তৃণকান্তা পর্ব : ১২ ( শেষ পর্ব)

0
1790

তৃণকান্তা
পর্ব : ১২ ( শেষ পর্ব)
– নিশি রাত্রি

অনেকটা জোড় করেই মাইশাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো তূর্য। বেচারা বউকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাইলেও পারছিলোনা বিয়ে বাড়ির জন্য ন বিয়ে বাড়ি মানেই ঝামেলা। আর সেটা আরো মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে এই এক যন্ত্র যার নাম মোবাইল। সারাদিন শুধু ঘ্যানরপ্যানর করেই যাওয়া যার কাজ। তূর্যের ফোনেরও ঠিক সেইম অবস্থা। বাজতেই চলছে। ঘড়ির কাটা ধরে একঘন্টার মধ্যে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরিয়ে দিয়ে গেলো তূর্য। সাথে কতো যে এডভাইস। একদম রাত জাগবানা। অসুধ ঠিক মতো খেতে হবে, খাবার খেতে হবে, আজকে তো ভুলেও রাত জাগবে না। আরো কতো কি। যে করেই হোক আগামীকাল ভোরের মধ্যে সুস্থ হতেই হবে। পারলে যেনো এক্ষুণি ঝাটাপিটা করে মাইশার জ্বরকে তাড়িয়ে দেয় তূর্য। তূর্যের অবস্থা দেখে মাইশা হাসতে হাসতে করুণ অবস্থা। তূর্যকে বিদায় দিয়ে মাইশা কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় শায়লা।

গত মাসেই দেশে এলো আশরাফ। আসার পর থেকে এখানে সেখানে ছুটতে ছুটতেই শেষ বেচারা। বোনগুলাও একটু বেশিই করে। প্রতিদনই কোনো না কোনো বাহানা থাকে তাদের। ভাইকে দেখলেই আহ্লাদীপনা একদম মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। যতো সব নাটক। এমনিতে তো ভাইয়ের খবরও নেয়না।
বউ যে একজন আছে সেটা যেনো ভুলেই গেছে আশরাফ । মুখ ফুলিয়ে অভিমানের পাহাড় জমিয়ে রেখেছে মেঘা। আসার পর সেটা আজ দুপুরেই লক্ষ্য করলো আশরাফ। দেশে আসার পর থেকে আত্মীয়স্বজনের বাসায় ছুটতে গিয়ে মেঘার দিকটা লক্ষ্যই করা হয়নি। ব্যস্তভর সময়ের মধ্যেই জীবন সঙ্গীকে নিয়ে লোকালয়ের বাহিরে এককাপ কফি খাওয়ার ইচ্ছে জাগলো আশরাফের। তার হলো হুটহাট মর্জি। কিন্তু মেঘা আসছেই না। মেঘা সন্ধ্যায় কফি নিয়ে এলে আশরাফ বললো,
– ওহু। এখানে না। রেডি হও তো। একটু বেরোবো। আমরা আজকে বাইরে কফি খাবো।
মেঘা মুখ বাঁকিয়ে,
– তোমার আবার বউয়ের জন্য সময় আছে নাকি?
আশরাফ উঠে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে,
– এবার তো ছয়মাসের জন্য এলাম । তারপর যখন একেবারেই চলে আসবো তখন দেখবো কতো সময় দিতে পারো তুমি।
– হ্যাঁ। বুড়ো বয়সে যেও প্রেম করতে। এই জন্যই প্রবাসী আমার পছন্দ না। তাদের কাছে টাকাটাই সব। দেখি সরো।
এই কথায় কতো অভিমান সেটা বুঝার ক্ষমতা বোধহয় একমাত্র প্রবাসী স্বামীদেরই থাকে।
সেদিকে পরোয়া না করে,
– রেডি হও তো। তাড়াতাড়ি।
মেঘা এগিয়ে এসে আশরাফের চোখে চোখ রেখে গলায় জড়িয়ে ধরে,
– যাবো একশর্তে।
– কি শর্ত শুনি?
– ফোন সাইলেন্ট থাকবে। আমাদের কথা মাঝখানে একটা ফোন এলে তো…!
হাসলো আশরাফ। মেঘার কথার মাঝখানেই মোবাইলটা তৎক্ষণাৎ বের করে সাইলেন্ট করে,
– এবার হ্যাপি?
– হুম। বসো আসছি।
দুজনে মিলেই একটা রেস্টুরেন্টে বসে কিছুটা সময় কাটিয়ে একেবারে ডিনার করে নেয়। হসপিটালে বৃষ্টিকে দেখতে যায় দুজন। হসপিটালে গিয়ে যখন জানলো শায়লা আর মাইশা দুজন একা বাসায় মেঘা নিজেই বললো,
– আমরা না হলে আজ এখানে থাকছি তোমরা বাসায় যাও। মেয়ে দুইটা একা।
ইতোতস্তোবোধ করে রাহেলা বললো,
– না না। জামাইকে নিয়ে থাকতে হবে না। তুই বরং জামাইকে নিয়ে বাসায় চলে যা আমরা দেখছি। আগামীকাল মনেহয় বাসায় যেতে পারবে।
– আচ্ছা ঠিকাছে। আমি বাসায় যাবো। কিন্তু মহসিন ভাই কোথায়?

বৃষ্টির চোখ টলমলো। এতোবড় একটা এক্সিডেন্ট শুনেও কি একটা বার আসা যেতো না? অফিসের কাজটাই বেশি? কিছুদিন আগে ওদের নতুন আরেকটা অফিসের উদ্ভোদন হয়েছে। কক্সবাজার। সেখানেই এক সপ্তাহের জন্য গেলো মহসীন। কিন্তু জানার পর বললো,
– এতো বেখেয়ালি হলে হয়? অসুধ খেও ঠিক মতো। আমি কাজ শেষ করেই আসছি। আজও এলো না।
বৃষ্টির জবাব না পেয়ে রাহেলা বললো,
– কতো ঝামেলা থাকে। কাজে কক্সবাজার গেছে। আসবে কাল হয়তো।
– আচ্ছা! আমরা তাহলে বাসায় যাচ্ছি।
সেখান থেকেই মেঘাকে সরাসরি বাসায় দিয়ে একটু বেরিয়ে গেলো আশরাফ। একঘন্টার মধ্যে ফিরবে বলে বেরিয়েছে। কতোক্ষণে ফিরে কে জানে।

কলিংবেল বাজাতেই শায়লা দরজা খুলে দিলো। মেঘাকে দেখে ভয়ে মুখটা কাঁচুমাচু হয়ে গেলো তার । তা দেখে মেঘা বললো,
– কিরে! কি হয়েছে?
– কিককিচ্ছুনা।
– কিছুনা হলে এভাবে তোতলাচ্ছিস কেনো? মাইশা কই?
চুপ করে আছে শায়লা। এখন কি জবাব দিবে মেঘাকে ? তাই সে একদম চুপচাপ নিচে তাকিয়ে রইলো। শায়লার এমন উদ্ভট আচরণে কিছুটা বিরক্ত হলো মেঘা। তারপরও নিজেকে শান্ত রেখে বললো,
– আগে আমার প্রশ্নের জবাব দে।
শায়লা তারপরও চুপ করে আছে। তবে এবার ভয় পেয়ে গেলো মেঘা। শায়লা এতোটুকু একটা মেয়েকে ফেলে কোথায় আছে মাইশা? তাই উচ্চস্বরে চেঁচাল,
– মাইশা! মাইশা?
কিন্তু কৈ কিসের মাইশা।
– মাইশা বাসায় নেই?
এবার কান্নাভেজা চোখে মেঘার দিকে তাকিয়ে রইলো।
– একি তুই কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে ?
ঠিক তখনি কলিংবেল বেজে উঠে।
শায়লা চোখ মুছে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই মাইশা ভেতরে চলে এলো। মেঘাকে দেখেই প্যাকেট সোফায় ঢিল মেরে দৌড়ে জড়িয়ে ধরে বোনকে । মেঘাও মৃদু হেসে জড়িয়ে ধরে। মেয়েটা শরীরেই যা বড় হয়েছে। স্বভাবটা এখনো সেই বারো বছরেই আটকে আছে। কণ্ঠে সবসময় আহ্লাদীপনা ছুঁই ছুঁই।
– এই অবেলায় বেরিয়ে গেলি যে!
– তুমি কখন এসেছো? ওই একটু জ্বর। তাই হসপিটালে গিয়েছিলাম।
– আমাকে জানাস নি কেনো?
– তোমরাও না! একটু জ্বরই তো হয়েছে। মরণব্যাধি কিছু হয়নি ভাই যে জানাতেই হবে।
কতোদিন পর তোমায় জড়িয়ে ধরলাম বলোতো। এই তুমি শুকিয়ে গেছো। দেখো দুহাতে ধরছে পারছি। আরে ভাইয়া এসেছে…!
কথা শেষ হওয়ার আগেই চোখ রাঙালো মেঘা।
– দিবো একটা ফাজিল। সংসারের দায়িত্ব যখন পরবে তখন বুঝবা বিয়ে কি জিনিস। কপালে হাত দিয়ে, জ্বর তো এখনো আছে।
– হুম। ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আছো তো। ভাইয়া কই?
– আসবে। একটু বেরিয়েছে। পাগলি। আর কে গিয়েছিলো তোর সাথে? আমাকে কল করলি না কেনো?
শায়লা বললো,
– দুলাভাই আইসা জোড় কইরা উঠাই নিয়া গেছে।
– দুলাভাই?
মেঘা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মাইশার দিকে তাকালে মাইশা হাসছে। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না। কি চলছে।
– কবে থেকে চলছে?
– বিয়ে করে ফেলেছি।
– বিয়ে!
– হুম।
– কবে হলো?
– আজকে সাতাশ দিন।
– বলার প্রয়োজন মনে করলি না? যদি ফুপা মেনে না নেয়? তখন কি হবে?
মেঘাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে মাইশা। যেনো আস্ত ভরশার কুন্ডলি মেঘা। নির্ভাবনা কণ্ঠ তার।
– মামা, মামি তোমরা তো আছোই।
– তাতো বুঝলাম কে সে?
– তূর্য। ওই যে বৃষ্টিপু ব্লাড দিয়েছিলো মহিলাটাকে তার ছেলে।

ধীরে ধীরে সব খুলে বললো মাইশা। সব জানার পর কিভাবে তূর্যের থেকে দুরে সরে যেতে চেয়েছিলো, কিভাবে বিয়ে করলো সব।
– ভালোই তো করেছে। তোর মতো মেয়ের জন্য তূর্যই পারফেক্ট। আমাদের কথা তো গায়ে লাগে না। মায়ের দিকটাই চোখে পরলো আমাদের আদর যত্ন কিছুই না।
মুখ বাঁকালো মাইশা। মেঘা বৃষ্টির চাইতে ভাল তাকে আর কেউ বুঝেনা। একটা ছায়ার মতো সবসময় পাশে থেকে আগলে রাখবে তাকে।
কলিংবেল বাজাতেই মাইশা দরজা খুলে দেয়। আশরাফকে দেখে,
– ইস! বউকে ছাড়া ঘুম হচ্ছিলোনা। একদম চলেই এসেছে।
– এমন দুষ্টু শালিকা থাকতে আবার বউয়ের দরকার হয় নাকি? শালিকার টানেই তো ছুটে আসতে হয়।
– আপনিও না। ধুর। অই আপু নাও তোমার লুচু বর আসছে ।
বলে হাসতে হাসতে রুমে চলে গেলো মাইশা। রাতটাও খুব ভালোভাবেই আড্ডাতে কেটে গেলো। সকালবেলাই এসে হাজির তূর্য। বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় মেঘা। মেঘা হেসে বললো,
– আরে জামাই সাহেব যে। আসুন আসুন।
খানিকটা লজ্জা পেলো তূর্য। আশেপাশে তাকাতে দেখলে, আপনার বউয়ের এখনো সকাল হয়নি। যান দেখুন, আপনাকে দেখে যদি সকাল হয়।
– না ঠিকাছে। আপনি ডাকলেই হবে।তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। একটু ডেকে দিন। ওকে নিয়েই যাবো।
মেঘা ও আর কিছুই বললো না। ডেকে একদম রেডি করে নিয়ে এলো মাইশাকে। একটা শাড়ি পরিয়ে দিয়ে সামনের কিছু চুল ছোট একটা পাঞ্চক্লিপ দিয়ে আটকে দিলো,হাতে ঘড়ি, আর ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক। ব্যাস। পুরো বিয়ে বাড়িতে দুজনকে পাশাপাশি দেখে কতো যে গুজুরগুজুর ফুসুরফাসুর। কিন্তু বহুদিন পর যেনো খোলাখুলি ভাবে ছাড়া পেলী দুজন। ওরা নিজেরা নিজেরাই কথায় ব্যস্ত। কে কি বলছে সেদিকে পরোয়া নেই।

একসপ্তাহ পর।
আমিন সাহেবের ড্রইংরুম ভরপুর মানুষ। তূর্য তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছে। মেঘা আর রাহেলা বাসায় ছিলো। আমিন সাহেবের বাসায়। আমিন সাহেব মাত্রই বাহির থেকে ফিরলেন। ওনাদের দেখে চিনতে না পারলেও বুঝতে পারলেন ওরা মাইশাকে দেখতেই এসেছে। মেঘা এসে বললো,
– বাবা! ও তূর্য। মাইশার পরিচিতো। আর ওনারা হলেন তার পরিবারের সদস্য। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলো।
সবার সাথে কথা বলার মাঝখানে অতিথি আপ্যায়ন চললো।
তূর্যের বাবা বললেন,
– ভাই সাহেব। আমার দুইটা ছেলে। ও তুহিন আর ও তূর্য। তূর্য মাইশা দুজন দুজনকে পছন্দ করে। তাই আমরা এই সম্পর্কটার নতুন একটা নামকরণ করতে চাই যদি আপনারা রাজি থাকেন।
আমিন সাহেব ভাবছেন। কি করবেন তিনি। এখন যে তার উপরেও একজন গার্জিয়ান আছে মাইশার। সোহান। মাইশার বাবা। কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন মাইশার ব্যাপারটা নিয়ে। মাইশা কি সত্যিই ছেলেটাকে পছন্দ করে? কখনো তো বলেনি। আবার ভাবলেন, সেদিন সোহানকেও বলেছিলেন, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে রেখেছি। কি বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো না আমিন। স্বামীর অবস্থাটা আঁচ করতে পারলেন রাহেলা। তাই তিনি বললেন,
– দেখুন বিয়ে একটা সুন্দর বন্ধনের নাম। হুটহাট করেতো কিছু হয়না। মাইশাও অফিসে। ওকে না জিজ্ঞাসা করে তো কিছুই বলতে পারছিনা। ওকে আগে ডেকে পাঠাই দেখি ও কি বলে?
এবার আমিন সাহেব বললেন,
– আত্মীয়তা শুরুতেই সব জেনে নেওয়া ভালো। আপনারা হয়তো ভাবছেন মাইশা আমার মেয়ে। হ্যাঁ। মাইশা আমারই মেয়ে। আমার বোন মারা যাবার পর থেকে ও আমার কাছেই আছে। এমনকি সে কিছুদিন আগে এই সত্যটার মুখোমুখি হয়েছে।
আশা বললো,
– আমরা সেটা জানি বেয়াই সাহেব।
সেটা জানার পর পরই আমরা আসতাম কিন্তু বড় ছেলে আসার পর ব্যস্ততার কারনে একটু দেরী হয়ে গেলো আর কি।
– তার উপর মাইশার বাবা গত কিছুদিন আগেই দেশে ফিরেছেন মাইশাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি বা আমার মেয়েরা মাইশাকে কখনোই পর বলে ভাবিনি। সবসময় ভাবতাম মাইশা আমার তৃতীয় মেয়ে। তিনি মাইশাকে নিতে এসেছে শুনে আমি বলেছিলাম, ওকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। পড়াশোনা শেষ হলেই অনুষ্টান করে ছেলের হাতে তুলে দিবো।
– তাহলে আর কি! বিয়ে হয়ে যাক। আপনার মেয়েও আপনার শহরেই রইলো।
– তাহলে আর কি ওরা দুজন রাজি থাকলে আমাদের আর কি বলার আছে। রাজি তো হতেই হবে। কিরে মেঘ বৃষ্টি মাইশাকে কল কর।
– ওকে কল করেছি বাবা এক্ষুণি চলে আসবে।
বলতে বলতে এগিয়ে এলো মেঘা।

অফিস থেকে জরুরি ডেকে আনা হয়েছে মাইশাকে। অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই বাসায় এসেছে। কার আবার কি হলো। মেঘা এতো দ্রুত আসতে বললো ভয় পেয়ে আছে মাইশা। নিশ্চই কিছু হয়েছে। নয়তো এতো ইমার্জেন্সি কেউ ডাকে? বাসার ড্রইংরুমে পা রাখতেই অবাক হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে মাইশা । পুরো ড্রইংরুম মানুষে ভরপুর। তূর্যের ফ্যামিলির সবাই এসেছে। একদম তুহিনের বউ পর্যন্ত। তূর্য তাকে দেখেই চোখ মেরে দিলো। তার পাশেই বসে আছে তার মামা, মামি, মেঘা আর বৃষ্টি। মাইশাকে দেখে এগিয়ে এলো আশা। মুখে মিষ্টি হাসি। মাইশার হাতটা ধরে,
– কি রে রেগে আছিস আমার উপর?
– কি যে বলো না আন্টি। কেনো রাগবো আমি?
হাত টেনে এনে পাশে বসিয়ে,
– বেয়াই সাহেব! এবার তাহলে আপনারাই বলুন কি মতামত আপনাদের?
মেঘা চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে এসে বললো,
– এখানে বলাবলির কি আছে আন্টি? দুজন দুজনকে পছন্দ করে। ওরা দুজনে রাজি থাকলে ইনশাল্লাহ আমরাও রাজি।
মাইশার দিক তাকিয়ে,
– কিরে রাজি তো?
লজ্জায় মাথা নিচু করে কোনোরকম হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো মাইশা।
তূর্যের বাবা বললেন,
– তাহলে কাজী ডাকুন। শুভ কাজে দেরী করতে নেই। আগামী পরশু আমার দুই ছেলের রিসিপশন একই দিনে হবে। আমি সব ঠিক করেই এসেছি।
আমিন মোবাইল বের করে কাজীকে ডাকলো। তারপর বললা ,
– এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে? আমাদের একটা প্রিপারেশন বলতেও তো কিছু আছে।
তুহিন বললো,
– সব প্রিপারেশন শেষ আঙ্কেল। আপনি শুধু আপনার আত্মীয়দের কার্ড পৌঁছে দিন। আমরা যখন শুনেছি তূর্য মাইশাকে পছন্দ করে আমরা প্রথম থেকেই একসাথেই প্রিপারেশন নিয়ে এসেছি।শুধু সময়ের অপেক্ষা।

দুই পরিবারের উপস্থিতিতেই আবারো বিয়ে হয়ে গেলো মাইশা আর তূর্যের।
রাতে সোহানকে কল দিয়ে পুরোটা জানালো আমিন। শুধু আজকের বিয়ের ব্যাপারটা স্কিপ করে ছয়মাস আগে বিয়ে হয়েছে বললো। ওরা পরশু রিসিপশন করতে চায় এটা বললে সোহানও আর কিছুই বলতে পারলো না। কারন সে বাবা হয়েও এখন তার থেকে মাইশার সম্পর্কে দুরুত্ব অনেক। দেখতে গেলে মাইশার গার্জিয়ান আমিন। ছোটবেলা থেকেই পাশে থেকে এসেছে। তাই সেও আর না করলো না।

রিসিপশনের দিন।
দুই বউ তার বরদের সাথে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। সবাইকে ওয়েলকাম করছে। শুরু করতে যাচ্ছে জীবনের নতুন একটা অধ্যায়। সবাই শুভকামনা জানাচ্ছে। কেউ বা উপহার তুলে দিচ্ছে। সবাই খুব হাসিখুশি। তূর্যের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। যেনো এবার সত্যিই সে এভারেস্ট জয় করে ফেলেছে। সোহান মাইশার হাত দুটো ধরে তূর্যের হাতে দিয়ে বললো,
– আমার বংশের প্রদীপ তোমার কাছে দিয়ে গেলাম। যত্ন নিও বাবা।
– আমি আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পাশে থাকবো বাবা।
– পাসপোর্ট রেডি করে ওকে নিয়ে বেড়াতে এসো আমার ওইখানে।
– অবশ্যই যাবো।
এমন একটা ছেলেই যেনো খুঁজছিলেন সোহান। তার মেয়েই খুঁজে নিয়েছে বেস্ট কাউকে। মায়াও কি তাকে বেস্ট হিসেবেই মেনে নিয়েছিলো? ভাবতেই মনটা কেমন কেঁদে উঠলো সোহানের।

অপেক্ষার প্রহসন ঘটিয়ে রাত বারোটায় রুমে এলো তূর্য। বধু বেশে বসে আছে মাইশা। লাল বেনারসিতে বিয়ের সাজটাই যেনো অন্যরকম এক অদ্ভুত সুন্দর। তূর্য এগিয়ে আসতে দেখে মাইশা বিছানা ছেড়ে উঠলো। তূর্য ভাবলো নতুন বউদের মতো কার্তেসী বজিয়ে রেখে বোধহয় তাকে সালাম করবে। কিন্ত তাকে অবাক করে দিয়ে তার পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বললো,
– আজ চাঁদের আলোতে ভিজতে ইচ্ছে করছে।
– তবে তাই হোক মহারাণী ।
জুয়েলারি খুলে হাত ধরে চুপি চুপি রাস্তায় বেরিয়ে পরলো দুজন। দুজন হাত ধরে পাশাপাশি হাটছে। রাতের ঝিড়িঝিড়ি শান্ত বাতাস, জোসনা আর ল্যাম্পপোষ্টের ধিম আলোতে অন্যরকম এক ভালো লাগা এসে দোলা দিয়ে যায় মনে। মন যেনো এক অজানা সুখ সুখ সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে । খোলা একটা মাঠে নুয়ে পড়া তৃণঘাসের উপর শুয়ে শুয়ে জোসনাবিলাস করছে দুজন। মাইশা একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
– তূর্য আকাশে অসংখ্য তারার মাঝে যেমন একটা চাঁদ। তেমনি আমার হৃদয়ের কুঠুরিতে তুম একটা প্রাণ। যাকে ছাড়া বেঁচে থাকার সাহস করাটাও আমার পক্ষে অসম্ভব। থাকবে তো সবসময় আমার পাশে?
– চেষ্টা তো করবো।
তূর্যের কথায় লাফিয়ে উঠে মাইশা।
– চেষ্টা মানে?
– আরে এতো হাইপার হচ্ছো কেনো?
– তোর কপাল ভালো এখনো গলা টিপে ধরিনি।
তূর্য হেসে টান দিয়ে বুকের উপর ফেলে,
– তুই যে আমার অক্সিজেন। তোকে ছাড়া কিভাবে থাকবো বল।
তৃপ্তিময় হাসি হেসে তূর্যের বুকে মাথা রাখে মাইশা। এ যেনো চির শান্তির স্থান।
তূর্যের চোখে চোখ রেখে,
– ভালোবাসি।
– ভালোবাসি তৃণকান্তা।

সমাপ্তি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে