প্রিয় আসক্তি পর্ব-০৪

0
1555

#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ০৪
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

তাহিকে যে ছেলেটা একটু আগে জড়িয়ে ধরেছিলো, সেই ছেলেটার কলার ধরে ঘুষি মারতে হাত উঠায় নিষ্প্রভ, কিন্তু তার আগেই তাহি টান দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। অতঃপর নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে ক্ষু*ব্ধ হয়ে বলে- আপনার সাহস কি করে হলো, ওর কলার ধরার?, কি করেছে ও, আপনি কেনো শুধু শুধু শাওন কে মারতে আসছেন?

শুধু শুধু মারতে চাইছি না, ও তোমাকে জড়িয়ে ধরলো কেনো? হুয়াই,

শাওন আমার ও দীবা’র স্কুলের ফ্রেন্ড, অনেক দিন পরে দেখা হয়েছে, তাই এক্সাইটেড হয়ে জড়িয়ে ধরেছিলো, তাই বলে আপনি মারামারি করবেন?

হ্যা করবো ওর সাহস কি করে হলো আমার শ্যামা পাখি কে জড়িয়ে ধরার.!
তারপর শাওনের দিকে এগিয়ে গিয়ে আঙুল তুলে শাসিয়ে বললো- আজকের মতো ছেড়ে দিলাম, ভবিষ্যতে আমার শ্যামা পাখি’র থেকে দূরে থাকবে, মাইন্ড ইট।

শাওন ছেলেটি অপরাধী সুরে বললো- স্যরি ভাইয়া, আমি এক্সাইটেড হয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম, ভাবিনি এতো কিছু হবে,
তাহি’র দিকে তাকিয়ে বললো- সরি ইয়ার আমি সত্যিই ইচ্ছে করে কিছু করিনি, ক্ষমা করে দিস, আসি।
বলেই শাওন চলে গেলো।

দীবা তাহি’র হাত টেনে নিয়ে গিয়ে লেকের পাড়ে বসালো,
তীব্র ও নিষ্প্রভ’কে টেনে নিয়ে লেকের পাড়ের এক জায়গায় বসালো।

এভাবেই আধা ঘন্টা কেটে গেলো। নিষ্প্রভ দীবা কে ইশারা করলো ওর জায়গায় আসতে, দীবা তাই করলো। নিষ্প্রভ উঠে গিয়ে তাহির পাশে বসলো। আর দীবা তীব্রের পাশে।

– তাহি সোনা, রাগ করেছো? স্যরি তোমার সাথে আমার কাউকে সহ্য হয়না। কিন্তু আমি শাওন কে মারতে যাওয়ার জন্য স্যরি বলবো না, কারণ ও অপরাধ করেছে, তোমাকে ছুয়েছে। আর বাকি সব কিছুর জন্য স্যরি। তোমার বাইক আমি ইচ্ছে করে ফেলে দেইনি। শাওনের সাথে তোমাকে দেখে, হুস ছিলো না। ব্রেক কষতে গিয়ে ধাক্কা লেগে গেছে।

তাহি কিছু বললো না, একইভাবেই লেকের পানির দিকে তাকিয়ে রইলো।
নিষ্প্রভ তাহির মৌন ভাবে থাকা দেখে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।

অপরদিকে,

দীবানির উপর বিরক্তি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তীব্র। আর দীবা তীব্রের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসফুস করছে। আসলে দীবার রাগের কারণ হলো- নিজের ফোনে চার্জ ছিলোনা বলে, তীব্রকে বলেছিলো ওর ফোনটা দিতে, সে ছবি তুলবে। যদিও তীব্র প্রথমে দিতে চায়নি, পরে দীবার অনুরোধে দিতে বাধ্য হয়। দীবা যখন তীব্রের ফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত তখনই তীব্রের ফোনে একটা কল আসে। দীবার হাতে তীব্রের ফোন থাকায় দীবা কল রিসিভ করে কানে ধরে, কিছু বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলেছিলো- হ্যালো তীব্র জানু, কোথায় তুমি, আমি তোমার বাসায় তোমার জন্য অপেক্ষা করছি৷ প্লিজ বেবি তারাতারি বাসায় চলে আসো। ব্যাস এতোটুকু শুনে রাগে দীবা কলটা কেটে দেয়। কল লিস্টে চোখ পড়ায়, তার নিজের নাম্বার সেভ করা ‘বন্ধুর বোন মানে আমারোও বোন’ সেটা ও চোখে পড়ে, যাতে দ্বিগুণ রেগে যায় দীবা।

কটমট দৃষ্টিতে তীব্রের দিকে তাকিয়ে নাম পরিবর্তন করে ‘বন্ধুর বোন মানে আমার বউ’ লিখে সেভ করে। তারপর তীব্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে – কে মেয়েটা? যে আপনার বাসায় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!

-আমার কাজিন রিয়া, তোমার মতোই সবসময়ই আমাকে বিরক্ত করে।

– আমি বিরক্তি করি, আর সেই বিরক্তি আপনাকে সহ্য করতে হবে, আমি দীবা যতদিন আছি ততোদিন আপনাকে বিরক্ত করবো। কিন্তু ওই মেয়ে কেনো আপনাকে বিরক্ত করবে? তাকে বলে দিবেন, আপনার বউ আছে, ওকে?

– কার বউ, কিসের বউ? আমার বউ আসবে কোথা থেকে আমি তো বিয়েই করিনি।

– করেন নি করবেন। আর কিসের বউ মানে, আমি আপনার বউ। আপনার ভবিষ্যত বউ৷ আপনাকে বিরক্ত করার অধিকার শুধু আমার, আর কারো না। তাই আপনার ওই কাজিনকে বলে দিবেন আমার কথা আপনার বউ আছে। তাতেও যদি আপনার পিছু না ছাড়ে তাহলে আমি নিজে গিয়ে ওই শাঁকচুন্নির মাথার চুল কেটে দিয়ে আসবো।

-ধমকে উঠে তীব্র, তার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, রাগী স্বরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে- কে আমাকে বিরক্ত করে আর কে করেনা সেটা আমি বুঝবো, তুমি আমার বিষয়ে কথা বলার কে? বউ? বিয়ে হয়েছে তোমার সাথে আমার? নাকি আমি কখনো তোমাকে বলেছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি, বলেছি কখনো?

– না বলেন নি, কিন্তু একদিন ঠিকই আপনি আমাকে ভালোবাসবেন। আমাকে বিয়ে করে বউ বানাবেন।

– স্বপ্ন দেখতে থাকো, দেখো দীবা এখনো সময় আছে আমার পিছু ছেড়ে দাও। তুমি আমাকে কখনো পাবে না।

– কেনো পাবোনা, আপনি শুধু আমার।

-তোমাকে কিছু বলে লাভ নেই, থাকো তুমি তোমার স্বপ্ন নিয়ে। তুমি যতোই চেষ্টা করোনা কেনো, কখনো আমাকে নিজের প্রতি দূর্বল করতে পারবে না৷ আর কখনো আমার আশেপাশে আসার চেষ্টা ও করবে না। বেহায়ার মতো আমার পিছু ঘোরা ছেড়ে দাও, সামান্য লজ্জাবোধ থাকলে কখনো আর আমার সামনে দাড়াবে না। বলেই তীব্র নিজের ফোন নিয়ে উঠে গেলো।

চোখ দিয়ে পানি পড়ছে দীবা’র, এতো অপমান কখনো করেনি কেউ, তীব্রের হাজার বারণ সত্যেও শুনেনি। বার বার বেহায়ার মতো ঘুরতো এই বুঝি তীব্র তাকে কখনো মেনে নিবে। তাকে ভালোবাসবে। কিন্তু দীবার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেলো। হয়তো কখনো পূরণ হবে না!

তাহি’র ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় দীবা। চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ায়। পিছু ফিরে তাহির দিকে থাকায়। তাহি ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়তো কিছুটা বুঝতে ও পেরেছে। দীবা’র হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে যায় তাহি। দীবা বলে- কোথায় যাবো?

কেনো, তুই না বললি শপিং করবি।

ওহ আচ্ছা, চল তাহলে।

তাহি ও দীবা বাইক দিয়ে শপিংমলের দিকে গেলো। তীব্র ও নিষ্প্রভ ও বাইক নিয়ে তাদের পিছনে গেলো।

ইন শপিংশল,,

একের পর এক কাচের চুড়ি দেখে পছন্দ করছে দীবা। মেয়েটা এসবের প্রতি খুবই আসক্ত। আর তাহি? সে তো শার্ট প্যান্ট ও লেডিস ক্যাডস পছন্দ করতে ব্যস্ত। তার ধারা কি কখনো চুড়ি শাড়ি কিনা হবে? পড়া তো দূরে থাক।

দীবা’র দিকে তাকিয়ে আছে তীব্র। মুখ দেখে বুঝতে পারছে, মেয়েটি তার কথায় কষ্ট পেয়ে কেঁদেছে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। বলাবাহুল্য দীবা খুবই স্ট্রং পার্সোনালিটির। আর তাহি? সে তো দীবা কেও ছাড়িয়ে। যেমন স্ট্রং পার্সোনালিটি তেমনই রাগী ও গম্ভীর।

ঘুরে ঘুরে সবকিছুতে চোখ ভুলাতে ভুলাতে, একটা সাদা পাথরের কাজ করা শুভ্র শাড়িতে চোখ আটকে যায় নিষ্প্রভের। কোনো কিছু না ভেবেই শাড়িটি কিনে নেয়। সাথে কাঁচের শুভ্র রাঙা চুড়িও। সে জানে তাহি শাড়ি পড়েনা। কিন্তু তবুও কিনেছে। বিয়ের পড় পড়তে বলবে।

আরেকটা শাড়ির দিকে চোখ যায় নিষ্প্রভের, সেটাও শুভ্র রঙের কিন্তু, কালো রঙের পাড় ও কালো পাথরের কাজ করা। শাড়িটির দিকে একবার ও চুড়ি দেখতে থাকা দীবার দিকে একবার থাকালো। তার বোনটাকে এই শাড়িতে খুব মানাবে। তাই এটাও কিনে নিলো। তারপর শাড়িটি দীবার সামনে গিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো। শাড়ি দেখে দীবা খুশি হয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। নিষ্প্রভ হেসে বলে- আরে পাগলি বোন ছাড়। শাড়ির সাথে যা কিছু দরকার সব পছন্দ কর। জুতা চুড়ি অর্নামেন্টস যা তোর প্রয়োজন।

দীবা খুশি মনে সবকিছু পছন্দ করতে শুরু করলো৷ কে বলবে একটু আগে এই মেয়ে প্রিয় মানুষের অপমান জনক কথায় চোখের জ্বল ফেলেছে?

চলবে, ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে