অভিমান হাজারো পর্বঃ৩০

0
1941

অভিমান হাজারো পর্বঃ৩০
আফসানা মিমি

রাত বারোটার বেশিই বাজে। লাবণ্যর দাফন কার্য শেষে সবাই যার যার বাসায় চলে গেল। সামির এখনো লাবণ্যর কবরের পাশেই বসে আছে। সে এক দৃষ্টিতে কবরটার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকও তার পড়ছে না। সামির এখনও ভাবতে পারছে না যে লাবণ্য আর নেই এই পৃথিবীতে। তার কেবলই মনে হচ্ছে লাবণ্য ওর আশেপাশেই আছে। অথচ ওর কবরের সামনে যে বসে আছে তা যেন তাকে তার মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে না। একদম আচমকা লাবণ্যর ক্ষত বিক্ষত হওয়া মুখটা তার আঁখিপল্লবে এক তরঙ্গের সৃষ্টি করলো। কবরের ওপর থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে ক্ষণকাল ঘূর্ণ্যমান দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে আকাশের দিকে মুখ করে বিকট আওয়াজে চিৎকার করে উঠলো। ওর চিৎকারে ঘুমিয়ে থাকা গুটিকয়েক ঘুমন্ত পাখি ডানা ঝাপটাতে লাগলো। আকাশ বাতাস সুদ্ধ কাঁপতে লাগলো ওর চিৎকার করে কান্না করায়। অনেক চেষ্টা করেছিল একটু কাঁদতে। কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়েছে। যার কারণে বুকের ভিতর অসহনীয় যন্ত্রণায় তড়পাচ্ছিল এতটা মুহূর্ত যাবৎ। নিয়তি কেন তাকে লাবণ্যর সাথে একসাথে চলতে দিল না!? ওর ভালবাসায় কী কোন খাদ ছিল তবে!? লাবণ্যকে তো সে তার পুরোটা দিয়েই ভালবেসে ছিল। যতটা ভালবাসলে অন্যকোন মেয়ের প্রতি আকর্ষণ না অনুভব করে। তবে কেন লাবণ্যকে কেড়ে নিল তার জীবন থেকে!? কোন পাপের সাজা হিসেবে সে লাবণ্যকে হারিয়েছে চিরতরে!? এ প্রশ্নের উত্তরগুলো কী আদৌ পাবে সে কোনদিন!?

—“বৌমণি, উনি এখনও আসছে না কেন? উনাকে সেখানে একা ফেলে চলে আসছো কেন তোমরা? মানুষটা কতটা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে বুঝতে পারছো না? তাহলে কেন এভাবে একা ফেলে এলে? কী না জানি করছে এখন!”
চিন্তাগ্রস্ত হয়ে কান্না আটকে কথাগুলো আওড়ে গেল অরুনিমা। আফরা ওর রুমে বসে আছে মাথা নত করে। এসে লাবণ্যর ব্যাপারটা বলার পর বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল অরুনিমা। ধাতস্থ হতে কয়েকটা মুহূর্ত লেগে গিয়েছিল। তারপর সামিরের কথা জানতে চায়। যখন থেকে শুনেছে সামির লাবণ্যর কবরের পাশে বসে আছে ততক্ষণ থেকেই এমন দুশ্চিন্তা করে যাচ্ছে সে।
আফরা আশ্বস্ত করে বলে
—“এতো চিন্তা কোরো না অরু। ভাইয়া ঠিক চলে আসবে। নিজেকে সামলাতে একটু সময় লাগবে এই আর কী। কত বড় একটা শক পেয়েছে। স্বাভাবিক হতে তো সময় লাগবেই, তাই না? যাকে এতোটা ভালবাসতো তার হঠাৎ মৃত্যুটা মেনে নিতে তো কষ্ট একটু হবেই। ভাইয়াকে এখন একটু একা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। অনেক সময় একাকীত্বও মানুষের সঙ্গী হয়। একটু শান্ত হও তুমি। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ো লক্ষ্মী মেয়ের মতো।”
—“বৌমণি আমার ঘুম আসবে না। কষ্ট হচ্ছে আমার উনার জন্য।”
—“তুমি তো ইচ্ছা করলে তোমার ভালবাসার মানুষটাকে দেখতে পাবে যখন তখন। কিন্তু একটাবার ভেবে দেখো তো ভাইয়ার অবস্থাটা। সে তার ভালবাসার মানুষটাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে। চায়লেও সে আর দেখতে পাবে না তাকে। শুধু পারবে তার কথা মনে করে করে যন্ত্রণা পেতে। সেই দহনে প্রতিনিয়ত জ্বলতে থাকবে ভাইয়া। তার কতটা কষ্ট হবে বুঝতে পারছো তো?!”

আফরার এই কথায় অরুনিমা চুপ করে গেল। আসলেই তো, এটা তো সে ভেবে দেখেনি। ভালবাসার মানুষটাকে একবার চোখের দেখা দেখতে পারলেও সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করে। আর সেখানে তো সামির ওর ভালবাসার মানুষটাকে হারিয়েছে চিরতরের জন্য। ওর জন্য এটা কতটা বেদনাদায়ক একটু হলেও বুঝতে পারছে অরুনিমা।
—“আমি আসলে কী বলবো বুঝতে পারছি না বৌমণি। উনার কষ্ট দেখে আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু উনি যে কারণে কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমার মাথা থেকে একেবারেই গায়েব হয়ে গিয়েছিল। যাও তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমিও ঘুমিয়ে পড়বো। বেশি দেরি করবো না।”
অরুনিমার গালে হাত রেখে বললো
—“আচ্ছা সাবধানে থেকো, একদম কান্নাকাটি করবে না, ঠিক আছে?”
অরুনিমাও মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো যে সে কান্নাকাটি করবে না। কিন্তু সে জানে আর আল্লাহ্ জানেন তার ভিতরের কান্নাটা আটকে রাখতে কতটা কষ্ট হচ্ছে।

আফরা চলে যাওয়ার পর জানালার সামনে এসে দাঁড়ালো অরুনিমা। আকাশে চাঁদ নেই। হীরকের মতো জ্বলজ্বল করছে থালাভরা অসংখ্য তারকারাজি। মাঝে মাঝে কয়েক খণ্ড মেঘ তারকাদের এড়িয়ে চলে যাচ্ছে খুব সন্তর্পণে। দেখে মনে হচ্ছে যেন তারকারাজিগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে জায়গা বদল করছে। ধীরে ধীরে মেঘ কেটে আধখাওয়া চাঁদটা দেখা দিল। ঠিক এভাবেই যেন সামিরের জীবনের মেঘ কেটে চাঁদের মতো নিজের অস্তিত্বটা সামিরকে জানান দিতে পারে। তাকে যেন আবদ্ধ করে নেয় সামিরের জীবনে। এটাই মনে মনে প্রত্যাশা করছে অরুনিমা।

সময় তার নিজ গতিতে চলতে থাকে। মানুষের জীবনধারাও সমানভাবে চলতে থাকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। কেননা সময় কারো অপেক্ষায় বসে থাকে না। তেমনি করেই মানুষের জীবনও নদীর স্রোতের মতোই বহমান। সেদিনের ঘটনায় প্রত্যেকটা মানুষই ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে সবাই স্বাভাবিক থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে যায়। কিন্তু সবসময় সফল হয় না। একাকীত্ব যখন একটা মানুষকে প্রবলভাবে গ্রাস করে ফেলে, তখন সে চায়লেও স্বাভাবিক থাকতে পারে না। কারণ মায়া জিনিসটা খুব খারাপ। এই মায়া নামক মরীচিকার জন্য মানুষ পিছুটান ছাড়াতে পারে না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


ইয়াসমিন বেগম ও আরমান সাহেব একমাত্র মেয়ের শোকে পাথর প্রায় হয়ে গেছেন। স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হলেও মনকে কিছুটা মানিয়ে নেয়া যেত। কিন্তু এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হওয়াটা তারা কেউই মেনে নিতে পারছে না। ইয়াসমিন বেগম মনে মনে প্রার্থনা করেন উনার বুক যে মায়েদের সন্তানেরা খালি করেছে, সে মায়েদের বুক যেন আল্লাহ্ খালি না করে। কেননা নিজ সন্তানের মৃত্যু কোন বাবা মা-ই স্বচক্ষে অবলোকন করতে পারে না। ওদের জন্য বদদোয়া না করে শুধু যেন তাদের আল্লাহ্ উচিৎ শিক্ষা দেয় এই দোয়া-ই করেন।

আর সামির! সে আর আগের মতো নেই। সারাদিন রাত বদ্ধ অন্ধকার ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখে। কারো সাথে ঠিকমতো কথা বলে না। মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষাটাও দেয়নি সে। তার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকেই যাচ্ছে। এমন গভীরভাবে ডিপ্রেশনে চলে গেছে যে সে নিজে এবং তার চারপাশের মানুষ চায়লেও সে স্বাভাবিক হতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারছে না। কেমন যেন থমকে গেছে সবকিছু। এর মাঝে অরুনিমাও বেশ কয়েকদিন এসেছিল সামিরের কাছে। কিন্তু সে দেখা দেয়নি। বারবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাকে। অপরদিকে আছিয়া বেগম একমাত্র ছেলের শোকে দিনরাত চোখের পানি ঝরান। তিনি ভেবে পান না কিভাবে সামিরকে আবারো আগের জীবনে ফিরিয়ে আনবে। আফরার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলার পর সে পরামর্শ দিয়েছে সামিরকে যেন একজন কাউন্সেলর দেখানো হয়। যাতে করে তার সমস্যাটা সমাধান করে এই জীবনধারা বদলে একটি নির্দিষ্ট পথে জীবনকে চালিত করতে পারে।

—“আপি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আফরা হঠাৎ এমন সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেল কেন?” অয়নের কণ্ঠে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
অয়নের বড় বোন সিমলা হাসি হাসি মুখ করে বললো
—“এতো টেনশনের কী আছে এতে? একটা সুসংবাদ আছে। যা গিয়ে মিষ্টি নিয়ে আয়।”
—“আপি তুমি কী আমার সাথে মশকরা করছো? এদিকে আফরার শরীর অসুস্থ আর তুমি কিনা বলছো মিষ্টি আনতে! মিষ্টি কেন আনবো শুধুশুধু?” ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে অয়নের।
—“আরে গাধা বললাম না একটা খুশির খবর আছে! এতো প্যাঁচাল পারছিস কেন তুই? যা বলেছি তা কর না!”
হাল ছেড়ে দিয়ে আফরার দিকে তাকিয়ে দেখে সেও মুখ নামিয়ে মিটিমিটি হাসছে। সবার এমন রহস্যের হাসি হাসার কারণ কী অয়ন বুঝতে পারছে না।
—“জানো আমার মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাব। এদিকে তুমি হাসছো। আরেকদিকে যিনি বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেছেন তিনিও মিটিমিটি হাসছে। কী যে করবো আমি!”
—“খবরটা শুনলে তুই সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে যেতে পারিস। এখন যা তো আর কথা বাড়াস নে।” সিমলা তাড়া দিয়ে বললো।
—“উফফ্! যাচ্ছি যাচ্ছি।” বলেই চলে গেল অয়ন।

—“আফরা, নিজের খেয়াল রাখবে না? ভাবো তো আজ যদি বড় কিছু হয়ে যেতো তাহলে কী হতো? আল্লাহ্ সহায় ছিল বলে সিঁড়ির শেষ ধাপে গিয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছো। যদি উপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়তে তাহলে কী অবস্থা হতো ভেবেছো একবারও? শরীর যেহেতু অসুস্থই ছিল তাহলে নিচে নামতে গেলে কেন? তুমি তোমার ফিজিক্যাল কন্ডিশনের ব্যাপারে অবগত ছিলে না? তাহলে?”
আফরা কাঁচুমাচু হয়ে বললো
—“আসলে আপু আমি বুঝতে পারছিলাম শরীরটা খারাপ লাগছে আমার। কিন্তু আমি যে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাব তা ভাবতে পারিনি।”
—“এই সময়টা অনেক কেয়ারফুলি চলতে হবে বুঝেছো?”
—“জ্বি আপু।” মাথা নেড়ে সায় জানায় আফরা।

—“বৌমনি বৌমনি, তুমি নাকি সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছো? ব্যথা পাওনি তো বেশি?” অস্থির হয়ে আফরার কাছে এসে অরুনিমা জানতে চায়লো। মুচকি হেসে আফরা উত্তর দেয়
—“না, ব্যথা পাইনি।”
—“একটু সাবধানে চলাফেরা করবা না! যদি কিছু হয়ে যেত!”
এর মাঝে সিমলা বলে উঠে
—“এতো অস্থির হতে হবে না। হয়ে গেছে যদি কিছু।”
—“কী হয়েছে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে অরুনিমা।
—“আমরা ফুপ্পি হতে চলেছি।”
কথাটা বুঝতে অরুনিমার একটু সময় লাগলো। পরক্ষনেই উত্তেজনার সাথে চিৎকার দিয়ে বলে
—“সত্যি!”

—“কিরে তোকে এতো খুশি লাগছে কেন? মনে হচ্ছে খুশির চোটে পাগল হয়ে যাবি।” রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে অয়ন।
—“পাগল হওয়ার মতোনই খবরটা।” উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলে অরুনিমা।
—“তুইও এই কথা বলছিস! একটু আগে আপুও এই কথাটাই বলেছিল। কিন্তু কথাটা কী সেটাই আমাকে বলছে না।” ওদের কাছে এসে বলে অয়ন।
—“আচ্ছা মনে করো তুমি বাবা হতে চলেছো। বাবা হওয়ার ফিলিংসটা ব্যাখ্যা করতে পারবে? কতটা খুশি হবে তুমি যদি বাবা হও?”
অয়ন কয়েকটা মুহূর্ত আফরার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে মাথা নিচু করে বসে আছে। মনে মনে কী যেন ভেবে বলে উঠে
—“বাবা হলে আলাদা ফিলিংস কাজ করে নাকি? কই জানতাম না তো। আর এতে এক্সট্রা খুশি হওয়ার কী আছে? ডালভাতের মতোই এটা একটা ঘটনা। এতো খুশি হওয়ার মতো কিছুই দেখি না আমি।”
মাথা তুলে আফরা অবাক হয়ে তাকায় অয়নের দিকে। তাহলে কী অয়ন খুশি হবে না এই খবরটা শুনে!? সে কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসে। রুমের বাইরে আসতেই কেন জানি চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে ছাদে চলে আসে।

আফরা বেরিয়ে যেতেই সিমলা অবাক হয়ে বলে
—“তুই কী খুশি হবি না যদি শুনিস যে তুই বাবা হচ্ছিস?”
অয়নের ভিতরে কেমন যেন করে উঠে কথাটা শুনে। কী যেন একটা খুঁচাচ্ছে তার বুকের ভিতর। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
—“মানে? সত্যি সত্যিই কী আমি……” অয়নের চোখ সিক্ত হয়ে আসে নোনাপানিতে।
সিমলা আবারো বললো
—“তোর বাবুর আম্মু কষ্ট পেয়েছে তোর এসব কথা শুনে। তোর কথা শুনে তো মনে হচ্ছে তুই খুশি না বাবা হওয়ার কথা শুনে।”
—“আপি… আপি আ.. আমি সত্যিই…..” অয়নের গলায় কথা আটকে যায় খুশিতে। কথা শেষ করতে পারে না। সিমলা একটু হেসে বললো
—“একটু আগেই না তুই বললি বাবা হওয়ার খবরটা নাকি ডালভাতের মতোই একটি ঘটনা! এতে এক্সট্রা খুশি হওয়ার কোন কারণ নেই। তাহলে তোর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন? মনে হচ্ছে খুশিতে পাগল হয়ে যাবি।”
—“আমি.. আমি তো ওটা এমনিতেই বলেছিলাম। আমি নিজেও জানতাম না যে…”
—“হয়েছে! এখন তোর বউয়ের অভিমান ভাঙা গিয়ে যা। তোর কথা শুনে মনে করেছে তুই খুশি হবি না মোটেও।”

অয়ন রুমে এসে দেখে আফরা রুমে নেই। একটু ভেবে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। তার ধারনাই ঠিক। ছাদের কিনার ঘেঁষে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে আফরার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। কিছুটা কেঁপে উঠলো আফরা এমন আচমকা জড়িয়ে ধরায়। কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে বলে
—“স্যরি বউ।”
আফরা চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে।
—“স্যরি তো আমার একমাত্র রাজকন্যার মা।”
এ কথায় চোখ মেলে তাকায় আফরা। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে। শরীরটাও কেমন কাঁপছে। অয়ন ওর কাঁপুনি টের পেয়ে আরেকটু নিবিরভাবে জড়িয়ে ধরলো। বেশ কয়েকটা মুহূর্ত পার হয়ে যায় মৌনাবস্থায়। রাতের নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে দুজনের শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ একসাথে বারি খাচ্ছে বারংবার। বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে অয়ন আফরার ঠোঁটে ভালবাসার চিহ্ন এঁকে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বুকে টেনে নিল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে আফরা। শক্ত করে বুকের গভীরে চেপে ধরে মাথায় আরেকটা চুমু খেয়ে অয়ন বললো

—প্লিজ কেঁদো না। আমি খুব স্যরি। আমার তখন এমনভাবে বলা উচিৎ হয়নি। আসলে তোমার অভিব্যক্তি বোঝার জন্য তেমনটা বলেছিলাম। বিশ্বাস করো অন্যকিছু মিন করে বলিনি। ফার্স্ট টাইম বাবা হওয়ার কথা শুনলে কে না খুশি হয়, বলো?”
আফরার কান্না সময়ের পরিক্রমায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অয়ন বুঝতে পারছে না এতো কেন কাঁদছে আফরা। কিভাবে থামানো যায় কান্না!?
—“প্লিজ আর কেঁদো না। ছিঁচকাঁদুনীর মতো এভাবে কাঁদতে থাকলে আমার রাজকন্যাটাও কিন্তু তোমার মতো এমন ছিঁচকাঁদুনীই হবে। আর আমার এমন মেয়ে একদমই পছন্দ না। তাকে হাসিখুশি হতে হবে। যাতে করে সবসময় নদীর পানির মতো কলকল শব্দ করে হাসতেই থাকে।”
আফরা কিছু না বলে আগের মতোই নিশ্চুপ রইলো।
—“বউটা তোমাকে কিন্তু নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি।”
বুকের রক্ত ছলকে উঠলো আফরার। সুখ নামক শত শত রঙিন প্রজাপতি বুকের ভিতর ডানা ঝাপটাতে লাগলো। সে মোহগ্রস্ত হয়ে প্রত্যুত্তরে বললো
—“কিন্তু আমি বাসি না।”
অয়ন বেশ অবাক হলো আফরার এ কথা শুনে। কণ্ঠে অবাক ভাবটা ধরে রেখেই জিজ্ঞাসা করলো
—“সত্যি!”
—“হুম।”
—“উম্মম্ম… তাহলে ভালো যেহেতু বাসোই না তাহলে আমাকে ছেড়ে দাঁড়াও।”
নিজের সর্বশক্তি দিয়ে অয়নকে আঁকড়ে ধরে বললো
—“কখনোই না।”
—“বুঝে গেছি। বলার প্রয়োজন নেই।” মুচকি হেসে কথাটা বলে নিজেও আরেকটু জোরে চেপে ধরে আফরার মাথায় নিজের চিবুক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে