

দেখতে দেখতে ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। একমাসে বেশি বেশি কাজ করে সেই মাসে ২৫ হাজার ইনকাম হয়েছে। যাইহোক আমরা প্রতিদিন ক্লাস করি। অনেকেই আমাদের বন্ধু হতে চাই তবে সবাই খালি হাতে ফিরে যাই। এভাবে ভালোই চলছিলো আমাদের সময়। ভার্সিটি এসে কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে দিতোনা। আর ও নিজেও কোনো ছেলের সাথে কথা বলতোনা।

ভার্সিটি লাইফের ৭ মাস কেটে যায়। অনেক ভালো সময় কাটে শিলার সাথে। তবে ঘটনা ঘটে কিছুদিন পর যেটা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেদিন আমাকে শিলা ফোন করে

শিলাঃ নীল কোথায় তুমি?

আমিঃ আমি তো মেসে।

শিলাঃ ভার্সিটি ক্যাম্পাসে আসো।

আমিঃ এখনি?

শিলাঃ হুম।

আমি বের হয়ে ভার্সিটির চলে গেলাম। গিয়ে দেখি শিলা একাই বসে আছে। ও কখনও আমার আগে আসেনা। আমরা একসাথেই আসি। আজকে হঠাৎ এসবের কারণ আমি বুঝতে পারছিনা। আমি ওর কাছে গেলাম।

আমিঃ শিলা কি হয়েছে তুমি ডাকলে যে?

শিলাঃ ও তুমি এসেছো?

আমিঃ হ্যাঁ।

শিলাঃ আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। জানিনা তুমি কথাটা কিভাবে নিবে তবে তবুও আমি বলতে চাই।

আমিঃ কি বলতে চাও বলো

এরপর শিলা যেটা করলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা। আমি পুরোই হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার পুরো শরীর অবশের মতো হয়ে গেছে। কারণ শিলা যা বললো………………

চলবে……………

আড়ালে তুমি পর্ব – ৪

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৪
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

আমি রিফাতের আর আমার পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করে ওকে রেডি করে দিতে গিয়ে দেখি ও সেভিং ফোম পুরো মুখে মাখিয়ে রেখেছে আর রেজার উল্টো করে ধরে রেখেছে। এটা দেখে আমি হাসি আটকে রাখতে পারলাম না৷ জোরেই হেসে দিলাম। আমাকে হাসতে দেখে রিফাত বললো

রিফাতঃ বাবা তুমি হাসছো কেনো?

আমিঃ এসব কি করছো বাবা?

রিফাতঃ তুমিও তো এরকম করছিলে তাই আমিও করলাম।

আমিঃ আগে আমার বাবাটা বড় হয়ে যাক তারপর করবে।

তারপর আমি ওর মুখটা মুছিয়ে দিলাম আর ওকে পাঞ্জাবি পরিয়ে দিয়ে রেডি করলাম৷ ওকে বসিয়ে রেখে আমি রেডি হয়ে নিলাম। আমি বড়ি থেকে বের হতে যাবো তখন রফিক ভাই দরজায় নক করলেন।

রফিক ভাইঃ নীল হয়েছে তোর?

আমি দরজা খুলে দিলাম। দেখি রফিক ভাই একটা নীল কালারের পাঞ্জাবি পরে আছে।

আমিঃ বাহ ভাই বাহ। পুরাই হিরো

রফিক ভাইঃ কি যে বলিস না। তোকে এই কালো পাঞ্জাবিতে জোস লাগছে।

আমিঃ পাম দিওনা। ভিতরে আসো।

রফিক ভাইঃ তোর রেডি হওয়া হয়নি?

আমিঃ হুম হয়ে গেছে।

রফিক ভাইঃ তাহলে আর দেরি করছিস কেনো?

আমিঃ আচ্ছা চলো।

রফিক ভাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্যারদের বাসার উদ্দেশ্যে। একটা রিকশা নিয়ে গেলাম স্যারদের বাসায়। ভিতরে গিয়ে দেখি বিশাল আয়োজন। অনেক মানুষ এসেছে৷ পুরো বাড়ি লাইটিং করা। এর মাঝে কোথা থেকে যেনো বর্না আপু চলে আসলো।

আমিঃ আপু তুমি কখন আসলে?

বর্না আপুঃ একটু আগে এসেছি। তোমাদের খুজলাম তবে পেলাম না।

ভালো করে লক্ষ করে দেখি বর্না আপু আর রফিক ভাই ম্যাচিং করে পোশাক পরেছে। আমার কেনো জানি মনেহয় বর্না আপুও রফিক ভাইকে ভালোবাসে।

বর্নাঃ কোথায় হারিয়ে গেলা?

আমিঃ কোথাও না আপু।

বর্নাঃ রফিক কেমন আছো?

রফিক ভাইঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

বর্নাঃ আলহামদুলিল্লাহ। চলো ভিতরে যায়।

রফিক ভাইঃ আসলে আমার ভিড়, কোলাহল এসব ভালো লাগেনা।

বর্নাঃ আরে অন্তত স্যারের সাথে দেখা করে আসি?

রফিক ভাইঃ চলো তাহলে।

বর্নাঃ আরে আমার কিউট বাবাটাকে আমি খেয়াল করিনি। ( রিফাতের দিকে দেখে) কেমন আছে আমার বাবাটা?

রিফাতঃ ভালো আছি আন্টি। তুমি কেমন আছো?

বর্নাঃ আমিও ভালো আছি।

তারপর বর্না আপু রিফাতকে কোলে নিয়ে নিলো। আমরা ভিতরে গেলাম। গিয়ে স্যারকে খুজতে লাগলাম। স্যারকে না পেলেও নিরাকে দেখতে পেলাম। আমাকে দেখতে পেয়ে উনি নিজেই আমার সাথে দেখা করতে এলেন

নিরাঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন?

আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন?

নিরাঃ আলহামদুলিল্লাহ। ভাবিকে নিয়ে আসেন নি?

আমিঃ আসলে আমার বউ আর নেই। আমার ছেলেকে আর আমাকে রেখে সে দূরে চলে গেছে।

নিরাঃ সরি ভাইয়া।

আমিঃ এতে সরি বলার কি আছে?

নিরাঃ তা আপনার ছেলেকে দেখাবেননা?

আমিঃ অবশ্যই। ( আমি বর্না আপুকে ডাকলাম) আপু এটাই আমার ছেলে।

নিরাঃ সো কিউট। নাম কি বাবু তোমার?

রিফাতঃ আমি রিফাত

নিরাঃ বাহ নামটাও তোমার মতো দারুন।

আমিঃ তা দুলাভাইকে তো দেখছিনা।

নিরাঃ একটু দাড়াও আমি ডেকে নিয়ে আসি।

নিরা একটা রুমে গিয়ে একজনকে নিয়ে আসলেন। ভালোই হ্যান্ডসাম আছে। আমাদের এখানে এসে বললো

নিরাঃ ভাইয়া আমার হাসবেন্ড।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই।

দুলাভাইঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি রাশেদ মির্জা।

আমিঃ আমি শাহরিয়ার কবির নীল

রাশেদঃ Nice to meet you.

আমিঃ pleasure is mine.

দুলাভাইঃ আচ্ছা ভাই আমি আসি কিছু গেস্ট আসছে কথা বলে আসি।

আমিঃ আচ্ছা

নিরাঃ ভাইয়া আপনারা ইনজয় করুন আমিও দেখে আসি।

আমিঃ আচ্ছা। এরপর ওরা চলে গেলো।
পাশে দেখি রফিক ভাইও নেই।

আমিঃ আপু রফিক ভাই কই গেলো?

বর্নাঃ এখানেই তো ছিলো।

আমিঃ বাইরে গিয়েছে মনেহয়।

এমন সময় আবার শিলা ম্যামের এন্ট্রি। তিনি সোজা আমাদের দিকেই আসলেন।

শিলা ম্যামঃ কখন আসলে তোমরা?

আমিঃ একটু আগে। তুমি কখন এলে?

শিলা ম্যামঃ আমি এইমাত্র এলাম। কেমন আছো রিফাত বাবু?

রিফাতঃ ভালো আছি। তুমি?

শিলা ম্যামঃ ভালো। নীল রিফাতকে আমার কাছে দাও।

আমি রিফাতকে ওনার কাছে দিলাম।

শিলা ম্যামঃ ওকে নিয়ে উপরে গেলাম। তুমি বাইরে দাড়াও।

আমিঃ আচ্ছা।।

আমি আর বর্না আপু বাইরে গেলাম। আমি ভাবলাম এইটাই সুযোগ বর্না আপুকে রফিক ভাইয়ের কথা বলে দি।

আমিঃ আপু একটু সাইডে আসবে? কিছু কথা বলতাম।

বর্নাঃ আচ্ছা চলো।

আমি একটু সাইড হলাম৷ তারপর বললাম

আমিঃ আসলে আপু একটা কথা বলতাম। জানিনা তুমি কিভাবে নিবে কথাটা।

বর্নাঃ বলো নাহলে গেলাম।

আমিঃ আচ্ছা বলছি। আসলে রফিক ভাই তোমাকে পচ্ছন্দ করে কিন্তু বলতে পারছেনা।

বর্নাঃ কেনো?

আমিঃ আসলে ওনার একটা সমস্যা আছে।

বর্নাঃ উনি কোনোদিন বাবা হতে পারবেনা তাইতো?

আমিঃ তুমি কিভাবে জানলে?

বর্নাঃ সেটা না জানলেও চলবে। আমি জানি উনি আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু আমার ব্যাপারে সব কিছু জানা দরকার উনার।

আমিঃ কি জানার আছে?

বর্নাঃ আসলে আমার আগেও বিয়ে হয়েছিলো। আমার বয়স যখন ২২ তখন আমার বিয়ে হয়। ভালোই চলছিলো আমার দিনকাল তবে বিয়ের ২ বছর চেষ্টার পরও আমার বাচ্চা হচ্ছিলো না। তারপর একদিন ডাক্তার দেখালে জানতে পারি আমি কখনও মা হতে পারনা৷ তারপর আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। আমার বাবা এটা সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। এখন আমি আমার মাকে নিয়ে থাকি।

এখন রফিক যদি এসব জানার পর আমাকে বিয়ে করতে চাই তবে আমার কোনো আপত্তি নেই। এতিমখানা থেকে একটা বাচ্চা দত্তক নিয়ে মানুষ করবো। তুমি গিয়ে রফিককে বলো। যদি রাজি থাকে আমাকে বলবা।

আমিঃ আচ্ছা আপু। ৫ মিনিট দাঁড়াও আমি আসছি।

আমি ফোন বের করে রফিক ভাইকে কল করে ডাকলাম। দেখি উনি সবার আড়ালে একা বসে আছেন। আমি নিজেই ওনার কাছে গেলাম।

আমিঃ ভাই একটা খবর নিয়ে এলাম।

রফিক ভাইঃ কিসের খবর?

আমিঃ বর্না আপু তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছে। তবে ওনার সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলতে চাই।

রফিক ভাইঃ কি বলবি বল

আমিঃ আসলে……….. ( সব খুলে বললাম)। এখন তুমি ভেবে বলো।

রফিক ভাইঃ বর্নাকে এখানে ডাক। ওর সাথেই কথা বলি।

আমিঃ আচ্ছা।
তারপর আপুকে ফোন করে ডাকলাম।

বর্নাঃ কি হলো ডাকলে যে?

আমিঃ ভাইকে কিছু বলবে।

বর্নাঃ বলো রফিক।

রফিক ভাইঃ আসলে তোমার ব্যাপারে আমাকে নীল বলেছে। তোমার আগের বিয়ে নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নাই। পবিত্র সম্পর্ক ছিলো ওটা।

বর্নাঃ হুম

রফিক ভাইঃ আমি তোমাকে কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ে করতে চাই। তবে আমারও কিছু শর্ত আছে।

বর্নাঃ কি শর্ত?

রফিক ভাইঃ প্রথমত তোমার মা আমাদের সাথে থাকবে আমার মা হয়ে। আমার তো কেউ নেই। দ্বিতীয় কথা এতিমখানা থেকে বাচ্চা দত্তক নিবো তবে তাকে সব সময় নিজের সন্তান ভাবতে হবে।

বর্নাঃ আর কিছু?

রফিক ভাইঃ আর আমাকে ভালোবাসাতে হবে।

বর্নাঃ ব্যাস?

রফিক ভাইঃ হুম। এখন তোমার আপত্তি থাকলে বলত পারো। আমি কালকেই তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।

বর্নাঃ আমার কোনো আপত্তি নেই। কালকে তুমি মায়ের সাথে কথা বলে নিও।

আমিঃ ব্যাস পার্টিতে এসে সেটিং হয়ে গেলো। আমি একসাথে ভাবি আর দুলাভাই পেলাম।

আমার কথা শুনে দুজের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বাসার পাশে স্টেজ করা আছে। আমরা সেখানে গেলাম। ম্যামও রিফাতকে নিয়ে আসলেন।

স্টেজে দেখি স্যার মাইক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে। তিনি সকলের উদ্দেশ্য বলতে শুরু করলেন

স্যারঃ লেডিস এন্ড জেন্টানমেন আজকের অনুষ্টানে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আজকে আমার মেয়ে আর আমার জামাইয়ের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী। প্রতিবারের মতো আজকেও আপনাদের সাথে বিশেষ দিনটা উদযাপন করতে পেরে আমি অনেক খুশি।

সবাই মিলে তালি দিতে লাগলেন।

স্যারঃ আরেকটি বিশেষ কথা বলবো আপনাদের তার আগে আমি আমার মেয়ে আর জামাইকে স্টেজে আসার অনুরোধ করছি।

ওরা দুইজন স্টেজে আসলো। সবাই মিলে করতালি দিচ্ছে।

স্যারঃ যে খুশির খবর আমি আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করতে চাই সেটা হলো আমি অতী শীঘ্রই নানা হতে চলেছি। এই খুশি আমি সকালের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। আজকের পার্টি আপনাদের জন্য। সবাই আনন্দ করুন।

সবাই তালি দিচ্ছে আর নিরা আর রাশেদকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এরপর কয়েকজন গান গাইলো। আমিও গান গাইতে পারি। তবে যার জন্য গাইতাম তার চলে যাবার পর আর গাইনা।

সবাই সবার সাথে কথা বলছে। এদিকে আমি, রফিক ভাই, শিলা ম্যাম, রিফাত একসাথে আছি। কেউ কোনো কথা বলছিনা। নিরবতার মাঝেই কেটে গেলো অনেকটা সময়। এরপর ডিনার করতে গিয়ে স্যারের সাথে দেখা

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার।

স্যারঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো ইয়াং ম্যান?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন স্যার?

স্যারঃ আলহামদুলিল্লাহ। পিচ্চিটা কে?

আমিঃ আমার ছেলে।

স্যারঃ বাহ ভারি মিষ্টি দেখতে। আচ্ছা যাও ডিনার করে নাও।

স্যারকে বিদায় দিয়ে ডিনার করতে গেলাম। পার্টি শেষ হতে হতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি বাড়ির বাইরে। তখন শিলা ম্যামের গাড়ি থামলো আমাদের সামনে।

শিলা ম্যামঃ কি ব্যাপার তোমারা বাসায় যাবেন না?

আমিঃ যাবো তবে রিকশা পাচ্ছিনা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা চলো আমি পৌছে দি।

আমিঃ না না। তোমাকে কষ্ট করতে হবেনা।

শিলা ম্যামঃ উঠো বলছি। ( একটু রাগি গলায়)

উপায় না পেয়ে উঠেগেলাম। রফিক ভাই ড্রাইভারের পাশে বসেছেন আর আমি পিছনে শিলা ম্যামের পাশে। অবশ্য আমাদের ফ্ল্যাট আর ম্যামের বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি না। ১০ মিনিট পর পৌছে গেলাম।গাড়িতেই রিফাত ঘুমিয়ে গেছে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে গেলাম। গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লাম। কালকে শুক্তবার তাই আরামের একটা ঘুম হলো।

দেখতে দেখতে ৭ দিন কেটে গেলো। আজকে রফিক ভাই আর বর্না আপুর বিয়ে। এই কয়দিনে অফিসের পাশাপাশি রফিক ভাইয়ের বাসায় সংসারের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মাঝে রফিক ভাই গিয়ে ওনার মায়ের সাথে কথা বলে এসেছেন। ওনার মা প্রস্তাব পেয়ে খুশিই হয়েছিলেন। তারওপর মেয়ের সাথে থাকবে শুনে আরি খুশি।

কাজি অফিসে আছি এখন। বিয়ের কথা কাউকে জানানো হয়নি। গোপনেই সব করে নিলো। বিয়ে করে সেইদিনই শাশুড়ী আর বউকে ভাইয়া বাসায় নিয়ে চলে আসলেন। ভাইয়া আর আপু অবশ্য অযুহাত দেখিয়ে ৩ দিনের ছুটি নিয়েছেন। তবে আমি অফিস করি। রফিক ভাই আর বর্না আপু এই কয়দিনেই নিজেদের মাঝে খুব ভালো একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি করে নিয়েছেন।

৩ দিন পর আজকে আমরা তিনজন একসাথে অফিস গেলাম। পরশু আবার একদিনের সরকারি ছুটি বিজয় দিবস উপলক্ষে।

দুইদিন অফিস করলাম। আজকে অফিস শেষে বাসায় এলাম। রিফাতকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। আমিও ঘুমাতে যাবো এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো।

আমিঃ কে?

রফিক ভাইঃ আমি আর তোর আপু।

আমি দরজা খুলে দিলাম।

আমিঃ তোমরা এই সময়?

রফিক ভাইঃ কালকে তো ছুটি তাই গল্প করতে এলাম।

আমিঃ আচ্ছা তাহলে পাশের রুমে বসো আমি কফি নিয়ে আসি।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা।

আমি গিয়ে তিনজনের জন্য কফি বানিয়ে রুমে গেলাম।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা আজকে তুই তোর জীবন সম্পর্কে সব বলবি।

আমিঃ আজকেই শুনবা তাহলে?

বর্নাঃ হ্যা। কালকে ছুটি সারাদিন ঘুমিয়ে নিও। এখন বলো তোমার লাইফ স্টোরি।

আমিঃ যদিও আমি চাইনা আমার অতীতটা মনে করতে। তবুও তোমাদের জন্য আবার বলছি শুনো তাহলে

★অতীত★

যেদিন থেকে আমার নিজের বুঝার ক্ষমতা হয়েছে সেদিন থেকেই একটা কথা জেনে এসেছি তা হলো আমি এতিম। অনেক ছোট থাকতেই নাকি কেউ এই এতিমখানার দরজায় ফেলে গিয়েছিলো। সেদিন থেকে সেই এতিমখানাতেই বেড়ে উঠেছিলাম। ছোট থেকেই আমার ভিতর কোনো চঞ্চলতা ছিলোনা৷ আমি বরাবরই একা থাকতে ভালোবাসতাম। সেই এতিমখানায় আমার বাড়ি ছিল। বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে আমি জানিনা।

আমার বয়স যখন ৭ বছর তখন আমাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। যেই লোক এতিমখানার খরচ চালায় তিনি কয়েকজন ছেলেকে পড়াশোনা করার খরচ দিতেন। আমি পড়াশোনায় ভালো আর আমার পড়াশোনা নিয়ে আগ্রহ ছিল।

ক্লাস ১ থেকে ক্লাস ৫ পর্যন্ত সব সময় রোল ১ ছিলো। যদিও যে স্কুলে পড়েছি তা রাজশাহীর কোনো এক সরকারি স্কুল। নাম যশ নাই। তবুও সেই সময় সবাইকে অবাক করে এই স্কুল থেকে প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে আমি জিপিএ ৫ আর সাথে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়।

তারপর আরেকটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। এই সময়টাতে আমাকে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷ কিন্তু বিপত্তি ঘটে একদিন। তখন আমি ৮ম শ্রেনিতে পড়ি। আর বোর্ড পরীক্ষার সময় ছিলো মাত্র ৩ মাস। এতোদিনে সবকিছু বুঝতে শিখে গিয়েছি। বাস্তব দুনিয়া সম্পর্কে অনেকটা ধারনা পেয়ে গিয়েছিলাম। পড়াশোনায় সবার থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলাম বিধায় এতিমখানার মালিক আমাকে একটু বেশি গুরুত্ব দিতো।

তবে ভালো সময়গুলো যে শেষ হয়ে আসছিলো সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাই ছিলোনা। প্রতিদিনের মতো সেদিনও পড়তে বসেছিলাম। তবে আমাদের কেয়ার টেকার অশ্রু মিশ্রিত চোখে সবাইকে এসে যা বললো তা শুনে সবাই অনেক ভেঙে পড়ে। তিনি জানান মালিক কাজের জন্য বিদেশ যাচ্ছিলেন। তবে যে বিমানে যাচ্ছিলেন তা মাঝপথে বিধ্বস্ত হয়ে সবাই মারা যান। তার ছেলে তখনও জীবিত ছিলো।

তবে বাবা ভালো হলে যে সব সময় ছেলেও ভালো হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ এই ক্ষেত্রে সেটা হয়েছিলো। মালিক মারা যাবার কিছুদিন পর মালিকের ছেলে এই এতিমখানা ভেঙে ফেলে নতুন করে একটা হোটেল করার জন্য সবাইকে বললেন। একথা শুনে সবার মাথায় হাত।

এর মাঝে অনেক কে কিছু সন্তানহীন বাবা মা দত্তক নিয়ে নেন। কিছু ছেলে কুল কিনারা হারিয়ে ভিক্ষার রাস্তা বেছে নেয়। আমাকেও দত্তক নিতে এসেছিলো। তবে আমি যায়নি। কারণ ততদিনে আমি বাস্তবতা বুঝে নিয়েছিলাম যে পর কোনোদিন আপন হয়না৷ তাই যাইনি। তারপর থেকে আমি একটা কাপড়ের দোকানে কাজ নিই। সারাদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করতাম। তার বদলে মাসে ৮০০০ টাকা পেতাম। তাতেই অনেক ভালো ভাবে দিন চলছিলো। আমি স্কুল যেতাম সপ্তাহে একদিন। ভালো কোনো স্কুলে পড়লে উপস্থিত থাকা লাগে তাই ছোট খাটো স্কুলেই পড়তাম আর শুধু পরীক্ষা গুলোই ভালো করে দিলাম। একটা মেসে ছিলাম৷ সব মিলিয়ে মাসে ৬০০০ টাকা খরচ হতো আমার৷ আর বাকিটা জমা করতাম। মালিকের ছেলে প্রাইভেট পড়াতো। মালিকের কথায় আমাকে বিনা বেতনে পড়াতো।

দেখতে দেখতে ১০ম শ্রেণীতে উঠে যায়। আমার মালিক অনেক অমায়িক মানুষ ছিলেন। যখন আমার পরীক্ষার আর ৪ মাস বাকি তখন থেকে আমার কাজের সময় ২ ঘন্টা কমালেও বেতন কাটতোনা। এমনকি দরকারে সাহায্যও করতো। ৯ম শ্রেণী থেকেই আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তাম কারণ আমি জানতাম ফাঁকি দিলে আমার ভবিষ্যৎ অনেক ভয়াবহ হবে।

দেখতে দেখতে আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। আমি সব পরীক্ষা অনেক ভালোভাবে দেই। পরীক্ষার পর খালি সময়ে আমি দোকানে কাজ করতাম আর মালিকের ছেলে ইন্টারে পড়তো ওর পুরাতন বই নিয়ে আমি পড়তাম যেগুলা নিজে থেকেই বুঝা যায়।

যেদিন আমার রেজাল্ট বের হয় সেদিন অনেক ভয় হচ্ছিলো। তবে ভয়কে জয় করে জিপিএ ৫ পাই। এখন আমার টার্গেট ছিলো ভালো কোনো কলেজে পড়া। তবে ভালো কলেজে পড়তে গেলে ভালো টাকা লাগবে। কিন্তু আমার জমা ছিলো মাত্র ৫০ হাজার। তাই ভাবলাম যা হবে পরে দেখবো কিন্তু ভালো কোনো কলেজেই ভর্তি হবো। আর ভালো একটা কলেজে ভর্তির সুযোগও পাই।

তবে কলেজে উপস্থিতি নিয়ে কোনো ঝামেলা ছিলোনা। রাজশাহীতে সবাই প্রাইভেটকে বেশি গুরুত্ব দেয় । তবে আমার সামর্থ ছিলোনা। আমাকে কলেজে ক্লাস করে সব নিজে থেকেই বুঝতে হবে৷ কিন্তু নিয়মিত কলেজ করলে তো আবার কাজ করতে পারবোনা। কাজ না করলে পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারবোনা৷ এই সমস্যার কথা মালিকের ছেলেকে খুলে বললে আমাকে আউটসোর্সিং করার কথা বলে। আমিও তার কথা মতো দুইমাস ট্রেনিং করে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কম্পিউটারে কিনি৷ সেই থেকে মাসে ১০ হাজার মতো আসতো। তাতে চলে যেতো।

আমার প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য ছিলোনা।তাই সব ক্লাস অনেক মনোযোগ দিয়ে করতাম। কলেজে আমার সাথে কেউ কথা বলতোনা। একটাই করাণ আমি এতিম আর আমার বাবা মার পরিচয় জানিনা বলে। তাই আমি কারও সাথে কথা বলিনা। সব ক্লাস মনোযোগ দিয়ে করতাম।

জানিনা কেনো গণিত বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগতো। আর পরীক্ষাতে গণিতে আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেতাম৷ ইংরেজিতে খারাপ ছিলাম৷ তবে লেটার মার্ক থাকতো।

কলেজের অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার পর আমি কলেজে ২০তম হই। সব মিলিয়ে কোনোরকমে চলে যেতো। তবে কাজ আর পড়াশোনার জন্য আমি বেশি ঘুমানোর সুযোগ পেতাম না। যদিও সময়ের সাথে সাথে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়।

একদিন ক্লাস শেষ করে কলেজের ক্যাম্পাসে বসে কিছু নোট করছিলাম৷ এমন সময় একটা মেয়েলি কন্ঠ বলল ‘ এই যে শুনছেন’? আমি ভাবলাম আমার শোনার ভুল কারণ আমার সাথে কেউ কথা বলেনা। আমি কিছু না ভেবে আবার নোট করতে লাগলাম। একটু পর আবারও সেই কন্ঠ ভেসে আসলো

অচেনা কন্ঠঃ এই যে আপনাকেই বলছি

এবার আমি মাথা তুলে তাকালাম। তবে তাকিয়ে যা দেখলাম তা হয়তো আমি কখনও ভাবিনি যে এমনটাও হতে পারে। কারণ সামনে দাড়িয়ে ছিলো………………..

চলবে……………

আড়ালে তুমি পর্ব – ৩

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৩
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

অফিস শেষ করে আমি রিফাতকে আনতে গেলাম। গিয়ে দেখি রিফাতকে কোলে নিয়ে বসে আছে এক বোরকা পরা মেয়ে। ভালোভাবে লক্ষ করে দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম এটা তো শিলা ম্যাম। তিনি এখানে কি করছেন। আমি দ্রুত গেলাম ওনার কাছে।

আমিঃ আরে ম্যাম আপনি এখানে কি করছেন?

শিলা ম্যামঃ আসলে এইদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তখন মনে পড়ল আপনি তো আপনার ছেলেকে চাইল্ড কেয়ারে রেখে গেছেন৷ তাই একটু খোজ নিতে এসেছিলাম।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম এসবের কি প্রয়োজন আছে? মা হারা ছেলেকে যদি এভাবে স্নেহ করেন তাহলে কখন আমার মায়ের কথা বলে বসে কে জানে। আর আমি এসব সহ্য করতে পারবোনা।

শিলা ম্যামঃ কিছু হবেনা। তাছাড়া একটু আদর করলো সমস্যা কোথায়?

আমিঃ আদর করতে করতে তার ভিতর মায়ের জন্য ভালোবাসা জেগে উঠবে। তখন মায়ের জন্য মন খারাপ করবে। আর ওর মন খারাপ থাকলে আমি সহ্য করতে পারবোনা।

শিলা ম্যামঃ তাহলে একটা বিয়ে করে ওর জন্য মা নিয়ে আসুন। আর কতদিন এভাবে ছেলেকে এভাবে রাখবেন। আর বয়স তো আপনার অনেক কম।

আমিঃ একবার আবেগ জড়িয়ে যে ভুল করেছি তা আর করতে চাইনা। একটা ভুল আবেগে জড়িয়ে আজ তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছি। ছেলেটাও কষ্ট পাচ্ছে। আমি আর চাইনা কারও মিথ্যা আবেগে জড়াতে। নিজের ছেলেটাকে মানুষ করতে চাই।

শিলা ম্যামঃ কি হয়েছে আপনার সাথে খুলে বলবেন?

আমিঃ থাকনা ম্যাম এসব কথা শুনে কি লাভ? আমার ক্ষতটা আবার জাগিয়ে তুলার দরকার নাই।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা থাক। আচ্ছা নীল সাহেব আমি গেলাম আমার কিছু কাজ আছে।

আমিঃ আচ্ছা ম্যাম।

ম্যাম চলে যাবার পর আমি রিফাতকে নিয়ে বাড়ি গেলাম। রাতে আমি রিফাত, রফিক ভাই একসাথে খেয়ে ভাই নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেলেন।

রিফাতকে নিয়ে শুয়ে আছি আর বলছি

আমিঃ বাবা তোমার যে আন্টি তোমার সাথে দেখা করে উনি কি বলেন তোমাকে?

রিফাতঃ কিছুনা বাবা। কিন্তু চকলেট নিয়ে আসেন আমার জন্য আর আমাকে আদর করেন।

আমিঃ বাবা আজ থেকে অপরিচিত কারও কোনো জিনিস নিবেনা।

রিফাতঃ কেনো বাবা? আন্টি তো খুব ভালো।

আমিঃ নিবেনা বলছি নিবেনা। ( একটু কড়া গলায়)

রিফাতঃ আচ্ছা বাবা।

আমিঃ তোমার স্কুল কেমন লাগছে?

রিফাতঃ তোমাকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগেনা বাবা।

আমিঃ সবার সাথে মিলেমিশে খেলবে কেমন? তাহলে দেখবে তোমার অনেক ভালো লাগবে।

রিফাতঃ আচ্ছা বাবা সবার সাথে খেলব।

আমিঃ আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

যাক বুঝাতে পেরেছি তাহলে। ছেলেটা ছোট হলেও সব বুঝে। আমিতো ভেবেছিলাম অনেক কষ্ট করতে হবে ওকে মানিয়ে নিতে তবে দেখলাম না সমস্যা নাই। যাক একটু স্বস্তি পেলাম।

সকালে উঠে রিফাতকে রেখে আবার অফিস গেলাম। আজ ম্যাম তার কেবিনে ডাকেনি তাই সরাসরি এসে রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ বুঝিয়ে নিলাম।

আমার পাশের ডেস্ক ফাঁকা দেখি তবে আজকে কাজ করার সময় দেখলাম একটা মেয়ে বসে আছে সেখানে। আমার থেকে ২ বছরের বড় হবে মনেহয়। যাই হোক সেদিকে মন না দিয়ে আমি কাজে মনোযোগ দিলাম। লাঞ্চ টাইমে রফিক ভাইয়ের সাথে খেয়ে আসলাম৷ নতুন মেয়েটা কারও সাথে কথা বলছেনা আর কাজও নিজে নিজেই করছে। হয়তো আগে কোথাও কাজ করতো তাই অভিজ্ঞতা আছে।

বিকালে কাজ শেষ হলো। ছুটির এখনও ১ ঘন্টা বাকি। তাই বসে বসে মোবাইল টিপছিলাম। তখন পাশের ডেস্কের মেয়েটি বললো

মেয়েটিঃ হ্যালো।

আমিঃ হাই।

মেয়েটিঃ আমি তাসলিমা আক্তার বর্না।

আমিঃ আমি শাহরিয়ার কবির নীল

মেয়েটিঃ তা কেমন আছেন আপনি?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

মেয়েটিঃ করুন।

আমিঃ আপনি কি কোনো জায়গায় আগে কাজ করতেন?

বর্নাঃ হুম আগে একটা অফিসে কাজ করতাম৷ এই কোম্পানিতে সার্কুলার দেখে আবেদন করেছিলাম৷ জব হয়ে গেছে তাই এখানে এসেছি।

আমিঃ তাহলে আমি ঠিক ধরেছি।

বর্নাঃ হুম৷ আজ থেকে ফ্রেন্ডস?

আমিঃ ওকে

বর্নাঃ তুমি করে বলতে হবে কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা।

একটুপর রফিক ভাই আসলেন।

রফিক ভাইঃ নীল কাজ শেষ হয়েছে তোর? গল্প করছিস যে?

আমিঃ ভাই আসলে আমাদের নতুন কলিগের সাথে কথা বলছিলাম৷ আর আমার কাজও শেষ।

রফিক ভাইঃ হাই আমি রফিক মাহমুদ।

বর্নাঃ আমি তাসলিমা আক্তার বর্না।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা তোমার সাথে পরে কথা হবে। আর নীল তোর ফাইলগুলো দে।

আমি ফাইলগুলো রফিক ভাইকে দিলাম৷ ভাই নিয়ে চলে গেলেন। সেইদিনের মতো কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসলাম।

এইভাবে দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে গেলো। আমি এখন বড় কাজও করতে পারি। আমার কাজের দক্ষতা আর মনোযোগ দেখে সবাই অনেক খুশি। শিলা ম্যাম এখনও রিফাতের সাথে দেখা করতে যায়। তবে কিছু বলিনা। এমনিতেই তো বস। বেশি কথা বলিনা তার সাথে।

এদিকে রফিক ভাই আর বর্নাও অনেক ক্লোজ হয়ে গেছে। আমরা তিনজনই এখন ভালো বন্ধু। তবে রফিক মনেহয় বর্নাকে পচ্ছন্দ করে। আমি জানি যে তার অক্ষমতার জন্য তিনি কিছু বলতে পারেন না।

আজকেও যথা নিয়মে অফিস এলাম। কিছুক্ষন পর দেখি একজন মধ্য বয়স্ক লোক অফিসে এলেন। তাকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন। আমিও তাদের দেখাদেখি দাঁড়িয়ে গেলাম তবে ব্যাপারটা বুঝলাম না।

আমিঃ রফিক ভাই?

রফিক ভাইঃ বল।

আমিঃ এই মধ্যবয়স্ক লোকটা কে?

রফিক ভাইঃ আরে ইনি তো এই কোম্পানির মালিক।

আমিঃ মানে?

রফিক ভাইঃ এই কোম্পানির আরও আরও ২টা শাখা আছে। ম্যাডাম এই কোম্পানি দেখাশোনা করেন। আর স্যার সিলেটের কোম্পানি দেখাশুনা করেন। আরেকটা ওনার জামাই দেখাশোনা করেন।

আমিঃ ম্যামের বাবা ইনি?

রফিক ভাইঃ না। ম্যামের সম্পর্কে আমরা সেইরকম কিছু জানিনা। ম্যাম আগে সিনিয়র অফিসার হিসেবে জয়েন করেছিলো। তারপর ১ বছর দেখাশোনা করার পর স্যার সিলেটে শিফট করেন আর এই কোম্পানির দায়িত্ব ম্যামকে দিয়ে যান৷ আর সিফাত ভাই ম্যানেজার ছিলেন তিনিই আছেন। প্রথমে ম্যামকে বসের দায়িত্ব দেওয়াতে সবাই অবাক হয়েছিলাম। পরে উনার কাজ আর ওনার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হয়েছি।

আমিঃ আচ্ছা।

বর্নাঃ কি নিয়ে কথা বলছো তোমরা?

আমিঃ কিছু না আপু ( বর্নাকে আমি এখন আপু বলে ডাকি)

বর্নাঃ চলো লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। সবাই মিলে খেয়ে আসি।

আমিঃ চলো

তারপর আমরা তিনজন গিয়ে খাবার খেয়ে এলাম। আজে স্যার অফিসেই ছিলেন। অফিস ছুটি হবার আগে তিনি কেবিন থেকে বাইরে আসেন। তারপর সবার উদ্দেশ্য বলেন

স্যারঃ সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আমি আজকে অফিস এসেছি একটা জরুরি ঘোষনা দেওয়ার জন্য। আসলে আমার মেয়ের কালকে ৩য় বিবাহ বার্ষিকী। সেই উপলক্ষে আমি একটা পার্টির আয়োজন করেছি আমাদের বাসায়। অফিসের সকলকে আসার জন্য অনুরোধ করছি। আর প্রতিবার অনুষ্ঠান এখানে করার কারণ হচ্ছে আমি শুরু করেছিলাম এই অফিস থেকে তাই এখানে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ৩ দিন পর অনুষ্টান হবে আপনারা সকলেই আমন্ত্রিত। আর সেই সাথে আমার ঘরে নতুন সদস্যও আসতে চলেছে তাই এই খুশি আমি সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই।

আমরা সকলে স্যারকে অভিনন্দন জানালাম। একটু পর সবাই নিজের ডেস্কে চলে গেলো। অফিস ছুটির ১০ মিনিট আগে স্যার আমার ডেস্কে আসলেন। আমি ওনাকে আমার ডেস্কে দেখে অনেকটা অবাক হলাম।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার।

স্যারঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো ইয়াং ম্যান?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ স্যার৷ আপনি কেমন আছেন?

স্যারঃ আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি আর অনেক খুশিও। তা তোমার কাজ কেমন চলছে?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ স্যার ভালোই চলছে।

স্যারঃ আমি অফিসের সকলের রিপোর্ট দেখেছি। তবে তোমার রিপোর্ট আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এতো কম সময়ে কাজ শিখে নিয়েছো। Well done young man.

আমিঃ ধন্যবাদ স্যার। দোয়া করবেন।

স্যারঃ তোমাদের সকলের জন্য আমার দোয়া আছে।
আচ্ছা সময় শেষ হয়ে এলো। আমি যায়। আর পার্টিতে পুরো ফ্যামিলি নিয়ে আসবে কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা স্যার।

স্যারঃ Good bye young man.

এই বলে স্যার চলে গেলেন৷ বড়ই অমায়িক মানুষ তিনি। একজন কর্মচারীর সাথে এইরকম আচারন সত্যি প্রশংসনীয়। আর এদের ব্যবহারের কারণেই হয়তো আল্লাহ এদের এতো সফলতা দিয়েছেন।

কাজ শেষ করে রিফাতকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম৷ রিফাত এখন পুরোপুরি মানিয়ে নিয়েছে আর আগের তুলনায় একটু চঞ্চল হয়েছে৷ এতে ভালোই হয়েছে আমার।

রাতে খাবার খেতে গিয়ে রফিক ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন

রফিক ভাইঃ কিরে নীল স্যার আজকে তোকে কি বললো?

আমিঃ তেমন কিছুনা।

রফিক ভাইঃ আরে বলনা।

আমিঃ আসলে আমার কাজ নাকি তার অনেক ভালো লেগেছে। কম সময়ের মধ্যেই কাজ শিখে নিয়েছি তাই একটু তারিফ করলেন আরকি।

রফিক ভাইঃ আসলেই তো তুই অনেক তাড়াতাড়ি কাজ শিখে নিয়েছিস। এভাবে কাজ করলে আমি সিওর ৬ মাসের মধ্যে প্রমোশন পাবি।

আমিঃ এখনই ভালো আছি ভাই। তবে পেলেও খারাপ হয়না।

রফিক ভাইঃ আমাকে প্রমোশন পেতে ১.৫ বছর লেগেছে। আর অনেকেই ৩ বছর ধরে অফিসার পদেই কাজ করছে।

আমিঃ সবাই এক রকম হলে তো সমস্যা হয়ে যেতো।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা তুই কি পার্টিতে যাবি?

আমিঃ যাবো তো ভাবছি। স্যার আবার বলে গেছেন। না গেলে খারাপ ভাবতে পারেন। কেনো তুমি যাবেনা?

রফিক ভাইঃ তুই যখন যাচ্ছিস আমিও যাবো।

আমিঃ স্যার তো নাকি এখানেই পার্টি করেন।এর আগে যাওনি?

রফিক ভাইঃ নারে। প্রতিবার কাজের বাহানায় এড়িয়ে গিয়েছি। তবে তুই যখন যাবি আমিও যাবো।

আমিঃ আচ্ছা। চলো খেয়ে নি।

খাওয়া দাওয়া করে আমি রিফাতকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন অফিস গেলাম। কাজ করছিলাম এমন সময় পিয়ন এসে বললো ম্যাডাম নাকি আমাকে ডাকছে। আমি দেরি না করে ম্যামের কেবিনে গেলাম।

আমিঃ ম্যাম আসতে পারি?

শিলা ম্যামঃ ও নীল সাহেব আসুন।

ভিতরে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে বসে আছে আর ম্যামের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

আমিঃ ম্যাম কোনো কাজ ছিলো?

শিলা ম্যামঃ হ্যাঁ একটা কাজ আছে। ( বলে একটা ফাইল এগিয়ে দিলেন) এই ফাইলটা নাও আর ৭ দিনের মধ্যে এটা কমপ্লিট করে দিবা।

আমিঃ আচ্ছা ম্যাম।

শিলা ম্যামঃ আর ইনি হলেন আমাদের বসের মেয়ে।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম ম্যাম৷

বসের মেয়েঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমাকে ম্যাম বলছেন কেনো?

আমিঃ আপনি তো বসের মেয়ে তাই ম্যাম বলছি।

বসের মেয়েঃ আমি ফরজানা চৌধুরী নিরা। আর আমি আপনার ছোট হবো তাই ম্যাম না বলে নাম ধরেই ডাকবেন।

আমিঃ কি যে বলেন না। আমি আপু বলবো আপনাকে।

নিরাঃ আচ্ছা এটাও চলবে।

আমিঃ আচ্ছা আপু আসি। আমার কাজ পড়ে আছে।

নিরাঃ আচ্ছা ভাইয়া। আর পরশু অবশ্যই আসবেন কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা আপু।

ম্যামের কেবিন থেকে বের হয়ে গেলাম। গিয়ে ফাইল চেক করছি। কাজটা আমার করা কাজগুলোর মধ্যে অনেক বেশি কঠিন। যদিও এটা করতে ৪ দিন লাগবপ আমার আর ম্যাম ৭ দিন সময় দিয়েছে। যাক ভালোই হলো। রিল্যাক্স হয়ে কাজ করতে পারবো।
হাতে একটা ছোট কাজ আছে৷ আজকে শেষ করে বাসায় গিয়ে এই কাজটা শুরু করবো। আর ছোট কাজ গুলো করার পাশাপাশি এই কাজটা করবো।

সেদিনের মতো অফিস শেষ করলাম। কাল বাদ পরশু পার্টি আছে। তাই আজকে রিফাতকে নিয়ে মার্কেট গেলাম ওর জন্য জামা কাপড় কিনতে। কিনা শেষে বাসায় আসলাম।

রাতে রফিক ভাইয়ের সাথে ক্ষেতে বসে রফিক ভাই বললেন

রফিক ভাইঃ নীল আমাকে সত্যি করে একটা কথা বলবি?

আমিঃ কি কথা?

রফিক ভাইঃ আসলে তোর জীবনে কি কি ঘটেছে আমাকে বলবি?

আমিঃ শুনা খুব জরুরি?

রফিক ভাইঃ না আসলে আমি জানতে চাই।

আমিঃ আচ্ছা তুমি যখন জানতে চেয়েছো তখন আমি বলবো। তবে হাতের কাজটা আর শেষ করি। যদিও আমার পুরোনো ক্ষতটা জেগে উঠবে তবে তোমাকে বলবো আমি৷

রফিক ভাইঃ আচ্ছা সমস্যা নাই।

হায় আল্লাহ এখন আবার আমার অতীত খুলে বলতে হবে৷ ইচ্ছা বা থাকলেও আমি রফিক ভাইকে না করতে পারবোনা৷ ছোট ভাইয়ের মতোই উনি আমাকে ভালোবাসেন। যাক বলেই দিবো।

আজ অফিসে গিয়ে সেরকম কাজ ছিলোনা আমার তাই হাতের কাজটাই শুরু করলাম। এর মাঝে একটা কাজ এসেছিলো তবে ১ ঘন্টায় ওটা শেষ করে আবার কাজে হাত দিয়েছি।। দুই দিনেই অর্ধেক শেষ। একটু পর ম্যামের ডাক পেলাম।

আমিঃ ম্যাম আসবো?

শিলা ম্যামঃ আসুন। বাকি সবাইকে তো ঠিকই বোন ভাই ডাকছেন তাহলে আমাকে শুধু ম্যাম বলেন কেনো?

আমিঃ আপনি তো আমার বস।

শিলা ম্যামঃ বস হয়েছি বলেই কি আমি সবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছি নাকি?

আমিঃ না আসলে তা নায়।

শিলা ম্যামঃ এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবে৷

আমিঃ আচ্ছা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা তোমার কাজ কিরকম চলছে?

আমিঃ ভালোই চলছে।

শিলা ম্যামঃ সময়ের আগে শেষ করতে পারবা?

আমিঃ সমস্যা নাই। আমি যথা সময়ে শেষ করে তোমার হাতে তুলে দিবো।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তবে একটু সাবধানে করবা।

আমিঃ আচ্ছা৷

শিলা ম্যামঃ আর কালকে পার্টিতে যাবেনা?

আমিঃ হুম যাবোতো। কেনো তুমি যাবেনা?

শিলা ম্যামঃ যাবো। এই ব্যাগটা রাখো। ( আমার দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললেন)।

আমিঃ কিসের ব্যাগ ম্যাম?

শিলা ম্যামঃ তোমার আর রিফাতের জন্য পাঞ্জাবি আছে এতে।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম এসবের কোনো দরকার নেই তো।

শিলা ম্যামঃ প্লিজ ফিরিয়ে দিওনা।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম এসবের কি দরকার ছিলো?

শিলা ম্যামঃ আমার মনে হয়েছে আমি দিয়েছি। ( একটু রেগে)

আমিঃ আচ্ছা নিলাম।

শিলা ম্যামঃ এগুলো পরে পার্টিতে আসবে কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা আসবো।।

ম্যামের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম। মনে মনে ভাবছি ম্যাম এতোকিছু করছে কেনো? ম্যাম কি দয়া দেখাচ্ছেন? না মন থেকে দিচ্ছেন? যাই হোক মন থেকে ঝেড়ে ফেললাম আর আবার কাজে মন দিলাম।

অফিস শেষ হবার আগে শিলা সবাইকে বলে দিলো যে আগামীকাল অফিস ছুটি থাকবে তবে পার্টিতে আসতেই হবে। যাক বাবা কালকে বৃহস্পতিবার আর পরশু শুক্রবার টানা দুই দিন কড়া করে একটা ঘুম দিবো।

অফিস শেষে বের হয়ে গেটের সামনে বর্না আর রফিক ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওদের কাছে গিয়ে বললাম

আমিঃ কি ব্যাপার আপু বাসায় যাবেনা?

বর্নাঃ যাবো তবে কালকের জন্য একটা শাড়ি কিনতে যাবো তাই রফিককে সাথে নিলাম। তুমিও চলো।

আমিঃ না আপু আমি রিফাতকে আনতে যাবো। তুমি রফিক ভাইয়ের সাথে চলে যাও।

বর্নাঃ আচ্ছা। কালকে পার্টিতে দেখা হবে তাহলে।

আমিঃ আচ্ছা।

রফিক ভাই আর বর্না চলে গেলো। যাক ভালোই চলছে ওদের কেমিস্ট্রি। আমিও চাই ওদের মিল হোক। আমি জানি রফিক ভাই বর্নাকে পচ্ছন্দ করে। তবে তিনি বাবা হতে পারবেন না তাই হয়তো বলতে ভয় পান। কারণ সব মেয়েই মা হতে চাই৷

আমি রিফাতকে নিয়ে বাসায় এলাম। রাতে খাবার পর সাহস করে রফিক ভাইকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম বর্নার ব্যাপারে।

আমিঃ একটা কথা বলবা? সত্যি করে বলতে হবে।

রফিক ভাইঃ কি কথা?

আমিঃ আচ্ছা তুমি কি বর্না আপুকে ভালোবাসো?

রফিক ভাইঃ কি বলছিস? আমি কেনো ওকে ভালোবাসতে যাবো?

আমিঃ সত্যিটা আমি বুঝি।

রফিক ভাইঃ কচু বুঝিস।

আমিঃ আমার মাথায় হাত দিয়ে বলো তাহলে।

রফিক ভাি একবার একটু ঘাবরে গেলেন।

রফিক ভাইঃ ইয়ে মানে মানে

আমিঃ লজ্জার কিছু নেই বলে ফেলো।

রফিক ভাইঃ হ্যাঁরে। ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। তবে আমার কিছু করার নেই। আমি তো কোনোদিন বাবা হতে পারবোনা

আমিঃ বলেও তো দেখতে পারো। রিজেক্ট করলে করবে।

রফিক ভাইঃ তখন যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট করে?

আমিঃ ওটা আমি দেখে নিবো।

রফিক ভাইঃ তবে আমি কিছু বলতে পারবোনা।

আমিঃ আচ্ছা আচ্ছা আমিই কালকে পার্টিতে আপুকে বলবো।

রফিক ভাইঃ বলে দেখিস।

তারপর রফিক ভাই চলে গেলো। আমি রুমে গিয়ে কিছুক্ষন কাজ করে রিফাতকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ছুটি থাকায় দেরি করে উঠালাম। উঠে নাস্তা করে কাজ করতে বসলাম। সন্ধ্যায় পার্টিতে যেত হবে তার আগে একটু কাজ করে রাখি। কাজ করতে বসালম।
দুপুরে খেয়ে আবার ছোট করে একটা ঘুম দিলাম।

পার্টিতে যাবার আগে একটু সেভ করে নিলাম। রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। আমি রিফাতকে রেড়ি করার জন্য ওর পাঞ্জাবি আনতে গেলাম। একটু ভাঁজ পরে আছে দেখে ইস্ত্রি করলাম।

ওকে রেডি করতে এসে যা দেখলাম তা দেখে আমার হাসি বেরিয়ে গেলো।
আমি দেখলাম রিফাত…………………

চলবে……………..

আড়ালে তুমি পর্ব -২

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ২
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

রাতে শুয়ে ছিলাম এমন সময় কেউ কল দিলো। আমি রিফাতের কাছ থেকে ফোন নিয়ে কলটা ধরলাম

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম

ওপাশ থেকেঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনি নীল না?

আমিঃ জ্বী। কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।

ওপাশ থেকেঃ আমি ইসরাত জাহান শিলা।

নামটা ঠিক আছে। তবে ডাকনামটা শুনে আমার প্রিয় মানুষটির কথা মনে পড়ে গেলো। ভয়েসটাও কেমন জানি মনেহচ্ছে খুব পরিচিত।

আমিঃ সরি চিনলাম না।

শিল ম্যামঃ আরে আমি আপনার অফিসের বস।

আমিঃ ( বস শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম) মমম ম্যাম আআ আপনি?

শিলা ম্যামঃ জ্বী আমি।

আমিঃ ম্যাম আমাকে ফোন দিলেন কি মনে করে?

শিলা ম্যামঃ কেনো ফোন দিতে পারিনা বুঝি?

আমিঃ না সেটা বলিনি। তো কি জন্য ফোন দিলেন?

শিলা ম্যামঃ আপনার ছেলে কি করছে?

আমিঃ কার্টুন দেখছিলো। এখন এমনি বসে আছে।

শিলা ম্যামঃ আপনার ছেলেটা এতো শান্ত কেনো?

আমিঃ মা নেই তাকে চঞ্চল বানাবে কে?

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ঘুমাবেন না?

আমিঃ হুম কিছুক্ষন পর ঘুমাবো।

শিলা ম্যামঃ খেয়েছেন?

আমিঃ জ্বী। আপনি খেয়েছেন?

শিলা ম্যামঃ হুম খেলাম। আচ্ছা আপনাকে আরেকটা কথা বলার ছিলো।

আমিঃ জ্বী ম্যাম বলুন।

শিলা ম্যামঃ আপনাকে অফিস থেকে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। সামনে সপ্তাহে উঠতে পারবেন।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম আমি তো বাসা ভাড়া নিয়েছি।

শিলা ম্যামঃ আপনি ফ্রী থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। আর ফ্ল্যাটটা অফিসের পাশেই। যাতায়াতের সময় বাঁচবে। আর আপনার ছেলেটাকে জন্যও জমা করতে পারবেন।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে ম্যাম আমি সমানে সপ্তাহে উঠবো।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা কালকে অফিসে দেখা হবে।

আমিঃ ইনশাআল্লাহ।

যাক মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো ব্যাপার। আমার এক্সট্রা খরচ হবেনা। বাসা ভাড়ার টাকাটা জমা করা হবে। তবে শিলা নামটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। জানিনা কি হয়েছিলো সেদিন। সেই বের হলো আর ফিরলো না। হয়তো আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো। নাহয় অভাবের সংসারটা পচ্ছন্দ হয়নি। তাইতো নিজের ছেলেটাকে ফেলে চলে যেতো না। কি দোষ ছিলো আমার? সেই তো আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিজের মনে জায়গা দিয়েছিলো। তাহলে কেনো আবার রাস্তাতে ফেলে চলে গেলো? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই।

সকালকে এলার্মের শব্দে উঠলাম। তারপর নাস্তা তৈরি করে নিলাম। এর মাঝে রিফাত ঘুম থেকে উঠে গেছে। কাজ শেষ করে আমি রিফাতকে তৈরি করে দিলাম। তারপর অফিস চলে গেলাম। গিয়ে নিজের ডেস্কে বসলাম। বসতে না বসতেই পিয়ন আসলো।

পিয়নঃ আপনাকে ম্যাডাম ডেকেছেন।

আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি।

রিফাতকে নিয়ে চলে গেলাম। ম্যামের কেবিনের সামনে গিয়ে বললাম

আমিঃ May I come in mam?

শিলা ম্যামঃ Yes, Come in.

আমিঃ ম্যাম কিছু বলছিলেন?

শিলা ম্যামঃ জ্বী। কালকে ম্যানেজার সাহেব আপনার কাজের রিপোর্ট আমাকে দিয়েছে। ভালোই করেছেন। আজকে থেকে আপনাকে আসল কাজ শিখিয়ে দেওয়া হবে৷ সাথে ছোট ছোট কাজগুলো করবেন। ১ মাস পর আপনার রিপোর্ট অনুযায়ী আপনাকে কাজ দেওয়া হবে।

আমিঃ জ্বী ম্যাম।

শিলা ম্যামঃ আর সামনে সপ্তাহেই ফ্ল্যাটে উঠবেন।আর আপনা ছেলেকে রেখে যান।

আমি রিফাতকে রেখে চলে এলাম। একটু পর রফিক ভাই আসলো।

রফিক ভাইঃ কেমন আছো নীল?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভাই। আপনি কেমন আছেন?

রফিক ভাইঃ আলহামদুলিল্লাহ। শুনলাম তোমাকে নাকি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে?

আমিঃ জ্বী ম্যাম কালকে ফোনে বলেছন।

রফিক ভাইঃ আসলে আমি তোমাকে আমার সাথে থাকার জন্য বলতাম। আসলে আমার কেউ নাই তো তাই একা একা ভালো লাগেনা। তুমি আর তোমার ছেলেটা থাকলে ভালো লাগতো। তবে ভালোই ফ্ল্যাটে উঠেছো। যে বিল্ডিং এ উঠবা সেখানেই আমি আছি।

আমিঃ সরি ভাই আপনার কেউ নেই মানে?

রফিক ভাইঃ বাবা মা কিছুদিন আগে মারা গেছে। একটা বড় ভাই ছিলো। সে বিদেশে কাজ করতো। হঠাৎ একদিন শুনি এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। আর আমি কোনো দিন বাবা হতে পারবোনা তাই বিয়েও করিনি। ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)

আমিঃ আরে ভাই মন খারাপ করছেন কেনো? আপনি যখন ভাই বলেছেন তখন আপনাকেও আমি বড় ভাই হিসেবে মানে করলাম। কিছুদিন পরই আমরা একসাথে থাকবো।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা। ( মুখে খুশির ঝলক)

আমিঃ আচ্ছা ভাই আপনি কয় বছর থেকে কাজ করছেন?

রফিক ভাইঃ এই ধরো ৩ বছর মতো হবে। তাই তো নতুন কেউ আসলে আমি শিখিয়ে দুই। আর বেতন আলহামদুলিল্লাহ। আমি একা মানুষ সব জমা পড়ে থাকে।

আমিঃ আচ্ছা। তা ভাই কাজ বুঝিয়ে দিন। তাড়াতাড়ি কাজ শিখিয়ে দিন।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা।

তারপর ভাই ১ ঘন্টা কাজ বুঝিয়ে দিলেন। তার ১ ঘন্টা পর আবার রিপোর্ট দেখতে আসলেন। পুরোটা পারফেক্ট না হলেও মোটামুটি হয়েছে। তবে রফিক ভাই আবার কাজটা দিলেন। এবার ৯৭% পারফেক্ট। লাঞ্চের পর আবার কাজ শুরু করবো। রিফাতকে আনার জন্য ম্যামের কেবিনে গেলাম।

আমিঃ ম্যাম আসবো?

শিলা ম্যামঃ আসুন।

আমিঃ ম্যাম ওকে খাইয়ে নিয়ে আসি।

ম্যামঃ আচ্ছা৷ এসে আবার আমার কাছে রেখে যাবেন।

আমি রিফাতকে নিয়ে ক্যান্টিন থেকে খেয়ে এলাম। তারপর আবার ওকে ম্যামের কাছে রেখে আমি আবারও কাজে মন দিলাম। রফিক ভাই আমাকে আরেকটু কাজ শিখিয়ে দিলেন। তারপর সব রিপোর্ট সারাদিনের কাজের রিপোর্ট নাকি ম্যানেজার দেখবেন।

কাজ করতে করতে ছুটির সময় চলে আসলো। ছুটির একটু আগে আগেরদিনের মতো ম্যানেজার এলো

সিফাত ভাইঃ নীল কাজের কি অবস্থা?

আমিঃ ভাই কভার হয়ে গেছে।

সিফাত ভাইঃ বাহ ভালোই তো এগিয়ে যাচ্ছো।

আমিঃ আল্লাহর রহমত ভাই।

সিফাত ভাইঃ আচ্ছা আজকের কাজের রিপোর্ট গুলো দাও।

আমি রিপোর্ট গুলো এগিয়ে দিলাম। উনি দেখতে লাগলেন। একটু পর বললেন

সিফাত ভাইঃ বাহ চমৎকার। ভালোই করছো। আচ্ছা তুমি আজকে দুইটা কাজ শিখেছো তাইনা?

আমিঃ জ্বী

সিফাত ভাইঃ কাল থেকে তুমি ট্রেনিং করবা পাশাপাশি ছোট ছোট কাজ গুলো করবা৷ আমার মনেহয় কাজ শিখতে তোমার খুবজোর ১৫ দিন লাগনে।

আমিঃ ধন্যবাদ।

একটুপর অফিস ছুটি হয়ে গেলো। আমি ম্যামের কাছ থেকে রিফাতকো নিয়ে আসলাম। আসলে ম্যামের কাছে রাখতে আমারও খুব একটা ভালো লাগেনা। যতই বাচ্চা ভালোবাসুক না কেনো এটা পরের সন্তান। তার ওপর মায়া জন্মাতে পারে তবে কিছু সময় পর বিরক্ত হবেই। তাই ভাবছি একটা
চাইল্ড কেয়ারে রাখবো। সারাদিন থাকবে আর অফিস শেষে নিয়ে যাবো। পড়াশোনাও করানো হবে সাথে অনেক বাচ্চা থাকবে ওদের সাথে খেলেবে।

বাড়ি চলে আসলাম। এসে বাবা ছেলে মিলে খেয়ে নিলাম। তারপর ওকে ঘুম পাড়িয়ে আমিও ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে উঠে আবারও সময় মতো অফিস চলে আসলাম। বরাবরের মতোই ম্যাডামের ডাক। রিফাতকে রেখে আসলাম।

ডেস্কে বসে আছি তার কিছুক্ষণ পর রফিক ভাই আসলো।

রফিক ভাইঃ কি ব্যাপার নীল ম্যাম প্রতিদিন তোমার ছেলেকে নিজের কাছে রাখে কেনো?

আমিঃ জানিনা ভাই। তার নাকি বাচ্চা অনেক ভালো লাগে। তবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওকে চাইল্ড কেয়ারে রাখবো। সারাদিন খেলাধুলা করবে, কিছু শিখবে আর অফিস শেষ করে নিয়ে আসবো।

রফিক ভাইঃ কিন্তু ম্যাডাম যদি রাখতে চাই রাখুক। বাচ্চা ছেলে একা থাকবে?

আমিঃ একা কই? আরও অনেক বাচ্চা থাকবে। তাছাড়া হাজার হলেও ম্যামের নিজের কেউ না। হয়তো ১ মাস খুব ভালো লাগবে। তারপর ঠিকই বিরক্ত হবেন। আমি চাইনা আমার ছেলে কারও বিরক্তির কারণ হয়ে উঠুক।

রফিক ভাইঃ এটা অবশ্য ঠিক। হাজার হলেও নিজের কেউ না। আচ্ছা ঠিক আছে। তোর যা ভালো মনেহয়।

আমিঃ আচ্ছা। আমার কাজ দেখিয়ে দিন।

তারপর ভাই আমাক শিখিয়ে দিলেন। বরাবরের মতোই আমি কাজ করতে থাকলাম। আমি যেই কাজ করিনা কেনো মন দিয়ে করি। কাজের সময় আমার অন্য কথা মাথায় আসেনা। তাই নতুন হবার সত্ত্বেও খুব দ্রুত কাজ করতে পারি।।

আজ শুক্রবার। তাই ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছি। সকাল ১০ টায় আমার ঘুম ভাঙলো। আমি তাড়াহুড়ো করে উঠে খাবার প্রস্তুত করলাম। তারপর রিফাতকে জাগিয়ে ওকে ব্রাশ করিয়ে দুইজন মিলে খেয়ে নিলাম৷ খাওয়া শেষে রিফাতকে নিয়ে বের হলাম৷ উদ্দেশ্য একটা ভালো চাইল্ড কেয়ারে ভর্তি করা।

অনেক্ষন খোজার পর অফিস থেকে একটু দূরে হেঁটে যেতে ১০ মিনিট লাগে এইরকম দূরত্বে একটা চাইল্ড কেয়ার পেলাম। যাক ভালোই হলো খুব একটা দূরে না। তারওপর অফিস থেকে দেওয়া ফ্ল্যাটে পরশু দিন উঠবো তই সমস্যা হবেনা৷ এখন সমস্যা হলো রিফাত মানিয়ে নিতে পারবে তো?

চাইল্ড কেয়ারে গিয়ে খোজ নিয়ে বুঝলাম বেশ ভালো পরিবেশ। তাই ভাবলাম ভর্তি করে দিবো। মাসিক ৪ হাজার লাগবে। সমস্যা নাই । রিফাত মানিয়ে নিতে পারলে খুব ভালো হবে। নাহলে সমস্যা হলেও নিজের কাছেই রাখবো। আমি চাইল্ড কেয়ারের মালিক যিনি কিনা একজন মহিলা তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।

মালিকঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।

আমিঃ আসলে আমি তো আসছিলাম। আমার ছেলেটাকে এখানে ভর্তি করতে চাই।

মালিকঃ হুম আপনার সুবিধা হলে ভর্তি করতে পারেন। আপনি কি চাকরিজীবী?

আমিঃ জ্বী। কিছুদিন আগেই একটা চাকরি পেয়েছি।

মাকিকঃ তো ছেলেকে আপনার স্ত্রীর কাছে রাখবেন। নাকি উনিও চাকরিজীবী?

আমিঃ আসলে আমার স্ত্রী নেই।

মালিকঃ সরি। তাহলে আপনি রাখতে পারেন। আমাদের এখানে অনেক শিশু আছে।

আমিঃ আচ্ছা আপনাদের সার্ভিস সম্পর্কে যদি একটু খুলে বলতেন তাহলে ভালো হয়।

মালিকঃ এখানে আমরা ওদের প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে থাকি। আনন্দের সাথে তারা শিখার সুযোগ পায়। এতে তাদের ভিতর একটা উৎফুল্লতা কাজ করে। সাথে এখানে ওরা খেলা ধুলা করার সুযোগ পায়। এখানে ক্লাস ৩ পর্যন্ত পড়ানো হবে। তারপর ভালো কোনো স্কুলে এডমিশন করাতে পারেন।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তো ফি কতো?

মালিকঃ মাসিক ৪০০০।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে আজকেই ভর্তি করাতে চাই।

মালিকঃ আচ্ছা। ফরমটা পূরণ করুন।

তারপর সব কাজ শেষে আমি রিফাতকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। ওকে ৪ দিন পর থেকে পাঠাবো বলে কথা বলে আসি।

২ দিন পর আমি আমার বাসা ছেড়ে ফ্ল্যাটে উঠলাম। রফিক ভাই আমার অনেক সাহায্য করেছেন। অফিসের টাইমে ম্যামই রিফাতকে নিয়ে থাকে। তবে জানিনা পরের সন্তানকে এতো স্নেহ করার কারণ কি?

আজ অফিসে যাবার আগে রিফাতকে নিয়ে চাইল্ড কেয়ারে গেলাম। আমি অনেক বাচ্চা আছে। আমি ওকে রাখতে গেলে ও জিজ্ঞেস করে

রিফাতঃ বাবা তুমি আমাকে রেখে চলে যাবে?

আমিঃ না বাবা। এটা তোমার স্কুল। তোমার অনেক বন্ধু হবে এখানে। আমি কাজ শেষ করেই তোমাকে নিতে আসবো।

রিফাতঃ বাবা আমি তোমার সাথে যাবো। ওই আন্টিটা আমাকে অনেক আদর করে। তুমি কাজ করবে আমি ওনার কাছে থাকবো। আমাকে রেখে যেওনা।

আমিঃ বাবা এখানে তোমার অনেক বন্ধু হবে। খুব মজা করতে পারবে।

রিফাত কোনো মতেই থাকবেনা। আমি এক প্রকার জোর করেই ওকে রেখে আসলাম। ওর চোখে পানি দেখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। একাই ওকে ৫ বছর নিয়ে থেকেছি। তবে আমার কিছু করার নেই। অন্যের দয়া দেখতে চাইনা। ম্যামের সাথে থাকতে থাকতে যদি কোনোদিন মায়ের আবদার করে বসে? আমি পারবনা এসব। বুকে পাথর রেখেই আমি আলে এলাম অফিস। আজও ম্যাডামের ডাক।

আমিঃ আসবো ম্যাম?

শিলা ম্যামঃ আসুন। আপনার ছেলে কই?

আমিঃ ম্যাম ওকে চাইল্ড কেয়ারে রেখে এসেছি।

কথাটা বলার পর ম্যামের চোখের দিকে তাকিয়ে লক্ষ করলাম পানিতে ভরে গেছে। তার চোখগুলো যেনো আমাকে খুব বকছে।

ম্যামঃ চাইল্ড কেয়ারে রাখর দরকার ছিলো? বাচ্চা একটা ছেলে একাই কিভাবে থাকবে। আমার কাছে রাখতেই বা কি সমস্যা ছিলো?

আমিঃ দেখুন ম্যাম আজ হয়তো আপনার ওকে দেখে মায়া হয় কিন্তু যখন আপনার মায়া হারিয়ে যাবে তখন তার উপর বিরক্ত হবেন। আর যদি কখনও বিরক্ত করে আর ভুল করে ওর গায়ে হাত উঠান তখন আমি ঠিক থাকতে পারবোনা। মা নাই ছেলেটার। খুব যত্নে রাখি।

শিলা ম্যামঃ ওও এইকথা? তা কোথায় ভর্তি করলেন?

আমিঃ অফিস থেকে ১০ মিনিটের লাগে পায়ে হেঁটে যেতে।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা যান কাজে মন দিন।

আমি কাজে মন দিলাম। তবে ছেলেটার জন্য কিছুতেই ভালো লাগছিলোনা। সেদিনের মতো অফিস শেষ করে আমি রিফাতকে আনতে গেলাম।
গিয়ে দেখি একটা জায়গায় বসে আছে।।আমাকে দেখে দৌড়ে চলে এলো।

রিফাতঃ বাবা বাবা তুমি এসেছো?

আমিঃ হ্যাঁ বাবা। আমার বাবাকে আমি একা রেখ থাকতে পারি? চলো বাড়ি যাবো।

রিফাতঃ বাবা আমাকে চকলেট কিনে দিবে?

আমিঃ আমার বাবা চাইবে আর দিবোনা? চলো তোমাকে চকলেট কিনে দেই

আমি রিফাতকে চকলেট কিনে দিয়ে বাসায় আসলাম৷ এখন আমি রফিক ভাই সবাই একসাথে খাবার খাই। আমার ছেলেটাকেও উনি অনেক ভালোবাসেন।

পরেরদিন আবারও রিফাতকে রেখে কাজে গেলাম। আজও রফিক ভাই কাজ দেখিয়ে চলে গেলেন।
অফিস শেষ হবার ১ ঘন্টা আগেই দেখি ম্যাডাম কোথাও চলে গেলেন।

অফিস ছুটির পর আমি রিফাতকে আনতে গেলাম। তবে আনতে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখে পুরাই অবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমি দেখলাম…………

চলবে………………..

আড়ালে তুমি পর্ব- ১

0

#আড়ালে তুমি
পর্ব ১
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

২ মাস ধরে নিজের ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছি। উদ্দেশ্য একটাই নিজের ছেলেটাকে ভালো রাখতে পারি। নিজের কোনো ইচ্ছা নাই। শুধু নিজের ছেলেটাকে যদি ঠিক রাখতে পারি তবেই নিজেকে সার্থক মনে করবো। কম বেতনে কাজ করতাম৷ তবে দিনগুলো কোনো রকমে পার করছিলাম।

আগে একটা হোটেলে কাজ করতাম। নারী কেলেঙ্কারির জন্য হোটেলটা আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। হোটেলে কাজ করে নিজের ছেলের জন্য খাবারের জোগাড় করতাম। এখন কাজ চলে গেলো। যে বাসায় থাকতাম সেখান থেকেও বের করে দিলো।

থাকতাম রাজশাহীতে। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। জীবনের সব চাইতে সুখের সময়গুলো সেখানে পার করেছি আর সবচাইতে কষ্টের সময়ের সাক্ষী এই শহর। জমানো কিছু টাকা ছিলো তাই ভেবেছিলাম ঢাকা শহরে গিয়ে একটা কাজ পাবো। তবে বাস্তবতা যে কতটা ভয়াবহ তা বুঝতে পারিনি। সব জায়গায় টাকার খেলা। পিছনে ফিরে যেতে পারবোনা।

আমি শাহরিয়ার কবির নীল। জানিনা বাবা মা কে। হয়তো কারও পাপের ফসল আমি। ছোট থেকেই একটা এতিম খানায় বড় হয়েছি। তাদের মুখে শুনেছি আমাকে নাকি খুব অল্প বয়সে কেউ রেখে গেছে। পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলাম। তবে টাকার অভাবে সব কিছু পেতাম না।

অনেক কষ্টে আর একজনের কারণে ভালোভাবে পড়াশোনাটা করতে পেরেছিলাম। তবে সে মানুষটাও যখন ছেড়ে চলে গেলো তখন আর নিজেকে গুছাতে পারিনি। এখনকার মতো এতোটুকুই থাক বাকিটা গল্পের সাথে থাকলেই জানতে পারবেন।

আমার ছেলে রিফাত কবির। বয়স ৫ বছর। ওর মা আমাদের ছেড়ে ৫ বছর আগে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে। জানিনা সে কেমন আছে আর নিজের ছেলেটার কথা মনে পড়ে কিনা।

অনার্স শেষ করেছিলাম ৩ বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত নিয়ে । নিজের উপর জোর করে অনার্স শেষ করেছিলাম। সেই যোগ্যতা আর বুকে আশা নিয়ে বিভিন্ন অফিসে ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছি।

২ মাসে ৭ টার মতো ইন্টারভিউ দিয়েছি কাজ হয়নি। প্রথমত আমার কোনো প্রস্তুতি নেই আর দ্বিতীয়ত আমার কাছে টাকা নেই।

এখন বর্তমানে ফিরি। আজকে একটা অফিসে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি। এবার এটা আমার ৮ম ইন্টারভিউ। আগেরগুলোর থেকে এই কোম্পানিটা অনেক বড়। আশা নাই চাকরির তবুও চেষ্টা করতে দেখতে সমস্যা কি?

সকাল ১১ টা। বসে আছি আর অপেক্ষা করছি কখন নিজের নম্বর আসবে? আমার ছেলেটা অনেক শান্তশিষ্ট তাই ওকে নিয়ে কোনো সমস্যা হয়না। অবশেষে ২০ জনের পর আমার নম্বর আসলো। ছেলেক রেখে রুমে প্রবেশ করলাম।

রুমে গিয়ে দেখি বস একজন মহিলা সম্পূর্ণ বোরকা পরা। পাঁ থেকে চোখ পর্যন্ত ঢাকা। বেশ অবাক হলাম। কারণ এখনকার সময় অফিসগুলোতে মেয়েরা শার্ট প্যান্ট ছাড়া আসেনা আর বস হয়েও নাকি তিনি পর্দা করে আছেন। যাক ভালোই লাগলো।

আমি গিয়ে প্রথমেই উনাকে সালাম দিলাম।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।

বসঃ ( কেমন জানি এক ধেয়ানে চেয়ে আছে। কোনো উত্তর নাই)

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম ম্যাম( একটু জোরে)

বসঃ ওওওও ওয়ালাইকুম আসসালাম। বসুন

কন্ঠটা কেমন জানি খুব চেনা চেনা লাগছে। আমি বসলাম।

বসঃ আপনার নাম?

আমিঃ জ্বী ম্যাম শাহরিয়ার কবির নীল।

বসঃ আপনার ফাইল দেন

আমি ম্যামকে নিজের ফাইল দিলাম। উনি দেখলন

বসঃ তা এর আগে কি কাজ করতেন?

আমিঃ হোটেলে কাজ করতাম ম্যাম।

বসঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্স করে হোটেলে কাজ করতেন? রেজাল্ট তো মোটামুটি চলার মতোই তাহলে?

আমিঃ ম্যাম আসলে টাকা দিতে পারিনা তো তাই কেউ চাকরি দেইনা।

ম্যামঃ তা রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় এসে চাকরি খুজার কারণ?

আমিঃ ম্যাম বেঁচে থাকার জন্য। নিজের ছেলেকে একটু সুখে রাখতে চাই।

ম্যামঃ বুঝলাম। ছেলের বয়স কত?

আমিঃ ম্যাম ৫ বছর হলো।

ম্যামঃ আচ্ছা। আপনি সমানে সপ্তাহ থেকে জয়েন করবেন। মাসে ৩০ হাজার বেতন পাবেন। আর এই নিন অগ্রীম ১০ হাজার। ভালো পোশাক বানিয়ে অফিসে আসবেন।

আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। এই বেতনে অনেক ভালো করে দিন চলে যাবে। ছেলেটার জন্যও কিছু করতে পারবো। আমি যেনো বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এতো সহজে চাকরি হবার কারণ আমি বুঝতে পারছিনা। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা।

আমিঃ ম্যাম আপনি তো কিছুই জিজ্ঞেস করলেননা হঠাৎ চাকরি দিয়ে দিলেন কেনো?

ম্যামঃ দিয়ে ভুল করেছি? আচ্ছা ফিরিয়ে নিচ্ছি।

আমিঃ সরি ম্যাম আর বলবোনা। আর আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে চাকরিটা দেওয়ার জন্য।

আমি বেরিয়ে আসতে গেলাম। তখন আমার ম্যাম ডাকলেন

ম্যামঃ এইযে মিষ্টার আপনার অগ্রীম ১০ হাজার নিয়ে যান।

আমিঃ ম্যাম আমি তো কাজেই জয়েন করিনি তাহলে?

ম্যামঃ এমনিই দিচ্ছি না বেতন থেকে কেটে নিবো।

আমিঃ যদি আমি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়?

ম্যামঃ আপনার ফাইল তো আমার কাছে। পালিয়ে লাভ কি?

আমিঃ আচ্ছা ম্যাম। আবারও ধন্যবাদ আমি আসি।

ম্যামের রুম থেকে বের হয়েই ছেলেক বুকে জড়িয়ে নিলাম। তারপর ছেলেকে নিয়ে একটা বাসার খোজ করলাম। সন্ধ্যার দিকে একটা ছোট বাসা ভাড়া নিলাম। মাসে ৬ হাজার ভাড়া। বাকি টাকা দিয়ে একটু ভালো খাবার নিয়ে এসে ছেলেকে খাওয়ালাম। ভালো খাবার পেয়ে ছেলেটা অনেক খুশি

পরেরদিন গিয়ে অফিসের জন্য একটা কিছু ভালো পোশাক নিলাম। এখানে ২ হাজার থাকলো। এখন বাকি থাকে ১৬০০ টাকা। ৬ দিন চালিয়ে দিবো। আজকে রাতে শুয়ে আছি এমন সময় আমার ছেলেটা বললো

রিফাতঃ বাবা বাবা আমার মা আকাশের তারা হয়ে গেলো কেনো?

আসলে ওকে ভুলাবার জন্য বলেছি যে ওর মা আকাশের তারা হয়ে গেছে।

আমিঃ বাবা তোমার মা খুব পঁচা তাইতো তোমাকে রেখে তারা হয়ে গেছে।

রিফাতঃ মা আমার কাছে আসবেনা?

আমিঃ কেনো বাবা আমাকে ভালো লাগেনা?

রিফাতঃ তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার মা লাগবেনা। তুমি থাকলেই হবে বাবা।

অতঃপর ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। জানিনা আমার ছেলের মা সেদিন কোথায় হারিয়ে গেলো। সেদিনের পর আর বাড়ি ফিরেনি। জানিনা কোনোদিন তার সাথে দেখা হবে কিনা।

দেখতে দেখতে অফিসে জয়েন করার দিন ঘনিয়ে আসলো। ১০ টায় অফিস শুরু হয় আর বিকাল ৫ টায় শেষ। রিফাতকে আমার সাথেই রাখবো। প্রথম দিন নিয়ে যায় তারপর ম্যাম বারণ করলে আর নিয়ে যাবোনা। যদিও আমার ছেলেটাকে সারাদিন বসিয়ে রাখলেও বিরক্ত করবেনা। তবে মোবাইলো কার্টুন দেখতে দিতো হবে।

আজ থেকে অফিস শুরু। সকাল ৮ টায় এলার্ম দিয়ে রেখেছি। আমার উঠার আগেই আমার ছেলে উঠে ধাক্কাতে লাগলো

রিফাতঃ বাবা ও বাবা, উঠো তুমি অফিস যাবানা?

আমিঃ কি হয়েছে বাবা।

রিফাতঃ বাবা অফিস যাবেনা?

আমিঃ ওহ তাইতো? চলো আগে তোমাকে ব্রাশ করিয়ে দি।

রিফাতকে ব্রাশ করিয়ে ওর জন্য কিছু খাবার তৈরি করে ওকে রেডি করলাম। আর তারপর আমি নিজে তৈরি হয়ে অফিস গেলাম। টাইমের ১০ মিনিট আগেই অফিসে পৌছে গেছি।

অফিসে প্রবেশ করে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। কারণ আমার ডেস্ক না দেখিয়ে দিলে আমি কীভাবে কাজ করব? তারওপর আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে।

একটুপর পিয়ন বললো ম্যাম নাকি ডেকে পাঠিয়েছেন।

আমিঃ ম্যাম আসতে পারি?

ম্যামঃ আসুন।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম

ম্যামঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। বসুন। আর আপনার সাথে এই কিউট পিচ্চিটা কে?

আমিঃ ম্যাম আমার ছেলে।

দেখলাম ম্যাম এক ধ্যানে রিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমিঃ ম্যাম শুনতে পাচ্ছেন।

আমার ডাকে তার ঘোর কাটলো।

ম্যামঃ তা ওর মায়ের কাছে না রেখে অফিস নিয়ে আসলন যে?

আমিঃ আসলে ম্যাম আমার ওয়াইফ নেই।

ম্যামঃ ওহ সরি সরি।

আমিঃ ম্যাম সমস্যা হলে আমি কাল থেকে ওকে নিয়ে আসবোনা।

ম্যামঃ সমস্যা নাই। বেশ কিউট আপনার ছেলটা।

আমিঃ ধন্যবাদ ম্যাম। আসলে ওর মায়ের মতো হয়েছে।

ম্যামঃ ওকে আমার কাছেই রাখবেন। আমার ছোট বাচ্চা অনেক ভালো লাগে।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম আপনাকে বিরক্ত করলে?

ম্যামঃ সমস্যা নেই।

আমিঃ ম্যাম যদি আমাকে আমার কাজটা দেখিয়ে দিতেন তো ভালো হতো।

ম্যাম ম্যানেজার সাহেবকে ডাক দিলেন৷

ম্যানেজারঃ ম্যাম ডেকেছেন?

ম্যামঃ জ্বী। উনাকে উনার ডেস্ক দেখিয়ে দিন আর কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য রফিক ভাইকে বলে দিবেন। আপনি এখন ওনাকে প্রাথমিক জিনিসগুলো বুঝিয়ে দেন।

ম্যানেজারঃ জ্বী ম্যাম। এইযে ভাই আপনার নাম?

আমিঃ জ্বী শাহরিয়ার কবির নীল।

ম্যানেজারঃ আমি সিফাত রহমান। আমাকে সবাই সিফাত ভাই বলে। আপনিও ভাই বলে ডাকবেন।

আমিঃ জ্বী স্যার। না মানে জ্বী ভাই। তাহলে আমাকে তুমি করে বলবেন।

ম্যানেজারঃ আচ্ছা। চলো তোমাকে তোমার কাজ বুঝিয়ে দেই।

তারপর আমাকে আমার ডেস্ক দেখিয়ে দেওয়া হলো। আমার ছেলে ম্যাডামের রুমে আছে। ম্যাডাম ওনার কাছে রেখেছেন।

ম্যানেজারঃ এটা তোমার ডেস্ক। আমি বেসিক জিনিসগুলো তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি। আজকে আপাতত এইগুলোই রিপোর্ট করবা৷ আমি তোমার কাজ দেখে তারপর পরের কাজগুলো বুঝিয়ে দিবো।

আমিঃ আচ্ছা ভাই।

তারপর উনি আমাকে প্রাথমিক জিনিসগুলো বুঝিয়ে দিলেন। কাজগুলো কঠিন লাগলেও একটু মন দিয়ে করতেই সব বুঝে নিলাম। একটু পর একজন লোক আসলো। আমার থেকে ৩-৪ বছরের বড় হবে।

লোকটাঃ আসসালামু আলাইকুম

আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।

লোকটাঃ আমি রফিক মাহমুদ।

আমিঃ আমি শাহরিয়ার কবির নীল। ম্যাম আপনার ব্যাপারেই বলছিলো মনেহয়।

রফিক ভাইঃ হুম। আমিই তোমাকে সব শিখিয়ে দিবো। তুমি করে বলছি এতে আবার মনে কিছু কইরেন না।

আমিঃ আরে ভাই কি যে বলেননা। তুমি করে বলাতেই আমি বেশি খুশি হবো। আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো। তুই করে বললেও খুশি হবো।

রফিক ভাইঃ না না। আচ্ছা তুমি আজকের কাজের রিপোর্ট গুলো জমা দিয়ে দিও। যদি সব ঠিক থাকে তবে কাল থেকে তোমাকে কাজ বুঝিয়ে দিবো।

আমিঃ আচ্ছা ভাই।

রফিক ভাই চলে গেলেন। ভেবেছিলাম নতুন জায়গায় অনেক সমস্যা হবে। তবে এখন দেখি সবাই অনেক মিশুক। অনেক ভালো লাগছে তাদের ব্যবহারে।

দুপুরের খাবারের সময় আমি ম্যামের কেবিনে গেলাম রিফাতকে ডাকতে।

আমিঃ ম্যাম আসতে পারি?

ম্যামঃ আসুন আসুন।

আমিঃ ম্যাম ও কি বিরক্ত করছে আপনাকে?

ম্যামঃ আরে না না। বাচ্চারা যে এতো শান্ত হয় আজকেই প্রথম দেখলাম। আপনার ছেলেটা অনেক শান্ত।

আমিঃ ম্যাম আমি ওকে খাইয়ে নিয়ে আসি।

ম্যামঃ আচ্ছা। খাইয়া আপনার কাছে রাখবেন। আমার একটু কাজ আছে।

আমিঃ আচ্ছা।

তারপর রিফাতকে নিয়ে গেলাম ক্যান্টিনের দিকে। ওকে খাইয়ে আমি নিজে খেয়ে নিয়ে এলাম আমার ডেস্কে। কাজ করছি আর রিফাত ঘুমিয়ে গেছে। আমি কোনো রকমে ওকে কোলে নিয়ে কাজগুলে করছি। এমন সময় আবার রফিক ভাই আসলো।

রফিক ভাইঃ আরে নীল পিচ্চিটা কে?

আমিঃ ভাই এটা আমার ছেলে।

রফিক ভাইঃ অফিসে নিয়ে আসছেন যে?

আমিঃ ভাই ওর মা নেই তো তাই আরকি।

রফিক ভাইঃ তো আপনার বাবা মায়ের কাছে রেখে আসতেন।

আমিঃ আসলে ভাই হয়েছে কি আমি এতিম। জ্ঞান হবার পর বাবা মাকে কোনোদিন দেখিনি আর ওনাদের ব্যাপারে কোনো কিছু জানিও না। ছেলেটা আমার একা কোথায় থাকবে বলুন?

রফিক ভাইঃ নীল তুমি মন খারাপ করিও না ভাই। আমি আসলে বুঝতে পারিনি।

আমিঃ বুঝতে পারলে বলতেন নাকি?

রফিক ভাইঃ ছেলেটা তো সেই কিউট।

আমিঃ মায়ের মতো হয়েছে।

রফিক ভাইঃ তোমাকে কিছু বলতে চাই তবে সঠিক সময় আসলে বলবো।

আমিঃ বলে ফেলুন ভাই।

রফিক ভাইঃ না না এখন না। সময় আসলে বলবো আগে তোমার সাথে সম্পর্কটা একটু গভীর হোক।

আমিঃ আচ্ছা ভাই।

রফিক ভাইঃ কাজ গুলো রেডি রাখবেন৷ সিফাত ভাই দেখতে আসবেন কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা

কাজ করতে করতে অফিস শেষ হবার সময় চলে এসেছে। তখন সিফাত ভাই মানে ম্যানেজার এলো

ম্যানেজারঃ নীল তোমার কাজ হয়েছে?

আমিঃ জ্বী ভাই।

ম্যানেজারঃ দেখি

এরপর ১০ মিনিট ধরে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন। তারপর বললেন

ম্যানেজারঃ বাহ চমৎকার। এতো তাড়াতাড়ি প্রথম ধাপ পার করবেন ভাবতেই পারিনি। কাল থেকে রফিক তোমাকে আসল কাজ বুঝাতে শুরু করবে।

আমিঃ আচ্ছা ভাই।

এরপর অফিস ছুটি হলো। বাড়িতে এসে আমি রিফাতকে খাইয়ে দিলাম। তারপর ওকে ফোন দিলাম। ও নিজের মতো কার্টুন দেখতে থাকলো।
আমি শুয়ে আছি এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো আমি রিফাতের হাত থেকে ফোন নিয়ে কল ধরলাম।

তবে ওপাশ থেকে যিনি কথা বলছিলো তার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম……………

চলবে…………..

চন্দ্রকুঠি পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

1

#চন্দ্রকুঠি
পর্ব (১৫তথা শেষ)
#নুশরাত জাহান মিষ্টি

রাফি এবং মাধুরি একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। বেশ কিছুক্ষন নিরব কান্নায় কেটে গেলো। মুন এবং রিয়াদ পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। মুন এবং রিয়াদকে লক্ষ্য করে রাফি মাধুরিকে ছেড়ে দিলো। নিরবতা ভেঙে রাফিই বললো,” কেমন আছো মাধুরি”?
মাধুরি কান্নারত অবস্থায় বললো,” যেমন থাকার”।
” এভাবে বলো না। আমরা তো এক হয়ে গেছি তাই না, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সব ঠিক করে নেবো”।
” হুম”।
রাফি এবার মুনের দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না, তবে তুমি আমাকে আজ যা উপহার দিলে তা…..”।
রাফির কথা শেষ করতে না দিয়ে মুন বললো,” কৃতজ্ঞতা প্রকাশটা পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দিন ভাইয়া। আপনার জন্য আমার আরো বড় উপহার তৈরি আছে”।
” আরো বড় উপহার সেটা কি”?
রাফির প্রশ্নের উত্তরে রিয়াদ বললো,” এই তো আজ আপনার আর মাধুরির সাক্ষাৎ করানো, কাল মাধুরির সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি দেওয়া। মাধুরিকে পেয়ে যতটা আনন্দ পেয়েছেন, মাধুরির অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে নিশ্চয়ই তার থেকে বেশি আনন্দিত হবেন”।
” হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আমরা তাদের শাস্তি কিভাবে দিবো”?
রিয়াদ বললো,” এই তো কাল আমরা ‘চন্দ্রকুঠি’ রেট করবো। রেট করার পর সেখানে বাধ্য হয়ে থাকা মেয়েগুলোর মুখ খোলানো ততটা কঠিন হবে বলে আমার মনে হয় না। তাদের মুখ খুললেই তাদেরকে সাক্ষী হিসাবে দাঁড় করাবো আমরা, সাথে মাধুরিতো আছেই”।
” কালকেই রেট হবে”?
মুন বললো,” হ্যাঁ”।
” আচ্ছা। কালকের পর আমরা একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবো”।
” তা তো বটেই”।
মুন এবং রিয়াদ রহস্যময় হাঁসি দিলো।

মুন এবং রিয়াদকে বিদায় দিয়ে রাফি এবং মাধুরি ঘুরতে বের হলো। অনেকদিন পর একে-অপরকে পেয়ে খুব খুশি তারা।
তবে আনন্দ মূহুর্ত সবসময় দীর্ঘ হয় না। তাই বোধহয় হঠাৎ করে মাধুরির মাথাটা ঘুরে উঠলো। চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখতে শুরু করলো। কিছু মূহুর্তের মাঝে মাধুরি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।


বেশ কিছুক্ষন পর মাধুরির জ্ঞান ফিরে। চোখ খুলে নিজেকে যেখানে আবিষ্কার করলো সেখানে নিজেকে দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলো না মাধুরি। এই রুমটা মাধুরির চেনা। হ্যাঁ খুব চেনা। এটা ‘চন্দ্রকুঠির’ একটি রুম। মাধুরি পাশ ফিরে তাকিয়ে আরো অবাক হলো, কেননা সেখানে আরো দশ জনের মতো মেয়েকে বসে আছে । মাধুরির কান্না পাচ্ছে নিজেকে এখানে দেখে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মাধুরি বললো,” আমাদের এই রুমে একসাথে রাখা হয়েছে কেন”?
একটি মেয়ে বললো,” আমাদের মুখ খোলার ভয় রয়েছে তাই আমাদের আজ রাতে পাচার করে দেওয়া হবে”।
” মুখ খোলার কথা আসছে কেন? চাইলেই তো এখান থেকে পালানো সম্ভব নয় তাই না”?
” শুনেছি কাল এখানে রেট হবে তাই আজকেই সব ব্যবস্থা করে রাখছে তারা”।
এবার মাধুরি গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবলো। রিয়াদ বলেছিলো কাল এখানে রেট হবে। তারমানে যারা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে তাদেরকে পাচার করা হবে আজ! মাধুরি মনেমনে বেশ ভয় পেলো।

কিছুক্ষন পর দরজা খুলে তালুকদার বাড়ির সব পুরুষরা ভিতরে ডুকলো, সাথে ‘চন্দ্রকুঠির’ প্রধান মহিলাও।
রাতুলের বাবা বললেন,” খুব তো এখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলি কিন্তু পালিয়ে বাঁচতে পারলি কি”?
” আমার সাথে আপনাদের কি শত্রুতা কেন করছেন এমন”?
এবার দাদু বললেন,” তোর সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। তুই আমাদের আরিফের মেয়ে, সেই হিসাবে তোর সুন্দর জীবনে আমরা আঘাত করতে চাইনি। কিন্তু”!
” কিন্তু কি”?
এবার রাতুলের বাবা বললেন,” দেখ তুই এখানে আসার আগে অব্দি আমরা জানতাম না তুই আরিফের মেয়ে। তোকে এখানে নিয়ে আসার পর আমাদের জানানো হয়েছে। একটুপর তো চলেই যাবি তাই সব সত্যি শুনেই নাহয় যা”।
এবার রাফির বাবা মুখ খুললেন,” তোর মা চন্দ্রর কথা হয়তো তুই জানিস। না জানলে শুনে নে…… (যতটা জানানো হয়েছে ততটা এখানে বলা হলো)। তো যাই হোক চন্দ্রকে আমার ভালো লাগতো। আমি ওকে পেতে চেয়েছিলাম। তাই কারাগারে ওকে বলেছিলাম,
অতীত,
কারাগারে চন্দ্রর সামনে বসে আছে রাফির বাবা। তাকে দেখে চন্দ্র কিছুটা ভয় পেলো। চন্দ্র কিছু বলতে নেওয়ার আগেই রাফির বাবা বললেন,” আজ তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমার সাথে আরিফের সম্পর্কে আমি আজও মেনে নিতে পারিনি। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, আমি একটা প্রস্তাব নিয়ে তোমার কাছে এসেছি। তুমি কি জানতে চাও কি প্রস্তাব”?
চন্দ্র বেশ অবাক হলো। অবাক হয়েই বললো,” কিসের প্রস্তাব”?
” দেখো আমি এখানকার জেলার। আমি চাইলে তুমি এখান থেকে পালাতে পারো। তাই বলছিলাম চলো আমরা দু’জন আলাদা সংসার শুরু করি। তুমি তোমার বাচ্চাটাকে কোন অনাথ আশ্রমে দিয়ে আমার সাথে নতুন করে সংসার শুরু করবে…..”।
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই চন্দ্রর হাতের থাপ্পড় পড়লো তার গালে। চন্দ্র বেশ উত্তেজিত হয়ে বললো,” আপনার লজ্জা করে না, নিজের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে এমন কু-প্রস্তাব দিতে। আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে আপনি একজন জেলার। ছিঃ। থুতু মারি আপনার মুখে”।
” চন্দ্র”। চিৎকার করে
” চিৎকার করলেই আমার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা ভাবার ভুল করবেন না। আর হ্যাঁ একটা কথা শুনে রাখুন আমার যে সন্তানকে আপনি অনাথ আশ্রমে দেওয়ার কথা বলেছেন, একদিন এমন নাহয় এই সন্তানের জন্য আপনাদের আমার স্থানে, এই কারাগারে থাকতে হয়”।

বর্তমান,
সেদিন চন্দ্রর কথায় আমার খুব রাগ হয়েছিলো৷ সেদিনই ঠিক করে নিয়েছিলাম ওর যে সন্তান হবে তার জীবনটা আমি সুখের হতে দিবো না। তাই তোমাকে প্লান করে এখানে নিয়ে এসেছি।

সব শুনে মাধুরি কান্নায় ভেঙে পড়লো। মাধুরি আস্তে করে বললো,” এই বাড়িতে এসব কবে থেকে শুরু হলো”?
রাফির দাদু বললো,” আধ ঘন্টা পর তোমাদের সবাইকে এখান থেকে পাচার করা হবে। তো শুনেই যাও সেই পুরনো দিনের কথা।
যেদিনকে শরীরের চাহিদা উপলব্ধি করি সেদিন থেকেই আমার নিষিদ্ধ পল্লীতে যাওয়া আসা শুরু হয়। সেখানকারই একজন ছিলো চন্দ্রর কাকীমা। সেখান থেকে কিভাবে জানো চন্দ্র কাকাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে। সেই হিসাবে চন্দ্রর সম্পত্তির প্রতি আমার যেমন লোভ ছিলো তেমন চন্দ্রর কাকীরো। তো যাই হোক চন্দ্রর ফাঁসি দেওয়ার পর দেহের তারনায় চন্দ্রর কাকী আবার সেই ব্যবসা শুরু করে। তখন তার মাথা থেকেই এই বুদ্ধিটা আসে এই বাড়িতে এসব শুরু করলে কেমন হয়! সেদিন থেকেই এখানে এসব শুরু হয়। আমাদের দিন-কাল ভালোই চলছিলো। হঠাৎ একদিন চন্দ্রর কাকীর সাথে আমার ঝগড়া হয়। কেননা সে এখানকার ব্যবসার সব টাকা নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলো। এখানকার রাজত্ব একার করতে চেয়েছিলো। তাই বুদ্ধি করে তাকে মেরে ফেলি। এরপর এই রাজত্ব আমার হয়। আমার দুই ছেলেই আমার মতো তৈরি হয়েছিলো। শুধু আরিফকেই তৈরি করতে পারলাম না। এই আফসোসটা রয়ে গেলো”।

মাধুরি এবার বেশ বিষ্ময়কর কর একটি কান্ড ঘটালো। রাফির দাদুর গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো।
” আপনার লজ্জা করে না, ছেলে খারাপ হয়নি বলে আপনি আফসোস করছেন। যেখানে সব বাবা-মা সন্তানকে ভালো পথে চলতে শেখায়…..”।
মাধুরি আর কিছু বলতে পারলো না। কেননা তার গালে বেশ জোরে কেউ একজন থাপ্পড় মারলো। থাপ্পড়ের যন্ত্রণা থেকে যে মানুষটা থাপ্পড় মেরেছে তাকে দেখে বেশি যন্ত্রণা হলো মাধুরির। বুকের বা পাশটা বেশ ব্যাথা করতে শুরু করলো। কারন সেই মানুষটিকে মাধুরি আপন ভেবে আঁকড়ে ধরেছিলো। সে আর কেউ না মাধুরির ভালোবাসার মানুষ রাফি। মাধুরির কন্ঠ দিয়ে আর কোন কথা বের হলো না। রাফির দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। রাফি মাধুরির দৃষ্টি উপেক্ষা করে বললো,” পরিবার ছোট থেকে যে শিক্ষায় বড় করে সন্তান সেই শিক্ষায় অর্জন করে। তুমি আমাকে দেখে অবাক হলেও আমি কিন্তু কষ্ট পাচ্ছি না মাধুরি। আমি জানতাম না আমার বাবা তোমাকে ভালোবাসার ছলে এখানে নিয়ে আসতে কেন বললো! না জেনেই তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম। জানার পর একটু কষ্ট হয়েছিলো কারন আমার বাবা আমার মাকে ছেড়ে তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলো। এটা একজন সন্তানের জন্য কষ্টের। তবে যে পথে আমি পা দিয়েছি সেখান থেকে বেড়োতে পারবো না। তাই তোমাকে আজ এখান থেকে যেতেই হবে”।
রাতুল বললো,” গাড়ি এসে গেছে, সবাইকে অজ্ঞান করার ব্যবস্থা করো”।

মাধুরি এখনো অপলক দৃষ্টিতে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েগুলো অজ্ঞান করার জন্য একজন এগিয়ে গেলেই পিছন থেকে পুলিশ এসে সবাইকে ধরে নিলো।
রাতুলের বাবা, ” এখন পুলিশ কিভাবে আসলো? রাফি তুই তো বলেছিলি পুলিশ কাল আসবে”।
রাফি নিজেই অবাক। এখানে এখন পুলিশ কোথা থেকে এলো। পুলিশের তো আসার কথা ছিলো না।

” বিশ্বাস খুব দামী জিনিস। বিশ্বাসের ঘরে একবার সন্দেহ ডুকলে সেখানে দ্বিতীয়বার বিশ্বাসের জন্ম হয় না। সেখানে তুমি আমার বিশ্বাস কখনো ছিলেই না, তার আগেই সন্দেহ আমার মস্তিষ্কে ঘোরাফেরা করছিলো। তাই তোমার নিখুঁত অভিনয় আমার সন্দেহ দূর করতে পারেনি”।
পিছন থেকে মুন কথাটি বললো। মুন এবং রিয়াদকে দেখে রাফি আরো বেশি অবাক হলো। রিয়াদ একজন মহিলা পুলিশকে মেয়েগুলোকে নিয়ে যেতে বললো, আর একজনকে মাধুরিকে তার বাবার কাছে নিয়ে যেতে বললো। বাবা নিচে আসে শুনে মাধুরি চলে গেলো। মুনকে দেখে রাফির দাদু বললো,” এই মেয়ে তুই এখানে কেন? তোকে মাধুরির যায়গায় পাঠানোর জন্য আরিফ প্লান করে তোর মুখে সার্জারী করলো আর তুই ওর মেয়েকে বাঁচাতে এসেছিস”।
কথাটি শুনে মুন বেশ অবাক হলো। রাফি তো জানতো মুন মাধুরির বোন। তাহলে রাফি নিজের পরিবারকে বলেনি কেন! মুনের সম্পর্কে সত্যিটা বললে তালুকদার বাড়ির সবাই বুঝে যেতো মুন আরিফ সাহেবের নিজের মেয়ে। মুনকে আরো চমকে দিয়ে রাফি বললো,” তুমি ভুল করছো দাদু। মুনের মুখে কোন সার্জারী হয়নি বরং ও আরিফ কাকার নিজের মেয়ে”।
রাতুল বললো, ” কি বলছিস তুই? তাহলে মাধুরি কে”?
” মাধুরি ময়নামতির মেয়ে। মুনের খালাতো বোন”।
সবাই বেশ চমকালো। মুন এবং রিয়াদও কিছুটা চমকালো। রাফি সব জেনেও এতদিন চুপ ছিলো কেন!
রাফি মুনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,” তোমার মনে আমার জন্য তো ভালোবাসার জন্ম হয়েছিলে, তাহলে সেই ভালোবাসা সন্দেহ পরিনত হলো কিভাবে”?
এবার মুন কিছুটা মুচকি হেঁসে বললো,” সেদিন রাতে তোমার রুমের দেয়ালে পাহারের পেইন্টিং দেখেই সন্দেহ শুরু হয়। কারন ওরকম পেইন্টিং আমি ভিডিওতে দেখেছিলাম যেখানে তুমি বন্দী ছিলে। তখন ইচ্ছে করে তোমার রুমের লাইট অফ করে দেই তারপর বিছানার উপর বসি। বিছানায় বসে আমি নিশ্চিত হলাম ওখানে বসেই ভিডিওটা বানানো হয়েছিলো”।
এরপর রিয়াদ বললো,” আমরা জানতাম তোমাদের বংশের সবাই মেয়েবাজ। তাই ইচ্ছে করে তোমাকে শোনানোর জন্য সেদিন মুন এবং আমি ঐসব কথা বলেছিলাম”।
এবার মুন কিছুটা ব্যঙ্গ করে বললো,” তবে মানতে হবে তুমি খুব ভালো অভিনেতা। এত নিখুঁত অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। আমাদের জালে তো ফাঁসলেই না উল্টো এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপনা করছিলে মনে হচ্ছিলো মাধুরিকে হারানোর ব্যাথায় তুমি শেষ হয়ে গিয়েছো। আসলে সত্যি হলো তুমিও তোমার বাবার মতো নোংরা মানুষ। বাবার এবং শহরের বড় বড় মানুষদের ব্লাকমেইল করে নিজের পছন্দমতো কারাগারে জেলার হিসাবে জয়েন করেছো। ইচ্ছে করে রেবেকাকে কষ্ট দিয়েছো কারাগারের মধ্যে। ওর শেষ চিঠিতে তোমার কারাগারের মাঝে করা নোংরামি সব উল্লেখ ছিলো”।
এবার রিয়াদ বললো,” তবে ধরা তুমি আমাদের কাছে আগেই খেয়েছো। তোমার অভিনয়ে আমাদের মাঝে কনফিউশান থাকলেও সেদিন মুনকে অনুসরন করে ঐ বাসাটা চিনে সেখানে লোক পাঠিয়ে ঘূর্ণিঝড়(এলেমেলো) বানানোটা তোমার বোকামি ছিলো। তাই তো এভাবে ধরা খেলে। আমরা জানতাম আমরা যদি বলি আমরা কাল রেট করবো তবে তোমরা আজকে এরকম কিছুই করবে। দেখো তাই হলো”।

মুন বললো,” তোমাদের জন্য একটা চমৎকার খবর আছে। মেয়েগুলোর সাক্ষীও আমাদের আর প্রয়োজন নেই কারন তোমরা এতক্ষন যা যা বলেছো করেছো সবকিছুর ভিডিও রেকর্ডিং আছে আমাদের কাছে”।

রাফির দাদু বেশ তেজ দেখিয়ে বললেন, তোমাদের এর ফল ভোগ করতে হবে”।

রিয়াদ মুচকি হেঁসে তাদের সবাইকে নিয়ে যেতে বললো। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হলো।

_______

কেটে গেলো কিছুদিন। সমস্ত সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে সবাইকে মৃতুদন্ড দেওয়ার নির্দেশ দিলো আদালত। ‘চন্দ্রকুঠিতে’ জোর করে নিয়ে আসা সবাইকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। অন্ধকার জীবন থেকে আমরা যতই মুক্তি পাই না কেন, অন্ধকার মূহুর্তগুলো আমাদের পিছু ছাড়ে না। ঠিক সেরকমভাবে পরিবার তাদের মেনে নিলেও সমাজ মেনে নেয়নি। সমাজের তীক্ত উক্তি সবার মনোবলকে ভেঙে দিয়েছে।
তবে সব অন্ধকারের পিছনেই কিছুটা আলো লুকায়িত থাকে। কারো জীবনে সেই আলো সময়ে ধরা দেয়, কারো বা অসময়ে। মেয়েগুলোর জীবনে আলোটা সময়েই ধরা দিলো তাই তো তালুকদার বাড়ির সকল বউরা মেয়েগুলোকে নিজেদের একজন হিসাবে মেনে নিয়েছে। তাদের সবার দায়িত্ব নিয়েছে। তালুকদারদের সেই অবৈধ টাকা নাহয় মেয়েগুলো সুস্থ জীবন পাক। এই আশায় সবাইকে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন তারা। সেই সাথে এই আশ্বাস দিয়েছেন একদিন তারা সবাই এগিয়ে যাবে। তাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। সমাজ কথা বলবে, যতদিন নিজের পরিচয় না গড়বে ততদিন সমাজ বলেই যাবে। তাদের সব কথাতে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
এই কথাটা শুধু ঐ মেয়েগুলোর জন্য নয় মাধুরির জন্যও প্রযোজ্য। সেই সাথে সমাজের আনাচে কানাচে থাকা হাজারো মাধুরির জন্য।

মুন দাঁড়িয়ে আছে কারাগারের সামনে। কারাগারের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। মনেমনে বলছে,” জন্মস্থানকে মানুষ ভালোবেসে আপন করে নেয়। আচ্ছা আমিও কি ভালোবেসে এই কারাগারকে আপন করে নিতে পারবো! সবাই কি নিজ জন্মস্থানকে ভালোবাসতে পারে”!
” আমি জানি তুমি এখানে কেন এসেছো”?
রাফির কথায় ভাবনা থেকে বের হলো মুন। হ্যাঁ মুন আজ রাফির সাথে দেখা করতে এসেছে।
” কি জন্য এসেছি”?
মুন প্রশ্ন করলো রাফিকে।
” সত্যি জেনেও আমি নিজের পরিবারকে সত্যিটা কেন বললাম না তাই তো”?
” যদি বলি হ্যাঁ এটাই জানতে চাই”?
” আমি জানি এটাই জানতে চাও তুমি”।
” তাহলে উত্তরটা দিয়ে দেও”?
” মাধুরিকে চন্দ্রকুঠি অব্দি টেনে আনার সময়ও আমি কিছু জানতাম না। জানতে পেরেছিলাম পরে”।
” সে যাই হোক বললে না কেন কাউকে? বললে হয়তো আজ বেঁচে থাকতে”?
মুনের কথা রাফি একটা হাঁসি দিলো। সাধারণ হাঁসি নয় রহস্যময় হাঁসি।
” সব প্রশ্নের উত্তর জানতে নেই মুন। নিজের এই কৌতুহল প্রবন মনকে দমিয়ে রাখো। জীবনে সব প্রশ্নের উত্তর জেনে যাওয়া ঠিক নয়। জীবন কিছু কিছু প্রশ্নকে সারাজীবন বাঁচিয়ে রাখা উচিত। এতে জীবন সুন্দর হয়”।
” মানে…..”।
” এই প্রশ্নটি থাক না তোমার অজানা”।
মুন কিছু বলতে নিবে তখন রাফি বলে উঠলো,” মাধুরিকে ভালো রেখো। সমাজকে এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে বলো। মাধুরি একজন সফল ডাক্তার হলে আমার ভালো লাগবে”।
” সত্যি করে বলবে জীবনে কখনো মাধুরিকে একটুর জন্য হলেও ভালোবেসেছিলে”?
” না। ভালোবাসিনি কখনো তবে এক মূহুর্তের জন্য হলেও মায়ায় পড়েছিলাম। সেই মায়ার জন্যই বলছি মাধুরি ভালো থাকলে আমার ভালো লাগবে। মাধুরি একদিন জীবনে অনেকটা এগিয়ে যাবে সেদিন হয়তো আমি থাকবো না। তবে সেদিন আমার আত্নার মুক্তি ঘটবে”।
” আচ্ছা আসছি আমি”।
মুন মনেমনে ভেবে নিলো,” থাক না কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানা। রাফি কেন তার সত্যিটা প্রকাশ করেনি সেটা নাহয় প্রশ্ন হয়েই থেকে যাক”।
মুন যাওয়ার জন্য বা পা বাড়ালো পিছন থেকে রাফি বলে উঠলো,” ভালো থেকে মাহযাবিন। খুব ভালো থেকো”।
কথাটি বলে রাফি হেঁসে দিলো। মুন পিছনে ঘুরে রাফির হাঁসিময় মুখ দেখে একবার থমকে দাঁড়ালো। কত নিষ্পাপ সেই হাঁসি। সকল ভাবনাকে পিছনে ফেলে মুন চলে গেলো।

মাধুরি ঘরের কোনে চুপটি করে বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে নিরবে কাঁদছে। তবে এই কান্নাটা রাফির জন্য নয় নিজের জন্য। মাধুরি আর মুনের সম্পর্কের কথা জানতে পারার কান্না। মাধুরি জেনে গেছে তার আসল পরিচয়। বাবা আর বোন তার খুশির জন্য সত্যিটা আড়াল করলো। কিন্তু তারা জানে না সত্যি আড়ালে থাকতে বড্ড অপছন্দ করে। তাই তো মাধুরির কাছে সত্যিটা ধরা দিলো।
মাধুরি সব ভাবনাকে পিছনে ফেলে মনেমনে ঠিক করে নিলো তার বাবা না চাইলেও সে কোনদিন জানাবে না তার কাছে সত্যিটা ধরা দিয়েছে। সত্যিটা তার কাছে প্রকাশিত জানলে হয়তো মুন তার মুখোমুখি হতে সংকোচবোধ করবে৷ মুনের মনে সবসময় বেদনার অশ্রু থাকবে, তার জন্য মাধুরির জীবনে এতটা কষ্ট। মুনকে কখনো সংকোচে ফেলবে না মাধুরি। তাই ঠিক করে নিলো সেও কখনো জানাবে না কথাগুলো। এখন মাধুরির একটাই লক্ষ্য সমাজকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া।

রিয়াদ ও মুন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। নিরবতায় কিছুটা সময় কাটলো। কখনো কখনো নিরবাত খুব আনন্দ দেয়। তেমনি নিরবতাটা রিয়াদের খুব ভালো লাগলো। তবে ভালো লাগাটা বেশিক্ষন স্থায়ী ছিলো না। নিরবতা ভেঙে মুন বললো, ” আসছি আমি। আপনার আর আমার একসাথে পথচলা এতটুকুই ছিলো। আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ”।
” আমাদের আর কখনো দেখা হবে না”?
” চলতি পথে চলতে চলতে কোন এক রোদেলা দিনে হয়তো দেখা হবে। মেঘলা দিনের গল্পগুলো সবার জীবনে থাকে, আমরা নাহয় তপ্ত রোদের গল্প লিখে যাবো”।
রিয়াদ মুচকি হাঁসলো। মুন রিয়াদের সাথে হাত মিলিয়ে চলে গেলো। মুনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রিয়াদ বললো,” ভিক্টিমের পরিবারের সদস্যকে সাথে নিয়ে কখনো কেস সমাধানে যাবো না। কেননা সে মুন নয়”।

দীর্ঘ দিন পর মেয়েদের অসহ্যকর যন্ত্রণার সাক্ষী হতে হচ্ছে না তাকে। যন্ত্রণার কারন হতে হচ্ছে না তাকে। তাই মনেমনে হয়তো ‘চন্দ্রকুঠি’ খুশিতে নেঁচে উঠছে। ইট, পাথরের বাড়িটা তার খুশিটা প্রকাশ করতে পারছে না তাই তো প্রকৃতি তার খুশিকে নিজের করে নিলো। বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় তার আনন্দ ধরা দিলো। বৃষ্টির পানিতে মুছে যাচ্ছে ‘চন্দ্রকুঠির’ সকল পাপ। এভাবেই শেষ হলো ‘চন্দ্রকুঠির’ মেলা।

(সমাপ্ত)