সম্পর্ক ৪র্থ পার্ট

0
2278

#সম্পর্ক ৪র্থ পাঠ

হিসামকে দেখলে যে কারো মায়া হবে, কিন্তু তার নিজের ফ্যামিলির লোকেরা তার সাথে কেন মানসিক ভাবে অত্যাচার করে কি কারণ, কি অপরাধ করছে হিসাম। আব্বাসউদ্দীন চাচাকে পেলে সব জানা যাবে।

না ঘুমিয়ে রাতটা পার করলাম, সকাল হতেই আব্বাকে বললাম, নাস্তা করে তাড়াতাড়ি চল বস্তিতে যাবো।
আরে মা এতো পাগল হচ্ছিস কেন যাবো তো, শুন আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব, আমরা আব্বাসউদ্দীনকে অবশ্যই খুঁজে পাবো আল্লাহ যদি আমাদেরকে সাহায্য করেন, আব্বার কথা শুনে চিন্তা ছেড়ে দিলাম, আব্বা তো ঠিকই বলেছেন আল্লাহ যদি আমাদেরকে সবকিছু জানাতে চায় অবশ্যই আমরা সত্যিটা জানতে পারবো।

বস্তির প্রতিটা ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করছি, এক লোক বলল, আব্বাসউদ্দীন নামে একজন আমাদের বস্তিতে ছিলো, সে তো অনেকদিন আগে এখান থেকে চলে গেছে, তার এক আত্নীয় আছে, ওই যে রাস্তার মোড়ে দোকান সেখানে যান জানতে পারবেন আব্বাসউদ্দীন এখন কই থাকে।
লোকটার কথা মত দোকানীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আব্বাসউদ্দীন চাচার বিষয়ে।

,, আব্বাসউদ্দীন এখান থেকে চলে গেছে প্রায় পাঁচ বছর, আব্বাসউদ্দীন বছর দুই আগে আমার কাছে আসছিল একটা দরকারে, তখন সে বলেছে সে না কি কুমিল্লা মুরাদনগর তার গ্রামের বাড়িতে থাকে।

,, আংকেল আপনি কি চাচার বাড়ির ঠিকানা জানেন।

,, জানি, কুমিল্লা মুরাদনগর গিয়ে, রিক্সায় করে মুরাদনগর ভূমি অফিসের সামনে যেয়ে নেমে বামে ঘুরে পিছনে দেখবে আব্বাসউদ্দীনের বাড়ি, আর যে কাউকে জিজ্ঞাস করলে বাড়ি দেখিয়ে দেবে।

দোকানদার আংকেলকে ধন্যবাদ দিয়ে, আব্বাকে বললাম, আমি বাসায় চলে যাই, তুমি মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে কুমিল্লা যাবার জন্য দুইটা টিকিট কেটে নিয়ে আসো, রাতের বাসে কুমিল্লা যাবো।

রাতে খাবার পর আব্বা আর আমি রেডি হয়ে মহাখালী বাস টার্মিনালের আসলাম, রাত নয়টায় বাস ছাড়লো, আমি বরাবরই বাসে উঠলে ঘুমিয়ে পড়ি আজো ঘুমিয়ে পড়লাম।
হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলো, স্বপ্নে দেখলাম হিসাম খুব মন খারাপ করে বসে আছে, খাবার খাচ্ছেনা স্বপ্নটা দেখে মনটা অন্তত খারাপ হয়ে গেলো। আর ঘুমাতে পারলাম না হিসামের মুখ শুধু চোখের সামনে ভাসছে।

ভোর সাড়ে চারটার কুমিল্লা গিয়ে নামলাম, সেখান থেকে মুরাদনগরের বাসে উঠে মুরাদনগর গেলাম। রিক্সা নিয়ে ভূমি অফিসের সামনে এসে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম আব্বাসউদ্দীন চাচার বাসা কোথায়, লোকটা সাথে করে আব্বাসউদ্দীন চাচার বাসায় নিয়ে গেলো আমাদেরকে। চাচা অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে আছে, আমি সালাম দিয়ে পরিচয় দিলাম।

,, চাচা আমি অবনী হিসামের বউ, হিসামকে মনে আছে আপনার, আপনি যাকে ছোট বেলা লালন পালন করছেন।

,, মা তুমি আমার হিসামের বউ, আমার হিসাম কেমন আছে, সে এখন অনেক বড় হয়েছে, জানো হিসামকে আমি অনেক আদর যত্নে বড় করেছি, অনেক বছর হয়ে গেলো আমার হিসাম বাবাকে দেখিনা খুব দেখতে ইচ্ছে করে।

,, যখন খুব দেখতে ইচ্ছে হয়, তাহলে কেন এতো গুলো বছরে একবার হিসামের খুঁজ নেননি, সে কি ভাবে আছে, ভালো আছে না খারাপ আছে অন্তত একবার খুঁজ নিতেন।

,, কি করে খুঁজ নেবো, ভয়ে হিসামের সাথে কখনো দেখা করতে পারিনি, আর হিসাম বাবাকে তো রাজিয়া বেগম বাসা থেকে বের হতে দেয়নি, আচ্ছা মা এবার বল তুমি আমার খুঁজ পেলে কিভাবে আর কেন আসছ।

,, হিসাম আপনার নাম বলেছিল, আপনি না কি অনেক কিছু জানেন যা হিসাম জানেনা, হিসামের অতীত স্মৃতি মনে নেই, তাই তার কাছ থেকে আমি কোনকিছু জানতে পড়িনি, কেন আপন মা ভাই হয়ে হিসামকে পাগল বানিয়ে রাখছে।

,, মা, কাকে বলছ মা ওই রাক্ষসী রাজিয়া বেগমকে, সে তো হিসামের কেউ হয়না।

,, চাচা আপনি কি বলছে শাশুড়ী মা হিসামের মা না তাহলে হিসামের মা কোথায় আকিব ভাইয়া হিসামের ভাই হয়না, চাচা আপনি পুরো ঘটনা বলুন।

,, হিসাম যখন তার মায়ের পেটে তখন হিসামের বাবা এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়, কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর মৃত্যু হয় মরার আগে সব সম্পত্তি হিসামের মা হাফসা আহম্মেদের নামে করে দেন।
সমস্ত ব্যবসা হাফসা আহম্মেদ নিজ হাতে সামলায়, হাফসা মেমকে ব্যবসা দেখাশোনায় সাহায্য করেন ম্যানেজার রকিবুল্লা, রকিবুল্লা হলো রাজিয়া বেগমের স্বামী আর আকিবের বাবা।
হিসাম বাবা যখন চার বছর, হাফসা মেমের দুইটা কিডনি নষ্ট হয়ে যায়, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে মাদ্রাজ, আমেরিকাতেও গিয়েছে ডাক্তার বলছে লাষ্ট মুহূর্ত সমস্যা ধরা পড়ছে তাই আর বাঁচানো সম্ভব না। তিন মাসের সময় দেয়।

,, আপনি বলছেন হিসামের বাবা এক্সিডেন্টে মারা গেছে হিসাম জন্মের আগে, হিসাম তো বলল, সে যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন তার বাবা মারা গেছে, আর সেই থেকে সমস্ত কিছুর সাইন হিসামকে করতে হয়, এটাই বুঝতে পারছিনা।

,, হিসামের মা আর বাচঁবে না এটা শোনার পর উকিল ডেকে এনে সবকিছু হিসামের নামে উইল করে দেন, উইলে লেখা ছিলো, আমি আমার সব সম্পত্তি অফিস ব্যবসা আমার একমাত্র পুত্র হিসাম আহম্মেদের নামে উইল করে দিলাম, হিসাম যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে এবং বিয়ে করে সন্তানসন্ততি হবে তখন সে এই সহায়সম্পত্তি আসল মালিক হবে। হিসাম সাবালক না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু দেখাশোনা করবে রকিবুল্লা, আমি তাকে পাওয়ার অফ এটোনি দিয়ে গেলাম।

,, ওহ এই হলো মূল ঘটনা, তাহলে হিসামকে ড্রাগস মেডিসিন সেবন করানো হলো কেন।

,, হিসাম খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো সকল ক্লাসে প্রথম হতো, হাফসা মেম মারা যাবার সময় আমাকে ডেকে নিয়ে হিসামকে আমার হাতে দিয়ে বলেছিল, আমি বেঁচে থাকতে তুমি হিসামের যেভাবে দেখাশোনা করছ আমি মরে যাবার পর সেভাবে দেখাশোনা করবে, আব্বাস কথা দাও আমাকে।
আমি হাফসা মেমকে কথা দিয়েছিলাম হিসামকে নিজের সন্তানের মত আদর যত্ন করে বড় করব।
লেখাপড়ায় হিসাম মেধাবী ছিল বলে রাজিয়া বেগমের হিংসা লাগে, আকিব লেখাপড়াতে ভালো ছিল না।
নিজের ছেলে মানুষ হতে পারবেনা অন্যের ছেলে ভালো হবে এটা রাজিয়া বেগম মানতে পারেনি, হিসামকে সে এই ড্রাগস ওষুধ গুলো নিয়মিত খেতে দেন।
আমি প্রতিবাদ করতে গেলে বলে তুই চাকর চাকরের মত থাক।

,, রাজিয়া বেগমের স্বামী ম্যানেজার রকিবুল্লা কি সব জানতেন, হিসামকে ড্রাগস খাওয়ানো হচ্ছে।

,, না সে জানতেন না সে ভালো মানুষ ছিলেন, আমি তাকে বলেছিলাম আপনার স্ত্রী ছেলে মিলে হিসাম বাবাকে ক্ষতিকারক ওষুধ খাওয়াচ্ছে, সে তার স্ত্রী আর ছেলেকে মারধর করে আর বলে যদি কখনো হিসামের ক্ষতি করতে চাও তাহলে আমি নিজে তোমাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেবো।
রাজিয়া বেগম নিজের ভুল স্বীকার করে, সে আর কখনো এমন কাজ করবে না বলে রকিবুল্লাকে কথা দেয়। এর কিছুদিন পর রকিবুল্লা মারা যায়।

,, কিভাবে মারা গেছে,

,, সুস্থ মানুষ ছিল রাতে খাবার পর শুয়েছিল সকালে রাজিয়া বেগম চিল্লাপাল্লাতে ঘুম ভেঙে যায় গিয়ে দেখি রকিবুল্লা মারা গেছে, রাজিয়া বেগম বলল, কিছুক্ষণ আগে প্রেসার বেড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে পানি ঢালছিলাম, মারা গেলো, অনেক কাঁন্নাকাটি করলো রাজিয়া বেগম ও আকিব।
কিন্তু আমার মনে সন্দেহ হয়েছে।

,, কি রকম সন্দেহ, রকিবুল্লাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

,, হ্যাঁ সেরকম সন্দেহ হয়েছে, সন্দেহ করার কারণ আছে।
রকিবুল্লার কখনো হাই প্রেসার ছিল না।

চলবে,,,,

সাদমান হাসিব সাদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে