শুধু তুই Part -19

0
1998

#শুধু তুই#
#Part_19
Writer_ Raidah Islam Nova

বাড়িতে আসার পর এক মিনিটের জন্যও বাইরে বের হয় নি।নিজের রোমে দরজা লাগিয়ে বসে থাকি।ফাদার আমার সাথে এমন কেন করলো? আমাকে শর্তটা না দিতো। তাহলে আমি কি করতাম? কেন তিনি ফারিশের জীবন থেকে চলে যেতে বললেন? বাবাকে কে এসব ছবি, ভিডিও পাঠালো? আমি দুই দিন ধরে তার হিসাব মিলাতে পারছি না।আচ্ছা, ফারিশ কি আমায় খুঁজতে আসবে? নাকি ও আমাকে ভুল বুঝবে? ও যদি মুসলিম হয়ে যায় তাহলে বাবা ওকে মেনে নিবে? এরকম হাজার প্রশ্ন আমার মনে উঁকি দিচ্ছে।

কিছু ভালো লাগছে না।খাটের কোণার মধ্যে বসে চোখ বন্ধ করে দেয়ালে মাথা হেলান দিয়ে রেখেছি।আমাদের পাশের দুই বাড়ি পর একটা খেলার ক্লাব আছে।সেখানে প্রায় বক্সে জোরে গান বাজানো হয়।আজও তার ব্যাতিক্রম হয় নি।জোরে সাউন্ড দিয়ে গান ছেরেছে।ক্লাবের ছেলেগুলোকে বললে ও কাজ হয় না।এক কান দিয়ে ঢুকায় তো আরেক কান দিয়ে বের করে।চোখ বন্ধ করে গানটা শুনছি। খারাপ লাগছে না।আপনারা শুনবেন চলুন শুনে আসি।

এত রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই,
তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চাই।

মেঘলা হয়ে যাক,
আর পাঁচ টা বারো মাস।
কোন বিকেল বেলাতে,
তুই আমার হয়ে যাস্।

শুধু তুই, শুধু তুই আর চাইছি না কিছুই।
শুধু তুই, শুধু তুই আর চাইছি না কিছুই।

এক কলির পর গানটা বন্ধ হয়ে গেল।ভালোই তো লাগছিলো।শয়তানগুলি আমার ভালোটা ওদের সহ্য হলো না।হঠাৎ আমার মনে হলো আমায় কেউ টুনটুনি পাখি বলে ডাকছে।এই নামে তো আমাকে শুধু ফারিশ ডাকে।তাহলে ফারিশ কি এখানে এসেছ? ফারিশ এখানে কেন আসবে? ধূর,ওর কথা ভাবতে ভাবতে আমার বোধহয় হ্যালোসিয়েশন হয়ে গেছে।

আমিঃ আইয়ু,তুই কি পাগল হয়ে গেলি? অবশ্য প্রেমে পরলে নাকি মানুষ পাগল হয়ে যায়।সব জায়গায় নিজের ভালবাসার মানুষকে দেখে, সব জায়গায় মনে হয় সে তার পাশে আছে, তার কন্ঠে মনে হয় তোকে ডাকছে।সত্যি তোর মাথা গেছে।দু দিন ধরে নিজেকে বন্দী রেখে তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

নিজের মনে কথাগুলো বলে হেসে উঠলো আইভী।আবারও কেউ ওকে ডাকলো।

—-টুনটুনি পাখি কোথায় তুমি? আমি ডাকছি শোনোনি?

আইভী সত্যি ধরে নিয়েছে ওর মাথা গেছে।কিন্তু ৩য় বারও ফারিশের গলা পেলো।
—- কি হলো তুমি কি বাইরে আসবে নাকি আমি তোমার রুমে চলে আসবো?
এবার আইভীর টনক নরলো।সেই একি কন্ঠ, একি ধমক দেওয়ার স্টাইল, এমনকি একি আওয়াজ, সেই ব্লাকমেল।গুটি গুটি পায়ে দরজা খুলে বসার রুমে গেল।

বসার রুমে আসতেই আমার চোখ দুটো রসগোল্লা হয়ে আছে ।চোখ কচলে আবার তাকালাম না আমি ঠিক দেখছি।আমার সামনে সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে বসে আছে ফারিশ।রাগে যে ওর চোখ – মুখ লাল হয়ে আছে সেটা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি।আরেক দফা অবাক হতে হলো বাবাকে ওর সাথে বসে থাকতে দেখে।

আমিঃ আপনি এখানে কি করছেন?
ফারিশঃ এটা কেমন প্রশ্ন হলো টুনটুনি পাখি? শ্বশুর বাড়ি জামাই কেন আসে? আমার বউটা রাগ করে আমায় ছেরে চলে এসেছে তাকে নিতে এসেছি।

কথাগুলো হাসি মুখে বললেও দাতে দাত চেপে ফারিশ যে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে সেটা আমি ভালোই বুঝতে পেরেছি।আমাকে একা পেলে এখন যে কি করবে সেটা আল্লাহ জানে।বাবাকে দেখে শুধু কষ্ট করে রাগ কন্ট্রোল করে রাখছে।আমার দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে।

বাবাঃ তোর কাছে আমি একটা প্রশ্ন করবো? সঠিক উত্তর দিবি? কোন মিথ্যা কথা বলবি না?(গম্ভীর মুখে)
আমিঃ হ্যাঁ, করো( মাথা নিচু করে)
বাবাঃ তুই কি ফারিশ কে ভালবাসিস? শুধু বলবি হ্যাঁ কিংবা না।সত্যি কথা বলবি।মিথ্যা বললে তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।

আমি মাথা নিচু করে আছি।কি উত্তর দিবো বুঝতে পারছি না। ফারিশ আমার দিকে অসহায়ের মতো করে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে।আমি কি বলবো তা শোনার জন্য।

ফারিশঃ সত্যি কথা বলো টুনটুনি পাখি। তোমার ওপর ডিপেন্ড করছে আমার বেঁচে থাকা।
আমি বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ভয়ে ভয়ে সত্যি টাই বলে দিলাম।
আমিঃ বাবা,আমি ফারিশকে ভালবাসি।

সাথে সাথে বাবার ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। ফারিশ যে কি খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

বাবাঃ ফারিশ,তুমি জিতে গেছো।আমি আমার কথা রাখবো যদি তুমি মুসলিম হয়ে যাও।
ফারিশঃ আমি মুসলিম হয়ে যাবো।আপনি এই ব্যাপার নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না।
আমিঃ না,বাবা আমি তাকে ভালবাসি বলে তাকেই বিয়ে করতে হবে এমনটা নয়।উনি মুসলিম হলেও আমি তাকে বিয়ে করবো না।

আমার কথা শুনে ফারিশ কাউকে কল করলো। রিং হতেই আমার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললো।
ফারিশঃ কথা বলো।
আমিঃ কে? আমি কারো সাথে কথা বলবো না।
ফারিশঃ আমি ফোন ধরতে বলছি ২য় বার যেনো বলতে না হয়।(রেগে)
আমিঃ ধলাচান মিয়া,লম্বু, তালগাছ। পারে শুধু ধমক দিতে।সাহস কত বড়? আমার বাবার সামনে আমাকে ধমক দিয়ে রাগ দেখানো হচ্ছে। বাবা কিছু বলছে না কেন? ওর জন্য বাবা আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।আবার বাবা কি যেনো বললো ফারিশ জিতে গেছে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ( মনে মনে)
ফারিশঃ ফাদার তোমার সাথে কথা বলবে ফোনটা ধরো।

আমি কাঁপা গলায় হাতে ফোনটা নিলাম।আমি বাবাকে দেখে অবাক হচ্ছি কারণ বাবা কিছু বলছে না।স্বাভাবিক ভংগী তে সোফায় বসে রয়েছে।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।
ফাদারঃ আই এম সরি মাই ডোটার।আমি তোমাকে যে শর্ত দিয়েছিলাম তা ফিরিয়ে নিচ্ছি। তোমাকে ছারা আমার সান ভালো থাকবে না।ফারিশ নিজেকে শেষ করে দিবে।আমি কখনোই তা চাইবো না।তুমি ওকে ফিরিয়ে দিয়ো না।ও যদি মুসলিম হয়ে তোমার সাথে ভালো থাকে তাতেই আমি খুশি।

কথাগুলো বলে ফাদার সাথে সাথে লাইন কেটে দিলো।ফাদার যে কথা বলার সময় কান্না করছিলো তা তার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে। তার কথা বারবার জরিয়ে যাচ্ছিলো।আমি মোবাইলটা ফারিশের হাতে দিলাম।

বাবাঃ এবার তুই কি ওকে বিয়ে করতে রাজি আছিস্?
আমিঃ হুম☺️।
ফারিশঃ আমি ও রাজী শ্বশুর আব্বা।( এক চোখ মেরে)
আমিঃ কিন্তু বাবা তুমি যদি ফারিশকে বিয়ে করতে না বলো তাহলে আমি করবো না।
ফারিশঃ এটা কেমন কথা হলো টুনটুনি পাখি??
বাবাঃ তুই যাতে খুশি আমিও তাতেই খুশি। শোন মা,কোন বাবা-মা তার সন্তানের খারাপ চায় না।ফারিশ যখন তোর জন্য নিজের ধর্ম ছেরে আসবে তাহলে বুঝতে পারছিস তোকে ও কতটা ভালোবাসে।
আমিঃ আমি তো বুঝতে পারছি তুমিই তো বুঝতে চাই ছিলে না।( বির বির করে )
বাবাঃ আমি তোদের বিয়ের তোর- জোর শুরু করি।আমি চাই সামনের শুক্রবার তোদের বিয়েটা দিয়ে দিতে।আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
আমিঃ আই লাভ ইউ বাবা।ইউ আর মাই বেস্ট বাবা।তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।??
বাবাঃ তোরা কথা বল আমি আসছি।

বাবা চলে যেতেই ফারিশ আমার সামনে এসে এক হাত শক্ত করে ধরলো।তারপর মুচকি হেসে ওর কপালের সাথে আমার মাথাটা ঠেকালো।আমি লজ্জা ☺️পেয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি রেখা ফুটিয়ে তুললাম।অবশেষে আমার সত্যিকারের ভালবাসা সব কিছুকে হার মানিয়ে জিতে গেল।

ভাবছেন কিভাবে কি হলো? খুবই সিম্পল।ফারিশ আইভির বাবাকে কনভেন্স করে ফেলছে।ওর সাথে ছিলো আইভীর চাচী,মা,এশা,জন, মেহেদী। সবার সহযোগিতায় ফারিশ অবশেষে আইভীর বাবাকে রাজী করাতে পেরেছে।আইভীর বাবা ফারিশকে বলছে যদি আইভী নিজ মুখে স্বীকার করে যে ও ফারিশকে ভালবাসে তাহলে নির্দ্বিধায় ফারিশের হাতে আইভীকে তুলে দিবে।আইভী নিজের মুখে সব কিছু স্বীকার করে নিলো।তাছারা আইভীর বাবার ফারিশকে পছন্দ হয়েছে।ফারিশের জীবন কাহীনি শুনে তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন ফারিশের দিকে।এত কষ্ট করে একটা ছেলে এখনো বেঁচে আছে তার মেয়ের জন্য। ভাবতেই মনটা গলে গেছে তার। যখন বলছে ফারিশ মুসলিম হয়ে যাবে সেটা শুনে তিনি আরো বেশি খুশি হয়েছেন।

???

চৌধুরী বাড়িতে বিশাল বড় অনুষ্ঠান। আশফাক চৌধুরীর একমাত্র ছেলে নাহান চৌধুরীর এনগেজমেন্টের পার্টী বলে কথা। কিছু খন আগে আংটি বদলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হলো অনুষ্ঠান। আংটি বদলের পর পরই আরেকটি ঘটনা ঘটে গেছে। আরোশকে RAB ধরে নিয়ে গেছে।আজকের এই শুভ দিনে বাড়িতে RAB দেখে সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। পুরো বাড়িতে এখনো কানা- ঘুষা চলছে।তৃণার বাবা ও নাহানের বাবা চুপ করে সোফায় বসে আছে। কিছু খন আগেও যেখানে আনন্দ ঘন পরিবেশ ছিলো সেটা এখন বেশ থমথমে পরিবেশ ।

আরোশ একজন ড্রাগ ডিলারের অন্যতম সদস্য।চোরা- চালানির মাধ্যমে জার্মান থেকে বাংলাদেশে ড্রাগ পাচার করে।ওর এখানে আসার প্রধান উদ্দেশ্য হলো বড় একটা ডিল হাতে পেয়েছে। সেটা কনফার্ম করতে।কিন্তু RAB গোপন সূত্রে জানতে পেরে ওকে গ্রেফতার করেছে।গোপন সূত্রটা তাদের কানে ফারিশ দিয়েছে।সেটা জানতে পেরে সবার আড়ালে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল একজন।উদ্দেশ্য তার ফারিশের কাছে যাওয়া।আজ সব হিসাব – নিকাশ চুকাতে হবে।অনেক হয়েছে আর নয়।অনেক সুযোগ দিয়েছে ফারিশকে।এবার আর দিবে না।

থমথমে পরিবেশে সবাই মন খারাপ করে বসে থাকলেও স্টেজের পাশে যেখানে মদের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে একের পর এক গ্লাসে করে মদ গিলছে মেহেদী। এই দুই দিনে যে মদ খেয়েছে সারা জীবনেও এরকম খায় নি।রিনির সাথে খারাপ ব্যবহার যেদিন করেছে সেদিনও ইচ্ছে মতো ড্রিংক করেছে মেহেদী। দুই বোতল শেষ করে ৩য় টাই হাত দিলেই কেউ ছোঁ মেরে হাতের থেকে বোতলটা নিয়ে যায়।সামনে তাকাতেই রিনিকে দেখতে পায়।

মেহেদীঃ যাক বাবা,আজকে এতো তারাতাড়ি নেশা হয়ে গেলো।আমি চোখের সামনে রিনিকে দেখতে পাচ্ছি। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়।রিনি এখানে কোথা থেকে আসবে? ও জীবনেও আমার কাছে আসবে না।ও কে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।ও কখনো ফিরবে না আমার কাছে। (কিছুটা মাতাল হয়ে)
রিনিঃ এই কি উল্টো -পাল্টা বকছেন।আমি সত্যি আপনার সামনে আছি।
মেহেদীঃ ধূর,আজকে মাথা টা বেশি চরে গেছে। কি দেখছি না দেখছি।

রিনি এভাবেই মেহেদীর ওপর রেগে আছে।ওর এসব মাতলামী দেখে আরো রেগে গেলো।ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো মেহেদীর গালে।একটা পরতেই মেহেদীর হুশ ফিরে এলো। এমনেতেই ও ওতোটা মাতাল ছিলো না।

মেহেদীঃ তুমি এখানে?
রিনিঃহ্যাঁ আমি।
মেহেদীঃ তোমাকে না বলেছি আমার সামনে না আসতে তারপরও তুমি এসেছো? আমি তোমাকে ভালবাসি না কতবার বলবো?
রিনিঃ আবারও মিথ্যা কথা। আমি সব জানি।আপনি আমার ও আমার পরিবারের ভয়ে এমনটা করেছেন।আমাকে ফারিশ ভাই সব বলেছে।

মেহেদী রিনিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।এই দুই টা দিন ও কতটা কষ্ট নিয়ে ছিলো সেটাতো ফারিশ ও জন জানে।তাই ফারিশ রিনিকে সবকিছু বলে ওর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাছারা মেহেদী ফারিশের এতো বড় একটা উপকার করেছে বন্ধু হিসেবে তো তারও একটা দায়িত্ব আছে। জন মোবাইলে ফারিশের সাথে কথা বলতে বলতে ওদের সামনে এসে দাড়ালো।

জনঃ মেহেদী, ফারিশ তোর সাথে কথা বলবে।

মেহেদী রিনিকে ছেরে দিয়ে চোখ – মুখ মুছে মোবাইল কানে নিলো।

ফারিশঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ।তোর জন্য আজ আমি আরোশের চ্যাপ্টার ক্লোজ করতে পেরেছি।তুই না থাকলে কখনোই সম্ভব হতো না।
মেহেদীঃ ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোট করিস না।ধন্যবাদ তো আমার তোকে দেওয়া দরকার। কারণ তুই আমার রিনিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিস।
ফারিশঃ এটা আমার কতৃব্য ছিলো।
মেহেদীঃ তোর কী খবর?
ফারিশঃ তোদের সবার জন্য আজ আমার শ্বশুর আব্বা আমাকে মেনে নিয়েছে। আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ের তারিখও ফিক্সড হয়ে গেছে।
মেহেদীঃ বলিস কি? জানি না যেভাবে হোক বড় করে একটা পার্টি চাই। (খুশি হয়ে)

জন এসবে মনোযোগ দিতে পারছিলো না।এশার কথা মনে পরছে।প্রপোজ করার পর থেকে আর কথা হয়নি।গ্রাম থেকে ফিরে ফারিশ ওর ব্যাপারটা সলভ করবে।ফারিশ অবশ্য আগে ওদের ব্যাপারটা দেখতে চেয়েছিলো।কিন্তু জন ওকে জোর করে গ্রামে পাঠালো।

???

হঠাৎ জনের চোখ গেল তৃণার দিকে।তৃণা অনেকখন ধরে নাহানকে খুঁজছে। আরোশের ব্যাপারটার সময় ও তো নাহান বাড়িতে ছিলো। এখন গেলো কোথায়?জন সামনে এগিয়ে গেলো।
তৃণা একটা ওয়েটারকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করছে।

তৃণাঃ এই যে শুনুন।
ওয়েটারঃ জ্বি ম্যাডাম বলুন।
তৃণাঃ আপনাদের নাহান স্যারকে দেখেছেন?
ওয়াটারঃ স্যার তো ঘন্টা খানিক আগে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলেন।
তৃণাঃ কোথায় গিয়েছে বলতে পারেন? ফোনটাও সাথে নেয় নি।
ওয়াটারঃ সেটা বলতে পারবো না ম্যাডাম।
তৃণাঃ ও ও আপনি এখন আসতে পারেন।

তৃণা টেনশনে পরে গেলো।নাহান গেলোটা কোথায়? আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা শুনতে পেয়েছে জন।জন ও বুঝতে পারছে না নাহান কোথায় গিয়েছে।

যেদিন ওরা তিন বন্ধু মিলে এতিমখানা সাজাচ্ছিল তখন মেহেদীর ফোনে আননেন একটা নাম্বার থেকে কল আসে।মেহেদী তারাহুরো করে সেখান থেকে চলে যায়।ওকে এক জায়গায় যেতে বলে।সেখানে গিয়ে কাউকে দেখতে পায় না।তবে আড়াল থেকে ওকে রিনির পরিবার গুম করে ফেলার ভয় দেখায়।মেহেদী তার কথায় রাজি হয়ে যায়। ফেরার সময় গেইটে আরোশের সাথে ধাক্কা খায়।আরোশ মোবাইলে কিছু একটা দেখছিলো।আর মেহেদী টেনশনে দিক পাশ তাকাই নি।যার কারণে ধাক্কা লেগে আরোশের ফোন পরে যায়। মেহেদী সরি বলে নিচের থেকে আরোশের মোবাইল তুলে দেয়।আরোশকে মেহেদী চেনে।কিন্তু আরোশ মেহেদীকে চিনে না।

আরোশ মেহেদীকে চিনতো যদি ও নাহানের বাড়িতে যেত।কয়েকদিন ওদের বন্ধুদের ভেজালে সে বাড়িতে পা রাখারও সময় পায় নি।মেহেদী নাহানের ল্যাপটপে আরোশের ছবি দেখেছিলো।যাতে করে ও আরোশকে এক মিনিটে চিনে ফেলেছে।তাছারা খবর ও পেয়েছে তৃণার পরিবারের সাথে আরোশ এসেছে। সব খবর নাহানের থেকেই নিয়েছে।মোবাইল তুলে দিতে গিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে আইভীর ছবি দেখে বেশ অবাক হয় মেহেদী।তখন আরোশকে মোবাইল দিয়ে জলদী সেখান থেকে চলে আসে।সেদিন রাতের ঘটনার পর বাড়ি গিয়ে মেহেদী দুপুরের ব্যাপারটা ফারিশকে জানায়।দুপুরেই জানাতে চেয়েছিলো কিন্তু রিনির টেনশনে সব ভুলে যায়। ফারিশ রাতের মধ্যে আরোশের সব খোঁজ – খবর নিয়ে পরের দিন সকালে ওকে তুলে নিয়ে এসে ইচ্ছে মতো কেলানি দেয়।বেচারা আরোশ।

(চলবে)

#

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে