আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৪

0
2820

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপ করে বিছানায় শুয়ে আছি কিছুই ভালো লাগছে না তাসিনের কথা শুধু মনে পরছে, আমি যে কি বুঝি না যাকে ভালো লাগে না তার কথাই এতো মনে পরছে
–আরে অরনী তুই হোস্টেলে (কারো ডাকে ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম তাকিয়ে দেখি আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী শিলা)
–তুই এখানে
–আমি তো হোস্টেলে উঠেছি এক সপ্তাহ হলো
–তুই না বলেছিলি বাহিরে চলে যাবি
–যাওয়া হয়নি ভাবছি অনার্সটা শেষ করেই যাবো আচ্ছা তোর ফোন কোথায় আমি দুদিন ধরে ট্রাই করছি সুইচড অফ বলছে
–মানে কি অফ হবে কেন এইতো ফোন
–ফোন তো অন তাহলে অফ দেখায় কেন
–এখন দে তো
–অফই তো
–(তাড়াতাড়ি সিমের নাম্বার চেক করলাম একি এইটা তো আমার সিম না এই সিম আসলো কোথা থেকে আর আমার সিম গেলো কোথায়)
–কিরে কি হয়েছে
–ফোনে তো অন্য সিম লাগানো
–এইটা কিভাবে সম্ভব (সাথে সাথে ফোন বেজে উঠলো স্কিনে হাব্বি নাম ভেসে উঠলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না, ফোন রিসিভ করলাম)
–হাই সোনা বউ
–তাসিন তুমি
–হ্যা কেন অন্য কারো ফোন আসা করেছিলে বুঝি
–তারমানে তুমি আমার সিম চেঞ্জ করেছ
–হ্যা
–কেন
–তোমার চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করবে তাই
–ফোন করতে পারবো না কিন্তু বাসায় তো যেতে পারবো আমি কালই চলে যাবো
–সম্ভব না লক্ষীটি আমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে হোস্টেল থেকে বের হতে দিবে না
–তাসিন আমি তোমাকে খুন করবো
–তোমার ভালোবাসায় খুন হবার জন্য তো আমি অপেক্ষা করছি
–দূর

ফোনটা কেটে দিলাম ভেবেছিলাম হোস্টেলে আসলে তাসিনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচবো এখন দেখছি ও আমার পিছু ছাড়বে না
–কিরে কি হয়েছে
–অনেক কিছু
–বল আমাকে (শিলা কে সবকিছু বললাম)
–অরনী আমার মনে হয় ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসে তুই বাসায় ফিরে যা
–অসম্ভব ওর বাবা আম্মু আব্বু কে খুন করেছে আর আমি সংসার করবো ওর সাথে
–কিন্তু ভাইয়া তো বললো উনি খুনি না
–ওর কথা যে সত্যি সেটার কি প্রমান আছে নিজের বাবা যেহেতু ও নির্দোষ বলবেই
–উনি যে খুনি এইটারও তো প্রমান নেই
–হ্যা এটাই তো সমস্যা কি যে করি
–আমার মনে হয় এখন কিছুটা দিন তোর ধৈর্য ধরা প্রয়োজন তারপর তাসিনের বাবা পুরোপুরি সুস্থ হলে পর উনার সাথে সরাসরি কথা বলবি আর ওরা যেহেতু বলছে প্রমান আছে তাহলে নিশ্চই প্রমান তোর হাতে দিবে তখন তুই আসল খুনিকে পেয়ে যাবি শাস্তিও দিতে পারবি
–হ্যা ঠিক বলেছিস কিন্তু আমার চুপ করে থাকাটা তো চাচ্চু মানবে না চাচ্চু কে কি বলবো
–দেখ কথাটা তোর কাছে খারাপ লাগলেও আমি বলছি আমার মনে হয় এসবে তোর চাচ্চুর হাত আছে বুঝে শুনে কাজ করিস
–কি করবো আমার মাথায় কিছু আসছে না
–আমি যা বলি শুন তাহলেই হবে
–বল
–তুই আপাতত চুপ থাক তাসিনের বাবা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আর তোর চাচ্চু কে বল তোর সামনে পরিক্ষা তাই হোস্টেলে উঠেছিস
–চাচ্চু কি মানবে
–তাহলে এক কাজ কর উনাকে বল তুই হোস্টেলে থাকলেও প্রতিশোধ ঠিকি নিচ্ছিস আর বাড়িটা তোর নামে করে নিয়েছিস
–ঠিক আছে
–এখন পড়তে বস
–নারে আজ আর পড়বো না
–ঠিক আছে রেস্ট নে
–হুম

বিছানায় শুয়ে আছি আর ভাবছি তাসিন আমাকে চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না কেন এতে ওর কি লাভ, তাহলে কি চাচ্চু আম্মু আব্বুর খুনি আর তাসিন এইটা জানে আমার ক্ষতি হবে ভেবে কি চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না, কিন্তু চাচ্চু খুনি হয়ে থাকলে তো চাচ্চুর সাথে আমার যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন নাহলে চাচ্চু সন্দেহ করবে যে আমি সব জেনে গেছি, তাড়াতাড়ি তাসিন কে ফোন দিলাম
–আমি জানতাম আমার বউটা আমাকে ফোন দিবে
–ফাজলামি করো না আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও
–কি প্রশ্ন
–চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছ না কেন
–এমনি
–তাসিন প্লিজ বলো
–এখন জানতে হবে না
–কিন্তু তাসিন আমি যদি হঠাৎ করে চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই তাহলে তো উনি আমাকে সন্দেহ করবেন
–(নিশ্চুপ)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
–ভাবছিলাম
–কি
–তুমি ঠিক বলেছ উনি তোমাকে সন্দেহ করবেন
–হ্যা
–আমি তোমাকে সিমটা দিব কিন্তু সবসময় অন রাখতে পারবা না প্রয়োজন হলে অন করে উনার সাথে কথা বলে আবার অফ করে ফেলবা
–ঠিক আছে
–কালকে সিম পেয়ে যাইবা এখন পড়তে বস
–উহু ফোন রাখো ঘুমাবো
–পড়া চুরনি এখন কিসের ঘুম পড়তে বস
–ওই শুনো তুমি আমার হাজবেন্ড কিন্তু সেটা কাগজে কলমে শুধু আর ছয়মাস পূর্ন হলেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব কাজেই এতো অধিকার দেখাবা না
–হুহ পড়া চুরি করার জন্য এতো কথা শুনিয়েছ আজকে যতো খুশি পড়া চুরি কর আগামীকাল থেকে আর চুরি করতে পারবা না আর ডিভোর্স সেটা তোমার আশা আশাই থেকে যাবে
–এই ফোনটা রাখ তো তোমার সাথে বকবক করতে আমার ভালো লাগছে না
–ফোনটা কি আমি দিয়েছি
–আমিই দিয়েছি কিন্তু সেটা প্রয়োজনে তুমি তো অপ্রয়োজনীয় কথা বলছ
–মোটেও অপ্রয়োজনীয় কথা বলিনি, এই শুনোনা আমার না আব্বু ডাক শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে
–আর কয়টা মাস অপেক্ষা কর আমি তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার পর একটা বিয়ে করে নিও আর আব্বু ডাক শুনো যত্তোসব

সকালে শিলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে অরনী রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছিলি কেন
–(রাতের কথা মনে পড়লো রাগ করে তাসিনের ফোন কেটে ওকে বকা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম ওর জন্য রাতের খাওয়াটা হলো না)
–কি ভাবছিস
–কিছুনা খিদা লেগেছে
–ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে ক্লাসে যেতে হবে
–ওকে

ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেডি হচ্ছি ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো “একটু সুন্দর করে সেঝে ক্লাসে যেও পেত্নীর মতো যেও না” মেসেজটা পড়ে ইচ্ছে হচ্ছে মোবাইলটা তাসিনের মাথায় আছাড় দিয়ে ভাঙি, কোনোরকমে রাগ সব কমিয়ে শিলা কে নিয়ে কলেজে চলে গেলাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে